
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের কাছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মর্যাদা নিয়ে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানিয়েছে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। তারা বলেছে, মিয়ানমার হলো তাদের জন্মভূমি। সেখানেই তাদের ঘরবাড়ি ও জমিজমা রয়েছে। তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে চাপ দেওয়ার অনুরোধও জানায় রোহিঙ্গারা।
গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া এবং সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় রোহিঙ্গা নেতারা এমন আকুতি জানান।
বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার-বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছে। এ সময় তারা ক্যাম্প-১১-তে একশনএইডের কার্যালয়ে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা, ইমাম, যুবকদের সঙ্গে কথা বলেন। রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন, প্রত্যাবাসনসহ নানা বিষয়ে মতবিনিময় করে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি। রোহিঙ্গা নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের কাছে মিয়ানমারে তাদের ওপর সে দেশের সরকারের নির্যাতন ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপের কথা তুলে ধরেন। সব অধিকার নিশ্চিত করে শান্তিপূর্ণভাবে ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর রোহিঙ্গারা জানায়, প্রতিনিধিরা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মতামত জানতে চেয়েছেন। ক্যাম্পে আশ্রিত জীবনকে তারা যে বন্দি জীবন হিসেবে দেখছেন, সেটা তাদের জানায় রোহিঙ্গারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় জানিয়ে তারা অনুরোধ করে, মিয়ানমারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহল যেন চাপ প্রয়োগ করে।
আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস চেয়ারম্যান ডা. জুবায়ের বলেন, ‘ক্যাম্পে সফররত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের কাছে আমরা একটি চিঠি দিয়েছি। সেই সঙ্গে তাদের বলেছি, দীর্ঘ ছয় বছর আমরা শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে বসবাস করছি। শরণার্থী জীবন আমাদের আর ভালো লাগে না। আমরা মিয়ানমার ফেরত যেতে চাই। মার্কিন প্রতিনিধিদল আমাদের কথা শুনেছে এবং তা নোট করে নিয়েছে।’
রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল বোঝা, কারণ এটি একটি ছোট দেশ।’ তাদের দুর্দিনে জীবন বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার ও নাগরিকদের ধন্যবাদ জানায়।
যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, মিয়ানমার সরকার এবং কয়েকজন রাজনীতিবিদ মিলে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের জন্মভূমি আরাকান (রাখাইন) রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করেছে।
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের স্বাধীনতার আগে থেকে সে দেশে বাস করছিল উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে রোহিঙ্গারা যৌথভাবে মিয়ানমারের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে। নু-অ্যাটলি চুক্তি, যা ১ অক্টোবর ১৯৪৭ লন্ডনে লেখা হয়, তার আর্টিকেল নম্বর-৩ অনুসারে, তারা রাষ্ট্রহীন নয়। তারা আশা করে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের জন্য সর্বোচ্চ কাজ করবে।
রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘ক্যাম্পের পরিস্থিতি আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের জানিয়েছি, আমরা মর্যাদা নিয়েই দ্রুত দেশে ফিরতে চাই।’
এর আগে বেলা ১১টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজার উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে আসে। তারা ক্যাম্প-৯, ১১ ও ১৮ পরিদর্শন করেন এবং কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেন।
৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার (অপস অ্যান্ড মিডিয়া) মো. ফারুক আহমদ জানান, প্রতিনিধিদলে উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লু ছাড়াও ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার এশিয়া দপ্তরের উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলী কৌর। তারা ক্যাম্প-৯-এ প্রথমে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) রেজিস্ট্রেশন সেন্টার পরিদর্শন করেন। পরে সেখানে তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার চলমান কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। এরপর যান ক্যাম্প-১১-এর একশনএইড কার্যালয়ে।
প্রতিনিধিদলটি এরপর ক্যাম্প-১৮-তে অবস্থিত রোহিঙ্গা কালচারাল সেন্টার পরিদর্শন করে। এরপর তারা কক্সবাজারে ফিরে যান।
উল্লেখ্য, গত ৫ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খান রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালেই রোহিঙ্গা কমিউনিটির এক নেতাকে (সাব-মাঝি) হত্যা করা হয়। এর দুদিন পর ৮ জুলাই রোহিঙ্গাদের দুই সশস্ত্র সংগঠন আরএসও ও আরসার মধ্যে সংঘর্ষে মারা যায় আরও ছয়জন। এর পরের দিনই পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে মারা যায় এক রোহিঙ্গা দুর্বৃত্ত। এসব ঘটনা সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এরই মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করল মার্কিন প্রতিনিধিদল।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা ঘোষণার সাত মাস পর সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা এসেছে। দাবি আদায়ে দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘এক দফা দাবি আদায়ে প্রাথমিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। এরপরও সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে কী করে ওঠাতে হয় তা এ দেশের মানুষ ভালোই জানে।’
কর্মসূচি ঘোষণার আগে আবেগঘন কণ্ঠে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকের এক দফার কর্মসূচি বিএনপির কর্মসূচি নয়। ১৫ বছর ধরে ভোটাধিকার, মানবাধিকারবঞ্চিত ও দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে জর্জরিত দেশের জনগণের দাবি।’
গতকাল বুধবার রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এক দফার পাশাপাশি কর্মসূচি হয়। একই দিন সমমনা ৩৬টি দলও এক দফা ঘোষণা করে।
