
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী দেবাশীষ কুমার সাহার পদ ২০তম গ্রেডের। বেতন হতে পারে সর্বসাকল্যে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা। তিনিই কিনা নেপালের কাঠমান্ডু ও ধলেশ্বরীর বিভিন্ন ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতে যেতেন নিয়মিত। সর্বশেষ গত ২ এপ্রিল ৬০ লাখ টাকা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে নেপাল যান ক্যাসিনো জুয়া খেলতে। অতিরিক্ত ডলার রাখার দায়ে নেপালের ত্রিভুবন বিমানমন্দরে এক সহযোগীসহ আটক হন দেবাশীষ। সেখানে ২৩ দিন জেল খেটেছেন। দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
দেবাশীষের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার জমি হাতিয়ে নেওয়া ও নারী কেলেঙ্কারির সংবাদ প্রকাশের পর গতকাল বুধবার রাজউক তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। সংস্থার চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আনিছুর রহমান মিঞা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, রাজউকের জরিপসাথি পদে কর্মরত দেবাশীষ কুমার সাহার বিরুদ্ধে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকার জমি হাতিয়ে নেওয়া ও নারী কেলেঙ্কারির সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। তার এ ধরনের কার্যকলাপ রাজউকের (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী প্রতারণার শামিল। কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ এবং প্রতারণার জন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। তার বিরুদ্ধে নিয়মিত বিভাগীয় মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে ওই আদেশে।
সাবেক এক সচিবের মেয়ের প্রতারণার মামলায় গত মঙ্গলবার রাতে দেবাশীষকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গতকাল তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ তাকে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হবে বলে ডিবি জানিয়েছে।
তার বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণ, অর্থ আত্মসাতের একাধিক অভিযোগের তদন্ত করছে ডিবি। তবে দেবাশীষ গ্রেপ্তার হলেও আতঙ্কে দিন কাটছে ভুক্তভোগী ওই নারীর।
গত মঙ্গলবার ডিএমপির রামপুরা থানায় করা মামলায় ওই নারী অভিযোগ করেছেন, ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় রাজউকের ঝিলমিল এবং পূর্বাচলে তিনটি প্লট ভুক্তভোগীকে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তার কাছ থেকে ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন দেবাশীষ। এই টাকা দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগী তার নিজের নামের দুটি ফ্ল্যাট, ১৫০ ভরি স্বর্ণ, একটি প্লট, ৫০ লাখ টাকা মূল্যের সঞ্চয়পত্র, প্রাইভেট কার বিক্রি করে টাকা দেন। প্লট না পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে দেবাশীষ গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর তার রামপুরার মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার বাসায় গিয়ে মারধর করেন। এতে তার গর্ভে থাকা সন্তান মারা যায়।
ভুক্তভোগী গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। দেবাশীষের হাত অনেক লম্বা। সে আমার ও আমার স্বামীর যেকোনো ক্ষতি করে দিতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমি মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। কখনো বাইরের জগৎ সম্পর্কে ভালো জানতাম না। বাবা-মার মৃত্যুর পর আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে দেবাশীষ সর্বস্বান্ত করেছে। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেবাশীষকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। কাল (আজ বৃহস্পতিবার) তার ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।’
দেবাশীষের বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসি বলেন, ‘দেবাশীষ যেসব নারীকে জিম্মি করেছে, তাদের তথ্য আমরা পাচ্ছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।’
দেবাশীষের ক্যাসিনোকান্ড : দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দেবাশীষের ক্যাসিনোকা-ের বিস্তারিত তথ্য। প্রতিবেদনটি দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, গত ১১ এপ্রিল করতোয়া এলাকায় যাওয়ার সময় ত্রিভুবন বিমানবন্দরে দেবাশীষ ও তার সঙ্গী মো. মফিজুল ইসলামকে আটক করে বিমানবন্দর পুলিশ। ইমিগ্রেশনের পর নিরাপত্তা তল্লাশি গেটে তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার করে মোট ২০ হাজার ডলার উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের দুজনকে ৩০ হাজার ডলার করে জরিমানা করে এবং পরিশোধ শর্তে ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দেয়। পরে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করলে ১০ লাখ নেপালি রুপি জমা দিয়ে ২৩ দিন পর হাজত থেকে জামিনে ছাড়া পান এবং পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, দেবাশীষ রাজউকের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং পেশাদার ক্যাসিনো জুয়াড়ি। তিনি অনেক অবৈধ সম্পত্তির মালিক, তার বিরুদ্ধে অনেক অপকর্মের মামলা ও অভিযোগ রয়েছে।
ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেবাশীষের ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক নারী। সম্পত্তিসংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে রাজউকে যাওয়া নারীদের টার্গেট করেন তিনি; বিশেষ করে সহজ-সরল নারীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করেন। অনেক নারীকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণও করেছেন দেবাশীষ। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফির মামলাও আছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
হত্যাকান্ডটি ৪২ বছর আগের। তদন্ত হয়েছে একাধিকবার। মামলা পরিচালনায় একে একে ২৫ জন বিচারক এসেছেন। তাদের কেউ বদলি হয়েছেন, কেউ অবসরে চলে গেছেন। মামলার বাদী, আসামি, তদন্ত কর্মকর্তা, সাক্ষী, আইনজীবী সবাই এখন বয়োবৃদ্ধ। বাদীর সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের যোগাযোগ নেই এক যুগের বেশি সময়। বিচার নিয়ে হতাশা থাকলেও মামলা নিয়ে আগ্রহ নেই স্বজনহারা পরিবারটির। সাধারণত সাক্ষীদের বক্তব্য ও যুক্তিতর্কে বিচার নিষ্পত্তির মাধ্যমে হত্যার কারণ, নির্দেশদাতা, হত্যাকারী ও ঘটনার নেপথ্যের কুশীলবদের তথ্য মেলে। কিন্তু চার দশক পরেও এগুলোর কোনোটিই জানা যায়নি। আলোচিত এ মামলাটি হলো মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর (এম এ মঞ্জুর) হত্যাকান্ডের।
একাত্তরের জুলাই মাসে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন মেজর এম এ মঞ্জুর। কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ সাতটি সাব-সেক্টর নিয়ে গঠিত ৮ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তিনি। স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বীর-উত্তম খেতাব পেয়েছিলেন তিনি। মামলার নথি, আইনজীবীদের বক্তব্য ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্নজনের লেখা বই থেকে জানা গেছে, ১৯৮১ সালের ৩০ মে সেনা অভ্যুত্থানে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে তখনকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ২৪তম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি (জেনারেল অফিসার স্টাফ) ছিলেন মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পরপরই তিনি চলে যান আত্মগোপনে। একপর্যায়ে সন্দেহভাজন হত্যাকারী হিসেবে পুলিশের হাতে আটক হন তিনি। ১ জুন রাতে তাকে হাটহাজারী থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মঞ্জুরকে হেফাজতে নেন তখনকার ক্যাপ্টেন কাজী এমদাদুল হক। পরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, পুনঃতদন্ত শেষে গত বছর তদন্ত কর্মকর্তার পুনঃসাক্ষ্যের মাধ্যমে মামলাটি বিচারের শেষ পর্যায়ে এলেও এক আসামির ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানার অপেক্ষায় রয়েছে আদালত। পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে মঞ্জুর হত্যা মামলার বিচারকাজ চলছে। বিচারক দিলারা আলো চন্দনার আগে আরও ২৪ জন বিচারক এই মামলার বিচারকাজের দায়িত্বে ছিলেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সাবেক সেনা ও রাষ্ট্রপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের পতনের পর পরবর্তী সব সরকারের শাসনামলেই এই মামলার শুনানির গতি-প্রকৃতি নির্ভর করেছে এরশাদের রাজনৈতিক অবস্থান কী হবে বা হচ্ছে তার ওপর। গ্রেপ্তারের পর ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ছয় বছর কারাগারে ছিলেন এরশাদ। মঞ্জুর হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় আগে এরশাদ মারা গেছেন। বাংলাদেশে প্রচলিত ফৌজদারি আইনে মৃত ব্যক্তির বিচারের বিধান নেই। আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর এ মামলায়ও এখন আর সেভাবে আলোচনায় নেই।
মামলা নিয়ে আগ্রহ নেই মঞ্জুরের পরিবারের : রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান, মামলার বাদী মঞ্জুরের ছোট ভাই ব্যারিস্টার আবুল মনসুর আহমেদ। তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। তবে বয়সজনিত নানা রোগে আক্রান্ত এই আইনজীবীর সঙ্গে এক যুগের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রপক্ষের যোগাযোগ নেই। মঞ্জুরের পরিবারের সদস্যরাও মামলার খোঁজ নেন না।
তদন্ত কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালে হত্যা মামলা হওয়ার পরই দেশত্যাগ করেন মঞ্জুরের পরিবারের সদস্যরা। বাদী আবুল মনসুর গুলশান-২-এর একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। নানাভাবে চেষ্টা করলেও তিনি মামলার বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।
তদন্ত কর্মকর্তা, বর্তমানে পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি আব্দুল কাহ্্হার আকন্দ দেশ রূপান্তরকে বলেন, কয়েক বছর আগে তিনি জানতে পেরেছেন মঞ্জুরের স্ত্রী রানা ইয়াসমিন আর বেঁচে নেই। তাদের দুই ছেলে জোহের মঞ্জুর, শাফাকাত মুহাম্মদ মঞ্জুর, দুই মেয়ে রুবানা মঞ্জুর ও কারিশমা মঞ্জুর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রচেস্টার শহরে থাকেন। তদন্তের প্রয়োজনে ২০১৪ সালের জুন মাসে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। ২৭ জুন সাংবাদিক লরেন্স লিফসুলৎজের মাধ্যমে কেবল মঞ্জুরের বড় মেয়ে রুবানার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরেছিলেন। তাদের পারিবারিক আইনজীবী ওয়ালি রুহ্লের রচেস্টারের ওয়েস্ট মেইন স্ট্রিটের চেম্বারে রুবানার সঙ্গে কথা হলেও শর্ত ছিল কোনো বক্তব্য রেকর্ড করা যাবে না। রুবানা ও আইনজীবীর মাধ্যমে তার মাকে তিনি (আব্দুল কাহ্হার আকন্দ) এ মামলায় সাক্ষী হতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশে এসে সাক্ষ্য দিতে তাদের আগ্রহ নেই। মামলায় বিচারের প্রত্যাশা থাকলেও নিষ্পত্তিতে ধীরগতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন রুবানা।
