
টানা চার দিন ধরে বাড়ছে তাপমাত্রা। গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের উৎপাদন সে তুলনায় না বাড়ায় লোডশেডিং ক্রমে বাড়ছে। এ অবস্থার মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা কয়লার অভাবে এক-দুই দিনের মধ্যে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনটা হলে লোডশেডিং চরমে পৌঁছানোর আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
আগে রাজধানী ঢাকায় লোডশেডিং তেমন না হলেও এখন বিভিন্ন এলাকায় চার-পাঁচবার করে পাঁচ-সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। ঢাকার বাইরের শহরে এবং গ্রামাঞ্চলে ভয়াবহ লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।
তীব্র গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় শিশু ও বয়স্কদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিদ্যুতের অভাবে কারখানার উৎপাদন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এবং অফিস-আদালতে কাজের ব্যাঘাত হচ্ছে। লোডশেডিংয়ে ব্যাটারিচালিত ভ্যানের চালক ও অটোচালকরা ঠিকমতো চার্জ দিতে না পারায় তাদের আয় কমে গেছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায়ও মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। মোটকথা জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গরম থেকে আপাতত নিস্তার নেই। ৮ বা ৯ জুন বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ ৭ জুন পর্যন্ত দেশে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার শঙ্কা রয়েছে। আগামী এক মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হতে পারে।
বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখছিল পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু কয়লার অভাবে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটির দুটি ইউনিটের একটি গত ২৫ মে বন্ধ করা হয়। ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার অন্য ইউনিটটি থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও সেটিও এক-দুই দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কয়লা কেনার অর্থের অভাবে।
বিল বকেয়া থাকায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে চীনা কোম্পানি সিএমসি। কয়লা আমদানি বাবদ বর্তমানে পায়রার ২৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার বকেয়া আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আপাতত ১০০ মিলিয়ন ডলার সংস্থান করা গেলেও কেন্দ্রটির জন্য নতুন করে কয়লা আমদানি করা যাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৮৮ মিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে। বাকি অর্থ এ সপ্তাহে পাওয়ার কথা রয়েছে। এরপর কয়লা আমদানির জন্য এলসি ওপেন করা হবে। এলসি খোলার পর কয়লা আসতে অন্তত ২৫ দিন সময় লাগবে। কয়লা এলেও সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ কেন্দ্র পুরোদমে চালু করা যাবে না। দ্রুত অর্থ সংস্থান হলেও অন্তত এক মাস এটি বন্ধ থাকবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানির অভাবে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। ডলার সংকটে জ্বালানি তেল, এলএনজি ও কয়লা আমদানি কমায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে চাইলেও উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। সংকট সামলাতে এখন আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতির অপেক্ষা করছে কর্তৃপক্ষ। তারা আশা করছে, এ সপ্তাহ শেষে গরম অনেকটা কমবে। গরম কমলে বিদ্যুতের চাহিদাও কমবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ মনে করেন, বৈশ্বিক কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা পরিকল্পনা মাফিক চললেও প্রাথমিক জ্বালানির সরবরাহের ধারাবাহিকতা চ্যালেঞ্জে পড়েছে। কভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বিশ্বের সব দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়েছে। তবে দেশে কয়লা নিয়ে যে সংকট চলছে সেটা থাকবে না। আমরা চেষ্টা করছি; সে সঙ্গে আশা করছি দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের যে বকেয়া রয়েছে তা তারা পাবে। তবে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘আজকের এ পরিস্থিতির জন্য বৈশ্বিক পরিস্থিতির চেয়ে সরকার বেশি দায়ী। ভুলনীতির কারণে প্রাথমিক জ্বালানির সংস্থান না করে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাড়ছে। ফলে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে দফায় দফায়। অতিরিক্ত দাম দিয়েও মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। সামনে লোডশেডিং আরও বাড়বে।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম এখন অনেক কম। তারপরও জ্বালানি নিয়ে আমাদের দেশে কেন এ দুরবস্থা তা বোধগম্য নয়।’
পিডিবি সূত্রমতে, বর্তমানে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের ঘাটতি দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাস্তবে বিদ্যুতের ঘাটতি প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট।
এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। জ্বালানির অভাবে গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের সক্ষমতা ব্যবহার করা যায় না। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আরও প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াটের উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৭ শতাংশ গ্যাসভিত্তিক। পিডিবির হিসাবে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৩৯ মেগাওয়াট। গড়ে উৎপাদন করা হচ্ছে ৬ হাজার ২২১ মেগাওয়াট। ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু উৎপাদন করা হচ্ছে দৈনিক ৩ হাজার ৮০৬ মেগাওয়াট। কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ৩ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট। উৎপাদিত হচ্ছে ২ হাজার ২২৬ মেগাওয়াট।
প্রাথমিক জ্বালানিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া না হলে বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান হবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী।
বিদ্যুৎ উৎপাদন বাবদ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ১৮ হাজার কোটি টাকার বিল বকেয়া হয়ে আছে। সরকার এ বকেয়া কমিয়ে না আনলে কয়েকটি কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যে কয়েকটিতে উৎপাদন কমেছে।
গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি এবং লোডশেডিংয়ের কারণে অধিকাংশ শিল্পে ৩০-৪০ শতাংশ উৎপাদন কমে গেছে বলে জানিয়েছেন শিল্পমালিকরা। ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে অনেক কারখানায় উৎপাদন ঠিক রাখতে গিয়ে খরচ বাড়ছে। তারা বলছেন, অনেক সম্ভাবনা থাকলেও কারখানার চাকা ঠিক রাখতে না পারায় ব্যবসা গুটিয়েছেন বা উৎপাদনের পরিমাণ কমাচ্ছেন অনেক উদ্যোক্তা।
ডলার সংকটে পেট্রোবাংলা এলএনজি আমদানির বিল, এলএনজি টার্মিনালের চার্জ এবং বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির (আইওসি) বিল দিতে পারছে না। সময়মতো বিল দিতে না পারায় জরিমানা গুনতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটিকে। পেট্রোবাংলার মোট বকেয়া প্রায় ২৫ কোটি ডলার।
একই কারণে আমদানিকৃত জ্বালানির মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না বিপিসি। আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তেলবাহী কার্গো না পাঠানোর হুমকি দিয়েছে। গত ১১ মে পর্যন্ত বিপিসির কাছে সরবরাহকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি ডলার।
বিপিসি জানিয়েছে, বকেয়া পরিশোধ না করায় ৩০ হাজার টনের একটি ডিজেল কার্গো বাতিল করেছে ভিটল সিঙ্গাপুর। আন্তর্জাতিক তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, এ মাসে তারা ১৫০ হাজার টন ডিজেল, ৫০ হাজার টন ফার্নেস অয়েল সরবরাহ করবে না। বিপিসি জ্বালানি বিভাগকে জানিয়েছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখা কঠিন হবে। জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
২০২৩-২৪ অর্থবছর একটি চ্যালেঞ্জিং বছর। দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। বৈশি^ক অস্থিরতা ও অভ্যন্তরীণ চাপে অর্থনীতির ভঙ্গুর দশা। এ কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ সামলানো প্রায় অসম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে উচ্চাকাক্সক্ষী বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব নয়।
গতকাল শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এ কথা বলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, ‘এ কঠিন সময়ে কঠিন কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল, যা নেওয়া হয়নি। প্রবাস-আয় নিম্নমুখী। বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রাও উচ্চাকাক্সক্ষী। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভও নিম্নমুখী। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা গেছে। ফলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।’
বাজেট-ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে যে ঋণের কথা বলা হয়েছে, তা মূল্যস্ফীতি বাড়াবে বলে মনে করছে সিপিডি, যদিও অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে নামানোর কথা বলেছেন।
কারও আয় করমুক্ত সীমার নিচে হলেও সরকারি ৩৮টি সেবা নিতে টিআইএনের বিপরীতে তার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা কর নেওয়ার বিধান বৈষম্যমূলক মনে করছে সিপিডি।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, “অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আগামী অর্থবছরের বাজেট ‘সময়োপযোগী নয়’; অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আরও অনেক উদ্যোগ নিতে পারতেন মন্ত্রী।” তিনি বলেন, ‘জিডিপি ও বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে ধরনের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে, তাতে যেসব অনুমিতি বা অর্থনীতির সূচক ধরা হয়েছে, গত বছরের সঙ্গে তুলনা করে মনে হয়েছে, এসব সূচক বাস্তবসম্মত নয়।’
