
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর কয়েক মাস পরেই। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি এ সময়ে তাদের আইন-আদালত, জামিন ও বিচার কার্যক্রমের শুনানি নিয়েও ব্যস্ত থাকতে হবে। বিএনপিকে মোকাবিলা করতে হবে দুর্নীতি দমন কমিশনকেও (দুদক)।
সম্প্রতি দুদকের মামলায় হাইকোর্টে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ৯ বছর ও আমান উল্লাহ আমানের ১৩ বছরের সাজা বহালের রায়ের পর অস্বস্তি ও চিন্তা বেড়েছে বিএনপির শীর্ষ আইনজীবীদের মধ্যে। সামনে আরও কঠিন সময় আসছে এ আলোচনা চলছে তাদের মধ্যে।
আইনজীবীদের ভাষ্য, বিএনপির মনোনয়নে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলা পর্যায়ের এমন ৩০ থেকে ৩৫ জন শীর্ষ সারির নেতা দুদকের মামলায় বিচার ও সাজার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
উচ্চ ও অধস্তন আদালতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মামলা পরিচালনা করেন এমন পাঁচজন এবং দুদকের মামলার পাঁচজনসহ মোট ১০ জন আইনজীবীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা হয়েছে দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদকের। বিএনপির আইনজীবীরা প্রায় অভিন্ন সুরে বলেন, ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ১৫ বছর ধরে নেতাদের মামলা, জামিন, হাজিরা ও সাজা নিয়ে কঠিন ও অস্বস্তিকর সময় পার করছে। রাজনৈতিক কৌশল কিংবা মানসিক চাপে রেখে বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে সরকার দুদক ও আদালতকে ব্যবহার করবে, এটি অনুমিতই ছিল। দুদকের তৎপরতা তাদের ভাবিয়ে তুললেও তারা আইনি লড়াইয়ে থাকবেন বলে জানান।
দুদকের আইনজীবীদের বক্তব্যে ছাড় না দেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। বিএনপির রাজনৈতিক মামলার আইনজীবীদের বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে তারা বলেন, দুদকের চলমান মামলাগুলোর প্রায় সবই পুরনো। কার্যতালিকায় এলে এগুলোর শুনানি ও নিষ্পত্তি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এগুলোতে নির্বাচন বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আরোপের কোনো সুযোগ নেই।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কঠিন সময় পার করছি। সামনে আরও কঠিন সময় আসতে পারে। কারণ অতীতে কোনো সরকারই এমন ভৌতিক মামলা দায়ের করেনি। তবে, আমরা এখনো আমাদের দলীয় সিদ্ধান্তে অটল আছি।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের হাতে অস্ত্র একটাই। সেটাই তারা প্রয়োগ করছে বছরের পর বছর। আমরাও আইনগতভাবে মোকাবিলা করে আসছি। যেহেতু তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি ফলে মামলা ও সাজা থাকবে। কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, কাকে সাজা দেবে সেটা সরকারের সাজানো একটা বিষয়।’
দুদকের কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কার্যতালিকাতেই দুর্নীতির পুরনো মামলাগুলো আছে। সে অনুযায়ী নিষ্পত্তি হচ্ছে। বিরোধীপক্ষের কে কী বলল তাতে কিছু যায়-আসে না। ৯ বছর আগের মামলা হাইকোর্টে পুনঃশুনানির জন্য পাঠানো হয়েছে। সেগুলোর কি নিষ্পত্তি হবে না? বিচারকরা দ- দিয়েছেন। এখানে রাজনৈতিক আবরণের প্রশ্নই ওঠে না।’
পুরনো মামলাতেই ঘুরপাক
সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত হয়ে কারাগারের বাইরে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বিচারিক আদালতে তার বিরুদ্ধে চলমান নাইকো ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হতে পারে এমন গুঞ্জন রয়েছে আইনজীবীদের মধ্যে। নাইকো মামলায় গত ২৩ মে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়েছে। আগামী ১৬ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এবং জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় ৭ বছরের কারাদ-ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার করা আপিল বিচারাধীন রয়েছে। দুদকের কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, মামলাগুলো কার্যতালিকায় এলে এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা আন্তরিক হলে আপিল নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিএনপির আইনজীবীরা মনে করেন, দুটি মামলায় ১৭ বছরের সাজার পরেও অন্য মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির কারণ একটাই, সরকার খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে আসতে দিতে চায় না। সাজাপ্রাপ্ত হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইতিমধ্যে তার অভিমত দিয়েছেন। তবে বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না।
লন্ডনে বাসরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতিমধ্যে দুর্নীতির একটি মামলায় ১০ বছর ও আরেকটি মামলায় ৭ বছর, ২১ আগস্ট মামলায় যাবজ্জীবন এবং মানহানির একটি মামলায় দুই বছরের কারাদ- পেয়েছেন। আইনের দৃষ্টিতে তিনি পলাতক এবং আইনি মোকাবিলা করতে হলে তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে দুর্নীতির আরেকটি মামলায় তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলার বিচার শেষ হতে পারে খুব শিগগির।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকার দুর্নীতির মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এ আসামিপক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য শেষে সাফাই সাক্ষ্য চলছে। এরপর যুক্তিতর্কের শুনানি। তারপর রায়। তিনি গ্যাটকো মামলাতেও আসামি। গ্যাটকো মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও আসামি।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাসের মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ তদন্ত কর্মকর্তার জেরা চলছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলুর মামলাটিতে সাতজনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাফিজ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলা ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এ সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। বিএনপির আইনজীবীদের আশঙ্কা, নির্বাচনের আগে এসব মামলা নিষ্পত্তির দিকে যেতে পারে।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্তত ৩৫ জন নেতার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে দুদক তৎপর। চাপ সৃষ্টি করে বিএনপিকে আরেকটি প্রতারণামূলক নির্বাচনে নেওয়ার অপচেষ্টা চলছে।’
জোবাইদার মামলার নিষ্পত্তি হতে পারে শিগগির
বিএনপির আইনজীবীদের কাছে অস্বস্তি নিয়ে এসেছে তারেকপত্নী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলাটি। তারা বলেন, জোবাইদা রহমান কখনো সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন না। ভবিষ্যতে আসবেন সে সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। স্বামী তারেক রহমানকে দুর্নীতিতে সহযোগিতা করার অভিযোগে মামলা হলেও দীর্ঘদিন সেটি আলোচনার বাইরে ছিল। এ মামলায় ১৪ বছর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ ছিল। স্থগিতাদেশ উঠে যাওয়ায় মামলার বিচারকাজ চলছে দ্রুতগতিতে। গত ১৩ এপ্রিল দুজনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ হয়। আইনের ব্যাখ্যা ও উচ্চ আদালতের অভিমত অনুযায়ী, পলাতকদের পক্ষে আইনজীবীর শুনানির সুযোগ নেই। এ মামলায় ২১ জুন পর্যন্ত ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৩১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। মামলাটিকে ঘিরে ঢাকার আদালত এলাকায় কয়েক দিন মারামারি, হাতাহাতি, মিছিল-পাল্টা মিছিলে লিপ্ত ছিলেন বিএনপিপন্থি এবং রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীরা। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ আইনজীবী। প্রতি কর্মদিবসে বিশেষ নিরাপত্তায় বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
