
দুই সপ্তাহের অপেক্ষা শেষে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণ আজ। আজই নির্ধারিত হবে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আরেক মেয়াদ থাকতে পারবেন কি না। অবশ্য অনেকে বলছেন, প্রথম দফার নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ ভোট পাওয়ায় এবং তার দল পিপলস অ্যালায়েন্স পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় দ্বিতীয় ধাপেও উতরে যাওয়ার সম্ভাবনা এমনিতেই ছিল এরদোয়ানের। এর মধ্যে প্রথম দফার নির্বাচনে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় হওয়া সিনান ওগানও এরদোয়ানকে সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট পাওয়া কামাল কিলিচদারোগলুর পক্ষে তাকে টপকে যাওয়া সহজ হবে না।
দুই দশক ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। দেশটিতে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে ব্যাপক। পূর্ব ও পশ্চিমের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক ধরে রেখেছেন তিনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি ও ফেব্রুয়ারিতে ভয়াবহ ভূমিকম্প তার ক্ষমতার ভিত নড়িয়েছে। এসব কারণে ১৪ মে প্রথম ধাপের নির্বাচনের আগে অনেকে মনে করেছিলেন এরদায়ান হয়তো এবার হেরে যাবেন। বিবিসি বলছে, এবারের নির্বাচনে অনেক ভোটার এরদোয়ানের নেওয়া বিভিন্ন নীতির বিরোধী ছিলেন। কিন্তু প্রথম দফার ভোটের ফল চমকে দেয় সবাইকে। আরও চমক আসে সিনানের সমর্থনের খবরে।
এ কারণে দেশটির ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় দফায় ভোট হলেও তেমন উত্তাপ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আজ রবিবারের ভোট তুরস্কের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হলেও দেশটির অনেকেই ধরে নিয়েছেন এরদোয়ানের হাতেই থাকছে দেশটির শাসন ক্ষমতা।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রান-অফ নির্বাচন নিয়ে দেশটিতে তেমন উত্তাপ লক্ষ করে যাচ্ছে না। যেমনটি দেখা গিয়েছিল দুই সপ্তাহ আগে। ইস্তাম্বুলের তোফানের ৪৯ বছর বয়সী বাসিন্দা সোনার ওগোরলু বলেছেন, এটি অন্যরকম অনুভূতি। আমার মনে হচ্ছে নির্বাচন শেষ। কিন্তু রবিবার আরেকটি নির্বাচন আছে। আমি অবশ্যই ভোট দেব। কিন্তু বিষয়টি অদ্ভুত লাগছে, কারণ দুই সপ্তাহ আগে পরিবেশ যে রকম ছিল। সে তুলনায় সবকিছু বেশ শান্ত।
নির্বাচনের প্রথম ধাপে এরদোয়ানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে না পারার বিষয়টি বিরোধীদলীয় সমর্থকদের জন্য বেশ বড় একটি ধাক্কা হিসেবে এসেছে। তাদের অনেকেই এখন বেশ হতাশ। তাদেরই একজন সিহাঙ্গিরের কাপড়ের দোকানের ব্যবসায়ী ওলকে। তিনি আল জাজিরাকে বলেছেন, ১৪ মের আগে আমি অনেক আশাবাদী ছিলাম। কারণ ভেবেছিলাম অবশেষে এরদোয়ানের কাছ থেকে মুক্তি পাব। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সে অপ্রতিরোধ্য। তিনি বলেন, এসব (অর্থনৈতিক) সমস্যায় সবাই বেশ ক্লান্ত। আবার উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দেওয়ার বিষয়টি খুবই কঠিন হবে। কারণ মনে হচ্ছে বিষয়টি শেষ। কিন্তু আমি অবশ্যই ভোট দেব। এটি আমার দায়িত্ব।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে ফ্ল্যাট ও প্লটের নিবন্ধন ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এখন নিবন্ধন ফি ১০ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ। এর মধ্যে বিদ্যমান গেইন ট্যাক্স ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে এনবিআর। এই প্রস্তাব কার্যকর হলে বাড়বে ফ্ল্যাট ও প্লটের দাম।
এ ছাড়া আবাসন ব্যবসায়ীরা আগামী বাজেটে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা দেওয়ার দাবি জানালেও তা আমলে আনেনি এনবিআর। গতকাল পর্যন্ত আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থবিলে আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাড়তি কোনো সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এমন প্রেক্ষাপটে এই খাতের ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, এনবিআরের নিবন্ধন ফি বাড়ানোর প্রস্তাব কার্যকর হলে ফ্ল্যাট ও প্লটের দাম বাড়বে, ব্যবসায় খরচ বাড়বে। ক্রেতা কমবে। লোকসানে পড়ে আবাসন খাতে ধস নামবে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, সহজ শর্তে আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হলে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। অনেকে দেশেই ফ্ল্যাট ও প্লট কিনতে আগ্রহী হবে। অর্থ পাচার করে বিদেশে ফ্ল্যাট-প্লট কেনার পরিমাণ কমবে।
করোনা মহামারীর মধ্যে আবাসন খাতে স্থবিরতা নেমে আসে। করোনা শেষ না হতে শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দেখা দিয়েছে বৈশি^ক মন্দা। ডলার সংকটে ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন অনেকে। এতে করোনাকালীন লোকসান কাটিয়ে ওঠার পরিবর্তে আবাসন খাতের সংকট আরও বেড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে আবাসন খাতের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে আগামী বাজেটে শুল্ক-কর-ভ্যাটে ছাড়সহ বিনা শর্তে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা অর্থ মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডে লিখিত আবেদনে তাদের প্রস্তাবগুলো জানিয়েছেন। দেশের অর্থনীতি গতিশীল করার স্বার্থে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংগঠনের বাজেটবিষয়ক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য ফ্ল্যাট, প্লট, বাণিজ্যিক ভবন ও বিপণিবিতানে বিনিয়োগের জন্য বিনা প্রশ্নে বা শর্তে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা বিনিয়োগের সুবিধা বহাল রাখা প্রয়োজন। আগামী ১০ বছর এ সুবিধা রাখা হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। জাতীয় সম্পদ ও প্রবৃদ্ধি বাড়বে।
আবাসন খাতের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সদস্য সংখ্যা ৮৭০টি। এ ছাড়া সারা দেশে এক হাজারের বেশি আবাসন প্রতিষ্ঠান আছে।
রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরের কাছে হাতাশা প্রকাশ করে বলেন, করোনার সময়ে আবাসন ব্যবসায়ে লোকসান হয়েছে। অনেক প্লট ও ফ্ল্যাট নির্মাণকাজ শেষ করেও ক্রেতার অভাবে ফেলে রাখতে হয়েছে। অর্থ সংকটে মাঝপথে কাজ থামিয়ে রাখা ফ্ল্যাট-প্লটের সংখ্যাও অনেক। তিনি বলেন, ‘করোনার প্রকোপ কমতে থাকলে আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্ট করছি। এমন সময়ে শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ডলার সংকট দেখা দিল। আবাসন খাতের কাঁচামালের সংকট অনেক বেড়ে গেল। আর যা পাওয়া গেল তাও অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে আগামী বাজেটে নিবন্ধন ব্যয় কমানো, রাজস্বে ছাড়, ঋণসুবিধা, বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগসহ কিছু দাবি জানিয়েছি। এখন শুনতে পাচ্ছি, এসব সুবিধা দেওয়ার পরিবর্তে রাজস্বের ভার বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে এনবিআর। এতে আবাসন খাতে ধস নেমে আসবে। অনেকে আবাসন ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন। অসমাপ্ত ফ্ল্যাট ও প্লটের কাজ অনেকের পক্ষে শেষ করা সম্ভব হবে না।’
ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, ‘বাজেটের এখনো কয়েক দিন বাকি। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি সরকারি নীতিনির্ধারকদের কাছে জানাতে। দেখা যাক কী হয়!’
