
বিগত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপ হয়েছে। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে সংঘাতপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে সমাধানের পথ খুঁজতে জাতিসংঘও এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে সেই সংলাপ। ফলে নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটসহ সরকারবিরোধী প্রায় সব দল। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও বিরোধীপক্ষ আন্দোলন করে সফল হয়নি। কিন্তু সংলাপ সফল হয়েছিল। নির্বাচনেও এসেছিল সব দল। এবারও বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা ঘোষণা করেছে। সংলাপ করার বিষয়টিও আবার আলোচনায় এসেছে। এরই প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসন হবে কি না, সরকারবিরোধীরা নির্বাচনে যাবে কি না, সে প্রশ্নই এখন রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।
সরকারবিরোধীদের এক দফার জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধান মেনে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচন করার পক্ষে অনড় থেকে এক দফা ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করবে না, এমনকি সংলাপেও রাজি নয়।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অচলাবস্থা নিরসনে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার সুযোগ রয়েছে। আর সমঝোতা হলে সংবিধানের মধ্যে থেকেও সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হতে পারে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি তৎপর। যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছে। দলটির নেতৃত্ব দেওয়া সে দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক নিরাপত্তাবিষয়ক আন্ডার সেকেন্ডারি উজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠক করেছেন নাগরিক সমাজের সঙ্গেও। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে তিনি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং এ ব্যাপারে তার দেশ বাংলাদেশ সরকারের কার্যকর ভূমিকা দেখতে চায় বলেও জানান। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে দলগুলোর মধ্যে সংলাপকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে সে কথাও বলেছেন তিনি। তবে তারা চান বাংলাদেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নিক।
দেশে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক অবস্থান ও বিদেশি তৎপরতা দুইয়ে মিলে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই বিশ^াস জন্মেছে যে, আগের দুইবারের মতো প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন এবার করতে পারবে না ক্ষমতাসীনরা।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিরোধীদের আন্দোলন সরকারকে বিচলিত না করতে পারলেও বিদেশি চাপ আওয়ামী লীগকে আগের যেকোনো বারের চেয়ে কাবু করে ফেলেছে। বিএনপিও এবারের আন্দোলনে সুফল মিলবে এমন আশায় বলীয়ান।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকম-লীর দুই নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলন, সংগ্রাম ও বিদেশি চাপ মোকাবিলা করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন শেষে সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ নির্দিষ্ট মেয়াদ পার করলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সবার ভেতরেই প্রশ্ন উঠেছে এবার কী? সংকট নিরসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার দূরত্ব ঘোচাতে বিদেশি শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সংলাপে বসার চাপও আছে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের চার নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সংলাপে বসা যেতে পারে। সমাধান কী আসবে তা ভাবলে সংলাপ সফল হবে না। শর্ত থাকলেও সফল হবে না। দুই দলের দুই অবস্থান থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে মাঝামাঝি একটা পথ নিশ্চয়ই বের হবে।
