
আগামী অর্থবছরের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেছেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে নিজের মতামত জানাতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মন্দার কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত প্রায় সব খাতের খরচ বেড়েছে। তাই করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো উচিত।
জসিম উদ্দিন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে কর থেকে রাজস্ব ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি এবং অন্য খাত থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা আদায়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিশাল রাজস্ব সংগ্রহ করা সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এমনিতেই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকসহ রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়া বিশ্বব্যাপী কঠিন পরিস্থিতির কারণে অত্যন্ত চাপের মুখে। এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিশাল এ বাজেট বাস্তবায়নে অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতি উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা, রিজার্ভ বাড়ানো, অপরিশোধিত তেল সংগ্রহ, জ¦ালানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি। ডলার সংকট এবং বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে বিনিয়োগ, আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স, রিজার্ভ সবকিছুর গতি নিম্নমুখী। অথচ মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী। সরকারকে এ বাজেট মেয়াদে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। সেখানে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক। তাই বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য দরকার সুশাসন, যথাযথ মনিটরিং, বিনিয়োগ ও উৎপাদন আরও বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা। এসব কিছুর জন্যই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা জরুরি।
জসিম উদ্দিন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি রাখা হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটাতে সরকারকে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং বৈদেশিক উৎস হতে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা নিতে হবে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নিতে হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংকব্যবস্থার পরিবর্তে কস্ট অব ফান্ড বিবেচনা করে যথাসম্ভব সুলভ সুদে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নের প্রচেষ্টা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। কেননা ব্যাংক ঋণের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরতা বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করবে, অন্যদিকে উচ্চ হারে সুদ পরিশোধের দায় ক্রমাগতভাবে মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়তে থাকবে।
তিনি বলেন, দেশীয় শিল্প উৎপাদন সচল রাখতে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে সময়বদ্ধ পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করে আর্থিক বরাদ্দের সর্বোত্তম ব্যবহার করার মাধ্যমে জ¦ালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ করছি। পাশাপাশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ¦ালানির দিকে নজর দিতে প্রস্তাব করছি। তিনি আরও বলেন, সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতি আরও শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। সরকারি ব্যয় তদারকি করার জন্য আইএমইডি বিভাগকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন ছিল। এ বিষয়ে বাজেটে উল্লেখ করা প্রয়োজন।
ব্যবসায়ী খাতের এ নেতা বলেন, সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আইটি এবং সফটওয়্যার খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। পুরো বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এ খাতে মানবসম্পদ উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিনিয়োগ আয়করমুক্ত এবং উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে সম্পূর্র্ণ পরোক্ষ করমুক্ত করা অত্যাবশ্যক। তিনি বলেন, অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এবং আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম কর (এটি) ব্যবসায়িক খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এবং এটি বিলুপ্ত করার জন্য প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু এ বিষয়ে বাজেটে কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, কোনো স্বাভাবিক করদাতার নামে একাধিক মোটরগাড়ি থাকলে একের অধিক প্রত্যেকটি গাড়ির সিসি বা কিলোওয়াটভিত্তিক পরিবেশ সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। তবে এ সারচার্জ স্বাভাবিক ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ করে বিভিন্ন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন একাধিক গাড়ি থাকলে পরিবেশ সারচার্জ আরোপ না করার প্রস্তাব করছি। তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে জমি ও অ্যাপার্টমেন্টের রেজিস্ট্রেশনকালে উৎসে আয়কর বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সিমেন্ট, পাথর, টাইলস, লিফট, সিরামিক, সুইচ-সকেট, কিচেনওয়্যারসহ কমপক্ষে ১০-১২টি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে নির্মাণ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই জমির রেজিস্ট্রেশনকালে উৎসে আয়কর আগের অবস্থায় রাখার জন্য প্রস্তাব করছি।
