
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে ওয়াশিংটনের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের আসন্ন বাংলাদেশ সফর নির্বাচনকেন্দ্রিক নয় বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ দাবি করেন তিনি।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল নির্বাচনের জন্য আসছে এ তথ্য আমাদের মধ্যে নেই। তারা আসছে, এখানে তাদের সঙ্গে অনেক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। অনেক বিষয়ের মধ্যে হয়তো নির্বাচনের বিষয়টি আসতে পারে। তবে এটা ঠিক যে, এ সফরটি নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়।
১১ থেকে ১৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নাগরিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ঢাকা সফর করবেন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য হিসেবে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার এশিয়া দপ্তরের উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলী কৌর।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের এ সফর সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমেরিকার সঙ্গে আমাদের অনেক মেকানিজম কাজ করছে। এর মধ্যে লেবার ও ট্রেড ইস্যু রয়েছে। আবার তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনেও যাবে।
৮-২৩ জুলাই ঢাকা সফর করবে ইইউ প্রতিনিধিদল : পররাষ্ট্র সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আমন্ত্রণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদল ৮ জুলাই ঢাকা আসছে। প্রতিনিধিদল ২৩ জুলাই পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করবে। তাদের সফরে ঠিক হবে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক আসবে কি না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি ‘অনুসন্ধানী অগ্রগামী দল’ ৮-২৩ জুলাই বাংলাদেশ সফর করবে। এ মিশনের কাজ হবে মূলত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের কর্মপরিধি, পরিকল্পনা, বাজেট, লজিস্টিক ও নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয় মূল্যায়ন করা। অনুসন্ধানী মিশন বাংলাদেশে অবস্থানকালে সরকারের প্রতিনিধি, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবে। অনুসন্ধানী মিশন থেকে প্রাপ্ত এসব তথ্যের ভিত্তিতেই পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলাপ অমূলক : বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) ইস্যুতে আলোচনা করতে গতকাল সকালে ঢাকায় এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) সৌরভ কুমার। এদিন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সৌরভ কুমারের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র সচিব।
মার্কিন প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফর এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের এ সফরের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এর সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরের কোনো সম্পর্ক নেই। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সফরে নির্বাচনের বিষয় নিয়ে আলাপের কথা অমূলক।
বলা হচ্ছে বিমসটেক ইস্যুতে আলোচনা করতেই ভারতের পররাষ্ট্র-সচিব (পূর্ব) ঢাকায় এসেছেন। কিন্তু তার সফরের সময়ে বিমসটেকের সেক্রেটারি জেনারেল ঢাকায় নেই। তাহলে কি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়েই ভারতের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এমন প্রশ্নে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এগুলো একেবারে অমূলক। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্পেকুলেশন দেখেছি। এটা ঠিক নয়। বিমসটেকের সেক্রেটারি জেনারেলের মা মারা গেছেন। সে কারণেই তিনি নেই। এখানে অন্য কিছু নেই।
সৌরভ কুমারের সফরের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফরের কোনো সম্পর্কই নেই জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এসব দিন আগেই অর্গানাইজ করা হয়েছে। তাই ভারতের সচিব এলেন, তার সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদল আসছে এটাকে একটা সম্পর্ক করা এটা ঠিক নয়। একটা দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সিরিজ অব সফর বা মিটিং হয়। বরং আমাদের কমই হয়।
তিনি বলেন, একই সময়ে তিন-চারটি মিশন আসছে, এর মানে এই নয় যে, প্রতিটি ডেলিগেশন অর্গানাইজ করে বা কো-অর্ডিনেট করে করছে। সুতরাং এখানে এত এডিট করার কিছু নেই, প্রতিটির আলাদা ব্যাকগ্রাউন্ড আছে।
১০৬২ জনকে সুদান থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম ব্রিফিংয়ে বলেন, ১ হাজার ৬২ জন বাংলাদেশের নাগরিককে সুদান থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, সুদানের সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনীর মধ্যে ১৫ এপ্রিল থেকে সংঘর্ষ চলমান। এ পর্যন্ত প্রায় ছয় শতাধিক মানুষ সেখানে নিহত হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ৯০৩ বাংলাদেশিকে গত মে মাসে সরকারি খরচে সুদান থেকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে ৮০, ২ জুলাই আরেকটি ফ্লাইটে ৫৯ ও ৩ জুলাই আরও ২০ বাংলাদেশি দেশে আসেন।
