
রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি এবং সরকার পতনসহ বেশ কিছু দাবিতে আন্দোলন করছে। কিন্তু দাবি আদায়ের জন্য রাজনীতির মাঠে যে ধরনের আন্দোলন প্রয়োজন তার অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত রয়েছে। তবে দলটির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির নেতারা মনে করছেন তাদের কূটনৈতিক উদ্যোগের সাফল্য এসেছে। এ কারণে সারা বিশে^র নজর এখন বাংলাদেশের দিকে; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তা বিএনপির পক্ষে গেছে। একই সঙ্গে ১৪ বছর ধরে বিএনপির যেসব নেতাকর্মী গুম হয়েছেন, খুন হয়েছেন তা যথাযথভাবে তুলে ধরার কারণে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংগঠনসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, ‘বিএনপি কী দাবি করল তাতে দেশের ও দেশের মানুষের কিছু যায়-আসে না। শুধু তা-ই নয়, বিশ্ব এখন কোনো একক দেশের নিয়ন্ত্রণে নেই। বর্তমান বিশ্বে বহু মাত্রিকতা রয়েছে। আমেরিকার বাইরে রাশিয়া, চীন রয়েছে। এর বাইরে আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতিবেশী ভারত রয়েছে। তাই কে কী বলল তাতে কিছু যায়-আসে না। দেশের অতীত ইতিহাস তাই বলে।’ তিনি বলেন, ‘দেশে কোনো পরিবর্তন করতে হলে লাখ লাখ জনগণকে রাস্তায় নামতে হবে। জনগণকে তাদের দাবি তুলে ধরতে হবে। জনগণ তাদের দাবি আদায়ে রাজপথে নামলে তখনই কেবল পরিবর্তন সম্ভব। জনগণ রাস্তায় নামলে ব্যবসায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজসহ অন্য অংশীদাররা তখন সিদ্ধান্ত নেবে পরিবর্তনের। তারপরই পরিবর্তন আসবে। একাডেমিকভাবে এটাই প্রমাণিত। জনগণের বাইরে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই।’
বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম আজাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি। জনগণের ভোটাধিকার, মানবাধিকারসহ সংবিধান স্বীকৃত সব অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। জনগণের মতের যাতে প্রতিফলন ঘটে তার ব্যবস্থা করতে চাই। জনগণ ভোটাধিকার ফিরে পেলে তারা যাকে ভোট দেবে তারা ক্ষমতায় যাবে। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। আমরা জনগণের কাছে রাষ্ট্রের মালিকানা বুঝিয়ে দিতে চাই। এ জন্য আমরা দেশে কিংবা বিদেশে কাউকে বলিনি আমাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিন। সুষ্ঠু পরিবেশ পেলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারের পতন ঘটানো হবে। নির্বাচনের প্রকৃত পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হবে, যাতে জনগণ তাদের মতের প্রতিফলন ঘটাতে পারে।’
বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির একাধিক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, দলের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির একঝাঁক তরুণ নেতাদের কূটনৈতিক উদ্যোগের কারণে সারা বিশে^র নজর এখন বাংলাদেশে। দেশে গণতন্ত্র না থাকা, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের খুন, গুম, হামলা, মামলা, নির্যাতন, সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার, মানবাধিকার না থাকার বিষয়টি বিশ^ দরবারে তুলে ধরার কারণে আজকে বিশে^র গণতন্ত্রিক দেশগুলো সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে; বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার আহ্বানে আমেরিকায় গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করেছে। তা ছাড়া শুধু বিরোধী রাজনীতি করার জন্য গুম, খুনের শিকার নেতাকর্মীদের স্বজনদের বিচার পাওয়ার আকুতি বিশে^র দরবারে তুলে ধরায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক ও পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন দেশ সফর করেন কমিটির সদস্যরা। বর্তমানে আমাদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশের বাইরে রয়েছেন। পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতৃত্ব দেন। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, প্রতিবেশী ভারত, চীনের হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে মহাসচিবের নেতৃত্বে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমাদের নির্বাচনী ভাবনা জানতে চেয়েছেন তারা।’
২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি ভেঙে দেন। এরপর ১৭ ফেব্রুয়ারি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে প্রধান করে ২১ সদস্যের বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ, রিয়াজ রহমান, ড. এনামুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফাহিমা মুন্নী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলালউদ্দিন, তাবিথ আউয়াল, জেবা খান প্রমুখ।
পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমরা কাজ করি। তিনি যাকে যে দায়িত্ব দেন তা যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি তার কাছে ফলাফল রিপোর্ট করতে হয়। এ ছাড়া ভার্চুয়ালি সার্বক্ষণিক নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয় কোথায় কে কী দায়িত্ব পালন করছেন। সব মিলিয়ে সবাই সবার সাধ্যমতো সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন। ’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ঢাকায় অবস্থানকালে ২০২৩ সালের জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকের (ইউএনপিকেএম) প্রস্তুতিমূলক আলোচনায় ঢাকায় এসেছিলেন। তার এই সফর সামনে রেখে গত ১৪ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয় যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।’
পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন সময়ে বিএনপিকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে; বিশেষ করে আন্দোলনের সময়ে নিজেদের লোক দিয়ে যাত্রীবাহী গাড়িতে পেট্রোল বোমা হামলা করে তার দায় বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপিকে জড়িয়ে নানা কল্পকাহিনি প্রচার করেছে। আজ খোদ আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের কাছে ধরনা দিচ্ছে তাদের অধীনে নির্বাচনে নিতে। বিষয়টি এখন দেশের জনগণের পাশাপাশি বিশ^বাসী জেনে গেছে এবং তারা দেখছেন।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। প্রতিটি আন্দোলনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন হামলা, মামলা, নির্যাতন করছে। এরপরও শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছে বিএনপি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের বিষয়টি বিভিন্ন দূতাবাস, হাইকমিশনে দায়িত্বপ্রাপ্তরা দেখছেন। দেশ-বিদেশের সবাই দেখছে কীভাবে শত উসকানির মুখেও বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশ, পদযাত্রা কিংবা অন্যান্য কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করছে।’
পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের ৩২৮টি পৌরসভার মধ্যে ২৫৫টির মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) করেছে সরকার। এসবের মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে প্রণীত ২৫০টি পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যানের মেয়াদ গেজেট প্রকাশের আগেই শেষ হয়ে গেছে। পাঁচটি পৌরসভার গেজেট মেয়াদের মধ্যেই হয়েছে।
মাস্টারপ্ল্যানের গেজেট প্রকাশের পর বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়ে থাকে। এটাই সাধারণ নিয়ম। কিন্তু আলোচ্য ক্ষেত্রে মাস্টারপ্ল্যানের ডকুমেন্টসের গেজেট হওয়ার আগেই নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ফলে সরকারের গচ্চা গেছে প্রায় ৩১ কোটি টাকা।
কোনো অঞ্চল বা শহর সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে মাস্টারপ্ল্যান করতে হয়। অর্থাৎ কতটুকু জায়গায় বাসাবাড়ি, হাসপাতাল, মার্কেট, স্কুল-কলেজ, খেলার মাঠ, সবুজ অঞ্চল, জলাশয় ও শিল্প-কারাখানার হবে তা নির্ধারিত থাকে মাস্টারপ্ল্যানে। ওই নির্দেশনা অনুসরণ করেই জায়গার উন্নয়ন করা হয়।
এভাবে উন্নয়ন হলে ওই অঞ্চল বা শহরের সৌন্দর্য বাড়ে এবং এর পরিবেশ ও বাসযোগ্যতা বজায় থাকে। শহরবাসীকে যানজট, জলজট, বায়ুদূষণ প্রভৃতি দুর্যোগ-দুর্ভোগের কবলে পড়তে হয় না।
মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের সময় সংশ্লিষ্ট অঞ্চল বা শহরের ভূমির শ্রেণি, উন্নয়নের ধরন, মানুষের জীবনাচরণ ও চাহিদা বিবেচনা করে ‘নির্দিষ্ট’ সময়ের জন্য মাস্টারপ্ল্যান ডকুমেন্টস তৈরি করা হয়।
২৫৫ পৌরসভার জন্য প্রণীত এলজিইডির মাস্টারপ্ল্যানের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। বেশ আগেই এসবের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের আগে তার আইনগত ভিত্তি দিতে গেজেট প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু মাস্টারপ্ল্যানগুলোর গেজেট প্রকাশ হওয়ার আগেই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন মাস্টারপ্ল্যানগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে আবার মাঠপর্যায়ের কাজ করে সংশোধন করতে হবে। এ কাজের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হবে।
জানা গেছে, এলজিইডি ‘জেলা শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় ২২টি পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে। এসবের জন্য খরচ হয়েছে ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। প্ল্যানগুলো ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে করা হয়েছে। এসবের বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছিল পাঁচ বছর। সাড়ে তিন বছর আগে প্ল্যানগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে। আর ‘উপজেলা শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় ২১৫টি উপজেলা পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়। এসবের খরচ হয়েছে ১৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। প্ল্যানগুলো ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে করা হয়েছে। এসবের মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে।
জানা গেছে, এলজিইডির ‘দ্বিতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় একটি পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে সরকারের খরচ হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে এ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ হয়েছে। এর মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় আড়াই বছর আগে।