সংস্থার সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ আয় না বাড়লে সরকারের ব্যাংক ঋণনির্ভরতা বাড়বে। কাঠামোগত, অনুমিতিগত দুর্বলতার কারণে বাজেট বাস্তবায়নে আবারও আমরা নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হব। আর্থিক খাতের সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে একটা ব্যাংকিং কমিশনের কথা বলছি। ২০০৯ সালে ঋণখেলাপি ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। এখন ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। এটা কেন হচ্ছে, কারা করছেন? এ নিয়ে কারও চিন্তা নেই।’
এ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ‘ব্যাংক কমিশন গঠন করা জরুরি। খুব বেশি ঋণখেলাপ হচ্ছে। খেলাপ কারা করছে, কেন করছে জানার জন্যই ব্যাংক কমিশন দরকার। ঋণখেলাপের কারণে করদাতাদের ওপর চাপ বাড়ছে, ব্যাংকিং খাতে অনেক সমস্যা হচ্ছে।’
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অনুমিতিগুলো দুর্বল, আগেও আমরা দেখেছি সংকটের মূল কারণগুলো অনুধাবন না করে বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। এজন্য শেষ পর্যন্ত অনুমিতিগুলো সত্য হয় না। বাস্তবতাকে বিবেচনায় না নিয়ে আকাক্সক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে বাজেট করলে এমন অবস্থাই হয়।’
তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি ভালোই চলছিল। হঠাৎ বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকট তৈরি হওয়ায় সেসবকে বিবেচনায় না নিয়েই গত বছর বাজেট করা হয়েছে। ফলে বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তৈরি হলো। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের সময় অভিঘাতগুলো স্পষ্ট থাকলেও সাড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছিল, মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হয়েছিল, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়নে স্থির থাকবে ভাবা হয়েছিল, ডলার এক্সচেঞ্জ রেট ৮৬ টাকা থেকে পরিবর্তিত হবে না ধারণা করা হয়েছিল।’
সিপিডির এ বিশেষ ফেলো বলেন, ‘বছরের পর বছর অনুমিতিগুলো সত্য হয় না এবং বাস্তবতার সঙ্গে মিল থাকে না। সাড়ে ৭ শতাংশের জায়গায় ৬.০৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন থেকে ২৯ বিলিয়নে নেমেছে। বিনিময়হার ৮৬ থেকে ১০৮ টাকা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৮ শতাংশ হয়েছে। বাস্তবতাকে বিবেচনা না করলে এমন অবস্থাই হয়।’
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নতুন অর্থবছরের বাজেটের মূল উদ্দেশ্যে থাকা উচিত ছিল চলমান অর্থনীতিতে যে স্থিতিশীলতার সংকট রয়েছে তা বিবেচনায় নেওয়া। প্রস্তাবিত বাজেটে বাস্তবতাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। ফলে অনেক চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে।’
তিনি বলেন, ‘উচ্চাকাক্সক্ষার এ বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় চলতি বছরের থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়াতে হবে। লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হলে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে বা এডিপি কাটছাঁট করতে হবে। তা না হলে বিদেশি ঋণ নিতে হবে।’
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘নতুন অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। গত অর্থবছরেও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছিল। পরে এটাকে নামিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়। সরকারি বিনিয়োগের হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ আর ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হয়েছে। ২০২৩ সালে যা ধরা হয়েছিল তার চেয়ে কম হয়েছে এখন পর্যন্ত; সেটা ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। এখান থেকে লাফ দিয়ে ২৭ শতাংশ কীভাবে হবে? মনে হচ্ছে এটা উচ্চাকাক্সক্ষা।’
ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ ১৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। এ বছরের ঋণ প্রবাহ যেটা ধরা হয়েছে, সেটা গত বছরের ধরা ঋণ প্রবাহের সঙ্গে মেলে না। ব্যক্তি খাতের যে বিনিয়োগের হার ধরা হয়েছে, তা এমন ঋণ প্রবাহ দিয়ে কীভাবে বাস্তবায়িত হবে বোধগম্য নয়।’
ফাহমিদা বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও কঠিন। আমাদের আমদানিকৃত দ্রব্যের মূল্যস্ফীতির কথা বলা হলেও বিশ্ববাজারে এখন সব পণ্যের দাম নিম্নমুখী। তাই মূল্যস্ফীতিকে এর ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না, আমাদের অভ্যন্তরীণ অনেক দুর্বলতা আছে, করকাঠামোর মধ্যে আছে, প্রাতিষ্ঠানিক ও মনিটরি পলিসির মধ্যেও দুর্বলতা আছে। মুদ্রানীতির সঙ্গে আমাদের আর্থিক নীতির যদি সমন্বয় না থাকে, তাহলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ খুবই কঠিন হবে।’
দুই হাজার টাকা কর বৈষম্যমূলক : করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করাকে ভালো বলে উল্লেখ করেন সিপিডি নির্বাহী পরিচালক। তবে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা করারোপের বিষয়টি ভালো হয়নি বলে তার মতে। তিনি বলেন, ‘কারও আয় যদি সাড়ে তিন লাখের নিচেও হয়, তাহলে সরকারি ৩৮টি সেবা নিতে টিন লাগবে। করযোগ্য আয় না থাকলেও তাকে দুই হাজার টাকা দিতে হবে। মানুষকে স্বস্তি দিতে করমুক্ত আয় বাড়িয়ে আবার যার করযোগ্য আয় নেই, তার ওপর দুই হাজার টাকার কর আরোপ করা যুক্তিযুক্ত নয়। এটা বৈষম্যমূলক। নৈতিকভাবে ঠিক নয়। এতে অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে।’
আইএমএফের পরামর্শ মেনে বাজেট করা হয়নি বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘আর্থিক খাতে সুশাসন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। আইএমএফের পরামর্শ আছে, সেটা আমরা পুরোপুরি দেখি না। তাদের সার্বিক পরামর্শ যা আছে, যা তারা বলে, সেখান থেকে যেটুকু গ্রহণ করা উচিত বলে আমরা মনে করি সেটুকু আমরা গ্রহণ করব, বাকিটা আমরা নিজেদের মতো করে নেব। সেখানে তাদের কোনো আপত্তি নেই।’
গতকাল শুক্রবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ কখনো লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হয়নি, এবারও ব্যর্থ হব না। মানুষের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে, সেই দায়বদ্ধতা নিয়েই কাজ করছি আমরা।’
আইএমএফের ঋণ নেওয়াকে নেতিবাচক হিসেবে না দেখে ইতিবাচকভাবে দেখার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে শুধু আইএমএফ না, সবাই দেখে ব্যালান্স শিট ঠিক আছে কি না, রেভিনিউ অ্যাকাউন্ট ঠিক আছে কি না, ট্রায়াল ব্যালান্স ঠিক আছে কি না, আয়-ব্যয়ের পার্থক্য ঠিক আছে কি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইএমএফের সঙ্গে যারা কাজ করে, আমি মনে করি এটা ভালো দিক এজন্য যে, তারা শুধু অর্থ দিয়ে মানে ঋণ দিয়ে সাহায্য করে না, পাশাপাশি কিছু প্রকল্পের পরামর্শও দেয়। সেগুলো কীভাবে কম সময়ে বাস্তবায়ন করা যাবে, এগুলোও তারা পরামর্শ দেয়। তাই আমি মনে করি, এসব থেকে শেখার অনেক কিছু থাকে এবং আমরা সমৃদ্ধ হই।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা আইএমএফের কাছ থেকে যে ঋণ নিয়েছি, তা আমাদের দেড় মাসের প্রবাসী আয়ের সমান। এটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।’
এ সময় আইএমএফ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বৈশি^ক সমস্যার কারণে আমরা কিছু সমস্যার মধ্যে যাচ্ছি। আইএমএফের কাছে যখন কোনো দেশ ঋণ চায় তখন তারা তাদের ম্যাক্রো ম্যানেজমেন্টকে (সামষ্টিক ব্যবস্থাপনা) মূল্যায়ন করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এসে তারা এটা এত আপডেট হিসেবে পেয়েছে, এটা দেখেই তারা খুব কম সময়ের মধ্যেই ঋণ অনুমোদন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সামষ্টিক ব্যবস্থাপনা খুব ভালোভাবে চলছে। তবে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, থাকতেই পারে। আইএমএফের ইমপ্রেশনটা হলো বাংলাদেশের সামষ্টিক ব্যবস্থাপনা ভালো আছে। কিছু ভর্তুকি যৌক্তিকভাবে দিচ্ছি। ১৯৯৬ সালে কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়া শুরু হয়েছিল।’
এনবিআরের বিশাল রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে আমরা যখন ক্ষমতা গ্রহণ করি তখন রাজস্ব আদায় ছিল ৫৯ হাজার কোটি টাকা। এ বছর তা আদায় হয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা আমাদের অনেক বড় সাফল্য। আমরা এবারের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করতে পারব।’
অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ না রাখা
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা গত দুই-তিন অর্থবছরে বাজেটে অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ দিয়েছিলাম। বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার সুযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু পাচার করা অর্থ কেউ ফেরত পাঠায়নি। কোনো টাকাই বৈধ করা হয়নি। এর মানে দেশে কোনো অপ্রদর্শিত টাকা নেই। তাই এবারের বাজেটে এ নিয়ে কোনো আলোচনা রাখা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর বাজেটে বলেছিলাম, কেউ যদি অপ্রত্যাশিত টাকা বা পাচার করা টাকা দেশে নিয়ে আসে, তাহলে সেই টাকার কোনো কর দিতে হবে না। গত বাজেটে এ সুযোগটি দেওয়ার পরও এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রত্যাশিত টাকা বাংলাদেশে আসেনি। তাই এবারের বাজেটে আর সেই সুযোগ রাখা হয়নি।’