রিহ্যাব সূত্রে জানা যায়, সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশের নিবন্ধন ব্যয় ৪-৭ শতাংশের বেশি নয়। বাংলাদেশে নিবন্ধন ব্যয় সর্বোচ্চ সাড়ে ১২ শতাংশ। আগামী বাজেটে ফ্ল্যাট ও প্লট নিবন্ধন ফি ও কর কমানোর দাবি জানিয়ে রিহ্যাবের প্রস্তাবে বলা হয়, গেইন ট্যাক্স ২ শতাংশ, স্ট্যাম্প ফি ১ দশমিক ৫ শতাংশ, নিবন্ধন ফি ১ শতাংশ, স্থানীয় সরকার কর ১ শতাংশ, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ১ দশমিক ৫ শতাংশ এভাবে মোট ৭ শতাংশ নির্ধারণ এখন সময়ের দাবি। বর্তমানে গেইন ট্যাক্স ৪ ও স্থানীয় সরকার ফি ১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ভ্যাট ২ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ।
এ বিষয়ে আরও বলা হয়, বর্তমানে ব্যয় বেশি হওয়ায় ফ্ল্যাট বা প্লটের ক্রেতারা নিবন্ধনে উৎসাহিত হচ্ছেন না। ফলে সরকার এ খাত থেকে রাজস্ব আয় কম পাচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে অবিলম্বে নিবন্ধন ব্যয় কমানো প্রয়োজন।
রিহ্যাব থেকে হিসাব কষে বলা হয়েছে, বিদ্যমান গেইন ট্যাক্স ২ শতাংশ বাড়ানো হলে এক কোটি টাকার ফ্ল্যাট বা প্লট কিনতে ক্রেতাকে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা বেশি দিতে হবে। এভাবে নিবন্ধন খাতের অন্যান্য রাজস্ব বাড়ানো হলে এক কোটি টাকার ফ্ল্যাট বা প্লটের দাম ১০ লাখের বেশি বাড়বে।
অন্যদিকে রাজস্ব আইনে স্থায়ী ধারা যুক্ত করে নিয়মিত রাজস্বের বাইরে অতিরিক্ত কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া আছে। এতে নিয়মিত করের বাইরে অতিরিক্ত কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবে যে কেউ। তবে এ ক্ষেত্রে এনবিআর কিছু না বললেও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সরকারের যে কোনো সংস্থা অর্থের উৎস নিয়ে বিনিয়োগকারীকে জবাবদিহিতে আনতে পারবে। প্রতি বছরের মতো এবারেও এই সুযোগ রয়েছে। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে এই সুযোগের বাইরে অপ্রদর্শিত অর্থ মূলধারার অর্থনীতিতে আনতে বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। বিশেষ এ সুযোগ নিয়ে ১০ শতাংশ কর দিয়ে আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করলেও সরকারের কোনো সংস্থাই কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না বলে আইনে যোগ করা হয়েছিল। পরের বছর এই সুযোগ আর বাড়ানো হয় না। আগামী অর্থবছরেও এ সুযোগ চেয়েছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া রিহ্যাবের লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিভিন্ন দেশে ‘সেকেন্ড হোম’ গ্রহণের সুযোগ থাকায় দেশের প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এসব দেশে ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনার অর্থের উৎস বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয় না। অপ্রদর্শিত অর্থ দেশে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া হলে ভবিষ্যতে ওই সব বিনিয়োগকারী রাজস্ব জালের আওতায় আসবেন। সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশে ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনার পর সংশ্লিষ্টদের কাছে দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে আয়ের উৎস জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানোর কারণে আবাসন খাতে বিনিয়োগে বৈরী পরিবেশ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এসব অনুসন্ধান যৌক্তিক পর্যায়ে আনা প্রয়োজন।
রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে আবাসন খাতের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অংশ গৃহীত রয়েছে। তাই এ খাতের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে আগামী বাজেটে আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা জরুরি।’
এনবিআরের প্রাক-বাজেট আলোচনাকালে আবাসন ব্যবসায়ীদের এসব দাবির জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, ‘বিনা শর্তে অপ্রদর্শিত অর্থ বাড়ি কেনার জন্য দিতে হবে, এ ধরনের দাবি প্রতি বছর করাটা মানায় না।’
আগামী অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তিতে আবাসন ব্যবসায়ীরা আরও দাবি করেছেন, নির্মাণ ও অন্যান্য ব্যয় কমাতে বিদ্যমান ভ্যাটের হার কমাতে হবে। এ-জাতীয় ব্যয় কমানো হলে স্বল্পমূল্যে ক্রেতাসাধারণকে তাদের সামর্থ্যরে মধ্যে আবাসন সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এতে এই শিল্প স্থবিরতা থেকে মুক্তি পাবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। গৃহায়ণশিল্পের বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা এই খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন। অধিকাংশ আবাসন ব্যবসায়ী অতি উচ্চসুদে ব্যাংকঋণ নিয়েছেন। বর্তমানে তাদের পক্ষে ব্যাংকঋণ ও সুদ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে আয়করের উচ্চ হারের কারণে ক্রেতারা আগ্রহ হারাচ্ছেন। বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনকে তহবিল প্রদানের মাধ্যমে স্বল্প সুদে দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ সরবরাহ করা হলে আবাসন খাতের ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। আবাসন খাতকে আরও গতিশীল এবং সত্যিকার অর্থে স্বল্প আয়ের মানুষের মাথা গোঁজার স্বপ্ন সার্থক করতে ক্রেতা সাধারণের জন্য অন্তত একটি ফ্ল্যাট কিনতে সহজ শর্তে সর্বোচ্চ একক অঙ্কে ঋণের ব্যবস্থা করা এবং এই ঋণের কিস্তি দীর্ঘ মেয়াদে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) আওতাভুক্ত ও বহির্ভূত এলাকায় সব জমির ক্ষেত্রে আরোপিত কর প্রত্যাহার করা এবং সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট ও উৎস কর সংগ্রহের দায়িত্ব থেকে পাঁচ বছরের জন্য আবাসন ব্যবসায়ীদের অব্যাহতি দেওয়া প্রয়োজন। ঢাকা জেলাসহ বিভিন্ন মেট্রোপলিটন এলাকা, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মধ্যে পাঁচ বছরের জন্য এবং পৌরসভার বাইরের এলাকায় নগরায়ণকে উৎসাহিত করতে ১০ বছরের জন্য ‘কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে’ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। অনেক শিল্পে এই ব্যবস্থা বহু আগে থেকেই চালু করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
রিহ্যাবের প্রস্তাবে নামমাত্র নিবন্ধন ব্যয় নির্ধারণ করে আবাসন খাতে ‘সেকেন্ডারি বাজার’ ব্যবস্থার প্রচলনসহ উন্নত দেশের মতো ‘রিয়েল এস্টেট মার্কেট’ ব্যবস্থা গড়ে তোলারও প্রস্তাব করেছে রিহ্যাব।
