
চলতি বছর মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গু ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। গত পাঁচ মাসে অর্থাৎ প্রাক-মৌসুমেই ভর্তি রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা দেশে ডেঙ্গুর ইতিহাসে একই সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়েছে।
গত বছরের (দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও সর্বোচ্চ মৃত্যুর বছর) প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় এবার ৪৭৪ শতাংশ বা ৬ গুণ এবং সর্বোচ্চ আক্রান্তের বছর ২০১৯ সালের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় ৬০৭ শতাংশ বা ৭ গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
এ বছর গত পাঁচ মাসে (৩১ মে পর্যন্ত) দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ২২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। গত বছর একই সময়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৫২ জন ও ২০১৯ সালে ২৮৬ জন।
এই পাঁচ মাসে মৃত্যুর সংখ্যাও উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। গত চার বছরের মধ্যে (২০১৯-২২ সাল) তিন বছর প্রথম পাঁচ মাসে কোনো মৃত্যু ছিল না। শুধু ২০১৯ সালে দুজনের মৃত্যু হয়েছিল। এবার প্রথম পাঁচ মাসেই ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এবারও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ডেঙ্গুর হটস্পটে রূপ নিয়েছে। এখন পর্যন্ত এই জেলার রোগীর ৭০ শতাংশই পাওয়া গেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।
ডেঙ্গুর এমন পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে দফায় দফায় সতর্ক করছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কয়েকবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটতে পারে। সেজন্য তারা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে আরও সক্রিয় হতে বলেছেন।
এমন পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ডেঙ্গুর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। ডেঙ্গুর একটা কঠিন চক্রের মধ্যে ঘুরছি। বাংলাদেশের জন্য এটা একটা কঠিন পরিস্থিতি।’
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের মূল কাজ মশা নিধন ও বর্জ্য পরিশোধন। সেটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের না। আমাদের কাজ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা। সিটি করপোরেশনের লোকবল নেই বলে মশার জরিপ আমরা করি। ডেঙ্গুর সাধারণ ও দ্রুত চিকিৎসার গাইডলাইন আপডেট করা হয়েছে। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ঢাকার বড় বড় সরকারি হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে ডেঙ্গু চিকিৎসায় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সিটি করপোরেশনকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পরামর্শ দিয়েছে। সে অনুযায়ী, তারাও কাজ করছে।’
ঢাকার বাইরে রোগী বাড়ছে : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু রোগী তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রকোপের শুরুর দিকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছিল শুধু ঢাকা শহরকেন্দ্রিক। কিন্তু ধীরে ধীরে তা ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ রোগী ছিল ২০১৯ সালে, যা মোট রোগীর ৪৯ শতাংশ। এরপর আর কখনই ঢাকার বাইরে রোগী ১৭ শতাংশ ছাড়ায়নি। অথচ এ বছর প্রথম পাঁচ মাসে রোগীর ৩২ শতাংশই পাওয়া গেছে ঢাকার বাইরে।
২০১৬ সালে দেশে ডেঙ্গু রোগীর ৯৯ শতাংশই ছিল ঢাকায় এবং মাত্র ১ শতাংশ ছিল ঢাকার বাইরে, ২০১৭ সালে ঢাকায় ৯৬ শতাংশ ও ঢাকার বাইরে ৪ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে শতভাগ রোগীই ছিল ঢাকায়। কিন্তু ২০১৯ সালে দেশের ইতিহাসে ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ রোগী দেখা যায়। এরপর থেকেই ঢাকার বাইরে রোগী বাড়তে থাকে। ২০২০ সালে ঢাকায় রোগী ছিল ৮৭ শতাংশ ও ঢাকার বাইরে ১৩ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ঢাকায় রোগী কমে দাঁড়ায় ৮৩ শতাংশে ও ঢাকার বাইরে বেড়ে হয় ১৭ শতাংশ। এ বছর প্রথম পাঁচ মাসেই ঢাকার বাইরে রোগীর সংখ্যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড ৩২ শতাংশ হয়েছে।
বেশি রোগী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর কক্সবাজারে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে এ সংখ্যা ৪২৬ জন। অর্থাৎ এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই সারা দেশের রোগীর অর্ধেকেরও বেশি ৫৩ শতাংশ পাওয়া গেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এ সংখ্যা রোগীর সঙ্গে যোগ করে না সরকার। এমনকি কক্সবাজার জেলার চেয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোগীর আড়াই গুণ বেশি।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। তাদের পরিষ্কার পানির উৎস সীমিত। তারা পানি সংগ্রহ করে অনেক সময় খোলা পাত্রে রেখে দেয়, যা এডিস মশার জন্য একটা ভালো প্রজননক্ষেত্র। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কম জায়গায় মানুষ বেশি। ফলে সেখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের যা পরিস্থিতি, সেখানে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা ‘কঠিন’।
কঠিন চক্রের মধ্যে দেশ : বাংলাদেশ ডেঙ্গু একটা কঠিন চক্রের মধ্যে ঘুরছে বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য এটা একটা কঠিন পরিস্থিতি। কারণ ডেঙ্গু সংক্রমণের প্রকৃতি বা ধরন বদলাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের বৃষ্টির মৌসুম যদি পরিবর্তন হয় এবং যদি একটানা বৃষ্টি না হয়ে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়, সেটা আমাদের ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে আরও অবনতশীল করবে।’
