
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একসময় বেশ পরিচিত ছিল স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠার পর নতুন নতুন বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে হাজির হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। সহজেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে প্রতিষ্ঠানটি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ট্রাস্টি বোর্ডের দ্বন্দ্ব আর অনিয়ম-দুর্নীতিতে হারিয়ে যেতে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
প্রতিষ্ঠার ২১ বছর পার করলেও এখনো তারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। অথচ এর পরে প্রতিষ্ঠিত অনেক বিশ^বিদ্যালয় নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে গড়ে তুলেছে অনেক বড় এবং নিজস্ব ক্যাম্পাস।
সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ পূর্ণকালীন শিক্ষকের ১৬০ জনের সই করা অভিযোগ সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) জমা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ প্রায় ৩০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রয় করা নিজস্ব সম্পত্তি বিক্রি করা হলেও সেই টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা হয়নি। ট্রাস্টিদের ব্যক্তিগত ঋণের টাকাও বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে পরিশোধ করা হচ্ছে।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ^জিৎ চন্দ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া রাখা, অর্থ আত্মসাৎসহ অনিয়মের অভিযোগ এলে অবশ্যই তা তদন্ত করে দেখা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যদি অনিয়মই না
থাকত তাহলে ২০-২১ বছরেও কেন নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারল না?’ তিনি বলেন, ‘গত জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রয়েছে। তবে তারা অক্টোবরের মধ্যে স্টিল স্ট্রাকচারের নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাবে। তখন তারা নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে বলে আমাদের জানিয়েছে।’
শিক্ষকরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পাঁচ হাজারের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। আগে এর চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষার্থী ছিল। এখন বিশ্ববিদ্যালয়টির বাৎসরিক আয় ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা হলেও কয়েক বছর আগে আয় ছিল বছরে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা। তখন আয়ের তুলনায় ব্যয় তেমন ছিল না। তারা জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে।
ইউজিসিতে পাঠানো ২০২১ সালের তথ্যে বলা হয়েছে, ওই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় ছিল সাড়ে ৫৭ কোটি টাকা। আর ব্যয় ছিল সাড়ে ৫৩ কোটি টাকা। খাতওয়ারি ব্যয়ের হিসাবে তারা দেখিয়েছে শিক্ষা খাতে ৩ কোটি ৮ লাখ, গবেষণায় ৪৪ লাখ, বেতন-ভাতায় ৩৮ কোটি, পরিবহনে ৫৯ লাখ, বিদ্যুতে ৫৮ লাখ, অবকাঠামো ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রায় ২ কোটি, চিকিৎসায় সাড়ে ১০ লাখ এবং অন্যান্য খাতে প্রায় ৯ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের কোনোরকমের ছাড় দেয় না। টিউশন ফি জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট দিন পার হলেই এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, যা পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকে। ২০২১ সালের হিসাবে আয় কম দেখানো হয়েছে। ব্যয় অনেক বেশি দেখানো হয়েছে। ওই বছর করোনা থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীদের ঠিকমতো বেতন-ভাতাই দেওয়া হয়নি। অথচ বড় অঙ্কের টাকা বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে। মোট ব্যয়ের প্রায় ১৭ শতাংশ অন্যান্য খাতে দেখানো হয়েছে, যা সঠিক নয়।