সফররত চীনের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা, কানেকটিভিটি, ইন্দো-প্যাসিফিক ও বৈশ্বিক উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনলাইন জুয়া এবং মাদক পাচারের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও চীনের পররাষ্ট্র সচিবপর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ওয়েইডংয়ের দুই দদফা বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন চীনা ভাইস মিনিস্টার। তবে বৈঠক শেষে ঢাকা কিংবা চীন কোনো পক্ষই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেনি।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা থেকে পররাষ্ট্র সচিব ও চীনা ভাইস মিনিস্টার প্রতিনিধিদল নিয়ে বের হন। সেখান থেকে ওয়েইডং যান পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে। সেখানে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তরের সামনে চীনের একটি প্রতিনিধিদল পদ্মা সেতু নিয়ে ভাইস মিনিস্টারকে চায়নিজ ভাষায় বিস্তারিত ব্রিফ করেন। ব্রিফ শেষে গাড়ি নিয়ে পদ্মা সেতুতে ওঠেন ওয়েইডং এবং তার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধিদল। সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনতো।
রোহিঙ্গা ইস্যু : বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব উঠেছে। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে কাজ করে আসছে চীন। ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডংয়ের সফর মূলত গত ১৮ এপ্রিল রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ-চীন বৈঠকের ফলোআপ। একই সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ইতিমধ্যে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সমঝোতা করাতে পেরেছে চীন। এরপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রমাণ করতে পারলে সেটি চীনের জন্য ভালো একটি অর্জন হবে। সেজন্য চীনের বিশেষ আগ্রহ আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া তারা এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা চায়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বৈঠকে ভাইস মিনিস্টার উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য উপকার হবে। পাইলট প্রজেক্টের প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নিজ নিজ প্রতিনিধিদের মিয়ানমারে “যান এবং দেখুন” এবং বাংলাদেশে “আসুন এবং কথা বলুন” সফরের ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে চীনা পক্ষ।’
জিডিআই : বৈঠকে চীনের নতুন বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভে (জিডিআই) বাংলাদেশকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে চীনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকা সফরের সময় জিডিআই বিষয়ে বাংলাদেশকে অবহিত করেন। জিডিআই উদ্যোগে বাংলাদেশ যুক্ত হোক, চীন এটি চায় এবং এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় পক্ষ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংযোগে বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উভয় পক্ষ বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে নিয়মিত স্টাফপর্যায়ের আলোচনা ও বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে।
দুই দেশের মধ্যে সফর করার প্রস্তাব : উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফরে চীনের আগ্রহের বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেছিলেন। এরপর আর কোনো উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফর হয়নি। এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে বেইজিং কর্র্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, সান ওয়েইডংকে গত নভেম্বরে এশিয়াবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার হিসেবে পদায়ন করা হয়। এর আগে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকায় ভাইস মিনিস্টার হিসেবে এটি তার প্রথম সফর। তবে ১০ বছর আগে তিনি ভিন্ন পদে বাংলাদেশ সফর করেছেন।
আজ রবিবার চীনের ভাইস মিনিস্টার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। গত শুক্রবার রাতে প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকায় পৌঁছান চীনের ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডং। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক অনুবিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান এবং ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে চীনা ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং উল্লেখ করেন, তিনি ১০ বছর পর বাংলাদেশ সফর করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অর্জন দেখে খুবই মুগ্ধ। উভয় প্রতিনিধিদল পারস্পরিক স্বার্থ এবং বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। চীনা পক্ষ ‘এক চীননীতি’তে অব্যাহত সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক বৈঠক বিনিময় স্মরণ করেছেন, যা সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও গভীর করেছে।
এতে আরও বলা হয়, বৈঠকে কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় চীনের টিকা সহায়তার জন্য বাংলাদেশ আবারও ধন্যবাদ জানিয়েছে। উভয় পক্ষ বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। এ সময় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং পদ্মা সেতু রেল সংযোগের মতো মেগা প্রকল্পের আসন্ন উদ্বোধনকে স্বাগত জানায় চীন।
