
জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রতিষ্ঠাতা মোস্ট ওয়ান্টেড শামিন মাহফুজ ও তার স্ত্রীকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন সিটিটিসি প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। গতকাল রাতে সিটিটিসিপ্রধান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা শামিনকে খুঁজছিলাম।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) কেএন রায় নিয়তি জানান, জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রতিষ্ঠাতা শামিন মাহফুজ ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আজ শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।
চলতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকা থেকে উগ্রবাদী নব্য জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার নায়েবে আমির মো. মহিবুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির সিটিটিসির সিটি ইনভেস্টিগেশন টিম। তাকে গ্রেপ্তারের পর সিটিটিসিপ্রধান মো. আসাদুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে শূরা সদস্য ডা. শাকের ওরফে শিশির, জঙ্গি নেতা শামিন মাহফুজ, মো. মহিবুল্লাহ ওরফে ভোলার শায়েখ বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে অবস্থিত জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দিস শারক্বীয়ার প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যান। এ সময় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে কেএনএফ (কুকি-চিন ন্যশানাল ফ্রন্ট)-এর তত্ত্বাবধানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ চলত। সেখানে তাদের সঙ্গে কেএনএফের প্রধান নাথান বম ও অন্য নেতাদের সাক্ষাৎ হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জামা’আতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে সংগঠনটির নামকরণ করা হয় এবং শূরা কমিটি গঠন করে। মহিবুল্লাহকে সংগঠনটির নায়েবে আমির হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর কয়েক মাস পরেই। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি এ সময়ে তাদের আইন-আদালত, জামিন ও বিচার কার্যক্রমের শুনানি নিয়েও ব্যস্ত থাকতে হবে। বিএনপিকে মোকাবিলা করতে হবে দুর্নীতি দমন কমিশনকেও (দুদক)।
সম্প্রতি দুদকের মামলায় হাইকোর্টে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ৯ বছর ও আমান উল্লাহ আমানের ১৩ বছরের সাজা বহালের রায়ের পর অস্বস্তি ও চিন্তা বেড়েছে বিএনপির শীর্ষ আইনজীবীদের মধ্যে। সামনে আরও কঠিন সময় আসছে এ আলোচনা চলছে তাদের মধ্যে।
আইনজীবীদের ভাষ্য, বিএনপির মনোনয়নে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলা পর্যায়ের এমন ৩০ থেকে ৩৫ জন শীর্ষ সারির নেতা দুদকের মামলায় বিচার ও সাজার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
উচ্চ ও অধস্তন আদালতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মামলা পরিচালনা করেন এমন পাঁচজন এবং দুদকের মামলার পাঁচজনসহ মোট ১০ জন আইনজীবীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা হয়েছে দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদকের। বিএনপির আইনজীবীরা প্রায় অভিন্ন সুরে বলেন, ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ১৫ বছর ধরে নেতাদের মামলা, জামিন, হাজিরা ও সাজা নিয়ে কঠিন ও অস্বস্তিকর সময় পার করছে। রাজনৈতিক কৌশল কিংবা মানসিক চাপে রেখে বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে সরকার দুদক ও আদালতকে ব্যবহার করবে, এটি অনুমিতই ছিল। দুদকের তৎপরতা তাদের ভাবিয়ে তুললেও তারা আইনি লড়াইয়ে থাকবেন বলে জানান।
দুদকের আইনজীবীদের বক্তব্যে ছাড় না দেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। বিএনপির রাজনৈতিক মামলার আইনজীবীদের বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে তারা বলেন, দুদকের চলমান মামলাগুলোর প্রায় সবই পুরনো। কার্যতালিকায় এলে এগুলোর শুনানি ও নিষ্পত্তি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এগুলোতে নির্বাচন বা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আরোপের কোনো সুযোগ নেই।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কঠিন সময় পার করছি। সামনে আরও কঠিন সময় আসতে পারে। কারণ অতীতে কোনো সরকারই এমন ভৌতিক মামলা দায়ের করেনি। তবে, আমরা এখনো আমাদের দলীয় সিদ্ধান্তে অটল আছি।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের হাতে অস্ত্র একটাই। সেটাই তারা প্রয়োগ করছে বছরের পর বছর। আমরাও আইনগতভাবে মোকাবিলা করে আসছি। যেহেতু তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি ফলে মামলা ও সাজা থাকবে। কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, কাকে সাজা দেবে সেটা সরকারের সাজানো একটা বিষয়।’
দুদকের কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কার্যতালিকাতেই দুর্নীতির পুরনো মামলাগুলো আছে। সে অনুযায়ী নিষ্পত্তি হচ্ছে। বিরোধীপক্ষের কে কী বলল তাতে কিছু যায়-আসে না। ৯ বছর আগের মামলা হাইকোর্টে পুনঃশুনানির জন্য পাঠানো হয়েছে। সেগুলোর কি নিষ্পত্তি হবে না? বিচারকরা দ- দিয়েছেন। এখানে রাজনৈতিক আবরণের প্রশ্নই ওঠে না।’
পুরনো মামলাতেই ঘুরপাক
সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত হয়ে কারাগারের বাইরে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বিচারিক আদালতে তার বিরুদ্ধে চলমান নাইকো ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হতে পারে এমন গুঞ্জন রয়েছে আইনজীবীদের মধ্যে। নাইকো মামলায় গত ২৩ মে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়েছে। আগামী ১৬ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এবং জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় ৭ বছরের কারাদ-ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার করা আপিল বিচারাধীন রয়েছে। দুদকের কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, মামলাগুলো কার্যতালিকায় এলে এবং বিএনপির চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা আন্তরিক হলে আপিল নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিএনপির আইনজীবীরা মনে করেন, দুটি মামলায় ১৭ বছরের সাজার পরেও অন্য মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির কারণ একটাই, সরকার খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে আসতে দিতে চায় না। সাজাপ্রাপ্ত হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইতিমধ্যে তার অভিমত দিয়েছেন। তবে বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না।
লন্ডনে বাসরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতিমধ্যে দুর্নীতির একটি মামলায় ১০ বছর ও আরেকটি মামলায় ৭ বছর, ২১ আগস্ট মামলায় যাবজ্জীবন এবং মানহানির একটি মামলায় দুই বছরের কারাদ- পেয়েছেন। আইনের দৃষ্টিতে তিনি পলাতক এবং আইনি মোকাবিলা করতে হলে তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে দুর্নীতির আরেকটি মামলায় তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলার বিচার শেষ হতে পারে খুব শিগগির।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকার দুর্নীতির মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এ আসামিপক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য শেষে সাফাই সাক্ষ্য চলছে। এরপর যুক্তিতর্কের শুনানি। তারপর রায়। তিনি গ্যাটকো মামলাতেও আসামি। গ্যাটকো মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও আসামি।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাসের মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ তদন্ত কর্মকর্তার জেরা চলছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলুর মামলাটিতে সাতজনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাফিজ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলা ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এ সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। বিএনপির আইনজীবীদের আশঙ্কা, নির্বাচনের আগে এসব মামলা নিষ্পত্তির দিকে যেতে পারে।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্তত ৩৫ জন নেতার মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে দুদক তৎপর। চাপ সৃষ্টি করে বিএনপিকে আরেকটি প্রতারণামূলক নির্বাচনে নেওয়ার অপচেষ্টা চলছে।’
জোবাইদার মামলার নিষ্পত্তি হতে পারে শিগগির
বিএনপির আইনজীবীদের কাছে অস্বস্তি নিয়ে এসেছে তারেকপত্নী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলাটি। তারা বলেন, জোবাইদা রহমান কখনো সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন না। ভবিষ্যতে আসবেন সে সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। স্বামী তারেক রহমানকে দুর্নীতিতে সহযোগিতা করার অভিযোগে মামলা হলেও দীর্ঘদিন সেটি আলোচনার বাইরে ছিল। এ মামলায় ১৪ বছর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ ছিল। স্থগিতাদেশ উঠে যাওয়ায় মামলার বিচারকাজ চলছে দ্রুতগতিতে। গত ১৩ এপ্রিল দুজনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ হয়। আইনের ব্যাখ্যা ও উচ্চ আদালতের অভিমত অনুযায়ী, পলাতকদের পক্ষে আইনজীবীর শুনানির সুযোগ নেই। এ মামলায় ২১ জুন পর্যন্ত ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৩১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। মামলাটিকে ঘিরে ঢাকার আদালত এলাকায় কয়েক দিন মারামারি, হাতাহাতি, মিছিল-পাল্টা মিছিলে লিপ্ত ছিলেন বিএনপিপন্থি এবং রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীরা। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ আইনজীবী। প্রতি কর্মদিবসে বিশেষ নিরাপত্তায় বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
বিচারিক আদালতে বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার মামলায় শুনানি করছেন দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে জিয়া পরিবারের কেউ যেন আসতে না পারে, সে জন্যই এত তাড়াহুড়া। তারেক রহমান নির্বাচনের বাইরে থাকলে তার স্ত্রী সামনে চলে আসতে পারেন এমন ভাবনা থেকেই জোবাইদা রহমানকে লক্ষ্য করা হয়েছে।’
বিচারিক আদালতে দুদকের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দিনের পর দিন সময় নিয়ে, উচ্চ আদালতে গিয়ে তারাই (বিএনপির আইনজীবী) মামলাগুলোকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমাদের কাজ মামলা পরিচালনা করা। কে কোন দলের সেটি বিবেচ্য বিষয় নয়। মামলা নিষ্পত্তির সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘একই মামলায় আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা অব্যাহতি পেয়েছেন। আমাদের বেলায় ব্যতিক্রম হচ্ছে। দুদক দুজনকে (আমান ও টুকু) নির্বাচন থেকে বারিত করল। এমন আরও অনেকের ক্ষেত্রে হতে পারে। নির্বাচন সামনে রেখে প্যানিক সৃষ্টি করতে অনেক মামলাই সরকার নিষ্পত্তির চেষ্টা করবে। তারা খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে আসতে দিতে চায় না।’
