
বর্তমানে মাধ্যমিক (এসএসসি) ও উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে চলে উন্মাদনা। যারা জিপিএ ৫ পায় তাদের আলাদাভাবে দেখা হয়। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। জিপিএ ৫ না পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয় হতাশা। এই অবস্থার অবসান ঘটছে শিগগিরই। আগামী ২০২৬ সাল থেকে এসএসসিতে থাকছে না জিপিএ (গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ)। এইচএসসিতে পুরোপুরিভাবে জিপিএ উঠে যাবে ২০২৮ সালে। জিপিএ না থাকলে কীভাবে শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ হবে তা চূড়ান্ত করতে আরও তিন বছর সময় নিতে চায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। অর্থাৎ ফল প্রকাশের পদ্ধতি ঠিক করতে আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত চলবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, চলতি বছর থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। আগামী বছর প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। আর নতুন শিক্ষাক্রমে পড়ালেখা করা শিক্ষার্থীরা ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। ওই বছর থেকেই জিপিএ তুলে দেওয়া হবে। আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মূল্যায়নে নতুন কোনো পদ্ধতি চালু হবে।
জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় গত মাসে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সামষ্টিক মূল্যায়ন হয়েছে। তবে এ মূল্যায়ন গতানুগতিক পদ্ধতিতে হয়নি। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হয়েছে উৎসবের মাধ্যমে। তারা স্কুলে গিয়েছে আনন্দের সঙ্গে। পরীক্ষায় বসেছে খেলার ছলে। আর শিক্ষার্থীদের প্রচলিত গ্রেড পয়েন্টেও মূল্যায়ন করা হয়নি। যারা নতুন শিক্ষাক্রমে বেশি ভালো করেছে, তাদের দেওয়া হয়েছেÑ ‘ত্রিভুজ’। যারা ভালো করেছে, তাদের দেওয়া হয়েছে ‘চতুর্ভুজ’। আর যাদের উন্নতি প্রয়োজন, তাদের দেওয়া হয়েছে ‘বৃত্ত’।
জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের সামষ্টিক মূল্যায়নে যে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ বা বৃত্ত দেওয়া হচ্ছে, এর অর্থ এই নয় যে এভাবেই তাদের মূল্যায়ন হবে। এতেও হয়তো একটা বিভেদ হতে পারে। আসলে এখন এক্সপেরিমেন্ট চলছে। আমরা এর মাধ্যমে রিভিউ নিচ্ছি। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কীভাবে করা হবে তা আমরা ২০২৫ সালে চূড়ান্ত করব। কারণ ২০২৬ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষার্থীরা প্রথম এসএসসি পরীক্ষা দেবে। তবে এটা ঠিক, নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় যেসব শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে তাদের গতানুগতিক মূল্যায়ন বা জিপিএ আর থাকছে না।’
অধ্যাপক মশিউজ্জামান আরও বলেন, ‘বিশে^র অন্যান্য দেশের দিকে যদি আমরা তাকাই, তাহলে দেখা যাবে অনেক দেশই ৩০ বছর আগে এসএসসি বা এইচএসসি পর্যায়ে জিপিএ বা গ্রেডিং তুলে দিয়েছে। আমরাও সেখানে যেতে চাই। কারণ সব শিক্ষার্থীরই মেধা থাকে। তবে সেই মেধার বহিঃপ্রকাশ একেকজন একেকভাবে করে। তাই আমরা চাই না, কোনো শিক্ষার্থীর মন খারাপ হোক।’
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ২০০১ সাল থেকে পাবলিক পরীক্ষায় গ্রেড পদ্ধতি চালু হয়। এই পদ্ধতিতে ৮০ থেকে ১০০ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৫, লেটার গ্রেড এ প্লাস। এটাই সর্বোচ্চ গ্রেড। এরপর ৭০ থেকে ৭৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৪, লেটার গ্রেড এ। ৬০ থেকে ৬৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৩.৫০, লেটার গ্রেড এ মাইনাস। ৫০ থেকে ৫৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৩, লেটার গ্রেড বি। ৪০ থেকে ৪৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ২, লেটার গ্রেড সি। ৩৩ থেকে ৩৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট এক, লেটার গ্রেড ডি। আর শূন্য থেকে ৩২ পাওয়া শিক্ষার্থীদের গ্রেড পয়েন্ট জিরো, লেটার গ্রেড এফ। জিপিএ ১ পেলেই শিক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ হিসেবে ধরা হয়। কোনো বিষয়ে এফ গ্রেড না পেলে চতুর্থ বিষয় বাদে সব বিষয়ের প্রাপ্ত গ্রেড পয়েন্টকে গড় করেই একজন শিক্ষার্থীর লেটার গ্রেড ঠিক করা হয়।
