
খুলনার সুন্দরবন উপকূলীয় কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন নির্মাণের মেয়াদ শেষ হলেও মাত্র ১১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে মেয়াদ বাড়িয়েছে স্বাস্থ্য প্রকৌশলী দপ্তর। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু ঠিকাদারের লাইসেন্স ব্যবহার করে নির্মাণকাজ করছেন।
তবে মো. আক্তারুজ্জামান বাবু তার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেন, গুণগতমান ঠিক রেখে যাতে কাজটি দ্রুত শেষ হয়, সেদিকে আমি বিশেষভাবে কেয়ার রাখছি। তবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে অনেক ঠিকাদার কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করছে। ঠিকাদারকে যদি প্রেশার দেওয়া হয় কিংবা আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে কার্যাদেশ বাতিল করা হয় তাহলে আমাদেরই ক্ষতি হবে। কাজে আরও দেরি হবে। এসব দিক বিবেচনা করে কিছু বলতে পারি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি যতদূর জানি, ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ করাতে চাপে রাখতে কর্তৃপক্ষ সময় বেঁধে দেয়। এসব বিল্ডিংয়ের সময় কখনো ছয় থেকে আট মাস হয় না। পাইল ও কাস্টিংয়ে সময় লাগে। এসব কারণে সামান্য দেরি হতে পারে।’
এদিকে ৩১ শয্যার পুরনো দোতলা ভবন অপসারণ করায় শয্যা সংকটসহ নানাবিধ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ১৯ শয্যার অবকাঠামোতে ৫০ শয্যার হাসপাতালের কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। শয্যার অভাবে মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের।
স্বাস্থ্য প্রকৌশলী দপ্তর, খুলনা ও কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, খুলনা শহর থেকে ১০৫ কিলোমিটার দূরে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১৯৬৪ সালে স্থাপিত হয়। সেখানে ২০১১ সালে ১৯ শয্যার একটি ভবন নির্মাণ করা হয় এবং ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হয়। পরে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট পুরনো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ২০২২ সালে তা অপসারণ করা হয়। পরে ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট ৩১ শয্যার তিনতলা ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিয়াউল ট্রেডার্স ও মেসার্স শামীম আহসান ট্রেডার্স। তবে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু কাজটি করছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
ছয়তলা ফাউন্ডেশনের তিনতলা বিল্ডিং নির্মাণকাজের ব্যয় ধরা হয় ৯ কোটি ৭৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫৮০ টাকা। কাজ সমাপ্তির সময় নির্ধারণ ছিল ২০২৩ সালের ১২ জুন। কাজের মেয়াদ শেষ হলেও মাত্র ১১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কাজের সন্তোষজনক অগ্রগতি না হওয়ায় গতি বাড়াতে বারবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে খুলনা স্বাস্থ্য প্রকৌশলী দপ্তর। একপর্যায়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বর্ধিত করা হয়েছে।
এদিকে, শয্যা সংকটের পাশাপাশি কক্ষ সংকটের ফলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বহিঃ ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসাসেবা, প্রসূতি ডেলিভারিসহ নানাবিধ সেবায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। নারী ও পুরুষের নেই কোনো পৃথক ওয়ার্ড। পুরুষদের সঙ্গে সিজারিয়ান ও শিশুদের দুগ্ধদানকারী নারী রোগীদের একসঙ্গে থাকতে হচ্ছে। এ ছাড়া নারী-পুরুষ সবাইকে ব্যবহার করতে হচ্ছে একই বাথরুম। জায়গার অভাবে বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে আছে এক্স-রে মেশিন। নষ্ট হয়ে পড়ে আছে অস্ত্রোপচারকক্ষের বেশ কিছু যন্ত্রপাতি। বহিঃবিভাগে রোগীদের চাপ মেটাতেও চিকিৎসকদের বসার মতো উপযুক্ত কক্ষ নেই।
মনিরা আক্তার নামে এক রোগী বলেন, ‘গত রাতে ভর্তি হয়েছি। শয্যা না পেয়ে সিঁড়ির পাশে থাকতে হচ্ছে।’ অন্য এক রোগী জাকির হোসেন বলেন, অ্যাপেন্ডিসের অপারেশন হয়েছি। সিঁড়ির পাশে বারান্দায় থাকতে হচ্ছে। এখানে কোনো বাথরুম নেই। প্রস্রাব-পায়খানার চাপ আসলে মহিলা ওয়ার্ডের ভেতর দিয়ে যেতে সমস্যা হয়।’ সিজারিয়ান এক রোগী বলেন, ‘পুরুষ চলাচলের ফলে নবজাতককে দুধ প্রদানে সমস্যা হয়।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিয়াউল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. জিয়াউল আহসান টিটো বলেন, ‘আমার লাইসেন্স নিয়ে কয়রা-পাইকগাছার একজন টেন্ডার নিয়েছিল।’ তবে তার নাম বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
তবে কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য কাজটি করছেন। কাজের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এ গতিতে কাজ চললে তা শেষ হতে ৫ বছর লেগে যেতে পারে।
কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, তীব্র শয্যা সংকটে রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাদের মেঝে কিংবা বারান্দায় রাখতে হচ্ছে। নারী-পুরুষ পৃথক কোনো ওয়ার্ড নেই। এক্স-রে মেশিন স্থাপনের কক্ষ নেই, বহিঃবিভাগে ডাক্তারদের বসার কক্ষ সংকটে চিকিৎসাসেবায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দূরে অবস্থিত জরুরি বিভাগ থেকে সহজে রোগী আনা সম্ভব হয় না।
স্বাস্থ্য প্রকৌশলী দপ্তর, খুলনার সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত ১১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কাজের গতি বাড়াতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বার বার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বর্ধিত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘একজনের লাইসেন্সে অন্য কেউ কাজ করছে কি না, সেটা আমাদের জানা নেই। আমরা মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করি ও তাগিদ দিই।’
পদ্মা সেতু চালুর পর গত এক বছরে যোগাযোগ, অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের ফলে বদলে গেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদ। তবে নানা কারণে এখনো বহুল প্রত্যাশিত এই সেতুর পুরোপুরি সুবিধা মিলছে না। সে সঙ্গে রয়েছে নানা রকম চ্যালেঞ্জও। বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
দুই যুগ আগে পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হলেও নানা প্রতিবন্ধকতা শেষে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এই সেতুটি ২০২২ সালের ২৫ জুন এক জমকালো অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। পরদিন শুরু হয় যানবাহন চলাচল।
গত এক বছরে পদ্মা সেতু দিয়ে আয় হয়েছে ৭৭৪ কোটি টাকা। অবশ্য লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এ সময়ের মধ্যে সেতু দিয়ে ৪৭ লাখের বেশি যানবাহন পারাপার হয়েছে বলে সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। জানতে চাইলে পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে এক্সপ্রেসওয়ে বা এপ্রোচ রোড নির্মাণ করা হয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় এটা একটা চমৎকার উন্নয়ন। কিন্তু এটি এখনো অপূর্ণ। আছে অনেক চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থনৈতিকভাবে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলকে সাপোর্ট দেওয়া। দেশের অর্থনীতিতে ১ দশমিক ২৫ শতাংশের মতো জিডিপি বাড়ানোর জন্য এই সেতু করা হয়েছে। শুধু একটা ব্রিজ দিয়ে সেটা করা যাবে না। এর সঙ্গে দরকার সামগ্রিক রোড নেটওয়ার্ক। সেটা কিন্তু এখনো তৈরি হয়নি। এটি সবচেয়ে বড় শঙ্কার বিষয়।