বাংলাদেশের জমি উর্বর হলেও কৃষিব্যবস্থার আধুনিকায়ন না হওয়ায় উৎপাদন তেমন বাড়ছে না। রপ্তানিযোগ্য ফসলও ফলানো যাচ্ছে না। ফলে কৃষিকে বাণিজ্যিক রূপ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এসব বিবেচনায় নিয়ে সরকার কৃষি খাতে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় কর্মসূচি ‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার)’ শুরু করতে যাচ্ছে।
এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে খাদ্য উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি কৃষিতে বৈচিত্র্য আসবে। কৃষি খাতকে নতুন রূপে দেখা যাবে। ৬ হাজার ৯১০ কোটি টাকার এ প্রোগ্রামে অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল।
গত ১৮ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রোগ্রামটি অনুমোদিত হয়। বাংলাদেশ সরকার দেবে ১ হাজার ১৫১ কোটি টাকা ও প্রকল্প সাহায্য পাওয়া যাবে প্রায় ৫ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। প্রোগ্রামের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত।
কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগের নিয়মকানুন ভেঙে গত ২৫ মে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুমিল্লা জেলার উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমানকে প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কাজে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় যথাযথভাবে প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে।
মো. মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা এখন প্রস্তুতিমূলক কাজ করছি। ১ জুলাই প্রোগ্রামের কার্যক্রম শুরু হবে। আমি এর আগে কোনো প্রকল্পে কাজ করিনি এটা ঠিক; তবে আমার টিমে যারা আছে তাদের অনেকেরই বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারাই আমার ভরসার জায়গা। আমি বলব, সরকার ভালো মনে করেছে বলেই আমাকে এ পদে নিয়েছে। আমি এজন্য কোনো তদবির করিনি।’
সূত্র জানায়, প্রকল্প পরিচালক বা প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নিয়োগের ক্ষেত্রে আট সদস্যের একটি কমিটির মাধ্যমে বাছাই করার নির্দেশনা রয়েছে। এ প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে কমিটিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের প্রধান নিয়োগের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা ও প্রকিউরমেন্ট-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ থাকা দরকার। তা বিবেচনা না করেই প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টজনরা বলছেন, প্রোগ্রাম বা প্রকল্পের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে প্রকল্পের বা প্রোগ্রামের মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস পর্যন্ত চাকরির মেয়াদ থাকতে হয়। কিন্তু মিজানুর রহমানের চাকরি আছে মাত্র দুই বছর। তার ক্রয়সংক্রান্ত বিধানাবলি ও প্রকল্প-ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তেমন প্রশিক্ষণ নেই। প্রকল্প-প্রণয়ন ও প্রকল্প-বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতাও নেই। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রোগ্রামে প্রকল্প-বাস্তবায়নের সাত বছরের অভিজ্ঞতা থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা মিজানুর রহমানের নিয়োগের ক্ষেত্রে মানা হয়নি।
জানা যায়, প্রকল্পটির অন্যতম উদ্দেশ্য ৩ লাখ হেক্টর জমিতে উত্তম কৃষিচর্চা (গ্যাপ) প্রটোকল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ও বিদেশে রপ্তানি করা। নিয়োগকৃত কর্মকর্তার এ সম্পর্কে ধারণা ও অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম এক-দুই বছরে কাক্সিক্ষত ফল আসবে না। এতে ঋণচুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী বছরগুলোর বরাদ্দ পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। আবার দুই বছর পর তিনি অবসরে যাবেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সাতটি সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ প্রোগ্রাম বাস্তবায়িত হবে।
‘পার্টনার’-এর মাধ্যমে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ফল ও ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সবজির প্রটোকল প্রস্তুত করা হবে। ফল ও সবজি উৎপাদন এবং রপ্তানি এ প্রোগ্রামের আওতায় থাকবে। ফল ও সবজির আওতাধীন এলাকা ৩ লাখ হেক্টর। ২ লাখ হেক্টরে উচ্চফলনশীল ধানের জাত উন্নয়নের পরিকল্পনাও রয়েছে। এর আওতায় ১০ লাখ কৃষককে উত্তম কৃষিচর্চাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, বীজ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করা হবে, বিরূপ পরিবেশ সহনশীল ও উচ্চ ফলনশীল ৫টি ধানের জাত উদ্ভাবন করা হবে, অন্যান্য ফসলের ১৫টি জাত উদ্ভাবন করা হবে এবং উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ১ লাখ হেক্টর নতুন কৃষিজমি সেচের আওতায় আনা হবে।
‘পার্টনার’-এর মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলার ৪৯৫টি উপজেলায় ২ কোটি ২৭ লাখ কৃষককে সব ধরনের তথ্য সংবলিত স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে, ১০টি অ্যাক্রেডিটেড ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হবে, ধান ও অন্যান্য ফসলের আবাদ সম্প্রসারণে যথাযথ প্রযুক্তিগত ও দক্ষতাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং খাদ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপনের মাধ্যমে খাদ্যের মান নিশ্চিত করা হবে।।
যুক্তরাষ্ট্র সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে যে বৈঠক হয়েছে, সেখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দুই ঘণ্টা একান্ত বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণায় বিষয়টি জানানো হয়। বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমেরিকা এবং ভারতের ‘ডিএনএর’ মধ্যে গণতন্ত্র রয়েছে। তিনি ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যে জায়গায় অবস্থান করছে, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের বিষয়টি সে রকম নয়। এর মৌলিক কারণ হচ্ছে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই গণতান্ত্রিক। সংবাদ সম্মেলনে মোদির আমলে ভিন্নমতাবলম্বী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর দমন-পীড়নের বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো যেসব অভিযোগ তুলেছে, সেটি নিয়ে বাইডেনকে প্রশ্ন করা হয়। তবে তিনি সরাসরি সেই প্রশ্নের জবাব দেননি। আর মোদি তার দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি খারিজ করে দেন।
বিবিসি বলছে, যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মোদি এই প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তিনি তার নয় বছরের শাসনামলে কখনোই এ ধরনের সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেননি। সংবাদ সম্মেলনে একজন ভারতীয় এবং একজন আমেরিকান সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন। এই দুটো প্রশ্নই আগে থেকে নির্ধারিত ছিল। তিনি অনুবাদকের মাধ্যমে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। মোদি বলেন, ভারত গণতান্ত্রিক দেশ; কোনো ধারণামাত্র নয়। ভারতের ধমনিতে গণতন্ত্র রয়েছে। ভারত গণতন্ত্রে বাঁচে। সংবিধানেও তা প্রতিফলিত। সরকারও গণতন্ত্রকেই আঁকড়ে আছে। কোনো সরকারি নীতিতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নিয়ে কোনো বৈষম্য নেই।’
সিএনএন জানিয়েছে, যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা হয়েছে। কারণ এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন করার বিষয়ে ভারতের দিক থেকে তেমন একটা আগ্রহ ছিল না। যৌথ সংবাদ সম্মেলন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের অবস্থান এবং ব্যাপক আলোচনার পরে ভারতও শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছে। পরে বাইডেন-মোদির যৌথ বিবৃতিতে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনভিত্তিক নীতির মধ্য দিয়ে আরও শক্তিশালী, বৈচিত্র্যময় মার্কিন-ভারত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করা হয়। এ ছাড়া জাতিসংঘের রীতিনীতি, আন্তর্জাতিক আইন ও সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে বর্তমান যে বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, সেটাকে সম্মান জানানোর প্রতি জোর দিয়েছে দুই পক্ষই। তাদের কথা হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও। মিয়ানমার ও উত্তর কোরিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে জঙ্গি হামলার ক্ষেত্র হিসেবে যেন ব্যবহার না করা হয়, সে বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে।
অবনতি ঘটতে থাকা মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দুই নেতা। দেশটিতে নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দিয়ে গঠনমূলক আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে। আল-কায়েদা, আইসিস, লস্কর-এ-তাইয়েবার মতো জাতিসংঘের তালিকাভুক্ত জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের সামরিক ও প্রযুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক বাড়ানোর পাশাপাশি সামরিক জোট কোয়াডকে আরও কার্যকরী করে গড়ে তোলার ব্যাপারে একমত হয়েছে দুই পক্ষই।
প্রতিরক্ষাবিষয়ক দুই দেশের অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবারের বৈঠকে। সামরিক পর্যায়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা পরমাণুবিদ্যা সংযোজনের পাশাপাশি ভারতের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করতে আমেরিকার সহযোগিতার বিষয়টিও উঠে এসেছে।
মোদির এই সফর যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দুটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একটি ব্যবসা-বাণিজ্যের বাজার বৃদ্ধি, অন্যটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে ভারতকে এমনভাবে সাহায্য করা, যাতে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের মোকাবিলা সহজতর হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদির দিক থেকে আগ্রহ ছিল অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষায় ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত করা ও দেশের রাজনীতিতে নিজের অধিষ্ঠান প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়া। আর শেষ পর্যন্ত সেটিই হয়েছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা মুখে বলা হলেও দুই দেশের স্বার্থের বিষয়টিই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই সফরে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ গবেষণা, সেমিকন্ডাক্টর এবং খনিজ সম্পদ নিয়ে বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছে।
নাজমুল হাসান পাপনের আসল পরিচয় কী?
সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানের ছেলে। তবে ক্রিকেট বোর্ডের অধীশ্বর পরিচয়ই বেশি পরিচিত হতে পছন্দ করেন। ২০১২ সাল থেকে তিন মেয়াদে বিসিবির সভাপতি তিনি। ক্রিকেটে সবকিছু সঁপে দিয়ে কখনো কখনো ভুলে যান, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্যের পরিচয়টা। বাইশ গজ কখনো কখনো ভুলিয়ে দেয় দেশের বৃহত্তম ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের গুরু দায়িত্বটাও। একই সঙ্গে পাপন বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতিরও সভাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ অ্যালামনাই ক্লাবেরও প্রধান। ক্রিকেটে এতটাই মজে থাকেন যে, অন্য পরিচয়গুলো গুরুত্বের তালিকায় চলে যায় নিচের সারিতে। তবে অন্য পরিচয়গুলোর ভার অনেক। সেই দায়িত্ববোধ থেকে কদিন আগেই কি না ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর কথা বলেছেন। এসব পরিচয় ছাপিয়ে পাপন আরেকটা পরিচয়ে স্থান পেয়েছেন অসংখ্য মানুষের প্রার্থনায়। সেই পরিচয়ে পাপন শুধু ক্রিকেটের নন; ক্রিকেটের গণ্ডি ছাড়িয়ে তিনি গোটা ক্রীড়াঙ্গনের। অনেক দিন ধরে বনস্পতির ছায়া দিয়ে যাচ্ছেন গোটা ক্রীড়াঙ্গনকে।
ক্রিকেট বোর্ড ছাড়ার কথা প্রায়ই বলেন পাপন। যখনই বিষয়টা নিয়ে কথা বলেন, তখনই মোহাম্মদ মহসিনের আকাশে জমে কালো মেঘ। এই মহসিন বিসিবি সভাপতির একান্ত উদ্যোগে চিকিৎসাধীন দেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলকিপার মহসিন নন। এই মহসিন বাংলাদেশ হুইলচেয়ার ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মহসিন। ফোনের ওপাশ থেকে তার কণ্ঠটা হাহাকারের হয়ে বাজল, ‘পাপন স্যার আমাদের বড় আশ্রয়। যখন শুনলাম উনি ক্রিকেটে থাকতে চান না, মনটা শঙ্কায় ভরে ওঠে। সবসময় চিন্তা করি, পাপন স্যার যখন আছেন, খেলা ছাড়লেও এই পঙ্গুজীবনটা নিয়ে ভাবতে হবে না। তিনি নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা করে দেবেন। উনি চলে গেলে আমরা কোথায় যাব?’
কদিন আগে এক জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া সাংবাদিক পাপনের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘পাপন ভাই হচ্ছেন ক্রীড়াঙ্গনের একটা ক্যারেক্টার। তিনি যেখানেই থাকবেন, যে অবস্থাতেই থাকবেন; সংবাদকর্মীদের জন্য সংবাদের খোড়াক জুগিয়ে যাবেন। সেটা নেতিবাচক হোক, কিংবা ইতিবাচক।’ কথাটা নির্জলা সত্য। তাই তো মিডিয়া বলেন কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া পাপন ভীষণ পপুলার একটি ক্যারেক্টার। আধুনিক দুনিয়ায় টিকটক, রিল, ট্রল, ভাইরাল শব্দগুলো ব্যাপক প্রচলিত। মোক্ষম একটা ঘটনা (মান যেমনই হোক) ভিডিও করে অন্তর্জালে ছেড়ে দিন। দেখবেন মুহূর্তেই হাজারো মানুষ হামলে পড়বে তাতে। আর বিষয়বস্তু পাপন হলে তো কথাই নেই। তাকে নিয়ে কিছু ছাড়লেই হিট। লাখ লাখ শেয়ার, ক্লিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পকেটস্থ হবে মার্কিন মুদ্রা। তবে মিডিয়া-সোশ্যাল মিডিয়ার কটাক্ষ সন্তর্পণেই এড়িয়ে যান পাপন। দেশের ফুটবলের দ-মু-ের কর্তার (নামটা নিশ্চয়ই সবার জানা) মতো প্রতিক্রিয়া দেখান না কিংবা আইনি পদক্ষেপও নেন না। কারণ পাপন থাকতে চান একেবারে নিজের মতো। ক্রিকেটটাকে সাজাতে চান নিজস্ব ছকে। সেটাই হয়তো অনেকের সয় না। পাপনের সিদ্ধান্ত কখনো ভুল হলেই রক্ষে নেই। মিডিয়া-সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে শুরু হয় নানা রসিকতা।
তাই বলে মিডিয়াকে কখনোই পাপন শত্রু ভাবেননি। তাই তো কদিন আগে ক্রিকেটের উত্তরণের বড় একটা কৃতিত্ব দিয়েছেন মিডিয়াকে উদাত্তভাবে। কোনো সংবাদকর্মী অসুস্থ হলে চুপিসারে পাপন বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত। বিসিবির সহযোগিতায় মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসা মিডিয়াকর্মীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। শুধু তাই নয়, পরিচয় না জানিয়ে বিসিবি করোনাকালে অনেক সাংবাদিককে দিয়েছে অর্থ সহায়তা।
পাপনের পুরো ক্রীড়াঙ্গনের বনে যাওয়ার ক্ষেত্রে মিডিয়ার অবদানও কম নয়। যেমনটা হয়েছে কিংবদন্তি গোলকিপার মহসিনের ক্ষেত্রে। মিডিয়ায় যখন চাউর হলো ভালো নেই সোনালি সময়ের তেকাঠির বিশ্বস্ত প্রহরী, যেচে পড়ে নিজেই উদ্যোগী হয়ে উঠলেন পাপন। নিলেন মহসিনের আর্থিক ও আইনি সমস্যা নিরসনের দায়িত্ব। ধরে-বেঁধে মহসিনকে সুস্থ করে তুলতে ভর্তি করালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। সেখানে পুরোদমে চিকিৎসা চলছে মহসিনের। জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া এই ফুটবল নায়কের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন পাপন। শুধু মহসিন নন, ফুটবলের অনেক অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন পাপন। এমনকি বাদ যায়নি প্রয়াত ফুটবল রেফারির পরিবারও।
২০১২ সালে ধনী ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ক্রিকেটের পাশাপাশি নিজের দরজাটা খোলা রেখেছেন গোটা ক্রীড়াঙ্গনের জন্য। তবে এই কাজটা তিনি করতে চান পর্দার আড়ালে থেকে। তারপরও সব তো আর চাপা রাখা যায় না। এই যেমন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন, বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশন, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনকে দিয়েছেন বড় অঙ্কের অনুদান। নারী ফুটবলারদের সাফ জয় করতে দেখে তৎক্ষণাৎ দিয়েছেন আকর্ষণীয় অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা। এ ক্ষেত্রে পাপনের দর্শনটা পরিষ্কার। শুধু নিজে ভালো থাকলেই চলবে না। আশপাশের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে হবে। এই মন্ত্রটা হৃদয়ে গেঁথে তিনি দাঁড়ান হাজারো দুস্থ ও সমস্যাগ্রস্ত মানুষের পাশে। করোনা অতিমারীর সময় শুধু অন্য খেলার দুস্থ খেলোয়াড়, সংগঠকদের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর হাত দিয়ে এ প্রস্থে দিয়েছেন ৫০ লাখ টাকার অর্থ সহায়তা। নিজ উদ্যোগে জেলায় জেলায় পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্যসামগ্রী, যাতে ভীতিকর সময়টাতে মিলেছে খানিকটা স্বস্তি। বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগী ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের মহাসচিব, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপমহাসচিব, বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকুর কাছে পাপন এখন গোটা ক্রীড়াঙ্গনের একজন অভিভাবক, ‘আমাদের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন। তিনি আমাদের অভিভাবক। তবে তার পাশাপাশি পাপন সাহেব নিজেকে ক্রীড়াঙ্গনের আরেকটি নির্ভরতার জায়গায় নিয়ে গেছেন। ক্রিকেটের বাইরের খেলাগুলো এগিয়ে নিতে ওনার সহমর্মিতা অনুকরণীয়। বাংলাদেশের অনেকগুলো ক্রীড়া ফেডারেশন আছে। এর মধ্যে অনেক খেলাই সারা বছর চালানো যায় না আর্থিক সংকটের কারণে। পাপন সাহেব সে সব সংকট নিরসনে সবসময় উদ্যোগী হন।’
