
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কারও মুখাপেক্ষী হয়ে নয়, আমরা নিজের পায়ে চলব। নিজের দেশকে গড়ে তুলব। কে আমাদের ভিসা দেবে না, নিষেধাজ্ঞা দেবে ও নিয়েও মাথাব্যথা করে লাভ নাই। ২০ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে, আটলান্টিক পার হয়ে ওই আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু আসে-যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীতে আরও অনেক মহাসাগর আছে, মহাদেশ আছে। সেখানেই আমরা যাতায়াত করব। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করব। আমাদের অর্থনীতি আরও উন্নত হবে, মজবুত হবে, আরও চাঙা হবে।’
গতকাল শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা দূরে সরিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট যথোপপযুক্ত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘(বাজেট সম্পর্কে) কে কী বলছে, তা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই। আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করার জন্য আমরা একটি উপযুক্ত বাজেট ঘোষণা করেছি।’ ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগরের হাজার হাজার উৎসাহী নেতাকর্মী আওয়ামী লীগপ্রধানকে দেখতে সমবেত হওয়ায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি একটি মহাসমাবেশে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘দেশের মানুষ আমাদের পক্ষে আছে। তাই আমরা বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব, ইনশা আল্লাহ।’ প্রায় ৭ দশমিক ৬২ লাখ কোটি টাকার এত বিশাল বাজেটের বাস্তবায়ন নিয়ে যারা শঙ্কিত, তাদের কড়া সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর বাজেট পাসের আগে কেউ কেউ বলেন, আমরা বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারব না। কিন্তু আমরা প্রতিটি মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যারা ভোট চুরি করে, ভোট নিয়ে যারা চিরদিন খেলছে, জনগণের ভাগ্য নিয়ে যারা খেলছে, আমি তাদের (আমেরিকা) বলব, ওই সন্ত্রাসী দলের দিকে নজর দিন। কানাডার হাইকোর্ট বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সন্ত্রাসী ও দুর্নীতির দায়ে আমেরিকা তারেক জিয়াকে ভিসা দেয় নাই। তারা (বিএনপি) আবার তাদের (আমেরিকা) কাছে ধরনা দেয়। এত কিছু বলতে চাই না। শুধু এটাই বলব, যারা অর্থনীতিবিদ, জ্ঞানী-গুণী আছেনৃ আমরা তো লেখাপড়া এত বেশি জানি না। শুধু দেশের মাটি মানুষকে চিনি। বাংলাদেশ, নদী-নালা, খাল-বিল চিনি। বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ কোথায়, কী করলে ভালো হবে, সেটা জানি। সেটাই মাথায় রেখে দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়েছি।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. মো. এনামুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঞ্চালনায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
দুর্ঘটনা ঘটেছিল শুক্রবার রাতে। তারপর থেকে আসছিল হতাহতের ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। তবে প্রকৃত ভয়াবহতার চিত্র ফুটতে শুরু করে গতকাল শনিবার ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে। সকালে দেখা যায় তিনটি ট্রেনের বেশিরভাগ কামরা পড়ে আছে মাটিতে। কোনো কামরা পুরোপুরি উল্টে গেছে। কোনোটি আবার উঠে গেছে আরেকটির ওপর। আশপাশে, সামনে-পেছনে শুধু মৃতদেহ। কয়েক ঘণ্টা আগেও যারা বেঁচে ছিলেন, যাদের চোখে স্বপ্ন ছিল তারা লাশ হয়ে পড়ে আছেন খোলা আকাশের নিচে। আহত ও স্বজনহারাদের আর্তনাদ-হাহাকার আর অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দে গতকাল সারা দিনই বিভীষিকাময় ছিল ভারতের ওড়িশার বালাশ্বরের কাছের বাহানগায়ের বাতাস। ওড়িশা রাজ্যে ঘোষণা করা হয়েছে এক দিনের শোক।
শুক্রবার রাতে বালাশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর উদ্ধার শেষে দেশটির সরকার ২৮৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যাও হাজার ছুঁইছুঁই করছে। উদ্ধারকাজ শেষ হলেও এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মানুষ আটকে থাকার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। উদ্ধারকাজের নেতৃত্ব দেওয়া ওড়িশা ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর জেনারেল সুধাংশু সারাঙ্গি জানান, নিহতের সংখ্যা ২৮৮। অবশ্য উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার পর রেল কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে নিহতের সংখ্যা ২৬১। ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াও দাবি করেছে নিহতের সংখ্যা ২৬১। দেশটির আরেক সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিও প্রথমে ২৬১ জনের কথা বললেও গতকাল সন্ধ্যার পরে তারা নিহতের সংখ্যা ২৮৮ বলেই জানায়। একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। দেশটির কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মাও তেমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। এখন আমরা সংযোগ পুনঃ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করব। তবে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে মানুষ থাকার আশঙ্কা রয়েছে।’
এনডিটিভি জানায়, যাত্রীবাহী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে চেন্নাই যাচ্ছিল। বেলা ৩টার দিকে শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ট্রেনটি পৌঁছায় বালাশ্বরে। কাছেই বাহানগা বাজারের কাছে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেনটি। সে সময় তৃতীয় ট্রেন যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসও এই দুর্ঘটনার শিকার হয়।
ওড়িশা রাজ্যের মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা দুর্ঘটনার পরপর জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনাস্থলে অন্তত ২০০টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ১০০ জন অতিরিক্ত ডাক্তার সেখানে সেবায় নিয়োজিত করা হয়েছে।
ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার কারণ কী, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয় মানুষ বলছে, মালগাড়ি গিয়ে ধাক্কা দেয় করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। সেই ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। উল্টোদিক থেকে আসছিল সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। উল্টে যাওয়া কামরায় ধাক্কা লেগে সেই ট্রেনের অধিকাংশ কামরা উল্টে যায়। গতকাল দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজন ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর আমি ১০ থেকে ১৫ জনের নিচে চাপা পড়ি। আমি ওই মানুষের স্তূপে সবার নিচে ছিলাম। আমার হাতে আর ঘাড়ে আঘাত লাগে। আমি যখন ট্রেনের বগি থেকে বের হই, তখন দেখি কেউ হাত হারিয়েছে, কেউ পা হারিয়েছে, কারও আবার মুখ সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গেছে।’
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন রেলওয়ে সেফটি বিভাগের কমিশনার। এ সংস্থাটি বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে।
এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে সুনিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও সিগন্যালের সমস্যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, এই রুটে ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ প্রতিরোধী ব্যবস্থা ‘কবচ’ ব্যবহার করা হতো না। রেলওয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা জানান, কবচ সিস্টেমটি এই রুটে নেই। বর্তমানে দিল্লি-হাওড়া এবং দিল্লি-বোম্বে রুটে কবচ স্থাপন করা হচ্ছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের চারটি বগি ও ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়ে পাশের রেললাইনে পড়ে, যে লাইন দিয়ে যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস যাচ্ছিল। দ্বিতীয় ট্রেনটির পেছন দিকের দুটি বগি তখন লাইনচ্যুত হয়।
রেলওয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১২টি বগি বাহানগার বাজার স্টেশন পার করার সময় লাইনচ্যুত হয় এবং পাশের লাইনের ওপর পড়ে। সে সময় ওই লাইন দিয়ে হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেন যাওয়ার সময় সেগুলোর সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
পত্রিকাটির খবর অনুযায়ী, বাহানগা বাজার স্টেশনে চারটি রেললাইন আছে, যার একটিতে দুর্ঘটনার সময় একটি মালবাহী ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। যাত্রীবাহী ট্রেন দুটি ভিন্ন ভিন্ন লাইনে একে অপরকে বিপরীত দিক দিয়ে পার করার কথা ছিল। কিন্তু একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে পড়ে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা হাওড়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে সেটির সংঘর্ষ হয়।
হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা বলছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টি কোচ লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনের ওপরে পড়ে এবং পরে হাওড়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে সেই ট্রেনের দুটি বগি লাইনের বাইরে চলে যায়।
অন্য একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু পত্রিকা খবর প্রকাশ করেছে যে প্রথমে হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। করমণ্ডল এক্সপ্রেস পশ্চিমবঙ্গ থেকে তামিলনাড়ু যাতায়াতের মাধ্যম। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ট্রেনটি শালিমার স্টেশন অতিক্রম করে। পত্রিকাটি বলছে, মূলত তামিলনাড়ুতে কাজের জন্য ও উন্নত চিকিৎসার জন্য যারা গিয়ে থাকেন, তারা এই ট্রেন ব্যবহার করে থাকেন।
এদিকে বিবিসি বলছে, দুর্ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের পাঠানো খবর ও ছবি দিয়ে সেখানকার সবশেষ পরিস্থিতির আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। রেললাইনসহ আশপাশের জায়গাগুলোতে ট্রেনে থাকা মানুষের জিনিসপত্র ছড়িয়ে রয়েছে। লাইনের পাশে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরা মৃতদেহ সারিতে রাখা ছিল। কিছুক্ষণ পরপর এই মৃতদেহগুলো গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ট্রেনের বগির ভেতরে মানুষের স্যান্ডেল, কাপড় এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। উদ্ধারকাজ চলাকালে কয়েকজনকে পড়ে থাকা কাপড় ও দড়ির সাহায্যে টেনে বের করা হয়।
