
বাংলাদেশে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল সফরের দশম দিনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করছে সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করেছে। এ ছাড়া তাদের আগ্রহ ছিল ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এবং গণমাধ্যমের বর্তমান বাস্তবতা নিয়ে।
গতকাল সোমবার কয়েক দফায় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে তাদের আগ্রহ ছিল ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এবং গণমাধ্যমের বাস্তবতা নিয়ে। প্রথম ধাপে হওয়া এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির, দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সম্পাদক ইনাম আহমেদ এবং প্রথম আলোর ইংরেজি সংস্করণের সম্পাদক আয়েশা সিদ্দিক।
বৈঠকে তারা জানান, বিভেদ থাকলেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নে একমত সাংবাদিকরা। বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান ছিল, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যেন অবস্থান না নেওয়া হয়।
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে বিভেদ থাকলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সবারই উদ্বেগ আছে বলে ইইউ প্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য গণমাধ্যম ভূমিকা রাখবে বলেও তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।
নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিতে ইইউ প্রতিনিধিদের বাংলাদেশে আসতে হচ্ছে, বিষয়টি দুঃখজনক। তবে তাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি, ফিরে গিয়ে তারা যেন এমন রিপোর্ট না দেয়, যা বাংলাদেশের জনগণ প্রত্যাশা করে না।’
পরে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিক্যাবের পাঁচ সদস্য মাসুদ করিম, এ কে এম মইনুদ্দিন, মোরশেদ হাসিব, মাহফুজ মিশু, পান্থ রহমান যান ইইউ দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে।
বৈঠক শেষে ডিক্যাবের সদস্যরা গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ২০১৪ সালে ইইউ পার্লামেন্টে জামায়াতকে সহিংসতাকারী দল হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও, ঢাকায় রবিবার জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক কেন এই প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ফিরে যাচ্ছেন ইইউ প্রতিনিধিদলের প্রধান রিকার্ডো চালারি। তবে, দলের বাকি সদস্যরা ২৩ জুলাই পর্যন্ত অবস্থান করে বাংলাদেশের নির্বাচনের নানা বিষয়ে নিজেদের মতো করে তথ্য সংগ্রহ করবেন। এর আগে গত ৮ জুলাই ১৬ দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছায় ইইউর তথ্যানুসন্ধানী দল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের গবেষক দল বাংলাদেশে ক্ষুরা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর টিকা উদ্ভাবন করেন। ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর এ উদ্ভাবনের জন্য পেটেন্ট, ডিজাইনস ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে পেটেন্টের জন্য আবেদন করা হয়। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে অধিদপ্তরে যথাক্রমে ১৯টি ও আটটি পেটেন্ট গৃহীত হয়। কিন্তু গবাদি পশুর টিকা-সংক্রান্ত উদ্ভাবনটি ওই দুই বছরে পেটেন্টের জন্য নিবন্ধিত হয়নি। প্রকল্পের এসপিএম-সূত্র বলেছে, পেটেন্ট-আবেদনটি হিমঘরে চলে গেছে।
শুধু ঢাবি নয়, এমন ঘটনা ঘটেছে বেশ কটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ক্ষেত্রে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সাতটি গবেষণা পেটেন্টের জন্য আবেদন করেছিল। একটি আবেদনও গ্রহণ করেনি পেটেন্ট অধিদপ্তর। জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের অবহেলা ও অধিদপ্তর-কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে গবেষণা প্রকল্পগুলো সাফল্য পায়নি। পেটেন্ট অধিদপ্তরের অবহেলায় গবেষণা কার্যক্রম আলোর মুখ দেখে না। সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিতে পারলে গবেষণাগুলো বিশ্বমানের হতো বলে সংশ্লিষ্ট গবেষকদের বিশ্বাস। প্রকল্পটিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য ‘প্রোমোটিং অ্যাকাডেমিক ইনোভেশন’ নামের উপ-প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৮০২ কোটি টাকা। কিন্তু অনেক শিক্ষক গবেষণা করেননি, আবার যারা করেছেন তারাও পেটেন্ট অনুমোদন পাননি। সব মিলিয়ে ৮০২ কোটি টাকার ফল শূন্য।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের নেতৃত্বে একটি দল ক্যানসার শনাক্তের সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। এটি কার্যকর করা হলে মাত্র ৫০০ টাকায় দেশেই ক্যানসার শনাক্ত করা যেত। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ২৭টি গৃহীত আবেদনের মধ্যে এটি নেই। অর্থাৎ এর পেটেন্ট-আবেদনটিও গৃহীত হয়নি।
গরুর ক্ষুরা রোগের টিকা উদ্ভাবনকারী বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন এখন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি)। তার পেটেন্ট-আবেদন হিমঘরে কেন জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ইলেকট্রনিক পেটেন্ট দেখার মানুষ নাকি তাদের আছে অথচ পেটেন্ট অফিসে বিরাট লাইন। বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এখানে পেটেন্ট জমা দেয়। একটা পেটেন্ট অনুমোদন পেতে তিন-চার বছর লাগে। ক্ষুরা রোগের টিকার পেটেন্ট রিভিউতেই পাঠানো হয়নি। তাদের নাকি রিভিউ করার মানুষ নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলে সব মহলই। কিন্তু গবেষণায় বিনিয়োগ করেও সুফল পাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকৃত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য গবেষণা নেই। আর অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার জন্য বরাদ্দই পায় না।
