
ডেঙ্গুতে আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর দিনে দেশে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে গেছে বলে মনে করছে সরকার। এমন অবস্থায় রোগটি নিয়ন্ত্রণে ‘জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা’ জারি করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবছেন সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, এখনো জরুরি অবস্থা ঘোষণার মতো পরিস্থিতি হয়নি। বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জানানো হয়েছে। বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। করোনার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে তখন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা যেতে পারে।
গতকাল রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ডেঙ্গুর জরুরি স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঘোষণার বিষয়টি আলোচনায় আসে। তবে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় সরকার প্রণীত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা মানা হলে এবং রোগীরা আগেভাগেই চিকিৎসা নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলেও জানান কর্মকর্তারা। এ সময় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা এমনও বলেছেন, ডেঙ্গুর ম্যানেজমেন্টের একটা স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল আছে। এই প্রটোকল অনুসরণ করলে ডেঙ্গুতে ক্যাজুয়ালিটি কমানো সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, এখনো পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি ঘোষণার মতো অবস্থা হয়নি। যখন কোনো কিছু করার থাকে না, তখন এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিন্তু ২০০০ সাল থেকে আমাদের দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ হচ্ছে এবং নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার জন্য একটা স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল আছে। ডেঙ্গুতে এখন যেটা সমস্যা, রোগী দেরিতে হাসপাতালে আসছে। তখন রোগী শকড (শক সিনড্রোম) পর্যায়ে চলে যায়। তখন রোগী ম্যানেজ করাটা কষ্ট হয়ে যায়। এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তারপরও জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা ঘোষণার বিষয়টি অ্যানালাইসিস করে দেখব।
সচিব আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি রোগীদের শকড পরিস্থিতি পরিবার পর্যায় পর্যন্ত যেন না যায়। এবার এমন হচ্ছে, জ¦র হলে ট্রিটমেন্টের পর ছেড়ে যায়। কিন্তু পরে প্লাটিলেট দ্রুত কমতে থাকে। তাই জ¦র আসার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু টেস্ট করা উচিত। যদি ডেঙ্গু না হয় তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আর যদি ডেঙ্গু পজিটিভ হয়, তাহলে জ¦র ছেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর একটা ম্যানেজমেন্টের প্রয়োজন হয়। সেই ম্যানেজমেন্ট হাসপাতালেও করা যায়, বাসায়ও করা যায়। এটা করলে ক্যাজুয়ালিটি অনেক কমে আসবে।
একইভাবে ডেঙ্গুর পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি ঘোষণা করার মতো অবস্থা এখনো আসেনি বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, করোনার সময় এমনটা করা হয়েছিল। এবারও যদি সে পরিস্থিতি হয়, নিশ্চয় সেটা করা হবে। এটা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা হতে হবে। আমরা আমাদের কনসার্নটা পলিসি লেভেলে জানিয়েছি। এ ব্যাপারে কথা বলে কী সিদ্ধান্ত হয়, সেটা জানানো হবে।
গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে নতুন করে আরও ১ হাজার ৪২৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ও এ সময় মারা গেছে আরও ৬ জন। ভর্তি ও মৃত্যুর সংখ্যা গতকালের চেয়ে কম। গত শনিবার ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল এ বছরের সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬২৩ ও মৃত্যুর ছিল সর্বোচ্চ ৭ জন। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত এ বছর মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ২০ হাজার ৮৭৮ ও মৃত্যু ১০৬ জন।
রাজধানীতে স্কুলছাত্রের মৃত্যু : ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীতে ইশাত আজহার নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোরে রাজধানীর ইউনিভার্সাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।
ইশাত রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল।
প্রকোপ কমানো যাচ্ছে না : ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো যাচ্ছে না বলে জানান স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপটা কমানো যাচ্ছে না, আমরা এর ঊর্ধ্বগতিই দেখছি। ডেঙ্গুতে সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ আসছে। কারণ এখন ডেঙ্গুর ধরন বদলে যাচ্ছে। ধরন বুঝতে গবেষণা বাড়াতে বলা হয়েছে। এখনই কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। কোন ধরনের ওষুধ কোন মাত্রায় মশা নিধনে কার্যকর তা দেখতে বলেছি। নতুন কিছু থাকলে তা নিয়ে আসতে হবে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, এ বছর ডেঙ্গু রোগী যে অনেক বাড়বে, সেটা আগেই ধারণা করেছিলেন তারা। সেজন্য সিটি করপোরেশনগুলোকে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল।
