
বাংলাদেশে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল সফরের চতুর্থ দিন গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন ও অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সকালে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে তারা আগামী নির্বাচনে কমিশনের প্রস্তুতি ও সক্ষমতার বিষয়ে অবহিত হন। কমিশনের দাবি, প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিনিধিদলটি সন্তোষ প্রকাশ করেছে। পরে প্রতিনিধিদলটি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এ সময় তারা নির্বাচনী আইনসহ দেশের বিভিন্ন আইন নিয়ে কথা বলেছে।
ইসির সঙ্গে বৈঠক : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চেয়েছে বাংলাদেশে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
এ প্রসঙ্গে অশোক কুমার বলেন, ‘তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আমাদের ভোটার, ভোটকেন্দ্র, পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয় ও সিসি ক্যামেরার বিষয়েও তারা জানতে চেয়েছেন। তাদের একটা টেকনিক্যাল টিম আমাদের সঙ্গে ১৮ অথবা ১৯ তারিখ বৈঠক করবেন। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তাদের যে জিজ্ঞাসা ছিল জবাবে কমিশন তাদের সন্তুষ্ট করেছে, তারা সন্তুষ্ট।’
পর্যবেক্ষক পাঠানোর প্রসঙ্গে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদনগুলো এলে ভালো হয়। আরও কিছু ফর্মালিটিস আছে। সে ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স দরকার হবে। সে ক্ষেত্রে তারা যদি নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক পাঠায় যত খুশি তত, তাতে কোনো আপত্তি নেই নির্বাচন কমিশনের।’ ইইউ প্রতিনিধিদল কোনো শর্ত দেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের পরিস্থিতি দেখেছে। আমাদের প্রস্তুতি দেখেছে। যত খুশি পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারবে, তাতে কোনো লিমিটেশন নেই।’ তিনি জানান, ‘নির্বাচন কমিশন বলেছে, ৯১১টি নির্বাচন করেছে। সে ক্ষেত্রে তারা সন্তুষ্ট। পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট। তারা আরও বিস্তারিত আলোচনা করবে।’ নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো কথা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে আনা নিয়ে তারা আমাদের কাছে কিছু জানতে চায়নি। তারা জানতে চেয়েছে ভোটার সংখ্যা কত।’ এদিকে ইইউ প্রতিনিধিদলের জ্যেষ্ঠ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ রিকার্ডো শেলেরি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দুই সপ্তাহের সফরে তারা এসেছেন। পর্যালোচনা শেষে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রবিষয়ক হাই-রিপ্রেজেনটেটিভ জোসেফ বোরেলকে সার্বিক পরিস্থিতি জানাবেন। তারপর তিনি সিদ্ধান্ত দেবেন ভোট পর্যবেক্ষণে প্রতিনিধিদল পাঠানো হবে কি না।
বৈঠকে ইইউ প্রতিনিধিদলের পাঁচ সদস্যসহ, সিইসির সঙ্গে অন্য নির্বাচন কমিশনার এবং ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনী আইন নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে বৈঠক : নির্বাচনী আইনসহ দেশের বিভিন্ন আইন নিয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সদস্যরা। গতকাল বেলা ২টার দিকে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। ইইউ প্রতিনিধিদলের নেতা চেলেরি রিকার্ডোসহ তাদের দলের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী।
বৈঠকের সময় অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সামনে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা গণতন্ত্র ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ইংরেজি ভাষায় বিভিন্ন ধরনের সেøাগান দেন।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ওনারা নির্বাচনী আইন-সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলেছেন। নির্বাচনকালীন সময়ের আরপিও আইন, ফৌজদারি আইন ও দেওয়ানি আইন এবং নাগরিকদের অধিকারের যে আইনগুলো আছে সেগুলো সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের আইনগুলো সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আইনগুলোতে কী আছে না আছে সেগুলো সম্পর্কে জানিয়েছি।
বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিক্ষোভ : সুপ্রিম কোর্টে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলের পথ আটকে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। পরে পুলিশি নিরাপত্তায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন তারা।
বিএনপিপন্থি আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আমরা প্রতিনিধিদলকে দেখালাম যে, দেশের জনগণ কী চায়, দেশবাসী কী চায়, আইনজীবীরা কী চান। তারা এ সরকারকে চায় না আমরা সেটি দেখাতে চেয়েছি।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে ঢাকায় এসেছে ইইউ প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদল। ইইউ প্রতিনিধিদলের নেতা চেলেরি রিকার্ডো এবং সদস্য মেরি-হেলেন অ্যান্ডারলিন রবিবার ভোরে ঢাকায় আসেন। ইইউ ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের চারজন সদস্য দুই ভাগে গত ৮ জুলাই ঢাকায় আসেন। ৮ থেকে ২৩ জুলাই এ সফরে মূল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের কর্মপরিধি, পরিকল্পনা, বাজেট, লজিস্টিকস ও নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয় মূল্যায়ন করবে প্রতিনিধিদলটি। ইউরোপীয় জোটের পররাষ্ট্রবিষয়ক হাই-রিপ্রেজেনটেটিভ জোসেফ বোরেলের কাছে তারা তাদের প্রতিবেদন জমা দেবেন। প্রতিবেদনের আলোকে বাংলাদেশের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ইইউ।
সফররত ইইউ প্রতিনিধিদল এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ, নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সরকারের ওপর অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি চাপ দেখা যাচ্ছে বিদেশিদের। ঘন ঘন আসছে বিদেশি প্রতিনিধিদল। বিশেষ করে এ তৎপরতার সামনের সারিতে আছে যুক্তরাষ্ট্র।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচন বিষয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত সময় পার করছে। ফলে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত জনগণের কাছে যাওয়ার রাজনৈতিক তৎপরতা নেই। রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনী এলাকার প্রার্থীকে ঘিরে মানুষের মধ্যেও যে উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকার কথা, সেটা একেবারেই অনুপস্থিত।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের প্রত্যাশা ও চাপ, নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সমমনা জোট এবং বিরোধীপক্ষের বিদেশিদের কাছে ধরনা দেওয়ায় দেশের নির্বাচনী
সংস্কৃতির পরিবর্তন হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব এমন পর্যায়ে গেছে যে, মনে হচ্ছে বিদেশিরাই নির্বাচনের মূল অংশীজন। ফলে দেশের জনগণের মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ নেই। সবাই তাকিয়ে আছে বিদেশিদের দিকে।
