
প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিলে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপজেলার পেরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন ইউপি সদস্য বাবুল গাজী, ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি শাহ পরান, নাঈম, শরীফ, রাকিব ভূঁইয়া, আরিফ, রহমত উল্লাহ রাহাত, সোহরাব, শাহবউদ্দিন, আরাফাত, বেলায়েত হোসেন, আবু মুছা ও ফরহাদ।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, নাঙ্গলকোট উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম রুবেলের নেতৃত্বে পেরিয়া
ইউপিতে চলমান বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে একটি আনন্দ মিছিলের আয়োজন করেন ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি শাহ পরান।
অন্যদিকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগকর্মী রহমত উল্লাহ রাহাতের নেতৃত্বে দেশব্যাপী বিএনপি ও জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে পেরিয়া বাজারে আরেকটি মিছিল বের হয়। পরে দুপক্ষের মিছিল ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এলে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় তারা দেশীয় অস্ত্র রামদা ও হকিস্টিক নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে দুপক্ষের অন্তত ১৩ জন আহত হয়। আহতদের উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি শাহ পরান বলেন, ‘চলতি বছর ১৪ এপ্রিল এই ইউপির ছাত্রলীগের সভাপতি দায়িত্ব পাই। অর্থমন্ত্রীর বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করাকে কেন্দ্র করে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন মজুমদারের ইন্ধনে রাহাত, আবু মুছা, বেলায়েত হোসেন মিয়াজির নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে আমাদের মিছিলের ওপর হামলা চালায়। এতে আমিসহ আমাদের পাঁচ-ছয় কর্মী আহত হয়।’
ইউনিয়ন ছাত্রলীগকর্মী রহমত উল্লাহ রাহাত বলেন, ‘উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম রুবেল বহিরাগত সন্ত্রাসীদের এনে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সজ্জিত হয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমিসহ আমাদের আট-নয়জন কর্মী আহত হয়। তারা ইউপি সদস্য বাবুল গাজীকেও কুপিয়ে আহত করে।’
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য বাবুল গাজী বলেন, ‘উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম রুবেল পিস্তল হাতে নিয়ে আমাদের গ্রামের ছাত্রলীগ কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। ঘটনাটি শোনার পরপর ঘটনাস্থলে গেলে তারা আমাকে চায়নিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে আহত করে।’
এ বিষয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আনন্দ মিছিলের আয়োজনে আমি প্রধান অতিথি ছিলাম। মিছিল শুরু হওয়ার আগমুহূর্তে কিছু ছাত্রলীগ কর্মীর আরেকটি মিছিল এসে অতর্কিত হামলা চালায়। এ ইউনিয়ন সভাপতি শাহ পরান ও জাকারিয়া ইসলাম পরাগকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগ কমিটি আমরাই অনুমোদন দিয়েছি; যা তারা মানতে রাজি নয়।’
নাঙ্গলকোট থানার এসআই (উপপরিদর্শক) রিয়াদ হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০২৩-২৪ অর্থবছর একটি চ্যালেঞ্জিং বছর। দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। বৈশি^ক অস্থিরতা ও অভ্যন্তরীণ চাপে অর্থনীতির ভঙ্গুর দশা। এ কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ সামলানো প্রায় অসম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে উচ্চাকাক্সক্ষী বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব নয়।
গতকাল শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এ কথা বলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, ‘এ কঠিন সময়ে কঠিন কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল, যা নেওয়া হয়নি। প্রবাস-আয় নিম্নমুখী। বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রাও উচ্চাকাক্সক্ষী। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভও নিম্নমুখী। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা গেছে। ফলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।’
বাজেট-ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে যে ঋণের কথা বলা হয়েছে, তা মূল্যস্ফীতি বাড়াবে বলে মনে করছে সিপিডি, যদিও অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে নামানোর কথা বলেছেন।
কারও আয় করমুক্ত সীমার নিচে হলেও সরকারি ৩৮টি সেবা নিতে টিআইএনের বিপরীতে তার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা কর নেওয়ার বিধান বৈষম্যমূলক মনে করছে সিপিডি।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, “অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আগামী অর্থবছরের বাজেট ‘সময়োপযোগী নয়’; অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আরও অনেক উদ্যোগ নিতে পারতেন মন্ত্রী।” তিনি বলেন, ‘জিডিপি ও বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যে ধরনের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে, তাতে যেসব অনুমিতি বা অর্থনীতির সূচক ধরা হয়েছে, গত বছরের সঙ্গে তুলনা করে মনে হয়েছে, এসব সূচক বাস্তবসম্মত নয়।’
সংস্থার সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ আয় না বাড়লে সরকারের ব্যাংক ঋণনির্ভরতা বাড়বে। কাঠামোগত, অনুমিতিগত দুর্বলতার কারণে বাজেট বাস্তবায়নে আবারও আমরা নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হব। আর্থিক খাতের সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে একটা ব্যাংকিং কমিশনের কথা বলছি। ২০০৯ সালে ঋণখেলাপি ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। এখন ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। এটা কেন হচ্ছে, কারা করছেন? এ নিয়ে কারও চিন্তা নেই।’
এ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ‘ব্যাংক কমিশন গঠন করা জরুরি। খুব বেশি ঋণখেলাপ হচ্ছে। খেলাপ কারা করছে, কেন করছে জানার জন্যই ব্যাংক কমিশন দরকার। ঋণখেলাপের কারণে করদাতাদের ওপর চাপ বাড়ছে, ব্যাংকিং খাতে অনেক সমস্যা হচ্ছে।’
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অনুমিতিগুলো দুর্বল, আগেও আমরা দেখেছি সংকটের মূল কারণগুলো অনুধাবন না করে বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। এজন্য শেষ পর্যন্ত অনুমিতিগুলো সত্য হয় না। বাস্তবতাকে বিবেচনায় না নিয়ে আকাক্সক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে বাজেট করলে এমন অবস্থাই হয়।’
তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি ভালোই চলছিল। হঠাৎ বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকট তৈরি হওয়ায় সেসবকে বিবেচনায় না নিয়েই গত বছর বাজেট করা হয়েছে। ফলে বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তৈরি হলো। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের সময় অভিঘাতগুলো স্পষ্ট থাকলেও সাড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছিল, মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হয়েছিল, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়নে স্থির থাকবে ভাবা হয়েছিল, ডলার এক্সচেঞ্জ রেট ৮৬ টাকা থেকে পরিবর্তিত হবে না ধারণা করা হয়েছিল।’
সিপিডির এ বিশেষ ফেলো বলেন, ‘বছরের পর বছর অনুমিতিগুলো সত্য হয় না এবং বাস্তবতার সঙ্গে মিল থাকে না। সাড়ে ৭ শতাংশের জায়গায় ৬.০৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন থেকে ২৯ বিলিয়নে নেমেছে। বিনিময়হার ৮৬ থেকে ১০৮ টাকা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৮ শতাংশ হয়েছে। বাস্তবতাকে বিবেচনা না করলে এমন অবস্থাই হয়।’
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নতুন অর্থবছরের বাজেটের মূল উদ্দেশ্যে থাকা উচিত ছিল চলমান অর্থনীতিতে যে স্থিতিশীলতার সংকট রয়েছে তা বিবেচনায় নেওয়া। প্রস্তাবিত বাজেটে বাস্তবতাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। ফলে অনেক চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে।’
তিনি বলেন, ‘উচ্চাকাক্সক্ষার এ বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় চলতি বছরের থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়াতে হবে। লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হলে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে বা এডিপি কাটছাঁট করতে হবে। তা না হলে বিদেশি ঋণ নিতে হবে।’
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘নতুন অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। গত অর্থবছরেও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছিল। পরে এটাকে নামিয়ে ৬ শতাংশ করা হয়। সরকারি বিনিয়োগের হার ৬ দশমিক ২ শতাংশ আর ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হয়েছে। ২০২৩ সালে যা ধরা হয়েছিল তার চেয়ে কম হয়েছে এখন পর্যন্ত; সেটা ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। এখান থেকে লাফ দিয়ে ২৭ শতাংশ কীভাবে হবে? মনে হচ্ছে এটা উচ্চাকাক্সক্ষা।’
ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ ১৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। এ বছরের ঋণ প্রবাহ যেটা ধরা হয়েছে, সেটা গত বছরের ধরা ঋণ প্রবাহের সঙ্গে মেলে না। ব্যক্তি খাতের যে বিনিয়োগের হার ধরা হয়েছে, তা এমন ঋণ প্রবাহ দিয়ে কীভাবে বাস্তবায়িত হবে বোধগম্য নয়।’
ফাহমিদা বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও কঠিন। আমাদের আমদানিকৃত দ্রব্যের মূল্যস্ফীতির কথা বলা হলেও বিশ্ববাজারে এখন সব পণ্যের দাম নিম্নমুখী। তাই মূল্যস্ফীতিকে এর ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না, আমাদের অভ্যন্তরীণ অনেক দুর্বলতা আছে, করকাঠামোর মধ্যে আছে, প্রাতিষ্ঠানিক ও মনিটরি পলিসির মধ্যেও দুর্বলতা আছে। মুদ্রানীতির সঙ্গে আমাদের আর্থিক নীতির যদি সমন্বয় না থাকে, তাহলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ খুবই কঠিন হবে।’
দুই হাজার টাকা কর বৈষম্যমূলক : করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করাকে ভালো বলে উল্লেখ করেন সিপিডি নির্বাহী পরিচালক। তবে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা করারোপের বিষয়টি ভালো হয়নি বলে তার মতে। তিনি বলেন, ‘কারও আয় যদি সাড়ে তিন লাখের নিচেও হয়, তাহলে সরকারি ৩৮টি সেবা নিতে টিন লাগবে। করযোগ্য আয় না থাকলেও তাকে দুই হাজার টাকা দিতে হবে। মানুষকে স্বস্তি দিতে করমুক্ত আয় বাড়িয়ে আবার যার করযোগ্য আয় নেই, তার ওপর দুই হাজার টাকার কর আরোপ করা যুক্তিযুক্ত নয়। এটা বৈষম্যমূলক। নৈতিকভাবে ঠিক নয়। এতে অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে।’
আইএমএফের পরামর্শ মেনে বাজেট করা হয়নি বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘আর্থিক খাতে সুশাসন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। আইএমএফের পরামর্শ আছে, সেটা আমরা পুরোপুরি দেখি না। তাদের সার্বিক পরামর্শ যা আছে, যা তারা বলে, সেখান থেকে যেটুকু গ্রহণ করা উচিত বলে আমরা মনে করি সেটুকু আমরা গ্রহণ করব, বাকিটা আমরা নিজেদের মতো করে নেব। সেখানে তাদের কোনো আপত্তি নেই।’
গতকাল শুক্রবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ কখনো লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হয়নি, এবারও ব্যর্থ হব না। মানুষের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে, সেই দায়বদ্ধতা নিয়েই কাজ করছি আমরা।’
আইএমএফের ঋণ নেওয়াকে নেতিবাচক হিসেবে না দেখে ইতিবাচকভাবে দেখার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে শুধু আইএমএফ না, সবাই দেখে ব্যালান্স শিট ঠিক আছে কি না, রেভিনিউ অ্যাকাউন্ট ঠিক আছে কি না, ট্রায়াল ব্যালান্স ঠিক আছে কি না, আয়-ব্যয়ের পার্থক্য ঠিক আছে কি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইএমএফের সঙ্গে যারা কাজ করে, আমি মনে করি এটা ভালো দিক এজন্য যে, তারা শুধু অর্থ দিয়ে মানে ঋণ দিয়ে সাহায্য করে না, পাশাপাশি কিছু প্রকল্পের পরামর্শও দেয়। সেগুলো কীভাবে কম সময়ে বাস্তবায়ন করা যাবে, এগুলোও তারা পরামর্শ দেয়। তাই আমি মনে করি, এসব থেকে শেখার অনেক কিছু থাকে এবং আমরা সমৃদ্ধ হই।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা আইএমএফের কাছ থেকে যে ঋণ নিয়েছি, তা আমাদের দেড় মাসের প্রবাসী আয়ের সমান। এটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।’
এ সময় আইএমএফ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বৈশি^ক সমস্যার কারণে আমরা কিছু সমস্যার মধ্যে যাচ্ছি। আইএমএফের কাছে যখন কোনো দেশ ঋণ চায় তখন তারা তাদের ম্যাক্রো ম্যানেজমেন্টকে (সামষ্টিক ব্যবস্থাপনা) মূল্যায়ন করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এসে তারা এটা এত আপডেট হিসেবে পেয়েছে, এটা দেখেই তারা খুব কম সময়ের মধ্যেই ঋণ অনুমোদন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সামষ্টিক ব্যবস্থাপনা খুব ভালোভাবে চলছে। তবে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, থাকতেই পারে। আইএমএফের ইমপ্রেশনটা হলো বাংলাদেশের সামষ্টিক ব্যবস্থাপনা ভালো আছে। কিছু ভর্তুকি যৌক্তিকভাবে দিচ্ছি। ১৯৯৬ সালে কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়া শুরু হয়েছিল।’
