
অপেক্ষার ফল নাকি মধুর হয়। ২০১২ সাল থেকে ২০২৩, ১১ বছর। মিরপুরে খেলতে কেমন লাগে তা ভুলতেই বসেছিল নারী ক্রিকেটাররা। এতদিন পর হোম অব ক্রিকেটে ফেরার উপলক্ষ ভারতের বিপক্ষে ৪ উইকেটের জয় রঙিন করেছে নারীরা। টি-টোয়েন্টিতে ভারতকে ৯ উইকেটে ১০২ রানে আটকে দিয়ে নিগার সুলতানা জ্যোতিরা ১৯তম ওভারে ৬ উইকেটে করে ১০৩।
২০১২-তে দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দলের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ৬ ম্যাচ খেলেছিল নারী দল। সেবার টি-টোয়েন্টিতে এক ম্যাচ জিতেছিল। এবারও ভারতের সঙ্গে দুই ফরম্যাট মিলিয়ে ৬ ম্যাচের সিরিজ। একটি আবার নারী বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। ১৬, ১৯ ও ২২ জুলাইয়ের তিন ওয়ানডে আলাদা গুরুত্ব রাখবে। এবার ওয়ানডে ফরম্যাট আসার আগেই জিতে গেল বাংলাদেশ। অল্পের জন্য সিরিজটা হাতছাড়া হয়েছে। ভারতকে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৯৫ রানে আটকে দিয়েও সফল হওয়া যায়নি। ৮৭ রানে অলআউট হয়ে মাত্র ৮ রানের আক্ষেপে পড়তে হয়েছে। তবে একই ভুল দ্বিতীয়বার করেনি নারীরা। এবার ১০৩ এর পেছনে ছুটে রানের চাকা সচল রেখে লক্ষ্যে পৌঁছেছে তারা। ওপেনার শামীমা সুলতানা একপ্রান্ত আগলে রেখে দলের রান এগিয়ে নিয়েছেন ৪৬ বলে ৩ চারে ৪২ করে। সঙ্গে অধিনায়ক জ্যোতির ১৪, সুলতানা খাতুনের ১২ ও নাহিদা আক্তারের অপরাজিত ১০ রান বাংলাদেশকে স্মরণীয় জয় এনে দেয়। এর আগে লেগ স্পিনার রাবেয়া খানের ১৬ রানে ৩ উইকেট ও অফস্পিনার সুলতানা খাতুনের ১৭ রানে ২ উইকেটে ভারত বড় স্কোর করতে ব্যর্থ হয়। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪১ বলে ৪০ করে হারমানপ্রিত কৌর। ২৮ রান করে জেমিমা রদ্রিগেজ।
১০৩ করে যখন জেতা গেল। তাহলে একদিন আগে ৯৫ করা গেল না কেন! তাহলে তো আজ ভারতকে প্রথমবার সিরিজে হারানোর ইতিহাস হয়ে যেত। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক জ্যোতি বলছিলেন এই আফসোসটা তাদের তিনগুণ বেশি, ‘আপনাদের আক্ষেপ কতটুকু চিন্তা করেন। আমাদের এর চেয়ে তিন গুণ বেশি (হাসি)। আজ গত ম্যাচের থেকে ভালো ব্যাট করেছি। বোলিং তো নিয়মিত আমরা ভালো করছিই। শেষ ম্যাচেও যে খারাপ ব্যাট করেছি তা না। জুটির ঘাটতি ছিল আমাদের। আজ যেমন আমি-শামীমা মিডল অর্ডারে একটা জুটি করেছি। পরে শামীমা লম্বা সময় খেলেছে। ওই জিনিসটা দ্বিতীয় ম্যাচে করতে পারলে ভালো হতো।’ এই জয় থেকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে এবার ওয়ানডেতে নামার প্রতিজ্ঞা অধিনায়কের, ‘কিন্তু যেটা চলে গেছে সেটা আমাদের হাতে নেই। আজ যেটা মনে হয়েছে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি, ইতিবাচক ক্রিকেট খেলেছি। আমাদের দলের জন্য অনেক বড় বুস্ট আপ হিসেবে কাজ করবে। সামনে যে ফরম্যাটে আমরা মোটামুটি ভালো খেলি। উইনিং একটা মোমেন্টাম তৈরি হয়েছে যেটা সাহায্য করবে।’
ভারতের বিপক্ষে মিরপুরের জয়ে গ্যালারিতে সঙ্গী ছিলেন কয়েকশ’ দর্শক। তবে জ্যোতি এটাকে কয়েক হাজারে দেখতে চান। অধিনায়কের বিশ্বাস তাদের ভালো খেলা, এই জয় ওয়ানডেতে দর্শক মাঠে টানবে, ‘আমার মনে হয় নারী দলকে অনেকেই ফলো করে। অবশ্যই আমি দর্শকদের আবেদন জানাব, তারা যেন আরও আসে। আমি যখন ব্যাটিং করছিলাম, সবার এটা বিশ্বাস ছিল, মাঠ থেকে যখন আমি বাংলাদেশ-বাংলাদেশ শব্দ শুনতে পাই, তখন আসলে ভেতর থেকে ইতিবাচক একটা ব্যাপার কাজ করে। দেশের জন্য খেলছি, দেশের জন্য আরেকটু লড়াই করি, শক্তিটা অন্যরকম থাকে। দর্শক আরও এলে আরও ভালো লড়ব, যারা এসেছেন তাদের ধন্যবাদ।’
ভারতের সঙ্গে আগে খেলা ৫ ওয়ানডের সবকটিতেই হার। তবুও ঘরের মাঠে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজে বিশ্বাস নিয়ে নামতে পারছেন জ্যোতিরা। অধিনায়ক বলছেন তারা ভালো করবেন। তাতে টি-টোয়েন্টি সিরিজে নারী ক্রিকেটের সম্প্রচার, প্রচার, স্পন্সরের অভাব ঘুচবে। আবারও জয়ের মতো রঙিন উপলক্ষ আসবে।
বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ নির্বাচন সামনে রেখে মতবিরোধ নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের প্রত্যাশা জানিয়েছেন সফররত যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই সংলাপ চাই। তবে এ বিষয়ে আমাদের হস্তক্ষেপ থাকবে না। বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে, সেটা বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে উজরা জেয়া এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তারা সবাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বলেন, শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক সংস্থা, নির্বাচনে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ এবং সুশাসনের ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ। গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ, যেখানে সব বাংলাদেশি উন্নতি করবে, সেটাকে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত মে মাসে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না। নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পর দেশটির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে প্রথম বাংলাদেশ সফরে এসেছেন উজরা জেয়া।
গতকাল সকালে উজরা জেয়ার নেতৃত্বে সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সঙ্গে বৈঠক করে। এরপর তারা সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, নির্বাচনী আইন নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে।
দুপুর দেড়টায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আসে। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক ও মধ্যাহ্নভোজ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন উজরা জেয়া ও মাসুদ বিন মোমেন। এ সময় জেয়া সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপরও জোর দেন। তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের ভীতি, প্রতিশোধ ও ভয়ভীতিহীনভাবে সংবাদ পরিবেশনে সক্ষম হতে হবে। আর এর জন্য গণতন্ত্রে নাগরিক সমাজের কথা বলার জায়গা থাকতে হবে।’
আন্ডার সেক্রেটারি উজরা বলেন, মুক্তভাবে মতপ্রকাশ ও সমাবেশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। ভবিষ্যতের সমৃদ্ধি নির্ভর করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। কারণ যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সমর্থন করে।
গত বুধবার ঢাকায় একই সময়ে দুই রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ও সমাবেশ সম্পর্কে উজরা বলেন, ‘দুই রাজনৈতিক দল যে সমাবেশ করেছে, তা আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি এবং সেখানে কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। এটা অবশ্যই একটা ভালো অনুশীলন এবং আমরা এটারই পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই।’
