
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এশিয়ার লৌহমানবী (আয়রন লেডি) আখ্যা দিয়েছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িক দ্য ইকোনমিস্ট। গত বুধবার ‘শেখ হাসিনা ইজ এশিয়া’জ আয়রন লেডি’ শিরোনামে এক সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনে সাময়িকীটি শেখ হাসিনাকে এ বিশেষণ দিয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নর্দার্ন ভার্জিনিয়ার হোটেল স্যুটে তার সাক্ষাৎকার নেয় ইকোনমিস্ট।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে সাময়িকীটি বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকা নারী সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। এমনকি নারী ও পুরুষ সরকারপ্রধানদের মধ্যেও তিনি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যদের একজন। প্রায় দুই দশক ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশের এ সরকারপ্রধান ১৭ কোটি মানুষের দেশের দারিদ্র্য বিমোচনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার ক্ষমতার মেয়াদের বেশিরভাগ সময়ে দেশের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ রয়েছে। ৭৫ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী তার দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে মোট চারবার ক্ষমতাসীন হয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে তার নেতৃত্বেই পরপর তিনটি নির্বাচনে জয়লাভ করেছে দলটি। যা ইন্দিরা গান্ধী বা মার্গারেট থ্যাচারের ক্ষমতার চেয়েও বেশি। আগামী বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওই নির্বাচনেও তিনি জয়ী হবেন বলে আশা করছেন।
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ নিয়ে তার স্বপ্ন ও উচ্চাশার বিষয়ে জানতে চেয়েছিল ব্রিটিশ এ সাময়িকী। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এ দেশকে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ করতে চাই।’ তারপর ভয়াবহ ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি ভাবতে পারেন, তারা আমার বাবাকে হত্যা করেছে?’
ইকোনমিস্ট বলছে, তার বাবা ও বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কাছ থেকে দেশটির রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা লাভের চার বছর পর ১৯৭৫ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন। তার ১৭ জন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় খুন হয়েছিলেন। সেই সময় শেখ হাসিনা ইউরোপে থাকায় বেঁচে যান।
দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শেখ হাসিনা তার বাবার স্থলাভিষিক্ত হওয়া সামরিক সরকারকে দায়ী করেন। একই সঙ্গে তার সরকারের সদস্যদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে একটি প্রকল্পের অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার ঘটনায় বিশ্বব্যাংককে অভিযুক্ত করেন। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির যে অভিযোগ তুলেছিল, সেটির কোনো অস্তিত্ব নেই বলেও দাবি করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, হয়তো নিচের স্তরে আছে। তবে আজকাল তেমন নেই। তারা দুর্নীতির সাহস করলে আমি ব্যবস্থা নেব!
ইকোনমিস্ট বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আফগানিস্তানের পরই আছে বাংলাদেশ। তালেবানের উত্থানে এ অঞ্চলে এখন সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ আফগানিস্তান। শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মধ্যে বারবার ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। বর্তমানে খালেদা জিয়া গৃহবন্দি রয়েছেন। তার দলের কর্মী-সমর্থকরাও ভীত। আগামী নির্বাচন বিএনপিকে ফেরার পথ দেখাবে কি না, সেটি পরিষ্কার নয়। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সুষ্ঠু ভোটের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে শুধু ‘প্রকৃত রাজনৈতিক দলকেই’ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দেওয়া উচিত এবং তার বিরোধীরা নির্বাচনী মানদণ্ড পূরণ করতে পারছে না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা অর্ধশতাব্দী আগে সেনাশাসনের অধীনে গঠিত বিএনপিকে ‘একজন সামরিক শাসক কর্র্তৃক অবৈধভাবে গঠিত’ রাজনৈতিক দল বলে অভিযোগ করেছেন।
ইকোনমিস্ট লিখেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর কবজায় থাকার কারণে বাংলাদেশ সম্ভবত কিছুক্ষেত্রে উপকৃতও হচ্ছে। তবে তা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার স্পষ্টতই খুব বেশি বাড়ায়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার আগেই এ প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেয়েছিল। আগের বিদ্যমান বিভিন্ন অবকাঠামো ও অন্যান্য উপাদানের কল্যাণে তা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো পণ্য; যেমন দেশের পোশাকশিল্প এবং অভিজাত এনজিওগুলোর সরবরাহ করা সেবা। তারপরও তিনি দেশের অবকাঠামো বিনিয়োগসহ বিভিন্ন নীতিমালা তৈরি করেছেন; যা প্রবৃদ্ধির গতি বজায় রাখতে সহায়তা করেছে।
ব্রিটিশ সাময়িকী বলছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র হয়তো একসময় শেখ হাসিনাকে সতর্ক করেছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান উদ্বেগ বাংলাদেশে চীনের স্থান করে নেওয়া। বাংলাদেশের সরকার বিনিয়োগের জন্য চীনকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে শেখ হাসিনার। তারাও একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ তিন শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক ঢেলে সাজাতে পারদর্শী বলে মনে হয়।
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমেরিকা এবং চীনের সম্পর্ক তাদের নিজেদের ব্যাপার। আমি কেন সেখানে নাক গলাব?’ এরপর আমেরিকার সমালোচনা করেন তিনি। কারণ এ দেশটি একসময় খালেদা জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা বলে, তারা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র... কিন্তু আমাদের দেশে তারা এর চর্চা করে না। কেন তারা আমাকে সমর্থন করে না?’