তবে ২০০১ সালের আগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ চালু ছিল। একটি বিষয়ে ৮০ নম্বরের ওপরে পেলে সেটা ছিল ‘লেটার মার্ক’। সব বিষয়ে গড়ে ৮০ নম্বরের ওপরে পেলে সেটা ছিল ‘স্টার মার্ক’। আর একটি শিক্ষা বোর্ডে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ২০ জনকে দেওয়া হতো ‘বোর্ড স্ট্যান্ড’ উপাধি।
জানা যায়, জেনারেল সার্টিফিকেট অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (জিসিএসই) বা ‘ও’ লেভেল পরীক্ষায় কেমব্রিজ কারিকুলামে ফল মূল্যায়ন করা হয় ‘এ-স্টার, এ, বি, সি থেকে জি’ পর্যন্ত আট ক্যাটাগরিতে। তবে ২০১৯ সাল থেকে এডেক্সেল কারিকুলামের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়। ১ থেকে ৯ পর্যন্ত সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ শুরু হয়। নতুন গ্রেডিং পদ্ধতি ইংরেজি ভাষার দক্ষতা নির্ণয়কারী টেস্ট আইইএলটিএসের ফলের মতো। সর্বোচ্চ ফল অর্জনকারী শিক্ষার্থী পায় ৯, পর্যায়ক্রমে তা ১ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায়।
বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটের ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখন আমাদের ফল মূল্যায়ন করা হয় জিপিএর ভিত্তিতে। অর্থাৎ সব নম্বরকে এভারেজ বা গড় করা হয়। এতে একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞানে কম পেয়েও অন্য বিষয়ে বেশি নম্বর পেয়ে গড়ে ভালো ফল করছে। কিন্তু অন্যান্য দেশে শুধু গ্রেড পয়েন্টকে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ তারা কোন বিষয়ে কেমন নম্বর পেল। সেই প্রকাশ যে কোনোভাবেই হতে পারে। এজন্যই বিদেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নম্বরপত্রকে বেশি গুরুত্ব দেয়। আমাদেরও সেদিকে যাওয়া উচিত। যেহেতু নতুন শিক্ষাক্রমের যাত্রা শুরু হয়েছে। তাই সেখানেই এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকবে।’
জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রমে নবম ও দশম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে ৫০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন ও ৫০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন থাকবে। এছাড়া জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা ও শিল্প সংস্কৃতি বিষয়ে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে। আর দশম শ্রেণি শেষে ওই শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আবশ্যিক বিষয়ে ৩০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং ৭০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। নৈর্বাচনিক ও বিশেষায়িত বিষয়ে কাঠামো ও ধারণায়ন অনুযায়ী সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি প্রকল্পভিত্তিক, ব্যবহারিক ও অন্যান্য উপায়ে শিখনকালীন মূল্যায়নের সুযোগ থাকবে। এছাড়া একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর প্রতি বর্ষ শেষে একটি করে পরীক্ষা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হবে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে এনসিটিবি কাজ করছে। আমরা বাস্তবায়নকারী সংস্থা। তারা যেভাবে মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করবে আমরা তা বাস্তবায়ন করব।’
ব্যাটসম্যান আউট হলে আধুনিক ক্রিকেটে তার বেঁচে যাওয়ার ভালো সুযোগ থাকে। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন ডিসিশন রিভিউ সিস্টেমে। রিপ্লেতে ইতিবাচক কিছু থাকলে থার্ড আম্পায়ার ব্যাটারের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেন। আউট হয়ে যাওয়া ব্যাটার ফিরে যান ২২ গজে। ঠিক তেমনি তামিম ইকবাল আবার ফিরবেন ২২ গজে। নিজের ভুলে (সিদ্ধান্তে) ‘আউট’ হয়েছিলেন বটে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী থার্ড আম্পায়ার হয়ে তামিমকে রিভিউ জেতালেন। আর তাতে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হয়ে ২২ গজে ফিরবেন তামিম। এখনই নয়। এই সিরিজে আর খেলা হচ্ছে না। তামিম ফিরবেন একেবারে এশিয়া কাপের আগে। বাকি থাকা চিকিৎসা, মানসিক ধকল সব সামলে ঝরঝরে হয়ে। নিজের মুখেই বললেন এরপর খেলবেন এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ। নেতৃত্ব নিয়েই ফিরবেন কি না, তা আপাতত নিশ্চিত রেখেছেন বিসিবিপ্রধান নাজমুল হাসান পাপন। পরে কী ঘটে, সেটা দেখার বিষয়। তবে চরম নাটকীয়তার পর তামিমের খেলার নিশ্চয়তা থাকলেও এশিয়া কাপ-বিশ্বকাপে তামিম ফুল ফর্মে থাকবেন কি না, সেই নিশ্চয়তা কিন্তু থাকছে না!