বিএনপির দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে গিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী ফ্যাসিবাদী, কর্র্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা, নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির এক দফা ঘোষণা করছি।’ এ দাবি আদায়ে আগামী ১৮ জুলাই মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে মহানগরী ও জেলাপর্যায়ে পদযাত্রা করবে বিএনপি। ওইদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টায় ঢাকা মহানগরীর গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পদযাত্রা হবে। পরদিন ১৯ জুলাই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত পদযাত্রা হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই কর্মসূচির বাইরে দলের অঙ্গ-সংগঠনের ঘোষিত তারুণ্যের সমাবেশ ও মেহনতি মানুষের পদযাত্রা কর্মসূচিও চলবে। পাশাপাশি আইনজীবী ও পেশাজীবীদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এরপর ৩০ ডিসেম্বর থেকে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে রাজপথে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করে আসছে দলটি। সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল দলটি। তাদের দাবি আমলে না নেওয়ায় এবার একদফার চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা দিল বিএনপি। গতকাল সমাবেশ শুরুর আগেই পল্টন ও আশপাশের এলাকায় ফোনের নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগে বিপর্যয় দেখা যায়। সমাবেশে যোগ দেওয়া অনেকে বলেন, ফোনে নেটওয়ার্ক নেই। ইন্টারনেট সেবাও নেই। এর আগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগ মাঠে ১০ দফা ঘোষণার আগে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ ছিল।
সকাল থেকেই রাজধানীতে ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এর মধ্যেই নেতাকর্মীরা সকাল ৯টা থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের একাধিক জেলা থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশে এসেছেন। তারাই মূলত সকালের মধ্যে চলে আসেন। দুপুরের মধ্যে কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড় ও অন্যদিকে ফকিরাপুল বাজার এলাকা ছাড়িয়ে আশপাশের অলিগলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। এরপর বেলা ২টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন, ডিসপ্লে কার্ড, জার্সি, পোস্টার, ধানের শীষ, ধানের শীষের রেপ্লিকা, ক্ষুদ্র বাদ্যযন্ত্র, ক্যাপ, টি-শার্ট গায়ে, জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে করে সমাবেশস্থলে হাজির হন। তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার, দ্রব্যমূল্য কমানো, সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সেøাগান দেন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকা, সড়কের মোড়ে মোড়ে ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। রমনা, কাকরাইল, রমনা, বাংলা মোটর, বাড্ডা, রামপুরা, মগবাজার, মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, পল্টন এলাকায় সৃষ্ট যানজটের কারণে যানবাহন অনেকটা স্থবির পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন কর্মজীবী, পেশাজীবীসহ সাধারণ নাগরিকরা।
কার্যালয়ের মূল ফটক থেকে কিছুটা ডানদিকে উত্তরদিকে মুখ করে মঞ্চ তৈরি করা হয়। ট্রাকের তৈরি মঞ্চে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নেতাকর্মীরা গান গেয়ে নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেন। মঞ্চে বিশাল আকৃতির ব্যানারে লেখা ছিল ‘গণতন্ত্রের ঘাতক, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও সর্বনাশা অনাচারে লিপ্ত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণ-আন্দোলনের এক দফা যৌথ ঘোষণার সমাবেশ। সমাবেশস্থলে শতাধিক মাইক স্থাপন করা হয়। এ ছাড়া কয়েকটি বড়পর্দার ব্যবস্থা করা হয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনই স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়ে না। কারণ, তারা ক্ষমতায় এসে এত বেশি লুটপাট করে, এত বেশি অত্যাচার করে যার কারণে তারা জনধিকৃত হয়। তাই তারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। আমরা চলমান সংকট সমাধানে সরকারকে অনেক সুযোগ দিয়েছি। আর কোনো সমাধান নেই, সমাধান একটিই তা হলো সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কারণ আমরা নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন চাই। তবে সেই নির্বাচন আপনার মতো শেয়ালের হাতে হোক, তা চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আপনি (শেখ হাসিনা) নির্বাচন বারবার গিলে খেয়েছেন। ২০১৪ সালে খেয়েছেন, ২০১৮ সালে একবার খেয়েছেন, আবারও খেতে চাইছেন। সেজন্য প্রশাসন সাজাচ্ছেন। কিন্তু সেই সুযোগ আর দেশের জনগণ দেবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি আবারও এ অসাংবিধানিক, লুটেরা ও কর্র্তৃত্ববাদী সরকারকে বলছি, এখনো সময় আছে। এই ঘোষণার পর পদত্যাগ করুন। অন্যথায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, তখন কিন্তু পালানোর পথও পাবেন না।’
খুন, গুমের শিকার হওয়া নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ করে কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘১৫ বছর ধরে বহু নির্যাতন করেছেন। আজকের সমাবেশকে সামনে রেখে বিভিন্ন জেলার বাস বন্ধ করে দিয়েছেন। নেতাকর্মীদের আটক করেছেন।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পবিত্র কোরআন ছুঁয়ে আপনারা শপথ নিয়েছেন সংবিধান সমুন্নত রাখার। সংবিধান মোতাবেক দায়িত্ব পালন করার। আপনারা সে দায়িত্ব পালন করুন। জনগণের বিরুদ্ধে যাবেন না।’
নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশের পাশাপাশি বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে সমমনা দলগুলো এক দফা ঘোষণা করে।
সমাবেশে অন্য নেতারা যা বললেন : সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা যখন সমাবেশ করছি তখন ওরা শান্তি মিটিং করছে। যারা দেশে খুন-গুম করে অশান্তি সৃষ্টি করেছে, তারা এখন শান্তি মিটিং করে। হিন্দিতে একটা কথা আছে, ৭০০ বিড়াল মেরে হজে যায়। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, আর লগি-বইঠার ঘটনা ঘটিয়ে, অশান্তি সৃষ্টি করে, গুম-খুন, মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। এখনো সময় আছে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। যারা অশান্তি সৃষ্টি করবে তাদের প্রতিহত করা হবে।’
স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। যারা যাবে তাদেরও জবাব দিতে হবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘পত্রিকায় উঠেছে বিভিন্ন জেলার ডিসিদের বদলি করা হয়েছে। কারা হয়েছে? যারা মন্ত্রী, সচিব ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ডিসি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এই পদায়নের মাধ্যমে আমরা সব নাম জেনে গেছি। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এসব ডিসি-এসপির কেউ ওই পদে থাকতে পারবেন না। বিচার বিভাগকেও সরকার দলীয়করণ করেছে। সরকার এখন ওদের দিয়ে বিরোধী দলের মিথ্যা মামলাকে ত্বরান্বিত করতে চাচ্ছে। আমরা বলতে চাই, সাবধান আপনারা সরকারের ওই ভোট চুরির প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন না।’
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘জনগণ আজকে রাস্তায় নেমে এসেছে। শেখ হাসিনার পায়ের নিচে মাটি নেই। এ সরকারের ক্ষমতায় আসার আর সুযোগ নেই। আজকে সমাবেশে আসতে গাবতলী, সায়েদাবাদসহ বিভিন্ন স্থানে বাধা দেওয়া হয়েছে। এই বাধা দিয়ে সমাবেশে জনস্রোত ওরা ঠেকাতে পারেনি। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যেই এ সরকারের বিদায় হবে। নেতাকর্মীরা আর এ সরকারের বিদায় ছাড়া ঘরে ফিরে যাবে না।’