মো. জসিম বলেন, যথাযথ বিনিয়োগ ও শিল্পোন্নয়ন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারাকে অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। রাজস্ব নীতিতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি যাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সঙ্গে বাবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারে। এজন্য মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সমন্বয় রাখা জরুরি।
কর-জিডিপি অনুপাতের উন্নতি সাধনের ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি অন্যতম প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে জসিম উদ্দিন বলেন, এনবিআরের বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা এবং শিথিলতার কারণে কর-জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কার্যক্রম বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। সময়বদ্ধ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে এনবিআরের সংস্কার কর্মসূচি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
ব্যবসা খাতের এ নেতা বলেন, বাজেটে টেক্সটাইল এবং রপ্তানি ও এসএমই খাতের জন্য তেমন কিছু দেখা যায়নি। টেক্সটাইল খাতের উন্নয়নে ম্যান মেড ফাইবার থেকে ভ্যাটসহ সব ধরনের কর প্রত্যাহার এবং রপ্তানির উৎস কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫ শতাংশ করার জন্য আবারও সুপারিশ করছি। বাজেট বক্তব্যের ১৭৭ নম্বর অনুচ্ছেদে পর্যটন শিল্পের বিকাশে পর্যটন মহাপরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আবাসিক হোটেল কর্তৃক মূলধনী যন্ত্রপাতি ও উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধাসংক্রান্ত এসআরও বাতিল করা হয়েছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত পর্যটন শিল্পের বিকাশে অন্তরায় হিসেবে কাজ করবে। তাই এ রেয়াতি সুবিধা পর্যটন শিল্পের বিকাশে অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করছি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমানে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সরবরাহের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদানের বিধান রয়েছে; যা ব্যবসায়ের খরচ বহনের ক্ষেত্রে বোঝা হয়ে যায়। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের ভ্যাট কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে নিয়ে আসার প্রস্তাব করছি। পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে আমদানিকৃত উপকরণের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ আগাম কর রহিত করার প্রস্তাব করছি। কারণ এর ফলে শিল্প উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়। মূসক নিবন্ধিত দেশে উৎপাদিত যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ এবং মধ্যবর্তী কাঁচামালের শুল্ক হার ৫ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা, যন্ত্রপাতি, তালিকাভুক্ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, মৌলিক এবং দেশে উৎপাদিত হয় না এমন কাঁচামালের শুল্ক হার ১ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে রাখা, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত পণ্যের ওপর পরিমাণভিত্তিক শুল্ক বা মিশ্র শুল্ক আরোপ করার এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখা ও আমদানি সীমাবদ্ধ করার জন্য তালিকাভুক্ত পণ্য বা সেবার ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের সুপারিশ করছি।
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন টানা তিন মেয়াদের সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা যে সেক্টরে দেখিয়েছে তা হলো বিদ্যুৎ। আবাস কিংবা কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করে মানুষকে ভুলিয়ে দিয়েছে লোডশেডিং নামক দুর্ভোগ। শহর থেকে গ্রামে সবাইকে বিদ্যুতে অভ্যস্ত করে তুলেছেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। বিদ্যুৎ ইস্যুতে দলমত-নির্বিশেষে বাহবা কুড়িয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে নির্বাচনের বছর মুদ্রাস্ফীতি ও লোডশেডিংয়ে কাতর সাধারণ মানুষ। সর্বশেষ কয়লা সংকটে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ দুর্ভোগের পথ আরও বাড়াবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে আওয়ামী লীগ লোডশেডিং শব্দটিকে ভুলিয়ে দিয়েছিল, সেই আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলের এমপিদের ভেতরে এখন লোডশেডিংয়ের ভীতি। মানুষের নানা প্রশ্নের মুখে নির্বাচনী এলাকায় যেতে অনীহা আর অস্বস্তিতে পড়েছেন এমপিরা। শুধু এমপিরা নন; এলাকায় কম যাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও।
চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল, যশোর ও রংপুর জেলা থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের অন্তত ১৫ জন সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, চলমান লোডশেডিংয়ের ভয়াবহ বিপর্যয়ে বিদ্যুতে সরকার যে সফলতা দেখিয়েছে, এখন সংসদ সদস্যরা (এমপি) তা বলতেই পারছেন না। বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিংয়ের ভয়ে নিজের এলাকায় যেতে অস্বস্তিতে ভুগছেন এমপিরা। তার ওপর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওয়াতেও বিব্রতবোধ করছেন এমপি, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলতি বছর অথবা আগামী বছরের শুরুতেই। নির্বাচনী বছরে এসে সেই বিদ্যুৎই গলার কাঁটা হিসেবে বিঁধেছে। অসহনীয় লোডশেডিং এমপিদের ভেতরে এলাকাভীতি তৈরি করছে। এমপিরা নিজ নিজ এলাকায় যেতে অনাগ্রহী হয়ে উঠছেন। বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে এলাকার মানুষের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না এমপিরা। চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি থেকে নিজের এলাকায় যাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন তারা। শুধু এমপিরা নন, এলাকায় কম যাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও। এলাকায় যাওয়ার সময়সূচি জানিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রীর দপ্তর থেকে সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আসত তা আসাও কমে গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিং বিপর্যয় মানুষকে অসহ্য করে তুলেছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পেয়ে সাধারণ মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এটা আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেও চেষ্টা করছেন বিদ্যুতের ভোগান্তি থেকে মানুষকে বাঁচাতে। তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষের প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন, হতে পারে এটা স্বাভাবিক। এর জন্য সাধারণ মানুষের কাতারে না গিয়ে বসে থাকলে আরও ক্ষতি হবে। মানুষের কাছে যেতে হবে, তাদের বলতে হবে সরকার চেষ্টা করছে সমস্যা সমাধান করতে।
সারা দেশে দেশ রূপান্তরের বিভিন্ন প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা-উপজেলা, থানা-পৌরসভা, ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে রাজনৈতিক কর্মসূচিও কমে গেছে বিদ্যুৎ সংকটে। টানা লোডশেডিং, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকতে শুরু করেছেন ক্ষমতাসীন দলের সব পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা। সবার একই প্রশ্ন বিদ্যুতের বিপর্যয় ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? এর উত্তর স্পষ্ট করে কারোরই জানা না থাকায় নিজের এলাকায় যাওয়া কমিয়ে দিতে শুরু করেছেন তারা।
ক্ষমতাসীন দলের এমপিদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের আলাপে উঠে এসেছে, এমপি-মন্ত্রীসহ জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দেখা হলেই জটলা সৃষ্টি করে সবাই এগিয়ে আসে। সবার একই প্রশ্ন বিদ্যুৎ-সংকট কবে স্বাভাবিক হবে। তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর না থাকায় এলাকাবিমুখ হওয়া ছাড়া উপায়হীন তারা।
গত রবিবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। জানা গেছে, ওই সভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি ও বিদ্যুতের করুণদশা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনায় উপস্থিত নেতা-এমপি, তাদের সবাই জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে না এলে তারা এলাকায় যেতে পারছেন না।
সভা সূত্রে আরও জানা যায়, ওই বৈঠকে তারা সবাই দাবি তোলেন, দ্রুত এর সমাধান না করতে পারলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। তারা বলেন, এলাকার মানুষের প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারছেন না তারা। ফলে বাধ্য হয়ে এমপিদের এলাকাবিমুখ হতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ১৪ দলের অন্যতম শরিক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিং ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সভায় বিস্তর আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি তো আমার নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারছি না। সাধারণ মানুষের এই প্রশ্নের উত্তর কী দেব? আমরা তো জানি না বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রবিবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, তার সরকার শতভাগ বিদ্যুৎ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল এবং তারা প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। বিদ্যুতে সফলতার কথা দাবি করে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘আমি জানি এজন্য এই গ্রীষ্মে মানুষ কয়েকটি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। একদিকে মুদ্রাস্ফীতি, অন্যদিকে লোডশেডিং, এই দুটি সমস্যায় আমার দেশের মানুষ ভুগছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ সারা বিশ্বে গ্যাস-তেল-কয়লার দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। টাকা দিয়েও এখন আর তা (গ্যাস-তেল-কয়লা) কেনা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি বৈদ্যুতিক পাখায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তবে এটি ছাড়া থাকা তার পক্ষে আরও বেশি কষ্টকর হয়ে পড়ে। এটাও সত্য যে আমরা এটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি, কিন্তু এটা এখন পাওয়া যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি যুদ্ধ না হতো এবং এর কারণে নিষেধাজ্ঞা না থাকত, তাহলে দেশ এ ধরনের কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হতো না। আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম। আজ যুদ্ধের কারণে, বিশ্বের প্রতিটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে তিনি দরপত্রের গোপন মূল্য বা ‘রেট শিডিউল’ ফাঁস করে দেন। পুরুত্ব কম ও নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহারের নির্মিত সড়কে বিল পরিশোধ করেছেন দেদার। কাজ পাইয়ে দেওয়া, বিল ও জামানতের চেক পরিশোধের ক্ষেত্রে গুনে গুনে বুঝে নেন কমিশন। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে হয়েছে বিভাগীয় মামলা। প্রমাণিত হয়েছে তার দুর্নীতি; তবুও শাস্তি হয়নি।
ঠিকাদারদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান প্রকৌশলী দুই দফা তাকে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ করলেও তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি। অভিযোগ আছে মন্ত্রণালয়ের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও ঠিকাদার সিন্ডিকেটের জোরে বেঁচে যাচ্ছেন বারবার। ক্ষতমতাধর এই ব্যক্তি হলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পিরোজপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুস সাত্তার হাওলাদার। তার ব্যাপারে এখন আর কিছু করতে নারাজ সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী। কিছু বললে বা করার চেষ্টায় হারাতে পারেন নিজের পদও। এ জন্য ওই প্রকৌশলীকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চলছেন সংস্থার প্রধানও।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, প্রকৌশলী মো. আবদুস সাত্তার হাওলাদার বর্তমান কর্মস্থলের আগে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন। বরগুনা তার নিজের বাড়ি আর পটুয়াখালী শ^শুরবাড়ি। এ সময় ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে কাজ দেওয়া, নিম্নমানের কাজে বিল ছাড় ও জামানতের চেক ছাড়ে কমিশন বাণিজ্যে রেকর্ড ছাড়িয়ে যান। সেই সময় গ্রামীণ সড়কের আইডি ব্যবহার করে অবৈধভাবে এলজিইডির বরাদ্দ করে সদর পৌরসভায় শ^শুরবাড়ি সড়কের আধুনিকায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করেছেন। এর আগে বরগুনার সহকারী প্রকৌশলী থাকাবস্থায় জেলার সরকারি বরাদ্দের দুর্যোগ শেড, ব্রিজ, মসজিদ, মাটির কেল্লা নির্মাণ করেছেন নিজ বাড়ি ও স্বজনদের বাড়ির আশপাশে। যার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। সব বাধা মাড়িয়ে দুর্বার গতিতে লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন প্রকৌশলী সাত্তার। ঘনিষ্ঠজনদের কাছে গর্ব করে বলেনও, যত দিন এই সিন্ডিকেট আছে; তত দিন প্রধান প্রকৌশলী বা অধিদপ্তরের কেউ তাকে কিছইু করতে পারবেন না।
তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০২১ সালের ১১ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের তৎকালীন সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ ওই প্রকৌশলীকে একটি নোটিস পাঠান। সেখানে বলা হয়, ‘আপনার কার্যক্রম সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ৩(খ) ও ৩(ঘ) বিধি অনুযায়ী অসদাচরণ ও দুর্নীতিপরায়ণতার পর্যায়ভুক্ত অপরাধ। কেননা আপনি পটুয়াখালী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাবস্থায় পটুয়াখালী সদর উপজেলার কাশিপুর বাজার এলাকার সড়কের নির্মাণকাজে বিটুমিন ৫.০-৫.৫ ভাগের স্থলে ৩.৬ ভাগ, ৪.৫ ভাগ ও ৩.৪ ভাগ এবং পুরুত্ব ৪০ মিলিমিটারের স্থলে ৩৬ মিলিমিটার করেছেন। যেহেতু আপনি অবৈধভাবে আর্থিক লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে বর্ণিত ত্রুটিপূর্ণ কাজ বাস্তবায়ন করেছেন। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অসদাচরণ ও দুর্নীতিপরায়ণতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হলো। এরপর তাকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা জানাতে বলা হয়। এ ঘটনার পর প্রকৌশলী সাত্তারের সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং দুর্নীতি প্রমাণের পরও শাস্তি থেকে বেঁচে যান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২০ থেকে ২০২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবদুস সাত্তার হাওলাদার পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সময়ও কয়েকজন ঠিকাদার এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, যেকোনো কাজের ৫-৭ পার্সেন্ট কমিশন দিতে হয়েছে তাকে। নইলে ওই ঠিকাদারকে কাজ দেননি। যারা তার প্রস্তাবে সম্মত হতেন তাদের গোপনে ‘রেট শিডিউল’ দিয়ে দিতেন; যার ফলে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ পেয়ে যেত। এরপর ঠিকাদারকে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড দিতে এক থেকে দেড় পার্সেন্ট নিতেন। আর জামানতের চেক ফেরতের সময়ও দেড় পার্সেন্ট কমিশন আদায় করতেন। পটুয়াখালী সদর উপজেলায় শ^শুরবাড়ি হওয়ায় পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সড়ক ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছেন; গ্রামীণ জনপদের সড়কের আইডি নম্বর ব্যবহার করে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৩৭ নম্বর নোটিসে উপজেলার ৫৭৮৯৫২০০৪ নম্বর আইডি ব্যবহার করে অবৈধভাবে ওই কাজ বাস্তবায়ন করেছেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুস সাত্তারের বাবা স্বল্প আয়ের চাকুরে ছিলেন। তাদের পরিবারও নিম্নবিত্ত। তিনি ছাড়া পরিবারের আর কেউ বড় কোনো চাকরি করেন না। ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে কমিশন বাণিজ্য করে এখন তিনি গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। এলাকায় প্রভাব বিস্তারে তার ভাই মনিরুল ইসলামকে বরগুনার আমতলী উপজেলার ১ নম্বর গুলিসাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। বড় ছেলে এইচ এম মনজুরুল ইসলাম রিফাত আমতলী উপজেলা ও রমনা থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং ছোট ছেলে ফজলে রাব্বি রিমন বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। আগে থেকে এদের তিনজনের কারোর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারও নেই। প্রকৌশলী সাত্তারের আর্থিক অবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পুরো পরিবারের অবস্থান অল্প সময়ের ব্যবধানে বদলে গেছে।
