
মফস্বল ও গ্রামীণ জনপদের পরিকল্পিত উন্নয়নের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। উপজেলা (মফস্বল) ও গ্রামের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ করছে এ সংস্থা। এক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা অন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে তত্ত্বাবধান করিয়ে উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করছে তারা। শহরের মতো বিশৃঙ্খলভাবে গ্রামীণ জনপদের উন্নয়ন করা হলে শহরাঞ্চলের মতো গ্রামাঞ্চলও ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, এলজিইডির জনবল-কাঠামোয় একজন নগরপরিকল্পনাবিদের পদ থাকলেও ওই পদে কখনো কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ২০২১ সালে পরিকল্পনা প্রণয়নে এলজিইডিকে সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেয় পরিকল্পনা কমিশন। এরপর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও সদর দপ্তরে ১ হাজার ১১২টি পরিকল্পনাবিদের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করে।
এসব পরামর্শ ও প্রস্তাবের তোয়াক্কা না করে নিজেদের মতো প্রকৌশলী এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীর প্রায় ছয় হাজার পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করে এলজিইডি। ওই প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুমোদিত হয়ে এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে জনবল-কাঠামো চূড়ান্ত হবে। অর্থাৎ নগর, শহর, মফস্বল ও গ্রাম উন্নয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানটি হালনাগাদ জনবল-কাঠামোতে পরিকল্পনাবিদের পদ ছাড়াই অনুমোদন পেতে চলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগর, শহর, মফস্বল ও গ্রামপর্যায়ে এলজিইডির নানা ধরনের কাজ রয়েছে। পরিকল্পনাবিদের পদ ছাড়া অনুমোদন পেয়ে গেলে টেকসই ও পরিকল্পিত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। একজন পরিকল্পনাবিদ তার শিক্ষাজীবনে নগর, শহর, মফস্বল ও গ্রামপর্যায়ের পরিকল্পনা বিষয়ে সম্যক জ্ঞান লাভ করে। তাদের দিয়ে পরিকল্পনার কাজগুলো করালে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ঠিক রেখে উন্নয়নকাজ করা যাবে। না হলে অপরিকল্পিত উন্নয়নে নগরাঞ্চলের মতো মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলের পরিবেশও নষ্ট হবে। ‘নগর পরিকল্পনাবিদ’ই এলজিইডির মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
দেশের ৪৯৫টি উপজেলা, ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন ও ৭৭ হাজার ২৩০টি গ্রাম রয়েছে। ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯২১ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে এলজিইডির এখতিয়ারে। সরকারের রাজনৈতিক কর্মসূচি অনুযায়ী এখন গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার কাজের দায়িত্বও এলজিইডির ওপর। ইতিমধ্যে উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামপর্যায়ের পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে তারা। এ কর্মসূচির আওতায় গ্রামীণ জনপদের সড়ক, সেতু, আবাসন, বর্জ্য-ব্যবস্থাপনা, হাটবাজার ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন, খেলার মাঠ, সবুজায়ন ও জলাশয় রক্ষা, পরিবেশ উন্নয়নসহ সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে তারা। নিজস্ব ‘নগর পরিকল্পনাবিদ’ না থাকায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এসব কাজ করানো হচ্ছে। ফলে কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান বাছাই করা এবং সঠিকভাবে কাজ বুঝে নিতে পারছে না। বাস্তবায়নের কাজেও বড় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয় সরকারের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে পরিকল্পনা করার দায়িত্ব নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের (ইউডিডি)। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় সরকারের সব ধরনের নগর পরিকল্পনার কাজ করতে পারছে না। পৃথক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান হওয়ায় কিছু পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। এসব সমস্যা অনুধাবন করে সরকার ২০১৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের রুলস অব বিজনেস সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার বিভাগের ওপর ন্যস্ত করা হয়। কোনো পরিকল্পনাবিদ না থাকলেও এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ইতিমধ্যে ২৫৪টি পৌরসভা ও ২টি সিটি করপোরেশনের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু বিপুল অর্থ খরচ হলেও কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যায়নি।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে উপজেলা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে তার আলোকে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এরপর ১২টি উপজেলার মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে এলজিইডি। এভাবে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা সময়সাপেক্ষ। সংস্থায় পর্যাপ্ত পরিকল্পনাবিদ থাকলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বছরে ৫০ থেকে ১০০টি উপজেলা মাস্টারপ্ল্যান করা সম্ভব হবে।
এলজিইডি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসরণ করে ২০১৯ সালে এলজিইডি একটি পরিকল্পনা সেল গঠনের উদ্যোগ নেয়। সে সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্রও জারি করে। পরে এ উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। কারণ সংস্থায় অন্য পেশার লোক চান না প্রকৌশলীরা।
বিআইপি বলেছে, এলজিইডির প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রামে সদর দপ্তরের আওতায় প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে ২৪টি উইংয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি উইংয়ের নেতৃত্বে থাকবেন একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। এলজিইডির নগর ব্যবস্থাপনা উইং নগর পরিকল্পনা, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, নগর পরিচালনা ও দক্ষতা উন্নয়নসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ উইংয়ে একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পরিবর্তে একজন অতিরিক্ত প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে।
বিআইপির প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, এলজিইডির সদর দপ্তরে সড়ক উন্নয়ন, পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন, নগর ব্যবস্থাপনা, পানিসম্পদ, গবেষণা-উন্নয়ন-নলেজ ম্যানেজমেন্ট, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ ও সামাজিক সুরক্ষা এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট উইংয়ে নির্বাহী ও সিনিয়র নির্বাহী পরিকল্পনাবিদের ২৮টি পদ সৃষ্টি করা দরকার। বিভাগীয় পর্যায়ে একজন তত্ত্বাবধায়ক পরিকল্পনাবিদ ও সিনিয়র সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ রাখা দরকার; তাহলে আট বিভাগে ১৬টি পদ সৃষ্টি হবে। জেলাপর্যায়ে একজন নির্বাহী নগর পরিকল্পনাবিদ ও একজন সিনিয়র সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদের ১২৮টি নতুন পদ সৃষ্টি করা দরকার। উপজেলা পর্যায়ে একজন উপজেলা নগর পরিকল্পনাবিদ বা সিনিয়র সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ ও একজন সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদের ৯৯০ জন নগর পরিকল্পনাবিদের পদ সৃষ্টি করা দরকার।