‘সেতুর কারণে গত এক বছরে ওই এলাকায় ছোট গাড়ি চলাচল বেড়েছে। মোটরসাইকেল কিংবা ব্যক্তিগত পরিবহনে ব্যক্তিগতভাবে ভ্রমণের জন্য বিরাট সুন্দর একটা যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক বিবেচনায় এটা কখনই সমর্থনযোগ্য নয়। কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বড় মাপের এই সড়কে ছোট ছোট যান চলাচল করছে। এতে অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব কমে যাচ্ছে’।
শামসুল হকের মতে সড়কে ব্যক্তি খুশি আর অর্থনীতি খুশি এক নয়। অর্থনৈতিক খুশির জন্য এখানে গণপরিবহন, ট্রাক এ ধরনের যানবাহনের দ্রুতগতি খুব দরকার। কারণ ছোট ছোট গাড়ি, মোটরসাইকেলের টোল সংগ্রহ করতে যে সময় লাগে একটা বড় গাড়ির ক্ষেত্রেও সময় লাগে একই। অদূরদর্শিতার কারণে এখন খ-িত, বিখ-িত গণপরিবহন, ব্যক্তিগত যানবাহন এবং মোটরসাইকেল যাওয়ার ফলে এটার ‘অপারেটিং কন্ডিশনটা আর তার মানে থাকছে না।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকায় প্রবেশের মুখে প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি সেই যানজট উড়ালসড়ক হয়ে রাজধানীর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক সময় দেখা যায় গোপালগঞ্জ থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পৌঁছাতে যে সময় লাগে তার চেয়ে বেশি বা সমান সময় লাগে গুলিস্তান পৌঁছাতে।
এ প্রসঙ্গে শামসুল হক বলেন, এই সেতু হয়ে ঢাকায় প্রবেশের জন্য যে চক্রাকার সড়ক বা রিং রোডগুলো করার কথা ছিল সেটা এখনো প্রস্তুত না হওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। রিং রোডের মাধ্যমে একমুখী অনেক চাপ দ্রুত চলে এলে তা ভাগাভাগি করে দেওয়া হয়। যেমন কেউ উত্তরা যাওয়ার পথে যাত্রাবাড়ী দিয়ে ঢুকতে গিয়ে যদি যানজট পান তাহলে বসিলা দিয়ে যেতে পারেন। অথবা আশুলিয়া হয়ে উত্তরা যেতে পারেন। রিং রোড করা হলে ঢাকার মুখে যানজট কমে যাবে। কিন্তু সেটা এখনো না করা বড় ধরনের ভুল।
একই সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের স্থানীয় সড়কগুলোরও উন্নয়ন দরকার বলে মনে করেন এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে মাদারীপুর যাওয়ার পর সেখানকার লোকাল কানেকশনগুলোও এই সড়কের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। পদ্মা সেতুর কারণে পরিবহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় জীর্ণ-শীর্ণ অনুপযোগী স্থানীয় সড়ক নেটওয়ার্কে চাপ বাড়ছে। এসব সড়কের মানও উন্নত করতে হবে।
পদ্মা সেতুকে ঘিরে নির্মিত এক্সপ্রেসওয়েতে প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের পাশাপাশি বহু ক্ষয়ক্ষতিও হচ্ছে। এ বিষয়ে শামসুল হক বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে এত বড় বিনিয়োগের যৌক্তিকতা ছিলÑ এখানে গাড়ি দ্রুতগতিতে চলবে। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটবে না। অথচ আমরা ৯ মাসের সমীক্ষায় দেখছি প্রতিদিন একজন করে নিহত হচ্ছে। এটা কোনো মানদ-ে যায় না। এক্সপ্রেসওয়েতে মারা যাবে কেন? এটা বানানো হয়েছে কেউ যদি গতি ২শ কিলোমিটারেও চালায় তাতে দুর্ঘটনা ঘটবে না। দুর্ঘটনার রেসিপিগুলো এখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের হচ্ছে। তার মানে অপারেটিং কন্ডিশনটাকে ধরে রাখার জন্য যে মানসিকতা অথবা দক্ষতা থাকার সেটা আমাদের নেই। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ইমপ্যাক্টটা যদি এখন সরাসরি বলা হয় তাহলে বলতে হবে সড়কের উন্নয়নের ফলে চোখের সামনে একটা নৌপথের মৃত্যু হয়েছে। এটা তো কাম্য ছিল না। আমাদের নদীমাতৃক দেশে ভারসাম্যপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় নৌপথে যে অমিত সম্ভাবনা ছিল সেটা নষ্ট হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা সুন্দর ও দ্রুতগতির লঞ্চ নামিয়েছিলেন এবং তাতে সুবিধা ছিল এখানে একটা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ ছিল। জনগণও খুশি হতো। এখানে বহুমাত্রিকতা আছে।
‘উৎসব পার্বণের সময় যানবাহনের চাপ কখনই সড়ক নিতে পারবে না। সড়ক কখনই টেকসই মাধ্যম না। এটা কিছুদিন পর পর রিফ্রেশ করতে হয়। কিন্তু রেল এবং নৌপথ হলো সবচেয়ে টেকসই, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। সেই ইকো সিস্টেমটাকে চোখের সামনে কেজি দরে বিক্রি করে ফেলছে। নৌপথকে বিকল্প হিসেবে রেখে দেওয়ার কৌশলী সিদ্ধান্তও কিন্তু দেখি না। এটা অপ্রত্যাশিত।’
বিশৃঙ্খলার কারণেই এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে শামসুল হক বলেন, ‘ঢাকার মধ্যে গণপরিবহনে যে বিশৃঙ্খলার আয়োজন করা হয়েছে সেই একই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করা হচ্ছে পদ্মা করিডরে। ফলে এক্সপ্রেসওয়েতে যাত্রী ওঠানামা দেখতে পারছি। শিশু ও পরিবার নিয়ে লাগেজ নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছে মানুষজন। বাসগুলো যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে যেটা এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে বেমানান। আবার যারা অপারেট করছেন তারা ন্যূনতম অপারেটিং ম্যানেজমেন্টের সক্ষমতা রাখেন না। এটা দেখলেই মনে হয় এ ধরনের অবকাঠামো ব্যবহারের যোগ্যতা এখনো তৈরি হয়নি।’
শামসুল হক বলেন, এখানে গণপরিবহনে বিজ্ঞাপনভিত্তিক রুট পারমিট দিতে হবে। বাসের সংখ্যা না বাড়িয়ে দোতলা বাস পরিচালনা করতে পারে এরকম সক্ষম একজন অপরেটরকে দায়িত্ব দিতে হবে। ঢাকা টু মাদারীপুর, ঢাকা টু খুলনা, ঢাকা টু বরিশাল এরকম রুট না করে ঢাকায় একটা হাব, মাদারীপুরে একটা হাব। মাঝখানে ব্রডব্যান্ড কানেকশন। একটা কোম্পানি গাড়ি চালাবে। সেই গাড়ি থেকে স্থানীয় পরিবহনের মাধ্যমে যার যার গন্তব্যে যাবে।
পদ্মা সেতুর তৈরির পর এখানে মেধাভিত্তিক পরিচালনার চৌকস মান বা স্মার্টনেসের অভাব রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু তৈরি হয়েছে অর্থনৈতিক মেরুদন্ড হিসেবে। এখানে বাস, ট্রাককে অগ্রধিকার দিতে হবে। গণপরিবহন বা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত গাড়ির জন্য টোল কম হবে এবং ব্যক্তিগত গাড়ি ঢুকলেই টোল বেশি নেওয়া হবে কৌশলে। যাতে সে নিরুৎসাহিত হয়। এতে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরার পাশাপাশি নৌপথেও যাত্রী পাওয়া যাবে। এটা না করলে কারখানার মালামাল পরিবহনে সমস্যা তৈরি হবে। বাইরে থেকে বড় বিনিয়োগকারী আসবেন না। সেই সঙ্গে রেলপথ চালু হলেও এর অবস্থা অনেকটা নৌপথের মতো হবে।
ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানকে ঋণ, তথ্য গোপন, খেলাপি নিয়ে নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডের বিরুদ্ধে। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে আমানতকারীদের অর্থ ঝুঁকির মুখে ফেলেছে বেসরকারি এই ব্যাংকটি। ঋণ ব্যবস্থাপনায় নানা অনিয়মে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকরা জড়িয়ে পড়েছেন। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান প্রভাব খাটিয়ে ভাইয়ের অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকার ঋণ দিয়েছেন। সেই ঋণ খেলাপি হওয়ার পরও বারবার পুনঃতফসিলের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি ঋণটি নিয়মিতকরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত কিস্তি পরিশোধের নির্দেশনাও মানেনি উত্তরা ব্যাংক।