আব্দুল কাহ্হার আকন্দ বলেন, ‘মামলার বিচারকাজ এগিয়েও পরে পিছিয়ে যায়, এ নিয়ে হয়তো তাদের দুঃখ-হতাশা রয়েছে। যে কারণে তারা কথা বলতে চান না।’
১৪ বছর ঘটনাটি ছিল আলোচনার বাইরে : তদন্ত কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, এরশাদ সরকারের ৯ বছরের শাসনামলে মঞ্জুর হত্যা নিয়ে বিচারের উদ্যোগ নেয়নি কেউ। পদত্যাগের কিছুদিন পর গ্রেপ্তার হন এরশাদ। ঘটনার ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন মঞ্জুরের ভাই আবুল মনসুর। চার মাস তদন্ত শেষে ওই বছরের ২৭ জুন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল কাহ্হার আকন্দ। এতে বলা হয়, জিয়াউর রহমান হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে চেয়েছিলেন এরশাদ। তার প্ররোচনা ও প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়। তবে, এ মামলায় ২০১২ সালের অক্টোবরে আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন এরশাদ, তাতে ঘটনার সঙ্গে তার কোনো রকম সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন। তিনি বলেছিলেন, ধরা পড়ার পর চট্টগ্রাম সেনানিবাসে আনার পথে বিক্ষুব্ধ জনতা মঞ্জুরকে ছিনিয়ে নিতে চাইলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে আহত হয়ে পরে হাসপাতালে মারা যান মঞ্জুর।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফ, মেজর (অব.) কাজী এমদাদুল হক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোস্তফা কামাল উদ্দিন ভূইঞা ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান শামস। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই মারা যান এরশাদ। ২০১৯ সালে আবদুল লতিফ মারা যান। তার ক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত ছিল। জীবিত আসামিদের মধ্যে শামসুর রহমান শামসের ক্ষেত্রে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। অপর তিন আসামির সবাই এখন জামিনে আছেন।
রায় ঘোষণা পিছিয়ে যায় বিচারকের বদলিতে : ৯ বছরের বেশি সময় আগে মামলার বিচারক হোসনে আরা আকতার ২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি যুক্তিতর্কের শুনানি নিয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। তবে কয়েক দিন আগে বিচারককে বদলি করা হয়। এরপর নতুন বিচারক এসে ২৭ ফেব্রুয়ারি নতুন করে যুক্তিতর্ক শুনবেন বলে আদেশ দেন। ধার্য তারিখে রাষ্ট্রপক্ষ ফের অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয়। এরপর অধিকতর তদন্তের প্রতিবেদন দিতে সিআইডি ২০ বারের বেশি সময় নেয়। ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি সম্পূরক তদন্ত প্রতিবেদন দেন সিআইডির কর্মকর্তা কুতুব উদ্দিন আহমেদ। ২৫ জানুয়ারি এটি আমলে নেন বিচারক। এরশাদ ও লতিফ মৃত্যুবরণ করায় সম্পূরক অভিযোগপত্রে দুজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলেন, গত বছরের ১৬ মে থেকে একাধিক কর্মদিবসে মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাহ্হার আকন্দ পুনঃসাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তার সাক্ষ্যের পর আদালত এক আসামির মামলার কার্যক্রম স্থগিতাদেশের বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও আইনি ব্যাখ্যার বিষয়টি জানতে চায়। কিন্তু এক বছরেও রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে জানাতে পারেনি। আজ ১ জুন মামলাটির পরবর্তী শুনানির জন্য ধার্য আছে।
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলা পরিচালনা করছেন দুই কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান খান রচি ও অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম। কেন এত দিনেও সর্বশেষ তথ্য জানানো হয়নি এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যত দূর জানি এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে অবহিত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন আসেনি।’
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন গত মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, তারা এ ধরনের কোনো চিঠি পাননি। পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই মামলাসহ এরশাদের বেশির ভাগ মামলায় আইনজীবী হিসেবে ছিলেন শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, জীবদ্দশায় এরশাদের নামে ৪০টির বেশি মামলা ছিল। যার বেশির ভাগই দুর্নীতির। তবে, রাজনৈতিক জীবনে তাকে ভুগিয়েছে মঞ্জুর হত্যা মামলটি। তিনি বলেন, ‘যে ২৮ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা কেউ এ ঘটনায় এরশাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন শব্দ উচ্চারণ করেননি। তাই তিনি (এরশাদ) ঘটনার সঙ্গে জড়িত এমন প্রসঙ্গ আসবে কেন? অথচ বছরের পর বছর এই মামলার ঘানি টেনেছেন তিনি এবং এটি কেবলই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও কৌশলের কারণে।’