উভয় পক্ষই বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে কয়েকটি অতিরিক্ত প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে। এ ছাড়া গত বছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া ৯৮ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ব্যবহার করে চীনে রপ্তানি বাড়ানোর উপায় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনা পক্ষ গ্রীষ্মকালীন ফল আমদানিতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা এবং হিমায়িত খাবার আমদানিতে আগ্রহী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমাতে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধার আওতায় শাকসবজি, ওষুধ, কাঁচা চামড়া, ফুটওয়্যার, পোশাক ইত্যাদির মতো অন্যান্য রপ্তানি আইটেম অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, চীনা ভাইস মিনিস্টার চট্টগ্রামে চীনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা কোম্পানির বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আশ্বাস দেন। তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-গুয়াংঝু সরাসরি ফ্লাইট আবার চালুর জন্য চীনা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে সময়মতো আলোচনার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে উভয় পক্ষ নিয়মিত কনস্যুলার পরামর্শ চালু করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং বায়োটেকনোলজিতে উদ্ভাবনের বিষয়ে চীনের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এতে আরও বলা হয়, জননিরাপত্তা ইস্যুতে সংলাপ আয়োজনে দুই পক্ষ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আবহাওয়া স্যাটেলাইটের তথ্য শেয়ার করার জন্য বাংলাদেশ চীনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। চীনা পক্ষ বাংলাদেশ থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
২০১৬ সালে ফজলে কবির বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগ পাওয়ার পর ব্যাংকগুলোর পরিদর্শন অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তথ্য গোপন করছে ব্যাংকগুলো। এরই মধ্যে ব্যাংকগুলোর খেলাপি কম দেখানোর বিষয়টি নজরে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠানো খেলাপির হিসাবে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা কম দেখিয়েছে ৩৩টি ব্যাংক। তবে ৯টি ব্যাংক তাদের সঠিক হিসাব পাঠিয়েছে বলে পরিদর্শনে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে শ্রেণিকৃত বা খেলাপি ঋণ দেখানো হয় ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ছিল ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর তিন মাস আগে গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। হার ছিল ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর মানে শেষ তিন মাসে খেলাপি ঋণ কমে ১৩ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা।
তথ্য বলছে, ব্যাংকগুলো গত বছর শেষে খেলাপি ঋণের যে তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়েছিল পরিদর্শনের পর তার চেয়ে বাড়তি খেলাপি ঋণ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। পরে ওইসব তথ্য ব্যাংকের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে যুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি ব্যাংকের ডিসেম্বরভিত্তিক বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান কার্যালয় ও কয়েকটি শাখা পরিদর্শন করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে আসা তথ্য, ব্যাংকগুলোর নিজস্ব তথ্য এবং বহির্নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বার্ষিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয়। এতে বার্ষিক প্রতিবেদনে ৩৩টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির ফলে সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
ব্যাংক খাতের ৪২টি ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মাত্র ৯টি ব্যাংক খেলাপির সঠিক তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠিয়েছে। অর্থাৎ এসব ব্যাংক গত ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যেই তথ্য পাঠিয়েছে পরিদর্শনে এর গরমিল পাওয়া যায়নি। এই ব্যাংকগুলো হচ্ছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী, প্রাইম, সিটি, ব্র্যাক, মধুমতি, মিডল্যান্ড, কমিউনিটি ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। আর বাকি ৩৩টি ব্যাংকের তথ্যেই গরমিল পাওয়া গেছে।
এই তালিকায় থাকার রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ ব্যাংকের খেলাপি বেড়েছে ৪ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। আর বেসরকারি ২৮ ব্যাংকের সব মিলিয়ে খেলাপি বেড়েছে ১৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এই ৩৩ ব্যাংক খেলাপির তথ্য গোপন করেছে ১৮ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা।
জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ফজলে কবির বিভিন্ন ব্যাংকের পরিদর্শনের ওপর শিথিলতা আনেন। এতে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ব্যাংককে বিভ্রান্ত করতে ভুল তথ্য উপস্থাপন করতে শুরু করে। কিন্তু গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আবদুর রউফ তালুকদার ব্যাংকগুলোতে পুনরায় পরিদর্শনের নির্দেশ দেন। এতে ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন অনিয়ম বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে আসে। বিশেষ করে, ব্যাংকগুলোর ঋণ অনিয়ম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরে আসতে শুরু করলে ব্যাংকে সুশাসন ফেরাতে কঠোর অবস্থানে যান এই গভর্নর। ঋণ অনিয়মে এমডিদের ওপর মালিক পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করলে তা সরাসরি গভর্নরকে অবহিত করা, কোনো কোনো ব্যাংকের ঋণ বিতরণে নিষেধাজ্ঞা, অনিয়মের মাধ্যমে অনুমোদিত ঋণ বিতরণ বন্ধ করাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক খেলাপির হিসাব কম দেখিয়েছে ২ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানো তথ্যে খেলাপি দেখিয়েছিল ৬ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। কিন্তু পরিদর্শনের পর বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ৯ হাজার ২২৫ কোটি টাকা।
বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানো তথ্যে খেলাপি দেখিয়েছিল ১ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। কিন্তু পরিদর্শনের পর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি কম দেখিয়েছে ৯৭৯ কোটি টাকা। ওয়ান ব্যাংক খেলাপির তথ্য কম দেখিয়েছে ৯০৪ কোটি টাকা। আর পঞ্চম অবস্থানে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক কম দেখিয়েছে ৮১১ কোটি টাকা।
অবশ্য খেলাপি কম দেখানোর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে আলোচিত আরেক বেসরকারি ব্যাংক। এই ব্যাংক গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠানো তথ্যে ৬ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা খেলাপি দেখিয়েছিল। কিন্তু পরিদর্শনের পর এই খেলাপি দাঁড়ায় ১০ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানো তথ্যে ৪ হাজার ১২ কোটি টাকা কম দেখিয়েছে ব্যাংকটি।