রফিকুল আলম বলেন, সুদানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বদর এয়ারলাইনসে সরকারি খরচে সুদান থেকে দোহায় পরিবহন করা হচ্ছে। দোহা পৌঁছামাত্র তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের ফ্লাইটে বোর্ডিং করিয়ে দেওয়া হয়। প্রত্যাবাসিত প্রত্যেককেই দেশে ফেরার পর পকেটমানি হিসেবে ৫ হাজার টাকা ও খাদ্যসামগ্রী উপহার দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, পোর্ট সুদান বা দোহা কোনো স্থানেই যেন প্রবাসীদের কোনো অসুবিধা না হয়, সেজন্য উভয় স্থানেই প্রবাসীদের জন্য খাদ্য, পানীয়, চিকিৎসা ও সাময়িক বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আটকেপড়া সব বাংলাদেশিকে নিরাপদে আমরা দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব বলে বিশ্বাস।
মালি থেকে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত : ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতভাবে গত ৩০ জুন একটি প্রস্তাব পাস হয়। ওই প্রস্তাবের মাধ্যমে কার্যত মালিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ম্যান্ডেট বাতিল ও মালি মিশন থেকে সব শান্তিরক্ষী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব শান্তিরক্ষীকে মালি থেকে প্রত্যাহার করা হবে। এ বিষয়ে মালি সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে। সচিব বলেন, মালিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন বন্ধের মূল কারণ হলো মালি সরকারের অসম্মতি।
তিনি বলেন, গত জুনে মালির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তিরক্ষীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান। স্বাগতিক দেশের সম্মতি ছাড়া শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। একই মন্তব্য করেন নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধিও।
২০১৩ সাল থেকে এ শান্তিরক্ষা মিশনের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকেই বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা মালিতে শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্বরত আছেন। বর্তমানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনী মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৭০০ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী মালি মিশনে দায়িত্বে নিয়োজিত।
বাংলাদেশ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি দেশের শান্তিরক্ষী মালি শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছে। গৃহীত রেজল্যুশন অনুযায়ী, মালি মিশনে দায়িত্বরত সব শান্তিরক্ষীকে প্রত্যাহার করা হবে। জাতিসংঘের ম্যান্ডেটের অধীন ভবিষ্যতে যেকোনো শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রস্তুতি সবসময় রয়েছে।
এ ছাড়া পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে আগামী ৩০ নভেম্বর থাইল্যান্ড যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যান এবং ভারত মহাসচিবের দায়িত্ব নেবে। ১৭ জুলাই বিমসটেকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে কিছু অন্যরকম অর্জনের কথা বলা যাক। যেখানে তামিম ইকবাল একমেবাদ্বিতীয়ম। লর্ডসের গৌরবের অনার্স বোর্ডে নাম তোলা একমাত্র বাংলাদেশি ব্যাটার তিনি। ১৫,২০৫ রানে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই রানের কোটা ছুঁয়েছেন। সব ফরম্যাটে সেঞ্চুরি করার কৃতিত্বও বাংলাদেশিদের মধ্যে শুধু তার। আর সবচেয়ে আলোচিত হবে দলের জন্য নিবেদিত হয়ে ভাঙা আঙুল নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে যাওয়ার সেই দিনটি। এই সব ভিন্নতা তামিমকে আলাদা করেছে সবসময়। এবার আরও একটি দিকে আলাদা হয়ে থাকবেন তামিম। ভেতরের ঘটনা যাই থাকুক। সে সবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের মাথা উঁচু রেখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলার যে সাহস তামিম দেখালেন তা এই ক্রিকেটারকে আর সবার চেয়ে আলাদা করেই রাখবে।
কাল চট্টগ্রামে এক হোটেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা তামিমের কাছ থেকে বোমা ফাটানোর মতোই ছিল। গত কিছু বছরে বিসিবির সঙ্গে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সুসম্পর্ক ছিল না। ধারাবাহিকতায় মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিমরা সময়ে সময়ে ক্রিকেট ছেড়ে গেছেন নীরবে। ২০২০ সালে মাশরাফীর নীরব প্রস্থানের পর ওয়ানডের নেতৃত্ব পেয়েছিলেন তামিম। সে বছর ১৪ মার্চ মিরপুরে নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে সবার প্রতি একটা কথা বলেছিলেন তিনি ‘যদি কোনো কারণে কোনো সময়- সেটা ৬ মাস হোক বা ১ বছর, আমার যদি মনে হয় আমি দলের সঙ্গে সুবিচার করছি না, তাহলে আমিই হব প্রথমজন যে সরে দাঁড়ানোর কথা বলবে। আমিই সবার আগে হাত তুলে বলব ‘সরি’।