একটি কথা প্রায় আলোচনা হচ্ছে ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে’ উজরার মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। আমি এখানে এসেছি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও গভীর করতে। অবাধ ও সহনশীল ইন্দো-প্যাসিফিকের অঞ্চলে আরও সুরক্ষিত এবং সমৃদ্ধশীল করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করতে এসেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত পাঁচ দশক ধরে আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আমাদের সহযোগিতার বিষয়গুলো হচ্ছে জলবায়ু, উন্নয়ন এবং মানবিক সহায়তা। এর মধ্যে বোঝা যায় আমাদের সম্পর্ক কত মজবুত ও দৃঢ় এবং এ সম্পর্কে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা রয়েছে।’
উজরা বলেন, ‘মানবাধিকারসহ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। মানব পাচার রোধে বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করব।’
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে আমরা ধন্যবাদ জানাই, তারা এত বিশালসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। এ সময় মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বাংলাদেশে আশ্রিত ও রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে ৭৪ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা ঘোষণা করেন। রোহিঙ্গাদের অর্থায়নের জন্য অন্যান্য দাতা দেশকেও আহ্বান জানান তিনি। উজরা মনে করেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বর্তমান পরিস্থিতি অনুকূলে নয়। তিনি বলেন, ‘প্রত্যাবাসন যেন স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণ হয় সেটাকে আমরা সমর্থন করি।’
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বৈঠকে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গত এক দশকের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে।
বৈঠকে আরও অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ও দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার এশিয়া দপ্তরের উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলী কৌর।
চার দিনের সফরে গত মঙ্গলবার নয়াদিল্লি হয়ে ঢাকায় আসে উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রতিনিধিদল। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ শুক্রবার উজরার নেতৃত্বাধীন দলটি ঢাকা ছাড়বে।
প্রতিনিধিদলের কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক তুলে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজের সদস্য, রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং মানবিক কার্যক্রমে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা মানবিক সহায়তা থেকে শুরু করে লিঙ্গ সমতা কার্যক্রম সমন্বয় করাসহ যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যকার শক্তিশালী ও ক্রমবর্ধমান অংশীদারত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, সুশীল সমাজ ও সংবাদমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার ও সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখার ব্যাপারে তারা আলোচনা করেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয়দানকারী বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলের স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে ২০১৭ সাল থেকে ধারাবাহিক সহায়তা দিয়ে আসার কথাও বলা হয়।
এ ছাড়া সংকটের অবসান ঘটাতে এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই উপায়ে নিজ মাতৃভূমিতে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সামরিক সরকারের ওপর চাপ বজায় রেখেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
‘মার্কিন প্রতিনিধিরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আসেননি’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসেনি যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল। তারা কোনো দলকে উৎসাহিত করছেন না বলেও জানিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, এগুলো নিয়ে কোনো প্রসঙ্গ আসেনি, কোনো আলোচনাই হয়নি। বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, সহিংসতামুক্ত এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বাইরে তারা কিছুই চান না। তারা বারবার বলে গেছেন কোনো দল বা ব্যক্তিকে সমর্থন করার জন্য এখানে আসেননি। তারা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আসেনি বলেও আমাদের জানিয়েছেন। তারা কারও প্রতি বিরাগভাজন হয়ে এখানে আসেননি। তারা চাচ্ছেন বাংলাদেশের যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে, সেটিই নির্বিঘেœ যাতে চলতে থাকে। তারা যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছেন সেটা সবার জন্য, সেটা কোনো দলকে উদ্দেশ্য করে দেননি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে সেটি তারা আমাদের জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তিনি তার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে গেছেন, এসব নিয়ে তারা সন্তুষ্ট, সেটা তারা আমাদের কাছে বলে গেছেন। বাংলাদেশ যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় তারা খুশি।’
এ ছাড়া মার্কিন প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা ইস্যু, মানব পাচার নিয়ে কথা বলেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে মানব পাচারকারীরা যে খেলাধুলা করছে, সেটা যাতে না করতে পারে তা নিয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমরা বলেছি মানব পাচার রোধে আমরা টায়ার-থ্রি থেকে টায়ার-টুতে চলে এসেছি। এটা তাদেরই মূল্যায়ন, সেটাকেও তারা অ্যাপ্রিশিয়েট (প্রশংসা) করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলেছি সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের সময় আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে। নির্বাচন কমিশন যেভাবে নির্দেশনা দেবে সেভাবেই তারা কাজ করবে।’ র্যাব নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘না, র্যাব নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
তারা বাংলাদেশের পরিবেশ নিয়ে খুশি। কিন্তু তারা তাদের নাগরিকদের চলাফেরায় সতর্কতা জারি করছেÑ এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এরকম কথা বলেনি।’
নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন, পরপর দুই মেয়দের অতিরিক্ত কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে সংসদে ‘উচ্চকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা’ প্রবর্তন এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ সংশোধন করে পেপার-ব্যালটে ভোট প্রদান নিশ্চিত করাসহ রাষ্ট্রসংস্কারের ৩১ দফা ঘোষণা করেছে বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ চেয়ে ‘এক দফা, এক দাবি’ ঘোষণার একদিন পর সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে এই রূপরেখা ঘোষণা করল বিএনপি।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রূপরেখা ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রূপরেখাকে দলীয় প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ের অত্যন্ত উপযোগী করে প্রস্তাবগুলো তুলে ধরা হয়েছে। প্রয়োজনে ৩১ দফাতেও পরিবর্তন আসতে পারে।’
এর আগে ঘোষিত ২৭ দফার মধ্যে সংবিধান সংস্কার, কমিশন গঠন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল, রেইনবো নেশন গঠন ও উচ্চকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রণয়নের প্রস্তাব ঠিক রেখে নতুন ৩১ দফা ঘোষণা করেছে দলটি। এর সঙ্গে দেশের সমুদ্র ও নৌবন্দরসমূহের দক্ষতা বাড়িয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিস্তারে কাজ করাসহ আরও ৪টি দফা সংযুক্ত করা হয়।
এদিকে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার বিষয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ক্ষমতার বাইরে থাকলে তখন সবাই সুন্দর সুন্দর কথা বলে। কিন্তু ক্ষমতায় গেলে সব ভুলে যায়। স্বাধীনতার আগে জনগণ যে আশা নিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিল তা আজও পূরণ হয়নি। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে এরশাদের পতনের পর তিনদলীয় জোটের রূপরেখার বাস্তবায়ন হয়নি। এখন বিএনপি ক্ষমতার বাইরে তাই সুন্দর সুন্দর কথা বলছে। ৩১ দফা ভালো প্রস্তাব। কিন্তু এই দফাগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে জনগণের শঙ্কা থেকেই যাবে। কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়।’
রাষ্ট্র মেরামতে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার উল্লেখযোগ্য দফাগুলো হলো: ১) প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সব মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। এজন্য অব্যাহত আলোচনা, মতবিনিময় ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে। এজন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। ২) বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। ৩) সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন করা হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সুসমন্বয় করা হবে। ৪) পরপর দুই টার্মের (মেয়াদ) অতিরিক্ত কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। ৫) বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সংসদে ‘উচ্চকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা’ প্রবর্তন করা হবে। ৬) আস্থাভোট, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধনী বিল এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত এমন সব বিষয় ছাড়া অন্যসব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে (দেখা হবে) বিবেচনা করা হবে। ৭) রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত এবং বিশিষ্টজনের অভিমতের ভিত্তিতে স্বাধীন, দক্ষ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন করার লক্ষ্যে বর্তমান ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ সংশোধন করা হবে। ইভিএম নয়, সব কেন্দ্রে পেপার-ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান নিশ্চিত করা হবে। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন সংস্কার করা হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা হবে। এছাড়া প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
যে ধারাবাহিকতায় ৩১ দফা : বর্তমানে বিএনপি যে ৩১ দফা ঘোষণা করেছে তার সঙ্গে বিগত ওয়ান-ইলেভেনের সময় ২৫ জুন ২০০৭ গুলশানে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব প্রয়াত আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার দলের চেয়ারপারসনের ক্ষমতা খর্ব করে ১৫ দফা সংস্কার প্রস্তাবের মিল রয়েছে। মান্নান ভূঁইয়ার প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, এক ব্যক্তি তিন বছর করে দুই মেয়াদের বেশি বিএনপির চেয়ারপারসনের পদে থাকতে পারবেন না। ইতিমধ্যে যিনি বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে ছয় বছরের বেশি ওই পদে থেকেছেন তার ক্ষেত্রেও এই বিধান প্রযোজ্য হবে। প্রধানমন্ত্রী ও দলের চেয়ারপারসন এক ব্যক্তি হতে পারবেন না। এছাড়াও যিনি দুই দফায় প্রধানমন্ত্রী হবেন, তিনি আর দলের চেয়ারপারসন বা প্রধানমন্ত্রী কোনো পদেই আসতে পারবেন না। চেয়ারপারসনের ক্ষমতা খর্ব করার বিষয়ে ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘দলে চেয়ারম্যানের যে সর্বময় ক্ষমতা তা যদি খর্ব করা না হয়, তাহলে গণতান্ত্রিক দল গঠন করা যাবে না। যে কোনো সময়ে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করতে হয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন দল গঠন করেছিলেন তখনো তিনি গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে দল করেছিলেন। বিএনপির আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা আনার প্রশ্নে তারা তাদের খসড়া প্রস্তাবে গুরুত্ব দিয়েছেন।
এর জবাবে বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্ধৃত করে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘খালেদা জিয়া দলের যে কোনোরকম সংস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন, তবে বলেছেন দলের গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রস্তাব দলের কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে উপস্থাপন করতে হবে এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দলের কাউন্সিল।
পরবর্তী সময়ে ১৯ মার্চ ২০১৬ দলের কাউন্সিলে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ‘ভিশন ২০৩০’ শিরোনামে একটি খসড়া পরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সৃজনশীল উদ্যোগের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে। জাতীয় সংসদ হবে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আগামীতে বিএনপি নতুন ধারার রাজনীতি ও সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এ জন্য নতুন এক সামাজিক সমঝোতা বা চুক্তিতে উপনীত হতে বিএনপি উদ্যোগ নেবে। প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। এই অবস্থার অবসানকল্পে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা হবে। তারা সুনীতি, সুশাসন ও সুসরকারের সমন্বয় ঘটাতে চায়।