গোটা ক্রীড়াঙ্গনকে নিয়ে পাপনের দুর্বলতার বিষয়টি জানেন ও মানেন তার সহযাত্রীরাও। তাই যখনই যেকোনো সহায়তার আবেদনে সাড়া দেওয়ার প্রশ্নে পাপন বোর্ডের ভেতর থেকেও পান ইতিবাচক সমর্থন। বোর্ড পরিচালক জালাল ইউনুস জানালেন, ‘ক্রিকেটকে পাপন অনেক ভালোবাসেন। সেই ভালোবাসাটা এখন সম্প্রসারিত হয়েছে গোটা ক্রীড়াঙ্গনে। অন্যদের ভালো রাখার চেষ্টা নিয়ে বোর্ডে অনেক আলোচনা হয়েছে। লিখিত সিদ্ধান্ত হয়তো হয়নি, তবে মৌখিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমরা কাউকে ফেরাব না। পাপনের নেতৃত্বে আমরা চাই অন্য খেলা ও খেলার মানুষদের ভালো রাখতে।’ পাপনের কাছে ছোট খেলার গুরুত্বও অনেক বড়। বাংলাদেশ সার্ফিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী যেমন জানালেন, বিসিবি সভাপতির কাছে যখনই কোনো সহায়তার জন্য গিয়েছি, নিরাশ করেননি। আমরা পঞ্চম জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করেছি বিসিবির পৃষ্ঠপোষকতায়। আগামী মাসে মালদ্বীপে একটি আন্তর্জাতিক আসরে অংশ নিতে বিসিবির ইতিবাচক সহায়তার আশ্বাস পেয়েছি। পাপন ভাই যেভাবে আমাদের ছোট খেলাগুলোকে আগলে রাখছেন, বিশ্বাস করি, তাতে এ দেশের ক্রীড়াঙ্গন একদিন ঘুড়ে দাঁড়াবে। সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বদরুল সাইফ একই সঙ্গে ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। এই সংগঠক বলেন, ‘পাপন ভাই শুধু সাঁতারকে পৃষ্ঠপোষকতা দেননি। ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাকেও ১০ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। আসলে টাকা থাকলেই হয় না, মানুষকে সহযোগিতা করার মনটাও থাকতে হয়। সেটা আমাদের পাপন ভাইয়ের আছে।’
খুব বেশি দিন হয়নি পাপনের ক্রীড়াঙ্গনে সক্রিয় পদচারণা। তবে অল্প সময়ে বড্ড আপন হয়ে উঠেছেন। বনস্পতির ছায়া দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। যেখানে কোনো বিতর্ক-সমালোচনাই তাকে স্পর্শ করে না।
এক বছর আগেই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালুর উদ্যোগ নিতে পারত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) প্রশাসন। তখনই হাসপাতালের নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছিল। শর্ত ছিল এ বছরের জুনের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে এবং পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল চালুর জন্য প্রশাসনকে হাসপাতাল হস্তান্তর করা হবে। এর আগেই চালুর সম্পূর্ণ প্রস্তুতি শেষ করে আনবে প্রশাসন ও একসঙ্গে ৭৫০ শয্যার হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু হবে।
কিন্তু এ দীর্ঘ সময়ে বিএসএমএমইউ প্রশাসন হাসপাতাল চালুর উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো তড়িঘড়ি করে গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়ে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করায়। শর্ত ভেঙে বিএসএমএমইউ চিকিৎসক দিয়ে নামমাত্র বহির্বিভাগ চালু করে দেয় ও বৈকালিক সেবা শুরু করে। এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ কয়েক দফা চালুর তারিখ ঘোষণা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চালু করতে ব্যর্থ হয়।
সময়মতো হাসপাতাল চালুর উদ্যোগ নিতে না পারায় এবং প্রকল্পের শর্ত ভেঙে অবকাঠামো নির্মাণ ও পরিচালনা নীতি ভঙ্গ করায় ইতিমধ্যেই অনানুষ্ঠানিকভাবে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে হাসপাতাল নির্মাণের ঋণদাতা কোরিয়া সরকারের প্রতিনিধিরা। তারা একসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে চালুর জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছে।
এমন অবস্থায় সরকার বাধ্য হয়ে আগামী ১ জুলাই পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল চালু করতে বিএসএমএমইউ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে। গত ৩ মে প্রধানমন্ত্রীর সচিবের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। নিরুপায় বিএসএমএমইউ এখন চাইছে তারও আগে অর্থাৎ ২৫ জুন হাসপাতাল চালু করতে। সে ক্ষেত্রে অপ্রস্তুত রেখেই ধাপে ধাপে চালুর পরিকল্পনা করেছে তারা। কারণ এখনো হাসপাতাল পরিচালনার জন্য চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ মোট জনবলের সামান্যই নিয়োগ হয়েছে।
এভাবে এরকম একটি বড় বিশেষায়িত হাসপাতাল চালুর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন প্রকল্পের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, এই মুহূর্তে চিকিৎসা দিতে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ প্রস্তুত হয়েছে হাসপাতালটি। তবে সেটুকুও মানসম্মত নয়।
এ ব্যাপারে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাসপাতাল চালু তো হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক সময়মতো অস্ত্রোপচার কক্ষের (ওটি) যন্ত্রপাতি আনতে না পারায় বিলম্ব হয়েছে। এখন আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসব যন্ত্রপাতি জোগাড় করে ২৫ জুন চালু করব। সেদিন থেকেই রোগী ভর্তি হবে, ইনডোরও চালু হবে।’
অবশ্য এভাবে হাসপাতাল চালুর ক্ষেত্রে সন্তুষ্ট নন প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. জুলফিকার আলী খান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেভাবে একটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল, সেটা হচ্ছে না। এটা বিএসএমএমইউর মতো একটা গতানুগতিক হাসপাতাল হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও কোরিয়ান কর্র্তৃপক্ষ বারবার তাগাদা দিয়েছে প্রকল্প পরিকল্পনা থেকে না সরার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটা মানেনি। ফলে হাসপাতাল চালুর জন্য প্রস্তুতিটা ঠিক হয়নি।’
এ কর্মকর্তা আরও জানান, ইতিমধ্যে অবশিষ্ট ১১টি চিকিৎসা যন্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। সেটা শিগগির হাসপাতালে চলে আসবে ও স্থাপন করা হবে।
এখন চেয়েচিন্তে চালুর চিন্তা : নানামুখী চাপের মুখে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ কোনোরকম হাসপাতাল চালুর পরিকল্পনা নিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ৭৫০ বেড পর্যায়ক্রমে চালু হবে। ধীরে ধীরে রোগী বাড়বে, বেডও বাড়বে। পর্যায়ক্রমে সব বেড চালু হয়ে যাবে।
জনবল নিয়োগ প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ‘১৮৪ জন জনবল নিয়োগ হয়েছে। কিন্তু লাগবে ১ হাজার ৮০২ জন। বাকিদের পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দেওয়া হবে। আপাতত ৬০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। পরে সব নেব। এর আগে ৩৩ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
সে ক্ষেত্রে এখন বিএসএমএমইউর চিকিৎসকরাই পালাক্রমে এ হাসপাতালেও চিকিৎসাসেবা দেবেন বলে জানান উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘বিএসএমএমইউতে অনেক ডাক্তার আছে, তাদের দিয়েই হবে। কারণ বিএসএমএমইউর চেয়ে এত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আর কোনো ইনস্টিটিউটে নেই এবং এসব চিকিৎসক মাল্টি ডিসিপ্লিনারি। এখানে সব ধরনের চিকিৎসা হয়।’ ইতিমধ্যেই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ডায়াগনসিস, ডায়ালাইসিস শুরু হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
হাসপাতাল পরিচালনার অর্থ সংকুলানের ব্যাপারে ডা. শারফুদ্দিন বলেন, ‘সরকারের কাছে টাকা চেয়েছি। সরকার আমাকে দেবে বলেছে। যদি না দেয়, তখন মানুষের থেকে নিয়ে চালাতে হবে। আমার মনে হয় বঙ্গবন্ধুর নামে বিশ্ববিদ্যালয় তো, তাই সরকার আমাকে দেবে।’