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের অনেক নাগরিক তাদের বাড়ি বা প্লট ফেলে চলে যায়। স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রপতির আদেশে সেসব প্লট বা বাড়িকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ঘোষণা করা হয়। এসব সরকারের দখলে থাকার কথা থাকলেও স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে চিহ্নিত ৬০টি প্লট বেদখল হয়েছিল।
সম্প্রতি ৫টি প্লট দখলমুক্ত হয়েছে; ৫৫টি এখনো বেদখল হয়ে আছে। এসব প্লট দখলমুক্ত করে খেলার মাঠ ও বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা সৃষ্টি করতে গত ৩ মে নীতিমালা প্রকাশ করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
চলতি বছরের মধ্যে বেদখল প্লটগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে নির্দেশ দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তার আলোকে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যার যার অবস্থান থেকে প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রথমে ঢাকার অভিজাত এলাকার পরিত্যক্ত প্লটগুলো দখলে নিয়ে সেখানে নাগরিক সুবিধা সৃষ্টি করতে চায় সরকার। পর্যায়ক্রমে অন্য প্লটগুলো দখলমুক্ত করে নাগরিক সেবামূলক ও সামাজিক কাজে ব্যবহার করা হবে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা ও ঢাকার বাইরের শহরগুলোতে পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা নেই। নাগরিক সুবিধা সৃষ্টি করার মতো পর্যাপ্ত জায়গাও পাওয়া যায় না। জায়গা অধিগ্রহণ করে এসব কাজ করা কঠিন। এজন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে খেলার মাঠসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা সৃষ্টি করতে চায় সরকার। একটি নীতিমালাও করা হয়েছে। তাতে নাগরিক সুবিধা সৃষ্টির সুযোগ রাখা হয়েছে। আমরা চাই খেলার মাঠ করতে। শহরে খেলার মাঠ প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম।’
তিনি বলেন, ‘৬০টির মতো পরিত্যক্ত সম্পত্তি রয়েছে। ৫টি উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ৫৫টি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। অবৈধ দখলদাররা এসবের দখল নিয়ে মামলা করেছে। মামলা নিষ্পত্তিতে জোরালো আইনি লড়াই চলছে। যাই হোক, এ কাজে সফল হবে আমাদের দপ্তর ও অধিদপ্তরগুলো।’
জানা যায়, স্বাধীনতার সময় মালিকানাহীন ৬০টি প্লট চিহ্নিত করে সরকার। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে এসব প্লটে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী অবৈধ দখল প্রতিষ্ঠা করে। সরকারও সেসব উদ্ধারে তৎপর ছিল না। এ সুযোগে অনেকে জাল দলিল করে ভুয়া মালিকানা কায়েম করে। সরকারের সঙ্গে মামলায়ও জড়িয়েছে তারা। বিগত কয়েক বছরে সরকার এসব সম্পত্তি উদ্ধারের কার্যক্রম জোরদার করেছে। ঢাকার ৫টি প্লটে সরকার নিজের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে। ৫৫টি প্লট এখনো বেদখল রয়েছে। এসবের মধ্যে ঢাকায় ৫১টি ও ঢাকার বাইরে ৪টি।
আরও জানা গেছে, বেদল প্লটগুলোতে বিভিন্ন ব্যক্তি, কোম্পানি ও সরকারের প্রভাবশালী কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছে। ঠুকেছে মামলা। মামলা থাকা অবস্থায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে কোনো বাধা নেই মনে করছে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। বেদখল পরিত্যক্ত সম্পত্তি উদ্ধারে সরকারের পক্ষ থেকে আইনি লড়াইও জোরদার করা হয়েছে। বেদখল পরিত্যক্ত সম্পত্তি উদ্ধারের ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো আশাবাদী।
নগর পরিকল্পনাবিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলমুক্ত করে যদি খেলার মাঠ করা হয় তাহলে খুব ভালো হয়। ঢাকাসহ দেশের সবখানে খেলার মাঠের খুব অভাব। এ জায়গাগুলোর বাণিজ্যিক ব্যবহার যেন না হয়। প্রয়োজনে দরিদ্র মানুষের জন্য আবাসন; স্কুল বা অন্য নাগরিক সেবামূলক কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।’
৬০ পরিত্যক্ত সম্পত্তি : পরিত্যক্ত প্লট ও ভবনের মধ্যে ঢাকার মোহাম্মদপুরে রয়েছে ২২টি শের শাহ সুরি রোডের ব্লক-ডি-এর ২২ নম্বর প্লট, আয়তন ৩ কাঠা; একই সড়কের ব্লক-ডি-এর ২৫/১৮ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৮ কাঠা; নূরজাহান রোডের ডি-ব্লকের আর-২৯ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৮ কাঠা; একই সড়কের ডি-ব্লকের প্লট এম-৬, ১ দশমিক ৮ কাঠা; একই সড়কের ডি-ব্লকের ১/১ নম্বর প্লট; তাজমহল রোডের সি-ব্লকের ১১/১৬ নম্বর প্লট, ৩ দশমিক ৭৫ কাঠা; একই সড়কের সি-ব্লকের ৭/১০ নম্বর প্লট, ২ দশমিক ৫০ কাঠা; জাকির হোসেন রোডের ই-ব্লকের জি-১১ নম্বর প্লট, ১৮ কাঠা; সলিমুল্লাহ রোডের ডি-ব্লকের ৩/২৬ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৮ কাঠা; নূর জাহান রোডের ডি-ব্লকের টি-৮ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৮ কাঠা; সলিমুল্লাহ রোডের ডি-ব্লকের জে-৬/৪ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৮ কাঠা; কাজী নজরুল ইসলাম সড়কের ই-ব্লকের ই/১০ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৮ কাঠা; জাকির হোসেন রোডের ই-ব্লকের