
মুন্সীগঞ্জে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কিশোরী কন্যাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম শেখ শাকিল (২৫)। তিনি মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
গত ৪ জুলাই রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে হাসপাতালের দ্বিতীয়তলার চিলেকোঠায় নিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগ নেতা শাকিল। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে পরিচ্ছন্নতাকর্মী মা বাদী হয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে আসামি করে মামলা করেছেন।
জানা যায়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী মা তার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করতেন। ছোট বেলায় বাবা হারানোর পর মেয়েটি তার মায়ের কাছে থাকেন। ওই কিশোরী তার মায়ের সঙ্গে হাসপাতালেই বেশিরভাগ সময় থাকে। হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছে সুপরিচিত সে।
কিশোরীর মা জানান, ওই রাতে ছাত্রলীগ নেতা শাকিল ৪-৫ জন সহযোগী নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে অবস্থান করছিল। তার চোখের আঁড়ালে মধ্যরাতের দিকে তার মেয়েকে জোরপূর্বক হাসপাতালের দ্বিতীয়তলার সিঁড়ির চিলেকোঠায় নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে তার মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। এতে অস্বীকৃতি জানালে ধর্ষণ করে ঘটনা কাউকে না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখায়। পরদিন ওই হাসপাতালেই কিশোরীর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. তারিকুজ্জামান জানান, কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় শাকিল নামে একজনকে আসামি করে মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্ত ধর্ষককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল মৃধা বলেন, কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের জড়িত থাকার কথা ইতিমধ্যে নজরে এসেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শহর ছাত্রলীগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঘটনা তদন্তে হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামালকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম জানান, আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সিভিল সার্জন সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত কমিটি প্রথমত দেখবে ঘটনাটি ঘটেছে কি না। তাছাড়া কীভাবে ঘটেছে, এ ঘটনায় হাসপাতালের কারও দায়িত্বে অবহেলা আছে কি না ও হাসপাতালের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারীর সহযোগিতা ছিল কি নাÑ এসব খতিয়ে দেখবে।
নানা বাড়িতে ঈদ করতে এসে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী : কুমিল্লার দেবিদ্বারে নানা বাড়িতে ঈদ করতে এসে এক স্কুলছাত্রী (১৬) ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় অলিউল্লাহ নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে দেবিদ্বার থানা পুলিশ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের মাধ্যমে কোর্ট হাজতে পাঠানো হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রীর বাবা দেবিদ্বার থানায় মামলা করেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে নানা বাড়িতে বেড়াতে আসে ওই ছাত্রী। ঈদের দিন বিকেলে একই গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের ছেলে পারভেজ তাকে দেখে প্রেমের প্রস্তাব দিলে সে তা প্রত্যাখ্যান করে। এরপর থেকে প্রায়ই পারভেজ তাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। গত ৫ জুন রাতে পারভেজ তার তিন বন্ধু রিয়াজ, অলিউল্লাহ ও নুরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলছাত্রীর নানা বাড়ির আশপাশে অবস্থান নেয়। রাত ১০টার দিকে ওই স্কুলছাত্রী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘর থেকে বের হলে তার মুখ চেপে পাশের একটি বাঁশ ঝাড়ের ভেতর নিয়ে গিয়ে বন্ধুদের সহায়তায় পারভেজ তাকে ধর্ষণ করে।
দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, ভোক্তভোগী ওই কিশোরীকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় একটি মামলা করেন। মামলার এজাহার নামীয় আসামি অলিউল্লাহকে গ্রেপ্তার করে কোর্ট হাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।
ব্যাটসম্যান আউট হলে আধুনিক ক্রিকেটে তার বেঁচে যাওয়ার ভালো সুযোগ থাকে। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন ডিসিশন রিভিউ সিস্টেমে। রিপ্লেতে ইতিবাচক কিছু থাকলে থার্ড আম্পায়ার ব্যাটারের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেন। আউট হয়ে যাওয়া ব্যাটার ফিরে যান ২২ গজে। ঠিক তেমনি তামিম ইকবাল আবার ফিরবেন ২২ গজে। নিজের ভুলে (সিদ্ধান্তে) ‘আউট’ হয়েছিলেন বটে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী থার্ড আম্পায়ার হয়ে তামিমকে রিভিউ জেতালেন। আর তাতে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হয়ে ২২ গজে ফিরবেন তামিম। এখনই নয়। এই সিরিজে আর খেলা হচ্ছে না। তামিম ফিরবেন একেবারে এশিয়া কাপের আগে। বাকি থাকা চিকিৎসা, মানসিক ধকল সব সামলে ঝরঝরে হয়ে। নিজের মুখেই বললেন এরপর খেলবেন এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ। নেতৃত্ব নিয়েই ফিরবেন কি না, তা আপাতত নিশ্চিত রেখেছেন বিসিবিপ্রধান নাজমুল হাসান পাপন। পরে কী ঘটে, সেটা দেখার বিষয়। তবে চরম নাটকীয়তার পর তামিমের খেলার নিশ্চয়তা থাকলেও এশিয়া কাপ-বিশ্বকাপে তামিম ফুল ফর্মে থাকবেন কি না, সেই নিশ্চয়তা কিন্তু থাকছে না!