এনবিআরের বিশাল রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে আমরা যখন ক্ষমতা গ্রহণ করি তখন রাজস্ব আদায় ছিল ৫৯ হাজার কোটি টাকা। এ বছর তা আদায় হয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা আমাদের অনেক বড় সাফল্য। আমরা এবারের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করতে পারব।’
অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ না রাখা
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা গত দুই-তিন অর্থবছরে বাজেটে অপ্রদর্শিত বা কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ দিয়েছিলাম। বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার সুযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু পাচার করা অর্থ কেউ ফেরত পাঠায়নি। কোনো টাকাই বৈধ করা হয়নি। এর মানে দেশে কোনো অপ্রদর্শিত টাকা নেই। তাই এবারের বাজেটে এ নিয়ে কোনো আলোচনা রাখা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর বাজেটে বলেছিলাম, কেউ যদি অপ্রত্যাশিত টাকা বা পাচার করা টাকা দেশে নিয়ে আসে, তাহলে সেই টাকার কোনো কর দিতে হবে না। গত বাজেটে এ সুযোগটি দেওয়ার পরও এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রত্যাশিত টাকা বাংলাদেশে আসেনি। তাই এবারের বাজেটে আর সেই সুযোগ রাখা হয়নি।’
গত অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, কেউ যদি বিদেশ থেকে অর্থ আনেন, তাহলে ৭ শতাংশ কর দিলেই হবে। আর বিদেশে থাকা স্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনলে ওই সম্পদের মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ এবং বিদেশে থাকা অস্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশে আনলে এর ওপর ১০ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হবে। গত বছর ১ জুলাই থেকে চলতি মাসের ৩০ জুন পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছরের জন্য এ সুবিধা বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছিল।
দুই কোটি কর্মসংস্থান করেছেন অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী যখন ২০১৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তার প্রথম বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য ছিল দুই কোটি, কিন্তু এখন কর্মসংস্থান না বেড়ে উল্টো বেকার বাড়ল প্রায় তিন লাখ। এবারের বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রস্তাব বাস্তবসম্মত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এ পর্যন্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টির যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সেটি সুস্পষ্টভাবে সবই পূরণ করতে পেরেছি। আমি এখন পর্যন্ত দুই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছি।’
পুঁজিবাজার ইস্যুতে বিব্রত সবাই
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি। এ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। কে এ প্রশ্নের উত্তর দেবেন সেটিও খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পরে অর্থ সচিবকে উত্তর দিতে বললে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে উত্তর দিতে বলা হয়। পরে এ বিষয়ে কথা বলেন গভর্নর। সংবাদ সম্মেলনে পুঁজিবাজার নিয়ে প্রশ্নোত্তরে এমন বিব্রত হন মন্ত্রী ও আমলারা।
সাংবাদিকদের প্রশ্ন শুনে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কে নেবেন প্রশ্নটি? অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মহোদয় আসেন। তিনি যদি বলতে চান বলতে পারেন।’
এ সময় অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, ‘পুঁজিবাজারের বিষয়ে আমাদের বাজেটে উল্লেখযোগ্য কোনো বিষয় উপস্থাপনায় রাখা হয়নি। এ বিষয়ে কী কী কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে এখন আমরা গভর্নর স্যারের কাছ থেকে জানতে পারি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর স্যার আমাদের সঙ্গে আছেন। তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।’
গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের মধ্যে পুঁজিবাজার নিয়ে বেশ কিছু সমস্যা ছিল। আমরা এসইসি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে গত এক বছরের তিন থেকে চারটি সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটে দুটি অংশ, একটি ইকুইটি মার্কেট, আরেকটি বন্ড মার্কেট। বর্তমান এসইসি বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যেসব নীতি সহায়তা দেওয়া দরকার, আমরা সেগুলো দিচ্ছি।’
মূল্যস্ফীতি ১২ থেকে ৬ শতাংশে নামিয়েছি
মূল্যস্ফীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমরা নিজেরাও শঙ্কিত। সারা বিশ্বই এখন মূল্যস্ফীতিতে আছে। আমরা খাবার তো বন্ধ করতে পারব না। মানুষকে খাবার না দিয়ে রাখা যাবে না। আমরা একটা ফ্লেক্সিবল ওয়েতে এগোচ্ছি। যেসব কারণে মূল্যস্ফীতি হয়, সেটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা ছাড় দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তার মাধ্যমে প্রচুর খাদ্য সরবরাহ করছি। পাশাপাশি যেসব পণ্য নিত্যপ্রয়োজনীয়, সেখানে নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করে সরকারকে সাহায্য করছি। এভাবে আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করছি।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘যখন আমরা ক্ষমতায় আসি, তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশ। পরের ১০ বছরে সেটি ৬ শতাংশে নেমে আসে। সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। এখন খুব খারাপ সময়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা ভালো আছি। এবারও যেসব প্রজেকশন আমাদের আছে, সবই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব বলে আশা করি।’
প্রয়োজনে সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দ বাড়বে
