
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এখন আলোচনার কেন্দ্রে। রাজনীতির মাঠ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবার কৌতূহল এ ভিসানীতি নিয়ে। সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে দায়ী ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এ হুমকিকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ-বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার রাজনীতি শুরু করেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ চাপে পড়েছে আর এ চাপ মোকাবিলার জন্য দলটি তিন কৌশল নিয়ে অগ্রসর হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা এ কথা জানিয়েছেন।
এ নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি নিয়ে প্রথম পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা চাপ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেটা হলো তাদের জানানো হবে, দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যবসায়িক সম্পর্ক শিথিল করবে। তাতে কাজ হয়ে গেলে চুপ হয়ে যাবে সরকার। কাজ না হলে যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন সৃষ্টি হলে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত ছাড়া আর কোনো দেশ থাকবে না। তাতে তাদের ছড়ি ঘোরানোর ক্ষেত্র সংকুচিত আসবে। এ ছাড়া বিশ্বের নামিদামি লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করে লবিস্ট নিয়োগ করা হবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেনদরবার করার জন্য। গুরুত্বপূর্ণ দেশের সাবেক সরকারপ্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরও কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হবে। তবে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে আরও গুরুত্বপূর্ণ কী করা যেতে পারে, সেটাও দেখা হবে বলে জানান তারা।
এ নেতারা আরও বলেন, শিগগিরই দলীয় ফোরামের সভা হওয়ার কথা রয়েছে। তারপর বিষয়গুলো আরও খোলাসা হবে।
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এ নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। এটাকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা চাপের ইঙ্গিত বলে দাবি করেন তারা। ভিসানীতির পর এ অবস্থানে যেতে পারে বাংলাদেশ সরকার, সে বার্তা সরকারপ্রধান হিসেবে তার পক্ষ থেকে প্রথমে দেওয়া হলো। তাতে কোন পরিস্থিতি দাঁড়ায়, সেটা পর্যবেক্ষণ করে অন্য উপায় বের করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ক্ষতির চেয়েও বেশি ভীতি তৈরি করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে। তিনি বলেন, এ ভিসানীতি যতটা প্রভাব ফেলবে তার চেয়েও ভীতির প্রভাব দেশে বেশি পড়েছে। তিনি বলেন, ‘ইউরোপ-আমেরিকায় আমলারা রাষ্ট্রীয় কাজে, প্রশিক্ষণে বা অন্য কোনো কাজে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা থাকলে ওই কাজের জন্য আমরা পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর সঙ্গে নতুন সম্পর্ক সৃষ্টি করব। আমেরিকা ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এখন অনেক উন্নত। নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় যেমন রয়েছে, প্রযুক্তিসহ অন্য অনেক দিক থেকেও উন্নত। এতে সরকারের জন্য অনেক নতুন দরজাও খুলবে।’
সভাপতিম-লীর ওই সদস্য বলেন, ভিসানীতি নিয়ে তিন ধরনের পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। পাল্টা চাপ, সম্পর্কে টানাপড়েনের ইঙ্গিত ও সর্বশেষ লবিস্ট নিয়োগে আরও জোর দেওয়া।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সবকিছু শেষ হয়ে গেছে এমনটা নয়। আরও সময় আছে, দেখা যাক।’
বিদেশি সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, ভিসানীতির চেয়ে বড় নিষেধাজ্ঞা আসতে পারত। কূটনীতিক সম্পর্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ ভিসানীতি পর্যন্ত আটকে রাখা গেছে। তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, যুক্তরাষ্ট্রকে যতটা সরকারবিরোধী অবস্থানে মনে করা হচ্ছে, ঠিক ততটা নয়। দেশটির দাবি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণ নির্বাচন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ চাওয়ার সঙ্গে কোনো দ্বিমত পোষণ করেননি।’