পেটেন্ট আবেদন কেন গৃহীত হয় না এ প্রশ্নের জবাবে সাবেক প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক গৌরাঙ্গ চন্দ্র মহান্ত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যারা গবেষণার দায়িত্বে ছিলেন তারা গবেষণা করেছেন। গবেষণার পেটেন্ট আবেদনের জন্য টাকা-পয়সা লাগে। আমরা তাদের প্রাথমিক গবেষণায় টাকা দিয়েছি। বাংলাদেশে টাকা দিতে পারলে গবেষণা চলবে, না দিতে পারলে গবেষণা বন্ধ।’
তিনি বলেন, ‘এ রকম ঘটনা বিরল। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার পর চুলচেরা বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্টও করেছে বিশ্বব্যাংক। তারা সন্তুষ্ট। আইএমইডি যথাস্থানে না গিয়েই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।’
পেটেন্ট-আবেদন কেন গৃহীত হয় না এ প্রসঙ্গে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাধারণত ফার্মাসিউটিক্যালসের বিষয়গুলো পেটেন্টের আওতায় আসে না। আমাদের নতুন পেটেন্ট আইন হয়েছে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে। আগের আইনে যে ব্যবস্থা নিতাম, এখনকার আইনে সে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। এখানে পেটেন্ট আবেদনের পর ১৮ মাস রেখে দিতে হয়। ১৮ মাস পর আমরা সেটি ওয়েবসাইটে পাবলিশ করি। প্রকাশের পর যে কেউ এটাতে মতামত দিতে পারে। আমরা তিন মাস অপেক্ষা করি। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আবার আবেদন করতে হয়। তা না করলে আমরা শুরু করতে পারি না। অনেকেই এ প্রক্রিয়াগুলো জানেন না।’
তিনি বলেন, ‘আইনে বলা আছে, আবেদনের পর আমরা ৩৬ মাস অপেক্ষা করব। এর পরও যদি সংশ্লিষ্টরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আবেদন না করেন, তাহলে সেটিকে স্থগিত করব।’
দক্ষ জনবলের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ২০০৯ সালে হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহেন্সমেন্ট প্রজেক্ট (হেকেপ) প্রকল্প হাতে নেয়। এটি শেষ হয়েছে ২০১৯ সালে। বিভিন্ন মেয়াদে এর ব্যয় ৬৮১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা হয়। এটিতে বিশ^ব্যাংকের অর্থায়ন ছিল ১ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা।
মূলত গবেষণা ও উদ্ভাবনের উদ্দেশ্যে হাতে নেওয়া এ প্রকল্পে কিছু গবেষণা হলেও উল্লেখযোগ্য গবেষণা নেই বলে মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ।
এ প্রকল্পের আওতায় গবেষণায় সবচেয়ে বেশি ব্যয় (আট কোটি) করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের প্রকাশনা ছিল ২ হাজার ৫১৭টি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রকাশনাও হয়নি। প্রকাশনায় পিছিয়ে আছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলোর প্রকাশনা সংখ্যা এক থেকে সাতের মধ্যে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ২৫টির গবেষণা খাতে এক টাকাও বরাদ্দ রাখা হয়নি। বিপরীতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা খাতে বরাদ্দ ও প্রকাশনা বেশি ছিল।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিধারী শিক্ষকের সংখ্যা কম থাকায় এবং মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কায় ইউজিসি এখনো কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করার অনুমতি দেয়নি। অনেক দেশে পিএইচডির মান বজায় রাখতে পিএইচডি থিসিস বাইরের বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হয়। ইউজিসি এ ব্যাপারে নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে বলে মনে করে আইএমইডি। তারা পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি ভালো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর অনুমতি দিতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কেউ বরাদ্দ পায় আবার কেউ পায় না এর কারণ কী? এ প্রশ্নের জবাবে গৌরাঙ্গ চন্দ্র মহান্ত বলেন, ‘আমরা কিছু নীতিমালা করেছিলাম। নীতিমালা করে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণার জন্য আবেদন করার বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছি। যারা আবেদন করেছে তারা বরাদ্দ পেয়েছে।’
২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের কোনো নথি সংরক্ষণ করেনি ইউজিসি। প্রকল্পের কোথায় কোন কাজ বাস্তবায়িত হলো তার কোনো তথ্যই নেই তাদের কাছে। আইএমইডি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের এসপিএম ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার অদক্ষতা, প্রকল্পে শেষে নথিপত্র সংরক্ষণ না করা, গবেষণা ও উদ্ভাবনকে এত গুরুত্ব দেওয়ার পরও একটি পেটেন্টও গৃহীত না হওয়া এ প্রকল্পের সবচেয়ে দুর্বল দিক।
এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেসব গবেষণা করবে দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সেগুলো কাজে লাগাবে। কিন্তু ‘ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া লিংকেজ’ নামের এ উপ-প্রকল্পের আওতায় কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানই আগ্রহ দেখায়নি। অথচ এর আওতায় ১০টি ইনোভেশন ফান্ড বরাদ্দ ছিল।
আইমএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ ছিল না কিংবা প্রকল্প শেষে উদ্ভাবনটির টেকসইকরণে কোনো অগ্রগতি ছিল না। ১০টির মধ্যে ছয়টির গবেষণা ফান্ডের অপ্রতুলতায় কাজ আর এগিয়ে নেওয়া হয়নি। সংস্থাটি বলেছে, ভবিষ্যতে মানসম্মত গবেষণা না হলে প্রকল্পের উদ্দেশ্য পূরণ হবে না।
প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্রীয়ভাবে গবেষণা ও উদ্ভাবনবিষয়ক তথ্য সংরক্ষণের জন্য হায়ার এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বা হেমিস নামে একটি তথ্য-ব্যবস্থাপনা ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা বা গবেষকরা শর্তসাপেক্ষে নিজেদের গবেষণা সেখানে সংরক্ষণ করতে পারেন। কিন্তু প্রকল্প-শেষে সেটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জানা গেছে, এ ওয়েবসাইটের এসএসএল সার্টিফিকেট নেই।
