
গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচন সুষ্ঠু করা নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের কথা রাখার চেষ্টা করেছে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছিলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রেখে ভোটের দিন ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত কঠোর থাকবে ইসি। কেউ অন্যায় করলে ছাড় পাবে না। তাদের সেই বক্তব্যের কিছুটা প্রতিফলন ঘটেছে গতকালের নির্বাচনে।
এ ছাড়া এই নির্বাচনকে ইসি নিজেরও আস্থা অর্জনের পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। সে কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোটের দিন সকাল থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বসানো ক্লোজ সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকা থেকে সরাসরি পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দিন শেষে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে কমিশন।
জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ ভালো ছিল। বলা চলে সন্তোষজনক। তবে ইভিএমের কারণে ভোট গ্রহণের গতি ধীর ছিল।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘রুশ স্বৈরশাসক স্টালিনের একটি উক্তি আছে কীভাবে ভোট হলো, কে ভোট দিল সেটা দেখার বিষয় নয়। কে ভোট গণনা করল সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে যারা ভোট দিয়েছে তাদের বেশিরভাগই বলছেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। কিন্তু ভোট গণনা যারা করছেন, তারা যে ফল উল্টো দিয়ে জায়েদা খাতুনের ভোট আজমত উল্লা খানকে বা আজমত উল্লা খানের ভোট জায়েদা খাতুনকে দিয়ে দেবেন না, সেটি নিশ্চিত কে করবে। আমাদের আপত্তির জায়গাটা সেখানেই।’
সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘পরিবেশ দৃশ্যমান শান্তিপূর্ণ ছিল। অশান্তির কোনো কারণও ছিল না। কেননা, সেখানে বিরোধী কোনো পক্ষ নেই। তারা তারাই ভোট করেছে। আজমত উল্লা খান আর জাহাঙ্গীর আলম দুজনই ক্ষমতাসীনদের পক্ষের। তাই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা থেকে শুরু করে নির্বাচন পর্যন্ত ইসির হস্তক্ষেপ দরকার পড়েনি।’
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘ইসি যে কথা বলেছিল, তা রাখতে তারা সচেষ্ট ছিল। দীর্ঘদিন পর মনে হয়েছে ভোটের পরিবেশ কিছুটা হলেও ফিরে এসেছে।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা পাঁচ সিটি নির্বাচনের প্রথমটি গাজীপুরে ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। নির্বাচনে বিএনপি না থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত সাবেক মেয়রের মাকে নিয়ে শুরু থেকে আলোচনা ছিল। কারণ বিএনপি না থাকায় এই স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনই আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন।
সকাল ৮টা থেকেই ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের পাঁচতলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন নির্বাচন কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ৪ হাজার ৪৩৫টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হয়। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব খান, মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান কন্ট্রোল রুমে বসে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন।
সকাল ১০টায় সিটি নির্বাচনের একটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরায় অনিয়ম দেখতে পান নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেন, বুথে পাঞ্জাবি পরা এক লোক বসে আছেন ১০১ কেন্দ্রের ৩ নম্বর বুথে। তিনি কারও কথা শুনছেন না। তিনি বেরও হচ্ছেন না। ভোটারদের জোর করে ভোট দেওয়াচ্ছেন। তার কারণে ভোটগ্রহণে সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত অ্যাকশনে যান, প্রয়োজনে তাকে গ্রেপ্তার করুন। একইভাবে ১০৩ নম্বর কেন্দ্রে আরেকজনকে ভোটগ্রহণে সমস্যা তৈরি করতে দেখে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ইসি জানায়, গোপন কক্ষে প্রবেশ এবং ভোটদানে প্রভাবিত করায় তাদের আটক করা হয়েছে। ১০১ ও ১০৩ নম্বর কেন্দ্র থেকে আটক করা দুজন হলেন যথাক্রমে রিয়াদুল ইসলাম রিয়াজ ও আবু তাহের।
পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বেশ কয়েকবার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। যদিও তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।
ভোটগ্রহণ শেষ হলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন চার নির্বাচন কমিশনার। তাদের দৃষ্টিতে ভোট কেমন হয়েছে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘আপনারাই আগে বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন কেমন হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আমাদের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা এবং গণমাধ্যম ও নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক টিমের কাছ থেকে যে খবর পেয়েছি, সেটি হচ্ছে, গাজীপুর সিটি নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যেসব প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, তারা সবাই বলেছেন নির্বাচনব্যবস্থায় তারা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। এই নির্বাচনে যে ফলাফলেই আসুক না কেন, তারা সবাই মেনে নেবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি ৫০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। তবে হিসাব করলে সঠিক তথ্যটা পাওয়া যাবে।’