ইকোনমিস্ট লিখেছে, শেখ হাসিনার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এক সাহসিকতার গল্প। শেখ হাসিনার সরকারের সর্বশেষ পরিকল্পনার শিরোনাম হলো ভিশন-২০৪১। তবে তিনি এটি দেখতে পারবেন না বলে স্বীকার করেছেন। ক্ষমতায় তৃতীয় দশক পেরিয়ে গেলেও উত্তরাধিকার পরিকল্পনা তার এজেন্ডায় নেই বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘কারণ আমি যদি না থাকি... তাহলে কে ক্ষমতায় আসবে, তা আমি জানি না।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন যে শঙ্কার কারণে মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল, সেটা দূর করতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার নানা মহলের নানা ভাবনা ও শঙ্কা দূর করে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করতে পেরেছে জাতীয় নির্বাচনের আগে আস্থা অর্জনের পরীক্ষায় বসা সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। ইসির কড়া নজরদারির মধ্যে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সকাল ৮টা থেকে শুরু করে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ করা হয়। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও সেগুলোকে নগরবাসী তুচ্ছ করেই দেখছেন।
এমন ভোটের পর ফলাফল ঘোষণার পালা শুরু হয়। রাত দেড়টায় নগরীর বঙ্গতাজ মিলনায়তনে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে ৪৮০ কেন্দ্রের ভোটের ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার ফরিদুল ইসলাম। এতে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতীকের জায়েদা খাতুনকে। তিনি পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। তৃতীয় হয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান (হাতপাখা)। তিনি পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৩৫২ ভোট। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনি (হাতি) পেয়েছেন ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট।
সকাল থেকে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে বসে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ভোট পর্যবেক্ষণ করেন নির্বাচন কমিশনাররা। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, শান্তিপূর্ণ ভোটে নির্বাচন হয়েছে। কমিশন সন্তুষ্ট। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে তাদের ধারণা ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে ফল ঘোষণা করে রিটার্নিং অফিসার জানান, ভোট পড়েছে ৪৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
ফল ঘোষণার সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান ফলাফল পরিবেশন কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন না। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী সমন্বয়ক ও তার ছেলে গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম সেখানে ছিলেন। ফল ঘোষণার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখানে নৌকা জিতেছে, ব্যক্তি হেরেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা নিয়ে গাজীপুর নগরীর উন্নয়ন করতে চান তারা।
এর আগে রাত ৯টার পর ফলাফল ঘোষণায় দেরি হতে দেখে জাহাঙ্গীর আলম সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তার মা জিতেছেন। তবে ফল বদলানোর চেষ্টা চলছে।
ভোটের আগে মেয়র প্রার্থীদের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের চোখ গাজীপুরের দিকেই ছিল। কিন্তু ভোটগ্রহণের পুরো সময় মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীদের কারোর অভিযোগ ছিল না। ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রের ভোটগ্রহণে ব্যবহার করা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম), যা একটু ত্রুটি-বিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে।
প্রায় ১২ লাখ ভোটারের এ সিটি করপোরেশনের ভোটের এক দিন আগেও সাধারণ মানুষ এত সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোট সম্পন্ন হবে তা ভাবতে পারেনি। কিন্তু সরকার ও ইসির উদ্যোগে যে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা ছাড়া কোনো বক্তব্য নেই তাদের।
সকালেও শঙ্কা নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে আসার পর সুমন রাজমোহন নামে এক ব্যক্তি ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, গাজীপুর সিটির নির্বাচন নিয়ে সরকার ও ইসির কড়া সমালোচকরাও আপত্তি তুলতে পারেননি। নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সুমন রাজমোহনের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয় মাদববাড়ি মোড়ের একটি চায়ের দোকানে বসে। তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতে, ভোটের দিন সকালেও মনে হয়েছে কোনো অঘটন ঘটবে।’
সরেজমিনে সকালের দিকে শহরের কয়েকটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ভোটারদের উপচে পড়া ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে। নগরীর প্রায় সব ভোটকেন্দ্রে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। অল্প কিছু ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল।
সাধারণ ভোটারদের অনেকেই ভোটগ্রহণে ধীরগতির অভিযোগ তোলেন। এ প্রসঙ্গে ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, গাজীপুরে এই প্রথম ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। ভোটারদের অনভিজ্ঞতা, যান্ত্রিক ত্রুটি ও বয়স্ক নারী-পুরুষদের ক্ষেত্রে একটু সময় লেগেছে বলেই ধীরগতি ঘটেছে। তবে কোনো কোনো কর্মকর্তা দাবি করেন, ইভিএমে একটু দেরিই হয়।
গাজীপুর জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কম। ভোটগ্রহণ শেষের আধা ঘণ্টা আগে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ৩ হাজার ১৪৫ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়ে ৮০০। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কাজী সাইয়েদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শহরের মূল এলাকায় হলেও এই কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম কেন তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।’
টঙ্গীর মজিদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের নারী কেন্দ্রে ২ হাজার ৫৮টি ভোটের মধ্যে ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত ১২০০-এর কিছু বেশি ভোট পড়েছে। জানতে চাইলে এ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নুরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, তার কেন্দ্রের ৬টি বুথেই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। ভোটে ধীরগতির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ইভিএম নতুন সিস্টেম। তা ছাড়া বয়স্ক নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে একটু সময় লেগে যাচ্ছে। যান্ত্রিক ত্রুটিও এ ক্ষেত্রে দায়ী। অনেকের আঙুলের ছাপ মিলছিল না।’ বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে কথা হয় নুরুল ইসলাম নামে এক ভোটারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঘণ্টাখানেক আগে লাইনে ২০-২২ জনের পেছনে দাঁড়িয়েছিলাম। ভোট নিতে দীর্ঘ সময় লাগছে। এ সময় তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক ভোটার হারিস বলেন, ‘২৫-৩০ জনের পেছনে দাঁড়িয়েছি। দুই ঘণ্টা পরও আমরা ভোট দিতে পারছি না। একেকজনের ভোট দিতে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ সময় বেশি লাগছে।’
শহরের শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ে তিনটি ভোটকেন্দ্র। একেবারে মূল ফটক থেকে বুথ পর্যন্ত ভোটারদের ভিড়। একটি কেন্দ্রের ৯টি বুথের মধ্যে ৩টিতে সকালে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) জটিলতা দেখা দেয়। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, কয়েক মিনিটের মধ্যে টেকনিশিয়ানরা সমস্যার সমাধান করেছেন। যদিও পরে অনেক ভোটারেরই আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোটগ্রহণে ধীরগতি দেখা যায়।
মোগরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩ হাজার ২৪৬ জন ভোটারের মধ্যে পৌনে ১২টা পর্যন্ত ৭৫৬টি ভোট পড়ে। কেন্দ্রে ১০টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়। ইভিএমে জটিলতায় কয়েকটি বুথে কিছুক্ষণ ভোট নেওয়া বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছেন ইভিএমের টেকনিশিয়ান। তিনি বলেন, ভোটারের তথ্য মেমোরি কার্ডে সংরক্ষিত থাকে, অনেক সময় তা রিড করতে পারে না, তাই কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছিল, তাৎক্ষণিকভাবে ইভিএম বন্ধ করে চালু (রিস্টার্ট) করা হলে পুনরায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তবে এরই মধ্যে ভোটারের লম্বা সারি তৈরি হয়।