তামিম কথা রেখেছেন, সরি বলে সরেও গেছেন। সেটা যতটা না পারফরম্যান্স খারাপের কারণে, তার চেয়ে বেশি দলের টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বোর্ডের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে। ঠিক যে কারণে মাশরাফীও এখনো অবসর বলেননি। শুধু সতীর্থদের কাছে বলে টেস্ট অবসরে গেছেন মাহমুদউল্লাহ। টি-টোয়েন্টি দলে এখন তিনি উপেক্ষিত। দল থেকে বাদ পড়ার ভয়ে আগেই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত জানিয়ে টি-টোয়েন্টি ছেড়েছেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন তামিম। বিসিবির সঙ্গে আলোচনা বা তাদের ডাকের অপেক্ষায় না থেকে বাকি থাকা দুই ফরম্যাট টেস্ট ও ওয়ানডে থেকে একসঙ্গে বিদায় বলে দিলেন তিনি। এই সিদ্ধান্ত জানানোটা তার অন্যরকম সাহসিকতা, অন্যরকম ভিন্নতা।
অবশ্য গত কয়েক মাসের ধারাবাহিকতা তামিমকে চাপে ফেলেছিল এমনিতেই। গত ১০ ওয়ানডে ধরে মাত্র একটি ফিফটি ছিল তার ব্যাটে। এশিয়া ও বিশ্বকাপের আগে দলের অধিনায়কের নিশ্চুপ ব্যাট চারদিকে সমালোচনা তোলে। সঙ্গে ছিল পুরনো কোমরের চোট। যে চোটের কারণে সিরিজের পর সিরিজ তাকে নিয়ে শঙ্কা ছিল টিম ম্যানেজমেন্টের। সবশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে অনেকটা জোর করেই নিজের ফিটনেস বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করেন তামিম। ‘নিজের জোর’ বিষয়টি স্পষ্ট হয় ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনের পর কোচ চ-িকা হাথুরুসিংহের বিরক্তি। ফোন করে তামিমের সিদ্ধান্তে যে তিনি একমত নন তা প্রকাশ করেছিলেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনের কাছে। বিসিবি প্রধানও এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখান সংবাদ মাধ্যমে। ঠিক এ ব্যাপারটাই আঘাত করেছে তামিমের মনে।
গত কয়েক সিরিজ ধরে খেলতে না পারা, ফিটনেস হারিয়ে ফেলায় টিম ম্যানেজমেন্টের নানা বিষয়ে উপেক্ষার শিকার হওয়া তামিমের মানসিকতায় প্রভাব ফেলে। তাই নিজে থেকেই অবসরের কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন এই ব্যাটার। তামিমের সঙ্গে গত কিছুদিনে টিম ম্যানেজমেন্টের সম্পর্ক কেমন ছিল বা কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন তা জানতে চেয়ে তার পারিবারিক ঘনিষ্ঠ একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশ রূপান্তর। ওই সূত্র জানায়, তামিমকে অবসর নেওয়ার কথা কেউ না বললেও এই পথে হাঁটতে একরকম বাধ্য করা হয়েছে।
আর বুধবার রাতে তামিম যখন অবসরের সিদ্ধান্ত নেন, তখন আবার বিসিবির পক্ষ থেকে তামিমকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করানোর চেষ্টাও করা হয়েছিল বলে জানায় ওই সূত্র। তামিমের মন ফেরাতে আফগানিস্তান সিরিজে বিশ্রাম নেওয়া, বিশ্বকাপে চাইলে নেতৃত্ব করা আর নেতৃত্ব না চাইলে আরও দুই বছর ওয়ানডেতে ব্যাটার হিসেবে খেলে যাওয়ারও প্রস্তাব দিতে চেয়েছিল বিসিবি। কিন্তু তামিম অবসরের জন্য মনস্থির করার পর এসব আর আমলে নেননি। আসলে এই প্রস্তাবগুলো দেওয়ার জন্য তামিমের সঙ্গে যোগাযোগই করতে পারেনি বিসিবি। বুধবার রাত ১টায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তামিম সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে টিম হোটেল ছেড়ে দেন। তার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েও তাই বিসিবির কেউ সফল হননি।
তামিমের পক্ষ হয়ে ওই সূত্র একরকম ক্ষোভ নিয়েই জানাচ্ছিলেন, ‘এটা তো এখন করবেই (সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের চেষ্টা)। আগে নিজেদের একরকম ইমেজ দেখাবেন এরপর রাগ করে চলে যেতে চাইলে তখন আবার আটকাতে চাইবেন এটা কেমন। তামিমকে দলের কেউই কিন্তু বলেনি যে অবসর নিয়ে নাও। কিন্তু নানা ইস্যুতে এমনভাবে মানসিক চাপ বা বিরক্ত করছিল যে এই সিদ্ধান্ত নিতে তাকে বাধ্য করা হয়েছে। ধরেন এক বাসায় কাউকে কতক্ষণ বিরক্ত করা যায় বেশি বিরক্ত করলে তো আপনি বাসা থেকে বের হয়ে যাবেন।’
এই বিরক্তের ব্যাপারটা শুধু কোচের দিক থেকেই আসছিল কি না এটা জানতে চাওয়া হলে সূত্র জানায়, ‘শুধু কোচ না। বিসিবির আরও অনেকে আছে না যারা বোর্ড চালায়।’
শেষ কথায় স্পষ্ট বোঝায় যায় প্রথম ওয়ানডের আগে হাথুরুর তামিমের খেলা নিয়ে বিরক্তিই তামিমের মূল ক্ষোভের কারণ। বাংলাদেশ ক্রিকেটে যতবার নতুন কোচ এসেছেন ততবারই পুরনো বা অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা কাটা পড়েছেন দল থেকে। তাদের নতুন পরিকল্পনার সঙ্গে পুরনোরা খাটেন না। চ-িকা হাথুরুসিংহের নতুন শুরুতে এবার কাটা পড়লেন তামিম। তার বাজে ফর্ম বা ফিটনেস তামিমকে দলে না রাখার একটা কারণ, সেই কারণকে আর বাড়তে দিলেন না তামিম।
‘আমার টপিক এখানেই শেষ করে দিন। অন্তত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য। এটাকে নিয়ে আর বেশি গুঁতোগুঁতি করবেন না, কেন বা কী, কী হতে পারত, না হতে পারত। এটার সমাপ্তি টেনে দিন। সবসময়ই বলেছি, যে কোনো ব্যক্তির চেয়ে দল সবসময়ই বড়। দলের দিকে মনোযোগ দিন। এই সিরিজে আরও দুটি ম্যাচ আছে, যে সিরিজ আমাদের জেতা উচিত বলেই বিশ্বাস আমার। এরপর বড় দুটি ট্রফি আছে (এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ)’ গতকাল চট্টগ্রামের টাওয়ার ইন হোটেলে সাংবাদিকদের বলে গেলেন তামিম ইকবাল।