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমাদের চারপাশে প্রচুর এডিস মশার লার্ভা। সেটা এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এডিস মশার যে চক্র, সেটা একবার যেখানে যায়, সেটা আর দুর্বল হয় না, থেকে যায়। গত বছর থেকে বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় এটা ছড়িয়ে পড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যত বাড়বে, সংক্রমণের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে। এখন সারা দেশে ডেঙ্গু হতেই থাকবে।’
মার্চেই সতর্ক করা হয়েছিল : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, গত জানুয়ারিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছিল। সেখানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি জানতে চেয়েছিলেন। তখনই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা এবং দেশের কীটতত্ত্ববিদরা সতর্ক করেছিলেন এ বছর পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। ওই সভায় কিছু সুপারিশও করা হয়েছিল। সেসবের কিছু বাস্তবায়নও করছে। উত্তর সিটি করপোরেশন সচেতনতা কর্মসূচি চালাচ্ছে। চিকিৎসক, স্কাউটদের নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু এবার দক্ষিণে রোগী বেশি, যা রোগীর ৬০ শতাংশ। সেখানে তেমন কোনো কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। এমনকি যেসব কর্মসূচি দুই সিটিতে চলছে, তা-ও বিজ্ঞানভিত্তিক না। ফলে এডিস মশা মরছে না। ডেঙ্গু প্রকোপও কমছে না।
এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘আমরা দু-তিন বছর আগে থেকেই বলছি ডেঙ্গু এখন বাংলাদেশে স্থায়ী হতে চলেছে। সারা বছর সব মাসেই ডেঙ্গু থাকবে। কারণ হলো যখন প্রকৃতিতে ডেঙ্গু রোগী ও মশা থেকে যায়, তাহলে জ্যামিতিক হারে ডেঙ্গু রোগী বাড়বে। রোগী ও মশা যত বেশি হবে, রোগী তত বাড়তে থাকবে।’
সরকারের কর্মকৌশল না থাকলে তাদের সতর্ক করেই-বা কী লাভ। তারা তো সর্বোচ্চ ফগিং পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। একটা জাতীয় কর্মকৌশল থাকতে হবে, যা নেই মন্তব্য করেন অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ : এশিয়ার বেশ কিছু দেশসহ বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারতের কলকাতাও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, ‘আমরা পারছি না। কারণ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সারা বছর স্থায়ী পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন থাকতে হবে, যা দেশে নেই।’ তিনি আরও বলেন, দেশে সরকারিভাবে ডেঙ্গু রোগীর যে সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে আড়াই গুণ বেশি। প্রকৃত তথ্য পেলে ব্যবস্থাপনাও সঠিক হয়। সমন্বিত মশক নিধন ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ বছরব্যাপী হতে হবে। ৫ বছর বা ১০ বছরের এ রকম একটা মাস্টার প্ল্যানের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ করতে পারলে ধীরে ধীরে ডেঙ্গু কমে আসবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি।
অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, আট বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা মশার জরিপ অনুযায়ী এডিস মশা নির্মূলে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে ডেঙ্গু বাড়ছে।
আগস্টে সর্বোচ্চ চূড়ার আশঙ্কা : অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গুর মৌসুম গত বছর পুরোই উল্টো হয়েছে। সে বছরের অক্টোবরে ছিল রোগীর ‘টপ পিক’ বা সর্বোচ্চ চূড়া। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনই হয়নি। এর আগে ‘টপ পিক’ হয়েছিল কোনো বছর আগস্ট, কোনো বছর সেপ্টেম্বরে। এ বছর পরিস্থিতি দেখে মনে হয় আগস্টে টপ পিক হয়ে যাবে। অর্থাৎ সে পর্যন্ত রোগী বাড়তে থাকবে।
এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার বেশ কিছু কারণ আছে বলে জানান এই কীটতত্ত্ববিদ। তিনি বলেন, গত বছর ডেঙ্গু মৌসুম দেরিতে শুরু হয়েছে। অক্টোবরে সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠেছিল। নভেম্বরে বেশ ডেঙ্গু ছিল। ডিসেম্বর ও এ বছরের জানুয়ারিতেও রোগী ছিল। অর্থাৎ গত বছরের শেষের দিকে চূড়ায় ওঠা ডেঙ্গুর প্রকোপের ধারাটা থেকে গেছে। সে কারণেই এবার বছরের শুরুতেই ডেঙ্গু প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকার পাশাপাশি বাইরেও রোগী বাড়বে। বিশেষ করে কক্সবাজার এবং বরিশাল বিভাগের দু-একটি জেলায় এবার ডেঙ্গু বাড়বে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।
মাত্র এক বছরেই পাল্টে গেছে বাংলাদেশের চিত্র। শ্রীলঙ্কাকে ধার দিয়ে ঋণদাতা হিসেবে গর্ব করা দেশের মানুষের এখন নাকাল দশা। বিদেশি মুদ্রা বিশেষ করে ডলার সংকটের কারণে সরকার জরুরি অনেক পণ্য আমদানি করতে পারছে না। এতে সরবরাহজনিত সংকট তৈরি হয়ে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম।
একই কারণে জ¦ালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। গরম আর লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত মানুষ। হিটস্ট্রোকে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বাধ্য হয়ে সরকার অনেক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে। বিদ্যুতের পাশাপাশি গ্যাস সংকটে শিল্পোৎপাদন কমে ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। এটিও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আরেকটি কারণ।
এমন পরিস্থিতিতে পরিকল্পনামন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, নিত্যপণ্য আর বিদ্যুতে ভয়াবহ সংকটে আছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ মে মাসের মূল্যস্ফীতি গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, যা ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সংগতি না মেলায় ধার করে চলতে হচ্ছে অনেককে। এখন গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষের নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে খরচ করতে হচ্ছে বেশি। যেটি কয়েক মাস আগেও গ্রামে বেশি ছিল। ব্যয়ের চাপ সামলাতে অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শুধু আমদানি পণ্যে নয়, দেশে উৎপাদিত পণ্য ঘিরেও নানান সিন্ডিকেট সক্রিয়। এসব সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সব পণ্য। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। এক বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চমূল্যে পণ্য কিনতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশে^র প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
