
নোয়াখালীর মাইজদীতে বাসায় ঢুকে মা ও এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েকে কুপিয়ে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় এক যুবককে আটক করেছে এলাকাবাসী। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাইজদী শহরের বার্লিংটন মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আটক যুবককে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ বলেছে, পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে টাকা নিয়ে টানাপড়েনের জেরে মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় মা ও তার ১০ বছর বয়সী মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে স্থানীয় একটি হাসপাতাল থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত নারীর স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
নোয়াখালীর ঘটনায় নিহতরা হলেন নোয়াখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফজলে আজিম কচির স্ত্রী নূর নাহার বেগম (৪৪) ও তার মেয়ে হরিনারায়ণপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া ফাতিহা আজিম প্রিয়ন্তী (১৬)।
নিহত নূর নাহারের স্বামী ফজলে আজিম কচি শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যান। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খবর পান তার বাসায় ডাকাত ঢুকেছে। তাৎক্ষণিক তিনি বাসায় গিয়ে স্ত্রীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে জানতে পারেন হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মেয়েও মারা গেছে।
বার্লিংটন মোড়ের মমতাজ ফার্মেসির মালিক আমিন উল্যাহ বলেন, ‘ওই বাড়ির (ফজলে আজিম কচির) ভাড়াটিয়াদের চিৎকার শুনতে পেয়ে আমি দ্রুত সেখানে যাই। দোতলা ভবনের নিচতলায় প্রিয়ন্তী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, পাশেই এক যুবককে দেখলাম তার সারা শরীরে রক্তের ছাপ লেগে আছে। এ সময় প্রিয়ন্তী কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিল, কিন্তু কথা বলতে পারছিল না। সে হাতের ইশারায় ওই যুবককে আমাকে দেখায়। তাকে আটক করতে চাইলে প্রথমে সে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে স্থানীয় আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী এগিয়ে এসে তাকে প্রায় ২০০ মিটার দূর থেকে ধাওয়া করে আটক করে। পরে প্রিয়ন্তীদের দোতলার বাসায় গিয়ে দেখা যায় তার মা নূর নাহার বেগমও রক্তাক্ত অবস্থায় এক কক্ষে পড়ে রয়েছেন। আমরা প্রিয়ন্তীকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করি।’
ওই বাড়ির এক ভাড়াটিয়া নারী জানান, সকালে দোতলা থেকে চিৎকার করতে করতে প্রিয়ন্তী রক্তাক্ত অবস্থায় দরজার সামনে আসে। পরে দরজা খুলে দিলে সে মেঝেতে পড়ে যায়।
পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে টাকা নিয়ে টানাপড়েনের কারণে এই মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সুধারাম মডেল থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন তথ্য জানান।
মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় এলাকাবাসী আলতাফ হোসেন নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশে দেয়। আলতাফ লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরমেহের গ্রামের আবুল কালামের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, নিহত নূর নাহার বেগমের সঙ্গে প্রবাসে থাকা অবস্থায় রং নম্বরের সূত্র ধরে পরিচয় হয় আলতাফের। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর নূর নাহার ওমান থেকে দেশে এসে ব্যবসা করার জন্য বলে আলতাফকে এবং ব্যবসার সম্পূর্ণ মূলধন ও তার সব দেনা বহন করার আশ্বাস দেন। নূর নাহারের আশ্বাসে এক সপ্তাহ আগে ওমান থেকে ভিসা বাতিল করে সব ছেড়ে দেশে চলে আসেন আলতাফ। দেশে এসে নূর নাহারের বাসায় চার-পাঁচবার গিয়ে ব্যবসার টাকা দেওয়ার জন্য বললে নূর নাহার টাকা দিতে টালবাহানা করতে থাকেন। আজ (গতকাল) সকাল ১০টার দিকে আবার টাকা চাওয়ার জন্য আলতাফ নূর নাহারের বাসায় আসেন। তখনো নূর নাহার টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে টাকা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আলতাফকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন নূর নাহার। একপর্যায়ে আলতাফকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিতে উদ্যত হন। এতে আলতাফ ক্ষিপ্ত হয়ে তার সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে নূর নাহারকে আঘাত করতে থাকেন। এ সময় প্রিয়ন্তী মায়ের চিৎকারের শব্দ শুনে তাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে এলে আলতাফ তাকেও ছুরিকাঘাত করেন। আহত প্রিয়ন্তী দৌড়ে নিচতলার ভাড়াটিয়ার বাসার দরজায় ধাক্কা দিলে ভাড়াটিয়া দরজা খুলে দেন। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়ন্তী ডাইনিং রুমের মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। প্রিয়ন্তীর পিছু পিছু আলতাফও দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে এলাকাবাসীর সহায়তায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
মা-মেয়ে হত্যার প্রতিবাদে গতকাল বিকেল ৪টার দিকে শহরের হরিনারায়ণপুর উচ্চবিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ এলাকাবাসী বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে।
বাবাই শিশু সানজার যমদূত, নিভল মায়েরও প্রাণ : সানজা মারওয়া। দশে পা দেওয়া এই ছোট্ট শিশু পড়ত রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকার একটি মাদ্রাসায়। কিন্তু মায়ের পরম মমতায় বেড়ে ওঠা সানজার বাধা ছিল নিজের জন্মদাতা বাবার রুক্ষতা। এই বাধা ডিঙিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখার আগেই চলে গেছে না ফেরার দেশে। বাবা সেলিম দুধে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়েছিল মা মাহমুদা হক বৃষ্টি ও শিশু সানজাকে। গতকাল বুধবার বাড্ডা থানায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম অকপটে স্বীকার করেছে এমন নৃশংসতার কথা।
পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, সেলিমের পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে এবং একাধিকবার একাধিক মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছে। এসব বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ চলছিল। তার জের ধরেই সেলিম তাদের দুজনকে হত্যা করেছে।
বাড্ডা থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ গতকাল সন্ধ্যায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সেলিমকে আমরা আটক করেছি। পরকীয়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকত। এর জেরে দুধে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়েছিল।’
বাড্ডা থানার এসআই ছাদেক মিয়া বলেন, ‘রাতে খবর পেয়ে ফরাজী হাসপাতালে গিয়ে ওই মা-মেয়েকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। বাসা থেকে তার স্বামী ও স্বজনরা তাদের ওই হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। তখন সন্দেহ হলে সেখান থেকেই তার স্বামীকে আটক করা হয়। আর মা-মেয়েকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।’