এর বাইরে শীর্ষ দশে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৭১৫ কোটি, রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক ৫৯৮ কোটি, ঢাকা ব্যাংক ৫৭৭ কোটি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক খেলাপির হিসাব কম দেখিয়েছে ৫৪৮ কোটি টাকা।
এছাড়া এই তালিকায় রয়েছে যমুনা, এনসিসি, ব্যাংক এশিয়া, ডাচ্-বাংলা, শাহজালাল ইসলামী, ট্রাস্ট, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, আইএফআইসি, প্রিমিয়ার, এবি, স্ট্যান্ডার্ড, গ্লোবাল ইসলামী, এক্সিম, মেঘনা, এনআরবি, উত্তরা, পূবালী, ইস্টার্ন ও সাউথবাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থা তৈরি করতে ব্যাংকগুলো আর্থিক প্রতিবেদন ভালো দেখাতে চায়। এজন্য বিভিন্ন সুবিধা বা কৌশলে খেলাপির তথ্য কম দেখায়। এতে সঞ্চিতি কম রাখতে হয়। আবার ওই ঋণের বিপরীতে আদায় দেখানো যায়। এতে প্রকৃত তথ্য আড়ালে চলে যায় এবং মালিক পক্ষ লভ্যাংশ নেওয়ার সুযোগ পায়। আবার কোনো কোনো সময় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তাদের পারফরম্যান্স ভালো দেখাতেও তথ্য গোপন করে থাকে। এসব ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনের পর বার্ষিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে হয়। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন সময় খেলাপির তথ্য উদঘাটন করার পর প্রভাব খাটিয়ে ওই তথ্য গোপন করা হয় বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, খেলাপির তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে গোপন করা একটি বড় অপরাধ। বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার ব্যাংকগুলোকে সুবিধা ও ছাড় দেওয়ার কারণে এই ধরনের সাহস তৈরি হচ্ছে। ব্যাংকিং সেক্টরের ভালোর জন্য এখনই বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্ত অবস্থানে যাওয়া উচিত।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের চলমান ঋণ কর্মসূচির অন্যতম একটি শর্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। শর্তের আলোকে ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে নামাতে হবে ১০ শতাংশের নিচে।
বাংলাদেশে গত ২৭ বছরে (১৯৯৫-২০২১ সাল) প্রতিরোধযোগ্য মাতৃমৃত্যু হার ৭১ শতাংশ কমেছে। অর্থাৎ ১৯৯৫ সালে প্রতি এক লাখ জীবিত সন্তান প্রসব করতে গিয়ে ৫৭৪ জন মায়ের মৃত্যু হতো। কমতে কমতে সর্বশেষ ২০২১ সালের সরকারি জরিপে তা নেমে এসেছে ১৬৮ জনে। কিন্তু শুরুতে যে হারে কমেছে, ধীরে ধীরে তাতে ভাটা পড়েছে এবং মাতৃমৃত্যু কমার হার বিগত সময়গুলোর তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি মন্থর হয়ে এসেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২১ সালের স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (এসফিআরএস) জরিপ অনুযায়ী, ১৯৯৫ সালে ১ লাখ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ৫৭৪ জন মায়ের মৃত্যু হতো। ২০০৪ সালে ১০ বছরের মাথায় তা নেমে আসে ৩৭২ জনে। অর্থাৎ এই ১০ বছরে মাতৃমৃত্যু হার কমেছে ৩৫ শতাংশ। এরপর পরে ২০১৪ সালে ১ লাখ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ২১৪ জন মায়ের মৃত্যু হতো। সেই ১০ বছরে মাতৃমৃত্যু হার কমার গতি বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮ শতাংশে। অর্থাৎ এ সময় বছরে ৪ শতাংশ হারে মাতৃমৃত্যু কমেছে।
এরপর থেকেই গতি মন্থর হয়ে আসে। শেষ ৭ বছরের (২০১৫-২০২১ সাল) প্রথম বছর ২০১৫ সালে প্রতি লাখ সন্তান জন্মদানে মাতৃমৃত্যু হার ছিল ২০০ জন ও শেষ বছর ২০২১ সালে দাঁড়ায় ১৬৮ জনে। অর্থাৎ এই সাত বছরে মাতৃমৃত্যু কমেছে ১৬ শতাংশ। বছরে এই হার ছিল ২ শতাংশ। সে হিসেবে আগের বছরগুলোর তুলনায় মাতৃমৃত্যু হার কমার গতি দ্বিগুণেরও বেশি মন্থর হয়ে এসেছে।
এমনকি মাতৃমৃত্যু হার গত এক বছরে কমার পরিবর্তে বেড়েছে। ২০২০ সালে যেখানে প্রতি লাখ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ১৬৩ জন মায়ের মৃত্যু হয়েছে, সেখানে ২০২১ সালে তা বেড়ে ১৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এই এক বছরে মাতৃমৃত্যু হার বেড়েছে ৩ শতাংশ।
এমন অবস্থাকে দেশের নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য উদ্বেগজনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে ২০৩০ সাল নাগাদ সরকারের টেকসই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে মাতৃমৃত্যু ৭০ জনে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে দেখছেন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমানে মাতৃমৃত্যু হার অনেক ধীরগতিতে কমছে। কমার যে অনুপাত তাতে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি লাখে মাতৃমৃত্যুতে ৭০ জন নামিয়ে আনা সম্ভব হবে না। কারণ এখন বছর অনুপাতে মাতৃমৃত্যু কমছে ১ শতাংশের কিছু বেশি। ধীরে ধীরে এই হার ১ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। ২০২৩ সাল নাগাদ প্রতি লাখে মাতৃমৃত্যু ১০০-তে নামিয়ে আনা যাবে কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
এ ব্যাপারে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের উপপরিচালক ও মাতৃস্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. জাহাঙ্গীর আলম প্রধান দেশ রূপান্তরকে বলেন, একমাত্র যদি প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব শতভাগ করতে পারি, তখন কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব। মাতৃমৃত্যু কমার ধীরগতির প্রধান কারণ প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের অভাব।
বাংলাদেশ অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট (ইলেক্ট) অধ্যাপক ডা. ফারহানা দেওয়ান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক রোগী, অনেক রোগ, নানা ধরনের ঝুঁকি, তাতে মাতৃমৃত্যু কমার হার কিছু কমতে পারে। কিন্তু কমার যে গতি তা আরও বাড়াতে হবে। আমরা সেজন্য কাজ করছি। এখনো মূল বাধা হোম ডেলিভারি বা বাড়িতে প্রসব। আমরা এসব মাকে কিছুতেই হাসপাতালে আনতে পারছি না, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব করাতে পারছি না। এমনকি অনেক মা একেবারে শেষ মুহূর্তে আসে, তখন অবস্থা খুবই খারাপ থাকে, বাঁচানো যায় না।’
এখনো ৫০% প্রসব বাড়িতে হচ্ছে : বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের (বিডিএইচএস) তথ্য অনুযায়ী, এখনো বাংলাদেশে সন্তান প্রসবের ৫০ শতাংশ বাড়িতে হচ্ছে। বাকি যে ৫০ শতাংশ মায়ের প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব হচ্ছে, তাদের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে হচ্ছে ১৪ শতাংশ, বেসরকারি পর্যায়ে ৩২ শতাংশ ও এনজিওর ব্যবস্থাপনায় ৪ শতাংশ।