বিশ্ব ক্রিকেটে কত ক্রিকেটারই তো অবসর নিয়ে আবার ক্রিকেটে ফিরেছেন। সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। ইমরান খান, ইউনিস খান, শোয়েব মালিক ও শহিদ আফ্রিদিদের তালিকায় সংখ্যাটা খুঁজে দেখার বিষয়। তবে তামিমের মতো এত কম সময় মাত্র ২৯ ঘণ্টায় কেউ অবসরের সিদ্ধান্ত বদলেছেন এমন কিছু নিশ্চিত হয়নি! ঘটনার প্রথম অংশ হয়েছিল বৃহস্পতিবার। তা এখন ক্রীড়াপ্রেমীদের জানা। ওইটুকু ছিল তামিমের প্রস্থান অংশ। এরপর ফেরার অংশ শুরু হলো শুক্রবার সকাল থেকে। অবশ্য আগের দিনই একটা খবর রটেছিল যে প্রধানমন্ত্রী তামিমকে ডেকেছেন গণভবনে। সেই গুঞ্জন সত্যি হলো শুক্রবার দুপুরে। সকাল সাড়ে ১০টায় পরিবারসহ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা চলে যান তামিম। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার সঙ্গে তিনি গণভবনে যান বেলা আড়াইটায়। সঙ্গে ছিলেন সহধর্মিণী আয়েশা ইকবাল। মাশরাফী ও তামিম মিলে দেড় ঘণ্টার মতো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন শুরুতে। তামিমের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি দুপুর পর্যন্ত জানা ছিল না বিসিবির। দুপুরের পর জানতে পারায় বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনকেও ডেকে নেওয়া হয় গণভবনে। এরপর বিকেল ৪টা থেকে সব পক্ষের আলোচনা শুরু। সেই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়। এরপর পাপন, মাশরাফী ও তামিম সবাই হাসিমুখে গণভবন ছাড়েন ৬টার দিকে।
ততক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সব পক্ষের হাসিমুখে তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। সেই হাসি মুখে রেখে গণভবন থেকে বেরিয়ে তামিম বলছিলেন, ‘আজ দুপুরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে তার বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ওনার সঙ্গে আমি অনেকক্ষণ আলোচনা করেছি। উনি আমাকে খেলায় ফিরে আসতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি আমার অবসর এই মুহূর্তেই উঠিয়ে নিচ্ছি। কারণ আমি সবাইকে “না” বলতে পারি কিন্তু দেশের যিনি সবচেয়ে বড় নেত্রী, তাকে না বলা অসম্ভব।’ এই সময়ে মাশরাফীকে যে পাশে পেয়েছেন তাও স্বীকার করেছেন তামিম। সঙ্গে খেলায় ফিরবেন কবে তাও জানালেন, ‘এখানে মাশরাফী ভাই ও পাপন ভাইও বিগ বিগ ফ্যাক্টর। মাশরাফী ভাই আমাকে ডেকে নিয়েছেন। পাপন ভাইও সঙ্গে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আমাকে দেড় মাসের একটি ছুটিও দিয়েছেন। আমার যা চিকিৎসা আছে বা আমি যদি মানসিকভাবে আরও ফ্রি হতে পারি, দেড় মাস পর যা খেলাধুলা আছে, আমি ইনশা আল্লাহ খেলব।’
তামিম অবসর ভেঙে ফেরায় স্বস্তির শ্বাস যেন নাজমুল হাসান পাপনেরও। বৃহস্পতিবার রাতে বোর্ড সভা শেষে বলেছিলেনি তামিমের অবসর গৃহীত হয়নি। কারণ আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি বিসিবি পায়নি। কিন্তু সেই চিঠি পাওয়ার আগেই প্রত্যাহার হয়েছে বলে জানান তিনি, ‘ (তামিমের) সংবাদ সম্মেলনটি দেখে আমার একটি ধারণা হয়েছিল যে সে হয়তো আবেগি একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার বিশ্বাস ছিল যে ওর সঙ্গে যদি সামনাসামনি একবার বসতে পারি, তাহলে হয়তোবা এটির একটি সমাধান পাব। আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে আমরা সবাই ওর সঙ্গে বসেছিলাম এবং ও আপনাদের সামনেই বলে গেল, সে অবসরের চিঠিটা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।’
আসলে চিঠিটা অবসরেরও ছিল না। পাপন জানালেন ফিট হয়ে ফিরতে দেড় মাসের সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছেন তামিম। আর সবশেষ স্বস্তির কথা জানান অধিনায়ক ফিরে আসার। পাপন নিজের মুখেই তামিমকে অধিনায়ক হিসেবে ফিরে পাওয়ার কথা জানালেন, ‘আজকে একটি এসেছে (চিঠি)। যেহেতু সে শারীরিক ও মানসিকভাবে এখনো ফিট না, সে জন্য সে দেড় মাস সময় নিয়েছে। এই দেড় মাসে সে রিহ্যাব করে আশা করছি শিগগিরই আবার ক্রিকেটে ফিরে আসবে। এটি সবার জন্যই স্বস্তির। আরে, আমাদের অধিনায়ক যদি না থাকে, তাহলে খেলব কী করে?’