বিশ্ব ক্রিকেটে কত ক্রিকেটারই তো অবসর নিয়ে আবার ক্রিকেটে ফিরেছেন। সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। ইমরান খান, ইউনিস খান, শোয়েব মালিক ও শহিদ আফ্রিদিদের তালিকায় সংখ্যাটা খুঁজে দেখার বিষয়। তবে তামিমের মতো এত কম সময় মাত্র ২৯ ঘণ্টায় কেউ অবসরের সিদ্ধান্ত বদলেছেন এমন কিছু নিশ্চিত হয়নি! ঘটনার প্রথম অংশ হয়েছিল বৃহস্পতিবার। তা এখন ক্রীড়াপ্রেমীদের জানা। ওইটুকু ছিল তামিমের প্রস্থান অংশ। এরপর ফেরার অংশ শুরু হলো শুক্রবার সকাল থেকে। অবশ্য আগের দিনই একটা খবর রটেছিল যে প্রধানমন্ত্রী তামিমকে ডেকেছেন গণভবনে। সেই গুঞ্জন সত্যি হলো শুক্রবার দুপুরে। সকাল সাড়ে ১০টায় পরিবারসহ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা চলে যান তামিম। মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার সঙ্গে তিনি গণভবনে যান বেলা আড়াইটায়। সঙ্গে ছিলেন সহধর্মিণী আয়েশা ইকবাল। মাশরাফী ও তামিম মিলে দেড় ঘণ্টার মতো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন শুরুতে। তামিমের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি দুপুর পর্যন্ত জানা ছিল না বিসিবির। দুপুরের পর জানতে পারায় বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপনকেও ডেকে নেওয়া হয় গণভবনে। এরপর বিকেল ৪টা থেকে সব পক্ষের আলোচনা শুরু। সেই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়। এরপর পাপন, মাশরাফী ও তামিম সবাই হাসিমুখে গণভবন ছাড়েন ৬টার দিকে।
ততক্ষণে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সব পক্ষের হাসিমুখে তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। সেই হাসি মুখে রেখে গণভবন থেকে বেরিয়ে তামিম বলছিলেন, ‘আজ দুপুরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে তার বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ওনার সঙ্গে আমি অনেকক্ষণ আলোচনা করেছি। উনি আমাকে খেলায় ফিরে আসতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি আমার অবসর এই মুহূর্তেই উঠিয়ে নিচ্ছি। কারণ আমি সবাইকে “না” বলতে পারি কিন্তু দেশের যিনি সবচেয়ে বড় নেত্রী, তাকে না বলা অসম্ভব।’ এই সময়ে মাশরাফীকে যে পাশে পেয়েছেন তাও স্বীকার করেছেন তামিম। সঙ্গে খেলায় ফিরবেন কবে তাও জানালেন, ‘এখানে মাশরাফী ভাই ও পাপন ভাইও বিগ বিগ ফ্যাক্টর। মাশরাফী ভাই আমাকে ডেকে নিয়েছেন। পাপন ভাইও সঙ্গে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আমাকে দেড় মাসের একটি ছুটিও দিয়েছেন। আমার যা চিকিৎসা আছে বা আমি যদি মানসিকভাবে আরও ফ্রি হতে পারি, দেড় মাস পর যা খেলাধুলা আছে, আমি ইনশা আল্লাহ খেলব।’
তামিম অবসর ভেঙে ফেরায় স্বস্তির শ্বাস যেন নাজমুল হাসান পাপনেরও। বৃহস্পতিবার রাতে বোর্ড সভা শেষে বলেছিলেনি তামিমের অবসর গৃহীত হয়নি। কারণ আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি বিসিবি পায়নি। কিন্তু সেই চিঠি পাওয়ার আগেই প্রত্যাহার হয়েছে বলে জানান তিনি, ‘ (তামিমের) সংবাদ সম্মেলনটি দেখে আমার একটি ধারণা হয়েছিল যে সে হয়তো আবেগি একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার বিশ্বাস ছিল যে ওর সঙ্গে যদি সামনাসামনি একবার বসতে পারি, তাহলে হয়তোবা এটির একটি সমাধান পাব। আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে আমরা সবাই ওর সঙ্গে বসেছিলাম এবং ও আপনাদের সামনেই বলে গেল, সে অবসরের চিঠিটা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।’
আসলে চিঠিটা অবসরেরও ছিল না। পাপন জানালেন ফিট হয়ে ফিরতে দেড় মাসের সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছেন তামিম। আর সবশেষ স্বস্তির কথা জানান অধিনায়ক ফিরে আসার। পাপন নিজের মুখেই তামিমকে অধিনায়ক হিসেবে ফিরে পাওয়ার কথা জানালেন, ‘আজকে একটি এসেছে (চিঠি)। যেহেতু সে শারীরিক ও মানসিকভাবে এখনো ফিট না, সে জন্য সে দেড় মাস সময় নিয়েছে। এই দেড় মাসে সে রিহ্যাব করে আশা করছি শিগগিরই আবার ক্রিকেটে ফিরে আসবে। এটি সবার জন্যই স্বস্তির। আরে, আমাদের অধিনায়ক যদি না থাকে, তাহলে খেলব কী করে?’
শুক্রবার তামিমকে মাশরাফীর মাধ্যমেই ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতে হতে যাওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে তামিম মেন্টর হিসেবে চান মাশরাফীকে। দেশের প্রথম সারির এক গণমাধ্যমকে তামিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে আমি বলেছি, মাশরাফী ভাইকে বিশ্বকাপের সময় এক-দেড় মাসের ছুটি দিন। আমরা তাকে বিশ্বকাপে মেন্টর হিসেবে পেতে চাই। প্রধানমন্ত্রী তখনই হেসে বলেছেন, অবশ্যই মাশরাফী যাবে। মাশরাফী ভাইকেও তিনি প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।’
পাপন অধিনায়ক ছাড়া খেলতে চান না। তামিম অধিনায়ক হিসেবে ফিরবেন। সব মিলিয়ে গত দেড় দিনে যে নাটক হলো তার অবসান হয়েছে। এই নাটক ভুলে আজকের ম্যাচ দিয়ে আবারও ক্রিকেটে ফিরবে দেশের ক্রিকেটাঙ্গন।
চলতি বছর ডিসেম্বর ধরে হিসাব করলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র পাঁচ মাস। চলতি মাসেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুটি উপনির্বাচন। এর মধ্যে ১৭ জুলাই হবে ঢাকা-১৭ আসনের ভোটগ্রহণ। সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে সরব বিএনপি, অন্যদিকে একই কারণে চাপ আছে বিদেশিদের। এ অবস্থায় উপনির্বাচনকে জটিল অঙ্ক মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। বিশেষ করে ঢাকা-১৭ আসনের ভোটের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে সরকারের স্বস্তি ও অস্বস্তি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারের শেষ সময়ে উপনির্বাচন উভয় সংকট হয়ে এসেছে। নৌকার প্রার্থীর বিজয় এই মুহূর্তে সরকারের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আবার বিতর্কমুক্ত নির্বাচন উপহার দেওয়াও সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে সংসদ থেকে বিএনপির পদত্যাগের পর ছয়টি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন হয়। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল আলোচনায়। সংসদ সদস্য পদ ছাড়ার পর বিএনপি ত্যাগ করা উকিল আবদুস সাত্তার স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তাকে সরকার জিতে আনার জন্য কৌশল করেছে বলে তখন বিরোধীদের পক্ষ থেকে সমালোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়ার দুটি আসনে ইউটিউব চ্যানেলে জনপ্রিয়তা পাওয়া অভিনেতা আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আলোচনার জন্ম দেন। তিনি বগুড়া-৪ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে মাত্র ৮৩৪ ভোটে হেরে যান। পরে তিনি দাবি করেন, তাকে কারচুপি করে হারানো হয়েছে। যদিও হিরো আলম বগুড়া-৬ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রাগেবুল আহসানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামানত হারিয়েছেন।