মামা সোহেল সিকদার জানান, নিহত বৃষ্টির বাবার নাম মোজাম্মেল হক। তাদের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার চাষিরা গ্রামে।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন ঢামেক প্রতিনিধি
মফস্বল ও গ্রামীণ জনপদের পরিকল্পিত উন্নয়নের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। উপজেলা (মফস্বল) ও গ্রামের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ করছে এ সংস্থা। এক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা অন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে তত্ত্বাবধান করিয়ে উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করছে তারা। শহরের মতো বিশৃঙ্খলভাবে গ্রামীণ জনপদের উন্নয়ন করা হলে শহরাঞ্চলের মতো গ্রামাঞ্চলও ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, এলজিইডির জনবল-কাঠামোয় একজন নগরপরিকল্পনাবিদের পদ থাকলেও ওই পদে কখনো কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ২০২১ সালে পরিকল্পনা প্রণয়নে এলজিইডিকে সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেয় পরিকল্পনা কমিশন। এরপর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও সদর দপ্তরে ১ হাজার ১১২টি পরিকল্পনাবিদের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করে।
এসব পরামর্শ ও প্রস্তাবের তোয়াক্কা না করে নিজেদের মতো প্রকৌশলী এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীর প্রায় ছয় হাজার পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করে এলজিইডি। ওই প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুমোদিত হয়ে এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে জনবল-কাঠামো চূড়ান্ত হবে। অর্থাৎ নগর, শহর, মফস্বল ও গ্রাম উন্নয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানটি হালনাগাদ জনবল-কাঠামোতে পরিকল্পনাবিদের পদ ছাড়াই অনুমোদন পেতে চলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগর, শহর, মফস্বল ও গ্রামপর্যায়ে এলজিইডির নানা ধরনের কাজ রয়েছে। পরিকল্পনাবিদের পদ ছাড়া অনুমোদন পেয়ে গেলে টেকসই ও পরিকল্পিত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। একজন পরিকল্পনাবিদ তার শিক্ষাজীবনে নগর, শহর, মফস্বল ও গ্রামপর্যায়ের পরিকল্পনা বিষয়ে সম্যক জ্ঞান লাভ করে। তাদের দিয়ে পরিকল্পনার কাজগুলো করালে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ঠিক রেখে উন্নয়নকাজ করা যাবে। না হলে অপরিকল্পিত উন্নয়নে নগরাঞ্চলের মতো মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলের পরিবেশও নষ্ট হবে। ‘নগর পরিকল্পনাবিদ’ই এলজিইডির মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
দেশের ৪৯৫টি উপজেলা, ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন ও ৭৭ হাজার ২৩০টি গ্রাম রয়েছে। ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯২১ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে এলজিইডির এখতিয়ারে। সরকারের রাজনৈতিক কর্মসূচি অনুযায়ী এখন গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার কাজের দায়িত্বও এলজিইডির ওপর। ইতিমধ্যে উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামপর্যায়ের পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে তারা। এ কর্মসূচির আওতায় গ্রামীণ জনপদের সড়ক, সেতু, আবাসন, বর্জ্য-ব্যবস্থাপনা, হাটবাজার ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন, খেলার মাঠ, সবুজায়ন ও জলাশয় রক্ষা, পরিবেশ উন্নয়নসহ সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে তারা। নিজস্ব ‘নগর পরিকল্পনাবিদ’ না থাকায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এসব কাজ করানো হচ্ছে। ফলে কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান বাছাই করা এবং সঠিকভাবে কাজ বুঝে নিতে পারছে না। বাস্তবায়নের কাজেও বড় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয় সরকারের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে পরিকল্পনা করার দায়িত্ব নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের (ইউডিডি)। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় সরকারের সব ধরনের নগর পরিকল্পনার কাজ করতে পারছে না। পৃথক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান হওয়ায় কিছু পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। এসব সমস্যা অনুধাবন করে সরকার ২০১৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের রুলস অব বিজনেস সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তাতে উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার বিভাগের ওপর ন্যস্ত করা হয়। কোনো পরিকল্পনাবিদ না থাকলেও এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ইতিমধ্যে ২৫৪টি পৌরসভা ও ২টি সিটি করপোরেশনের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু বিপুল অর্থ খরচ হলেও কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যায়নি।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে উপজেলা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে তার আলোকে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এরপর ১২টি উপজেলার মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে এলজিইডি। এভাবে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা সময়সাপেক্ষ। সংস্থায় পর্যাপ্ত পরিকল্পনাবিদ থাকলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বছরে ৫০ থেকে ১০০টি উপজেলা মাস্টারপ্ল্যান করা সম্ভব হবে।
এলজিইডি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসরণ করে ২০১৯ সালে এলজিইডি একটি পরিকল্পনা সেল গঠনের উদ্যোগ নেয়। সে সময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্রও জারি করে। পরে এ উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। কারণ সংস্থায় অন্য পেশার লোক চান না প্রকৌশলীরা।
বিআইপি বলেছে, এলজিইডির প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রামে সদর দপ্তরের আওতায় প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে ২৪টি উইংয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি উইংয়ের নেতৃত্বে থাকবেন একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। এলজিইডির নগর ব্যবস্থাপনা উইং নগর পরিকল্পনা, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, নগর পরিচালনা ও দক্ষতা উন্নয়নসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। এ উইংয়ে একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পরিবর্তে একজন অতিরিক্ত প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে।
বিআইপির প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, এলজিইডির সদর দপ্তরে সড়ক উন্নয়ন, পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন, নগর ব্যবস্থাপনা, পানিসম্পদ, গবেষণা-উন্নয়ন-নলেজ ম্যানেজমেন্ট, জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ ও সামাজিক সুরক্ষা এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট উইংয়ে নির্বাহী ও সিনিয়র নির্বাহী পরিকল্পনাবিদের ২৮টি পদ সৃষ্টি করা দরকার। বিভাগীয় পর্যায়ে একজন তত্ত্বাবধায়ক পরিকল্পনাবিদ ও সিনিয়র সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ রাখা দরকার; তাহলে আট বিভাগে ১৬টি পদ সৃষ্টি হবে। জেলাপর্যায়ে একজন নির্বাহী নগর পরিকল্পনাবিদ ও একজন সিনিয়র সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদের ১২৮টি নতুন পদ সৃষ্টি করা দরকার। উপজেলা পর্যায়ে একজন উপজেলা নগর পরিকল্পনাবিদ বা সিনিয়র সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ ও একজন সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদের ৯৯০ জন নগর পরিকল্পনাবিদের পদ সৃষ্টি করা দরকার।
