
গ্রীষ্মের শুরুতে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। চলতি বছর রেকর্ড ছুঁয়েছে রাজধানীর তাপমাত্রা। পরিবেশবিদদের মতে, গরমের তীব্রতা বাড়ার অন্যতম একটি কারণ অবাধে বৃক্ষনিধন। যার প্রভাব নগর জুড়ে। তীব্র গরমে রাস্তায় বের হয়ে হাঁসফাঁস করেন নগরবাসী। তবে এত কিছুর পরও পুরান ঢাকার ওয়ারী এলাকায় প্রতিদিনের অক্সিজেন ভাণ্ডার হয়ে আজও টিকে আছে বলধা গার্ডেন। এ যেন ব্যস্ত নগীরতে এক খণ্ড সবুজের সমারোহ। নগরবাসী এখনো একটু সময় পেলে ছোটেন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে।
ইট-পাথরের নগরীর যানজটে অতিষ্ঠ জীবন থেকে একটু স্বস্তির খোঁজ করতে গিয়েছিলাম ওয়ারীর বলধা গার্ডেনে। প্রবেশ পথে দেখা গেল আমার মতোই দর্শনার্থীদের। ২০ টাকায় টিকিট কেটে প্রবেশ করছেন গার্ডেনে। একটু শান্তির নিঃশ্বাস নিতে। ২০ টাকার একটি টিকিট কেটে প্রবেশ করলাম বলধা গার্ডেনে। বাগানটি দেখভাল করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানে নিয়োজিত কর্মীরা। পুরো বাগান যেন গাছপালার দখলে।
চারপাশে সবুজে ঘেরা এ উদ্যানটি ১৯০৯ সালে গাছপাগল জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায়চৌধুরী তৈরি করেন। বর্তমানে এটি দেখাশোনা করছে বাংলাদেশ সরকারের বন অধিদপ্তর। উদ্যানটি দুটি অংশে বিভক্ত। তা সাইকি ও সিবিলি নামে পরিচিত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে দর্শনার্থীদের জন্য। গবেষণার কাজে অনেক শিক্ষার্থীও মাঝেমধ্যেই আসেন এই গার্ডেনে। রাজধানী ঢাকায় যে কটি উদ্যান সবুজ নৈসর্গিকের জন্য বিখ্যাত তার অন্যতম এই বলধা গার্ডেন। ঘিঞ্জি এই পুরান ঢাকার অক্সিজেন বা ফুসফুস যে নামেই ডাকা হোক না কেন তাও এই বলধা গার্ডেনকে বোঝায়। কারণ পুরান ঢাকায় এত বেশি গাছের সমাহার আর কোথাও নেই।
তবে বাগানটির প্রতিষ্ঠাতা জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায়চৌধুরী ছিলেন না স্থপতি না উদ্ভিদবিজ্ঞানী। তিনিই গড়ে তুলেছিলেন উপমহাদেশের সেরা উদ্ভিদ বাগান। প্রথমে ওয়ারীর বাড়িটির নাম ছিল ‘কালচার হাউজ’। পরে এই কালচার হাউজ থেকে বলধা গার্ডেন নামে পরিচিতি লাভ করে। সাইকি ও সিবিলি মিলিয়ে ৮০০ প্রজাতির প্রায় ২৫ হাজার উদ্ভিদ রয়েছে। এ উদ্যানটি সাড়ে তিন একর জমির ওপর। এর মধ্যে রয়েছে কণ্টকলতা, গুস্তাভা, শ্বেতচন্দন, সাইকাস, স্বর্ণ অশোক, ভুজপত্র, লতাবট, লতাচালতা, ক্যানেঙ্গা, নবমল্লিকা, ওলিও গ্রেগরেন্স, আফ্রিকান বকুল, নাগলিঙ্গম, উদয়পদ্ম, রাজ অশোক, অ্যারোপয়জন, লতা জবা, স্কারলেট, কপসিয়া, হলুদ, দেবকাঞ্চন, কনকসুধা, কনকচাঁপা, জিঙ্গো বাইলোবা, গড়শিঙ্গা, মাধবীসহ আরও কত কি। এ ছাড়া নানা রকমের লতাজাতীয় ও জলজ উদ্ভিদসহ ঔষধি বৃক্ষ তো রয়েছেই।
ওয়ারী এলাকার এক বাসিন্দা সাগর মোল্লা তীব্র গরমে স্বস্তি নিতে এসেছেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুরান ঢাকা হলো ঘিঞ্জি পরিবেশ। চারপাশে অলিগলি দিয়ে ভরা। সেই সঙ্গে যানজট তো নিত্যদিনের ঘটনা। এত কিছুর পরও এই বলদা গার্ডেনে এলে মনটা ভালো হয়ে যায়। পুরো জায়গায় গাছপালা দিয়ে ভরা। তাই মাঝেমধ্যে আসা হয় বলধা গার্ডেনে।
সম্প্রতি সময়ে ঝড়ে মহুয়া নামে একটি গাছ ভেঙে পড়ে যায়। গাছটির বয়স প্রায় শত বছর হয়ে গেছে। সেই গাছটি দেখতে পুরান ঢাকার গে-ারিয়া এলাকার বাসিন্দা আবুল খায়ের এসেছেন ৫২ বছর পর এই বলদা গার্ডেনে। তিনি জানান, ‘আমার বয়স ৭২ বছর। ছোটবেলায় এই বলদা গার্ডেনে অনেক আসা-যাওয়া হতো। কিন্তু একটা সময় বলধা গার্ডেন নিয়ে নানা রকম নেতিবাচক ঘটনার খবর পাওয়া হতো। সেজন্য এখানে আসা হতো না। আমি হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে যাওয়ার সময় মহুয়া গাছটা দেখা হতো চলার পথে। কিন্তু কদিন ধরে এই গাছটা দেখতে পারছি না। সেজন্য এত বছর পর এলাম। কারণ এই মহুয়া গাছের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি আছে। তিনি আরও জানান, এখানে এসে গাছটিকে আর দেখতে পারলাম না। ঝড়ের কারণে গাছটি মরে গেছে। তবে গার্ডেন নিয়ে যে নেতিবাচক কথা শোনা যেত সেটির প্রভাব আর এখন নেই। ভালোই লাগল এত বছর পর এসে। চারপাশে প্রকৃতি দিয়ে ঘেরা পুরো বলধা গার্ডেন। তবে কর্র্তৃপক্ষকে আরও বেশি নজর দিতে হবে। তাহলে এই বাগানটিকে যুগের পর যুগ টিকে রাখা যাবে।
বন্ধুদের নিয়ে মাঝেমধ্যে ঘুরতে আসেন মো. রাহাত নামে দোলাইরপাড় এলাকার এক শিক্ষার্থী। তিনি জানান, কলেজ শেষে বন্ধুদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে আসা হয় এই বলধা গার্ডেনে। এখানের পরিবেশ আগের থেকে অনেক ভালো। তবে আরও ভালো হওয়া দরকার। সব বয়সের মানুষজন যেন এসে শান্তিতে ঘুরতে পারে সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।
দুপুর গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা হতে চলল। এরই মধ্যে কেটে গেছে প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা। ঘড়ির দিকে দৃষ্টি যেতে কিছুটা অবাকই হতে হয়েছে। এত সময় পার হলো? কিন্তু ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না। বুকভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি। কোনো অস্বস্তি নেই, নেই কোনো কোলাহল। প্রকৃতির নিশ্চুপ নীরবতা আমাকে যেন আঁকড়ে ধরে রেখেছে। বাগান থেকে বের হতে মনে হয়েছে এই বলধা গার্ডেন শুধু স্বস্তির জায়গা নয়, অনেকের কাছে অনেক স্মৃতির চিহ্নও বটে। সাগর মোল্লার সেই মহুয়া গাছের স্মৃতির মতোই।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন যে শঙ্কার কারণে মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল, সেটা দূর করতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার নানা মহলের নানা ভাবনা ও শঙ্কা দূর করে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করতে পেরেছে জাতীয় নির্বাচনের আগে আস্থা অর্জনের পরীক্ষায় বসা সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। ইসির কড়া নজরদারির মধ্যে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সকাল ৮টা থেকে শুরু করে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ করা হয়। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও সেগুলোকে নগরবাসী তুচ্ছ করেই দেখছেন।
এমন ভোটের পর ফলাফল ঘোষণার পালা শুরু হয়। রাত দেড়টায় নগরীর বঙ্গতাজ মিলনায়তনে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে ৪৮০ কেন্দ্রের ভোটের ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার ফরিদুল ইসলাম। এতে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতীকের জায়েদা খাতুনকে। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। তৃতীয় হয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান (হাতপাখা)। তিনি পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৩৫২ ভোট। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনি (হাতি) পেয়েছেন ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট।