ইউজিসিতে জমা দেওয়া শিক্ষকদের অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের বেতন ও বোনাস ঠিকমতো পায়নি। ২০১৯ সাল থেকে শিক্ষকদের প্রমোশন, ইনক্রিমেন্ট, এক্সট্রা কোর্স, থিসিস ও ইন্টার্নশিপ বিল বন্ধ রয়েছে। সব মিলে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা পায়। এখন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকায় এই ৩০ কোটি টাকা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি বিক্রি করার কথা শোনা যাচ্ছে। সম্পত্তি বিক্রি করা হলে তা যেন কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে করা হয় এবং বিক্রয়লব্ধ টাকা থেকে শিক্ষকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়। একাধিক ট্রাস্টি আগের বছরগুলোতে যে আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে, সেসব বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে ফেরত আনা প্রয়োজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ধানমন্ডির কেয়ারি প্লাজা নামের শপিং মলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি নিজস্ব ফ্লোর ছিল। সেখানে আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকটি বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হতো। ফ্লোর দুটি ২০১৯ সালে প্রায় ১৫ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়। এ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে জমা হয়নি। এ টাকা ফেরত আনলে সংকট অনেকটা দূর হবে। আর এজন্য দায়ী ট্রাস্টিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
শিক্ষকরা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টের নামে নেওয়া প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ ও ব্যক্তিগত ঋণ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে ব্যবহৃত না হয়ে ট্রাস্টিদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়েছে। ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়া বেআইনি। এত বছর ধরে এসব ঋণ ও এর সুদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিল থেকে পরিশোধ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণসহ অন্যান্য ইস্যু সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য ইউজিসির একজন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ফাতিনাজ ফিরোজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কোনো বেতন-ভাতা বকেয়া নেই।’ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘অভিযোগের ব্যাপারটিই আমি জানি না। কেউ করে থাকলে তা ভিত্তিহীন।’
সূত্র জানায়, একসময় সিদ্ধেশ্বরীতে লিজ নেওয়া বাড়িতে এবং ধানমন্ডিতে ক্যাম্পাস ছিল স্ট্যামফোর্ডের। এখন শুধু সিদ্ধেশ্বরীতে ক্যাম্পাস আছে। তবে ওই বাড়ির লিজ ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাদের বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। ইউজিসির তাগাদার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের শেষদিকে তারা বলেছিল, ২০২৫ সালের আগে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া সম্ভব নয়। গত ১ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রেখেছে ইউজিসি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক এমএ হান্নান ফিরোজ। তার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটিতে জটিলতা দেখা দেয়। ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়। হান্নান ফিরোজের স্ত্রী ফাতিনাজ ফিরোজ ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান। সম্প্রতি ডেমরার গ্রিন মডেল টাউনে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। স্টিল স্ট্রাকচারে তৈরি ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তরে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত সময় লাগবে বলে ইউজিসিকে জানিয়েছে তারা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
হত্যাকান্ডটি ৪২ বছর আগের। তদন্ত হয়েছে একাধিকবার। মামলা পরিচালনায় একে একে ২৫ জন বিচারক এসেছেন। তাদের কেউ বদলি হয়েছেন, কেউ অবসরে চলে গেছেন। মামলার বাদী, আসামি, তদন্ত কর্মকর্তা, সাক্ষী, আইনজীবী সবাই এখন বয়োবৃদ্ধ। বাদীর সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের যোগাযোগ নেই এক যুগের বেশি সময়। বিচার নিয়ে হতাশা থাকলেও মামলা নিয়ে আগ্রহ নেই স্বজনহারা পরিবারটির। সাধারণত সাক্ষীদের বক্তব্য ও যুক্তিতর্কে বিচার নিষ্পত্তির মাধ্যমে হত্যার কারণ, নির্দেশদাতা, হত্যাকারী ও ঘটনার নেপথ্যের কুশীলবদের তথ্য মেলে। কিন্তু চার দশক পরেও এগুলোর কোনোটিই জানা যায়নি। আলোচিত এ মামলাটি হলো মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর (এম এ মঞ্জুর) হত্যাকান্ডের।