এলজিইডির সদর দপ্তরে পটুয়াখালী, বরগুনা ও পিরোজপুর থেকে কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে। সেগুলোর যাচাই-বাছাইয়ে অনেক অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রকৌশলী মো. আবদুস সাত্তার হাওলাদারের পরিবারের সদস্যরা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ৩টি গাড়ি ব্যবহার করছেন। সেগুলো হলো ঢাকা মেট্রো-গ ৪৩৯১০০; এটা ছোট ছেলে ব্যবহার করেন। হোন্ডা ভ্যাজেল ঢাকা-শ-৪৬৯; এটা বড় ছেলে ব্যবহার করেন। আর টয়োটা নোয়া ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-৩৪৯২; তার ভাই স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ব্যবহার করেন। এর মধ্যে পরের দুটো গাড়ি শো-রুমের নম্বরে ব্যবহার করে তারা চালাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলীর ছোট ছেলে ফজলে রাব্বি রিমন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের পরিবারের কারোর নামে গাড়ির নিবন্ধন নেই। তাহলে ওই গাড়ি যে আমাদের, সেটা আপনি বলতে পারেন না।’
অভিযোগের আরও সত্যতা মিলেছে, বরগুনায় দায়িত্ব পালনকালে সরকারি টাকায় নিজ বাড়িতে তৈরি করেছেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। বরগুনায় দায়িত্ব পালনকালে ছয়টি মাটির কেল্লা নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ ছিল। ওই বরাদ্দের তিনটি করেছেন নিজ এলাকায়; বাকি তিনটি করেছেন নিজ স্বজনদের এলাকায়। চাচা ও নানাবাড়ির সামনে নির্মাণ করেছেন পাঁচটি কালভার্ট। গুলিসাখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিদেশি দাতা সংস্থা ২০১১-১২ অর্থবছরে তিনতলা দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করার জন্য অর্থ বরাদ্দ হলেও সেটাও নির্মাণ করেছেন নিজ এলাকায়। বিদেশি সহায়তা ফান্ডের টাকায় নিজ বাড়িতে তৈরি করেছেন মসজিদ।
এলজিইডির সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, আবদুস সাত্তার হাওলাদার বর্তমান কর্মস্থল পিরোজপুরেও তার পুরনো চর্চা অব্যাহত রেখেছেন। কাজের কমিশন আদায়ের পাশাপাশি একাধিক ঠিকাদারের সঙ্গে গড়ে তুলেছেন ব্যবসায়িক গোপন অংশীদারত্ব। তার লাগামহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছে এলজিইডি সদর দপ্তরে। এসব কারণে গত ১৫ সেপ্টেম্বর তাকে পিরোজপুর থেকে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। এর আগে একই ধরনের অভিযোগের কারণে তাকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এলজিইডির সদর দপ্তরে বদলি করা হয়। অবাক করা বিষয় হলেও সত্য, এই দুটো বদলির কোথাও তাকে যোগদান করতে হয়নি। তার আগেই মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী ওই কর্মকর্তা ও অসাধু সিন্ডিকেট তাকে বর্তমান কর্মস্থলে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়।
এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং ১ নম্বর গুলিসাখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রকৌশলী মো. আবদুস সাত্তার হাওলাদার এই ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাদের আর্থিক অবস্থা আগে তেমন ভালো ছিল না; হঠাৎ অবস্থার উন্নতি করেছেন। সাত্তার ছাড়া পরিবারের অন্যরা বড় কোনো ব্যবসা বা চাকরি করেন না। এমন একটি পরিবারের সদস্যরা এখন তিনটি গাড়ি ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, আবদুস সাত্তারের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং তার পরিবারের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। এলজিইডি সদর দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি প্রমাণও হয়েছে। তবুও শাস্তি হয়নি। মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী এক কর্মকর্তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না এলজিইডি সদর দপ্তর।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হয় এলজিইডির পিরোজপুর জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুস সাত্তার হাওলাদারের সঙ্গে। ফোন রিসিভ করে দেশ রূপান্তর প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর জরুরি সভায় রয়েছেন, পরে ফোন করবেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। তিনি কল ব্যাক না করায় পরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এসব বিষয়ে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিনের কাছে জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বিস্তারিত লিখে এসএমএস করলেও সাড়া দেননি। এলজিইডি সদর দপ্তরে গিয়ে মতামত জানার চেষ্টা করলেও তার সাক্ষাৎ মেলেনি। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. হেমায়েত আকবর টিপুর সহযোগিতা চেয়েও তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এলজিইডির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে উন্নয়ন অনুবিভাগ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উন্নয়ন অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. কামাল হোসেন দেশ রূপান্তরকে জানান, প্রকৌশলী মো. আবদুস সাত্তার হাওলাদারের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তিনি লিখিত কোনো অভিযোগ পাননি। এমন কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, কারোর ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের নেতাকর্মীদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন একটি চ্যালেঞ্জ, কারণ বিভিন্ন মহলের ষড়যন্ত্র রয়েছে।’