গত অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, কেউ যদি বিদেশ থেকে অর্থ আনেন, তাহলে ৭ শতাংশ কর দিলেই হবে। আর বিদেশে থাকা স্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনলে ওই সম্পদের মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ এবং বিদেশে থাকা অস্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনলে এর ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। গত বছর ১ জুলাই থেকে চলতি মাসের ৩০ জুন পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছরের জন্য এ সুবিধা বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছিল।
দুই কোটি কর্মসংস্থান করেছেন অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী যখন ২০১৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তার প্রথম বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য ছিল দুই কোটি, কিন্তু এখন কর্মসংস্থান না বেড়ে উল্টো বেকার বাড়ল প্রায় তিন লাখ। এবারের বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রস্তাব বাস্তবসম্মত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এ পর্যন্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টির যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সেটি সুস্পষ্টভাবে সবই পূরণ করতে পেরেছি। আমি এখন পর্যন্ত দুই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছি।’
পুঁজিবাজার ইস্যুতে বিব্রত সবাই
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। এ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। কে এ প্রশ্নের উত্তর দেবেন সেটিও খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পরে অর্থ সচিবকে উত্তর দিতে বললে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে উত্তর দিতে বলা হয়। পরে এ বিষয়ে কথা বলেন গভর্নর। সংবাদ সম্মেলনে পুঁজিবাজার নিয়ে প্রশ্নোত্তরে এমন বিব্রত হন মন্ত্রী ও আমলারা।
সাংবাদিকদের প্রশ্ন শুনে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কে নেবেন প্রশ্নটি? অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মহোদয় আসেন। তিনি যদি বলতে চান বলতে পারেন।’
এ সময় অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, ‘পুঁজিবাজারের বিষয়ে আমাদের বাজেটে উল্লেখযোগ্য কোনো বিষয় উপস্থাপনায় রাখা হয়নি। এ বিষয়ে কী কী কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে এখন আমরা গভর্নর স্যারের কাছ থেকে জানতে পারি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর স্যার আমাদের সঙ্গে আছেন। তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।’
গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের মধ্যে পুঁজিবাজার নিয়ে বেশ কিছু সমস্যা ছিল। আমরা এসইসি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে গত এক বছরের তিন থেকে চারটি সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটে দুটি অংশ, একটি ইকুইটি মার্কেট, আরেকটি বন্ড মার্কেট। বর্তমান এসইসি বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যেসব নীতি সহায়তা দেওয়া দরকার, আমরা সেগুলো দিচ্ছি।’
মূল্যস্ফীতি ১২ থেকে ৬ শতাংশে নামিয়েছি
মূল্যস্ফীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমরা নিজেরাও শঙ্কিত। সারা বিশ্বই এখন মূল্যস্ফীতিতে আছে। আমরা খাবার তো বন্ধ করতে পারব না। মানুষকে খাবার না দিয়ে রাখা যাবে না। আমরা একটা ফ্লেক্সিবল ওয়েতে এগোচ্ছি। যেসব কারণে মূল্যস্ফীতি হয়, সেটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা ছাড় দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তার মাধ্যমে প্রচুর খাদ্য সরবরাহ করছি। পাশাপাশি যেসব পণ্য নিত্যপ্রয়োজনীয়, সেখানে নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করে সরকারকে সাহায্য করছি। এভাবে আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করছি।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘যখন আমরা ক্ষমতায় আসি, তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশ। পরের ১০ বছরে সেটি ৬ শতাংশে নেমে আসে। সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। এখন খুব খারাপ সময়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা ভালো আছি। এবারও যেসব প্রজেকশন আমাদের আছে, সবই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব বলে আশা করি।’
প্রয়োজনে সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দ বাড়বে
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর কাছে করা এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রয়োজন হলে অন্য খাতের বরাদ্দ স্থগিত করে মানুষের ‘খাদ্যের কষ্ট’ দূর করা হবে। সরকারের গত ১৪ বছরের শাসনামলে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। চলতি বাজেটে এ খাতের বরাদ্দ আরও বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ কর্মসূচি আগেও ছিল। চলতি অর্থবছরেও থাকবে। সামাজিক খাতে আমাদের বরাদ্দ আগে ছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছর সেটা এক লাখ কোটি টাকার বেশি ছিল। এবারের বাজেটে সেটা ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘৫০ লাখ পরিবারকে আগে ১০ টাকা কেজিতে চাল দেওয়া হতো। এখন ১৫ টাকায় চাল দিচ্ছি, এ বছর পরিস্থিতির কারণে এক কোটি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। টিসিবির মাধ্যমে তেল-চিনি ও বিভিন্ন খাদ্যপণ্য দেওয়া হয়েছে। কাজেই আমি নিশ্চিত করতে চাই, সামাজিক সুরক্ষার বিষয়গুলো বাজেটে আছে এবং এগুলো অব্যাহত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যদি খাদ্যের উৎপাদন কমে যায়, সেই ক্ষেত্রে অন্য কর্মসূচি স্থগিত রেখে বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে মানুষের খাদ্যের কষ্ট দূর করা হবে। দরিদ্র্য মানুষের জন্য এসব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এ কর্মসূচিগুলো অতীতে ছিল, আমরা ধারাবাহিকভাবে বাড়িয়েছি। ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, সারিয়াকান্দি (বগুড়া), সরিষাবাড়ী (জামালপুর), মাদারগঞ্জ (জামালপুর)Ñ এসব এলাকায় দুর্ভিক্ষ হতো, মানুষ না খেয়ে মারা যেত। কিন্তু গত ১৪ বছরে একজন মানুষও না খেয়ে মারা যায়নি। এ ধরনের কোনো নিউজ হয়নি যে, কোথাও কেউ অভুক্ত আছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা।
বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে খানিকটা বেকায়দায় আছে দেশের অর্থনীতি। অর্থ সংকটে পড়েছে সরকার। প্রবাসী ও রপ্তানি আয়েও সুখবর নেই। রাজস্ব আদায়ে রয়েছে ঘাটতি। এমন পরিস্থিতিতে আয় বাড়াতে ব্যতিব্যস্ত অর্থমন্ত্রী, কর পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই না করেই কর বসিয়েছেন বিভিন্ন খাতে। এতে জীবনযাত্রা ব্যয় বাড়বে। ভোগান্তি বাড়বে সাধারণের। তবে সম্পদশালীদের কিন্তু ঠিকই ছাড় দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থবিল বিশ্লেষণ করে এমন হিসাব মিলেছে।
অর্থবিলে ব্যাপকভাবে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছেন অর্থমন্ত্রী। কৌশলে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল প্রভাবশালীদের খোলাবাজারে বিক্রির সুযোগ করে দিয়েছেন। রাজস্ব কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়ানো, ভ্রমণ কর ও গাড়ির ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। সারচার্জ ছাড় দেওয়া হয়েছে। করমুক্ত আয়সীমা বাড়ালেও ন্যূনতম কর দেওয়ায় বাধ্য করলেন।
পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেশির ভাগ মানুষ মূল বাজেট বক্তৃতা লক্ষ করেন। সেখানে কী আনা হয়েছে আর হয়নি তা খতিয়ে দেখেন। অর্থবিল সাধারণত অর্থনীতির ভাষায় লেখা হয়। তাই কিছুটা জটিল হয়ে থাকে। সমালোচনা এড়াতে কিছুটা কৌশল করে প্রায় প্রতি অর্থবছরেই বাজেট বক্তৃতায় অনেক কিছু না এনে অর্থবিলে উল্লেখ করেন। এবারও তা-ই করেছেন। অর্থবিল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ব্যাপকভাবে সম্পূরক শুল্ক আরোপ রাখা হয়েছে; যা আমদানি সময় দিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে আমদানি খরচ বাড়বে। ফলে বাজারে দাম বাড়বে। অন্যদিকে অর্থবিলে অনেক বিষয়ে রাজস্ব কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বহাল রেখে ভোগান্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে ভ্রমণ কর, গাড়ি ব্যবহারের খরচ বাড়ানো হয়েছে। তবে ধনীদের সুযোগ ঠিকই রাখা হয়েছে। এসব করা হয়েছে সরকারের আয় বাড়াতে।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর বিশেষজ্ঞ ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, অর্থবিলে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল পরে শুল্ক দিয়ে খোলাবাজারে বিক্রির সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ কার্যক্রম অন লাইনে পরিচালিত না হওয়া পর্যন্ত অর্থবিলে নেওয়া ধারা কার্যকর হলেও এই সুবিধা অপব্যবহার করে রাজস্ব ফঁাঁকি বাড়বে। এনবিআরকে অটোমেশনে আনতে হবে, না হলে এ খাতে রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ হবে না।
আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত অর্থবিলে ব্যাপকভাবে সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজারে চাহিদা আছে এমন ৪৮৯ পণ্য বেছে নেওয়া হয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে একটি মাত্র পণ্য ‘দুধের অন্যান্য স্টাবিলাইজার’-এর ওপর ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই পণ্য দুধ সংরক্ষণে বা সুষ্ঠুভাবে তৈরিতে সহায়তা করে। বাকি সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশের বেশি ২০, ৩০, ৪৫, ৬০, ১০০, ১৫০, ২০০, ৩০০, ৩৫০, ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত সম্পূরক শুল্ক ধার্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্পূর্ণ তৈরি চার দরজাবিশিষ্ট ডাবল কেবিন পিকআপের সিলিন্ডার (ক্যাপাসিটি ৪০০০ সিসির ওপরে) আমদানিতে সবচেয়ে বেশি ৫০০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