এলজিইডির সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও নগর পরিকল্পনাবিদ মো. নুরুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি শেষ করে নগর পরিকল্পনায় মাস্টার্স করেছি। এ বিষয়ে পড়তে এসে বুঝতে পেরেছি পরিকল্পিত ও উন্নত দেশ গঠনে প্রথম যোদ্ধা পরিকল্পনাবিদ। পরিকল্পনাবিদের কাজের পর স্থপতির কাজ শুরু হয়। সবশেষে প্রকৌশলীর কাজ। কিন্তু আমাদের দেশে এমন গঠনমূলক চর্চা হয় না, যদিও প্রয়োজনীয়তা আছে। প্রকৌশলীদের দাপটে সব কুপোকাত।’
তিনি বলেন, ‘এলজিইডি নগর, শহর, মফস্বল ও গ্রামীণ অঞ্চলের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কাজ করছে। পরিকল্পনার কাজটি পরিকল্পনাসংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে করানো উচিত। কিন্তু এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান দেশে নেই। সরকারের উচিত এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। পাশাপাশি এলজিইডি যেহেতু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে সেহেতু এলজিইডিতেও পর্যাপ্তসংখ্যক নগর পরিকল্পনাবিদ দরকার। এলজিইডিতে পেশাজীবী জনবল দরকার।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এলজিইডি উপজেলা মাস্টারপ্ল্যান ও গ্রামীণ মাস্টারপ্ল্যান করছে। আমার গ্রাম-আমার শহর কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে। দেশের সিংহভাগ এলাকার উন্নয়নের দায়িত্ব এখন এ সংস্থার ওপর। অথচ তাদের কোনো নগর পরিকল্পনাবিদ নেই।’
তিনি বলেন, ‘এলজিইডি জনবল-কাঠামো সংশোধন করে ছয় হাজারের বেশি পদ সৃষ্টি করছে। সেখানে ১ হাজার ১১২টি নগর পরিকল্পনাবিদের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব দিয়েছে বিআইপি। আমরা এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বিরক্ত হয়েছেন। তার মতে পরিকল্পনাবিদের প্রয়োজন নেই।’
এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মোহসীনকে টেলিফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠালেও সাড়া মেলেনি। পরে এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন) শফিকুর রহমানের কাছে জানতে চাইল তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংস্থা যেসব পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, যা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। নগর পরিকল্পনাবিদের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব সেখানে আছে কি না, তা তার জানা নেই।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সব পেশাজীবী শ্রেণির দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনাবিদদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাহলে উন্নয়ন টেকসই ও পরিবেশবান্ধব হবে।’
তিনি বলেন, ‘এলজিইডি এখন পৌরসভা, উপজেলা ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করছে। মূলত এলজিইডি একটি প্রকৌশল সংস্থা। তাদের কাজ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। বিকল্প না থাকায় তাদের দিয়ে পরিকল্পনার কাজও করাচ্ছে সরকার। এলজিইডি যদি পরিকল্পনাবিদের প্রয়োজন মনে না করে তাহলে আমরা জোর করে পরিকল্পনাবিদের পদ সৃষ্টি করব না। প্রয়োজনে আমরা স্থপতি বা পরিকল্পনাবিদদের জন্য স্বতন্ত্র অধিদপ্তর করব।’
জ্যৈষ্ঠ শেষ হলো, বরষার প্রথম দিন আজ। মানুষের মতোই প্রকৃতিও কাঁদে বলেই কি বর্ষা আসে? নাকি ভিজিয়ে দিতে, শীতল করতে আসে তপ্ত ধরাকে! সম্প্রতি যে অসহ্য গরম সহ্য করেছে দেশবাসী, প্রথমে বৃষ্টির ধারণা এবং পরে বৃষ্টি এসে হাওয়ায় যে শীতলতা ছড়িয়েছে তারপরই না হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম আমরা। ফলে প্রকৃতির কান্নার মতোই বর্ষা স্বস্তিরও নাম। নদীমাতৃক বাংলাদেশে বর্ষা তথা আষাঢ়-শ্রাবণের যে রূপ, তার তো আর তুলনা নেই। বর্ষা নিয়ে কবি-সাহিত্যিকরা লিখেছেন অগণিত গান ও কবিতা। আবেগে আপ্লুত হয়ে বিশ্বকবি বর্ষার প্রতি ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে লিখেছেন, ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনে, জানিনে জানিনে কিছুতে কেন যে মন লাগে না।’