বেসরকারি হাসপাতালে প্রসবের ৮৪ শতাংশই হচ্ছে সিজারিয়ান, সরকারি হাসপাতালে ৩৬ শতাংশ সিজারিয়ান ও এনজিওতে ৪০ শতাংশ সিজারিয়ান হচ্ছে।
স্বাভাবিক প্রসব বেশি হচ্ছে সরকারি পর্যায়ে, যা প্রসবের ৬৪ শতাংশ, এনজিওতে হচ্ছে ৬০ শতাংশ ও বেসরকারি পর্যায়ে স্বাভাবিক প্রসব হচ্ছে মাত্র ১৬ শতাংশ।
এ ব্যাপারে ডা. জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বলেন, প্রতি বছরে এখন মাতৃমৃত্যু ১ দশমিক ৬ শতাংশ হারে কমছে। এই হার ধীরগতির। কারণ প্রথমদিকে যারা হাসপাতালে যান তাদের বাঁচানো সম্ভব, এমন মায়ের সংখ্যা ৫০ শতাংশ। বাংলাদেশে এখন ৫০ শতাংশ মায়ের প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব হচ্ছে। বাকি ৫০ শতাংশ মাকে অনেক দিন চেষ্টা করেও হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না, তাদের বাড়িতে প্রসব হচ্ছে। পারিবারিক, আর্থিক ও সামাজিক এবং সরকারি ব্যবস্থাপনার কিছু গাফিলতির কারণেও তারা সন্তান প্রসবে হাসপাতালে আসছেন না। এই ৫০ শতাংশ মাকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের আওতায় না আনা পর্যন্ত কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না।
সামনে হার আরও মন্থর হবে : ডা. জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বলেন, ‘দিন যত যাবে, মাতৃমৃত্যু হার কমার গতি আরও ধীরগতির হবে। ১৯৯৫ সালের দিকে বাড়িতে প্রসব হতো শতভাগ। এখন হচ্ছে ৫০ শতাংশ। গত ২৫-৩০ বছরে আমরা মাত্র ৫০ শতাংশ মাকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব সেবা দিতে পারছি। বাকি যে ৫০ শতাংশ তারা সহজেই হাসপাতালে আসতে চান না। সামাজিক ও পারিবারিক নানা প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি সিজারিয়ান ও আর্থিক ব্যাপারেও ভয় পান। ফলে গত ২৫ বছরে যে ৫০ শতাংশকে আমরা হাসপাতালে নিতে পেরেছি, আগামী ২৫ বছরে আমরা সেই হারে হাসপাতালে নিতে পারব না। এজন্য মাতৃমৃত্যুর প্রতিরোধের গতি অনেক কমে যাবে।’
এসব মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য : পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেনÑ এমন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা ও গবেষকরা বলছেন, এসব মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব। ২০২১ সালের বিডিএইচএসের এসভিআরএস তথ্য অনুযায়ী, দেশে মাতৃমৃত্যু প্রতি লাখে ১৬৮ জন। এটা অনেক বেশি ভয়াবহ। কারণ এই মৃত্যুটা প্রতিরোধ করা যায়। একজন সুস্থ মা শুধু সন্তান প্রসব জটিলতার কারণেই মারা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ডা. জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বলেন, ‘এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু ৭০-এ নামাতে চাই। ২০১৯ সালে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন ২০৪১ সালের মধ্যে তিনটি বিষয় শূন্য করবেন। এর মধ্যে একটি হলো মাতৃমৃত্যু। এই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সরকার কাজ করছে।’
মাতৃমৃত্যুর ৫ কারণ : মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মাতৃমৃত্যুর প্রধান পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। এ ব্যাপারে ডা. জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বলেন, মাতৃমৃত্যুর প্রধান পাঁচটি কারণের মধ্যে একটি প্রসবোত্তর রক্তপাত বা প্রসবকালীন হেমারেজ (পিপিএইচ)। প্রসবের আগে বা প্রসবের সময় রক্তক্ষরণ শুরু হলে বাড়িতে প্রসবের ব্যবস্থাপনা করা যাবে, এমন নজির পৃথিবীর কোথাও নেই। অবশ্যই তাকে হাসপাতালে আনতে হবে। কারণ এ ধরনের মায়েদের বাড়ি থেকে হাসপাতালে নিতে নিতেই মৃত্যু হয়। মাতৃমৃত্যুর ৩১ শতাংশ পিপিএইচের কারণেই হচ্ছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, দ্বিতীয় কারণ একলামশিয়া বা খিঁচুনি। এতে ৪ শতাংশ মা মারা যান। একজন মায়ের যদি খিঁচুনি হয়, এমনকি তাকে যদি হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়, তার পরও ১৬ শতাংশ মায়ের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে ভর্তির পর এসব মা মারা যান। এসব মায়ের কিছুতেই বাড়িতে ব্যবস্থাপনা করা যাবে না।
এই কর্মকর্তা বলেন, তৃতীয় কারণ ডেলিভারির পরে সংক্রমণ। এ কারণে ৭ শতাংশ মা মারা যান। চতুর্থ কারণ বিলম্বিত প্রসব। এ কারণে ৩ শতাংশ মা মারা যান। তবে এসব কারণে মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ অনিরাপদ গর্ভপাত। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩৩ লাখ মা গর্ভধারণ করে। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৭ লাখ মায়ের অনিরাপদ গর্ভপাত হয়। কারও কারও মতে এই সংখ্যা ১৫ লাখ। এ কারণে ৭ শতাংশ মায়ের মৃত্যু হয়।
ডা. জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বলেন, আমরা যদি মায়েদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব করাতে পারি, মায়ের যথাযথ সেবা দিতে পারি, তাহলে এসব মাকে বাঁচাতে পারি। মাতৃমৃত্যুর যে প্রধান পাঁচটি কারণ রয়েছে, সবগুলোই প্রতিরোধ করা সম্ভব একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের মাধ্যমে। বিশেষ করে সরকারের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে বিনামূল্যে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা রয়েছে।
সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎসগুলোর একটি প্রবাস-আয়। সাম্প্রতিককালে আসা প্রবাস-আয় বিদেশে পাচার হওয়া টাকাই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আনা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।
গতকাল শনিবার প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২২-২৩ : তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে এ পরামর্শ দিয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, ‘জানি, আমাদের বেশির ভাগ রেমিট্যান্স কোথা থেকে আসে। গত ১০ মাসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ৯ দশমিক ২২ লাখ মানুষ গেছে। সেখান থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী রেমিট্যান্স আসছে না। লোক যাওয়া ও রেমিট্যান্সের মধ্যে মিসম্যাচ হচ্ছে। আগে সৌদি থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসত, এখন সেই জায়গা দখল করেছে যুক্তরাষ্ট্র।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে যারা যায় তাদের বেশির ভাগ হোয়াইট কালার জব করে। অনেকে ঘর-বাড়ি জমিজমা বিক্রি করে দেশ থেকে টাকা নিয়ে চলে যায়। অনেক শিক্ষার্থীও আছে, তারা তো আর টাকা পাঠাতে পারে না। তাহলে এই টাকা কোথা থেকে আসছে?’