সকাল থেকে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে বসে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ভোট পর্যবেক্ষণ করেন নির্বাচন কমিশনাররা। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, শান্তিপূর্ণ ভোটে নির্বাচন হয়েছে। কমিশন সন্তুষ্ট। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে তাদের ধারণা ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে ফল ঘোষণা করে রিটার্নিং অফিসার জানান, ভোট পড়েছে ৪৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
ফল ঘোষণার সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান ফলাফল পরিবেশন কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন না। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী সমন্বয়ক ও তার ছেলে গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সেখানে ছিলেন। ফল ঘোষণার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখানে নৌকা জিতেছে, ব্যক্তি হেরেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা নিয়ে গাজীপুর নগরীর উন্নয়ন করতে চান তারা।
এর আগে রাত ৯টার পর ফলাফল ঘোষণায় দেরি হতে দেখে জাহাঙ্গীর আলম সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তার মা জিতেছেন। তবে ফল বদলানোর চেষ্টা চলছে।
ভোটের আগে মেয়র প্রার্থীদের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের চোখ গাজীপুরের দিকেই ছিল। কিন্তু ভোটগ্রহণের পুরো সময় মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীদের কারোর অভিযোগ ছিল না। ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণে ব্যবহার করা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম), যা একটু ত্রুটি-বিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে।
প্রায় ১২ লাখ ভোটারের এ সিটি করপোরেশনের ভোটের এক দিন আগেও সাধারণ মানুষ এত সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোট সম্পন্ন হবে তা ভাবতে পারেনি। কিন্তু সরকার ও ইসির উদ্যোগে যে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা ছাড়া কোনো বক্তব্য নেই তাদের।
সকালেও শঙ্কা নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে আসার পর সুমন রাজমোহন নামে এক ব্যক্তি ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, গাজীপুর সিটির নির্বাচন নিয়ে সরকার ও ইসির কড়া সমালোচকরাও আপত্তি তুলতে পারেননি। নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সুমন রাজমোহনের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয় মাদববাড়ি মোড়ের একটি চায়ের দোকানে বসে। তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতে, ভোটের দিন সকালেও মনে হয়েছে কোনো অঘটন ঘটবে।’
সরেজমিনে সকালের দিকে শহরের কয়েকটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ভোটারদের উপচে পড়া ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে। নগরীর প্রায় সব ভোটকেন্দ্রে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। অল্প কিছু ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল।
সাধারণ ভোটারদের অনেকেই ভোটগ্রহণে ধীরগতির অভিযোগ তোলেন। এ প্রসঙ্গে ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, গাজীপুরে এই প্রথম ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। ভোটারদের অনভিজ্ঞতা, যান্ত্রিক ত্রুটি ও বয়স্ক নারী-পুরুষদের ক্ষেত্রে একটু সময় লেগেছে বলেই ধীরগতি ঘটেছে। তবে কোনো কোনো কর্মকর্তা দাবি করেন, ইভিএমে একটু দেরিই হয়।
গাজীপুর জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কম। ভোটগ্রহণ শেষের আধা ঘণ্টা আগে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ৩ হাজার ১৪৫ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়ে ৮০০। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কাজী সাইয়েদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শহরের মূল এলাকায় হলেও এই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম কেন তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।’
টঙ্গীর মজিদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের নারী কেন্দ্রে ২ হাজার ৫৮টি ভোটের মধ্যে ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত ১২০০-এর কিছু বেশি ভোট পড়েছে। জানতে চাইলে এ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, তার কেন্দ্রের ৬টি বুথেই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। ভোটে ধীরগতির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ইভিএম নতুন সিস্টেম। তা ছাড়া বয়স্ক নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে একটু সময় লেগে যাচ্ছে। যান্ত্রিক ত্রুটিও এ ক্ষেত্রে দায়ী। অনেকের আঙুলের ছাপ মিলছিল না।’ বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা হয় নুরুল ইসলাম নামে এক ভোটারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঘণ্টাখানেক আগে লাইনে ২০-২২ জনের পেছনে দাঁড়িয়েছিলাম। ভোট নিতে দীর্ঘ সময় লাগছে। এ সময় তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক ভোটার হারিস বলেন, ‘২৫-৩০ জনের পেছনে দাঁড়িয়েছি। দুই ঘণ্টা পরও আমরা ভোট দিতে পারছি না। একেকজনের ভোট দিতে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ সময় বেশি লাগছে।’
শহরের শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ে তিনটি ভোটকেন্দ্র। একেবারে মূল ফটক থেকে বুথ পর্যন্ত ভোটারদের ভিড়। একটি কেন্দ্রের ৯টি বুথের মধ্যে ৩টিতে সকালে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) জটিলতা দেখা দেয়। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, কয়েক মিনিটের মধ্যে টেকনিশিয়ানরা সমস্যার সমাধান করেছেন। যদিও পরে অনেক ভোটারেরই আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোটগ্রহণে ধীরগতি দেখা যায়।
মোগরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩ হাজার ২৪৬ জন ভোটারের মধ্যে পৌনে ১২টা পর্যন্ত ৭৫৬টি ভোট পড়ে। কেন্দ্রে ১০টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়। ইভিএমে জটিলতায় কয়েকটি বুথে কিছুক্ষণ ভোট নেওয়া বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছেন ইভিএমের টেকনিশিয়ান। তিনি বলেন, ভোটারের তথ্য মেমোরি কার্ডে সংরক্ষিত থাকে, অনেক সময় তা রিড করতে পারে না, তাই কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছিল, তাৎক্ষণিকভাবে ইভিএম বন্ধ করে চালু (রিস্টার্ট) করা হলে পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তবে এরই মধ্যে ভোটারের লম্বা সারি তৈরি হয়।