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর কাছে করা এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রয়োজন হলে অন্য খাতের বরাদ্দ স্থগিত করে মানুষের ‘খাদ্যের কষ্ট’ দূর করা হবে। সরকারের গত ১৪ বছরের শাসনামলে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি অব্যাহত ছিল। চলতি বাজেটে এ খাতের বরাদ্দ আরও বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ কর্মসূচি আগেও ছিল। চলতি অর্থবছরেও থাকবে। সামাজিক খাতে আমাদের বরাদ্দ আগে ছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছর সেটা এক লাখ কোটি টাকার বেশি ছিল। এবারের বাজেটে সেটা ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘৫০ লাখ পরিবারকে আগে ১০ টাকা কেজিতে চাল দেওয়া হতো। এখন ১৫ টাকায় চাল দিচ্ছি, এ বছর পরিস্থিতির কারণে এক কোটি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। টিসিবির মাধ্যমে তেল-চিনি ও বিভিন্ন খাদ্যপণ্য দেওয়া হয়েছে। কাজেই আমি নিশ্চিত করতে চাই, সামাজিক সুরক্ষার বিষয়গুলো বাজেটে আছে এবং এগুলো অব্যাহত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যদি খাদ্যের উৎপাদন কমে যায়, সেই ক্ষেত্রে অন্য কর্মসূচি স্থগিত রেখে বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে মানুষের খাদ্যের কষ্ট দূর করা হবে। দরিদ্র্য মানুষের জন্য এসব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এ কর্মসূচিগুলো অতীতে ছিল, আমরা ধারাবাহিকভাবে বাড়িয়েছি। ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, সারিয়াকান্দি (বগুড়া), সরিষাবাড়ী (জামালপুর), মাদারগঞ্জ (জামালপুর)Ñ এসব এলাকায় দুর্ভিক্ষ হতো, মানুষ না খেয়ে মারা যেত। কিন্তু গত ১৪ বছরে একজন মানুষও না খেয়ে মারা যায়নি। এ ধরনের কোনো নিউজ হয়নি যে, কোথাও কেউ অভুক্ত আছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা।
বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে খানিকটা বেকায়দায় আছে দেশের অর্থনীতি। অর্থ সংকটে পড়েছে সরকার। প্রবাসী ও রপ্তানি আয়েও সুখবর নেই। রাজস্ব আদায়ে রয়েছে ঘাটতি। এমন পরিস্থিতিতে আয় বাড়াতে ব্যতিব্যস্ত অর্থমন্ত্রী, কর পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই না করেই কর বসিয়েছেন বিভিন্ন খাতে। এতে জীবনযাত্রা ব্যয় বাড়বে। ভোগান্তি বাড়বে সাধারণের। তবে সম্পদশালীদের কিন্তু ঠিকই ছাড় দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থবিল বিশ্লেষণ করে এমন হিসাব মিলেছে।
অর্থবিলে ব্যাপকভাবে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছেন অর্থমন্ত্রী। কৌশলে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল প্রভাবশালীদের খোলাবাজারে বিক্রির সুযোগ করে দিয়েছেন। রাজস্ব কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়ানো, ভ্রমণ কর ও গাড়ির ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। সারচার্জ ছাড় দেওয়া হয়েছে। করমুক্ত আয়সীমা বাড়ালেও ন্যূনতম কর দেওয়ায় বাধ্য করলেন।
পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেশির ভাগ মানুষ মূল বাজেট বক্তৃতা লক্ষ করেন। সেখানে কী আনা হয়েছে আর হয়নি তা খতিয়ে দেখেন। অর্থবিল সাধারণত অর্থনীতির ভাষায় লেখা হয়। তাই কিছুটা জটিল হয়ে থাকে। সমালোচনা এড়াতে কিছুটা কৌশল করে প্রায় প্রতি অর্থবছরেই বাজেট বক্তৃতায় অনেক কিছু না এনে অর্থবিলে উল্লেখ করেন। এবারও তা-ই করেছেন। অর্থবিল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ব্যাপকভাবে সম্পূরক শুল্ক আরোপ রাখা হয়েছে; যা আমদানি সময় দিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে আমদানি খরচ বাড়বে। ফলে বাজারে দাম বাড়বে। অন্যদিকে অর্থবিলে অনেক বিষয়ে রাজস্ব কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বহাল রেখে ভোগান্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে ভ্রমণ কর, গাড়ি ব্যবহারের খরচ বাড়ানো হয়েছে। তবে ধনীদের সুযোগ ঠিকই রাখা হয়েছে। এসব করা হয়েছে সরকারের আয় বাড়াতে।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর বিশেষজ্ঞ ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, অর্থবিলে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামাল পরে শুল্ক দিয়ে খোলাবাজারে বিক্রির সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ কার্যক্রম অন লাইনে পরিচালিত না হওয়া পর্যন্ত অর্থবিলে নেওয়া ধারা কার্যকর হলেও এই সুবিধা অপব্যবহার করে রাজস্ব ফঁাঁকি বাড়বে। এনবিআরকে অটোমেশনে আনতে হবে, না হলে এ খাতে রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ হবে না।
আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত অর্থবিলে ব্যাপকভাবে সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজারে চাহিদা আছে এমন ৪৮৯ পণ্য বেছে নেওয়া হয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে একটি মাত্র পণ্য ‘দুধের অন্যান্য স্টাবিলাইজার’-এর ওপর ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই পণ্য দুধ সংরক্ষণে বা সুষ্ঠুভাবে তৈরিতে সহায়তা করে। বাকি সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশের বেশি ২০, ৩০, ৪৫, ৬০, ১০০, ১৫০, ২০০, ৩০০, ৩৫০, ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত সম্পূরক শুল্ক ধার্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্পূর্ণ তৈরি চার দরজাবিশিষ্ট ডাবল কেবিন পিকআপের সিলিন্ডার (ক্যাপাসিটি ৪০০০ সিসির ওপরে) আমদানিতে সবচেয়ে বেশি ৫০০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
অর্থবিল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গুঁড়া দুধ (আড়াই কেজির প্যাকেট), মাখন, চিজ, দই, কমলালেবু, আঙুর, আপেল, নাশপতি, চেরি, সবুজ চা, ব্ল্যাক চা, গোলমরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, জিরা, রিফাইন্ড নারকেল তেল, চকলেট, এক বছরের শিশুদের খাবার সমগ্রী, পাস্তাসহ প্রায় ৫০০ পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক থাকছে। এসব পণ্যের দাম আপতত কমছে না। ক্ষেত্রবিশেষে বাড়বে।
রাজস্ব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ বহু পুরনো। অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ হয়রানি বন্ধে এনবিআর কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী মুখে যা-ই বলুন না কেন আগামী অর্থবছরের জন্য আইন করে রাজস্ব কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়িয়ে দিলেন। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণের ক্ষমতা বহাল রাখা হয়েছে। কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পণ্যমূল্য বা করযোগ্য সেবামূল্য অনধিক ৫ লাখ টাকা হলে রাজস্ব কর্মকর্তা জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবেন। একইভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পণ্যমূল্য বা করযোগ্য সেবামূল্য ২০ লাখ টাকা হলে সহকারী কমিশনার, ৩০ লাখ টাকা হলে উপকমিশনার, ৫০ লাখ টাকা হলে যুগ্ম কমিশনার, ১ কোটি টাকা হলে অতিরিক্ত কমিশনার, ১ কোটির অধিক হলে কমিশনার জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবেন।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন ডিসিসিআই সভাপতি সামীর সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, বৈশ্বিক মন্দার কারণে সংকটে আছে বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। অনেক ব্যক্তিও ব্যবসায় লোকসানে পড়েছেন। মাঠপর্যায়ের সবাই যে সৎ তা কিন্তু নয়। তাই মাঠপর্যায়ে রাজস্ব কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়িয়ে দিলে অনেক সময় ইচ্ছেমতো জরিমানা নির্ধারণ করার সুযোগ পাবে; যা আমাদের জন্য বোঝা হয়ে যাবে। জরিমানা জোগাড় করতে ধারদেনাও করতে হবে। মাঠপর্যায়ের অনেকে অনৈতিক অর্থ দাবি করবে। জরিমানা নির্ধারণে আরও ওপরের পর্যায়ের অনুমতি নেওয়ার ধারা আনতে হবে। এতে হয়রানির সুযোগ কমবে।