এখনো ৯০% নিয়োগ বাকি : প্রকল্পে হাসপাতাল পরিচালনা জন্য ৫১ পদে ১ হাজার ৭৩৩ জনবলের একটি তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮৯ চিকিৎসক, ৬২৫ নার্স ও ৩৫ জন কর্মকর্তা রাখা হয়েছে। বাকিরা অন্যান্য বিভাগের লোকবল। এর মধ্যে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১৮৪ জন, যা মোট লোকবলের মাত্র ১১ শতাংশ। অর্থাৎ এখনো নিয়োগ বাকি ৮৯ শতাংশ। সব ধরনের চিকিৎসক থাকার কথা ২৮৯, কিন্তু এখন পর্যন্ত নিয়োগ পেয়েছেন ৩৩ জন মেডিকেল অফিসার, যা মোট চিকিৎসকের মাত্র ১২ শতাংশ। অর্থাৎ ৮৮ শতাংশ চিকিৎসক নিয়োগ এখনো বাকি। এ ছাড়া ৩৫ জন কর্মকর্তার মধ্যে নিয়োগ পেয়েছেন মাত্র দুজন একজন পরিচালক ও একজন অতিরিক্ত পরিচালক।
অবশ্য উপাচার্য জানিয়েছেন, হাসপাতালের জন্য এখন পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১৮৪ জন, যা মোট লোকবলের মাত্র ১০ শতাংশ।
উপাচার্য কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানান, এখনো প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ হয়নি। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের বৈকালিক চেম্বারে আসা রোগীদের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিএসএমএমইউতে করতে হচ্ছে। বৈকালিক সেবা দেওয়া চিকিৎসকরা ৯ মাস ধরে ফি পাচ্ছেন না। এখন তারাও রোগী দেখতে চাইছেন না। এমনকি রোগী ভর্তি, চিকিৎসা, ডায়াগনসিসসহ কোনো ধরনের ফি নির্ধারণ করা হয়নি।
ধাপে ধাপে শুরু, ক্ষতির আশঙ্কা : ধাপে ধাপে হাসপাতাল চালুতে চিকিৎসা সেবায় সংকট ও হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে মনে করছেন হাসপাতাল ও প্রকল্পের কর্মকর্তারা। তারা জানান, চালুর আগেই উদ্বোধন করায় ইতিমধ্যেই ২ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বাকি পড়েছে। বিপুল অঙ্কের গ্যাস ও স্যুয়ারেজ বিলও জমেছে। হাসপাতাল ইনফরমেশন সিস্টেম এখনো ঠিক হয়নি। এক বছর আগেই ৭৫০ বেড, প্রত্যেক ফ্লোরে চেয়ার-টেবিল, কম্পিউটার, এসিসহ সব ধরনের আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও এসি সংযোগ ও ল্যাবরেটরি সার্ভিস স্থাপন করা হয়েছে। মোট ১০টি অস্ত্রোপচার কক্ষের মধ্যে এখন চারটি চালু হবে। প্রকল্পে এ ধরনের কম্প্রেহেনসিভ কো-অর্ডিনেটেড হাসপাতাল ধাপে ধাপে নয়, একবারে চালু করতে বলা হয়েছে। কারণ এখন যত শয্যাই চালু করুক, সব সার্ভিস দিতে হবে।
ক্ষুব্ধ কোরিয়া, আরেকটি হাসপাতাল অনিশ্চিত : প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা জানান, গত ৭ জুন কোরিয়ান কর্র্তৃপক্ষ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসে। সবকিছু দেখে ও শুনে তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, যদি এ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে সময়মতো চালু করতে না পারে ও পরিচালনায় ব্যর্থ হয়, তাহলে দ্বিতীয় প্রকল্পের জন্য যে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল, সেটা তারা দেবে না। দ্বিতীয় প্রকল্পে বেতার ভবনের জায়গায় অনুরূপ আরেকটি হাসপাতাল করার কথা আছে কোরিয়ার। সেটার নকশা হয়ে গেছে, ঋণ অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু এখনো ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি।
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, কোরিয়ান সরকার নাইজেরিয়াতে ৫০০ শয্যার একটা হাসপাতাল করেছিল। কিন্তু নাইজেরিয়া সরকার সেটা চালাতে পারেনি। পরে তারা সেখানে আর কোনো প্রকল্প করেনি। বাংলাদেশের অবস্থাও সেরকম হচ্ছে। এ ছাড়া প্রকল্পের বাইরে বহির্বিভাগ চালু ও নার্সিং রুম ভেঙে অতিরিক্ত পরিচালকের কক্ষ করায় কোরিয়ার কর্মকর্তারা খুব অসন্তুষ্ট হয়েছে বলেও জানান প্রকল্প কর্মকর্তারা।
চালুতে গাফিলতি, পরিচালনায় প্রকল্পের কেউ নেই : হাসপাতালের প্রকল্প কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা জানান, বিএসএমএমইউর চিকিৎসক দিয়ে এই হাসপাতাল চালানো যাবে না। এটার জন্য পৃথক চিকিৎসকসহ লোকবল লাগবে। সবকিছু থাকার পরও উপাচার্য ও তার প্রশাসনের অদক্ষতা-স্বেচ্ছাচারিতার কারণে হাসপাতাল চালু করা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ হাসপাতাল নির্মাণ, যন্ত্রপাতি আনা ও স্থাপন, অপারেশন প্ল্যান ও স্টাডি সব আমরাই করেছি। কিন্তু হাসপাতাল পরিচালনা ব্যবস্থাপনার কোথাও প্রকল্পের কাউকে রাখা হয়নি। অথচ প্রকল্পের অপারেশন প্ল্যানে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিটকে হাসপাতাল পরিচালনা ইউনিটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রাখতে বলা হয়েছে। সেটা না করায় কোরিয়া সরকারের প্রতিনিধিরা অসন্তুষ্ট।
প্রকল্পে যেসব সুবিধার কথা বলা আছে : সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ৯টি ফ্লোর ও ৩টি বেজমেন্ট আছে। থাকছে প্রযুক্তিভিত্তিক মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি অ্যান্ড সুপার স্পেশালাইজড হেলথ কেয়ার সার্ভিস। মোট শয্যার মধ্যে ১০০টি আইসিইউ ও ১০০টি ইমার্জেন্সি শয্যা। প্রায় ২৫০টি গাড়ি রাখার মতো পার্কিং সুবিধা আছে। অত্যাধুনিক চিকিৎসাসেবা দিতে এ হাসপাতালকে ৫টি স্পেশালাইজড সেন্টারে ভাগ করা হয়েছে। এখানে আছে দুর্ঘটনা ও জরুরি চিকিৎসাকেন্দ্র, হৃদরোগ ও স্নায়ুরোগ সেবাকেন্দ্র, হেপাটোবিলিয়ারি ও যকৃৎ প্রতিস্থাপন কেন্দ্র, কিডনি রোগ কেন্দ্র এবং মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং আধুনিক অপারেশন থিয়েটারসমৃদ্ধ এ হাসপাতালে যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল বা চিকিৎসকের রেফার করা গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে।
হাসপাতাল নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৭ কোটি টাকা কোরিয়া সরকারের ঋণ, ৩৩৮ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা এবং বাকি ১৭৫ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়ন। কোরিয়ার ঋণ শোধ দিতে হবে ১৫ বছর পর থেকে ও ৪০ বছরের মধ্যে। সুদ নামমাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ১ টাকা।
ভারতের বিপক্ষেই খেলেছিলেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। এবার বিশ্বকাপটাই ভারতে, যে ধর্মশালা দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ অভিযান, সেখানেই আছে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির কৃতিত্ব। হিমালয়ের কোলে, ছবির মতো সুন্দর সেই মাঠে আবারও খেলবে বাংলাদেশ, কিন্তু খেলবেন না তামিম ইকবাল।
অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বরাবরের মতো সংবাদ সম্মেলনে নিরাবেগ কণ্ঠে একের পর এক নাম পড়ে শোনাননি প্রধান নির্বাচক, গভীর রাতে কোনো ইমেইলেও আসেনি খেলোয়াড় তালিকা। বিশ্বকাপগামী ১৫ ক্রিকেটারের প্রত্যেকের হাতে হাতে সুন্দর করে বাক্সবন্দি বিশ্বকাপ জার্সি তুলে দেওয়ার ভিডিও নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচিতদের পরিচিত করেছে বিসিবি। এজন্য বিসিবির সংশ্লিষ্টরা বাহবা পেতেই পারেন, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যেমনটা হৃদয় জিতে নিয়েছে ক্রিকেটারদের পরিবারের আপনজনদের দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করিয়ে।
কারা থাকছেন আর কারা থাকছেন না, তা নিয়ে খুব বড় কোনো চমক ছিল না বিশ্বকাপ দলে। সবাই শুধু একটাই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন। তামিম ইকবাল শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে আছেন নাকি নেই। অবসর, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে প্রত্যাবর্তন, ব্যক্তিগত কাজে দুবাই ভ্রমণ, ইংল্যান্ডে ইনজেকশন, দেশে অনুশীলন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসে ব্যাট করে ৪৪ রান এবং পরে নিজেকে আবারও পুরোপুরি ফিট নয় বলে পরের ম্যাচে বিশ্রাম। স্বভাবতই এই তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপে দেখতে চাইবেন না কোনো কোচ এবং অধিনায়ক। সোমবার গভীর রাতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় সাকিবের ছুটে যাওয়া এবং সিডনি থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে বোর্ড সভাপতির বাসায় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পা রাখাই প্রমাণ করে, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের এ তৎপরতা।