ওড়িশার মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা জানিয়েছেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত মানুষকে গোপালপুরে একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কিছু মানুষকে বালাশ্বর মেডিকেল কলেজেও নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের বাইরে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, বালাশ^র হাসপাতালের পোস্টমর্টেম বিভাগের বাইরে শত শত মানুষ ভিড় করেছে। শুক্রবার রাতেই ৫০০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রদীপ জেনা। মানুষ নিজে থেকে উদ্যোগী হয়ে এসে রক্তদান করে যাচ্ছে।
ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব শুক্রবার দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভুক্তভোগীদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের আশ্বাস দেন। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তদন্তের জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা শিগগিরই বোঝা যাবে। এই দুর্ঘটনার দায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করবেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের চিন্তা মানুষের জীবন বাঁচানো ও উদ্ধারকাজ শেষ করা।’
রেলমন্ত্রী অশি^নী বৈষ্ণব বলেছেন, প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া গুরুতর আহতদের জন্য দুই লাখ রুপি ও অপেক্ষাকৃত কম আহতদের জন্য ৫০ হাজার রুপি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যার দিকে ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি বলেছেন, এই মর্মান্তিক ঘটনায় যারা পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন তাদের পাশে রয়েছে সরকার। এটা বেদনাদায়ক ঘটনা। আহতদের চিকিৎসার জন্য সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। এটা গুরুতর ঘটনা। তিনি বলেন, এই দুর্ঘটনার প্রতিটি দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে ঘুরে দেখেন দুর্ঘটনাস্থল। পরিদর্শনকালে মমতা বলেন, এই দুর্ঘটনার পেছনে কিছু আছে। ভালো করে তদন্ত করতে হবে। তিনি অভিযোগ তোলেন, রেলের কাজে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের অ্যান্টিকলিশন ডিভাইস ছিল না। ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮১ সালে। সে সময় অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন বিহার রাজ্যে সাইক্লোনের সময় লাইনচ্যুত হয়ে নদীতে পড়ে যায়। ওই দুর্ঘটনায় অন্তত ৮০০ মানুষ মারা গিয়েছিল।
গত ১৪ বছর ধরে গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীদের তালিকা করছে বিএনপি। গায়েবি মামলাকারী কর্মকর্তাদের তালিকাও করছে তারা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীদের এই তালিকা করা হচ্ছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিস্তারিত তথ্যও সংগ্রহ করছে দলটি।
গত শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে একথা জানিয়েছে বিএনপি। দলের দপ্তর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও অনুরূপ কথা জানিয়েছেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুন, গুম, গায়েবি মামলায় জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিস্তারিত তথ্য কেন্দ্রে পাঠাতে জেলা নেতাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। সমন্বিত তথ্য জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের কাছে পাঠানো হবে।’
তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুন, গুমের শিকার নেতাকর্মীর স্বজনদের কান্না থামছে না। নিখোঁজদের ব্যাপারে সরকারের কাছে আবেদন করেও লাভ হচ্ছে না। আমরা খুন, গুমের শিকার নেতাকর্মীদের তালিকা করছি এবং জড়িতদের তথ্যও সংগ্রহ করছি। জনগণ একদিন তাদের বিচার করবে।’
নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ নিখোঁজদের খুঁজে পেতে নানা কর্মসূচি পালন করছে। সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে বারিধারার আমেরিকান সেন্টারে বৈঠক করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বৈঠকে নিখোঁজ নেতাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছেন তিনি।
বিএনপির দপ্তর সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেন, গত ১৫ মে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় জেলা সভাপতি/আহ্বায়ককে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। গত ১৮ মে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠি জেলা নেতাদের কাছে পাঠানো হয়। এ সংক্রান্ত একটি সেল গঠন করা হয়েছে। তথ্য সেলে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গায়েবি মামলাকারী ও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের নাম-পরিচয়ও পাঠাতে বলা হয়েছে।’
চিঠিতে সারা দেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের খুন ও গুম সংক্রান্ত এবং মিথ্যা ও গায়েবি মামলাসংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট সার্কেলের এডিসি, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), মিথ্যা ও গায়েবি মামলাকারী ও তদন্ত কর্মকর্তার নাম-পরিচয় পাঠাতে বলা হয়েছে। সারা দেশে ৪২৭ জন গুমের শিকার নেতাকর্মীর নাম রয়েছে। খুনের তালিকায় রয়েছে ১ হাজার ২৭৩ জন।’
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘সম্প্রতি উচ্চ আদালত নেতাকর্মীদের জামিন দিলেও নিম্ন আদালত জামিন বাতিল করে নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠিয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের নামও তালিকাভুক্ত করতে বলা হয়েছে।’
আমেরিকান সেন্টারে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মায়ের ডাকের সদস্যদের বৈঠক : গত ১০ মে ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে রাজধানীর বারিধারার আমেরিকান সেন্টারে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। বৈঠক শেষে সংগঠনের নেত্রী তুলি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে আমরা আমেরিকান সেন্টারে গিয়েছিলাম। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের বিষয় তুলে ধরা হয়। তাদের ফিরে পেতে রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করা হয়। জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহযোগিতা না করে উল্টো নানাভাবে হয়রানি করছে।’ মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, সেখানেই আমরা তা বন্ধে কাজ করি। বাংলাদেশে গুমের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
ধনী, দরিদ্র সব শ্রেণির শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় পণ্য বলপয়েন্ট কলম। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই কলমেও সবোর্চ্চ ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু ভ্যাটের কারণে ১ জুলাই থেকে বলপয়েন্ট কলমের দাম বাড়বে। এখানেই শেষ নয়। রাজস্ব আইনের মারপ্যাচে প্লাস্টিকের তৈরি টিফিন বক্স, কলমদানি, স্কেলসহ অনেক কিছুরই দাম বাড়বে। অন্যদিকে বৈশি^ক মন্দার কারণে গত মাস ছয়েক থেকে স্কুল ব্যাগ, খাতা, পেনসিল, রাবারসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়েই চলেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এসব পণ্যের দাম কমাতেও কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বৈশি^ক মন্দার কারণে ক্ষেত্রবিশেষে বাড়বে বলে আশঙ্কা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জন্য প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে শতাংশের হিসাবে শিক্ষায় বরাদ্দ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। নতুন অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি মিলে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর একক শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার জন্য বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বাজেটের আকার বাড়ালেও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আনুপাতিক হিসাবে বাড়ানো হয়নি। অথচ শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন ছিল। একই সঙ্গে বেসরকারি স্কুলের বেতন বাড়ানোয় লাগাম টানতে, কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ করাসহ শিক্ষা খাতে সুশাসন আনতেও কঠোরতা আনা হয়নি, পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী। নির্বাচনের আগের শেষ বাজেট হওয়ায় এমপিও খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি থাকলেও তা আমলে আনা হয়নি।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে বলপয়েন্ট কলমের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপে প্রস্তাব করছি।’
আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের অর্থবিলে প্লাস্টিকের তৈরি অফিস এবং স্কুলসামগ্রীতে সম্পূরক শুল্ক ধার্য থাকার কথা স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে; অর্থাৎ স্কুলসামগ্রী হিসেবে বাজারে বিক্রি হওয়া সব ধরনের পণ্য আমদানিকালে এই সম্পূরক শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের অভিভাবকদের বেশির ভাগই মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত। করোনার ধাক্কায় তাদের অনেকেরই আয় কমে গেছে। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চহারে টিউশন ফি আদায় করায় অনেকেই সন্তানের পড়ালেখার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়লে অভিভাবকদের কষ্ট আরও বাড়বে। তাই আমাদের দাবি থাকবে, আগামী অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্তকালে শিক্ষা উপকরণের দাম কমাতে পদক্ষেপ নেওয়ার।’
পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষা একজন মানুষের অধিকার। বৈশি^ক এই সংকটেও সরকার রাজস্ব আদায় বাড়াতে গিয়ে অনেক প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণে রাজস্ব বসিয়েছে। আবার বাজেট বক্তৃতায় তা স্বীকার করেও নেওয়া হলো।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে মোটা চালের দাম প্রতি কেজি ৬০ টাকার ওপরে। সেখানে শিক্ষা উপকরণের দাম এক টাকা বাড়ালেও অনেকের জন্য বেশি হবে। ডলার সংকট কমার কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না; বরং বৈশি^ক মন্দার কারণে বাড়ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বৈশি^ক মন্দার ধাক্কা সামলাতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এতে স্থানীয় ও আমদানিকৃত কোনো ধরনের শিক্ষা উপকরণের দাম কমানোর পথ দেখছি না।’