নগরীর আসলামপুর, বাসন, কড্ডা, ভোগড়া, চান্দনা চৌরাস্তা, যোগীতলা, চান্দনা, শহীদ স্মৃতি স্কুল, রানী বিলাসমণি সরকারি স্কুল, সরকারি মহিলা কলেজ ও টঙ্গীর ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি কেন্দ্রসহ ৩৫টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এসবের কোনো কোনো কেন্দ্রে মেয়র প্রার্থী আজমত ও কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট ছাড়া অন্য কোনো মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট ভোটকেন্দ্রে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রগুলোর প্রিসাইডিং অফিসাররা জানান, এজেন্টরা কেন্দ্রে আসেননি।
সিটি করপোরেশনের বাসন থানার ইসলামপুর ও বাসন কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন এজেন্ট আবদুল মান্নান ও খালেদা আক্তার। তারা বলেন, সকালে তারা ওই কেন্দ্রে গেলে কিছুক্ষণ পর নৌকা প্রতীকের লোকজন তাদের পেছনের দরজা দিয়ে বের করে দেয়। তবে কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কর্মকর্তারা বলেন, এজেন্টদের বের করে দেওয়া, এজেন্টদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার অভিযোগ ভিত্তিহীন।
তবে ভোটকেন্দ্রগুলোতে অপপ্রচার চালানোর দুরভিসন্ধি নিয়ে কিছু নারী-পুরুষ কেন্দ্রে খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এসে অভিযোগ করেন, তাকে মেয়র পদে ভোট দিতে দিচ্ছে না ওরা। এ সম্পর্কে পরে খোঁজ নিতে গিয়ে সত্যতা পাওয়া যায়নি। টঙ্গীর টিডিএস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মহিলা কেন্দ্রে আনোয়ারা বেগম নামে এক নারী ভোটার গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে গিয়ে মেয়র পদে ভোট দিতে দেননি অভিযোগ করেন। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা এটি বিভ্রান্তিকর। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, এ অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি চাইলে এখন ভোট দিয়ে যেতে পারবেন জানান ওই কর্মকর্তা।
নাগা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সালনা নাগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়। তবে এতে ভোটগ্রহণে বাধাগ্রস্ত হয়নি।
নাগা মোক্তারবাড়ি গ্রামের কবীর আহমেদ নামে এক ভোটার বলেন, লাটিম প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী সাইফুল ইসলাম এবং করাত প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. শাহীন আলমের সমর্থকদের মধ্যে এই ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। একজনের বোতামে আরেকজন চাপ দেওয়াকে কেন্দ্র করে এই ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর বক্তব্য : এর আগে সকালে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের টঙ্গীর আরিচপুরে দারুস সালাম মাদ্রাসা কেন্দ্রে সকাল পৌনে ৯টার দিকে ভোট দেন।
অন্যদিকে, সকাল ১০টার দিকে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম জয়দেবপুরের কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন।
ভোট দেওয়ার পর আজমত উল্লা খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনগণের ভালোবাসা থেকে আমি বলতে পারি, জয়-পরাজয় আল্লাহ কর্র্তৃক নির্ধারিত। আমি বিশ্বাস করি, ফয়সালা আসমান থেকে হয়। আল্লাহ যা চান তা জনগণের মাধ্যমে প্রকাশ করবেন।’
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের কাছে এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন। ইভিএমের ধীরগতি নিয়েও তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
হাতি প্রতীকের রনির অভিযোগ : স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনির প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মো. মাহবুবুর রহমান শাহীন রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তিনি বলেন, সকালে তাদের হাতি প্রতীকের পোলিং এজেন্টরা নিজ নিজ কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে গেলে নৌকার ব্যাজ ধারণ করে কেন্দ্রের বাইরে অবস্থানরত সরকারদলীয় লোকজন ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাদের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়। এমনকি বিভিন্ন কেন্দ্রের ভেতর দায়িত্বরত অবস্থায়ও আমাদের হাতি প্রতীকের পোলিং এজেন্টদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
তার অভিযোগ, নির্বাচনের কয়েক দিন আগে থেকে পুলিশ দিয়ে তাদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি ও গণগ্রেপ্তার শুরু করে।
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নতুন ভিসানীতির ব্যাখ্যায় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের অংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এ কথা বলেন তিনি।
ওই বৈঠক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি সম্পর্কে ড. মোমেন বলেন, ভিসানীতি সুষ্ঠু নির্বাচনে কতদূর সাহায্য করবে তা জানি না। তবে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র নতুন যে ভিসানীতির ঘোষণা দিয়েছে, তা নিয়ে সরকার কোনো চাপে নেই।
এর আগে গতকাল দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি নিয়ে আলোচনা করতেই পিটার হাস পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন তারা।
বৈঠক প্রসঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। মাঝেমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়, এটি তারই অংশ। আমরা দুই দেশের সম্পর্ক আরও কীভাবে সম্প্রসারণ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈঠকে নতুন ভিসানীতি নিয়েও কথা বলেছি। যেটি গতকাল (বুধবার) যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আমরা নতুন ভিসানীতি করেছি। বাংলাদেশের মানুষ, সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও সবার জন্য এটি সহায়ক হবে। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্যও ঘোষিত নতুন ভিসানীতি সহায়ক হবে।’
পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য যে ভিসানীতি করেছে, তাতে আমরা আশা করছিÑ আমরা যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই, বিশেষ করে, আমরা তো জ্বালাও-পোড়াও চাই না, এটা সাহায্য করবে। এ কারণে (ভিসানীতি) হয়তো যারা জ্বালাও-পোড়াও করে নির্বাচনকে বানচালের চেষ্টা করে তারা হয়তো তার প্রেক্ষিতে বিরত থাকব। তবে আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত নই।’
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এ ভিসানীতি গ্রহণ করা হয়েছে কি না এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তাদের আমি রিজেক্ট (বাতিল) করব কেন? আমাদের যেগুলো অঙ্গীকার, আমরা যেটি চাই তাদের পলিসিতে সেটিরই পুনরাবৃত্তি হয়েছে। আমাদের কোনো অস্বস্তি নেই। তারা করেছেন তাদের নিয়মে। এটি যদি অবাধ ও সুষ্ঠু সহায়তা করে, তাহলে ভালো। তবে আমি নিশ্চিত নই। কারণ এটার কোনো পরীক্ষা আগে হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চেয়েছি, এ ভিসানীতি পরীক্ষিত হয়েছে কি না। তিনি জানিয়েছেন, এটা পরীক্ষিত হয়নি। এটা তাদের নতুন নীতি। তারা আশা করে, এটা বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হবে। তারা নাইজেরিয়া, সোমালিয়াসহ কয়েকটি দেশে করেছে। এটি তাদের নতুন প্রচেষ্টা। এর ফলে কোথাও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে কি না জানতে চেয়েছিলাম। রাষ্ট্রদূত বলেছেন, এটা এখন বলা যাবে না।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য কাজ করেছে। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্যই আওয়ামী লীগ। সারা জীবনই নির্বাচনের জন্য কাজ করেছে দলটি। আমাদের দেশে যদি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হয়, সেই সরকার টিকতে পারে না। একটা হয়েছিল বিএনপির সময়, তারা গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় টিকতে পারেননি। আমাদের দেশের মানুষ নির্বাচনমুখী। আমরা সব সময়ই চাই অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হোক। আমরা জ্বালাও-পোড়াও গ্রহণ করব না। মানুষ নির্যাতিত হোক, মারা যাক, সেটি আমরা গ্রহণ করব না। আমরা চাই না, রাস্তাঘাট বন্ধ করে সমাবেশ হোক।’