বিশ্লেষকদের অভিমত, এবার সবচেয়ে বড় চাপ হলো যুক্তরাষ্ট্রের। সংসদের বাইরে দেশের বড় বিরোধী দলও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নির্বাচন নিয়ে সবসময় তাদের দাবিদাওয়া তুলে ধরছে। বড় কর্মসূচি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রতিনিধিদলের সফরের সময়। তারা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অর্থাৎ এক দফা দাবিতে মাঠে নামছে আজ। যখন যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর শুরু করছে। এ ছাড়া গত শনিবার থেকে সফরে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ব্যস্ত বিদেশি তথা যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো চাওয়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে। আবার বিদেশিদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ নিয়ে ব্যস্ত রাজনৈতিক পক্ষগুলো।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রায় অভিন্ন মত দিয়ে বলেন, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ প্রতিনিধিদলের সফর এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা এবং বৈঠক নিয়েই ব্যস্ত দলগুলো। ফলে দেশে মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী উৎসবের কোনো আমেজ নেই।
ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ১৫ জুলাই রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে নির্বাচন ও নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বক্তব্য ও প্রস্তাব জানা যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুর সঙ্গে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও অন্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা হবে। এরপর নির্বাচন পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা করা যাবে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম দেশ রূপারন্তরকে বলেন, ‘দেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজ করছে তা মোটেও ভালো নয়। এখন সমঝোতা দরকার। না হলে পরিস্থিতি সহিংস হয়ে উঠবে। আর এর জন্য জনগণকে দুর্ভোগে পড়তে হবে।’ তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন নিয়ে নিজেরা সমঝোতা করতে পারেনি। এটা দেউলিয়াত্ব ছাড়া কিছু নয়। এখানে জনগণের যেন কোনো মূল্য নেই। সবাই বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে আছে। দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝেতা দরকার। দেশের সাধারণ জনগণও যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও বড় দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। এটা তো আমাদের জন্য মোটেই ভালো খবর নয়।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি কথায় কথায় বিদেশিদের কাছে নালিশ করে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। মাঠপর্যায়ে তাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো অবস্থান নেই। তাই তারা ষড়যন্ত্র করছে। বিদেশিদের যুক্ত করছে।’ তিনি বলেন, ‘ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করব। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা আওয়ামী লীগের সব সময়ের প্রতিশ্রুতি।’
তবে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সংসদ সদস্য ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, তারা নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছেন। জনসংযোগ করছেন। কিন্তু নির্বাচনী যে আমেজ, তা একেবারেই নেই। আবার প্রার্থীরাও তাকিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র বা ইইউর দিকে, তারা কী বলে, কী করে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত কয়েকটি নির্বাচন থেকেই বিদেশিদের নাক গলানোর বিষয়টি দেখা যাচ্ছে। তবে এবার অনেক বেশি। এর জন্য আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই দায়ী। তাদের কারণেই বিদেশিরা নাক গলানোর সুযোগ পায়। নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করতে না পারলে এ পরিস্থিতি আরও বাড়বে।’ তিনি বলেন, ‘তাছাড়া এখন ভূরাজনৈতিক মেরূকরণেও বাংলাদেশের গুরুত্ব একটু অন্যরকম। প্রভাবশালী দেশগুলো এ অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও কূটনীতি বিশেষজ্ঞ ওয়ালি উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবার বেশি আগ্রহী। আর বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল তাদের কাছে যাচ্ছে। এটাও বড় সুযোগ। কারণ বাইডেন প্রশাসন আফ্রিকা ও অন্যান্য অঞ্চলের মতো এশিয়াতেও তাদের গণতন্ত্রের চর্চা করতে চায়। তাছাড়া ভূরাজনৈতিকভাবেও তাদের অনেক আগ্রহ আছে। বিদেশিদের কাছে নালিশ করলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ তো হবেই। ফলে জনগণও বিদেশি প্রতিনিধিদের দিকেই তাকিয়ে আছে।’
গত ২৪ মে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। তারও আগে দেশটি র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বলছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কোনো সেনা ও পুলিশকে শান্তিরক্ষা মিশনে স্থান দেওয়া না হয়। এসব নিষেধাজ্ঞা ও হুঁশিয়ারির পর থেকে নতুন মাত্রায় রাজনীতির মাঠ সরগরম হতে শুরু করে।
বিএনপি বলছে, ক্ষমতাসীনদের লক্ষ্য করে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর আওয়ামী লীগ বলছে, সরকার নয়, বিএনপিকে টার্গেট করেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভিসানীতি ঘোষণা করেছে।
এদিকে বাংলাদেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্রসহ নানা ইস্যুতে প্রশ্ন তুলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিবৃতি দিয়েছে। কড়া ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে চিঠি দিয়েছেন দেশটির ১২ জন কংগ্রেসম্যান। এসবের প্রতিক্রিয়াও এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে। তারা দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছে।
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ও মৃত্যুতে বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে। এ সময় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৫৪ এবং মারা গেছে ৭ জন। এর আগে সর্বোচ্চ ৮৮৯ জন রোগী ভর্তির রেকর্ড ছিল গত সোমবার এবং সর্বোচ্চ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল গত রবিবার।
পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে এ মাসের মাত্র ১১ দিনেই সর্বোচ্চ ভর্তি ও মৃত্যুর মাস জুনকেও ছাড়িয়ে গেছে গতকাল। গতকালের আগে পর্যন্ত বছরের সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৯৫৬ জন রোগী ভর্তি এবং ৩৪ জনের মৃত্যুর রেকর্ড ছিল গত মাসে। কিন্তু গতকাল সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে এ মাসে এখন পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৯১৯, যা গত মাসের চেয়ে ৯৬৩ জন বেশি। এ মাসে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৩৬, যা গত মাসের চেয়ে ২ জন বেশি।
এমনকি গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা একলাফে হাজারের ঘরে উঠেছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ হাজার ৫৪ এবং মৃত্যু ৮৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ মাসের শুরু থেকেই গাণিতিক হারে ডেঙ্গু বাড়ছে। গত মাসের শেষ দিনে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৭২, পরদিন অর্থাৎ এ মাসের প্রথম দিনে সেই সংখ্যা একলাফে ২৭০ জনে ওঠে। এরপর গত ১১ দিনের মধ্যে মাত্র এক দিন ভর্তি রোগীর সংখ্যা দুই শর নিচে নেমেছিল। বাকি ১০ দিনের মধ্যে গতকাল প্রথম হাজারের ঘরে ওঠে, এর আগের তিন দিন আট শর ওপরে ছিল। বাকি দিনগুলোর মধ্যে দুদিন ছিল পাঁচ শর ঘরে এবং দুদিন ছয় শর ঘরে।