একদিন আগেও পরিকল্পনা সাজাতে থাকা অধিনায়ক এখন ‘সাবেক’ ক্রিকেটার।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তামিম ইকবালের হঠাৎ অবসরের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড গ্রহণ করেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বোর্ডের জরুরি সভা শেষে সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানান, বোর্ড তামিমের সঙ্গে কথা বলার জন্য অপেক্ষায় আছে। আফগানিস্তান সিরিজের বাকি দুই ওয়ানডেতে সহঅধিনায়ক লিটন দাস দলকে নেতৃত্ব দেবেন।
রাজধানীর একটি হোটেলে রাত ১০টা নাগাদ শুরু হয় মিটিং। অবশ্য সে মিটিং হয় দুই ঘণ্টাব্যাপী। এরপর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। শুরুতেই তামিমের আচমকা এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে বললেন অপ্রত্যাশিত।
‘আমাদের জন্য একেবারেই... অবাক হয়েছি, অপ্রত্যাশিত ছিল। ম্যাচের তিন দিন আগেই তামিমের সঙ্গে কথা হয়েছে। গতকাল (বুধবার) ম্যাচ শুরুর আগেও কথা হয়েছে। আমার পক্ষে বোঝার কোনো উপায় ছিল না যে এমন সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে’ বলেন পাপন।
বিসিবি সভাপতি দাবি করেন, তামিম তাকে বলেছিলেন বিশ্বকাপ ছাড়াও পরবর্তী চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত অধিনায়ক থাকবেন, ‘পরবর্তী চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত থাকবে সে বলেছিল। এ ছাড়া মাশরাফী, সাকিব, তামিম, রিয়াদ, মুশফিক এ সিনিয়র পাঁচজন ক্রিকেটার না থাকলে এই জায়গায় বাংলাদেশ আসত না। আমি সবসময় বলেছি, আমাদের বেস্ট ওপেনার তামিম। বেস্ট ব্যাটার মুশফিক। বেস্ট খেলোয়াড় সাকিব। সবসময় বলেছি আমি।’
কী কারণে তামিম বিদায় জানিয়েছেন তা জানা নেই বিসিবিপ্রধানের, ‘বুঝতে পারছি না যে আসলে কী হয়েছে, হঠাৎ করে সে কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল। তিন দিন আগেও তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে স্কোয়াড নিয়ে। তারপর এমন কী হলো যে সে এরকম সিদ্ধান্ত নিল। আমি এটা ধারণাও করতে পারিনি। যদি আমরা বিষয়টা আগে বুঝতে পারতাম, তাহলে তার সঙ্গে আলোচনা করতাম। তাহলে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিতাম বা এ পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সেজন্য একটি ব্যবস্থা নিতাম।’
শতভাগ ফিট না হয়েও তামিমের আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে খেলার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই অভিজ্ঞ ওপেনারকে নিয়ে উত্তপ্ত ছিল পরিবেশ। তামিমের এমন মন্তব্যের জেরে বিসিবি সভাপতি একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।
নিজের ওই বক্তব্যের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন পাপন, ‘আবার বলছি, যতবার এমন পরিস্থিতি আসবে, যেকোনো খেলোয়াড়, যদি সে মনে করে খেলার দিন সে সিদ্ধান্ত নেবে খেলবে কি খেলবে না এগুলো চলবে না। হয় আপনি ফিট, অথবা নন। ফিট থাকলে দলে থাকবেন, না হলে না। এটাই সবার কাছে বার্তা। আমার মনে হয় না পৃথিবীর কোনো দেশে এর ব্যত্যয় ঘটে। এটা আমি করবই।’
পাপন জানান, দুপুরে তামিমের সংবাদ সম্মেলনের পর তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। তবে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেননি। পরে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার ও তামিমের বড় ভাই নাফিজ ইকবালের কাছে বার্তা পাঠিয়ে অন্তত আফগানিস্তান সিরিজ খেলার আহ্বান করেন তিনি। যদিও তাতে কোনো সাড়া মেলেনি। বিসিবিপ্রধান জানান, তামিম অবসরের ব্যাপারে বোর্ডকে কিছু জানায়নি। তাই তার পদত্যাগ গ্রহণ করার প্রশ্নই আসে না। তবে তার জন্য অপেক্ষা করা হবে।
প্রায় এক যুগ পর জামায়াত প্রকাশ্যে মাঠে নেমে নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন করে সন্দেহ ও সমীকরণের জন্ম দিয়েছে। দলটিকে নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ‘বাগযুদ্ধ’ হয়েছে। বিএনপির সন্দেহ, জামায়াত মাঠে নামার পেছনে সরকারের আঁতাত আছে। এর পাল্টা জামায়াত বিবৃতি দেওয়ায় দুই দলের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। পরে বিএনপি মহাসচিব ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, জামায়াত বিএনপির ভাষায় কথা বলছে। স্বাধীনতার বিরোধিতা করা দলটি নিয়ে তাদের নীতির পরিবর্তন হয়নি।
জামায়াতের নেতারা বলছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। গত দুটি সংসদ নির্বাচনে তা প্রমাণ হয়েছে। দেশের জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী দলীয় ফোরামে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। তাই নির্বাচনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, নির্বাচনের আগে কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা এ তিন দফা দাবি নিয়ে রাজপথে আন্দোলনে থাকবেন তারা। একই সঙ্গে তারা বলছেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে সক্রিয় থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবে জামায়াত।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ তাহের দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সবসময় দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করে। অতীতের মতো আগামীতেও জনগণের দাবি আদায়ে বিশেষ করে ভোটাধিকার, মানবাধিকার রক্ষায় রাজপথের আন্দোলনে থাকবে।’