সরকার রপ্তানিমুখী শিল্পের সুবিধায় শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির ‘বন্ড’ সুযোগ দিয়েছে। এই সুযোগ বেশি নিয়েছেন তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। এই সুবিধা পাওয়ার অন্যতম শর্ত বন্ড সুবিধায় পণ্য এনে তার সবটা কারখানায় রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করতে হবে। খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না। এনবিআরের প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়। এনবিআর বন্ড সুবিধা দিয়ে বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা কম শুল্ক আদায় করে। বছরে বন্ড সুবিধায় পণ্য এনে কারখানায় ব্যবহার না করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দেওয়ায় (অপব্যবহার) বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয় সরকার। এতে সব ধরনের শুল্ক কর দিয়ে দেশি প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত একই জাতীয় পণ্য অসম প্রতিযোগিতায় পড়ে।
অর্থবিলে বন্ড সুবিধাপ্রাপ্তদের জন্য নতুন বিধান এনেছেন, এখন থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল এনে এনবিআরের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে।
এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, বন্ড দুর্নীতির সঙ্গে প্রভাশালীরা জড়িত। তাই এই দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব হয় না। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ডেড ওয়্যার হাউজে কী পরিমাণ পণ্য সংরক্ষণ করবে তা ম্যানুয়াল (খাতা-কলমে) পদ্ধতিতে হিসাব রাখেন। এখানে অসাধু এনবিআর কর্মকর্তাদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে কম হারে শুল্ক দিয়ে বেশি পরিমাণের পণ্য বিক্রির রাস্তা খোলা রাখা হলো। আর এতে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে। অন্যদিকে দেশি শিল্প সব ধরনের রাজস্ব দিয়েও এসব দুর্নীতিবাজের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় পড়বে।
প্রস্তাবিত অর্থবিলে করমুক্ত আয়সীমায় ও কর পরিশোধে পরিবর্তন আনা হয়েছে। অর্থবিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, এখন থেকে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পরবর্তী ১ লাখ পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ২০ শতাংশ, অবশিষ্ট মোট আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ হারে কর ধার্য রয়েছে। এ ছাড়া করযোগ্য আয় থাকলে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য ৫ হাজার টাকা, অন্যান্য সিটি করপোরেশনের জন্য ৪ হাজার টাকা, সিটি করপোরেশন ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় অবস্থিত করদাতাদের জন্য ৩ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে। তবে করযোগ্য আয় না থাকলেও ইটিআইএন থাকলেই ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে। তবে কোনো করদাতা যদি স্বল্প উন্নত বা কম উন্নত এলাকায় ক্ষুদ্র ও কুঠিরশিল্পের ব্যবসা করেন, তবে যে বছরের কর প্রদান করবেন তা তার আগের বছরের উৎপাদনের পরিমাণ ১৫ শতাংশের বেশি কিন্তু ২৫ শতাংশের বেশি না, তাহলে আয়ের ওপর প্রদেশ আয়করের ৫ শতাংশ রেয়াত পাবেন। একইভাবে ২৫ শতাংশের বেশি হলে ১০ শতাংশ রেয়াত পাবেন।
সারচার্জ হচ্ছে একধরনের মাশুল, যা বেশি সম্পদের মালিকরা নিয়মিত করের বাইরে পরিশোধে করেন। এত দিন ৩ কোটি টাকা হলে সারচার্জ দিতে হতো। প্রস্তাবিত অর্থবিলে কৌশলে অর্থমন্ত্রী বেশি ধনীদের ওপর চাপ কমাতে এ হিসাব বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা করেছেন। বলা হয়েছে, নিট সম্পদের মূল্যমান ৪ কোটি থেকে ১০ কোটি হলে ১০ শতাংশ, ১০ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ২০ কোটির বেশি না এমন হলে ২০ শতাংশ, ২০ কোটির বেশি কিন্তু ৫০ কোটির কম হলে ৩০ শতাংশ এবং ৫০ কোটির বেশি হলে ৩৫ শতাংশ সারচার্জ ধার্য করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে রপ্তানিমুখী বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা খুঁজে পাননি বলে দাবি করেছেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, উৎসে কর ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল সেখানে ফিরিয়ে নেওয়া, নগদ সহায়তার ওপর করারোপ প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। বাজেটে অন্যান্য বছরের মতো রপ্তানি খাতগুলোর জন্য প্রণোদনা বাবদ অর্থ বরাদ্দের কোনো ঘোষণাও আসেনি। যদিও বৈশি^ক প্রেক্ষাপটে এ মুহূর্তে রপ্তানি খাতকে সুরক্ষা দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
গতকাল শুক্রবার প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে বিজিএমইএ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান এসব কথা বলেন। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আজিজ গ্রুপের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিমসহ পোশাকশিল্প উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ফারুক হাসান বলেন, ‘এমনিতেই কভিডের কারণে আমাদের শিল্পে যে ক্ষতি হয়েছে, সেটি পুষিয়ে নিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে একদিকে বিশ্বব্যাপী মন্দা চলছে, খুচরা বিক্রির চাহিদা কমে গেছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির ফলে আমাদের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।’ বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেলেও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের জায়গাটিতে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। আমাদের বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সব ধরনের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এই অসাধু কর্মকা-ের পেছনে লাইনম্যান, মিটার রিডার ও ভোক্তা, যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের যথাযথ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাজেট বক্তৃতায় অন্যান্য বছরের মতো রপ্তানি খাতের জন্য প্রণোদনা বাবদ অর্থ বরাদ্দের কোনো ঘোষণা আসেনি। যেখানে আমাদের বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছিল, সেখানে আমাদের সামনে বিষয়টি এখনো অজানা রয়ে গেছে। আমরা একটি অভূতপূর্ব বৈশ্বিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ অবস্থায় কীভাবে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে সুরক্ষা করতে পারি, সেটি হবে আমাদের কৌশল।’