নির্বাচন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ঘোষণা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো কি নাÑ এ প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারব না। আপনারা বিশ্লেষণ করেন। তাদের একটা ভাবনা হচ্ছে, বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের যাতে উন্নয়ন হয়, সেটি করা। তারা চেষ্টা করুক। তাদের দেশেও তো নির্বাচনী ঝামেলায় মানুষ মারা গেছেন। আমেরিকার ৭৫ ভাগ রিপাবলিকান মনে করেন গত নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়েছে। সর্বদলীয় ৭৭ শতাংশ মানুষ মনে করে তাদের নির্বাচনে দুর্বলতা আছে। কোনো দেশেরই নির্বাচন পারফেক্ট না।’
এদিকে, পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, বিএনপির পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং জাপার পক্ষে দলের মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর গুলশানে রাষ্ট্রদূতের বাসায় এই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কাউন্সিলর স্কট ব্র্যান্ডন, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বেও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।
এ বৈঠকের পর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের আমীর খসরু বলেন, ‘আগামী নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিকে আমরা স্বাগত জানাই। কারণ বাংলাদেশে এ মুহূর্তে মানুষের নির্বাচন নিয়ে যে শঙ্কা, আমি মনে করি এ ধরনের একটি পদক্ষেপ আগামী দিনে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি ক্ষমতাসীনদের ভোট কারচুপির চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে বড় ধরনের সিগন্যাল বলে মনে করি আমরা।’
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাপা। বৈঠকের ব্যাপারে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা দলের পক্ষ থেকে বলেছি, যেহেতু আমেরিকার সরকার বাংলাদেশে যেন একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হয়, সেজন্য এই ভিসানীতি করেছে, সে উদ্দেশ্যটা ভালো। সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা দেবে, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করবে বা অন্যকিছু করবে, তাদের আমেরিকা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এগুলোর উদ্দেশ্য হলো আমেরিকার সরকার আন্তরিকভাবে চায় বাংলাদেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। যেহেতু তাদের উদ্দেশ্যটা ভালো, তাই দলের পক্ষ থেকে তাদের এই নীতিটাকে স্বাগত জানাই।’
জাপা মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা আরও বলেছি, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি বড় দল। তারাসহ সব রাজনৈতিক দল যদি সংলাপে না বসে, তাহলে নির্বাচনসহ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যেসব তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে, সংকট দেখা দিয়েছে, সেগুলোর কোনো সমাধান হবে না।’
জাপা মহাসচিব বলেন, বৈঠকে অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি। শুধু ভিসানীতি নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তিন পার্টির দুজন করে দাওয়াত করেছিল। রাষ্ট্রদূত ভূমিকাতে তাদের ভিসানীতি ও সেখানে বাংলাদেশের প্রসঙ্গটুকু বলেছে। পরে এ বিষয়ে দলগুলোর মতামত জানতে চাইল।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বৈঠকের ভূমিকাতে পিটার হাস বলেছেন, এই নির্বাচনের বিষয়ে তারা এই ভিসানীতি করেছে। তারা চায় সব দেশেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক, নির্বাচন সুষ্ঠু হোক। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন। এর আগেও অনেক প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন যাতে যথাযথ সুষ্ঠু ও অবাধ হয়, সেজন্যই এমন ভিসানীতি করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যারাই বাধা দেবে বা প্রভাব বিস্তার করবে, তারা যেই হোক, নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত জুডিশিয়ারি, পুলিশ, অ্যাডমিন, পলিটিক্যাল বা পৃথকভাবে কেউ, তাদের ব্যাপারে কোনো প্রমাণ পেলে তাদের আমেরিকার ভিসা দেওয়া-না দেওয়া এবং তাদের মধ্যে যারা সেখানে আছে, তাদের ভিসাও বাতিলের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করবে।’
জাপা মহাসচিব জানান, তিন দলের বৈঠক একসঙ্গেই হয়েছে। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে ঘরোয়া পরিবেশে চা খেতে খেতে সবাই সামনাসামনি আলোচনা করেছেন। দুপুর ১২টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক পৌনে ২টার দিকে শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহায়তা করারও পরামর্শ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা খোলামেলাভাবেই বলছে, তারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। গত বুধবার দেশটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণায়ও সেই প্রত্যাশার কথাই বলা হয়েছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঘোষিত ভিসানীতি নিয়ে আসলে কোনো রাজনৈতিকপক্ষ বা নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কারও নেতিবাচক বা ইতিবাচক মন্তব্য করার সুযোগ দেখা যাচ্ছে না। এখানে তারা নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সবপক্ষের প্রতিই একটা বার্তা দিয়েছে। এটাকে সতর্কবার্তা বলা যেতে পারে। তবে এটা কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়। কাজেই কারও খুশি হওয়া বা বেজার হওয়ার বিষয় এ নতুন ভিসানীতিতে নেই।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটা সারা বিশ্বে বর্তমান মার্কিন প্রশাসন তথা জো বাইডেন প্রশাসনের যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সম্প্রসারণ করার লক্ষ্য, এটি তারই একটি প্রচেষ্টা।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ সরকার, সরকারি দল, বিরোধী দল এবং নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যারা যুক্ত থাকবেন তাদের অবশ্যই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকেই যাওয়া উচিত। তারা বলেন, বিএনপি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। তারাও বিদেশিদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করছে। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এবং গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশ সফরে আসা মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল বৈঠক করছে। এসব বৈঠকে তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না বলে দাবি করেছে। এজন্য তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলে আসছে। তবে আন্তর্জাতিক মহল থেকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এখনো কোনো বক্তব্য আসেনি। সবাই দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা করে। তারা মনে করেন, এবার নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিদেশিদের কোনো বিষয় নেই। তারা বরং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনেই চায়। আর এর মধ্যে সরকারপ্রধান তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ও দেশের বাইরে তার বক্তব্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বার্তাই দিচ্ছেন। তারপরও বড় দল বিএনপির দাবিগুলোর বিষয়ও হয়তো বিদেশিরা দেখছে।
প্রসঙ্গত, নতুন ভিসানীতিতে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত বা তাতে সহায়তা করলে যেকোনো ব্যক্তিকে আর ভিসা নাও দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। যাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশের কর্মরত কিংবা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরাও রয়েছেন।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. বশির আহমেদ গতকাল বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই কথা বলছে। গত ২০২২ ও ’২৩ সালের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। গত এক বছরে ওয়াশিংটন থেকে অনেক কর্মকর্তারা এসেছেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী এবং বাংলাদেশের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক রিলেশনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়েও তারা তাদের অভিমত প্রকাশ করেছেন। সেসব বক্তব্যে তারা বলেছেন, পরবর্তী যে সংসদ নির্বাচন হবে তা যেন কোনো প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকে। সেই নির্বাচন যেন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়। সেই বিষয়টা মার্কিন প্রশাসন ও পর্যবেক্ষকরা বলে আসছেন। সরকারের আলোচনায়ও তা উঠে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রশাসন এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের যে এজেন্ডা সেটা বিশ্বব্যাপী যে গণতন্ত্রকে প্রসারিত করা এবং সম্প্রসারণ করা। ডেমোক্রেটিক পার্টির যে এজেন্ডা তা হলো বিশ্বে তারা পশ্চিমা গণতন্ত্রের যে বিকাশ ও প্রকাশ দেখতে চায়, সেটা এর মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।