বিচারিক আদালতে বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার মামলায় শুনানি করছেন দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে জিয়া পরিবারের কেউ যেন আসতে না পারে, সে জন্যই এত তাড়াহুড়া। তারেক রহমান নির্বাচনের বাইরে থাকলে তার স্ত্রী সামনে চলে আসতে পারেন এমন ভাবনা থেকেই জোবাইদা রহমানকে লক্ষ্য করা হয়েছে।’
বিচারিক আদালতে দুদকের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দিনের পর দিন সময় নিয়ে, উচ্চ আদালতে গিয়ে তারাই (বিএনপির আইনজীবী) মামলাগুলোকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমাদের কাজ মামলা পরিচালনা করা। কে কোন দলের সেটি বিবেচ্য বিষয় নয়। মামলা নিষ্পত্তির সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘একই মামলায় আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা অব্যাহতি পেয়েছেন। আমাদের বেলায় ব্যতিক্রম হচ্ছে। দুদক দুজনকে (আমান ও টুকু) নির্বাচন থেকে বারিত করল। এমন আরও অনেকের ক্ষেত্রে হতে পারে। নির্বাচন সামনে রেখে প্যানিক সৃষ্টি করতে অনেক মামলাই সরকার নিষ্পত্তির চেষ্টা করবে। তারা খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে আসতে দিতে চায় না।’
বাংলাদেশের জমি উর্বর হলেও কৃষিব্যবস্থার আধুনিকায়ন না হওয়ায় উৎপাদন তেমন বাড়ছে না। রপ্তানিযোগ্য ফসলও ফলানো যাচ্ছে না। ফলে কৃষিকে বাণিজ্যিক রূপ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এসব বিবেচনায় নিয়ে সরকার কৃষি খাতে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় কর্মসূচি ‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার)’ শুরু করতে যাচ্ছে।
এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে খাদ্য উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি কৃষিতে বৈচিত্র্য আসবে। কৃষি খাতকে নতুন রূপে দেখা যাবে। ৬ হাজার ৯১০ কোটি টাকার এ প্রোগ্রামে অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল।
গত ১৮ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রোগ্রামটি অনুমোদিত হয়। বাংলাদেশ সরকার দেবে ১ হাজার ১৫১ কোটি টাকা ও প্রকল্প সাহায্য পাওয়া যাবে প্রায় ৫ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। প্রোগ্রামের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত।
কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগের নিয়মকানুন ভেঙে গত ২৫ মে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুমিল্লা জেলার উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমানকে প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কাজে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় যথাযথভাবে প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে।
মো. মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা এখন প্রস্তুতিমূলক কাজ করছি। ১ জুলাই প্রোগ্রামের কার্যক্রম শুরু হবে। আমি এর আগে কোনো প্রকল্পে কাজ করিনি এটা ঠিক; তবে আমার টিমে যারা আছে তাদের অনেকেরই বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারাই আমার ভরসার জায়গা। আমি বলব, সরকার ভালো মনে করেছে বলেই আমাকে এ পদে নিয়েছে। আমি এজন্য কোনো তদবির করিনি।’
সূত্র জানায়, প্রকল্প পরিচালক বা প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নিয়োগের ক্ষেত্রে আট সদস্যের একটি কমিটির মাধ্যমে বাছাই করার নির্দেশনা রয়েছে। এ প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে কমিটিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের প্রধান নিয়োগের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা ও প্রকিউরমেন্ট-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ থাকা দরকার। তা বিবেচনা না করেই প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টজনরা বলছেন, প্রোগ্রাম বা প্রকল্পের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে প্রকল্পের বা প্রোগ্রামের মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস পর্যন্ত চাকরির মেয়াদ থাকতে হয়। কিন্তু মিজানুর রহমানের চাকরি আছে মাত্র দুই বছর। তার ক্রয়সংক্রান্ত বিধানাবলি ও প্রকল্প-ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তেমন প্রশিক্ষণ নেই। প্রকল্প-প্রণয়ন ও প্রকল্প-বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতাও নেই। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রোগ্রামে প্রকল্প-বাস্তবায়নের সাত বছরের অভিজ্ঞতা থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা মিজানুর রহমানের নিয়োগের ক্ষেত্রে মানা হয়নি।
জানা যায়, প্রকল্পটির অন্যতম উদ্দেশ্য ৩ লাখ হেক্টর জমিতে উত্তম কৃষিচর্চা (গ্যাপ) প্রটোকল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ও বিদেশে রপ্তানি করা। নিয়োগকৃত কর্মকর্তার এ সম্পর্কে ধারণা ও অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম এক-দুই বছরে কাক্সিক্ষত ফল আসবে না। এতে ঋণচুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী বছরগুলোর বরাদ্দ পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। আবার দুই বছর পর তিনি অবসরে যাবেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সাতটি সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ প্রোগ্রাম বাস্তবায়িত হবে।
‘পার্টনার’-এর মাধ্যমে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ফল ও ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সবজির প্রটোকল প্রস্তুত করা হবে। ফল ও সবজি উৎপাদন এবং রপ্তানি এ প্রোগ্রামের আওতায় থাকবে। ফল ও সবজির আওতাধীন এলাকা ৩ লাখ হেক্টর। ২ লাখ হেক্টরে উচ্চফলনশীল ধানের জাত উন্নয়নের পরিকল্পনাও রয়েছে। এর আওতায় ১০ লাখ কৃষককে উত্তম কৃষিচর্চাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, বীজ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করা হবে, বিরূপ পরিবেশ সহনশীল ও উচ্চ ফলনশীল ৫টি ধানের জাত উদ্ভাবন করা হবে, অন্যান্য ফসলের ১৫টি জাত উদ্ভাবন করা হবে এবং উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ১ লাখ হেক্টর নতুন কৃষিজমি সেচের আওতায় আনা হবে।
‘পার্টনার’-এর মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলার ৪৯৫টি উপজেলায় ২ কোটি ২৭ লাখ কৃষককে সব ধরনের তথ্য সংবলিত স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে, ১০টি অ্যাক্রেডিটেড ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হবে, ধান ও অন্যান্য ফসলের আবাদ সম্প্রসারণে যথাযথ প্রযুক্তিগত ও দক্ষতাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং খাদ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপনের মাধ্যমে খাদ্যের মান নিশ্চিত করা হবে।।
