
রাত পোহালেই বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভোট। বিএনপি প্রার্থী না দিলেও প্রয়াত মেয়র আহসান হাবীব কামালের ছেলে মাঠে আছেন। এ ছাড়া বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত কয়েকজন নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী। কাউন্সিলর প্রার্থীর কারণে জামায়াতও পরোক্ষভাবে নির্বাচনে আছে। যে কারণে ভোটের হিসাব এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি ঘেঁষা ভোট কোন দিকে গড়াবে, সেদিকেই নজর নৌকা, লাঙ্গল, হাতপাখা এবং টেবিল ঘড়ি প্রতীকের মেয়র প্রার্থীদের।
এই হিসাবের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীরা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবার তাকে মনোনয়ন না দিয়ে চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ সেরনিয়াবাত ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতকে প্রার্থী করেছে। যে কারণে নৌকার প্রার্থীর আধিপত্য ভোটের মাঠে বেশি থাকলেও দলের মধ্যে কোন্দলের গুঞ্জনের কারণে শঙ্কাও আছে। তাই দলের ঐক্য ধরে রাখার দিকে জোর দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
স্থানীয় লোকজন মনে করেন, ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন ভোটারের মধ্যে অর্ধেক ভোটগ্রহণ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তারা বলছেন, বিএনপি প্রার্থী না দেওয়ায় দলটির ভোটাররা কেন্দ্রে না-ও আসতে পারেন। বিগত নির্বাচনের ফলাফলগুলো থেকে দেখা যায়, বরিশাল নগরীর অর্ধেক ভোটই বিএনপির। তাই এই ভোট যেদিকে গড়াবে, তিনিই হবেন নগরপিতা। এই মুহূর্তে সেই বিএনপির ভোট নিয়েই চলছে জল্পনা-কল্পনা।
অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগের একটা অংশ নৌকা ডোবানোর জন্য নির্বাচনী মাঠে কাজ করছে। এই অভিযোগের তীর সাদিক আবদুল্লাহ অনুসারীদের দিকে।
এ বিষয়ে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ‘বিষয়টা কী বলব, এটা যেহেতু আওয়ামী লীগবিরোধী কার্যকলাপ, জননেত্রী শেখ হাসিনা তার বিবেচনায় যে মেয়র প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছেন, এটা যদি কেউ ব্যাহত করে থাকেন, আর যারা করতেছেন বড় দুঃখজনক। সত্যিকার অর্থে আওয়ামী লীগ যারা, আমি মনে করি অবশ্যই তারা নৌকায় ভোট দেবেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাদিকপন্থি মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘আমরা প্রচারণায় নামলেই একটি মহল পেছনে গোয়েন্দা লাগায়। দল করে এই স্থানে আসতে হবে, তা জীবনে কল্পনাও করি নাই। ভোটকেন্দ্রে যেতে দেয় কি না, জানি না। আমাদের মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা রইজ আহম্মেদ মান্নাকে জেলে রাখা হয়েছে বিনা অপরাধে। তার কাউন্সিলর পদের মনোনয়ন পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। এটা কেমন রাজনীতি?’
গতকাল মধ্যরাতে প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে। ভোটের মাঠ কেমন দেখছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ‘আমি কনফিডেন্ট। ভোট আমার পক্ষেই আছে। বিএনপির ভোটাররাও আমাকেই ভোট দেবে। তবে এই মুহূর্তে জামায়াতের বিষয়ে নিশ্চিত না।’
পুলিশ ১০৬টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। এ ক্ষেত্রে নৌকার ভোটের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না, সে বিষয়ে খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ‘প্রশাসনের ব্যাপারটি প্রশাসন দেখেছে। আমরা অবশ্যই প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখি। শুধু পুলিশ নয়, র্যাবসহ অন্যান্য প্রশাসনিক সংস্থাও এ ব্যাপারে সক্রিয় রয়েছে।’
প্রচারের শেষ দিনে ৩০ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা প্রয়াত আহসান হাবীব কামালের ছেলে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন। গতকাল শনিবার দুপুরে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেস ক্লাবে ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।
তবে বিএনপির একটি পক্ষ রুপনবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে বিএনপির যারা রুপনকে পছন্দ করেন না, তাদের অনুসারীদের ভোট তার বাক্সে যাবে এমন নিশ্চয়তা নেই।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে রুপন বলেন, ‘আমি তো বলতে পারি না যে ধানের শীষে ভোট দিয়েছেন যারা; নৌকায় ভোট দেবেন তারা। এই ভোট কি কোনো পাগলেও দেবে? যারা বিএনপিকে ভালোবাসে, তারা কখনো হাতপাখা, লাঙ্গল বা নৌকায় ভোট দেবে না।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) বিলকিস জাহান শিরিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে রুপন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন সাংগঠনিক সম্পাদক শিরিন। যার তথ্য-প্রমাণ আমার কাছে আছে। সঙ্গে তার আপন ছোট ভাই শামীম ফেসবুকে নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।’
রুপন বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহ আপা, বিলকিস জাহান শিরিনের দূর-সম্পর্কের ছোট বোন। আর দুজনের বাসা একই ওয়ার্ডে। সেই সূত্রে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ বিলকিস জাহান শিরিনের দুলাভাই। তাই দুলাভাইয়ের পক্ষে ভোট চাইছেন শিরিন।’
রুপনের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘আমার ৪০ বছর রাজনীতির ক্যারিয়ারে নীতি, আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করি। সেই জায়গা থেকে সরানোর জন্য একটি মহল বারবার চেষ্টা করছে। বিগত দিনে তার (রুপন) বাবা আহসান হাবীব কামালও ষড়যন্ত্র করেছেন। আমাকে সরাতে পারেননি। তিনি তো বহিষ্কৃত নেতা ছিলেন। দল থেকে কোনো ষড়যন্ত্রই আমাকে সরাতে পারবে না।’
স্থানীয় লোকজন বলছেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ফয়জুল করিমের ভোট বরিশাল নগরীতে খুবই কম। তার নিজ এলাকা চরমোনাইয়ে তেমন কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। এ জন্য চরমোনাই এলাকার স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ। ফয়জুল করিমের অনেক কর্মকা- নিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। তিনি ‘চরমোনাইর উন্নয়ন করতে পারেননি, বরিশাল নগরীর উন্নয়ন কীভাবে করবেন’ এমন মন্তব্য করছেন অনেকে। হাতপাখা এখন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন নারী ভোটারের দিকে। তার সমর্থনে হাজার হাজার নারীকর্মী নগরীতে নামিয়েছেন প্রচারের জন্য। ওদিকে ঢাকা থেকে আসা একটি টেলিভিশনের নারী সংবাদকর্মী হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী ফয়জুল করিম গণসংযোগে থাকাকালীন প্রশ্ন করায় তাকে পাশে সরিয়ে এক পুরুষ সাংবাদিককে প্রশ্ন করতে বলেন। এ বিষয়টিও সবার নজর কেড়েছে। এ ছাড়া প্রার্থী নিজে নারীদের কাছে ভোট চাননি; তাই সবকিছু নিয়েই শেষ সময় এখন সমীকরণ চলছে সর্বমহলে।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক। সেখানে নারী-পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে। কিন্তু ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর নারীদের প্রতি যদি এমনই আচরণ থাকে, তাহলে তার নির্বাচেনে আসা উচিত হয়নি। স্থানীয় সরকারের একজন প্রতিনিধি হিসেবে কেউ এমন আচরণ করতে পারেন না। আর নারী সাংবাদিকের সঙ্গে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, এ বিষয়ে তীব্র নিন্দা জানাই আমি।’