শিক্ষার্থীদের জন্য দরকারি দেশি-বিদেশি সব ধরনের স্কুল ব্যাগের দাম গত ছয় মাসে বেড়েছে ৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। স্কুল ব্যাগ তৈরিতে সুইং মেশিন লাগে। এ ছাড়া কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন ধরনের কাপড়, সুতা, রিপিট, জিপার, ফিতা, ফাইভার, স্ক্রিন প্রিন্টের জন্য ডাইস আর রং। ডলার সংকটের কারণে সুইং মেশিনসহ সব ধরনের পণ্য আমদানিতে খরচ বেড়েছে।
দেশের স্কুল ব্যাগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সালসাবিল এক্সপ্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহামুদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে স্কুল ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহৃত জিনিসপত্রের দাম বাড়া শুরু হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর আরও বেড়েছে। এতে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এতে স্কুল ব্যাগের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। এবারের বাজেটে স্কুল ব্যাগের দাম কমাতে কিছু থাকবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু নেই। ফলে দাম তো কমবেই না, আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে আরও বাড়তে পারে।’
বাজার ঘুরে দেখা যায়, মেটাডোর, গুডলাকসহ বিভিন্ন কোম্পানির বলপয়েন্ট কলম বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে। ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর হলে এসব কলমের দাম বাড়বে ৭৫ পয়সা থেকে ৩ টাকা।
মিরপুর শফিক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক মো. শফিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভ্যাটের কারণে ৭৫ পয়সা বাড়লে বিক্রেতারা খুচরা দাম না নিয়ে ১ টাকা ধরে থাকে। সে ক্ষেত্রে ভ্যাটের কারণে ১ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বলপয়েন্ট কলমের দাম বাড়তে পারে।
ছয় মাস আগেও মিরপুর ১০ নম্বরে সোসাইটি বুক হাউসে এক রিম কাগজ ১ হাজার টাকায়, ১২০ পৃষ্ঠার খাতা ৩৫ টাকায়, ২০০ পৃষ্ঠার খাতা ৫০ টাকায়, রাবার ১০ টাকা থেকে ৫০ টাকায়, পেনসিল ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকায়, স্কেল ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। ডলার সংকটে গতকাল এক রিম কাগজ গড়ে ২ হাজার টাকায়, ১২০ পৃষ্ঠার খাতা গড়ে ৬০ টাকায়, ২০০ পৃষ্ঠার খাতা গড়ে ৯০ টাকায়, রাবার ১২ টাকা থেকে ৫০ টাকায়, পেনসিল ১২ টাকা থেকে ৫০ টাকায়, স্কেল ১৫ টাকা থেকে শুরু করে আরও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। প্লাস্টিকের ভালো মানের টিফিন বক্সের দাম গড়ে ১০০ টাকার বেশি। সম্পূরক শুল্কের কারণে ১০০ টাকার টিফিন বক্স বিক্রি হবে ১২০ টাকায়।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বৈশি^ক মন্দা কবে শেষ হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তাই এলসি বা ঋণপত্র খুলতেও স্বাভাবিক ধারা কবে আসবে, তা-ও নিশ্চিত নয়। আন্তর্জাতিক বাজারের এই ধারা চলতে থাকলে পণ্যের দাম কমার চেয়ে বাড়বে বলে আশঙ্কা করছি।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা উপকরণের মধ্যে বলপয়েন্ট প্রয়োজনীয় পণ্য। এখানে রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে ভ্যাট বসানো ঠিক না বলে মনে করছি। এ ছাড়া অন্যান্য শিক্ষা উপকরণে কিছু ছাড় দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব কমানো যেত। বাজেট চূড়ান্তকালে এ বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন। এসব সুবিধা না দিয়ে শুধু ব্যবসায়ীদের ওপর দোষ চাপানো ঠিক না।’
বাজেটে শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় তা না বাড়ানোর দাবি তোলা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। গত শনিবার দুপুরে চাঁদপুরের আল আমিন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পুরস্কার বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়িভাড়া ও শতভাগ উৎসবভাতা প্রদান। আর নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও শিক্ষকদের অন্যতম দাবি। কিন্তু এসব বিষয়েও বাজেট প্রস্তাবে সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ মিলে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
কলকাতা থেকে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশি থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশন জানিয়েছে, তারা ওই ট্রেনে থাকা তিন বাংলাদেশির আহত হওয়ার খবর পেয়েছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘কোনো বাংলাদেশি নিহত হওয়ার খবর এখনো আমরা পাইনি। আমাদের কাছে তিনজন আহত হওয়ার খবর আছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া চারজন আমাদের কাছে ফোন করে জানিয়েছেন, তাদের নিকটাত্মীয় ওই ট্রেনে ছিলেন। তাদের কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা তাদের এখনো নিখোঁজ হিসেবে বিবেচিত করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি দল ইতিমধ্যে রওনা হয়ে গেছে।’
এদিকে ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়া কোনো বাংলাদেশি সম্পর্কে তথ্য জানতে হটলাইন খোলা হয়েছে। উপহাইকমিশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশিরা সাধারণত চিকিৎসার জন্য কলকাতা-চেন্নাই যাতায়াতে করম-ল এক্সপ্রেস ব্যবহার করেন। এই বিবেচনায় দুর্ঘটনার পর ভারতের রেল কর্র্তৃপক্ষ ও ওড়িশার রাজ্য সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ উপহাইকমিশন কলকাতা যোগাযোগ রাখছে।
এ-সংক্রান্ত তথ্যের জন্য উপহাইকমিশনের হটলাইন নম্বরে + ৯১ ৯০ ৩৮৩৫ ৩৫ ৩৩ (হোয়াটসঅ্যাপ) যোগাযোগের অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনে ছিলেন ঝিনাইদহের মহেশপুর সরকারি পদ্মপুকুর শেখ হাসিনা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আক্তারুজ্জামান। তিনি জানান, তার স্ত্রী নুরজাহানের চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে তারা হাওড়ার শালিমার স্টেশনে হাজির হন। বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে তাদের নির্ধারিত করম-ল ট্রেনটি স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। সন্ধ্যা ৭টার তারা বিকট শব্দ ও ঝাঁকুনি অনুভব করেন। ট্রেনের মধ্যে থাকা হাজার হাজার মানুষ কান্নাকাটি শুরু করেন। তারাও বুঝে নেন ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়েছে।
আক্তারুজ্জমান বলেন, ‘তখন হয় সন্ধ্যা ৭টা বাজবে। হঠাৎ সামনের তিনটি বগির সামনে বিকট শব্দ শুনলাম। বুঝলাম দুর্ঘটনা ঘটেছে। বগির বাইরে গিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু দেখতে পেলাম না। শুধু চিৎকার আর চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পেলাম। কাছে গিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম তাও পারলাম না। পরে যা দেখলাম মানুষ ছোটাছুটি করছে। কেউ নিহত ব্যক্তিদের নিয়ে ছুটছে আবার কেউ ছুটছে আহতদের নিয়ে। খুব ভয় পেলাম। আল্লাহ আমাদের বাঁচাইছে।’
আক্তারুজ্জামানের স্ত্রী নুরজাহান বলেন, ‘আমরা এসি বগিতে যাচ্ছিলাম। এসি বগি ৩টা পেছনে ছিল। আমাদের সঙ্গে যশোর ও ঢাকার কয়েকজন যাত্রী ছিলেন। তাদেরও আমাদের সঙ্গে অন্য ট্রেনে তুলে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু রাত হয়ে গিয়েছিল তাই বাংলাদেশিদের আর কোনো তথ্য আমরা জানি না।’
ছুটির দিন নয়, এমনি একটা দিনে টাঙ্গাইলের উদ্দেশে রওনা হলাম সকাল ১০টার দিকে। ধারণা করলাম টাঙ্গাইল যেতে কমপক্ষে পাঁচ ঘণ্টা লাগবে। কারণ ঢাকা-টাঙ্গাইলের পথে পাঁচ ঘণ্টার ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। শুধু পাঁচ ঘণ্টা নয়, আট ঘণ্টার অভিজ্ঞতাও আছে। কিন্তু যে জায়গাটা খুবই জটিলতাপূর্ণ সেই গাবতলী গিয়ে দেখলাম রাস্তা ফাঁকা আর কয়েকটি সাইনবোর্ড যেখানে লেখা ‘দাঁড়ালেই দণ্ড’। খুবই নির্বিঘ্নে আমিন বাজার সেতু পার হয়ে গেলাম। ভাবলাম এর পরের জায়গাটা হচ্ছে সাভার বাসস্ট্যান্ড। ওখানে ঘণ্টাখানেক লাগবেই। কিন্তু রহস্যজনকভাবে দেখলাম সেখানেও একই সাইনবোর্ড ‘দাঁড়ালেই দণ্ড’ এবং রাস্তা ফাঁকা। গেলাম নবীনগর সেখানেও একই অবস্থা, রাস্তা ফাঁকা। গাড়ি চলছে কোথাও কোনো বাধা নেই। তিন ঘণ্টার মাথায় আমি টাঙ্গাইলের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালাম। কী করে সম্ভব হলো! হঠাৎ মনে পড়ল এ হচ্ছে সদ্য নির্বাচিত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র বন্ধুবর আনিসুল হক এবং প্রিয়ভাজন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের পদক্ষেপ।
এরপর ঈদের ছুটিতে টাঙ্গাইল যেতে খুব কষ্টভোগ করেছি। কিন্তু একবার ড্রাইভার জানাল, স্যার কালকে টাঙ্গাইল যেতে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কোনো ম্যাজিক হচ্ছে কি? ড্রাইভার বলল, হ্যাঁ, হচ্ছে। কালকে স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বসবেন এবং তিনি সারা দেশের ট্রাফিক সিস্টেমের পরিস্থিতি দেখবেন। সত্যিকারের ম্যাজিক ঘটে গেল। ঈদের আগের দিন আড়াই ঘণ্টার মধ্যে মায়ের কাছে পৌঁছে গেলাম। এই ঘটনাগুলোতে কি মনে হয়? আমরা পারি। শুধু প্রয়োজন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটু হাল ধরা। কখনো হাল ধরেন মেয়র আনিসুল হক, কখনো জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান। কখনো বড় ধরনের সংকটে হাল ধরেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যথায় যা হওয়ার তাই হচ্ছে। কিন্তু সমগ্র ব্যবস্থাটাকে একটা নিয়ন্ত্রণে আনা কি সম্ভব নয়? প্রযুক্তির এই অভাবনীয় উন্নতির ফলে এটা তো কোনো বিষয়ই নয়। কেমন করে বিষয় নয় তাও জানি।
প্রাচ্যদেশীয় লোকগুলো বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মানুষ আইন মানতে চায় না। আইনের ব্যাপারে তাদের এক ধরনের ক্ষোভ আছে। কেন আইন মানব? এই জন্যই লাখ লাখ মামলার স্তূপ জমে ওঠে আদালতগুলোতে। আজ থেকে ষাট-সত্তর বছর আগে জেলা শহরগুলোতে আদালতের সংখ্যা ছিল খুবই সীমিত। এখন সেখানে ছয়তলা থেকে আটতলা পর্যন্ত ভবনে বিভিন্ন আদালত গড়ে তোলা হয়েছে। একটি জেলা শহরেও অনেক বিচারক রাখতে হচ্ছে এবং ছয় সাত এমনকি আটতলা ভবন নির্মাণ করতে হচ্ছে শুধু আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য। দেশের স্বাধীনতা কি শুধু আদালত নির্মাণের কাজ করবে না কি মানুষে মানুষে সংঘাত কমিয়ে রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘনকারীর সংখ্যা কমিয়ে নিয়ে আসবে?