অবসর প্রস্তুতিতে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আগের দুটির মতো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে, সেটাও আমার মনে হয় না। সংবিধানসম্মতভাবেই নির্বাচন হতে পারে। সে জন্য আলোচনায় আসতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘আগের দুইবারের নাটক ২০২৩ সালেও হবে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আগামী নির্বাচন কেউ বানচাল করতে পারবে বা করবে, আবার কৌশলে কাউকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে পারবে বা রাখবে, সেটাও হবে না। আমি মনে করি সেটা বোঝার ক্ষমতা রাজনীতিবিদদের আছে। সরকারি দল ও বিরোধীরা নিজেদের দাবিতে অনড় থাকলেও কিছু একটা হবে। আমি মনে করি, বাস্তব বুদ্ধির জয় হবে।’
২০০১ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সংবিধানসম্মত পদ্ধতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। বিনা আন্দোলন ও রক্তপাত ছাড়া ক্ষমতার পালাবদলের এমন নজির বাংলাদেশে আর নেই। কিন্তু ক্ষমতা ধরে রাখার জোর চেষ্টা করার দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছে আওয়ামী লীগ। গত দুটি জাতীয় নির্বাচন তারই নজির।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বড় বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট। ক্ষমতায় এসে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিলে আদালতের শরণাপন্ন হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে উচ্চ আদালত। যদিও আদালত পরবর্তী দুই নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে বাধা নেই বলেও মত দেয়। এই পদক্ষেপকে ক্ষমতা ধরে রাখার চক্রান্ত দাবি করে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।
২০১২ সালে শুরু হওয়া আন্দোলন জোরালো হয় ২০১৩ সালে। তখন নির্বাচনকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বিএনপিকে দেওয়ার প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে সংকট সমাধানের জন্য আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন তিনি। তার কোনো প্রস্তাবেই রাজি হননি খালেদা জিয়া। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়ে সরকারি দল বারবার আহ্বান জানিয়েছে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আদালত কর্তৃক বাতিল করা নির্বাচন পদ্ধতি ঠিক করার জন্য বলা হয়। তাও আমলে না নিয়ে রাজপথে দাবি আদায়ের দিকে ঝুঁকে তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি।
এ অবস্থায় সংকট সমাধানে জাতিসংঘের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো বাংলাদেশ সফরে আসেন। তিনি সরকারি ও বিরোধী দলকে এক টেবিলে বসান। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দু-দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে ওই বৈঠকে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় এ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার দিকে জোর দেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তাই বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে বিশেষ আহ্বান জানানো হয়। জানা যায়, প্রয়োজনে ছয় মাস পরে আরেকটি নির্বাচন হবে বলেও প্রস্তাব করা হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। প্রস্তাবে রাজি না হয়ে বিএনপি নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। জাতিসংঘের বিশেষ দূত সংকট সমাধানে বিএনপির অসহযোগিতা দেখে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত দিয়ে চলে যান।
এদিকে নির্বাচনের আগে বেঁকে বসে জাতীয় পার্টি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচনে যাবেন না বলে ঘোষণা দেন। তড়িঘড়ি করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ভারতের তখনকার পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে আনতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ওই সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদকে নিষ্ক্রিয় করে তার স্ত্রী রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির চালকের আসনে বসানো হয়। বিএনপির বর্জন ও প্রতিহত করার ঘোষণার মধ্যেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন অনুষ্ঠান শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করে বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে দ্রুত সম্পর্কোন্নয়নের দিকে নজর দেয় শেখ হাসিনার সরকার।