বাংলাদেশের অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে বিশ্বমানের ইলেকট্রনিক তথ্য, বিশ^মানের ই-বুক, জার্নাল, গবেষণা প্রবন্ধ প্রভৃতির প্রাপ্যতার জন্য ইউনিভার্সিটি ডিজিটাল লাইব্রেরি (ইউডিএল) নামে একটি অনলাইন চালু করা হয়েছিল। উইলি অনলাইনে প্রায় ১ হাজার ৫০০ জার্নাল ও ১৮ হাজার ই-বুক ও অন্য রিসোর্স মজুদ থাকলেও চালুকৃত ইউডিএলে মাত্র ৩ হাজার ৫০০ ই-বুকের পাওয়া যায়।
৭৯ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষার্থী মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নতুন ই-বুকে, জার্নালে এক্সেসের ক্ষেত্রে অনেক বাধা। প্রায়ই তারা কোনো বই খুঁজে পায় না।
বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্ক (বিডিরেন) নামের একটি উদ্যোগ চালু করা হয়েছিল। সেটি লাভজনক অবস্থায় রয়েছে বলে আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘হেকেপ প্রকল্পের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু মান বাড়েনি। মান বাড়ানোর পাশাপাশি এটির সম্প্রসারণও জরুরি।’
চুয়েটের শিক্ষার্থী তন্ময় দে জানান, হেকেপ প্রকল্পের কারণে রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে ধারণা পেয়েছেন তিনি। তবে প্রকল্পটির বর্তমান অবস্থা আশানুরূপ নয়। যে ডিজিটাল লাইব্রেরি করা হয়েছে তাতে সন্তুষ্ট নন তিনি। প্রযুক্তি ব্যবহারে যে ধরনের এক্সপার্টাইজ থাকা দরকার তা তাদের নেই।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি ও অবসটেট্রিকস বিভাগের অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানা জুয়েনা বলেন, তাদের বিভাগে অনেক উচ্চ দক্ষতার মেশিনারি রয়েছে। এগুলোর জটিলতা দেখা দিলে মেরামত করার জন্য এক্সপার্ট পাওয়া যায় না। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের বাজেট নেই।
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছেই ছিল গুরুত্বহীন। তেমন আলোচনা ছিল না, যদিও কৌতূহল ছিল। জনগণের সেই কৌতূহল মিটল একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা দেখার মধ্য দিয়ে। রাস্তায় ফেলে একতারা প্রতীকের প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন আলমকে (হিরো আলম) বেদম মারল নৌকার ব্যাজধারী একদল যুবক।
এ ঘটনায় সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুঃখ প্রকাশ করলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এ ‘গুরুত্বহীন’ নির্বাচনে এমন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা ন্যক্কারজনক।
গতকাল সোমবার ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণের শেষ সময়ে বিকেল পৌনে ৪টায় হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ চারজনকে আটক করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের উপস্থিতি, কয়েক দিন আগের সুষ্ঠু নির্বাচন বিষয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সফরের কারণে এ ঘটনা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে জায়গা করে নেয়।
গত রাতে ঘোষিত ১২৪টি কেন্দ্রের সবগুলোর ফল অনুযায়ী, ভোট পড়েছে ৩৭ হাজার ৪২০টি, যা মোট ভোটের ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত পেয়েছেন ২৮ হাজার ৮১৬ ভোট। হিরো আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ৬০৯ ভোট। জাতীয় পার্টির সিকদার আনিসুর রহমান ১ হাজার ৩২৮ ভোট পেয়েছেন। মোট ভোটার ৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন।
বিএনপির অনুপস্থিতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত প্রতিদ্বন্দ্বী সাত প্রার্থীর চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন। জনপ্রিয় ইউটিউবার হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম) যা একটু আলোচনায় ছিলেন। যোগ্যতার দিক থেকেও এগিয়ে থাকায় আরাফাতের বিজয় প্রত্যাশিত ছিল। এ ছাড়া সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পাঁচ মাস আগে অনুষ্ঠিত হওয়া এ উপনির্বাচন তেমন গুরুত্বপূর্ণও ছিল না নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছে। এলাকার বেশিরভাগ অংশেই উচ্চবিত্তের মানুষের বাস। ভোটকেন্দ্রেও এসবের ছাপ পড়েছে। ভোটার উপস্থিতি এতই কম ছিল যে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শনে এলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলা হয়। নৌকার ব্যাজ পরা সংঘবদ্ধ একটি দল হিরো আলমের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কিল-ঘুসি, এমনকি লাথিও মারতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনার ছবি। মুহূর্তেই বিদেশি গণমাধ্যমে বড় করে জায়গা করে ঢাকা-১৭ উপনির্বাচন।
হামলার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হিরো আলম বলেন, ‘আমি সারা দিন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। বিকেল ৩টার পর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল কেন্দ্রে কিছু লোক আমার ওপর হামলা চালায়।’
পরে আহত হিরো আলমকে রামপুরায় বেটার লাইফ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে যখন সরকার ও আওয়ামী লীগ দেশি-বিদেশি চাপে রয়েছে, তখন একটি উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা কেন এড়িয়ে যেতে পারল না এমন প্রশ্ন উঠেছে নানা মহল থেকে। তারা বলছেন, এ নির্বাচনকে এত গুরুত্ব কেন দিতে হবে।
জানতে চাইলে নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতিপক্ষ প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা দুঃখজনক। এ ঘটনা এড়িয়ে যেতে পারলে ভালো হতো।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কার অধীনে হবে তা নিয়ে নানা তর্ক-বিতর্ক চলছে। এ সময়ে আরও সতর্ক হওয়ার দরকার ছিল। প্রতিপক্ষ প্রার্থী হামলার শিকার। এটি নিন্দনীয়।’