কিছুতে মন না লাগা রবীন্দ্রনাথ এই বাংলার নদী পদ্মার বুকে পদ্মাবোটে বসে বর্ষার রূপমুগ্ধ হয়েছেন, লিখেছেন ‘সোনার তরী’র মতো অসামান্য কবিতা। লিখেছেন ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে’। বাংলাদেশের বর্ষার রূপ বর্ণনা করেই লিখেছেন “আকাশ আঁধার, বেলা বেশি আর নাহি রে।/ ঝরো-ঝরো ধারে ভিজিবে নিচোল,/ ঘাটে যেতে পথ হয়েছে পিছল/ ওই বেণুবন দোলে ঘন ঘন/ পথপাশে দেখ্ চাহি রে॥/ শুধু রবীন্দ্রনাথ কেন, এ সময়ের কবি মারজুক রাসেলও লিখেছেন ‘বৃষ্টি তোমার পায়ে ধরি, অন্য কোথাও পড়ো, আমাদের এই সকাল দুপুর কেন নষ্ট করো’।
আকাশভরা রবীন্দ্রনাথের দেশে নীল গগনে কালো মেঘের চোখ রাঙানিতে বৃষ্টির রাজত্ব শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এবার সেভাবে এখনো অঝোরধারায় আকাশ কাঁদিয়ে বর্ষারানী তার আগমনের বার্তা পৌঁছে দেয়নি ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে। তবে মাঝেমধ্যেই আকাশ আঁধার করে নতিজা দেখানো শুরু করেছে। এখন চলতি পথে ছাতা কিংবা বর্ষাতি নিয়ে বের হতেই হবে সচেতন কাউকে, যিনি হুট করে বৃষ্টিতে ভিজতে চান না।
বর্ষা আমাদের জন্য অপরিহার্য এক ঋতু। বৃষ্টি না হলে শস্যাদি জন্মাবে না, বেড়ে উঠবে না প্রাণ। বৃষ্টির অভাবে মাটি যখন অনুর্বর হয়ে যায় তখন বর্ষা এসে তা উর্বর করে। আমাদের নদী, মাঠ, ঘাটের দেশ বর্ষায় ভরে ওঠে সবুজে-শ্যামলে। শুধু কি তাই, বর্ষার আগমনে গাছে শোভাবর্ধন করে কদম ফুল। মেঘের গুড়ুম গুড়ুম গর্জনে ময়ূর নাচে পেখম তুলে।
ঋতুবৈচিত্র্যের ষড়ঋতুর দেশের দ্বিতীয় ঋতু বর্ষা। বরষার প্রথম দিনে, ঘন কালো মেঘ দেখে, আনন্দে যদি কাঁপে তোমার হৃদয়, সেদিন তাহার সাথে করো পরিচয়, কাছে কাছে থেকেও যে কভু কাছে নয় হুমায়ূন আহমেদের কথায় মকসুদ জামিল মিন্টুর সুর করা এ গান গাইতে গাইতে হৃদয়ের কথা জানাতে না পারা প্রেমিকার কথা ভাবেনি আর কোন প্রেমিক! বরষা তাই প্রেমেরও মোক্ষম ঋতু কবি আবুল হাসান তো লিখেছিলেনই, বৃষ্টি চিহ্নিত ভালোবাসায়, বৃষ্টি হলেই না সেরকম সারা দিন হৃদয়ের অক্ষরভরা উপন্যাস পড়া যায়।
এমন রোমান্টিক বৃষ্টির কারণে বিপদেরও কিন্তু শেষ নেই। সবচেয়ে বড় বিপদ নিম্ন আয়ের মানুষদের। প্রতিদিন কাজে যাওয়া ও ফেরার বাইরে দিনমজুরদের কাজও যাবে কমে ভয়ানকভাবে, ফলে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ বাড়বে, কাজ বাড়বে পুলিশ বিভাগের। আর বর্ষা এলেই দেখবেন কাজকর্ম বেড়ে যায় আমাদের সড়ক বিভাগের। মানে রাস্তার কাটাকুটি দুর্ভোগও বাড়বে এ বর্ষায়। সীমিত আয়ের মানুষদের কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব করা টাকায় ভাগ বসাবে হুট করে বৃষ্টি এড়াতে ব্যবহার করা যানবাহন। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, গাড়ির বিলাস যারা নিতে পারেন না, তারা অপেক্ষা করবেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কখন বৃষ্টি ধরে আসবে, কখন বাড়ি পৌঁছে পরিবারের সান্নিধ্যে যাবে সারা দিন কামলা খাটা মানুষ।
বৃষ্টিতে মোহনীয় হয়ে উঠুক পুরো বর্ষা আষাঢ় ও শ্রাবণ। আবেগে ভরে বর্ষা আমাদের মনকে স্নিগ্ধ করে তোলে। পুরাতন জঞ্জাল ধুয়েমুছে আমরাও জেগে উঠি প্রাণচাঞ্চল্যে।
আহারে বর্ষা, বৃক্ষ ফসলের জন্য ভয়াবহ অথচ প্রয়োজনীয় বর্ষার এই জল, কিন্তু নগরে যে বৃষ্টি হবে, যে নগরে আয়-ব্যয়ের এত বৈষম্য, এত পার্থক্য সে নগরের বৃষ্টির রঙ কি কখনো কখনো হয়ে উঠবে না লাল? সেই বৃষ্টির রঙ কি আমরা ক্রমাগত প্রতিদিন মেনে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকব?