ভোটার উপস্থিতি নিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচনী আইনে আছে, নির্বাচনে শেষ সময় পর্যন্ত যদি ভোটার উপস্থিতি থাকে, তাহলে ভোটারের ভোট না নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ব্যালটের ক্ষেত্রে যে নিয়ম, ইভিএমের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।’
সিসিটিভিতে কোনো অনিয়ম ধরা পড়েছে কি না এমন প্রশ্নে আলমগীর বলেন, ‘অনেক সময় ভোটারদের লাইন ধরা, কারও ভোট আগে নেওয়া, এ ধরনের কিছু জিনিস আমাদের কাছে ধরা পড়েছে, সেগুলোর বিষয়ে আমরা তাৎক্ষণিক ফোন দিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। এ ছাড়া দুটি কেন্দ্রে আমরা দেখেছিলাম, এজেন্ট ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন, তখন আমরা তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া আমাদের এবং পুলিশের নজরে আর কোনো ঘটনা আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় সাড়ে চার হাজার সিসিটিভি একসঙ্গে দেখা যায়নি। এগুলো পর্যায়ক্রমে দেখতে হয়েছে। একবারে ৩০০-৪০০ সিসিটিভি দেখা গেছে। এজন্য কিছু ঘটনা আমাদের নজরে নাও পড়তে পারে। সিসিটিভির এ উদ্যোগটাই আমাদের সফলতা। সিসিটিভিতে যেগুলো ধরা পড়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি।’
কেন্দ্রে জায়েদা খাতুনের এজেন্ট ছিল না এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘গাজীপুরে অবস্থানরত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। তারাও আমাদের বলেছে, এরকম কোনো কিছু হয়নি।’
সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে যুক্তরাষ্ট্র দায়ী ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্য ভিসা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে যে ভিসানীতি নিয়েছে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় নির্বাচন কমিশনার আলমগীরকে। এর জবাবে তিনি বলেন, ‘ইসির আইন অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে। এর সঙ্গে বিদেশিদের কোনো মন্তব্য আমরা নেব না। এটা রাষ্ট্র টু রাষ্ট্র দেখবে।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন যে শঙ্কার কারণে মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল, সেটা দূর করতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার নানা মহলের নানা ভাবনা ও শঙ্কা দূর করে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করতে পেরেছে জাতীয় নির্বাচনের আগে আস্থা অর্জনের পরীক্ষায় বসা সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। ইসির কড়া নজরদারির মধ্যে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সকাল ৮টা থেকে শুরু করে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ করা হয়। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও সেগুলোকে নগরবাসী তুচ্ছ করেই দেখছেন।
এমন ভোটের পর ফলাফল ঘোষণার পালা শুরু হয়। রাত দেড়টায় নগরীর বঙ্গতাজ মিলনায়তনে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে ৪৮০ কেন্দ্রের ভোটের ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার ফরিদুল ইসলাম। এতে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতীকের জায়েদা খাতুনকে। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। তৃতীয় হয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান (হাতপাখা)। তিনি পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৩৫২ ভোট। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনি (হাতি) পেয়েছেন ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট।
সকাল থেকে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে বসে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ভোট পর্যবেক্ষণ করেন নির্বাচন কমিশনাররা। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, শান্তিপূর্ণ ভোটে নির্বাচন হয়েছে। কমিশন সন্তুষ্ট। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে তাদের ধারণা ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে ফল ঘোষণা করে রিটার্নিং অফিসার জানান, ভোট পড়েছে ৪৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
ফল ঘোষণার সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান ফলাফল পরিবেশন কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন না। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী সমন্বয়ক ও তার ছেলে গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সেখানে ছিলেন। ফল ঘোষণার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখানে নৌকা জিতেছে, ব্যক্তি হেরেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা নিয়ে গাজীপুর নগরীর উন্নয়ন করতে চান তারা।
এর আগে রাত ৯টার পর ফলাফল ঘোষণায় দেরি হতে দেখে জাহাঙ্গীর আলম সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তার মা জিতেছেন। তবে ফল বদলানোর চেষ্টা চলছে।
ভোটের আগে মেয়র প্রার্থীদের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের চোখ গাজীপুরের দিকেই ছিল। কিন্তু ভোটগ্রহণের পুরো সময় মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীদের কারোর অভিযোগ ছিল না। ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণে ব্যবহার করা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম), যা একটু ত্রুটি-বিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে।