২০২১ সালের আগস্টে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। করোনায় আমদানি কমে যাওয়ায় এবং অনেক ঋণপত্রে (এলসি) নিষ্পত্তি ছয় মাস থেকে এক বছর পিছিয়ে দেওয়ায় রিজার্ভ ওই পরিমাণে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ সব পণ্যের দাম ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এক বছরের মধ্যে ৩০ বিলিয়নের নিচে নেমে আসে। বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধের চাপ এবং আমদানির পুরনো দায় পরিশোধের চাপে বেসামাল হয়ে পড়ে সরকার।
ফলে ২০২১ সালে যেখানে শ্রীলঙ্কাকে ধার দিয়েছিল বাংলাদেশ ২০২২ সালে সেই বাংলাদেশকেই ডলার ধারের জন্য আন্তর্জাতিক পরিম-লে হাত পাততে হয়েছে। নানা রকম শর্ত মেনে আইএমএফের কাছ থেকে ধার নিতে হয় বাংলাদেশকে। সংস্থাটির কাছ থেকে সাড়ে তিন বছরের কিস্তিতে ৪৭০ কোটি ডলার ধারের প্রথম কিস্তি পেলেও দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং আইএমএফের শর্তের কারণে রিজার্ভ ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে গিয়ে আমদানি সীমিত করে আনতে হয়েছে। অনেক আমদানির বিলও বকেয়া পড়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে নেমেছে যে, এখন জরুরি প্রয়োজনের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা, এলএনজির মতো জ¦ালানিও আনতে পারছে না।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সর্বশেষ হিসাব বলছে, শিল্পের অবদান কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে জিডিপিতে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশে। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
সামগ্রিক এই সংকটের বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জ¦ালানি সংকট সমাধানে যেগুলো ডেফার্ড পেমেন্ট আছে সেগুলো দিতে হবে। সেগুলো দিয়ে যে সাপ্লাই চেইন বন্ধ আছে সেগুলোকে সচল করতে হবে। এটাকে প্রথম অগ্রাধিকার দিতে হবে। দরকার হলে অন্য জায়গায় যে প্রকল্পগুলো আছে সেসব প্রকল্পে ধীরে যেতে হবে। প্রকল্পের টাকা এখানে নিয়ে আসতে হবে। কারণ আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে। ডলার খরচের ক্ষেত্রে জ¦ালানিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এখন জ¦ালানি না কিনে যদি রিজার্ভ বাড়ানোর চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে রপ্তানিকারকরা রপ্তানি করতে পারছেন না। কারণ তারা উৎপাদন করতে পারছেন না। তখন রপ্তানি আয়ও কমে যাবে। তখন রিজার্ভে অন্য সমস্যা আসবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদ্ধতি কী হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোস্তাফিজ বলেন, বাজারে খুব দ্রুত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজস্ব নীতি এবং মুদ্রানীতি দুটোই ব্যবহার করতে হবে। এখন টাকার সরবরাহ যা আছে তা কমাতে হবে। সুদহারকে বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। আর যেসব জায়গায় প্রয়োজন আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। পেঁয়াজের বাজারে কী হলো সেটি তো দেখা গেছে। উৎপাদন কত, চাহিদা কত এগুলো ঠিক মতো পর্যালোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সময়মতো আমদানি করলে তো এটি এতটা বাড়ত না।
তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির এমন পরিস্থিতিতে ফ্যামিলি কার্ড বাড়াতে হবে। খোলাবাজারে বিক্রি করে কিছুটা সামাল দিতে হবে।
প্রায় মধ্যগগনে তেতে ওঠা অনিরুদ্ধ সূর্যের খরতাপে মানুষের শরীর থেকে দরদর করে ঝরছে ঘাম, গলা শুকিয়ে প্রাণ যেন ওষ্ঠাগত। প্রচণ্ড তাপের আঁচে গা পুড়ে যায় যায় অবস্থা। সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক তৃষ্ণার্ত শিশু বারবার শরবতের আবদার করছে বাবার কাছে। বাবা তাতে সায় না দিয়ে হকারের কাছ থেকে এক বোতল পানি কিনে ছেলেকে খেতে দেয়। ছেলেটি কয়েক ঢোক পানি খেলেও তার যেন তৃষ্ণা মেটে না। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে এমন দৃশ্য দেখা গেছে রাজধানীর শাহবাগে।
কথা হয় শিশুটির বাবা রাশিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। সকাল থেকে প্রচণ্ড গরম। এর মধ্যে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি। কয়েকবার ছেলেকে পানি খেতে দিয়েছি। আধা ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করেও উঠতে পারিনি। প্রচন্ড গরমে ছেলে শরবত খাবে বলে বায়না ধরেছিল। কিন্তু এগুলো তো স্বাস্থ্যসম্মত নয়। জেনেশুনে আমি এসব খাওয়াব না। যেরকম গরম পড়ছে, মানুষইবা কী করবে। বাধ্য হয়ে খাচ্ছে।’
পানি বিক্রেতা শামীম বলেন, ‘গরম এলে পানির বেচাকেনা ভালো হয়। কিন্তু যে গরম পড়ছে, তাতে ঠা-া পানিও কিছুক্ষণের মধ্যে গরম হয়ে যায়। তখন আর মানুষ কিনতে চায় না। অনেকে বাধ্য হয়েই কেনেন। দিনের অর্ধেক সময় পানি বিক্রি করতে পারি। তারপর শরীরে আর কুলায় না।’
মে মাসের শুরুটাই হয়েছিল প্রচণ্ড গরমের মধ্য দিয়ে। এরপর ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজার ও এর আশপাশের এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। তবে সারা দেশে বৃষ্টিপাত হয় এর দুদিন পর থেকে। কয়েক দিন বৃষ্টির পর আবার শুরু হয় প্রচণ্ড গরম; যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। আর এ গরমে সবচেয়ে বেশি বিপাকে খেটে খাওয়া শ্রমজীবীরা।