অর্থবিল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গুঁড়া দুধ (আড়াই কেজির প্যাকেট), মাখন, চিজ, দই, কমলালেবু, আঙুর, আপেল, নাশপতি, চেরি, সবুজ চা, ব্ল্যাক চা, গোলমরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, জিরা, রিফাইন্ড নারকেল তেল, চকলেট, এক বছরের শিশুদের খাবার সমগ্রী, পাস্তাসহ প্রায় ৫০০ পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক থাকছে। এসব পণ্যের দাম আপতত কমছে না। ক্ষেত্রবিশেষে বাড়বে।
রাজস্ব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ বহু পুরনো। অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ হয়রানি বন্ধে এনবিআর কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী মুখে যা-ই বলুন না কেন আগামী অর্থবছরের জন্য আইন করে রাজস্ব কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়িয়ে দিলেন। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণের ক্ষমতা বহাল রাখা হয়েছে। কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পণ্যমূল্য বা করযোগ্য সেবামূল্য অনধিক ৫ লাখ টাকা হলে রাজস্ব কর্মকর্তা জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবেন। একইভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পণ্যমূল্য বা করযোগ্য সেবামূল্য ২০ লাখ টাকা হলে সহকারী কমিশনার, ৩০ লাখ টাকা হলে উপকমিশনার, ৫০ লাখ টাকা হলে যুগ্ম কমিশনার, ১ কোটি টাকা হলে অতিরিক্ত কমিশনার, ১ কোটির অধিক হলে কমিশনার জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবেন।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন ডিসিসিআই সভাপতি সামীর সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, বৈশ্বিক মন্দার কারণে সংকটে আছে বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। অনেক ব্যক্তিও ব্যবসায় লোকসানে পড়েছেন। মাঠপর্যায়ের সবাই যে সৎ তা কিন্তু নয়। তাই মাঠপর্যায়ে রাজস্ব কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়িয়ে দিলে অনেক সময় ইচ্ছেমতো জরিমানা নির্ধারণ করার সুযোগ পাবে; যা আমাদের জন্য বোঝা হয়ে যাবে। জরিমানা জোগাড় করতে ধারদেনাও করতে হবে। মাঠপর্যায়ের অনেকে অনৈতিক অর্থ দাবি করবে। জরিমানা নির্ধারণে আরও ওপরের পর্যায়ের অনুমতি নেওয়ার ধারা আনতে হবে। এতে হয়রানির সুযোগ কমবে।
সরকার রপ্তানিমুখী শিল্পের সুবিধায় শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির ‘বন্ড’ সুযোগ দিয়েছে। এই সুযোগ বেশি নিয়েছেন তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। এই সুবিধা পাওয়ার অন্যতম শর্ত বন্ড সুবিধায় পণ্য এনে তার সবটা কারখানায় রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করতে হবে। খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না। এনবিআরের প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়। এনবিআর বন্ড সুবিধা দিয়ে বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা কম শুল্ক আদায় করে। বছরে বন্ড সুবিধায় পণ্য এনে কারখানায় ব্যবহার না করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দেওয়ায় (অপব্যবহার) বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয় সরকার। এতে সব ধরনের শুল্ক কর দিয়ে দেশি প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত একই জাতীয় পণ্য অসম প্রতিযোগিতায় পড়ে।
অর্থবিলে বন্ড সুবিধাপ্রাপ্তদের জন্য নতুন বিধান এনেছেন, এখন থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল এনে এনবিআরের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে।
এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, বন্ড দুর্নীতির সঙ্গে প্রভাশালীরা জড়িত। তাই এই দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব হয় না। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ডেড ওয়্যার হাউজে কী পরিমাণ পণ্য সংরক্ষণ করবে তা ম্যানুয়াল (খাতা-কলমে) পদ্ধতিতে হিসাব রাখেন। এখানে অসাধু এনবিআর কর্মকর্তাদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে কম হারে শুল্ক দিয়ে বেশি পরিমাণের পণ্য বিক্রির রাস্তা খোলা রাখা হলো। আর এতে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে। অন্যদিকে দেশি শিল্প সব ধরনের রাজস্ব দিয়েও এসব দুর্নীতিবাজের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় পড়বে।
প্রস্তাবিত অর্থবিলে করমুক্ত আয়সীমায় ও কর পরিশোধে পরিবর্তন আনা হয়েছে। অর্থবিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, এখন থেকে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পরবর্তী ১ লাখ পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ২০ শতাংশ, অবশিষ্ট মোট আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ হারে কর ধার্য রয়েছে। এ ছাড়া করযোগ্য আয় থাকলে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য ৫ হাজার টাকা, অন্যান্য সিটি করপোরেশনের জন্য ৪ হাজার টাকা, সিটি করপোরেশন ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় অবস্থিত করদাতাদের জন্য ৩ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে। তবে করযোগ্য আয় না থাকলেও ইটিআইএন থাকলেই ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে। তবে কোনো করদাতা যদি স্বল্প উন্নত বা কম উন্নত এলাকায় ক্ষুদ্র ও কুঠিরশিল্পের ব্যবসা করেন, তবে যে বছরের কর প্রদান করবেন তা তার আগের বছরের উৎপাদনের পরিমাণ ১৫ শতাংশের বেশি কিন্তু ২৫ শতাংশের বেশি না, তাহলে আয়ের ওপর প্রদেশ আয়করের ৫ শতাংশ রেয়াত পাবেন। একইভাবে ২৫ শতাংশের বেশি হলে ১০ শতাংশ রেয়াত পাবেন।
সারচার্জ হচ্ছে একধরনের মাশুল, যা বেশি সম্পদের মালিকরা নিয়মিত করের বাইরে পরিশোধে করেন। এত দিন ৩ কোটি টাকা হলে সারচার্জ দিতে হতো। প্রস্তাবিত অর্থবিলে কৌশলে অর্থমন্ত্রী বেশি ধনীদের ওপর চাপ কমাতে এ হিসাব বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা করেছেন। বলা হয়েছে, নিট সম্পদের মূল্যমান ৪ কোটি থেকে ১০ কোটি হলে ১০ শতাংশ, ১০ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ২০ কোটির বেশি না এমন হলে ২০ শতাংশ, ২০ কোটির বেশি কিন্তু ৫০ কোটির কম হলে ৩০ শতাংশ এবং ৫০ কোটির বেশি হলে ৩৫ শতাংশ সারচার্জ ধার্য করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে রপ্তানিমুখী বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা খুঁজে পাননি বলে দাবি করেছেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, উৎসে কর ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল সেখানে ফিরিয়ে নেওয়া, নগদ সহায়তার ওপর করারোপ প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। বাজেটে অন্যান্য বছরের মতো রপ্তানি খাতগুলোর জন্য প্রণোদনা বাবদ অর্থ বরাদ্দের কোনো ঘোষণাও আসেনি। যদিও বৈশি^ক প্রেক্ষাপটে এ মুহূর্তে রপ্তানি খাতকে সুরক্ষা দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
গতকাল শুক্রবার প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে বিজিএমইএ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান এসব কথা বলেন। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আজিজ গ্রুপের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিমসহ পোশাকশিল্প উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ফারুক হাসান বলেন, ‘এমনিতেই কভিডের কারণে আমাদের শিল্পে যে ক্ষতি হয়েছে, সেটি পুষিয়ে নিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে একদিকে বিশ্বব্যাপী মন্দা চলছে, খুচরা বিক্রির চাহিদা কমে গেছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।’ বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেলেও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের জায়গাটিতে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। আমাদের বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সব ধরনের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এই অসাধু কর্মকা-ের পেছনে লাইনম্যান, মিটার রিডার ও ভোক্তা, যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের যথাযথ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাজেট বক্তৃতায় অন্যান্য বছরের মতো রপ্তানি খাতের জন্য প্রণোদনা বাবদ অর্থ বরাদ্দের কোনো ঘোষণা আসেনি। যেখানে আমাদের বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছিল, সেখানে আমাদের সামনে বিষয়টি এখনো অজানা রয়ে গেছে। আমরা একটি অভূতপূর্ব বৈশ্বিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ অবস্থায় কীভাবে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে সুরক্ষা করতে পারি, সেটি হবে আমাদের কৌশল।’
প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ২৭ শতাংশ করা হয়েছে। এটি সম্ভব কি না, তা জানতে চাইলে ফারুক হাসান বলেন, ‘এটি সম্ভব। তবে চ্যালেঞ্জিং। কারণ গত কয়েক অর্থবছরে আমরা মাত্র ১ থেকে দেড় শতাংশ বৃদ্ধি করেছি। হুট করেই তা ৫-৬ শতাংশ বৃদ্ধি করা কঠিন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পোশাকের প্রধান দুই বাজার আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে ঋণের সুদের হার অনেক বেড়েছে; মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেক কমেছে। আমাদের পোশাক রপ্তানির অন্যতম বৃহৎ বাজার ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি জার্মানি অফিশিয়ালি জানিয়ে দিয়েছে, দেশটি মন্দার কবলে পড়েছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশের অবস্থাও ক্রমশ সঙিন হচ্ছে।’