তামিমের মতো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সহজ নয়। নিঃসন্দেহে দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, ওয়ানডেতে ১৪টা সেঞ্চুরি। হুট করে অবসর নিলে যাকে ফিরিয়ে আনেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারেও তামিম বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগের কথাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেশাদারির কাছে হার মেনেছে আবেগ, যুক্তির কাছে হেরে গেছে অতীত। তামিম নামটা আছে বিশ্বকাপ দলে, তবে পদবিটা ইকবাল নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, যার বয়স আর তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় কাছাকাছি।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল অতিমানবীয়। ৬০৬ রান আর ১১ উইকেট। তবু দল হলো অষ্টম। গোটা আসর চোটজর্জর অধিনায়ককে বইল দল। প্রতিটি সকাল শুরু হতো এক অনিশ্চয়তা নিয়ে, খেলতে পারবেন তো মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা? শুরুর দিকে নতুন বলে কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ গড়েছে রানের পাহাড়। সেই অভিজ্ঞতা কী করে ভুলবেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ান জেমি সিডন্স আর অধিনায়ক সাকিব এজন্যই ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দলে রাখেননি চোটগ্রস্ত মাশরাফীকে। হাথুরুসিংহে জাতীয়তায় শ্রীলঙ্কান হলেও অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে থাকতে হয়ে গেছেন তাদের মতোই পেশাদার। তাই তো কঠিন সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।
কাল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এবং দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও আবদুর রাজ্জাক। তামিমকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে মিনহাজুল শুনিয়েছেন মুখস্থ কথাই, ‘আপনারা তো এবারের বিশ্বকাপের দলটা এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন। তামিম ইকবালের তো অনেক দিন ধরেই ইনজুরি নিয়ে চিন্তা আছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর... সবকিছু বিবেচনা করেই, সবাই আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশ্বকাপে অনেক দিনের ব্যাপার। অনেক ম্যাচ আছে।’
তামিমের চোটটা তো নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এ চোট নিয়ে তিনি ভুগছেন, নিজের ইচ্ছামতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এসব থেকে নিজেকে সরিয়েও রেখেছিলেন। চিকিৎসাও করিয়ে আনা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে কেন তাকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ দেওয়া এবং ম্যাচ খেলিয়ে বাদ দেওয়া এ প্রসঙ্গে মিনহাজুলের উত্তর, ‘দেখুন, কিছু কিছু ইনজুরি আছে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বেকায়দায় পড়বে। আপনি দেখুন, নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে... প্রথম ম্যাচ খেলেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটা খেলেছে... এরপর কিন্তু শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দিতে হয়েছে।’
‘তামিম অন্যতম সেরা। কিন্তু চোটের দুশ্চিন্তা থাকলে নিজেকে মেলে ধরা কঠিন। মেডিকেলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। এটা আগেই বলেছি, এখন দল ঘোষণা করা হয়েছে’বলছিলেন প্রধান নির্বাচক। বিসিবি সভাপতি বা সাকিব ও কোচের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে সেটা তো এখানে প্রকাশ করব না।’
১০ দলের বিশ্বকাপে দশম দল হিসেবে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। কেন এত দেরি, ফ্লাইটে ওঠার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে বিশ্বকাপের দল দেওয়া হলো কেন এ নিয়ে হাবিবুল বাশারের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে সেটা তো আমাদের সঙ্গের ব্যাপার। দল নির্বাচন করতে যখন বসি... খেলোয়াড় হিসেবে তামিমের... আমরা সুস্থ-সবল তামিমকে পেতে... এটা নিয়ে আমাদের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ভাবতে হয়েছে। তাই দেরি হয়েছে।’
তামিমের বাদ পড়ার ডামাডোলে হারিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর ফেরাটাও। সেই ইংল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্রামের মোড়কে বাদ পড়েছিলেন। তার বদলে অনেক বিকল্প খুঁজেও শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে আবার তার কাছেই ফিরলেন নির্বাচকরা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৪৯ আর ২১ রানের দুটো ইনিংসেই হয়ে গেছে বিশ্বকাপের টিকিট। প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘আগেই বলেছি, বিশ্বকাপের আগে যেকোনো খেলোয়াড়কে যেকোনো সিরিজে দেখব। ও পরিকল্পনাতেই ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে দেখেছি।’
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে, মাত্র দুই ম্যাচ দেখে সৌম্য সরকারকে দলে নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তানজিদ তামিম আর তানজিম সাকিব নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন। যথাক্রমে মাত্র পাঁচ আর দুই ম্যাচ খেলে তারা বিশ্বকাপ যাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। এমন নয় যে, এ স্বল্প সময়ে দারুণ কিছু করে দেখিয়েছেন, প্রধান কারণ বিকল্পের অভাব।
শুধু তামিম ইকবালই নয়, দলের লজিস্টিক ম্যানেজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বড় ভাই ও সাবেক খেলোয়াড় নাফিস ইকবালকেও। তামিমের অবসর-কা-ে তিনি বিসিবি সভাপতির মেসেজের জবাব দেননি, যা পাপন নিজে বলেছেন গণমাধ্যমে। হয়তো তারই প্রতিশোধ, সেই সঙ্গে ড্রেসিংরুমের সঙ্গে তামিমের সব সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।
অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন তামিম, দুটি ম্যাচ খেললেন। কিন্তু যেভাবে বাদ পড়লেন, তাতে মনে হতে পারে অবসরের সিদ্ধান্তটাই ছিল সঠিক। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামীতেও তামিমের দলে ফেরাটা বোধহয় অনিশ্চিতই হয়ে গেল।
তামিম প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে দলটা কেমন হয়েছে দেখা যাক। পাঁচ পেসার, দুই অফ স্পিনার, দুই বাঁহাতি স্পিনার মিলিয়ে বোলিং আক্রমণটা নেহায়েত খারাপ নয়। লিটন দাসের সঙ্গে তানজিদ তামিম অথবা মেকশিফট ওপেনার মিরাজ। সহঅধিনায়কের পদ থেকে বাদ পড়েছেন লিটন, সেটা করা হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। সাকিব, মুশফিক, তাওহীদ হৃদয়দের নিয়ে মিডল অর্ডারের পর ফিনিশার রোলে মাহমুদউল্লাহ। এ নিয়েই ধর্মশালায় আফগানদের বিপক্ষে লড়াইয়ের শুরু। প্রত্যাশা অনেক বড়, প্রস্তুতি গোলমেলে। ভরসা একটাই, শুরুর আগে পরিস্থিতি এমন গোলমেলে হলেই কেন যেন ভালো করে বাংলাদেশ!