যুক্তরাষ্ট্র সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে যে বৈঠক হয়েছে, সেখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দুই ঘণ্টা একান্ত বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণায় বিষয়টি জানানো হয়। বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমেরিকা এবং ভারতের ‘ডিএনএর’ মধ্যে গণতন্ত্র রয়েছে। তিনি ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যে জায়গায় অবস্থান করছে, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের বিষয়টি সে রকম নয়। এর মৌলিক কারণ হচ্ছে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই গণতান্ত্রিক। সংবাদ সম্মেলনে মোদির আমলে ভিন্নমতাবলম্বী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর দমন-পীড়নের বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো যেসব অভিযোগ তুলেছে, সেটি নিয়ে বাইডেনকে প্রশ্ন করা হয়। তবে তিনি সরাসরি সেই প্রশ্নের জবাব দেননি। আর মোদি তার দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি খারিজ করে দেন।
বিবিসি বলছে, যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মোদি এই প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তিনি তার নয় বছরের শাসনামলে কখনোই এ ধরনের সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেননি। সংবাদ সম্মেলনে একজন ভারতীয় এবং একজন আমেরিকান সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন। এই দুটো প্রশ্নই আগে থেকে নির্ধারিত ছিল। তিনি অনুবাদকের মাধ্যমে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। মোদি বলেন, ভারত গণতান্ত্রিক দেশ; কোনো ধারণামাত্র নয়। ভারতের ধমনিতে গণতন্ত্র রয়েছে। ভারত গণতন্ত্রে বাঁচে। সংবিধানেও তা প্রতিফলিত। সরকারও গণতন্ত্রকেই আঁকড়ে আছে। কোনো সরকারি নীতিতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নিয়ে কোনো বৈষম্য নেই।’
সিএনএন জানিয়েছে, যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা হয়েছে। কারণ এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন করার বিষয়ে ভারতের দিক থেকে তেমন একটা আগ্রহ ছিল না। যৌথ সংবাদ সম্মেলন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের অবস্থান এবং ব্যাপক আলোচনার পরে ভারতও শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছে। পরে বাইডেন-মোদির যৌথ বিবৃতিতে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনভিত্তিক নীতির মধ্য দিয়ে আরও শক্তিশালী, বৈচিত্র্যময় মার্কিন-ভারত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করা হয়। এ ছাড়া জাতিসংঘের রীতিনীতি, আন্তর্জাতিক আইন ও সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে বর্তমান যে বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, সেটাকে সম্মান জানানোর প্রতি জোর দিয়েছে দুই পক্ষই। তাদের কথা হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও। মিয়ানমার ও উত্তর কোরিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে জঙ্গি হামলার ক্ষেত্র হিসেবে যেন ব্যবহার না করা হয়, সে বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে।
অবনতি ঘটতে থাকা মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দুই নেতা। দেশটিতে নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দিয়ে গঠনমূলক আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে। আল-কায়েদা, আইসিস, লস্কর-এ-তাইয়েবার মতো জাতিসংঘের তালিকাভুক্ত জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের সামরিক ও প্রযুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক বাড়ানোর পাশাপাশি সামরিক জোট কোয়াডকে আরও কার্যকরী করে গড়ে তোলার ব্যাপারে একমত হয়েছে দুই পক্ষই।
প্রতিরক্ষাবিষয়ক দুই দেশের অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবারের বৈঠকে। সামরিক পর্যায়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা পরমাণুবিদ্যা সংযোজনের পাশাপাশি ভারতের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করতে আমেরিকার সহযোগিতার বিষয়টিও উঠে এসেছে।
মোদির এই সফর যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দুটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একটি ব্যবসা-বাণিজ্যের বাজার বৃদ্ধি, অন্যটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে ভারতকে এমনভাবে সাহায্য করা, যাতে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের মোকাবিলা সহজতর হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদির দিক থেকে আগ্রহ ছিল অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষায় ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত করা ও দেশের রাজনীতিতে নিজের অধিষ্ঠান প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়া। আর শেষ পর্যন্ত সেটিই হয়েছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা মুখে বলা হলেও দুই দেশের স্বার্থের বিষয়টিই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই সফরে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ গবেষণা, সেমিকন্ডাক্টর এবং খনিজ সম্পদ নিয়ে বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছে।
নাজমুল হাসান পাপনের আসল পরিচয় কী?
সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানের ছেলে। তবে ক্রিকেট বোর্ডের অধীশ্বর পরিচয়ই বেশি পরিচিত হতে পছন্দ করেন। ২০১২ সাল থেকে তিন মেয়াদে বিসিবির সভাপতি তিনি। ক্রিকেটে সবকিছু সঁপে দিয়ে কখনো কখনো ভুলে যান, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্যের পরিচয়টা। বাইশ গজ কখনো কখনো ভুলিয়ে দেয় দেশের বৃহত্তম ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের গুরু দায়িত্বটাও। একই সঙ্গে পাপন বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতিরও সভাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ অ্যালামনাই ক্লাবেরও প্রধান। ক্রিকেটে এতটাই মজে থাকেন যে, অন্য পরিচয়গুলো গুরুত্বের তালিকায় চলে যায় নিচের সারিতে। তবে অন্য পরিচয়গুলোর ভার অনেক। সেই দায়িত্ববোধ থেকে কদিন আগেই কি না ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর কথা বলেছেন। এসব পরিচয় ছাপিয়ে পাপন আরেকটা পরিচয়ে স্থান পেয়েছেন অসংখ্য মানুষের প্রার্থনায়। সেই পরিচয়ে পাপন শুধু ক্রিকেটের নন; ক্রিকেটের গণ্ডি ছাড়িয়ে তিনি গোটা ক্রীড়াঙ্গনের। অনেক দিন ধরে বনস্পতির ছায়া দিয়ে যাচ্ছেন গোটা ক্রীড়াঙ্গনকে।
ক্রিকেট বোর্ড ছাড়ার কথা প্রায়ই বলেন পাপন। যখনই বিষয়টা নিয়ে কথা বলেন, তখনই মোহাম্মদ মহসিনের আকাশে জমে কালো মেঘ। এই মহসিন বিসিবি সভাপতির একান্ত উদ্যোগে চিকিৎসাধীন দেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলকিপার মহসিন নন। এই মহসিন বাংলাদেশ হুইলচেয়ার ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মহসিন। ফোনের ওপাশ থেকে তার কণ্ঠটা হাহাকারের হয়ে বাজল, ‘পাপন স্যার আমাদের বড় আশ্রয়। যখন শুনলাম উনি ক্রিকেটে থাকতে চান না, মনটা শঙ্কায় ভরে ওঠে। সবসময় চিন্তা করি, পাপন স্যার যখন আছেন, খেলা ছাড়লেও এই পঙ্গুজীবনটা নিয়ে ভাবতে হবে না। তিনি নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা করে দেবেন। উনি চলে গেলে আমরা কোথায় যাব?’