প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ২৭ শতাংশ করা হয়েছে। এটি সম্ভব কি না, তা জানতে চাইলে ফারুক হাসান বলেন, ‘এটি সম্ভব। তবে চ্যালেঞ্জিং। কারণ গত কয়েক অর্থবছরে আমরা মাত্র ১ থেকে দেড় শতাংশ বৃদ্ধি করেছি। হুট করেই তা ৫-৬ শতাংশ বৃদ্ধি করা কঠিন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পোশাকের প্রধান দুই বাজার আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে ঋণের সুদের হার অনেক বেড়েছে; মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেক কমেছে। আমাদের পোশাক রপ্তানির অন্যতম বৃহৎ বাজার ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি জার্মানি অফিশিয়ালি জানিয়ে দিয়েছে, দেশটি মন্দার কবলে পড়েছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশের অবস্থাও ক্রমশ সঙিন হচ্ছে।’
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘আশঙ্কার বিষয় হলো ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের জানুয়ারি-মার্চ মাসের আমদানি তথ্য ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দেখাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পোশাক আমদানি নভেম্বরে কমেছে ৯ দশমিক ৮৪ এবং ডিসেম্বরে কমেছে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। জানুয়ারিতে কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে আবারও ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমাদের রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকার পরও ইউরোপ ও আমেরিকার বাংলাদেশ থেকে আমদানি ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দেখাচ্ছে। এটি আমাদের জন্য সত্যিই অ্যালার্মিং। আর ২০২৩ সালে বিশ্ববাজার কিন্তু আর বড় হচ্ছে না; উল্টো ছোট হয়ে যাবে। অতএব আমাদের সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত কীভাবে আমরা আমাদের বাজার ধরে রাখতে পারি।’
ফারুক হাসান বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে পোশাক খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তা খুবই জরুরি। পোশাকশিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতিকে বেগবান করে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব। চলমান সংকটময় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে উৎসে কর ২০২১-২২ অর্থবিছরের মতো শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ ধার্য করার দাবি জানান তিনি। এটি আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর করার জন্য পুনরায় সরকারের সদয় দৃষ্টিও আকর্ষণ করেন।
তিনি বলেন, ‘নগদ সহায়তার ওপর আরোপ করা ১০ শতাংশ কর প্রতাহারের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। আমরা মনে করি, এ সংকটময় সময়ে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা হবে।’
টানা চার দিন ধরে বাড়ছে তাপমাত্রা। গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের উৎপাদন সে তুলনায় না বাড়ায় লোডশেডিং ক্রমে বাড়ছে। এ অবস্থার মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা কয়লার অভাবে এক-দুই দিনের মধ্যে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমনটা হলে লোডশেডিং চরমে পৌঁছানোর আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
আগে রাজধানী ঢাকায় লোডশেডিং তেমন না হলেও এখন বিভিন্ন এলাকায় চার-পাঁচবার করে পাঁচ-সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। ঢাকার বাইরের শহরে এবং গ্রামাঞ্চলে ভয়াবহ লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও কোথাও ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।
তীব্র গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় শিশু ও বয়স্কদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিদ্যুতের অভাবে কারখানার উৎপাদন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এবং অফিস-আদালতে কাজের ব্যাঘাত হচ্ছে। লোডশেডিংয়ে ব্যাটারিচালিত ভ্যানের চালক ও অটোচালকরা ঠিকমতো চার্জ দিতে না পারায় তাদের আয় কমে গেছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায়ও মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। মোটকথা জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গরম থেকে আপাতত নিস্তার নেই। ৮ বা ৯ জুন বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ ৭ জুন পর্যন্ত দেশে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার শঙ্কা রয়েছে। আগামী এক মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হতে পারে।
বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখছিল পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু কয়লার অভাবে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটির দুটি ইউনিটের একটি গত ২৫ মে বন্ধ করা হয়। ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার অন্য ইউনিটটি থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও সেটিও এক-দুই দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কয়লা কেনার অর্থের অভাবে।
বিল বকেয়া থাকায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে চীনা কোম্পানি সিএমসি। কয়লা আমদানি বাবদ বর্তমানে পায়রার ২৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার বকেয়া আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আপাতত ১০০ মিলিয়ন ডলার সংস্থান করা গেলেও কেন্দ্রটির জন্য নতুন করে কয়লা আমদানি করা যাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৮৮ মিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে। বাকি অর্থ এ সপ্তাহে পাওয়ার কথা রয়েছে। এরপর কয়লা আমদানির জন্য এলসি ওপেন করা হবে। এলসি খোলার পর কয়লা আসতে অন্তত ২৫ দিন সময় লাগবে। কয়লা এলেও সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ কেন্দ্র পুরোদমে চালু করা যাবে না। দ্রুত অর্থ সংস্থান হলেও অন্তত এক মাস এটি বন্ধ থাকবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানির অভাবে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। ডলার