এই হিরো আলম আবার ঢাকা-১৭ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। প্রথমে তার মনোনয়ন বাতিল হলেও আপিল করে প্রার্থী হিসেবে বৈধতা পান। অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) মারা যাওয়ায় এ আসনটি শূন্য হয়। এ ছাড়া ৩০ জুলাই হবে চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচন। সেখানকার সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীন মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য হয়।
এ দুটি উপনির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অনড় অবস্থান গ্রহণ করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। তাদের দাবি, এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। অন্যদিকে সরকারপ্রধান বারবার সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করছেন। নির্বাচন কমিশনও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করছে। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া পাঁচ সিটি করপোরেশনের প্রথম ভোট গাজীপুরে সেরকম চেষ্টা দেখা গেছে। যদিও পরে বরিশালে প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ফলে সরকারপ্রধানের অঙ্গীকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রয়াসে আস্থা না রাখার কথাই বলছে বিরোধীরা। সে কারণে জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন সরকারি দলের দাবির সপক্ষে যৌক্তিক উদাহরণ হতে পারে, হতে পারে বিএনপির দাবির পক্ষের শক্তিশালী প্রমাণ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, কতটা ঝুঁকিমুক্তভাবে দল এই উপনির্বাচন পার করতে পারবে সেই ভয় নিয়েই নানা কৌশল গ্রহণ করতে হচ্ছে। তাছাড়া আগের সরকারগুলোর মেয়াদের শেষদিকে ঢাকায় অনুষ্ঠিত উপনির্বাচন বিরোধী দলের হাতে ইস্যু তুলে দিয়েছে তার একাধিক নজির সামনে রয়েছে বর্তমান সরকারের। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার ঢাকার দুটি আসনে উপনির্বাচন মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হওয়ায় তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ নির্বাচন ব্যবস্থা পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন করেছিল এবং সে আন্দোলন যৌক্তিক প্রমাণ হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, এসব নানা দিক ভাবতে হচ্ছে সরকারকে। দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব ঢাকার উপনির্বাচনের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণ করতে হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এ সরকারকে। অন্যদিকে সরকারের জনপ্রিয়তা রয়েছে সেটা প্রমাণ করতে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে। দুটোই যদি সফল হয় তাহলে দেশ-বিদেশে এ উদাহরণ তুলে ধরে সরকারবিরোধীদের দুর্বল করতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ‘টপ প্রায়োরিটি’ (সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার) বিতর্কমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। দলীয় প্রধান হিসেবে নৌকার প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করাও ‘প্রায়োরিটি’। তিনি দাবি করেন, ‘বিএনপি সবসময়ই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে কূটকৌশল করে।’
আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর চার সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, নানা অঙ্ক সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করাÑ এ দুটি কীভাবে সম্ভব করবে তা নিয়ে বিপাকে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা। অন্য যেকোনো সরকারের সময়ের তুলনায় এবারের উপনির্বাচন একটু ভিন্নমাত্রার। তাছাড়া আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা যাবে কি না, তা যাচাই করতে উপনির্বাচনের সময়ে ঢাকায় থাকবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ব্যক্তিগত আলোচনার সূত্রেও জানা গেছে, উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম ভোটে নেমে আরও জটিল করে তুলেছে নির্বাচন। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত সব মহল মুখিয়ে আছে এ নির্বাচন নিয়ে। যাতে ইস্যু তুলে আনতে পারে এখান থেকে। ছোট অনেক ঘটনা বড় করে দেশ-বিদেশে অপপ্রচার করার টার্গেট নিয়ে বসে আছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা দলগুলো।
দলের কেন্দ্রীয় ওই নেতারা দাবি করেন, মোহাম্মদ এ আরাফাতকে প্রার্থী করার বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তে দলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘদিনের রাজনীতি করা নেতাদের বাদ দিয়ে শুধু মেধা বিচার করে আরাফাতকে প্রার্থী করায় সেখানকার আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষোভের কথা প্রকাশ করেছেন সারা দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা। দলের একটি অংশের রাগ-ক্ষোভ কষ্টও ঢাকা-১৭ আসনের ভোট আওয়ামী লীগের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাড়া জাগিয়ে ভাইরাল হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম আওয়ামী লীগের আরেকটি অংশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
সম্প্রতি শেষ হওয়া পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট বর্জন করা বিএনপির নেতাকর্মীরা কোনো প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রমুখী হননি। এ উপনির্বাচনে তার ব্যত্যয় ঘটবে বলে দাবি করছে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী মহল। এর কারণ হিসেবে তারা দাবি করেন, হিরো আলমে ভর করে সরকার ও সংসদের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার চক্রান্ত করছে বিএনপি। সরকার অজনপ্রিয় প্রমাণ করতে তার মতো প্রার্থীর বিজয়ে গুরুত্ব দিতে কূটকৌশলের পথে হাঁটতে যাচ্ছে মাঠের বিরোধী দলটি। এসব জটিল অঙ্ক নৌকার প্রার্থী আরাফাতকেও দুশ্চিন্তায় রেখেছে বলে তার ঘনিষ্ঠজনদের সূত্রে জানা গেছে।