হিসাব করে দেখা গেছে, এ মাসের শুরুর দিকে দৈনিক রোগী বৃদ্ধির গড় হার ছিল ১-২ শতাংশ। কিন্তু গত তিন দিন ধরে তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সর্বশেষ গতকাল রোগী বেড়েছে আগের দিনের তুলনায় ১৯ শতাংশ। এর আগের দুদিন বৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ২ ও ৬ শতাংশ।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন রোগীদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬২৮ এবং ঢাকার বাইরে ৪২৬ জন। এ নিয়ে এ বছর এখন পর্যন্ত মোট রোগী ভর্তি হলো ১৪ হাজার ৮৯৭ এবং মারা গেল ৮৩ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ৩ হাজার ৩০৩ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ২ হাজার ৩০৬ এবং ঢাকার বাইরে ৯৯৭ জন ভর্তি।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিল এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা রোগীদের শারীরিক জটিলতা ও মৃত্যুর জন্য দেরিতে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও হাসপাতালে আসাকে কারণ হিসেবে দেখছেন। তারা বলেছেন, এবার ডেঙ্গুর ধরন বদল হয়েছে। জ¦র, সর্দি, কাশি বা মাথাব্যথা হলেই ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হবে। প্রথমেই ডেঙ্গু শনাক্ত হলে ও চিকিৎসা নেওয়া গেলে জটিলতা ও মৃত্যু এড়ানো সম্ভব।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দিতে আজ বুধবার সমাবেশ ডেকেছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। রাজধানীর নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ থেকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ঘোষণার প্রথম কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে। এ ছাড়া বিএনপির বাইরে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একযোগে পৃথকভাবে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচির ঘোষণা দেবে।
জানা গেছে, এক দফার মধ্যে উপধারা থাকবে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। এক দফা দাবি আদায়ে প্রথম কর্মসূচি ‘পদযাত্রা কর্মসূচি’র ঘোষণা আসতে পারে আজকের সমাবেশ থেকে। ২২ জুলাই পর্যন্ত বিভাগীয় সমাবেশ রয়েছে। তাই এই সময়ে মধ্যে প্রথম পদযাত্রা কর্মসূচি বরাবরের মতো শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পালনের নির্দেশনা আসতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিভিন্ন জোটের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের পদত্যাগ তথা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগকে “এক দফা” হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলনের নতুন যাত্রা শুরু করতে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সব রাজনৈতিক দল নিজ নিজ জায়গা থেকে আমাদের নতুন গণতন্ত্রের জন্য যে যাত্রা, একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নতুন যে আন্দোলনের যাত্রা তার ঘোষণা আমরা দেব।’ সমাবেশের প্রস্তুতির বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সমাবেশ হবে বরাবরের মতো সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। এ জন্য আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি, ইনশা আল্লাহ এই সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেবে।’ তিনি বলেন, ‘সমাবেশস্থলে আমরা মঞ্চ তৈরি করতে পারব না। তাই ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হবে। মঞ্চে কারা কারা থাকবেন সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মঞ্চের কোন পাশে কারা থাকবে, তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ সফল করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমরাও অনেকগুলো স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করেছি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে আমরা সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছি। জেলা ও বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে যেভাবে শত বাধাবিপত্তি এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ হয়েছে ঢাকার সমাবেশও তেমনি হবে। শত উসকানির মুখেও নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে অনুমোদিত স্থানের মধ্যে সমাবেশ সম্পন্ন করা, নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থায় মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে নেতাকর্মীদের চেক করা, সড়কে যানবাহন চলাচলে বাধা না দেওয়া, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে কোনো বক্তব্য না দেওয়াসহ ২৩ শর্তে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল মঙ্গলবার ডিএমডির পক্ষ থেকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে দেওয়া চিঠিতে এসব কথা জানানো হয়েছে।
সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য বিএনপি গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের লিয়াজোঁ কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আশা করছি এক দফার ঘোষণার পর জাতি আশান্বিত ও উজ্জীবিত হবে। আন্দোলন আরও শক্তিশালী ও বেগবান হয়ে এই সরকারের পতনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কারণ জনগণ তাদের ভোটাধিকার, মানবাধিকারসহ সব ধরনের মৌলিক অধিকার ফিরে পেতে বিএনপিকে রাজপথে দেখতে চায়।’
সমাবেশ সফল করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতারা গতকাল মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্যাপক শোডাউনের মাধ্যমে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঢাকা বিভাগের আওতাধীন জেলাগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বিগত জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা বিভাগের অধীন প্রতিটি সংসদীয় আসনে ধানের শীষের প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া প্রথম দুজন প্রার্থীকে নিয়ে বৈঠক করেছেন বিএনপির হাইকমান্ড। এর আগে গত রবিবার বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথসভা হয়েছে। সেখানেও মহানগরের প্রতিটি থানাকে সমাবেশে সর্বোচ্চ উপস্থিতি ঘটানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকেও অনুরূপ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সমাবেশ সফল করতে গত সোমবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে দফায় দফায় প্রস্তুতি সভা করেছেন ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলসহ প্রায় সব অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। সমাবেশ ঘিরে নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয় এখন জমজমাট ও সরগরম। এক দশক পর রাজধানীতে এক দফার সমাবেশে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে রাজধানীতে মাইকিং করা হয়েছে। মাইকিংয়ের মধ্য দিয়ে ঢাকাবাসীকে বুধবারের সমাবেশে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হচ্ছে।
বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর বাইরে বিএনপি সমর্থক পেশাজীবীদের সংগঠন যেমন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব), সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, কৃষিবিদ, ইঞ্জিনিয়ার, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেতারাসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ ব্যানারে সমাবেশে অংশ নেবেন।
এদিকে কর্মসূচি ঘোষণার আগে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শরিক দলগুলোর লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা। ইতিমধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, বাম গণতান্ত্রিক জোট, এলডিপি, লেবার পার্টি, গণ অধিকার পরিষদের (দুই অংশ) সঙ্গে বৈঠক শেষ করে। সবার পরামর্শ নিয়ে আজ ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচির ঘোষণা দেবে।
গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে জনসভা থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ ১০ দফা ঘোষণা করেন। এরপর ৩০ ডিসেম্বর সব রাজনৈতিক দল রাজধানী ঢাকায় গণমিছিল করে।
সমমনা দলগুলো যেখানে কর্মসূচির ঘোষণা দেবে : গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে (কনফারেন্স লাউঞ্জ) সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। মোস্তফা মোহসিন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম বিকেল ৪টায় গণফোরাম চত্বরে (নটর ডেম কলেজের বিপরীত পাশে) এক সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। বেলা ৩টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করবে লেবার পার্টি, ১২-দলীয় জোট দুপুর ১২টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
নুরের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক : গতকাল সকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণার আগে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন ডাক দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে পুরো জাতিকে একসঙ্গে করে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এগিয়ে নেওয়া হবে। সে জন্য ১২ জুলাই যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে। দলগুলো নিজ নিজ জায়গা থেকে এক ঘোষণা দেবেন।’
গণ অধিকার পরিষদের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়া হবে। আমরাও কর্মসূচি ঘোষণা করব। আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের নামে সহিংসতায় উসকানি দিচ্ছে।’
এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। গণ অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে দলটির সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খানসহ উচ্চতর পরিষদের সদস্যরা।
টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলনে থাকা বিএনপি আজ বুধবার এক দফা দাবি ঘোষণা করবে। বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে বড় জমায়েত করে এক দফা আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে। তাদের সঙ্গে থাকবে সমমনা দলগুলোও। একইদিন শান্তি সমাবেশ কর্মসূচির নামে বড় জমায়েতের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটি ঢাকার রাজপথ বিএনপিকে ছেড়ে দিতে চায় না। আন্দোলনের আঁচ যেন রাজধানীতে না লাগে, সেই চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ।
আজ বেলা ৩টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। ‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ ডাকা এ কর্মসূচিতে দলের বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রথমেই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও স্থান পরিবর্তন করে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে নেওয়া হয়েছে। বিএনপির সমমনারা আলাদাভাবে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তবে আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গীরা মাঠে থাকছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপির কর্মসূচির দিন ১৪ দলের কোনো কর্মসূচি নেই। দলীয় কোনো কর্মসূচিও নেই জাসদের। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সভা-সমাবেশ করছি।’
১৪ দলের আরেক শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া বলেন, ‘জোটের মেইন কম্পোনেন্ট হলো আওয়ামী লীগ। তারা তাদের মতো করে শান্তি সমাবেশ করছে। আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করছি। বুধবার বিএনপির কর্মসূচির দিন আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই।’
সমাবেশের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী দেশ রূপান্তরকে বলেন, শান্তি সমাবেশ সফল করতে প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী এতে অংশ নেবে। তারা কড়া অবস্থানে থেকে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখবে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত যেন সমাবেশের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক থাকব।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের শান্তি সমাবেশ সফল করতে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কড়া অবস্থানে থাকবে এ সমাবেশে। বিএনপি-জামায়াত ঝামেলা করতে চাইলে ছেড়ে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচন থাকায় ঢাকা মহানগর উত্তরে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করার ব্যাপারে আইনি বিধিনিষেধ রয়েছে। সে কারণে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে এ শান্তি সমাবেশে অংশ নেবে তারা। মিছিল নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানার নেতারা সমাবেশে যোগ দেবে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এ শান্তি সমাবেশে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলেছেন, সাম্প্রতিক কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করা হলেও বুধবারের কর্মসূচিতে সব সংগঠনের সমন্বয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঠে থাকা মানে ‘পাবলিক ডিমান্ড’, বিএনপির কর্মসূচিতে জনগণ ‘ভয়’ পায়। তাই শান্তি সমাবেশ নিয়ে মাঠে থাকছেন তারা।
তারা বলেন, ঢাকা ঘিরে বিশেষ মনোযোগী আওয়ামী লীগ। বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের আঁচ কোনোভাবেই ঢাকায় লাগতে দিতে চায় না। তাই কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকায় এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল আছে। রাজনৈতিক দলের মাঠের অবস্থান দেখতে চায় বিদেশিরা। বিএনপি বিদেশিদের দেখাতে তড়িঘড়ি করে এক দফা ঘোষণা করার কৌশল গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগও মাঠের শক্তি জানান দিতে আজ শান্তি সমাবেশ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকায় আন্দোলনের উত্তাপ ছড়ানো, মাঠ দখলে নেওয়ার কোনো সুযোগ বিএনপিকে দেওয়া হবে না।
দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেকোনো মূল্যে ঢাকা শান্ত রাখা হবে। রাজধানী শহর ও আশপাশের এলাকায় বিএনপির অবস্থান দুর্বল করা ও সব আন্দোলন সংগ্রাম আওয়ামী লীগের কবজায় রাখার কৌশল সবসময়ই দলের ছিল। এ সময় সেই কৌশল আরও শানিত করা হবে। সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সরকার। তারা দাবি করেন, ঢাকা ও ঢাকায় বসবাস করা জনসাধারণকে বিএনপির সংঘাত-সহিংসতার রাজনীতি থেকে মুক্ত রাখতে আওয়ামী লীগ ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। ঢাকামুক্ত রাখতে প্রশাসনিক তৎপরতা প্রয়োজন হলে আরও জোরদার করা হবে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপির লক্ষ্য আন্দোলন করে ঢাকা অচল করা। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য যেকোনো মূল্যে ঢাকা শান্ত রাখা। কোনোভাবেই বিএনপিকে ঢাকায় আন্দোলনের উত্তাপ ছড়াতে দিতে চায় না ক্ষমতাসীনরা।