গতকাল সকাল থেকে সূর্য অগ্নিমূর্তি ধারণ করলেও দুপুরের দিকে আকাশে জমতে শুরু করে মেঘ। একসময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। স্বল্প সময়ের সামান্য বৃষ্টিতে মানুষ কিছুটা স্বস্তি অনুভব করলেও তা দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয়নি।
তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এক দিনের ব্যবধানে রাজধানী ঢাকাতে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা কমেছে। ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে মাত্র ২ মিলিমিটার। ফলে তাপমাত্রা কমলেও ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি বেড়েছে।
এদিন বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শামসুল ইসলাম। বাসে প্রচ- ভিড় থাকায় শেষে মোটরসাইকেল ভাড়া করেন তিনি। শামসুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জরুরি একটা কাজে মতিঝিল যেতে হবে। বৃষ্টির পর ভেবেছিলাম গরম একটু কমবে। বৃষ্টি তো বেশি হয়নি। গরম কমা তো দূরের কথা, উল্টো আরও বেড়েছে। বাসে উঠব সাহস পাচ্ছি না। তাই মোটরসাইকেল ভাড়া করলাম। কিন্তু স্বাভাবিক সময় এখান থেকে ভাড়া ১৫০ আর বাসে ২০ টাকা। যাত্রীদের চাহিদা বেশি থাকায় এখন ২৫০ টাকা দিতে হচ্ছে।’
ফার্মগেটে স্যালাইন পানি খাচ্ছিলেন রিকশাচালক তাজুল। তিনি বলেন, ‘গরমে একটু শরবত খামু তারও উপায় নেই। ১০ টাকার শরবত এখন ১৫ টাকা। বড় লোকে ডাব খায়। আমাদের মতো গরিবের পক্ষে ডাব কিনে খাওয়া সম্ভব না। ডাব খেলে ১০০ টাকা গুনতে হয়। দোকান থেকে জুস কিনে খেতে গেলেও অনেক টাকা লাগে। বাঁচতে তো হবে।’
বাংলা মোটরের চা বিক্রেতা ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘অনেক দিন ধরে গরমে খুব কষ্ট পাচ্ছি। রাস্তার পাশে দোকান। যতক্ষণ দোকানে থাকি মনে হয় শরীর পুড়ে যায়। আজকে (বৃহস্পতিবার) আকাশে মেঘ দেখে মনে হল আল্লাহ রহম করছে। অল্প একটু বৃষ্টিও হয়েছি। কিন্তু বিকেলের পর গরম আরও বেড়েছে।’
গতকাল ৮-১০ জন পথচারী ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। বিভিন্ন বয়সী এ ব্যক্তিরা জানান, একদিকে প্রকৃতির বিরূপ আচরণ অন্যদিকে লোডশেডিং। তাতে দুর্বিষহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যার পর অস্বস্তিকর গুমোট হয়ে ওঠে পরিবেশ, রাতেও ভ্যাপসা গরম। কেউ কেউ বলেছেন দিনে কয়েকবার করে গোসল করেও স্বস্তি পাচ্ছেন না। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে নারী-শিশুরা।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তাপমাত্রা কমলেও আগামী তিন-চার দিনেও অস্বস্তি কমবে না। অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক দেশে রূপান্তরকে বলেন, ঢাকাতে অনেক দিন ধরে যে তাপপ্রবাহ ছিল তা আপাতত কয়েক দিন কম থাকবে। যেহেতু বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি, আবার আকাশে মেঘ আছে কিন্তু বৃষ্টি নেই, ফলে অস্বস্তি কিছুটা বাড়বে। এমন পরিস্থিতি আরও চার থেকে পাঁচ দিন থাকবে। আগামী ১১-১৩ তারিখের মধ্যে বর্ষা শুরু হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, তখন কিছুটা স্বস্তি পাবে মানুষ।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করেছে। এটি চট্টগ্রাম, এরপর সিলেট এবং ধীরে ধীরে পুরো দেশে বিস্তৃত হবে। এটি সম্প্রসারিত হবে আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যে। তখন সারা দেশে বর্ষা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু কক্সবাজার উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এতে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায়, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এ ছাড়া রাজশাহী, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সিলেট জেলাসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
গত প্রায় এক বছরে দেশের বাজারে ডাল, চাল, আলু থেকে শুরু করে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম ব্যাপকহারে বেড়েছে। বাজার সরবরাহ ঠিক থাকলেও সিন্ডিকেটের কারণে লাফিয়ে বেড়েছে ভোগ্যপণ্যের দাম। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে সরকারের নীতিনির্ধারকরা বছরজুড়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে এসব পদক্ষেপ ভোক্তা পর্যায়ে তেমন কোনো কাজে আসেনি।
উল্টো ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে কিছু কিছু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে সরকার বাধ্য হয়েছে। যার প্রভাবে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ভোগান্তির মাত্রা চরমে পৌঁছেছে। ট্যারিফ কমিশন, ভোক্তা অধিকার কিংবা টিসিবি কোনো প্রতিষ্ঠানই বাজার মূল্যে প্রভাব রাখতে পারেনি।
বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক বছরে দেশের বাজারে চাল, ডাল, আলু, বেগুন, মরিচ, মাছ ও গরুর মাংসসহ সব খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি কাঁচা মরিচে ৩৩৩ শতাংশ ও ডালের দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ।
চাল : গত এক বছরের ব্যবধানে ১৩ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা করে। টাকার হিসাবে চাল কেজিতে ১০ টাকা, মাঝারি ও মোটা চাল ৫ টাকা বেড়ে ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মসুর ডাল : এক বছর আগে ১১০ টাকায় বিক্রি হওয়া মসুর ডাল কেজিতে ২৮ শতাংশ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও এলসি জটিলতার দোহাই দিয়ে আমদানি করা এ পণ্যটিরও বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যবসায়ীরা।
মাছ : মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বিশে^র দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। তবুও দিন দিন মাছের দাম বেড়েই চলছে। চলতি বছরে গড়ে সব ধরনের মাছ কেজিতে বেড়েছে ৩০-৪০ টাকা। এক বছরের হিসাবে ৮০-১০০ টাকা। গত বছরে ২৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া দেড় কেজি ওজনের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৩০-৩৫০ টাকা। যা কয়েক মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ২৮০-৩০০ টাকা।