ঢাকা উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, আবদুস সালাম আজাদ, কামরুজ্জামান রতন, রকিবুল ইসলাম বকুল প্রমুখ।
অঙ্গ সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানি, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।
সমাবেশে আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, মীর নাসির, ফজলুর রহমান, মিজানুর রহমান মিনু, হাবিবুর রহমান হাবিব, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুল খায়ের ভূঁইয়া, শাহজাদা মিয়া, লুতফুর রহমান খান আজাদ, মজিবুর রহমান সারোয়ার, মাহবুবউদ্দিন খোকন, খন্দতার আবদুল মুক্তাদির, আসাদুজ্জামান রিপন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শ্যামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, সালাহউদ্দিন আহমেদ, শিরিন সুলতানা, মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, সেলিম ভূঁইয়া, নাজিম উদ্দিন আলমসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির এক দফা ঘোষণার দিন শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগও এক দফা ঘোষণা করেছে। দলটির এক দফায় রয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনাকে ছাড়া নির্বাচন নয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংবিধানসম্মতভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির এক দফা, আমাদেরও এক দফা। আমাদের এক দফা সংবিধানসম্মতভাবে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ এক দফাকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘কোনো বাধা দেব না। কাউকে আক্রমণ করতেও যাব না।’
শান্তি সমাবেশ থেকে বিদেশি বন্ধুদের উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিদেশি বন্ধুদের বলছি, আপনাদের দাবি আগামী সংসদ নির্বাচন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার (অবাধ ও সুষ্ঠু) হওয়া। আমাদের লক্ষ্যও ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচনে বাধা দিতে এলে আমরা তাদের প্রতিহত করব।’
গতকাল বুধবার যৌথভাবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এক দফা ঘোষণা করেন।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করে ক্ষমতাসীনরা। শেখ হাসিনার পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন দাবি করে নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে এক দফা ঘোষণা করে বিএনপি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এমন সময়ে সমাবেশ করল, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও প্রতিনিধিদল নির্বাচন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে আলোচনা জন্য সফররত। বিদেশি প্রতিনিধিদের নিজেদের শক্তি সামর্থ্য দেখাতে দুই দলই বড় সমাবেশ করেছে।
আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে নেতাকর্মী সবাইকে উদ্দেশ্য করে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মাঠ ছাড়বেন না। যখনই ডাক দেব চলে আসবেন। শেখ হাসিনা কোনো অপশক্তির সঙ্গে আপস করবে না। যাদের হাতে রক্তের দাগ তাদের সঙ্গে আপস নয়, সংলাপ নয়। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী শক্তির সঙ্গে আপস করতে পারে না। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে তাদের পছন্দ নয়। হিংসা করে, ঘৃণা করে। কারণ, পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল তারা চায়নি। সারা দেশের উন্নয়ন তাদের পছন্দ নয়। বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তারা জানে নির্বাচনে গেলে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার কাছে তারা ভেসে যাবে।’ তিনি বলেন, বিএনপি অনেক স্বপ্ন দেখেছিল, আজকে কাঁথা-বালিশ নিয়ে অনেক লোক আনার চেষ্টা করেছিল। গত ডিসেম্বরে স্বপ্ন দেখেছিল সরকার ফেলে দেবে। সেই স্বপ্ন গরুর হাটে মারা গেছে। এবার আবার স্বপ্ন দেখেছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নয়াপল্টনের কাদা পানিতে আটকে গেছে, বৃষ্টি হয়েছিল না?’ খেলা হবে ঘোষণা দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ যখন খেলতে নামবে, কোনো অপশক্তি সামনে আসতে পারবে না।
নিজের দলের নেতাকর্মীদের সমালোচনা করে দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকের সমাবেশ মঞ্চের এ অবস্থা আমি দেখতে চাই না। এত নেতা আমি চাই না।’
শান্তি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মন্নাফী। রাজধানীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট শাখা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে সমাবেশে যোগ দেন। ঢাকার সংসদ সদস্য ও ঢাকার আশপাশের সংসদ সদস্যরা বড় মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন। ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইনের নেতৃত্বে বিশাল মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বড় মিছিল নিয়ে যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা সমাবেশস্থলে আসেন। যুবলীগ, স্বেচ্ছসেবক লীগ, কৃষক লীগসহ সব সহযোগী সংগঠন মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসে দুপুর ২টার পর। এর আগে জনসমাবেশের জমায়েত তেমন চোখে না পড়লেও বেলা আড়াইটার দিকে সমাবেশস্থল ও আশপাশের সব সড়ক কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সবার হাতে ছিল জাতীয় পতাকা, ব্যানার-ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন সমাবেশস্থল ও আশপাশ।
রাজধানী ছাড়াও ঢাকা, গাজীপুরসহ আশপাশের জেলা থেকেও সমাবেশ যোগ দেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। গাজীপুরের সাবেক মেয়র ও দল থেকে আজীবন বহিষ্কৃত জাহাঙ্গীর আলমও তার অনুসারীদের নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশ মঞ্চ থেকে মিছিল সহকারে যোগ দেওয়া নেতাদের নাম ঘোষণা করা হলেও, জাহাঙ্গীরের উপস্থিতির কথা ঘোষণ করা হয়নি।
প্রধান অতিথি দলের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য শেষ হওয়ার আগে জমায়েত ধরে রাখতে পারেনি আওয়ামী লীগ। কমতে কমতে অর্ধেকে নেমে আসে। তবে বিশৃঙ্খলাও ছিল চোখে পড়ার মতো। সভামঞ্চের সামনে চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনাও ঘটে। মূলত মিছিল নিয়ে আসা নেতাকর্মীদের ব্যানার-ফেস্টুন বিশৃঙ্খলার সূত্রপাত। নেতাকর্মী ও সংসদ সদস্য স্থানীয় ওয়ার্ড-ইউনিয়ন ও থানার নেতাদের অনুসারীরা ব্যানার নিয়ে সমাবেশের মঞ্চের সামনে এসে দাঁড়িয়ে যান। ফলে পেছনে অবস্থান করা নেতাকর্মীদের দেখা যাচ্ছিল না। মঞ্চের উল্টো দিকে অবস্থান করা বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যানরাও ভালো জমায়েতের ছবি তুলতে পারছিলেন না। এ বিশৃঙ্খলা দূর করতে মঞ্চ থেকে বারবার ব্যানার নামাতে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা আহ্বান জানালেও কাজে আসেনি। বারবার বলার পরও না শোনার কারণে এসব ব্যানারধারী দলের নেতাকর্মী নাকি ভাড়াটিয়া এমন আওয়াজও তোলা হয় সভামঞ্চ থেকে। আবু আহম্মেদ মন্নাফী মাইক নিয়ে ব্যানার নামানোর নির্দেশ দেন। তিনি ব্যানারে থাকা নেতাকর্মীদের নাম ধরে ব্যানার নামাতে বলেন। একপর্যায়ে তিনি রিয়েলসহ আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘তোমরা কি এখানে নেই? নাকি বাড়িতে বসে ব্যানার পাঠিয়ে দিয়েছ?’