নানা বৈরী পরিস্থিতি তুলে ধরে আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিম-লীর সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপনির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দ্বিতীয় গুরুত্ব নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করা। প্রথম গুরুত্বকে গুরুত্বহীন করে দ্বিতীয় গুরুত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হবে না।
ঢাকা-১৭ সংসদীয় এলাকায় বাস করা এ নেতা আরও বলেন, ভোটের পরিবেশ ঠিক রাখতে চান প্রধানমন্ত্রী। দেশি-বিদেশি সমালোচক মহলের মুখবন্ধ রাখার ব্যাপারটা দলের কাছে ও সরকারের কাছে অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সভাপতিমন্ডলীর এ সদস্য আরও বলেন, রাজধানীর অভিজাত এলাকা নিয়ে ঢাকা-১৭ আসন। সেখানে যেনতেন নির্বাচন করার সুযোগ যেমন নেই, তেমনি দলের ও সরকারের ভাবনাতেও নেই।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর। তার প্রমাণ সম্প্রতি শেষ হওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে জনগণ দেখেছে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি হলো ভোট বিতর্ক সৃষ্টি করা। এগুলো মাথায় রেখেই আমরা রাজনীতি করি।’
এমন প্রেক্ষাপটে নৌকাকে জেতাতে আওয়ামী লীগ বেশ খাটাখাটুনি করে চলেছে। সংসদীয় এলাকাটিতে থাকা বস্তিবাসী, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ভোটারদের দিকে বেশি নজর দিয়েছেন দলের সর্বস্তরের নেতারা। উচ্চবিত্তের ভোটার বাদ দিয়ে আগে ছুটছে তাদের কাছে। নৌকার প্রচারে থাকা নেতাকর্মী ও প্রার্থী আরাফাত নিজেও এদিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমও টার্গেট করেছেন এ ভোটারদের। সে কারণে দলের নেতারা মনে করছেন, এ ভোটারদের কাছেই আগে যাওয়ার দরকার। ওই তিন শ্রেণির ভোট নৌকার পক্ষে পড়লে দলের দুশ্চিন্তা কমবে।
নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাতের কাছে জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমি ও আমরা ব্যক্তিগতভাবে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আমি যত জায়গায় প্রচারে গিয়েছি, সাড়া পেয়েছি। নৌকার পক্ষে জনগণের সমর্থন দেখতে পেয়েছি।’
কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের গোলাগুলিতে ছয়জন নিহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে ক্যাম্প-৮ ওয়েস্টে এ ঘটনা ঘটে। গোলাগুলির সময় ঘটনাস্থলে পাঁচজন নিহত হয়। পরে সন্ধ্যায় ১১ নম্বর ক্যাম্পের একটি ডোবা থেকে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ একজনকে গুরুতর অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতরা সবাই আরসার সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে এপিবিএন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণে কিছুদিন ধরে আরসা ও আরএসওর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এরই জেরে দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে পুরো রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।
নিহতরা হলেন উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আনোয়ার সাদেক (২৩), মো. হামিম (২১), উখিয়ার ১০ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা নজিমুল্লাহ (২৬), উখিয়ার ৩ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা নুরুল আমিন (২৪), ৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শুক্কুর (৩২) ও উখিয়ার ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে
সানাউল্লাহ (৩৫)। গুলিবিদ্ধ হলেন উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা ইমান হোসেন (৪৫)।
ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার গান ও এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ আটক হয়নি বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ব্লকে ব্লকে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।
৮-এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন অ্যান্ড মিডিয়া) ফারুক আহমেদ বলেন, ‘ক্যাম্পে একাধিক সশস্ত্র গ্রুপের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে খুনোখুনি বাড়ছে। এরই মধ্যে ভোরে দুই সন্ত্রাসী দলের গোলাগুলির ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তারা সবাই আরসার সদস্য।’
৮-এপিবিএনের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আমির জাফর বলেন, ‘সকাল ৬টার দিকে ক্যাম্পে রোহিঙ্গা দুষ্কৃতকারীদের গোলাগুলির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে ৮-এপিবিএনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
গত বৃহস্পতিবার সকালে উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাব-মাঝি এবাদুল্লাহ খুন হন।
মোদি পদবি নিয়ে কটূক্তির মানহানির মামলায় পাওয়া সাজার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে রাহুল গান্ধীর করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে গুজরাট হাইকোর্ট। গতকাল শুক্রবার এ আদালত বলেছে, নি¤œ আদালত কংগ্রেসের সাবেক সভাপতিকে যে সাজা দিয়েছে তা যথার্থ।
গুজরাট হাইকোর্টের এ রায়ে রাহুলের পক্ষে সংসদ সদস্যপদ ফিরে পাওয়ার আশা ফিকে হয়ে এলো। এখন তাকে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে হবে। সেখানেও একই রায় বহাল থাকলে তিনি আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনেও প্রার্থী হতে পারবেন না বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। ২০১৯ সালের মার্চে কর্ণাটকে এক নির্বাচনী সমাবেশে কটাক্ষ করে রাহুল বলেছিলেন, ‘সব চোরের পদবি মোদি হয় কী করে? নীরব মোদি, ললিত মোদি, নরেন্দ্র মোদি।’
পলাতক ভারতীয় ডায়মন্ড ব্যবসায়ী নীরব মোদি এবং ভারতীয় ক্রিকেট প্রিমিয়ার লিগের সাবেক প্রধান ললিত মোদি যাকে দেশটির ক্রিকেট বোর্ড আজীবন নিষিদ্ধ করেছে, তার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদিকে টেনে করা এ মন্তব্যে মোদি পদবিধারী সবাইকে অপমান করা হয়েছে অভিযোগ তুলে রাহুলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন বিজেপির বিধায়ক পুর্নেশ মোদি।
গুজরাটের সুরাটের ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এ বছরের ২৩ মার্চ ওই মামলায় সাবেক কংগ্রেস সভাপতিকে দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়। উচ্চ আদালতে আপিলসহ সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাহুলকে গ্রেপ্তার না করারও নির্দেশ দেন তারা। এ আদেশের পরদিন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে লোকসভায় অযোগ্যও ঘোষণা করা হয়।