একাত্তরের জুলাই মাসে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন মেজর এম এ মঞ্জুর। কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ সাতটি সাব-সেক্টর নিয়ে গঠিত ৮ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তিনি। স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বীর-উত্তম খেতাব পেয়েছিলেন তিনি। মামলার নথি, আইনজীবীদের বক্তব্য ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্নজনের লেখা বই থেকে জানা গেছে, ১৯৮১ সালের ৩০ মে সেনা অভ্যুত্থানে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে তখনকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ২৪তম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি (জেনারেল অফিসার স্টাফ) ছিলেন মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পরপরই তিনি চলে যান আত্মগোপনে। একপর্যায়ে সন্দেহভাজন হত্যাকারী হিসেবে পুলিশের হাতে আটক হন তিনি। ১ জুন রাতে তাকে হাটহাজারী থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মঞ্জুরকে হেফাজতে নেন তখনকার ক্যাপ্টেন কাজী এমদাদুল হক। পরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, পুনঃতদন্ত শেষে গত বছর তদন্ত কর্মকর্তার পুনঃসাক্ষ্যের মাধ্যমে মামলাটি বিচারের শেষ পর্যায়ে এলেও এক আসামির ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানার অপেক্ষায় রয়েছে আদালত। পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে মঞ্জুর হত্যা মামলার বিচারকাজ চলছে। বিচারক দিলারা আলো চন্দনার আগে আরও ২৪ জন বিচারক এই মামলার বিচারকাজের দায়িত্বে ছিলেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সাবেক সেনা ও রাষ্ট্রপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের পতনের পর পরবর্তী সব সরকারের শাসনামলেই এই মামলার শুনানির গতি-প্রকৃতি নির্ভর করেছে এরশাদের রাজনৈতিক অবস্থান কী হবে বা হচ্ছে তার ওপর। গ্রেপ্তারের পর ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ছয় বছর কারাগারে ছিলেন এরশাদ। মঞ্জুর হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় আগে এরশাদ মারা গেছেন। বাংলাদেশে প্রচলিত ফৌজদারি আইনে মৃত ব্যক্তির বিচারের বিধান নেই। আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর এ মামলায়ও এখন আর সেভাবে আলোচনায় নেই।
মামলা নিয়ে আগ্রহ নেই মঞ্জুরের পরিবারের : রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান, মামলার বাদী মঞ্জুরের ছোট ভাই ব্যারিস্টার আবুল মনসুর আহমেদ। তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তবে বয়সজনিত নানা রোগে আক্রান্ত এই আইনজীবীর সঙ্গে এক যুগের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রপক্ষের যোগাযোগ নেই। মঞ্জুরের পরিবারের সদস্যরাও মামলার খোঁজ নেন না।
তদন্ত কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালে হত্যা মামলা হওয়ার পরই দেশত্যাগ করেন মঞ্জুরের পরিবারের সদস্যরা। বাদী আবুল মনসুর গুলশান-২-এর একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। নানাভাবে চেষ্টা করলেও তিনি মামলার বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।
তদন্ত কর্মকর্তা, বর্তমানে পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি আব্দুল কাহ্্হার আকন্দ দেশ রূপান্তরকে বলেন, কয়েক বছর আগে তিনি জানতে পেরেছেন মঞ্জুরের স্ত্রী রানা ইয়াসমিন আর বেঁচে নেই। তাদের দুই ছেলে জোহের মঞ্জুর, শাফাকাত মুহাম্মদ মঞ্জুর, দুই মেয়ে রুবানা মঞ্জুর ও কারিশমা মঞ্জুর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রচেস্টার শহরে থাকেন। তদন্তের প্রয়োজনে ২০১৪ সালের জুন মাসে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। ২৭ জুন সাংবাদিক লরেন্স লিফসুলৎজের মাধ্যমে কেবল মঞ্জুরের বড় মেয়ে রুবানার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরেছিলেন। তাদের পারিবারিক আইনজীবী ওয়ালি রুহ্লের রচেস্টারের ওয়েস্ট মেইন স্ট্রিটের চেম্বারে রুবানার সঙ্গে কথা হলেও শর্ত ছিল কোনো বক্তব্য রেকর্ড করা যাবে না। রুবানা ও আইনজীবীর মাধ্যমে তার মাকে তিনি (আব্দুল কাহ্হার আকন্দ) এ মামলায় সাক্ষী হতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশে এসে সাক্ষ্য দিতে তাদের আগ্রহ নেই। মামলায় বিচারের প্রত্যাশা থাকলেও নিষ্পত্তিতে ধীরগতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন রুবানা।
আব্দুল কাহ্হার আকন্দ বলেন, ‘মামলার বিচারকাজ এগিয়েও পরে পিছিয়ে যায়, এ নিয়ে হয়তো তাদের দুঃখ-হতাশা রয়েছে। যে কারণে তারা কথা বলতে চান না।’