একপর্যায়ে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম মাইক নিয়ে সবাইকে ব্যানার নামাতে নির্দেশ দেন। তিনি বলতে থাকেন, নামের তালিকা করে বহিষ্কার করা হবে। তিনি কেরানীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান ও কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিন আহমেদের নাম উল্লেখ করে বলেন, শাহিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কামরাঙ্গীরচর আওয়ামী লীগ নেত্রী পারুল বেগমের নাম ধরে বলেন, ‘পারুল বেগমের খবর আছে।’ অন্য একজন কাউন্সিলরের ব্যানার দেখে বলেন, ‘কাউন্সিলরগিরি শিখিয়ে দেব।’
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ বক্তব্য রাখার শুরুতে বলেন, ‘সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন বহিষ্কার করা হবে। তারপরও কেউ কথা শোনে না।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বক্তব্য দেওয়ার আগে দুই মিনিট ধরে ব্যানার নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বায়তুল মোকাররম থেকে নগর ভবন পর্যন্ত লোকে-লোকারণ্য হয়ে গেছে। কিন্তু ব্যানারের কারণে দেখতে পাচ্ছি না।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকও বক্তব্য দেওয়ার শুরুতে ব্যানার সরাতে বলেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল। দলীয় শৃঙ্খলার প্রমাণ দেখাতে সবাই ব্যানার নামিয়ে ফেলুন।’ অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব পালনকারী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচিও বারবার ব্যানার নামাতে অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে তিনি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘এরা কি আমাদের নেতাকর্মী, নাকি ভাড়াটিয়া?’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ সমাবেশের কারণে বিএনপির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেছে। এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। বিএনপির গণতন্ত্র ছিল কারফিউ গণতন্ত্র। জিয়াউর রহমানের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি, কারফিউর মধ্যে মারা গেছে। তারা হত্যার রাজনীতি করে। বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না। বিএনপি সন্ত্রাসী দল।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘স্বল্প সময়ের নোটিসে আজ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শান্তি সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত করেছে। এ উত্তাল তরঙ্গে বিএনপির সব ষড়যন্ত্র ভেসে যাবে।’
বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিদেশি বন্ধুরা আমাদের উন্নয়নের সহযোগী। আপনাদের আমরা সম্মান করি। কিন্তু রক্তে লেখা বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। আপনারা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলে দেশের জনগণ মেনে নেবে না।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ষড়যন্ত্র করছে। বিদেশি বন্ধুরা দেশে আসায়, তাদের উপস্থিতিতে বিএনপি একটা শোডাউন করেছে। তাদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বিদেশিদের কাছে নালিশ করে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস, দুর্নীতি, দুর্নীতির মামালায় সাজা হওয়া, দুঃশাসন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। জনগণ বিএনপির অপকর্ম ভুলে যায়নি, ভুলতে পারে না।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আজ থেকে ঢাকার রাজপথ আমাদের দখলে থাকবে। আমরা বিএনপির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মাঠে আছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচন পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব।’
ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই। নৌকার কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। তার প্রমাণ পদ্মা সেতু। আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে হবে। নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে। শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করতে হবে।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, কামরুল ইসলাম, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেন ও শাহাবুদ্দিন ফরাজী।
এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মঈনুল হোসেন খান নিখিল, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন প্রমুখ।
রাজধানীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমাবেশ কেন্দ্র করে রাজধানীর প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো রাজধানীতে প্রবেশে বাধা দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। এ ছাড়া তল্লাশির মাধ্যমে বিএনপি নেতাকর্মীদের সমাবেশে অংশ নিতে বাধা দেওয়া ও আটক করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা। তবে পুলিশের দাবি, নিরাপত্তাজনিত কারণেই তাদের এই বিশেষ তল্লাশি কার্যক্রম।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী, সাভারের আমিনবাজার, আশুলিয়াসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী সড়কেও চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন দেশ রূপান্তরের প্রতিনিধিরা।
রাজধানীর প্রবেশমুখ আমিনবাজারে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশির কারণে সড়কটির হেমায়েতপুর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় দীর্ঘক্ষণ গরমে গাড়িতে বসে থেকে অতিষ্ঠ হয়ে এবং প্রয়োজনে অনেকেই হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন।
আমিনবাজারে এনামুল হক নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার সময় আমার ছোট ভাই আজাদুলকে আটক করেছে পুলিশ। পরে তাকে সাভার মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। এভাবে আমিনবাজারে পুলিশের চেকপোস্ট থেকে পুলিশ অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সমাবেশকে ঘিরে কেউ যেন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য চেকপোস্টে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তবে কাউকেই আটক করা হয়নি।
ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম অভিযোগ করেন, নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য ৭০টি গাড়ি ভাড়া করা হয়। পুলিশ এসব গাড়ির অন্তত ৪০টি গাড়ি আটকে দেয়। এ ছাড়া পুলিশ তাকে নিজ বাসায় অবরুদ্ধ করে রাখে। আমিনবাজার চেকপোস্ট থেকে অন্তত ৩০ জন, বিরুলিয়া থেকে প্রায় ২০ নেতাকর্মীকে আটক করে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়ও চেকপোস্ট বসিয়ে চালানো হয় তল্লাশি কার্যক্রম। ফলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান বাইপাস সড়কে প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া সিলেট মহাসড়কের ভুলতা থেকে যাত্রামুড়া পর্যন্ত এবং ভুলতা থেকে কাঞ্চন টোল প্লাজা পর্যন্ত সৃষ্ট যানজট দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়ায়। চেকপোস্টগুলোতে রাজধানীমুখী বাসসহ অন্যান্য গণপরিবহনে তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে। এতে তরুণ ও যুবক বয়সী ছেলেদের ফেরত পাঠাতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া সোনারগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকাতেও সক্রিয় ছিল পুলিশের চেকপোস্ট। এদিন ভোর থেকে মহাসড়কের মেঘনাঘাট, চিটাগাং রোড ও সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়। গণপরিবহনে যাত্রীদের ব্যাগ ও ব্যক্তিগত গাড়ির ভেতরে তল্লাশি করা হয়। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সকাল থেকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় তল্লাশির পর অনেক যাত্রীকে ফেরত পাঠাতেও দেখা যায়। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ শহরে পুলিশি তল্লাশির কারণে শহরের অভ্যন্তরে সবার দিকে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে এ এলাকার সাধারণ যাত্রীরা ছিল পরিবহন সংকটে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমাবেশে যেতে অধিকাংশ পরিবহন ভাড়া করে ফেলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনের অপেক্ষা করেছেন যাত্রীরা।