এলজিইডির সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও নগর পরিকল্পনাবিদ মো. নুরুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি শেষ করে নগর পরিকল্পনায় মাস্টার্স করেছি। এ বিষয়ে পড়তে এসে বুঝতে পেরেছি পরিকল্পিত ও উন্নত দেশ গঠনে প্রথম যোদ্ধা পরিকল্পনাবিদ। পরিকল্পনাবিদের কাজের পর স্থপতির কাজ শুরু হয়। সবশেষে প্রকৌশলীর কাজ। কিন্তু আমাদের দেশে এমন গঠনমূলক চর্চা হয় না, যদিও প্রয়োজনীয়তা আছে। প্রকৌশলীদের দাপটে সব কুপোকাত।’
তিনি বলেন, ‘এলজিইডি নগর, শহর, মফস্বল ও গ্রামীণ অঞ্চলের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কাজ করছে। পরিকল্পনার কাজটি পরিকল্পনাসংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে করানো উচিত। কিন্তু এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান দেশে নেই। সরকারের উচিত এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। পাশাপাশি এলজিইডি যেহেতু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে সেহেতু এলজিইডিতেও পর্যাপ্তসংখ্যক নগর পরিকল্পনাবিদ দরকার। এলজিইডিতে পেশাজীবী জনবল দরকার।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এলজিইডি উপজেলা মাস্টারপ্ল্যান ও গ্রামীণ মাস্টারপ্ল্যান করছে। আমার গ্রাম-আমার শহর কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে। দেশের সিংহভাগ এলাকার উন্নয়নের দায়িত্ব এখন এ সংস্থার ওপর। অথচ তাদের কোনো নগর পরিকল্পনাবিদ নেই।’
তিনি বলেন, ‘এলজিইডি জনবল-কাঠামো সংশোধন করে ছয় হাজারের বেশি পদ সৃষ্টি করছে। সেখানে ১ হাজার ১১২টি নগর পরিকল্পনাবিদের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব দিয়েছে বিআইপি। আমরা এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বিরক্ত হয়েছেন। তার মতে পরিকল্পনাবিদের প্রয়োজন নেই।’
এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মোহসীনকে টেলিফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠালেও সাড়া মেলেনি। পরে এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন) শফিকুর রহমানের কাছে জানতে চাইল তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংস্থা যেসব পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, যা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। নগর পরিকল্পনাবিদের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব সেখানে আছে কি না, তা তার জানা নেই।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সব পেশাজীবী শ্রেণির দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনাবিদদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাহলে উন্নয়ন টেকসই ও পরিবেশবান্ধব হবে।’
তিনি বলেন, ‘এলজিইডি এখন পৌরসভা, উপজেলা ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করছে। মূলত এলজিইডি একটি প্রকৌশল সংস্থা। তাদের কাজ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। বিকল্প না থাকায় তাদের দিয়ে পরিকল্পনার কাজও করাচ্ছে সরকার। এলজিইডি যদি পরিকল্পনাবিদের প্রয়োজন মনে না করে তাহলে আমরা জোর করে পরিকল্পনাবিদের পদ সৃষ্টি করব না। প্রয়োজনে আমরা স্থপতি বা পরিকল্পনাবিদদের জন্য স্বতন্ত্র অধিদপ্তর করব।’
জ্যৈষ্ঠ শেষ হলো, বরষার প্রথম দিন আজ। মানুষের মতোই প্রকৃতিও কাঁদে বলেই কি বর্ষা আসে? নাকি ভিজিয়ে দিতে, শীতল করতে আসে তপ্ত ধরাকে! সম্প্রতি যে অসহ্য গরম সহ্য করেছে দেশবাসী, প্রথমে বৃষ্টির ধারণা এবং পরে বৃষ্টি এসে হাওয়ায় যে শীতলতা ছড়িয়েছে তারপরই না হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম আমরা। ফলে প্রকৃতির কান্নার মতোই বর্ষা স্বস্তিরও নাম। নদীমাতৃক বাংলাদেশে বর্ষা তথা আষাঢ়-শ্রাবণের যে রূপ, তার তো আর তুলনা নেই। বর্ষা নিয়ে কবি-সাহিত্যিকরা লিখেছেন অগণিত গান ও কবিতা। আবেগে আপ্লুত হয়ে বিশ্বকবি বর্ষার প্রতি ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে লিখেছেন, ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদর দিনে, জানিনে জানিনে কিছুতে কেন যে মন লাগে না।’
কিছুতে মন না লাগা রবীন্দ্রনাথ এই বাংলার নদী পদ্মার বুকে পদ্মাবোটে বসে বর্ষার রূপমুগ্ধ হয়েছেন, লিখেছেন ‘সোনার তরী’র মতো অসামান্য কবিতা। লিখেছেন ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে’। বাংলাদেশের বর্ষার রূপ বর্ণনা করেই লিখেছেন “আকাশ আঁধার, বেলা বেশি আর নাহি রে।/ ঝরো-ঝরো ধারে ভিজিবে নিচোল,/ ঘাটে যেতে পথ হয়েছে পিছল/ ওই বেণুবন দোলে ঘন ঘন/ পথপাশে দেখ্ চাহি রে॥/ শুধু রবীন্দ্রনাথ কেন, এ সময়ের কবি মারজুক রাসেলও লিখেছেন ‘বৃষ্টি তোমার পায়ে ধরি, অন্য কোথাও পড়ো, আমাদের এই সকাল দুপুর কেন নষ্ট করো’।
আকাশভরা রবীন্দ্রনাথের দেশে নীল গগনে কালো মেঘের চোখ রাঙানিতে বৃষ্টির রাজত্ব শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এবার সেভাবে এখনো অঝোরধারায় আকাশ কাঁদিয়ে বর্ষারানী তার আগমনের বার্তা পৌঁছে দেয়নি ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে। তবে মাঝেমধ্যেই আকাশ আঁধার করে নতিজা দেখানো শুরু করেছে। এখন চলতি পথে ছাতা কিংবা বর্ষাতি নিয়ে বের হতেই হবে সচেতন কাউকে, যিনি হুট করে বৃষ্টিতে ভিজতে চান না।
বর্ষা আমাদের জন্য অপরিহার্য এক ঋতু। বৃষ্টি না হলে শস্যাদি জন্মাবে না, বেড়ে উঠবে না প্রাণ। বৃষ্টির অভাবে মাটি যখন অনুর্বর হয়ে যায় তখন বর্ষা এসে তা উর্বর করে। আমাদের নদী, মাঠ, ঘাটের দেশ বর্ষায় ভরে ওঠে সবুজে-শ্যামলে। শুধু কি তাই, বর্ষার আগমনে গাছে শোভাবর্ধন করে কদম ফুল। মেঘের গুড়ুম গুড়ুম গর্জনে ময়ূর নাচে পেখম তুলে।
ঋতুবৈচিত্র্যের ষড়ঋতুর দেশের দ্বিতীয় ঋতু বর্ষা। বরষার প্রথম দিনে, ঘন কালো মেঘ দেখে, আনন্দে যদি কাঁপে তোমার হৃদয়, সেদিন তাহার সাথে করো পরিচয়, কাছে কাছে থেকেও যে কভু কাছে নয় হুমায়ূন আহমেদের কথায় মকসুদ জামিল মিন্টুর সুর করা এ গান গাইতে গাইতে হৃদয়ের কথা জানাতে না পারা প্রেমিকার কথা ভাবেনি আর কোন প্রেমিক! বরষা তাই প্রেমেরও মোক্ষম ঋতু কবি আবুল হাসান তো লিখেছিলেনই, বৃষ্টি চিহ্নিত ভালোবাসায়, বৃষ্টি হলেই না সেরকম সারা দিন হৃদয়ের অক্ষরভরা উপন্যাস পড়া যায়।
এমন রোমান্টিক বৃষ্টির কারণে বিপদেরও কিন্তু শেষ নেই। সবচেয়ে বড় বিপদ নিম্ন আয়ের মানুষদের। প্রতিদিন কাজে যাওয়া ও ফেরার বাইরে দিনমজুরদের কাজও যাবে কমে ভয়ানকভাবে, ফলে চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ বাড়বে, কাজ বাড়বে পুলিশ বিভাগের। আর বর্ষা এলেই দেখবেন কাজকর্ম বেড়ে যায় আমাদের সড়ক বিভাগের। মানে রাস্তার কাটাকুটি দুর্ভোগও বাড়বে এ বর্ষায়। সীমিত আয়ের মানুষদের কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব করা টাকায় ভাগ বসাবে হুট করে বৃষ্টি এড়াতে ব্যবহার করা যানবাহন। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, গাড়ির বিলাস যারা নিতে পারেন না, তারা অপেক্ষা করবেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কখন বৃষ্টি ধরে আসবে, কখন বাড়ি পৌঁছে পরিবারের সান্নিধ্যে যাবে সারা দিন কামলা খাটা মানুষ।