বিদেশনীতি নিয়ে কাজ করা এ নেতা আরও বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এর চেয়ে বেশি সম্পর্কোন্নয়ন ঘটবে সেটা প্রধানমন্ত্রী মনে করেন না। সম্পর্ক এর চেয়ে খারাপ হবে সেটা মনে করা হয় না। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে নির্বাচন পার করে নেওয়াই হলো আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার একমাত্র লক্ষ্য। আমরা বিশ্বাস করি আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনা করবেনই। সেটা ঠেকাতে পারবে কেউ এমন পরিস্থিতি দেশে নেই। নির্বাচনের পর অনেক কিছুই নতুন পরিকল্পনায় করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রবীণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি সংসদ নির্বাচন হওয়ার আগেও কূটনীতি সরকারের পক্ষে ছিল না। নানা কৌশল ও সাহসে শেখ হাসিনা নির্বাচন করেছেন। নির্বাচন শেষে সরকারের দায়িত্ব নিয়ে নতুন কৌশল ও পরিকল্পনায় সরকার এগিয়ে গেছে। তিনি বলেন, সেই অভিজ্ঞতাও সরকারের আছে। সুতরাং নির্বাচন পর্যন্ত এভাবেই চলবে সরকার। কারও সঙ্গে আপস, কারও সঙ্গে সাহস এটাই সরকারের আওয়ামী লীগের নীতি ও কৌশল হবে। প্রয়োজনে চীন-ভীতি দেখিয়েও যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দেওয়া হতে পারে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতির চেয়ে বড় কিছু আসবে প্রত্যাশা করেছিল বিএনপি। তারা সেভাবেই যুক্তরাষ্ট্রকে ম্যানেজ করেছিল। বড় কিছু না হওয়ায় বিএনপি হতাশ হয়েছে। ভিসানীতি সবার মতো করে বিএনপির জন্যও সুখকর হয়নি। বিএনপির প্রত্যাশা পূরণ হলে দলবল নিয়ে মাঠে নেমে যেত। সরকার পতন হয়ে গেছে মনে করে আনন্দ শোভাযাত্রাও হতো। সুতরাং ক্ষতি হয়েছে সরকারের, বিপাকে পড়েছে আওয়ামী লীগ এটা ঠিক। তবে নিয়ন্ত্রণযোগ্য বলেও মনে করছে সরকার।
এ নেতা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দেশ সফরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বিএনপির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এটা ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার দেশ রূপারন্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ভিসানীতির কারণে রাজনীতিতে কোনো প্রভাবই পড়বে না। আমেরিকা না গেলে কী হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্র যেতে ভিসা চাইলাম, আমাকে দিল না, কী এমন ক্ষতি হবে। এ নিয়ে আমি যেমন ভাবছি না, আমার দল আওয়ামী লীগও ভাবছে না।’
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
চলমান বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে দেশের বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীল খাতকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে একটি শিল্প ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেট প্রণয়নে সরকার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী। আগামী অর্থবছরে কেমন বাজেট প্রয়োজন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বৈশ্বিক মন্দায় টিকে থাকতে হলে এদেশের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে দেশি বিনিয়োগ না বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে না। তাই সবকিছুর ওপরে আগামী অর্থবছরে স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়াতে গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য নীতিসহায়তা খুব জরুরি।
ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, এদেশে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প। এ খাতে উৎসে করের হার কমিয়ে ৫ থেকে ১০ বছর রাখতে হবে। এছাড়া নগদ প্রণোদনা, যন্ত্রপাতি আমদানি, কারখানা নির্মাণের, বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের যন্ত্রপাতিতে রাজস্ব ছাড় এখন সময়ের দাবি। শিল্পের অন্যান্য খাতেও সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করে ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, কোন খাতের কী সুবিধা তা খতিয়ে দেখে তালিকা করে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এতে সমগ্র অর্থনীতি সুষমভাবে গতিশীল হবে।
শিল্পে প্রয়োজনমতো জ্বালানি সরবরাহ করতে পদক্ষেপ নিতে হবে এমন মন্তব্য করে সালাম মুর্শেদী বলেন, শুধু সরকারের ওপর দায় না চাপিয়ে বেসরকারি খাতকেও জ্বালানি সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখতে হবে। এক্ষেত্রেও সরকারকে নীতিসহায়তা দিতে হবে। বিশেষভাবে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে উদ্যোক্তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা দিতে হবে।
আইএমএফের সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে দেশের অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে এমন প্রশ্নের উত্তরে ব্যবসা খাতের এ নেতা বলেন, ভালোমন্দ সব জায়গায় আছে তাই সংস্কার প্রস্তাবের যা এদেশের অর্থনীতির জন্য ভালো তা গ্রহণ করা যায়। তবে কোনো কিছু রাতারাতি চাপিয়ে দিয়ে নয়। সহনীয়ভাবে তা করতে হবে।