২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশের অনুমতি নিয়ে রাজধানী ঢাকার মতিঝিলে মিছিল করেছিল জামায়াত। এরপর সর্বশেষ গত ১০ জুন রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশ করে দলটি। প্রায় এক যুগ পর রাজধানীতে জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। দলটিকে সমাবেশের সুযোগ দেওয়ার জন্য অনেকে ধারণা করেন, আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করছে।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দলগতভাবে জামায়াতের বিচারের বিষয় আদালতের পর্যবেক্ষণ রয়েছে। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকারের ওপর চাপ রয়েছে। এরই মধ্যে জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ায় মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে, আওয়ামী লীগ কি তাদের নীতির কোনো পরিবর্তন করেছে। নাকি জামায়াতের সঙ্গে সরকারের এক ধরনের যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটা অংশের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তারা মনে করছেন, জামায়াতের প্রতি সরকার নমনীয় হলে সেটা দলের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সমাবেশের এক দিন পর রাজধানী ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের বিচারের চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতকে দোষী বলা যাবে না।’ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘জামায়াত যেহেতু নিষিদ্ধ দল নয়, তাই তাদের সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
তবে জামায়াতের সমাবেশের পরদিন রাজারবাগে পুলিশের এক অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, জামায়াত একটি অনিবন্ধিত দল। তারা মাঝেমধ্যেই বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে অনুষ্ঠান করে। বিভিন্ন ইনডোরেও তারা অনুষ্ঠান করে। দলটি অনুষ্ঠান করতে মাঠের জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু তারা অনুমতি দেননি। দলটি আবদ্ধ স্থানে ইনডোরে মিটিং করতে চেয়েছে, তারা তা দেননি। পরে মৌখিকভাবে কমিশনার (ডিএমপির) অনুমতি দিয়েছেন। এতে আওয়ামী লীগের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত ১ জুলাই বিবৃতিতে বলেছেন, বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তিনি বিএনপির সঙ্গে জোট করে জামায়াতের আন্দোলন, ক্ষমতায় যাওয়া এবং দলটির নেতাদের নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে, বিরোধী দল বিএনপির কোনো কোনো নেতা সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারের সঙ্গে এক ধরনের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে হয়তো জামায়াত নতুন করে মাঠে নেমেছে। জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার পক্ষে সরকারের মন্ত্রীরা যেভাবে যুক্তি দিচ্ছেন, তাতে সন্দেহ আরও বাড়ছে। আর বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারাও দীর্ঘদিন পর জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
গত ৩০ জুন ঠাকুরগাঁওয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ এখন স্পষ্ট।’ সেদিন রাতেই এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয় জামায়াত। পরদিন ১ জুলাই মির্জা ফখরুল এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেছেন, কয়েকটি গণমাধ্যমে তার বক্তব্য ভুলভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তবে জামায়াত নেতারা বলেছেন, বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য গতানুগতিক।
রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও জনমনে সন্দেহের বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমাদের দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিচার করে দ- কার্যকর করেছে। প্রায় এক যুগ ধরে রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে দেয়নি। রাজধানীর মগবাজারে কেন্দ্রীয় কার্যালয়, পুরানা পল্টনে মহানগর কার্যালয়সহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়গুলো বন্ধ রেখেছে সরকার। সারা দেশে আমাদের কয়েক লাখ নেতাকর্মীকে জেলে পুড়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে আমরা কীভাবে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করতে পারি। এটা তো আমাদের দলের নেতাদের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। আমরা আমাদের দলীয় রাজনীতি করছি। জনগণের পক্ষে রাজনীতি করছি। আমরা আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির পক্ষে নই, জনগণের পক্ষে রাজনীতি করি।’