২০১৬ সালের পর গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় কাঠামো মেরামতে ২৭ দফা ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল বিএনপির ১৯ দফা কর্মসূচি ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০’র আলোকে ২৭ দফা সংস্কার প্রস্তাব আনা হয়েছে। এর ৭ মাস পর সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে ৩১ দফা চূড়ান্ত করে গতকাল ৩১ দফা ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল, সেই রাষ্ট্রের মালিকানা আজ তাদের হাতে নেই। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে দেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর বর্তমান সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হবে।’’ তিনি দাবি করেন, ‘‘৩১ দফায় সাংবিধানিক সংশোধনী আনা হয়েছে। একটি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ গঠন করে সব বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনগুলো পর্যালোচনা করে এসব রহিত/সংশোধন করা হবে এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় সাংবিধানিক সংস্কার করা হবে। সংবিধানে গণভোট ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।’’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।
মাত্র এক কিলোমিটারের দূরত্বে গত বুধবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করেছে। একই দিন রাজনীতির মাঠের বিরোধী দল বিএনপিও করেছে বড় সমাবেশ। পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থেকেও একই দিন কোনো সহিংসতা ছাড়াই রাজধানীতে বড় দুটি সমাবেশ রাজনীতিতে ইতিবাচক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে থাকা বিদেশি বন্ধুরাও দেখেছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাই হোক দুই দল সহাবস্থানে রয়েছে। তবে সমাবেশ থেকে দুই দলের ঘোষিত ‘এক দফা’ জনমনে ভবিষ্যৎ শঙ্কা বাড়িয়েছে। কেননা দুই দলের এক দফা দেশে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। বাড়িয়ে দিতে পারে সংঘাত-সংঘর্ষ।
আওয়ামী লীগ-বিএনপির এক দফার জবাবে এক দফায় দেশের মানুষের ভেতরে আতঙ্ক-আশঙ্কা ও দুশ্চিন্তা থাকলেও আওয়ামী লীগ বলছে, রাজনৈতিক সহিংসতা হওয়ার সুযোগ নেই। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, সহিংসতা ও দূরত্ব বাড়তেও পারে আবার দুই দলের এক দফা আওয়ামী লীগ বিএনপিকে মাঝামাঝি একটা পথ দেখাতে পারে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, সহিংসতা হবে কেন? সহিসংতা সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। আমরা তো গত বুধবার প্রমাণ করেছি, আওয়ামী লীগ সহিংসতার রাজনীতি করে না। আমরা গণতন্ত্র ও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চায় বাধার সৃষ্টি করি না। তিনি বলেন, মাত্র এক কিলোমিটারের ভেতরে দুটি বড় রাজনৈতিক সমাবেশ হয়েছে, কোনো সহিংসতা ছাড়াই।
দুই দলের এক দফা ঘোষণায় দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দিল কি না এ প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, দূরত্ব কম বা বেশির কী আছে? যারা বাংলাদেশে বাস করবে কিন্তু সংবিধান মানবে না, এটা হতে পারে না। তিনি বলেন, কার সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব বাড়বে বা কমবে মনে করছেন?
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশিরা এখন দেশে অবস্থান করছেন। তারা কোন ইস্যুতে এখানে এসেছেন সেটিও এ সরকার বোঝে। উসকানি তো ওরাই দেয়। দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলা করে আমাদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করে। ওইদিন রাজধানীতে যেসব নেতাকর্মী এসেছেন এবং যে বাহন ব্যবহার করেছেন, সেখানে পুলিশ চেক করেছে। মোবাইলে দেখেছে। তার পরও আমাদের স্রোত ঠেকানো যায়নি।
অন্যদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমাদের উন্নয়নশীল বন্ধুদের পরিস্থিতি দেখানোর জন্য সরকার এই নাটক করছে। সরকার ওদের (সফররতদের) দেখাতে চায়, বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ করার সব সুযোগ তারা দিয়েছে। গণতন্ত্রের চর্চার ব্যাপারে তারা উদার। এটা কয়েক দিনের জন্য। বিদেশিরা চলে গেলেই নতুন করে আবার হামলা-মামলা-গ্রেপ্তার শুরু হবে। তাই এক কিলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ দুটি কর্মসূচির কথা বলা হলেও আদতে সরকার বিদেশিদের দেখানোর জন্য ড্রামা সিক্যুয়েলে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল যদি বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন চায়, বিশেষ করে সাংবিধানিক পরিবর্তন তখন লাখ লাখ লোক রাস্তায় নামাতে হবে। অনেকেই অনেক কিছু দাবি করতে পারে। এক দফা, দশ দফা ইত্যাদি। কিন্তু সারা দেশের জনগণ যা চাইবে সেটা হবে। বিরোধী দলের এক দফা কেয়ার টেকার সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ যদি জনগণ ন্যায্য দাবি মনে করে, যদি তারা বড় আকারে রাস্তায় নামে তাহলে এটার একটা ফল আমরা দেখতে পাব। তিনি বলেন, কিন্তু যতক্ষণ সারা দেশের মানুষকে রাস্তায় নামাতে না পারবেন আমার মনে হয় না এক দফা-দশ দফা যাই হোক এটা নিয়ে সরকারি দল কোনো আলোচনায় বসবে।
এক দফায় সংঘাত-সংঘর্ষ সৃষ্টি হবে কি না এ প্রসঙ্গে এ অধ্যাপক বলেন, অপেক্ষা করতে হবে। এখন এটা যতক্ষণ না হবে ততক্ষণ বোঝা যাবে না সংঘাতে যাবে কি না? বাংলাদেশের রাজনীতি একেবারে সংঘাত হবে না সেটাও বলা মুশকিল।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, এক দফায় রাজনীতিতে পরস্পরের প্রতি দূরত্ব বাড়িয়েছে সন্দেহ নেই। তবে ২০১৪ সালের নাটক ২০২৩ সালে হবে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আগামী নির্বাচন কেউ বানচাল করতে পারবে বা করবে আবার কাউকে কৌশলে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে পারবে, রাখবে সেটাও হবে না। আমি মনে করি, সেটা বোঝার ক্ষমতা রাজনীতিবিদদের আছে। কারণ এটা এফোর্ট করার শক্তি কারও নেই। আমি মনে করি বাস্তব বুদ্ধির জয় হবে। মাঝখানে কয়েক মাস একটু গরম থাকতে পারে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল যখন কোনো দাবি জানায় সেটা উচ্চস্বরেই জানায়, সেটা সব দেশেই চলছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এ অধ্যাপক বলেন, এই যে, রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে সেটার জন্য দেশীয় সমাধান লাগবে। বিদেশিরা সহযোগিতা-সৌহার্দ্য জানাবে, পাশে থাকবে, পরামর্শ দেবে এটাকে স্বাগতও জানাব। এর মধ্যে কোনো কিন্তু থাকলে, রহস্য থাকলে সেটাকে স্বাগত জানানোর মতো নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, দুই দল এক দফা দিয়েছে ঠিকই, এই মতভেদের জায়গায় কে কতটা অনড় থাকবে সেটা দেখার বিষয়। এই দুই দলের এক দফা ঘোষণার মাঝামাঝি তো অন্য পথও তৈরি হয়ে যেতে পারে। মাঝামাঝি পদ হচ্ছে নির্বাচনকালীন কোনো একটা সরকার গঠন করা। যার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয় অন্য কেউ থাকবেন। ওই সরকারে বিরোধী দলসহ সমাজের গণ্যমান্য লোকজন যদি প্রয়োজন হয় তাদের রেখে সরকার গঠন করা সম্ভব। আর আমি বলতে চাচ্ছি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বর্তমান সরকারে মাঝামাঝিও একটা ব্যবস্থা আছে।