প্রায় ১২ লাখ ভোটারের এ সিটি করপোরেশনের ভোটের এক দিন আগেও সাধারণ মানুষ এত সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোট সম্পন্ন হবে তা ভাবতে পারেনি। কিন্তু সরকার ও ইসির উদ্যোগে যে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা ছাড়া কোনো বক্তব্য নেই তাদের।
সকালেও শঙ্কা নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে আসার পর সুমন রাজমোহন নামে এক ব্যক্তি ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, গাজীপুর সিটির নির্বাচন নিয়ে সরকার ও ইসির কড়া সমালোচকরাও আপত্তি তুলতে পারেননি। নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সুমন রাজমোহনের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয় মাদববাড়ি মোড়ের একটি চায়ের দোকানে বসে। তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতে, ভোটের দিন সকালেও মনে হয়েছে কোনো অঘটন ঘটবে।’
সরেজমিনে সকালের দিকে শহরের কয়েকটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ভোটারদের উপচে পড়া ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে। নগরীর প্রায় সব ভোটকেন্দ্রে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। অল্প কিছু ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল।
সাধারণ ভোটারদের অনেকেই ভোটগ্রহণে ধীরগতির অভিযোগ তোলেন। এ প্রসঙ্গে ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, গাজীপুরে এই প্রথম ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। ভোটারদের অনভিজ্ঞতা, যান্ত্রিক ত্রুটি ও বয়স্ক নারী-পুরুষদের ক্ষেত্রে একটু সময় লেগেছে বলেই ধীরগতি ঘটেছে। তবে কোনো কোনো কর্মকর্তা দাবি করেন, ইভিএমে একটু দেরিই হয়।
গাজীপুর জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কম। ভোটগ্রহণ শেষের আধা ঘণ্টা আগে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ৩ হাজার ১৪৫ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়ে ৮০০। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কাজী সাইয়েদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শহরের মূল এলাকায় হলেও এই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম কেন তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।’
টঙ্গীর মজিদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের নারী কেন্দ্রে ২ হাজার ৫৮টি ভোটের মধ্যে ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত ১২০০-এর কিছু বেশি ভোট পড়েছে। জানতে চাইলে এ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, তার কেন্দ্রের ৬টি বুথেই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। ভোটে ধীরগতির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ইভিএম নতুন সিস্টেম। তা ছাড়া বয়স্ক নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে একটু সময় লেগে যাচ্ছে। যান্ত্রিক ত্রুটিও এ ক্ষেত্রে দায়ী। অনেকের আঙুলের ছাপ মিলছিল না।’ বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা হয় নুরুল ইসলাম নামে এক ভোটারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঘণ্টাখানেক আগে লাইনে ২০-২২ জনের পেছনে দাঁড়িয়েছিলাম। ভোট নিতে দীর্ঘ সময় লাগছে। এ সময় তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক ভোটার হারিস বলেন, ‘২৫-৩০ জনের পেছনে দাঁড়িয়েছি। দুই ঘণ্টা পরও আমরা ভোট দিতে পারছি না। একেকজনের ভোট দিতে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ সময় বেশি লাগছে।’
শহরের শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ে তিনটি ভোটকেন্দ্র। একেবারে মূল ফটক থেকে বুথ পর্যন্ত ভোটারদের ভিড়। একটি কেন্দ্রের ৯টি বুথের মধ্যে ৩টিতে সকালে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) জটিলতা দেখা দেয়। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, কয়েক মিনিটের মধ্যে টেকনিশিয়ানরা সমস্যার সমাধান করেছেন। যদিও পরে অনেক ভোটারেরই আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোটগ্রহণে ধীরগতি দেখা যায়।
মোগরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩ হাজার ২৪৬ জন ভোটারের মধ্যে পৌনে ১২টা পর্যন্ত ৭৫৬টি ভোট পড়ে। কেন্দ্রে ১০টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়। ইভিএমে জটিলতায় কয়েকটি বুথে কিছুক্ষণ ভোট নেওয়া বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছেন ইভিএমের টেকনিশিয়ান। তিনি বলেন, ভোটারের তথ্য মেমোরি কার্ডে সংরক্ষিত থাকে, অনেক সময় তা রিড করতে পারে না, তাই কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছিল, তাৎক্ষণিকভাবে ইভিএম বন্ধ করে চালু (রিস্টার্ট) করা হলে পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তবে এরই মধ্যে ভোটারের লম্বা সারি তৈরি হয়।
নগরীর আসলামপুর, বাসন, কড্ডা, ভোগড়া, চান্দনা চৌরাস্তা, যোগীতলা, চান্দনা, শহীদ স্মৃতি স্কুল, রানী বিলাসমণি সরকারি স্কুল, সরকারি মহিলা কলেজ ও টঙ্গীর ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি কেন্দ্রসহ ৩৫টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এসবের কোনো কোনো কেন্দ্রে মেয়র প্রার্থী আজমত ও কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট ছাড়া অন্য কোনো মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট ভোটকেন্দ্রে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রগুলোর প্রিসাইডিং অফিসাররা জানান, এজেন্টরা কেন্দ্রে আসেননি।