কদিন আগে এক জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া সাংবাদিক পাপনের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘পাপন ভাই হচ্ছেন ক্রীড়াঙ্গনের একটা ক্যারেক্টার। তিনি যেখানেই থাকবেন, যে অবস্থাতেই থাকবেন; সংবাদকর্মীদের জন্য সংবাদের খোড়াক জুগিয়ে যাবেন। সেটা নেতিবাচক হোক, কিংবা ইতিবাচক।’ কথাটা নির্জলা সত্য। তাই তো মিডিয়া বলেন কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া পাপন ভীষণ পপুলার একটি ক্যারেক্টার। আধুনিক দুনিয়ায় টিকটক, রিল, ট্রল, ভাইরাল শব্দগুলো ব্যাপক প্রচলিত। মোক্ষম একটা ঘটনা (মান যেমনই হোক) ভিডিও করে অন্তর্জালে ছেড়ে দিন। দেখবেন মুহূর্তেই হাজারো মানুষ হামলে পড়বে তাতে। আর বিষয়বস্তু পাপন হলে তো কথাই নেই। তাকে নিয়ে কিছু ছাড়লেই হিট। লাখ লাখ শেয়ার, ক্লিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পকেটস্থ হবে মার্কিন মুদ্রা। তবে মিডিয়া-সোশ্যাল মিডিয়ার কটাক্ষ সন্তর্পণেই এড়িয়ে যান পাপন। দেশের ফুটবলের দ-মু-ের কর্তার (নামটা নিশ্চয়ই সবার জানা) মতো প্রতিক্রিয়া দেখান না কিংবা আইনি পদক্ষেপও নেন না। কারণ পাপন থাকতে চান একেবারে নিজের মতো। ক্রিকেটটাকে সাজাতে চান নিজস্ব ছকে। সেটাই হয়তো অনেকের সয় না। পাপনের সিদ্ধান্ত কখনো ভুল হলেই রক্ষে নেই। মিডিয়া-সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে শুরু হয় নানা রসিকতা।
তাই বলে মিডিয়াকে কখনোই পাপন শত্রু ভাবেননি। তাই তো কদিন আগে ক্রিকেটের উত্তরণের বড় একটা কৃতিত্ব দিয়েছেন মিডিয়াকে উদাত্তভাবে। কোনো সংবাদকর্মী অসুস্থ হলে চুপিসারে পাপন বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত। বিসিবির সহযোগিতায় মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসা মিডিয়াকর্মীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। শুধু তাই নয়, পরিচয় না জানিয়ে বিসিবি করোনাকালে অনেক সাংবাদিককে দিয়েছে অর্থ সহায়তা।
পাপনের পুরো ক্রীড়াঙ্গনের বনে যাওয়ার ক্ষেত্রে মিডিয়ার অবদানও কম নয়। যেমনটা হয়েছে কিংবদন্তি গোলকিপার মহসিনের ক্ষেত্রে। মিডিয়ায় যখন চাউর হলো ভালো নেই সোনালি সময়ের তেকাঠির বিশ্বস্ত প্রহরী, যেচে পড়ে নিজেই উদ্যোগী হয়ে উঠলেন পাপন। নিলেন মহসিনের আর্থিক ও আইনি সমস্যা নিরসনের দায়িত্ব। ধরে-বেঁধে মহসিনকে সুস্থ করে তুলতে ভর্তি করালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। সেখানে পুরোদমে চিকিৎসা চলছে মহসিনের। জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া এই ফুটবল নায়কের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন পাপন। শুধু মহসিন নন, ফুটবলের অনেক অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন পাপন। এমনকি বাদ যায়নি প্রয়াত ফুটবল রেফারির পরিবারও।
২০১২ সালে ধনী ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ক্রিকেটের পাশাপাশি নিজের দরজাটা খোলা রেখেছেন গোটা ক্রীড়াঙ্গনের জন্য। তবে এই কাজটা তিনি করতে চান পর্দার আড়ালে থেকে। তারপরও সব তো আর চাপা রাখা যায় না। এই যেমন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন, বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশন, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনকে দিয়েছেন বড় অঙ্কের অনুদান। নারী ফুটবলারদের সাফ জয় করতে দেখে তৎক্ষণাৎ দিয়েছেন আকর্ষণীয় অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা। এ ক্ষেত্রে পাপনের দর্শনটা পরিষ্কার। শুধু নিজে ভালো থাকলেই চলবে না। আশপাশের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে হবে। এই মন্ত্রটা হৃদয়ে গেঁথে তিনি দাঁড়ান হাজারো দুস্থ ও সমস্যাগ্রস্ত মানুষের পাশে। করোনা অতিমারীর সময় শুধু অন্য খেলার দুস্থ খেলোয়াড়, সংগঠকদের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর হাত দিয়ে এ প্রস্থে দিয়েছেন ৫০ লাখ টাকার অর্থ সহায়তা। নিজ উদ্যোগে জেলায় জেলায় পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্যসামগ্রী, যাতে ভীতিকর সময়টাতে মিলেছে খানিকটা স্বস্তি। বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগী ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের মহাসচিব, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপমহাসচিব, বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকুর কাছে পাপন এখন গোটা ক্রীড়াঙ্গনের একজন অভিভাবক, ‘আমাদের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন। তিনি আমাদের অভিভাবক। তবে তার পাশাপাশি পাপন সাহেব নিজেকে ক্রীড়াঙ্গনের আরেকটি নির্ভরতার জায়গায় নিয়ে গেছেন। ক্রিকেটের বাইরের খেলাগুলো এগিয়ে নিতে ওনার সহমর্মিতা অনুকরণীয়। বাংলাদেশের অনেকগুলো ক্রীড়া ফেডারেশন আছে। এর মধ্যে অনেক খেলাই সারা বছর চালানো যায় না আর্থিক সংকটের কারণে। পাপন সাহেব সে সব সংকট নিরসনে সবসময় উদ্যোগী হন।’
গোটা ক্রীড়াঙ্গনকে নিয়ে পাপনের দুর্বলতার বিষয়টি জানেন ও মানেন তার সহযাত্রীরাও। তাই যখনই যেকোনো সহায়তার আবেদনে সাড়া দেওয়ার প্রশ্নে পাপন বোর্ডের ভেতর থেকেও পান ইতিবাচক সমর্থন। বোর্ড পরিচালক জালাল ইউনুস জানালেন, ‘ক্রিকেটকে পাপন অনেক ভালোবাসেন। সেই ভালোবাসাটা এখন সম্প্রসারিত হয়েছে গোটা ক্রীড়াঙ্গনে। অন্যদের ভালো রাখার চেষ্টা নিয়ে বোর্ডে অনেক আলোচনা হয়েছে। লিখিত সিদ্ধান্ত হয়তো হয়নি, তবে মৌখিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা কাউকে ফেরাব না। পাপনের নেতৃত্বে আমরা চাই অন্য খেলা ও খেলার মানুষদের ভালো রাখতে।’ পাপনের কাছে ছোট খেলার গুরুত্বও অনেক বড়। বাংলাদেশ সার্ফিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী যেমন জানালেন, বিসিবি সভাপতির কাছে যখনই কোনো সহায়তার জন্য গিয়েছি, নিরাশ করেননি। আমরা পঞ্চম জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করেছি বিসিবির পৃষ্ঠপোষকতায়। আগামী মাসে মালদ্বীপে একটি আন্তর্জাতিক আসরে অংশ নিতে বিসিবির ইতিবাচক সহায়তার আশ্বাস পেয়েছি। পাপন ভাই যেভাবে আমাদের ছোট খেলাগুলোকে আগলে রাখছেন, বিশ্বাস করি, তাতে এ দেশের ক্রীড়াঙ্গন একদিন ঘুড়ে দাঁড়াবে। সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বদরুল সাইফ একই সঙ্গে ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। এই সংগঠক বলেন, ‘পাপন ভাই শুধু সাঁতারকে পৃষ্ঠপোষকতা দেননি। ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাকেও ১০ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। আসলে টাকা থাকলেই হয় না, মানুষকে সহযোগিতা করার মনটাও থাকতে হয়। সেটা আমাদের পাপন ভাইয়ের আছে।’
খুব বেশি দিন হয়নি পাপনের ক্রীড়াঙ্গনে সক্রিয় পদচারণা। তবে অল্প সময়ে বড্ড আপন হয়ে উঠেছেন। বনস্পতির ছায়া দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। যেখানে কোনো বিতর্ক-সমালোচনাই তাকে স্পর্শ করে না।
এক বছর আগেই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালুর উদ্যোগ নিতে পারত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) প্রশাসন। তখনই হাসপাতালের নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছিল। শর্ত ছিল এ বছরের জুনের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে এবং পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল চালুর জন্য প্রশাসনকে হাসপাতাল হস্তান্তর করা হবে। এর আগেই চালুর সম্পূর্ণ প্রস্তুতি শেষ করে আনবে প্রশাসন ও একসঙ্গে ৭৫০ শয্যার হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু হবে।
কিন্তু এ দীর্ঘ সময়ে বিএসএমএমইউ প্রশাসন হাসপাতাল চালুর উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো তড়িঘড়ি করে গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করায়। শর্ত ভেঙে বিএসএমএমইউ চিকিৎসক দিয়ে নামমাত্র বহির্বিভাগ চালু করে দেয় ও বৈকালিক সেবা শুরু করে। এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ কয়েক দফা চালুর তারিখ ঘোষণা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চালু করতে ব্যর্থ হয়।