প্রচারের শেষ দিনে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, শেষ সময়ে মেয়র, কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে বরিশাল নগরী। সদর রোডসহ আশপাশের এলাকায় একের পর এক মিছিল, শোডাউন, গণসংযোগ করে প্রত্যেকেই যেন তাদের সবোর্চ্চ অবস্থান জানান দিচ্ছেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মোট ভোটকেন্দ্র ১২৬টি। এর মধ্যে ১০৬টি কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ)। পুলিশের হিসাবে ৭০টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ। এসব কেন্দ্রে ১৮ থেকে ১৯ জন আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সদস্যরা থাকবেন।’
নগরীতে ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। তাদের মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ ও পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন।
সাধারণত প্রাথমিক স্তরে একটি দেশে এক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থাই চালু থাকে। তবে কোনো কোনো দেশে এক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেও পাঠক্রমে (কারিকুলামে) ভিন্নতা থাকে সেটা সর্বোচ্চ দুই বা তিন ধরনের হয়ে থাকে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ঠিক করে দেয় শিক্ষার্থীরা কী ধরনের শিক্ষাগ্রহণ করবে।
বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণি থেকেই হরেক রকমের শিক্ষাব্যবস্থা এবং হরেক পরীক্ষা চালু আছে। এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা ১২ রকমে দেওয়া যায়। ফলে এক সনদের জন্য ১২ রকমের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আর শিক্ষা-প্রশাসনের পক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
প্রচলিত বা সাধারণ স্কুলগুলোতে যারা পড়ালেখা করে তারা ‘সাধারণ’ এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে থাকে। আর মাদ্রাসায় যারা পড়ে তারা দেয় দাখিল পরীক্ষা। দাখিল ভোকেশনাল নামেও একটি পরীক্ষা দেওয়া যায়। কারিগরিতে যারা পড়ে তারা দেয় এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায়। প্রাইভেট এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে। মাধ্যমিকে যেসব বিদ্যালয়ে ইংরেজি ভার্সন রয়েছে, সেখানে ইংরেজি ভাষায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায়।
ইংলিশ মিডিয়ামে (ইংরেজি ভার্সন নয়) যারা পড়ে, তাদের এসএসসি সমমানের পরীক্ষার নাম ‘ও’ লেভেল। সে ব্যবস্থাতেও এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামের স্কুলে পৃথক পড়ালেখা। আর সারা দেশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কওমি মাদ্রাসা; এ শিক্ষাকেও সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। কওমি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করা শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের সমমান দেওয়া হয়েছে। কওমিতে হাফেজি ও মাওলানা (টাইটেল) ধারায় পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এম তারিক আহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় বিভিন্ন ধারা থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে এ ধারাগুলো যদি একটা ফ্রেমওয়ার্ক ও মনিটরিংয়ে না থাকে, তাহলে বিশৃঙ্খলা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় বিভিন্ন ধারাকে একটা ফ্রেমওয়ার্কে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে; অর্থাৎ সবার জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিষয় রাখা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান ও মূল্যায়ন করা হচ্ছে কি না তা শিক্ষার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে মনিটরিং করতে হবে।’
তারিক আহসান বলেন, ‘কওমিতে অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে, এটা ঠিক। তবে সরকার তাদের কিছু ডিগ্রিকে সাধারণ শিক্ষার সমমান দিচ্ছে। এই শিক্ষাকেও একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণ এসএসসি ও ইংরেজি ভার্সনের এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আছে ৯টি শিক্ষা বোর্ড। মাদ্রাসায় দুই ধরনের দাখিলের জন্য রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। কারিগরি শিক্ষার জন্য আছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায় এসএসসি পরীক্ষা। শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনেই প্রাইভেট এসএসসি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ইদানীং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। বিভাগীয় এবং জেলা শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এসবের বেশিরভাগের নিবন্ধন নেই। তারা এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামে পরীক্ষা দিলেও তাদের কোনো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ নেই। শিক্ষা বোর্ডগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণ করে না।
অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা চালু রয়েছে। করোনার পর দেশে সাধারণ স্কুলের সংখ্যা কমলেও কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। তাদের পরীক্ষার জন্য তারা নিজেরাই একাধিক বোর্ড বানিয়েছে। এগুলোতে সরকারের তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসিক বিষয়গুলো সবাই অনুসরণ করে। কারিগরি ও মাদ্রাসায় আলাদা কিছু বিষয় যুক্ত রয়েছে। আমি বলব, বিভিন্ন ধারা বলে কিছু নেই। তবে ব্যতিক্রম ইংলিশ মিডিয়াম। আমাদের দেশের ইংলিশ মিডিয়ামে সাধারণত ব্রিটিশ কারিকুলামে পড়ানো হয়। সেখানেও আমরা বাংলাদেশ স্টাডিজ নামে একটি বিষয় যুক্ত করেছি। ওই কারিকুলামের শিক্ষার্থীরা যেন দেশপ্রেম ভুলে না যায় এবং নিজের ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি বিরূপ মনোভাবের না হয়। আরেকটি বড় ব্যতিক্রম কওমি মাদ্রাসা। সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।’
যারা খুব দরিদ্র তারা সাধারণত কওমি শিক্ষায় যায়। সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা থাকে। যারা নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত তারা সাধারণ স্কুলে লেখাপড়া করে। উচ্চবিত্তরা সাধারণত তাদের সন্তানদের ইংলিংশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ালেখা করান। ইদানীং মধ্যবিত্তরাও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও ইংরেজি ভার্সনের স্কুলে ঝুকছে। যারা পড়ালেখায় পিছিয়ে তারা সাধারণত কারিগরি শিক্ষায় যায়। আর যেসব অভিভাবক ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষার মিশ্রণ চান, তারা সাধারণত তাদের সন্তানদের আলিয়া মাদ্রাসায় পাঠান।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, দেশে একাধিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আবার শিক্ষাকাঠামোর নিয়ন্ত্রণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকছে না। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তার পছন্দের বাইরের শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ালেখা করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ফলে মাধ্যমিকে ঝরেপড়া কমছে না। আবার উচ্চশিক্ষায় গিয়েও অনেকে তাল মেলাতে পারছে না। অনেকে তার উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা তেমন কাজে লাগাতে পারছে না।