অর্থপাচার কমাতে আপনার প্রস্তাব কী, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, অর্থপাচারের ফলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থ বিদেশে চলে গেলে সরকারের ক্ষতি, সাধারণ মানুষের ক্ষতি। ব্যক্তি পর্যায়ে, সামষ্টিকভাবে অর্থ সংকট বাড়ে। তাই অর্থপাচার বন্ধ করতে হবে। এজন্য কঠোর আইনি প্রয়োগ প্রয়োজন। তবে মনে রাখতে হবে পাচারকারীর একার পক্ষে অর্থপাচার করা সম্ভব না। অনেকে মিলে পাচার করে। সবাইকে সমানভাবে আইনের আওতায় আনতে হবে। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেন ব্যবসায়ী এ নেতা।
জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে এমন মত জানিয়ে সালাম মুর্শেদী বলেন, গত এক বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় কয়েকগুণ বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি গড়ে ৮ থেকে ৯ শতাংশের ঘরে। মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে করমুক্ত আয়ের সীমা তিন লাখ টাকা থেকে আরও দুই লাখ টাকা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, রাজস্ব জালের আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। কিছু মানুষের ওপর চাপ বাড়িয়ে আদায় বাড়ানো যাবে না। এজন্য এনবিআরকে সব কাজে অটোমেশনের ব্যবহার বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রযুক্তির ব্যবহারে দুর্নীতি কমবে। করদাতাদের হয়রানি কমবে।
করপোরেট করহার কমানোর প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবেশী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করপোরেট করহার বেশি। এতে ব্যবসায়ের খরচ বাড়ছে। বৈশি^ক মন্দার মধ্যে যা ব্যবসায়ীদের জন্য বাড়তি চাপ। ব্যবসায়ীদের এ খরচ কমানো হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিনিয়োগ বাড়বে।
কোম্পানির ক্ষেত্রে অর্জিত ব্যাংক সুদ আয়ের ওপর উৎসে কর কমানোর পরামর্শ দিয়ে সালাম মুর্শেদী বলেন, এ হার ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনা প্রয়োজন। না হলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যাংকে সঞ্চয়ে নিরুৎসাহিত হবে। বিদ্যমান ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকট দূর করতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সঞ্চয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আগামী অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ এমন মত জানিয়ে সালাম মুর্শেদী বলেন, আগামী বাজেটে মানুষের ভোগান্তি কমাতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। আন্তর্জাতিক বাজার তো আর আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, তাই দেশের মধ্যে যতটা পারা যায় পদক্ষেপ নিতে হবে।
নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রানঅফ বা দ্বিতীয় দফা ভোটে জিতে তুরস্কের ক্ষমতার মসনদে বসছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ৯৮ শতাংশ ব্যালট বাক্স গণনার ভিত্তিতে এ ফল নিশ্চিত করেছে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি ও বিরোধীদের সমর্থিত সংবাদ সংস্থা আনকা। অর্থাৎ ১১ বছর প্রধানমন্ত্রী ও ৯ বছর তুরস্কের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা এরদোয়ান আগামী ৫ বছর দেশ শাসনের ক্ষমতা পেতে যাচ্ছেন। আনাদোলুর বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বলছে, সর্বশেষ প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, এরদোয়ান পেয়েছেন ৫২ দশমিক ১২ শতাংশ ভোট। আর কেমাল কিরিচদারোগলো পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট।
জয়ের অনানুষ্ঠানিক ফলাফলের পর ইস্তাম্বুলে একটি বাসের ছাদে দাঁড়িয়ে উপস্থিত হাজারো সমর্থকের সামনে আবেগঘন বক্তৃতা দেন এরদোয়ান। তিনি বলেন, ‘স্রষ্টা আমাদের আর্জি শুনেছেন। আমি তুরস্কের জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। কথা দিচ্ছি আমৃত্যু তুর্কি জাতির প্রতি দেওয়া ওয়াদা পূরণ করব।’
গত ১৪ মে প্রথম দফা ভোটে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান আরও শক্তিশালী হয়ে রানঅফ ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কারণ প্রাথমিক ভোটে তৃতীয় স্থান পাওয়া সিনান ওগান সরাসরি এরদোয়ানের প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেন। ওগান ৫ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন।