তিনি বলেন, গত বুধবার শান্তিপূর্ণভাবে এত বড় জনসভা করতে পেরেছে দুই দল, সেটাও আমাদের পজেটিভলি দেখা উচিত। এটি খুব বড় বিষয়। যদিও বিদেশিদের তৎপরতা ও অনড় থাকার কারণে আমরা এটা দেখতে পেয়েছি। তা ছাড়া, দুই দল পাশাপাশি এত বড় সভা করবে কিন্তু কেউ কারও ওপর কোনো আক্রমণ করবে না এটা তো অচিন্তনীয় ব্যাপার। এই গুণগত পরিবর্তনটা এসেছে বিদেশিদের হস্তক্ষেপের কারণে এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তাদের কারণে বা তাদের নজরদারির কারণে। এই নজরদারি যদি অব্যাহত থাকে বা আরও তীব্র হয়, তাহলে মাঝামাঝি একটা অবস্থার আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে বড় দুই দলের পৃথক পৃথক এক দফা দুই দলেরই রাজনৈতিক কৌশল বলে আমি মনে করি। মাঝামাঝি থাকার বা আসার সুযোগ রয়ে গেছে। সংঘাত বা সংঘর্ষের পরিস্থিতি নেই সেটাও বলা যাবে না।
চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭২ বিলিয়ন ডলার। যা সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ছিল ৫৮ বিলিয়ন ডলার। ব্যবসায়ীদের মতে, দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়িক প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে পারলে কয়েক মাসেই এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু সরকার অভ্যন্তরীণ প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর না করে যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে তা ‘উচ্চাভিলাষী’। ব্যবসায়ীরা শঙ্কা প্রকাশ করে দাবি করছেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও ডলার সংকট দূর না হলে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরের চেয়েও রপ্তানি কমে যাবে।
সদ্য শুরু হওয়া অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ বিলিয়ন ডলার। শেষ হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৮ বিলিয়নের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, যার মধ্যে অর্জন হয়েছে ৫৫ বিলিয়নের বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে বর্তমানে ডলার সংকট রয়েছে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কথা গত বছরের শুরু থেকেই বলে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। এসব সংকট মোকাবিলা করতে না পারলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেয়ে নেতিবাচক ধারায় যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাদের মতে, ডলার সংকটের কারণে যদি এলসি খোলা না যায় এবং গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে যদি সক্ষমতা অনুযায়ী শিল্পকারখানা সচল রাখা না যায়, তাহলে গত অর্থবছরের রপ্তানির তুলনায় ১১ শতাংশের বেশি লক্ষ্যমাত্রা কীভাবে অর্জন হবে?
এদিকে ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে নতুন বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য মিশন চালু করেছিল বাংলাদেশ। লক্ষ্য অর্জনের চ্যালেঞ্জ বিভিন্ন দেশে বর্তমানে ৬১টি মিশন আছে। এর মধ্যে বাণিজ্য উইং আছে ১৯টি মিশনের। কিন্তু রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিদেশে অবস্থানরত মিশনগুলো বরাবরই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। অপ্রচলিত বাজারগুলোতে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য তাগাদা থাকলেও খুব বেশি সাফল্য দেখাতে পারছে না মিশনগুলো। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন মিশনের সহযোগিতা চাইলে অধিকাংশ মিশন গাফিলতি দেখায়, সহযোগিতা করতে চায় না।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, যে টার্গেট দেওয়া হয়েছে তার চেয়ে বেশি অর্জন করার সুযোগ আমাদের আছে। এজন্য আমাদের যেসব সংকট রয়েছে সেগুলোর সমাধান করতে হবে। বর্তমানে আমাদের গ্যাস এবং বিদ্যুতের সংকট রয়েছে এটা রপ্তানির জন্য অন্যতম বাধা। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমস্যা, ডলার সংকট, কাস্টমস পয়েন্টে কিছু সমস্যা রয়েছে। আমাদের নগদ সহায়তা নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে এসব অভ্যন্তরীণ সংকট যদি সমাধান করা যায় তাহলে আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি টার্গেটের চেয়ে বেশি রপ্তানি আয় অর্জন করা যাবে। যদি এ সমস্যা সমাধান করা না যায়, তাহলে এ টার্গেট পূরণ করা সম্ভব নয়। উল্টো ১০ শতাংশ ঋণাত্মক হবে।
চলতি বছরের শেষের দিকে দেশের জাতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচন ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচি রপ্তানি আয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর শঙ্কাও করছেন অনেকে। অপ্রচলিত বাজারে (নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেট) রপ্তানি বাড়ানোর জোর দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও শীর্ষ ব্যবসায়ীরা।
সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে বিদেশে অবস্থানরত ৬১ মিশনের মধ্যে ৩৮টি মিশনই তাদের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। তবে ৬১ মিশনের মধ্যে ১৯টি মিশনের নিজেদের বাণিজ্য উইং আছে। এ ১৯টি বাণিজ্য উইংয়ের মাধ্যমে এবারের রপ্তানি আয়ের ৭৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ এসেছে। এ ১৯টির মাধ্যমে দেশে এবার প্রায় ৪১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ ১৯টির মধ্যে মাত্র ৬টি মিশন তাদের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে। বাকি ১৩টি মিশন ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ হওয়া বাণিজ্য মিশনগুলোর তালিকায় রয়েছে ব্রাসেলস, লন্ডন, নয়াদিল্লি, বার্লিন, জেনেভা, ওয়াশিংটন, তেহরান ও বেইজিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিশনগুলো।
বাকি ২৫টি মিশন তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। আগের বছরের যে রপ্তানি আয় হয়েছিল তা থেকেও অনেক কম রপ্তানি আয় হয়েছে এ মিশনগুলোর মাধ্যমে। এ তালিকায় রয়েছে জার্মানির বার্লিন, মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন, রাশিয়ার মস্কো, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন, ইরানের তেহরান, চীনের বেইজিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরের মিশনগুলো।