২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ‘ভোলা শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণীত হয়েছে। খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের মেয়াদও শেষ হয়েছে।
‘তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় ১৬টি পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। খরচ হয়েছে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে এ মাস্টারপ্ল্যান করা হয়। এসব মাস্টারপ্ল্যানেরও মেয়াদ শেষ হয়েছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে ব্যর্থতায় জর্জরিত এলজিইডি আবারও ১৪৪টি নন-মিউনিসিপ্যাল উপজেলা শহরের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১৮ সালে ১২টি উপজেলা শহরের পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। গত জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে প্রায় ৯২ কোটি টাকা। সম্প্রতি নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ১০০ কোটি টাকা খরচে ৬১টি উপজেলার মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের অনুমোদন পেয়েছে তারা।
সরকারের বিপুল অর্থ খরচে তৈরি হওয়া এসব মাস্টারপ্ল্যানও আলোর মুখ দেখবে কি না সন্দেহ।
এলজিইডি সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ১৮ মে স্থানীয় সরকার বিভাগে উপজেলা ও পৌরসভাগুলোর জন্য মহাপরিকল্পনাসংক্রান্ত একটি সভা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
ওই সভায় এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘পাঁচ থেকে দশ বছর আগে প্রণীত মহাপরিকল্পনা প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় সংশোধন বা হালনাগাদ করা সম্ভব হবে। উপজেলা শহরের (নন-মিউনিসিপ্যাল) মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলাগুলোর মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কারিগরি প্রস্তাব উন্মুক্ত করা হয়েছে। বিদ্যমান মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হলে আগে সংশোধন করতে হবে।’ এর মানে আবার নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে এবং আবার এসবের জন্য অর্থ খরচ হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এলজিইডি পৌরসভা নিয়ে যেসব মাস্টারপ্ল্যান করেছে সেসবের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নতুন করে এগুলোর গেজেট প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে তেমন কোনো কাজ হবে না।’ তার অভিমত, ‘মাস্টারপ্ল্যান তৈরি এলজিইডির কাজ নয়। প্রকল্পের সুবিধা নিতে তারা এ কাজ করে থাকে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে অথচ সুফল মিলছে না।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের মেয়াদ শেষের দিকে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী নিজের সাফল্যের পাল্লা ভারী করতে পৌরসভা মাস্টারপ্ল্যানের গেজেট প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এটা করেও কোনো লাভ হবে না। পরিকল্পনাগুলো সংশোধন করে গেজেট প্রকাশের উদ্যোগ নিতে হবে।’
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন পৌরসভা গঠনের পাঁচ বছরের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যান করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর পুরাতনগুলোর ক্ষেত্রে পৌরসভা আইন হওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যান করতে বলা হয়েছে। সে বিবেচনা করেই সরকার উদ্যোগ নিয়েছিল। এলজিইডির ব্যর্থতায় তা আলোর মুখ দেখল না। যার যে কাজ করার কথা তা অন্যকে দিয়ে করালে এমনই হয়। দুঃখজনক।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের উচিত এলজিইডিকে দিয়ে আর কোনো মাস্টারপ্ল্যান না করানো। স্থানীয় সরকারের আওতায় একটি পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে এ কাজ করা দরকার। বাস্তবায়নকারী সংস্থার হাতে পরিকল্পনার দায়িত্ব দেওয়া উচিত নয়। তাহলে ২৫০ পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যানের ব্যর্থতার মতো আরও ব্যর্থতার চিত্র দেখতে হবে।’
এলজিইডির নগর উন্নয়ন ও নগর অবকাঠামো উন্নয়ন বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোল্লা মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যানগুলোর বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সেগুলো সংশোধন করে বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকার চাইলে এখন গেজেট করতে পারে। তা সংশোধন করতে অসুবিধা হবে না। এটা নিয়ে একটি সভা হয়েছে। আশা করা যায়, জটিলতার নিরসন ঘটবে।’
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এলজিইডির ২৫০ পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যানের গেজেট প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে এ বিষয়ে একটা সভাও হয়েছে। দ্রত গেজেট প্রকাশ করা হবে।’
মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও মাস্টারপ্ল্যানগুলোর গেজেট প্রকাশের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে মাস্টারপ্ল্যানগুলো কিছুদিন আগে করা হয়েছে।’ এসবের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টির খোঁজ নেব।’
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এ বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৬৬ ও মৃত্যু ৬ জন। গতকাল বুধবার পর্যন্ত রোগী বেড়ে ১০ হাজার ৪৫৫ ও মৃত্যু ৬২ জনে দাঁড়িয়েছে। সে হিসাবে গত সাত মাসে রোগী বেড়েছে ১৮ ও মৃত্যু ১০ গুণ।
যদিও মাসের হিসাবে এ বছর এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৯৫৬ ভর্তি ও ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে গত মাসে, যা মোট ভর্তি রোগীর ৫৭ ও মৃত্যুর ৫৫ শতাংশ। কিন্তু ডেঙ্গুর ভয়াবহতায় এ মাসের প্রথম পাঁচ দিন গত জুনের প্রথম পাঁচ দিনকে ছাড়িয়ে গেছে। জুনের প্রথম পাঁচ দিনে রোগী ভর্তি হয়েছিল ৪৫৫ ও মারা গেছে ৪ জন, সেখানে গত পাঁচ দিনে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৪৭৭, যা জুনের পাঁচ দিনের তুলনায় সাড়ে পাঁচগুণ বেশি এবং মারা গেছে ১৫ জন, যা প্রায় চারগুণ বেশি।
রাজধানীর চারটি বড় হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ বছর অন্য বছরের তুলনায় রোগীর জটিলতা বেশি। পূর্ণবয়স্ক মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের মধ্যে তরুণ শ্রেণি বেশি। বিশেষ করে বেশিরভাগ রোগীই এবার দেরিতে হাসপাতালে আসছে। সে কারণে জটিলতা ও মৃত্যু বাড়ছে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম থেকেই সতর্ক করে আসছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল বুধবারও রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের’ ইনডোর চালু উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দেশে আশঙ্কাজনক হারে ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি মশা নিধনে দায়িত্বরতদের আরও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু সংক্রমণ আবারও বাড়ছে। আমাদের হাসপাতালগুলো চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। রোগীদের ব্যবস্থাপনাটা আমরা দেখছি, এখন মশাটা যাতে নিধন হয় সেই ব্যবস্থাটা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রোগীদেরও দায়িত্ব রয়েছে। যথাসময়ে হাসপাতালে আসতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির এক থেকে তিন দিনের মধ্যে মারা যাচ্ছে ৮০ শতাংশ রোগী। বাকি ১৪ শতাংশ ৪-১০ ও ৬-১১ শতাংশ রোগী ৩০ দিনের মধ্যে মারা যাচ্ছে।
এ বছর সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪০৯ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মৃত্যুও এই হাসপাতালে সর্বোচ্চ ৩৩১ জন।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি তুলে ধরে এ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। এখন আগের চেয়ে খারাপ অবস্থা। আরও বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। আক্রান্তের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। বিভিন্ন রকম জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে আসছে। কেউ পেটব্যথা, কেউ বমি, কেউ মাথাব্যথা, কারও রক্তচাপ কমে যাচ্ছে, কারও প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে এসব উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।
এ চিকিৎসক জানান, বেশিরভাগ রোগী দেরিতে হাসপাতালে আসছে, একেবারে শেষ মুহূর্তে। এজন্য জটিলতা বেশি। মৃত্যুর সংখ্যাও আশঙ্কাজনক। সব বয়সী রোগীই আসছে। পূর্ণবয়স্ক রোগী বেশি আসছে। যারা দেরি করে আসে ও শকসিনড্রোম দেখা দেয় ও যাদের অন্যান্য রোগও আছে, তাদের মৃত্যু বেশি। তবে এবার শিশুদের মৃত্যু কম।
‘আমাদের পরামর্শ হলো, এখন যেহেতু ডেঙ্গুর মৌসুম চলছে, জ¦রসহ শরীরে যেকোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখলেই নিজেরা ফার্মেসির ওষুধ না খেয়ে রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে, ডেঙ্গু আছে কি না’ বলেন এ পরিচালক।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯১১ রোগী ভর্তি হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে মারাও গেছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭১ জন। এ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাজমুল হক দেশ রূপান্তরকে জানান, গত মঙ্গলবার তার হাসপাতালে সর্বোচ্চ ১৪০ রোগী ভর্তি ছিল। প্রতিদিনই রোগী বেড়ে যাচ্ছে। গত ২ জুন রোগী ছিল ১২ জন। সেটা ৪ জুলাই ১৪০ জন হয়েছে। তার মানে ১০ গুণ বেড়ে গেছে।
এ চিকিৎসক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেসব রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ, ভর্তি ছাড়া চিকিৎসা সম্ভব নয়, আমরা তাদেরই ভর্তি করি। শকসিনড্রোম বা শকসিনড্রোমের কাছাকাছি এমন রোগীই বেশি। মোট রোগীর ৬৫-৭০ শতাংশই ৩০ বছরের নিচে। এর মধ্যে শিশুও আছে। রোগী যদি এত বাড়তে থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ডেঙ্গু রোগীর পেছনেই মনোযোগ বেশি দিতে হয়। তখন অন্য রোগীদের চিকিৎসায় কিছুটা বিঘœ ঘটে। তবে এখন পর্যন্ত চিকিৎসায় কোনো সমস্যা হয়নি। আশা করছি বিঘœ ঘটবে না। আমাদের প্রস্তুতি আছে।’