শুক্রবার তামিমকে মাশরাফীর মাধ্যমেই ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতে হতে যাওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে তামিম মেন্টর হিসেবে চান মাশরাফীকে। দেশের প্রথম সারির এক গণমাধ্যমকে তামিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে আমি বলেছি, মাশরাফী ভাইকে বিশ্বকাপের সময় এক-দেড় মাসের ছুটি দিন। আমরা তাকে বিশ্বকাপে মেন্টর হিসেবে পেতে চাই। প্রধানমন্ত্রী তখনই হেসে বলেছেন, অবশ্যই মাশরাফী যাবে। মাশরাফী ভাইকেও তিনি প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।’
পাপন অধিনায়ক ছাড়া খেলতে চান না। তামিম অধিনায়ক হিসেবে ফিরবেন। সব মিলিয়ে গত দেড় দিনে যে নাটক হলো তার অবসান হয়েছে। এই নাটক ভুলে আজকের ম্যাচ দিয়ে আবারও ক্রিকেটে ফিরবে দেশের ক্রিকেটাঙ্গন।
চলতি বছর ডিসেম্বর ধরে হিসাব করলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র পাঁচ মাস। চলতি মাসেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুটি উপনির্বাচন। এর মধ্যে ১৭ জুলাই হবে ঢাকা-১৭ আসনের ভোটগ্রহণ। সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে সরব বিএনপি, অন্যদিকে একই কারণে চাপ আছে বিদেশিদের। এ অবস্থায় উপনির্বাচনকে জটিল অঙ্ক মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। বিশেষ করে ঢাকা-১৭ আসনের ভোটের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে সরকারের স্বস্তি ও অস্বস্তি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারের শেষ সময়ে উপনির্বাচন উভয় সংকট হয়ে এসেছে। নৌকার প্রার্থীর বিজয় এই মুহূর্তে সরকারের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আবার বিতর্কমুক্ত নির্বাচন উপহার দেওয়াও সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগের পর ছয়টি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন হয়। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল আলোচনায়। সংসদ সদস্য পদ ছাড়ার পর বিএনপি ত্যাগ করা উকিল আবদুস সাত্তার স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তাকে সরকার জিতে আনার জন্য কৌশল করেছে বলে তখন বিরোধীদের পক্ষ থেকে সমালোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়ার দুটি আসনে ইউটিউব চ্যানেলে জনপ্রিয়তা পাওয়া অভিনেতা আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আলোচনার জন্ম দেন। তিনি বগুড়া-৪ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে মাত্র ৮৩৪ ভোটে হেরে যান। পরে তিনি দাবি করেন, তাকে কারচুপি করে হারানো হয়েছে। যদিও হিরো আলম বগুড়া-৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রাগেবুল আহসানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামানত হারিয়েছেন।
এই হিরো আলম আবার ঢাকা-১৭ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। প্রথমে তার মনোনয়ন বাতিল হলেও আপিল করে প্রার্থী হিসেবে বৈধতা পান। অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) মারা যাওয়ায় এ আসনটি শূন্য হয়। এ ছাড়া ৩০ জুলাই হবে চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচন। সেখানকার সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীন মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য হয়।
এ দুটি উপনির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অনড় অবস্থান গ্রহণ করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। তাদের দাবি, এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। অন্যদিকে সরকারপ্রধান বারবার সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করছেন। নির্বাচন কমিশনও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করছে। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া পাঁচ সিটি করপোরেশনের প্রথম ভোট গাজীপুরে সেরকম চেষ্টা দেখা গেছে। যদিও পরে বরিশালে প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ফলে সরকারপ্রধানের অঙ্গীকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রয়াসে আস্থা না রাখার কথাই বলছে বিরোধীরা। সে কারণে জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন সরকারি দলের দাবির সপক্ষে যৌক্তিক উদাহরণ হতে পারে, হতে পারে বিএনপির দাবির পক্ষের শক্তিশালী প্রমাণ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, কতটা ঝুঁকিমুক্তভাবে দল এই উপনির্বাচন পার করতে পারবে সেই ভয় নিয়েই নানা কৌশল গ্রহণ করতে হচ্ছে। তাছাড়া আগের সরকারগুলোর মেয়াদের শেষদিকে ঢাকায় অনুষ্ঠিত উপনির্বাচন বিরোধী দলের হাতে ইস্যু তুলে দিয়েছে তার একাধিক নজির সামনে রয়েছে বর্তমান সরকারের। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার ঢাকার দুটি আসনে উপনির্বাচন মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হওয়ায় তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ নির্বাচন ব্যবস্থা পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন করেছিল এবং সে আন্দোলন যৌক্তিক প্রমাণ হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, এসব নানা দিক ভাবতে হচ্ছে সরকারকে। দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব ঢাকার উপনির্বাচনের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণ করতে হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এ সরকারকে। অন্যদিকে সরকারের জনপ্রিয়তা রয়েছে সেটা প্রমাণ করতে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে। দুটোই যদি সফল হয় তাহলে দেশ-বিদেশে এ উদাহরণ তুলে ধরে সরকারবিরোধীদের দুর্বল করতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ‘টপ প্রায়োরিটি’ (সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার) বিতর্কমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। দলীয় প্রধান হিসেবে নৌকার প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করাও ‘প্রায়োরিটি’। তিনি দাবি করেন, ‘বিএনপি সবসময়ই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে কূটকৌশল করে।’
আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর চার সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, নানা অঙ্ক সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করাÑ এ দুটি কীভাবে সম্ভব করবে তা নিয়ে বিপাকে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা। অন্য যেকোনো সরকারের সময়ের তুলনায় এবারের উপনির্বাচন একটু ভিন্নমাত্রার। তাছাড়া আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা যাবে কি না, তা যাচাই করতে উপনির্বাচনের সময়ে ঢাকায় থাকবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ব্যক্তিগত আলোচনার সূত্রেও জানা গেছে, উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম ভোটে নেমে আরও জটিল করে তুলেছে নির্বাচন। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত সব মহল মুখিয়ে আছে এ নির্বাচন নিয়ে। যাতে ইস্যু তুলে আনতে পারে এখান থেকে। ছোট অনেক ঘটনা বড় করে দেশ-বিদেশে অপপ্রচার করার টার্গেট নিয়ে বসে আছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা দলগুলো।
দলের কেন্দ্রীয় ওই নেতারা দাবি করেন, মোহাম্মদ এ আরাফাতকে প্রার্থী করার বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তে দলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘদিনের রাজনীতি করা নেতাদের বাদ দিয়ে শুধু মেধা বিচার করে আরাফাতকে প্রার্থী করায় সেখানকার আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষোভের কথা প্রকাশ করেছেন সারা দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা। দলের একটি অংশের রাগ-ক্ষোভ কষ্টও ঢাকা-১৭ আসনের ভোট আওয়ামী লীগের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাড়া জাগিয়ে ভাইরাল হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম আওয়ামী লীগের আরেকটি অংশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
সম্প্রতি শেষ হওয়া পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট বর্জন করা বিএনপির নেতাকর্মীরা কোনো প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রমুখী হননি। এ উপনির্বাচনে তার ব্যত্যয় ঘটবে বলে দাবি করছে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী মহল। এর কারণ হিসেবে তারা দাবি করেন, হিরো আলমে ভর করে সরকার ও সংসদের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার চক্রান্ত করছে বিএনপি। সরকার অজনপ্রিয় প্রমাণ করতে তার মতো প্রার্থীর বিজয়ে গুরুত্ব দিতে কূটকৌশলের পথে হাঁটতে যাচ্ছে মাঠের বিরোধী দলটি। এসব জটিল অঙ্ক নৌকার প্রার্থী আরাফাতকেও দুশ্চিন্তায় রেখেছে বলে তার ঘনিষ্ঠজনদের সূত্রে জানা গেছে।
নানা বৈরী পরিস্থিতি তুলে ধরে আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিম-লীর সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপনির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দ্বিতীয় গুরুত্ব নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করা। প্রথম গুরুত্বকে গুরুত্বহীন করে দ্বিতীয় গুরুত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হবে না।
ঢাকা-১৭ সংসদীয় এলাকায় বাস করা এ নেতা আরও বলেন, ভোটের পরিবেশ ঠিক রাখতে চান প্রধানমন্ত্রী। দেশি-বিদেশি সমালোচক মহলের মুখবন্ধ রাখার ব্যাপারটা দলের কাছে ও সরকারের কাছে অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সভাপতিমন্ডলীর এ সদস্য আরও বলেন, রাজধানীর অভিজাত এলাকা নিয়ে ঢাকা-১৭ আসন। সেখানে যেনতেন নির্বাচন করার সুযোগ যেমন নেই, তেমনি দলের ও সরকারের ভাবনাতেও নেই।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর। তার প্রমাণ সম্প্রতি শেষ হওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে জনগণ দেখেছে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি হলো ভোট বিতর্ক সৃষ্টি করা। এগুলো মাথায় রেখেই আমরা রাজনীতি করি।’