আমার মনে পড়ে ছোটবেলায় দেখতাম একটা লোক ছোট্ট একটা গাড়ি চালিয়ে চলাচল করত। পাঁচ-ছয় গজ দূরের একটা জায়গায় যেতেন। একটু বড় হয়ে জেনেছি তিনি জেলার মুন্সেফ। বাসা থেকে আদালতে যান। তার চেহারা কখনো দেখিনি। কিন্তু একটা ছোট্ট এলাকায় তিনি এসব আইন আদালতের বিচার করেন। আর বাকিটা করেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। সেটাও খুব বড় কিছু নয়।
সম্প্রতি ব্যাংকের একজন ডিজিএমের স্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের একজন অফিসারের দ্বন্দ্ব হয়েছে। কারণ উনি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে গাড়ি পার্ক করেছিলেন। কিন্তু ডিজিএমের স্ত্রী বলছেন তিনি আইন ভঙ্গ করেননি। তার নামতে যতটুকু সময় লেগেছে ততটুকু সময়ই তিনি নিয়েছেন। এসব ব্যাপারে অনেক বাহাস হতে পারে, কে ভুল আর কে ঠিক? কিন্তু ট্রাফিক আইন তো মানতে হবে। যেখানে ট্রাফিক আইন সম্পূর্ণভাবে যন্ত্র বিবর্জিত আধুনিককালে সমস্ত ব্যবস্থা উপেক্ষিত, যে শহরে সবুজ, হলুদ এবং লালবাতির সংকেত জ¦লে না সেই শহরে ট্রাফিক আইন কী করে বাস্তবায়ন করা যায়? অধিকাংশ সময়ে হস্ত নির্দেশিত ট্রাফিক সিগন্যাল দেখা যায় অথবা নির্দেশকারী একেবারেই তার অভিজ্ঞতাপ্রসূত ট্রাফিক সিগন্যাল দিয়ে যাচ্ছেন। তখন তা মেনে চলাও কি নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে? এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঢাকাবাসী এই যে আদিম অবস্থার মধ্যে পড়ে আছে তার জন্য তাদের কোনো আক্ষেপ নেই?
স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একটি আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, যেটা ছিল আমাদের একটা আদর্শ ব্যবস্থা। সেই ব্যবস্থাকে কেমন করে ধ্বংস করা হলো তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। স্কুলের ওই শিশুরা মন্ত্রীদের, পুলিশ অফিসারদের হাঁটতে বাধ্য করেছিল। তারা ওই ব্যবস্থাকে কিন্তু মেনেও নিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে বিষয়টি রাজনৈতিক হয়ে দাঁড়ায়।
দেশের রাজনীতিবিদদের কি করে বোঝাব সব কিছু রাজনৈতিক করবেন না! সব কিছুকে রাজনৈতিক করতে গেলে অনেক বড় বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। দয়া করে শিক্ষাকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। দুর্নীতিকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। শিক্ষাকে রাজনীতি করতে গেলে কীভাবে দুর্নীতি এসে যায় সেটা আপনারা জানেন। তদবিরে নিয়োগ বাণিজ্যের লাখ লাখ টাকায় শুধু কিছু অশিক্ষিত লোকরা চাকরি পেয়ে যায়। চাকরি পেয়ে তারা শিশুদের মননকে যে কীভাবে ধ্বংস করে দেয় তা রাজনীতিকরা একটিবারও ভাবেন না।
ঢাকা শহরের নাগরিকরা ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে তেমন কিছু বলেন না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়েও কিছু বলেন না। প্রথমটায় বলেন না তার কারণ রিকশায় চড়তে তারা খুবই আনন্দ পান এবং অনেক শিক্ষিত লোককে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে রিকশায় করে রাস্তার রংসাইড দিয়ে ঢুকে পড়েন তারা রিকশাচালককে মানা তো করেনই না, অনেক সময় উৎসাহ এমনকি রংসাইডে ঢুকে পড়ার পরামর্শও দেন। আমি এই প্রসঙ্গে তেমন বেশি কিছু বলতে চাই না। কারণ শহরগুলোতে গণপরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক দূর হেঁটে এসে তারা যে গণপরিবহনে চড়ার একটা সুবন্দোবস্ত পাবেন, সেই ব্যবস্থা আমরা রাখতে পারিনি। পৃথিবীর প্রতিটি বড় বড় শহরে নাগরিকদের অনেক পথ হাঁটতে হয়। কারণ তারা গণপরিবহনে উঠবেন হেঁটেই, কাজেই তাদের স্বাস্থ্যও অত্যন্ত ভালো থাকে। এ দেশেও হয়তো রিকশা বন্ধ করে দিলে মধ্যবিত্তদের একটা আন্দোলনও শুরু হয়ে যাবে। যার নাম হবে অলস বাঙালিদের আন্দোলন।
কিন্তু আবার এও দেখেছি, উত্তরা বা মিরপুরের নাগরিকরা খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে ট্রেনে উঠছেন। কিন্তু ধানম-িবাসীর কী হবে? এখানে তো গণপরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই, একমাত্র বাসই ভরসা। মালিবাগ চৌধুরী পাড়ায় একই ব্যবস্থা। তাদের জন্যও কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এসব সমস্যা মিলে রাষ্ট্রের বায়ান্ন বছর হয়ে গেল, কোনো সুশৃঙ্খল আধুনিক গণপরিবহনের ব্যবস্থা হলো না। অতএব যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে আমাদের নগরগুলোতে সামান্য বৃষ্টি হলে ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় পানি জমে যায়। সেখানে তখন মানুষ মারা পড়বে এক্ষেত্রে রাষ্ট্র এটার কোনো দায়দায়িত্বও নেবে না? দুটি সিটি করপোরেশন নিবিড় ঘুমে রাত্রিযাপন করবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলে একটি মন্ত্রণালয় আছে। তারা বৃষ্টিতে ঘুম উপভোগ করবে আর মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বিপদসঙ্কুল সময় অতিক্রম করবে। এসব সমস্যা দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসছে। কিন্তু এর যে সমাধান সম্ভব তা কিন্তু অনেকেই জানেন না। আনিসুল হক জানতেন। ঢাকার বর্তমান মেট্রোপলিটন কমিশনার হাবিবুর রহমান জানেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও জানেন। জানেন অনেক নাগরিক। কিন্তু সমস্যা সমাধানের সুযোগ অত্যন্ত কম। তাদের ক্ষমতা যদি বাড়ানো যায় তাহলে অনেক কিছু ঘটানো সম্ভব। সেই দিকটায় আমরা কি যেতে পারি? লেখক: নাট্যকার, অভিনেতা ও কলামিস্ট
১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসে শিক্ষকদের অবস্থা নিয়ে আন্তঃসরকার সম্মেলন হয়েছিল। সেখানেই শিক্ষকদের কথা চিন্তা করে ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন (আইএলও) কিছু পরামর্শে স্বাক্ষর করে। এতে শিক্ষকদের অধিকার, দায়িত্ব এবং বিশ্বব্যাপী শিক্ষকতা পেশার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ছিল। ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবস বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (ইআই) ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। দিবসটি উপলক্ষে ইআই প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে, যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।
বিশ্বের ১০০টি দেশে শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে থাকে। অনেক দেশে দিবসটি ভিন্ন ভিন্ন তারিখে পালিত হয়। যেমন, ভারতে শিক্ষক দিবস পালিত হয় ৫ সেপ্টেম্বর। অস্ট্রেলিয়ায় অক্টোবর মাসের শেষ শুক্রবার। শেষ শুক্রবার যদি ৩১ অক্টোবর হয়, তা হলে ৭ নভেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হয়। ভুটান শিক্ষক দিবস পালন করে ২ মে, ইন্দোনেশিয়া ২৫ নভেম্বর, মালয়েশিয়া ১৬ মে, ইরান ২ মে, ইরাক ১ মার্চ, আর্জেন্টিনা ১১ সেপ্টেম্বর, ব্রাজিল ১৫ অক্টোবর, চীন ১০ সেপ্টেম্বর, তাইওয়ান ২৮ সেপ্টেম্বর, থাইল্যান্ড ১৬ জানুয়ারি, সিঙ্গাপুর সেপ্টেম্বরের প্রথম শুক্রবার দিবসটি পালন করে। ইউনেস্কো কর্র্তৃক নির্ধারিত এ বছরের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘ÔThe teachers we need for the education we want : The global imperative to reverse the teacher shortage’। অর্থাৎ, ‘কাক্সিক্ষত শিক্ষা পেতে যেমন শিক্ষক চাই : শিক্ষক সংকট ঠেকাতে বৈশি^ক উদ্যোগ।’ প্রতিপাদ্যটি বেশ চমৎকার ও বর্তমান সময়ের সঙ্গে খুবই প্রাসঙ্গিক। কারণ আমরা যে ধরনের শিক্ষা চাই আমাদের সে ধরনের শিক্ষকই দরকার। তাই প্রথমত বুঝতে হবে যে আমরা আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মকে কী শিক্ষা দিতে চাই। শিক্ষার যথাযথ বিকাশের কাজটি শিক্ষকদেরই। আর এর জন্য শিক্ষকদের হতে হবে দক্ষ ও যোগ্য। পাশাপাশি দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকের যে ঘাটতি সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
শিক্ষাকে যদি জাতির মেরুদণ্ড ধরা হয়, তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষকরা হলেন শিক্ষার মেরুদণ্ড। কিন্তু শিক্ষকদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখা যায়। শিক্ষকরা সমস্যায় থাকলে শিক্ষার গুণগত মান এবং কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কিছু প্রস্তাবনা করা যেতে পারে। প্রথমত শিক্ষকতা পেশার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ পেশায় সামগ্রিক নিরাপত্তা না থাকার ফলে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের অনেকে আসতে চায় না এবং এভাবে চলতে থাকলে আগামীতেও আসতে চাইবে না। আমাদের এখনই সময় এসেছে, এই পেশার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শিক্ষকরা আগামীতেও যাতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে, সেই জন্য বিভিন্ন বীমা, বিশেষ ঋণ সহায়তা দিয়ে পেশার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী শিক্ষকদের বেতন সুনির্দিষ্ট করে কেন্দ্রীয়ভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শিক্ষকরা যেন বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন তা ভাবতে হবে। সময়ের সঙ্গে জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা করে তাদের বেতনের মানদণ্ড মানসম্মত করতে হবে। দেখা যায়, শিক্ষকতা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পেশা হলেও দেশের মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চান না অন্য পেশার মতো এ পেশায় সামগ্রিক নিরাপত্তা নেই বলে। অথচ মেধাবীদেরই এ পেশায় বেশি বেশি আসার কথা ছিল। এতে দেশ ও জাতি উপকৃত হতো। শিক্ষকতাকে মহান পেশা বলা হলেও কার্যত এ পেশা অনেকটা অবহেলিত। অন্য পেশার মতো এ পেশায় সামগ্রিক নিরাপত্তা নেই। এ কারণে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চান না। তাই এ পেশার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এখন সময়ের দাবি।