বিশ্বকাপ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (সহঅধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান, তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের কারণে চলমান রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নতুন করে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দুই দলের এ পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের মূল টার্গেট ঢাকা দখলে নেওয়া। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসা নিতে বিদেশ পাঠাতে রবিবার বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। পাল্টা জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একই পথে হেঁটেছে। বিএনপিকে ‘আগুন সন্ত্রাস, অপরাজনীতি ও নাশকতার রাজনীতি’ ছাড়ার জন্য সোমবার ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরপর পাল্টা ৩৬ ঘণ্টার হুঁশিয়ারি এসেছে বিএনপির কাছ থেকে।
তার আগে গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবেদন করলে অনুমতির বিষয়টি দেখা যাবে। তবে তার কাছে এরকম কোনো কাগজপত্র আসেনি। ওইদিনই খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার বলেছেন, সরকারের মনোভাব ইতিবাচক হলে তারা আবারও আবেদন করবেন।
পরদিন রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলটিমেটাম দেন। ওইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে বিএনপি বলছে, সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে।
দুই দলের রাজনীতি ও ঘোষিত আলটিমেটাম মাঠের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না, সে সম্পর্কে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিএনপির আলটিমেটামের ফল কী হবে আর আওয়ামী লীগেরও দীর্ঘ ৩৬ দিনের আলটিমেটাম কেন এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতর বেশ কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজধানী ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি আলটিমেটাম। ঢাকায় বিএনপির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার কৌশলের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে দলটি আলটিমেটাম দিয়েছে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই তার পাল্টা জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দুই দলের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা। ঢাকার রাজনীতি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে না পারলে রাজনীতিতে জুতসই অবস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি।
সারা দেশের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেয়ে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নির্ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপির ওই শীর্ষসারির নেতারা। তাই বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ইস্যু করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। পর্যাপ্ত নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকে গেলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তাই ইস্যু খালেদার চিকিৎসা, কিন্তু লক্ষ্য ঢাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৩৬ দিনের আলটিমেটামের পেছনে রয়েছে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ঢাকায় নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে ততই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের শান্তি যেন বিঘিœত না হয়, সেজন্যই আমরা বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে থাকি। বিএনপিকে জনগণ বিশ্বাস করে না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে সত্যিই নিতে চাইলে আলটিমেটাম কেন দেবে বিএনপি? আইনি জটিলতা নিরসন করে বিদেশ নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস-সহিংসতানির্ভর রাজনীতি করে, বিশ্বাস করে। তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা।’ তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে কেন বিএনপি আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না? তার কিছু হলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দায় নিতে হবে।’
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুই দলের ঘোষিত আলটিমেটামকে কথার বাকযুদ্ধ হিসেবে নিয়েছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এগুলো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অবস্থান ধরে নেওয়া যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের কোনো গা নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে আইনগতভাবে যেতে হবে। নির্বাহী কোনো সিদ্ধান্তে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ফলে আলটিমেটাম মূলত নিষ্ফল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দাবি আদায় করার জন্য জনগণ থেকে দাবি উঠতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণকে রাস্তায় নামাতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন যেসব বক্তব্য এগুলো মঞ্চের বাকযুদ্ধ।’
বিএনপির আলটিমেটাম নিয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি (গতকাল মঙ্গলবার) সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষ করে এসেছি।’ আলটিমেটামের পেছনে ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তো আমরা সভা-সমাবেশ করছিই।’
জানতে চাইলে বিএনপির আরেক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আলটিমেটাম সম্পর্কে ক্লিয়ার কিছু জানি না।’
বিএনপিকে ‘অপরাজনীতি’ ছাড়তে ৩৬ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে ‘সঠিক পথে’ না এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির ‘অপরাজনীতির কালো হাত’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে আলটিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটি বিএনপির জন্য শেষ বার্তা।’ গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় এবং যাত্রাবাড়ীতে পৃথক সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। উত্তরার সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ আলটিমেটাম দেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি দুই সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে এখন রাজপথে আছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় গত সোমবার দুটি সমাবেশ হয়।
এর আগে থেকেই ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির সভা-সমাবেশের বিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করলেও মাঠের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
নাজিবা হুসাইনি মারা যান ২০১৭ সালে জুলাই তালেবানের আত্মঘাতী বোমা হামলায়। ক’দিন পরেই তার বিয়ে হওয়ার কথা। বাগদত্তা হোসাইন রেজাই ভাবছিলেন নাজিবার স্মৃতির প্রতি কীভাবে সম্মান জানানো যায়। তিনি একটি গ্রন্থাগার করলেন দাইকুন্ডির প্রদেশের নিলি শহরে, যে-শহরে ২৮ বছর বয়সী নাজিবার জন্ম ও শৈশব কেটেছে। ‘নাজিবা হুসাইনি মেমোরিয়াল লাইব্রেরি’ দিনে দিনে ১২ হাজারেরও বেশি ভলিউমের সংগ্রহশালা এবং একটি কম্পিউটার ল্যাবে পরিণত হয়। সেখানে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়। আফগানিস্তানের প্রতিটি প্রদেশে আরও গ্রন্থাগার তৈরির পরিকল্পনা ছিল রেজাইয়ের। কিন্তু তালেবান দেশের ওপর পুনরায় দখল সুসংহত করার পর ‘নাজিবা হুসাইনি মেমোরিয়াল লাইব্রেরি’তে আক্রমণ হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় ভবনের ভেতরে ভাঙচুর চলছে এবং সংগ্রহগুলো নষ্ট করা হচ্ছে। রেজাই এখন ইতালি প্রবাসী। তার মতে, যা ঘটেছে তাতে তিনি ‘বিধ্বস্ত’। তিনি বলেছেন, ‘আমরা যা কিছু তৈরি করেছি সব একটা দুঃস্বপ্নের মতো শেষ হয়ে গেছে।’ লাইব্রেরি বললে আমাদের কল্পনায় ভেসে ওঠে, নিরাপদ ও নির্মল একটি ঘর, যেখানে শান্ত ও সুস্থির পরিবেশে অধ্যয়ন চলছে। আফগানিস্তানে সেই লাইব্রেরি ও আর্কাইভ হামলার শিকার হয়েছে। গ্রন্থাগারিকরা ফিরে আসতে পারছেন না পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে।