বেনামি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অবৈধ সুবিধা নেওয়া, চেয়ারম্যানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে গাড়ি কেনাসহ নানা অনিয়মের কারণে ইতিমধ্যেই আলোচনায় রয়েছে বেসরকারি উত্তরা ব্যাংক। বরাবরের মতোই বিভিন্ন খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ সুবিধা দিচ্ছে এই ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দলের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ঋণ অনিয়মের এই কাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন একসময়ের দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলামের দুই ভাই আজহারুল ইসলাম ও সফিউল ইসলাম। আজহারুল ইসলাম আফতাব গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান। আর তার ভাই সফিউল ইসলাম নাভানা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা, যে গ্রুপটি রিয়েল এস্টেট, আবাসন, নির্মাণ ও অটোমোবাইল ব্যবসায় জড়িত। উত্তরা ব্যাংকে ইসলাম পরিবারের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, সফিউল ইসলাম তার পরিবারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘বিপনণ’ লিমিটেডের নামে উত্তরা ব্যাংক থেকে দুই দফায় ৩০ কোটি টাকা ঋণ নেন। অবশ্য ঋণ নেওয়ার এক মাস আগেই সফিউল ইসলাম ‘বিপনণ’-এ থাকা তার শেয়ার স্ত্রী খালেদা ইসলামের নামে হস্তান্তর করে চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ঋণ নিলেও তা পরিশোধ না করায় খেলাপি হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিদর্শনে গেলে ‘বিপনণ’ নামক প্রতিষ্ঠানটির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। এমনকি ‘বিপনণ’র কোনো কার্যক্রমও তাদের চোখে পড়েনি। এমন অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে পারছে না নাভানা গ্রুপ। বর্তমানে পুঁজিবাজারে নাভানা গ্রুপের অধীন আফতাব অটোমোবাইল ও নাভানা সিএনজি লিমিটেড নামে দুটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। আর এই দুই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি কয়েক বছর ধরেই দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দলকে ঋণ হিসাবটির আদায় অগ্রগতি, অনুমোদন প্রক্রিয়া যাচাই করতে ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৩-এর পরিচালক নির্দেশনা দেয়। ওই বছরের ১০ অক্টোবর পরিদর্শন দল ও শাখা ব্যবস্থাপকসহ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ওই প্রতিষ্ঠানটিতে সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তারা প্রতিষ্ঠানটির কোনো অফিস এবং প্রতিষ্ঠানের কোনো কার্যক্রমও খুঁজে পাননি। পরিদর্শন দলের কাছে প্রতিষ্ঠানটি একটি কাগজে প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ঋণ অনিয়মের বিষয়ে জানতে উত্তরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবিউল হোসেন এবং চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তারা সাড়া দেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো জবাব মেলেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেনামি বা অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া আইনের লঙ্ঘন। কোনো ব্যাংক যদি এ ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন তাহলে অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ তদন্ত করে দেখবে। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্রে জানা গেছে, সফিউল ইসলাম ১৯৯৬ সালের আগস্ট মাসে ‘বিপনণ’ লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘদিন ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে ছিলেন তার ছেলে শরিফুল ইসলাম, খাদেজা ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, সাজেদুল ইসলাম ও ফারহানা ইসলাম। কিন্তু হঠাৎ করে ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর সফিউল ইসলাম ‘বিপনণে’ থাকা তার মালিকানাধীন ছয় হাজার শেয়ার স্ত্রী খালেদা ইসলামের কাছে হস্তান্তর করে চেয়ারম্যান ও পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান খালেদা ইসলাম। হস্তান্তরের এক মাস পার না হতেই ওই বছরের ১৫ নভেম্বর উত্তরা ব্যাংকে একটি সিডি (ক্রেডিট ডিপোজিট) হিসাব খোলে কোম্পানিটি। আর ২৬ ডিসেম্বর ‘বিপনণ’ লিমিটেডের নামে ১৫ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করা হয়। পরে কোম্পানিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২ ডিসেম্বর ঋণের পুরো অর্থ একসঙ্গে বিতরণ করে উত্তরা ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যালোচনায় দেখা যায়, এই ঋণের বিপরীতে ১৫ কোটি টাকার জমি জামানত নেওয়া হলেও ভ্যালুয়ার কোম্পানি (সম্পদের মূল্য নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠান) মেসার্স গ্লোবাল সার্ভে অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মূল্যায়নে ওই জমির দাম অর্ধেকেরও কম। ভ্যালুয়ার কোম্পানির ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের মূল্যায়নে জামানত হিসেবে দেওয়া দুটি জমির বাজারমূল্য ৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং তাৎক্ষণিক মূল্য ৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এই ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকটির জোনাল হেডের কোনো সুপারিশ গ্রহণ করা হয়নি। আর প্রতিষ্ঠাটির সঙ্গে পরিচালকদের কোনো সম্পর্ক আছে কি না তার তথ্যও উপস্থাপন করা হয়নি।
‘বিপণন’ লিমিটেডের ঋণ হিসাবটিতে সুদ আরোপের সমপরিমাণ আদায় না থাকলেও ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ উত্তরা ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটিকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাবদ আরও ১৫ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করে। এই ঋণের ক্ষেত্রেও নেওয়া হয়নি জোনাল হেডের সুপারিশ। প্রতিষ্ঠাটির সঙ্গে পরিচালকদের কোনো সম্পর্ক আছে কি না তার তথ্যও উপস্থাপন করা হয়নি।
২০২০ সালের আগস্ট মাসে ‘বিপণন’ লিমিটেডের প্রথম নেওয়া ১৫ কোটি টাকার ঋণ গুণগতমানের ভিত্তিতে খেলাপি ঘোষণা করায় প্রথম পুনঃতফসিল অনুমোদন করা হয়। কিন্তু ঋণের হিসাব দুটিতে কোনো আদায় না থাকায় এই ঋণ আদায় অযোগ্য খেলাপি করা হয়। এরপর ২০২১ সালে ১১ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ১৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ও প্রথম পুনঃতফসিলকৃত মেয়াদি ঋণে ১০ লাখ ২২ হাজার টাকা নিয়ে দ্বিতীয় পুনঃতফসিল মঞ্জুর করা হয়, যা কার্যকর করার জন্য ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে। পরে ২০২১ সালের ৮ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মাধ্যমে পুনঃতফসিল অনুমোদন করা হয়।
পুনঃতফসিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ‘বিপনণ’র সমহারে কিস্তি নির্ধারণ না করে বিশেষ সুবিধা দেয়। ২০২১ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাসিক ১০ লাখ টাকা করে এবং পরে মাসিক ৬৮ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ টাকা কিস্তি নির্ধারণ করে উত্তরা ব্যাংক, যা ব্যাংক কোম্পানি আইন এবং বিআরপিডির নির্দেশনার লঙ্ঘন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যালোচনা বলছে, ঋণ আবেদনের সময় ‘বিপনণ’ নামে প্রতিষ্ঠানটির ক্রয় ১৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, বিক্রয় ২১ লাখ ৭২ হাজার টাকা, নিট ক্ষতি ১১ লাখ ২৩ হাজার টাকা দেখানো হয়। এ সময় দায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা ও সম্পদ ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা দেখানো হয়। এমন দুর্বল আর্থিক ভিত্তি উপস্থাপনের পরও কোম্পানিটিকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়, যা ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন কমিটি। এমন পরিস্থিতিতে অনিয়মসহ ও সরেজমিন পরিদর্শনে প্রতিষ্ঠানটির কোনো অফিস ও কোনো কার্যক্রম না পাওয়ায় ঋণ হিসাব দুটি মন্দ বা ক্ষতিজনক মানে শ্রেণীকরণ করা হয়। পাশাপাশি নির্দেশনা লঙ্ঘন করায় ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান এবং ঋণ হিসাব যথাযথ মানে শ্রেণীকরণ, সংস্থান সংরক্ষণ ও সিআইবি রিপোর্টসহ অবহিত করতে বলা হয়।