বৃষ্টিতে মোহনীয় হয়ে উঠুক পুরো বর্ষা আষাঢ় ও শ্রাবণ। আবেগে ভরে বর্ষা আমাদের মনকে স্নিগ্ধ করে তোলে। পুরাতন জঞ্জাল ধুয়েমুছে আমরাও জেগে উঠি প্রাণচাঞ্চল্যে।
আহারে বর্ষা, বৃক্ষ ফসলের জন্য ভয়াবহ অথচ প্রয়োজনীয় বর্ষার এই জল, কিন্তু নগরে যে বৃষ্টি হবে, যে নগরে আয়-ব্যয়ের এত বৈষম্য, এত পার্থক্য সে নগরের বৃষ্টির রঙ কি কখনো কখনো হয়ে উঠবে না লাল? সেই বৃষ্টির রঙ কি আমরা ক্রমাগত প্রতিদিন মেনে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকব?
* কবি ও সাংবাদিক
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে চীন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, সব ধরনের আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে কাজ করতে তারা প্রস্তুত।
গতকাল বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করে এ সমর্থনের কথা জানান। গতকাল ঢাকায়
চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। ঢাকায় চীনের দূতাবাস গতকাল তাদের ফেসবুক পেজে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের এ বক্তব্য প্রচার করেছে। সেখানে এ বিষয়ে চীনা সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের প্রশ্ন এবং তার জবাবে ওয়েনবিনের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
গ্লোবাল টাইমসের প্রশ্নে বলা হয়, সম্প্রতি আমরা লক্ষ করেছি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বিভ্রান্তিকর এবং এ নিষেধাজ্ঞা একটি খেলার মতো। তিনি বলেছেন, যেকোনো দেশের সরকার পতনের ক্ষমতা তাদের রয়েছে। বাংলাদেশ নিষেধাজ্ঞাকে ভয় পায় না এবং তিনি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন যেন বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশ থেকে কিছু কেনা না হয়।
জবাবে ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো আমাদের নজরে এসেছে। প্রকৃতপক্ষে একটি দেশ নিজেদের বর্ণবৈষম্য, বন্দুক সহিংসতা ও মাদক সমস্যার প্রতি নজর না দিয়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের অজুহাত দিয়ে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের জনগণেরই বলিষ্ঠ অবস্থানের কথা বলেননি, তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশের বিশেষত উন্নয়নশীল বিশ্বের মনের কথা বলেছেন।
চীনের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র আরও বলেন, ‘চীন ও বাংলাদেশ ঐতিহাসিক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা এবং স্বাধীন দেশীয় ও বৈদেশিক নীতি সমুন্নত রাখতে এর জাতীয় বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই উন্নয়নের পথ অনুসরণকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। আমরা জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির ভিত্তিতে মানবজাতির জন্য একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি সম্প্রদায় গড়তে সব ধরনের আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরোধিতা করতে জাতিসংঘ-কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা আবদ্ধ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণকারী মৌলিক নিয়মাবলিকে সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।’
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) লোকসান বেড়েই চলেছে। চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির লোকসান আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে।
চলতি অর্থবছর ৪২ হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হতে পারে বলে প্রক্ষেপণ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। তবে ডলারের দাম ১ টাকা বাড়লে ক্ষতির পরিমাণ আরও ৫০০ কোটি টাকা বাড়বে। এভাবে ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়ার সঙ্গে লোকসানের পরিমাণও বাড়বে আনুপাতিক হারে। নতুন অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি ভর্তুকি চাওয়া হয়েছে।
গত অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩২ হাজার কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার ভর্তুকি দিয়েছিল ২৯ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরেও (২০২০-২১) প্রতিষ্ঠানটিকে লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে সরকার ১১ হাজার ৭৭৮ কোটি ভর্তুকি দেওয়ার পর প্রায় ১৩০ কোটি টাকা মুনাফা করে পিডিবি। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা কেন্দ্র ভাড়া দেওয়া, উৎপাদন খরচের চেয়ে পাইকারি দর কম হওয়া, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়াসহ অন্যান্য কিছু কারণে লোকসানের পরিমাণ বেড়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য পিডিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। দায়িত্বশীল অন্য কর্মকর্তারাও বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনগণকে বিদ্যুৎ না দিয়ে এত লোকসান করার মৌলিক কারণ ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা কেন্দ্র ভাড়া, নিয়ন্ত্রণহীন ঘাটতি বাড়ানো। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে গিয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিপুল পরিমাণ ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। এতে ভোক্তার ওপর মূল্যবৃদ্ধি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের ভর্তুকি বাড়ছে। অথচ জনগণ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। এটি বিদ্যুৎ খাতের ভয়ংকর ‘ডিজাস্টার’।
পরিত্রাণের উপায় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনগণকে নিয়ে এ সমস্যা সমাধান করতে হবে। সরকারের কর্মকর্তা, আমলারা এ বিষয়ে দায়িত্ব পালনের যোগ্য নয়। বিদ্যুৎ একটা কারিগরি বিষয়। কিন্তু তাদের এ জ্ঞান নেই। কারিগরি জ্ঞানের পাশাপাশি দেশপ্রেম না থাকলে এসব ক্ষেত্রে সরকার কখনই সফলতা অর্জন করতে পারবে না।
শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ খাতের সব কোম্পানির বোর্ড থেকে অদক্ষ আমলাদের সরিয়ে দক্ষ, স্বচ্ছ চিন্তা-চেতনা, দেশপ্রেম এবং কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের পদায়ন করতে হবে। জ¦ালানি ও খাদ্য নিরাপত্তাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখা যাবে না। কারণ জ¦ালানি নিরাপত্তা না থাকলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। সুতরাং এ খাতকে ব্যবসায়ী খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে উন্নয়ন হয়েছে এবং ব্যবসায়ীদের বেশি বেশি মুনাফা দেওয়ার জন্য বিশেষ আইন করা হয়েছে, তা খুবই বাজে কাজ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের এ নীতি ও দর্শন বদলাতে হবে। কৃষি খাতের মতোই এ খাতকে প্রণোদনা দিয়ে চালিয়ে নিতে হবে। এটাই সংবিধানের দর্শন।