১৪ বছর ঘটনাটি ছিল আলোচনার বাইরে : তদন্ত কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, এরশাদ সরকারের ৯ বছরের শাসনামলে মঞ্জুর হত্যা নিয়ে বিচারের উদ্যোগ নেয়নি কেউ। পদত্যাগের কিছুদিন পর গ্রেপ্তার হন এরশাদ। ঘটনার ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন মঞ্জুরের ভাই আবুল মনসুর। চার মাস তদন্ত শেষে ওই বছরের ২৭ জুন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল কাহ্হার আকন্দ। এতে বলা হয়, জিয়াউর রহমান হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে চেয়েছিলেন এরশাদ। তার প্ররোচনা ও প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়। তবে, এ মামলায় ২০১২ সালের অক্টোবরে আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন এরশাদ, তাতে ঘটনার সঙ্গে তার কোনো রকম সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন। তিনি বলেছিলেন, ধরা পড়ার পর চট্টগ্রাম সেনানিবাসে আনার পথে বিক্ষুব্ধ জনতা মঞ্জুরকে ছিনিয়ে নিতে চাইলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে আহত হয়ে পরে হাসপাতালে মারা যান মঞ্জুর।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফ, মেজর (অব.) কাজী এমদাদুল হক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোস্তফা কামাল উদ্দিন ভূইঞা ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান শামস। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই মারা যান এরশাদ। ২০১৯ সালে আবদুল লতিফ মারা যান। তার ক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত ছিল। জীবিত আসামিদের মধ্যে শামসুর রহমান শামসের ক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। অপর তিন আসামির সবাই এখন জামিনে আছেন।
রায় ঘোষণা পিছিয়ে যায় বিচারকের বদলিতে : ৯ বছরের বেশি সময় আগে মামলার বিচারক হোসনে আরা আকতার ২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি যুক্তিতর্কের শুনানি নিয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। তবে কয়েক দিন আগে বিচারককে বদলি করা হয়। এরপর নতুন বিচারক এসে ২৭ ফেব্রুয়ারি নতুন করে যুক্তিতর্ক শুনবেন বলে আদেশ দেন। ধার্য তারিখে রাষ্ট্রপক্ষ ফের অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয়। এরপর অধিকতর তদন্তের প্রতিবেদন দিতে সিআইডি ২০ বারের বেশি সময় নেয়। ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি সম্পূরক তদন্ত প্রতিবেদন দেন সিআইডির কর্মকর্তা কুতুব উদ্দিন আহমেদ। ২৫ জানুয়ারি এটি আমলে নেন বিচারক। এরশাদ ও লতিফ মৃত্যুবরণ করায় সম্পূরক অভিযোগপত্রে দুজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলেন, গত বছরের ১৬ মে থেকে একাধিক কর্মদিবসে মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাহ্হার আকন্দ পুনঃসাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তার সাক্ষ্যের পর আদালত এক আসামির মামলার কার্যক্রম স্থগিতাদেশের বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও আইনি ব্যাখ্যার বিষয়টি জানতে চায়। কিন্তু এক বছরেও রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে জানাতে পারেনি। আজ ১ জুন মামলাটির পরবর্তী শুনানির জন্য ধার্য আছে।
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলা পরিচালনা করছেন দুই কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান খান রচি ও অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম। কেন এত দিনেও সর্বশেষ তথ্য জানানো হয়নি এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যত দূর জানি এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে অবহিত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন আসেনি।’
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন গত মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, তারা এ ধরনের কোনো চিঠি পাননি। পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই মামলাসহ এরশাদের বেশির ভাগ মামলায় আইনজীবী হিসেবে ছিলেন শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, জীবদ্দশায় এরশাদের নামে ৪০টির বেশি মামলা ছিল। যার বেশির ভাগই দুর্নীতির। তবে, রাজনৈতিক জীবনে তাকে ভুগিয়েছে মঞ্জুর হত্যা মামলটি। তিনি বলেন, ‘যে ২৮ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা কেউ এ ঘটনায় এরশাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন শব্দ উচ্চারণ করেননি। তাই তিনি (এরশাদ) ঘটনার সঙ্গে জড়িত এমন প্রসঙ্গ আসবে কেন? অথচ বছরের পর বছর এই মামলার ঘানি টেনেছেন তিনি এবং এটি কেবলই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও কৌশলের কারণে।’