এদিকে, উত্তরা ব্যাংক অন্তত ৪৫টি প্রতিষ্ঠানের ১০৫ কোটি টাকার ঋণ আদায় অগ্রগতি না থাকা এবং দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ ও সীমাতিরিক্ত অবস্থায় থাকার পরও খেলাপি হিসেবে দেখায়নি। পরে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দলের দৃষ্টিতে এলে মেয়াদোত্তীর্ণ ও গুণগতমানের ভিত্তিতে ঋণগুলো ক্ষতিজনক মানে খেলাপি দেখানের নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি এসব ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিকে অবহিত করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংকের চেয়ারম্যানের প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনি কতগুলো নিয়ম রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধান হচ্ছে, ব্যাংক চেয়ারম্যান ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নন-ফান্ডেড লোন নিতে পারবেন। এ ছাড়া তিনি যে পরিমাণ শেয়ার ধারণ করেন তার ৫০ শতাংশ ঋণ নিতে পারবেন। তবে সেটা বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে। এ ক্ষেত্রে অনুমোদন হওয়া বোর্ডসভায় তিনি উপস্থিত থাকতে পারবেন না।
তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি নীতিমালা রয়েছে, যেখানে উল্লেখ আছে, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আট শ্রেণির বাইরে যদি হয় তাহলে চেয়ারম্যান বা পরিচালক তার দায় নেবেন না। আট শ্রেণির মধ্যে রয়েছে, পরিচালক, তার ভাই, বোন, ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী, শ্বশুর এবং শাশুড়ি। এর বাইরে কেউ হলে তার দায় পরিচালকের নয়।
মাত্র এক মাস আগেই ইউক্রেন যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হয়ে ওঠা বাখমুত শহর দখলে নিয়ে রাশিয়ার নিয়মিত সেনাদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছিল দেশটির ভাড়াটে আধাসামরিক বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ। যাকে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার অন্যতম বড় ধরনের বিজয় হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন অনেকে। ওই জয়ের পর ওয়াগনার গ্রুপকে শুভেচ্ছায় সিক্ত করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। বাহিনীটির প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনসহ যুদ্ধক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখা সদস্যদের পুরস্কৃত করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। অথচ সেই ওয়াগনার গ্রুপকেই ‘বিশ্বাসঘাতক বিদ্রোহী’ আখ্যা দিয়ে পুতিন বললেন, ওয়াগনার বাহিনী যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা আসলে রাশিয়ার পিঠে ছুরি মারার শামিল। গতকাল শনিবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া টেলিভিশন ভাষণে পুতিন বললেন, প্রিগোজিন ও আন্তর্জাতিক বিশ্বাসঘাতকদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে, রাশিয়া ও ওয়াগনার গ্রুপের মধ্যকার সম্পর্কের নাটকীয় এ মোড় শুরু হয়েছে গত শুক্রবার ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিনের এক ঘোষণার পর। সেদিন ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় রোস্তভ-অন-ডন শহর তার নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করেন। বলেন, ওই শহরে অবস্থিত রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের মিলিটারি হেডকোয়ার্টার্সও তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। প্রতিরক্ষা প্রধান সের্গেই শুইগু এবং সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ তার সঙ্গে দেখা না করলে মস্কোর দিকে যাত্রা শুরু করবেন। গতকাল শনিবার বিকেলে বিবিসি অসমর্থিত সূত্রের বরাতে বলেছে, রোস্তভ-অন-ডন থেকে মস্কোর যে দূরত্ব তার মাঝামাঝি পৌঁছে গেছে ওয়াগনার গ্রুপের একটি অংশ। সেখানে রুশ সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার থেকে তাদের ওপর গুলিও ছুড়েছে। পাল্টা হামলা হিসেবে সেখানকার একটি তেল শোধনাগার উড়িয়ে দিয়েছে আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে রক্তপাত এড়াতে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো অভিমুখে যাত্রা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। গতকাল রাতে নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া এক অডিওবার্তায় এ ঘোষণা দেন তিনি। ওই বার্তায় প্রিগোজিন বলেছেন, মস্কোর দিকে অগ্রসরমাণ তার দলটি থেমে গেছে। রক্তপাত এড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে দিনভর চলা উদ্বেগ-উত্তেজনার আপাত অবসান হলো।
এর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় মস্কো অভিমুখে যাত্রা বন্ধ করতে রাজি হন প্রিগোজিন। লুকাশেঙ্কোকে উদ্ধৃত করে রশিয়া ২৪-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেলারুশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার পর ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন মস্কো অভিযান বন্ধ করতে রাজি হন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, উত্তেজনা কমাতে সম্ভাব্য একটি গ্রহণযোগ্য উপায় বের করা হবে। পাশাপাশি ওয়াগনার যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের সম্মতি নিয়েই লুকাশেঙ্কো ও প্রিগোজিন এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
ওয়াগনার বাহিনীর কথিত এ বিদ্রোহ তাদের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনতে না পারলেও এর মধ্য দিয়ে যে ‘উটকো ঝামেলার’ সৃষ্টি হয়েছে তা প্রেসিডেন্ট পুতিনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও ইউক্রেনে তার লক্ষ্যকে একটা কঠোর চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অবশ্য কেউ কেউ বলছেন, ইউক্রেনে এখনো চার লাখের মতো রুশ সেনা অবস্থান করায় দেশটির পক্ষে এখনই এই অস্থিরতার কোনো সুফল পাওয়া সম্ভব না।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর পাশাপাশি যুদ্ধে লিপ্ত ভাড়াটে ওয়াগনার গ্রুপ। গত মাসে ইউক্রেনের বাখমুত শহর দখলের লড়াইয়ে গ্রুপটি নেতৃত্ব দিয়েছিল। ১০ মাসের মধ্যে ইউক্রেনে সেটি ছিল রাশিয়ার সবচেয়ে বড় জয়। যুদ্ধক্ষেত্রের এই সাফল্যের সুযোগে প্রিগোজিন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের সমালোচনা শুরু করেন। অবশ্য কয়েকমাস ধরেই তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই এবং জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমোভের বিরুদ্ধে ‘অযোগ্যতার’ অভিযোগ করে আসছিলেন। এর মধ্যে গত শুক্রবার তিনি তার দলের সৈন্যদের ওপর এক মারাত্মক মিসাইল হামলার অভিযোগ করেন রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। তিনি তার অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে না পারলেও কথিত হামলাকারীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার শপথ নেন। অবশ্য তার পদক্ষেপ সামরিক অভ্যুত্থান না বলেও দাবি করেন তিনি। কিন্তু ধারাবাহিক কয়েকটি অডিও বার্তায় অত্যন্ত উত্তেজিত স্বরে প্রিগোজিন ধারণা দিয়েছেন, তার ২৫ হাজার মিলিশিয়ার শক্তিশালী একটি দল মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বকে অপসারণ করার পথে রয়েছে। অবশ্য সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, এসব বার্তায় তার কণ্ঠস্বর বিভিন্ন রকম মনে হয়েছে এবং সেটি তারা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি।
অন্যদিকে ক্রেমলিন একে সরাসরি বিদ্রোহ হিসেবে দেখছে। গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিন সশস্ত্র বিদ্রোহে লিপ্ত হয়েছেন- এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে পুতিনের দপ্তর। ক্রেমলিনের নিরাপত্তা বিভাগের এক সূত্রের বরাতে গতকাল সকালে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে মস্কোর সরকারি ভবনগুলো, পরিবহন স্থাপনা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে পুতিন বলেন, ওয়াগনার গ্রুপ যা করেছে সেটি ‘বেইমানি’ এবং ‘রাশিয়ার পিঠে ছুরি চালানোর’ মতো। অবশ্য রাশিয়ার সব বাহিনীকে সংহত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পুতিন বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সব নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাশিয়াকে রক্ষা করার কাজে তারা সব কিছু করবেন। প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, রাশিয়ার সমাজকে যারা বিভক্ত করছে তারা কোনোভাবেই শাস্তি এড়াতে পারবে না। ভাষণে পুতিন প্রিগোজিনের নাম উল্লেখ করেননি। তবে ওয়াগনারের ভাড়াটে সৈন্যদের কথা উল্লেখ করে রাশিয়ার পক্ষে লড়াই করার জন্য তাদের প্রশংসা করেন।