ভোটে অনীহা : ভোটকেন্দ্রগুলোতে সারা দিনের বিভিন্ন অনিয়ম, এজেন্ট বের করে দেওয়া, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করা গণমাধ্যমকর্মীদের পুলিশ ও কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কর্মকর্তাদের বাধা দেওয়ার ঘটনা, কম ভোটার উপস্থিতি, জাল ভোট দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবু সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। তবে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। তখন তিনি জানান, ১২-১৪ শতাংশ ভোট পড়েছে।
কেএম নুরুল হুদা কমিশনের সময় ২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্কের মধ্যে ঢাকা-১০ উপনির্বাচনে ইভিএমে মাত্র ৫.২৮ শতাংশ ভোট পড়ার নজির রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘আমরা চাই একটি সুষ্ঠু ভোট হোক। ভোটাররা কেন যায়নি, তার অনেক কারণ থাকতে পারে। সেটা আমি জানি না বা বলাও ঠিক হবে না।’
সকাল থেকে সিসি ক্যামেরায় ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে হিরো আলম মারধরের শিকার হওয়ার পরপরই তিনি নির্বাচন ভবন ছাড়েন।
অবশ্য নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, ১২৪টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে। একটি কেন্দ্রে কিছু একটা ঘটেছে, তার মানে নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা হয়নি। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী সমর্থকদের নিয়ে ওই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন। তার সঙ্গে ৭০ জনের মতো ইউটিউবার ছিল। প্রার্থী ছাড়া অন্য কেউ তো কেন্দ্রে ঢুকতে পারে না। তাই তাদের বের করে দিয়েছে পুলিশ। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রের বাইরে তাকে কে বা কারা মারধর করেছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে পুলিশকে মামলার নির্দেশনা দিয়েছেন তারা।
ভোটগ্রহণের সময় এক প্রার্থীর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আরেক নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেছেন, কেন এমন ঘোষণা এলো, তার কারণ বুঝতে পারছি না।
পুুলিশ কমিশনারের সন্তোষ প্রকাশ : ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনে ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। দুপুর সোয়া ২টার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
প্রার্থীদের এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘এজেন্ট বের করে দেওয়ার কোনো ধরনের ঘটনা আমাদের কানে আসেনি। আমি নিজেও দেখেছি কেন্দ্রটিতে বেশ কয়েকজন এজেন্ট রয়েছে। কেউ এজেন্ট দিতে পারেননি বা দেননি এটি আলাদা কথা।’
এজেন্ট একতারার পারিশ্রমিক দিচ্ছে আ.লীগ : স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের সংগঠন, ব্যক্তি পরিচিতি ও ঢাকায় বসবাস না থাকলেও সব ভোটকেন্দ্রের কক্ষগুলোতে একতারার এজেন্ট থাকায় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে উঠে এসেছে প্রায় সব ভোটকক্ষে একতারার এজেন্ট দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকদের।
বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ৭২ নম্বর কেন্দ্রের ১ নম্বর মহিলা বুথে একতারার এজেন্ট জাহানারা বেগম বলেন, ‘আমি একতারার এজেন্ট। কিন্তু একতারা জিতুক চাই না। আমি প্রার্থীকে চিনি না। জানিও না। পাড়ার এক নেতা একতারার এজেন্ট হতে বলেছেন। তাই এজেন্ট হয়েছি। আমার পারিশ্রমিকও তিনি দেবেন। নাশতা-পানিও তারাই খাইয়েছেন।’
কেন্দ্রে সাংবাদিকদের বাধা : বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭২ নম্বর ভোটকেন্দ্রের ৩ নম্বর (পুরুষ) বুথে দায়িত্ব পালনরত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পুলিশের এসআই জুবাইয়েদুল হক কর্তব্যরত সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত বাধার মুখে পড়ে বেরিয়ে আসতে হয়।
এ কেন্দ্রের ৩ নম্বর কক্ষে ঢোকার সময় জুবাইয়েদুল হক বলেন, ‘বুথে ঢুকতে পারবেন না। ঢুকতে হলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হবে। কার্ড থাকলেও বুথে ঢোকা যাবে না।’
কিছুক্ষণ পর সেখানে এসে প্রিসাইডিং অফিসার রাজু কুমার সরকারও পুলিশের মতোই বলেন, ‘বুথে ঢুকতে আমার অনুমতি লাগবে। আইনেও আছে বুথে ঢুকতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি লাগবে।’
ভোটার উপস্থিতির করুণ দশা : ভাসানটেক এলাকার সরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ। এ কলেজে চারটি কেন্দ্র। দুটি নারী কেন্দ্র ও দুটি পুরুষ কেন্দ্র। ১৪টি ভোটকক্ষ। ভোটার ৭ হাজার ৪১৮। ভোট শুরুর এক ঘণ্টার হিসাব এ চার কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১০১টি। তখন ভোট পড়ার হার ১ দশমিক ৩৬। কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ভোটগ্রহণ সংশ্লিষ্ট কাজে থাকা কর্তাব্যক্তিরা অলস বসে আছেন। কেন্দ্রে ভোটার নেই। ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরাও হতাশা প্রকাশ করেন।
একই কেন্দ্রে বেলা ৩টায় হিসাব নিয়ে দেখা যায়, ভোট পড়ার হার ৫ দশমিক ৭৪। গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি কেন্দ্রে ভোট শুরুর প্রথম দেড় ঘণ্টায় একটি ভোটও পড়েনি। এ কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৫৮।
প্রার্থীদের পরস্পরবিরোধী অভিযোগ : ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের পরিবেশ নিয়ে দুই ধরনের মত পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ভোটের পরিবেশ ঠিক আছে দাবি করলেও হিরো আলমের অভিযোগ, তার এজেন্টদের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। বনানী মডেল স্কুল কেন্দ্র পরিদর্শন গিয়ে বলেন, ‘যখনই বলতেছে একতারার লোক, হিরো আলমের লোক, তখনই কিন্তু বের করে দিতেছে। মানে হইল, সিল মারার চেষ্টা করতেছে।’
অনিয়ম ও নির্বাচন কমিশনের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী তারেকুল ইসলাম ভূঞা।
অল্প মেয়াদ বলে ভোটে অনীহা : আরাফাত
গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত সাংবাদিকদের বলেন, ‘অল্প দিনের মেয়াদ হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ কম থাকতে পারে।’
সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল থেকে যে তথ্য পাচ্ছে অধিদপ্তর, তা খণ্ডিত। ফলে ডেঙ্গুর প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না। এমনকি প্রতিদিন কত মানুষ ডেঙ্গু পরীক্ষা করছে এবং তাদের মধ্যে কত শতাংশের ডেঙ্গু পজিটিভ আসছে, সে তথ্যও নেই অধিদপ্তরের কাছে। তবে এই খণ্ডিত তথ্যের ভিত্তিতেই ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলছে অধিদপ্তর।
গতকাল সোমবার দেশের চলমান ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ডেঙ্গুর নমুনা পরীক্ষার সব তথ্য তাদের কাছে নেই। করোনার সময় ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্য সংরক্ষণ করা হতো। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই ডেটা এন্ট্রি অপারেটর দেওয়া হয়েছিল। যে কারণে করোনার প্রায় শতভাগ তথ্য তারা সরবরাহ করতে পারতেন। এই পুরো প্রক্রিয়ার জন্য অনেক জনবল প্রয়োজন। কিন্তু ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে সেই ব্যবস্থা হয়নি। সেটি হলে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যাবে। বর্তমানে ঢাকার ২০টি সরকারি ও ৪২টি বেসরকারি হাসপাতাল এবং ঢাকার বাইরের জেলাগুলো থেকে ডেঙ্গুর তথ্য পাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল না। করোনার সময় তারা প্রথম তথ্য দিতে শুরু করে। ঢাকার আরও ৩০টি বেসরকারি হাসপাতাল আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য দেবে।
খণ্ডিত তথ্যের ব্যাখ্যা দিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ডেঙ্গুর আরও কিছু বেসরকারি তথ্য অধিদপ্তরের কাছে আসে। কিন্তু সেগুলো অসম্পূর্ণ। এসব অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে কোনো কাজ হয় না।
গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে বছরের সর্বোচ্চ আটজনের মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। এর আগে সর্বোচ্চ সাতজনের মৃত্যুর রেকর্ড ছিল গত ১৫ জুলাই। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেল ১১৪ জন। এ সময় নতুন করে ১ হাজার ৫৮৯ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আরেক দিন গত রবিবার এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪২৪ জন।
পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে : গতকালের সংবাদ সম্মেলনে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেন, প্রতিটি হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নার ও ইনফরমেশন ডেস্ক আছে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় যারা কাজ করবেন, তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি হাসপাতালেই পর্যাপ্ত শয্যা প্রস্তুত আছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা সিটির বাইরে দেশের প্রতিটি উপজেলা হাসপাতাল থেকে শুরু করে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত ডেঙ্গুর পৃথক কর্নার এবং শয্যা প্রস্তুত আছে। ফলে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার আরও বাড়লেও চিকিৎসাসেবায় কোনো ঘাটতি হবে না।
শনির আখড়া থেকে বাড্ডা ডেঙ্গুর ক্লাস্টার জোন : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গতকাল মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, এ বছর ডেঙ্গু বাড়বে ও ডেঙ্গুর ক্লাস্টার জোনগুলোর (গুচ্ছ সংক্রমণ এলাকা) ব্যাপারে অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা অনেক আগে থেকেই প্রতিদিন সিটি করপোরেশনকে জানিয়ে আসছে। যেসব জায়গায় মশা বেশি সে জায়গাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন শনির আখড়া থেকে বাড্ডা পর্যন্ত ডেঙ্গুর লম্বা বেল্ট। এই পুরো এলাকায় মশা বেশি, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি। এই তথ্য প্রতিদিনই দেওয়া হচ্ছে। এসব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে অনেক আগেই শেয়ার করা হয়েছে। এখন নিয়ন্ত্রণে বাকি কাজটা তারা করবে।
অন্য রোগের রোগীদের ডেঙ্গু হলেই হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ : অন্য যেকোনো রোগে আক্রান্তদের ডেঙ্গু পজিটিভ হলেই দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। গতকাল ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, যাদের কোমর্বিডিটিজ (অন্যান্য রোগ) আছে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন, ক্যানসারে আক্রান্ত বা ক্যানসারের জন্য ওষুধ খান; ডেঙ্গু ধরা পড়লে তাদের অবশ্যই অবশ্যই হাসপাতালে আসতে হবে। এটা না হলে পরে সামাল দেওয়া যাবে না। বাড়িতে বসে ওই ধরনের রোগীদের চিকিৎসা সম্ভব নয়।
বদলে গেছে ডেঙ্গুর লক্ষণ : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডেঙ্গুজ্বরের আগে যে লক্ষণ ছিল তা সম্প্রতি বদলে গেছে। আগে ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো ছিল শুরুতেই জ্বর আসত; শরীরে ব্যথা; মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা; চামড়ায় লালচে দাগ, এখন প্রায় সময় জ্বর আসছে না, প্রাথমিক পর্যায়েই ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথা, বমি, পেটে-বুকে পানি আসা, শরীরে খিঁচুনি এসব লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। অধিদপ্তর জানিয়েছে, জরুরি প্রয়োজনে স্বাস্থ্যসেবা পেতে ১৬২৬৩ হটলাইন সেবা চালু রয়েছে।
বেশি মৃত্যু নারীদের : ডেঙ্গুতে এ বছর নারীরা বেশি মারা গেছেন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য-বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত যে ১১৪ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৬৬ জনই নারী, যা মৃত্যুর ৫৮ শতাংশ। মৃতদের বাকি ৪৮ জন পুরুষ। অন্যদিকে, মৃত্যুর ২১ শতাংশই ৫-১৮ বছর বয়সী শিশু। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া ১১৪ জনের মধ্যে ২৪ জনই শিশু। তাদের মধ্যে পাঁচ বছরের নিচের শিশুর সংখ্যা পাঁচজন, ৫-১০ বছরের শিশু সাতজন ও ১০-১৮ বছরের শিশু ১২ জন।