সময়মতো হাসপাতাল চালুর উদ্যোগ নিতে না পারায় এবং প্রকল্পের শর্ত ভেঙে অবকাঠামো নির্মাণ ও পরিচালনা নীতি ভঙ্গ করায় ইতিমধ্যেই অনানুষ্ঠানিকভাবে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে হাসপাতাল নির্মাণের ঋণদাতা কোরিয়া সরকারের প্রতিনিধিরা। তারা একসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে চালুর জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছে।
এমন অবস্থায় সরকার বাধ্য হয়ে আগামী ১ জুলাই পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল চালু করতে বিএসএমএমইউ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে। গত ৩ মে প্রধানমন্ত্রীর সচিবের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। নিরুপায় বিএসএমএমইউ এখন চাইছে তারও আগে অর্থাৎ ২৫ জুন হাসপাতাল চালু করতে। সে ক্ষেত্রে অপ্রস্তুত রেখেই ধাপে ধাপে চালুর পরিকল্পনা করেছে তারা। কারণ এখনো হাসপাতাল পরিচালনার জন্য চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ মোট জনবলের সামান্যই নিয়োগ হয়েছে।
এভাবে এরকম একটি বড় বিশেষায়িত হাসপাতাল চালুর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন প্রকল্পের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, এই মুহূর্তে চিকিৎসা দিতে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ প্রস্তুত হয়েছে হাসপাতালটি। তবে সেটুকুও মানসম্মত নয়।
এ ব্যাপারে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাসপাতাল চালু তো হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক সময়মতো অস্ত্রোপচার কক্ষের (ওটি) যন্ত্রপাতি আনতে না পারায় বিলম্ব হয়েছে। এখন আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসব যন্ত্রপাতি জোগাড় করে ২৫ জুন চালু করব। সেদিন থেকেই রোগী ভর্তি হবে, ইনডোরও চালু হবে।’
অবশ্য এভাবে হাসপাতাল চালুর ক্ষেত্রে সন্তুষ্ট নন প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. জুলফিকার আলী খান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেভাবে একটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল, সেটা হচ্ছে না। এটা বিএসএমএমইউর মতো একটা গতানুগতিক হাসপাতাল হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও কোরিয়ান কর্র্তৃপক্ষ বারবার তাগাদা দিয়েছে প্রকল্প পরিকল্পনা থেকে না সরার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটা মানেনি। ফলে হাসপাতাল চালুর জন্য প্রস্তুতিটা ঠিক হয়নি।’
এ কর্মকর্তা আরও জানান, ইতিমধ্যে অবশিষ্ট ১১টি চিকিৎসা যন্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। সেটা শিগগির হাসপাতালে চলে আসবে ও স্থাপন করা হবে।
এখন চেয়েচিন্তে চালুর চিন্তা : নানামুখী চাপের মুখে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ কোনোরকম হাসপাতাল চালুর পরিকল্পনা নিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ৭৫০ বেড পর্যায়ক্রমে চালু হবে। ধীরে ধীরে রোগী বাড়বে, বেডও বাড়বে। পর্যায়ক্রমে সব বেড চালু হয়ে যাবে।
জনবল নিয়োগ প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ‘১৮৪ জন জনবল নিয়োগ হয়েছে। কিন্তু লাগবে ১ হাজার ৮০২ জন। বাকিদের পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দেওয়া হবে। আপাতত ৬০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। পরে সব নেব। এর আগে ৩৩ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
সে ক্ষেত্রে এখন বিএসএমএমইউর চিকিৎসকরাই পালাক্রমে এ হাসপাতালেও চিকিৎসাসেবা দেবেন বলে জানান উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘বিএসএমএমইউতে অনেক ডাক্তার আছে, তাদের দিয়েই হবে। কারণ বিএসএমএমইউর চেয়ে এত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আর কোনো ইনস্টিটিউটে নেই এবং এসব চিকিৎসক মাল্টি ডিসিপ্লিনারি। এখানে সব ধরনের চিকিৎসা হয়।’ ইতিমধ্যেই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ডায়াগনসিস, ডায়ালাইসিস শুরু হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
হাসপাতাল পরিচালনার অর্থ সংকুলানের ব্যাপারে ডা. শারফুদ্দিন বলেন, ‘সরকারের কাছে টাকা চেয়েছি। সরকার আমাকে দেবে বলেছে। যদি না দেয়, তখন মানুষের থেকে নিয়ে চালাতে হবে। আমার মনে হয় বঙ্গবন্ধুর নামে বিশ্ববিদ্যালয় তো, তাই সরকার আমাকে দেবে।’
এখনো ৯০% নিয়োগ বাকি : প্রকল্পে হাসপাতাল পরিচালনা জন্য ৫১ পদে ১ হাজার ৭৩৩ জনবলের একটি তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮৯ চিকিৎসক, ৬২৫ নার্স ও ৩৫ জন কর্মকর্তা রাখা হয়েছে। বাকিরা অন্যান্য বিভাগের লোকবল। এর মধ্যে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১৮৪ জন, যা মোট লোকবলের মাত্র ১১ শতাংশ। অর্থাৎ এখনো নিয়োগ বাকি ৮৯ শতাংশ। সব ধরনের চিকিৎসক থাকার কথা ২৮৯, কিন্তু এখন পর্যন্ত নিয়োগ পেয়েছেন ৩৩ জন মেডিকেল অফিসার, যা মোট চিকিৎসকের মাত্র ১২ শতাংশ। অর্থাৎ ৮৮ শতাংশ চিকিৎসক নিয়োগ এখনো বাকি। এ ছাড়া ৩৫ জন কর্মকর্তার মধ্যে নিয়োগ পেয়েছেন মাত্র দুজন একজন পরিচালক ও একজন অতিরিক্ত পরিচালক।
অবশ্য উপাচার্য জানিয়েছেন, হাসপাতালের জন্য এখন পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১৮৪ জন, যা মোট লোকবলের মাত্র ১০ শতাংশ।
উপাচার্য কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানান, এখনো প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ হয়নি। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের বৈকালিক চেম্বারে আসা রোগীদের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিএসএমএমইউতে করতে হচ্ছে। বৈকালিক সেবা দেওয়া চিকিৎসকরা ৯ মাস ধরে ফি পাচ্ছেন না। এখন তারাও রোগী দেখতে চাইছেন না। এমনকি রোগী ভর্তি, চিকিৎসা, ডায়াগনসিসসহ কোনো ধরনের ফি নির্ধারণ করা হয়নি।
ধাপে ধাপে শুরু, ক্ষতির আশঙ্কা : ধাপে ধাপে হাসপাতাল চালুতে চিকিৎসা সেবায় সংকট ও হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে মনে করছেন হাসপাতাল ও প্রকল্পের কর্মকর্তারা। তারা জানান, চালুর আগেই উদ্বোধন করায় ইতিমধ্যেই ২ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বাকি পড়েছে। বিপুল অঙ্কের গ্যাস ও স্যুয়ারেজ বিলও জমেছে। হাসপাতাল ইনফরমেশন সিস্টেম এখনো ঠিক হয়নি। এক বছর আগেই ৭৫০ বেড, প্রত্যেক ফ্লোরে চেয়ার-টেবিল, কম্পিউটার, এসিসহ সব ধরনের আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও এসি সংযোগ ও ল্যাবরেটরি সার্ভিস স্থাপন করা হয়েছে। মোট ১০টি অস্ত্রোপচার কক্ষের মধ্যে এখন চারটি চালু হবে। প্রকল্পে এ ধরনের কম্প্রেহেনসিভ কো-অর্ডিনেটেড হাসপাতাল ধাপে ধাপে নয়, একবারে চালু করতে বলা হয়েছে। কারণ এখন যত শয্যাই চালু করুক, সব সার্ভিস দিতে হবে।
ক্ষুব্ধ কোরিয়া, আরেকটি হাসপাতাল অনিশ্চিত : প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা জানান, গত ৭ জুন কোরিয়ান কর্র্তৃপক্ষ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসে। সবকিছু দেখে ও শুনে তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, যদি এ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে সময়মতো চালু করতে না পারে ও পরিচালনায় ব্যর্থ হয়, তাহলে দ্বিতীয় প্রকল্পের জন্য যে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল, সেটা তারা দেবে না। দ্বিতীয় প্রকল্পে বেতার ভবনের জায়গায় অনুরূপ আরেকটি হাসপাতাল করার কথা আছে কোরিয়ার। সেটার নকশা হয়ে গেছে, ঋণ অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু এখনো ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি।
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, কোরিয়ান সরকার নাইজেরিয়াতে ৫০০ শয্যার একটা হাসপাতাল করেছিল। কিন্তু নাইজেরিয়া সরকার সেটা চালাতে পারেনি। পরে তারা সেখানে আর কোনো প্রকল্প করেনি। বাংলাদেশের অবস্থাও সেরকম হচ্ছে। এ ছাড়া প্রকল্পের বাইরে বহির্বিভাগ চালু ও নার্সিং রুম ভেঙে অতিরিক্ত পরিচালকের কক্ষ করায় কোরিয়ার কর্মকর্তারা খুব অসন্তুষ্ট হয়েছে বলেও জানান প্রকল্প কর্মকর্তারা।