মুগদার রোগী অন্য কোথাও যেতে চায় না : সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি আছে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তারপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মুগদা হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ৫০০, কিন্তু ডেঙ্গুসহ রোগী ভর্তি আছে ৬০০। এতেই বোঝা যায় শয্যার অতিরিক্ত রোগীরা কীভাবে আছে। মুগদায় নার্স বাড়ানো হচ্ছে, আরও বাড়ানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। যথাসাধ্য চেষ্টা করছি চিকিৎসা দিতে।
কিন্তু মুগদার রোগীরা অন্য হাসপাতালে যেতে চায় না বলে জানান এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, মুগদা হাসপাতালের আশপাশের এলাকাগুলোতে, যেমনÑ শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, সবুজবাগ, কদমতলী, বাসাবো, মুগদা থেকে শুরু করে রামপুরা পর্যন্ত পুরো এসব এলাকায় রোগীর সংখ্যা বেশি। তারা মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আমরা চেষ্টা করেছিলাম সেখান থেকে রোগী অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু রোগীরা রাজি হয়নি। তারা তাদের বাড়ির এলাকার মধ্যে থাকতে চায়।
রোগী বাড়লে সংকট হবে : ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় এখনো কোনো সংকট তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, উদ্বেগজনকভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। অন্যান্য হাসপাতালের খালি শয্যা ধীরে ধীরে ভরে যাচ্ছে। আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি, দেব, কিন্তু যদি রোগীর সংখ্যা বাড়তেই থাকে, তাহলে সংকটে পড়ব। এখনো পর্যন্ত আমাদের কোনো সংকট নেই।
এ কর্মকর্তা বলেন, গত বছর অক্টোবরে ডেঙ্গু প্রকোপের ‘পিক’ সময় ছিল। এ বছর কী হবে তা আমরা এখনো ধারণা করতে পারছি না। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার এটি প্রলম্বিত হতে পারে। যেহেতু বর্ষা দেরি করে এসেছে, এটি যাবেও দেরিতে।
বেসরকারি হাসপাতালের প্রতি সতর্কতা : অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগী ভর্তির তথ্য দিচ্ছে না। যারা ডেঙ্গু রোগী ভর্তির তথ্য গোপন করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসায় অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ডেঙ্গু আতঙ্কে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক : ডেঙ্গুতে স্কুলের শিক্ষার্থীদের আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এতে অনেক অভিভাবক সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করেছেন। স্কুলে কমে আসছে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি। ডেঙ্গু রোধে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। সেখানে বলা হয়েছে খেলার মাঠ ও ভবনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মাঠ কিংবা ভবনে জমে থাকা পানি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য যেসব ফুলের টব রাখা হয়েছে, সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। এডিস মশার প্রজননস্থলে যাতে পানি জমতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ এবং শিক্ষক কর্র্তৃক ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়গুলো প্রতিমুহূর্তে শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে।
এ ব্যাপারে রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাউশি অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা নিয়মিতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করছি। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়কে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। অনেকটা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শিক্ষার্থীরাও স্কুলে আসছে। তবে যদি কেউ অসুস্থ থাকে সেটা ভিন্ন কথা।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৫ বার্তা : দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ মোকাবিলায় টেলিভিশন, রেডিওসহ ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জনস্বার্থে সচেতনতামূলক বার্তা নিয়মিতভাবে পরিবেশনের অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এজন্য পাঁচটি বার্তা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। গতকাল মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানানো হয়।
এসব বার্তায় বলা হয়েছে ১. জ্বরের শুরুতে অবশ্যই নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করুন। ২. বাসার ভেতরে ও চারপাশে, নির্মাণাধীন ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ভবনের বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি অপসারণ করুন এবং পরিষ্কার রাখুন। ৩. দিনে অথবা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন। ৪. ডেঙ্গুজ¦র কমে গেলে অবহেলা না করে অবশ্যই পরবর্তী জটিলতা এড়াতে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ৫. মনে রাখবেন, এ বিষয়ে অবহেলা আপনার ও আপনার পরিবারের জীবন সংশয়ের কারণ হতে পারে।