গতকাল সোমবার গণভবনে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, যখনই দেশের মানুষের জীবনযাত্রার কিছুটা উন্নতি হয়, তখনই বাংলাদেশে কিছু কুলাঙ্গার আছে, যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলে এবং সর্বত্র মিথ্যাচার করে। কিছু মানুষ আন্তর্জাতিক অনুদান পাওয়ার জন্য বিদেশিদের সামনে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি করে।
তিনি আরও বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধের সময় লুণ্ঠন, ধর্ষণ ও দমন-পীড়নসহ গণহত্যা ও অন্যান্য অপরাধ করেছে এবং এখন তাদের প্রজন্ম নিরলসভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
ভোট কারচুপি বিএনপির অভ্যাস উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভোট কারচুপি ও গণতন্ত্র ছিনতাইয়ের রেকর্ড তাদের আছে। তবে আমরা এখন তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্রের সবক শুনছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন সামরিক স্বৈরশাসকের হাতে গঠিত দলের কাছ থেকে আমাদের গণতন্ত্রের সবক শুনতে হয়। ভোট চুরি করা তাদের অভ্যাস। তাহলে চোরদের কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষ কী শিখবে?’
আওয়ামী লীগ সভাপতি তার দলের নেতাকর্মীদের দলকে আরও শক্তিশালী করতে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের দল যথেষ্ট শক্তিশালী। দল যেন আরও শক্তিশালী হয়, আমাদের সেই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
বাংলাদেশের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর তার দল টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় এবং দেশে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখায় এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে বদলে দিতে চেয়েছিলাম। আজ আমরা সফলভাবে পরিবর্তন করতে পেরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার অঙ্গীকার রক্ষা করেছে, কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম, পরিবহন খরচ, গ্যাস, জ্বালানি ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বৈদেশিক ঋণের সুদের হার বাড়ানো হয়েছে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে এখনো পাঁচ মাসের খাদ্য সংগ্রহের জন্য যথেষ্ট রিজার্ভ মজুদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানির জন্য কৃষি উৎপাদন বাড়াতে দেশের কোনো জমি অনাবাদি না রেখে সর্বত্র আবাদ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে এবং বাংলাদেশেও খাদ্যের দাম বেড়েছে। প্রকৃতপক্ষে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে জনগণের কষ্ট হচ্ছে। তবে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে (বাজারে) এবং কোনো জিনিসেরই অভাব নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে এবারও ধান ও অন্যান্য ফসলের ফলন ভালো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সম্প্রতি ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বৃহত্তম জাতীয় বাজেটের রেকর্ড করেছে। অতীতে এত বড় বাজেট কেউ দিতে পারেনি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই কঠিন সময়ে সরকার এত বড় বাজেট দিতে পেরেছে।
তিনি বলেন, বাজেটে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা এবং ভাতার আকার উভয়ই বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া সরকার একটি কার্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা করেছে, যাতে নিম্ন আয়ের লোকেরা তাদের ভোগান্তি লাঘব করতে ভর্তুকি মূল্যে চাল, ডাল এবং ভোজ্য তেলসহ কিছু প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারে।
‘আওয়ামী লীগ সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে’ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের করে এনেছে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত নেতারা গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত নেতাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যার ঘটনায় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে জোরপূর্বক গুম, হত্যা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছে বিএনপি।
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর তার পিতৃহত্যার বিচার চাওয়ার ও বিচার পাওয়ার কোনো অধিকার ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এটি ছিল মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। আজকে আমরা ন্যায়বিচার না পাওয়ার পরিস্থিতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে পেরেছি। আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় ন্যায়বিচারে বিশ^াস করে। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকার বিচারব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করেছে, যাতে মানুষ ভোগান্তির সম্মুখীন না হয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিচার পেতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার কভিড-১৯ মহামারীর সময় এটিকে (বিচার কার্যক্রম) ভার্চুয়াল করেছে, যাতে মানুষ ঘরে বসে স্বল্প সময়ের মধ্যে ন্যায়বিচার পেতে পারে।
চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে বিদ্যুতের কারণে জনগণের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
এ সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন উপস্থিত ছিলেন।
‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষায় গাছ লাগান’ : জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষায় বৃক্ষরোপণ করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সরকারপ্রধান গতকাল তার সরকারি বাসভবন গণভবন প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণকালে এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষায় সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।’
পরিবেশ মেলা-২০২৩, জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২৩-এর উদ্বোধনের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তিনটি চারা রোপণ করেন।
এ সময় শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমি গাছ লাগিয়েছি। আমি আশা করি, বাংলাদেশের সবাই (জনগণ) এটি (গাছ লাগাতে) অনুসরণ করবেন।’
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ যাতে আরও সুন্দর, সবুজ ও উন্নত হয়, সে জন্য তারা ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির পরিপ্রেক্ষিতে ফলমূল, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনের জন্য প্রতিটি স্থানে গাছ লাগাতে এবং প্রতিটি এলাকাকে উৎপাদনের আওতায় আনতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিশ্বব্যাপী উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের জনগণকে সংকট থেকে রক্ষা করতে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকবে। তিনি শিক্ষার্থীদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে গাছ লাগাতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৮৫ সালে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু করে, ১৯৮৪ সালে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং বাংলাদেশ কৃষক লীগকে কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অন্তত তিনটি বনজ, ফলদ ও ভেষজ চারা রোপণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তার দল বিগত বছরের মতো এবারও আষাঢ় মাসের প্রথম দিনে বৃক্ষরোপণ অভিযান শুরু করবে।
এ সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ও পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। বাসস
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
কুমিল্লার লাকসামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ৭ জনকে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পৌর সদরের ৭নং ওয়ার্ডের গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন— ফারুক, রাশেদ, শাহজাহান ও মনির হোসেন। প্রাথমিকভাবে এদের নাম জানা যায়। তবে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত ব্যক্তির নাম মনির হোসেন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের অভিযোগ করে বলেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে তিনি দাবি করছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মিলাদ ও বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান। সকালে শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়। তবে চারটার দিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর অনুসারী ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবিদার জাহাঙ্গীর আলম, লাকসাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শিহাব খান এবং পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফ খানের নেতৃত্বে শতাধিক লোক মাদ্রাসার ফটকে তালা দেন। এ সময় আবদুল মান্নান তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আবদুল মান্নানের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেখানে হামলা হয়। এতে আহত হয়েছেন সাতজন। হামলার সময় রামদা দিয়ে মনির হোসেন নামের এক হকারের হাত ও পা কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। পরে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী (রাজনৈতিক)। বৃহস্পতিবার সকালে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর অনুষ্ঠান করি। বিকেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে দোয়ার আয়োজন করি। এ সময় জাহাঙ্গীর, শিহাব ও স্বাধীনের নেতৃত্বে শতাধিক লোক আমার এলাকার লোকজনের ওপর হামলা করেন। মনির নামের এক হকার অনুষ্ঠান দেখতে আসেন। তাঁকে কোপানো হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মন্ত্রীর লোকজন এই হামলা করেছেন। আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইব। সামাজিক এই কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে, যা ন্যক্কারজনক ঘটনা।
এ ঘটনার অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর, শিহাব ও সাইফের মুঠো ফোনে বার বার কল দিও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও লাকসাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাহাঙ্গীরকে প্রথমে মান্নান মারধর করে। এরপর সেখানে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি।