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘এর একটা সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে, যেখান থেকে টাকা পাচার হয়েছে, সেখানেই আবার ফেরত আসছে। রেমিট্যান্সের ওপর যে আড়াই শতাংশ ইনসেনটিভ বা সাবসিডি দেওয়া হচ্ছে সেটার সুযোগ নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিষয়টি গভীরভাবে অনুসন্ধান করে দেখা উচিত।’
সংস্থাটি বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩০৫ কোটি ডলার এসেছে। গতবার একই সময়ে ২৮৭ কোটি ডলার এসেছিল। অন্যদিকে গত জুলাই-এপ্রিলে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০৪ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮২ কোটি ডলার কম।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিদেশে লোক যাওয়া ও রেমিট্যান্স পাঠানোর মধ্যে একটা অসামঞ্জস্য আছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসছে, যা অস্বাভাবিক। এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, পাচার করা অর্থ ফেরত আসছে। রেমিট্যান্স আনলে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা পাওয়া যায়, সেই সুযোগ কেউ কেউ নিতে পারেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।
তিনি বলেন, পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনলে তার ওপর কর আরোপ করার বিধান রয়েছে। রেমিট্যান্স হিসেবে এনে প্রণোদনার সুবিধা নেওয়া হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
সিপিডি বলছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ১২ লাখ ৩০ হাজার লোক সৌদি আরবে গেছেন। এ সংখ্যা ওই সময় প্রবাসে যাওয়া সাড়ে ২১ লাখ লোকের প্রায় ৫৭ শতাংশ। কিন্তু ওই সময়ে সৌদি আরব থেকে আসা রেমিট্যান্স কমেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে। সৌদি আরবের জায়গা নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
জ্বালানি তেলের দামের বিষয়ে সিপিডির গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ৭ বছরে বিপিসি মোট ৪৩ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা লাভ করেছে। কর দেওয়ার পর তাদের নিট মুনাফা ৩৬ হাজার ৭৪ কোটি টাকা। এই সময়ে ৭ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা কর দিয়েছে বিপিসি।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘সরকার দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি খাতে বেশি ভর্তুকি দিয়েছে। এখানে এখন কিছু করা যেতে পারে। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ে, তখন দেশের বাজারেও দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে, তখন স্থানীয় বাজারে দাম কমানো হয় না।’
বাংলাদেশে গত আগস্ট মাসে হঠাৎ অকটেন, পেট্রলসহ সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ৩৩ থেকে ৫২ শতাংশ বাড়ানো হয়। বৃদ্ধির ওই হার ছিল গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এরপর গ্যাস-বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হয়। এ ছাড়া ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে শিল্পের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য বেশি দামে আমদানি করতে হয়েছে।
মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব অর্থনীতির প্রায় সব খাতেই পড়ে। বাড়তে থাকে পণ্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতির হার। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি একলাফে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ হয়েছিল।
অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘২০২৩-২৪-এর যে বাজেটটা হচ্ছে, এটি অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে হচ্ছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ, এটা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। আমাদের মূল্যস্ফীতির কথা ধরলে এটি গত ১০ বছরে সবচেয়ে বেশি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারÑ গত ৭ বছরে সবচেয়ে কম। এ রকম পরিস্থিতি নিয়েই আমরা এ অর্থবছর শেষ করে আগামী অর্থবছরের বাজেটের দিকে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘২০২২-২৩-এর বাজেট যদি চিন্তা করি, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাত আমাদের অর্থনীতিতে কী হতে পারে তা বলেছিলাম। তারপরও দেখলাম, ২০২২-২৩-এর বাজেটে জিডিপি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ও মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে ছিল। রিজার্ভের ওপর যে চাপ পড়বে সেটিও আমরা বলেছিলাম। অর্থনীতিবিদদের সে সময়ের পরামর্শগুলো আমলে নিলে অর্থনীতিতে আরেকটু সমন্বয় করা যেত।’
তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেটে অর্থনীতির ন্যায্যতা ও অর্থনীতির স্থিতিশীলতা মূল দর্শন হিসেবে গুরুত্ব পাওয়া উচিত।’
মুদ্রা বিনিময় হার সম্পর্কে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাজারভিত্তিক ব্যবস্থার মাধ্যমে মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করা উচিত। অনেক আগেই করা দরকার ছিল। আমরা টাকাকে শক্তিশালী রাখতে চেয়েছি।’
গত বছরের মার্চ-এপ্রিলের দিকে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। ইউক্রেন যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে স্থানীয় বাজারে ডলারের সরবরাহে টান পড়ে, ফলে দাম বাড়তে থাকে। এখন ১০৮ টাকায় ডলার বিক্রি হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে বেশি দামেও ডলার বিক্রি হচ্ছে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
সুরের মূর্চ্ছনায় মোহাচ্ছন্ন শ্রোতারা হারিয়ে যাবেন। তারপর নৃত্যের তালে মেতে উঠবে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আগামী বুধবার (৪ অক্টোবর) বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। আয়োজনকে বর্ণাঢ্য করে তুলতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এবারের বিশ্বকাপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কী থাকছে, এ নিয়ে আয়োজক ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) এখনো চুপ। দর্শকদের চমকে দিতে এমন গোপনীয়তার চেষ্টা অবশ্য প্রায় সব আয়োজকেরাই করে থাকেন।
তবে ভারতীয় গণমাধ্যম পিটিসি পাঞ্জাবের সূত্রে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইনসাইডস্পোর্ট।
খবরে বলা হয়, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী বিভিন্ন পরিবেশনায় থাকবেন বেশ কয়েকজন বলিউড অভিনেতা–অভিনেত্রী ও গায়ক–গায়িকা। এর মধ্যে গান পরিবেশনে থাকবেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আশা ভোসলে, গায়ক ও সংগীত পরিচালক শঙ্কর মহাদেভান, কণ্ঠশিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল ও অরিজিত সিং।
নাচের পরিবেশনায় দেখা যাবে রণবীর সিং ও তামান্না ভাটিয়াকে। রণবীর বিশ্বকাপের অফিশিয়াল থিম সংয়েও অংশ নিয়েছিলেন।