সব হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নার : ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে গত ১০ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও ৯ জুলাই স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দুটি সভা হয়। এসব সভায় সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো গণবিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাতে বলা হয়েছে, সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু টেস্ট ১০০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া ও ডেঙ্গু কর্নার চালু করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে স্বাস্থ্যসেবা পেতে ১৬২৬৩ হটলাইন সেবা চালু রয়েছে। এ ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে অধিদপ্তর প্রচারণা চালাচ্ছে বলেও জানানো হয়।
আবারও ম্যাচ গড়াল শেষ ওভারে। এবারে জয়ের লক্ষ্য ৪ রান, বল হাতে করিম জানাতের জায়গায় অভিষিক্ত ওয়াফাদার মোহাম্মদ। আগের ম্যাচের মতো নাটকীয় কোনো কিছু হওয়ার সুযোগই দিলেন না শামীম হোসেন পাটওয়ারী। শর্ট বলটা পুল করে মিডউইকেট এলাকা দিয়ে সীমানা ছাড়া করে নিশ্চিত করলেন বাংলাদেশের ৬ উইকেটে জয়। সেই সঙ্গে চলতি বছরে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়; ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডের পর হার মানল আফগানিস্তানও।
একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচের স্থায়িত্বইবা কতটুকু? তিন ঘণ্টার খানিকটা বেশি। কাল বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ১ ঘণ্টা ৩৮ মিনিটই গেছে বৃষ্টির পেটে। মিনিট চল্লিশ হয়েছে বৃষ্টি, বাকিটা মাঠ প্রস্তুতিতে। দুই দফা পর্যবেক্ষণের পর আম্পায়াররা খেলা কমিয়েছেন মোট ৬ ওভার, ১৭ ওভার প্রতি ইনিংস। টসে হেরে আগে ব্যাট করে আফগানদের সংগ্রহ ১৭ ওভারে ৭ উইকেটে ১১৬ রান। বাংলাদেশের সামনে বৃষ্টি আইনে ১৭ ওভারে জয়ের লক্ষ্য ১১৯ রান। দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের ৬৭ রানের জুটির কল্যাণে স্বস্তিতে থাকা বাংলাদেশের জন্য বিপদ হয়ে আসে মাঝের ওভারগুলোতে নিয়মিত উইকেট পতন। তবে সাকিব আল হাসান উইকেটে ছিলেন শেষ পর্যন্ত আর শামীমের ব্যাটে নিশ্চিত হয় শেষ ওভারে আর কোনো নাটকীয়তা নয়।
গতকাল রবিবার সাকিব আবারও টস জিতেছেন এবং বেছে নিয়েছেন বোলিং। আগের ম্যাচে চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করা শরিফুল ইসলামকে বসিয়ে হাসান মাহমুদকে সুযোগ দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট, রনি তালুকদারের পরিবর্তে একাদশে জায়গা হয়েছে আফিফ হোসেনের।
তাসকিনের আগুনে বোলিংয়ের সামনে শুরুতেই আফগানদের দুই ওপেনার নেই। ৩ ওভারে ১৬ রানে ২ উইকেট হারানো আফগানিস্তান পাওয়ার প্লেতে নিতে পেরেছে মাত্র ৩৪ রান। ম্যাচের অষ্টম ওভারেই নামে বৃষ্টি, প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পর খেলা যখন শুরু হয়, ততক্ষণে কন্ডিশন অনেকটাই বদলে গেছে। ভেজা মাঠে রানিং বিটুইন দ্য উইকেট, ফিল্ডিং, ভেজা বলে বোলারদের বল গ্রিপ করার অসুবিধাসহ অনেক কিছুরই মুখোমুখি হতে হয়েছে দুপক্ষকে।
খেলা শুরুর পর মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আঘাত হানেন, আউট করেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবিকে। একাদশ ওভারে জোড়া শিকার সাকিবের। প্রথম বলে আউট ইব্রাহিম জাদরান, শেষ বলে নজিবুল্লাহ জাদরান। নজিবুল্লাহ বোল্ড হওয়ার পরও রিভিউ নেন। এ জোড়া আঘাতেই বড় সংগ্রহের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় আফগানদের। আগের ম্যাচের মতো ভয়ংকর রূপ নিতে যাচ্ছিলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই, মোস্তাফিজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শামীমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। শেষ ওভারে এসে তাসকিন ফিরিয়ে দেন করিম জানাতকে। ১৭ ওভারে ৭ উইকেটে ১১৭ রান করে আফগানিস্তান, ৩ শিকার তাসকিনের আর ২টি করে উইকেট নেন মোস্তাফিজ ও সাকিব।
ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের সামনে জয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ১১৯ রান। উদ্বোধনী জুটিতে চমক, লিটন দাসের সঙ্গে আফিফ হোসেন। পাওয়ার প্লের ৫ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ বিনা উইকেটে ৫০। আফগানিস্তানের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ছিল ৪৭, করেছিলেন এনামুল হক ও তামিম ইকবাল, সেই ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এতদিন ধরে অক্ষত থাকা সেই রেকর্ড ভাঙল অনিয়মিত ওপেনার আফিফের সঙ্গে লিটনের যুগলবন্দিতে। তবে ইনিংসটা বড় করার সুযোগ হাতছাড়া করেছেন দুজনই। ৩৬ বলে ৩৫ রান করা লিটন মুজিব-উর-রহমানের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে রশিদ খানের দারুণ ক্যাচের শিকার। এক বল পর আফিফও মুজিবের বলে সøগ সুইপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন করিম জানাতের হাতে। জোড়া ধাক্কায় কিছুটা ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। পরের ওভারে নাজমুল হোসেন শান্তও বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিলে ম্যাচের পাল্লা কিছুটা ঝুঁকে পড়ে আফগানদের দিকে। তবে হালফিলে ভরসা হয়ে ওঠা তাওহীদ হৃদয়ের ১৭ বলে ১৯ রানের ইনিংসটা বিপদ বাড়তে দেয়নি। হৃদয় আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে ফ্লিক করে যে ছক্কাটা মেরেছেন, তাতেই হৃদয় ভেঙে গেছে আফগানদের। কারণ রান ও বলের ব্যবধানের চাপটা তাতেই যে গেছে সরে।