পুতিনের ওই ভাষণের পর এক কথিত অডিওবার্তায় প্রিগোজিন বলেন, মাতৃভূমির বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা সম্বন্ধে, প্রেসিডেন্ট বড় ধরনের ভুল করেছেন। আমরা দেশপ্রেমিক। আমরা যুদ্ধ করছি এবং এখনো করে যাচ্ছি। আমাদের দোষ স্বীকার করতে... প্রেসিডেন্ট যেমনটা চেয়েছেন, এফএসবি (রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা) অথবা অন্য কেউ বা কেউই তেমনটা করতে যাচ্ছে না। কারণ আমরা চাই না আমাদের দেশ আর দুর্নীতি, মিথ্যা ও আমলাতন্ত্রের মধ্য দিয়ে চলুক।
বিবিসি বলছে, এই পরিস্থিতির বিস্তারিত অনেক কিছু এখনো পরিষ্কার হয়নি। রোস্তভ শহরের পর ভরোনেজ শহরের সব সামরিক স্থাপনা দখল করে নিয়েছে ওয়াগনারের সৈন্যরা। অবশ্য ভরোনেজ অঞ্চলের গভর্নর আলেকজান্ডার গুসেভ সতর্ক করে বলেছেন যে সৈন্যদের গতিবিধি নিয়ে অনেক ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে। সন্ত্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ভরোনেজ অঞ্চলে সামরিক পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এই লড়াইটাকে বিশ্লেষকরা দেখছেন রাশিয়ার ক্ষমতার শীর্ষে থাকা দুজনের লড়াই হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্কট্যাঙ্ক দ্য ইনস্টিটিউট অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) বিশ্বাস করে ইয়েভগিনি প্রিগোজিন ক্রেমলিনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটা জোরপূর্বক পরিবর্তন আনতে চান। তবে ক্রেমলিন এর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তার জন্য ‘সাফল্য পাওয়া কঠিন’ হবে। তবে রোস্তভ-অন-ডন দখলের চেষ্টা যুদ্ধে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। এখানকার সেনাবাহিনী ‘এই মুহূর্তে ইউক্রেন যে পাল্টা আক্রমণ করছে সেটা প্রতিহত করতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং একই সঙ্গে পুরো ইউক্রেনে রাশিয়ার যৌথ বাহিনীর কমান্ড সেন্টার এখানে। সর্বশেষ পরিস্থিতি দেখে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ বলছে, শুক্রবারের বিস্ময়কর নাটকীয়তার ফলাফল যা-ই হোক পুতিনকে এ রকম দুর্বল আর কখনই দেখায়নি। এক ঘটনা পুতিনের পেশা জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা, এমনকি এ ধাক্কা তাকে ক্ষমতার মসনদ থেকেও ছিটকে ফেলতে পারে। গার্ডিয়ানের ভাষ্যমতে, যদি প্রিগোজিনের বিদ্রোহের দ্রুত অবসানও হয় তবু কয়েক মাস এই ধাক্কার রেশ থেকে যাবে, যা রাশিয়াকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং পুতিনের নেতৃত্বকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাতে পারে। এই বিদ্রোহ পুতিনের ইউক্রেন অভিযানেও বড় দুর্বলতা তৈরি করেছে। বিপরীতে কিয়েভের পাল্টা আক্রমণ সফল করার পথও করে দিয়েছে। রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের লুহানস্ক, দোনেৎস্ক থেকে ওয়াগনার সেনারা সরে যাওয়ায় রুশ প্রতিরক্ষায় দেখা দিতে পারে বড় ধরনের ফাটল।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা পুতিনের নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে সামরিক বিশ্লেষক পাভেল ফেলগেনহাউয়ার বলেন, ‘পুতিন তার শাসনামলে সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে পড়েছেন। বর্তমানে তার সামনে যে চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে তা খুবই গুরুতর। এবারই প্রথম সামরিক এবং বেশ কার্যকর কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তিনি। এমনকি তাকে হয়তো অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইও করতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সাংবাদিক নিক প্যাট্রন এক বিশ্লেষণে লিখেছেন, গত ২৩ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা পুতিনের রাশিয়ায় এর আগে কখনো এমন চিত্র দেখা যায়নি। তাকে এমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়নি। নিক প্যাট্রনের মতে, প্রিগোজিন বিদ্রোহে জয়ী না হলেও দুর্বল হবেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। এ দুর্বলতা ঢাকতে পুতিন আগামী কয়েক মাসে নিজের শক্তি প্রমাণের জন্য অযৌক্তিক অনেক কিছু করতে পারেন।
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়ের রেলিংয়ে ধাক্কার পর অ্যাম্বুলেন্সের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক পরিবারের ৭ জন প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে তিনজন নারী ও চার শিশু রয়েছে। এছাড়া চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সটির চালকেরও মৃত্যু হয়। গতকাল শনিবার সকাল ১১টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
সামনের বাম দিকের চাকা ফেটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের রেলিংয়ে ধাক্কা খেয়ে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে অ্যাম্বুলেন্সটিতে আগুন ধরে যায় বলে ধারণা করছেন ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের কর্মকর্তারা।
নিহতরা হলেন বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ফেলাননগর গ্রামের প্রবাসী আজিজার রহমানের স্ত্রী তাছলিমা বেগম (৫০), তার মেয়ে কমলা বেগম (৩০), বিউটি বেগম (২৬), নাতি হাসিব (১০), হাফসা (১), আরিফ (১২) ও মেহেদি (১২) এবং অ্যাম্বুলেন্সটির চালক ফরিদপুর শহরের লক্ষ্মীপুর এলাকার মৃদুল মালো (৩৫)। এর মধ্যে কমলা বেগম ঢাকায় বসবাস করতেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পদ্মা সেতুর ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মালিগ্রাম ফ্লাইওভারে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অ্যাম্বুলেন্সটি রেলিংয়ে ধাক্কা খায়। এ সময় গ্যাসচালিত অ্যাম্বুলেন্সটিতে চারদিক থেকে আগুন ধরে যায়। অ্যাম্বুলেন্সের চালক মৃদুল তার আসনের পাশের জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারলেও ভেতরে থাকা তিন নারী ও চার শিশুযাত্রী আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। খবর পেয়ে ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ এনে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর থেকে সাতজনের কঙ্কাল বের করেন। পরে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশ, শিবচর হাইওয়ে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যৌথভাবে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। এ ঘটনায় পর এক্সপ্রেসওয়েতে প্রায় দুই ঘণ্টা সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল।
হাইওয়ে পুলিশের ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মাহবুব আলম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের ডিভাইডারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আগুন ধরে যায়। চালকের পাশের জানালাটি খোলা ছিল। এ ছাড়া সব জানালা আটকানো ছিল। চালক রক্তাক্ত অবস্থায় বের হয়ে এলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। অন্যরা কেউ বের হতে পারেননি।’
নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তাছলিমা বেগম হৃদরোগে আক্রান্ত হলে এক মাস আগে ঢাকায় নিয়ে যান স্বজনরা। চিকিৎসা শেষে বড় মেয়ে কমলা বেগমের বাসায় ছিলেন তিনি। ঘটনার দিন শনিবার সকালে তাছলিমা বেগম তার দুই মেয়ে ও নাতি-নাতনি নিয়ে ঢাকা থেকে বোয়ালমারীতে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। পথে দুর্ঘটনায় সাতজনই প্রাণ হারান।