নাচ–গানের পাশাপাশি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হবে ভারতের ইতিহাস–ঐতিহ্য ও ক্রিকেট উন্মাদনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খেলোয়াড়দের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ১০ দলের অধিনায়ক। এ ছাড়া আয়োজক বিসিসিআই ও আইসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তো থাকবেনই।
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্যবিদায়ী সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে এসেছে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। এ অঙ্ক আগের বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ১৯ কোটি ৫৯ লাখ বা ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ কম। গত বছর সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এ ছাড়া গত আগস্টের তুলনায়ও সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় কমেছে ২৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার বা প্রায় ১৬ শতাংশ। আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলার।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১১ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৫১ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১১৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫০ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
আলোচিত সময়ে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটি গত মাসে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে ৩৪ কোটি ১০ লাখ ডলারের। এর পরের অবস্থানে থাকা ট্রাস্ট ব্যাংক ১১ কোটি এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১০ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৬ লাখ মার্কিন ডলার। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ হয়েছিল। যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। ডলার সংকট ও বাজার স্থিতিশীলতার জন্য রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে ব্যাংকগুলো। এখন প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দাম দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। রপ্তানি বিল নগদায়নে প্রতি ডলারের বিপরীতে দাম দেওয়া হচ্ছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আর আমদানি ও আন্তঃব্যাংক লেনদেনে দেওয়া হচ্ছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।
তবে কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা। চিকিৎসা, শিক্ষা বা ভ্রমণের জন্য যারা বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের নগদ প্রতি ডলার কিনতে দেশি মুদ্রা খরচ করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা পর্যন্ত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনী বছরে সাধারণত রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে। এটা সবসময়ই হয়। এর মূল কারণ অর্থ পাচার। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে পাচার ঠেকানো কঠিন। এজন্য সব সংস্থাকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
তবে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে টাকা পাচার। নির্বাচনী বছর হওয়ায় রাজনৈতিক কারণেই রেমিট্যান্স কমছে। হুন্ডির মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স আসছে। আর এ মাধ্যমেই দেশের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকে কোনোভাবেই রিজার্ভ ধরে রাখতে পারছে না। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আমদানি ব্যয় মেটানোসহ ডলার বিক্রির কারণে অব্যাহত রয়েছে এ সূচক। এতে বড় ধরনের চাপের মুখে রয়েছে আর্থিক খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ (২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ২ হাজার ৭০৫ কোটি ডলার। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিয়মে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী, সবশেষ ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার, যা দিয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে বাংলাদেশ। যদিও নিট রিজার্ভ হিসাব করলে তা আরও অনেক কমে আসবে।
সারা বিশ্বে প্রচলিত ও বহুলব্যবহৃত আইএমএফের ব্যালান্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম৬) অনুযায়ী, রিজার্ভ গণনায় বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত বিভিন্ন তহবিলের পাশাপাশি বিমানের জন্য প্রদত্ত ঋণ গ্যারান্টি, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মুদ্রা বিনিময়, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া ঋণ, ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকে আমানত এবং নির্দিষ্ট গ্রেডের নিচে থাকা সিকিউরিটিতে বিনিয়োগের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত নয়। এসব খাতে বর্তমানে রিজার্ভ থেকে ৫৯০ কোটি ডলার দেওয়া আছে, যা বাদ দিয়ে হিসাব করা হয়েছে।
প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক সংবাদ এলেও রপ্তানিতে কিছুটা সুখবর এসেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬৮ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি আয় এসেছিল ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের বেশি। অর্থাৎ শুধু পোশাকে ভর করে দেশের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। গতকাল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের রপ্তানি আয়ের চিত্র গত বছরের তুলনায় কিছুটা ভালো। যদিও রপ্তানিতে ভরসা শুধু পোশাক খাত। একক মাস হিসেবে সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৩৯৮ কোটি ডলারের। কিন্তু সেপ্টেম্বর শেষে আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬৮ কোটি ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ১৬ শতাংশ কম রপ্তানি আয় এসেছে। যদিও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি আয় ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ বেড়েছে।
রপ্তানিতে এখনো সবচেয়ে বড় ভরসা পোশাক খাত। সেপ্টেম্বর শেষে এ খাতের রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ১৬১ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ে এ খাতের রপ্তানি আয় হয়েছিল ১ হাজার ২৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ।
তবে অন্য খাতগুলোর রপ্তানি আয়ে তেমন কোনো ইতিবাচক সাড়া নেই। এক সময়ের সোনালি আঁশ পাটে রপ্তানি ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২২ কোটি ডলারে। সম্ভাবনায় থাকা চামড়া খাতের রপ্তানি ১৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। রপ্তানিতে অবদান রাখা হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি ৪৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ডলারে। কৃষি খাতের রপ্তানিও ৫ দশমিক ২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২৫ কোটি ৭৪ লাখ ডলারে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।