মোহাম্মদ হাতেম দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো কোনো সময় দেখা যায়, ক্রেতা পণ্য নেওয়ার পর পেমেন্ট দিচ্ছে না বা ঝামেলা তৈরি করছে। তখন আমরা মিশনগুলোর হস্তক্ষেপ চাই। এ ধরনের সমস্যাগুলোতে আমরা মিশনগুলো থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাই না।
যেসব দেশে মিশনের বাণিজ্য উইং আছে এসব দেশের মধ্যে বেলজিয়ামে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ পিছিয়ে আছে। চীনে যে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল তার চেয়ে ১৪ দশমিক ৬২ শতাংশ কম রপ্তানি হয়েছে দেশটিতে। চীনের বিভিন্ন শহরে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। কিন্তু দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ৬৮ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। জার্মানির বিভিন্ন শহরে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার। দেশটিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ রপ্তানি আয় কম হয়েছে। বছর শেষে দেশটি থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৭৮ কোটি ৭৩ লাখ ডলার।
২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তরণ ঘটবে। ফলে বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা কমে যাবে। এজন্য টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে রপ্তানির ওপর জোর দিয়েছে সরকার। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোকে রপ্তানি বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, আগামীতে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে রপ্তানি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। এজন্য ২০২৬ সালে দেশের রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনাও করা হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে রপ্তানি ৮০ বিলিয়ন ডলার করার প্রাক্কলন করেছে সরকার। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সরকার পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণের চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে প্রধান রপ্তানিপণ্য পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির বর্তমান ধারা আরও জোরদারের উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে বছরে ১৫ থেকে ১৯ লাখ মানুষ ভারতে চিকিৎসা নিতে যান। নানা ঝামেলা পায়ে ঠেলে প্রতিবেশী দেশটিতে যান তারা। এর বড় কারণ হচ্ছে দেশে এক রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তিন সেন্টারে তিন ধরনের ফল। অর্থাৎ সঠিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না। তাই বাধ্য হয়ে ভারতে ছোটেন।
এক পরীক্ষায় তিন ফলের ঘটনা ঘটেছে দেশের প্রশাসনেও। এসিআর ঘষামাজায় তিন তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়। তিন তদন্ত কমিটি তিন ধরনের তথ্য বের করে। এসব তথ্যের ওপর ভর করে সংস্থাপ্রধানরা অনেকটা যেমন খুশি তেমন শাস্তি দিয়েছেন। আবার যারা ভিন্ন তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তারা বহালতবিয়তে চাকরি করছেন। এ অবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশন বুঝতে চাচ্ছে আসল ঘটনাটা কী।
গত ২১ জুন কমিশন থেকে একটি চিঠি যায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে। এই চিঠি যাওয়ার পরই তোলপাড় শুরু হয়। যে বিষয়টি ঘটনার পরম্পরায় অনেকটা থিতু হয়ে এসেছে, সেটা নিয়ে কেন নড়াচড়া শুরু করল কমিশন। তোলপাড়ের চৌহদ্দি দপ্তর, অধিদপ্তর, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালেই সীমাবদ্ধ নেই। সেটা পৌঁছে গেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছাপিয়ে তদারকি সংস্থা পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) পর্যন্ত।
এসিআর ঘষামাজার ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৯ সালে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ৪৭ জন শ্রম পরিদর্শকের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন ও জ্যেষ্ঠতার তালিকা পাঠায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে তা পিএসসিতে পাঠানো হয়। পদোন্নতির জন্য এসব তালিকা অপরিহার্য। পিএসসির কর্মকর্তারা দেখেন এসিআরগুলো কাটাছেঁড়া অর্থাৎ ঘষামাজা করা। তারা ফেরত পাঠান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অধিদপ্তরে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কারা এবং কোন দপ্তরে এ অপকর্ম করা হয়েছে। তা খুঁজে বের করতে প্রথম তদন্ত কমিটি হয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওই সময়ের যুগ্ম সচিব এ কে এম রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে। এরপর সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোল্লা জালাল উদ্দিনকে প্রধান করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অধিদপ্তর এসব কমিটির ওপর আস্থা না রেখে নিজেরাই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক মতিউর রহমান ছিলেন একটি কমিটির প্রধান।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি দায়ী করেছে একই মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনকে। অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো দুই সেট প্রতিবেদনে কোনো ধরনের ঘষামাজা ছিল না। মন্ত্রণালয়ে জসিম উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে ছিল। তিনি এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেননি বলে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে বলেছে।
অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অধিদপ্তরে কর্মরত ৩৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের দায়ী করা হয়। অধিদপ্তরের তদন্তে ৩৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের এসিআর ঘষামাজা-সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংবাদপত্রে প্রকাশে সহায়তার অভিযোগও আনা হয় এবং অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়বিরোধী সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে জড়িত থাকায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ করা হয়।
আন্তঃমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যাদের এসিআর ঘষামাজা করা হয়েছে, তাদের সম্ভাব্য সুফলভোগী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের ঘষামাজার জন্য দায়ী করা হয়েছে।