নগরীর আসলামপুর, বাসন, কড্ডা, ভোগড়া, চান্দনা চৌরাস্তা, যোগীতলা, চান্দনা, শহীদ স্মৃতি স্কুল, রানী বিলাসমণি সরকারি স্কুল, সরকারি মহিলা কলেজ ও টঙ্গীর ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি কেন্দ্রসহ ৩৫টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এসবের কোনো কোনো কেন্দ্রে মেয়র প্রার্থী আজমত ও কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট ছাড়া অন্য কোনো মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট ভোটকেন্দ্রে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রগুলোর প্রিসাইডিং অফিসাররা জানান, এজেন্টরা কেন্দ্রে আসেননি।
সিটি করপোরেশনের বাসন থানার ইসলামপুর ও বাসন কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন এজেন্ট আবদুল মান্নান ও খালেদা আক্তার। তারা বলেন, সকালে তারা ওই কেন্দ্রে গেলে কিছুক্ষণ পর নৌকা প্রতীকের লোকজন তাদের পেছনের দরজা দিয়ে বের করে দেয়। তবে কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কর্মকর্তারা বলেন, এজেন্টদের বের করে দেওয়া, এজেন্টদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার অভিযোগ ভিত্তিহীন।
তবে ভোটকেন্দ্রগুলোতে অপপ্রচার চালানোর দুরভিসন্ধি নিয়ে কিছু নারী-পুরুষ কেন্দ্রে খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এসে অভিযোগ করেন, তাকে মেয়র পদে ভোট দিতে দিচ্ছে না ওরা। এ সম্পর্কে পরে খোঁজ নিতে গিয়ে সত্যতা পাওয়া যায়নি। টঙ্গীর টিডিএস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মহিলা কেন্দ্রে আনোয়ারা বেগম নামে এক নারী ভোটার গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে গিয়ে মেয়র পদে ভোট দিতে দেননি অভিযোগ করেন। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা এটি বিভ্রান্তিকর। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, এ অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি চাইলে এখন ভোট দিয়ে যেতে পারবেন জানান ওই কর্মকর্তা।
নাগা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সালনা নাগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়। তবে এতে ভোটগ্রহণে বাধাগ্রস্ত হয়নি।
নাগা মোক্তারবাড়ি গ্রামের কবীর আহমেদ নামে এক ভোটার বলেন, লাটিম প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী সাইফুল ইসলাম এবং করাত প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. শাহীন আলমের সমর্থকদের মধ্যে এই ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। একজনের বোতামে আরেকজন চাপ দেওয়াকে কেন্দ্র করে এই ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর বক্তব্য : এর আগে সকালে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের টঙ্গীর আরিচপুরে দারুস সালাম মাদ্রাসা কেন্দ্রে সকাল পৌনে ৯টার দিকে ভোট দেন।
অন্যদিকে, সকাল ১০টার দিকে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম জয়দেবপুরের কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন।
ভোট দেওয়ার পর আজমত উল্লা খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনগণের ভালোবাসা থেকে আমি বলতে পারি, জয়-পরাজয় আল্লাহ কর্র্তৃক নির্ধারিত। আমি বিশ্বাস করি, ফয়সালা আসমান থেকে হয়। আল্লাহ যা চান তা জনগণের মাধ্যমে প্রকাশ করবেন।’
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের কাছে এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন। ইভিএমের ধীরগতি নিয়েও তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
হাতি প্রতীকের রনির অভিযোগ : স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনির প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মো. মাহবুবুর রহমান শাহীন রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তিনি বলেন, সকালে তাদের হাতি প্রতীকের পোলিং এজেন্টরা নিজ নিজ কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে গেলে নৌকার ব্যাজ ধারণ করে কেন্দ্রের বাইরে অবস্থানরত সরকারদলীয় লোকজন ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাদের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়। এমনকি বিভিন্ন কেন্দ্রের ভেতর দায়িত্বরত অবস্থায়ও আমাদের হাতি প্রতীকের পোলিং এজেন্টদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
তার অভিযোগ, নির্বাচনের কয়েক দিন আগে থেকে পুলিশ দিয়ে তাদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি ও গণগ্রেপ্তার শুরু করে।
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নতুন ভিসানীতির ব্যাখ্যায় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের অংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এ কথা বলেন তিনি।
ওই বৈঠক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি সম্পর্কে ড. মোমেন বলেন, ভিসানীতি সুষ্ঠু নির্বাচনে কতদূর সাহায্য করবে তা জানি না। তবে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র নতুন যে ভিসানীতির ঘোষণা দিয়েছে, তা নিয়ে সরকার কোনো চাপে নেই।
এর আগে গতকাল দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি নিয়ে আলোচনা করতেই পিটার হাস পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন তারা।
বৈঠক প্রসঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। মাঝেমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়, এটি তারই অংশ। আমরা দুই দেশের সম্পর্ক আরও কীভাবে সম্প্রসারণ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈঠকে নতুন ভিসানীতি নিয়েও কথা বলেছি। যেটি গতকাল (বুধবার) যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আমরা নতুন ভিসানীতি করেছি। বাংলাদেশের মানুষ, সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও সবার জন্য এটি সহায়ক হবে। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্যও ঘোষিত নতুন ভিসানীতি সহায়ক হবে।’
পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য যে ভিসানীতি করেছে, তাতে আমরা আশা করছিÑ আমরা যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই, বিশেষ করে, আমরা তো জ্বালাও-পোড়াও চাই না, এটা সাহায্য করবে। এ কারণে (ভিসানীতি) হয়তো যারা জ্বালাও-পোড়াও করে নির্বাচনকে বানচালের চেষ্টা করে তারা হয়তো তার প্রেক্ষিতে বিরত থাকব। তবে আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত নই।’