গত মঙ্গলবার রাতভর নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে আটকের অভিযোগ করা হয়েছে। জানতে চাইলে পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। সন্দেহভাজন যাদের আটক করা হয়েছে, যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।
অন্যান্য এলাকার মতো গাজীপুরেও পুলিশের কড়াকড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে টঙ্গী ব্রিজ, কামারপাড়া ও আশুলিয়া সড়ক পুলিশ যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে।
বিএনপির সমাবেশের উদ্দেশে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী থেকে রওনা হওয়া যুবদল ও ছাত্রদলের ১২ নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালানোর খবর দিয়েছেন টাঙ্গাইল প্রতিনিধি। হামলায় আহত ১২ নেতাকর্মীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। ধনবাড়ী উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবদুল আজিজ অভিযোগ করেছেন, বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা গোপালপুর শিমলা বাজারে পৌঁছালে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা মাইক্রোবাস থামিয়ে অতর্কিত হামলা চালান।
জীবনকে অন্যদের তুলনায় ভিন্নভাবে দেখেছেন তিনি। তার লেখা স্যাটায়ার বা কবিতার মতো গদ্য কিংবা সমালোচনামূলক গ্রন্থে বারবার ফুটে উঠেছে জীবন সম্পর্কে নিজের ধারণার কথা। মৃত্যুকে মানবজীবনের অবধারিত সত্য মানা কিংবা অন্য কোনো জায়গায় জীবনের অর্থ খোঁজা চেক বংশোদ্ভূত সেই ফরাসি ঔপন্যাসিক মিলান কুন্ডেরা এবার সত্যিই চলে গেলেন অন্য জগতে। ‘লাইফ ইজ এলসহোয়্যার’, ‘দ্য আনবিয়ারেবল লাইটনেস অব বিইয়িং’, ‘আর্ট অব নভেল’ এর মতো বইয়ে লেখক মিলান কুন্ডেরা মারা গেছেন। প্যারিসের স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার ৯৪ বছর বয়সে মানব জীবনের অবধারিত সত্যকেই বরণ করেছেন।
কুন্ডেরার স্যাটায়ার ও কবিতার মতো গদ্য লেখনী জীবনের বিভিন্ন চিত্তাকর্ষক দিককে পাঠকের সামনে উন্মোচন করেছে। তিনি তার আখ্যানের ভাষা, ভঙ্গি দিয়ে পাঠকমন নিয়ে খেলা করতে ভালোবাসতেন। প্রচারবিমুখ এই সাহিত্যিক মনে করতেন, লেখকদের সাক্ষাৎকার দিতে নেই। তাদের কথা প্রস্ফুটিত হবে তাদেরই কলমে। পাঠকের কল্পনাই লেখককে সম্পূর্ণ করে। লেখক লিখবেন, আখ্যান তৈরি করবেন, চরিত্রগুলোকে বুনবেন, কিন্তু বাকি কাজ কেবলই পাঠকের। তার চাওয়া ছিল, পাঠক যেন বাধ্য হয়েই তার গল্প বলার ধরনের সঙ্গে নিজের কল্পনাশক্তি দিয়ে নিরীক্ষণের পথে হাঁটতে শুরু করে।
১৯২৯ সালে তৎকালীন চেকোসেøাভাকিয়ার বেরনো শহরে জন্ম নেন কুন্ডেরা। তার বাবা ছিলেন একজন প্রখ্যাত পিয়ানোবাদক। কুন্ডেরা প্রাগে পড়াশোনা করেন। সে সময় তিনি সমাজতান্ত্রিক দলে যোগ দেন এবং ফরাসি কবি অ্যাপোলিনেয়ারের কবিতা অনুবাদ করার পাশাপাশি নিজেও কিছু কবিতা লেখেন। তিনি একটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ে পাঠদান করেন। তার ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন পরবর্তী সময়ে অস্কার বিজেতা পরিচালক মিলোস ফোরম্যান।
কুন্ডেরার প্রথম উপন্যাস ছিল ‘দ্য জোক’। এই ডার্ক হিউমার ভিত্তিক উপন্যাস ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হয়। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা নিয়ে লেখা এই উপন্যাস চেকোসেøাভাকিয়ায় নিষিদ্ধ করা হলেও তিনি এ লেখার জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। তবে তাকে বহিষ্কার করা হয় সমাজতান্ত্রিক দল থেকে। ১৯৭৫ সালে তিনি ও তার স্ত্রী ভেরা ফ্রান্সে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান। সেখানে তারা রেনেঁ বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর সহঅধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৯ সালে তাদের চেক নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়।
এর মধ্য অবশ্য তার ‘লাইফ ইজ এলসহোয়্যার’ বইটি প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি কৈশরের তাড়নায় তাড়িত এক যুবকের আখ্যান তুলে ধরেন। তাতে উঠে আসে শৈবব, মাতৃত্ব, বিপ্লব আর কবিতার নৈতিকতার আখ্যান।
কুন্ডেরার সবচেয়ে বিখ্যাত লেখা ‘দ্য আনবিয়ারেবল লাইটনেস অফ বিয়িং’ ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালে এ লেখার ভিত্তিতে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়। এই উপন্যাসটিতেও নৈতিকতা বিষয়ের ওপর লেখা। এতে ব্যক্তিগত ও সামগ্রিক পর্যায়ে স্বাধীনতা ও আবেগ নিয়ে বলেছেন লেখক।
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত কুন্ডেরার সমালোচনামূলক গ্রন্থ আর্ট অব নভেল। তাতে তিনি লিখেছিলেন, জীবন আসলে একটি ফাঁদ। আমাদের সম্মতি না নিয়েই আমাদের জন্ম দেওয়া হয়। জন্মের পর আমরা এমন এক দেহে আটকা পড়ি যা আমরা নিজেরা পছন্দ করে বাছাই করিনি এবং আমাদের একমাত্র নিয়তি হচ্ছে অবধারিত মৃত্যু।
২০১৩ সালে আবারও নতুন এক উপন্যাস প্রকাশিত হয় কুন্ডেরার। দ্য ফেস্টিভাল অব ইনসিগনিফিকেন্স বইটিও মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে পাঠক সমাজে। ২০১৯ সালে চেক প্রজাতন্ত্র কুন্ডেরার নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয় এবং ২০২৩ সালে তার আদি নিবাস বিরনোতে মিলান কুন্ডেরা পাঠাগার স্থাপিত হয়। গতকাল সেই পাঠাগারের মুখপাত্রই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন এ কালজয়ী লেখকের।
জীবনের অর্থ খোঁজা এ লেখকের নাম নোবেল পুরস্কারের জন্য একাধিককার তালিকায় উঠলেও এই সম্মান তার হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। তা নিয়ে কোনো দিন আক্ষেপ ছিল না তার। তবে তার পাঠক-অনুরাগীদের মনে অভিমান জমা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কুন্ডেরার মৃত্যুতে সে আক্ষেপ ফুরাবে না বরং আরও দীর্ঘদিন পোড়াবে।
অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি খাতে সরকারের ঋণ বেড়েই চলছে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে ঋণের টাকায়। অনেক সময় পরিচালন ব্যয় মেটাতেও ঋণ করতে হচ্ছে সরকারকে। যদিও জিডিপির তুলনায় সরকারের ঋণ এখনো বিপজ্জনক সীমায় যায়নি। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় ঋণ-জিডিপির অনুপাতে বাংলাদেশ এখনো ভালো অবস্থানে আছে। তবে কম রাজস্ব আয় ও ডলার সংকটের কারণে ঋণ পরিশোধ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ঋণের সুদ পরিশোধেই বাজেটের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হচ্ছে। বর্তমানে দেশের মাথাপিছু ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার টাকারও বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণ মিলিয়ে চলতি বছরে সরকারের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। দেশের জনসংখ্যার বিবেচনায় নিলে মানুষের মাথাপিছু ঋণ দাঁড়ায় ৯৫ হাজার ১৯ কোটি টাকা। অবশ্য মাথাপিছু ঋণের তুলনায় আয় এখনো বেশি। দেশের মানুষের বর্তমান বাৎসরিক মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৯৩ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ লাখ ৩ হাজার ৪০ টাকা।