এমন প্রেক্ষাপটে নৌকাকে জেতাতে আওয়ামী লীগ বেশ খাটাখাটুনি করে চলেছে। সংসদীয় এলাকাটিতে থাকা বস্তিবাসী, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ভোটারদের দিকে বেশি নজর দিয়েছেন দলের সর্বস্তরের নেতারা। উচ্চবিত্তের ভোটার বাদ দিয়ে আগে ছুটছে তাদের কাছে। নৌকার প্রচারে থাকা নেতাকর্মী ও প্রার্থী আরাফাত নিজেও এদিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমও টার্গেট করেছেন এ ভোটারদের। সে কারণে দলের নেতারা মনে করছেন, এ ভোটারদের কাছেই আগে যাওয়ার দরকার। ওই তিন শ্রেণির ভোট নৌকার পক্ষে পড়লে দলের দুশ্চিন্তা কমবে।
নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাতের কাছে জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমি ও আমরা ব্যক্তিগতভাবে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আমি যত জায়গায় প্রচারে গিয়েছি, সাড়া পেয়েছি। নৌকার পক্ষে জনগণের সমর্থন দেখতে পেয়েছি।’
কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের গোলাগুলিতে ছয়জন নিহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে ক্যাম্প-৮ ওয়েস্টে এ ঘটনা ঘটে। গোলাগুলির সময় ঘটনাস্থলে পাঁচজন নিহত হয়। পরে সন্ধ্যায় ১১ নম্বর ক্যাম্পের একটি ডোবা থেকে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ একজনকে গুরুতর অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতরা সবাই আরসার সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে এপিবিএন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণে কিছুদিন ধরে আরসা ও আরএসওর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এরই জেরে দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে পুরো রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।
নিহতরা হলেন উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আনোয়ার সাদেক (২৩), মো. হামিম (২১), উখিয়ার ১০ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা নজিমুল্লাহ (২৬), উখিয়ার ৩ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা নুরুল আমিন (২৪), ৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শুক্কুর (৩২) ও উখিয়ার ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে
সানাউল্লাহ (৩৫)। গুলিবিদ্ধ হলেন উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা ইমান হোসেন (৪৫)।
ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার গান ও এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ব্লকে ব্লকে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।
৮-এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন অ্যান্ড মিডিয়া) ফারুক আহমেদ বলেন, ‘ক্যাম্পে একাধিক সশস্ত্র গ্রুপের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে খুনোখুনি বাড়ছে। এরই মধ্যে ভোরে দুই সন্ত্রাসী দলের গোলাগুলির ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তারা সবাই আরসার সদস্য।’
৮-এপিবিএনের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আমির জাফর বলেন, ‘সকাল ৬টার দিকে ক্যাম্পে রোহিঙ্গা দুষ্কৃতকারীদের গোলাগুলির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে ৮-এপিবিএনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
গত বৃহস্পতিবার সকালে উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাব-মাঝি এবাদুল্লাহ খুন হন।
মোদি পদবি নিয়ে কটূক্তির মানহানির মামলায় পাওয়া সাজার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে রাহুল গান্ধীর করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে গুজরাট হাইকোর্ট। গতকাল শুক্রবার এ আদালত বলেছে, নি¤œ আদালত কংগ্রেসের সাবেক সভাপতিকে যে সাজা দিয়েছে তা যথার্থ।
গুজরাট হাইকোর্টের এ রায়ে রাহুলের পক্ষে সংসদ সদস্যপদ ফিরে পাওয়ার আশা ফিকে হয়ে এলো। এখন তাকে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে হবে। সেখানেও একই রায় বহাল থাকলে তিনি আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনেও প্রার্থী হতে পারবেন না বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। ২০১৯ সালের মার্চে কর্ণাটকে এক নির্বাচনী সমাবেশে কটাক্ষ করে রাহুল বলেছিলেন, ‘সব চোরের পদবি মোদি হয় কী করে? নীরব মোদি, ললিত মোদি, নরেন্দ্র মোদি।’
পলাতক ভারতীয় ডায়মন্ড ব্যবসায়ী নীরব মোদি এবং ভারতীয় ক্রিকেট প্রিমিয়ার লিগের সাবেক প্রধান ললিত মোদি যাকে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড আজীবন নিষিদ্ধ করেছে, তার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদিকে টেনে করা এ মন্তব্যে মোদি পদবিধারী সবাইকে অপমান করা হয়েছে অভিযোগ তুলে রাহুলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন বিজেপির বিধায়ক পুর্নেশ মোদি।
গুজরাটের সুরাটের ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এ বছরের ২৩ মার্চ ওই মামলায় সাবেক কংগ্রেস সভাপতিকে দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়। উচ্চ আদালতে আপিলসহ সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাহুলকে গ্রেপ্তার না করারও নির্দেশ দেন তারা। এ আদেশের পরদিন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে লোকসভায় অযোগ্যও ঘোষণা করা হয়।