ব্রিটেনে সাধারণত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবার একই রকমের শিক্ষা। এরপর শিক্ষার্থীদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একদল যায় কারিগরি শিক্ষায়। অন্যদল যায় সাধারণ শিক্ষায়। যদিও দুই ভাগেই কিছু ট্রেড কোর্স থাকে। কে কোন ধরনের শিক্ষায় যাবে তাতে অভিভাবকদের কিছু বলার নেই। শিক্ষকরাই বিবেচনা করে শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাব্যবস্থা নির্ধারণ করেন।
কোনো দেশের উন্নয়নের মূল হচ্ছে কারিগরি শিক্ষার প্রসার। এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে। কারিগরিতে এখনো মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে না। সরকার ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে কারিগরিতে নিতে পেরেছে বললেও তাতে নানা ফাঁকি রয়েছে। কওমি মাদ্রাসা ও ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষার্থী বাড়লেও কারিগরিতে সেভাবে শিক্ষার্থী বাড়ছে না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই শিক্ষাব্যবস্থা চলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায়। অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর পড়ালেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা স্কুলেই সময় কাটায়। আমাদের দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ালেখা করা যায়। তবে টিউশন ফি ও বই ছাড়াও শিক্ষার্থীদের নানা খরচ থাকে, যা পরিবারকে বহন করতে হয়। মাধ্যমিক থেকে পুরোপুরিই পড়তে হয় অভিভাবকদের খরচে। ফলে অভিভাবকদের পছন্দে ও বাণিজ্যিক কারণে নানা ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এর থেকে সরকার কোনোভাবেই বের হতে পারছে না। বের হওয়ার পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে দেশি-বিদেশি শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছিল; অর্থাৎ সবাইকে কিছু কোর সাবজেক্ট পড়তে হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। সবাই দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে আচ্ছন্ন। মতভেদও রয়েছে। আমাদের বুঝতে হবে, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা যায়, কারণ সেখানে পড়তে পয়সা লাগে না। আমাদের হাজার হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারীকরণ করেছি। কিন্তু রাষ্ট্র শিক্ষার্থীদের পুরো দায়িত্ব নিচ্ছে না। যত দিন রাষ্ট্র দায়িত্ব নেবে না, তত দিন সব ধরনের শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফরমে আনা কঠিন।’
রাজধানীর দৈনিক বাংলা মোড়ে যে ভবনে (শ্রম ভবন) শ্রম আদালতের কার্যক্রম চলে সেটি পুরনো, জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ মনে হওয়ায় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছে ছয় মাসেরও বেশি সময় আগে। তবে এ ব্যাপারে প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বাকি। ঝুঁকির মধ্যেই চলছে আদালতের রুটিনকাজ। বিচারপ্রত্যাশী মানুষ, বিচারক, আইনজীবী এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখানে কর্মদিবসগুলোতে জীবনের শঙ্কা নিয়ে থাকেন, আতঙ্কে থাকেন।
আদালত-সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কর্মদিবসে ভবনটিতে বিচারপ্রার্থী, বিচারক, আইনজীবী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্তত ৫০০ মানুষের উপস্থিতি ঘটে। যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা বা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার শঙ্কায় থাকেন তারা। কয়েক বছর আগে বিজয়নগরে ১৯-তলা আধুনিক একটি শ্রম ভবন হলেও আদালত নিয়ে কারও কোনো বিকার নেই।
শ্রমিকের আইনি অধিকার নিশ্চিত করা কিংবা উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে কীভাবে প্রতিকার দেওয়া যায় তার জন্যই শ্রম আদালত। সারা দেশে ১০টি শ্রম আদালতের মধ্যে ঢাকায় ওই ভবনে তিনটি শ্রম আদালত রয়েছে। ১০ আদালতে বিচারাধীন ২৪ হাজার মামলার মধ্যে ঢাকার আদালতগুলোতে ১৭ হাজার ৬১৮টি মামলা বিচারাধীন।
বিশৃঙ্খল ও অনুপযুক্ত পরিবেশ এসব আদালতের একটা সমস্যা; পাশাপাশি বিচারে দীর্ঘসূত্রতার পুরনো অভিযোগ। এসব কারণে হতাশা কাজ করে বিচারপ্রত্যাশীদের মধ্যে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আদালতগুলোতে পর্যাপ্ত পরিসর নেই, উপযুক্ত পরিবেশ নেই। সমস্যার এখানেই শেষ নয়, শ্রম আদালতের রায়ের পর মামলায় আপিল হয়, যা চলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে।
এক মাস ধরে আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদশূন্য। ফলে বিচারে যথাগতির অভাব। ট্রাইব্যুনালের একজন সদস্য বিচারকাজ চালিয়ে নিচ্ছেন কোনো রকমে। শুধু ঢাকায় সারা দেশের জন্য মাত্র একটি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল নিয়েও হতাশা রয়েছে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের মধ্যে। শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার পেতে আইনি লড়াইয়ের ভরসাস্থল শ্রম আদালতকে উপযোগী বলতে আপত্তি রয়েছে বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের।
শ্রম অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভবনটি নিয়ে দীর্ঘদিনের আপত্তির পর গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা পরিদর্শন করে গত বছরের ১১ নভেম্বর এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেন। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে বলা হয়, ভবনে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রীর শক্তি লোপ পেয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও স্যাঁতসেঁতে ভবনটি ভূমিকম্পে ধসে পড়তে পারে। তখন শ্রম অধিদপ্তর ভবনটিকে পরিত্যক্ত উল্লেখ করে আদালতের কার্যক্রম এখান থেকে সরিয়ে নিতে বলে। এরপর এখান থেকে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কার্যালয় দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হলেও আদালতের জন্য নতুন জায়গা নির্ধারণ হয়নি। কর্মকর্তারা বলেন, ভবনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে ঢাকা জেলা প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলেও কাজ হয়নি।
অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. বেল্লাল হোসেন শেখ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী গণপূর্তের সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাকা জেলা প্রশাসন বৈঠক করে এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করবে। এটি করতে জেলা প্রশাসনকে কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার জেলা প্রশাসনের উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে পরিত্যক্ত ঘোষণার অনুরোধ জানানো হয় অধিদপ্তর থেকে। এতে কাজ না হওয়ায় গত ১০ মে একটি তাগিদপত্র দেওয়া হয়। আদালতগুলো এখান থেকে সরিয়ে নেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু আদালতের জায়গা ঠিক না হওয়ায় তা হচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে ঢাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
শ্রম আদালতে নিয়মিত মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী সৌমিত্র কুমার দাশ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের এবং বিচারপ্রার্থীদের বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এখানে আসতে হয়।’ একটি শ্রম আদালতের একজন রেজিস্ট্রার নাম না প্রকাশের শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখানে কাজ করতে এসে কোণঠাসা অবস্থায় আছি। দম বন্ধ পরিবেশ, জীবনের ঝুঁকি তো আছেই। এর মধ্যেই সবাইকে কাজ করতে হচ্ছে। আদালত কোথায় সরাতে হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৯-তলা শ্রম ভবনটি প্রতিষ্ঠিত হয় ৫৮ বছর আগে। এখন ভবনটির পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তমতলায় তিনটি আদালতে বিচারকাজ চলে। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনের প্রায় জায়গায় পলেস্তারা নেই। আদালত ও অন্যান্য কক্ষে স্যাঁতসেঁতে ও নোংরা পরিবেশ। টয়লেটগুলো খুবই নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। আদালতের ছোট ছোট এজলাসে গরমের দিনে হাঁসফাঁস করেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী এবং আদালত-সংশ্লিষ্টরা। ভবনে ওঠার সিঁড়িগুলো সরু। অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প বা কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটলে সহজে বেরিয়ে আসার উপায় নেই।
আইনজীবীরা জানান, ভবনে ওঠার একমাত্র লিফটটি প্রায়ই নষ্ট থাকে। অনেক সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে লিফটে লোকজন আটকা পড়ে। তখন মিস্ত্রি ডাকতে হয়। জরাজীর্ণ ভবনে বিচারকাজ নিয়ে বিচারপ্রার্থী শ্রমজীবী, শ্রমিক সংগঠনের নেতা ও আদালত-সংশ্লিষ্টরা আপত্তি জানালেও তাতে কান দেওয়া হচ্ছে না। লেবার কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আবদুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শ্রম আদালতের ভবনটি অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। শুনেছি এখান থেকে আদালত স্থানান্তরিত হবে। কিন্তু কোথায় হবে তা জানি না।’
অভিভাবকহীন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল : বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের অভিযোগ, অনেক দিন ধরেই বিশৃঙ্খল পরিবেশ রয়েছে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে। সঠিক সময়ে ও নিয়মিত বিচারকাজ না করা, অনিয়ম ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনে গত ২৫ এপ্রিল শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মো. ফারুকের নিয়োগ বাতিল করে সরকার। ২০২১ সালের ২৯ জুন তাকে নিয়োগ দেওয়া হলেও নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই মাস আগে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই থেকে পদটি শূন্য। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং শ্রম অধিদপ্তরের ওয়াকিবহাল সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, শিগগির আপিল ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান নিয়োগ হবে এমন আভাস নেই। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে ১ হাজার ৪৯৪টি মামলা বিচারাধীন। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার অধীর চন্দ্র বালা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান না থাকায় বিচারকাজে সমস্যা হচ্ছে, এটা ঠিক। জনবলেরও কিছু সমস্যা আছে। তবে বিচারকাজ থেমে নেই। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর এ বিষয়ে যেহেতু অবগত আছে নিশ্চয় দ্রুত সমাধান হবে।’
সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি। শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পরই আমরা এটিকে পরিত্যক্ত বলেছি। আদালত এখান থেকে সরিয়ে নিতে বলেছি। এখন কোনো দুর্ঘটনা বা অন্য কিছু হলে আমাদের দায় থাকবে না। শুনেছি আদালতের জন্য ভাড়ায় ভবন খোঁজা হচ্ছে। আশা করা যায় শিগগির সমাধান মিলবে।’ তিনি বলেন, ‘শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান নিয়োগ করতে আইন মন্ত্রণালয়কে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।’
দেশব্যাপী আবারও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টির উদ্দেশ্যে জামায়াতকে বিএনপি মাঠে নামিয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘যারা এ দেশের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, জেলখানায় চার নেতাকে হত্যা করেছে, একুশে আগস্টে গ্রেনেড হামলা করেছে তারা কারা? এরা বিএনপি। যারা আমার দেশের অগণিত মায়ের কোল খালি করেছে। যারা আমার দেশে লাশের পর লাশ, লাশের পাহাড় সৃষ্টি করেছে। যারা রক্তে রক্তে বাংলাদেশকে রক্তের দরিয়া বানাতে চায়, সেই অপশক্তি জামায়াত মাঠে নেমেছে। জামায়াত মাঠে নামে নাই, তাদের মাঠে নামিয়েছে তাদের বিশ্বস্ত ঠিকানা, তাদের আসল মুরব্বি বিএনপি।’
গতকাল শনিবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ‘বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এ সমাবেশের আয়োজন করে।
জামায়াত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তাদের (জামায়াত) নামানোর অর্থ হলো বিএনপি আগুন সন্ত্রাসের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। বিএনপি আবারও ভাঙচুর করবে, আগুন নিয়ে বাস পোড়াবে, মানুষ পুড়িয়ে মারবে। আজকে ওই রাজনীতি যারা করে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে বিএনপি। সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি। ১৭ কোটি মানুষের একমাত্র শত্রু হচ্ছে বিএনপি।’
বিএনপিকে ক্ষমতালোভী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতার জন্য তারা পারে না এমন কোনো অপকর্ম নেই। তারা ক্ষমতায় এলে এ দেশের গণতন্ত্র গিলে খাবে, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার আদর্শ গিলে খাবে, ভোটের বাক্স গিলে খাবে। আবারও হাওয়া ভবন খুলে লুটপাট করবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে বিদ্যুতের জায়গায় খাম্বা আসবে।’
সংলাপ নিয়ে বিএনপির মন্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা নাকি দুইবার প্রতারণা করেছি! আমরা তো আপনাদের ডাকছি না- আসেন, আসেন। সাধলে আবার খাইব, সেটা আমরা জানি। তত্ত্বাবধায়কটা মানলে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে, সংসদটা বিলুপ্ত হলে তাদের সাধবে কে? হাওয়া? কার সঙ্গে বসবে? বাতাসের সঙ্গে সংলাপে বসবেন পদত্যাগ করলে।’
সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘নালিশ করে করে নিষেধাজ্ঞা আনতে চেয়েছেন (বিএনপি)। ভিসানীতিতে আমরা ভয় পাই না। কারণ আমাদের মনের জোর আছে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করব। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। অপকর্ম করলে বিএনপিকেই তার মূল্য দিতে হবে, সেটা যেন তারা ভুলে না যায়।’
বিএনপির মাথার মধ্যে এখন তিনটা ভূত ঢুকেছে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এক ভূত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আরেক ভূত শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আরেক ভূত সংসদের বিলুপ্তি। দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাইলে বিএনপির মাথা থেকে এই তিন ভূত নামাতে হবে।’
বিএনপিকে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব যখন বলছেন আওয়ামী লীগকে ১০ ভাগ আসনও দেবেন না। বুকে যখন এতই বল, আসেন না নির্বাচনে আসেন। খেলা হবে। আসেন খেলার মাঠে। খেলার মাঠে না গিয়ে ফাউল শুরু করেছেন। বন্ধ হয়ে যাবে লাফালাফি, বাড়াবাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ যখন খেলার মতো খেলতে নামবে, তখন আপনাদের পালানোর পথ থাকবে না।’
আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঘরে রাখা যাবে না মন্তব্য করে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা মাঠে আছি, মাঠেই মোকাবিলা করব।’
তিনি বলেন, রূপরেখা তৈরি করার জন্য প্রতিদিন এত বৈঠক, এত দলের সবই কি ভুয়া? ৫২ দল, ২৭ দফা, ১০ দফা ভুয়া, পদযাত্রা ভুয়া, আন্দোলনের রূপরেখা ভুয়া। প্রস্তুত হয়ে যান, খেলা হবে আগামী নির্বাচনে। মোকাবিলা হবে। তবে ফাউল করলে খবর আছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি প্রমুখ।
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ কাল সোমবার। প্রার্থীদের প্রচারণা শেষ হয়েছে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ও জয় নিশ্চিত করার হিসাব-নিকাশ করছেন প্রার্থীরা। এবার বিএনপির কোনো প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশা অনেকটা বেড়ে গেছে। তবে ভোটের মাঠে না থাকলেও বিএনপি ও জামায়াতের ভোটাররা নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে বিজয়ী করতে বড় ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও বিএনপি দলীয়ভাবে নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছে। তবে মাঠে কিছু নেতাকর্মীকে দেখা যাচ্ছে। এ কারণে বিএনপি-জামায়াত যদি এককভাবে কোনো প্রার্থীর দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাহলে যেকোনো মুহূর্তে ভোটের হিসাব পাল্টে যেতে পারে বলছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
এদিকে আজীবন বহিষ্কার, শোকজ ও বহিষ্কারের হুমকির মধ্যেও বিএনপির নেতাকর্মীদের একাংশকে কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে অনেকটা প্রকাশ্যেই কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। নগরীর খালিশপুর ও দৌলতপুর থানা এলাকার ওয়ার্ডগুলোতে বিএনপি নেতাদের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি। ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত হোসেন লাভলু, ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ আরমান, মহানগর বিএনপির সদস্য রুবায়েত হোসেন বাবু অনেকটা প্রকাশ্যেই ওই এলাকার কাউন্সিলর প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গোলাম রব্বানী টিপুর পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বহিষ্কৃত হয়েও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচন করছেন মহানগর বিএনপির সদস্য সাজ্জাদ আহসান তোতন। ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ আলীর পক্ষে থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন লিটন, নগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক এস এম জসিম, ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম আহমেদ মিলু ও খবির উদ্দিন কাজ করছেন। একই ওয়ার্ডে আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ আলমের পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছেন মহানগর জাসাসের আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম বাচ্চু। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মির্জা তরফদারের পক্ষে সক্রিয় রয়েছেন ওয়ার্ড বিএনপির দুই যুগ্ম আহ্বায়ক। ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য জাকির হোসেন, সাবেক সমবায়বিষয়ক সম্পাদক শহীদ শেখ বাবু, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজু কাজ করছেন সদ্য যুবলীগে যোগ দেওয়া কাউন্সিলর প্রার্থী সুলতান মাহমুদ পিন্টুর পক্ষে। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর প্রার্থী ফয়েজুল ইসলাম টিটোর নির্বাচনী সভায় দেখা গেছে ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির উদ্দিনকে।
তবে অভিযুক্তরা বিষয়টি অস্বীকার করছেন। তারা বলছেন, একই এলাকা হওয়ায় প্রার্থীদের সঙ্গে সৌজন্যের জন্য কথা বলি। আমরা ভোটকেন্দ্রে যাব না।
জানা গেছে, প্রায় অর্ধেক সরকারবিরোধী ভোটার থাকলেও তাদের ভোটে কেন্দ্রে উপস্থিতির প্রবণতা অনেক কম। কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু বিএনপির নেতাকর্মীকে প্রচারণায় অংশ নিতে দেখো গেছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, প্রার্থী হওয়ায় ৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থীকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার ও দলের নিষেধ অমান্য করে নির্বাচনে ভূমিকা রাখায় ১১ জনকে শোকজ করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে আমাদের মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। এটা অনেক কমে এসেছে।
গতকাল শনিরাব রাত পর্যন্ত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা বিরামহীন প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। নির্বাচনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ১১ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে বিজিবি সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।
ফলাফল বিশ্লেষণে জানা যায়, কেসিসির গত পাঁচটি নির্বাচনের তিনটিতেই জয়ী হয় বিএনপি। দুটিতে আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক বিজয়ী হন। ২০১৮ সালের দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে প্রার্থী পাঁচজন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে প্রায় ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন।
এবারের সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল আউয়াল (হাতপাখা), জাকের পার্টির সাব্বির হোসেন (গোলাপ ফুল) ও একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুল ইসলাম মুশফিক (দেয়াল ঘড়ি) মেয়র পদে লড়ছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) খুলনা বিভাগ ও জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, বিএনপি বর্জন করায় কেসিসি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হওয়ার চিন্তা করার সুযোগ নেই। কেসিসিতে এবার উৎসবমুখর নির্বাচন নেই। মাঠে কোনো উত্তাপ নেই। কে মেয়র হবেন তা ভোটের আগেই নগরবাসী হিসাব করে রেখেছেন।