২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে বিদেশি কূটনৈতিক মিশনগুলো সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আসছিল। কিন্তু আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে নামে বিএনপি। দলটির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের পাশাপাশি মধ্যপন্থী কিছু দলও একই দাবিতে মাঠে নামে। গণফোরামের ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু দাবি আদায়ে সফল হয়নি বিরোধীরা। একপর্যায়ে ড. কামাল হোসেনের মধ্যস্থতায় সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসে দলগুলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিরোধীরা। কিন্তু নির্বাচনের পর ‘ভোট ডাকাতি’র অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় নির্বাচন দাবি কওে তারা। ওই নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৬টি আসনে জয়লাভ করে দলটি। ফখরুল ছাড়া অন্যরা শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেন। তারপর আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি।
গত বছরের আগস্ট থেকে বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন শুরু করে। হামলা-বাধা সত্ত্বেও দলটি নানা কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি বাম ও মধ্যপন্থী দলগুলোকে আন্দোলনের সঙ্গী করতে সক্ষম হয়।
১২ জুলাই ঢাকা সফরে আসে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল। এর আগে প্রাক-নির্বাচন তথ্যানুসন্ধানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি দল ঢাকায় আসে। এ দুটি প্রতিনিধিদল সফরে থাকা অবস্থায় ১৩ জুলাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমাবেশ করে এক দফার ঘোষণা দেয়।
এই ঘোষণার পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, দুই দলকে মাঝামাঝি অবস্থানে নিয়ে আসারও সুযোগ রয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত সে পথেই এগোতে হবে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগকে এবং ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে। তারা বলেন, সমাধান চাইলে এবং বড় দলগুলো ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগোলে সংবিধানসম্মত পথও নিশ্চয়ই বেরোবে।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘সাংবিধানিক পরিবর্তন চাইলে লাখ লাখ লোকের দাবি উঠতে হবে। শুধু দাবি করলেই হবে না, রাস্তায়ও নামতে হবে, নামাতে হবে। বিরোধী দলের এক দফা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিকে জনগণ ন্যায্য মনে করলে একটা ফল আমরা দেখতে পাব।’ একইভাবে সরকারি দলও যা-ই বলুক, জনগণ পক্ষে থাকলে সেটা বাস্তবায়ন তারা করতে পারবে; অর্থাৎ এক দফাই শেষ কথা নয়, যোগ করেন তিনি।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হলে সংবিধানসম্মতভাবেই উপায় বের করা সম্ভব। দুই দল এক দফা দিলেও সবকিছু শেষ হয়ে গেল, এমনটি বলা যাবে না। মাঝামাঝি পথও বেরোতে পারে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘দুই দলই এক দফা দিয়েছে। একটা সময়ে এই দুই দলের এক দফা ঘোষণার মাঝামাঝি তো অন্য পথও তৈরি হয়ে যেতে পারে। আমি বলব, এখনো সম্ভাবনা আছে। বড় দুই দলের পৃথক এক দফা দুই দলেরই রাজনৈতিক কৌশল। এর ভেতরেই মাঝামাঝি থাকার বা আসার সুযোগ রয়ে গেছে।’
সে রাতে আমরা কেউ ঘুমাইনি। আমি পাশের সেলে সারা রাত জেগেছিলাম। তাহেরকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার সময় ভোর ৪টায় আমরা বন্দিরা একসঙ্গে মুহুর্মুহু সেøাগানে কারাগার মুখর করে তুলেছিলাম।
১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই তাহের বিদায় নেন। আর আমি সেই স্মৃতি নিয়ে জেনারেল জিয়ার কারাগারে বন্দি থাকি। ১৯৮১ সালের ১৩ জুন পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর। ১৭ জুলাই মামলার রায়ে কর্নেল তাহেরের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কর্নেল তাহেরের সঙ্গে সামরিক আদালত আমাকেও দণ্ডিত করে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং কিছু টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছর, আমার নামের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত অর্থাৎ মোট ১২ বছরের সাজা। ওই সামরিক আদালতের প্রতিটি ঘটনার আমি জীবন্ত সাক্ষী। আমি দেখেছি তাহেরের সাহস ও ধৈর্য। ১৯ জুলাই দুপুরে যখন স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনরা কারাগারে দেখতে যান তখন সবার সামনে তাহের এলেন। হাসলেন। খুবই স্বাভাবিক। তারা প্রাণভিক্ষা চাইতে বলেছিলেন। কর্নেল তাহের তা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমি তো চোর নই যে ক্ষমাভিক্ষা করব। আমার ফাঁসি হতে পারে না।’ স্ত্রী লুৎফা যখন ছেলেমেয়ের কথা বলে ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে শেষ চেষ্টা করেন, তাহের হাসিমুখেই বললেন, ‘আমার ছেলেমেয়েদের দেশের মানুষ দেখবে।’