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের অনেক নাগরিক তাদের বাড়ি বা প্লট ফেলে চলে যায়। স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রপতির আদেশে সেসব প্লট বা বাড়িকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ঘোষণা করা হয়। এসব সরকারের দখলে থাকার কথা থাকলেও স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে চিহ্নিত ৬০টি প্লট বেদখল হয়েছিল।
সম্প্রতি ৫টি প্লট দখলমুক্ত হয়েছে; ৫৫টি এখনো বেদখল হয়ে আছে। এসব প্লট দখলমুক্ত করে খেলার মাঠ ও বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা সৃষ্টি করতে গত ৩ মে নীতিমালা প্রকাশ করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
চলতি বছরের মধ্যে বেদখল প্লটগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে নির্দেশ দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তার আলোকে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যার যার অবস্থান থেকে প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রথমে ঢাকার অভিজাত এলাকার পরিত্যক্ত প্লটগুলো দখলে নিয়ে সেখানে নাগরিক সুবিধা সৃষ্টি করতে চায় সরকার। পর্যায়ক্রমে অন্য প্লটগুলো দখলমুক্ত করে নাগরিক সেবামূলক ও সামাজিক কাজে ব্যবহার করা হবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা ও ঢাকার বাইরের শহরগুলোতে পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা নেই। নাগরিক সুবিধা সৃষ্টি করার মতো পর্যাপ্ত জায়গাও পাওয়া যায় না। জায়গা অধিগ্রহণ করে এসব কাজ করা কঠিন। এজন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে খেলার মাঠসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা সৃষ্টি করতে চায় সরকার। একটি নীতিমালাও করা হয়েছে। তাতে নাগরিক সুবিধা সৃষ্টির সুযোগ রাখা হয়েছে। আমরা চাই খেলার মাঠ করতে। শহরে খেলার মাঠ প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম।’
তিনি বলেন, ‘৬০টির মতো পরিত্যক্ত সম্পত্তি রয়েছে। ৫টি উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ৫৫টি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। অবৈধ দখলদাররা এসবের দখল নিয়ে মামলা করেছে। মামলা নিষ্পত্তিতে জোরালো আইনি লড়াই চলছে। যাই হোক, এ কাজে সফল হবে আমাদের দপ্তর ও অধিদপ্তরগুলো।’
জানা যায়, স্বাধীনতার সময় মালিকানাহীন ৬০টি প্লট চিহ্নিত করে সরকার। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে এসব প্লটে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী অবৈধ দখল প্রতিষ্ঠা করে। সরকারও সেসব উদ্ধারে তৎপর ছিল না। এ সুযোগে অনেকে জাল দলিল করে ভুয়া মালিকানা কায়েম করে। সরকারের সঙ্গে মামলায়ও জড়িয়েছে তারা। বিগত কয়েক বছরে সরকার এসব সম্পত্তি উদ্ধারের কার্যক্রম জোরদার করেছে। ঢাকার ৫টি প্লটে সরকার নিজের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে। ৫৫টি প্লট এখনো বেদখল রয়েছে। এসবের মধ্যে ঢাকায় ৫১টি ও ঢাকার বাইরে ৪টি।
আরও জানা গেছে, বেদল প্লটগুলোতে বিভিন্ন ব্যক্তি, কোম্পানি ও সরকারের প্রভাবশালী কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছে। ঠুকেছে মামলা। মামলা থাকা অবস্থায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে কোনো বাধা নেই মনে করছে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। বেদখল পরিত্যক্ত সম্পত্তি উদ্ধারে সরকারের পক্ষ থেকে আইনি লড়াইও জোরদার করা হয়েছে। বেদখল পরিত্যক্ত সম্পত্তি উদ্ধারের ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো আশাবাদী।
নগর পরিকল্পনাবিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলমুক্ত করে যদি খেলার মাঠ করা হয় তাহলে খুব ভালো হয়। ঢাকাসহ দেশের সবখানে খেলার মাঠের খুব অভাব। এ জায়গাগুলোর বাণিজ্যিক ব্যবহার যেন না হয়। প্রয়োজনে দরিদ্র মানুষের জন্য আবাসন; স্কুল বা অন্য নাগরিক সেবামূলক কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।’