কেসিসির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন জানান, ১২ জুন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছ। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের নিরাপত্তায় ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়ন করা হয়েছে।
মধু ও আউয়ালের নিজস্ব পাঁচ থেকে ছয় হাজার ভোট রয়েছে। তবে বিএনপি-জামায়াত ঘেঁষা সাধারণ ভোটাররা কাউন্সিলর প্রার্থী ও আওয়ামী নেতাদের চাপে ভোট দিতে যেতে পারেন। আর সুষ্ঠুভাবে ভোট প্রয়োগ করতে পারলে মধু, আউয়াল ও মুশফিক ভালো ভোট পেতে পারেন। আউয়াল সাধারণ নারী ভোটারদের ভোট বেশি পেতে পারেন। সে হিসেবে মুশফিক পাবেন যুবক ও তরুণদের কিছু ভোট। তবে বিএনপি-জামায়াত যদি এককভাবে কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থীর দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাহলে তালুকদারের সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
এ ছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার প্রচুর চাপ দেখা যাচ্ছে। মানুষদের কড়াকড়িতে রেখেছে। চেক করা হচ্ছে। সর্বশেষ সেনাপ্রধানের যে ওয়ার্ডে নির্বাচন করছেন সেই ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শেখ হাফিজুর রহমান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
উল্লেখ্য, এবারের কেসিসি নির্বাচনে মোট ভোটার ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ ও নারী ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬। ১৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দুজন কাউন্সিলর প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। ২৯টি ওয়ার্ডে শুধু কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৫ জন। ১২ জুন দ্বিতীয় ধাপে খুলনা সিটি করপোরেশনে ভোট হবে। ভোট হবে ইভিএমে।
অনেকে ভিটেমাটি বিক্রি করে বা শেষ সঞ্চয়টুকু দিয়ে সুন্দর পরিবেশে মাথা গোঁজার একটা ঠিকানা প্লট, ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কিনে থাকেন। আগামী অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নিবন্ধন খরচ বাড়ানো হয়েছে। ১ জুলাই থেকে প্লট, ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট খাতের বেচাকেনায় গেইন কর হার বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। গেইন কর বিবেচনায় শতাংশ হিসাবে পাশাপাশি এলাকাভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। শতাংশ হিসাব বা নির্দিষ্ট পরিমাণের মধ্যে যা বেশি হবে তাই পরিশোধ করতে হবে। এতে খরচ বাড়বে জমি ও ফ্ল্যাট কেনাবেচায়। পুঁজি সংকটে অনেকে কিনতে পারবেন না, এতে ক্রেতা কমবে। লোকসানে পড়বেন আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা। ধস নেমে আসবে আবাসন খাতে।
আবাসন খাতের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল) দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, কয়েক বছর থেকে নিবন্ধন ব্যয় কমানোর দাবি করে এলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। শুধু তা-ই না, আবাসন ব্যবসায়ীরা জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্তিতে আবাসন-সংক্রান্ত আরও যেসব প্রস্তাব দিয়েছেন প্রস্তাবিত বাজেটে তার কোনোটার প্রতিফলন হয়নি। এতে আবাসন শিল্পে সংকট তৈরি হবে।
রিহ্যাব সভাপতি বলেন, আবাসন খাত সম্প্রতি নানান প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। উদীয়মান এই খাতে নানা রকম কর আরোপ ও সরকারের নীতি সহায়তার অভাবে ক্রমে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পতিত হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে জমি নিবন্ধনকালে উৎসে আয়কর ও গেইন কর বাড়ানোয় আবাসন খাতকে আরও সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। এতে ফ্ল্যাটের দাম বাড়বে। বাড়তি দাম ক্রেতার ওপর পড়বে এবং সবার জন্য আবাসন এই স্লোগানকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে ও অনেকের আবাসনের স্বপ্নপূরণ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
জানা গেছে, বাজেটে নিবন্ধন ফি বাড়ানোর প্রস্তাব করায় এরই মধ্যে জুলাই থেকে যেসব ফ্ল্যাট, প্লট, অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রিতে দর-কষাকষি চলছে তার দাম বাড়িয়ে হিসাব কষা হচ্ছে।
রাজধানীর মিরপুর ১৩ নম্বরে বিজয় রাকিন সিটিতে সম্প্রতি ফ্ল্যাট কিনেছেন ব্যবসায়ী রুম্মান ফারাজি। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমি ও আমার ভাই গ্রামের জায়গা বিক্রি করে এখানে ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা করি। আমি চলতি মাসে কিনেছি। আমার ভাই জুলাইতে কিনতে চেয়েছিল। সরকার বাজেটে নিবন্ধন ব্যয় বাড়িয়েছে। আমি যে ফ্ল্যাট কিনেছি সে একই ফ্ল্যাট কিনতে আমার ভাইকে বেশি খরচ করতে হবে। আপাতত ভাইয়ের কাছে বাড়তি টাকা না থাকায় কিনতে পারবে না।
করোনা মহামারীর সময়েই দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসে। আবাসন খাত স্থবির হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে। নির্মাণ শেষ হওয়ার পরও ক্রেতার অভাবে অনেক প্লট ও ফ্ল্যাট অবিক্রীত পড়ে থাকে। করোনা কমতে থাকায় এ খাতের ব্যবসায়ীরা লোকসান কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে থাকেন।
লোকসানের এ ধারা থেকে বের হয়ে আসতে আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাব আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অন্তর্ভুক্তিতে এক গুচ্ছ লিখিত প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী এবং এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনাকালেও এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বাজেটবিষয়ক প্রস্তাবের মধ্যে নিবন্ধন খরচ কমানোর দাবি ছিল অন্যতম। সরকারি নীতিনির্ধারকরা প্রতিবার আশ^াস দিলেও এখনো এ দাবি কার্যকর করেননি। উল্টো আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নিবন্ধন ব্যয় বাড়িয়েছেন।
বিদ্যমান আইনানুসারে বর্তমানে জমির নিবন্ধন ব্যয় ১০ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ। এর মধ্যে গেইন কর ৪ শতাংশ, স্ট্যাম্প ফি ১ দশমিক ৫, নিবন্ধন ফি ১, স্থানীয় সরকার কর ১ দশমিক ৫ ও ভ্যাট ৩ থেকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। রিহ্যাব থেকে ভ্যাট ১ দশমিক ৫ শতাংশ, গেইন কর ২, স্থানীয় সরকার কর ১ শতাংশসহ নিবন্ধন ব্যয় ৭ শতাংশ নির্ধারণের দাবি করে। প্রতিবেশী অনেক দেশে এ খরচ ৪ থেকে ৫ শতাংশ।
করবিশেষজ্ঞ এনবিআরের সাবেক সদস্য ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে গেইন কর দ্বিগুণ করা হয়েছে। অন্যদিকে শতাংশ হিসাবে গেইন কর নির্ধারণের পাশাপাশি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের পরিমাণও বাড়িয়ে ধরা হয়েছে। এই দুইয়ের মধ্যে যে পরিমাণ বেশি তা-ই সরকারকে দিতে হবে। এসব খরচ বিক্রেতাকে দেওয়ার কথা থাকলেও আমাদের দেশে ক্রেতার ওপর পড়ে। ফ্ল্যাট, প্লট বা জমির মধ্যে দামের সঙ্গে যোগ হয়ে যায়। সরকার রাজস্ব আদায় বাড়াতে আবাসন খাতে এ উদ্যোগ নিয়েছে। এতে আবাসন খাতে ক্রেতা হারাতে পারে। কারণ খরচ অনেক বেড়ে যাবে। তাই এ উদ্যোগ নেওয়া সরকারের খুব বেশি লাভ হবে না।