একই ঘটনায় তিন তদন্ত কমিটি তিন ধরনের ফলাফল খুঁজে পেয়েছে এবং তিনটি ভিন্ন গ্রুপকে ঘটনার জন্য দায়ী করেছে। অবিশ^াস্য এসব তদন্তের যে কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নীতিনির্ধারকদের পক্ষে যায়, সেটুকুই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের কমিটি জসিম উদ্দিনকে দায়ী করলেও শ্রম মন্ত্রণালয় তাকে তিরস্কারসূচক লঘুদণ্ড দিয়ে মন্ত্রণালয়ে বহাল রেখেছে।
অধিদপ্তরের তদন্তে ৩৩তম বিসিএসের পুরো ব্যাচকে দায়ী করা হয়। এ ব্যাচে ৮০ জন কর্মকর্তা থাকলেও ১৪ জনকে দায়ী করে বিভাগীয় মামলা করা হয়। যাদের শাস্তি দিতে পারলে অধিদপ্তরের নীতিনির্ধারকদের নয়ছয় করতে সুবিধা হয়, সেই ১৪ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে সাতজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বাকি সাতজন ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় বিভাগীয় মামলার কারণ দর্শানো নোটিসের জবাব দিতে আপত্তি জানান। তারা নিয়োগকারী হিসেবে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে ন্যায়বিচার চান। তাদের সবাইকে পাঁচ বছরের জন্য পদোন্নতি স্থগিত করা হয়। পরে আপিল করলে তাদের সাজা তিন বছর কমিয়ে দুই বছর বহাল রাখা হয়।
তিন তদন্ত কমিটির মধ্যে বাকি থাকল আন্তঃমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি। তিন কমিটির মধ্যে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই আন্তঃমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি ৩৩ ব্যাচের কর্মকর্তাদের অভিযুক্তই করেনি। এ কমিটি দায়ী করেছে পদোন্নতিপ্রত্যাশী ওই ৪৮ জন দ্বিতীয় শ্রেণির শ্রম পরিদর্শককে। এরা সম্ভাব্য সুবিধাভোগী। অর্থাৎ এসিআর ঘষামাজা করে পার পেলে তাদের পদোন্নতির দুয়ার খুলে যেত। কিন্তু এই গ্রুপটি অধিদপ্তরের নীতিনির্ধারকদের আস্থায় থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, হাইকোর্টে যখন মামলা চলে, তখন অন্য আদালতে একই বিষয়ে মামলা চলে না। তেমনি আন্তঃমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটির তদন্ত চলাকালে অধিদপ্তর কর্মীদের সাজা দিতে পারে না। এটা একটা ব্যত্যয় ঘটেছে। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে অধিদপ্তর, যাদের অভিযুক্ত করে বিভাগীয় মামলা করে শাস্তি দিচ্ছে, আন্তঃমন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি বলছে তারা দোষীই না।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্ভাব্য সুবিধাপ্রত্যাশী কর্মকর্তাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তদন্তকারী কর্মকর্তারা ৩৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের ওপর দায় চাপিয়েছেন। সাক্ষ্য দেওয়া কর্মকর্তারা পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন, তাদের বাধ্য করা হয়েছে সাক্ষ্য দিতে। শুরু থেকেই পুরো বিষয়টি জটিল করে তোলা হয়েছে। একেক তদন্ত কমিটির একেক ফাইন্ডিংস (ফলাফল) দেখে অন্ধের হাতি দেখার গল্প মনে পড়ছে। যাই হোক, কমিশন এবার অন্তত আসল ঘটনা বের করে নিয়ে আসবে বলে তারা আশা করতে পারেন। এসিআর ঘষামাজার ঘটনাটি দেশের প্রশাসনে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী একটা বিষয়। এর সুষ্ঠু তদন্ত দরকার।
এ অবস্থায় চার বছর পর দুর্নীতি দমন কমিশন এসিআর ঘষামাজার ইস্যুটি তদন্ত শুরু করেছে। ইতিমধ্যে কলকারখানা অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিয়ে এসেছেন। শিগগিরই ওই সময়ের এসিআর ঘষামাজা প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ডাকা হবে। এ ছাড়া তিন তদন্ত কমিটির সদস্যদের ডাকার প্রক্রিয়াও চলছে বলে জানা গেছে।
অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের বর্তমান যুগ্ম মহাপরিদর্শক মতিউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন এসিআর ঘষামাজার তদন্ত করছে কি না, তা জানতে হলে প্রশাসন শাখায় যোগাযোগ করতে হবে। তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে চলতি বছর মে মাসে। গত শুক্রবার ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে দেশটি। নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার ঘোষণার তিন দিন পার হলেও কারও নাম প্রকাশ হয়নি। তবে বিভিন্ন মহলে নানা দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের নামে আলোচনা এখন সর্বত্র।
কারা যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন বা পড়তে যাচ্ছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, যেহেতু নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে এর লক্ষ্য নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারাই। তারাই ভিসানীতির আওতায় পড়বেন, এটাই স্পষ্ট।
তারা আরও বলেন, ভিসানীতি প্রয়োগের কথা জানালেও যুক্তরাষ্ট্র কারও নাম প্রকাশ করেনি। তবুও বলা যেতে পারে, কাদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করবে পশ্চিমা এ প্রভাবশালী দেশটি।
এ ব্যক্তিরা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই একটা তালিকার বেশিরভাগ নামই চূড়ান্ত করে ফেলেছে। অল্পসংখ্যক বাকি থাকতে পারে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সেগুলোরও চূড়ান্ত করা হবে। যেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রতিষ্ঠান, দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা থাকতে পারেন।
বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে ধারণা পাওয়া গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির উদ্দেশ্যই যেহেতু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে, ফলে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন তারাই ভিসানীতির আওতায় আসবেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও থাকতে পারেন। থাকতে পারেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা, তারা যেকোনো দলের হতে পারেন। অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ীও থাকতে পারেন।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন,‘ভিসানীতির বিষয়টি আমেরিকা প্রশাসন পরিষ্কার করে ঘোষণা না করলেও বুঝিয়ে দিয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারেন, এমন যে কেউ এ ভিসানীতির আওতায় পড়তে পারেন। যেমন রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাহী প্রশাসন, জুডিশিয়ারি অর্থাৎ যারাই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থাকবেন, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যাহত করবেন তারাই এর আওতায় আসবেন।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের এর আওতায় পড়ার সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, নির্বাচন ব্যাহত করার ছোট্ট সুযোগ তাদের হাতেও থাকে, তারা যদি জড়িত হন, ভিসানীতির আওতায় পড়বেন।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ভিসানীতির চেয়েও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নেগোশিয়েশন জরুরি। কে ভিসানীতির আওতায় পড়ল, কে পড়ল না এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঐক্য।’ তিনি বলেন, ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়ায় কারা রয়েছেন সেটা আমেরিকা প্রশাসন ঘোষণা না করলেও বোঝা খুব জটিল কিছু নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘আমেরিকা যেহেতু ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে তাদের ভিসানীতি, ফলে পরিষ্কার হয়ে গেছে কারা পড়তে পারেন এর আওতায়। যারা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, নিশ্চয়ই তারাই এর আওতায়।’