* কবি ও সাংবাদিক
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে চীন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, সব ধরনের আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে কাজ করতে তারা প্রস্তুত।
গতকাল বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করে এ সমর্থনের কথা জানান। গতকাল ঢাকায়
চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। ঢাকায় চীনের দূতাবাস গতকাল তাদের ফেসবুক পেজে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের এ বক্তব্য প্রচার করেছে। সেখানে এ বিষয়ে চীনা সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের প্রশ্ন এবং তার জবাবে ওয়েনবিনের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
গ্লোবাল টাইমসের প্রশ্নে বলা হয়, সম্প্রতি আমরা লক্ষ করেছি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বিভ্রান্তিকর এবং এ নিষেধাজ্ঞা একটি খেলার মতো। তিনি বলেছেন, যেকোনো দেশের সরকার পতনের ক্ষমতা তাদের রয়েছে। বাংলাদেশ নিষেধাজ্ঞাকে ভয় পায় না এবং তিনি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন যেন বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশ থেকে কিছু কেনা না হয়।
জবাবে ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো আমাদের নজরে এসেছে। প্রকৃতপক্ষে একটি দেশ নিজেদের বর্ণবৈষম্য, বন্দুক সহিংসতা ও মাদক সমস্যার প্রতি নজর না দিয়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের অজুহাত দিয়ে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের জনগণেরই বলিষ্ঠ অবস্থানের কথা বলেননি, তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশের বিশেষত উন্নয়নশীল বিশ্বের মনের কথা বলেছেন।
চীনের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র আরও বলেন, ‘চীন ও বাংলাদেশ ঐতিহাসিক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা এবং স্বাধীন দেশীয় ও বৈদেশিক নীতি সমুন্নত রাখতে এর জাতীয় বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই উন্নয়নের পথ অনুসরণকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। আমরা জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির ভিত্তিতে মানবজাতির জন্য একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি সম্প্রদায় গড়তে সব ধরনের আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরোধিতা করতে জাতিসংঘ-কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা আবদ্ধ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণকারী মৌলিক নিয়মাবলিকে সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।’
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) লোকসান বেড়েই চলেছে। চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির লোকসান আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে।
চলতি অর্থবছর ৪২ হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হতে পারে বলে প্রক্ষেপণ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। তবে ডলারের দাম ১ টাকা বাড়লে ক্ষতির পরিমাণ আরও ৫০০ কোটি টাকা বাড়বে। এভাবে ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়ার সঙ্গে লোকসানের পরিমাণও বাড়বে আনুপাতিক হারে। নতুন অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি ভর্তুকি চাওয়া হয়েছে।
গত অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩২ হাজার কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার ভর্তুকি দিয়েছিল ২৯ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরেও (২০২০-২১) প্রতিষ্ঠানটিকে লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে সরকার ১১ হাজার ৭৭৮ কোটি ভর্তুকি দেওয়ার পর প্রায় ১৩০ কোটি টাকা মুনাফা করে পিডিবি। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা কেন্দ্র ভাড়া দেওয়া, উৎপাদন খরচের চেয়ে পাইকারি দর কম হওয়া, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়াসহ অন্যান্য কিছু কারণে লোকসানের পরিমাণ বেড়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য পিডিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। দায়িত্বশীল অন্য কর্মকর্তারাও বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনগণকে বিদ্যুৎ না দিয়ে এত লোকসান করার মৌলিক কারণ ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা কেন্দ্র ভাড়া, নিয়ন্ত্রণহীন ঘাটতি বাড়ানো। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে গিয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিপুল পরিমাণ ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। এতে ভোক্তার ওপর মূল্যবৃদ্ধি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের ভর্তুকি বাড়ছে। অথচ জনগণ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। এটি বিদ্যুৎ খাতের ভয়ংকর ‘ডিজাস্টার’।
পরিত্রাণের উপায় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনগণকে নিয়ে এ সমস্যা সমাধান করতে হবে। সরকারের কর্মকর্তা, আমলারা এ বিষয়ে দায়িত্ব পালনের যোগ্য নয়। বিদ্যুৎ একটা কারিগরি বিষয়। কিন্তু তাদের এ জ্ঞান নেই। কারিগরি জ্ঞানের পাশাপাশি দেশপ্রেম না থাকলে এসব ক্ষেত্রে সরকার কখনই সফলতা অর্জন করতে পারবে না।
শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ খাতের সব কোম্পানির বোর্ড থেকে অদক্ষ আমলাদের সরিয়ে দক্ষ, স্বচ্ছ চিন্তা-চেতনা, দেশপ্রেম এবং কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের পদায়ন করতে হবে। জ¦ালানি ও খাদ্য নিরাপত্তাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখা যাবে না। কারণ জ¦ালানি নিরাপত্তা না থাকলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। সুতরাং এ খাতকে ব্যবসায়ী খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে উন্নয়ন হয়েছে এবং ব্যবসায়ীদের বেশি বেশি মুনাফা দেওয়ার জন্য বিশেষ আইন করা হয়েছে, তা খুবই বাজে কাজ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের এ নীতি ও দর্শন বদলাতে হবে। কৃষি খাতের মতোই এ খাতকে প্রণোদনা দিয়ে চালিয়ে নিতে হবে। এটাই সংবিধানের দর্শন।
পিডিবির সূত্রমতে, গত অর্থবছরে (২০২১-২২) প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি পর্যন্ত ব্যয় (সঞ্চালন ক্ষতি, বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল, টিডিএসসহ অন্যান্য ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে) হয়েছে ৯ টাকা ৪৩ পয়সা। গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ব্যয় ছিল ১১ টাকা ৪২ পয়সা, যা চলতি অর্থবছর শেষে কমে ১১ টাকায় দাঁড়াতে পারে। বর্তমানে পিডিবি প্রতি ইউনিট ৮ টাকা ১০ পয়সা দরে পাইকারি বিদ্যুৎ বিক্রি করছে। এতে লোকসান হচ্ছে পিডিবির। তবে আগামী অর্থবছরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ও অন্যান্য ব্যয় কমে সাড়ে ১০ টাকার মতো হতে পারে, এমন ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের ব্যবহারও বাড়ার সম্ভাবনা থাকায় লোকসান কিছুটা কমবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
গত অর্থবছরে পিডিবির মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৩৯৩ কোটি ইউনিট। চলতি অর্থবছরে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ৪ হাজার ৩১৮ কোটি ইউনিট, যা চলতি মাস থেকে ৮ হাজার ৮০০ কোটি ইউনিট এবং আগামী অর্থবছরে ৯ হাজার ৫১৫ কোটি ইউনিট হবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতে ধীরে ধীরে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গণশুনানি ছাড়াই চলতি বছর তিন দফায় খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম মোট ১৫ শতাংশ এবং পাইকারিতে ৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে সরকারের নির্বাহী আদেশে। বিদ্যুতের এ মূল্য বৃদ্ধির ফলে চলতি অর্থবছর তুলনামূলক লোকসান কিছুটা কমবে। তবে পুরোপুরি লোকসান থেকে বের হতে বিদ্যুতের দাম আরও অন্তত ৬৫ শতাংশ বাড়াতে হবে পিডিবিকে।
উৎপাদন ব্যয় কমাতে আগামী অর্থবছরে কয়লা, গ্যাস, নবায়নযোগ্য জ¦ালানিভিত্তিক বিদ্যুতের পাশাপাশি আমদানিকৃত বিদ্যুতের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আগামী অর্থবছরে ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ বিদ্যুৎ কয়লা থেকে উৎপাদন হবে। বর্তমানে এর পরিমাণ ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের ব্যবহার ৫১ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫২ দশমিক ১৭ শতাংশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ এবং আমদানিকৃত বিদ্যুতের পরিমাণ ১২ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অন্যদিকে উৎপাদন ব্যয় বাড়ে এমন জ্বালানি ফার্নেস ওয়েলের ব্যবহার ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ, ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ ২ দশমিক ২৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ করার চিন্তা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের দাম আগামীতে আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির কারণে আওয়ামী লীগ নেতাদের হাঁটু কাঁপতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা বিদেশে রয়েছে, টাকা পাচার করেছে বিদেশে।’
গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের কাজির দেউড়ি মোড়ে আয়োজিত ‘তারুণ্যের সমাবেশ’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ভিসানীতি এমন হয়েছে, এবার যদি ভোটে কারচুপি করো, দিনের ভোট রাতে করো বা কুত্তা মার্কা নির্বাচন করো তাহলে রেহাই নেই।’
জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামের এ বিভাগীয় সমাবেশের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী তরুণদের নিয়ে কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপি। সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব আগামীতে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারি না। স্যাংশন কেন? র্যাবকে কারা ব্যবহার করেছে? র্যাবকে কারা বলেছে আমার ভাইদের তুলে নিয়ে গুম করতে?’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অনেক হয়েছে। আপনি আমাদের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছেন। আমাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। আমরা কোর্টে যেতে পারি না। কোর্টে গেলে সরাসরি জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়ে নিম্ন আদালতে গেলে আবার জেলে পাঠানো হয়। জামিন নিয়ে বের হলে আবার মামলা দেওয়া হয়।’