এরপর ৪০-৬০ বছর বয়সী ২৭ জন, ৬০-৮০ বছর বয়সী ১৪, ১০-১৮ বছর বয়সী ১২, ৫-১০ বছর বয়সী ৭, ৫ বছরের নিচে ৫ ও ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে ২ জন মারা গেছেন।
ঢাকা ও ঢাকার বাইরে এ বছর আক্রান্তদের বেশির ভাগই ১৮-৪০ বছরের মধ্যে। এখন পর্যন্ত যে ২২ হাজার ৪৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, তাদের মধ্যে এই বয়সী রোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১২০ জন।
ঢাকায় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি নারী রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৯১০ জন ও পুরুষ ৮ হাজার ৭৮৭ জন এবং ঢাকার বাইরে নারী ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৩৯৩ জন নারী ও ৫ হাজার ৩৭৭ জন পুরুষ।
সর্বোচ্চ মৃত্যু এ বছর : দেশে ডেঙ্গুর ২৩ বছরের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এ বছর সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর গতকাল পর্যন্ত ভর্তি রোগীর শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ মারা গেছে। এরপর ২০২০ সালে ভর্তি রোগীর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ, ২০২২ সালে শূন্য দশমিক ৪৫, ২০২১ সালে শূন্য দশমিক ৩৭, ২০১৮ সালে শূন্য দশমিক ২৬ ও ২০১৯ সালে শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ রোগী মারা যায়।
প্রাথমিক বাছাইয়ে টেকা ১২টি দলের মধ্যে তুলনামূলক পরিচিত ও রাজপথের কর্মসূচিতে সক্রিয় দলগুলোকে না রেখে একেবারেই অপরিচিত দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে নতুন করে ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। বর্তমান কমিশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাদপড়া দলগুলোর নেতারা।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনুকূল পরিবেশের সীমাবদ্ধতায় নিজেদের আস্থা অর্জনের পথে বারবার হোঁচট খাচ্ছে ইসি। তাদের মতে, যেখানে ভাবমূর্তির সংকট কাটিয়ে ওঠার সুযোগ ছিল, সেখানে স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা নতুন করে জনগণকে হতাশ করলেন।
গত রবিবার ইসি সচিবালয়ের সচিব জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক বাছাই শেষে ১২টি দলের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) নামে দুটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
গতকাল সোমবার এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করার কথা। ২৬ জুলাই পর্যন্ত এই দল দুটির বিষয়ে কোনো আপত্তি থাকলে তা দাখিল করা যাবে। পরে আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে দল দুটিকে নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ছাড়া কোনো দল দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। নিবন্ধনের জন্য এবার ৯৩টি দল আবেদন করেছিল। প্রাথমিক বাছাই শেষে নাগরিক ঐক্য, এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি), গণ অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি (বিএসইচপি), ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজিপি), বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), বাংলাদেশ সনাতন পার্টি, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) প্রাথমিকভাবে বাছাইয়ে টিকে ছিল। শেষের দুটি দল ছাড়া বাকিগুলোকে পরের ধাপের জন্য যোগ্য বিবেচনা না করায় নিবন্ধন পাচ্ছে না তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনএমের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির সাবেক দুই নেতা। ২০২১ সালের ৭ জুলাই গঠিত এই দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুর রহমান বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য। সদস্য সচিব মেজর (অব.) মো. হানিফ বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য। দলটির কমিটিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও আইনজীবীদের সংখ্যাই বেশি। রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ৩৮০ বর্গফুটের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাড়ে তিন মাস আগে কার্যক্রম শুরু হয়।
বিএসপি চেয়ারম্যান শাহ্জাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভা-ারী। রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের ৮২ শাহ আলীবাগে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। দলটির মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল আজিজ সরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনএম গঠনের সময় থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা ছিল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলে বিএনএমের ব্যানারে বিএনপির একটি অংশকে নির্বাচনে সুযোগ করে দেওয়া হবে এমন গুঞ্জন ছিল।
তবে দলটির সদস্য সচিব মেজর (অব.) মো. হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কোনো দল ভেঙে আমাদের দল করার পরিকল্পনা নেই। আমরা ইসির নিবন্ধন পাচ্ছি। এখন অন্য কোনো দলের নেতা আমাদের দলে যোগ দিতে চাইলে স্বাগত জানাব।’
বিএনএমের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুর রহমান বর্তমানে বেসরকারি প্রাইম ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রধান ও ডিন। তিনি বরগুনার বেতাগী থানা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সপ্তম সংসদ নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও তিনি জয়ী হতে পারেননি। পরে বিএনপির রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান।