তিনি বলেন, ‘সভা-সমাবেশ দেশের জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। সরকার সে অধিকার হরণ করেছে অন্যায়ভাবে। সরকারের অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক আচরণ সারা বিশে^ সমালোচিত হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। আমরা মনে করি সরকার শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আমাদের সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে।’
২০ দলীয় জোটে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পর জামায়াত যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিল। সে অনুযায়ী তারা দুয়েকটি কর্মসূচি পালন করলেও শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকেনি। তবে দলটি তিন দফা দাবিতে কর্মসূচি নিয়ে আবার মাঠে নামছে চলতি মাসেই।
জামায়াতকে সঙ্গে রাখার বিষয়ে বিএনপি প্রকাশ্যে কিছু না বললেও সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকেই মাঠে স্বাগত জানিয়েছি দলটি। অর্থাৎ দূরে থাকলেও কৌশলগত আন্দোলন কর্মসূচির মাধ্যমে দল দুটি কাছাকাছি থাকছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা জনগণের ভোটাধিকার, মানবাধিকার ফিরিয়ে দিতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথের আন্দোলনে থাকব। সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় করব আমরা।’
বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলার আগে নিজের দেশকে সামলানোর পরামর্শ দিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আজ যারা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলছেন, তারা ২০০১ সাল দেখেননি। ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট দেখেননি। আমেরিকাতেও প্রতিদিন গুলি করে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। পরিবারসহ খুন করা হচ্ছে। নিজের দেশের মানুষের বাঁচাবে কী করে তাদের সেই চিন্তা আগে করা উচিত।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশনের (২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন) সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠের মধ্য দিয়ে অধিবেশন সমাপ্তি ঘোষণা করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭২ সালের ১৬ জানুয়ারি দেওয়া একটি রেকর্ড করা ভাষণ বাজানো হয়।
২২ কার্যদিবসের এ অধিবেশনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পাস ছাড়াও ১৪টি বিল পাস হয়েছে। বাজেটের ওপর ১৮৭ জন সদস্য ৩২ ঘণ্টা ৩ মিনিট বক্তব্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্য ৯৭টি প্রশ্ন জমা পড়লেও তিনি উত্তর দিয়েছেন ৫৬টির এবং মন্ত্রীদের জন্য ১ হাজার ৮৮৯টি প্রশ্ন জমা পড়লেও তারা উত্তর দিয়েছেন ১ হাজার ৩৩৮টির।
সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে অত্যাচার-নির্যাতনের চিত্র এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপির আন্দোলন কেন্দ্র করে হত্যা, অগ্নিসন্ত্রাসসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশে মানবাধিকারের খোঁজে আসে অনেকে। আমার প্রশ্ন, ২০০১-এর নির্বাচনে যখন এভাবে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে, মেয়েদের ধর্ষণ করছে, শিশুরা রেহাই পাচ্ছে না তখন সেই মানবাধিকার ফেরিওয়ালারা কোথায় ছিল? তারা কেন চুপ ছিল? তাদের মুখে কোনো কথা ছিল না কেন? সেটা দেশি-বিদেশি, আমি সবার বেলায়ই বলব। আর অনেকেই আসে আমাদের সবক দেয়, মানবাধিকার শেখায়।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই বলে যারা, তারা ২০০১ দেখেনি? তারা ১৫ আগস্ট দেখিনি? ১৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগপর্যন্ত কী চলেছে? সেটা তারা দেখেনি, তখন তাদের চোখেও পড়েনি, কানেও শোনেনি?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকারের কথা বলে, আজকে রোহিঙ্গা তাদের দেশে যখন অত্যাচার, নির্যাতিত হচ্ছিল, গণহত্যার শিকার হচ্ছিল, আমরা তাদের আশ্রয় দিই, প্রথম যখন আশ্রয় দিই তখন কে ছিল। আমরা শুধু আশ্রয় নয়, প্রথম কয়েক মাস তো আমরাই খাওয়াই। এই যে তাদের যে পাঁচটা বছর, পরবর্তীকালে তাদের অনেক দেশ অনেক সহযোগিতা করেছে, কিন্তু যখন তারা আমাদের দেশে আসে তখন তো কোনো সাহায্যই আমরা পাইনি। আমরা মানবিক কারণে যখন এতগুলো লোকের দায়িত্ব নিতে পারি, এর থেকে মানবাধিকার সংরক্ষণ আর কী হতে পারে, সেটাই আমার প্রশ্ন।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা অন্য দেশের নির্যাতিত মানুষকে আশ্রয় দেয়, আওয়ামী লীগ সরকার সেই আশ্রয় দিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগ সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে কেন? কীভাবে করবে? সারা বিশ্বে তো বহু জায়গায় বহু মানুষ খুন হচ্ছে। আমেরিকায় তো প্রতিদিন গুলি করে করে শিশুদের হত্যা করছে স্কুলে গিয়ে, শপিং মলে হত্যা হচ্ছে, রাস্তায় হত্যা হচ্ছে। এমনকি আমাদের বাঙালি মেয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, ছিনতাই করতে গিয়ে তাকে হত্যা করেছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা ছেলের বাড়ি বেড়াতে গেছে, মসজিদে নামাজ পড়ে ফিরে আসছে, তাকে হত্যা করেছে। আমার আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজমুল, তাকে হত্যা করেছে। আর প্রতিদিন তো তাদের প্রতিটি স্টেট, এক-একটা স্টেটে দেখা যাচ্ছে, গুলি করে করে মানুষ হত্যা করছে। ঘরের মধ্যে গিয়ে পরিবারসহ হত্যা করে আসছে। তাদের নিজের দেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষা আগে করা উচিত। তারা নিজের দেশের মানুষ বাঁচাবে কী করে সেই চিন্তা আগে করুক, সেটাই তাদের করা উচিত।