চালুতে গাফিলতি, পরিচালনায় প্রকল্পের কেউ নেই : হাসপাতালের প্রকল্প কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা জানান, বিএসএমএমইউর চিকিৎসক দিয়ে এই হাসপাতাল চালানো যাবে না। এটার জন্য পৃথক চিকিৎসকসহ লোকবল লাগবে। সবকিছু থাকার পরও উপাচার্য ও তার প্রশাসনের অদক্ষতা-স্বেচ্ছাচারিতার কারণে হাসপাতাল চালু করা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ হাসপাতাল নির্মাণ, যন্ত্রপাতি আনা ও স্থাপন, অপারেশন প্ল্যান ও স্টাডি সব আমরাই করেছি। কিন্তু হাসপাতাল পরিচালনা ব্যবস্থাপনার কোথাও প্রকল্পের কাউকে রাখা হয়নি। অথচ প্রকল্পের অপারেশন প্ল্যানে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিটকে হাসপাতাল পরিচালনা ইউনিটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রাখতে বলা হয়েছে। সেটা না করায় কোরিয়া সরকারের প্রতিনিধিরা অসন্তুষ্ট।
প্রকল্পে যেসব সুবিধার কথা বলা আছে : সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ৯টি ফ্লোর ও ৩টি বেজমেন্ট আছে। থাকছে প্রযুক্তিভিত্তিক মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি অ্যান্ড সুপার স্পেশালাইজড হেলথ কেয়ার সার্ভিস। মোট শয্যার মধ্যে ১০০টি আইসিইউ ও ১০০টি ইমার্জেন্সি শয্যা। প্রায় ২৫০টি গাড়ি রাখার মতো পার্কিং সুবিধা আছে। অত্যাধুনিক চিকিৎসাসেবা দিতে এ হাসপাতালকে ৫টি স্পেশালাইজড সেন্টারে ভাগ করা হয়েছে। এখানে আছে দুর্ঘটনা ও জরুরি চিকিৎসাকেন্দ্র, হৃদরোগ ও স্নায়ুরোগ সেবাকেন্দ্র, হেপাটোবিলিয়ারি ও যকৃৎ প্রতিস্থাপন কেন্দ্র, কিডনি রোগ কেন্দ্র এবং মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং আধুনিক অপারেশন থিয়েটারসমৃদ্ধ এ হাসপাতালে যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল বা চিকিৎসকের রেফার করা গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে।
হাসপাতাল নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৭ কোটি টাকা কোরিয়া সরকারের ঋণ, ৩৩৮ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা এবং বাকি ১৭৫ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়ন। কোরিয়ার ঋণ শোধ দিতে হবে ১৫ বছর পর থেকে ও ৪০ বছরের মধ্যে। সুদ নামমাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ১ টাকা।
দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তন করে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আসুন দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তন করে জাতির পিতার স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ ও সোনার এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিই।’
আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী এবং তার দলের নেতাকর্মীসহ সবাইকে বিএনপি ও জামায়াত সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন, তারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে নেমেছে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি- জামায়াত দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তারা দেশকে ধ্বংস করবে। তাই দলগুলোর বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
দেশের ব্যাপক আর্থসামাজিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দেশবাসীর ভাগ্য বদলে যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেশবাসী আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে এবং ২০০৯ সাল থেকে বিগত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘২০০৯-২৩ মেয়াদে আমরা দারিদ্র্যের হার ৪১ থেকে ১৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছি এবং চরম দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশের ওপর থেকে কমে পাঁচ শতাংশে নিয়ে এসেছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, শিক্ষার হার বেড়েছে, মা ও শিশুর মৃত্যুহার কমেছে এবং দেশবাসীর গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা দিয়েছে, বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যেকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে, তৃণমূল পর্যায়ে আর্থসামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত করেছে, দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করেছে এবং গ্রাম পর্যায়ে ওয়াইফাই সংযোগ দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশ আরও উন্নত হবে। ২০৪১ সাল নাগাদ আওয়ামী লীগ দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করবে।’
বাংলাদেশ কৃষি, বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যসহ প্রতিটি খাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে এবং এভাবে বিশ্বমঞ্চে মর্যাদা অর্জন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব আগে বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছিল, তারা এখন বাংলাদেশকে সম্মান করে। এই সম্মান আওয়ামী লীগ অর্জন করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন থেকে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে আসছে। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যারা মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে।
আ.লীগ ক্ষমতায় থাকলেই জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই কেবল দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। তিনি গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য এবং জনগণের সেবা করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটাই আওয়ামী লীগের মূলমন্ত্র।’
আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে জনগণ সুবিধা পায় এবং তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, এটা প্রমাণিত সত্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগণ নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আজ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা সম্ভব হয়েছে।’
বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না বলে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি জানি অনেক চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন ও শফিউল আলম নাদেল, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বেগম আক্তার জাহান, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী, ঢাকা উত্তর মহানগর সভাপতি বজলুর রহমান প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও সহসভাপতি সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। বাসস
একদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানির দিকে হাঁটছে, অন্যদিকে রপ্তানি আয় স্বাভাবিক থাকলেও প্রবাসী আয় গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যেই বিদেশি ঋণে বড় ধাক্কার মুখে বাংলাদেশ। সরকারি কর্মকর্তাদের অদক্ষতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারায় একদিকে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে গেছে, অন্যদিকে ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। আগস্ট শেষে ঋণ পরিশোধ করতে গত বছরের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি, বিপরীতে অর্থছাড় কম হয়েছে ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ এ বছর ঋণ পাওয়ার চেয়ে ঋণ পরিশোধের চাপ গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে দাঁড়িয়েছে ৭৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারে। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ৮৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমেছে ১৭ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের দুর্বলতার কারণে অর্থছাড় কমেছে। তাছাড়া ঋণ পরিশোধে আরও বেশি চাপের মুখে পড়তে হবে বলেও মনে করেন তারা।