মাংস : মাংসের বাজারে অস্থিরতা আরও বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়, যা ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৫৮০ টাকা। অর্থাৎ গত এক বছরে এক কেজি গরুর মাংসে ২২০ টাকা বেড়েছে। এক বছরে খাসির মাংসের দাম কেজিপ্রতি ২৫০ টাকা বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি ১৪০ টাকা থেকে এখন ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি : দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হওয়া সবজির বাজারেও সিন্ডিকেট। তবে দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে খুচরা বিক্রেতার লালসা বেশি ভূমিকা রাখছে। এক বছরের ব্যবধানে প্রায় সবকটি সবজির দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। গত এক বছরের ব্যবধানে ৩৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, পেঁপের মতো বেগুনের কেজিতে ৫৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। ২০২২ সালে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া মরিচও এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা করে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি মরিচের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা।
আলু : আলু উৎপাদনে বিশে্বর সপ্তম হলেও দেশের বাজারে এই পণ্যটি এখন বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৬ টাকা করে। চলতি মাসের শুরুর দিকে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। এক বছর আগে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ১৫-২০ টাকা।
এর বাইরে গত এক বছরে সব ধরনের আটা-ময়দার দাম গড়ে প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। শিশুখাদ্য গুঁড়োদুধের দাম বেড়েছে ৩১ শতাংশ পর্যন্ত।
গ্রাহক ও পাইকারি পর্যায়ে এ বছর চার দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরও ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে দুর্বিষহ জনজীবন। কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি অফিস-আদালত ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিদ্যুতের অভাবে আয় কমলেও বেড়েছে ব্যয়। অন্যদিকে আইপিএস, ফ্যান প্রভৃতি বৈদ্যুতিক সামগ্রীর দাম গগনচুম্বী।
লোডশেডিং পরিস্থিতি দশ-পনেরো দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, এখন দেশে সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৪ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু জ¦ালানির অভাবে চাহিদার বিপরীতে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদিত হচ্ছে।
বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে সরকারের কাছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে দরকারি জ¦ালানি কিনতে পারছে না সরকার। ফলে সক্ষমতা যথেষ্ট থাকলেও অর্থ সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাত গুরুত্বপূর্ণ হলেও অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সময়মতো টাকা ও ডলার না পাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে না পারলে লোডশেডিং আরও বাড়ার পাশাপাশি চাহিদামতো জ¦ালানি তেল ও গ্যাস সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তবে তাপমাত্রা কমলে লোডশেডিং বর্তমানের তুলনায় কমতে পারে।
জ¦ালানি-বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতির জন্য বৈশ্বিক কারণের চেয়ে সরকার বেশি দায়ী। তাদের ভুলনীতি। প্রাথমিক জ্বালানির ব্যবস্থা না করে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন-সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। অদরকারি ব্যয় বাড়িয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে গিয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঘাটতি বাড়ছে। এতে ভোক্তার ওপর মূল্যবৃদ্ধির চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের ভর্তুকি বাড়ছে। অথচ জনগণ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। সামনে লোডশেডিং আরও বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘জ¦ালানি-নিরাপত্তাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। জ¦ালানি-নিরাপত্তা না থাকলে খাদ্য-নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা যাবে না। কৃষি খাতের মতোই এ খাতকে প্রণোদনা দিয়ে চালিয়ে নিতে হবে।’
মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গরমের মধ্যে বিদ্যুতের অভাবে রাতে ঘুম হয় না বললেই চলে। ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে সকালে বাথরুমে গিয়ে ঠিকমতো পানি পাওয়া যায় না। এ অবস্থায় অফিসে গিয়ে সারা দিন অস্বস্তি বোধ হয়। কাজে ব্যাঘাত ঘটে। এভাবেই গত কয়েক দিন চলছে।’
কল্যাণপুরের বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে অবস্থা এমনিতেই কাহিল। তার ওপর ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে সমস্যা। হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে রাতে ঘুম হয় না ঠিকমতো। গরমে ছেলেটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’
রিকশাচালক আকবর হোসেন বলেন, ‘সারা দিন পরিশ্রম করে রাতে গিয়ে শান্তিমতো ঘুমানোর উপায় নেই লোডশেডিংয়ের কারণে। বস্তির খুপরি ঘরে বিদ্যুৎ চলে গেলে মনে হয় দোজখের মধ্যে আছি।’
ঢাকায় লোডশেডিং ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা হলেও ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। এ কারণে সেখানকার মানুষের জীবন দুর্বিষহ হওয়ার পাশাপাশি আয়ও কমেছে।
ঝিনাইদহের বাসিন্দা আবদুল্লাহ নোমান জানান, ‘ছোট ওয়ার্কশপে গ্রিল তৈরির কাজ করি। বিদ্যুতের অভাবে ব্যবসায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। যে আয় হয় তা দিয়ে দোকানের খরচই উঠে না।’
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও অটোরিকশার মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে তাদেরও আয় কমেছে।