বিভিন্ন পর্যায়ের ও পেশার নিয়োজিত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক নেতারা ভিসানীতিকে তেমন আমলে না নিলেও বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভেতরে আমেরিকার ভিসানীতি ভীষণ ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে এর নানা কারণ জানা গেছে। এর মধ্যে বিদেশে টাকা পাচার, ব্যবসাবাণিজ্য, পরিবারের সদস্যদের বিদেশে থাকা এসব কারণে বেশি ভীতিতে ফেলেছে তাদের। আবার একটা অংশ বিদেশে কিছু না থাকলেও ভিসানীতির আওতায় পড়লে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার ভয় পাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করায় যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারেন এমন দুুশ্চিন্তা যেমন কারও কারও মনে ভর করেছে, তেমনি ভিসানীতিতে পড়ার সুযোগ নেই তারাও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। কারণ এই শ্রেণির লোকজন মনে করছেন, কখনো যদি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান, তখন যদি ভিসা না হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন এমন নামের তালিকাও চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। আরও অগ্রসর হয়ে কোনো কোনো মহল লম্বা তালিকা হাতে নিয়ে ঘুরছে। তবে এসব নামের তালিকার উৎস বা সূত্র নিশ্চিত নয় বলে কেউ কেউ বিষয়টি গুজব মনে করছেন। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের বাইরে প্রায় সবাই ভিসানীতি আতঙ্কে ভুগছেন।
একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভিসানীতিকে জয়-পরাজয় হিসেবে প্রচার করে এলেও ভেতরে ভীতি সবারই রয়েছে। কারণ পশ্চিমা দেশে তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন। ফলে রাজনীতির বাইরেও ব্যক্তিজীবনের প্রয়োজনে ভিসানীতি তাদের ওপর যদি প্রভাব ফেলে, সে আশঙ্কা তো আছেই।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিষয়ে আমি কথা বলি না। আমি একটাই কথা বলব, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ সে কাজই করছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ভিসানীতি আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিষয়ে বলতে হলে আরও অনেক বিষয় রয়েছে। এ ভিসানীতি কারা লক্ষ্যবস্তু জানতে চাইলে ইনু বলেন, ‘এটি নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমাদের। তারাই বলতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারও পরামর্শে সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান অদলবদল করবে না, পরিবর্তনও আনবে না।’
আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সংস্থাটি বলছে, আজ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া বর্ধিত পাঁচ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সকাল ৯টা থেকে আজ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত) দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সৈয়দপুরে ২৫৯ মিলিমিটার। এ ছাড়া দেশের উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাতের মধ্যে দিনাজপুরে ১৯১, রংপুর ১৩৮, ডিমলায় ৯৯, তেঁতুলিয়ায় ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সীতাকুণ্ডে ৩৫.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়া ও রাজারহাটে ২৩.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে আজ রাজধানীর উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীতে দুটি শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে যাত্রাবাড়ী মোড়সংলগ্ন শহীদ ফারুক সড়কে শান্তি সমাবেশ শুরু হবে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল এমপির সভাপতিত্বে সমাবেশে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
বিকেল ৩টায় উত্তরা আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের সামনে শুরু হবে আরেকটি শান্তি সমাবেশ। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এ সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।
এতে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সঞ্চালনা করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।
রাজধানীর মুগদায় পৃথক ঘটনায় মিথিলা আক্তার মেঘলা (১৭) নামে এক কিশোরীসহ দুজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য আজ সোমবার সকালে মরদেহ দুটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
জানা গেছে সবুজবাগের বেগুনবাড়ি দক্ষিণগাঁও এলাকার আক্কাস আলী ও সুমি বেগম দম্পতির মেয়ে মিথিলা। তার মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে মুগদা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আঙ্গুরা আক্তার সীমা উল্লেখ করেন, রোববার দিবাগত রাত সাড়ে দশটার দিকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মিথিলা লাশ উদ্ধার করেন তিনি। মিথিলার শরীরে কোথাও কোন রকমের চিহ্ন না থাকলেও তার গলায় অর্ধচন্দ্রাকৃতির কালো দাগ রয়েছে
তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ৪-৫ মাস আগে প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে করেন মিথিলা। তবে বিয়ের বিষয়টি তাদের দুই পরিবারেই কেউই মেনে নিচ্ছিল না। এ নিয়ে পারিবারিক মনোমালিন্য চলছিল। সেই অভিমানে মিথিলা গতকাল রোববার বাথরুমে গলায় ফাঁস দেন। বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
এদিকে উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাহিদ হাসান জানান, গতকাল রোববার সাড়ে দশটার দিকে একই হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাতনামা (৩৪) এক ব্যক্তির মরদেহ। তিনি ভবঘুরে প্রকৃতির। গত ২১ তারিখ রাতে এক পথচারী তাকে উদ্ধার করে মুগদা মেডিকেলে ভর্তি করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। তার পরিচয় সনাক্তের চেষ্টা চলছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’