ইআরডির হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছর আগস্ট শেষে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ৪০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। অথচ গত বছর একই সময়ে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ডলার বা ২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। ঋণ থেকে সুদকে আলাদা করলে দেখা যায়, সুদের চাপও দ্বিগুণ হয়েছে। আগস্ট শেষে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৪ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বা ১ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের শুরু থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে উন্নয়ন প্রকল্পে বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে। উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রীর মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও এলসি ওপেনিং নিয়ে অনেক প্রকল্পে জটিলতায় পড়তে হয়েছে। এ কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হার কম ছিল। এ ছাড়া সক্ষমতার অভাবে এডিপিতে বৈদেশিক ঋণের বরাদ্দের ব্যবহার এর আগের অর্থবছরের চেয়ে কিছুটা কম ছিল।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগে আমরা বড় বড় প্রকল্পের যেসব ঋণ নিয়েছিলাম, অধিকাংশ ঋণের ম্যাচিউরিটি শেষ হয়েছে। এ ঋণগুলোর সুদহারও বেশি আবার গ্রেস পিরিয়ডও কম। গ্রেস পিরিয়ড কম অর্থাৎ আমাদের ঋণ পরিশোধের সময় দ্রুততর হয়ে আসছে।’
সংস্থাগুলো সুদের হার বাড়াচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল গ্রেস পিরিয়ড ১০ বছর দেওয়া হতো, এখন বেশিরভাগ ঋণেই ৫ বছর দেওয়া হয়। সুদের হার বাড়াচ্ছে ঋণদাতা সংস্থাগুলো। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক ৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে কথা বলেছে, অথচ তারা আমাদের শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ ঋণ দিত।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঋণদাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে এ দুই মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে জাপান। এ দেশের কাছ থেকে ছাড় হয়েছে ৩০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এডিবির কাছ থেকে। এ সংস্থার কাছ থেকে ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ১৫ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ করেছে বিশ^ব্যাংক। এ সংস্থার আইডিএ প্রোগ্রামের অর্থছাড় হয়েছে ১৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার।
চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে অর্থছাড় কম হলেও এ সময়ে ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে প্রায় চারগুণ। আগস্ট শেষে অনুদানসহ বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে ১১৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। গত বছর একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল ৩০ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের। এ সময়ে পাইপলাইনে থাকা সম্ভাব্য ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৭০ কোটি ডলারের বেশি।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার বৃদ্ধির ফলে সরকারের বৈদেশিক ঋণের পরিশোধের চাপ বেড়েছে। এর ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
ইআরডির হিসাবে, সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের সুদ ও আসল মিলিয়ে ২ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। এর মধ্যে সুদ হিসাবে পরিশোধ করেছে ৯৩৫ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার আর আসল পরিশোধ করেছে ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার আসল ও সুদ বাবদ পরিশোধ করেছে ২ দশমিক ০১৭ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে আসল ১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন এবং সুদ ৪৯১ মিলিয়ন ডলার।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) রেট বেড়ে ৫ শতাংশের বেশি হয়েছে। এ কারণে বাজারভিত্তিক ঋণের জন্য বাংলাদেশকে এখন ৫ শতাংশের বেশি সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে এই রেট ছিল ১ শতাংশের কম।
ঋণের চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে। যদিও এখন পর্যন্ত রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের শতাংশ হিসাবে বা জিডিপির শতাংশ হিসাবে এটি কম। কিন্তু তারপরও এটি ধীরে ধীরে বেড়ে এখন ৩৮ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। এমন সময়ে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে যখন আমাদের রিজার্ভও চাপে আছে।’ তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের প্রতিবছর প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স মিলিয়ে আমাদের আয় ৮০ বিলিয়ন ডলার। এ অর্থ আবার আমদানির জন্য ব্যয় করতে হচ্ছে। রিজার্ভের নিরিখে এটি এখন অবশ্যই চাপ। যখন রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছিল তখন এ চাপ অনুভূত হয়নি। এখন রিজার্ভ কমতির দিকে আর ঋণ পরিশোধের দায়ভার বৃদ্ধির দিকে।’
বর্তমানে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য সরকার যে ঋণ নিয়েছে, সেসব ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হলে ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করছে ইআরডি।
সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রের প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে। এডিপি বাস্তবায়নও চলছে ঢিমেতালে। অর্থ সংকট ছিল না, এমন প্রকল্পের অগ্রগতিও আশানুরূপ হয়নি। অগ্রাধিকার পাওয়া মেগা প্রকল্পের কাজও চলছে ঢিমেতালে। আর ব্যয় করতে না পারায় বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে গেছে।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগই এসেছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে পাইপলাইনে বৈদেশিক ঋণ রয়েছে ৪৪.৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ ঋণের জন্য সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে।
ফরিদপুরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। গত এক মাসে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৪৫ ডেঙ্গু রোগীর। আর গত এক সপ্তাহেই মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। চলতি বছর সব মিলিয়ে জেলাটিতে এ নিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৬১ জন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এবার ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৬৩২। এর আগে এক বছরে এত আক্রান্ত আর মৃত্যু দেখেনি জেলাটি। রোগীর চাপে বিভিন্ন হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। ডেঙ্গু রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে হাসপাতালের বারান্দা ও সিঁড়িতে। তাতে ব্যাহত হচ্ছে অন্য রোগীদের চিকিৎসাসেবাও।
ডেঙ্গুতে জেলার এমন পরিস্থিতির জন্য সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব কার্যক্রম চলমান। সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন এলাকায় মশা নিধন কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন হাসপাতালে বিনামূল্যে স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাবে এ বছর জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১২ হাজার ৬৩২ রোগী। বর্তমানে ফরিদপুরে ভর্তি হয়ে ৮২৪ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে সেবা নিচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্তের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে মৃত্যুও। এদের অধিকাংশই নারী। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গত এক মাসে এ জেলার হাসপাতালগুলোতে মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। এর মধ্যে ফরিদপুরের ৩১ এবং অন্যান্য জেলার ১৪ জন। আর এ বছর জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ৬১ জন। এর মধ্যে ফরিদপুরে ৪১ জন, বাকি ২০ জন রাজবাড়ী, মাগুরা, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের।
হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় শয্যা সংকটের পাশাপাশি তীব্র গরমে অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। তবে ডেঙ্গু রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে দিন-রাত চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব স্কুল-কলেজ, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার আশা প্রকাশ করেন, শিগগিরই সবার সমন্বয়ে ডেঙ্গু মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