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘আশঙ্কার বিষয় হলো ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের জানুয়ারি-মার্চ মাসের আমদানি তথ্য ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দেখাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পোশাক আমদানি নভেম্বরে কমেছে ৯ দশমিক ৮৪ এবং ডিসেম্বরে কমেছে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। জানুয়ারিতে কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে আবারও ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমাদের রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকার পরও ইউরোপ ও আমেরিকার বাংলাদেশ থেকে আমদানি ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দেখাচ্ছে। এটি আমাদের জন্য সত্যিই অ্যালার্মিং। আর ২০২৩ সালে বিশ্ববাজার কিন্তু আর বড় হচ্ছে না; উল্টো ছোট হয়ে যাবে। অতএব আমাদের সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত কীভাবে আমরা আমাদের বাজার ধরে রাখতে পারি।’
ফারুক হাসান বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে পোশাক খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তা খুবই জরুরি। পোশাকশিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতিকে বেগবান করে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব। চলমান সংকটময় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে উৎসে কর ২০২১-২২ অর্থবিছরের মতো শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ ধার্য করার দাবি জানান তিনি। এটি আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর করার জন্য পুনরায় সরকারের সদয় দৃষ্টিও আকর্ষণ করেন।
তিনি বলেন, ‘নগদ সহায়তার ওপর আরোপ করা ১০ শতাংশ কর প্রতাহারের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। আমরা মনে করি, এ সংকটময় সময়ে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা হবে।’
ভারতে ওড়িশা রাজ্যের বালাশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে মহারাষ্ট্রের চেন্নাইগামী করম-ল এক্সপ্রেসসহ আরও দুটি ট্রেন স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুর্ঘটনায় পড়লে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০০ যাত্রী। এ ছাড়া কয়েকশ যাত্রী গতকাল রাত ১২টার সময়ও লাইনচ্যুত বগিগুলোতে আটকে পড়েছিলেন। তাই হতাহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতের রেল মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা বলেন, চেন্নাইগামী করম-ল ট্রেনটি একটি মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে পড়ে যায়। এ সময় পাশের এই লাইন দিয়ে বেঙ্গালুরু থেকে আসছিল কলকাতাগামী যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনটি এসে করম-লের পড়ে যাওয়া বগিগুলোতে সজোরে ধাক্কা খায়। দুর্ঘটনায় করম-লের ৩০টি বগি আর অন্য ট্রেনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। মালগাড়ির পাঁচটি বগিও লাইনচ্যুত হয়েছে।
কলকাতার সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানাচ্ছে, রাজ্যটির ফায়ার সার্ভিসের প্রধান সুধাংশু সারাঙ্গীর তত্ত্বাবধানে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে ৩০ জনের মৃত্যুর তথ্য জানান তিনি। সুধাংশু জানান, উদ্ধার হওয়া আহত মানুষের সংখ্যা ৩০০ জনের বেশি। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আনন্দবাজারের খবর, রাত ১২টা পর্যন্ত ৬০টি অ্যাম্বুলেন্সে করে হতাহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ছাড়া আরও কয়েকশ মানুষ পড়ে যাওয়া বগিগুলোর নিচে বা ভেতরে আটকা পড়েছিল। এনডিটিভি জানায়, যাত্রীবাহী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে চেন্নাই যাচ্ছিল। দুপুর ৩টার দিকে শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ ট্রেনটি পৌঁছায় বালাশ্বরে। কাছেই বাহানগা বাজারের কাছে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেনটি। সে সময় তৃতীয় একটি ট্রেন যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসও এ দুর্ঘটনার শিকার হয়।
এনডিটিভি বলছে, লাইনচ্যুত বগি থেকে যাত্রীদের উদ্ধারে কাজ করছে ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ ফোর্স (এনডিআরএফ)। ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে যাত্রীদের বের করে আনতে তাদের সাহায্য করছেন এনডিআরএফের স্থানীয় প্রতিনিধিরা। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী নবীন পতনায়েক দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
দুর্ঘটনার খবরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি টুইট করে বলেন, ‘ওড়িশার ট্রেন দুর্ঘটনায় আমি মর্মাহত। এ দুঃসময়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আহত ব্যক্তিরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। পরিস্থিতি নিয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিন বৈষ্ণবের সঙ্গেও কথা বলেছি।’
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্ঘটনার পর এক টুইট বার্তায় তিনি জানান, রাজ্যের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছেন।
ভারতের ভিসা পাওয়া নিয়ে পাকিস্তান দল যে জটিলতার মধ্যে ছিল সেটার অবসান হয়েছে। অবশেষে ভারতের সরকার পাকিস্তান দলের জন্য ভিসা অনুমোদন করেছে।
সোমবার ক্রিকেট বিষয়ক ভারতীয় ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ এই খবর জানিয়েছে। ভিসা অনুমোদনের ফলে বাবর আজমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দল এখন বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতে ভ্রমণ করতে পারবে। আগামী ৫ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া ১০ দলের আসরে শেষ দল হিসেবে ভিসা পেয়েছে পাকিস্তান।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ অংশ নিতে আগামী বুধবার ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা রয়েছে পাকিস্তান দলের। তবে যাত্রার ৪৮ ঘণ্টা আগেও ভিসা না পাওয়াকে 'অস্বাভাবিক দেরি' হিসেবে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তারা বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির দ্বারস্থও হয়। এর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এসেছে ভিসা অনুমোদনের খবর।
ক্রিকবাজ জানিয়েছে, আইসিসির একটি সূত্র তাদেরকে পাকিস্তান দলের ভারতের ভিসা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ভিসা পেতে দেরি হওয়াকে স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছে ওই সূত্র।
সবশেষ এশিয়া কাপের মূল আয়োজক ছিল পাকিস্তান। তবে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দেশটিতে যেতে চায়নি ভারত। ওই আসরে ভারতের সবগুলো ম্যাচ হয় শ্রীলঙ্কায়। একটি বাদে সুপার ফোরের বাকি সব ম্যাচ আর ফাইনালও অনুষ্ঠিত হয় দ্বীপ দেশটিতে।
ভারত নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় হাইব্রিড মডেলে এশিয়া কাপ আয়োজনের প্রস্তাব আসে পাকিস্তানের কাছ থেকেই। এর আগে ভারত দল পাকিস্তানে না গেলে পাকিস্তানও ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে না বলে হুমকি দিয়েছিল পিসিবি। যদিও নিজেদের সেই সিদ্ধান্ত থেকে পরে সরে আসে তারা।
বিশ্বকাপের আগে আগামী শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নামবে পাকিস্তান। তিনদিন পর তাদের আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে বাবরদের প্রথম ম্যাচ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। আগামী ৬ অক্টোবর হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।
বিশ্বকাপ যত এগিয়ে আসছে, বাংলাদেশে বিশ্বকাপ নিয়ে নাটক ততই জমে উঠেছে। একদিন পর দল বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়বে, অথচ এখনো ঘোষণা হয়নি বিশ্বকাপের দল।
এমন অবস্থায় সোমবার মাঝরাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় বৈঠকে বসেছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
বিকেলে বিসিবি সভাপতির পেশাগত কার্যালয়, বেক্সিমকোতে নির্বাচক কমিটির সদস্যসহ বিসিবির বেশ কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি। তারপর সন্ধ্যার দিকে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবী করা হয় সাকিব ও তামিম ইকবালের ভেতর নতুন দ্বন্দের খবর।
গণমাধ্যমগুলোর দাবী, তামিম ইকবাল জানিয়েছেন বিশ্বকাপে তিনি পাঁচটি ম্যাচে খেলতে পারবেন। অন্যদিকে তামিমের এই দাবী মানলে বিশ্বকাপে না খেলার হুমকি দিয়ে রাখেন সাকিব।
২০১৯ বিশ্বকাপে চোটজর্জর মাশরাফী বিন মর্তুজা দলে থাকায় এবং সবগুলো ম্যাচে খেলায় অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পরও দলকে বিশ্বকাপে অষ্টম হতে দেখেছেন সাকিব, তাই এই শর্তে তার নেতৃত্বে না থাকার আশংকাই প্রবল। এই দুই জনকে সমঝোতা করার জন্য মাশরাফীকে পাপন দায়িত্ব দিয়েছেন এমন একটা খবরই দাবী করা হয়। যদিও এসবের পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ধোঁয়া থাকলে আগুন থাকবেই। তাই মধ্যরাতে, পৌনে ১২টায় সাকিবের বিসিবি সভাপতির বাসভবনে ছুটে যাওয়া আর সিডনি থেকে বাংলাদেশে পা রাখার ঘণ্টা তিনেকের মাথায় তাকে গুলশানের আইভি লেগেসিতে ছুটে আসতে দেখার মাধ্যমেই বোঝা যায়, চূড়ান্ত দল ঘোষণার আগে শেষ মুহূর্তে কোনো মারপ্যাঁচ লেগেছে।
প্রায় ৩ মাস পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে তামিম খেলেছিলেন ৪৪ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে আবার তিনি বিশ্রামে, যেটা বিসিবির মেডিক্যাল বিভাগেরই সুপারিশে।
তাই বিশ্বকাপে তামিম কতটা ফিট হয়ে খেলতে পারবেন, আদৌ খেলতে পারবেন কি না এসব নিয়েই হয়তো হয়েছে শেষ মুহুর্তে মধ্যরাতের আলোচনা।
অধিনায়ক, কোচ আর বিসিবি প্রধান মিলে মিনিট চল্লিশেক বৈঠক করেছেন। আগে বের হয়েছেন হাথুরুসিংহে, তার মিনিট দশেক পর সাকিব। কেউই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি, গাড়ির কাঁচটাও নামাননি। আর পাপনের বাসায় যখন এসব চলছে, তখন এক বন্ধুর সঙ্গে বাসায় বসে চাউমিন খাচ্ছেন তামিম!