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোকে অতীতের যেকোনো সময়ের থেকে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। সেখানে কেউ ভোটকেন্দ্র দখলে যায়নি। উপনির্বাচনগুলোও স্বচ্ছ হয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনও অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। কারণ আওয়ামী লীগের আমলে জনগণ ভোট দিতে পারে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে মানুষ এখন অতীতের যেকোনো সময়ের থেকে বেশি শান্তিতে আছে। ইউক্রেন যুদ্ধ যার কারণে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। আমরা তা সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। একটা মানুষও না খেয়ে মরেনি। বাজারে পর্যাপ্ত খাবার আছে। উৎপাদন বাড়াতে কৃষিতে ভর্তুকি দিচ্ছি। গরির-অসহায় মানুষকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। গৃহহীনদের ঘর দিচ্ছি। মানুষ নিরাপদ আশ্রয় পাচ্ছে। জনগণের সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা নানা ধরনের অপকর্ম করেও তারা কিন্তু এ গণতন্ত্র ধ্বংস করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ আছে বলেই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। আওয়ামী লীগ আছে বলেই মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। মানুষ নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দেওয়ায় মঙ্গা ও দুর্ভিক্ষ দূর হয়েছে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ২০৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ উন্নত স্মার্ট দেশে পরিণত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রার্থনা করুন, গণতন্ত্র যেন অব্যাহত থাকে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতি ধরে রাখতে গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার ধারাবাহিকতার বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন যাতে দেশের গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকে। দেশে দীর্ঘ সময় ধরে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকায় আমরা উন্নয়ন ধরে রেখে দেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছি। গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা অব্যাহত না থাকলে এ অর্জন সম্ভব হতো না।’
গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের উত্তর প্লাজায় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের জন্য ফিতা কেটে নতুন অফিস উদ্বোধনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গণতন্ত্রের ধারা যে দীর্ঘ সংগ্রামের ফল তা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা এক দিনে আসেনি।
পরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন।
এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, মন্ত্রিসভার সদস্য, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ, হুইপ, সংসদ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, নতুন অফিস কাজের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ নিশ্চিত করবে এবং সংসদ সচিবালয়ের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে সাহায্য করবে।
সংসদ লাইব্রেরিটিকে অমূল্য আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী ভালো পার্লামেন্টারিয়ন হওয়ার জন্য অতীতের সংসদ অধিবেশনের কার্যবিবরণী অধ্যয়নে এখানে কিছু সময় ব্যয় করার জন্য আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, তারা কার্যবিবরণীর উদ্ধৃতি দিয়ে সংসদে বক্তব্য দিতে পারেন।
দেশের প্রকৃত ইতিহাস সবাইকে জানাতে সংসদে একটি আর্কাইভ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী স্পিকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বিশ্বখ্যাত স্থপতি লুই ইসাডোর কানের নকশা করা সংসদের মূল নকশা রক্ষায় তার সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার চার লাখ মার্কিন ডলার ব্যয়ে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংসদের সম্পূর্ণ নকশা সংগ্রহ করেছে।
অনুষ্ঠানে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আগামী অক্টোবরের মধ্যে সংসদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন, কর্ম ও সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি আর্কাইভ নির্মাণ করা হবে। বাসস
বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের রাজনীতিকদের চিঠিকে নব্য উপনিবেশ হিসেবে দেখছে রাশিয়া। একই সঙ্গে তারা মনে করছে, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আরও একটি নগ্ন হস্তক্ষেপ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্টে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকদের লেখা কিছু চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়টি রাশিয়ার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। টুইটে বলা হয়, এটা হলো নব্য উপনিবেশ এবং একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আরেকটি নগ্ন হস্তক্ষেপ।
এর আগে গত বছর ডিসেম্বর মাসেও বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পরোক্ষভাবে ‘ব্ল্যাকমেইল এবং আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার’ অভিযোগ তোলা হয়। ওই বছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ৯ বছর আগে নিখোঁজ বিএনপি এক নেতার বাসায় যান। সে সময় সেখানে পিটার হাসের কাছে স্মারকলিপি দিতে যান জিয়াউর রহমানের আমলে সশস্ত্র বাহিনীতে হত্যা ও নিখোঁজের শিকার পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’-এর সদস্যরা। যা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। বাংলাদেশ সরকারের কিছু মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতারা যখন অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তাও প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় সরকার। এর জেরে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানকে তলব করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। এর পরদিন ঢাকার রুশ দূতাবাস তাদের ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলে, ভিন্ন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা সম্পর্কিত ১৯৬৫ সালের জাতিসংঘের ঘোষণা অনুসারে কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বা বৈদেশিক নীতির বিষয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করার অধিকার অন্য কোনো রাষ্ট্রের নেই।
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নিজেদের উন্নত গণতন্ত্রের অধিকারী বলে দাবি করা দেশগুলোর মধ্যে আধিপত্যবাদী উচ্চাকাক্সক্ষা সবচেয়ে স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। তারা শুধু জাতিসংঘের সার্বভৌম সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপই করে না, বরং নির্লজ্জ প্রতারণা, অবৈধ বিধিনিষেধ আরোপ করে।
রুশ দূতাবাসের এ বিবৃতি প্রকাশের পরদিন পাল্টা অবস্থান প্রকাশ করে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। এক টুইট বার্তায় দূতাবাস ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের প্রসঙ্গ টেনে আনে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
ঠান্ডা-সর্দি-কাশির সমস্যায়, মেদ কামনো, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, বিভিন্ন সংক্রমণ রুখতে মধু খুবই উপকারী। এর পাশাপাশি মধু কিছুটা অ্যান্টিসেপ্টিকেরও কাজ করে। বাজারে এখন নানা রঙের মোড়কে মধু পাওয়া গেলেও বহু নামী কোম্পানির মধুতেও ভেজাল থাকে। তাহলে খাঁটি মধু চিনবেন কী করে? কয়েকটি সাধারণ পদ্ধতিতেই বোঝা যায় মধু খাঁটি না কি ভেজাল মেশানো। দেখে নিন, খাঁটি মধু চিনে নেওয়ার কিছু উপায়।
- এক গ্লাস পানিতে এক চামচ মধু দিন। তার পরে গ্লাসটি আস্তে আস্তে নাড়াতে থাকুন। মধু যদি খাঁটি হয় তবে এটি গোলকার পিণ্ডের মতো হয়ে গ্লাসের নিচে বসে যাবে এবং পানির সঙ্গে মিশবে না। তবে মধু যদি পানির সঙ্গে তাড়াতাড়ি মিশে যায়, তা হলে সেটি নকল।
- এক টুকরো কাগজের ওপর কয়েক ফোঁটা মধু দিন। খাঁটি মধু হলে তা ছড়িয়ে পড়বে না এবং কাগজে শোষিত হবে না। এক জায়গায় অক্ষত থাকবে। এতে কাগজ হালকা চটচটে হয়ে যেতে পারে। তবে মধু যদি খাঁটি না হয়, তাহলে তা দ্রুত কাগজ শুষে নেবে এবং কাগজে ভেজা দাগ পড়ে যাবে।
- মধু খাঁটি কিনা তা পরীক্ষা করতে, আপনার বুড়ো আঙুলে এক ফোঁটা মধু নিন। যদি খুব চটচট করে এবং আঠালো মনে হয়, তবে সেই মধু খাঁটি। তবে মধু যদি পানির মতো লাগে, তাহলে তা নকল।
- খাঁটি মধুতে খুব মিষ্টি এবং মনোরম সুগন্ধ রয়েছে। অল্প পরিমাণে মধু মুখে দিয়ে দেখুন, যদি তাতে ফুল বা ফলের মতো মিষ্টি গন্ধ থাকে, তবে তা খাঁটি। আর মধু ভেজাল হলে তার স্বাদ অতিরিক্ত মিষ্টি হতে পারে, অথবা মধুতে আরও কিছু উপাদান থাকার কারণে তার স্বাদ কম হতে পারে।
- মধু খাঁটি অথবা নকল কি না, তা বোঝার আরও এক সহজ রাস্তা হল, মধুতে ফেনা হচ্ছে কি না সেটা দেখা। যদি খুব ফেনা হয় তাহলে তাতে ভেজাল মেশানো।
- মোমবাতির সলতে মধুতে ডুবিয়ে সেটা জ্বালানোর চেষ্টা করুন। যদি তা জ্বালাতে সক্ষম হন, তা হলে বুঝবেন এই মধু খাঁটি। আর যদি মোমবাতি না জ্বলে, তাহলে সেই মধুতে ভেজাল রয়েছে।
- এক টুকরো পরিষ্কার সাদা কাপড়ে কয়েক ফোঁটা মধু ফেলে অপেক্ষা করুন খানিকক্ষণ। তারপর পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন। যদি মধুর দাগ একেবারে উঠে যায়, তবে সেই মধু একেবারেই খাঁটি নয়। কারণ মধুর দাগ সহজে যায় না।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।