প্রস্তাবিত অর্থবিল এবং রাজস্ব বাজেট-সংক্রান্ত হিসাব বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে উৎসে কর যৌক্তিক করা হয়েছে। একই সঙ্গে গেইন কর হার বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। গেইন কর বিবেচনায় শতাংশ হিসাবে পাশাপাশি এলাকাভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। শতাংশ হিসাব বা নির্দিষ্ট পরিমাণের মধ্যে যা বেশি হবে তাই পরিশোধ করতে হবে। ১ জুলাই থেকে প্রতি কাঠা জমির জন্য প্রদেয় করের পরিমাণ মতিঝিল, দিলকুশা, নর্থ সাউথ রোড, মতিঝিল বর্ধিত এলাকা, মহাখালী এলাকায় গেইন কর হিসেবে কেনাবেচার চুক্তি মূল্যের ৮ শতাংশ হারে অথবা ২০ লাখ টাকার মধ্যে যা বেশি তা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। একইভাবে কারওয়ান বাজার এলাকার জন্য ৮ শতাংশ হারে অথবা ১২ লাখ টাকার মধ্যে যা বেশি, আগ্রাবাদ ও চট্টগ্রামের সিডিএ অ্যাভিনিউ এলাকার জন্য ৮ শতাংশ হারে বা ৮ লাখ টাকার মধ্যে যা বেশি, নারায়ণগঞ্জ, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, বাড্ডা, সায়েদাবাদ, পোস্তগোলা এবং গেন্ডারিয়া এলাকার জন্য ৮ শতাংশ হারে বা ৮ লাখ টাকার মধ্যে যা বেশি, উত্তরা, সোনারগাঁও, জনপথ, শাহবাগ, পান্থপথ, বাংলা মোটর, কাকরাইল এলাকার জন্য ৮ শতাংশ হারে বা ১২ লাখ টাকার মধ্যে যা বেশি, নবাবপুর ও ফুলবাড়িয়া এলাকার জন্য ৮ শতাংশ হারে বা ৮ লাখ টাকা মধ্যে যা বেশি সেই পরিমাণ গেইন কর হিসাবে দিতে হবে। রাজউক পূর্বাঞ্চল মডেল আবাসিক টাউন, ঝিলমিল আবাসিক এলাকার জন্য চুক্তি মূল্যের ৮ শতাংশ বা ৩ লাখ টাকার মধ্যে যা বেশি সেই পরিমাণ, রাজধানীর উত্তরা ১ থেকে ৯ নম্বর সেক্টর, ১০০ ফিট রাস্তার পাশে খিলগাঁও এলাকা, আজিমপুর, বিশ^রোডের পাশে রাজারবাগ এলাকা, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, হালিশহর, পাঁচলাইশ, মেহেদিবাগ এলাকার জন্য ৮ শতাংশ বা চুক্তি মূল্যের ৩ লাখ টাকা গেইন কর হিসাবে জমা দিতে হবে। একইভাবে এসব এলাকার বাইরেও দেশের অন্যান্য এলাকার নাম উল্লেখ এবং সীমানা চিহ্নিত করে ভিন্ন ভিন্ন হিসাবে গেইন কর শতাংশের হারে বাড়ানো হয়েছে ও নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ধরে দেওয়া হয়েছে। দুটোর মধ্যে যা বেশি হবে তাই পরিশোধ করতে হবে। অন্যদিকে ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে হলে এখন থেকে সব এলাকার জন্য প্রতি বর্গমিটারের জন্য ৮০০ টাকা হিসাবে বা চুক্তি মূল্যের ৮ শতাংশের মধ্যে যা বেশি সেটা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
সুরের মূর্চ্ছনায় মোহাচ্ছন্ন শ্রোতারা হারিয়ে যাবেন। তারপর নৃত্যের তালে মেতে উঠবে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আগামী বুধবার (৪ অক্টোবর) বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। আয়োজনকে বর্ণাঢ্য করে তুলতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এবারের বিশ্বকাপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কী থাকছে, এ নিয়ে আয়োজক ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) এখনো চুপ। দর্শকদের চমকে দিতে এমন গোপনীয়তার চেষ্টা অবশ্য প্রায় সব আয়োজকেরাই করে থাকেন।
তবে ভারতীয় গণমাধ্যম পিটিসি পাঞ্জাবের সূত্রে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইনসাইডস্পোর্ট।
খবরে বলা হয়, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী বিভিন্ন পরিবেশনায় থাকবেন বেশ কয়েকজন বলিউড অভিনেতা–অভিনেত্রী ও গায়ক–গায়িকা। এর মধ্যে গান পরিবেশনে থাকবেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আশা ভোসলে, গায়ক ও সংগীত পরিচালক শঙ্কর মহাদেভান, কণ্ঠশিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল ও অরিজিত সিং।
নাচের পরিবেশনায় দেখা যাবে রণবীর সিং ও তামান্না ভাটিয়াকে। রণবীর বিশ্বকাপের অফিশিয়াল থিম সংয়েও অংশ নিয়েছিলেন।
নাচ–গানের পাশাপাশি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হবে ভারতের ইতিহাস–ঐতিহ্য ও ক্রিকেট উন্মাদনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খেলোয়াড়দের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ১০ দলের অধিনায়ক। এ ছাড়া আয়োজক বিসিসিআই ও আইসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তো থাকবেনই।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
শিশুরাই আগামী দিনের কান্ডারি। তাদের হাতেই অর্পিত হবে আগামী দিনের নেতৃত্ব। দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে শিশুদের সুন্দর, স্বাভাবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুদের সুস্থ, সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার গুরুত্ব অনুভব করে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এর ফলে শিশুদের জন্য ‘হ্যাঁ’ বলুন, সবার আগে শিশু ইত্যাদি স্লোগান যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি শিশু অধিকার নিয়ে কাজও হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বাংলাদেশের সফলতা দৃশ্যমান। বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ছেলের ক্ষেত্রে ২১ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর নির্ধারণ করেই সরকার দায়িত্ব শেষ করেনি, বরং তা পালিত হচ্ছে কি না তাও নজরদারিতে রেখেছে। ফলে, বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের ঘটনা এখন নেই বললেই চলে। বরং, পত্রপত্রিকায় বাল্যবিয়ে প্রতিহত করতে পাত্র/পাত্রীর সহপাঠী, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তার (ইউএনও, সমাজসেবা অফিসার) ভূমিকার কথা প্রকাশিত হয়। কিন্তু এর উল্টোচিত্রও রয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। প্রতিবছর ২০ নভেম্বর জাতিসংঘ বিশ্ব শিশু দিবস পালন করে। তবে অন্যদিনেও এই দিবসটি পালনের নজির রয়েছে। যেমন ভারতে প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর জন্মদিন ১৪ নভেম্বর শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়। আমাদের দেশেও ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস এবং এরপরের এক সপ্তাহ শিশু অধিকার সপ্তাহ হিসেবে পালন করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এই কর্মসূচিগুলোর সুফল ইতিমধ্যেই পরিলক্ষিত হয়েছে।
নাগরিকের পাঁচটি মৌলিক অধিকার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা; যা শিশুদের জন্যও প্রযোজ্য তার শতভাগ বাস্তবায়ন দেখা যায় না। রাতে ফুটপাতে শুয়ে থাকা পথশিশু, দিনের বেলা পার্ক-রাস্তার ফুল বিক্রেতা শিশু, লেগুনার হেলপার, খাবার হোটেল, চায়ের দোকানে ফুট-ফরমাশ খেটে দুবেলা আহার জোগানো শিশুরা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত নয়। শুধু যে নিম্নবিত্ত বা দরিদ্র শিশুরাই আমাদের অবিমৃশ্যকারিতার শিকার তা নয়। ঝুঁকিতে পড়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়াও।
শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে লাগাতার পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কোচিং ক্লাসের চাপ, জিপিএ ৫ পাওয়ার জন্য অভিভাবকের চাপ সব মিলিয়ে শিশু-কিশোররা অতিক্রম করছে এক ক্রান্তিকাল। পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য বাবা-মা ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তাদের ওপর যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে তার ফলাফল দেখা যায় প্রতি বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় কাক্সিক্ষত ফল না পাওয়ায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা।
পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের মৌলিক অধিকার পাঁচটি হলেও একজন শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য দাবি করে আরও বেশি। তার স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন খেলাধুলার সুব্যবস্থা। রাজধানীসহ সারা দেশে আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে খেলার মাঠ। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসারে যেকোনো এলাকায় প্রতি পাঁচ হাজার মানুষের জন্য একটি করে খেলার মাঠ প্রয়োজন। যে মাঠের আকার হতে হবে এক একরের। ঢাকার শহরের জনসংখ্যা যদি আড়াই কোটি ধরা হয় তাহলে এই বিশাল জনসংখ্যার জন্য মাঠের প্রয়োজন হবে পাঁচ হাজার। কিন্তু ২০০০ সালের এক জরিপ অনুসারে এই মাঠের সংখ্যা মাত্র ১৫০টি। গত ২৩ বছরে এই সংখ্যা আরও হ্রাস পেয়েছে বলাই বাহুল্য।
মাঠহীন এই শহরে শিশুদের জন্য তৈরি হয়েছে আরেকটি ফাঁদ ফাস্ট ফুড দোকানের প্লে-জোন। প্লে-জোন নির্মাণ করে শিশুদের মনোযোগ আকর্ষণ করছেন ফাস্ট ফুড ব্যবসায়ীরা। ফাস্ট ফুড শিশু স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। ফাস্ট ফুড শিশুদের বার্গার, স্যান্ডউইচ, পেস্ট্রি, কেক, সফট ড্রিংকসের কুফল সম্পর্কে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা নানাভাবে আমাদের সতর্ক করেছেন। ফাস্ট ফুড ও সফট ড্রিংকস গ্রহণের ফলে অতি স্থূলতা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, অ্যালার্জির সমস্যা, ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি নানা ধরনের শারীরিক অসুস্থতা সৃষ্টি হতে পারে।
স্বাভাবিকভাবেই খেলার মাঠহীন এই খাবারের দোকানগুলো শিশুদের ভীষণ প্রিয়। আর এই সুযোগটিই নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। প্লে-জোন সংযুক্ত এই বিশেষ দোকানের খাবারের মূল্য অন্য সাধারণ দোকানের থেকে অনেক বেশি। কিন্তু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে এই বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হয় অভিভাবকদের। খেলার মাঠের সংকট সৃষ্টি করেছে ইনডোর প্লে-শপ। এই ইনডোর প্লে-শপে খেলার জন্য ঘণ্টা অনুসারে অর্থব্যয় করতে হয় অভিভাবকদের। দোকান অনুসারে এই অর্থ ঘণ্টাপ্রতি ৩৫০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
চিকিৎসা, শিক্ষা থেকে শুরু করে এখন খেলাধুলার মতো মৌলিক অধিকারও যখন অর্থের বিনিময়ে কিনতে হয়, তখন বলা যায় না আমাদের শিশুরা নিরাপদ আছে, বলতে হয় তাদের শৈশব নানা চাপে সংকুচিত হয়ে আছে। একটি নিরাপদ, বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার শুধু নথিতে পড়ে রবে না, বাস্তবায়িতও হবে বিশ্ব শিশু দিবসে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
বগুড়ার প্রায় ৪০০ বাড়ির দেয়ালে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দাবি করে কম্পিউটার প্রিন্ট করা কাগজ সাঁটিয়েছেন অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা। গত শনিবার রাতে কোনো একসময় জেলা কাহালুর উপজেলার মুরইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের বিষ্ণুপুর মাঝগাড়িপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, হিন্দুপাড়া ও মোল্লাপাড়ায় বাড়ির দেয়ালে কাগজগুলো লাগানো হয়েছে। এতে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে গতকাল রবিবার সকালে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিষ্ণুপুর গ্রামের চারপাড়ায় বিভিন্ন বাড়ির দেয়ালে কম্পিউটারে প্রিন্ট করা কাগজ সাঁটানো হয়েছে। ওই কাগজগুলোতে ২০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করা হয়েছে। দেয়ালে সাঁটানো কাগজগুলোতে লেখা রয়েছে ‘আসসালামু আলাইকুম, ২০০০ টাকা ৬ তারিখে দিতে হবে। না হইলে ৭ তারিখ থেকে আপনাদের ছেলে-মেয়ে হারায় গেলে আমার কোনো কিছু করার থাকবে না। আমি বা আমরা কে সেটা না খুঁজে, আমি যা বলছি সেটা করার চেষ্টা করেন তাহলে কিছু হবে না। অল্প কিছু টাকার জন্য বাচ্চাদের বিপদে ফেলায়েন না। যদি ছেলে-মেয়ের মঙ্গল চান তাহলে লোয়া-পুকুর সোলার লাইটের সঙ্গে যে বক্স থাকবে। নিজের টাকার সাথে একটা কাগজে নিজের নাম লিখে ওই বক্স-এ ফেলান আর নিজের বাচ্চাকে সুরক্ষিত করুন ধন্যবাদ। [বিঃ দ্রঃ আমার এই কাগজ আপনি পড়ছেন তাহলে মনে করেন আপনার ছেলে/মেয়েকে তুলে আনতেও পারবো। দয়া করে টাকাটা দিয়েন আমরা ছেলেগুলা ভালো না। ভালো থাকবেন ৬ তারিখ পর্যন্ত আল্লাহ হাফিজ।’
গতকাল রবিবার সকালে এসব পাড়ার মানুষ তাদের বাড়ির দেয়ালে সাঁটানো কাগজ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এলাকার মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের খবর দিলে তারা বিষয়টি পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে দেখেন। এসব পাড়ার লোকজন জানান, সকালে উঠে দেখেন দরজার পাশে এসব কাগজ লাগানো হয়েছে। প্রতিটি কাগজে পারিবারিক অবস্থান বুঝে নানা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়েছে। দিনমজুরের কাছে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ও বিত্তবানদের কাছে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মুরইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল ও স্থানীয় মেম্বার জাহিদুর রহমান বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন খবর দিলে বিষ্ণুপুর গ্রামে এসে বিষয়টির সত্যতা পাই। এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে এ ধরনের কাজ করেছে একটি চক্র। ধারণা করা হচ্ছে, স্থানীয়রা এ কাজের সঙ্গে জড়িত। নইলে এক রাতে ৩০০ থেকে ৪০০ বাড়িতে এই কাগজ সাঁটানো সহজ নয়। প্রতিটি বাড়িতে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়েছে। তার মানে এলাকার বা আশপাশের কোনো চক্র এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বগুড়ার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাজরান রউফ, কাহালু থানার ওসি মাহমুদ হাসানসহ পুলিশ সদস্যরা।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাজরান রউফ বলেন, গভীর রাতে কে বা কারা এমন লিফলেট বাড়ির সামনে সাঁটিয়ে দিয়েছে। ফলে এলাকার লোকজন ভয় পাচ্ছে। ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে কথা বলেছি। এলাকায় যে বা যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে অতিদ্রুত তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। আমাদের বেশ কয়েকটি টিম এ বিষয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।