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ১৭৬ রোগী ও মারা গেছে ৩৫ জন। এ হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, ঈদের পর রোগী আরও বাড়ছে। বেশিরভাগ রোগী তরুণ, ২০-৪০ বছর বয়সী। শিশু রোগীও আছে। তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ রোগী জটিলতা নিয়ে আসছে। খেতে পারছে না, বমি, পেটব্যথা, অচেতন হয়ে পড়ে গেছে এরকম বেশি। ডেঙ্গু রোগীর শুধু জ¦র আছে এমন ভর্তি করি না, ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দিই। যাদের জ¦রের সঙ্গে বিভিন্ন উপসর্গ থাকে, তাদের ভর্তি করি। গতবারের তুলনায় এবার রোগীদের জটিলতা বেশি। এবার রোগীর অবস্থা দ্রুত অবনতি হচ্ছে। জ¦র হওয়ার দুই-তিন দিনের মধ্যে রোগী অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ও হাসপাতালে আসছে। অথচ আগে জ¦রের পাঁচ-সাত দিন পর অবস্থা খারাপ হতো।’
‘আমাদের পরামর্শ হলো এখন ডেঙ্গুর মৌসুম চলছে। তাই জ¦রকে ভাইরাল মনে না করে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে তার ডেঙ্গু হয়েছে কি না। ডেঙ্গু হলে যদি প্রথম থেকেই সতর্ক থাকে, প্রচুর তরল খাবার খেয়ে বিশ্রামে থাকে, তাহলে অবস্থা খারাপ কম হয়। কিন্তু যারা জানে না ডেঙ্গু আছে কি না, তাদের জ¦র হলে অবহেলা করে। যখন অবস্থা খারাপ হয় তখন হাসপাতালে আসে। এ ধরনের রোগীরা হাসপাতালে এলেও অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। চিকিৎসা দিলেও ভুগতে হয়। এজন্য প্রথম পরামর্শ হলো জ¦র হলে ডায়াগনসিস করবে তার ডেঙ্গু হয়েছে কি না; দ্বিতীয় পরামর্শ হলো ডেঙ্গু যাতে না হয় সেজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যখনই ঘুমাবে মশারি ব্যবহার করবে’ বলেন এ পরিচালক।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ৭৩৭ রোগী ভর্তি হয়েছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড হাসপাতাল)। মৃত্যুও এখানে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১০১ জনের। এ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. কাজী মো. রশীদ উন নবী দেশ রূপান্তরকে বলেন, রোগী দিন দিন বাড়ছে। গত মঙ্গলবার ৯৮ জন রোগী ভর্তি ছিল। তাদের মধ্যে ৮৫ জন পূর্ণ বয়স্ক ও ১৪ জন শিশু। তার আগের দিন ভর্তি হয়েছে ২৮ জন, রবিবার ভর্তি হয়েছে ২১ ও শনিবার ২৪ জন।
এ চিকিৎসক বলেন, এবার রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হচ্ছে। দেরিতে রোগীরা আসছে। ফলে তাদের শকসিনড্রোম দেখা দিচ্ছে। রক্তক্ষরণ বেশি, হাতে-পায়ে পানি জমে যাচ্ছে।
২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ১, রোগী ভর্তি ৫৮৪ জন : এ সময় রোগীদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৮২ ও ঢাকার বাইরে ২০২ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ১ হাজার ৯১১ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ঢাকায় চিকিৎসাধীন ১ হাজার ২৮৫ ও ঢাকার বাইরে ৬২৬ জন।
বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে সত্যিকার অর্থে মেধা পাচার রোধ করা দুরূহ ব্যাপার বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি আরও জানান, স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল সব দেশ থেকেই মেধা পাচার হয়ে থাকে। তারপরও সরকারের নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও নানাবিধ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশের মেধা পাচার নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রয়েছে।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে এ-সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান। লিখিত জবাবে তিনি জানান, দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের ব্যাপক উন্নয়নের ফলে এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগের কারণে মেধাবীরা দেশে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। এ ছাড়া সব সেক্টরে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ফলে বাংলাদেশের মেধা পাচার অনেকটাই রোধ হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মেধাবীদের মূল্যায়নে সরকারের পদক্ষেপ প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি আরও জানান, সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ, মেধাবীদের বৃত্তি বা উপবৃত্তি প্রদান, সব নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মেধার প্রাধান্য, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি, রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশিষ্ট ও মেধাবীদের বিভিন্ন পদক-পুরস্কার ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বর্তমান সরকার থেকে মেধাবীদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে গবেষণা পরিচালনা করে বঙ্গোপসাগরে ৪৭৩টি প্রজাতির মাছ শনাক্ত করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশের সাগর উপকূলে এ পর্যন্ত ১৫৪ প্রজাতির সিউইড শনাক্ত করেছে, যার ২৭টি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণার মাধ্যমে ৬ প্রজাতির সিউইডের চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান জানান, সুশৃঙ্খল, নিরাপদ ও দায়িত্বশীল শ্রম অভিবাসন নিশ্চিত করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। বর্তমানে বিশে^র ১৭৬টি দেশে ১ কোটি ৪৯ লাখের বেশি কর্মী কর্মরত আছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর গত এক যুগে পেশাজীবী, দক্ষ, আধা দক্ষ ও স্বল্প দক্ষ ক্যাটাগরিতে ৮১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪২ জনের বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে। নারী কর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচন ও ওরিয়েন্টেশন কার্যক্রম জেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণ ও বিকেন্দ্রীকরণের ফলে গত এক যুগে প্রায় ১০ লাখ নারী কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সমুদ্রের ঢেউকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর জন্য একোয়ান্টিক ডপলার কারেন্ট প্রোফাইলার (এডিসিপি) যন্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট সমুদ্রের ঢেউকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একোয়ান্টিক ডপলার কারেন্ট প্রোফাইলার (এডিসিপি) যন্ত্র সংগ্রহ করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম সংলগ্ন সমুদ্র এলাকার স্রোত ও ঢেউ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম ম্যাপিং করা হচ্ছে। ব্লু ইকোনমির অপার সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য বর্তমান সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে।
একই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বঙ্গোপসাগরে পূর্ব ও পশ্চিম জোনের কোস্টাল ও নিয়ারসোর এলাকার সব ফিজিক্যাল প্যারামিটার (যেমন ওয়েভ ডেটা, টাইড ডেটা, কারেন্ট ডেটাসহ অন্যান্য তাপমাত্রা, চাপ, লবণাক্ততা, গভীরতা ইত্যাদি) নির্ণয় গবেষণা কার্যক্রম চলছে এবং ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া নৌবাহিনী দেশের সমুদ্র সীমানায় বিদেশি টলার বা জাহাজের অবৈধ প্রবেশ রোধ, মাছ ধরা বন্ধ করা, চোরাচালান ও মানব পাচার রোধে কাজ করে চলেছে।
‘উন্নয়ন সহযোগীরা এখন আর শর্ত দেয় না’ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা দেশকে এমনভাবে গড়ে তুলছি, যাতে কখনো অন্যের ওপর নির্ভর করে এগিয়ে যেতে না হয়। আগামী দিনেও দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে এই কামনা করি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের পর উন্নয়ন সহযোগীরা এখন আর আগের বছরগুলোর মতো অনেক শর্ত দেয় না।’
গতকাল বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের সদর দপ্তরে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। খবর বাসস।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সব সময় দেশে ও বিদেশে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। তাদের মানবিক সদিচ্ছার কারণে, তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সম্মান পায়। আমি খুব গর্ববোধ করি, যখন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা তাদের দেশে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করেন।’
প্রধানমন্ত্রী রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গার্ডগুলোর সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং পিজিআর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খালেদ কামাল প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলের চারপাশে হেঁটে সব অফিসার এবং জুনিয়র কমিশনড অফিসারদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী পিজিআরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটেন।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক এবং রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রুপিতেও বাণিজ্যিক লেনদেনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি অনুমোদনও দিয়েছেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশে কার্যত দুটি তফসিলি রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার নস্ট্র (ভারত থেকে বিদেশি বাণিজ্যিক লেনদেনের হিসাব) অ্যাকাউন্টও খুলেছে। এখন গ্রাহক পেলেই রুপিতে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করা যাবে। তবে এ বাণিজ্য হবে শুধু ব্যাংকগুলোর কাছে ভারতে রপ্তানির মাধ্যমে আহরণ করা রুপি দিয়ে। এ ক্ষেত্রে ডলারের বিপরীতে রুপি ক্রয় করে বাণিজ্য করা হবে না। এমনটাই জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আগামী ১১ জুলাই রুপিতে আমদানি-রপ্তানির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। ইতিমধ্যে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও ইস্টার্ন ব্যাংক রুপি লেনদেনে বিশেষ ভস্ট্রো (বাংলাদেশ থেকে বিদেশি বাণিজ্যক লেনদেনের হিসাব) অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) থেকে অনুমোদন পেয়েছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে সোনালী ব্যাংক। এখন গ্রাহক পেলেই যেকোনো মুহূর্তে রুপিতে এলসি খোলা যাবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে রুপিতে লেনদেন হলে বাংলাদেশ তেমন কোনো লাভ পাবে না। কারণ আমাদের আমদানি ও রপ্তানিতে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। এজন্য রুপিতে লেনদেনে ডলার সংকট কমবে না। উল্টো আমরা আগে যেই দুই বিলিয়ন ডলার পেতাম সেটাও এখন ভারত রুপিতে পরিশোধ করবে। এই পদক্ষেপে বাংলাদেশের কোনো লাভ নেই। এতে বাংলাদেশে ভারতীয় রুপির ডিমান্ড বাড়বে। আর ভারতে মুদ্রা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্তিশালী হবে।