সিটি করপোরেশনের বাসন থানার ইসলামপুর ও বাসন কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন এজেন্ট আবদুল মান্নান ও খালেদা আক্তার। তারা বলেন, সকালে তারা ওই কেন্দ্রে গেলে কিছুক্ষণ পর নৌকা প্রতীকের লোকজন তাদের পেছনের দরজা দিয়ে বের করে দেয়। তবে কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কর্মকর্তারা বলেন, এজেন্টদের বের করে দেওয়া, এজেন্টদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার অভিযোগ ভিত্তিহীন।
তবে ভোটকেন্দ্রগুলোতে অপপ্রচার চালানোর দুরভিসন্ধি নিয়ে কিছু নারী-পুরুষ কেন্দ্রে খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এসে অভিযোগ করেন, তাকে মেয়র পদে ভোট দিতে দিচ্ছে না ওরা। এ সম্পর্কে পরে খোঁজ নিতে গিয়ে সত্যতা পাওয়া যায়নি। টঙ্গীর টিডিএস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মহিলা কেন্দ্রে আনোয়ারা বেগম নামে এক নারী ভোটার গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে গিয়ে মেয়র পদে ভোট দিতে দেননি অভিযোগ করেন। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা এটি বিভ্রান্তিকর। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, এ অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি চাইলে এখন ভোট দিয়ে যেতে পারবেন জানান ওই কর্মকর্তা।
নাগা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সালনা নাগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়। তবে এতে ভোটগ্রহণে বাধাগ্রস্ত হয়নি।
নাগা মোক্তারবাড়ি গ্রামের কবীর আহমেদ নামে এক ভোটার বলেন, লাটিম প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী সাইফুল ইসলাম এবং করাত প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. শাহীন আলমের সমর্থকদের মধ্যে এই ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। একজনের বোতামে আরেকজন চাপ দেওয়াকে কেন্দ্র করে এই ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর বক্তব্য : এর আগে সকালে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের টঙ্গীর আরিচপুরে দারুস সালাম মাদ্রাসা কেন্দ্রে সকাল পৌনে ৯টার দিকে ভোট দেন।
অন্যদিকে, সকাল ১০টার দিকে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম জয়দেবপুরের কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন।
ভোট দেওয়ার পর আজমত উল্লা খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনগণের ভালোবাসা থেকে আমি বলতে পারি, জয়-পরাজয় আল্লাহ কর্র্তৃক নির্ধারিত। আমি বিশ্বাস করি, ফয়সালা আসমান থেকে হয়। আল্লাহ যা চান তা জনগণের মাধ্যমে প্রকাশ করবেন।’
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের কাছে এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন। ইভিএমের ধীরগতি নিয়েও তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
হাতি প্রতীকের রনির অভিযোগ : স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনির প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মো. মাহবুবুর রহমান শাহীন রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তিনি বলেন, সকালে তাদের হাতি প্রতীকের পোলিং এজেন্টরা নিজ নিজ কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে গেলে নৌকার ব্যাজ ধারণ করে কেন্দ্রের বাইরে অবস্থানরত সরকারদলীয় লোকজন ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাদের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়। এমনকি বিভিন্ন কেন্দ্রের ভেতর দায়িত্বরত অবস্থায়ও আমাদের হাতি প্রতীকের পোলিং এজেন্টদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
তার অভিযোগ, নির্বাচনের কয়েক দিন আগে থেকে পুলিশ দিয়ে তাদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি ও গণগ্রেপ্তার শুরু করে।
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নতুন ভিসানীতির ব্যাখ্যায় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের অংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এ কথা বলেন তিনি।
ওই বৈঠক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি সম্পর্কে ড. মোমেন বলেন, ভিসানীতি সুষ্ঠু নির্বাচনে কতদূর সাহায্য করবে তা জানি না। তবে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র নতুন যে ভিসানীতির ঘোষণা দিয়েছে, তা নিয়ে সরকার কোনো চাপে নেই।
এর আগে গতকাল দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি নিয়ে আলোচনা করতেই পিটার হাস পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন তারা।
বৈঠক প্রসঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। মাঝেমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়, এটি তারই অংশ। আমরা দুই দেশের সম্পর্ক আরও কীভাবে সম্প্রসারণ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈঠকে নতুন ভিসানীতি নিয়েও কথা বলেছি। যেটি গতকাল (বুধবার) যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আমরা নতুন ভিসানীতি করেছি। বাংলাদেশের মানুষ, সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও সবার জন্য এটি সহায়ক হবে। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্যও ঘোষিত নতুন ভিসানীতি সহায়ক হবে।’
পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য যে ভিসানীতি করেছে, তাতে আমরা আশা করছিÑ আমরা যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই, বিশেষ করে, আমরা তো জ্বালাও-পোড়াও চাই না, এটা সাহায্য করবে। এ কারণে (ভিসানীতি) হয়তো যারা জ্বালাও-পোড়াও করে নির্বাচনকে বানচালের চেষ্টা করে তারা হয়তো তার প্রেক্ষিতে বিরত থাকব। তবে আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত নই।’
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এ ভিসানীতি গ্রহণ করা হয়েছে কি না এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তাদের আমি রিজেক্ট (বাতিল) করব কেন? আমাদের যেগুলো অঙ্গীকার, আমরা যেটি চাই তাদের পলিসিতে সেটিরই পুনরাবৃত্তি হয়েছে। আমাদের কোনো অস্বস্তি নেই। তারা করেছেন তাদের নিয়মে। এটি যদি অবাধ ও সুষ্ঠু সহায়তা করে, তাহলে ভালো। তবে আমি নিশ্চিত নই। কারণ এটার কোনো পরীক্ষা আগে হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চেয়েছি, এ ভিসানীতি পরীক্ষিত হয়েছে কি না। তিনি জানিয়েছেন, এটা পরীক্ষিত হয়নি। এটা তাদের নতুন নীতি। তারা আশা করে, এটা বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হবে। তারা নাইজেরিয়া, সোমালিয়াসহ কয়েকটি দেশে করেছে। এটি তাদের নতুন প্রচেষ্টা। এর ফলে কোথাও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে কি না জানতে চেয়েছিলাম। রাষ্ট্রদূত বলেছেন, এটা এখন বলা যাবে না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য কাজ করেছে। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্যই আওয়ামী লীগ। সারা জীবনই নির্বাচনের জন্য কাজ করেছে দলটি। আমাদের দেশে যদি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হয়, সেই সরকার টিকতে পারে না। একটা হয়েছিল বিএনপির সময়, তারা গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় টিকতে পারেননি। আমাদের দেশের মানুষ নির্বাচনমুখী। আমরা সব সময়ই চাই অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হোক। আমরা জ্বালাও-পোড়াও গ্রহণ করব না। মানুষ নির্যাতিত হোক, মারা যাক, সেটি আমরা গ্রহণ করব না। আমরা চাই না, রাস্তাঘাট বন্ধ করে সমাবেশ হোক।’
নির্বাচন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো কি নাÑ এ প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারব না। আপনারা বিশ্লেষণ করেন। তাদের একটা ভাবনা হচ্ছে, বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের যাতে উন্নয়ন হয়, সেটি করা। তারা চেষ্টা করুক। তাদের দেশেও তো নির্বাচনী ঝামেলায় মানুষ মারা গেছেন। আমেরিকার ৭৫ ভাগ রিপাবলিকান মনে করেন গত নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়েছে। সর্বদলীয় ৭৭ শতাংশ মানুষ মনে করে তাদের নির্বাচনে দুর্বলতা আছে। কোনো দেশেরই নির্বাচন পারফেক্ট না।’
এদিকে, পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, বিএনপির পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং জাপার পক্ষে দলের মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর গুলশানে রাষ্ট্রদূতের বাসায় এই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কাউন্সিলর স্কট ব্র্যান্ডন, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বেও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।
এ বৈঠকের পর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের আমীর খসরু বলেন, ‘আগামী নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিকে আমরা স্বাগত জানাই। কারণ বাংলাদেশে এ মুহূর্তে মানুষের নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা, আমি মনে করি এ ধরনের একটি পদক্ষেপ আগামী দিনে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি ক্ষমতাসীনদের ভোট কারচুপির চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে বড় ধরনের সিগন্যাল বলে মনে করি আমরা।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাপা। বৈঠকের ব্যাপারে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা দলের পক্ষ থেকে বলেছি, যেহেতু আমেরিকার সরকার বাংলাদেশে যেন একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হয়, সেজন্য এই ভিসানীতি করেছে, সে উদ্দেশ্যটা ভালো। সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা দেবে, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবে বা অন্যকিছু করবে, তাদের আমেরিকা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এগুলোর উদ্দেশ্য হলো আমেরিকার সরকার আন্তরিকভাবে চায় বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। যেহেতু তাদের উদ্দেশ্যটা ভালো, তাই দলের পক্ষ থেকে তাদের এই নীতিটাকে স্বাগত জানাই।’
জাপা মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা আরও বলেছি, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি বড় দল। তারাসহ সব রাজনৈতিক দল যদি সংলাপে না বসে, তাহলে নির্বাচনসহ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যেসব তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে, সংকট দেখা দিয়েছে, সেগুলোর কোনো সমাধান হবে না।’