গত ২০ বছর ধরে তুরস্কের ক্ষমতায় আছেন এরদোয়ান। পশ্চিমা ভাষ্যমতে, তার নেতৃত্বে দেশটি ক্রমাগত কর্র্তৃত্ববাদী শাসনের পথে হেঁটেছে। তার বৈদেশিক নীতি পেশিবহুল এবং তিনি একরোখাভাবে অপ্রচলিত উপায়ে দেশের অর্থনীতি পরিচালনা করে গেছেন। অন্যদিকে তার শাসনামলে তুরস্ক আঞ্চলিক শক্তি থেকে এখন বিশ্ব শক্তি হিসেবে মূল্যায়িত হচ্ছে। এমনকি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতার আগ্রহ প্রকাশ করাদের মধ্যে তুরস্ক আছে শীর্ষে। বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাশিয়া-ইউক্রেন কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তির মধ্যস্থতা করেছে এরদোয়ানের তুরস্ক। এতদিন শাসনক্ষমতায় থাকা এবং বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা এরদোয়ানের সামনে তুরস্কের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আসে তার জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হয়ে। তাকে এ পরীক্ষায় ফেলে তুরস্কের রেকর্ডভাঙা মূল্যস্ফীতি এবং গত ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ ভূমিকম্প। ভোটের মাত্র তিন মাস আগে হওয়া ভয়াবহ সে ভূমিকম্পে অর্ধলাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। ভূমিকম্পের পর উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় যথাযথভাবে সাড়া দিতে না পারার জন্য দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনার শিকার হতে হয় এরদোয়ান সরকারকে। এরদোয়ান নিজেও তাৎক্ষণিক সাড়ায় দেরি করে ফেলার কথা স্বীকার করেন।
এ দুই কারণে ভোটের আগের জনমত জরিপগুলো ৬৯ বছর বয়সী এরদোয়ানের চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিরিচদারোগলোকেই এগিয়ে রেখেছিল। কিন্তু গত ১৪ মের প্রথম দফা ভোটে সেই হিসাব পাল্টে যায়। ওইবার এরদোয়ান ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন দেশটির তরুণ ভোটাদের পছন্দের প্রার্থী কিরিচদারোগলো। প্রাথমিক ভোটে তিনি মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কিরিচদারোগলোর থেকে প্রায় ৫ পয়েন্ট এগিয়ে ছিলেন। তবে অল্পের জন্য রানঅফ এড়াতে প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট পেতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ফলে নির্বাচন গড়ায় ২৮ মের রানঅফে। যা তুরস্কের ইতিহাসে এই প্রথম। এদিন দুপুরের দিকে এরদোয়ান ও তার স্ত্রী এমিনে ইস্তাম্বুলের এশিয়া অংশে তাদের বাড়ির কাছের একটি স্কুলে ভোট দেন। ভোটে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী এরদোয়ান প্রথম দফার মতো দ্বিতীয় দফায় ভোটের পরও সমর্থকদের ব্যালট বাক্স পাহারা দিতে বলেন। এরদোয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বী ৭৪ বছরের কিরিচদারোগলো আঙ্কারায় ভোট দেন। তিনি ছয় দলের বিরোধী জোটের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। তুরস্কের জাতির পিতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি।
প্রাথমিক ভোটে এরদোয়ানের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও রানঅফ ভোটে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানিয়েছিলেন কিরিচদারোগলো। চরম মূল্যস্ফীতি, সংকটে থাকা অর্থনীতি এবং ভূমিকম্পকে ছাপিয়ে রানঅফ ভোটে বিতর্কের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছিল তুরস্কের শরণার্থীরা। কিরিচদারোগলো সিরীয় শরণার্থীদের বিতাড়িত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করেন। আর এরদোয়ানের অভিযোগ, কিরিচদারোগলো ঘৃণা ছড়াচ্ছেন।
এদিকে তুরস্কের নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত কার হাতে যাবে তা শুধু তুর্কিদের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং তুরস্কের নির্বাচনী ফলের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ছিল বিশ্বও। কারণ, বিশ্বের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে তুরস্ক। রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে রানঅফ ভোটগ্রহণ শুরু হয়। স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। প্রাথমিক ভোটের দিনের তুলনায় রবিবার ভোটকেন্দ্রগুলো অপেক্ষাকৃত শান্ত ছিল বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স। প্রাথমিকে ৮৯ শতাংশ ভোট পড়েছিল। রবিবারের এ ভোটে শুধু তুরস্কের নেতাই নির্বাচিত হবেন না। বরং পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য সাড়ে আট কোটি মানুষের দেশটি কোন পথে হাঁটবে সেটাও জানা যাবে। দেশটির বৈদেশিক নীতি কী হবে, যেটাও এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এরদোয়ানের তুরস্ক ক্রমে রাশিয়া ও পারস্য দেশগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ছিল, যা ক্ষুব্ধ এবং শঙ্কিত করেছে পশ্চিমাদের। এমনকি এরদোয়ান খোদ অভিযোগ করেন, এ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাকে জয়ী হিসেবে দেখতে চান না!