এ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জানান, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া মরদেহ দাফনের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
এদিকে দুর্ঘটনার খবর নিহত তাছলিমা বেগমের বাড়ি বোয়ালমারীর ফেলাননগর গ্রামে পৌঁছালে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া এভাবে একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যুর খবরে পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারেফ হোসাইন বলেন, ‘খবর পেয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে। শোকাহত পরিবারটিকে সর্বাত্মক সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।’
ঘুষ নেওয়ার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সংস্থার মহাপরিচালকের (মানিলন্ডারিং) একান্ত সহকারী (পিএ) গৌতম ভট্টাচার্যসহ চারজনকে। এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অর্থ পাচারের ভুয়া অভিযোগের নোটিস পাঠিয়ে পরে তাকে রক্ষার কথা বলে ঘুষ নিচ্ছিল তারা।
এ সময় তাদের কাছ থেকে মিষ্টির চারটি প্যাকেট, নগদ দেড় লাখ টাকা, চারটি মোবাইল ফোন, দুদকের মনোগ্রামসহ খাকি রঙের একটি খাম ও প্যাডে লেখা একটি নোটিস উদ্ধার করা হয়।
গত শুক্রবার রাজধানীর মতিঝিলের হিরাঝিল হোটেল থেকে এই চারজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন চাকরিচ্যুত পুলিশ কনস্টেবল মো. এসকেন আলী খান (৫৭), হাবিবুর রহমান (৪২) ও পরিতোষ মন্ডল (৬৩)।
ডিবি জানিয়েছে, দুদক মহাপরিচালক গৌতম ভট্টাচার্যের বাড়ি মৌলভীবাজার। এসকেন আলীর বাড়ি গোপালগঞ্জ। অন্য দুজনও গোপালগঞ্জের বাসিন্দা এবং পেশাদার দালাল ও প্রতারক। চক্রটি যারা অল্প সময়ে ধনী হয়েছে তাদের টার্গেট করে। সারা দেশেই এদের সদস্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির ডিবি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী আশিকুজ্জামান আমদানির ব্যবসাও করেন। বায়তুল মোকাররম মসজিদের কার্পেটের দোকানে কার্পেট ও জায়নামাজ সরবরাহ করেন তিনি। গত ১৯ জুন তার স্ত্রী সন্তান প্রসবের জন্য হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ২০ জুন সকালে আশিকুজ্জামানের উত্তরার বাসায় দুদকের মনোগ্রাম সংবলিত খাকি রঙের খামে একটি নোটিস নিয়ে একজন কথিত কর্মকর্তা হাজির হন। সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণ চোরাচালান এবং মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন তার বিরুদ্ধে। স্ত্রীর হাসপাতালে অবস্থান এবং দুদকের এই ভয়ানক অভিযোগ শুনে ঘাবড়ে যান তিনি। তখন দুদকের সেই কথিত কর্মকর্তা আশিকুজ্জামানকে সহানুভূতি দেখানোর ভান করে তাকে তখনই মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এও বলেন যে, ডিবি, সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) তাকে খুঁজছে। ইতিমধ্যে দুদক তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির একটি অভিযোগ আমলে নিয়েছে।
ডিবি প্রধান বলেন, নোটিস বহনকারী ব্যক্তিটি হোয়াটসঅ্যাপে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে আশিকুজ্জামানকে কথা বলিয়ে দেন। কথিত ওই কর্মকর্তা মোবাইলে কথা না বলে বিস্তারিত জানার জন্য তাকে দুদক অফিসে আসতে বলেন। কথিত নোটিসে বিভিন্ন অভিযোগের পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়, ‘শূন্য থেকে আশিকুজ্জামান আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। তাকে দুদকের জিম্মায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব প্রমাণ পাওয়া যাবে। এ অবস্থায় প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।’ এতে কারণ দর্শানোসহ ব্যক্তিগত শুনানির জন্য আগামী ১০ জুলাই তাকে তলবের কথা বলা হয়।
হারুন অর রশীদ বলেন, ঘাবড়ে যাওয়া আশিকুজ্জামানকে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে দফায় দফায় ফোন দিয়ে ভয় দেখানো হয় যে, তার সম্পত্তি ক্রোক হবে, তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে, তার মানসম্মান যাবে। এক পর্যায়ে আশিকুজ্জামানকে মতিঝিলের হিরাঝিল হোটেলের দ্বিতীয় তলায় এসে সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হয়। সমঝোতার জন্য প্রথমে দুই কোটি টাকা দিতে বলা হয়। পরে তা কমিয়ে এক কোটি টাকা করা হয়। বিনিময়ে সমস্ত অভিযোগ থেকে অব্যাহতির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। এই এক কোটি টাকার মধ্যে গত শুক্রবার জুমার আগে ২০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। বাকি টাকা রবিবার ব্যাংক চলাকালে দিতে বলা হয়।
ডিবি প্রধান বলেন, ভুক্তভোগী ডিবির লালবাগ বিভাগকে জানালে তারা দুদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ঘটনার দিন সংস্থার উপপরিচালক নজরুল ইসলাম ও ডিবির একটি দল হোটেল হিরাঝিলের আশপাশে অবস্থান নেয়। আগে থেকে বলে রাখা কথামতো আশিকুজ্জামান চারটি মিষ্টির প্যাকেটে তার স্বাক্ষরিত দেড় লাখ টাকা নিয়ে হিরাঝিলে যান। তার কাছ থেকে মিষ্টির প্যাকেটে থাকা টাকা গ্রহণ করার সময় ডিবি সদস্যরা দুদকের ডিজির পিএ গৌতমসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেন।
গৌতমের বিষয়ে ডিবি প্রধান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দুদকের বিভিন্ন মহাপরিচালকের পিএ হিসেবে কাজ করে আসছেন গৌতম। তিনি কখনো দুদকের ডিজি (তদন্ত), ডিজি (অ্যাডমিন), ডিজি (প্রসিকিউশন), ডিজির (মানি লন্ডারিং) পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (পিএ) হিসেবে কর্মরত। সেই সূত্রে দুর্নীতির অভিযোগ বিষয়ে কীভাবে নোটিস পাঠাতে হয়, কীভাবে তাদের কাছ থেকে আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক বক্তব্য নেওয়া হয় এবং অভিযোগ গঠন করা হয় এসব জানতেন। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি সহযোগীদের দিয়ে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি এবং চাকরিজীবীদের টার্গেট করতেন। তাদের ব্যক্তিগত নানা তথ্য সংগ্রহ করে দুদকের চিঠির খাম ও প্যাড ব্যবহার করে অভিযোগের নোটিস পাঠাতেন। পরে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলে টাকা আদায় করতেন। তাদের সঙ্গে দুদক কার্যালয়ের দায়িত্বশীল আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য আসামিদের জিজ্ঞাসা করা হবে বলে জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।
আগামী চেস গিল্ড স্কুল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইয়ান রহমান ও মনন রেজা নীড়। একক ইভেন্টের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে আইয়ান ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নীড়। ৭ রাউন্ডের খেলায় আইয়ান ও নীড় দুজনই পেয়েছে সাড়ে ছয় পয়েন্ট করে।
বিটজ দলগত বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এলিগেন্ট চেস একাডেমি। এই দলে খেলেছে জারিফ হক আফনান, তাসরিক সায়হান, সিয়াম চৌধুরী ও নীলাভা চৌধুরী। আজ শনিবার দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে শেষ হয়েছে এই প্রতিযোগিতা।
আগামী চেস গিল্ডের আয়োজনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ‘আমরা ৯২’ আগামী চেস গিল্ড স্কুল রেটিং টুর্নামেন্ট। সুইস লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। একক ও দলগত দুই বিভাগে অংশ নেয় ১৪৫ জন দাবাড়ু। টুর্নামেন্টে বিজয়ীরা ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেটের পাশাপাশি পেয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
টুর্নামেন্ট শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার, আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।
টানা ৬ ম্যাচ জিতে লা লিগার শীর্ষে উঠে এসেছিল জিরোনা। আগের রাতে সেভিয়াকে হারানো বার্সেলোনা সেই জিরোনাকে পেছনে ফেলে। আর রিয়াল মাদ্রিদ এবার উড়তে থাকা জিরোনাকে হারিয়ে লা লিগার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করেছে।