এর আগে হয়েছিল প্রহসনের বিচার। একদিকে সেনাশাসকের লিখে দেওয়া রায় বিচারক পড়ছেন আর কর্নেল তাহের অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছেন। রায় পড়া শেষে বিপ্লবী স্লোগান তোলেন তাহেরসহ সবাই। তারপর হ্যান্ডশেক করলেন সবার সঙ্গে। বললেন, ‘এটাই তো স্বাভাবিক ঘটনা, তোমরা মন খারাপ করছ কেন? এক জীবনে সবকিছু পাওয়া হয়ে ওঠে না। কিন্তু সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। এর ভেতরেই বেঁচে থাকব আমি তাহের। স্বপ্ন ব্যর্থ হতে পারে না। সব চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ডিঙিয়ে সফল হবই আমরা।’ ফাঁসির আদেশ পেয়ে কার্যকরের কয়েক ঘণ্টা আগে সহকর্মী-অনুসারীদের আরও বলেন, ‘মন খারাপ কেন? আমার কাছে এটাই স্বাভাবিক।’ দুশ্চিন্তা তারপর এলো ২০ জুলাই, ১৯৭৬। সন্ধ্যা। বার্তাবাহক এসে জানিয়ে দিল পরদিন কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা। তাহের শুনলেন এবং ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় দিলেন বার্তাবাহককে। কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী একজন মৌলবি আসেন এবং তাহেরকে ‘কৃত অপরাধের’ জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুরোধ জানান। তাহের যা বিশ্বাস করতেন তা বলতে দ্বিধা করতেন না। এবারও তাই করলেন। তাহের মৌলবির উদ্দেশে শুধু বললেন, ‘আপনাদের সমাজের কালিমা আমাকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। কখনো না। আমি সম্পূর্ণ শুদ্ধ। আপনি এখন যান। আমি এখন ঘুমাব।’ এরপর তাহের সত্যি সত্যি ঘুমুতে যান এবং গভীর নিদ্রায় ডুবে যান। স্বাধীন বাংলাদেশে বীর তাহেরের সেটাই ছিল শেষ ঘুম। আশ্চর্য মানুষ তাহের।
২১ জুলাই। রাত ৩টা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। ৮ নম্বর সেল। ঘুম থেকে তাহেরকে ডেকে তোলা হয়। উপস্থিতরা তাকে সাহায্য করতে চাইলে তাহের মৃদুস্বরে শুধু বলেন, ‘আমার নিষ্পাপ শরীরে তোমাদের স্পর্শ লাগুক আমি তা চাই না।’ এ অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, নিজেই তিনি দাঁত মেজে, দাড়ি কেটে, গোসল করে, নকল পা, জুতো, প্যান্ট-শার্ট... নিজেই পরে নেন। আম কাটেন। নিজে খান, অন্যদের দেন। চা পান করেন। সিগারেট ধরান। তাহেরের এই শান্ত প্রকৃতি দেখে উপস্থিত কারা কর্র্তৃপক্ষের লোকরা প্রথমে হতভম্ব হয়ে পড়ে। পরে বেদনায় মুষড়ে পড়ে। তাহের যেন দেশপ্রেমে মোড়া এক জীবন্ত শরীর। অন্য কোনো কথা নয়, শুধুই দেশের কথা। সবাইকে উদ্দেশ্য করে তাহের বলেন, ‘সবাই এত বিষন্ন কেন? আমি দুর্দশাগ্রস্তদের মুখে হাসি উদ্ভাসিত করতে চেয়েছিলাম। মৃত্যু আমাকে পরাজিত করতে পারবে না।’
গোপন বিচারের সময় যা বলেছেন, ঠিক তেমনি আচরণ করেছেন কর্নেল তাহের ফাঁসির আগে। ফাঁসির কয়েক দিন আগে তার জবানবন্দি শেষে কর্নেল তাহের বলেছিলেন, ‘এ জাতির প্রাণে আমি মিশে রয়েছি। কার সাধ্য আছে আমাদের আলাদা করবে। নিঃশঙ্কচিত্তের চেয়ে জীবনে আর কোনো বড় সম্পদ নেই। আমি তার অধিকারী।’ সত্যিই তিনি নিঃশঙ্কচিত্তের অধিকারী বলেই দৃঢ়পায়ে ঠিক ভোর ৪টায় এগিয়ে যান ফাঁসির মঞ্চে বিদায় বাংলাদেশ, বিদায় দেশবাসী, বিশ্ব দীর্ঘজীবী হোক বলে।
ঠিক ভোররাত ৪টা, ২১ জুলাই, ১৯৭৬ কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তাহের ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। তাহের ফাঁসির দড়ি এত স্বাভাবিকভাবেই গলায় পরেছেন যে, মঞ্চে উঠে বললেন, ‘ফাঁসির দড়িটা এত ঢিল কেন? দেরি করছ কেন? আমি প্রস্তুত, তোমরা তোমাদের কর্তব্য করো।’
মৃত্যুর আগে লুৎফাকে লেখা শেষ চিঠিতে তাহের বলেছেন, ‘আমাকে কেউ হত্যা করতে পারে না। আমি আমার সমগ্র জাতির মধ্যে প্রকাশিত। আমাকে হত্যা করতে হলে সমগ্র জাতিকে হত্যা করতে হবে।’ কিন্তু তাহেরকে কি জেনারেল জিয়া হত্যা করে সফল হয়েছিলেন?