বাকি কাজটা সাকিব আর শামীম মিলেই করেছেন। সাকিবের ১১ বলে অপরাজিত ১৮ আর শামীমের ৭ বলে ৭ রানের ইনিংসেই ৫ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের জয় বাংলাদেশের। তাতেই ২-০ ব্যবধানে নিশ্চিত হলো সিরিজ, প্রথমবার টি-টোয়েন্টিতে হারানো গেল আফগানিস্তানকে।
জাতীয় নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। তাছাড়া প্রশাসনেও চলছে উত্তাপ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) নানা উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন করে তদন্তের দিকে এগোচ্ছে সংস্থাটি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অন্তত দেড়শ নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আসা অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। শিগগিরই নেতাদের নামে নোটিস পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দুদকের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
এদিকে ক্যাসিনোকা-ে জড়িতদের বিষয়ে দুদকে আসা অভিযোগগুলোও নতুন করে আমলে নিচ্ছে দুদক। তারাও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইতিমধ্যে একটি তালিকার কাজও গুছিয়ে এনেছে। আবার কোনো কোনো নেতা নিজেদের নামে নোটিস এড়াতে প্রভাবশালী মহলে তদবিরও করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ সম্প্রতি দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্সনীতি গ্রহণ করেছি। বড় বড় দুর্নীতিবাজকে ধরা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে কালো টাকার অভিযোগ আছে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। সামনের জাতীয় নির্বাচনে কোনো দুর্নীতিবাজ মনোনয়ন পাক, তা আমরা প্রত্যাশা করি না। কোনো সংসদ সদস্য বা অন্য কাউকে দুদক হয়রানি করে না। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তা অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই দুর্নীতি দমন কমিশনে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাদের নামে অভিযোগ আসছে। কোনো অভিযোগ আমলে নেওয়া হচ্ছে, আবার কোনো অভিযোগ আমলে নেওয়া হচ্ছে না। নেতাদের মধ্যে কেউ সংসদ সদস্য, আবার কেউ সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও জেলা ও উপজেলার নেতা রয়েছেন। যাদের নোটিস দেওয়া হবে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, আয়কর রিটার্নের কপি, বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা হিসাব বিবরণী, অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের ক্রয়-বিক্রয়ের দলিল এবং তাদের ওপর নির্ভরশীলদের চাকরি বা ব্যবসা অথবা অন্য উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়ের বিবরণীসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ড তদন্ত করবে বলে জানা গেছে।
তাছাড়া শাসক দলের যেসব নেতার নাম এসেছে, তাদের আর্থিক অবস্থা কী রকম ছিল তাও খতিয়ে দেখবে সংস্থাটি। পাশাপাশি কারা কারা দেশের বাইরে অর্থ পাচার করা ছাড়াও কোন কোন দেশে বাড়ি আছে তাও অনুসন্ধান চালানো হবে। সরকারবিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে আসা আগের মামলাগুলো সামনে আনা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করে দুদকের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে কাউকে দুদকে তলব করা হচ্ছে তা ঠিক নয়। যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদেরই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। সব পেশার লোকদের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ আসছে। বর্তমান ও সাবেক এমপিদের কেউ কেউ সরাসরি যোগাযোগ করছেন আমাদের সঙ্গে। দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও দেখা করার চেষ্টা করছেন কেউ। আবার প্রভাবশালী রাজনীতিকদের মাধ্যমেও চাপ দেওয়া হচ্ছে। রাজনীতির বাইরে থাকা লোকজনদের দিয়েও তদবির চলছে।
ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন, অন্তত দেড়শ রাজনৈতিক নেতার ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। তাদের বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে দুদকে। অভিযোগগুলো তদন্ত করে তাদের নোটিস দেওয়া হবে। তারপরও আমরা অনুসন্ধানে যাব। তাছাড়া ক্যাসিনোকান্ডে যারা জড়িত ছিল, তাদের বিষয়েও আমরা নতুন করে তদন্ত করব। যারাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিষয়ে পিছু হটবে না দুদক। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ঘুষ, সরকারি সম্পত্তি দখল, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা বিষয়ে অনেকের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ আসছে। বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে টিআর, কাবিখা কর্মসূচি বাস্তবায়নে দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। আবার কারোর বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ব্যবসা ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে। অনুসন্ধান করে অভিযোগ প্রমাণ না হলে ছাড় দেওয়া হবে।