ই/১০ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৭৫ কাঠা; শের শাহ সুরি রোডের জি-ব্লকের ২৫/২৭ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৮ কাঠা; শহীদ সলিমুল্লাহ রোডের ডি-ব্লকের ৫/৩০ নম্বর প্লট, ৩ শতাংশ; জাকির হোসেন রোডের ই-ব্লকের ই/১০ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৭৫ কাঠা; বাবর রোডের বি-ব্লকের ২২/৫ প্লট, ১২ কাঠা; একই রোডের বি-ব্লকের ১৩/২০ নম্বর প্লট, ৫ কাঠা; ইকবাল রোডের ই-ব্লকের ৪/৪ নম্বর প্লট, ৭ দশমিক ৫০ কাঠা; হুমায়ুন রোডের বি-ব্লকের ৩/৪ নম্বর প্লট, ৩ দশমিক ৮ কাঠা; শের শাহ সুরি রোডের ডি-ব্লকের ১৮০ টিনশেড, ৩ দশমিক ৫০ কাঠা; মোহাম্মদপুর এফ-ব্লকের জয়েন কোয়ার্টার ডি-ব্লকের ২/৪ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৭ কাঠা এবং নূরজাহান রোডের ডি-ব্লকের ২/৪ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৮ কাঠা।
মিরপুরে রয়েছে ১০টি পরিত্যক্ত ভবন মিরপুরের তৃতীয় কলোনির এফ-৪ নম্বর প্লট, ৩ কাঠা; মিরপুরের ৪৫/এবি দ্বিতীয় কলোনি প্লট, ৫ কাঠা; মিরপুর দ্বিতীয় কলোনির ৬৭-এর এ/এ প্লট, ৪ দশমিক ৮ কাঠা; মিরপুরের ১-জি/৫-৩০ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৬৪ কাঠা; মিরপুরের ১০-বি/১৫-১০ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৬ কাঠা; মিরপুরের ১-জি/এভি:৩-২৭ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৬৪ কাঠা; মিরপুরের ১-ই/৬-১০ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৬ কাঠা; মিরপুরের ১-ডি/২-৩৬ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৬৪ কাঠা; মিরপুরের ১-ডি/৭-৪ নম্বর প্লট, ১ দশমিক ৭৫ কাঠা; মিরপুরের পল্লবীর ২৪/৪ নম্বর প্লট, দোতলা বাড়ি।
পল্টন এলাকায় রয়েছে ৩টি পরিত্যক্ত প্লট বা ভবন পুরান পল্টন নর্থ সাউথ রোডের ৩/৩-বি নম্বর প্লট, ২৩ শতাংশ; পুরান পল্টনের ৫৪ নম্বর প্লট, ১২ দশমিক ৫০ কাঠা; পুরান পল্টনের ৩/৫ নম্বর প্লট, ২৬ দশমিক ৩৫ কাঠা।
মতিঝিলে ৩টি প্লট মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ১৬২ নম্বর প্লট, ৮ কাঠা ১ ছটাক; একই এলাকার ৪ ও ৫ নম্বর প্লট, ১৮ দশমিক ৬৬ কাঠা; একই এলাকার ১২৬ নম্বর প্লট, ৭ দশমিক ৫০ কাঠা।
লালবাগে ৩টি লালবাগের মনেশ^র রোডের ১০ নম্বর প্লট, ৯ কাঠা; ভাগলপুর লেনের ৯ নম্বর প্লট, ১৫ কাঠা; উর্দু রোডের ৪৫ নম্বর প্লট, ৭ দশমিক ৮ কাঠা।
ঢাকায় আরও ১৫টি পরিত্যক্ত প্লট বা বাড়ি রয়েছে রমনা থানার ৭ ময়মনসিংহ রোডের প্লট, ২২ কাঠা; মগবাজারের ৩৩ দিলু রোডের প্লট, ৬ কাঠা; নিউ ইস্কাটনের ৩৮৮ নম্বর প্লট, ১ বিঘা ১ দশমিক ৫ ছটাক; তেজগাঁওয়ের তেজকুনীপাড়ার ১৮৯ নম্বর প্লট, ৪১ শতাংশ; ধানম-ি এলিফ্যান্ট রোডের ৩৫৮ নম্বর প্লট, ৫ দশমিক ২৯ কাঠা; আর কে মিশন রোডের ৩ নম্বর প্লট, ১৮ কাঠা; ধানম-ির ৫ নম্বর রোডের ১৪৩/ই নম্বর প্লট, আয়তন ১ বিঘা; একই এলাকার ১৩/৩ নম্বর রোডের ১৫৬ নম্বর প্লট, ১ বিঘা; কোতোয়ালির শাঁখারীবাজার এলাকার ১৩৯ নম্বর প্লট, দশমিক ০১১২ অযুতাংশ; নন্দলাল দত্ত লেনের ৫, ৫/১ নম্বর প্লট; ৭ দশমিক ৮ কাঠা; লালমাটিয়া হাউজিং এস্টেটের এ-ব্লকের ৩/১২ নম্বর প্লট, ৫ দশমিক ৭৫ কাঠা; সূত্রাপুর বনগ্রাম রোডের ৫১ নম্বর প্লট, ১৯ দশমিক ৩৯ কাঠা; গুলশানের ৩৫ নম্বর রোডের সিডব্লিউএন (বি)-৮ নম্বর প্লট, ১ বিঘা ১১ কাঠা ৫ ছটাক এবং গুলশানের ২৩ নম্বর রোডের সিডব্লিউএস (বি)-৮৪-এর ১৮ নম্বর প্লট, ১১ দশমিক ৫০ কাঠা।
ঢাকার বাইরের ৪ জেলায় ৪টি পরিত্যক্ত ভবন রয়েছে চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ হাউজিং এস্টেটের ৩ নম্বর রোডের ১৫-সি নম্বর প্লট, ৮ কাঠা; নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলাকার এসএস শাহ রোডের ৯৬ নম্বর প্লট, ৩ শতাংশ; খুলনার খালিশপুর হাউজিং এস্টেটের সেন্ট্রাল ব্লকের ১৫৪ নম্বর রোডের ৪৩ নম্বর প্লট, ৭ দশমিক ৫০ কাঠা এবং লালমনিরহাট সদর উপজেলার সাপটানা মৌজার ১০৭ নম্বর প্লট, ৬ কাঠা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একসময় বেশ পরিচিত ছিল স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠার পর নতুন নতুন বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে হাজির হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। সহজেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে প্রতিষ্ঠানটি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ট্রাস্টি বোর্ডের দ্বন্দ্ব আর অনিয়ম-দুর্নীতিতে হারিয়ে যেতে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
প্রতিষ্ঠার ২১ বছর পার করলেও এখনো তারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। অথচ এর পরে প্রতিষ্ঠিত অনেক বিশ^বিদ্যালয় নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে গড়ে তুলেছে অনেক বড় এবং নিজস্ব ক্যাম্পাস।
সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০ পূর্ণকালীন শিক্ষকের ১৬০ জনের সই করা অভিযোগ সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) জমা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ প্রায় ৩০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রয় করা নিজস্ব সম্পত্তি বিক্রি করা হলেও সেই টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা হয়নি। ট্রাস্টিদের ব্যক্তিগত ঋণের টাকাও বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে পরিশোধ করা হচ্ছে।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ^জিৎ চন্দ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া রাখা, অর্থ আত্মসাৎসহ অনিয়মের অভিযোগ এলে অবশ্যই তা তদন্ত করে দেখা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যদি অনিয়মই না