জাপা মহাসচিব বলেন, বৈঠকে অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি। শুধু ভিসানীতি নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তিন পার্টির দুজন করে দাওয়াত করেছিল। রাষ্ট্রদূত ভূমিকাতে তাদের ভিসানীতি ও সেখানে বাংলাদেশের প্রসঙ্গটুকু বলেছে। পরে এ বিষয়ে দলগুলোর মতামত জানতে চাইল।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বৈঠকের ভূমিকাতে পিটার হাস বলেছেন, এই নির্বাচনের বিষয়ে তারা এই ভিসানীতি করেছে। তারা চায় সব দেশেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক, নির্বাচন সুষ্ঠু হোক। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন। এর আগেও অনেক প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন যাতে যথাযথ সুষ্ঠু ও অবাধ হয়, সেজন্যই এমন ভিসানীতি করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যারাই বাধা দেবে বা প্রভাব বিস্তার করবে, তারা যেই হোক, নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত জুডিশিয়ারি, পুলিশ, অ্যাডমিন, পলিটিক্যাল বা পৃথকভাবে কেউ, তাদের ব্যাপারে কোনো প্রমাণ পেলে তাদের আমেরিকার ভিসা দেওয়া-না দেওয়া এবং তাদের মধ্যে যারা সেখানে আছে, তাদের ভিসাও বাতিলের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করবে।’
জাপা মহাসচিব জানান, তিন দলের বৈঠক একসঙ্গেই হয়েছে। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে ঘরোয়া পরিবেশে চা খেতে খেতে সবাই সামনাসামনি আলোচনা করেছেন। দুপুর ১২টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক পৌনে ২টার দিকে শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহায়তা করারও পরামর্শ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা খোলামেলাভাবেই বলছে, তারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। গত বুধবার দেশটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণায়ও সেই প্রত্যাশার কথাই বলা হয়েছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঘোষিত ভিসানীতি নিয়ে আসলে কোনো রাজনৈতিকপক্ষ বা নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কারও নেতিবাচক বা ইতিবাচক মন্তব্য করার সুযোগ দেখা যাচ্ছে না। এখানে তারা নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সবপক্ষের প্রতিই একটা বার্তা দিয়েছে। এটাকে সতর্কবার্তা বলা যেতে পারে। তবে এটা কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়। কাজেই কারও খুশি হওয়া বা বেজার হওয়ার বিষয় এ নতুন ভিসানীতিতে নেই।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটা সারা বিশ্বে বর্তমান মার্কিন প্রশাসন তথা জো বাইডেন প্রশাসনের যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সম্প্রসারণ করার লক্ষ্য, এটি তারই একটি প্রচেষ্টা।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ সরকার, সরকারি দল, বিরোধী দল এবং নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যারা যুক্ত থাকবেন তাদের অবশ্যই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকেই যাওয়া উচিত। তারা বলেন, বিএনপি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। তারাও বিদেশিদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করছে। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এবং গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশ সফরে আসা মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল বৈঠক করছে। এসব বৈঠকে তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না বলে দাবি করেছে। এজন্য তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলে আসছে। তবে আন্তর্জাতিক মহল থেকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এখনো কোনো বক্তব্য আসেনি। সবাই দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা করে। তারা মনে করেন, এবার নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিদেশিদের কোনো বিষয় নেই। তারা বরং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনেই চায়। আর এর মধ্যে সরকারপ্রধান তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ও দেশের বাইরে তার বক্তব্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বার্তাই দিচ্ছেন। তারপরও বড় দল বিএনপির দাবিগুলোর বিষয়ও হয়তো বিদেশিরা দেখছে।
প্রসঙ্গত, নতুন ভিসানীতিতে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত বা তাতে সহায়তা করলে যেকোনো ব্যক্তিকে আর ভিসা নাও দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। যাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের কর্মরত কিংবা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরাও রয়েছেন।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. বশির আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই কথা বলছে। গত ২০২২ ও ’২৩ সালের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। গত এক বছরে ওয়াশিংটন থেকে অনেক কর্মকর্তারা এসেছেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী এবং বাংলাদেশের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক রিলেশনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়েও তারা তাদের অভিমত প্রকাশ করেছেন। সেসব বক্তব্যে তারা বলেছেন, পরবর্তী যে সংসদ নির্বাচন হবে তা যেন কোনো প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকে। সেই নির্বাচন যেন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়। সেই বিষয়টা মার্কিন প্রশাসন ও পর্যবেক্ষকরা বলে আসছেন। সরকারের আলোচনায়ও তা উঠে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রশাসন এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের যে এজেন্ডা সেটা বিশ্বব্যাপী যে গণতন্ত্রকে প্রসারিত করা এবং সম্প্রসারণ করা। ডেমোক্রেটিক পার্টির যে এজেন্ডা তা হলো বিশ্বে তারা পশ্চিমা গণতন্ত্রের যে বিকাশ ও প্রকাশ দেখতে চায়, সেটা এর মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।