দুদক সূত্র জানায়, যাদের বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান চালাবে তারা হচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ, মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান মিয়া, ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা আফসার উদ্দিন মাস্টার, বনানী গোল্ডেন ক্লাবের আবদুল আওয়াল ও আবুল কাশেম, জামাল হোসেন, সাংসদ জাফর আলমের নাম আছে। তাছাড়া কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাজি রবিউল ইসলাম ও আতাউর রহমান আতার বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, নিয়োগবাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে এবং পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পদ অর্জন করেছেন বলে দুদকে অভিযোগ এসেছে। পিরোজপুরের সাবেক সাংসদ এমএ আউয়াল, ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী, নরসিংদী-২ আসনের সাবেক স্বতন্ত্র সাংসদ কামরুল আশরাফ খান পোটন, ময়মনসিংহ-৯ আসনের সাংসদ আনোয়ারুল আবেদীন খান, চাঁদপুর-৪ আসনের সাবেক সাংসদ শামসুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধেও নতুন করে অনুসন্ধান হওয়ার কথা রয়েছে।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য বরকত উল্লা বুলু, সালাউদ্দিন আহমেদ, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এম মোর্শেদ খান, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, তাবিথ আউয়াল, লালমনিরহাট-৩ আসনের সাবেক সাংসদ আসাদুল হাবিব দুলু, সাবেক সাংসদ রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নোয়াখালী-৪ আসনের মো. শাহজাহান, বগুড়া-৩ আসনের সাবেক সাংসদ আবদুল মোমিন তালুকদার ও ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সাংসদ শহিদুজ্জামান বেল্টু, মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের শীর্ষ নেতা মাহী বি. চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আলোচিত সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি (বহিষ্কৃত) ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, যুবলীগ নেতা জি কে শামীম, আরেক যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ অন্তত ৭০ জন নেতার নাম রয়েছে তালিকায়।
২০১৯ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানোর পর ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী এবং বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্যাসিনো কারবারে জড়িত অন্তত ৪০ জনের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হলেও রহস্যজনক কারণে তা সামনে এগোতে পারেনি। এমনকি কয়েকজনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছে। তবে যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সম্রাট, খালেদ আহমেদ ভূঁইয়া, জি কে শামীমসহ শীর্ষ ২৪ জনের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা করে সংস্থাটি। তার মধ্যে ১২ মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়। তাদের ৫৮২ কোটি টাকার সম্পদও জব্দ করে দুদক।
সাবেক কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ, তারেকুজ্জামান রাজীব, এনামুল হক আরমান, সেলিম প্রধান, জাকির হোসেন, কাজী আনিছুর রহমান ও সুমি রহমান, শফিকুল আলম ফিরোজ, লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, পাগলা মিজানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে আবারও নতুন করে তদন্ত শুরু করার কথা রয়েছে। জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ সম্পত্তির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগে বলা হয়, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে জাতীয় পার্টির চারজন মহিলা সংসদ সদস্যর মনোনয়ন কার্যক্রমে ১৮ কোটি ১০ লাখ টাকা উৎকোচ নেন জিএম কাদের। উৎকোচের বিনিময়ে ওই চার নারীকে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তাছাড়া জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব এবং পটুয়াখালী-১ আসনের সাবেক এমপি এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করবে দুদক।
অভিযোগের বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য বরকত উল্লা বুলু গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করার জন্য সরকার আমাদের হয়রানি করছে। কয়েক দিন পরপর দুদক থেকে চিঠি আসে। ভুয়া সাক্ষী তৈরি করে আমাকেসহ অন্য নেতাদের শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি ও নেতারা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। তাহলেই আমরা মনে করব দুদক স্বতন্ত্রভাবে কাজ করছে।’
ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, নরসিংদী-২ আসনের সাবেক স্বতন্ত্র সাংসদ কামরুল আশরাফ খান পোটনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। দুজনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান মিয়ার মোবাইলে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