মেজর (অব.) মো. হানিফ ২০২১ সালের ২৮ জুন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে হঠাৎ পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের ১০ দিনের মাথায় বিএনএম নামের দল গঠনের ঘোষণা দেন। সিরাজগঞ্জ-২ আসন থেকে তিনি বেশ কয়েকবার সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু পাননি। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপিরও সাবেক যুগ্ম আহ্বায়কও ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, ‘আমাদের দল সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন দাবি করে।’
মিরপুর-১-এ খানকা শরিফ নামে পরিচিত পাঁচতলা ভবনটির চতুর্থতলায় বিএসপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। এই পাঁচতলা ভবন লাগোয়া আরেকটি চারতলা ভবন বিএসপির চেয়ারম্যানের বাসা। জানা যায়, বিএসপির প্রধান কার্যালয় শুরুতে ছিল চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। ২০২১ সালের শুরুর দিকে তা মিরপুরের শাহ আলীবাগে আনা হয়।
সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভা-ারীর বাবা শাহ্সূফী সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল-হাসানী ওয়াল সোসাইনী আল-মাইজভা-ারী পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রাম বিভাগ ছাত্রলীগ সভাপতি ছিলেন।
বিএসপির চেয়ারম্যান জানান, ‘বিএসপি কোনো ইসলামিক দল না। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান সংবিধানের আলোকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা।’
এই দুটি দলকে প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন দেওয়ায় ক্ষুব্ধ বাদপড়া ১০টি দলের নেতারা। এর মধ্যে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশনের বিন্দুমাত্র নিরপেক্ষতা নেই। সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের জন্য গঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনে পরিণত হয়েছে।’
এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘সর্ব প্রথম ইসির স্যাংশনে পড়া উচিত।’
গণ অধিকার পরিষদ (নুর) সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমার অনুরোধ থাকবে সবাই মিলে ইসি ঘেরাও কর্মসূচি দিই।’
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘ওদের (নিবন্ধিত দুই দল) অফিস নেই, ওরা এজেন্সির সৃষ্টি।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নুরুল হুদা কমিশনের মেয়াদ শেষের পর নির্বাচনীব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের ওপর বড় ধরনের অনাস্থার মধ্যে গঠিত হয়েছিল বর্তমান কমিশন। এই কমিশনের সামনে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল রাজনৈতিক দল, জনগণ এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আস্থা অর্জন করার। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধান নির্বাচনসহ অন্য কমিশনাররা বলেছিলেন, চ্যালেঞ্জ নিতে ‘ভয় নেই’। কিন্তু ক্রমেই সেই চ্যালেঞ্জে পিছিয়ে পড়ছেন স্বায়ত্তশাসিত এই সংস্থার প্রধান কর্তারা।
বর্তমান ইসি প্রথম হোঁচট খায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। স্থানীয় সংসদ সদস্যকে চিঠি দিয়ে এলাকা ছাড়তে বলায় ইসির নির্দেশ দিয়েও তা কার্যকর করতে পারেনি। উল্টো মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে।
এর পরও বিএনপি সংসদ সদস্যদের ছেড়ে দেওয়া ছয় আসনের উপনির্বাচন, বিশেষ করে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার-২-এ নির্বাচনের বর্তমান ইসির আস্থা সংকটে ধাক্কা লাগে।
তবে ভোটকেন্দ্রে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করে আস্থা অর্জনের চেষ্টা করে ইসি। গাজীপুর সিটিতে মুখ রক্ষা করতে পারলেও খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়। আরপিও নিয়েও বিতর্কের মুখে পড়ে ইসি।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সার্বিকভাবে ইসি পুরোপুরি আস্থা অর্জন করতে পেরেছে বলে আমি মনে করি না।’ তিনি মনে করেন, অচেনা দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্তে নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা কমবে। ইসির আস্থা সংকট কাটিয়ে ওঠার সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা তা কাজে না লাগিয়ে উল্টোপথে চলছে।
জাতীয় নির্বাচক পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ মনে করেন, বর্তমান কমিশন যে পরিবেশে কাজ করছে, তা অনুকূল না থাকাই সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা। ‘তারা শত ফুল ফুটতে দাও’ নীতিতেই থাকলে ইমেজ সংকট কাটত। তাদের পদক্ষেপ প্রশ্নবিদ্ধ হতো না।
তবে নির্বাচন কমিশনার জাহাংগীর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ধাপে ধাপে রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য যাচাই করা হয়েছে। অফিস, কমিটি, জনবল এগুলো একবার যাচাই করেছি। পরে আবার যাচাই করা হয়েছে। এর আলোকে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সবার আস্থা অর্জনের জন্যই আমরা ইসির যে বিধান রয়েছে তা অনুসরণ করে কাজ করছি।’
চলতি মাসেই ইসি ঘেরাও : গতকাল সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সংবাদ সম্মেলন করে ইসি ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছে নিবন্ধন না পাওয়া ১০ দল। সরকারি দলের সুপারিশ অনুযায়ীই ইসি তাদের নিবন্ধন দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন।
দেশে প্রায়োগিক সাক্ষরতার হার ৬২ দশমিক ৯২ শতাংশ। ৭ বছর বা তদূর্ধ্ব বাংলাদেশি নাগরিকদের এ হার হিসাব করা হয়েছে। যিনি পড়তে, অনুধাবন করতে, মৌখিক ও লিখিতভাবে বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা করতে, যোগাযোগ স্থাপন করতে এবং গণনা করতে পারেন, তাকেই প্রায়োগিক সাক্ষরতার আওতায় হিসাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রায়োগিক সাক্ষরতা নিরূপণ জরিপ ২০২৩-এর ফলাফলে উঠে এসেছে এসব তথ্য। প্রতিবেদনটি গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান।