চুয়াডাঙ্গার অটোরিকশাচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সারা দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা যদি বিদ্যুৎ না থাকে তাহলে গাড়ির ব্যাটারি কখন চার্জ দেব আর ভাড়ায় কখন যাব? অল্প করে চার্জ দেওয়ার কারণে বেশিক্ষণ গাড়ি চালানো যায় না। আয় অনেক কমেছে। ব্যাটারির ওপরও চাপ পড়ছে।’
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা এলাকার বেগ রাইস মিলের মালিক জাহিদ হাসান দেশ রূপান্তরকে জানান, আগে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা তার কারখানায় ধান ভানানো হতো। বিদ্যুতের অভাবে এখন ৪-৫ ঘণ্টাও মিল চালু রাখা যায় না। দৈনিক হাজিরা বাবদ মিলের চারজন শ্রমিকের ২৮০০ টাকাও আয় হয় না। অন্য খরচ তো আছেই। লোকসান গুনতে হচ্ছে। বিদ্যুতের অবস্থার উন্নতি না হলে মিল চালানো সম্ভব হবে না।
রাজধানীর নবাবপুর থেকে দেশের বেশিরভাগ বৈদ্যুতিক পণ্য সরবরাহ করা হয়। সেখানকার একজন ব্যবসায়ী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ ইমন। তিনি আবরার ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী। বৈদ্যুতিক পণ্যের দাম জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চার্জার ফ্যান ও ব্যাটারির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। লোডশেডিং বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দামও বাড়ছে।’
মিরপুর এলাকার ইন্টাল টেকনোলজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রিন্স আবদুল্লাহ সৌরবিদ্যুতের ব্যবসার পাশাপাশি আইপিএসও বিক্রি করেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত কয়েক দিনে প্রচুর আইপিএস বিক্রি হয়েছে। এখনো অনেক অর্ডার আসছে; কিন্তু আইপিএস তৈরির সরঞ্জামের সংকটের কারণে নতুন করে আর তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। দামও প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।’
মিরপুর এলাকার আরেক ব্যবসায়ী জানান, কিছুদিন আগেও যে ব্যাটারি ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে তা এখন ৩২ থেকে ৩৬ হাজার টাকা। তারপরও পাওয়া যাচ্ছে না।
নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির কারণে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। বৈশি^ক কারণে এমনিতেই বিদেশি ক্রেতার অর্ডার কমে গেছে। ঠিকমতো গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় অনেক কারখানার মালিককে জরিমানা দিতে হচ্ছে। অর্ডার বাতিল হচ্ছে অনেকের।’
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কভিড-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশে^র মতো বাংলাদেশকেও সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। সরকার সেই সংকট অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে। এখন সংকট-পরবর্তী রেশ বিরাজ করছে। শিগগির এ পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে। বিশ্ববাজারে ইতিমধ্যে জ¦ালানির দাম কমেছে। দেশের রিজার্ভও বাড়ছে। পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি নতুন কেন্দ্র থেকেও বিদ্যুৎ যোগ হবে। আশা করা যায়, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে অস্থিরতা দেখা দেয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি ব্যয়ে রেকর্ড তৈরি হয়। আর এই আমদানি ব্যয় ও করোনাকালের পুরনো দায় পরিশোধ করতে গিয়ে এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়নে নেমে আসে। কিন্তু রিজার্ভের অর্থে পায়রায় প্রকল্প উন্নয়ন, বিমান কেনা, ইডিএফ ঋণ ও শ্রীলঙ্কাকে ধার দেওয়ায় প্রকৃত রিজার্ভ নেমে প্রায় ২৫ বিলিয়নে দাঁড়ায়।
কিন্তু আমদানি ব্যয় যে হারে বাড়ে একই হারে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স না বাড়ায় রিজার্ভ আরও কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। ডলারের সরবরাহ কমে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই টাকার মান কমে যায়। এতে দেশে আমদানি পণ্যে অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন হয়। ফলে মূল্যস্ফীতিতে বাড়তি পয়েন্ট যোগ করে ডলারের বিনিময় হার।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দুই বছর আগে ২০২১ সালের ৯ জুন ডলার কিনতে খরচ করতে হতো ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। কিন্তু সংকট থাকায় মার্কিন এই মুদ্রা কিনতে এখন খরচ হচ্ছে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। দুই বছরের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে কৃত্রিমভাবে ডলারের মূল্য ধরে রাখায় স্বল্প সময়ের ব্যবধানে টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন করতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও ডলারের বিনিময় হারে সীমা বেধে দেওয়া হচ্ছে।
ডলারের সংকট কাটাতে শেষ পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে আইএমএফের দ্বারস্থ হতে হয়েছে সরকারকে। তবে ঋণের প্রথম কিস্তি পেলেও দেশে রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বরং শর্তের কারণে স্বাধীনভাবে রিজার্ভের ব্যবহারও করতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নির্দিষ্ট সীমার নিচে রিজার্ভ কমে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় সরকার জরুরি পণ্য আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে। শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়ায় উৎপাদন সংকটের পাশাপাশি ব্যবসা সম্প্রসারণও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে কর্মসংস্থানও কমে গেছে। আবার উৎপাদন কমে যাওয়ায় শিল্পের ব্যয়ও বেড়ে গেছে। যার প্রভাব শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ঘাড়েই পড়ছে।