নতুন ভিসানীতিতে নির্বাচনে কী প্রভাব পড়বে এ প্রশ্নে ড. বশির বলেন, এটা আসলে তাদের সেøাগান। তারা এটা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জানিয়েছে। এটা কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়। এটাকে একটা বার্তা বা সতর্কবার্তা বলা যায়। নির্বাচন অনুষ্ঠান যারা বানচালের চেষ্টা করবে, সেটা শুধু সরকারি এজেন্সি বা সরকারি দলই নয়, বিরোধী দল থাকতে পারে। সরকারপক্ষ এটা গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ এবং পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে ইসির মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সেটিই তারা বলেছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন ভিসানীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দুটি বার্তা দিতে চেয়েছে। যারা ইতিবাচকভাবে এবং স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে তাদের এ ভিসানীতিতে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। এ প্রক্রিয়াকে যারা ব্যাহত হওয়ার চেষ্টা করবে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি, ভোট কারচুপি, অস্থির পরিবেশ তৈরি করা, তারা বা তাদের পরিবারের সদস্যরা ভিসার জন্য বিবেচিত হবেন না। বলা হয়েছে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা স্বাভাবিক গতিতে চলার জন্য যারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে, তাদের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র নেতিবাচক থাকবে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বাংলাদেশের প্রায় সব বন্ধুরাষ্ট্রই বলে আসছে। জাতিসংঘও বিষয়টি নিয়ে বলেছে দুদিন আগে। এ কূটনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবপক্ষকেই বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।
গত বুধবার এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানান, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে সহায়তার জন্য নতুন এ পলিসির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নতুন পলিসি অনুযায়ী, বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করলে বা তাতে সহায়তা করলে যেকোনো ব্যক্তিকে আর ভিসা নাও দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। যাদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে তাদের মধ্যে বাংলাদেশের কর্মরত কিংবা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, সরকারি বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরাও রয়েছেন। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র গত ৩ মে বাংলাদেশকে অবহিত করেছে।
যেসব কাজকে যুক্তরাষ্ট্র গর্হিত হিসেবে অভিহিত করেছে সেগুলো হচ্ছে ভোটে কারচুপি, ভোটারদের ভয় প্রদর্শন, সহিংসতার মাধ্যমে মানুষকে জমায়েত বা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে না দেওয়া। এ ছাড়া রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীলসমাজ বা মিডিয়াকে তাদের মতপ্রকাশ করতে না দেওয়াও গর্হিত হিসেবে বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচন সুষ্ঠু করা নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের কথা রাখার চেষ্টা করেছে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছিলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রেখে ভোটের দিন ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত কঠোর থাকবে ইসি। কেউ অন্যায় করলে ছাড় পাবে না। তাদের সেই বক্তব্যের কিছুটা প্রতিফলন ঘটেছে গতকালের নির্বাচনে।
এ ছাড়া এই নির্বাচনকে ইসি নিজেরও আস্থা অর্জনের পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। সে কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোটের দিন সকাল থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বসানো ক্লোজ সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ঢাকা থেকে সরাসরি পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দিন শেষে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে কমিশন।
জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ ভালো ছিল। বলা চলে সন্তোষজনক। তবে ইভিএমের কারণে ভোট গ্রহণের গতি ধীর ছিল।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘রুশ স্বৈরশাসক স্টালিনের একটি উক্তি আছে কীভাবে ভোট হলো, কে ভোট দিল সেটা দেখার বিষয় নয়। কে ভোট গণনা করল সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে যারা ভোট দিয়েছে তাদের বেশিরভাগই বলছেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। কিন্তু ভোট গণনা যারা করছেন, তারা যে ফল উল্টো দিয়ে জায়েদা খাতুনের ভোট আজমত উল্লা খানকে বা আজমত উল্লা খানের ভোট জায়েদা খাতুনকে দিয়ে দেবেন না, সেটি নিশ্চিত কে করবে। আমাদের আপত্তির জায়গাটা সেখানেই।’
সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘পরিবেশ দৃশ্যমান শান্তিপূর্ণ ছিল। অশান্তির কোনো কারণও ছিল না। কেননা, সেখানে বিরোধী কোনো পক্ষ নেই। তারা তারাই ভোট করেছে। আজমত উল্লা খান আর জাহাঙ্গীর আলম দুজনই ক্ষমতাসীনদের পক্ষের। তাই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা থেকে শুরু করে নির্বাচন পর্যন্ত ইসির হস্তক্ষেপ দরকার পড়েনি।’
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘ইসি যে কথা বলেছিল, তা রাখতে তারা সচেষ্ট ছিল। দীর্ঘদিন পর মনে হয়েছে ভোটের পরিবেশ কিছুটা হলেও ফিরে এসেছে।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা পাঁচ সিটি নির্বাচনের প্রথমটি গাজীপুরে ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। নির্বাচনে বিএনপি না থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত সাবেক মেয়রের মাকে নিয়ে শুরু থেকে আলোচনা ছিল। কারণ বিএনপি না থাকায় এই স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনই আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন।
সকাল ৮টা থেকেই ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের পাঁচতলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন নির্বাচন কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ৪ হাজার ৪৩৫টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হয়। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব খান, মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান কন্ট্রোল রুমে বসে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন।
সকাল ১০টায় সিটি নির্বাচনের একটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরায় অনিয়ম দেখতে পান নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেন, বুথে পাঞ্জাবি পরা এক লোক বসে আছেন ১০১ কেন্দ্রের ৩ নম্বর বুথে। তিনি কারও কথা শুনছেন না। তিনি বেরও হচ্ছেন না। ভোটারদের জোর করে ভোট দেওয়াচ্ছেন। তার কারণে ভোটগ্রহণে সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত অ্যাকশনে যান, প্রয়োজনে তাকে গ্রেপ্তার করুন। একইভাবে ১০৩ নম্বর কেন্দ্রে আরেকজনকে ভোটগ্রহণে সমস্যা তৈরি করতে দেখে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ইসি জানায়, গোপন কক্ষে প্রবেশ এবং ভোটদানে প্রভাবিত করায় তাদের আটক করা হয়েছে। ১০১ ও ১০৩ নম্বর কেন্দ্র থেকে আটক করা দুজন হলেন যথাক্রমে রিয়াদুল ইসলাম রিয়াজ ও আবু তাহের।
পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বেশ কয়েকবার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। যদিও তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।
ভোটগ্রহণ শেষ হলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন চার নির্বাচন কমিশনার। তাদের দৃষ্টিতে ভোট কেমন হয়েছে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘আপনারাই আগে বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন কেমন হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আমাদের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা এবং গণমাধ্যম ও নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক টিমের কাছ থেকে যে খবর পেয়েছি, সেটি হচ্ছে, গাজীপুর সিটি নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যেসব প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, তারা সবাই বলেছেন নির্বাচনব্যবস্থায় তারা অত্যন্ত সন্তুষ্ট। এই নির্বাচনে যে ফলাফলেই আসুক না কেন, তারা সবাই মেনে নেবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি ৫০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। তবে হিসাব করলে সঠিক তথ্যটা পাওয়া যাবে।’