‘উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে।’ এমন আহ্বান জানিয়েছেন ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ।
বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘এরাই ৩০ লাখ মানুষকে শহীদ করেছে, এরাই দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে। তারা যদি আবার ক্ষমতায় আসে, তাহলে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা আপনাদের সামনে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করব। যদি শুনতে পারি নৌকা হেরে গেছে, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় গেছেন। তাহলে আমি আর বেঁচে থাকতে চাই না। আমার বেঁচে থাকার কোনো দরকার নেই।’
শনিবার সন্ধ্যায় গৌরীপুর উপজেলার ভূটিয়ারকোনা গ্রামের মাস্টারবাড়ি এলাকায় এক উঠান বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় নৌকায় ভোট চেয়ে নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আপনারা যদি নৌকায় ভোট না দেন, তাহলে জাতির সঙ্গে বেইমানি হবে। ৩০ লাখ শহীদের সঙ্গে বেইমানি হবে। দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের সঙ্গে বেইমানি হবে। তাই আমার অনুরোধ, আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে আরেকবার সুযোগ দিন, যাতে এ দেশে রাজাকার, আলবদর আর ক্ষমতায় না আসতে পারে।’
উঠান বৈঠকে গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এই প্রসঙ্গে গতকাল রবিবার মুক্তিযোদ্ধা এমপি নাজিম উদ্দিন বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চাই না কোনো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি যেন ক্ষমতায় আসে। আমি মূলত বক্তব্যে আমার অনুভূতি প্রকাশ করেছি।
রংপুরের বোনারপাড়ায় আল আমীন ওরফে নয়ন এবং ময়মনসিংহের নান্দাইলে খাইরুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার হয় রেললাইন থেকে। রাজধানীর চকবাজারে বাসা থেকে আনিসুর ও ময়মনসিংহের ত্রিশালে বাড়ির পাশের একটি গাছ থেকে মোনায়েম খাঁর গলায় ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম দুজনের মৃত্যু রেল দুর্ঘটনাজনিত এবং পরের দুজন আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
কিন্তু পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) তদন্তে উঠে আসে চারটি ঘটনাই ছিল হত্যাকা-। পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করে রেল দুর্ঘটনা ও আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইয়ের কাছে আসা এ ধরনের ২২টি মামলার রহস্য ভেদ করেছে সংস্থাটি। প্রতিটি ঘটনাই ছিল হত্যাকা-। আসামিরা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছে।
পিবিআই সদর দপ্তর সূত্র বলছে, এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণত অপমৃত্যুর মামলা হয়। কিন্তু অন্য সংস্থার তদন্তের পর আদালতে বাদীর নারাজির পরিপ্রক্ষিতে পিবিআইতে আসে অধিকতর তদন্তের জন্য। এমন অসংখ্য মামলা এখনো পিবিআইয়ের তদন্তাধীন।
আইনজ্ঞরা বলছেন, ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পুলিশের তদন্তে ভুল হলে আসামিপক্ষ সুবিধা পায়, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদন ও পুলিশের তদন্তকারীদের উদাসীনতায় এমন অনেক মামলার বিচার হচ্ছে না।
ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. আবদুল্লাহ আবু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আদালতে বিচার প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, ভিসেরা রিপোর্ট ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে। মামলা হওয়ার পর সুষ্ঠু তদন্ত করে নির্ভুল প্রতিবেদন আদালতে পেশ করতে হবে। হত্যাকা-কে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিলে হবে না। এত বড় ভুল হওয়ার কথা নয়, এমন ভুল করা যাবে না। তদন্তে ভুল হলে আসামিপক্ষ বেনিফিট পায়।’ তিনি বলেন, ‘তবে তদন্ত রিপোর্টই চূড়ান্ত না। আদালতেরও বিষয় আছে। ভুল প্রতিবেদন দিলে তো আদালত ভুল করবে না।’
ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, অস্বাভাবিক মৃত্যু অথবা মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সন্দেহ থাকলে অথবা অন্য কোনো কারণে তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন ময়নাতদন্ত করা জরুরি তখন কাছের সিভিল সার্জনের কাছে ময়নাতদন্ত করার জন্য লাশ পাঠিয়ে থাকেন।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একটি ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বিভ্রান্ত করতে পারে এবং ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছতে প্রভাবিত করতে পারে। ভুল প্রতিবেদনের মাধ্যমে মামলাটি নিষ্পত্তি হলে প্রকৃত ঘটনা আড়ালেই রয়ে যায়।
পিবিআই উদঘাটিত ঘটনার মামলাগুলো হয়েছিল রংপুরের বোনারপাড়া রেলওয়ে ও মিঠাপুকুর থানায় দুটি, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানায় দুটি, ডিএমপির ওয়ারী ও চকবাজার থানায় দুটি, ময়মনসিংহের নান্দাইল ও ত্রিশাল থানায় চারটি, গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও শ্রীপুর থানায় দুটি, গোপালগঞ্জ সদর ও কোটালীপাড়া থানায় দুটি। এ ছাড়া কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানা, রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানা, রাজবাড়ীর পাংশা থানা, নেত্রকোনা মডেল থানা, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থানা, বগুড়ার শেরপুর থানা ও টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থানায় একটি করে মামলা হয়েছিল।