শিক্ষা খাত সময়ের সেরা বিনিয়োগের ক্ষেত্র। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট বা দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। ভারতের নোবেল বিজয়ী শিক্ষাবিদ কৈলাশ সত্যার্থী বলছেন, শিক্ষায় ১ ডলার বিনিয়োগ করলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে ১৫ গুণ রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। ফলে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আগ্রহ বাড়াতে হবে। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী মূল্যায়নের মাধ্যমে এই পেশায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে হবে।
শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা শিক্ষার উন্নয়নে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে পৃথিবী প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষকদেরও বদলাতে হবে প্রতিনিয়ত। এক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষকরা কতটা পিছিয়ে সেটা দেশে মহামারী করোনা আসার পর আমরা লক্ষ করেছি। একজন শিক্ষক আজই আগামী দশকের সুযোগ ও সমস্যা মোকাবিলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করছেন। ফলে শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য যুগোপযোগী ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ, সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের আত্মোন্নয়নের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষকদের গড়ে তুলতে হবে আন্তর্জাতিক মানের।
শিক্ষক সংকট ও শিক্ষকদের প্রমোশনজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেখা যায়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচুর শিক্ষক সংকট। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রমোশন যেন সোনার হরিণ। শত শত প্রধান শিক্ষকের পদ খালি পড়ে আছে। কিন্তু প্রমোশন নেই। সহকারী প্রধান শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রমোশন হলে সিনিয়র শিক্ষকদের সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদে প্রমোশন পাওয়ার সুযোগ হবে। প্রমোশন হলে কাজে গতি বাড়বে। তাছাড়া সিলেকশন গ্রেড, টাইম স্কেল, যথাসময়ে পদোন্নতি ইত্যাদির জটিলতা নিরসনেও কাজ করতে হবে। শিক্ষার প্রাথমিক স্তর হলো শিক্ষার্থীদের জীবনের ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি। এ স্তরে শিক্ষকরা যদি যোগ্য ও যথাযথ দক্ষতাসম্পন্ন হন, তাহলে শিক্ষার্থীদের ভিত্তি মজবুত হবে। জ্ঞানে-মানে একটি শক্তিশালী প্রজন্ম গড়ে উঠবে। এজন্য প্রাথমিক স্তরে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। আর শিক্ষার মান উন্নয়নে এখন এটা বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষকদের কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে। শিক্ষকতায় স্বীকৃতি খুব গুরুত্বপূর্ণ মোটিভেশন হিসেবে কাজ করে। সুতরাং, শিক্ষকদের প্রতিটি কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ইদানীং অনেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষকদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান করে থাকে। যেমন: বছর শেষে ‘সেরা শিক্ষক’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই বছর সরকারের এটুআই ও গ্রামীণফোনের উদ্যোগে ‘সংকটে নেতৃত্বে’ শিরোনামে শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান করেছে। শিক্ষকদের ক্লাসের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের থেকে মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষককে স্বীকৃতি দিতে হবে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান সবাই সফলকাম হবে।
দাবি ছিল শিক্ষক দিবসটিকে সরকারিভাবে পালন করা। অবশেষে গত বছর প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে দিবসটি ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। এর আগে এত দিন ধরে এ দিবসটি সরকারিভাবে পালিত হতো না। এখন থেকে পালিত হবে। এ বছর জাতীয় শিক্ষক দিবসের পরিবর্তে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালনেরও উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই দিবসটি এখন সরকারিভাবে পালিত হলে শিক্ষকরা অবশ্যই নিজেদের সম্মানিত বোধ করবেন, যা তাদের জন্য বড় ধরনের একটা প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। শিক্ষকতা একটি মহান ও গুরুত্বপূর্ণ পেশা। জাতি গঠনে শিক্ষকদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু সাম্প্রতিককালে শিক্ষকদের ওপর হামলা ও অপমানের ঘটনা আমাদের ব্যথিত করে। পাশাপাশি বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নৈতিক ও আদর্শিক বিচ্যুতিও আমাদের সমানভাবে ব্যথিত করে। কারণ, শিক্ষকরাই জাতি গড়ার কারিগর। তারা যদি এমন হন তাহলে আমাদের কেমন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠবে, সে প্রশ্ন না উঠে পারে না। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, শিক্ষকতা পেশার যথাযথ মূল্যায়ন ও শিক্ষকদের মানোন্নয়ন ছাড়া শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
লেখক : লেখক
‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ২০২০ সালে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছিলেন সংসদ সদস্যরা (এমপি)। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় তালিকা অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা তাদের চাহিদার পরিবর্তন আনেন। তারা ইউনিয়ন পর্যায়ে রাস্তা না করে সেতু তৈরির ওপর জোর দেন। কিছু ক্ষেত্রে খাতভিত্তিক ব্যয় না চেয়ে থোক বরাদ্দও চাওয়া হয়েছিল। চাহিদার জটিলতায় ধীরগতিতে চলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন। ঠিক সময়ে প্রকল্পটি শেষ করতে না পারার শঙ্কায় ফের সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
যদিও একই রকম আরেকটি প্রকল্পের কাজ তখনো চলমান ছিল। চলমান একটি প্রকল্প শেষ না হতেই সংসদ সদস্যদের জন্য আরেকটি প্রকল্প নিয়ে তখন বেশ আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছিল।
প্রকল্প-৩-এর মেয়াদ আছে আর এক বছর। অথচ কাজ চলছে ঢিমেতালে। নির্বাচনের আগে তাদের চাহিদার পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৬ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের পর ধীরে ধীরে এগোতে থাকে। এর বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। গত আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি ৪১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
এ প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে প্রত্যেক সংসদ সদস্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলেন। সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট নির্মাণে বছরে পাঁচ কোটি টাকা করে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রতি বছর পাঁচ কোটি করে চার বছরে এ অর্থে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা তাদের। সিটি করপোরেশন এলাকার ২০ সংসদ সদস্য এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যরা এ বরাদ্দের বাইরে রয়েছেন।
নিজ এলাকার উন্নয়নে এমন সুযোগ পেলেও সংসদ সদস্যরা কাজে লাগাতে পারেননি। প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় শেষ। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়ন অর্ধেকেরও কম হয়েছে। অধিকাংশ সংসদ সদস্যই তাদের প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেননি। কিন্তু তারা বলছেন, যে চাহিদা তারা দিয়েছিলেন তার অধিকাংশ পেয়েছেন।
জানতে চাইলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার আসনে যেসব চাহিদা দিয়েছিলাম সবগুলোই পেয়েছি। কিন্তু এ মুহূর্তে এসে বাস্তবায়নের অগ্রগতি ৪১ শতাংশ বলা হচ্ছে, এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। পরিকল্পনা কমিশনে কীসের ভিত্তিতে এই সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা জানি না।’
সংসদ সদস্যরা যে চাহিদা পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন সে বিষয়ে ইনু বলেন, ‘কোনো এমপি চাহিদা পরিবর্তন করার কথা নয়। আমার এলাকায় যা চেয়েছি তাই তো পুরোটা তারা দিতে পারেননি। প্রতি বছর পাঁচ কোটির বরাদ্দ, তার বাইরে তো তারা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না।’ পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা (পিইসি) অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রুহুল আমিন খানের কাছে সংশোধনের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সেখানে তিনি বলেন, এ প্রকল্পে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সড়ক ও সেতু-কালভার্ট নতুনভাবে নির্মাণের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত স্কিমগুলোর গুরুত্ব বিবেচনায় বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। স্কিমগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পে অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন।
পিইসি সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, এ বিষয়ে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, যেসব স্কিম অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর যৌক্তিকতাসহ সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে, নতুনভাবে গৃহীত স্কিমগুলো বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ ৫০ কোটি টাকার কম করতে হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তৃতীয় দফার এ প্রকল্পের আওতায় নতুন করে উপজেলা সড়ক নির্মাণ করা হবে ৩০৫ দশমিক ২১ কিলোমিটার। ইউনিয়ন সড়ক নির্মাণ করা হবে ৬৬০ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার। গ্রাম সড়ক উন্নয়ন হবে ৫ হাজার ৭৫ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার। গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ হবে ১ হাজার ৯০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার। গ্রামীণ সড়কে ১০০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যরে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে ৭ হাজার ৯৯২ দশমিক ২২ মিটার।