লেখক : হাসানুল হক ইনু, জাসদ সভাপতি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত মানুষকে কিছু দিতে পারে না। তাদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করুন। গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথে ট্রেন চলাচলে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ নৌকায় ভোট দিয়েছিল বলেই দেশের উন্নয়ন করতে পারছি। তাই জনগণকে বলব, সন্ত্রাসী বিএনপি-জামায়াতের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করুন। এরা সৃষ্টি নয়, ধ্বংস করতে পারে। লুটপাট করতে পারে, কিন্তু মানুষকে কিছু দিতে পারে না। আমরা চাই এদের হাত থেকে দেশবাসী রক্ষা পাক। আমরা তাদের রাজনীতিতে বাধা দিচ্ছি না। তবে রেল ও মানুষের ক্ষতি করলে, তারা কিন্তু ছাড় পাবে না। সব জায়গায় আমাদের ক্যামেরা থাকবে। একেবারে বেছে বেছে, ছেঁকে ছেঁকে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে। এটা জাতীয় সম্পদ, এটা জনগণকে রক্ষা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে অলাভজনক বলে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে রেল বন্ধের পদক্ষেপ নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারে এসে রেলের উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়।
এটি আধুনিক ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এর মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম সবটুকু লাইনই ডাবল লাইনে উন্নীত হলো। এতে যাত্রীরা আরাম-আয়েশে চলতে পারবে। পরিবহন খরচও কমে যাবে, এ পথে আগের চেয়ে এক ঘণ্টা সময় কম লাগবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে রেল খাতের সম্পদ ধ্বংস করছে। আসলে ওরা সন্ত্রাসী, ওরা এটা ছাড়া কিছুই বোঝে না। এদের কাজই হলো ধ্বংস করা। সরকারপ্রধান ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন উদ্বোধন করেন। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে নিরবচ্ছিন্নভাবে নতুন যুগের সূচনা হলো। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে আর কোনো ট্রেনকে ক্রসিংয়ে পড়তে হবে না। কমে আসবে ট্রেনযাত্রার সময়েও।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে স্টেশন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।
জানা গেছে, আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার অংশে আগে একটি রেললাইন ছিল। এখন তা দুই লেন করা হয়েছে। এই ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ৩২১ কিলোমিটার ডাবল লাইনে উন্নীত হলো। আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজ রূপান্তর প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৫ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। প্রায় সাত বছর সময় লেগেছে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় দুবার বাড়ানো হয়েছিল প্রকল্পের মেয়াদ।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই লাইনের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে আন্তঃনগর ট্রেনের যাতায়াত সময় পৌনে এক ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা কমবে। দুই লেন চালুর পর থেকে সেখানে মিটারগেজের পাশাপাশি ব্রডগেজ ট্রেনও চলতে পারবে।
আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের মতো হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি নেতারা এ কথা বলেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির এক নেতা রাতে দেশ রূপান্তরকে এ কথা জানান। প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ওই নেতা বলেন, ‘বৈঠকে ব্রিটিশ হাইকশিনার আমাদের কাছে জানতে চান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ সময়ে নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজ করছে কি না। আমরা তাকে বলেছি, গত ১৭ জুলাই রাজধানী ঢাকায় একটি উপনির্বাচন হয়েছে। আপনার সে নির্বাচন দেখেছেন। ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। ভোট পড়েছে মাত্র ৯ শতাংশ। নির্বাচনের শেষ সময়ে হিরো আলমের মতো একজন দুর্বল প্রার্থীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সামনে মারধর করা হয়েছে, অথচ পুলিশ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে। হিরো আলমকে রক্ষার চেষ্টা করেনি তারা।’
হাইকমিশনারকে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী মনোভাবের পরিবর্তন হয়নি। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গত মঙ্গল ও বুধবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আমরা শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছি। ঢাকায় পদযাত্রায় হামলা করেছে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বগুড়া, খাগড়াছড়ি, লক্ষ্মীপুর, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে হামলা করেছে। লক্ষ্মীপুরে কৃষক দলের কর্মী সজীবকে হত্যা করেছে স্থানীয় ছাত্রলীগের সভাপতি। ১৮ ও ১৯ জুলাইয়ের পদযাত্রা কর্মসূচিতে নিহত হয়েছে একজন, আহত নেতাকর্মী প্রায় তিন হাজার; গুলিবিদ্ধ হয়েছে প্রায় দুই হাজার। সারা দেশে মামলা হয়েছে ৩১০টি, গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩০০ নেতাকর্মী; আসামি করা হয়েছে ১১ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে।’
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে যুক্তরাজ্যের ঢাকা হাইকমিশন একটি টুইট করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক আজ (গতকাল) আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে উৎসাহিত করে।’
ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের বার্তাই প্রমাণ করে এ দেশে কোনো নির্বাচন হচ্ছে না, মানুষ ভোট দিতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় যুক্তরাজ্য। গেল এক সপ্তাহে বাংলাদেশের হামলা-মামলা, মৃত্যু ও সরকারি কর্মকর্তাদের রদবদল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে তারা দৃষ্টি রাখছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’
বেলা ৩টায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের বৈঠক শুরু হয়। সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর টিমোথি ডকেট। বিএনপি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে ছিলেন দলটির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। নির্বাচন যেন সবার অংশগ্রহণে ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, সরকার এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সে তাগিদই দিচ্ছেন তারা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে আমি বলেছি, যুক্তরাজ্যের নির্বাচনের সময় আপনাদের প্রধানমন্ত্রী কি পদত্যাগ করেন? সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়?’