শনিবার মন্তিলিভি স্টেডিয়ামে জিরোনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। রিয়ালের হয়ে গোল তিনটি করেছেন জোসেলু, অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি ও জুড বেলিংহাম।
আট ম্যাচের সাতটিতে জিতে রিয়ালের পয়েন্ট এখন ২১। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বার্সেলোনা। আর টানা ছয় জয়ের পর রিয়ালের কাছে হেরে যাওয়া জিরোনা ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে।
সপ্তাহ খানেক আগেই আতলেতিকো মাদ্রিদে গিয়ে ৩-১ গোলে হেরেছিল রিয়াল। এবার জিরোনায় গিয়ে
প্রথমার্ধেই ২ গোলে এগিয়ে যায় আনচেলোত্তির শিষ্যরা। এর মধ্যে ১৭ মিনিটে বেলিংহামের ক্রস থেকে বল জালে পাঠান জোসেলু। আর ২২ মিনিটে টনি ক্রুসের কর্নার থেকে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন চুয়ামেনি।
রিয়াল ব্যবধান ৩-০ করে ৭১ মিনিটে। জোসেলুর শট জিরোনা গোলরক্ষক প্রতিহত করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। নাগালে বল পেয়ে দারুণভাবে বল জালে পাঠান বেলিংহাম। এটি রিয়ালের হয়ে ৭ ম্যাচে তার অষ্টম গোল।
দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও কুমিল্লার বটগ্রাম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা নুরুল হক। আলেমদের অবস্থান সুসংহত করাসহ জেলার মাদ্রাসাগুলোকে একতাবদ্ধ রাখা ও শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। সাদাসিধে চলাফেরায় অভ্যস্ত আশি বছর বয়সী এই আলেম বেশ কয়েকটি মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন ধরে হাদিসের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ সহিহ বোখারি শরিফের দরস দেন। তার বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে লিখেছেন শামসুদ্দীন সাদী
অলি-আউলিয়ার পুণ্যভূমি বারো আউলিয়ার দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ঊর্বর ভূমিতে জন্ম নিয়েছেন অসংখ্য বুজুর্গ ও গাউস কুতুব। ভিনদেশ থেকেও আগমন ঘটেছে বহু বুজুর্গের। যাদের পুণ্য পরশে পত্র-পল্লবে সেজে উঠেছে বাংলার মাটি। তাদের উদার মানবতা, চরিত্রের মাধুর্য, মহানুভবতা, মানবপ্রেম ও মহান আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠা ভিন্নধর্মীদের আকৃষ্ট করেছে। ফলে ইসলাম এদেশের মাটির বুকে সুদৃঢ়ভাবে শেকড় গেড়েছে। এখনো সারা দেশে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য আলেম ও বুজুর্গ। তাদেরই একজন মাওলানা নুরুল হক। দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও কুমিল্লার প্রবীণ মুরব্বি। কুমিল্লা জেলার বটগ্রাম মাদ্রাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস।
আশি বছর বয়সী প্রবীণ এই আলেমের জন্ম ব্রিটিশ ভারতে আনুমানিক ১৯৪১ সালে, কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সাতবাড়িয়া দাতামা গ্রামে। পিতা সোনা মিয়া ছিলেন অত্যন্ত দীনদার, আমানতদার ও বিশ্বস্ত মানুষ। মাতা জোবায়দা খাতুন ছিলেন দীনদার নামাজি ও পর্দানশিন নারী।
শৈশবে এক বুজুর্গের হাতে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি। গ্রামের মসজিদের ইমাম আমির উদ্দীন মাস্টার ছিলেন তার প্রথম শিক্ষক। প্রথাগত আলেম না হলেও আমির উদ্দীন মাস্টার শরিয়ত পালনে অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। কোনো ধরনের অনৈসলামিক কার্যকলাপ তিনি সহ্য করতেন না। তার একান্ত চাওয়া ছিল, এলাকার মানুষ দীনের পথে ইসলামের পথে চলুক। সব ধরনের বেদআত ও পাপের কাজ থেকে দূরে থাকুক। এমন মান্যবর বুজুর্গের হাতে তিনি আলিফ বা-তা-সা ও বাল্যশিক্ষা গ্রহণ করেন।
মক্তবের বাল্যশিক্ষার পর স্কুলে ভর্তি হয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। মা-বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলেকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দুই বছর পড়াশোনা বন্ধ থাকে। দুই বছর পর দাতামা পশ্চিম পাড়ার ছেলামত উল্লাহ বেপারির বাড়িতে পড়ালেখার ব্যবস্থা হয়। তিনি, তার জীবনের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী মাওলানা আবদুল ওয়াহাব (রহ.)-সহ আরও কজন ছিলেন এখানকার সহপাঠী। এখানে তাদের শিক্ষক ছিলেন একজন বুজুর্গ ব্যক্তিত্ব মাওলানা আব্দুল হাকিম (রহ.)।
আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া শুরু হয় জোলাই ইসলামিয়া মাদ্রাসায়। তৎকালে অত্র এলাকায় জোলাই মাদ্রাসার পড়াশোনার সুনাম-সুখ্যাতি ছিল। শরহে জামি পর্যন্ত পড়াশোনা করে ভর্তি হন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায়। দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত হাটহাজারী মাদ্রাসাতেই পড়াশোনা করেন। দাওরায়ে হাদিস শেষ করার পর হাটহাজারী মাদ্রাসাতেই তাফসিরুল কোরআনের ওপর এক বছরের বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করেন। এ সময় তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসায় জগদ্বিখ্যাত বহু মনীষীর শিষ্যত্ব লাভ করেন।
তার কর্মজীবনের সূচনা হয় গোপালগঞ্জে এক আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে। সেখানে পনেরো বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা করেন। পরে সেখান থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে আসেন নিজ জেলা কুমিল্লায়। কুমিল্লার প্রাচীন মাদ্রাসা বটগ্রাম হামিদিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের কয়েক বছর পর সহকারী মুহতামিম, এর কয়েক বছর পর ১৯৯০ সালে মুহতামিম নিযুক্ত হন। তখন থেকে অদ্যাবধি এই গুরুদায়িত্ব পালন করছেন।
আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিকতার (সুলুক-তাসাউফ) পথে বহু বুজুর্গের সান্নিধ্য পেয়েছেন। অনেকের কাছ থেকে খেলাফতও লাভ করেন। হাটহাজারী মাদ্রাসায় পড়ালেখা কালেই মেখল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হামিউস সুন্নাহ মুফতি ফয়জুল্লাহ (রহ.)-এর কাছে বায়াত (শিষ্যত্ব গ্রহণ) হন। তার ইন্তেকালের পর হাকিমুল উম্মত হজরত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর অন্যতম খলিফা তওবার রাজনীতির প্রবর্তক মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন। হাফেজ্জি হুজুর (রহ.) তখন বার্ধক্যজনিত কারণে শয্যাশায়ী। তাই তারই নির্দেশে শর্শদি মাদ্রাসার আউয়ালের কাছ থেকে সবক গ্রহণ করেন। হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর ফেনী ওলামা বাজার মাদ্রাসার মুহতামিম বরেণ্য বুজুর্গ হজরত মাওলানা আব্দুল হালিম (রহ.)-এর হাতে বায়াত হন এবং তার থেকেই খেলাফত লাভ করেন। এছাড়া হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)-এর অন্যতম খলিফা পলাশের হুজুরের কাছ থেকেও এজাজত লাভ করেন।
এক সময় কুমিল্লা জেলাজুড়ে ছিল শিরক-বেদআতের গয়রহ দাপট। নানা বেদআতে সয়লাব ছিল কুমিল্লা শহর। কওমি মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসায় পড়–য়া আলেম-উলামাদের নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হতো। মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হতো মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে। কিন্তু সংঘবদ্ধতার অভাবে শিরক-বেদআত দূর করা ও কওমি মাদ্রাসার অবস্থান ও গুরুত্ব তুলে ধরার কোনো সুযোগ ছিল না। এই শূন্যতা পূরণের লক্ষ্যে জেলার চিন্তাশীল আলেমরা মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ‘কুমিল্লা জেলা কওমি মাদ্রাসা সংগঠন।’ জেলার ছোট-বড় প্রায় সব মাদ্রাসা এই সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত। কাসিমুল উলুম মাদ্রাসার মাওলানা আশরাফ আলী (রহ.), বরুড়া মাদ্রাসার মুফতি আব্দুল ওয়াহাব (রহ.), রানীর বাজার মাদ্রাসার মাওলানা আব্দুল ওয়াহাব (রহ.) এবং বটগ্রাম মাদ্রাসা থেকে মাওলানা নুরুল হক এই সংগঠন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কুমিল্লা জেলায় কওমি আলেমদের সুসংহত অবস্থান তৈরি হয়। কওমি শিক্ষার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডা বন্ধ হয়। জেলার প্রাণকেন্দ্রে এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে থাকে। দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-উলামারা আমন্ত্রিত হন। জেলার মাদ্রাসাসমূহকে একতাবদ্ধ রাখা ও শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই সংগঠনের অবদান রয়েছে। বর্তমানে তিনি এই সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এতসব গুরুদায়িত্ব পালন করার পরও সরল জীবনের এক মূর্তপ্রতীক তিনি। বিরোধপূর্ণ বিষয় থেকে সযতেœ নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। তার চলাফেরা একেবারে সাদাসিধে। পোশাক-আশাকে বিলাসিতা নেই। সাধারণ পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ক্ষেতখামারে কাজ করেন। পানি সেচ দেন। ইখলাস (একনিষ্ঠতা) ও লিল্লাহিয়াতের (আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সব কিছু করা) জীবন্ত নমুনা। কয়েকটি মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন ধরে পড়াচ্ছেন হাদিসের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ সহিহ বোখারি শরিফ।