ইন্দিরা গান্ধীর পৌত্র পরে তার সাজার বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে যান। সেখানকার বিচারকও ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়ই বহাল রাখেন। এরপর রাহুল ছোটেন হাইকোর্টে। শুক্রবার সে আদালতের রায়ও তার বিপক্ষে গেল।
রাহুলের এ সাজাকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে অভিহিত করেছে কংগ্রেস। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন বিজেপি বলছে, রাহুলের বিরুদ্ধে হওয়া এ মামলায় স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে।
আমেরিকান সংস্থা কেয়ার থেকে ১৯৬৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ২৪ জনের একটা টিম কুষ্টিয়ার উদ্দেশে পাঠানো হয়। ২০ মিনিট পর হেলিকপ্টারটির ফরিদপুরে নামার কথা ছিল। কিন্তু মাটি ছোঁয়ার আগেই সেটি বিধ্বস্ত হয়। ২৪ যাত্রীর ২৩ জনই ওই দুর্ঘটনায় নিহত হন। বেঁচে ফেরেন শুধু একজন।
তখন তিনি চাকরি করতেন কেয়ারে। হেলিকপ্টারটি ছিল পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের (পিআইএ)। এটির মালিক ছিলেন আজগর খান, যিনি পাকিস্তানের একজন বড় রাজনীতিক ছিলেন। তাকে হাসপাতালে দেখতেও গিয়েছিলেন। সুস্থ হয়ে তিনি পিআইএর ঢাকা অফিসে চাকরির আশায় যান। পিআইএ কর্তৃপক্ষ তাকে তাদের অফিসে চাকরি দেয়।
পিআইএর চাকরিতে থাকা অবস্থায় তিনি সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিসেস (সিএসএস) পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষায় তিনি পুরো পাকিস্তানে ১৩তম এবং পূর্ব পাকিস্তানিদের মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন। তার নাম এমএ মান্নান। এখন তিনি বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী।
সুনামগঞ্জের এক দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম। ছোটবেলা থেকেই অভাবের সঙ্গে লড়েছেন। পাকিস্তানের সারগোদা বিমান বাহিনী স্কুলে ভর্তি, অর্থাভাবে এইচএসসি পাসের পর পড়াশোনা বন্ধ, নদীর পানি পান করে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা অন্যরকম জীবন তার। একদিকে জীবনযুদ্ধ, অন্যদিকে সফলতা।
এমএ মান্নান বাংলাদেশ সরকারের একজন মন্ত্রী হলেও তিনি তার শিকড় ভুলে যাননি। এখনো তিনি গর্ব করে বলতে পছন্দ করেন, ‘আমি গরিব ও অভাবী পরিবারের সন্তান।’ সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার ডুংরিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্ম তার। ছোটবেলা থেকেই মানুষের দুঃখ-কষ্টের সঙ্গে তিনি পরিচিত।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান তার বাবার রেখে যাওয়া ভিটেমাটি ট্রাস্ট করে দিয়েছেন। সেখানে তার প্রয়াত মা আজিজুন নেসার নামে একটা টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট করেছেন। বাবার ভিটেতে ৩০ শতাংশ জায়গা ছিল, পরে তিনি আরও ১৬ শতাংশ জায়গা কিনেছিলেন। মোট ৪৬ শতাংশ জমিতে টেক্সটাইল কলেজ নির্মাণ করেছেন। সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।
এমএ মান্নান সরকারের সফল আমলা ছিলেন। যুগ্ম সচিব থেকে অবসর নেওয়ার পর রাজনীতিতে যুক্ত হন। আমাদের দেশে যারা আমলা থেকে মন্ত্রী হন, তারা সাধারণত জনগণের এমপি-মন্ত্রী হতে পারেন না। তারা মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারেন না। সবসময় একটা ব্যবধান থাকে।
‘আপনার ক্ষেত্রে তা হয়নি কেন?’ এ প্রশ্নের জবাবে এমএ মান্নান বলেন, ‘আমি গ্রামের খুব সাধারণ একটা পরিবারে জন্মেছি। সুনামগঞ্জের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমি বেড়ে উঠেছি। আমি এমন কোনো পরিবারে জন্ম নিইনি, যেখানে মানুষের সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই। তাই সবসময় সাধারণ মানুষের জন্য আমার মন কাঁদে। আমি জন্মগতভাবে মানুষের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করি, তাদের সুখ-দুঃখ কাছ থেকে দেখতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি এখন মন্ত্রী, তারপরও আমি চাই প্রান্তিক মানুষের কাছাকাছি যেতে। যদিও নানা কারণে পুরোপুরি তা করে উঠতে পারি না।’
আমলা ও রাজনীতিকÑ দুই জীবনেই সফল। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি খুব কষ্টের কাজ। এতে যেমন কায়িক পরিশ্রম হয়, তেমনি মানসিক পরিশ্রমও হয়। তারপরও বাকিটা জীবন রাজনীতি করেই কাটাতে চাই।’
বিপরীতে আমলাদের জীবন একটা আবদ্ধ জীবন। আইন মেনে, নিয়ম মেনে বসের অধীনে জীবন চালাতে হয়। তিনি বলেন, ‘সরকারে আমার বস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি কিন্তু তার পাশে বসে কাজ করতে পারি। অথচ আমলা থাকতে আমি চাইলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে যেতে পারতাম না, বসা তো দূরের কথা।’
তার রাজনীতিতে আসার প্রেক্ষাপটটা সহজ ছিল না। তিনি যে আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন, সেটা ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরেক কিংবদন্তি আবদুস সামাদ আজাদের আসন।
আমাদের দেশে কেউ মারা গেলে তার পরিবারের কোনো সদস্যকেই এমপি বানানোর রীতি। এ রীতির বিপরীতে গিয়ে কীভাবে নমিনেশন পেলেন জানতে চাইলে এমএ মান্নান বলেন, ‘আবদুস সামাদ আজাদ মারা যান ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল। এরপর উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়। তখন আমি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করি এবং নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করি। কিন্তু শেখ হাসিনা জানান, আওয়ামী লীগ জোট সরকারের অধীনে ভোট বর্জন করেছে, তাই দল থেকে প্রার্থী করার সুযোগ নেই। তবে আমি যদি স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে চাই, তাহলে নেত্রী আমার জন্য দোয়া করবেন।’
তিনি বলেন, ‘এরপর আমি এলাকায় যাই এবং মানুষের সঙ্গে কথা বলি। ব্যাপক সাড়া পাই। আমি নির্বাচনে অংশ নিই। কিন্তু সেই নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে সহযোগিতা করেননি। উল্টো বলেন, আমি উড়ে এসে জুড়ে বসতে চাইছি। তারপরও আমি নির্বাচন করি। সেই নির্বাচনে মাত্র তিন হাজার ভোটে আমি হারলাম বা আমাকে হারানো হলো। সেই নির্বাচনে জোট সরকারের প্রার্থী ছিলেন শাহিনুর পাশা চৌধুরী। তাকে জেতানোর জন্য মান্নান ভূঁইয়া, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রমুখ বিএনপি নেতা জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জে আমার নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে প্রচারণা চালান।’