থাকত তাহলে ২০-২১ বছরেও কেন নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারল না?’ তিনি বলেন, ‘গত জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রয়েছে। তবে তারা অক্টোবরের মধ্যে স্টিল স্ট্রাকচারের নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাবে। তখন তারা নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে বলে আমাদের জানিয়েছে।’
শিক্ষকরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পাঁচ হাজারের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। আগে এর চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষার্থী ছিল। এখন বিশ্ববিদ্যালয়টির বাৎসরিক আয় ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা হলেও কয়েক বছর আগে আয় ছিল বছরে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা। তখন আয়ের তুলনায় ব্যয় তেমন ছিল না। তারা জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে।
ইউজিসিতে পাঠানো ২০২১ সালের তথ্যে বলা হয়েছে, ওই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় ছিল সাড়ে ৫৭ কোটি টাকা। আর ব্যয় ছিল সাড়ে ৫৩ কোটি টাকা। খাতওয়ারি ব্যয়ের হিসাবে তারা দেখিয়েছে শিক্ষা খাতে ৩ কোটি ৮ লাখ, গবেষণায় ৪৪ লাখ, বেতন-ভাতায় ৩৮ কোটি, পরিবহনে ৫৯ লাখ, বিদ্যুতে ৫৮ লাখ, অবকাঠামো ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রায় ২ কোটি, চিকিৎসায় সাড়ে ১০ লাখ এবং অন্যান্য খাতে প্রায় ৯ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের কোনোরকমের ছাড় দেয় না। টিউশন ফি জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট দিন পার হলেই এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, যা পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকে। ২০২১ সালের হিসাবে আয় কম দেখানো হয়েছে। ব্যয় অনেক বেশি দেখানো হয়েছে। ওই বছর করোনা থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীদের ঠিকমতো বেতন-ভাতাই দেওয়া হয়নি। অথচ বড় অঙ্কের টাকা বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে। মোট ব্যয়ের প্রায় ১৭ শতাংশ অন্যান্য খাতে দেখানো হয়েছে, যা সঠিক নয়।
ইউজিসিতে জমা দেওয়া শিক্ষকদের অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সালে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের বেতন ও বোনাস ঠিকমতো পায়নি। ২০১৯ সাল থেকে শিক্ষকদের প্রমোশন, ইনক্রিমেন্ট, এক্সট্রা কোর্স, থিসিস ও ইন্টার্নশিপ বিল বন্ধ রয়েছে। সব মিলে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা পায়। এখন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকায় এই ৩০ কোটি টাকা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি বিক্রি করার কথা শোনা যাচ্ছে। সম্পত্তি বিক্রি করা হলে তা যেন কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে করা হয় এবং বিক্রয়লব্ধ টাকা থেকে শিক্ষকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়। একাধিক ট্রাস্টি আগের বছরগুলোতে যে আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে, সেসব বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে ফেরত আনা প্রয়োজন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ধানমন্ডির কেয়ারি প্লাজা নামের শপিং মলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি নিজস্ব ফ্লোর ছিল। সেখানে আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকটি বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হতো। ফ্লোর দুটি ২০১৯ সালে প্রায় ১৫ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়। এ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে জমা হয়নি। এ টাকা ফেরত আনলে সংকট অনেকটা দূর হবে। আর এজন্য দায়ী ট্রাস্টিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
শিক্ষকরা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টের নামে নেওয়া প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ ও ব্যক্তিগত ঋণ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে ব্যবহৃত না হয়ে ট্রাস্টিদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়েছে। ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়া বেআইনি। এত বছর ধরে এসব ঋণ ও এর সুদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিল থেকে পরিশোধ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণসহ অন্যান্য ইস্যু সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য ইউজিসির একজন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ফাতিনাজ ফিরোজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কোনো বেতন-ভাতা বকেয়া নেই।’ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘অভিযোগের ব্যাপারটিই আমি জানি না। কেউ করে থাকলে তা ভিত্তিহীন।’