চাপে চ্যাপ্টা দশা দেশের আবাসন খাতের। এ খাতে বড় আঘাত ঢাকার ভবনের উচ্চতা অস্বাভাবিক মাত্রায় কমানো। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নির্মাণসামগ্রীর দাম। নির্মাণ-ব্যয় প্রায় দি¦গুণ হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার জমি, বাড়ি, স্থাপনা, ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেস হস্তান্তরে উৎসে কর প্রায় ২৪ গুণ বেড়েছে।
সবার জন্য আবাসন রাজনৈতিক অঙ্গীকার হলেও এ ক্ষেত্রে তা মনে রাখছে না সরকার। এ খাতের সংকট নিরসনে সরকার উদ্যোগ না নিলে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের নিজস্ব আবাসন নাগালের বাইরে চলে যাবে; বাড়বে বাড়ি ভাড়া। বিনিয়োগকারীরা এ খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে; উচ্চবিত্ত মানুষের প্লট-ফ্ল্যাটের চাহিদা থাকলেও মিলবে না। এতে টাকা পাচার বাড়বে, কমবে রাজস্ব। আবাসন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২১১ শ্রেণির লিংকেজ শিল্পের ১০ থেকে ১৫ হাজার প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়তে পারে। দরিদ্র মানুষরা ঢাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হবে। আবাসন খাতে চরম অস্থিরতা দেখা দেবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
জমি, বাড়ি, স্থাপনা, ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্লোর স্পেস হস্তান্তরের কর আগে ছিল ৪ শতাংশ; সেটা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮ শতাংশ। এলাকাভেদে জমির কাঠাপ্রতি ২০ লাখ, ১২ লাখ, ৮ লাখ, ৬ লাখ ও ৩ লাখ টাকা কর নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে যেটার পরিমাণ বেশি সেটা সরকারকে দিতে হবে। করের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৪ গুণ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সিমেন্ট তৈরির প্রধান কাঁচামাল ক্লিঙ্কারের আমদানি শুল্ক ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা করা হয়েছে। আর বাণিজ্যিক পর্যায়ে ক্লিঙ্কারের আমদানি শুল্ক ৭৫০ থেকে বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা করা হয়েছে। আবাসন খাতের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণগুলোর দাম গত চার বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ২০২০ সালে রডের টনপ্রতি দাম ছিল ৬৪ হাজার ৪০০, ২০২১ সালে বেড়ে হয় ৭০ হাজার, ২০২২ সালে দাম ছিল ৯০ হাজার, এখন রডের টনপ্রতি দাম ১ লাখ টাকার বেশি। ২০২০ সালে এক ব্যাগ সিমেন্টের দাম ছিল ৩৭৫ থেকে ৪০৫, ২০২১ সালে হয় ৩৯০ থেকে ৪২৫, ২০২২ সালে ৪৭৫ থেকে ৫৬০ এবং বর্তমানে ৫০০ থেকে ৫৬০ টাকা। ২০২০ সালে প্রতিটি ইটের দাম ছিল ৬ থেকে ৮ টাকা, ২০২১ সালে দাম হয় ৯ থেকে ১০, ২০২২ সালে ১০ থেকে ১২ এবং বর্তমানে ১৩ থেকে ১৫ টাকা। ২০২০ সালে ভবনের প্রতি বর্গফুট নির্মাণে শ্রমিক খরচ ছিল ১৪০, ২০২১ সালে হয় ১৬০, ২০২২ সালে ২২০ এবং বর্তমানে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। একইভাবে দাম বেড়েছে লাল বালু, সাদা বালু, থাই অ্যালুমিনিয়াম, গ্রিল, রেলিং, ইলেট্রিক্যাল-ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও স্টেশনারির দাম।
ঢাকার জন্য প্রণীত প্রথম মাস্টারপ্ল্যানের মেয়াদ শেষে ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট তার সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করে সরকার। এ প্ল্যানে দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতা বিবেচনা না করেই অস্বাভাবিকভাবে ভবনের উচ্চতা কমিয়ে দেওয়া হয়। যেসব এলাকায় আগে ১০ তলা, ১২ তলা বা তার চেয়ে বেশি তলাবিশিষ্ট ভবন করা যেত, এখন সেখানে চার থেকে পাঁচতলার বেশি উঁচুু ভবন নির্মাণ করা যায় না। নতুন মাস্টারপ্ল্যান গেজেট আকারে প্রকাশের পর নতুন ভবনের নির্মাণ অনুমোদন করছেন না আবাসন ব্যবসায়ীরা। পুরাতন নিয়মে নেওয়া অনুমোদনে নির্মাণকাজ চলছে। অংশীজনদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ জানুয়ারি ঢাকার নতুন মাস্টারপ্ল্যান বা ড্যাপের রিভিউ সংক্রান্ত ১১ সদস্যের কারিগরি কমিটি হয়েছে। রাজউক ড্যাপ সংশোধনে গড়িমসি করছে।
এ প্রক্রিয়া জোরদার করতে গত ২৮ মার্চ গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের কাছে চিঠি দিয়েছেন আবাসন ও হাউজিং ব্যবসায়ীরা। প্রতিমন্ত্রী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যান সংশোধন করে ভবনের উচ্চতা বাড়ানোর অঙ্গীকার করলেও তিন মাসের বেশি সময় পরও তা সংশোধন করা হয়নি। ঢাকার খিলক্ষেত, কুড়িল, নিকুঞ্জ এলাকায় ছয়তলা, উত্তরায় সাত-আটতলা, গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকায় ছয়-আটতলা, নিকেতনে চার-পাঁচতলা, মিরপুর এলাকায় চার-সাততলা, মোহাম্মদপুর-লালমাটিয়া এলাকায় পাঁচ-আটতলা, পুরান ঢাকায় চার থেকে পাঁচতলার বেশি ভবন নির্মাণ করা যাবে না। ঢাকার বাড্ডা ও আশপাশ এলাকায় দুই থেকে তিনতলা ভবন নির্মাণ করা যাবে।