সাংবাদিকরা লিখতে পারছেন না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা দেওয়া হচ্ছে। রোজিনা ইসলামকে আবারও মামলা দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচার এখনো হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘এরা (আওয়ামী লীগ) বলে ক্ষমতায় আমরা যাব। ক্ষমতায় কীভাবে যাবা? ওই পুলিশ, ওই বিডিআর, ওই রাষ্ট্রযন্ত্র দিয়ে? আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমরা জনগণকে ক্ষমতায় নিতে চাই। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে বাংলাদেশকে বলা হতো উন্নয়নের রোল মডেল, সে বাংলাদেশকে এখন বলা হচ্ছে মরীচিকা। যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তারা ছাড়া আর কেউ লাভবান হচ্ছে না।’
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চরমোনাই পীরের ওপর হামলা ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি একজন আলেম মানুষ। তাকেও মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটক রেখেছে। শুধু আটক রাখেনি, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। আমরা জানি না তাকে সেøা পয়জনিং করা হয়েছে কি না। কারণ তিনি এখন যে অসুস্থ হয়েছেন, এতটা অসুস্থ তার হওয়ার কথা নয়। তাকে আবার হাসপাতালে যেতে হয়েছে। এখন তিনি জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।’
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা সত্যি যে এটি দেশের প্রথম টানেল। কিন্তু মানুষের মৌলিক চাহিদার কী হবে? টানেলের আগে যুবকদের চাকরির বাজার কোথায়? নতুন কোনো শিল্পকারখানা তো হচ্ছে না। আগে মানুষের জীবনধারণের অধিকার ও চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’
যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মো. নাসির উদ্দিন, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর প্রমুখ।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এ বিষয়ে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ যুক্তিযুক্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি।
গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পের (বিআরএসপি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিতে ভূমিকা রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে চিঠি দিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য। গত সোমবার তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোরেলের কাছে চিঠি দেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে বিদেশি চাপ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে ওবায়দুল কাদের গতকাল ওই মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, ‘বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে যতটা না তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তাকে নিয়ে রাজনীতির চর্চা করেছে বেশি।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করে না, করবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সেখানে ৬ জানুয়ারি (২০২০ সাল) গণতন্ত্রের নামে কী হলো? ৬টি প্রাণ গেল। ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো নির্বাচনে পরাজয় মেনে নেননি। তিনি বলেন, ‘সবাই মুখে যে গণতন্ত্রের কথা বলছে, বাস্তবে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিছু না কিছু ত্রুটি আছে। আমাদের গণতন্ত্রও সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত বলছি না। ত্রুটিমুক্ত করার চেষ্টা করছি। নির্বাচন কমিশনকে আইন করে স্বাধীন করা হয়েছে।’
বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনি কতটা জনপ্রিয় প্রমাণ করতে হলে নির্বাচনে আসতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বেগম জিয়াকে জেলে রেখেছে, তত্ত্বাবধায়ক বাদ দিয়েছে, বিএনপির দুটি অভিযোগই মিথ্যা।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মির্জা ফখরুল নিজে ব্যর্থ। সবার আগে বিএনপি নেতৃত্বের টপ টু বটম পদত্যাগ করা দরকার। দৃশ্যমান কোনো আন্দোলন তারা করতে পারেনি। বিএনপির ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চা নেই, দেশে গণতন্ত্র আনবে কীভাবে।’
জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি উচ্চ আদালতে আছে। চূড়ান্ত রায় আসেনি। সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে না। দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার দাবি আছে। দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।’
জাতিসংঘে মানবাধিকার কমিশনের চিঠি সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কি জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কথা ও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চলি?’
এর আগে রোড সেফটি অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে নিজের অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এত উন্নয়নের পরও সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে পারছি না, এটা আজকে প্রশ্ন। সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক ক্ষতি হয়। আমাদের ভাবনা অনেক সুদূরপ্রসারী। কিন্তু বাস্তবায়ন খুবই ধীর।’
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন। পরে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে প্যানেল আলোচনা করেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি অপরাধ ও অপারেশন আতিকুল ইসলাম, বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার, বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের রোড সেফটি প্রজেক্টের সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট স্পেশালিস্ট দীপন বোস।
বিশ^ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।