সূত্র জানায়, একসময় সিদ্ধেশ্বরীতে লিজ নেওয়া বাড়িতে এবং ধানমন্ডিতে ক্যাম্পাস ছিল স্ট্যামফোর্ডের। এখন শুধু সিদ্ধেশ্বরীতে ক্যাম্পাস আছে। তবে ওই বাড়ির লিজ ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাদের বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। ইউজিসির তাগাদার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের শেষদিকে তারা বলেছিল, ২০২৫ সালের আগে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া সম্ভব নয়। গত ১ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রেখেছে ইউজিসি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক এমএ হান্নান ফিরোজ। তার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটিতে জটিলতা দেখা দেয়। ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়। হান্নান ফিরোজের স্ত্রী ফাতিনাজ ফিরোজ ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান। সম্প্রতি ডেমরার গ্রিন মডেল টাউনে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। স্টিল স্ট্রাকচারে তৈরি ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তরে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত সময় লাগবে বলে ইউজিসিকে জানিয়েছে তারা।
মৃত্যুচিন্তা ও পরিবারের সদস্যদের কল্যাণে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত তিনটি ট্রাস্টে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দান করা অর্থের বিপরীতে এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) আরোপিত দানকর বৈধ বলে রায় দিয়েছে উচ্চ আদালত। এ বিষয়ে ট্যাক্সেস অ্যাপিল ট্রাইব্যুনালে ড. ইউনূসের করা আবেদন খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে তিনটি রেফারেন্স আবেদন খারিজ করে গতকাল বুধবার এ রায় দেয় বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ। ফলে ড. ইউনূসকে দানের বিপরীতে এনবিআরের দাবি করা ১৬ কোটি ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা দানকর দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। তবে, ইতিমধ্যে ৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা পরিশোধ করায় এখন তাকে ১২ কোটির বেশি টাকা দানকর হিসেবে দিতে হবে।
আইনজীবীদের তথ্যমতে, পরিবারের কল্যাণ ও মৃত্যুচিন্তার বিষয়টি বিবেচনা করে ড. ইউনূস ২০১১ থেকে ২০১৪ তিন করবর্ষে নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত প্রফেসর ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট ও ইউনূস সেন্টার ট্রাস্টে ৭৭ কোটি ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দান করেন। এর বিপরীতে এই সময়ের করবর্ষে ৩ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার টাকা আয়কর পরিশোধ করেন। কিন্তু ডেপুটি কমিশনার অব ট্যাক্সেস (ডিসিটি) মূল্যায়ন ও পর্যালোচনার পর এনবিআর তার কাছে ১৬ কোটি ৮ লাখ ৪০ হাজার ৫৬ টাকা দানকর দাবি করে। এই নোটিসের বিরুদ্ধে প্রথমে কমিশনার অব ট্যাক্সেসে আপিল করলে সেটি খারিজ হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ট্যাক্সেস অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে আপিল করলে সেটিও খারিজ হয়ে যায়। ট্যাক্সেস আপিলেট ট্রাইব্যুনালের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে হাইকোর্টে তিনটি রেফারেন্স মামলা করেন ড. ইউনূস।
ওই বছরের ২ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল দিয়ে দানকর আদায়ে নোটিসের কার্যকারিতা স্থগিতের আদেশ দেয়। সম্প্রতি রাষ্ট্রপক্ষ এ রুল শুনানির উদ্যোগ নেয়। গত ২৩ মে এ বিষয়ে শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৩১ মে (গতকাল) ধার্য রাখে হাইকোর্ট।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তাকে সহযোগিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফারজানা রহমান শম্পা। ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সুমাইয়া ইফরিত বিনতে আহমেদ।
রায়ের পর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আয়কর পরিশোধ না করার কৌশল হিসেবে তিনি নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্টে এ টাকা দান করেছেন। হাইকোর্ট বলেছেন, ট্রাইব্যুনালের খারিজ আদেশে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি। ফলে আরোপ করা দানকরের বাকি টাকা তাকে পরিশোধ করতে হবে।’
অ্যাডভোকেট সুমাইয়া ইফরিত বিনতে আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়টি পেলে এটি পর্যালোচনা করে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ড. ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা করেছে দুদক।
ভারতের ভিসা পাওয়া নিয়ে পাকিস্তান দল যে জটিলতার মধ্যে ছিল সেটার অবসান হয়েছে। অবশেষে ভারতের সরকার পাকিস্তান দলের জন্য ভিসা অনুমোদন করেছে।