এ প্রসঙ্গে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রেসিডেন্ট আলমগীর সামসুল আলামিন (কাজল) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংকটে বিপর্যস্ত দেশের আবাসন খাত। রাজউক মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে ভবনের উচ্চতা কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে আবাসন খাতের প্রকল্প কমে গেছে; নতুন নিয়মে কোনো প্রকল্পই নিচ্ছেন না ডেভেলপাররা। কারণ বিদ্যমান উচ্চতায় প্রকল্প নিয়ে তেমন লাভ করা যাবে না। প্রকল্প করলে ভবন মালিক ও ব্যবসায়ী দুপক্ষেরই ক্ষতি।’
তিনি বলেন, ‘নতুন বছরের বাজেটে জমি, ভবন ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের কর বাড়ানো হয়েছে। এটা সংশোধন করা না হলে প্লট ও ফ্ল্যাট মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে; অনেকে বেকার হয়ে পড়বে। সরকারের উচিত সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।’
এ বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের আবাসন খাতসংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আবাসন খাত তিন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এক. নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি; দুই. ড্যাপের বিধিনিষেধে ভবনের উচ্চতা কমে যাওয়া এবং তিন. চলতি বছরের বাজেটে প্লট-ফ্ল্যাটের হস্তান্তর কর বাড়ানো। এসবের প্রভাবে আবাসন খাত বিপর্যস্ত। এর প্রভাব অর্থনীতিতেও পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় চার বছর আগে প্লট-ফ্ল্যাটের হস্তান্তর কর কমাতে এনবিআর একটি কমিটি করেছিল। ওই কমিটির সদস্য ছিল রিহ্যাব, এফবিসিসিআই, পূর্ত মন্ত্রণালয় ও এনবিআর। কিন্তু সরকার সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে হঠাৎ হস্তান্তর কর চারগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে; যার সামগ্রিক প্রভাব প্রায় ২৪ গুণ।’
জাতীয় পার্টির (জেপি) কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম বাহাদুরকে (৫২) হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত শনিবার রাতে তার নিথর দেহ একটি প্রাইভেট কারে করে শ্যামলীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের সড়কে ফেলে রেখে যায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার দুই পায়ে রক্তাক্ত জখম, হাত ভাঙা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
হাসপাতালের পক্ষ থেকে সালামের পরিবারকে মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হয়। স্বজনদের দাবি, সালামকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে কারও সঙ্গে বিরোধ ছিল কি না, তা জানাতে পারেনি তারা। এ ঘটনায় সালামের ভাই আবদুল করিম খলিফা বাদী হয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শেরেবাংলা নগর থানায় অচেনা কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। গতকাল রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ হত্যার কারণ জানতে পারেনি। কাউকে গ্রেপ্তারও করতে পারেনি।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সালামের বাড়ি পিরোজপুরের ইন্দুরকানি থানার নলবুনিয়া গ্রামে। রাজধানীর ধানম-ির ২৭ নম্বর সড়কের এপি-হাউজ ৩৫/এ’র একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন তিনি। পেশায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঠিকাদার ছিলেন। রাজধানীর মণিপুরিপাড়ায় এ আর ইলাসটিক নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার। জহিরউদ্দিন আলমগীর নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে যৌথভাবে দীর্ঘদিন গার্মেন্ট একসেসরিজ আমদানির ব্যবসা করতেন সালাম। তিনি জেপির কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক ছিলেন। এরশাদের শাসনামালে জগন্নাথ কলেজের ছাত্রনেতা ছিলেন তিনি। জাতীয় পার্টি ভেঙে জেপি হওয়ার পর তিনি কিছুদিন দলের যুব সংগঠন যুব সংহতিতে ছিলেন। পরে মূল পার্টিতে যোগ দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের সড়কে একটি প্রাইভেট কার থেকে সালামের রক্তাক্ত দেহ ফেলে রেখে যায় অচেনা দুই ব্যক্তি। পরে গাড়িটি নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। ওই এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে গাড়িটি শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
শেরেবাংলা নগর থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, সুরতহাল শেষে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাকে হত্যা করা হয়েছে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, লাশের পায়ে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, দুপুর ১টার দিকে সালাম ধানমণ্ডির বাসা থেকে বের হন। এরপর থেকে আর যোগাযোগ করা যায়নি তার সঙ্গে।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক বলেন, ‘আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পেয়েছি। তদন্ত চলছে।’
গতকাল দুপুরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে দেখা গেছে সালামের স্বজনরা আহাজারি করছেন। সাত বছরের ছেলে নাবিল সাদ বাবার লাশের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