মাওলানা নুরুল হকের জীবনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দাওয়াত ইলাল্লাহ তথা আল্লাহভোলা মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা। দীনের কথা শোনানো। ইসলামের পথে চলতে উদ্বুব্ধ করা। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে আনাচে-কানাচে তিনি এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের মিশন নিয়ে ঘুরে বেড়ান। দিনরাত ছুটে বেড়ান মাহফিল থেকে মাহফিলে। কিছুটা আঞ্চলিক ভাষায় বয়ান করেন তিনি। যে কারণে সর্বসাধারণ সহজেই তার বয়ানের মর্মবাণী হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন। আলেম থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই মুগ্ধমনে তার বয়ান শুনেন। তার বয়ানে খোঁজে পান জীবন পথের পাথেয়।
ইসলামের সৌন্দর্য, পারিবারিক জীবন, আখেরাতে ও আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টির পথ-পদ্ধতি হলো তার বয়ানের বিষয়বস্তু। ইসলাম যে জীবনমুখী ধর্ম, ইসলামে কোনো বৈরাগ্য নেই তার জীবনে ও বয়ানে বারবার বিষয়টি ফুটে ওঠে। দুনিয়ার কাজকর্মও যে দীনের অংশ এবং তাতেও যে অফুরন্ত সওয়াব লুকিয়ে আছে নানা উপমার মাধ্যমে তিনি সেগুলো স্পষ্ট করেন। গতানুগতিক ওয়াজ মাহফিলের বাইরে বিশেষ ইসলাহি মাহফিলও করেন। ভক্ত মুরিদানের আমল আখলাকের খোঁজ-খবর নেন। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মুরিদানের আমলি উন্নয়নের চেষ্টা করেন।
বহু মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সঙ্গে তিনি জড়িত। নিজ গ্রামে দাতামা মাদ্রাসা, ধনাইতরী নূরানী মাদ্রাসা, সুলতানপুর কারিয়ানা মাদ্রাসাসহ আরও অনেক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অসংখ্য মাদ্রাসার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এখনো অনেক মাদ্রাসার নীতিনির্ধারণী কমিটি তথা মজলিসে শুরার সভাপতি ও সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেক মাদ্রাসার সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন।
প্রতিটি কাজে তিনি কোরআন-সুন্নাহর অনুসরণ করেন। নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটেন। নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা কুঁজো হয়ে গেছেন। কথিত আছে, বেপর্দা ও গোনাহ থেকে বাঁচতেই তিনি নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটেন। অবসর সময়ে ঘরোয়া কাজে সহযোগিতা করেন। কিতাব অধ্যয়ন করেন। ধ্যানে ডুবে থাকেন। সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সময় দেন। ১০ ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার পরিবার। ছেলেদের অনেকে আলেম হয়েছেন, বাকিরা পড়াশোনা করছেন।
একনিষ্ঠ ও দরদি মানব-দুর্ভিক্ষের এই দুঃসময়ে মাওলানা নুরুল হক আমাদের জন্য এক বটবৃক্ষ। তার ছায়া আমাদের জন্য রহমত। কেবল কুমিল্লার জন্য নয়, সারা দেশের জন্যই তিনি এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। আমাদের দুর্ভাগ্য, এমন বহু বুজুর্গ ব্যক্তিত্ব সারা দেশে ছড়িয়ে আছেন, যারা আমাদের অগোচরেই হারিয়ে যান। মৃতুর পর হয়তো সংবাদ পাই। জীবিত থাকতে তাদের থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ আমাদের হয় না। এ ধারার পরিবর্তন দরকার। আল্লাহতায়ালা এই মহীরুহ ব্যক্তিত্বসহ অন্যদের ছায়া আমাদের ওপর দীর্ঘায়িত করুন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
রাজধানীর ঢাকা কলেজের একটি আবাসিক হলে এক সাংবাদিককে আটকে রেখে ১৫ ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যান। গত বৃহস্পতিবার রাতে কলেজটির শহীদ ফরহাদ হোসেন হলে নির্যাতনের ওই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ওবায়দুর সাঈদ।
তিনি একই কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি। কলেজ সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বেও আছেন ওবায়দুর। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা কলেজ প্রশাসন।
নির্যাতনের শিকার ওবায়দুর সাঈদ জানান, ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদস্য ফয়সাল আহমেদকে নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবেদন প্রকাশ করায় তাকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করে কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কলেজ ছাত্রলীগের নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সভাপতি রাউফুর রহমান সোহেলের নেতৃত্বে এই নির্যাতন চলে। খবর পেয়ে ১৫ ঘণ্টা পর পরিবারের সদস্যরা গিয়ে ওবায়দুরকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।
ওবায়দুর সাইদ জানান, তিনি শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার পর তার কক্ষে আসে একই হলের ছাত্রলীগ নেতা রাউফুর রহমান সোহেল ও তার কয়েকজন অনুসারী। এ সময় সোহেল ওবায়দুরের বুকে লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দেয়। এরপর মুখে ও কানে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ফয়সালকে নির্যাতনের খবর কোন কোন পত্রিকায় পাঠানো হয়েছে। এরপর সোহেল ওবায়দুরের গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে তার মোবাইল ফোনের লক খুলতে বাধ্য করে। পরে ওই মোবাইলের স্ক্রিন থেকে কলেজের সাবেক ও বর্তমান সাংবাদিকদের যোগাযোগের মেসেঞ্জার গ্রুপ ও সাংবাদিক সমিতির গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে হওয়া কথোপকথনের ভিডিওচিত্র ধারণ করে।
এর আগে গত বুধবার গেস্ট রুমে (হলের অতিথি কক্ষে রাজনৈতিক বৈঠক) যেতে দেরি করায় ইংরেজি বিভাগের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং ডেইলি বাংলাদেশ ও প্রতিদিনের ক্যাম্পাসের ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি ফয়সাল আহমেদকে বেধড়ক পেটায় ছাত্রলীগ নেতারা। এ ঘটনার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় বিভিন্ন সাংবাদিক ও ছাত্রসংগঠন।
প্রত্যক্ষদর্শী এক ছাত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সোহেলের হাত থেকে ওবায়দুরকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু সোহেলের হিংস্র আচরণের কাছে আমরা অসহায়। বাধা দিতে গেলে সে আমাদেরও মারতে আসে। পরদিন দুপুরে ওবায়দুর বারবার জুমার নামাজ পড়তে যেতে চেয়েছে, কিন্তু ওকে নামাজও পড়তে দেওয়া হয়নি। রুমে তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়। ১৫ ঘণ্টার বেশি সময় নির্যাতনের পর ওকে বের করে নেওয়া হয় প্রিন্সিপালের রুমে।’
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতের পর ওবায়দুরের মোবাইল ফোন এখনো ফেরত দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামীকাল (আজ রবিবার) রিপোর্ট জমা দেবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।