পিডিবির সূত্রমতে, গত অর্থবছরে (২০২১-২২) প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি পর্যন্ত ব্যয় (সঞ্চালন ক্ষতি, বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল, টিডিএসসহ অন্যান্য ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে) হয়েছে ৯ টাকা ৪৩ পয়সা। গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ব্যয় ছিল ১১ টাকা ৪২ পয়সা, যা চলতি অর্থবছর শেষে কমে ১১ টাকায় দাঁড়াতে পারে। বর্তমানে পিডিবি প্রতি ইউনিট ৮ টাকা ১০ পয়সা দরে পাইকারি বিদ্যুৎ বিক্রি করছে। এতে লোকসান হচ্ছে পিডিবির। তবে আগামী অর্থবছরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন ও অন্যান্য ব্যয় কমে সাড়ে ১০ টাকার মতো হতে পারে, এমন ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের ব্যবহারও বাড়ার সম্ভাবনা থাকায় লোকসান কিছুটা কমবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
গত অর্থবছরে পিডিবির মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৩৯৩ কোটি ইউনিট। চলতি অর্থবছরে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ৪ হাজার ৩১৮ কোটি ইউনিট, যা চলতি মাস থেকে ৮ হাজার ৮০০ কোটি ইউনিট এবং আগামী অর্থবছরে ৯ হাজার ৫১৫ কোটি ইউনিট হবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাতে ধীরে ধীরে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গণশুনানি ছাড়াই চলতি বছর তিন দফায় খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম মোট ১৫ শতাংশ এবং পাইকারিতে ৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে সরকারের নির্বাহী আদেশে। বিদ্যুতের এ মূল্য বৃদ্ধির ফলে চলতি অর্থবছর তুলনামূলক লোকসান কিছুটা কমবে। তবে পুরোপুরি লোকসান থেকে বের হতে বিদ্যুতের দাম আরও অন্তত ৬৫ শতাংশ বাড়াতে হবে পিডিবিকে।
উৎপাদন ব্যয় কমাতে আগামী অর্থবছরে কয়লা, গ্যাস, নবায়নযোগ্য জ¦ালানিভিত্তিক বিদ্যুতের পাশাপাশি আমদানিকৃত বিদ্যুতের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আগামী অর্থবছরে ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ বিদ্যুৎ কয়লা থেকে উৎপাদন হবে। বর্তমানে এর পরিমাণ ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের ব্যবহার ৫১ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫২ দশমিক ১৭ শতাংশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ এবং আমদানিকৃত বিদ্যুতের পরিমাণ ১২ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অন্যদিকে উৎপাদন ব্যয় বাড়ে এমন জ্বালানি ফার্নেস ওয়েলের ব্যবহার ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ, ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ ২ দশমিক ২৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ করার চিন্তা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের দাম আগামীতে আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির কারণে আওয়ামী লীগ নেতাদের হাঁটু কাঁপতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সদস্যরা বিদেশে রয়েছে, টাকা পাচার করেছে বিদেশে।’
গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের কাজির দেউড়ি মোড়ে আয়োজিত ‘তারুণ্যের সমাবেশ’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ভিসানীতি এমন হয়েছে, এবার যদি ভোটে কারচুপি করো, দিনের ভোট রাতে করো বা কুত্তা মার্কা নির্বাচন করো তাহলে রেহাই নেই।’
জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামের এ বিভাগীয় সমাবেশের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী তরুণদের নিয়ে কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপি। সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব আগামীতে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারি না। স্যাংশন কেন? র্যাবকে কারা ব্যবহার করেছে? র্যাবকে কারা বলেছে আমার ভাইদের তুলে নিয়ে গুম করতে?’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অনেক হয়েছে। আপনি আমাদের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছেন। আমাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। আমরা কোর্টে যেতে পারি না। কোর্টে গেলে সরাসরি জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়ে নিম্ন আদালতে গেলে আবার জেলে পাঠানো হয়। জামিন নিয়ে বের হলে আবার মামলা দেওয়া হয়।’
সাংবাদিকরা লিখতে পারছেন না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা দেওয়া হচ্ছে। রোজিনা ইসলামকে আবারও মামলা দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচার এখনো হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘এরা (আওয়ামী লীগ) বলে ক্ষমতায় আমরা যাব। ক্ষমতায় কীভাবে যাবা? ওই পুলিশ, ওই বিডিআর, ওই রাষ্ট্রযন্ত্র দিয়ে? আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমরা জনগণকে ক্ষমতায় নিতে চাই। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে বাংলাদেশকে বলা হতো উন্নয়নের রোল মডেল, সে বাংলাদেশকে এখন বলা হচ্ছে মরীচিকা। যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তারা ছাড়া আর কেউ লাভবান হচ্ছে না।’
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চরমোনাই পীরের ওপর হামলা ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি একজন আলেম মানুষ। তাকেও মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটক রেখেছে। শুধু আটক রাখেনি, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। আমরা জানি না তাকে সেøা পয়জনিং করা হয়েছে কি না। কারণ তিনি এখন যে অসুস্থ হয়েছেন, এতটা অসুস্থ তার হওয়ার কথা নয়। তাকে আবার হাসপাতালে যেতে হয়েছে। এখন তিনি জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।’
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা সত্যি যে এটি দেশের প্রথম টানেল। কিন্তু মানুষের মৌলিক চাহিদার কী হবে? টানেলের আগে যুবকদের চাকরির বাজার কোথায়? নতুন কোনো শিল্পকারখানা তো হচ্ছে না। আগে মানুষের জীবনধারণের অধিকার ও চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’
যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মো. নাসির উদ্দিন, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর প্রমুখ।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
যুক্তরাষ্ট্র গত মে মাসে ভিসানীতি আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় তারা ভিসানীতি ঘোষণার কার্যকারিতার কথা জানালো। এই ভিসানীতি কার্যকারিতার কথা তারা তখন জানালো যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
আরেকটু স্পষ্ট করে বললে, নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় গত শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার এক বৈঠকে আবারও বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়।
ওই বৈঠকের পর আজরা জেয়া নিজেই এক্সে (সাবেক টুইটার) সচিত্র একটি পোস্ট দিয়েছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের একটি সাইড ইভেন্টের আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আবারও যুক্ত হতে পেরে সম্মানিতবোধ করছি। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, অংশীদারত্বের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি এবং ৯ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে উদারতার সঙ্গে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছি।’