৬০ পরিত্যক্ত সম্পত্তি : পরিত্যক্ত প্লট ও ভবনের মধ্যে ঢাকার মোহাম্মদপুরে রয়েছে ২২টি শের শাহ সুরি রোডের ব্লক-ডি-এর ২২ নম্বর প্লট, আয়তন ৩ কাঠা; একই সড়কের ব্লক-ডি-এর ২৫/১৮ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৮ কাঠা; নূরজাহান রোডের ডি-ব্লকের আর-২৯ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৮ কাঠা; একই সড়কের ডি-ব্লকের প্লট এম-৬, ১ দশমিক ৮ কাঠা; একই সড়কের ডি-ব্লকের ১/১ নম্বর প্লট; তাজমহল রোডের সি-ব্লকের ১১/১৬ নম্বর প্লট, ৩ দশমিক ৭৫ কাঠা; একই সড়কের সি-ব্লকের ৭/১০ নম্বর প্লট, ২ দশমিক ৫০ কাঠা; জাকির হোসেন রোডের ই-ব্লকের জি-১১ নম্বর প্লট, ১৮ কাঠা; সলিমুল্লাহ রোডের ডি-ব্লকের ৩/২৬ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৮ কাঠা; নূর জাহান রোডের ডি-ব্লকের টি-৮ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৮ কাঠা; সলিমুল্লাহ রোডের ডি-ব্লকের জে-৬/৪ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৮ কাঠা; কাজী নজরুল ইসলাম সড়কের ই-ব্লকের ই/১০ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৮ কাঠা; জাকির হোসেন রোডের ই-ব্লকের ই/১০ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৭৫ কাঠা; শের শাহ সুরি রোডের জি-ব্লকের ২৫/২৭ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৮ কাঠা; শহীদ সলিমুল্লাহ রোডের ডি-ব্লকের ৫/৩০ নম্বর প্লট, ৩ শতাংশ; জাকির হোসেন রোডের ই-ব্লকের ই/১০ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৭৫ কাঠা; বাবর রোডের বি-ব্লকের ২২/৫ প্লট, ১২ কাঠা; একই রোডের বি-ব্লকের ১৩/২০ নম্বর প্লট, ৫ কাঠা; ইকবাল রোডের ই-ব্লকের ৪/৪ নম্বর প্লট, ৭ দশমিক ৫০ কাঠা; হুমায়ুন রোডের বি-ব্লকের ৩/৪ নম্বর প্লট, ৩ দশমিক ৮ কাঠা; শের শাহ সুরি রোডের ডি-ব্লকের ১৮০ টিনশেড, ৩ দশমিক ৫০ কাঠা; মোহাম্মদপুর এফ-ব্লকের জয়েন কোয়ার্টার ডি-ব্লকের ২/৪ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৭ কাঠা এবং নূরজাহান রোডের ডি-ব্লকের ২/৪ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৮ কাঠা।
মিরপুরে রয়েছে ১০টি পরিত্যক্ত ভবন মিরপুরের তৃতীয় কলোনির এফ-৪ নম্বর প্লট, ৩ কাঠা; মিরপুরের ৪৫/এবি দ্বিতীয় কলোনি প্লট, ৫ কাঠা; মিরপুর দ্বিতীয় কলোনির ৬৭-এর এ/এ প্লট, ৪ দশমিক ৮ কাঠা; মিরপুরের ১-জি/৫-৩০ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৬৪ কাঠা; মিরপুরের ১০-বি/১৫-১০ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৬ কাঠা; মিরপুরের ১-জি/এভি:৩-২৭ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৬৪ কাঠা; মিরপুরের ১-ই/৬-১০ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৬ কাঠা; মিরপুরের ১-ডি/২-৩৬ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৬৪ কাঠা; মিরপুরের ১-ডি/৭-৪ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৭৫ কাঠা; মিরপুরের পল্লবীর ২৪/৪ নম্বর প্লট, দোতলা বাড়ি।
পল্টন এলাকায় রয়েছে ৩টি পরিত্যক্ত প্লট বা ভবন পুরান পল্টন নর্থ সাউথ রোডের ৩/৩-বি নম্বর প্লট, ২৩ শতাংশ; পুরান পল্টনের ৫৪ নম্বর প্লট, ১২ দশমিক ৫০ কাঠা; পুরান পল্টনের ৩/৫ নম্বর প্লট, ২৬ দশমিক ৩৫ কাঠা।
মতিঝিলে ৩টি প্লট মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ১৬২ নম্বর প্লট, ৮ কাঠা ১ ছটাক; একই এলাকার ৪ ও ৫ নম্বর প্লট, ১৮ দশমিক ৬৬ কাঠা; একই এলাকার ১২৬ নম্বর প্লট, ৭ দশমিক ৫০ কাঠা।
লালবাগে ৩টি লালবাগের মনেশ^র রোডের ১০ নম্বর প্লট, ৯ কাঠা; ভাগলপুর লেনের ৯ নম্বর প্লট, ১৫ কাঠা; উর্দু রোডের ৪৫ নম্বর প্লট, ৭ দশমিক ৮ কাঠা।
ঢাকায় আরও ১৫টি পরিত্যক্ত প্লট বা বাড়ি রয়েছে রমনা থানার ৭ ময়মনসিংহ রোডের প্লট, ২২ কাঠা; মগবাজারের ৩৩ দিলু রোডের প্লট, ৬ কাঠা; নিউ ইস্কাটনের ৩৮৮ নম্বর প্লট, ১ বিঘা ১ দশমিক ৫ ছটাক; তেজগাঁওয়ের তেজকুনীপাড়ার ১৮৯ নম্বর প্লট, ৪১ শতাংশ; ধানম-ি এলিফ্যান্ট রোডের ৩৫৮ নম্বর প্লট, ৫ দশমিক ২৯ কাঠা; আর কে মিশন রোডের ৩ নম্বর প্লট, ১৮ কাঠা; ধানম-ির ৫ নম্বর রোডের ১৪৩/ই নম্বর প্লট, আয়তন ১ বিঘা; একই এলাকার ১৩/৩ নম্বর রোডের ১৫৬ নম্বর প্লট, ১ বিঘা; কোতোয়ালির শাঁখারীবাজার এলাকার ১৩৯ নম্বর প্লট, দশমিক ০১১২ অযুতাংশ; নন্দলাল দত্ত লেনের ৫, ৫/১ নম্বর প্লট; ৭ দশমিক ৮ কাঠা; লালমাটিয়া হাউজিং এস্টেটের এ-ব্লকের ৩/১২ নম্বর প্লট, ৫ দশমিক ৭৫ কাঠা; সূত্রাপুর বনগ্রাম রোডের ৫১ নম্বর প্লট, ১৯ দশমিক ৩৯ কাঠা; গুলশানের ৩৫ নম্বর রোডের সিডব্লিউএন (বি)-৮ নম্বর প্লট, ১ বিঘা ১১ কাঠা ৫ ছটাক এবং গুলশানের ২৩ নম্বর রোডের সিডব্লিউএস (বি)-৮৪-এর ১৮ নম্বর প্লট, ১১ দশমিক ৫০ কাঠা।
ঢাকার বাইরের ৪ জেলায় ৪টি পরিত্যক্ত ভবন রয়েছে চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ হাউজিং এস্টেটের ৩ নম্বর রোডের ১৫-সি নম্বর প্লট, ৮ কাঠা; নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলাকার এসএস শাহ রোডের ৯৬ নম্বর প্লট, ৩ শতাংশ; খুলনার খালিশপুর হাউজিং এস্টেটের সেন্ট্রাল ব্লকের ১৫৪ নম্বর রোডের ৪৩ নম্বর প্লট, ৭ দশমিক ৫০ কাঠা এবং লালমনিরহাট সদর উপজেলার সাপটানা মৌজার ১০৭ নম্বর প্লট, ৬ কাঠা।