নতুন ভিসানীতিতে নির্বাচনে কী প্রভাব পড়বে এ প্রশ্নে ড. বশির বলেন, এটা আসলে তাদের সেøাগান। তারা এটা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জানিয়েছে। এটা কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়। এটাকে একটা বার্তা বা সতর্কবার্তা বলা যায়। নির্বাচন অনুষ্ঠান যারা বানচালের চেষ্টা করবে, সেটা শুধু সরকারি এজেন্সি বা সরকারি দলই নয়, বিরোধী দল থাকতে পারে। সরকারপক্ষ এটা গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ এবং পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে ইসির মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সেটিই তারা বলেছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন ভিসানীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দুটি বার্তা দিতে চেয়েছে। যারা ইতিবাচকভাবে এবং স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে তাদের এ ভিসানীতিতে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। এ প্রক্রিয়াকে যারা ব্যাহত হওয়ার চেষ্টা করবে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি, ভোট কারচুপি, অস্থির পরিবেশ তৈরি করা, তারা বা তাদের পরিবারের সদস্যরা ভিসার জন্য বিবেচিত হবেন না। বলা হয়েছে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা স্বাভাবিক গতিতে চলার জন্য যারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে, তাদের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র নেতিবাচক থাকবে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বাংলাদেশের প্রায় সব বন্ধুরাষ্ট্রই বলে আসছে। জাতিসংঘও বিষয়টি নিয়ে বলেছে দুদিন আগে। এ কূটনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবপক্ষকেই বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।
গত বুধবার এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানান, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে সহায়তার জন্য নতুন এ পলিসির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নতুন পলিসি অনুযায়ী, বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করলে বা তাতে সহায়তা করলে যেকোনো ব্যক্তিকে আর ভিসা নাও দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। যাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে তাদের মধ্যে বাংলাদেশের কর্মরত কিংবা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরাও রয়েছেন। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র গত ৩ মে বাংলাদেশকে অবহিত করেছে।
যেসব কাজকে যুক্তরাষ্ট্র গর্হিত হিসেবে অভিহিত করেছে সেগুলো হচ্ছে ভোটে কারচুপি, ভোটারদের ভয় প্রদর্শন, সহিংসতার মাধ্যমে মানুষকে জমায়েত বা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে না দেওয়া। এ ছাড়া রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীলসমাজ বা মিডিয়াকে তাদের মতপ্রকাশ করতে না দেওয়াও গর্হিত হিসেবে বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হত্যার হুমকি দেওয়া’ রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর ভেড়িপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিকেলে আদালতের মাধ্যমে পুলিশ তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে।
গতকাল চাঁদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর আরএমপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ। দুপুর ১২টার দিকে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে আরএমপি কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়ে চাঁদের ওই বক্তব্যের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হয়েছে। এরপর শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। বৃহস্পতিবার সকালে প্রাইভেটকারে তিনি পালানোর চেষ্টা করছিলেন। ভেড়িপাড়া মোড় থেকে তাকে পুলিশের একটি বিশেষ দল গ্রেপ্তার করে।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল তিনি (চাঁদ) আত্মগোপন চলে যাচ্ছেন। তাই রাজশাহী মহানগর ও জেলা পুলিশ তাকে ধরতে বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসায়। এই যৌথ অভিযানেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রেঞ্জ ডিআইজি বলেন, পুঠিয়া থানায় দায়ের হওয়া মামলায় চাঁদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেসব মামলা হয়েছে সেগুলোর তদন্তকারী কর্মকর্তারা এগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এদিকে, বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদকে এদিন বিকেলে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ। শুনানি শেষে রাজশাহী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৪ এর বিচারক মাহবুব আলম ৫দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন বলেন, পুঠিয়ার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার আসামি চাঁদকে আদালতে নেওয়ার পর পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। আদালত সার্বিক বিবেচনা করে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