সাকিব-তামিম একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলেন না, এই খবর পুরাতন। শোনা গেছে সম্প্রতি একটি মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপণের কাজে দুজনের ভেতর সম্পর্কে তিক্ততা বেড়েছে। তামিমের খেলা, না খেলা এসব নিয়েও জলঘোলা হওয়ার কারণেই নাকি সাকিবের বিরক্তি বেড়েছে।
তবে দুজনের কারো কাছ থেকেই এসব নিয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তামিম অধিনায়ক থাকা অবস্থায় ইংল্যান্ড সিরিজের আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন 'নাথিং এলস ম্যাটার্স'। সাকিবও স্বভাবসুলভ ভাবেই পাশ কাটিয়ে গেছেন এসব প্রসঙ্গ।
দল ঘোষণার আগের দিনে, মাঝরাতে বিসিবি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে কোচ ও অধিনায়কের বৈঠক হতে পারে শেষ মুহূর্তের বোঝাপড়া। যেহেতু একদিন বাদেই উড়াল দিতে হবে। অথবা তামিম সংক্রান্ত ব্যপারে চূড়ান্ত ফয়সালা। উত্তরটা পেতে অপেক্ষা মাত্র কয়েক ঘণ্টার।
বাংলাদেশে ফৌজদারি অপরাধে আইনের যে ধারায় শাস্তি দেওয়ার হয়, দণ্ডবিধি বা পেনাল কোড নামে আইনটি ১৬৩ বছরের পুরনো। বিচারের দিক-নির্দেশক হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধি (দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর বা সিআরপিসি) নামে পদ্ধতিগত আইনটিও ১২৫ বছর আগের তৈরি। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) সাক্ষ্য আইন (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট)। ব্রিটিশ আমলে তখনকার প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতিতে তৈরি এ আইনগুলোর কাঠামো নিয়ে আপত্তি না থাকলেও আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ মানুষের প্রশ্ন আছে সময়, পরিস্থিতি ও প্রয়োজনে আইনগুলোর সংস্কার এবং যুগোপযোগী না করা নিয়ে। বাংলাদেশসহ এ উপমহাদেশে ৭৬ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়েছে। আইনের সংস্কার নিয়ে বছরের পর বছর দাবি উঠেছে জোরেশোরে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসব আইনের আলোকে, অনেক বিশেষ আইন হয়েছে। সেগুলোর অনেক ধারাতেও অসংগতি ও অস্পষ্টতার বিষয়টি নানা সময়ে আলোচনায় এসেছে। কিন্তু সংস্কারের বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত।
১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত দণ্ডবিধিতে ৫১১ ধারার ৪৫৯টি শাস্তিসংক্রান্ত। এর মধ্যে আটটি ধারায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। ১৮৯৮ সালে তৈরি হওয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬৫ ধারার বেশিরভাগই বিচারের লক্ষ্যে দিকনির্দেশনা সংক্রান্ত। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) ও ১৬৬টি ধারা সংবলিত সাক্ষ্য আইনে (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট) ধর্ষণের শিকার নারীদের জন্য অবমাননাকর একটি ধারা গত বছর নভেম্বরে বাতিলসহ এ আইনে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ আমলে নেওয়ার সুযোগ রাখা হয় সংশোধনীতে। আইন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সাক্ষ্য আইনটিকে আরও যুগোপযোগী ও সংস্কারের অংশ হিসেবে চলতি বছরেই তারা সুপারিশসংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবেন।
আইনের সংস্কার প্রশ্নে পাঁচজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত নিয়েছে দেশ রূপান্তর। প্রায় অভিন্ন সুরে তারা বলেন, আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্য হলো ‘দশজন অপরাধী খালাস পেলেও একজন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পান’। ফলে বিচারে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং আইনের ভাষা হতে হয় সহজ ও অযান্ত্রিক। একই সঙ্গে বিচারপ্রত্যাশীর ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হয়। তাদের মতে, প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক সময়ে মানুষকে প্রজা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এর প্রভাব পড়েছে ওই সময়ে তৈরি আইনগুলোতে। যেখানে শুধু শাস্তিকেই লক্ষ্য করা হয়েছে। অন্যদিকে একশ, দেড়শ বছরে অপরাধের ধরন, ভিন্নতা, অপরাধে প্রযুক্তিগত ব্যবহারসহ বদলেছে অনেক কিছু। বিপরীতে আইনগুলোতে নগণ্য কিছু সংশোধনী ছাড়া সংস্কার হয়নি।
পুরনো আইনের সংস্কার না হওয়াকে মামলাজটের কারণ উল্লেখ করে আইনজীবীরা আরও বলেন, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, আদালতের সময়সহ বিচারপ্রত্যাশীর অর্থ ও সময় সাশ্রয়, অপরাধীর পুনর্বাসন, সংশোধন ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তেমন কিছুই নেই আইনগুলোতে। অন্যদিকে আইনের অপপ্রয়োগ কিংবা দুর্বলতায় প্রায়ই নির্দোষ ব্যক্তিকে নির্যাতন, জেলে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের জন্য আইন। কিন্তু ব্রিটিশরা কর্তৃত্ব ও নিপীড়নমূলক অনেক আইন করেছে মানুষকে শোষণ, শাসন ও লুণ্ঠন করতে। তখন তো আর নাগরিক ও মানবাধিকার নিয়ে এত কথা হতো না। তাদের লক্ষ্যই ছিল কথায় কথায় স্বাধীনতাকামীদের বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া। তিনি বলেন, ‘এখন তো আমরা ব্রিটিশদের উপনিবেশে নেই। কিন্তু ৫৪ (বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার) ১৬৭ ধারার (রিমান্ড) মতো নিপীড়নমূলক আইনগুলোসহ আরও অনেক কিছু রয়ে গেছে। ১৯৭২ সালে মাত্র কয়েক দিনে একটি ভালো সংবিধান হলে এখন মানুষের জন্য যুগোপযোগী আইন কেন হবে না?’
সম্প্রতি ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নিয়োগ পাওয়ার পরদিন গত ১৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি মামলাজটকে তার প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ লক্ষ্যে আইনের সংস্কার বড় বিষয় উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মানুষের দুর্গতি ও কষ্ট লাঘবে সরকার নিশ্চয়ই এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবে।’ নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।
আইন সাময়িকী ও ডিএলআরের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি যথার্থই বলেছেন। আমরাও আইনের সংস্কার চাই। শুধু ফৌজদারি কিংবা দণ্ডবিধি নয়, এসব আইনের আলোকে আর্থিক অপরাধ, মানি লন্ডারিংসহ এমন কিছু আইন আছে যেগুলোর অনেক কিছুর সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।’
কিছুদিন আগে ভারত সরকার ব্রিটিশদের তৈরি ফৌজদারি আইন ব্যাপক সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে।
সংস্কারের রূপরেখা আলোর মুখ দেখেনি : পুরনো ফৌজদারি আইনের সংস্কার নিয়ে ২০১১ সালে একটি রূপরেখা তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রতিবেদন দিয়েছিল আইন কমিশন। এতে আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্যটিকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থান করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একজন নির্দোষ ব্যক্তি যাতে সাজা না পায় এবং একজন অপরাধীও যাতে খালাস না পায়।’ আইনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে প্রশ্নের অবতারণা করে সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানে ৩৩টি সুপারিশ করে কমিশন। এর মধ্যে তদন্ত ও বিচারের ত্রুটি কাটাতে ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত করতে স্থায়ী, পেশাদার ও দক্ষ পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য শুধু হাতেকলমে না লিখে টেপ রেকর্ডার, ভিডিওতে রাখা, ১৬৪ ধারায় আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সঙ্গে সাক্ষীর বক্তব্য রেকর্ড করা, মিথ্যা ও তুচ্ছ অভিযোগকারীকে জরিমানা, ক্ষতিপূরণ বা কারাদণ্ড দিতে ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি দায়রা জজকেও ক্ষমতা দেওয়া, বিচারকাজের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে মুলতবির সময় সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া, মামলার কার্যক্রম স্থগিতের সময়সীমা ৩০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের তাগিদ দেয় কমিশন। এ ছাড়া কারাগারের চাপ কমানো এবং আসামিকে সংশোধনের লক্ষ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও অভিযোগ গঠনের সময় দোষ স্বীকার করলে সাজা রেয়াত দেওয়া, যুক্তিতর্কের কারণে মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ায় তা লিখিত আকারে জমা দেওয়া, আদালতের সংখ্যা অনুপাতে আপিল আদালত প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে কমিশন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কমিশনের ওই সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি।
কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোর্শেদ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতিবেদন দেওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে কমিশন অবহিত নয়।
দণ্ডবিধির অনেক ধারার অসংগতি ও অস্পষ্টতা নিয়ে আইন ও বিচার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই আইনে অনেক কিছুই আছে। কিন্তু গণপিটুনিতে মৃত্যু, অর্থনৈতিক অপরাধের মতো আরও কিছু বিষয়ে আইনে কিছু নেই। অন্যদিকে পুরনো এ আইনে এখনো ১০ টাকা, ১০০ টাকা ও ২০০ টাকার মতো অর্থদণ্ডের বিধান রয়ে গেছে। জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার তিনজন (একজন অবসরে) বিচারক এসব আইনে তাদের বিচারিক অভিজ্ঞতার বিষয়টি দেশ রূপান্তরের কাছে তুলে ধরেন। সংগতকারণে তারা তাদের নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানান। একজন বিচারক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রসিকিউশনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সমন্বয়ে একটি ফৌজদারি মামলার বিচার কার্যক্রম হয়। কিন্তু বিচারের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে শুধু বিচার বিভাগকে শুনতে হয়। পুরনো আইনগুলোতে এমন অনেক কিছু আছে, যা একটু আধুনিক হলে বিচারকাজে আরও গতিশীল হবে।’ অন্য একজন বিচারক বলেন, ‘বিচারকাজের সময় টাইম (আদালত ও বিচারপ্রার্থীর সময়), কস্ট (বিচারপ্রার্থীর খরছ) এবং ভিজিট (বিচারপ্রত্যাশীর আদালতে আসা-যাওয়া) এ তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আইনগুলোতে এসব বিষয়ে স্পষ্ট কিছু দিকনির্দেশনা নেই। সংগতকারণে বিচারপ্রার্থীর প্রতি সিমপ্যাথি (সহানুভূতি) ও ইমপ্যাথি (সহানুভূতির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু করা) থাকা সমীচীন।’