এসব প্রস্তাব সংসদ সদস্যদের চাহিদার ভিত্তিতেই করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়নের সময় ফের বাদ সাধেন তারাই। পরে মূল প্রকল্প প্রস্তাব থেকে প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধনে ১৯৩ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ৮৩ দশমিক ৯১ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক, ৫০৫ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম বাদ দেওয়ার আবদার করেছেন তারা। এর বিপরীতে ৩৯২ দশমিক শূন্য ১ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক ও ২ হাজার ৬৭৪ দশমিক ৫১ মিটার সেতু-কালভার্টের প্রস্তাব এসেছে তাদের কাছ থেকে। সে অনুযায়ী সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রুহুল আমিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি এ রাস্তাটি আজকে করব, কিন্তু দেখা গেল অন্য কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে এ রাস্তাটি হয়ে গেছে। এমপিরা যেভাবে ডিও দেন প্রকল্পটি সেভাবে চলে, আমাদের ফ্রেমওয়ার্কটিই সেভাবে তৈরি করা।’
এ মুহূর্তে প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে পরিবেশের জন্য ড্রেনেজ সুবিধা রাখতে হবে। একটি রাস্তা করতে গিয়ে দেখা গেল, একটি কালভার্ট বা সেতুর প্রয়োজন হয়েছে। এটি এখন প্রথম প্রায়োরিটি (অগ্রাধিকার)। এটি প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন হিসেবে কাজ করছে।’
বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণ হিসেবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘যখন প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছিল তখন করোনা মহামারী ছিল। করোনার কারণে প্রকল্পটির কাজ দেরিতে শুরু হয়েছিল, যার ফলে এ মুহূর্তে বাস্তবায়ন অগ্রগতি এ পর্যায়ে এসেছে।
পিইসি সভায় সংশোধনের কারণ জানতে চাওয়া হলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ১১তম জাতীয় সংসদ সদস্যদের প্রাথমিক চাহিদাপত্র (ডিও) গ্রহণ করে স্কিমের তালিকা প্রণয়ন করা হয়। তবে বাস্তবায়ন পর্যায়ে বিশেষ পরিস্থিতি ও অগ্রাধিকার ক্রমপরিবর্তনের ফলে আরডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত স্কিম তালিকা পরিবর্তন করে ডিওর মাধ্যমে সংশোধিত নতুন স্কিম তালিকা করা হয়েছে। পরিবর্তিত স্কিম তালিকা অনুযায়ী গ্রাম সড়ক ও সেতু-কালভার্টের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উপজেলা-ইউনিয়ন সড়কের পরিমাণ কমেছে।
এ প্রকল্পের তথ্য-বিশ্লেষণে দেখা যায়, এতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৭৫ কিলোমিটারের গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের জন্য। এতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ হাজার ৬০ কোটি টাকা। ৬৬০ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫২৮ কোটি টাকা, ৩০৫ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক উন্নয়নের জন্য ২৯০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। তা ছাড়া ১ হাজার ৯০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক সংরক্ষণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৮১ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠনের পর প্রত্যেক সংসদ সদস্য নিজ আসনের অবকাঠামো উন্নয়নে ১৫ কোটি টাকা করে পেয়েছিলেন। সে সময় প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৮৯২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এটি ২০১০ সালের মার্চ থেকে ২০১৬ সালের জুনে শেষ হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্যদের ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ পর্যায়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৬ হাজার ৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়ন হয়েছে। এ প্রকল্পটি শেষ না করেই তৃতীয় মেয়াদে আবার ২০ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়। এই উদ্যোগের কারণে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় প্রশ্নের মুখে পড়ে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ প্রকল্পের আওতায় সংসদ সদস্যরা সরাসরি টাকা পাবেন না। তারা শুধু তাদের নির্বাচনী আসনে পছন্দ মোতাবেক প্রকল্পের নাম দেবেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আবার সরকারকে বলব, রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার পরিণতি ভালো হয় না। যত দ্রুত সম্ভব খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিন। নাগরিক হিসেবে তাকে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া হোক। তা না হলে একজন গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় প্রবীণ নাগরিকের প্রতি বেআইনি, অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণের জন্য সরকারই দায়ী থাকবে।’
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, ‘সুচিকিৎসা পাওয়া নাগরিকের মৌলিক অধিকার। বেগম জিয়া দেশের একজন সিনিয়র সিটিজেন। সংবিধান তার বেঁচে থাকার জন্য চিকিৎসা গ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করেছে। যে রোগের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়, সামর্থ্য অনুযায়ী দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধা দেওয়া সংবিধানকে অবজ্ঞা করা। দেশনেত্রীকে চিকিৎসা-সুরক্ষার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, যা অন্যায়। এটা অমানবিক। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আইনের দোহাই দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত রাখার সুযোগ নেই। সরকার হীন উদ্দেশ্যে আইনের দোহাই দিয়ে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
চেয়ারপারসনের চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনার (খালেদা জিয়া) যারা চিকিৎসা করছেন এটা তাদের বিষয়। চিকিৎসকরা তার বেস্ট ট্রিটমেন্ট করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। আমরা তো জোর করে তাকে নিয়ে যেতে পারব না বিদেশে। আমাদের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। আমরা যা আছে সে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করে যাব। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন হবে এবং খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে।’
ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খন্ডন করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সত্য হলো, জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দন্ডপ্রাপ্ত আসামি তৎকালীন জাসদের সাধারণ সম্পাদক আ স ম আবদুর রবকে চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। একইভাবে ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমকে ১/১১’র সরকার ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এ রকম দৃষ্টান্ত আরও আছে। শেখ হাসিনাও এমন সুযোগ (বিদেশে চিকিৎসা) নিয়েছেন ২০০৮ সালে। জরুরি আইনের সরকারের সময়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বেশ কয়েকটি চাঁদাবাজির মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। ওই অবস্থায় নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হলে তিনি দুই/তিনদিনের মধ্যে বিদেশে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। তিনি বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছিলেন একজন ওয়ারেন্টি আসামি হিসেবে; প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথও নিয়েছিলেন। সুতরাং আইনের দোহাই দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই।’
আপনারা এ অবস্থায় কি গণতান্ত্রিক পথে হাঁটবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের বাইরে যেতে পারি না। এরপরও যদি কেউ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দেয় সে বাধাও আমরা গণতান্ত্রিকভাবে অতিক্রম করব। তার (শেখ হাসিনা) বক্তব্য তো আপনারা শুনেছেন। উনি তো বিদেশে যেতে দেবেন না বলেছেন। তারপরও আমরা আপিল করছি শুভবুদ্ধির কাছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়ার) পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শর্তসাপেক্ষে উনি বিদেশে যাবেন না।’
খালেদা জিয়াকে অসুস্থ অবস্থায় রেখে নির্বাচনে যাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না। বেগম জিয়াকে এ অবস্থায় রেখে, হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। আমাদের পরিষ্কার কথা।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।
দুর্গাপূজার আগে পরে সরকারকে আলটিমেটাম দেবে বিএনপি : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একদফার আন্দোলনের শেষ ধাপে সরকারকে আলটিমেটাম দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুগপৎ আন্দোলনে নেতৃত্বে থাকা দল বিএনপি। সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান দুর্গাপূজার আগে বা পরে এই আলটিমেটাম ঘোষণার সিদ্ধান্ত থাকলেও পূজার কয়েকদিন কর্মসূচি রাখবে না দলটি। এর আগে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় বিএনপির রোডমার্চ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে বিএনপি। সেটি না হলে প্রথম ধাপের কর্মসূচি শেষে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে আলটিমেটাম দেওয়ার আগে চূড়ান্ত ধাপের আংশিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এর আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে যুগপতের শরিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করা হবে। তাদের দেওয়া বিভিন্ন প্রস্তাবনা সমন্বয় করে আন্দোলন পরিকল্পনা প্রণয়ন চূড়ান্ত হবে। গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে ওই সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অংশ নেন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা একদফার আন্দোলনে রয়েছি। প্রতিদিনই আমাদের কর্মসূচি থাকছে। নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা সরকারকে আর সময় দিতে চাই না। এবারের কর্মসূচি হবে রাজধানীকেন্দ্রিক। এই কর্মসূচির মধ্য দিয়েই সরকার পতন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে।’