ভোটার উপস্থিতি নিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচনী আইনে আছে, নির্বাচনে শেষ সময় পর্যন্ত যদি ভোটার উপস্থিতি থাকে, তাহলে ভোটারের ভোট না নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ব্যালটের ক্ষেত্রে যে নিয়ম, ইভিএমের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।’
সিসিটিভিতে কোনো অনিয়ম ধরা পড়েছে কি না এমন প্রশ্নে আলমগীর বলেন, ‘অনেক সময় ভোটারদের লাইন ধরা, কারও ভোট আগে নেওয়া, এ ধরনের কিছু জিনিস আমাদের কাছে ধরা পড়েছে, সেগুলোর বিষয়ে আমরা তাৎক্ষণিক ফোন দিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। এ ছাড়া দুটি কেন্দ্রে আমরা দেখেছিলাম, এজেন্ট ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন, তখন আমরা তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া আমাদের এবং পুলিশের নজরে আর কোনো ঘটনা আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় সাড়ে চার হাজার সিসিটিভি একসঙ্গে দেখা যায়নি। এগুলো পর্যায়ক্রমে দেখতে হয়েছে। একবারে ৩০০-৪০০ সিসিটিভি দেখা গেছে। এজন্য কিছু ঘটনা আমাদের নজরে নাও পড়তে পারে। সিসিটিভির এ উদ্যোগটাই আমাদের সফলতা। সিসিটিভিতে যেগুলো ধরা পড়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি।’
কেন্দ্রে জায়েদা খাতুনের এজেন্ট ছিল না এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘গাজীপুরে অবস্থানরত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। তারাও আমাদের বলেছে, এরকম কোনো কিছু হয়নি।’
সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে যুক্তরাষ্ট্র দায়ী ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্য ভিসা না দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে যে ভিসানীতি নিয়েছে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় নির্বাচন কমিশনার আলমগীরকে। এর জবাবে তিনি বলেন, ‘ইসির আইন অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে। এর সঙ্গে বিদেশিদের কোনো মন্তব্য আমরা নেব না। এটা রাষ্ট্র টু রাষ্ট্র দেখবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হত্যার হুমকি দেওয়া’ রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর ভেড়িপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিকেলে আদালতের মাধ্যমে পুলিশ তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে।
গতকাল চাঁদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর আরএমপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ। দুপুর ১২টার দিকে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে আরএমপি কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়ে চাঁদের ওই বক্তব্যের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হয়েছে। এরপর শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। বৃহস্পতিবার সকালে প্রাইভেটকারে তিনি পালানোর চেষ্টা করছিলেন। ভেড়িপাড়া মোড় থেকে তাকে পুলিশের একটি বিশেষ দল গ্রেপ্তার করে।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল তিনি (চাঁদ) আত্মগোপন চলে যাচ্ছেন। তাই রাজশাহী মহানগর ও জেলা পুলিশ তাকে ধরতে বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসায়। এই যৌথ অভিযানেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রেঞ্জ ডিআইজি বলেন, পুঠিয়া থানায় দায়ের হওয়া মামলায় চাঁদকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেসব মামলা হয়েছে সেগুলোর তদন্তকারী কর্মকর্তারা এগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এদিকে, বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদকে এদিন বিকেলে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় পুলিশ। শুনানি শেষে রাজশাহী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৪ এর বিচারক মাহবুব আলম ৫দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন বলেন, পুঠিয়ার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার আসামি চাঁদকে আদালতে নেওয়ার পর পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। আদালত সার্বিক বিবেচনা করে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
‘প্রতি অপারেশনের আগে আমার মা আমাদের বলে, ‘আমার চোখের দুই মণি (ইনায়া এবং ইলহাম) দুজনকে তোমরা দেখে রেখো।’ আর আমরা হাসিমুখে বলি, ‘আম্মু এই অপারেশনের পরে তুমি আমাদের চাইতেও স্ট্রং হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। তখন তুমি তোমার দুই নাতনির বিয়ে খাইতে পারবা।’ ডিসেম্বরের ২২ তারিখে আম্মুর বাইপাস হয়েছিল। এক বছর যেতে না যেতে আজ আম্মুর আরেকটা অপারেশন হচ্ছে (শহবব রিপ্লেসমেন্ট)। প্রত্যেক অপারেশনের আগে বন্ড সাইন করার সময় হাতটা কেঁপে ওঠে। আমার মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন। পৃথিবীর সব মায়েরা সুস্থ থাকুক। আমিন!’
গত ২০ সেপ্টেম্বর এই ছবিটি পোস্ট করে ফেসবুক পেইজে কথাগুলো লেখেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। তার মায়ের অপারেশন ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু বাবা-মায়ের অসুস্থতায় সন্তানের আকুতি ঠিকই ফুটে উঠেছে এই স্ট্যাটাসে।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে চলতি বছর মে মাসে। গত শুক্রবার ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে দেশটি। নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার ঘোষণার তিন দিন পার হলেও কারও নাম প্রকাশ হয়নি। তবে বিভিন্ন মহলে নানা দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের নামে আলোচনা এখন সর্বত্র।
কারা যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন বা পড়তে যাচ্ছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, যেহেতু নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে এর লক্ষ্য নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারাই। তারাই ভিসানীতির আওতায় পড়বেন, এটাই স্পষ্ট।
তারা আরও বলেন, ভিসানীতি প্রয়োগের কথা জানালেও যুক্তরাষ্ট্র কারও নাম প্রকাশ করেনি। তবুও বলা যেতে পারে, কাদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করবে পশ্চিমা এ প্রভাবশালী দেশটি।
এ ব্যক্তিরা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই একটা তালিকার বেশিরভাগ নামই চূড়ান্ত করে ফেলেছে। অল্পসংখ্যক বাকি থাকতে পারে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সেগুলোরও চূড়ান্ত করা হবে। যেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রতিষ্ঠান, দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা থাকতে পারেন।
বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে ধারণা পাওয়া গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির উদ্দেশ্যই যেহেতু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে, ফলে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন তারাই ভিসানীতির আওতায় আসবেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও থাকতে পারেন। থাকতে পারেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা, তারা যেকোনো দলের হতে পারেন। অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ীও থাকতে পারেন।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন,‘ভিসানীতির বিষয়টি আমেরিকা প্রশাসন পরিষ্কার করে ঘোষণা না করলেও বুঝিয়ে দিয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারেন, এমন যে কেউ এ ভিসানীতির আওতায় পড়তে পারেন। যেমন রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাহী প্রশাসন, জুডিশিয়ারি অর্থাৎ যারাই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থাকবেন, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যাহত করবেন তারাই এর আওতায় আসবেন।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের এর আওতায় পড়ার সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, নির্বাচন ব্যাহত করার ছোট্ট সুযোগ তাদের হাতেও থাকে, তারা যদি জড়িত হন, ভিসানীতির আওতায় পড়বেন।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ভিসানীতির চেয়েও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নেগোশিয়েশন জরুরি। কে ভিসানীতির আওতায় পড়ল, কে পড়ল না এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঐক্য।’ তিনি বলেন, ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়ায় কারা রয়েছেন সেটা আমেরিকা প্রশাসন ঘোষণা না করলেও বোঝা খুব জটিল কিছু নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘আমেরিকা যেহেতু ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে তাদের ভিসানীতি, ফলে পরিষ্কার হয়ে গেছে কারা পড়তে পারেন এর আওতায়। যারা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, নিশ্চয়ই তারাই এর আওতায়।’