দেশের কোনো ব্যাংক অন্য দেশের কোনো ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের উদ্দেশে হিসাব খুললে সে হিসাবকে নস্ট্র হিসাব বলা হয়ে থাকে। একইভাবে বিদেশের কোনো ব্যাংক যদি বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে একই উদ্দেশ্যে হিসাব খোলে, তবে তাকে বলা হয় ভস্ট্র হিসাব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডকে (ইবিএল) স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে আইসিআইসিআই ব্যাংকের হিসাব খুলতে অনুমোদন দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গত সপ্তাহে আরবিআই অনুমোদন দিয়েছে। এখন আর লেনদেন করতে সমস্যা থাকল না। গ্রাহক পেলেই যেকোনো সময় লেনদেন শুরু হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানায়, ভারতীয় মুদ্রায় লেনদেনের সুবিধা চালু হলেও এখন পর্যন্ত কোনো গ্রাহকের মাধ্যমে রুপিতে এলসি খোলার খবর পাওয়া যায়নি। দুই দেশের মধ্যে সম্মত লেনদেনের পদ্ধতি অনুসারে, বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা আনুষ্ঠানিকভাবে ১১ জুলাই থেকে রুপিতে রপ্তানি আয় পেতে এবং এর সমমূল্যের অর্থে আমদানি বিল নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হবে। হজের কার্যক্রম শেষে আগামী রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেবেন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। আগামী ১১ জুলাই তিনি ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত রুপিতে দুই দেশের লেনদেন শুরুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ এবং প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। আর রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া গত বছর তাদের রপ্তানিকারকদের বাংলাদেশের সঙ্গে ডলার এবং অন্যান্য প্রধান মুদ্রায় লেনদেন এড়িয়ে যেতে বলেছিল। বাংলাদেশের রিজার্ভ কমে যাওয়া রোধ করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি থাকায় রুপিতে লেনদেনে ঝুঁকিও আছে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি শুরু হলে পণ্য বাণিজ্যেই তা সীমাবদ্ধ থাকবে না; ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও হবে।
এদিকে ডলার সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সেপ্টেম্বরে দেশে টাকা-রুপিভিত্তিক ডেবিট কার্ড চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৮ জুন অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি উপস্থাপনকালে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এ ঘোষণা দেন। কার্ডের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা টাকা দিয়ে যেমন দেশের মধ্যে কেনাকাটা করতে পারবেন, তেমনি একই কার্ড দিয়ে ভারতে রুপিতেও কেনাকাটা করতে পারবেন। এই কার্ডের মাধ্যমে ডাবল কারেন্সি এক্সচেঞ্জের প্রয়োজনীয়তা মিটবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে টাকাকে ডলারে এবং এরপর ডলারকে রুপিতে রূপান্তর করতে ৬ শতাংশ বিনিময় লোকসান সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছেন গভর্নর। তিনি আরও বলেন, যেসব বাংলাদেশি পর্যটক ঘন ঘন ভারত ভ্রমণে যান তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী হবে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ২৫ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি ট্যুরিস্ট ভিসায় ভারতে গিয়েছিলেন। তাদের ভ্রমণের প্রধান গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় অনুষ্ঠান, অবসর ও চিকিৎসা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে, রুপিতে লেনদেন কোনো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরিতে সাহায্য করবে না, যতক্ষণ না সংস্থাটি তার এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস) বাস্কেটে এ মুদ্রা অন্তর্ভুক্ত করে। এসডিআর বাস্কেটে অন্তর্ভুক্তির অর্থ হলো, মুদ্রাটি একটি আন্তর্জাতিক রূপান্তরযোগ্য মুদ্রা হিসেবে গণ্য হবে। মার্কিন ডলার, ইউরো, জাপানিজ ইয়েন এবং ব্রিটিশ পাউন্ডের পাশাপাশি ২০১৬ সালে পঞ্চম মুদ্রা হিসেবে ইউয়ানকে এসডিআর বাস্কেটে অন্তর্ভুক্ত করে আইএমএফ।
বাজেট সহায়তা ও ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া শর্তের কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে ঢাকা এসেছে সংস্থাটির মুদ্রা ও পুঁজিবিষয়ক কারিগরি মিশন। এদলটি দেশে থাকতেই আগামী ১৪ জুলাই আইএমএফের ডিএমডি বো লি-এর দেশে আসার কথা আছে। তিনি আইএমএফের চার উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের একজন। এবারের আলোচনার পরই বাজেট সহায়তা দেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে দ্বিতীয় কিস্তির বিষয়েও সিদ্ধান্ত দেওয়া হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব জানা যায়।