ছোটবেলায় নদীর পানি খেয়ে এমএ মান্নান কলেরায় আক্রান্ত হলেও বেঁচে যান। তবে কলেরায় তার ছোট ভাইবোন মারা যায়। এরপর তিনি মামার বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ধারনে চলে যান। সেখানে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় জানতে পারেন, পাকিস্তানের সারগোদা বিমান বাহিনীর স্কুলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তির আবেদন নেওয়া হচ্ছে। তিনি ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে পড়াশোনার সুযোগ পান এবং ‘ও’ লেভেল পাস করেন। সেখানে পড়াশোনার খরচ বহন করত সরকার। সেখানে তিনি দেখলেন, তার সহপাঠীদের অধিকাংশই পাকিস্তানের ধনী পরিবারের সন্তান। তাদের ভাষা আলাদা, স্বভাবচরিত্র, চলাফেরা, খাবারদাবার আলাদা। সেখানে পড়াশোনার মাধ্যম ছিল ইংরেজি। শিক্ষকদের অধিকাংশ ছিলেন ব্রিটিশ।
তিনি বলেন, ‘আমি গ্রামের ছেলে; নিম্ন আয়ের পরিবারে মানুষ হওয়ায় আমার চালচলন আলাদা এটা আমি বুঝতে পারি। পূর্ব-পাকিস্তান থেকে যারা গিয়েছিল ওই বিদ্যালয়ে, তারাও অর্থনৈতিক বিচারে আমার চেয়ে উচ্চমর্যাদার ছিল। তাদের বাবারা বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। সারগোদাতে আমার সহপাঠীদের অনেকেই পরে পাকিস্তানে ও বাংলাদেশে বড় চাকরি করেন। পাকিস্তানি অনেক বন্ধু পরে সে দেশে মেজর, চিফ অব স্টাফ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তাদের সঙ্গে এখনো মাঝেমধ্যে আমার যোগাযোগ হয়।’
সারগোদাতে ও লেভেল সম্পন্ন করার পর সহপাঠীদের সঙ্গে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু স্বাস্থ্য পরীক্ষায় রেজাল্ট নেগেটিভ আসায় বিমান বাহিনীতে যোগ দিতে পারেননি। তাকে পূর্ব পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আবার শুরু হয় কষ্টের দিন।
বাংলাদেশে (তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে) ফিরে এসে ঢাকার একটা মেসে ওঠেন। তার এক মামার সহযোগিতায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু মেসের খরচ জোগাতে না পেরে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। এরপর একটা ক্লিয়ারিং এজেন্সিতে চাকরি নেন। সেখান থেকে আমেরিকান সংস্থা কেয়ারের ঢাকা অফিসে চাকরি পান। কেয়ারে থাকা অবস্থায় ওই ভয়ানক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পড়েন।
অবসর সময় কীভাবে কাটে এ প্রশ্নের জবাবে এমএ মান্নান বলেন, ‘আমার জীবনে অবসর সময় খুব কম। আগে বই পড়তাম। ইদানীং এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, বই পড়ার সময় পাই না। বই পড়তে বসলাম তো কেউ কল দিয়ে বসল! মিটিং, সভা-সেমিনার, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনÑ এসব করতে গিয়ে একদম অবসর সময় পাওয়া যায় না।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘তবে আমি প্রচুর গান শুনি। হয়তো গাড়িতে কোথাও যাচ্ছি, আমি আমার মোবাইলে গান ছেড়ে দিই। যখনই সুযোগ পাই আমি গান শুনি। শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে রবীন্দ্রসংগীত শুনি। আমার বাড়ি যেহেতু হাওর অঞ্চলে আবদুল করিম, হাছন রাজা, রাধারমণের গান আমার এমনিতেই প্রিয়। কিছু আধুনিক গানও মাঝেমধ্যে শোনা হয়।’
প্রেমিক হিসেবে কেমন ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কম বয়সে এমনিই প্রেম হয়ে যেত। ওই সময়ে প্রেমের জন্য বিশেষ পরিবেশ লাগত না। আশপাশে হাঁটলেই প্রেম হয়ে যেত।’
ঢাকায় একদিন দেখা হয় জুলেখা মান্নানের সঙ্গে। এরপর পরিচয়-প্রেম-বিয়ে। তারপর সংসার। অকপটে বললেন মন্ত্রী এমএ মান্নান।
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ১৮ আগস্ট ৯ বছরের শিশু আরাফাতের মৃত্যু হয়। সপ্তাহ না যেতেই ২৫ আগস্ট মারা যায় আরাফাতের ছোট বোন ৬ বছরের রাইদা। রাজধানীর মধ্যপাইকপাড়ার ছাপাখানা মোড়ের একটি বাসায় দুই সন্তান আরাফাত ও রাইদাকে নিয়ে থাকতেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও রাবেয়া আক্তার দম্পতি। সন্তানদের মৃত্যুর পর জীবনটাই বদলে গেছে তাদের। তছনছ হয়ে গেছে সাজানো সংসার। ইব্রাহিম ও রাবেয়া দম্পতির মতো বহু পরিবার এবার সর্বস্বান্ত হয়েছে ডেঙ্গুজ¦রের থাবায়। সন্তান হারানো এমন বাবা-মায়েরা পাগলপ্রায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সী ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৮৬ এবং নারী ৯১ জন। এবার শুধু শহর নয়, গ্রামেও ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। সেখানেও মারা গেছে অনেক শিশু। এ বছর ডেঙ্গুতে শিশুমৃত্যু নিয়মিত ঘটনা হয়ে দেখা দিয়েছে। এই রোগে এত শিশুর মৃত্যু আগে কখনো হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ বছর শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সীরা আক্রান্ত হয়েছে ৬৩ হাজার ৯১৯ জন; যা মোট আক্রান্তের ৩২ শতাংশ। এর মধ্যে নারী ২৩ হাজার ৬১৭ এবং পুরুষ ৪০ হাজার ৩০২ জন। ডেঙ্গুতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তথ্য বলছে, ডেঙ্গুতে শিশুদের আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া শিশুদের যারা সুস্থ হয়ে উঠছে, তাদের মধ্যে ভবিষ্যতে শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডেঙ্গুর বর্তমান সংক্রমণের মধ্য দিয়ে শিশুদের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তাদের মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতি শিশুদের নতুন বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার বিরূপ প্রভাব শিশুদের মধ্যে ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে। মস্তিষ্ক ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এর প্রভাব থাকতে পারে। এতে তাদের মেধাবিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাদের যদি কিডনি কিংবা লিভারের মতো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেই ভার সারা জীবন বহন করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিশুদের মৃত্যু নিয়ে ভালোভাবে অ্যানালাইসিস করতে পারছি না। এসব মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে অটোপসি করতে পারলে ভালো হতো। বিভিন্ন দেশে মৃত্যু নিয়ে ডেথ রিভিউ বা অটোপসি করা হয়। এটি করতে পারলে বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। কোনো শিশুর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, ১ মাস থেকে ১২ বছর বয়সী মুমূর্ষু শিশু রোগীদের পৃথক পিআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। তবে দেশে পিআইসিইউ সংকট রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পিআইসিইউর জন্য স্বজনদের হাহাকার করতে দেখা গেছে। হাসপাতালগুলোতে দেখা গেছে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ শিশুকে সেবা দিতে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমন বেশি, সেখানে শিশু রোগীও উল্লেখযোগ্য। এই দুটি হাসপাতালে একেকটি শয্যায় একাধিক শিশু রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ঢামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড খুলেছে কর্তৃপক্ষ। ৭০ থেকে ৮০ জনের সেবা পাওয়ার কথা, কিন্তু সেখানে প্রতিদিন সেবা নিচ্ছে প্রায় ৩০০ শিশু। ঢামেক হাসপাতালের ২৫ শিশুকে একসঙ্গে পিআইসিইউতে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। কিন্তু মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো পিআইসিইউ নেই।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে শিশুদের ওয়ার্ডেই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পিআইসিইউ নেই, তবে এনআইসিইউ (নিউনেটাল আইসিইউ বা নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) আছে।