এদিকে ডলার সংকটের সুযোগ নিয়েছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। সরবরাহ কমে যাওয়ার সুযোগে আমদানিকারকদের কাছ থেকে বেশি দর নিয়ে নিজেদের অতিরিক্ত মুনাফা নিশ্চিত করেছে ব্যাংকগুলো। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মো. জসিম উদ্দিন অভিযোগ করেছেন যে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ডলার বিনিময় হারের নামে লুটপাট করছে। তিনি বলেছেন, ডলারের দাম বাড়িয়ে লুটের মালের মতো প্রতি ডলারে ১১৪ থেকে ১১৫ টাকা দাম রাখছে ব্যাংক।
২০২২ সালে ডলার কারসাজির অপরাধে ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে এর সঙ্গে আরও আট ব্যাংকের নাম যুক্ত হয়। মার্কিন এই মুদ্রার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু মানি এক্সচেঞ্জ হাউজেও অভিযান চালায়। কিন্তু সরবরাহ কম থাকায় ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর গত বছরের মে মাসে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের দর নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণার পর থেকে ডলারের অভিন্ন দর বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (এবিবি) ডলারের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে।
সংগঠন দুটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমানে রেমিট্যান্সে ডলারের দর ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। আর রপ্তানিতে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১০৭ টাকায়।
আমদানি নির্ভর দেশ হওয়ায় আমাদের অধিকাংশ পণ্যই বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এসব পণ্যের দাম পরিশোধ করতে হয় ডলারের মাধ্যমে। বিপরীতে ডলার আয়ের উৎস হচ্ছে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স। এ ছাড়া বিদেশি ঋণও ডলার আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে বাণিজ্য ঘাটতি ও রেমিট্যান্স কম আসায় বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। এদিকে ডলারের অপর্যাপ্ততায় জ¦ালানি তেল, এলএনজি, শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি কঠিন হয়ে পড়ছে। জনজীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সরকারও পড়েছে বেকায়দায়।
গত দেড় বছরে আমদানি দায় পরিশোধে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে অন্তত ২০ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়। পাশাপাশি ডলার বিক্রির কারণে ব্যাংকগুলো থেকে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে উঠে আসে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দেয়। এ সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন ও প্রাক অর্থায়ন স্কিম ঘোষণা করে। তারপরও তারল্য সংকট কমেনি। উল্টো বেড়েছে। বেসরকারি ঋণপ্রবাহ কমে গেছে।
দেশে ঋণের সুদহার কম থাকায় ব্যবসায়ীরা এখন আর বিদেশি ঋণে আগ্রহী নন। কিন্তু তাদের নেওয়া আগের ঋণ পরিশোধের চাপে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে দেশের আর্থিক হিসাব ২১৬ কোটি ডলার ঋণাত্মক। অথচ, ঠিক এক বছর আগেও এটি ১ হাজার ১৯৫ কোটি ডলার পজেটিভ ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের শেষে দেশের ব্যবসায়ীদের বিদেশ থেকে নেওয়া স্বল্প মেয়াদি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬৪১ কোটি ডলার। কিন্তু এপ্রিলে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৮৭ ডলার। অর্থাৎ চার মাসে বিদেশ থেকে কোনো ঋণ না এলেও পরিশোধ করতে হয়েছে ২৫৪ কোটি ডলার।
২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে সরকারি-বেসরকারি খাতের মোট বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬২৪ কোটি ডলার, যার মধ্যে বেসরকারি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২ হাজার ৪৩১ কোটি ডলার।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
কুমিল্লার লাকসামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ৭ জনকে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পৌর সদরের ৭নং ওয়ার্ডের গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন— ফারুক, রাশেদ, শাহজাহান ও মনির হোসেন। প্রাথমিকভাবে এদের নাম জানা যায়। তবে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত ব্যক্তির নাম মনির হোসেন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের অভিযোগ করে বলেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে তিনি দাবি করছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মিলাদ ও বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান। সকালে শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়। তবে চারটার দিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর অনুসারী ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবিদার জাহাঙ্গীর আলম, লাকসাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শিহাব খান এবং পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফ খানের নেতৃত্বে শতাধিক লোক মাদ্রাসার ফটকে তালা দেন। এ সময় আবদুল মান্নান তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আবদুল মান্নানের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেখানে হামলা হয়। এতে আহত হয়েছেন সাতজন। হামলার সময় রামদা দিয়ে মনির হোসেন নামের এক হকারের হাত ও পা কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। পরে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী (রাজনৈতিক)। বৃহস্পতিবার সকালে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর অনুষ্ঠান করি। বিকেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে দোয়ার আয়োজন করি। এ সময় জাহাঙ্গীর, শিহাব ও স্বাধীনের নেতৃত্বে শতাধিক লোক আমার এলাকার লোকজনের ওপর হামলা করেন। মনির নামের এক হকার অনুষ্ঠান দেখতে আসেন। তাঁকে কোপানো হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মন্ত্রীর লোকজন এই হামলা করেছেন। আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইব। সামাজিক এই কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে, যা ন্যক্কারজনক ঘটনা।