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এ ভিসানীতি গ্রহণ করা হয়েছে কি না এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তাদের আমি রিজেক্ট (বাতিল) করব কেন? আমাদের যেগুলো অঙ্গীকার, আমরা যেটি চাই তাদের পলিসিতে সেটিরই পুনরাবৃত্তি হয়েছে। আমাদের কোনো অস্বস্তি নেই। তারা করেছেন তাদের নিয়মে। এটি যদি অবাধ ও সুষ্ঠু সহায়তা করে, তাহলে ভালো। তবে আমি নিশ্চিত নই। কারণ এটার কোনো পরীক্ষা আগে হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চেয়েছি, এ ভিসানীতি পরীক্ষিত হয়েছে কি না। তিনি জানিয়েছেন, এটা পরীক্ষিত হয়নি। এটা তাদের নতুন নীতি। তারা আশা করে, এটা বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হবে। তারা নাইজেরিয়া, সোমালিয়াসহ কয়েকটি দেশে করেছে। এটি তাদের নতুন প্রচেষ্টা। এর ফলে কোথাও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে কি না জানতে চেয়েছিলাম। রাষ্ট্রদূত বলেছেন, এটা এখন বলা যাবে না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য কাজ করেছে। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্যই আওয়ামী লীগ। সারা জীবনই নির্বাচনের জন্য কাজ করেছে দলটি। আমাদের দেশে যদি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হয়, সেই সরকার টিকতে পারে না। একটা হয়েছিল বিএনপির সময়, তারা গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় টিকতে পারেননি। আমাদের দেশের মানুষ নির্বাচনমুখী। আমরা সব সময়ই চাই অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হোক। আমরা জ্বালাও-পোড়াও গ্রহণ করব না। মানুষ নির্যাতিত হোক, মারা যাক, সেটি আমরা গ্রহণ করব না। আমরা চাই না, রাস্তাঘাট বন্ধ করে সমাবেশ হোক।’
নির্বাচন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো কি নাÑ এ প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারব না। আপনারা বিশ্লেষণ করেন। তাদের একটা ভাবনা হচ্ছে, বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের যাতে উন্নয়ন হয়, সেটি করা। তারা চেষ্টা করুক। তাদের দেশেও তো নির্বাচনী ঝামেলায় মানুষ মারা গেছেন। আমেরিকার ৭৫ ভাগ রিপাবলিকান মনে করেন গত নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়েছে। সর্বদলীয় ৭৭ শতাংশ মানুষ মনে করে তাদের নির্বাচনে দুর্বলতা আছে। কোনো দেশেরই নির্বাচন পারফেক্ট না।’
এদিকে, পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, বিএনপির পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং জাপার পক্ষে দলের মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর গুলশানে রাষ্ট্রদূতের বাসায় এই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কাউন্সিলর স্কট ব্র্যান্ডন, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বেও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।
এ বৈঠকের পর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের আমীর খসরু বলেন, ‘আগামী নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিকে আমরা স্বাগত জানাই। কারণ বাংলাদেশে এ মুহূর্তে মানুষের নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা, আমি মনে করি এ ধরনের একটি পদক্ষেপ আগামী দিনে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি ক্ষমতাসীনদের ভোট কারচুপির চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে বড় ধরনের সিগন্যাল বলে মনে করি আমরা।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাপা। বৈঠকের ব্যাপারে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা দলের পক্ষ থেকে বলেছি, যেহেতু আমেরিকার সরকার বাংলাদেশে যেন একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হয়, সেজন্য এই ভিসানীতি করেছে, সে উদ্দেশ্যটা ভালো। সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা দেবে, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবে বা অন্যকিছু করবে, তাদের আমেরিকা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এগুলোর উদ্দেশ্য হলো আমেরিকার সরকার আন্তরিকভাবে চায় বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। যেহেতু তাদের উদ্দেশ্যটা ভালো, তাই দলের পক্ষ থেকে তাদের এই নীতিটাকে স্বাগত জানাই।’
জাপা মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা আরও বলেছি, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি বড় দল। তারাসহ সব রাজনৈতিক দল যদি সংলাপে না বসে, তাহলে নির্বাচনসহ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যেসব তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে, সংকট দেখা দিয়েছে, সেগুলোর কোনো সমাধান হবে না।’
জাপা মহাসচিব বলেন, বৈঠকে অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি। শুধু ভিসানীতি নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তিন পার্টির দুজন করে দাওয়াত করেছিল। রাষ্ট্রদূত ভূমিকাতে তাদের ভিসানীতি ও সেখানে বাংলাদেশের প্রসঙ্গটুকু বলেছে। পরে এ বিষয়ে দলগুলোর মতামত জানতে চাইল।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বৈঠকের ভূমিকাতে পিটার হাস বলেছেন, এই নির্বাচনের বিষয়ে তারা এই ভিসানীতি করেছে। তারা চায় সব দেশেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক, নির্বাচন সুষ্ঠু হোক। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন। এর আগেও অনেক প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন যাতে যথাযথ সুষ্ঠু ও অবাধ হয়, সেজন্যই এমন ভিসানীতি করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যারাই বাধা দেবে বা প্রভাব বিস্তার করবে, তারা যেই হোক, নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত জুডিশিয়ারি, পুলিশ, অ্যাডমিন, পলিটিক্যাল বা পৃথকভাবে কেউ, তাদের ব্যাপারে কোনো প্রমাণ পেলে তাদের আমেরিকার ভিসা দেওয়া-না দেওয়া এবং তাদের মধ্যে যারা সেখানে আছে, তাদের ভিসাও বাতিলের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করবে।’
জাপা মহাসচিব জানান, তিন দলের বৈঠক একসঙ্গেই হয়েছে। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে ঘরোয়া পরিবেশে চা খেতে খেতে সবাই সামনাসামনি আলোচনা করেছেন। দুপুর ১২টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক পৌনে ২টার দিকে শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহায়তা করারও পরামর্শ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা খোলামেলাভাবেই বলছে, তারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। গত বুধবার দেশটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণায়ও সেই প্রত্যাশার কথাই বলা হয়েছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঘোষিত ভিসানীতি নিয়ে আসলে কোনো রাজনৈতিকপক্ষ বা নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কারও নেতিবাচক বা ইতিবাচক মন্তব্য করার সুযোগ দেখা যাচ্ছে না। এখানে তারা নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সবপক্ষের প্রতিই একটা বার্তা দিয়েছে। এটাকে সতর্কবার্তা বলা যেতে পারে। তবে এটা কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়। কাজেই কারও খুশি হওয়া বা বেজার হওয়ার বিষয় এ নতুন ভিসানীতিতে নেই।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটা সারা বিশ্বে বর্তমান মার্কিন প্রশাসন তথা জো বাইডেন প্রশাসনের যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সম্প্রসারণ করার লক্ষ্য, এটি তারই একটি প্রচেষ্টা।