কাদের বলেন, ‘বিএনপি এমন সব দাবি করছে, যা দেশের সংবিধানের বাইরে। আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না।’ গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে সেতু ভবনে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর যুক্তরাজ্যের ঢাকা দূতাবাস একটি টুইট করে। টুইটে বলা হয়েছে, ‘ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক আজ (গতকাল) আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে উৎসাহিত করে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি জানতে চেয়েছি, নির্বাচনের সময় তাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন কি না, কিংবা পার্লামেন্ট বিলুপ্ত হয় কি না। হাইকমিশনার বলেছেন, তারা পদত্যাগ করেন না। আমি বলেছি, ‘ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ না করলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী কেন পদত্যাগ করবেন?’
সংবাদ সম্মেলনে বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু জানাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এই প্রথম ব্রিটিশ হাইকমিশনার প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচনের কথা বলেছেন। এ ছাড়া গুলশানে (উপনির্বাচন) ভায়োলেন্স নিয়ে কথা হয়েছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নকে যা বলেছি, আমেরিকানদের সঙ্গে যে কথা হয়েছে, ব্রিটিশ হাইকমিশনারকেও একই কথা বলেছি। আমাদের বক্তব্য অভিন্ন।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি অশান্তির পথে হাঁটছে, সহিংসতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে তা আরও স্পষ্ট। তারা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে। তারা সন্ত্রাস করবে, সন্ত্রাস করে নির্বাচন পন্ড করবে, নির্বাচন ভন্ডুল করবে এ লক্ষ্য নিয়েই তারা এগোচ্ছে। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেছেন তাদের ১১ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমরা সে তালিকা সামনে আনতে বলেছি।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের পরিষ্কার কথা, আওয়ামী লীগের দফা একটাই সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার আমলে নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে। বিএনপির দাবি অদ্ভুত, উদ্ভট ও অযৌক্তিক। বিএনপিকে নির্বাচনে জেতার গ্যারান্টি দেওয়া হবে এমন নিশ্চয়তা না পেলে তারা নির্বাচনে আসবে না, এটা তাদের প্রতিজ্ঞা। তারা পণ করেছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের বলেছি, তারা যেন শান্ত থাকে; বিএনপির উসকানিতে সাড়া না দেয়। বিএনপি উসকানি দেবে কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীদের মাথা গরম করা চলবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি যে কোন পথে যাচ্ছে তা পরিষ্কার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, তারা যা করার তা-ই করবে। একটা দেশে এক দল সন্ত্রাস করবে, অফিস ভাঙবে, পুলিশকে মারতে যাবে, যেখানে-সেখানে মারামারি করতে যাবে সরকার কি চুপ করে বসে থাকবে?’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আর বাকি কয়েক মাস। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা আগামী বছরের জানুয়ারিতে হবে এ নির্বাচন। এ নির্বাচন সামনে রেখে দেশে যতটা উত্তাপ ছড়িয়েছে, তার চেয়ে বেশি দেখা দিয়েছে বিদেশি তৎপরতা। আগামী নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক হয় সেই চাপ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এ নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রত্যাশার বিষয়টি এরই মধ্যে স্পষ্ট করেছে। ঘন ঘন দেশটির প্রতিনিধিদল সফর করছে। পিছিয়ে নেই ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ)। বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে এরই মধ্যে তৎপরতা বাড়িয়েছে ইইউ। গত ৮ জুলাই থেকে বাংলাদেশ সফর করছে ইইউর প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল। এ সফরে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর জোর দিয়েছে তারা। তবে আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে কি না এখনো ইইউ প্রতিনিধিদল এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি এবং ইইউসহ সব দেশকে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ইইউ প্রতিনিধিদলের ১৬ দিনের এই সফর। এ সফরে দলটি গত বুধবার পর্যন্ত ৭৫টির মতো বৈঠক করেছে। ২৩ জুলাই ছয় সদস্যের এ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ছেড়ে যাবে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত কয়েক দিনের সফরে ইইউ প্রতিনিধিদল সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছে। নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে তারা আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক হওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছে। এর মধ্যে গত ১৫ জুলাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, সংসদের বাইরে দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এবি পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য দলগুলো এ সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার পক্ষে মত দিয়েছে এবং তাদের যুক্তি তুলে ধরেছে। এ সরকারের অধীনে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে না এবং সহিংসতার আশঙ্কা করে দলগুলো ইইউ প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ জানিয়েছে, নির্বাচনে যেন ইইউ পর্যবেক্ষক দল না পাঠায়।