বৈঠক সূত্রগুলো বলছে, প্রথম ধাপের কর্মসূচি শেষে ৭ অক্টোবর থেকে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি শুরু হতে পারে। এর এক পর্যায়ে ১৮ অক্টোবরের দিকে সরকারকে পদত্যাগে আলটিমেটাম ঘোষণা করা হতে পারে। এর আগ পর্যন্ত রাজধানীর পাশাপাশি বাইরেও কিছু কর্মসূচি হবে। তবে আলটিমেটামের পর সব কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। তখন সারা দেশের নেতাকর্মীদের রাজধানীর কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার নির্দেশনা দেবে বিএনপি।
জানা গেছে, চলতি অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে একদফার যুগপৎ আন্দোলন বেগবান করার আগে যুব ও ছাত্র কনভেনশন করবে বিএনপি। ছাত্র কনভেনশনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনের বটতলায় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য গত ২৯ সেপ্টেম্বর ১৫টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য’র আত্মপ্রকাশ হয়েছে। একদফার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পৃক্ত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দলটির নেতারা মনে করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে পারলে চূড়ান্ত সফলতা আরও সহজ হবে। এছাড়াও যুব কনভেনশন সফল করতে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠনের সমন্বয়ে শিগগির ‘যুব ঐক্যজোট’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
বৈঠক সূত্র আরও জানায়, ১৮ অক্টোবরের আগেই পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) বরাবর স্মারকলিপি দিতে পারে বিএনপি। স্মারকলিপিতে পুলিশকে চলমান হামলা-মামলা-গ্রেপ্তার বন্ধ এবং ইসিকে সম্ভাব্য একতরফা নির্বাচনের উদ্যোগ না নেওয়ার আহ্বান জানানো হবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা করতে পারেন, সেজন্য আগামী ২০ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত পূজা চলাকালীন বড় কোনো কর্মসূচি রাখবে না যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো।
সূত্রগুলো বলছে, সরকার আলটিমেটাম মেনে পদত্যাগ না করলে, দুর্গাপূজার পরে ঘেরাও কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে আলটিমেটামের কর্মসূচি শুরু হবে। এই আন্দোলনের শুরুতেই সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এরপর পর্যায়ক্রমে গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ঘেরাওসহ টানা অবস্থান কর্মসূচিতে যেতে পারে তারা। পাশাপাশি রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের মতো কর্মসূচিও আসতে পারে। একেবারে বাধ্য না হলে হরতালের মতো কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি।
থাইগ্লাস আর লাল ইটে চকচক করছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতাল ভবন। কার্যক্রম পরিচালনায় রুটিন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের। অথচ ভবনটির ভেতরে চিকিৎসা-সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির অস্তিত্ব নেই। নেই চেয়ার-টেবিল ও অন্যান্য আসবাব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালে ৫ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করে একটি ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালের অনুমোদন দেওয়া হয়। ঢাকাবাসীর গৃহপালিত বিভিন্ন পশুপাখির চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে হাতে-কলমে এ বিষয়ে ধারণা পান, সে উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়।
নানা জটিলতা পেরিয়ে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন আর ২০২৩ সালের মে মাসে ঘটা করে উদ্বোধন করা হয় হাসপাতালটির। এতে দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হলো বলে দাবি করা হয়। উদ্বোধনের পর প্রায় ৫ মাস পার হয়ে গেছে; হাসপাতালে চিকিৎসার যন্ত্রপাতি নেই।
সরজমিনে দেখা গেছে, তিনতলাবিশিষ্ট ভবনের কোনো রুমেই চিকিৎসার যন্ত্রপাতি বলতে গেলে নেই; চেয়ার-টেবিল বা অন্যান্য আসবাবও নেই। নিচতলায় গেটের সামনে প্যাকেট করা কিছু চেয়ারের পাশে বসে আছেন গার্ড। প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো স্যার (ডাক্তার) বসেন না। কেউ সেবা নিতে এলে স্যারদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করিয়ে দিই। স্যারেরা তাদের শেখ কামাল ভবনে নিয়ে সেবা দেন।’
হাসপাতালে সেবার ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীরা যেমন ব্যবহারিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নগরবাসীও। সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, তাহলে কী কাজে লাগছে ৫ কোটি টাকার এ ভবন?
সংশ্লিষ্ট অনুষদের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১২ সাল থেকে অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে একটি প্রাণী হাসপাতালের দাবি করা হচ্ছে। বরাদ্দ হলেও অজানা কারণে এগোয় না কাজ। এক যুগের বেশি সময় পর স্থাপনা হলেও কোনো সরঞ্জাম সেখানে নেই। এভাবেই চলবে; এই হাসপাতাল কখনো কর্মচঞ্চল হবে না। কারণ এই অনুষদের বেশিরভাগ শিক্ষক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো না কোনো বেসরকারি পশুক্লিনিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তারা চান না হাসপাতালটি জনপ্রিয় হোক।
হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কে বি এম সাইফুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগের যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে যাওয়ায় আমাদের এ হাসপাতালে যন্ত্রপাতি নেই। বিভাগের যন্ত্রপাতি দিয়ে কোনোমতে কাজ চালাচ্ছি। নতুন যন্ত্রপাতি, আসবাব আর লোকবল পেলে হাসপাতাল পুরোদমে চালু হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের কোনো ক্লিনিকে কাজ করা বাধা হবে না।’
যন্ত্রপাতি কেনার বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. মোমেনুল আহসানের সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
ছুটির দিন নয়, এমনি একটা দিনে টাঙ্গাইলের উদ্দেশে রওনা হলাম সকাল ১০টার দিকে। ধারণা করলাম টাঙ্গাইল যেতে কমপক্ষে পাঁচ ঘণ্টা লাগবে। কারণ ঢাকা-টাঙ্গাইলের পথে পাঁচ ঘণ্টার ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। শুধু পাঁচ ঘণ্টা নয়, আট ঘণ্টার অভিজ্ঞতাও আছে। কিন্তু যে জায়গাটা খুবই জটিলতাপূর্ণ সেই গাবতলী গিয়ে দেখলাম রাস্তা ফাঁকা আর কয়েকটি সাইনবোর্ড যেখানে লেখা ‘দাঁড়ালেই দণ্ড’। খুবই নির্বিঘ্নে আমিন বাজার সেতু পার হয়ে গেলাম। ভাবলাম এর পরের জায়গাটা হচ্ছে সাভার বাসস্ট্যান্ড। ওখানে ঘণ্টাখানেক লাগবেই। কিন্তু রহস্যজনকভাবে দেখলাম সেখানেও একই সাইনবোর্ড ‘দাঁড়ালেই দণ্ড’ এবং রাস্তা ফাঁকা। গেলাম নবীনগর সেখানেও একই অবস্থা, রাস্তা ফাঁকা। গাড়ি চলছে কোথাও কোনো বাধা নেই। তিন ঘণ্টার মাথায় আমি টাঙ্গাইলের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালাম। কী করে সম্ভব হলো! হঠাৎ মনে পড়ল এ হচ্ছে সদ্য নির্বাচিত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র বন্ধুবর আনিসুল হক এবং প্রিয়ভাজন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের পদক্ষেপ।
এরপর ঈদের ছুটিতে টাঙ্গাইল যেতে খুব কষ্টভোগ করেছি। কিন্তু একবার ড্রাইভার জানাল, স্যার কালকে টাঙ্গাইল যেতে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কোনো ম্যাজিক হচ্ছে কি? ড্রাইভার বলল, হ্যাঁ, হচ্ছে। কালকে স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বসবেন এবং তিনি সারা দেশের ট্রাফিক সিস্টেমের পরিস্থিতি দেখবেন। সত্যিকারের ম্যাজিক ঘটে গেল। ঈদের আগের দিন আড়াই ঘণ্টার মধ্যে মায়ের কাছে পৌঁছে গেলাম। এই ঘটনাগুলোতে কি মনে হয়? আমরা পারি। শুধু প্রয়োজন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটু হাল ধরা। কখনো হাল ধরেন মেয়র আনিসুল হক, কখনো জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান। কখনো বড় ধরনের সংকটে হাল ধরেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যথায় যা হওয়ার তাই হচ্ছে। কিন্তু সমগ্র ব্যবস্থাটাকে একটা নিয়ন্ত্রণে আনা কি সম্ভব নয়? প্রযুক্তির এই অভাবনীয় উন্নতির ফলে এটা তো কোনো বিষয়ই নয়। কেমন করে বিষয় নয় তাও জানি।
প্রাচ্যদেশীয় লোকগুলো বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মানুষ আইন মানতে চায় না। আইনের ব্যাপারে তাদের এক ধরনের ক্ষোভ আছে। কেন আইন মানব? এই জন্যই লাখ লাখ মামলার স্তূপ জমে ওঠে আদালতগুলোতে। আজ থেকে ষাট-সত্তর বছর আগে জেলা শহরগুলোতে আদালতের সংখ্যা ছিল খুবই সীমিত। এখন সেখানে ছয়তলা থেকে আটতলা পর্যন্ত ভবনে বিভিন্ন আদালত গড়ে তোলা হয়েছে। একটি জেলা শহরেও অনেক বিচারক রাখতে হচ্ছে এবং ছয় সাত এমনকি আটতলা ভবন নির্মাণ করতে হচ্ছে শুধু আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য। দেশের স্বাধীনতা কি শুধু আদালত নির্মাণের কাজ করবে না কি মানুষে মানুষে সংঘাত কমিয়ে রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘনকারীর সংখ্যা কমিয়ে নিয়ে আসবে?