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের কর্মসূচিতে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এ নিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির আওতায় আসতে পারেন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এমন কথাই জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
একইসঙ্গে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসসহ অন্য সকল কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিনের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ছাড়াও নাগরিকদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি এখন নির্দিষ্ট কোনও পদক্ষেপ ঘোষণা করতে যাচ্ছি না। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের ঘোষণা অনুসারে বাংলাদেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকার এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভীসা নীতি কার্যকর করার পদক্ষেপ আমরা শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ মে ভিসা নীতি ঘোষণার সময় আমরা এটা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি। আমরা ভিসা নীতির কথা বলেছি তবে কারও নাম উল্লেখ করিনি। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দুর্বল ও বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত যেকোনও বাংলাদেশির ক্ষেত্রে এই ভিসা নীতি কার্যকর হবে। অন্য যেকোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি আমরা মনে করি তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে আমরা এই নীতি প্রয়োগ করব।
দেশের ক্রিকেট নিয়ে নানা সময়ে আলোচিত-সমালোচিত বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপান। জাতীয় দলের প্রায় প্রতিটি বিষয় নিয়েই মাথা ঘামান তিনি। তার এই তৎপরতাকে কীভাবে দেখেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রশ্ন করা হয়েছিল সাকিবে। তার সোজাসাপটা জবাব, ‘আমার সঙ্গে (সম্পর্ক) কখনো অস্বস্তির হয়নি। আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো। আমি ওনাকে বুঝি। উনি আমাকে বোঝেন। আমাদের মধ্যে কথা হয়, এমন হলে ভালো হতো, অমন হলে ভালো হতো। যে আলোচনাটা হয়, ফলদায়ক হয়। আমার কাছে (তাঁর সঙ্গে কাজ করা) সমস্যা হয়নি কখনো।’
নাজমুলের আগে বিসিবি সভাপতি ছিলেন এখনকার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। তিনিও জাতীয় দলের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই জড়িত ছিলেন বলে জানান সাকিব। তবে নাজমুল অনেক বেশি জড়িত বলে মনে করেন সাকিব, 'কামাল ভাইও দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। হয়তো তখন এত মিডিয়া ছিল না, উনি হয়তো মিডিয়াতে অত কথা বলেন নাই। যে কারণে জানা যেত না। কিন্তু দলে কী হচ্ছে, এসবে উনিও জড়িত ছিলেন। আর পাপন ভাই যেটাকে বলে ইন হ্যান্ডস জড়িত। অনেক বেশি যুক্ত। এমন বোর্ড প্রেসিডেন্ট পাওয়াও কঠিন।’
অনেক বেশি জড়িত থাকা বোর্ডপ্রধান ভালো কি মন্দ, প্রশ্ন করা হলে সাকিবের চটজলদি জবাব, ‘দুটোই। নিতে পারলে ভালো। যারা নিতে পারে না, তাদের জন্য অনেক ডিফিকাল্ট।’
নাজমুল হাসানের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে তার মধ্যে যদি একটা ভালো দিক খুঁজতে বলেন প্রশ্নকর্তা। সাকিব বলেন ‘বিশেষভাবে জাতীয় দলের জন্য সবকিছু করতে রাজি আছেন।'আর মন্দ দিক কোনটি? হাসতে হাসতে সাকিবের জবাব, ‘মে বি ইন্টারভিউ (হয়তো সাক্ষাৎকার)’।
চট্টগ্রামের পটিয়ায় বিয়ের আট মাসের মাথায় গলায় ফাঁস দিয়ে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। নিহত গৃহবধূর নাম উন্মে সুলতানা সুইটি (২২)। সে উপজেলার ভাটিখাইন ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মুছা চৌধুরীর বাড়ির মমতাজ আহম্মেদের ছেলে রিয়াজ আহম্মদ সাকিবের স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) উপজেলার ভাটিখাইন ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে শশুরবাড়ির নিজ বসত ঘরে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত উন্মে সালমা সুইটি একই উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের শেখ মোহাম্মদ পাড়ার আবুল কালামের ছোট মেয়ে। সে পটিয়া কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তবে কেন সুইটি আত্মহত্যা করেছেন সে ব্যাপারে উভয় পরিবারের কেউ কিছু বলতে পারেননি।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, উম্মে সুলতানা সুইটির সাথে গত ৮ মাস পূর্বে মো. রিয়াজ আহম্মদ প্রকাশ শাকিবের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে তার শয়ন কক্ষের আড়ার সাথে ওড়না পেছিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি । এ সময় পরিবারের সদস্যরা দেখতে পেয়ে পটিয়া থানা পুলিশকে খবর দিলে হলে তারা মরদেহটি উদ্ধার করে পটিয়া থানায় নিয়ে যায়। সেখানে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের বড়ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার বোনের মৃত্যুর বিষয়ে আমাদের পরিবারের কোন সন্দেহ নাই। মৃত্যুর বিষয়ে পরিবারের কোন সদস্য ভবিষ্যতে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা মামলা মোকদ্দমা করব না।
পটিয়া থানার ওসি (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে খবর পেয়ে আমরা নিহত গৃহবধূর মরদেহটি উদ্ধার করে থানায় এনে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠাই। নিহতের পরিবারের কারো কোন অভিযোগ না থাকায় রাতেই থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।