২০২৩ সালের জরিপ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাত বছর থেকে ওপরের বয়সীদের প্রায়োগিক সাক্ষরতার হার দাঁড়িয়েছে ৬২ দশমিক ৯২ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষের ৬৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং মহিলার হার ৬১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। পল্লী এলাকায় এ হার ৫৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৫৯ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং মহিলা ৫৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। শহর এলাকায় প্রায়োগিক সাক্ষরতার হার দাঁড়িয়েছে ৭১ দশমিক ৯৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৭৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং মহিলা ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ।
প্রতিবেদনে স্তরভিত্তিক সাক্ষরতার হার তুলে ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সাত বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন নয়, এমন মানুষ রয়েছে ২৬ দশমিক ০৫ শতাংশ। এ ছাড়া আংশিক সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন লোক রয়েছে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রাথমিক পর্যায়ের সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ রয়েছে ১৯ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং উন্নত পর্যায়ের সাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন লোক রয়েছে ৪৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দেশে ৭ থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রায়োগিক সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এ ছাড়া এই বয়সীদের মধ্যে প্রায়োগিক সাক্ষরতার দক্ষতাভিত্তিক হার পঠন বা শুধু পাঠ করায় দক্ষ মানুষের সংখ্যা ৫৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। লেখার ক্ষেত্রে দক্ষতা বেশি আছে এমন মানুষ ৬৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গাণিতিক হিসাবে দক্ষ মানুষ ৫৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং উপলব্ধিগত দক্ষতা আছে ৫৬ দশমিক ০৮ শতাংশ।
এদিকে দেশে এখন প্রায়োগিক সাক্ষরতার হার ১১-৪৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ৭৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। যেটি ২০১১ সালে ছিল ৫৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। গত ১৩ বছরে এ হার বেড়েছে ১৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এ বয়সী পুরুষদের মধ্যে বর্তমানে প্রায়োগিক সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ১০ এবং নারীদের ৭৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রায়োগিক সাক্ষরতা নিরূপণের ক্ষেত্রে এ জরিপটি ব্যতিক্রম। কারণ এর মাধ্যমে সাক্ষরতার হার যাচাইয়ে নির্বাচিত প্রত্যেক ব্যক্তির ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ন্যূনতম ৫০ নম্বর পেলে প্রায়োগিক সাক্ষর বলে ধরা হয়। ৭-১৫ বছর এবং ১৫ থেকে অনূর্ধ্ব এ দুটি বয়সের ক্যাটাগরিতে আলাদা প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে জরিপ করা হয়েছে। জরিপ পরিচালনা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে গত জুন পর্যন্ত। দেশের ৬৫ জেলার ৪ হাজার ৯৬টি প্রাইমারি স্যাম্পল এরিয়া বা পিএসইউ থেকে ৮১ হাজার ৯২০টি পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতি পিএসইউতে ২০টি করে খানা বা পরিবার ধরা হয়েছে। এ কাজে গণনাকারী ছিলেন ১ হাজার ২৪ জন। এর আগে ২০০৮ এবং ২০১১ সালে দুটি জরিপ পরিচালনা করা হয়েছিল।
বিবিএসের প্রতিবেদনে ১১ থেকে ৪৫ বছর বয়সী মানুষদের মধ্যে বয়সভিত্তিক প্রায়োগিক সাক্ষরতার হারের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রায়োগিক সাক্ষরতার হার ২০২৩ সালের জরিপে পাওয়া গেছে ৮৮ দশমিক ০২ শতাংশ, যা ২০১১ সালের জরিপে ছিল ৭১ দশমিক ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া ১৬-২০ বছর বয়সীদের মধ্যে এ হার ৮৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা আগের জরিপে ছিল ৬৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২১-২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এ হার ৮২ দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা ২০১১ সালের জরিপে ছিল ৫৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২৬-৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যা আগের জরিপে ছিল ৫০ দশমিক ৫০ শতাংশ। ৩১-৩৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ৬৭ দশমিক ৮১ শতাংশ, যা আগের জরিপে ছিল ৪৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। ৩৬-৪০ বছর বয়সীদের মধ্যে ৫৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ, যা আগে ছিল ৩৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া ৪১ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রায়োগিক সাক্ষরতার হার দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা ২০১১ সালের জরিপে ছিল ৩৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। এসব তথ্যে দেখা যায়, প্রত্যেক বয়সী মানুষের মধ্যে প্রায়োগিক সাক্ষরতার হার বেড়েছে।
অনুষ্ঠানের পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, একটি ভালো বিষয় হচ্ছে বিবিএসের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। উপবৃত্তি দেওয়ার কারণে সাত থেকে চৌদ্দ বছর বয়সী মেয়েদের শিক্ষার হার বেড়ে ৭৬ শতাংশ হয়েছে। যেখানে ছেলেদের এ হার ৬৯ শতাংশ। তিনি কীভাবে সাক্ষরতা বাড়ে তা নিয়ে আরও একটি জরিপ করার পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, এ জরিপটি জুন মাসের মধ্যে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল। আমরা সেভাবেই কাজ করেছি। তবে এ প্রকল্পটির যিনি পরিচালক ছিলেন তিনি মারা গেছেন। তাই আরেকজনকে দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।