বৈঠকে আজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তারা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জন্য ১১৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেয়া রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করতে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেন।
জবাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা উচিত, অন্যথায় এই অঞ্চল নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে। কারণ রোহিঙ্গারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান এবং মাদক কারবার। রোহিঙ্গারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে কারণ তাদের প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে এবং তারা সেখানে কোনো ভবিষ্যৎ অনুভব করছে না।
একটা বিষয় খেয়াল করলে বুঝা যাবে, উজারা জেয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর পরই বাংলাদেশের উপর যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভিসানীতি কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে। এতে বুঝা যাচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করেছে। তাদের দাবি ছিলো, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, তাদেরকে নিজ দেশ ফিরিয়ে নিতে যত তাড়াতাড়ি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।এ থেকে বুঝতে কোনো অসুবিধা নেই যে, রোহিঙ্গাদের কর্মসংসস্থানের প্রস্তাব সরাসরি ফিরিয়ে দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র নাখোশ হয়েছে। এই প্রস্তাব ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আর কী কী প্রস্তাব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছিল তা আমরা জানি না। মনে হচ্ছে, এমন কিছু প্রস্তাব হয়তো প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছিল যেগুলো তিনি নাকচ করে দিয়েছেন।এবার আসা যাক বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন প্রসঙ্গে। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। অনেকদিন ধরে তারা সেটি বলে আসছে। বাংলাদেশের তরফ থেকেও বার বার জানানো হয়েছে যে, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা হবে। তারপরও তারা ভিসানীতি আরোপ করে সেটি কার্যকর করতে শুরু করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- নির্বাচন তো এখনও হয়নি। তার আগেই কেন ভিসানীতি আরোপ ও কার্যকর করা হলো?
এ থেকে এটা স্পষ্ট যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতেই এসব ভিসানীতি, নিষেধাজ্ঞা জারি করছে। গণতন্ত্র, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক ভোট শুধুমাত্র ইস্যু। নিজের দেশেই আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করতে নানান কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। নিজের দেশেই যেখানে বাইডেন প্রশাসন প্রশ্নবিদ্ধ সেখানে অন্যদেশের গণতন্ত্র নিয়ে তাদের এতো মাথা ব্যাথা কেন?
বাংলাদেশেই যে তারা প্রথম ভিসানীতি আরোপ বা নিষেধাজ্ঞা জারি করে তা কিন্তু নয়। সাম্প্রতিক অতীত ঘাটলে দেখা যাবে, যুক্তরাষ্ট্র আরও বহু দেশের সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদদের উপর একইভাবে ভিসানীতি এবং নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এটা নতুন কিছু নয়। যেখানেই তাদের স্বার্থ জড়িত সেখানেই তারা একই পথে হেঁটেছে। কিন্তু কোথাও তারা সফল হতে পারেনি। সব জায়গা থেকেই ফিরেছে শূন্য হাতে। আমরা যদি ভেনিজুয়েলা থেকে শুরু করে সিরিয়া, ইরান, মিশর, তুরস্ক, রাশিয়া, বেলারুশের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো এদের সবার উপরই নিষেধাজ্ঞা জারি কিংবা ভিসানীতি আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু খুব একটা ফল হয়নি।তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই সেদেশে সামরিক অভ্যূত্থান হয়েছিল। সেই অভ্যূত্থানে যুক্তরাষ্ট্র ইন্ধন দিয়েছিল। ২০২১ সালে তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সৌলু যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ধনের বিষয়টি স্পষ্ট করেন। ভেনিজুয়েলায় নিজেদের পছন্দের লোক গুইদুকে প্রেসিডেন্ট করতে না পেরে মাদুরোকে বার বার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।পাঠকদেরকে হালের একটা তথ্য দিয়ে রাখি। যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ভারতের মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রের উপরও। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল ছিল। বারাক ওবামা ভারত সফরের পর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তার সফরের বেশ কিছু দিন পর ভারত নাসার সঙ্গে চুক্তি করল।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। গুজরাট দাঙ্গার কারণে তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। পরবর্তিতে নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্র তার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যাবে, কারা সরকার পরিচালনা করবে- সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক শুধুই বাংলাদেশের জনগণ। এখানে বাইরের রাষ্ট্র সে যুক্তরাষ্ট্র হোক কিংবা অন্য কোনো দেশ হোক কারোরই হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।
বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যাবে, কারা সরকার পরিচালনা করবে- সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক শুধুই বাংলাদেশের জনগণ। এখানে বাইরের রাষ্ট্র সে যুক্তরাষ্ট্র হোক কিংবা অন্য কোনো দেশ হোক কারোরই হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। যখনই বাইরের কোনো রাষ্ট্র কোনো অজুহাতে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করবে তখনই বুঝতে হবে ওই দেশের বৃহত্তর স্বার্থ আছে। আর এসব নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতি আরোপে এদেশের সাধারণ মানুষের কিছুই যায় আসে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষ নিজেরাই নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্ত করেছে এবং করছে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী নিজামুল হক বিপুল
মানকাডিং আউটের সুবিধাটা দলীয় সিদ্ধান্ত। এটা নেওয়া হবে কি না তা বসে আলোচনা করে দলের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন তামিম ইকবাল। একবার আউট করে আবার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে আনাটা ভালো দেখায় না বলেও মনে করেন এই টাইগার ব্যাটসম্যান।
মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মানকাড আউটের ঘটনা ঘটে। বল হওয়ার আগেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া ইশ সোধিকে মানকাড করেন হাসান মাহমুদ। টিভি আম্পায়ারও তাকে আউট ঘোষণা করেন। কিন্তু ড্রেসিংরুমে ফেরার আগেই অধিনায়ক লিটন দাস তাকে ফিরিয়ে আনেন। তারপরই শুরু হয়ে যায় সমালোচনার ঝড়।