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ সরকার, সরকারি দল, বিরোধী দল এবং নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যারা যুক্ত থাকবেন তাদের অবশ্যই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকেই যাওয়া উচিত। তারা বলেন, বিএনপি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। তারাও বিদেশিদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করছে। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এবং গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশ সফরে আসা মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল বৈঠক করছে। এসব বৈঠকে তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না বলে দাবি করেছে। এজন্য তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলে আসছে। তবে আন্তর্জাতিক মহল থেকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এখনো কোনো বক্তব্য আসেনি। সবাই দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা করে। তারা মনে করেন, এবার নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিদেশিদের কোনো বিষয় নেই। তারা বরং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনেই চায়। আর এর মধ্যে সরকারপ্রধান তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ও দেশের বাইরে তার বক্তব্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বার্তাই দিচ্ছেন। তারপরও বড় দল বিএনপির দাবিগুলোর বিষয়ও হয়তো বিদেশিরা দেখছে।
প্রসঙ্গত, নতুন ভিসানীতিতে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত বা তাতে সহায়তা করলে যেকোনো ব্যক্তিকে আর ভিসা নাও দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। যাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের কর্মরত কিংবা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরাও রয়েছেন।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. বশির আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই কথা বলছে। গত ২০২২ ও ’২৩ সালের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। গত এক বছরে ওয়াশিংটন থেকে অনেক কর্মকর্তারা এসেছেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী এবং বাংলাদেশের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক রিলেশনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়েও তারা তাদের অভিমত প্রকাশ করেছেন। সেসব বক্তব্যে তারা বলেছেন, পরবর্তী যে সংসদ নির্বাচন হবে তা যেন কোনো প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকে। সেই নির্বাচন যেন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়। সেই বিষয়টা মার্কিন প্রশাসন ও পর্যবেক্ষকরা বলে আসছেন। সরকারের আলোচনায়ও তা উঠে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রশাসন এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের যে এজেন্ডা সেটা বিশ্বব্যাপী যে গণতন্ত্রকে প্রসারিত করা এবং সম্প্রসারণ করা। ডেমোক্রেটিক পার্টির যে এজেন্ডা তা হলো বিশ্বে তারা পশ্চিমা গণতন্ত্রের যে বিকাশ ও প্রকাশ দেখতে চায়, সেটা এর মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।
নতুন ভিসানীতিতে নির্বাচনে কী প্রভাব পড়বে এ প্রশ্নে ড. বশির বলেন, এটা আসলে তাদের সেøাগান। তারা এটা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জানিয়েছে। এটা কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়। এটাকে একটা বার্তা বা সতর্কবার্তা বলা যায়। নির্বাচন অনুষ্ঠান যারা বানচালের চেষ্টা করবে, সেটা শুধু সরকারি এজেন্সি বা সরকারি দলই নয়, বিরোধী দল থাকতে পারে। সরকারপক্ষ এটা গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ এবং পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে ইসির মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সেটিই তারা বলেছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন ভিসানীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দুটি বার্তা দিতে চেয়েছে। যারা ইতিবাচকভাবে এবং স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে তাদের এ ভিসানীতিতে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। এ প্রক্রিয়াকে যারা ব্যাহত হওয়ার চেষ্টা করবে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি, ভোট কারচুপি, অস্থির পরিবেশ তৈরি করা, তারা বা তাদের পরিবারের সদস্যরা ভিসার জন্য বিবেচিত হবেন না। বলা হয়েছে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা স্বাভাবিক গতিতে চলার জন্য যারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে, তাদের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র নেতিবাচক থাকবে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বাংলাদেশের প্রায় সব বন্ধুরাষ্ট্রই বলে আসছে। জাতিসংঘও বিষয়টি নিয়ে বলেছে দুদিন আগে। এ কূটনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবপক্ষকেই বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।
গত বুধবার এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানান, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে সহায়তার জন্য নতুন এ পলিসির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নতুন পলিসি অনুযায়ী, বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করলে বা তাতে সহায়তা করলে যেকোনো ব্যক্তিকে আর ভিসা নাও দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। যাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে তাদের মধ্যে বাংলাদেশের কর্মরত কিংবা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরাও রয়েছেন। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র গত ৩ মে বাংলাদেশকে অবহিত করেছে।
যেসব কাজকে যুক্তরাষ্ট্র গর্হিত হিসেবে অভিহিত করেছে সেগুলো হচ্ছে ভোটে কারচুপি, ভোটারদের ভয় প্রদর্শন, সহিংসতার মাধ্যমে মানুষকে জমায়েত বা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে না দেওয়া। এ ছাড়া রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীলসমাজ বা মিডিয়াকে তাদের মতপ্রকাশ করতে না দেওয়াও গর্হিত হিসেবে বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচন সুষ্ঠু করা নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের কথা রাখার চেষ্টা করেছে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছিলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রেখে ভোটের দিন ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত কঠোর থাকবে ইসি। কেউ অন্যায় করলে ছাড় পাবে না। তাদের সেই বক্তব্যের কিছুটা প্রতিফলন ঘটেছে গতকালের নির্বাচনে।