অবশ্য আয় বেশি থাকলেও ঋণের ঝুঁকিই এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কম রাজস্ব আয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও দেশের বাণিজ্য ঘাটতি সরকারের ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা কমিয়েছে। যদিও বাংলাদেশ কখনই খেলাপি হয়নি। তবে বাজেট ঘাটতি মেটাতে ঋণগ্রহণের পরিমাণ যে হারে বাড়ছে, তাতে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারপরও বর্তমানের সংকট কাটাতে সরকার আরও বেশি বিদেশি ঋণের দিকে ঝোঁক বাড়িয়েছে। এতে দেশের মানুষের মাথাপিছু ঋণ বাড়ছে গাণিতিক হারে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মাত্র চার বছরের ব্যবধানে সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। আর ২০১৬ সালের তুলনায় বর্তমানের এ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১৭৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব বলছে, বর্তমানে সরকারের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। এর বাইরে বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরের সরকারের ঋণের পরিমাণ ৮ লাখ ১৫ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বর্তমানে সরকারের ঋণ ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এ হিসাবে দেশের মাথাপিছু ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ১৯ টাকা। ২০১৯ সালে মানুষের মাথাপিছু ঋণ ছিল ৫৭ হাজার ৬১১ টাকা। অর্থাৎ চার বছরে ব্যবধানে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। আর ২০১৬ সালে ছিল ৩৪ হাজার ৫৩ টাকা। সে হিসাবে সাত বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ১৭৯ শতাংশ।
তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া সরকার সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে সরকারের ঋণ কয়েকগুণ বেড়েছে। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ২৪২ শতাংশ আর বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বেড়েছে ২৪২ শতাংশ। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাত থেকে ৭৫ শতাংশ এবং বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে ৮৯ শতাংশ।
জানতে চাইলে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় অনুযায়ী ঋণের পরিমাণ বেশি নয়। কিন্তু সরকারের ঋণের হার দিন দিন বাড়ছে। সে অনুযায়ী রাজস্ব আয় বাড়ছে না। যে কারণে ঋণের সুদ পরিশোধে সরকারের ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া বিদেশি ঋণ সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও বিশ^ব্যাপী সুদের হার বাড়ায় এটা সরকারের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সংকট সমাধানে সরকারকে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। আমার যদি আয় বেশি হয় তাহলে আমি ঋণও বেশি নিতে পারব। এতে অর্থনীতির ওপর কোনো চাপ তৈরি করবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশের অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণ বেড়ে যাওয়া কোনো সমস্যা নয়। যদি এর বিপরীতে সরকারের আয় বা রাজস্ব বাড়ানো যায় কিন্তু এখনো দেশের রাজস্ব আয় ৪ লাখ কোটি টাকা ছুঁতে পারেনি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। পাঁচ বছর পর ২০২৩ সালের জুনে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ২০১৭ সালে ঋণের পরিমাণ ছিল ৭০ হাজার ৭ কোটি টাকা। গত জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রসহ দেশের অভ্যন্তরীণ অন্যান্য খাত ২০১৭ সালে সরকারের ঋণ ছিল ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের এপ্রিলে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা।
সরকারের বিদেশি ঋণও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সরকারের বিদেশি ঋণ ছিল ৩ হাজার ৮৮৬ কোটি ডলার। পাঁচ বছর পর ২০২৩ সালের মার্চে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলারে।
এদিকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উৎস থেকে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। আর ২০১৮-১৯ হিসাববছর শেষে এ ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৮ লাখ ৭৩ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, এ ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা।
একদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানির দিকে হাঁটছে, অন্যদিকে রপ্তানি আয় স্বাভাবিক থাকলেও প্রবাসী আয় গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যেই বিদেশি ঋণে বড় ধাক্কার মুখে বাংলাদেশ। সরকারি কর্মকর্তাদের অদক্ষতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারায় একদিকে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে গেছে, অন্যদিকে ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। আগস্ট শেষে ঋণ পরিশোধ করতে গত বছরের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি, বিপরীতে অর্থছাড় কম হয়েছে ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ এ বছর ঋণ পাওয়ার চেয়ে ঋণ পরিশোধের চাপ গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে দাঁড়িয়েছে ৭৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারে। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ৮৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমেছে ১৭ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের দুর্বলতার কারণে অর্থছাড় কমেছে। তাছাড়া ঋণ পরিশোধে আরও বেশি চাপের মুখে পড়তে হবে বলেও মনে করেন তারা।
ইআরডির হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছর আগস্ট শেষে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ৪০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। অথচ গত বছর একই সময়ে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ডলার বা ২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। ঋণ থেকে সুদকে আলাদা করলে দেখা যায়, সুদের চাপও দ্বিগুণ হয়েছে। আগস্ট শেষে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৪ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বা ১ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের শুরু থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে উন্নয়ন প্রকল্পে বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে। উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রীর মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও এলসি ওপেনিং নিয়ে অনেক প্রকল্পে জটিলতায় পড়তে হয়েছে। এ কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হার কম ছিল। এ ছাড়া সক্ষমতার অভাবে এডিপিতে বৈদেশিক ঋণের বরাদ্দের ব্যবহার এর আগের অর্থবছরের চেয়ে কিছুটা কম ছিল।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগে আমরা বড় বড় প্রকল্পের যেসব ঋণ নিয়েছিলাম, অধিকাংশ ঋণের ম্যাচিউরিটি শেষ হয়েছে। এ ঋণগুলোর সুদহারও বেশি আবার গ্রেস পিরিয়ডও কম। গ্রেস পিরিয়ড কম অর্থাৎ আমাদের ঋণ পরিশোধের সময় দ্রুততর হয়ে আসছে।’