স্বাভাবিকভাবেই প্রসঙ্গটা আসে সংবাদ সম্মেলেনও। দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা তামিম ইকবালের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তাঁকে এভাবে ফিরিয়ে আনা উচিত হয়েছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তামিম সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘এ আউট নিলে… আমার মনে হয়নি ওরও (সোধি) এমন করা উচিত হয়নি। ও যেভাবে বিস্মিত হয়েছে, তারও বিস্মিত হওয়া উচিত নয়। এটা আমরা নেব কি নেব না, এটা অধিনায়কের সিদ্ধান্ত। দুঃখিত, দলের সিদ্ধান্ত। নেব কি নেব না। তবে সে যেভাবে নিয়েছে, তাতে আমি অবাক হয়েছি। এটা ক্রিকেটেরই অংশ।’
এমন আউটের ক্ষেত্রে একটা কথা আসে—ব্যাটসম্যানকে সতর্ক করা। তবে সেটিকেও উড়িয়ে দিয়েছেন তামিম, ‘এখানে ওয়ার্নিংয়ের কিছু নেই। বোল্ড আউটের মতোই। হয়তো তখন অধিনায়ক ভেবেছে আমরা নেব না, এ কারণেই আমরা নেই নাই। এখানে ঠিক বা ভুল নেই। হয় আপনি করবেন, তাতেও ভুল নেই। যদি না করেন, তাতেও ভুল নেই। এটা দলের সিদ্ধান্ত। আমাদের এটা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত, করব কি করব না। কারণ সামনে (এমন) আরও দেখা যাবে।’
এমন দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ম্যাচের ওই পর্যায়ে না হয়ে অন্য কোনো আরও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এমন আউট বাংলাদেশ করত কি না, সে ব্যাপারে তামিম বলেছেন, ‘হয়তোবা (নিতাম)। হয়তোবা না। আমি ভুল দেখি না। নিয়ম আছে এমন। এটা যদি কেউ আমরা নিই বা আমাদের বিপক্ষেও নেয়, আমার মনে হয় না এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত। যেভাবে এখন লোকে দেখায়।’
তামিমের কথা শুনে মনে হবে, মানকাডিং না করার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত বা নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয়নি তাঁদের। এ ব্যাপারে এখন দলের মধ্যে আলোচনা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি, ‘এটা একটা দলীয় সিদ্ধান্ত। আজকের ঘটনার পর আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করব। আমাদের যদি দলীয় সিদ্ধান্ত হয়, আমরা এ ধরনের উইকেট নেব তাহলে নেব, নইলে নেব না। কারণ এটা ভালো দেখায় না, একবার আউট করার পর আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসা।’
সত্তরের দশকেও বাংলাদেশে মোট কতগুলো নদ-নদী, খাল-বিল ছিল? বর্তমানে তার কী অবস্থা? দেশের কাঠামোগত উন্নয়নে কোনো নদ-নদী খাল-বিল গ্রাস করা হয়েছে, এমন নজির নেই বললেই চলে। কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক, এসব সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারের এক ধরনের উন্নাসিকতা রয়েছে। দীর্ঘদিন নদী খনন না করার ফলে, পলি জমে সেখানে জেগে ওঠে চর। তখনই সেখানে শুরু হয় দখল উৎসব। এরপর সেইসব নদী ও খালের বুকে গড়ে ওঠে প্রাসাদোপম অট্টালিকা। এ ছাড়াও অবাধে চলছে নদী ও খাল দখল।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
কে নিষেধাজ্ঞা দেবে বা দেবে না, তা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছেন, তাদের দেশের নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আগামী নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে বিদেশ থেকে যদি কোনো প্রচেষ্টা নেওয়া হয়, দেশের জনগণ তা মেনে নেবে না। নিউ ইয়র্কে স্থানীয় সময় শুক্রবার বেলা ২টায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই সেলফিতে রাজনীতির সব ফয়সালা হয়ে গেছে। দুই সেলফিতে বিএনপির রাতের ঘুম শেষ। তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বা ভিসানীতির পরোয়া আওয়ামী লীগ করে না।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার বিধিনিষেধ আরোপ শুরু করার ঘটনাকে বাংলাদেশের জন্য লজ্জাজনক ও অপমানজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা তারা স্পষ্ট করেনি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজ দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট, তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে বিবৃতিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
অদূরদর্শী পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুফল পাচ্ছে না চট্টগ্রামবাসী। স্মার্ট চট্টগ্রাম গড়তে হলে চাই স্মার্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা। আর সেজন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বাইরে শুধু উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য পৃথক সংস্থা গঠন করতে হবে। গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে দেশ রূপান্তর আয়োজিত ‘উন্নয়ন চলছে তবুও কেন শ্রীহীন চট্টগ্রাম’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকরা এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকান্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে ২৭ বছর ঘর-সংসার ছেড়ে দূরে চলে গিয়েছিলেন। সেই ঘরে ফেরার পর নৃশংসভাবে খুন করা হয় তাকে। মোহাম্মদ হাসান নামের এই ব্যক্তি চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বাসিন্দা। চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা এলাকা থেকে তার মাথাবিহীন আট টুকরা লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানায়, জমি লিখে না দেওয়ায় স্ত্রী-সন্তানরা মিলে খুন করেন হাসানকে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
‘আমার একটাই ছেলে। বাড়িতে একটু জায়গা থাকলেও ঘর নাই। আমি ঝালকাঠি শহরে থেকে কোনোভাবে দিন মজুরি করে কোনোভাবে বেঁচে আছি। ছেলেটা ঢাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালাত। আমার তো সব শেষ। থাকার মধ্যে আছে শুধু আমার একমাত্র মেয়ে ও সাত মাসের এই নাতিটা। ছেলেটা পরশু দিন বাড়ি থেকে গেছে। কে জানত এই যাওয়াই ওর শেষ যাওয়া। যাদের অবহেলার কারণে আমার পুত্র, পুত্রবধূ ও নাতনিকে হারিয়েছি তাদের বিচার চাই।’
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই ৮ মাসে ৩ হাজার ৫৬২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩ হাজার ৩১৭ জন। ওইসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৫ হাজার ১৭২ জন। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। কোয়ালিশনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় আওয়ামী লীগের দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আশ্বাসের পর অনশন ভেঙেছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ে ৩১টি মোর্চা। গতকাল শনিবার বিকেলে দুই দিনের গণ-অনশন ও অবস্থান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাবেক সচিব ও আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কবির বিন আনোয়ার সময় সাপেক্ষে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে অনশন ভাঙেন নেতারা।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র হলো ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’। জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ে যেকোনো প্রভাব বলয়ের বাইরে থেকে, সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করেই চলছে বর্তমান সরকার। তবে সবাই বন্ধু হলেও কেউ কেউ বিশেষ বন্ধু। ভারত ও রাশিয়া তেমনই দুটি দেশ। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা কিছু দেশ যখন বিভিন্ন সবক দিতে শুরু করল, ঠিক তখনই ভারত ও রাশিয়া আবারও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে স্পষ্ট করে বার্তা দিয়ে বলেছে, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, ঠিক করবে সে দেশের জনগণ।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