এ ছাড়া এই নির্বাচনকে ইসি নিজেরও আস্থা অর্জনের পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। সে কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোটের দিন সকাল থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বসানো ক্লোজ সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকা থেকে সরাসরি পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দিন শেষে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে কমিশন।
জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ ভালো ছিল। বলা চলে সন্তোষজনক। তবে ইভিএমের কারণে ভোট গ্রহণের গতি ধীর ছিল।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘রুশ স্বৈরশাসক স্টালিনের একটি উক্তি আছে কীভাবে ভোট হলো, কে ভোট দিল সেটা দেখার বিষয় নয়। কে ভোট গণনা করল সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে যারা ভোট দিয়েছে তাদের বেশিরভাগই বলছেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। কিন্তু ভোট গণনা যারা করছেন, তারা যে ফল উল্টো দিয়ে জায়েদা খাতুনের ভোট আজমত উল্লা খানকে বা আজমত উল্লা খানের ভোট জায়েদা খাতুনকে দিয়ে দেবেন না, সেটি নিশ্চিত কে করবে। আমাদের আপত্তির জায়গাটা সেখানেই।’
সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘পরিবেশ দৃশ্যমান শান্তিপূর্ণ ছিল। অশান্তির কোনো কারণও ছিল না। কেননা, সেখানে বিরোধী কোনো পক্ষ নেই। তারা তারাই ভোট করেছে। আজমত উল্লা খান আর জাহাঙ্গীর আলম দুজনই ক্ষমতাসীনদের পক্ষের। তাই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা থেকে শুরু করে নির্বাচন পর্যন্ত ইসির হস্তক্ষেপ দরকার পড়েনি।’
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘ইসি যে কথা বলেছিল, তা রাখতে তারা সচেষ্ট ছিল। দীর্ঘদিন পর মনে হয়েছে ভোটের পরিবেশ কিছুটা হলেও ফিরে এসেছে।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা পাঁচ সিটি নির্বাচনের প্রথমটি গাজীপুরে ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। নির্বাচনে বিএনপি না থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত সাবেক মেয়রের মাকে নিয়ে শুরু থেকে আলোচনা ছিল। কারণ বিএনপি না থাকায় এই স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনই আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন।
সকাল ৮টা থেকেই ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের পাঁচতলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন নির্বাচন কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ৪ হাজার ৪৩৫টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হয়। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব খান, মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান কন্ট্রোল রুমে বসে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন।
সকাল ১০টায় সিটি নির্বাচনের একটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরায় অনিয়ম দেখতে পান নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেন, বুথে পাঞ্জাবি পরা এক লোক বসে আছেন ১০১ কেন্দ্রের ৩ নম্বর বুথে। তিনি কারও কথা শুনছেন না। তিনি বেরও হচ্ছেন না। ভোটারদের জোর করে ভোট দেওয়াচ্ছেন। তার কারণে ভোটগ্রহণে সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত অ্যাকশনে যান, প্রয়োজনে তাকে গ্রেপ্তার করুন। একইভাবে ১০৩ নম্বর কেন্দ্রে আরেকজনকে ভোটগ্রহণে সমস্যা তৈরি করতে দেখে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ইসি জানায়, গোপন কক্ষে প্রবেশ এবং ভোটদানে প্রভাবিত করায় তাদের আটক করা হয়েছে। ১০১ ও ১০৩ নম্বর কেন্দ্র থেকে আটক করা দুজন হলেন যথাক্রমে রিয়াদুল ইসলাম রিয়াজ ও আবু তাহের।
পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বেশ কয়েকবার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। যদিও তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।
ভোটগ্রহণ শেষ হলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন চার নির্বাচন কমিশনার। তাদের দৃষ্টিতে ভোট কেমন হয়েছে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘আপনারাই আগে বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন কেমন হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আমাদের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা এবং গণমাধ্যম ও নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক টিমের কাছ থেকে যে খবর পেয়েছি, সেটি হচ্ছে, গাজীপুর সিটি নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যেসব প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, তারা সবাই বলেছেন নির্বাচনব্যবস্থায় তারা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। এই নির্বাচনে যে ফলাফলেই আসুক না কেন, তারা সবাই মেনে নেবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি ৫০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। তবে হিসাব করলে সঠিক তথ্যটা পাওয়া যাবে।’
ভোটার উপস্থিতি নিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচনী আইনে আছে, নির্বাচনে শেষ সময় পর্যন্ত যদি ভোটার উপস্থিতি থাকে, তাহলে ভোটারের ভোট না নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ব্যালটের ক্ষেত্রে যে নিয়ম, ইভিএমের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।’
সিসিটিভিতে কোনো অনিয়ম ধরা পড়েছে কি না এমন প্রশ্নে আলমগীর বলেন, ‘অনেক সময় ভোটারদের লাইন ধরা, কারও ভোট আগে নেওয়া, এ ধরনের কিছু জিনিস আমাদের কাছে ধরা পড়েছে, সেগুলোর বিষয়ে আমরা তাৎক্ষণিক ফোন দিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। এ ছাড়া দুটি কেন্দ্রে আমরা দেখেছিলাম, এজেন্ট ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন, তখন আমরা তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া আমাদের এবং পুলিশের নজরে আর কোনো ঘটনা আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় সাড়ে চার হাজার সিসিটিভি একসঙ্গে দেখা যায়নি। এগুলো পর্যায়ক্রমে দেখতে হয়েছে। একবারে ৩০০-৪০০ সিসিটিভি দেখা গেছে। এজন্য কিছু ঘটনা আমাদের নজরে নাও পড়তে পারে। সিসিটিভির এ উদ্যোগটাই আমাদের সফলতা। সিসিটিভিতে যেগুলো ধরা পড়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি।’
কেন্দ্রে জায়েদা খাতুনের এজেন্ট ছিল না এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘গাজীপুরে অবস্থানরত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। তারাও আমাদের বলেছে, এরকম কোনো কিছু হয়নি।’
সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে যুক্তরাষ্ট্র দায়ী ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্য ভিসা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে যে ভিসানীতি নিয়েছে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় নির্বাচন কমিশনার আলমগীরকে। এর জবাবে তিনি বলেন, ‘ইসির আইন অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে। এর সঙ্গে বিদেশিদের কোনো মন্তব্য আমরা নেব না। এটা রাষ্ট্র টু রাষ্ট্র দেখবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হত্যার হুমকি দেওয়া’ রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর ভেড়িপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিকেলে আদালতের মাধ্যমে পুলিশ তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে।
গতকাল চাঁদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর আরএমপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ। দুপুর ১২টার দিকে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে আরএমপি কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়ে চাঁদের ওই বক্তব্যের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হয়েছে। এরপর শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। বৃহস্পতিবার সকালে প্রাইভেটকারে তিনি পালানোর চেষ্টা করছিলেন। ভেড়িপাড়া মোড় থেকে তাকে পুলিশের একটি বিশেষ দল গ্রেপ্তার করে।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল তিনি (চাঁদ) আত্মগোপন চলে যাচ্ছেন। তাই রাজশাহী মহানগর ও জেলা পুলিশ তাকে ধরতে বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসায়। এই যৌথ অভিযানেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রেঞ্জ ডিআইজি বলেন, পুঠিয়া থানায় দায়ের হওয়া মামলায় চাঁদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেসব মামলা হয়েছে সেগুলোর তদন্তকারী কর্মকর্তারা এগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এদিকে, বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদকে এদিন বিকেলে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ। শুনানি শেষে রাজশাহী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৪ এর বিচারক মাহবুব আলম ৫দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন বলেন, পুঠিয়ার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার আসামি চাঁদকে আদালতে নেওয়ার পর পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। আদালত সার্বিক বিবেচনা করে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
কুমিল্লার লাকসামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ৭ জনকে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পৌর সদরের ৭নং ওয়ার্ডের গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন— ফারুক, রাশেদ, শাহজাহান ও মনির হোসেন। প্রাথমিকভাবে এদের নাম জানা যায়। তবে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত ব্যক্তির নাম মনির হোসেন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের অভিযোগ করে বলেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে তিনি দাবি করছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মিলাদ ও বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান। সকালে শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়। তবে চারটার দিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর অনুসারী ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবিদার জাহাঙ্গীর আলম, লাকসাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শিহাব খান এবং পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফ খানের নেতৃত্বে শতাধিক লোক মাদ্রাসার ফটকে তালা দেন। এ সময় আবদুল মান্নান তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আবদুল মান্নানের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেখানে হামলা হয়। এতে আহত হয়েছেন সাতজন। হামলার সময় রামদা দিয়ে মনির হোসেন নামের এক হকারের হাত ও পা কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। পরে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী (রাজনৈতিক)। বৃহস্পতিবার সকালে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর অনুষ্ঠান করি। বিকেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে দোয়ার আয়োজন করি। এ সময় জাহাঙ্গীর, শিহাব ও স্বাধীনের নেতৃত্বে শতাধিক লোক আমার এলাকার লোকজনের ওপর হামলা করেন। মনির নামের এক হকার অনুষ্ঠান দেখতে আসেন। তাঁকে কোপানো হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মন্ত্রীর লোকজন এই হামলা করেছেন। আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইব। সামাজিক এই কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে, যা ন্যক্কারজনক ঘটনা।
এ ঘটনার অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর, শিহাব ও সাইফের মুঠো ফোনে বার বার কল দিও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও লাকসাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাহাঙ্গীরকে প্রথমে মান্নান মারধর করে। এরপর সেখানে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি।
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের কর্মসূচিতে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এ নিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৯ দফার ভিত্তিতে ১৫টি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে 'ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য' আত্মপ্রকাশ করেছে।
আজ শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র হিসেবে এ ঘোষণা করেন। ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়কারী করা হয়েছে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানকে।
জোটভুক্ত হতে যাচ্ছে যেসব ছাত্রসংগঠন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জেএসডি), গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ, ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্রসমাজ (কাজী জাফর), জাতীয় ছাত্রসমাজ (পার্থ), জাগপা ছাত্রলীগ (লুৎফর) ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতি এবং রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন।
ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের দাবিসমূহ
১. বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারে আন্দোলনরত দলগুলোর ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা।
২. শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য হবে মানবিকতার বিকাশ, নৈতিকতা বোধের উন্নতি, মানুষে মানুষে বৈষম্যবিরোধী চিন্তার অনুশীলন এবং এই লক্ষ্য পূরণে শিক্ষাকাঠামো, পাঠদানপদ্ধতি, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক সমস্ত ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক চর্চাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপির অন্তত ৫ ভাগ বরাদ্দ করে সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বিকাশের উপযোগী হয়ে জাতীয় সম্পদে পরিণত হয়। একটি উৎপাদনমুখী অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এর প্রয়োজন মেটাতে বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণায় সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষার বিকাশ। বুনিয়াদি শিক্ষাকে সার্বজনীন, অবৈতনিক ও মানসম্মত করার উদ্যোগ গ্রহণ।
৩. সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সাইবার সিকিউরিটি আইনসহ নিবর্তনমূলক সকল আইন বাতিল করতে হবে।
৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্যাতনবিরোধী আইন করে শিক্ষাঙ্গনগুলোকে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব মুক্ত করা, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন, প্রথম বর্ষ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রদের সিট পাওয়ার বৈধ অধিকারের স্বীকৃতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ। সর্বোপরি দলমত নির্বিশেষে সকল সংগঠনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৫. শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর পুনর্নির্ধারণ, মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার পুনর্বিন্যাসসহ বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ। শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি করে পর্যাপ্ত উপকরণ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও মনোযোগের কথা মাথায় রেখে মিড ডে মিল চালু করতে হবে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভ্যাট (মূল্য সংযোজনী কর) আরোপ করা চলবে না। বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন-ফি কমাতে হবে এবং অভিন্ন নীতিমালা ও বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে।
৬. জ্ঞানকে গভীর করার জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ফলে সারা বিশ্বের সমস্ত ধ্রুপদী সাহিত্য ও পাঠ্যপুস্তককে মাতৃভাষায় রূপান্তরের জন্য একটি জাতীয় অনুবাদ সংস্থা স্থাপন করে দ্রুততার সাথে এই কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
৭. বর্তমান সরকার যেভাবে ইতিহাসের ব্যক্তিকেন্দ্রিক বয়ান তৈরি করেছে এবং জনগণের ভূমিকাকে নির্বাসিত করেছে তার বদলে বাংলাদেশের জনগণের নির্ধারক ভূমিকাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ইতিহাসে সকল ব্যক্তির যার যা অবদান আছে তার স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকাকে প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের সামনে প্রকৃত ইতিহাস পৌঁছে দেওয়ার জরুরি কাজটি করার জন্য পাঠ্যপুস্তক সংস্কার করতে হবে।
৮. শিক্ষার্থীদের মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণের সমস্ত ব্যবস্থা এবং শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সহজ শর্তে শিক্ষা ঋণ দিতে হবে। সকল শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যবিমার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করার জন্য সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে।
৯. সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর সুযোগের সমতা এবং নাগরিক অধিকারের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির আওতায় আসতে পারেন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এমন কথাই জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
একইসঙ্গে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসসহ অন্য সকল কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিনের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ছাড়াও নাগরিকদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি এখন নির্দিষ্ট কোনও পদক্ষেপ ঘোষণা করতে যাচ্ছি না। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের ঘোষণা অনুসারে বাংলাদেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকার এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভীসা নীতি কার্যকর করার পদক্ষেপ আমরা শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ মে ভিসা নীতি ঘোষণার সময় আমরা এটা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি। আমরা ভিসা নীতির কথা বলেছি তবে কারও নাম উল্লেখ করিনি। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দুর্বল ও বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত যেকোনও বাংলাদেশির ক্ষেত্রে এই ভিসা নীতি কার্যকর হবে। অন্য যেকোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি আমরা মনে করি তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে আমরা এই নীতি প্রয়োগ করব।
দেশের ক্রিকেট নিয়ে নানা সময়ে আলোচিত-সমালোচিত বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপান। জাতীয় দলের প্রায় প্রতিটি বিষয় নিয়েই মাথা ঘামান তিনি। তার এই তৎপরতাকে কীভাবে দেখেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রশ্ন করা হয়েছিল সাকিবে। তার সোজাসাপটা জবাব, ‘আমার সঙ্গে (সম্পর্ক) কখনো অস্বস্তির হয়নি। আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো। আমি ওনাকে বুঝি। উনি আমাকে বোঝেন। আমাদের মধ্যে কথা হয়, এমন হলে ভালো হতো, অমন হলে ভালো হতো। যে আলোচনাটা হয়, ফলদায়ক হয়। আমার কাছে (তাঁর সঙ্গে কাজ করা) সমস্যা হয়নি কখনো।’
নাজমুলের আগে বিসিবি সভাপতি ছিলেন এখনকার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। তিনিও জাতীয় দলের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই জড়িত ছিলেন বলে জানান সাকিব। তবে নাজমুল অনেক বেশি জড়িত বলে মনে করেন সাকিব, 'কামাল ভাইও দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। হয়তো তখন এত মিডিয়া ছিল না, উনি হয়তো মিডিয়াতে অত কথা বলেন নাই। যে কারণে জানা যেত না। কিন্তু দলে কী হচ্ছে, এসবে উনিও জড়িত ছিলেন। আর পাপন ভাই যেটাকে বলে ইন হ্যান্ডস জড়িত। অনেক বেশি যুক্ত। এমন বোর্ড প্রেসিডেন্ট পাওয়াও কঠিন।’
অনেক বেশি জড়িত থাকা বোর্ডপ্রধান ভালো কি মন্দ, প্রশ্ন করা হলে সাকিবের চটজলদি জবাব, ‘দুটোই। নিতে পারলে ভালো। যারা নিতে পারে না, তাদের জন্য অনেক ডিফিকাল্ট।’
নাজমুল হাসানের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে তার মধ্যে যদি একটা ভালো দিক খুঁজতে বলেন প্রশ্নকর্তা। সাকিব বলেন ‘বিশেষভাবে জাতীয় দলের জন্য সবকিছু করতে রাজি আছেন।'আর মন্দ দিক কোনটি? হাসতে হাসতে সাকিবের জবাব, ‘মে বি ইন্টারভিউ (হয়তো সাক্ষাৎকার)’।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।