সোমবার ক্রিকেট বিষয়ক ভারতীয় ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ এই খবর জানিয়েছে। ভিসা অনুমোদনের ফলে বাবর আজমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দল এখন বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতে ভ্রমণ করতে পারবে। আগামী ৫ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া ১০ দলের আসরে শেষ দল হিসেবে ভিসা পেয়েছে পাকিস্তান।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ অংশ নিতে আগামী বুধবার ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা রয়েছে পাকিস্তান দলের। তবে যাত্রার ৪৮ ঘণ্টা আগেও ভিসা না পাওয়াকে 'অস্বাভাবিক দেরি' হিসেবে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তারা বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির দ্বারস্থও হয়। এর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এসেছে ভিসা অনুমোদনের খবর।
ক্রিকবাজ জানিয়েছে, আইসিসির একটি সূত্র তাদেরকে পাকিস্তান দলের ভারতের ভিসা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ভিসা পেতে দেরি হওয়াকে স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছে ওই সূত্র।
সবশেষ এশিয়া কাপের মূল আয়োজক ছিল পাকিস্তান। তবে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দেশটিতে যেতে চায়নি ভারত। ওই আসরে ভারতের সবগুলো ম্যাচ হয় শ্রীলঙ্কায়। একটি বাদে সুপার ফোরের বাকি সব ম্যাচ আর ফাইনালও অনুষ্ঠিত হয় দ্বীপ দেশটিতে।
ভারত নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় হাইব্রিড মডেলে এশিয়া কাপ আয়োজনের প্রস্তাব আসে পাকিস্তানের কাছ থেকেই। এর আগে ভারত দল পাকিস্তানে না গেলে পাকিস্তানও ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে না বলে হুমকি দিয়েছিল পিসিবি। যদিও নিজেদের সেই সিদ্ধান্ত থেকে পরে সরে আসে তারা।
বিশ্বকাপের আগে আগামী শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নামবে পাকিস্তান। তিনদিন পর তাদের আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে বাবরদের প্রথম ম্যাচ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। আগামী ৬ অক্টোবর হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।
বিশ্বকাপ যত এগিয়ে আসছে, বাংলাদেশে বিশ্বকাপ নিয়ে নাটক ততই জমে উঠেছে। একদিন পর দল বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়বে, অথচ এখনো ঘোষণা হয়নি বিশ্বকাপের দল।
এমন অবস্থায় সোমবার মাঝরাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় বৈঠকে বসেছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
বিকেলে বিসিবি সভাপতির পেশাগত কার্যালয়, বেক্সিমকোতে নির্বাচক কমিটির সদস্যসহ বিসিবির বেশ কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি। তারপর সন্ধ্যার দিকে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবী করা হয় সাকিব ও তামিম ইকবালের ভেতর নতুন দ্বন্দের খবর।
গণমাধ্যমগুলোর দাবী, তামিম ইকবাল জানিয়েছেন বিশ্বকাপে তিনি পাঁচটি ম্যাচে খেলতে পারবেন। অন্যদিকে তামিমের এই দাবী মানলে বিশ্বকাপে না খেলার হুমকি দিয়ে রাখেন সাকিব।
২০১৯ বিশ্বকাপে চোটজর্জর মাশরাফী বিন মর্তুজা দলে থাকায় এবং সবগুলো ম্যাচে খেলায় অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পরও দলকে বিশ্বকাপে অষ্টম হতে দেখেছেন সাকিব, তাই এই শর্তে তার নেতৃত্বে না থাকার আশংকাই প্রবল। এই দুই জনকে সমঝোতা করার জন্য মাশরাফীকে পাপন দায়িত্ব দিয়েছেন এমন একটা খবরই দাবী করা হয়। যদিও এসবের পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ধোঁয়া থাকলে আগুন থাকবেই। তাই মধ্যরাতে, পৌনে ১২টায় সাকিবের বিসিবি সভাপতির বাসভবনে ছুটে যাওয়া আর সিডনি থেকে বাংলাদেশে পা রাখার ঘণ্টা তিনেকের মাথায় তাকে গুলশানের আইভি লেগেসিতে ছুটে আসতে দেখার মাধ্যমেই বোঝা যায়, চূড়ান্ত দল ঘোষণার আগে শেষ মুহূর্তে কোনো মারপ্যাঁচ লেগেছে।
প্রায় ৩ মাস পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে তামিম খেলেছিলেন ৪৪ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে আবার তিনি বিশ্রামে, যেটা বিসিবির মেডিক্যাল বিভাগেরই সুপারিশে।
তাই বিশ্বকাপে তামিম কতটা ফিট হয়ে খেলতে পারবেন, আদৌ খেলতে পারবেন কি না এসব নিয়েই হয়তো হয়েছে শেষ মুহুর্তে মধ্যরাতের আলোচনা।
অধিনায়ক, কোচ আর বিসিবি প্রধান মিলে মিনিট চল্লিশেক বৈঠক করেছেন। আগে বের হয়েছেন হাথুরুসিংহে, তার মিনিট দশেক পর সাকিব। কেউই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি, গাড়ির কাঁচটাও নামাননি। আর পাপনের বাসায় যখন এসব চলছে, তখন এক বন্ধুর সঙ্গে বাসায় বসে চাউমিন খাচ্ছেন তামিম!
সাকিব-তামিম একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলেন না, এই খবর পুরাতন। শোনা গেছে সম্প্রতি একটি মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপণের কাজে দুজনের ভেতর সম্পর্কে তিক্ততা বেড়েছে। তামিমের খেলা, না খেলা এসব নিয়েও জলঘোলা হওয়ার কারণেই নাকি সাকিবের বিরক্তি বেড়েছে।
তবে দুজনের কারো কাছ থেকেই এসব নিয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তামিম অধিনায়ক থাকা অবস্থায় ইংল্যান্ড সিরিজের আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন 'নাথিং এলস ম্যাটার্স'। সাকিবও স্বভাবসুলভ ভাবেই পাশ কাটিয়ে গেছেন এসব প্রসঙ্গ।
দল ঘোষণার আগের দিনে, মাঝরাতে বিসিবি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে কোচ ও অধিনায়কের বৈঠক হতে পারে শেষ মুহূর্তের বোঝাপড়া। যেহেতু একদিন বাদেই উড়াল দিতে হবে। অথবা তামিম সংক্রান্ত ব্যপারে চূড়ান্ত ফয়সালা। উত্তরটা পেতে অপেক্ষা মাত্র কয়েক ঘণ্টার।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’