গতকাল বুধবার দেশে এসেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আইএমএফ প্রতিনিধিরা। ঋণ অনুমোদনের আগে সংস্থাটির দেওয়া শর্তের কতটা সরকার বাস্তবায়ন করেছে এবং বাকি শর্তপূরণে অগ্রগতি কতটা আলোচনাকালে তা গুরুত্ব পেয়েছে। গতকালের বৈঠকে ঋণ ও নগদ ব্যবস্থাপনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে আলোচনা হয়। আদর্শ বন্ড ইস্যু, দায় ব্যবস্থাপনা এবং মধ্য মেয়াদে আর্থিক কাঠামো বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে ব্যাংক ও আর্থিক খাত, আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ও অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ, সরকারের বাজেট ঘাটতি, করছাড়, সামাজিক ব্যয়, পুঁজিবাজার নিয়েও কথা হয়েছে। বৈঠকে গত অর্থবছরে এনবিআরে রাজস্ব ঘাটতির কারণ নিয়ে অনেকটা সময় কথা হয়। এ ছাড়া চলতি বাজেটে সংস্থাটির শর্তের কী কী অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তা জানানো হয়েছে।
এবার ঋণ ও বাজেট সহায়তা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অরিন্দম রায়ের নেতৃত্বে সংস্থার পাঁচ সদস্যের এই মিশনের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের দুই সদস্যও রয়েছেন। আইএমএফের পুঁজিবিষয়ক এই কারিগরি মিশন বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বীমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ১৭ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবেন।
চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে সংস্থাটি। ঋণ অনুমোদের আগেই সংস্থাটি সরকারকে জানিয়ে দিয়েছিল নিয়মিত ঋণের কিস্তি পেতে হলে কত দিনে কী কী শর্তপূরণ করতে হবে। সরকার শর্ত মানতে রাজি হওয়ায় ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের তিন দিন পরই প্রথম কিস্তিতে ছাড় করেছে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে সাত কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ দেওয়ার কথা। বৈশ্বিক মন্দার কারণে আর্থিক সংকটে আছে বাংলাদেশ সরকার। ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেতে এরই মধ্যে সংস্থাটির সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বাজেট সহায়তা পেতে বিশ^ব্যাংকসহ অন্যান্য ঋণদানকারী সংস্থার সঙ্গেও চলছে যোগাযোগ। এসব সংস্থা থেকেও ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে আইএমএফের দেওয়া শর্ত মানতে ব্যর্থ হলে ঋণের কিস্তি ছাড় করা হবে না এমন কথা আগেই বাংলাদেশ সরকারকে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
ছোট-বড় আকার মিলিয়ে আইএমএফ থেকে এ পর্যন্ত এগারোবার ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১২ সালে সাত কিস্তিতে ১০০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি করে বাংলাদেশ। এর অন্যতম শর্ত ছিল নতুন ভ্যাট আইন প্রণয়ন করা। এ আইন করতে দেরি করায় শেষের দুই কিস্তি আটকেও দিয়েছিল আইএমএফ।
এরই মধ্যে আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশে সরকারের শর্ত বাস্তবায়ন নিয়ে খানিকটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শর্তের বেশিরভাগই অন্তর্ভুক্তির কথা থাকলেও নির্বাচনের আগের শেষ বাজেট হওয়ায় ভোটার অসন্তোষ্টির ভয়ে সরকারের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। আইএমএফ প্রতিনিধিদের এবারের সফরের বৈঠকে শর্ত মানার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবে বলে জানা গিয়েছে।
এর আগে ঋণ অনুমোদনের প্রায় তিন মাস পর ঋণের শর্তের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার জন্য গত এপ্রিলের শেষে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে। গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিনিধিদল।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঋণের কিস্তি ছাড়ের আগে আইএমএফ প্রতিনিধিরা মূল্যায়ন করে থাকেন যে কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে এবং বাকিটা বাস্তবায়নে অগ্রগতি কতটা। কয়েকটা খাতে শর্তপূরণ হবে না বলে এরই মধ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিশেষভাবে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা, রিজার্ভ, উন্নয়ন বাজেট বিষয়ের শর্তপূরণ কঠিন হবে। এতে যে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় করা হবে না এমনটা মনে করছি না।
আইএমএফের ডিএমডি বো লি ২৪ ঘণ্টার জন্য ঢাকায় অবস্থান করতে পারেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। চীনা বংশোদ্ভূত এই ডিএমডির সঙ্গে আইএমএফের আরও কয়েকজনের থাকার কথা রয়েছে।
সূত্র জানায়, ডিএমডি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় টেকসই ব্যবস্থা, সবুজ অর্থায়ন ইত্যাদি বিষয়ে একটি সেমিনারে অংশ নেবেন। তার এ সফরে সরকারের শীর্ষপর্যায়ের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে। সংস্থাটির দেওয়া শর্ত বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলেও তাকে জানানো হবে। ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে তা ইতিবাচক মতামত পেতে চেষ্টা চালানো হবে।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।