এদিকে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের শরীরে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু শনাক্তে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। শিশুদের ডেঙ্গুর চিকিৎসা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা ইয়াসমীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিশুদের জ্বর আসার তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করাতে হবে। এবার অনেকের মধ্যে হঠাৎ করে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। ফলে তারা দেরিতে চিকিৎসা নিতে আসছে। দেখা গেছে, ডেঙ্গুজ্বরে যেসব শিশু মারা গেছে, তারা বাড়ি থেকেই জটিলতা নিয়ে এসেছে। এখানে একটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে, শুধু প্লাটিলেট কমা আশঙ্কার নয়, রক্তচাপ কমে যাওয়া প্লাটিলেট কমার চেয়ে ভয়ের। তাই আমাদের শিশুদের রক্তচাপ নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।’
স্যাংশন নিয়ে ভয় না পাওয়ার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার মেথডিস্ট সেন্ট্রাল হলে নাগরিক সংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি পাল্টা স্যাংশন দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
সংবিধান অনুযায়ী সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে জানান তিনি। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ইস্যু সম্পর্কে প্রশ্ন রাখেন, সাজাপ্রাপ্ত কাউকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় কোন দেশ?
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, পৃথিবীর কোন দেশের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় বলতে পারেন? কোনো দেশে পাঠায়? তারা এটা দাবি করে। আমাদের কেউ কেউ আঁতেল আছে। তারা বলে, একটু কী সহানুভূতি দেখাতে পারেন না! সে এভারকেয়ার, বাংলাদেশের সবথেকে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়সতো আশির ওপর। মৃত্যুর সময় তো হয়ে গেছে। তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এত কান্নাকাটি করে লাভ নাই।
স্যাংশনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। আপনাদেরও বলব, স্যাংশন নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।
বিএনপি চেয়ারপারসন ‘অসুস্থ’ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে শর্ত দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই শর্তের অন্যতম ইস্যু হচ্ছে, বিএনপিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এমন ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিদেশে যাওয়ার অনুমতি মিলবে। কিন্তু সরকারের সেই শর্তে রাজি নন খালেদা জিয়া। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো শর্তের বিনিময়ে তিনি মুক্তি চান না। ফলে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার সরকারের যে চেষ্টা, সেটা এ দফায় সফল হচ্ছে না বলে মনে করছেন আন্দোলনে থাকা নেতারা। তাদের মতে, সরকার ফাঁদ পাতলেও এতে পা না দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে বেগম জিয়ার। বরং আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলতে চান তারা। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ লক্ষ্যে প্রায় অর্ধশত দল নিয়ে গত প্রায় এক বছর ধরে আন্দোলনে রয়েছেন তারা।
শর্তের বিনিময়ে মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে গত রবিবার রাতে কিশোরগঞ্জে বিএনপির রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল তিনি যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান, তাহলে বিএনপিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আসতে হবে। বিএনপি থেকে উত্তর দেওয়ার আগেই অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়া বিদ্রোহ করে বলেছেন, তার জীবনে গণতন্ত্রের জন্য কোনো শর্ত নেই। ভোটের অধিকারের জন্য, এই দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য কোনো শর্ত নেই। কোনো শর্ত খালেদা জিয়ার নামের সঙ্গে যায় না এবং আমরাও তা মানি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়া ৫৪ দিন ধরে টানা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিতই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এ সময় বেশ কয়েকবার শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লে দলের কয়েকজন নেতার মাধ্যমে মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের দেওয়ার বক্তব্যের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কয়েকজন সম্পাদক ও সদস্য খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। সূত্রগুলো বলছে, একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য কথা প্রসঙ্গে এ ধরনের প্রসঙ্গেও ইঙ্গিত দিলে খালেদা জিয়ার শর্ত দিয়ে মুক্ত হতে চান না বলে পুনর্ব্যক্ত করেন। যদিও এর আগে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথা নেতাদের আগেই বলে রেখেছিলেন একসময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এ নেত্রী। কোনো অবস্থায় শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না এবং এ ব্যাপারে কোনো ধরনের সমঝোতাও নয়Ñ এ ব্যাপারেও খালেদা জিয়ার স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করেন। সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে এসে মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের এ আন্দোলনে উনার সমর্থন আছে। আমাদের একজন নেতা (ওই বৈঠকে) বলেছেন, সরকার একটা নির্বাচনের জাল বিছানোর চেষ্টা করছে। উনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, কোনো অবস্থায় এ সরকারের অধীনে নির্বাচনী ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।’