কাবুলের পাবলিক লাইব্রেরি এবং সেখানকার ন্যাশনাল আর্কাইভ চলমান রয়েছে বটে। তবে কর্মীসংখ্যা সীমিত এবং কোনো পরিষেবা নেই বললেই চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারগুলো বন্ধ। কাবুলের বাইরেও অনেক লাইব্রেরি নাই হয়ে গেছে। লাইব্রেরির অনেক সরকারি কর্মচারী তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায়। নারী কর্মচারীদের কাজ করার অনুমতি নেই। সরকারের উপ-সংস্কৃতিমন্ত্রী জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সম্প্রতি তার মন্ত্রণালয়কে লাইব্রেরি ভবনগুলো আবার খুলতে বলেছেন। তবে লাইব্রেরিতে নারী কর্মজীবীদের সংখ্যা ছিল বেশি, তারা আবার আগের ভূমিকায় ফিরতে পারবেন কি না জানা যায়নি। নারী গ্রন্থাগারিক থাকলে নারীরা লাইব্রেরিতে আসতে উৎসাহিত হন। কারণ গ্রন্থাগার তাদের অধ্যয়নের একটি নিরাপদ জায়গা। ন্যাশনাল আর্কাইভসের প্রাক্তন পরিচালক মাসুমা নাজারি বলেছেন, ‘আফগানিস্তানের পাঠাগারগুলো মেয়েদের জন্য নিরাপদ ও ভালো জায়গা। পরিবারের সদস্যরা তাদের মেয়েদের সহপাঠী ও বন্ধুদের সঙ্গে লাইব্রেরিতে পড়তে, দেখা করতে এবং কথা বলতে যেতে বাধা দেয় না। লাইব্রেরিতে পড়ার ফাঁকে তারা নতুন নতুন শিক্ষার খোঁজ পায়, হাসতে, কাঁদতে এবং জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ পায়। যদি তালেবান নারীদের এখানেও নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাহলে তারা এই নিরাপদ জায়গাটি হারাবে। আফগান মেয়েদের থেকে লাইব্রেরি কেড়ে নেওয়া উচিত নয়।’
তালেবান শাসনের প্রথম সময়েও দেশটিতে সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ হয়েছিল। লাইব্রেরি এবং আর্কাইভগুলোও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অ-পশতু ভাষায়, বিশেষ করে ফার্সি ভাষায় উপকরণ পড়া নিষিদ্ধ ছিল। কাবুলের ১৮টি গ্রন্থাগারের মধ্যে ৮টি তখন ধ্বংস হয়ে গেছে, আরও ৭টি ধর্মীয় ভবনে রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালের ১২ আগস্ট তালেবান ‘হাকিম নাসের খোসরো বলখি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ হাতে নিয়ে নেয়, যার কেন্দ্রস্থলে একটি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক লাইব্রেরি ছিল। কেন্দ্রের দরজায় তারা রকেট লঞ্চার ও মেশিনগানের মতো ভারী অস্ত্রশস্ত্র স্থাপন করে। লতিফ পেদ্রাম ছিলেন গ্রন্থাগারিক, প্রধানত ফার্সি পা-ুলিপির ৫৫ হাজার ভলিউমের সংগ্রহশালা সেই লাইব্রেরিটি ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর মতো শক্তি তার ছিল না। তালেবানের পতনের পর ন্যাশনাল লাইব্রেরির পরিচালক ফজলুল্লাহ কোদসি বলেছেন, ‘‘আফগানিস্তানের আইনি কোডের প্রতিটি কপি ধ্বংস হয়ে গেছে। ফার্সি ভাষার মহাকাব্য ‘শাহনামা’ পড়া থামাতে কিংবা এ-জাতীয় নিষিদ্ধ বই আছে কি না, তার জন্য ঘরে ঘরে অনুসন্ধান চালিয়েছিল তালেবান।” পেদ্রাম সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে জানান, ‘যদি তারা আমাকে ধরে ফেলতে পারত, ঘটনাস্থলেই মৃত্যুদণ্ড দিত।’ পরবর্তী সময়ে বাইরের তহবিল ও অভ্যন্তরীণ উদ্যোগের ফলে গ্রন্থাগার ও আর্কাইভ সেক্টর পুনরুজ্জীবিত হতে থাকে। রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই জাতীয় আর্কাইভগুলো পুনরায় চালু করেছিলেন, ফলে যথাযথ রেকর্ড রাখার অনুশীলন শুরু হয়। তালেবান ক্ষমতায় আরোহণের সময় আবারও আর্কাইভটি আক্রান্ত হয়। এমনকি লুটপাটও করা হয়। পরিচালককে আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য ফেসবুকে তালেবানের কাছে একটি অনুরোধ পোস্ট করতে দেখা যায়। পরে আফগানিস্তানের জাতীয় জাদুঘরের পরিচালক মোহাম্মদ ফাহিম রহিমি একটি বিবৃতি জারি করেন যে, তিনি ও তার কর্মীরা প্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে তালেবান-সরকারের সমর্থন পেয়েছেন।
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার ছিল সমগ্র অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম। ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সাল নাগাদ ২ লাখেরও বেশি ভলিউম সংগৃহীত হয়। প্রায় ৫০ জন গ্রন্থাগারিক নিয়োগ করা হয়েছিল। ইরান, তাজিকিস্তান, পাকিস্তান, ভারত এবং অন্যান্য জায়গা থেকেও পণ্ডিতরা সংগ্রহগুলো ব্যবহার করতে আসতেন। আফগানিস্তানে সোভিয়েত যুদ্ধের সময় এটি জাতীয় গ্রন্থাগারে পরিণত হয়। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের পরে গ্রন্থাগারটি ধ্বংসের মুখে পড়ে এবং পুনর্নির্মাণের কাজও শুরু হয়। নব্বইয়ের শেষের দিকে তালেবান তা বন্ধ করে দেয়। গ্রন্থাগার চত্বরে গোলাগুলিও হয়েছে। অনেক ঐতিহাসিক নথি, প্রাচীন বই ও পা-ুলিপির অবৈধ পথে পাচার হয়ে যায়। গ্রন্থাগারটি গত বছর আগস্টের মাঝামাঝি থেকে বন্ধ রয়েছে। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র লাইব্রেরি ব্যবহারে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেছেন, ‘সেখানে বই পড়তাম, লিখতামও। মাঝে মাঝে বন্ধুরা মিলে টেবিলের চারপাশে বসে আফগানিস্তানের উন্নয়ন ও বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলতাম। এখন সব স্বপ্নের মতো মনে হয়।’ অনেক তরুণ এখন বিভিন্ন নথি ও ফুটেজ সংগ্রহ করে পশ্চিমাদের বিভিন্ন অনলাইন লাইব্রেরি ও ইন্টারনেট আর্কাইভে রাখছে। তারা আফগান ওয়েবসাইটেও আর্কাইভ করার চেষ্টা করছে, যাতে দেশের ডিজিটাল উপায়ে হলেও নথিগুলো রক্ষা করা যায়।
তথ্যের সহজলভ্যতা থেকে শুধু নাগরিকরাই উপকৃত হয় না, নিপীড়ক শাসককেও তার সুবিধা দেয়। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় কর বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তথ্য-সংগ্রহের কাজটি ছিল সম্ভবত জনগণের ওপর ব্যাপক নজরদারির প্রথম উদাহরণ। নাৎসি জার্মানি ও স্টালিনবাদী রাশিয়াও নাগরিকদের ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করত এবং বিস্তারিতভাবে নথিভুক্ত করে রাখত। অথচ আফগানিস্তানে নাগরিকদের স্কুলের রেকর্ড ধ্বংস করার খবর প্রকাশ পেয়েছে যেন, ডকুমেন্টেশন বর্তমান সরকারের হাতে না পড়ে, কেননা, তাতে তারা শাস্তির মুখে পড়তে পারে। অনেক বইয়ের দোকানি নিজেরা তাদের স্টক ধ্বংস করেছে, কেননা, তা ধর্মবিরোধী বিবেচিত হতে পারে। গ্রন্থাগার কেবল আক্রমণের মাধ্যমেই ধ্বংস হয় না, তহবিলের অভাবেও হতে পারে। অক্সফোর্ডের ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউটের পরিচালক আরেজু আজাদ বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আফগানিস্তানে গ্রন্থাগার ও সংরক্ষণাগার রক্ষায় সমর্থন দিতে হবে। আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং এর সাংস্কৃতিক ইতিহাসের জ্ঞান সংরক্ষণ দেশের শান্তির ও রাষ্ট্র গঠনের একটি মৌলিক ভিত্তি।’
লেখক : বোডলির গ্রন্থাগারিক এবং ‘বার্নিং দ্য বুকস : অ্যা হিস্ট্রি অব নলেজ আন্ডার অ্যাটাক’ গ্রন্থের লেখক।
ফাইনান্সিয়াল টাইমস থেকে ভাষান্তর : মনযূরুল হক
জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের ২৫তম জন্মদিন আজ। ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর স্ট্যানফোর্ডের দুই পিএইচডির ছাত্রের হাত ধরে যাত্রা শুরু। ভাড়া করা গ্যারেজে জন্ম নেওয়া সেই গুগল আজ বিশ্বের বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিন; পরিণত হয়েছে ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে। কীভাবে দরজা আটকাবেন বা কীভাবে কাটবেন আনারস— গুগলে উত্তর পাবেন না এমন প্রশ্ন খুঁজে মেলা ভার। তাইতো মানুষের কাছে এত জনপ্রিয় ও প্রয়োজনীয় একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে গুগল।
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর গুগল ২৫তম জন্মবার্ষিকী পালন করছে। বিশেষ ডুডল তৈরি করে বর্ণাঢ্য আকারে উদ্যাপন করেছে দিবসটি। এবারের ডুডলটি তৈরি করা হয়েছে এর বিবর্তনের থিম ধরে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গুগলের লোগোর পরিবর্তন উঠে এসেছে ডুডলে।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের দুই শিক্ষার্থী ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিনের প্রকল্প হিসেবে শুরু করেছিল এ সার্চ ইঞ্জিন। নিজেরদের ছাত্রাবাসে বসেই কাজ শুরু করেন দুজন। বড় আকারের সার্চ ইঞ্জিনের প্রোটোটাইপ তৈরি করার পর একটি ভাড়া করা গ্যারেজে অফিস স্থাপন করেন তারা। এখন সারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন ও ইন্টারনেটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে গুগল।
চলুন গুগল নিয়ে একটা মজার তথ্য জানাই আপনাদের। আমাদের সবার পরিচিত নাম গুগল নামটি কিন্তু ইচ্ছা করে দেননি ল্যারি ও ব্রিন। গুগল নামটি আসলে এসেছে গাণিতিক হিসাবের গোগল (googol) ভুল করে লেখার মাধ্যমে, যার মানে হলো ১ এর পর ১০০টি শূন্য। এ নিয়ে এখন গল্প প্রচলিত আছে যে, একজন প্রকৌশলী বা ছাত্র আসল নামের বদলে এই ভুল বানানটি লিখেছিলেন। সেই ভুল নামই পুরো দুনিয়ার সামনে চলে আসে। কেন এই নাম বেছে নিয়েছিলেন ল্যারি আর সের্গেই? তাদের ওয়েবসাইট যে বিপুল পরিমাণ উপাত্ত ঘাঁটাঘাঁটি, অনুসন্ধান করবে, সেটা এই নাম দিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলেন তারা। সেই ভুল নামই গুগল!
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।