বাংলা একাডেমির ওয়েবসাইটে ঢুকলেই ডানপাশে সবার ওপরের বক্সে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ছবি, ক্যাপশনে লেখা বাংলা একাডেমির স্বপ্নদ্রষ্টা। জাতির মননের প্রতীকখ্যাত এই প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় কেন্দ্রে শহীদুল্লাহ রচনাবলী কিনতে গিয়ে জানা গেল, যে তিন খণ্ড বের হয়েছে তার কপি সর্বশেষ বিক্রি হয়েছে ছয় বছর আগে। বিক্রয় বিভাগে কোনো কপিই অবশিষ্ট নেই আর।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর উত্তরাধিকার লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক শান্তা মারিয়ার কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেল আরও আশ্চর্য তথ্য। তিনি বললেন, তার জানা মতে বাংলা একাডেমি তার দাদার পাণ্ডুলিপি হারিয়ে ফেলেছে। তার বাবা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ষষ্ঠ সন্তান মুহম্মদ তকীয়ূল্লাহ, যিনি ভাষাসৈনিক ও বামপন্থি আন্দোলনের নেতা ছিলেন, তিনি ২০০২ সালের মধ্যে পঞ্চম খণ্ড পর্যন্ত সব পাণ্ডুলিপি বাংলা একাডেমিতে জমা দিয়েছেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বাবা অনেকবার অসুস্থ শরীর নিয়েও বাংলা একাডেমিতে গেছেন, জিজ্ঞেস করেছেন, বাংলা একাডেমি বারবারই বলেছে প্রকাশ হবে। এরপর আর প্রকাশিত হয় নাই। ২০০৯ সালের পর তিনি অসুস্থ হয়ে গেলে এই ব্যাপারে আসলে ফোন করা ছাড়া খোঁজ নিতে পারেন নাই। কিন্তু তখনো তিনি কোনো ইতিবাচক সাড়া পান নাই। মৃত্যু পর্যন্ত আমার বাবা অপেক্ষা করেছেন।’
শান্তা জানান, ‘২০১৮ সালে তাকে জানানো হয় ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রচনাবলীর পাণ্ডুলিপি বাংলা একাডেমি খুঁজে পাচ্ছে না। তিনি আবার দিতে পারেন কি না।’
ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি দেবই-বা কেন, বাংলা একাডেমি তো আনুষ্ঠানিকভাবে আমার কাছে কখনই চায়নি। আর আমার বাবার দেওয়া পাণ্ডুলিপি হারিয়ে ফেলবে এটা তো খুবই লজ্জাজনক। এ রকম একজন মনীষী, বাংলা ভাষা গবেষণার প্রধান পুরুষের রচনাবলী, যিনি আবার একাডেমি প্রতিষ্ঠার প্রাণপুরুষ, তারই প্রতিষ্ঠিত বাংলা একাডেমি তার পাণ্ডুলিপি হারিয়ে ফেলেছে, এর চেয়ে দুঃখজনক ও লজ্জাজনক কাজ আর হতে পারে না। এটা তো জাতির জন্যও লজ্জাজনক।’
তিনি বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কাজটি কেন করা হচ্ছে না জানতে চাইলে শান্তা মারিয়া বলেন, ‘ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রচনাবলী প্রকাশ করা বাংলা একাডেমির কাজ, শহীদুল্লাহ পরিবারের কাজ না। আমার বাবা করেছেন তার বাবার জন্য, অথচ বাংলা একাডেমি তাকে ফেলোশিপও দেয় নাই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি কোনো স্বীকৃতি পান নাই, মৃত্যুর পর তিনি একুশে পদক পান। এটা একটা শ্রমসাধ্য কাজ, জাতীয় দায়িত্ব তো জাতীয় প্রতিষ্ঠানের, আমার না। তবে বাংলা একাডেমি প্রস্তাব দিলে আমি সহায়তা করার জন্য প্রস্তুত।’
শান্তা মারিয়া জানালেন, শহীদুল্লাহর রচনার কিছু তাদের কাছে আছে। তার বাসায় অনেক বইয়ের আলমারি। তার বাবা কোথায় রেখে গেছেন তিনি জানেন না। বললেন, ‘বাংলা একাডেমি আনুষ্ঠানিকভাবে সহায়তা চাইলে আমি অবশ্যই দেব। কিন্তু আমার বাবার ক্ষেত্রে দেখেছি, উনি সারাজীবন খেটেছেন, সম্পাদনামণ্ডলীতে তার নামটা পর্যন্ত দেওয়া হয় নাই। উনি নামের ব্যাপারেও সচেতন ছিলেন না, আমি আমার নামের ব্যাপারে সচেতন।’
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রচনাবলীর প্রথম খণ্ড বাংলা একাডেমি প্রকাশ করে ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারির বইমেলায়, দ্বিতীয় খণ্ড ও তৃতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয় পরের বছরের জুন মাসে। প্রথম দুই খণ্ড আনিসুজ্জামান সম্পাদিত এবং তৃতীয় খণ্ড আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ সম্পাদিত।
শহীদুল্লাহ রচনাবলীর চতুর্থ ও পঞ্চম খণ্ডের পাণ্ডুলিপি হারিয়ে ফেলার বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যাপারটি ‘গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগ’ দেখে, সে বিভাগের পরিচালকের কাছে যেন খোঁজ নেয় দেশ রূপান্তর।
বাংলা একাডেমির সংশ্লিষ্ট বিভাগটির পরিচালক মো. মোবারক হোসেন (কবি সাজ্জাদ আরেফিন) অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘চতুর্থ ও পঞ্চম খণ্ডের পাণ্ডুলিপি আমাদের কাছে নেই। যখন এ রচনাবলীর কাজ হয় তখন আমি বিভাগের সহকারী পরিচালক ছিলাম, পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন সেলিনা হোসেন। দুই দফায় বিভাগের অফিস স্থানান্তরের কারণে আমরা মূল হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি এবং প্রযুক্তিগত বদলের কারণে টাইপ করা (সফট কপি) পাণ্ডুলিপিও হারিয়েছি। জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর পরিবারের পক্ষ থেকে আবারও দেওয়া না হলে বাংলা একাডেমি এই রচনাবলী প্রকাশ করতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার চাকরি আর এক বছর আছে, আমি আনিসুজ্জামান স্যারের মতো আফসোস করতে চাই না, এই রচনাবলীটি প্রকাশ করে আমি যেতে চাই। সত্যি কথা বলতে, আমি ছাড়া এটি এখন আর কেউ শেষও করতে পারবে না হয়তো।’ তিনি জানান, তার কাছে পুরো রচনাবলীর সূচিপত্র রয়েছে।
মোবারক হোসেনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন বাংলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠান তার স্বপ্নদ্রষ্টার পাণ্ডুলিপি হারিয়ে ফেলবে? তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমির অযোগ্য লোকবল, মাঝখানে সরকার বদলের কারণে কাজের স্থবিরতা এসবই দায়ী আসলে। সবচেয়ে বড় কথা, কাজটি পরিবার বা একাডেমির কর্তারা কেউ ভালোবেসে করেননি।’
মোবারক বলেন, তিনি শহীদুল্লাহ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। একাডেমির মহাপরিচালক ও সভাপতিরও দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলে জানান।
মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা পান্ডুলিপি হারানোর বিষয়টি জেনে অবাক হন। ১০ জুলাই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জন্মদিনে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এখন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর পরিবারের সহযোগিতা চাই, সেটি হলেই যথাদ্রুত সম্ভব রচনাবলী প্রকাশ করা যাবে। পরিবারের পক্ষ থেকে কপিরাইট ডিস্ট্রিবিউশনও এই কাজটির পক্ষে একটি বাধা। সেটিতে সহায়তা না পেলে জাতীয় এই প্রতিষ্ঠানের জাতীয় দায়িত্ব পালনেরও আসলে উপায় নাই।’
কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক রাজু আলাউদ্দিন ঘটনাটি মানতেই পারছেন না। তিনি উল্টো প্রশ্ন করে জানতে চেয়ে বলেন, ‘ঘটনাটা আসলেই কি সত্যি? বাংলা একাডেমি যদি সত্যি সত্যি ড. শহীদুল্লাহর পাণ্ডুলিপি হারিয়ে ফেলে থাকে, তাহলে এর চেয়ে গর্হিত কাজ আর দ্বিতীয়টা হয় না। এটাকে আমি কবিরা গুনাহ বলে মনে করি। বাংলা একাডেমি কোন মুখে তাদের ওয়েবসাইটে লিখে রাখতে পারে যে শহীদুল্লাহ ছিলেন বাংলা একাডেমির স্বপ্নদ্রষ্টা? পাণ্ডুলিপি হারিয়ে ফেলল সেই প্রতিষ্ঠান, যার স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন? তার মৃত্যুর পর যে পাণ্ডুলিপি এভাবে তারা হারিয়ে ফেলবে সম্ভবত এটি তিনি দুঃস্বপ্নেও কখনো ভাবেননি।’
তিনি বলেন, গোটা ভারত উপমহাদেশে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতো এত বড় একজন ভাবুক, মননশীল পণ্ডিতের রচনাবলী হারিয়ে ফেলার পেছনে কতটা অবজ্ঞা-অবহেলা থাকতে পারে তা ভেবে আমি সত্যি সত্যি বিমর্ষ বোধ করছি। যিনি এই জাতির ভাষার লড়াইয়ের প্রথম এবং প্রধান তাত্ত্বিক পুরুষ, যিনি বাঙালিত্বের ধারণার প্রথম ও প্রধান চিন্তানায়ক, যিনি আমাদের জন্য একটি ভূখণ্ডের কল্পনা করেছিলেন, আমাদের ভাষা ও ভাবনার বংশলতিকা অনুসন্ধান করে একটি পূর্ণাঙ্গ চেহারা হাজির করেছেন, সেই আমরা তার সঙ্গে এ রকম গাদ্দারি কীভাবে করতে পারি?’