বিভিন্ন পর্যায়ের ও পেশার নিয়োজিত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক নেতারা ভিসানীতিকে তেমন আমলে না নিলেও বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভেতরে আমেরিকার ভিসানীতি ভীষণ ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে এর নানা কারণ জানা গেছে। এর মধ্যে বিদেশে টাকা পাচার, ব্যবসাবাণিজ্য, পরিবারের সদস্যদের বিদেশে থাকা এসব কারণে বেশি ভীতিতে ফেলেছে তাদের। আবার একটা অংশ বিদেশে কিছু না থাকলেও ভিসানীতির আওতায় পড়লে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার ভয় পাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করায় যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারেন এমন দুুশ্চিন্তা যেমন কারও কারও মনে ভর করেছে, তেমনি ভিসানীতিতে পড়ার সুযোগ নেই তারাও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। কারণ এই শ্রেণির লোকজন মনে করছেন, কখনো যদি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান, তখন যদি ভিসা না হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন এমন নামের তালিকাও চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। আরও অগ্রসর হয়ে কোনো কোনো মহল লম্বা তালিকা হাতে নিয়ে ঘুরছে। তবে এসব নামের তালিকার উৎস বা সূত্র নিশ্চিত নয় বলে কেউ কেউ বিষয়টি গুজব মনে করছেন। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের বাইরে প্রায় সবাই ভিসানীতি আতঙ্কে ভুগছেন।
একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভিসানীতিকে জয়-পরাজয় হিসেবে প্রচার করে এলেও ভেতরে ভীতি সবারই রয়েছে। কারণ পশ্চিমা দেশে তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন। ফলে রাজনীতির বাইরেও ব্যক্তিজীবনের প্রয়োজনে ভিসানীতি তাদের ওপর যদি প্রভাব ফেলে, সে আশঙ্কা তো আছেই।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিষয়ে আমি কথা বলি না। আমি একটাই কথা বলব, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ সে কাজই করছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ভিসানীতি আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিষয়ে বলতে হলে আরও অনেক বিষয় রয়েছে। এ ভিসানীতি কারা লক্ষ্যবস্তু জানতে চাইলে ইনু বলেন, ‘এটি নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমাদের। তারাই বলতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারও পরামর্শে সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান অদলবদল করবে না, পরিবর্তনও আনবে না।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে অনুমোদন ছাড়াই সহস্রাধিক প্রকল্প গ্রহণ, পদোন্নতি এবং কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ২১ মাস দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে কাউন্সিলরদের নিয়ে মাসিক না করে এসব অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে। আর এসব অনিয়মের তদন্ত দাবি করেছেন সিটি করপোরেশনের একাধিক কাউন্সিলর।
অভিযোগের ব্যাপারে সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কিরণের বিরুদ্ধে গত ২১ মাসে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ও প্রায় ৩০০ কোটি টাকার রাজস্ব তহবিল থেকে নেওয়া প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের কার্য সহকারী ছিলেন আবু সাঈদ চৌধুরী। ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আসাদুর রহমান কিরণ তাকে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) হিসেবে পদোন্নতি দেন। এভাবে রোলার চালক মো. জাকির হোসেন রুমনকে লাইসেন্স সহকারী, সার্ভেয়ার ফারুক আলমকে লাইসেন্স কর্মকর্তা, কমিউনিটি কর্মী মাহমুদুল ইসলামকে কর নির্ধারণ কর্মকর্তা, সাঁটলিপিকার কাম ক্লার্ক আজমল হোসেনকে লাইসেন্স পরিদর্শক, উচ্চমান সহকারী আশরাফ হোসেনকে প্রথম শ্রেণির পদ সহকারী সচিব হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছেন। এ ছাড়া মেকানিক্যাল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুদেব বসাককে বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব দেন। পদোন্নতি কমিটির সুপারিশ ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে আসাদুর রহমান কিরণ তার পছন্দের ও আস্থাভাজন আরও অসংখ্য কর্মচারী-কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন।
গত ১০ মাসে সিটি করপোরেশনের চারটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর একটি সভাতেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক (৫১ শতাংশ) কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন না। সভায় কোরাম পূর্ণ না হলেও সভার পরে কাউন্সিলরদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর আনা হয়েছে। সভায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক কাউন্সিলর উপস্থিত না থাকলেও আসাদুর রহমান কিরণের একক সিদ্ধান্তে ওইসব সভায় সড়ক ও ড্রেন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার সহস্রাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেন। সিটি করপোরেশনের আইন অনুযায়ী, কাউন্সিলরদের মাসিক সভায় ওইসব সিদ্ধান্ত অনুমোদিত না হলে সব কর্মকা- অবৈধ।
কয়েকজন কাউন্সিলর অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আকবর হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মজিবুর রহমান কাজল ও ঠিকাদার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ এসব প্রকল্প থেকে ১০ থেকে ৩০ ভাগ কমিশন নিয়ে বিল পরিশোধ করেছেন।
গাজীপুর নগরীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের দায়িত্ব পালনকালে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ডিপিপি ও প্রায় ৩০০ কোটি টাকার রাজস্ব তহবিল থেকে নেওয়া প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। কাউন্সিলরদের মাসিক সভায় অনুমোদন ছাড়াই আসাদুর রহমান কিরণ এককভাবে এসব প্রকল্প গ্রহণ করেন। এতে কাউন্সিলরদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি।
ওই কাউন্সিলররা আরও অভিযোগ করেন, অনেক প্রকল্পের কাজ না করেই শুধু কাগজপত্র ঠিক রেখে কোটি কোটি টাকার বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। আবার কোনো কোনো কাজ নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে যেনতেনভাবে সম্পন্ন করে বিল নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে শিডিউলের শর্ত উপেক্ষা করা হয়েছে। নির্ধারিত রেটের বাইরে অতিরিক্ত রেট দিয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়র কিরণ, প্রকৌশলী এবং ঠিকাদাররা লাভবান হয়েছেন। নগরীর গাছা, টঙ্গী, পুবাইল, জয়দেবপুর, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব কাজ হয়েছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারির সভায় ৩০৬টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। অথচ ওই সভায় অনুমোদন নেওয়ার মতো প্রয়োজনীয়সংখ্যক কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন না। সর্বশেষ একাধিক সভায় প্রকল্পগুলো অনুমোদন না হওয়ায় যেসব ঠিকাদার তাদের কাজ শেষ করতে পারেননি, তারা রয়েছেন আতঙ্কে।
অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যুৎ খাতে বিশাল দুর্নীতি হয়েছে। সিটি করপোরেশনে চার হাজার সড়কবাতি স্থাপনের জন্য ২৫ কোটি টাকার কাজ চলমান ছিল। কিন্তু তিন ভাগের এক ভাগ খুঁটি স্থাপন না করেই প্রকল্পের পুরো টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এসব বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন, সড়কবাতি লাগানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির টাকা ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, বিদ্যুৎ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইব্রাহিম খলিল, আরিফুল ইসলাম এবং ঠিকাদার মিলে ভাগ-বাটোয়ারা করেছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলা চলমান রয়েছে।
জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের আটটি অঞ্চলে তিন হাজারের মতো কলকারখানা রয়েছে। প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এবিএম এহসানুল হক মামুন, কর নির্ধারণ কর্মকর্তা জাকির হোসেনসহ আস্থাভাজন লোকদের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ কর কম দেখিয়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানুর রহমান জানান, সিটি করপোরেশনের কর আদায়ের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে হার নির্ধারণ করা আছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের কর নির্ধারণের পর কমাতে হলে রিভিউ বোর্ডের মাধ্যমে আপিল করতে হয়। আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছাড়া কর কমানোর সুযোগ নেই। ভারপ্রাপ্ত মেয়র দায়িত্ব পালনকালে আপিল বোর্ড না করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়ে কর কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তার নিজের ইচ্ছেমতো কর নির্ধারণ করেন। অথচ আবেদন করলেও অনেকের প্রতিষ্ঠানের কর কম দিতে গেলে তা গ্রহণ করা হয়নি।
নিয়ম ভেঙে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম সফিউল আজম বলেন, গত দুই বছরে সিটি করপোরেশনে কোনো পদোন্নতির বোর্ড হয়নি। যাদের পদোন্নতির কথা বলা হয়েছে, আসলে তাদের ওইসব পদে ভারপ্রাপ্ত মেয়র চলতি দায়িত্বে পদায়ন করে গেছেন। সভায় প্রকল্পসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র বলতে পারবেন। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, এসব বিষয় তার জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আকবর হোসেন, সদ্য অবসরে যাওয়া তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মজিবুর রহমান কাজল তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন গত ১১ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আজ সোমবার নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নিয়ে প্রথম সভা হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আলটিমেটাম দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া এত অসুস্থ যে, এখন তার চিকিৎসকরা বলছেন, বাংলাদেশে তার চিকিৎসা সম্ভব নয়। বিদেশে পাঠাতে না পারলে তাকে বাঁচানো দুস্কর হয়ে যাবে। আমি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা বলেছেন, আপনাদের যদি কিছু করার থাকে তাহলে করেন। দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। পরিষ্কার করে বলতে চাই, বেগম জিয়ার কিছু হলে সব দায়দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে।
গতকাল রবিবার বিকেলে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে মির্জা ফখরুল এ আলটিমেটাম দেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত সমাবেশস্থলে দুপুরের আগ থেকেই নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন। খালেদা জিয়ার ছবিসহ ব্যানার, পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত সমাবেশ একসময় নেতাকর্মী-সমর্থকদের পদচারণায় লোকারণ্য হয়ে যায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতা দখলকারী সরকারকে স্পষ্ট করে বলতে চাই, খালেদা জিয়ার ক্ষতি হলে তাতে নেত্রীর ক্ষতি হবে না, তার পরিবারের ক্ষতি হবে না, ক্ষতি হবে বাংলাদেশের। এই এশিয়া উপমহাদেশে যে কজন নেতা-নেত্রী গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন, তাদের মধ্যে আমাদের নেত্রী আছেন সে কথা কয়েক দিন আগে জার্মান চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বলে গেছেন। বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, আমরা তাকে অন্যভাবে দেখি। এই হচ্ছে পাশ্চাত্যের ধারণা।
মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু আমেরিকা নয়, দেশের জনগণও আপনাদের স্যাংশন দিচ্ছে, তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। আজকে গায়ের মধ্যে আগুন লেগেছে। বাইডেনের সঙ্গে সপরিবারে ছবি তুলে খুব দেখিয়েছিল। বলেছিলেন, আর আমেরিকা যাবেন না, অথচ তিনি আমেরিকা থাকা অবস্থায় ভিসানীতি কার্যকর করা হলো। ভিসানীতি বাংলাদেশের মতো একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের জন্য অপমানজনক। আওয়ামী লীগের জন্য তাও আমাদের দেখতে হলো। কিছু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা একটা বেআইনি সরকারকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দমনপীড়ন করছে।
বিদেশে যেতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এরকম বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এসব ছলচাতুরী করে কোনো লাভ নেই। পরিবার থেকে দেওয়া চিঠিতে তার (খালেদা জিয়া) মুক্তির কথা বলা হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। বেমালুম চেপে গিয়ে মিথ্যা কথা বলছেন। আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
শনিবার এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, নেত্রী অত্যন্ত শক্ত মনের। তিনি মনের জোরে সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠেন। সেই নেত্রী পাঁচ বছর বন্দি থাকা অবস্থায় কোনোদিনও তার চোখে পানি দেখিনি। গতকাল তাকে অত্যন্ত অসুস্থ দেখেছি। প্রথমবারের মতো মনে হয়েছে, সত্যি তিনি অনেক অনেক বেশি অসুস্থ। তার এ বক্তব্যের মধ্যেই নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু সেøাগান দেন, ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে আগুন জ¦লবে ঘরে ঘরে’।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিভিন্ন কুঞ্জে কুঞ্জে আমলারা মিটিং করে বেড়াচ্ছেন, যেকোনো মূল্যে গুম খুন করেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। সরকারি কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে এতটা মরিয়া যে, আওয়ামী লীগও ততটা মরিয়া না। শেখ হাসিনার ছেলের বিদেশে বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তি এ দেশের জনগণের। এর জন্য আমাদের বহু কথা আছে আপনি (শেখ হাসিনা) যেভাবে সহজে বলেছেন, দেখছেন বিষয়টা এত সহজ নয়।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আদালতে সাজাপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের নেতারা বিদেশে চিকিৎসা করতে পারলে খালেদা জিয়ার পারবেন না কেন? আদালতের বিচারকদের একদিন এর হিসাব দিতে হবে। খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে শেখ হাসিনা ক্ষমতা থাকতে পারবে না। প্রয়োজনে গুলি খেতে খেতেই সামনে যেতে হবে। আমরা চাইলে এখনই শেখ হাসিনার বাসভবন ঘেরাও করতে পারি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যারা দখলদারীর মাধ্যমে ক্ষমতায় বসে আছেন বিশ্বে এমন কতগুলো ফ্যাসিস্ট সরকারকে স্যাংশন দেওয়া হয়েছে। আপনাদের (আওয়ামী লীগ) শুধু বিচারই হবে না, বাংলাদেশের জনগণের সামনে মুখোমুখি হতে হবে।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, হাসিনার কথায় প্রমাণিত হলো, তার ছেলের বিশাল সম্পদ বিদেশের মাটিতে।
দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, কেন্দ্রীয় নেতা এজেডএম জাহিদ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে সংঘর্ষ : সমাবেশ চলাকালে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হন বলে জানা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, সমাবেশে মির্জা ফখরুলের বক্তব্য শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েকজন ছাত্রদল নেতাকর্মী হঠাৎ লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালান। এ সময় মঞ্চে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ অন্য জাতীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সংঘাত থামাতে চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে নেতাকর্মীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন মির্জা আব্বাস এবং যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। কিন্তু ততক্ষণে হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপি মহাসচিব তার নির্ধারিত বক্তব্য থামিয়ে বলেন, যারা সংঘাত করছে তারা সরকারের দালাল।
ঢাকায় নয়াবাজারের পরিবর্তে ধোলাইখালে সমাবেশ : এক দফা দাবিতে সোমবার রাজধানীর নয়াবাজারে পূর্বঘোষিত সমাবেশের কর্মসূচি অনিবার্য কারণে নয়াবাজারের পরিবর্তে ধোলাইখালে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বিষয়টি অবহিত করে এবং ধোলাইখালে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে শনিবার ডিএমপি কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। এদিকে আজ সোমবার বিকেলে তালতলা মার্কেট এর সামনে গণসমাবেশ ও পদযাত্রা করবে গণতন্ত্র মঞ্চ।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।