জানতে চাইলে পিবিআইপ্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদেনের ওপর ভিত্তি করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়ে যায়। এতে প্রকৃত ঘটনা আড়াল হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, পিবিআইতে আসা যেসব মামলায় এখন পর্যন্ত রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে, সে ঘটনায় ভুক্তভোগীর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনাজনিত কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলাগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বোনারপাড়া থানা এলাকায় রেললাইন থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আল আমীন ওরফে নয়নের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা প্রতিবেদনে চিকিৎসক উল্লেখ করেন, রেল দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে। লাশ উদ্ধারের দিন ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল নয়নের বাবা বাদী হয়ে বোনারপাড়া রেলওয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে রেলওয়ে থানা পুলিশ তদন্ত করে, পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) আসে। রেলওয়ে পুলিশের মতো সিআইডিও এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল। কিন্তু বাদীর নারাজি দেওয়ায় আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই রংপুর জেলা ইউনিটকে নির্দেশ দেয়।
পিবিআই তদন্ত করে পেয়েছে, প্রেমের সম্পর্কের জেরে নয়নকে হত্যা করা হয়। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় সংস্থাটি। এতে উল্লেখ করা হয়, প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তার আত্মীয়স্বজন নয়নকে আটক করে ছুরিকাঘাত করে ও গলা কেটে হত্যা করে। ট্রেন দুর্ঘটনায় নয়নের মৃত্যু হয়েছে মানুষ যেন তা মনে করে সে জন্য লাশ রেললাইনের ওপর ফেলে রাখে। পিবিআই দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই রংপুর জেলা ইউনিটের তৎকালীন পরিদর্শক মো. হোসেন আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি এক বছর ধরে নিবিড়ভাবে তদন্ত করি ও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করি। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদকালে যে মেয়েটির সঙ্গে নয়নের সম্পর্ক ছিল তার ভাই সব বলে দেয়।’
রাজধানীর চকবাজারের আনিসুর রহমানকে মাথায় আঘাত করে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন তার প্রেমিকা জোসনা বেগম। এর নেপথ্যে ছিল ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনি। জোসনা ও তার আরেক প্রেমিক রাজ্জাক পরিকল্পিতভাবে আনিসকে হত্যা করে। ২০১০ সালের এ ঘটনায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে চিকিৎসক আত্মহত্যাজনিত মৃত্যু উল্লেখ করেন। আনিসের ভাই চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি বছরের পর বছর পর্যায়ক্রমে চকবাজার থানা পুলিশ, ডিবি ও সিআইডি পৃথক তদন্ত করে আত্মহত্যাজনিত কারণ উল্লেখ করেই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবারই বাদী নারাজি দেন। অবশেষে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেয়। তদন্ত পর্যায়ে পিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার রাজ্জাক আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেয়। জোসনা ও রাজ্জাককে অভিযুক্ত করে সম্প্রতি আদালতে অভিযোগ দাখিল করেছে পিবিআই। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।
একইভাবে ২০১৬ সালের ২২ জানুয়ারি ময়মনসিংহের নান্দাইলে রেললাইন থেকে উদ্ধার হয় খাইরুল ইসলামের মরদেহ। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে রেল দুর্ঘটনার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। নান্দাইল মডেল থানায় খাইরুলের স্ত্রী শিরিন আক্তারের করা মামলাটি কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানা পুলিশ, নান্দাইল মডেল থানা পুলিশ এবং সর্বশেষ ময়মনসিংহ সিআইডি তদন্ত করে কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি। পরে আদালতের নির্দেশে মামলাটি অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই ময়মনসিংহ জেলা। সংস্থাটি তদন্ত করে জেনেছে, দুর্ঘটনা নয়, খাইরুলকে হত্যা করা হয়েছে পরকীয়া সম্পর্ককে কেন্দ্র করে। হত্যায় অংশ নেওয়া ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় তারা। পিবিআই তাদের অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে।
একই বছর ২৪ অক্টোবর ময়মনসিংহের ত্রিশালের রামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন সদস্য মোনায়েম খাঁর গলায় ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত মরদেহ বাড়ির পাশের একটি গাছ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ মৃত্যুকেও আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয় ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে। ত্রিশাল থানায় মোনায়েমের বাবার করা হত্যা মামলায় পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল। পরে পিবিআই তদন্তে দেখা গেছে, নির্বাচন ও বিলের পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে খুন হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল ১১ জন। ২০১৯ সালে তদন্ত শেষে ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. ফিরোজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদেই রহস্য উদঘাটিত হয়। আসামিদের পাঁচজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।’