গ্রীষ্মের শুরুতে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। চলতি বছর রেকর্ড ছুঁয়েছে রাজধানীর তাপমাত্রা। পরিবেশবিদদের মতে, গরমের তীব্রতা বাড়ার অন্যতম একটি কারণ অবাধে বৃক্ষনিধন। যার প্রভাব নগর জুড়ে। তীব্র গরমে রাস্তায় বের হয়ে হাঁসফাঁস করেন নগরবাসী। তবে এত কিছুর পরও পুরান ঢাকার ওয়ারী এলাকায় প্রতিদিনের অক্সিজেন ভাণ্ডার হয়ে আজও টিকে আছে বলধা গার্ডেন। এ যেন ব্যস্ত নগীরতে এক খণ্ড সবুজের সমারোহ। নগরবাসী এখনো একটু সময় পেলে ছোটেন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে।
ইট-পাথরের নগরীর যানজটে অতিষ্ঠ জীবন থেকে একটু স্বস্তির খোঁজ করতে গিয়েছিলাম ওয়ারীর বলধা গার্ডেনে। প্রবেশ পথে দেখা গেল আমার মতোই দর্শনার্থীদের। ২০ টাকায় টিকিট কেটে প্রবেশ করছেন গার্ডেনে। একটু শান্তির নিঃশ্বাস নিতে। ২০ টাকার একটি টিকিট কেটে প্রবেশ করলাম বলধা গার্ডেনে। বাগানটি দেখভাল করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানে নিয়োজিত কর্মীরা। পুরো বাগান যেন গাছপালার দখলে।
চারপাশে সবুজে ঘেরা এ উদ্যানটি ১৯০৯ সালে গাছপাগল জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায়চৌধুরী তৈরি করেন। বর্তমানে এটি দেখাশোনা করছে বাংলাদেশ সরকারের বন অধিদপ্তর। উদ্যানটি দুটি অংশে বিভক্ত। তা সাইকি ও সিবিলি নামে পরিচিত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে দর্শনার্থীদের জন্য। গবেষণার কাজে অনেক শিক্ষার্থীও মাঝেমধ্যেই আসেন এই গার্ডেনে। রাজধানী ঢাকায় যে কটি উদ্যান সবুজ নৈসর্গিকের জন্য বিখ্যাত তার অন্যতম এই বলধা গার্ডেন। ঘিঞ্জি এই পুরান ঢাকার অক্সিজেন বা ফুসফুস যে নামেই ডাকা হোক না কেন তাও এই বলধা গার্ডেনকে বোঝায়। কারণ পুরান ঢাকায় এত বেশি গাছের সমাহার আর কোথাও নেই।
তবে বাগানটির প্রতিষ্ঠাতা জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায়চৌধুরী ছিলেন না স্থপতি না উদ্ভিদবিজ্ঞানী। তিনিই গড়ে তুলেছিলেন উপমহাদেশের সেরা উদ্ভিদ বাগান। প্রথমে ওয়ারীর বাড়িটির নাম ছিল ‘কালচার হাউজ’। পরে এই কালচার হাউজ থেকে বলধা গার্ডেন নামে পরিচিতি লাভ করে। সাইকি ও সিবিলি মিলিয়ে ৮০০ প্রজাতির প্রায় ২৫ হাজার উদ্ভিদ রয়েছে। এ উদ্যানটি সাড়ে তিন একর জমির ওপর। এর মধ্যে রয়েছে কণ্টকলতা, গুস্তাভা, শ্বেতচন্দন, সাইকাস, স্বর্ণ অশোক, ভুজপত্র, লতাবট, লতাচালতা, ক্যানেঙ্গা, নবমল্লিকা, ওলিও গ্রেগরেন্স, আফ্রিকান বকুল, নাগলিঙ্গম, উদয়পদ্ম, রাজ অশোক, অ্যারোপয়জন, লতা জবা, স্কারলেট, কপসিয়া, হলুদ, দেবকাঞ্চন, কনকসুধা, কনকচাঁপা, জিঙ্গো বাইলোবা, গড়শিঙ্গা, মাধবীসহ আরও কত কি। এ ছাড়া নানা রকমের লতাজাতীয় ও জলজ উদ্ভিদসহ ঔষধি বৃক্ষ তো রয়েছেই।
ওয়ারী এলাকার এক বাসিন্দা সাগর মোল্লা তীব্র গরমে স্বস্তি নিতে এসেছেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুরান ঢাকা হলো ঘিঞ্জি পরিবেশ। চারপাশে অলিগলি দিয়ে ভরা। সেই সঙ্গে যানজট তো নিত্যদিনের ঘটনা। এত কিছুর পরও এই বলদা গার্ডেনে এলে মনটা ভালো হয়ে যায়। পুরো জায়গায় গাছপালা দিয়ে ভরা। তাই মাঝেমধ্যে আসা হয় বলধা গার্ডেনে।
সম্প্রতি সময়ে ঝড়ে মহুয়া নামে একটি গাছ ভেঙে পড়ে যায়। গাছটির বয়স প্রায় শত বছর হয়ে গেছে। সেই গাছটি দেখতে পুরান ঢাকার গে-ারিয়া এলাকার বাসিন্দা আবুল খায়ের এসেছেন ৫২ বছর পর এই বলদা গার্ডেনে। তিনি জানান, ‘আমার বয়স ৭২ বছর। ছোটবেলায় এই বলদা গার্ডেনে অনেক আসা-যাওয়া হতো। কিন্তু একটা সময় বলধা গার্ডেন নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক ঘটনার খবর পাওয়া হতো। সেজন্য এখানে আসা হতো না। আমি হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে যাওয়ার সময় মহুয়া গাছটা দেখা হতো চলার পথে। কিন্তু কদিন ধরে এই গাছটা দেখতে পারছি না। সেজন্য এত বছর পর এলাম। কারণ এই মহুয়া গাছের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি আছে। তিনি আরও জানান, এখানে এসে গাছটিকে আর দেখতে পারলাম না। ঝড়ের কারণে গাছটি মরে গেছে। তবে গার্ডেন নিয়ে যে নেতিবাচক কথা শোনা যেত সেটির প্রভাব আর এখন নেই। ভালোই লাগল এত বছর পর এসে। চারপাশে প্রকৃতি দিয়ে ঘেরা পুরো বলধা গার্ডেন। তবে কর্র্তৃপক্ষকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। তাহলে এই বাগানটিকে যুগের পর যুগ টিকে রাখা যাবে।
বন্ধুদের নিয়ে মাঝেমধ্যে ঘুরতে আসেন মো. রাহাত নামে দোলাইরপাড় এলাকার এক শিক্ষার্থী। তিনি জানান, কলেজ শেষে বন্ধুদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে আসা হয় এই বলধা গার্ডেনে। এখানের পরিবেশ আগের থেকে অনেক ভালো। তবে আরও ভালো হওয়া দরকার। সব বয়সের মানুষজন যেন এসে শান্তিতে ঘুরতে পারে সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।
দুপুর গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা হতে চলল। এরই মধ্যে কেটে গেছে প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা। ঘড়ির দিকে দৃষ্টি যেতে কিছুটা অবাকই হতে হয়েছে। এত সময় পার হলো? কিন্তু ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না। বুকভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি। কোনো অস্বস্তি নেই, নেই কোনো কোলাহল। প্রকৃতির নিশ্চুপ নীরবতা আমাকে যেন আঁকড়ে ধরে রেখেছে। বাগান থেকে বের হতে মনে হয়েছে এই বলধা গার্ডেন শুধু স্বস্তির জায়গা নয়, অনেকের কাছে অনেক স্মৃতির চিহ্নও বটে। সাগর মোল্লার সেই মহুয়া গাছের স্মৃতির মতোই।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।