আমার মনে পড়ে ছোটবেলায় দেখতাম একটা লোক ছোট্ট একটা গাড়ি চালিয়ে চলাচল করত। পাঁচ-ছয় গজ দূরের একটা জায়গায় যেতেন। একটু বড় হয়ে জেনেছি তিনি জেলার মুন্সেফ। বাসা থেকে আদালতে যান। তার চেহারা কখনো দেখিনি। কিন্তু একটা ছোট্ট এলাকায় তিনি এসব আইন আদালতের বিচার করেন। আর বাকিটা করেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। সেটাও খুব বড় কিছু নয়।
সম্প্রতি ব্যাংকের একজন ডিজিএমের স্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের একজন অফিসারের দ্বন্দ্ব হয়েছে। কারণ উনি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে গাড়ি পার্ক করেছিলেন। কিন্তু ডিজিএমের স্ত্রী বলছেন তিনি আইন ভঙ্গ করেননি। তার নামতে যতটুকু সময় লেগেছে ততটুকু সময়ই তিনি নিয়েছেন। এসব ব্যাপারে অনেক বাহাস হতে পারে, কে ভুল আর কে ঠিক? কিন্তু ট্রাফিক আইন তো মানতে হবে। যেখানে ট্রাফিক আইন সম্পূর্ণভাবে যন্ত্র বিবর্জিত আধুনিককালে সমস্ত ব্যবস্থা উপেক্ষিত, যে শহরে সবুজ, হলুদ এবং লালবাতির সংকেত জ¦লে না সেই শহরে ট্রাফিক আইন কী করে বাস্তবায়ন করা যায়? অধিকাংশ সময়ে হস্ত নির্দেশিত ট্রাফিক সিগন্যাল দেখা যায় অথবা নির্দেশকারী একেবারেই তার অভিজ্ঞতাপ্রসূত ট্রাফিক সিগন্যাল দিয়ে যাচ্ছেন। তখন তা মেনে চলাও কি নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে? এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঢাকাবাসী এই যে আদিম অবস্থার মধ্যে পড়ে আছে তার জন্য তাদের কোনো আক্ষেপ নেই?
স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একটি আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, যেটা ছিল আমাদের একটা আদর্শ ব্যবস্থা। সেই ব্যবস্থাকে কেমন করে ধ্বংস করা হলো তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। স্কুলের ওই শিশুরা মন্ত্রীদের, পুলিশ অফিসারদের হাঁটতে বাধ্য করেছিল। তারা ওই ব্যবস্থাকে কিন্তু মেনেও নিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে বিষয়টি রাজনৈতিক হয়ে দাঁড়ায়।
দেশের রাজনীতিবিদদের কি করে বোঝাব সব কিছু রাজনৈতিক করবেন না! সব কিছুকে রাজনৈতিক করতে গেলে অনেক বড় বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। দয়া করে শিক্ষাকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। দুর্নীতিকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। শিক্ষাকে রাজনীতি করতে গেলে কীভাবে দুর্নীতি এসে যায় সেটা আপনারা জানেন। তদবিরে নিয়োগ বাণিজ্যের লাখ লাখ টাকায় শুধু কিছু অশিক্ষিত লোকরা চাকরি পেয়ে যায়। চাকরি পেয়ে তারা শিশুদের মননকে যে কীভাবে ধ্বংস করে দেয় তা রাজনীতিকরা একটিবারও ভাবেন না।
ঢাকা শহরের নাগরিকরা ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে তেমন কিছু বলেন না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়েও কিছু বলেন না। প্রথমটায় বলেন না তার কারণ রিকশায় চড়তে তারা খুবই আনন্দ পান এবং অনেক শিক্ষিত লোককে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে রিকশায় করে রাস্তার রংসাইড দিয়ে ঢুকে পড়েন তারা রিকশাচালককে মানা তো করেনই না, অনেক সময় উৎসাহ এমনকি রংসাইডে ঢুকে পড়ার পরামর্শও দেন। আমি এই প্রসঙ্গে তেমন বেশি কিছু বলতে চাই না। কারণ শহরগুলোতে গণপরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক দূর হেঁটে এসে তারা যে গণপরিবহনে চড়ার একটা সুবন্দোবস্ত পাবেন, সেই ব্যবস্থা আমরা রাখতে পারিনি। পৃথিবীর প্রতিটি বড় বড় শহরে নাগরিকদের অনেক পথ হাঁটতে হয়। কারণ তারা গণপরিবহনে উঠবেন হেঁটেই, কাজেই তাদের স্বাস্থ্যও অত্যন্ত ভালো থাকে। এ দেশেও হয়তো রিকশা বন্ধ করে দিলে মধ্যবিত্তদের একটা আন্দোলনও শুরু হয়ে যাবে। যার নাম হবে অলস বাঙালিদের আন্দোলন।
কিন্তু আবার এও দেখেছি, উত্তরা বা মিরপুরের নাগরিকরা খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে ট্রেনে উঠছেন। কিন্তু ধানম-িবাসীর কী হবে? এখানে তো গণপরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই, একমাত্র বাসই ভরসা। মালিবাগ চৌধুরী পাড়ায় একই ব্যবস্থা। তাদের জন্যও কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এসব সমস্যা মিলে রাষ্ট্রের বায়ান্ন বছর হয়ে গেল, কোনো সুশৃঙ্খল আধুনিক গণপরিবহনের ব্যবস্থা হলো না। অতএব যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে আমাদের নগরগুলোতে সামান্য বৃষ্টি হলে ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় পানি জমে যায়। সেখানে তখন মানুষ মারা পড়বে এক্ষেত্রে রাষ্ট্র এটার কোনো দায়দায়িত্বও নেবে না? দুটি সিটি করপোরেশন নিবিড় ঘুমে রাত্রিযাপন করবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলে একটি মন্ত্রণালয় আছে। তারা বৃষ্টিতে ঘুম উপভোগ করবে আর মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বিপদসঙ্কুল সময় অতিক্রম করবে। এসব সমস্যা দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসছে। কিন্তু এর যে সমাধান সম্ভব তা কিন্তু অনেকেই জানেন না। আনিসুল হক জানতেন। ঢাকার বর্তমান মেট্রোপলিটন কমিশনার হাবিবুর রহমান জানেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও জানেন। জানেন অনেক নাগরিক। কিন্তু সমস্যা সমাধানের সুযোগ অত্যন্ত কম। তাদের ক্ষমতা যদি বাড়ানো যায় তাহলে অনেক কিছু ঘটানো সম্ভব। সেই দিকটায় আমরা কি যেতে পারি? লেখক: নাট্যকার, অভিনেতা ও কলামিস্ট