পিবিআইয়ের তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, কিছু অপমৃত্যু মামলা পুনঃতদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে, পূর্ববর্তী তদন্তকারী কর্মকর্তারা মামলা তদন্তের ভিত্তি হিসেবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে মামলাগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে। এসব মামলার ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ‘সুইসাইডাল নেচার’ বা ‘আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু পিবিআই কর্মকর্তারা আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও অন্যান্য কৌশল অবলম্বন করে প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
মূল লড়াইয়ের আগে গা গরমের খেলা। সেখানে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগ্রাসী। তাতে পাকিস্তান পায় ৩৪৫ রানের বড় সংগ্রহ। তারপরও জিততে পারল না। নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নিয়েছে ৩৮ বল হাতে রেখেই।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৯৪ বলে ১০৩ রান করে অবসর নেন তিনি। এছাড়া বাবর আজম ৮০ ও সৌদ শাকিল ৭৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে নামা রাচিন রবীন্দ্র ৭২ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন ৫৪, ড্যারেল মিচেল ৫৯ আর মার্ক চাপম্যান ৬৫ রান করে দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
গোটা দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সাকিব আল হাসানকে শূলে চড়াচ্ছে, অন্যরা তামিম ইকবালকে। অথচ জাতীয় ক্রিকেট দল ভারতে গেছে বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে খোঁচাখুঁচি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এত দ্বিধা আর সংকোচ, যে কারণে তামিম না থাকায় এত হাহাকার, সেখানেই কিনা বাজিমাত করে পুরো জাতিকে অন্য এক বার্তা দিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।
বিশ্বকাপের দলে যে তামিম ইকবাল থাকছেন না, সেটা জানা গিয়েছিল আগের দিনেই। তবু ক্রিকেট ভক্তদের মনের এক কোণে ক্ষীণ আশা ছিল। ওপেনারদের টানা ব্যর্থতার কথা বিবেচনায় হলেও এই ব্যাটসম্যান থাকবেন বলে ছিল তাদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। তাকে দলে না রাখায় অবশ্য রাস্তায় জনতার ঢল নামেনি, রাজপথে হয়নি কোনো সভা-সমাবেশ। তবে নতুন যুগের দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদী নিন্দার বাণী। হাল জামানায় যাকে ‘টাইমলাইন’ বলে সম্বোধন করা হয়।
সেই সব প্রতিবাদী স্ট্যাটাসও দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ সাকিব আল হাসানের পক্ষে, কেউবা তামিম ইকবালের। একদল পরিসংখ্যান-পর্যালোচনা দিয়ে বোঝাতে ব্যস্ত যে এই যুগে তামিমের কৌশল ‘ওল্ড স্কুল’। ওসব এখন আর চলে না। অন্য দল ১৭ বছরের ইতিহাস আর আবেগ নিয়ে হাজির। তাদের কাছেও আছে পরিসংখ্যান। সেটা গত কয়েক বছরের তামিমের ওপেনার সঙ্গীদের একটা তালিকা। তারাই শূলে চড়াচ্ছেন সাকিব-হাথুরু থেকে শুরু করে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের।
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিব ক্রীড়াভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেলকে দিয়ে গেছেন সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি সরাসরি তামিমের সমালোচনা করেছেন। এই ওপেনার যে দলের প্রয়োজনে পজিশন পরিবর্তনে রাজি হতে চান না, সেই মানসিকতা বাচ্চাদের মতো বলে সমালোচনা করেছেন টাইগার অধিনায়ক। এমনকি তার স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার আগে তামিম নিজে একটা ভিডিও বার্তায় বলেছেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা। মাশারফী বিন মোর্ত্তজাও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাতে করে ক্রিকেটাঙ্গনে এখন যেন ভিডিও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিকেট নিয়ে জাতির অবস্থা যখন এমন, তখন ভারতের গোয়াহাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আসাম রাজ্যের রাজধানীর বরষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নেমেছিল তারা। ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তও ছিলেন না থাকার মতো করেই। প্রথম গা গরমের ম্যাচে তাই নেতৃত্ব দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
টসভাগ্যে মিরাজের পরাজয়ের পর বল হাতে নামে বাংলাদেশ। টানা ৪০ ওভার টাইগারদের বোলারদের যেন শাসন করছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ঐ সময় পর্যন্ত ৫ উইকেট হারালেও তারা করে ২০২ রান। তারপরই যেন ঘুরে দাঁড়ান টাইগার বোলাররা। শেষ ১০ ওভারের ৫ বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ২৬৩ রানের বেশি তারা করতে পারেনি।
২৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশের হালটা যে সুখকর হবে না, মুহূর্তেই ধসে পড়বে ব্যাটিং লাইনআপ। সিনিয়রদের কাউকে এসে হাল ধরে নিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে দলকে। খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলে হয় জয়, নয়তো সম্মানজনক হার! এমনটাই ছিল অনুমিত। আমরা যে এতেই অভ্যস্ত।
কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে দেন। যে ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিল, যে সমস্যার কারণে চোট প্রবণ তামিম ইকবালকেও সবাই চাইছিলেন দলে। সেটাই কিনা তারা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভুলিয়ে দিলেন! উদ্বোধনীতে তারা গড়েন ১৩১ রানের জুটি। তাতে ১৩ ম্যাচ পর বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি দেখতে পেয়েছে। হোক সেটা প্রস্তুতি ম্যাচ, তবুও তো লড়াই!