ইন্দিরা গান্ধীর পৌত্র পরে তার সাজার বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে যান। সেখানকার বিচারকও ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়ই বহাল রাখেন। এরপর রাহুল ছোটেন হাইকোর্টে। শুক্রবার সে আদালতের রায়ও তার বিপক্ষে গেল।
রাহুলের এ সাজাকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে অভিহিত করেছে কংগ্রেস। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন বিজেপি বলছে, রাহুলের বিরুদ্ধে হওয়া এ মামলায় স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে।
আমেরিকান সংস্থা কেয়ার থেকে ১৯৬৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ২৪ জনের একটা টিম কুষ্টিয়ার উদ্দেশে পাঠানো হয়। ২০ মিনিট পর হেলিকপ্টারটির ফরিদপুরে নামার কথা ছিল। কিন্তু মাটি ছোঁয়ার আগেই সেটি বিধ্বস্ত হয়। ২৪ যাত্রীর ২৩ জনই ওই দুর্ঘটনায় নিহত হন। বেঁচে ফেরেন শুধু একজন।
তখন তিনি চাকরি করতেন কেয়ারে। হেলিকপ্টারটি ছিল পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের (পিআইএ)। এটির মালিক ছিলেন আজগর খান, যিনি পাকিস্তানের একজন বড় রাজনীতিক ছিলেন। তাকে হাসপাতালে দেখতেও গিয়েছিলেন। সুস্থ হয়ে তিনি পিআইএর ঢাকা অফিসে চাকরির আশায় যান। পিআইএ কর্তৃপক্ষ তাকে তাদের অফিসে চাকরি দেয়।
পিআইএর চাকরিতে থাকা অবস্থায় তিনি সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিসেস (সিএসএস) পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষায় তিনি পুরো পাকিস্তানে ১৩তম এবং পূর্ব পাকিস্তানিদের মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন। তার নাম এমএ মান্নান। এখন তিনি বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী।
সুনামগঞ্জের এক দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম। ছোটবেলা থেকেই অভাবের সঙ্গে লড়েছেন। পাকিস্তানের সারগোদা বিমান বাহিনী স্কুলে ভর্তি, অর্থাভাবে এইচএসসি পাসের পর পড়াশোনা বন্ধ, নদীর পানি পান করে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা অন্যরকম জীবন তার। একদিকে জীবনযুদ্ধ, অন্যদিকে সফলতা।
এমএ মান্নান বাংলাদেশ সরকারের একজন মন্ত্রী হলেও তিনি তার শিকড় ভুলে যাননি। এখনো তিনি গর্ব করে বলতে পছন্দ করেন, ‘আমি গরিব ও অভাবী পরিবারের সন্তান।’ সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার ডুংরিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্ম তার। ছোটবেলা থেকেই মানুষের দুঃখ-কষ্টের সঙ্গে তিনি পরিচিত।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান তার বাবার রেখে যাওয়া ভিটেমাটি ট্রাস্ট করে দিয়েছেন। সেখানে তার প্রয়াত মা আজিজুন নেসার নামে একটা টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট করেছেন। বাবার ভিটেতে ৩০ শতাংশ জায়গা ছিল, পরে তিনি আরও ১৬ শতাংশ জায়গা কিনেছিলেন। মোট ৪৬ শতাংশ জমিতে টেক্সটাইল কলেজ নির্মাণ করেছেন। সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।
এমএ মান্নান সরকারের সফল আমলা ছিলেন। যুগ্ম সচিব থেকে অবসর নেওয়ার পর রাজনীতিতে যুক্ত হন। আমাদের দেশে যারা আমলা থেকে মন্ত্রী হন, তারা সাধারণত জনগণের এমপি-মন্ত্রী হতে পারেন না। তারা মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারেন না। সবসময় একটা ব্যবধান থাকে।
‘আপনার ক্ষেত্রে তা হয়নি কেন?’ এ প্রশ্নের জবাবে এমএ মান্নান বলেন, ‘আমি গ্রামের খুব সাধারণ একটা পরিবারে জন্মেছি। সুনামগঞ্জের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমি বেড়ে উঠেছি। আমি এমন কোনো পরিবারে জন্ম নিইনি, যেখানে মানুষের সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই। তাই সবসময় সাধারণ মানুষের জন্য আমার মন কাঁদে। আমি জন্মগতভাবে মানুষের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করি, তাদের সুখ-দুঃখ কাছ থেকে দেখতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি এখন মন্ত্রী, তারপরও আমি চাই প্রান্তিক মানুষের কাছাকাছি যেতে। যদিও নানা কারণে পুরোপুরি তা করে উঠতে পারি না।’
আমলা ও রাজনীতিকÑ দুই জীবনেই সফল। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি খুব কষ্টের কাজ। এতে যেমন কায়িক পরিশ্রম হয়, তেমনি মানসিক পরিশ্রমও হয়। তারপরও বাকিটা জীবন রাজনীতি করেই কাটাতে চাই।’
বিপরীতে আমলাদের জীবন একটা আবদ্ধ জীবন। আইন মেনে, নিয়ম মেনে বসের অধীনে জীবন চালাতে হয়। তিনি বলেন, ‘সরকারে আমার বস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি কিন্তু তার পাশে বসে কাজ করতে পারি। অথচ আমলা থাকতে আমি চাইলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে যেতে পারতাম না, বসা তো দূরের কথা।’
তার রাজনীতিতে আসার প্রেক্ষাপটটা সহজ ছিল না। তিনি যে আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন, সেটা ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরেক কিংবদন্তি আবদুস সামাদ আজাদের আসন।