আইন সংস্কারের উদ্যোগ থমকে দুই বছর ধরে : ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফৌজদারি আইন সংস্কার ও আইনটি বাংলা ভাষায় প্রণয়ন করতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হককে নির্দেশ দেন। দুদিন পর ফৌজদারি আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন করে আইনটি যুগোপযোগী, আধুনিক ও বাংলা ভাষায় প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে চেয়ারপারসন করা হয় মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবিরকে। কমিটিকে অন্যান্য দেশের আইন বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করে সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের ওয়াকিবহাল একটি সূত্রের তথ্য বলছে, দুই বছর পার হলেও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই।
এ বিষয়ে জানতে সচিব ময়নুল কবিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল ধরেননি। সার্বিক বিষয়ে জানতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তার সাড়া মেলেনি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এএম আমিন উদ্দিন মনে করেন, পুরনো আইনগুলোর আমূল পরিবর্তন কিংবা পুরো সংস্কার নয়, যতটুকু করলে বিচারপ্রার্থীর দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে সেটি হতে পারে। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আইনগুলোর প্রসিডিউরে (কার্যপ্রণালি) তেমন ভুল নেই। যেসব ক্ষেত্রে অসংগতি বা অস্পষ্টতা আছে শুধু সেগুলোই আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে অংশীজন হিসেবে অন্যদের সঙ্গে অবশ্যই আইনজীবীদের সম্পৃক্ত রাখা উচিত।’
দৈনিক ডজনখানেক করে এ বছর ডেঙ্গুতে হাজারের কাছাকাছি মৃত্যুর তেমন নিউজ ভ্যালু নেই। বৃষ্টির জলাবদ্ধতায় আটকে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে ৪ জনের মৃত্যুও তেমন সংবাদ নয়। এ জন্য সিটি করপোরেশনও দায়ী নয়, জানিয়েছেন দুই ঢাকার এক মেয়র। যেখানে যে-যারা মরে তারাই দায়ী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হাতে বেদম পিটুনিতে মরণের কাছাকাছি পৌঁছা সাংবাদিকও দায়ী এ মার খাওয়ার জন্য। তিনি যান কেন ছাত্রলীগের সোনার টুকরাদের মারামারির খবর সংগ্রহে? খেয়েদেয়ে আর কাজ নেই তার? নারী মন্ত্রীর নদী খেয়ে ফেলাও নিউজের মধ্যে পড়ে না। জানলে হয় তো এত অবাক-বিস্মিত হতেন না জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।
দুই পুলিশ কনস্টেবলসহ কয়েক ধরিবাজ মিলে পল্টনে একটি বেসরকারি ব্যাংকে ঢুকে ২০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া তো খবরের মধ্যেই পড়ে না। আলুর কেজি ৫০ টাকাও খবর নয়। তাহলে খবর বা সংবাদ কোনটি? কোনটি নয়? খাস খবর শুধু মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা। এ খবরের একচেটিয়া রাজত্বে বাংলাদেশের বাদবাকি সব ঘটনা বেখবরের খেরোখাতায়। মূলধারার পত্রপত্রিকায় ব্যাকপেজ বা ইনার পেজে। টেলিভিশনে সেকেন্ড পার্টে। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় তো কথাই নেই। ভিসানীতিতে কার কার নাম আছে এসবের স্বরচিত তালিকা ঘুরছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র কখনোই তালিকা প্রকাশ বা প্রচার করে না। বড় জোর জি টু জি (সরকার থেকে সরকার) সারসংক্ষেপ পাঠায়। সেটাও টপ মোস্টে, শীর্ষ পর্যায়ে। সব মন্ত্রীর পক্ষেও জানা অসম্ভব। কিন্তু, মন্ত্রীরা সমানে যাচ্ছেতাই বলে চলছেন। এসব ভিসা রেস্ট্রিকশন-স্যাংশনে তারা কেয়ার করেন না। এ নিয়ে মনে ভয় নেই, মাথায় ব্যথা নেই। কত যে কথা। আবার ভিসানীতিতে বিরোধী দলই আক্রান্ত হবে বলে সুর আছে। আর বিরোধী দল মানে বিএনপি, জাতীয় পার্টি নয়। বিএনপি যে নির্বাচন বয়কট করেছে, এখন প্রতিহতের কথা বলছে। অতএব তারা নির্বাচনবিরোধী। যুক্তরাষ্ট্র তো নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধেই ভিসানীতি দেবে। কথার কী ফের! যুক্তির কী বাঙালিপনা!
হাল পরিস্থিতিতে বিএনপির মধ্যে একটি উৎসব আমেজ। টানা ১৫ বছর আন্দোলন-সংগ্রামের বরকত দেখছে তারা। এই পুলক ধরে রাখতে পারছেন না দলটির নেতাকর্মীরা। উইন-উইন ভাব তাদের টপ টু বটম। নির্বাচনের আগেই ক্ষমতায় এসে যাওয়ার মতো মনমর্জি কারও কারও। প্রধানমন্ত্রীর নিউ ইয়র্ক সফরকালে জাতিসংঘের অধিবেশনের বাইরে প্রসেশন করেছে বীরবিক্রমে। সেখানকার ভিডিও ফুটেজে পাকিস্তানি পতাকাও দেখা গেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এটির বেশ প্রচারণা। বলার চেষ্টা করা হচ্ছে, বিএনপি যে পাকিস্তানপন্থি বা পাকিস্তানি ঘরানার দল এটি তার প্রমাণ। বিএনপির সেখানকার নেতাকর্মীদের যুক্তি হচ্ছে, পতাকাটি তাদের কারও হাতে ছিল না। সেখানে স্ট্যান্ডে আগে থেকেই টানানো ছিল এটি।
ছাই দিয়ে বা সাঁড়াশি ধরে ধরা বলতে বাংলাদেশে একটি রূপক কথা আছে। বলার কোনো অপেক্ষা রাখে না যুক্তরাষ্ট্রের সেই ধরায় পড়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের গণতন্ত্রের একটি রসায়ন চলমান বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশে রয়েছে প্রতিবেশী ভারতীয় গণতন্ত্রের কিছু মিশেলও। আবার মিনিমাম ডেমোক্রেসি, ম্যাক্সিমাম ডেভেলপমেন্ট তত্ত্ব বিশ্বের অনেক দেশেই লুফে নিয়েছে। বাংলাদেশেও এর একটা ছাপ স্পষ্ট। নির্বাচন প্রশ্নে একটা অপূর্ণতা থেকে যাওয়ায় বেধেছে গোলমালটা। নির্বাচন গণতন্ত্রের একটি বৈশিষ্ট্য। আবার নির্বাচনই গণতন্ত্রের একমাত্র বৈশিষ্ট্য নয়। গণতান্ত্রিক অন্যান্য চর্চা ছাড়া কেবল নির্বাচনে গণতন্ত্র নিশ্চিত হওয়ার নজির দুনিয়ার কোথাও নেই। পরমতসহিষ্ণুতা, ভিন্নমতকে গ্রাহ্য করা, সাম্য, অসাম্প্রদায়িক সমাজ, সম্পদের সুষম বণ্টন, পররাষ্ট্রনীতিতে অভিন্নতাও গণতন্ত্রের উপাদান। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের হাঁটাচলা মূলত নব্বই সাল থেকে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ক্রমাগত কর্র্তৃত্ববাদী শাসনের পর ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের দুয়ার খোলে মাত্র। যে মাত্রায় এর প্রসার ঘটা কাম্য ছিল তা হয়নি।
২০১৪ এবং ১৮-তে পর পর দুটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন না হলে এ পরিস্থিতি হতো না। সেইক্ষেত্রে বিএনপিসহ তাদের ঘরানার কয়েকটি দল এক অর্থে সফল। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি তারা দেশের গণতন্ত্রকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে কামিয়াবি হয়েছে। সেটার জের এখন চলমান। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন, পরে রেস্ট্রিকশন বা ভিসানীতি। এরপর বিদেশি আরও বিভিন্ন শক্তির বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে অতি আগ্রহী হয়ে ওঠা। যা আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি করেছে। পয়েন্ট অব নো রিটার্নে চলে যাচ্ছে দেশের প্রধান দুদল আওয়ামী লীগ-বিএনপি। এটি গণতন্ত্র-উন্নয়ন উভয়ের জন্যই কুলক্ষণ। স্বাভাবিক জীবন-জীবিকার জন্য অশনি সংকেত। তা কেবল সরকারকেই বিপদে ফেলবে না। বিরোধী দলসহ অন্যদেরও শেষতক স্বস্তি দেবে না। তাৎক্ষণিকতায় মহলবিশেষ এতে পুলকিত হলেও একটা সময় নিজেদের গলায়ও আটকে যাবে কাঁটাটা। এ কাঁটা খুলতেও ভোগান্তি সইতে হবে। নিষেধাজ্ঞা আরোপকারীরাও কি এতে দীর্ঘ মেয়াদে কামিয়াবি হয়? মোটেই না। সেই দৃষ্টান্ত দুনিয়াতে নেই।
ঠিক ফ্যাশন নয়, অনেকটা কৌশলের মতো গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতির প্রিয় বস্তু হয়ে গেছে স্যাংশন আর রেস্ট্রিকশন। একটির নাম নিষেধাজ্ঞা। আরেকটা ভিসানীতি। দুটোই তাদের অ্যাকশন। দুই অ্যাকশনের ধাঁচে কিছুটা ভিন্নতা। নিষেধাজ্ঞা বা ভিসানীতি আরোপের কারণ হিসেবে সামনে নিয়ে আসে কোনো দেশের আগ্রাসন প্রতিরোধ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানবাধিকার সুরক্ষা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, নিরস্ত্রীকরণ, যুদ্ধরত দেশগুলোকে শান্তি আলোচনায় আনার মতো বিষয়কে। ইউক্রেনে আক্রমণের পর রাশিয়ার ওপর বা জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞার জের গোটা বিশ্ব দেখছে। দেশ দুটি ‘দুষ্টু ছেলে’ মিয়ানমার, কিউবা, ইরান, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া ও ভেনেজুয়েলাদের দলে ভিড়েছে। এরা যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী বেশির ভাগ বাণিজ্যিক ও আর্থিক খাতে এই দেশগুলোর সঙ্গে লেনদেন করা যাবে না। আফগানিস্তান, বেলারুশ, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, ইরাক, লেবানন, লিবিয়া, মালি, নিকারাগুয়া, সুদান এবং ইয়েমেনের মতো অতিরিক্ত আরও ১৭টি দেশের সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আছে। মানে ওই সব প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি এবং ক্ষেত্রবিশেষে সরকারের সঙ্গে আর্থিক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ যুক্তরাষ্ট্রের আইনে নিষেধ। যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের প্রতিবেদন বলছে- ২০২১ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ৯ হাজার ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং কিছু খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ওই বছরই বাইডেন প্রশাসন বিশ্বব্যাপী আরও ৭৬৫টি নতুন নিষেধাজ্ঞা দেয়, যার ১৭৩টি ছিল মানবাধিকার ইস্যুতে। কোনো না কোনো কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়া দেশগুলো বৈশ্বিক উৎপাদনে তাদের অবদান প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। এই উৎপাদনের ৮০ ভাগের দাবিদার আবার চীন। নিষেধাজ্ঞায় পড়া দেশ ও সরকারগুলো যার যার প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো তালাশ করে। নিষেধাজ্ঞার ব্যথা চেপে রেখে তারা ডলার এবং পশ্চিমা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জেদ করে। এতে তিক্ততা বাড়ে, অনাকাক্সিক্ষত কথার কচলানিতে ক্ষত তৈরি হয়।