সংস্থাগুলো সুদের হার বাড়াচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল গ্রেস পিরিয়ড ১০ বছর দেওয়া হতো, এখন বেশিরভাগ ঋণেই ৫ বছর দেওয়া হয়। সুদের হার বাড়াচ্ছে ঋণদাতা সংস্থাগুলো। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক ৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে কথা বলেছে, অথচ তারা আমাদের শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ ঋণ দিত।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঋণদাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে এ দুই মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে জাপান। এ দেশের কাছ থেকে ছাড় হয়েছে ৩০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এডিবির কাছ থেকে। এ সংস্থার কাছ থেকে ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ১৫ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ করেছে বিশ^ব্যাংক। এ সংস্থার আইডিএ প্রোগ্রামের অর্থছাড় হয়েছে ১৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার।
চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে অর্থছাড় কম হলেও এ সময়ে ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে প্রায় চারগুণ। আগস্ট শেষে অনুদানসহ বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে ১১৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। গত বছর একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল ৩০ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের। এ সময়ে পাইপলাইনে থাকা সম্ভাব্য ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৭০ কোটি ডলারের বেশি।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার বৃদ্ধির ফলে সরকারের বৈদেশিক ঋণের পরিশোধের চাপ বেড়েছে। এর ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
ইআরডির হিসাবে, সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের সুদ ও আসল মিলিয়ে ২ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। এর মধ্যে সুদ হিসাবে পরিশোধ করেছে ৯৩৫ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার আর আসল পরিশোধ করেছে ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার আসল ও সুদ বাবদ পরিশোধ করেছে ২ দশমিক ০১৭ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে আসল ১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন এবং সুদ ৪৯১ মিলিয়ন ডলার।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) রেট বেড়ে ৫ শতাংশের বেশি হয়েছে। এ কারণে বাজারভিত্তিক ঋণের জন্য বাংলাদেশকে এখন ৫ শতাংশের বেশি সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে এই রেট ছিল ১ শতাংশের কম।
ঋণের চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে। যদিও এখন পর্যন্ত রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের শতাংশ হিসাবে বা জিডিপির শতাংশ হিসাবে এটি কম। কিন্তু তারপরও এটি ধীরে ধীরে বেড়ে এখন ৩৮ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। এমন সময়ে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে যখন আমাদের রিজার্ভও চাপে আছে।’ তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের প্রতিবছর প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স মিলিয়ে আমাদের আয় ৮০ বিলিয়ন ডলার। এ অর্থ আবার আমদানির জন্য ব্যয় করতে হচ্ছে। রিজার্ভের নিরিখে এটি এখন অবশ্যই চাপ। যখন রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছিল তখন এ চাপ অনুভূত হয়নি। এখন রিজার্ভ কমতির দিকে আর ঋণ পরিশোধের দায়ভার বৃদ্ধির দিকে।’
বর্তমানে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য সরকার যে ঋণ নিয়েছে, সেসব ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হলে ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করছে ইআরডি।
সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রের প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে। এডিপি বাস্তবায়নও চলছে ঢিমেতালে। অর্থ সংকট ছিল না, এমন প্রকল্পের অগ্রগতিও আশানুরূপ হয়নি। অগ্রাধিকার পাওয়া মেগা প্রকল্পের কাজও চলছে ঢিমেতালে। আর ব্যয় করতে না পারায় বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে গেছে।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগই এসেছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে পাইপলাইনে বৈদেশিক ঋণ রয়েছে ৪৪.৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ ঋণের জন্য সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে।
ফরিদপুরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। গত এক মাসে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৪৫ ডেঙ্গু রোগীর। আর গত এক সপ্তাহেই মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। চলতি বছর সব মিলিয়ে জেলাটিতে এ নিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৬১ জন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এবার ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৬৩২। এর আগে এক বছরে এত আক্রান্ত আর মৃত্যু দেখেনি জেলাটি। রোগীর চাপে বিভিন্ন হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। ডেঙ্গু রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে হাসপাতালের বারান্দা ও সিঁড়িতে। তাতে ব্যাহত হচ্ছে অন্য রোগীদের চিকিৎসাসেবাও।
ডেঙ্গুতে জেলার এমন পরিস্থিতির জন্য সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব কার্যক্রম চলমান। সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন এলাকায় মশা নিধন কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন হাসপাতালে বিনামূল্যে স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাবে এ বছর জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১২ হাজার ৬৩২ রোগী। বর্তমানে ফরিদপুরে ভর্তি হয়ে ৮২৪ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে সেবা নিচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্তের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে মৃত্যুও। এদের অধিকাংশই নারী। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গত এক মাসে এ জেলার হাসপাতালগুলোতে মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। এর মধ্যে ফরিদপুরের ৩১ এবং অন্যান্য জেলার ১৪ জন। আর এ বছর জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ৬১ জন। এর মধ্যে ফরিদপুরে ৪১ জন, বাকি ২০ জন রাজবাড়ী, মাগুরা, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের।
হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় শয্যা সংকটের পাশাপাশি তীব্র গরমে অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। তবে ডেঙ্গু রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে দিন-রাত চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব স্কুল-কলেজ, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার আশা প্রকাশ করেন, শিগগিরই সবার সমন্বয়ে ডেঙ্গু মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
সিভিল সার্জন অফিস বলছে, বিভিন্ন হাসপাতালে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ২ হাজারের অধিক রোগী। ফলে রোগীদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সব বিভাগের কর্মীরা দিন-রাত কাজ করছেন। তবে শুধু সেবা দিলেই চলবে না। এর প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে মৃত্যুর মিছিল থামানো যাবে না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শুধু ফরিদপুর নয়, এ অঞ্চলের ৫ থেকে ৬টি জেলার রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