সিভিল সার্জন অফিস বলছে, বিভিন্ন হাসপাতালে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ২ হাজারের অধিক রোগী। ফলে রোগীদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সব বিভাগের কর্মীরা দিন-রাত কাজ করছেন। তবে শুধু সেবা দিলেই চলবে না। এর প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে মৃত্যুর মিছিল থামানো যাবে না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শুধু ফরিদপুর নয়, এ অঞ্চলের ৫ থেকে ৬টি জেলার রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
ডেঙ্গু রোগীদের বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘গত এক মাসে এ জেলায় অতিরিক্ত ডেঙ্গু রোগীর চাপ লক্ষ করা গেছে। আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জেলার সব হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে বলেছি। তিনি জানান, ফরিদপুরে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১২ হাজার ৬৩২ ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে ১১ হাজার ৭৪৭ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। গতকাল সোমবার জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল ৮২৪ জন।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ, নীতি ও দর্শন বর্তমান বিশ্বের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ বন্ধে মহাত্মা গান্ধীর শান্তি ও সম্প্রীতিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধী উভয়ে অসাম্প্রদায়িক নেতা। তাদের মতাদর্শ বিশ্বের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। গতকাল সোমবার দুপুরে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট ক্যাম্পাসে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক যুব পিস ক্যাম্পের শেষ দিন ও মহাত্মা গান্ধীর ১৫৫তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) জীবন কানাই দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নোয়াখালী-১ আসনের সাংসদ এইচ এম ইব্রাহিম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবিব, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খান সোহেল প্রমুখ। অনুষ্ঠান শুরুর আগে গান্ধীর ম্যুরালের সামনে প্রভাত প্রার্থনা ও ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। শেষে গান্ধী আশ্রম প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী এবং মহাত্মা গান্ধীর ১৫৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক যুব পিস ক্যাম্পের সমাপনী ঘোষণা করা হয়। ক্যাম্পে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দেশের দেড় শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ দেশের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। কারণ এ সরকার খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে। তার মুক্তির বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। এরা কাপুরুষ। এরা জানে খালেদা জিয়া সুস্থ হলে তাদের ক্ষমতার মসনদ ভেঙে পড়বে। বন্দি রেখে খালেদা জিয়াকে এরা হত্যা করতে চায়।
গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তির’ দাবিতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়কে হলুদ-সবুজ রঙের টুপি মাথায় দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য তারা (সরকার) বিভিন্ন রকম আইনকানুন দেখাচ্ছে। যখন আপনার (শেখ হাসিনার) কানের সমস্যা হয়েছিল তখন আপনি আমেরিকা চলে গিয়েছিলেন। যান নাই? আজকে খালেদা জিয়ার যখন জীবন-মরণের সমস্যা তখন এইসব কথা বলছেন কেন? কারণ রাজনৈতিকভাবেই তারা বেগম জিয়াকে হিংসা করে, তাকে সুস্থ করতে চায় না। বেগম জিয়াকে রাজনীতি করতে দিচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সম্পূর্ণ লক্ষ্য একটাই, এ দেশে কোনো বিরোধী দল থাকবে না, তারাই সরকার চালাবে, সরকারে থাকবে। তাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হবে তারাই শুধু এ দেশের মালিক আর আমরা সব প্রজা।’
তিনি আরও বলেন, ‘পিটার হাসকে (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) নিয়ে তারা (সরকার) খুব রেগেছে। তাদের নেতা-মন্ত্রীরা সমস্ত ডিপ্লোমেটিক নর্মসকে উপেক্ষা করে তার বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলছে। তাদের বংশবদ টেলিভিশন চ্যানেলগুলো মিথ্যাচার করছে। এরা এত দায়িত্বজ্ঞানহীন। যে দেশটাতে আমরা সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করি, সেই দেশের সঙ্গে সমস্যা তৈরি করেছে। আরেকটা খবর আছে, সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে। এর অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর তাদের আস্থা নেই। সেজন্য তারা অর্থ পাঠাচ্ছে না।’
দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা খালেদা জিয়া উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ নেতারা) তো মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। তারা পাকিস্তানের সরকারের ভাতা খেয়েছিলেন।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে কেনো বিকল্প নেই। একটাই পথ। সরকারকে সরাসরি বলতে চাই, এখনো সময় আছে মানে মানে পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিন, সংসদ বিলুপ্ত করুন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় দেশের মানুষ জানে কীভাবে স্বৈরাচারকে, ফ্যাসিবাদকে দূর করতে হয়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে আমাদের রংপুর-দিনাজপুরের মানুষ আছেন। এক কৃষক নেতা ব্রিটিশ পিরিয়ডে বিদ্রোহ করেছিলেন। কৃষককে ডাক দিয়েছিলেন, কোনঠে বাহে জাগো সবাই। এই হচ্ছে ডাক। কোথায় আছেন, সবাই জাগেন, জেগে ওঠেন। প্রতিরোধ গড়ে তুলি, সমস্ত নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।’
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ‘সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে দেশের কৃষকরা পণ্যের ন্যায্যমূল্য, সার-কীটনাশক-বীজ কোনো কিছুই পাচ্ছেন না। মেগা প্রকল্পের নামে সরকার লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার ও বাড়িঘর করে আখের গোছাচ্ছে।’
কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির শাহজাহান ওমর, বরকতউল্লা বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, ফরহাদ হালিম ডোনার, রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ বক্তব্য দেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশর (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান। গতকাল সোমবার বিজিবির সিলেট সেক্টর সদর দপ্তরে সব পর্যায়ের বিজিবি কর্মকর্তা ও সৈনিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ নির্দেশনা দেন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে বিজিবির প্রতিটি সদস্যকে সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনেরও আহ্বান জানান।
এর আগে ডিজি বিজিবির বিভিন্ন ইউনিটের অপারেশনাল, প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিদর্শনের অংশ হিসেবে গত রবিবার ও গতকাল সোমবার বিজিবির সিলেট সেক্টর সদর দপ্তর এবং আওতাধীন সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) এবং অধীনস্থ ১০ নম্বর পোস্ট ও পাথরকোয়ারি বিওপি, সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (২৮ বিজিবি) এবং অধীনস্থ দুর্গম ডুলুরা বিওপি এবং জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) অধীনস্থ আমলশিদ বিওপি ও রহিমপুর খাল পরিদর্শন করেন।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জকিগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে রহিমপুর খালের সংযোগস্থল বন্ধ রয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশি কৃষকরা সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে গত জুন মাসে বিজিবি-বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবির পক্ষ থেকে বিষয়টি অত্যন্ত জোরালোভাবে উত্থাপন করা হয়। বিএসএফ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য বিজিবিকে আশ্বাস দেন। এরই ধারাবাহিকতায় রহিমপুর খালের সংযোগস্থল পুনঃউন্মুক্তকরণ কাজের অগ্রগতি সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য বিজিবি মহাপরিচালক গতকাল রহিমপুর খাল পরিদর্শন করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।