সংকটে জ্বালানি তেল, এলএনজি ও কয়লা আমদানি কমায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে চাইলেও উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। সংকট সামলাতে এখন আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতির অপেক্ষা করছে কর্তৃপক্ষ। তারা আশা করছে, এ সপ্তাহ শেষে গরম অনেকটা কমবে। গরম কমলে বিদ্যুতের চাহিদাও কমবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ মনে করেন, বৈশ্বিক কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা পরিকল্পনা মাফিক চললেও প্রাথমিক জ্বালানির সরবরাহের ধারাবাহিকতা চ্যালেঞ্জে পড়েছে। কভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বিশ্বের সব দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়েছে। তবে দেশে কয়লা নিয়ে যে সংকট চলছে সেটা থাকবে না। আমরা চেষ্টা করছি; সে সঙ্গে আশা করছি দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের যে বকেয়া রয়েছে তা তারা পাবে। তবে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘আজকের এ পরিস্থিতির জন্য বৈশ্বিক পরিস্থিতির চেয়ে সরকার বেশি দায়ী। ভুলনীতির কারণে প্রাথমিক জ্বালানির সংস্থান না করে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাড়ছে। ফলে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে দফায় দফায়। অতিরিক্ত দাম দিয়েও মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। সামনে লোডশেডিং আরও বাড়বে।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম এখন অনেক কম। তারপরও জ্বালানি নিয়ে আমাদের দেশে কেন এ দুরবস্থা তা বোধগম্য নয়।’
পিডিবি সূত্রমতে, বর্তমানে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুতের ঘাটতি দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাস্তবে বিদ্যুতের ঘাটতি প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট।
এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। জ্বালানির অভাবে গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের সক্ষমতা ব্যবহার করা যায় না। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আরও প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াটের উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়। মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৭ শতাংশ গ্যাসভিত্তিক। পিডিবির হিসাবে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ৩৯ মেগাওয়াট। গড়ে উৎপাদন করা হচ্ছে ৬ হাজার ২২১ মেগাওয়াট। ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কিন্তু উৎপাদন করা হচ্ছে দৈনিক ৩ হাজার ৮০৬ মেগাওয়াট। কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ৩ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট। উৎপাদিত হচ্ছে ২ হাজার ২২৬ মেগাওয়াট।
প্রাথমিক জ্বালানিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া না হলে বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান হবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী।
বিদ্যুৎ উৎপাদন বাবদ বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ১৮ হাজার কোটি টাকার বিল বকেয়া হয়ে আছে। সরকার এ বকেয়া কমিয়ে না আনলে কয়েকটি কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যে কয়েকটিতে উৎপাদন কমেছে।
গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি এবং লোডশেডিংয়ের কারণে অধিকাংশ শিল্পে ৩০-৪০ শতাংশ উৎপাদন কমে গেছে বলে জানিয়েছেন শিল্পমালিকরা। ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে অনেক কারখানায় উৎপাদন ঠিক রাখতে গিয়ে খরচ বাড়ছে। তারা বলছেন, অনেক সম্ভাবনা থাকলেও কারখানার চাকা ঠিক রাখতে না পারায় ব্যবসা গুটিয়েছেন বা উৎপাদনের পরিমাণ কমাচ্ছেন অনেক উদ্যোক্তা।
ডলার সংকটে পেট্রোবাংলা এলএনজি আমদানির বিল, এলএনজি টার্মিনালের চার্জ এবং বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির (আইওসি) বিল দিতে পারছে না। সময়মতো বিল দিতে না পারায় জরিমানা গুনতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটিকে। পেট্রোবাংলার মোট বকেয়া প্রায় ২৫ কোটি ডলার।
একই কারণে আমদানিকৃত জ্বালানির মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না বিপিসি। আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তেলবাহী কার্গো না পাঠানোর হুমকি দিয়েছে। গত ১১ মে পর্যন্ত বিপিসির কাছে সরবরাহকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি ডলার।
বিপিসি জানিয়েছে, বকেয়া পরিশোধ না করায় ৩০ হাজার টনের একটি ডিজেল কার্গো বাতিল করেছে ভিটল সিঙ্গাপুর। আন্তর্জাতিক তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, এ মাসে তারা ১৫০ হাজার টন ডিজেল, ৫০ হাজার টন ফার্নেস অয়েল সরবরাহ করবে না। বিপিসি জ্বালানি বিভাগকে জানিয়েছে, এ ধারা অব্যাহত থাকলে জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখা কঠিন হবে। জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
কুমিল্লার লাকসামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ৭ জনকে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পৌর সদরের ৭নং ওয়ার্ডের গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন— ফারুক, রাশেদ, শাহজাহান ও মনির হোসেন। প্রাথমিকভাবে এদের নাম জানা যায়। তবে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত ব্যক্তির নাম মনির হোসেন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের অভিযোগ করে বলেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে তিনি দাবি করছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মিলাদ ও বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান। সকালে শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়। তবে চারটার দিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর অনুসারী ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবিদার জাহাঙ্গীর আলম, লাকসাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শিহাব খান এবং পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফ খানের নেতৃত্বে শতাধিক লোক মাদ্রাসার ফটকে তালা দেন। এ সময় আবদুল মান্নান তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আবদুল মান্নানের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেখানে হামলা হয়। এতে আহত হয়েছেন সাতজন। হামলার সময় রামদা দিয়ে মনির হোসেন নামের এক হকারের হাত ও পা কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। পরে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী (রাজনৈতিক)। বৃহস্পতিবার সকালে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর অনুষ্ঠান করি। বিকেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে দোয়ার আয়োজন করি। এ সময় জাহাঙ্গীর, শিহাব ও স্বাধীনের নেতৃত্বে শতাধিক লোক আমার এলাকার লোকজনের ওপর হামলা করেন। মনির নামের এক হকার অনুষ্ঠান দেখতে আসেন। তাঁকে কোপানো হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মন্ত্রীর লোকজন এই হামলা করেছেন। আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইব। সামাজিক এই কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে, যা ন্যক্কারজনক ঘটনা।