সালামের স্ত্রী জানান, শনিবার দুপুরে বাসা থেকে বের হওয়ার পর সন্ধ্যায় স্বামীকে ফোন করেন তিনি। এ সময় অন্যপ্রান্ত থেকে ফোন কেটে দেয়। পরে বন্ধ হয়ে যায় সালামের ফোনটি। গভীর রাতে হাসপাতাল থেকে ফোন করে মৃত্যুর বিষয়টি জানানো হয় তাকে।
শেরেবাংলা নগর থানায় করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত ১টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সালামের পরিবারকে মোবাইল ফোনে জানানো হয় তার মরদেহ মর্গে পড়ে আছে। পরে তাৎক্ষণিক মর্গে গিয়ে লাশ দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। হাসপাতালের কর্মচারীরা সালামের স্বজনদের জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটি প্রাইভেট কারে করে এনে অচেতন অবস্থায় তাকে জরুরি বিভাগের সামনের রাস্তার ওপর ফেলে রেখে দ্রুত চলে যায় দুই ব্যক্তি। তখন হাসপাতালের কর্মচারীরা দ্রুত তাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যান।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, শনিবার দুপুর সোয়া ১টা থেকে রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে কোনো একসময় সালামকে খুন করা হয়। পরে লাশ হাসপাতালে ফেলে রেখে যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার মান অনেক উন্নত হয়েছে। শিক্ষার মান আরও উন্নত করে আমরা বিশ্বমানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। এটা আমাদের লক্ষ্য এবং এটি অর্জনে আমাদের কাজ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শুধু সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।
গতকাল রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের অধ্যক্ষদের জাতীয় কাউন্সিল এবং বৃত্তি বিতরণ-২০২৩ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তার সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে নিরন্তর পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে যোগ্য করে তোলার জন্য তারা সব ধরনের সম্ভাব্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থাকে বহুমাত্রিক করতে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না। আমাদের শিশুরা মেধাবী হওয়ায় বৈশ্বিক শিক্ষার একই গতি বজায় রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, শিক্ষাকে বহুমাত্রিক করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, চারটি বিভাগীয় সদরে চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যারোস্পেস এবং অ্যাভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আগে দেশ ও বিদেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে তারা তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে চান।
তিনি বলেন, যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম একধাপ এগিয়ে থাকতে পারে, সেজন্য ‘ন্যানো-টেকনোলজি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষালাভের সুযোগ তৈরি করতে আমরা ৩৯টি হাইটেক পার্ক, কম্পিউটার ইনকিউবেশন ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করেছি।’
শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীকে স্বাধীন বাংলাদেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষদের পক্ষে কুমিল্লার সেলিম সোনার বাংলা কলেজের আবু সালেক মোহাম্মদ সৌরভ এবং রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের জুবাইদা আয়েশা সিদ্দিকা বক্তব্য রাখেন। দুজন বৃত্তি গ্রহীতা তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শন করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, এই দিনে (২০০৭ সালের ১৬ জুলাই) জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথমে তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। তিনি বলেন, ‘জরুরি অবস্থার সময় এই দিনে আমাকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়।’ আমিন নামে একজন সামরিক কর্মকর্তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাকে জেলে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন যিনি তখনকার সবচেয়ে ক্ষমতাধর ছিলেন। তখন তিনি সেনাবাহিনীকে বলেছিলেনÑ তিনি মর্যাদা চান না, নির্বাচন চানÑ যার মাধ্যমে দেশবাসী তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। জেলে তার সঙ্গে দেখা করতে আসা সেনা সদস্যকে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার বাবা দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আমিও প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। আমার সম্পদ বা বাড়ি-গাড়ির কোনো লোভ নেই। আমি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাই। আমি আমার ভাগ্য গড়তে নয়, দেশবাসীর ভাগ্য গড়তেই দেশে ফিরে এসেছি।’
শেখ হাসিনা তখন আরও বলেছিলেন, তিনি শুধু নির্বাচন করতে চান, যা তাদের ২০০৮ সালে নির্বাচন দিতে বাধ্য করেছিল। তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ধারাবাহিকতায় দেশ অনেক এগিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু ও শাস্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসের রাজত্ব দেখা গেছে। তিনি বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষার পথ থেকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।