এম সাখাওয়াত হোসেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ও লেখক। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান নির্বাচন কমিশন, নানা রকম কূটনৈতিক তৎপরতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেন এই নির্বাচন বিশ্লেষক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সখ্য চীনকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে তাদের ঐকমত্যে পৌঁছানো শিকে ভাবাচ্ছে না। তবে তাদের সামরিক সহযোগিতা উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে ও চীন সীমান্তে অস্থিরতা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। লিখেছেন তৃষা বড়ুয়া
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
গত শুক্রবার দেশ ও বিদেশে একযোগে মুক্তি পেয়েছে পরীক্ষিত চিত্রনির্মাতা দীপংকর দীপনের সিনেমা ‘অন্তর্জাল’। একাধিকবার মুক্তির তারিখ পিছিয়ে অবশেষে বেশ বড়সড় পরিসরেই মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। মুক্তির প্রথম দিনের সন্ধ্যায় ছিল ছবিটির স্পেশাল স্ক্রিনিং। সিনেমার নির্মাতা, তারকাশিল্পীরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শোবিজ অঙ্গনের অনেকেই। ছবিটি দেখে সবাই দারুণ প্রশংসা করেন। নির্মাতার দায় থাকে দুটি জায়গায়।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
কারেন্সি সোয়াপ বা মুদ্রাবিনিময় পদ্ধতির আওতায় নেওয়া ২০ কোটি ডলারের পুরো ঋণ সুদসহ পরিশোধ করে দিয়েছে আর্থিক সংকটে পড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা। গত বৃহস্পতিবার রাতে ঋণের শেষ কিস্তির ৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে দায় মুক্তি পেল দেশটি। এ ঋণের বিপরীতে সুদ বাবদ বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৪৫ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের আবুল ফজল চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলাবিশিষ্ট নতুন ভবনের কাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১৮ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৩ বছর অতিবাহিত হলেও ভবনটির আংশিক কাজ শেষে বন্ধ রাখা হয়েছে। কবে ভবনটির কাজ শেষ হবে তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
শুরুতেই গোপাল ভাঁড়ের একটা গল্প। ডাকাতের বল্লমের আঘাতে বুক এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে এক ব্যবসায়ী মারা গেছেন। তাকে ঘিরে পরিবারের লোকজন বিলাপ করছে। এমন সময় গোপাল গিয়েছে শেষদেখা দেখতে। মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে মৃতের পুত্রকে গোপাল বলল, ‘আহা মারা গেলেও চোখটা তো বেঁচেছে। চোখে আঘাত লাগলে কি মুশকিলই না হতো!’
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
যুক্তরাজ্যে সিগারেট নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। মূলত পরবর্তী প্রজন্মকে সিগারেট থেকে দূরে রাখতে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ধূমপানমুক্ত দেশ হওয়ার উচ্চাকাক্সক্ষা পূরণের লক্ষ্যেই এমন পরিকল্পনা সুনাকের। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে নানা ধরনের প্রণোদনাও দেবে সরকার।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
দেশে নদ-নদীর সংখ্যা কত এ নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। দখল-দূষণে কত নদী হারিয়ে গেছে সেই সংখ্যাও সুনির্দিষ্টভাবে কারও জানা নেই। দেশের নদ-নদী নিয়ে যখন এমন অবস্থা তার মধ্যে নদীর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন। কমিশনের তথ্য বলছে, দেশের নদ-নদীর সংখ্যা ৯০৭টি। শেষ পর্যন্ত তাদের এ তালিকা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
দিনাজপুর শহরে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয়েছিল বেশ কয়েকটি ঢোপকল। যেগুলো থেকে স্থানীয়রা সুপেয় পানি পান করত। বর্তমানে এগুলোর বেশিরভাগই প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট থাকা কিছু ঢোপকল জরাজীর্ণ ও ময়লা ফেলার স্থানে পরিণত হয়েছে। এ রকম কিছু ঢোপকল স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের হাতের ছোঁয়ায় নতুন রূপ পেয়েছে। তারা ঢোপকলগুলো পরিষ্কার ও রঙ করে নতুনভাবে চালু করেছেন। পৌরসভার সরবরাহ করা পানির লাইনের সংযোগ দিয়ে ঢোপকলগুলো চালু করায় স্থানীয়রা এগুলো থেকে পানি পান করতে পারছেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
বাংলাদেশ সরকারের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের মোটরযান অকেজো ঘোষণাকরণ নীতিমালা অনুযায়ী পুরনো গাড়ি অকেজো ঘোষণা না করা এবং ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নতুন গাড়ি কেনার অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের বিরুদ্ধে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
কানাডায় খালিস্তানপন্থি শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার পেছনে ভারতীয় এজেন্টদের হাত থাকার অভিযোগ তদন্তে দিল্লি অটোয়াকে সহায়তা করবে বলে আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র। গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো যে অভিযোগ তুলেছেন, তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই হত্যাকাণ্ড তদন্তে ভারতের কানাডার সঙ্গে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। আমরা চাই জবাবদিহি নিশ্চিত হোক।’
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
নারায়ণগঞ্জে আড়াইহাজার উপজেলায় অবৈধ গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে বাসায় বিস্ফোরণে দুই নারী নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার মধ্য রাতের ওই দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন আরও দুজন। তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। আড়াইহাজার থানা ও হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, নিহত দুর্ঘটনার পরই কানিজ খাদিজা নিপা (২৫) ও তার মা হাসিনা মমতাজ (৫৫) এবং জিয়াউর রহমান সোহান (৪৫) ও তার স্ত্রী চায়না আক্তার সায়েমাকে (৩৫) হাসপাতালে আনা হয়।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
যুগে যুগে দুনিয়ায় এমন কিছু মানুষের জন্ম হয়, যারা তাদের কর্ম, নীতি ও আদর্শের কারণে স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। এমনই একজন ব্যক্তি হলেন শায়খুল হাদিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। যুগ সচেতন আলেম, লেখক, প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও শিক্ষক। তার আরও অনেক পরিচয় রয়েছে। সেসব ছাপিয়ে আদর্শ শিক্ষক হিসেবে তিনি ঠাঁই করে নিয়েছেন। এ মনীষীর বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে লিখেছেন মোস্তফা ওয়াদুদ
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকান্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। আগামী ১ অক্টোবর ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে। তাকে আবারও এক্সটেনশন দেওয়া হবে নাকি নতুন কমিশনার দায়িত্ব পাবেন তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।