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ১৮ আগস্ট ৯ বছরের শিশু আরাফাতের মৃত্যু হয়। সপ্তাহ না যেতেই ২৫ আগস্ট মারা যায় আরাফাতের ছোট বোন ৬ বছরের রাইদা। রাজধানীর মধ্যপাইকপাড়ার ছাপাখানা মোড়ের একটি বাসায় দুই সন্তান আরাফাত ও রাইদাকে নিয়ে থাকতেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও রাবেয়া আক্তার দম্পতি। সন্তানদের মৃত্যুর পর জীবনটাই বদলে গেছে তাদের। তছনছ হয়ে গেছে সাজানো সংসার। ইব্রাহিম ও রাবেয়া দম্পতির মতো বহু পরিবার এবার সর্বস্বান্ত হয়েছে ডেঙ্গুজ¦রের থাবায়। সন্তান হারানো এমন বাবা-মায়েরা পাগলপ্রায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সী ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৮৬ এবং নারী ৯১ জন। এবার শুধু শহর নয়, গ্রামেও ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। সেখানেও মারা গেছে অনেক শিশু। এ বছর ডেঙ্গুতে শিশুমৃত্যু নিয়মিত ঘটনা হয়ে দেখা দিয়েছে। এই রোগে এত শিশুর মৃত্যু আগে কখনো হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ বছর শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সীরা আক্রান্ত হয়েছে ৬৩ হাজার ৯১৯ জন; যা মোট আক্রান্তের ৩২ শতাংশ। এর মধ্যে নারী ২৩ হাজার ৬১৭ এবং পুরুষ ৪০ হাজার ৩০২ জন। ডেঙ্গুতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তথ্য বলছে, ডেঙ্গুতে শিশুদের আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া শিশুদের যারা সুস্থ হয়ে উঠছে, তাদের মধ্যে ভবিষ্যতে শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডেঙ্গুর বর্তমান সংক্রমণের মধ্য দিয়ে শিশুদের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তাদের মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতি শিশুদের নতুন বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার বিরূপ প্রভাব শিশুদের মধ্যে ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে। মস্তিষ্ক ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এর প্রভাব থাকতে পারে। এতে তাদের মেধাবিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাদের যদি কিডনি কিংবা লিভারের মতো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেই ভার সারা জীবন বহন করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিশুদের মৃত্যু নিয়ে ভালোভাবে অ্যানালাইসিস করতে পারছি না। এসব মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে অটোপসি করতে পারলে ভালো হতো। বিভিন্ন দেশে মৃত্যু নিয়ে ডেথ রিভিউ বা অটোপসি করা হয়। এটি করতে পারলে বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। কোনো শিশুর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, ১ মাস থেকে ১২ বছর বয়সী মুমূর্ষু শিশু রোগীদের পৃথক পিআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। তবে দেশে পিআইসিইউ সংকট রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পিআইসিইউর জন্য স্বজনদের হাহাকার করতে দেখা গেছে। হাসপাতালগুলোতে দেখা গেছে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ শিশুকে সেবা দিতে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমন বেশি, সেখানে শিশু রোগীও উল্লেখযোগ্য। এই দুটি হাসপাতালে একেকটি শয্যায় একাধিক শিশু রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ঢামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড খুলেছে কর্তৃপক্ষ। ৭০ থেকে ৮০ জনের সেবা পাওয়ার কথা, কিন্তু সেখানে প্রতিদিন সেবা নিচ্ছে প্রায় ৩০০ শিশু। ঢামেক হাসপাতালের ২৫ শিশুকে একসঙ্গে পিআইসিইউতে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। কিন্তু মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো পিআইসিইউ নেই।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে শিশুদের ওয়ার্ডেই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পিআইসিইউ নেই, তবে এনআইসিইউ (নিউনেটাল আইসিইউ বা নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) আছে।
এদিকে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের শরীরে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু শনাক্তে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। শিশুদের ডেঙ্গুর চিকিৎসা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা ইয়াসমীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিশুদের জ্বর আসার তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করাতে হবে। এবার অনেকের মধ্যে হঠাৎ করে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। ফলে তারা দেরিতে চিকিৎসা নিতে আসছে। দেখা গেছে, ডেঙ্গুজ্বরে যেসব শিশু মারা গেছে, তারা বাড়ি থেকেই জটিলতা নিয়ে এসেছে। এখানে একটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে, শুধু প্লাটিলেট কমা আশঙ্কার নয়, রক্তচাপ কমে যাওয়া প্লাটিলেট কমার চেয়ে ভয়ের। তাই আমাদের শিশুদের রক্তচাপ নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।’
স্যাংশন নিয়ে ভয় না পাওয়ার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার মেথডিস্ট সেন্ট্রাল হলে নাগরিক সংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি পাল্টা স্যাংশন দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
সংবিধান অনুযায়ী সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে জানান তিনি। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ইস্যু সম্পর্কে প্রশ্ন রাখেন, সাজাপ্রাপ্ত কাউকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় কোন দেশ?