আমাদের দেশে কেউ মারা গেলে তার পরিবারের কোনো সদস্যকেই এমপি বানানোর রীতি। এ রীতির বিপরীতে গিয়ে কীভাবে নমিনেশন পেলেন জানতে চাইলে এমএ মান্নান বলেন, ‘আবদুস সামাদ আজাদ মারা যান ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল। এরপর উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়। তখন আমি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করি এবং নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করি। কিন্তু শেখ হাসিনা জানান, আওয়ামী লীগ জোট সরকারের অধীনে ভোট বর্জন করেছে, তাই দল থেকে প্রার্থী করার সুযোগ নেই। তবে আমি যদি স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে চাই, তাহলে নেত্রী আমার জন্য দোয়া করবেন।’
তিনি বলেন, ‘এরপর আমি এলাকায় যাই এবং মানুষের সঙ্গে কথা বলি। ব্যাপক সাড়া পাই। আমি নির্বাচনে অংশ নিই। কিন্তু সেই নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে সহযোগিতা করেননি। উল্টো বলেন, আমি উড়ে এসে জুড়ে বসতে চাইছি। তারপরও আমি নির্বাচন করি। সেই নির্বাচনে মাত্র তিন হাজার ভোটে আমি হারলাম বা আমাকে হারানো হলো। সেই নির্বাচনে জোট সরকারের প্রার্থী ছিলেন শাহিনুর পাশা চৌধুরী। তাকে জেতানোর জন্য মান্নান ভূঁইয়া, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রমুখ বিএনপি নেতা জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জে আমার নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে প্রচারণা চালান।’
ছোটবেলায় নদীর পানি খেয়ে এমএ মান্নান কলেরায় আক্রান্ত হলেও বেঁচে যান। তবে কলেরায় তার ছোট ভাইবোন মারা যায়। এরপর তিনি মামার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ধারনে চলে যান। সেখানে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় জানতে পারেন, পাকিস্তানের সারগোদা বিমান বাহিনীর স্কুলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তির আবেদন নেওয়া হচ্ছে। তিনি ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে পড়াশোনার সুযোগ পান এবং ‘ও’ লেভেল পাস করেন। সেখানে পড়াশোনার খরচ বহন করত সরকার। সেখানে তিনি দেখলেন, তার সহপাঠীদের অধিকাংশই পাকিস্তানের ধনী পরিবারের সন্তান। তাদের ভাষা আলাদা, স্বভাবচরিত্র, চলাফেরা, খাবারদাবার আলাদা। সেখানে পড়াশোনার মাধ্যম ছিল ইংরেজি। শিক্ষকদের অধিকাংশ ছিলেন ব্রিটিশ।
তিনি বলেন, ‘আমি গ্রামের ছেলে; নিম্ন আয়ের পরিবারে মানুষ হওয়ায় আমার চালচলন আলাদা এটা আমি বুঝতে পারি। পূর্ব-পাকিস্তান থেকে যারা গিয়েছিল ওই বিদ্যালয়ে, তারাও অর্থনৈতিক বিচারে আমার চেয়ে উচ্চমর্যাদার ছিল। তাদের বাবারা বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। সারগোদাতে আমার সহপাঠীদের অনেকেই পরে পাকিস্তানে ও বাংলাদেশে বড় চাকরি করেন। পাকিস্তানি অনেক বন্ধু পরে সে দেশে মেজর, চিফ অব স্টাফ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তাদের সঙ্গে এখনো মাঝেমধ্যে আমার যোগাযোগ হয়।’
সারগোদাতে ও লেভেল সম্পন্ন করার পর সহপাঠীদের সঙ্গে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু স্বাস্থ্য পরীক্ষায় রেজাল্ট নেগেটিভ আসায় বিমান বাহিনীতে যোগ দিতে পারেননি। তাকে পূর্ব পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আবার শুরু হয় কষ্টের দিন।
বাংলাদেশে (তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে) ফিরে এসে ঢাকার একটা মেসে ওঠেন। তার এক মামার সহযোগিতায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু মেসের খরচ জোগাতে না পেরে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। এরপর একটা ক্লিয়ারিং এজেন্সিতে চাকরি নেন। সেখান থেকে আমেরিকান সংস্থা কেয়ারের ঢাকা অফিসে চাকরি পান। কেয়ারে থাকা অবস্থায় ওই ভয়ানক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পড়েন।
অবসর সময় কীভাবে কাটে এ প্রশ্নের জবাবে এমএ মান্নান বলেন, ‘আমার জীবনে অবসর সময় খুব কম। আগে বই পড়তাম। ইদানীং এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, বই পড়ার সময় পাই না। বই পড়তে বসলাম তো কেউ কল দিয়ে বসল! মিটিং, সভা-সেমিনার, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনÑ এসব করতে গিয়ে একদম অবসর সময় পাওয়া যায় না।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘তবে আমি প্রচুর গান শুনি। হয়তো গাড়িতে কোথাও যাচ্ছি, আমি আমার মোবাইলে গান ছেড়ে দিই। যখনই সুযোগ পাই আমি গান শুনি। শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে রবীন্দ্রসংগীত শুনি। আমার বাড়ি যেহেতু হাওর অঞ্চলে আবদুল করিম, হাছন রাজা, রাধারমণের গান আমার এমনিতেই প্রিয়। কিছু আধুনিক গানও মাঝেমধ্যে শোনা হয়।’
প্রেমিক হিসেবে কেমন ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কম বয়সে এমনিই প্রেম হয়ে যেত। ওই সময়ে প্রেমের জন্য বিশেষ পরিবেশ লাগত না। আশপাশে হাঁটলেই প্রেম হয়ে যেত।’
ঢাকায় একদিন দেখা হয় জুলেখা মান্নানের সঙ্গে। এরপর পরিচয়-প্রেম-বিয়ে। তারপর সংসার। অকপটে বললেন মন্ত্রী এমএ মান্নান।
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।