মৃত্যুচিন্তা ও পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত তিনটি ট্রাস্টে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দান করা অর্থের বিপরীতে এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) আরোপিত দানকর বৈধ বলে রায় দিয়েছে উচ্চ আদালত। এ বিষয়ে ট্যাক্সেস অ্যাপিল ট্রাইব্যুনালে ড. ইউনূসের করা আবেদন খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে তিনটি রেফারেন্স আবেদন খারিজ করে গতকাল বুধবার এ রায় দেয় বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ। ফলে ড. ইউনূসকে দানের বিপরীতে এনবিআরের দাবি করা ১৬ কোটি ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা দানকর দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। তবে, ইতিমধ্যে ৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা পরিশোধ করায় এখন তাকে ১২ কোটির বেশি টাকা দানকর হিসেবে দিতে হবে।
আইনজীবীদের তথ্যমতে, পরিবারের কল্যাণ ও মৃত্যুচিন্তার বিষয়টি বিবেচনা করে ড. ইউনূস ২০১১ থেকে ২০১৪ তিন করবর্ষে নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত প্রফেসর ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট ও ইউনূস সেন্টার ট্রাস্টে ৭৭ কোটি ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দান করেন। এর বিপরীতে এই সময়ের করবর্ষে ৩ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার টাকা আয়কর পরিশোধ করেন। কিন্তু ডেপুটি কমিশনার অব ট্যাক্সেস (ডিসিটি) মূল্যায়ন ও পর্যালোচনার পর এনবিআর তার কাছে ১৬ কোটি ৮ লাখ ৪০ হাজার ৫৬ টাকা দানকর দাবি করে। এই নোটিসের বিরুদ্ধে প্রথমে কমিশনার অব ট্যাক্সেসে আপিল করলে সেটি খারিজ হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ট্যাক্সেস অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে আপিল করলে সেটিও খারিজ হয়ে যায়। ট্যাক্সেস আপিলেট ট্রাইব্যুনালের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে হাইকোর্টে তিনটি রেফারেন্স মামলা করেন ড. ইউনূস।
ওই বছরের ২ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল দিয়ে দানকর আদায়ে নোটিসের কার্যকারিতা স্থগিতের আদেশ দেয়। সম্প্রতি রাষ্ট্রপক্ষ এ রুল শুনানির উদ্যোগ নেয়। গত ২৩ মে এ বিষয়ে শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৩১ মে (গতকাল) ধার্য রাখে হাইকোর্ট।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তাকে সহযোগিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফারজানা রহমান শম্পা। ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সুমাইয়া ইফরিত বিনতে আহমেদ।
রায়ের পর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আয়কর পরিশোধ না করার কৌশল হিসেবে তিনি নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্টে এ টাকা দান করেছেন। হাইকোর্ট বলেছেন, ট্রাইব্যুনালের খারিজ আদেশে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি। ফলে আরোপ করা দানকরের বাকি টাকা তাকে পরিশোধ করতে হবে।’
অ্যাডভোকেট সুমাইয়া ইফরিত বিনতে আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়টি পেলে এটি পর্যালোচনা করে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ড. ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা করেছে দুদক।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী দেবাশীষ কুমার সাহার পদ ২০তম গ্রেডের। বেতন হতে পারে সর্বসাকল্যে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা। তিনিই কিনা নেপালের কাঠমান্ডু ও ধলেশ্বরীর বিভিন্ন ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতে যেতেন নিয়মিত। সর্বশেষ গত ২ এপ্রিল ৬০ লাখ টাকা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে নেপাল যান ক্যাসিনো জুয়া খেলতে। অতিরিক্ত ডলার রাখার দায়ে নেপালের ত্রিভুবন বিমানমন্দরে এক সহযোগীসহ আটক হন দেবাশীষ। সেখানে ২৩ দিন জেল খেটেছেন। দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
দেবাশীষের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার জমি হাতিয়ে নেওয়া ও নারী কেলেঙ্কারির সংবাদ প্রকাশের পর গতকাল বুধবার রাজউক তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। সংস্থার চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আনিছুর রহমান মিঞা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, রাজউকের জরিপসাথি পদে কর্মরত দেবাশীষ কুমার সাহার বিরুদ্ধে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকার জমি হাতিয়ে নেওয়া ও নারী কেলেঙ্কারির সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। তার এ ধরনের কার্যকলাপ রাজউকের (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী প্রতারণার শামিল। কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ এবং প্রতারণার জন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। তার বিরুদ্ধে নিয়মিত বিভাগীয় মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে ওই আদেশে।