ইইউ প্রতিনিধিদল এ সফরে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, সুশীলসমাজ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে তারা নির্বাচনী আইন, মানবাধিকার, বিরোধী পক্ষের প্রতি আচরণ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সবার মতামত নিয়েছে। প্রতিনিধিদলটি ফিরে গিয়ে ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। ওই প্রতিবেদনের আলোকে বাংলাদেশের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন তিনি।
ইইউর প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল আগামী ২৩ জুলাই ফিরে যাবে। তবে ওই দিনই চার দিনের সফরে ইইউ মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইয়োন গিলমোর আসছেন। আয়ারল্যান্ডের সাবেক এই উপ-প্রধানমন্ত্রী এর আগে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন ২০১৮ সালে। জানা গেছে, এ সফরে তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুকেও প্রাধান্য দেবেন। তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন। ঢাকায় ইইউ আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গিলমোর তার সফরে সরকারের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তা, সুশীলসমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসবে, এ ধরনের সফর আরও বাড়বে। ইইউ প্রতিনিধিদলের এ সফর বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের জন্য ইতিবাচক। এসব সফরের ফলে নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে জবাবদিহি বাড়বে। নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী পক্ষের অনড় অবস্থানের ফলে যে উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার সমাধান আসতে পারে। আর দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বোধোদয় হতে পারে সমাধানের পথ খুঁজতে।
এ বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইইউ প্রতিনিধিদলের সফরের মধ্যেই গত সোমবার ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হলো। আজকে (গতকাল বুধবার) তারা যৌথ বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে। এ ঘটনার কারণে তারা তৎপরতা বাড়াবে। এই ছোট্ট নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আর জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে কীভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করবে তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আমি মনে করি, এর মাধ্যমে সরকার পক্ষ থেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বড় প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। আমি যত দূর জানি, তারা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়।’
ঢাকার একটি নেতৃস্থানীয় থিংক ট্যাংক বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গণতন্ত্র এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যেসব নেতিবাচক সমালোচনা হচ্ছে তা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য কোনো ভালো আলোচনা বলা যাবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতেই হবে।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিশ্বজুড়ে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী আজ সোমবার (০২ অক্টোবর) ঢাকার বাতাসের মান ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’। এদিন সকাল ১০টার দিকে ১২৯ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে ঢাকা।
এসময় ১৮৩ স্কোর নিয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। ১৬২ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। ১৬০ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। ১৫৬ স্কোর নিয়ে চতুর্থ ভারতের আরেক শহর করাচি। ১৫৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইতালির মিলানো।
এ ছাড়া একইসময়ে একিউআই স্কোর ১১৭ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে চীনের উহান। ১১৩ স্কোর নিয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর। ১১২ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। ১০৯ স্কোর নিয়ে দশম স্থানে রয়েছে সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।