ডেঙ্গু রোগীদের বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘গত এক মাসে এ জেলায় অতিরিক্ত ডেঙ্গু রোগীর চাপ লক্ষ করা গেছে। আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জেলার সব হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে বলেছি। তিনি জানান, ফরিদপুরে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১২ হাজার ৬৩২ ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে ১১ হাজার ৭৪৭ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। গতকাল সোমবার জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল ৮২৪ জন।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ, নীতি ও দর্শন বর্তমান বিশ্বের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ বন্ধে মহাত্মা গান্ধীর শান্তি ও সম্প্রীতিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধী উভয়ে অসাম্প্রদায়িক নেতা। তাদের মতাদর্শ বিশ্বের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। গতকাল সোমবার দুপুরে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট ক্যাম্পাসে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক যুব পিস ক্যাম্পের শেষ দিন ও মহাত্মা গান্ধীর ১৫৫তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) জীবন কানাই দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নোয়াখালী-১ আসনের সাংসদ এইচ এম ইব্রাহিম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবিব, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খান সোহেল প্রমুখ। অনুষ্ঠান শুরুর আগে গান্ধীর ম্যুরালের সামনে প্রভাত প্রার্থনা ও ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। শেষে গান্ধী আশ্রম প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী এবং মহাত্মা গান্ধীর ১৫৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক যুব পিস ক্যাম্পের সমাপনী ঘোষণা করা হয়। ক্যাম্পে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দেশের দেড় শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ দেশের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। কারণ এ সরকার খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে। তার মুক্তির বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। এরা কাপুরুষ। এরা জানে খালেদা জিয়া সুস্থ হলে তাদের ক্ষমতার মসনদ ভেঙে পড়বে। বন্দি রেখে খালেদা জিয়াকে এরা হত্যা করতে চায়।
গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তির’ দাবিতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়কে হলুদ-সবুজ রঙের টুপি মাথায় দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য তারা (সরকার) বিভিন্ন রকম আইনকানুন দেখাচ্ছে। যখন আপনার (শেখ হাসিনার) কানের সমস্যা হয়েছিল তখন আপনি আমেরিকা চলে গিয়েছিলেন। যান নাই? আজকে খালেদা জিয়ার যখন জীবন-মরণের সমস্যা তখন এইসব কথা বলছেন কেন? কারণ রাজনৈতিকভাবেই তারা বেগম জিয়াকে হিংসা করে, তাকে সুস্থ করতে চায় না। বেগম জিয়াকে রাজনীতি করতে দিচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সম্পূর্ণ লক্ষ্য একটাই, এ দেশে কোনো বিরোধী দল থাকবে না, তারাই সরকার চালাবে, সরকারে থাকবে। তাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হবে তারাই শুধু এ দেশের মালিক আর আমরা সব প্রজা।’
তিনি আরও বলেন, ‘পিটার হাসকে (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) নিয়ে তারা (সরকার) খুব রেগেছে। তাদের নেতা-মন্ত্রীরা সমস্ত ডিপ্লোমেটিক নর্মসকে উপেক্ষা করে তার বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলছে। তাদের বংশবদ টেলিভিশন চ্যানেলগুলো মিথ্যাচার করছে। এরা এত দায়িত্বজ্ঞানহীন। যে দেশটাতে আমরা সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করি, সেই দেশের সঙ্গে সমস্যা তৈরি করেছে। আরেকটা খবর আছে, সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে। এর অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর তাদের আস্থা নেই। সেজন্য তারা অর্থ পাঠাচ্ছে না।’
দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা খালেদা জিয়া উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ নেতারা) তো মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। তারা পাকিস্তানের সরকারের ভাতা খেয়েছিলেন।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে কেনো বিকল্প নেই। একটাই পথ। সরকারকে সরাসরি বলতে চাই, এখনো সময় আছে মানে মানে পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিন, সংসদ বিলুপ্ত করুন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় দেশের মানুষ জানে কীভাবে স্বৈরাচারকে, ফ্যাসিবাদকে দূর করতে হয়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে আমাদের রংপুর-দিনাজপুরের মানুষ আছেন। এক কৃষক নেতা ব্রিটিশ পিরিয়ডে বিদ্রোহ করেছিলেন। কৃষককে ডাক দিয়েছিলেন, কোনঠে বাহে জাগো সবাই। এই হচ্ছে ডাক। কোথায় আছেন, সবাই জাগেন, জেগে ওঠেন। প্রতিরোধ গড়ে তুলি, সমস্ত নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।’
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ‘সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে দেশের কৃষকরা পণ্যের ন্যায্যমূল্য, সার-কীটনাশক-বীজ কোনো কিছুই পাচ্ছেন না। মেগা প্রকল্পের নামে সরকার লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার ও বাড়িঘর করে আখের গোছাচ্ছে।’
কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির শাহজাহান ওমর, বরকতউল্লা বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, ফরহাদ হালিম ডোনার, রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ বক্তব্য দেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশর (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান। গতকাল সোমবার বিজিবির সিলেট সেক্টর সদর দপ্তরে সব পর্যায়ের বিজিবি কর্মকর্তা ও সৈনিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ নির্দেশনা দেন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে বিজিবির প্রতিটি সদস্যকে সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনেরও আহ্বান জানান।
এর আগে ডিজি বিজিবির বিভিন্ন ইউনিটের অপারেশনাল, প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিদর্শনের অংশ হিসেবে গত রবিবার ও গতকাল সোমবার বিজিবির সিলেট সেক্টর সদর দপ্তর এবং আওতাধীন সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) এবং অধীনস্থ ১০ নম্বর পোস্ট ও পাথরকোয়ারি বিওপি, সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (২৮ বিজিবি) এবং অধীনস্থ দুর্গম ডুলুরা বিওপি এবং জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) অধীনস্থ আমলশিদ বিওপি ও রহিমপুর খাল পরিদর্শন করেন।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জকিগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে রহিমপুর খালের সংযোগস্থল বন্ধ রয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশি কৃষকরা সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে গত জুন মাসে বিজিবি-বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবির পক্ষ থেকে বিষয়টি অত্যন্ত জোরালোভাবে উত্থাপন করা হয়। বিএসএফ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য বিজিবিকে আশ্বাস দেন। এরই ধারাবাহিকতায় রহিমপুর খালের সংযোগস্থল পুনঃউন্মুক্তকরণ কাজের অগ্রগতি সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য বিজিবি মহাপরিচালক গতকাল রহিমপুর খাল পরিদর্শন করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।