সবচেয়ে বড় স্বস্তি লিটন-তানজিদের রানে ফেরা। এশিয়া কাপের আগে জ্বরে ভুগছিলেন লিটন। সেই জ্বরের ধকল কাটিয়ে উঠতে তার সময় লেগেছে। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে যেতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর চোটের কারণে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এই টুর্নামেন্টে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ। কিন্তু তিনিও প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও।
তাই বিশ্বকাপের দলে তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়াতে ঝড় উঠেছিল। সেই ঝড় চলমান ছিল আজ দুপুর অবধি। অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, এই জুটি ব্যর্থ হবে। যা ধারাবাহিক থাকবে টুর্নামেন্টের শুরুতেও। তারপর বিশ্বকাপের মাঝপথে আচমকা ডাক পেয়ে তামিম ইকবাল উড়াল দেবেন ভারতে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে। সেবার জাভেদ মিয়াঁদাদকে ছাড়াই তারা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে তাকে মাঝপথে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং বিশ্বকাপ জিতেছিল।
এমন স্বপ্ন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটভক্তরাও দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তানজিদ তামিম আর লিটনের জুটি বদলে দিয়েছে সব হিসেব-নিকেশ। তামিমের ফেরার প্রত্যাশায় যারা গুনছিলেন প্রহর, তাদের মাথায় যেন এবার আকাশ ভেঙে পড়েছে। কারণ তারা যে রানে ফিরেছেন। যুববিশ্বকাপজয়ী তামিম খেলেছেন ৮৪ রানের একটি ইনিংস। ৮৮ বলে যা সাজানো ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কায়। অন্যপ্রান্তে লিটন ৫৬ বলে ১০ চারে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। শুধু কি তাই! এদিন তিনে নেমেছিলেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান। ৬৪ বলের হার না মানা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কায়।
পঞ্চপান্ডবের পরের প্রজন্ম তো তারাই। যাদের ব্যাটে শুক্রবার বরষাপাড়ায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদের রানে ফেরা যেন নতুন দিনের বার্তা দেয়। যে বার্তা আগামীর পথচলার। যেখানে পুরনোকে আকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা ক্ষীণ হয়ে আসার বার্তা। সহজ কথায়, তরুণদের রানে ফেরাতে মিয়াঁদাদ হওয়ার সুযোগ আর হচ্ছে না তামিম ইকবালের।
আল নাসরে প্রথম মৌসুমটা ভালো না কাটলেও দ্বিতীয় মৌসুমের শুরু থেকেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আছেন দারুণ ছন্দে। নিজে গোল করে দলকে জেতাচ্ছেন, সতীর্থদের দিয়ে গোল করাচ্ছেন।
শুক্রবারও সৌদি প্রো লিগে আল তা’য়ির বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে আল নাসর। এ ম্যাচেও রোনালদো গোল করেছেন এবং করিয়েছেন। তবে তাঁকে নিয়ে বেশি আলোচনা তালিসকার গোলটিতে অসাধারণ এক অ্যাসিস্টের জন্য। অ্যাসিস্টটিতে যে সবার মন ভরিয়ে দিয়েছেন রোনালদো।
তা’য়ির মাঠে আল নাসর গতকাল শুরুটা করেছে দারুণ। একের পর এক আক্রমণে স্বাগতিক দলের রক্ষণ করে দিয়েছে এলোমেলো। ম্যাচের শুরুর দিকেই রোনালদোর দুর্দান্ত একটি প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন তা’য়ির গোলকিপার। এ ছাড়া রোনালদোও খুব কাছ থেকে পাওয়া একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
তবে ৩২ মিনিটে এগিয়ে যায় আল নাসর। গোলটি করেছেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অ্যান্ডারসন তালিসকা। গোলটিতে রোনালদো অ্যাসিস্ট করেছেন অসাধারণ এক বাই-সাইকেল কিকে। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা রোনালদোর পঞ্চম অ্যাসিস্ট।
খেলার স্রোতের বিপরীতে ৭৯ মিনিটে সমতায় ফেরে তা’য়ি। কিন্তু সমতা বেশিক্ষণ থাকেনি। ৩ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে আল নাসরের জয়সূচক গোলটি করেছেন রোনালদো। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা ৭ ম্যাচে তার ১০ নম্বর গোল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৬ গোল।
এই জয়ের পর ৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে আল নাসর। আল ফেইহার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করা আল ইত্তিহাদ সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষে। ৮ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে আল তা’য়ি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।