সাবেক এক সচিবের মেয়ের প্রতারণার মামলায় গত মঙ্গলবার রাতে দেবাশীষকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গতকাল তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ তাকে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হবে বলে ডিবি জানিয়েছে।
তার বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণ, অর্থ আত্মসাতের একাধিক অভিযোগের তদন্ত করছে ডিবি। তবে দেবাশীষ গ্রেপ্তার হলেও আতঙ্কে দিন কাটছে ভুক্তভোগী ওই নারীর।
গত মঙ্গলবার ডিএমপির রামপুরা থানায় করা মামলায় ওই নারী অভিযোগ করেছেন, ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় রাজউকের ঝিলমিল এবং পূর্বাচলে তিনটি প্লট ভুক্তভোগীকে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তার কাছ থেকে ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন দেবাশীষ। এই টাকা দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগী তার নিজের নামের দুটি ফ্ল্যাট, ১৫০ ভরি স্বর্ণ, একটি প্লট, ৫০ লাখ টাকা মূল্যের সঞ্চয়পত্র, প্রাইভেট কার বিক্রি করে টাকা দেন। প্লট না পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে দেবাশীষ গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর তার রামপুরার মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার বাসায় গিয়ে মারধর করেন। এতে তার গর্ভে থাকা সন্তান মারা যায়।
ভুক্তভোগী গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। দেবাশীষের হাত অনেক লম্বা। সে আমার ও আমার স্বামীর যেকোনো ক্ষতি করে দিতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমি মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। কখনো বাইরের জগৎ সম্পর্কে ভালো জানতাম না। বাবা-মার মৃত্যুর পর আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে দেবাশীষ সর্বস্বান্ত করেছে। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেবাশীষকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। কাল (আজ বৃহস্পতিবার) তার ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।’
দেবাশীষের বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসি বলেন, ‘দেবাশীষ যেসব নারীকে জিম্মি করেছে, তাদের তথ্য আমরা পাচ্ছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।’
দেবাশীষের ক্যাসিনোকান্ড : দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দেবাশীষের ক্যাসিনোকা-ের বিস্তারিত তথ্য। প্রতিবেদনটি দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, গত ১১ এপ্রিল করতোয়া এলাকায় যাওয়ার সময় ত্রিভুবন বিমানবন্দরে দেবাশীষ ও তার সঙ্গী মো. মফিজুল ইসলামকে আটক করে বিমানবন্দর পুলিশ। ইমিগ্রেশনের পর নিরাপত্তা তল্লাশি গেটে তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার করে মোট ২০ হাজার ডলার উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের দুজনকে ৩০ হাজার ডলার করে জরিমানা করে এবং পরিশোধ শর্তে ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দেয়। পরে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করলে ১০ লাখ নেপালি রুপি জমা দিয়ে ২৩ দিন পর হাজত থেকে জামিনে ছাড়া পান এবং পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, দেবাশীষ রাজউকের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং পেশাদার ক্যাসিনো জুয়াড়ি। তিনি অনেক অবৈধ সম্পত্তির মালিক, তার বিরুদ্ধে অনেক অপকর্মের মামলা ও অভিযোগ রয়েছে।
ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেবাশীষের ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক নারী। সম্পত্তিসংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে রাজউকে যাওয়া নারীদের টার্গেট করেন তিনি; বিশেষ করে সহজ-সরল নারীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করেন। অনেক নারীকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণও করেছেন দেবাশীষ। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফির মামলাও আছে।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।