এ ঘটনার অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর, শিহাব ও সাইফের মুঠো ফোনে বার বার কল দিও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও লাকসাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাহাঙ্গীরকে প্রথমে মান্নান মারধর করে। এরপর সেখানে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি।
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের কর্মসূচিতে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এ নিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির আওতায় আসতে পারেন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এমন কথাই জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
একইসঙ্গে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসসহ অন্য সকল কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিনের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ছাড়াও নাগরিকদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি এখন নির্দিষ্ট কোনও পদক্ষেপ ঘোষণা করতে যাচ্ছি না। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের ঘোষণা অনুসারে বাংলাদেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকার এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভীসা নীতি কার্যকর করার পদক্ষেপ আমরা শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ মে ভিসা নীতি ঘোষণার সময় আমরা এটা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি। আমরা ভিসা নীতির কথা বলেছি তবে কারও নাম উল্লেখ করিনি। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দুর্বল ও বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত যেকোনও বাংলাদেশির ক্ষেত্রে এই ভিসা নীতি কার্যকর হবে। অন্য যেকোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি আমরা মনে করি তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে আমরা এই নীতি প্রয়োগ করব।
দেশের ক্রিকেট নিয়ে নানা সময়ে আলোচিত-সমালোচিত বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপান। জাতীয় দলের প্রায় প্রতিটি বিষয় নিয়েই মাথা ঘামান তিনি। তার এই তৎপরতাকে কীভাবে দেখেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রশ্ন করা হয়েছিল সাকিবে। তার সোজাসাপটা জবাব, ‘আমার সঙ্গে (সম্পর্ক) কখনো অস্বস্তির হয়নি। আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো। আমি ওনাকে বুঝি। উনি আমাকে বোঝেন। আমাদের মধ্যে কথা হয়, এমন হলে ভালো হতো, অমন হলে ভালো হতো। যে আলোচনাটা হয়, ফলদায়ক হয়। আমার কাছে (তাঁর সঙ্গে কাজ করা) সমস্যা হয়নি কখনো।’
নাজমুলের আগে বিসিবি সভাপতি ছিলেন এখনকার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। তিনিও জাতীয় দলের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই জড়িত ছিলেন বলে জানান সাকিব। তবে নাজমুল অনেক বেশি জড়িত বলে মনে করেন সাকিব, 'কামাল ভাইও দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। হয়তো তখন এত মিডিয়া ছিল না, উনি হয়তো মিডিয়াতে অত কথা বলেন নাই। যে কারণে জানা যেত না। কিন্তু দলে কী হচ্ছে, এসবে উনিও জড়িত ছিলেন। আর পাপন ভাই যেটাকে বলে ইন হ্যান্ডস জড়িত। অনেক বেশি যুক্ত। এমন বোর্ড প্রেসিডেন্ট পাওয়াও কঠিন।’
অনেক বেশি জড়িত থাকা বোর্ডপ্রধান ভালো কি মন্দ, প্রশ্ন করা হলে সাকিবের চটজলদি জবাব, ‘দুটোই। নিতে পারলে ভালো। যারা নিতে পারে না, তাদের জন্য অনেক ডিফিকাল্ট।’
নাজমুল হাসানের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে তার মধ্যে যদি একটা ভালো দিক খুঁজতে বলেন প্রশ্নকর্তা। সাকিব বলেন ‘বিশেষভাবে জাতীয় দলের জন্য সবকিছু করতে রাজি আছেন।'আর মন্দ দিক কোনটি? হাসতে হাসতে সাকিবের জবাব, ‘মে বি ইন্টারভিউ (হয়তো সাক্ষাৎকার)’।
চট্টগ্রামের পটিয়ায় বিয়ের আট মাসের মাথায় গলায় ফাঁস দিয়ে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। নিহত গৃহবধূর নাম উন্মে সুলতানা সুইটি (২২)। সে উপজেলার ভাটিখাইন ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মুছা চৌধুরীর বাড়ির মমতাজ আহম্মেদের ছেলে রিয়াজ আহম্মদ সাকিবের স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) উপজেলার ভাটিখাইন ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে শশুরবাড়ির নিজ বসত ঘরে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত উন্মে সালমা সুইটি একই উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের শেখ মোহাম্মদ পাড়ার আবুল কালামের ছোট মেয়ে। সে পটিয়া কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তবে কেন সুইটি আত্মহত্যা করেছেন সে ব্যাপারে উভয় পরিবারের কেউ কিছু বলতে পারেননি।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, উম্মে সুলতানা সুইটির সাথে গত ৮ মাস পূর্বে মো. রিয়াজ আহম্মদ প্রকাশ শাকিবের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে তার শয়ন কক্ষের আড়ার সাথে ওড়না পেছিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি । এ সময় পরিবারের সদস্যরা দেখতে পেয়ে পটিয়া থানা পুলিশকে খবর দিলে হলে তারা মরদেহটি উদ্ধার করে পটিয়া থানায় নিয়ে যায়। সেখানে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের বড়ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার বোনের মৃত্যুর বিষয়ে আমাদের পরিবারের কোন সন্দেহ নাই। মৃত্যুর বিষয়ে পরিবারের কোন সদস্য ভবিষ্যতে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা মামলা মোকদ্দমা করব না।
পটিয়া থানার ওসি (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে খবর পেয়ে আমরা নিহত গৃহবধূর মরদেহটি উদ্ধার করে থানায় এনে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠাই। নিহতের পরিবারের কারো কোন অভিযোগ না থাকায় রাতেই থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।