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, পৃথিবীর কোন দেশের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় বলতে পারেন? কোনো দেশে পাঠায়? তারা এটা দাবি করে। আমাদের কেউ কেউ আঁতেল আছে। তারা বলে, একটু কী সহানুভূতি দেখাতে পারেন না! সে এভারকেয়ার, বাংলাদেশের সবথেকে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়সতো আশির ওপর। মৃত্যুর সময় তো হয়ে গেছে। তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এত কান্নাকাটি করে লাভ নাই।
স্যাংশনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। আপনাদেরও বলব, স্যাংশন নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।
বিএনপি চেয়ারপারসন ‘অসুস্থ’ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে শর্ত দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই শর্তের অন্যতম ইস্যু হচ্ছে, বিএনপিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এমন ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিদেশে যাওয়ার অনুমতি মিলবে। কিন্তু সরকারের সেই শর্তে রাজি নন খালেদা জিয়া। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো শর্তের বিনিময়ে তিনি মুক্তি চান না। ফলে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার সরকারের যে চেষ্টা, সেটা এ দফায় সফল হচ্ছে না বলে মনে করছেন আন্দোলনে থাকা নেতারা। তাদের মতে, সরকার ফাঁদ পাতলেও এতে পা না দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে বেগম জিয়ার। বরং আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলতে চান তারা। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ লক্ষ্যে প্রায় অর্ধশত দল নিয়ে গত প্রায় এক বছর ধরে আন্দোলনে রয়েছেন তারা।
শর্তের বিনিময়ে মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে গত রবিবার রাতে কিশোরগঞ্জে বিএনপির রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল তিনি যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান, তাহলে বিএনপিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আসতে হবে। বিএনপি থেকে উত্তর দেওয়ার আগেই অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়া বিদ্রোহ করে বলেছেন, তার জীবনে গণতন্ত্রের জন্য কোনো শর্ত নেই। ভোটের অধিকারের জন্য, এই দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য কোনো শর্ত নেই। কোনো শর্ত খালেদা জিয়ার নামের সঙ্গে যায় না এবং আমরাও তা মানি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়া ৫৪ দিন ধরে টানা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিতই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এ সময় বেশ কয়েকবার শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লে দলের কয়েকজন নেতার মাধ্যমে মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের দেওয়ার বক্তব্যের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কয়েকজন সম্পাদক ও সদস্য খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। সূত্রগুলো বলছে, একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য কথা প্রসঙ্গে এ ধরনের প্রসঙ্গেও ইঙ্গিত দিলে খালেদা জিয়ার শর্ত দিয়ে মুক্ত হতে চান না বলে পুনর্ব্যক্ত করেন। যদিও এর আগে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথা নেতাদের আগেই বলে রেখেছিলেন একসময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এ নেত্রী। কোনো অবস্থায় শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না এবং এ ব্যাপারে কোনো ধরনের সমঝোতাও নয়Ñ এ ব্যাপারেও খালেদা জিয়ার স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করেন। সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে এসে মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের এ আন্দোলনে উনার সমর্থন আছে। আমাদের একজন নেতা (ওই বৈঠকে) বলেছেন, সরকার একটা নির্বাচনের জাল বিছানোর চেষ্টা করছে। উনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, কোনো অবস্থায় এ সরকারের অধীনে নির্বাচনী ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।’
এর আগে ৮ মে রাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় সাক্ষাৎ শেষে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছিলেন, কেউ কেউ বলছেন আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়া উচিত। এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া তাদের বলেছেন, প্রশ্নই আসে না। এ বিষয়ে আমি কোনো অনুমতি দেব না।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি মনে করছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করতে না পারলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমে এ ইস্যুর সমাধান করবে তারা। এজন্য চলমান এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা ইস্যুটি জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে চান তারা। এতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নিতে পারে বলে তাদের বিশ্বাস।
গতকাল সোমবার স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ৫ অক্টোবর বিএনপি ঘোষিত রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ হবে। এর আগেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, ‘দাবার ঘুঁটি হিসেবে খালেদা জিয়াকে ব্যবহারের চিন্তা তারা কীভাবে করে সেটাই বোধগম্য নয়। সরকারের এ ধরনের চিন্তা বা পরিকল্পনা কোনো কাজে আসবে না।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে বিএনপিপ্রধানের পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের ওপর গত রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই। যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আবার গতকাল নিজ কার্যালয়ে সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি কিংবা আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারেন। তবে তার আগে তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেলে যেতে হবে। রাষ্ট্রপতি বা আপিল বিভাগের খালেদা জিয়ার পরিবার আবেদন করবে না বলে দলীয় আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন নেই বলেই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভয়ংকর তামাশা করা হয়েছে। যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। এর বাইরে দলের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’
এদিকে চিকিৎসক সূত্র জানা গেছে, বর্তমানে খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল তার আলট্রাসনোগ্রাম ও ইকো করা হয়েছে।
তিনি জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রণীত আইনের অধীনে ধানমন্ডিতে যে বাড়ি পেয়েছিলেন শেখ রেহানা, বিএনপি ক্ষমতায় এসে সে বাড়ি উচ্ছেদ করে। সেখানে পুলিশ ফাঁড়ি করছে আর ‘লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে’ সেই পুলিশ ফাঁড়ি উদ্বোধন করেছে খালেদা জিয়া। ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর তাকে (শেখ হাসিনা) খালেদা জিয়ার বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কীভাবে খালেদা জিয়ার জন্য আমার কাছ থেকে আরও সহানুভূতি আশা করে।’
লন্ডনের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টারে তার সম্মানে আয়োজিত একটি কমিউনিটি সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলা বিএনপির পক্ষে শোভা পায় না কারণ তারা জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ধোকাবাজি খেলেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই দেশের জনগণ তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। তিনি বলেন, দেশের জনগণ কখনই ভোট কারচুপিকারীদের ক্ষমতায় বসতে দেয় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে তার ওপর ন্যস্ত নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড স্থগিত করার পর খালেদা জিয়াকে তিনি বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে তার কিছুই করার নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আইন অনুযায়ী যা করতে পারেন তাই করেছেন। অনেকেই এখন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘আইন নিজের গতিতে চললেও খালেদা জিয়ার প্রতি আমি বেশি সহানুভূতি দেখাতে পারি’।
অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক।
দেশে এ বছর ভয়বাহ আকার ধারণ করছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বর। প্রায় প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গুর জীবানুবাহী এডিস মশা এবং ডেঙ্গুজ্বরের উপসর্গেও।
বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে, মৃত্যুর সংখ্যা পার করেছে হাজারের ঘর। এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষের মনে জাগছে নানা রকম প্রশ্ন। এমনই কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তক সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা। যা দেয়া হল এখানে,
ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহনকারী মশার নাম এডিস এজিপ্টি যা আমাদের দেশে ডেঙ্গু মশা নামেই বেশি পরিচিত।
এডিস মশা কামড়ানোর কারণেই ডেঙ্গু জ্বর হয়। যদিও এই মশা কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জ্বর হয় না।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা সাবেরা গুলনাহার বলেন, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হবার পর থেকে লক্ষ্মণ দেখা দিতে পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগে।
এই সময়কে বলা হয় ইনকিউবেশন পিরিয়ড।
সাধারণত এডিস মশা কামড়ানোর পাঁচ থেকে সাত দিন মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর আসে। আর এই জ্বর থাকে পাঁচ থেকে ছয় দিন পর্যন্ত।
চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গু ভাইরাসের চার রকম সেরোটাইপ পাওয়া যায়। এগুলো হলো- ডেন - ১, ডেন - ২, ডেন - ৩ এবং ডেন - ৪।
সহজ কথায়, একজন মানুষ তার সারা জীবনে সর্বোচ্চ চার বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন।
অর্থাৎ একবার একটি ধরনে আক্রান্ত হবার পর তা সেরে গেলে, তার শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি হয়, তা সারা জীবনের জন্য কাজ করে।
এরপর যদি তিনি পুনরায় আক্রান্তও হন, সেটি হবে ডেঙ্গুর ভিন্ন কোন ধরন।
অধ্যাপক গুলনাহার বলছেন, যতদিন রক্তে ভাইরাস থাকবে, ততদিন রোগীর শরীরে জ্বর থাকবে।
কেবলমাত্র রক্ত জীবাণুমুক্ত হলেই ডেঙ্গু জ্বর সেরে যায় একজন আক্রান্ত ব্যক্তির।
অধ্যাপক গুলনাহার বলছেন, প্রথমবার ডেঙ্গু হলে অনেকেই তা বুঝতে পারেন না। সামান্য শরীর ব্যথা ও একটু জ্বরের লক্ষ্মণ থাকলেও সাধারণত এসময় সর্দিকাশিও থাকে না।
একে ব্রেকবোন ফিভারও বলা হয়। পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যেই এই জ্বর ভালো হয়ে যায়।
তবে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে, অর্থাৎ অন্য আরেকটি সেরোটাইপে আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরে জটিলতা তৈরি হয়।
কারণ প্রথম বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি হয়, সেটার সঙ্গে নতুন ভাইরাসের এন্টিজেনের এক ধরনের রিএকশন হয়। যার ফলে হেমোরেজ বা প্লাটিলেট কমে যাওয়ার মতো জটিলতা তৈরি হয়।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে, ক্ষেত্রবিশেষে প্রথমে খুব জ্বর ওঠার পর তা কমে যায়। এসময় কিছুটা সুস্থ বোধ হলেও, এটিই আসলে সবচেয়ে জটিল পর্যায়। কেননা এসময়েই আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্লাটিলেট কমে যায় এবং রক্তপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এ সময় সুস্থ বোধ করায় শিশুরাও খেলাধুলা করতে চায়। তবে এটা একেবারেই করা যাবে না। এই সময়ে যেকোনো ধরনের পরিশ্রমের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সম্পূর্ণ বিশ্রাম করতে হবে।
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলছেন, একটি পূর্ণ বয়স্ক এডিস মশা গড়ে ১৫-৪০ দিন বাঁচে।
মূলত তাপমাত্রার ওপর এডিস মশার আয়ু নির্ভর করে।
যেমন, শীতকালে এডিস মশা বেশি বাঁচে, আবার গরম কালে এডিস মশার বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার দ্রুত হয় বলে এ সময়ে এডিস মশা কম বাঁচে।
একসময় বলা হতো ডেঙ্গু মশা শুধুমাত্র দিনের বেলা কামড়ায়। কিন্তু সে ধারণা এখন আর কাজ করছে না।
কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এডিস মশা তার চরিত্র বদলেছে। এখন দিনে বা রাতে সব বেলাতেই কামড়াতে পারে এডিস এজিপ্টি, বিশেষ করে রাতে যদি ঘর আলোকিত থাকে।
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাসার বলেছেন, ল্যাবে করা পরীক্ষায় দেখা গেছে, একটি এডিস মশা জীবদ্দশায় গড়ে চার থেকে ছয় বার কামড়ায়।
কেবল মাত্র স্ত্রী মশাই কামড়ায়। ফলে একমাত্র স্ত্রী এডিস মশাই ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে। আর স্ত্রী এডিস মশাও কেবল মাত্র পেটে ডিম থাকা অবস্থাতে কামড়ায়।
এডিস মশা কামড়ালেই ডেঙ্গু হয়- এমন একটি ভুল ধারনা অনেকের মধ্যেই প্রচলিত রয়েছে, যা সঠিক নয়।
আরেকটি ভুল ধারনা হলো যে আক্রান্ত কাউকে কামড়ানোর পর পরই সুস্থ একজনকে কামড়ালে তারও ডেঙ্গু জ্বর হবে।
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, এডিস মশার মাধ্যমে তখনই একজন ব্যক্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হবেন, যখন মশাটি ভাইরাস ইনফেক্টেড অথবা ভাইরেমিক হবে।
একটা এডিস মশা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে কামড়ে যখন ভাইরাস ছড়ানোর উপযোগী হয় তখন এটাকে বলা হয় ভাইরেমিক। মূলত আক্রান্ত কাউকে কামড়ানোর পর ডেঙ্গু মশাকে ভাইরাস বিস্তারের উপযোগী হতে একটি জীবনচক্র পূরণ করতে হয়।
অর্থাৎ আক্রান্ত কাউকে কামড়ানোর মাধ্যমে মশার দেহে ভাইরাসটি প্রবেশ করে। এরপর ডিম পারা এবং বংশবিস্তারের মাধ্যমে ওই মশা ডেঙ্গুর ভাইরাস ছড়াতে সক্ষম হয়, অর্থাৎ ভাইরেমিক হয়। এরপর যতদিন মশাটি বেঁচে থাকবে ততদিন পর্যন্ত ডেঙ্গুর জীবাণু ছড়াতে পারবে।
এছাড়াও জীবাণু বহনকারী ওই মশা যত ডিম পারে, তার সবগুলোতেই ভাইরাস থেকে যায়। আর সেই ডিম যদি প্রকৃতিতে অনুকূল পরিবেশ পায় তবে সেখান থেকে জন্মানো মশার কামড়েও ডেঙ্গুর ভাইরাস ছড়াতে পারে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ট্রান্সওভারিয়াল ট্রান্সমিশন।
এভাবে ভাইরাসের বাহক হয়ে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ ডেঙ্গু মশা জন্মাতে পারে বলে জানান কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার।
ডেঙ্গু কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়, এটি কেবল মাত্র মশার মাধ্যমেই ছড়ায়। মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না।
অর্থাৎ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলে, একই বিছানায় ঘুমালে কিংবা তার ব্যবহৃত কিছু ব্যবহার করলে, অন্য কারো এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।
এডিস মশা ব্যতীত স্পর্শ বা অন্য কোনভাবে এই রোগ ছড়ানোর উপায় নেই।
এমনকি অন্য প্রজাতির মশার মাধ্যমেও ডেঙ্গু ছড়ায় না।
রোগীকে স্বাভাবিক সব ধরণের নরম খাবার খেতে দেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা
ডেঙ্গু হলে রোগীকে স্বাভাবিক সব ধরণের নরম খাবার খেতে দেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
অধ্যাপক গুলনাহার বলেন, ডেঙ্গু হলে রোগীর শরীরে পানি স্বল্পতা হয়। তাই এই সময় তরল জাতীয় খাবার বেশি খাওয়াতে হয়।
সেইসাথে বাড়িতে ফল থেকে বের করা জুস, স্যুপ, ডাবের পানি, ওরস্যালাইন, বা অন্যান্য তরল খাবার প্রচুর পরিমাণে দেয়া যেতে পারে। এগুলো শরীরের পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে খাবারে কিছু বিধিনিষেধ থাকতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
“খাবারের মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে, অনেককে দেখেছি দিনে ১০-১২টা ডাব খেতে, অনেকে লিটারে লিটারে পানি খাচ্ছে এগুলো অস্বাভাবিক।
আবার কিছু না করাও ঠিক না। যদি কারও দিনে তিন চার ঘণ্টা পর পর প্রস্রাব হয়, প্রস্রাবের রং হলুদ না হয়, তারমানে তার আর্দ্রতা স্বাভাবিক আছে” বলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ।
বাড়ির আশপাশ যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখতে চেষ্টা করুন।
ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব কিংবা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন এবং ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত তিন বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম রাখতে পারেন সঙ্গে।
সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করতে পারেন।
যেখানে সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির পাশাপাশি ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
বাড়ির ছোট সদস্যদের ফুল হাতা জামা পরিয়ে রাখুন এবং মশা যাতে না কামড়াতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। প্রয়োজনে মশা নিধন ক্রিম ব্যবহার করুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।