এ ঘটনার অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর, শিহাব ও সাইফের মুঠো ফোনে বার বার কল দিও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও লাকসাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাহাঙ্গীরকে প্রথমে মান্নান মারধর করে। এরপর সেখানে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি।
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের কর্মসূচিতে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এ নিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির আওতায় আসতে পারেন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এমন কথাই জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
একইসঙ্গে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসসহ অন্য সকল কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিনের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ছাড়াও নাগরিকদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি এখন নির্দিষ্ট কোনও পদক্ষেপ ঘোষণা করতে যাচ্ছি না। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের ঘোষণা অনুসারে বাংলাদেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকার এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভীসা নীতি কার্যকর করার পদক্ষেপ আমরা শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ মে ভিসা নীতি ঘোষণার সময় আমরা এটা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি। আমরা ভিসা নীতির কথা বলেছি তবে কারও নাম উল্লেখ করিনি। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দুর্বল ও বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত যেকোনও বাংলাদেশির ক্ষেত্রে এই ভিসা নীতি কার্যকর হবে। অন্য যেকোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি আমরা মনে করি তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে আমরা এই নীতি প্রয়োগ করব।
দেশের ক্রিকেট নিয়ে নানা সময়ে আলোচিত-সমালোচিত বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপান। জাতীয় দলের প্রায় প্রতিটি বিষয় নিয়েই মাথা ঘামান তিনি। তার এই তৎপরতাকে কীভাবে দেখেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রশ্ন করা হয়েছিল সাকিবে। তার সোজাসাপটা জবাব, ‘আমার সঙ্গে (সম্পর্ক) কখনো অস্বস্তির হয়নি। আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো। আমি ওনাকে বুঝি। উনি আমাকে বোঝেন। আমাদের মধ্যে কথা হয়, এমন হলে ভালো হতো, অমন হলে ভালো হতো। যে আলোচনাটা হয়, ফলদায়ক হয়। আমার কাছে (তাঁর সঙ্গে কাজ করা) সমস্যা হয়নি কখনো।’
নাজমুলের আগে বিসিবি সভাপতি ছিলেন এখনকার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। তিনিও জাতীয় দলের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই জড়িত ছিলেন বলে জানান সাকিব। তবে নাজমুল অনেক বেশি জড়িত বলে মনে করেন সাকিব, 'কামাল ভাইও দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। হয়তো তখন এত মিডিয়া ছিল না, উনি হয়তো মিডিয়াতে অত কথা বলেন নাই। যে কারণে জানা যেত না। কিন্তু দলে কী হচ্ছে, এসবে উনিও জড়িত ছিলেন। আর পাপন ভাই যেটাকে বলে ইন হ্যান্ডস জড়িত। অনেক বেশি যুক্ত। এমন বোর্ড প্রেসিডেন্ট পাওয়াও কঠিন।’
অনেক বেশি জড়িত থাকা বোর্ডপ্রধান ভালো কি মন্দ, প্রশ্ন করা হলে সাকিবের চটজলদি জবাব, ‘দুটোই। নিতে পারলে ভালো। যারা নিতে পারে না, তাদের জন্য অনেক ডিফিকাল্ট।’
নাজমুল হাসানের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে তার মধ্যে যদি একটা ভালো দিক খুঁজতে বলেন প্রশ্নকর্তা। সাকিব বলেন ‘বিশেষভাবে জাতীয় দলের জন্য সবকিছু করতে রাজি আছেন।'আর মন্দ দিক কোনটি? হাসতে হাসতে সাকিবের জবাব, ‘মে বি ইন্টারভিউ (হয়তো সাক্ষাৎকার)’।
চট্টগ্রামের পটিয়ায় বিয়ের আট মাসের মাথায় গলায় ফাঁস দিয়ে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। নিহত গৃহবধূর নাম উন্মে সুলতানা সুইটি (২২)। সে উপজেলার ভাটিখাইন ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মুছা চৌধুরীর বাড়ির মমতাজ আহম্মেদের ছেলে রিয়াজ আহম্মদ সাকিবের স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) উপজেলার ভাটিখাইন ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে শশুরবাড়ির নিজ বসত ঘরে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত উন্মে সালমা সুইটি একই উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের শেখ মোহাম্মদ পাড়ার আবুল কালামের ছোট মেয়ে। সে পটিয়া কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তবে কেন সুইটি আত্মহত্যা করেছেন সে ব্যাপারে উভয় পরিবারের কেউ কিছু বলতে পারেননি।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, উম্মে সুলতানা সুইটির সাথে গত ৮ মাস পূর্বে মো. রিয়াজ আহম্মদ প্রকাশ শাকিবের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে তার শয়ন কক্ষের আড়ার সাথে ওড়না পেছিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি । এ সময় পরিবারের সদস্যরা দেখতে পেয়ে পটিয়া থানা পুলিশকে খবর দিলে হলে তারা মরদেহটি উদ্ধার করে পটিয়া থানায় নিয়ে যায়। সেখানে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের বড়ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার বোনের মৃত্যুর বিষয়ে আমাদের পরিবারের কোন সন্দেহ নাই। মৃত্যুর বিষয়ে পরিবারের কোন সদস্য ভবিষ্যতে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা মামলা মোকদ্দমা করব না।
পটিয়া থানার ওসি (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে খবর পেয়ে আমরা নিহত গৃহবধূর মরদেহটি উদ্ধার করে থানায় এনে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠাই। নিহতের পরিবারের কারো কোন অভিযোগ না থাকায় রাতেই থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।