নিষেধাজ্ঞার ঘোষিত উদ্দেশ্যকে মহৎ-মধুর করে শোনানো হলেও এর অঘোষিত তথা আসল উদ্দেশ্য ভূরাজনৈতিক স্বার্থ। সেই শিকার এখন বাংলাদেশ। সাবজেক্ট দেশ না সরকার সেটিও প্রশ্ন। প্রেক্ষিতের মধ্যে এর কিছু জবাব আছে। প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালেই ভাইটাল সাবজেক্ট হয়ে গেছে ভিসা রেস্ট্রিকশনটি। জবাবটা দেওয়া হয়েছে ঝাঁঝালো ভাষায়। ‘প্রয়োজনে বাংলাদেশও স্যাংশন দিয়ে দেবে’ ধরনের আক্রমণ। তা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাকেও ক্ষণে সবজেক্ট-ক্ষণে অবজেক্টের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে প্রসঙ্গ ছাড়াই। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের আইনে কোনো ব্যক্তির ভিসা প্রত্যাখ্যানসহ ভিসার রেকর্ড গোপনীয়। মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু স্পষ্ট জানিয়েছেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যক্তিদের নাম তারা কখনো প্রকাশ করেন না। কিন্তু, বাংলাদেশে সমানে নামধাম প্রকাশনা উৎসব চলছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির মুখপাত্র ফারুক হোসেন জানিয়ে বসেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের ওপর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ হয়েছে। পরক্ষেণই ‘তবে’ যুক্ত করে বলছেন, তবে তাদের কোনো তালিকা পাওয়া যায়নি। এ ভিসানীতির কোনো প্রভাব পুলিশ বাহিনীর ওপর পড়বে না বলে মনে করেন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। এ ধরনের কথার পণ্ডিতিতে তারা প্রকারান্তরে রেস্ট্রিকশন বা স্যাংশন খাওয়াদের ফর্দ দিয়ে দিচ্ছেন। তাদের এত কথা বলতে কে বলেছেন? তেলাপোকার ডিম ফাটিয়ে ডায়নোসর বের করতে বলেছেন কেউ? তারা কাকে নাড়তে গিয়ে কাকে নাড়ছেন? কী বিচিত্র রোল মডেল গড়ছেন। বিচিত্র তাদের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা!
এর মধ্যে আবার ক্ষমতাসীনদের স্তাবক কতক সাংবাদিকও ভিসা রেস্ট্রিকশনে পড়েছেন বলেও খবর চাউর হয়েছে। খবরটিতে বলা হচ্ছে, যেসব লেখক-সাংবাদিক নিরপেক্ষ ভোটের সাফাই গেয়েছেন তাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আসছে। কীসের মধ্যে কী? কোনটা উদ্দেশ্য, কোনটা বিধেয়? কারও পাঞ্জাবি ধরে টান দিয়ে কারও লুঙ্গি খোলার আয়োজন নয় তো? অবস্থাটা এমন দিকে গড়াচ্ছে কে বা কারা ভিসানীতিতে পড়েছেন, এর চেয়ে কে বা কারা না পড়ছেন? প্রশ্নটি সাবজেক্ট হয়ে যায় কি-না কে জানে! পাড়া-মহল্লার আতিপাতির ভিসা রিজেক্ট হলে যদি সগর্বে বলে ওঠে, ‘চিনোস ব্যাটা আমারে? আমেরিকার ভিসা রিজেক্ট লিস্টে আছি।’ এই শ্রেণিটি নামের আগে বিশেষণ হিসেবে ‘আমেরিকার স্যাংশনপ্রাপ্ত ত্যাগী নেতা’ লিখে পোস্টার, ব্যানার টানালেও কি অবাক হওয়া যাবে?
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট
২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনকেন্দ্রিক সক্রিয় অবস্থানের পর দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের বড় কোনো কর্মসূচি নেই। কর্মসূচি পালন করতে চাইলেও ছাত্রলীগের হামলার মুখে দাঁড়াতেই পারছেন না সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাসের আশপাশে ছোটখাটো ঝটিকা মিছিল করেই সারছে দলীয় কর্মসূচি। তবে বিএনপির এক দফা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আবারও ক্যাম্পাসে সরব হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
জানা যায়, ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন উপদলে ভাগ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত আড্ডা এবং কর্মী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। আগামীতে ঢাবি ছাত্রদলের নেতৃত্বপ্রত্যাশী নেতারা এসব কর্মকা- পরিচালনা করছেন বলে জানা যায়। আড্ডা দিতে গিয়ে শনিবার রাতে ছাত্রলীগের হামলার শিকারও হন কয়েক জন ছাত্রদল নেতা। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সক্রিয় দেখা যাচ্ছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। ‘আমরা দ্রুত ফিরছি, মাত্র কয়দিনের অপেক্ষা’ লিখে স্ট্যাটাস দিতে দেখা যায় তাদের।
এদিকে রবিবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের দেয়ালে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ সে্লাগান লিখে আলোচনা তৈরি করে ঢাবি ছাত্রদল। ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান খন্দকার অনিকের নেতৃত্বে মধুর ক্যানটিন ছাড়াও ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া, কলা ভবনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়ালে ২০টির বেশি দেয়াল লিখন করেছে তারা। এসব দেয়ালে ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’, ‘ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে আসবে ফিরে বাংলাদেশে’ সে্লাগান লেখা হয়। যদিও এদিন দুপুরের দিকে মধুর ক্যানটিনের লেখা মুছে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ঢাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশব্যাপী বিএনপির লংমার্চ শেষে অক্টোবরে ঢাকাকেন্দ্রিক টানা আন্দোলন চলবে। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও পুরোদমে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ছাত্রদল। যত বাধাই আসুক ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কর্মসূচি ও আন্দোলন করতে চান তারা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত স্যাংশন ও বিএনপির সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি চূড়ান্ত রূপ লাভের অপেক্ষা থাকায় নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বলে দাবি ছাত্রদলের নেতাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। অক্টোবরে তা চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আপাতত বিভিন্ন ভাগ হয়ে হয়ে আড্ডা, দেয়াল লিখনসহ নানান কর্মসূচি চলছে। নতুন শিক্ষার্থীরাও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের বিনাশ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। দেশনায়ক তারেক রহমানের চূড়ান্ত নির্দেশের অপেক্ষায় আছি আমরা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গতকালও ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমরা হামলার জবাব হামলা দিয়ে নয়, কাজের মাধ্যমে জবাব দিতে চাই। সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিনাশ করতে চাই। ক্যাম্পাস কারও একার সম্পত্তি নয়, যেকোনো সময় আমরা আসব। শুধু সময়ের অপেক্ষা। আমরা দেশনায়ক তারেক রহমানের আগমনী বার্তা দিতে চাই।’
ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেহেতু সামনে নির্বাচন, নির্বাচনকেন্দ্রিক আমাদের কর্মসূচি চলছে। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দিতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসব। আমরা খুব দ্রুতই আসব। হাইকমান্ডের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল প্রস্তুত আছি। ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে, দাবি আদায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে অচিরেই ক্যাম্পাস থেকে আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে আমরা বিজয় নিয়েই ঘরে ফিরব ইনশা আল্লাহ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ক্যাম্পাস থেকে হারিয়ে যায়নি। হামলা-মামলার শিকার হয়েও আমরা নিয়মিত পদচারণা অব্যাহত রেখেছি। আগামীতেও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এই ক্যাম্পাসে সরব অবস্থানে থাকবে। ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের অবসান ঘটবে শিগগিরই। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেলে আমরা চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাব। আমরা প্রস্তুত ইনশা আল্লাহ।’
এদিকে ক্যাম্পাস দখল ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করলে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোররাতে এসে কেউ যদি দেয়াল লিখন করে, এটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলে আমরা মনে করি না। আদালত কর্তৃক ঘোষিত অপরাধীকে তারা দেশনায়ক বলছে, তাদের কর্মকাণ্ড দ্বারা বোঝা যায় তারা কতটা অথর্ব। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার একটি কেন্দ্র, এখানে দখলদারিত্বের কোনো বিষয় নেই। যেটি ছাত্রদল বলার চেষ্টা করছে দখল করবে, এই চিন্তা-ভাবনা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক যায় না। এসবে আমরা বিশ্বাস করি না। শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যা যা করার দরকার, আমরা তা করতে রাজি আছি। ক্যাম্পাসকে কেউ অস্থিতিশীল করতে চাইলে তা প্রতিহত করা হবে।’
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’