এর আগে ৮ মে রাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় সাক্ষাৎ শেষে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছিলেন, কেউ কেউ বলছেন আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়া উচিত। এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া তাদের বলেছেন, প্রশ্নই আসে না। এ বিষয়ে আমি কোনো অনুমতি দেব না।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি মনে করছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করতে না পারলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমে এ ইস্যুর সমাধান করবে তারা। এজন্য চলমান এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা ইস্যুটি জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে চান তারা। এতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নিতে পারে বলে তাদের বিশ্বাস।
গতকাল সোমবার স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ৫ অক্টোবর বিএনপি ঘোষিত রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ হবে। এর আগেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, ‘দাবার ঘুঁটি হিসেবে খালেদা জিয়াকে ব্যবহারের চিন্তা তারা কীভাবে করে সেটাই বোধগম্য নয়। সরকারের এ ধরনের চিন্তা বা পরিকল্পনা কোনো কাজে আসবে না।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে বিএনপিপ্রধানের পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের ওপর গত রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই। যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আবার গতকাল নিজ কার্যালয়ে সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি কিংবা আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারেন। তবে তার আগে তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেলে যেতে হবে। রাষ্ট্রপতি বা আপিল বিভাগের খালেদা জিয়ার পরিবার আবেদন করবে না বলে দলীয় আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন নেই বলেই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভয়ংকর তামাশা করা হয়েছে। যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। এর বাইরে দলের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’
এদিকে চিকিৎসক সূত্র জানা গেছে, বর্তমানে খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল তার আলট্রাসনোগ্রাম ও ইকো করা হয়েছে।
তিনি জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রণীত আইনের অধীনে ধানমন্ডিতে যে বাড়ি পেয়েছিলেন শেখ রেহানা, বিএনপি ক্ষমতায় এসে সে বাড়ি উচ্ছেদ করে। সেখানে পুলিশ ফাঁড়ি করছে আর ‘লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে’ সেই পুলিশ ফাঁড়ি উদ্বোধন করেছে খালেদা জিয়া। ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর তাকে (শেখ হাসিনা) খালেদা জিয়ার বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কীভাবে খালেদা জিয়ার জন্য আমার কাছ থেকে আরও সহানুভূতি আশা করে।’
লন্ডনের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টারে তার সম্মানে আয়োজিত একটি কমিউনিটি সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলা বিএনপির পক্ষে শোভা পায় না কারণ তারা জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ধোকাবাজি খেলেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই দেশের জনগণ তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। তিনি বলেন, দেশের জনগণ কখনই ভোট কারচুপিকারীদের ক্ষমতায় বসতে দেয় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে তার ওপর ন্যস্ত নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড স্থগিত করার পর খালেদা জিয়াকে তিনি বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে তার কিছুই করার নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আইন অনুযায়ী যা করতে পারেন তাই করেছেন। অনেকেই এখন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘আইন নিজের গতিতে চললেও খালেদা জিয়ার প্রতি আমি বেশি সহানুভূতি দেখাতে পারি’।
অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক।
উত্তর-পূর্ব পাকিস্তানে একটি অঙ্গ পাচারকারী চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পুলিশ বলছে। চক্রটির নেতা ফাওয়াদ মুখতারের বিরুদ্ধে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষের কিডনি চুরি করে বের করে ধনী গ্রাহকদের মধ্যে প্রতিস্থাপন করার অভিযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা বিবিসি নিউজ।
বিবিসি জানায়, অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর দেহ থেকে কিডনি সরিয়ে ফেলা এবং ধনী গ্রাহকদের কাছে বিক্রির অভিযোগে ফাওয়াদ মুখতার নামের এক চিকিৎসক ও তার দলের আট সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে পাকিস্তান পুলিশ। ফাওয়াদ এ পর্যন্ত তিন শতাধিক রোগীর কিডনি চুরি করেছেন।
এমনকি অস্ত্রোপচারকালে কিডনি চুরির সময় তার হাতে অন্তত তিনজন রোগী মারা গেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ফাওয়াদ এর আগে পাঁচবার অসদাচরণের জন্য গ্রেপ্তার হলেও প্রতিবারই জামিন নিয়ে মুক্তি পেয়ে যান। রোববার (১ অক্টোবর) পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় পাকিস্তান পুলিশ। চক্রটি পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশের পাশাপাশি পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে কাজ করছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মহসিন নকভি রবিবার একটি সংবাদ সম্মেলনে জানান, “কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টগুলি বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনকে ক্লিনিক আকারে সাজিয়ে সেখানে রোগীদের অস্ত্রোপচার করার সময় রোগীদের অজান্তেই কিডনি সরিয়ে নেয়া হত।“
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফাওয়াদ মুখতার জানিয়েছেন, তার নেতৃত্বাধীন চক্র এখন পর্যন্ত মোট ৩২৮ রোগীর দেহ থেকে কিডনি চুরি করেছে। প্রতিটি কিডনি বিক্রি হয়েছে ১ কোটি রুপি করে।
২০১০ সালে মানবদেহের প্রত্যঙ্গ ব্যবসা নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান। এ অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও মোটা অঙ্কের জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।