
ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর আবারও জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রলম্বিত যুদ্ধ এবং আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে চলেছে। যুদ্ধের প্রতিটি দিন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে এবং বিশ্বের দূরতম প্রান্তে অনেক জীবন কেড়ে নিচ্ছে এবং ধ্বংস করছে। ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার এই সময়ে ভবিষ্যতের ধকল মোকাবিলায় বিশ্বসম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্বলদের জন্য সহনশীলতা তৈরিতে স্পষ্টত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আবশ্যক।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল শুক্রবার গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপে (জিসিআরজি) ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে আমরা আজকে যখন ক্রমবর্ধমান সংকট এবং মানবতার ওপর এর বিধ্বংসী প্রভাব নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি, তখন ইউক্রেনে সংঘাত চলছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিদিন যুদ্ধে নতুন নতুন অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আরও বেশি ধ্বংস ডেকে আনছে এবং সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে।’
দারিদ্র্য ও বৈষম্য তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দরিদ্র দেশগুলোর ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসব সমস্যা এবং অন্যান্য ধাক্কা বিশ্বজুড়ে খাদ্য, শক্তি ও অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়িয়েছে, যার ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অগ্রগতিতে বিলম্ব হচ্ছে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ জ্বালানি ও খাদ্য আমদানিকারক দেশ হিসেবে ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয়, মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপে ভুগছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতের ধকল মোকাবিলায় সহনশীলতা তৈরি করতে তার কয়েকটি নির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন। তিনি তার প্রথম চিন্তায় বলেন, ‘আমাদের জরুরিভাবে একটি সংস্কারকৃত আন্তর্জাতিক আর্থিক কাঠামো প্রয়োজন, যা স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিনা শর্তে রেয়াতি, স্বল্পমূল্যের, স্বল্প সুদের তহবিলে প্রবেশাধিকারসহ আর্থিক সুবিধা দেবে।’
তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবশ্যই জরুরি অবস্থার সময় আইএমএফের এসডিআর তহবিলের ন্যায়সংগত অ্যাকসেসসহ সংকট ও বিপর্যয়কালে তহবিলে সহজ অ্যাকসেস থাকতে হবে। এ ছাড়া আইএফআই ও এমডিবি থেকে নিম্ন সুদে তহবিল প্রাপ্তির সুযোগ থাকতে হবে।’
দ্বিতীয়ত, তিনি বলেন যে কারণগুলো খাদ্যের মূল্য ও অ্যাকসেসকে প্রভাবিত করে যেমন রপ্তানি বিধিনিষেধ, মজুদ ও সরবরাহ চেইন বিকৃতি, এসবের সুরাহা করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘এ প্রসঙ্গে আমরা খাদ্য সরবরাহের উন্নতিতে (জাতিসংঘ) মহাসচিবের বাজার উন্মুক্ত রাখা, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা অপসারণ এবং খাদ্য মজুদ ছেড়ে দেওয়ার আহ্বানকে পূর্ণ সমর্থন করি।’
প্রধানমন্ত্রী ব্ল্যাক সি ইনিশিয়েটিভের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, মানুষকে খাদ্য দিতে এবং জীবন বাঁচাতে এটি আরও সম্প্রসারণ করা দরকার। তৃতীয় পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ জ্বালানি সংমিশ্রণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে জ্বালানি আমদানি হ্রাসের পাশাপাশি জ্বালানি শক্তিকে বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমাদের সরকার নীতিসহায়তা প্রদান করে এবং জ্বালানি খাতে ও সবুজ জ্বালানির রূপান্তরে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে জ্বালানির রূপান্তরকে সহায়তা দেয়।’
খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন পরস্পর সম্পর্কিত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা তার চতুর্থ চিন্তাধারায় বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে; যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পৌনঃপুন্য ও তীব্রতা বাড়ায়। এটি আবার কৃষি, খাদ্য উৎপাদন এবং মানুষের বাস্তুচ্যুতিকে প্রভাবিত করে। তাই টেকসই জ্বালানি, খাদ্য উৎপাদনে উত্তরণ এবং জলবায়ু পদক্ষেপ অপরিহার্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি মনে করেন যে জিসিআরজির তিনটি পলিসি ব্রিফ থেকে এর সুপারিশগুলো এবং ‘এ ওয়ার্ল্ড অব ডেট’ শীর্ষক রিপোর্ট চমৎকার, যা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বৈশি^ক ঐকমত্যকে সহজতর করবে।
পরিশেষে তিনি বলেন, ‘আমাদের সবাইকে অবশ্যই আমাদের স্বার্থের “গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসাসমূহ” সমুন্নত রাখতে হবে।’
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা কঠিন সময়ে জনগণের সহায়তায় তার সরকারের কিছু পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘এতে আমাদের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর কিছু লক্ষণ প্রকাশ করে; যা আমাদের স্বস্তির অনুভূতি দেয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এই পর্যায়ে পৌঁছাতে কিছু কঠিন আর্থিক ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হয়, অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে আমাদের অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসদ্রব্য আমদানি সীমিত করতে হয়, জ্বালানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে হয়, সরকারি খাতে সামগ্রিক ব্যয় হ্রাস করতে হয়, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আইএমএফের কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা করতে হয়, মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে রাখতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় এবং আমাদের জনগণকে কোনো জমি অনাবাদি না রেখে খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গুরুত্বসহকারে নিশ্চিত করেছি যেকোনো ব্যক্তি যাতে খাদ্যের অভাবের শিকার না হয়।’
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন পর্যালোচনা ও মূল্যায়নের কথা রয়েছে। আমরা “ক্ষয়ক্ষতি তহবিল”-এ সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি এবং বিদ্যমান জলবায়ু তহবিলে প্রবেশাধিকার সুবিন্যস্ত হয়েছে দেখতে চাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ছাড়া শিপিং সেক্টরে প্রস্তাবিত কার্বন শুল্ক দ্বারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়। আমরা জলবায়ুঝুঁকি মোকাবিলায় গ্লোবাল শিল্ডের আওতায় বিভিন্ন প্রকল্প চালু হয়েছে এমনটি দেখতে পাব বলে আশা করছি।’
নিজস্ব গ্রিন বন্ড ডিজাইন এবং চালু করার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আমরা এই সমস্ত এবং অন্যান্য সমস্যা সমাধানে বিশ্বব্যাপী ঐকমত্য এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অপেক্ষায় রয়েছি।’ বাসস
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। ঢাকার গন্ডি পেরিয়ে এডিস মশার রাজত্ব কায়েম হয়েছে সারা দেশে। নির্মাণাধীন ভবনগুলো এডিস মশার প্রজননাগার। ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনের তোড়জোড় থাকলেও সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থাগুলোর তৎপরতা তেমন চোখে পড়ে না।
ডেঙ্গু ও এডিস মশার বিস্তৃতি ভয়াবহ হলেও সরকার তা স্বীকার করছে না। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে; ঝরে যাচ্ছে অনেক প্রাণ। সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকদের পক্ষ থেকে যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার তা নেওয়া হচ্ছে না। বরং সচিবালয়ের এসি রুমে সভা করে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশের অবস্থান ভালো এ কথা বলে স্বস্তির ঢেঁকুর তুলছে সরকারের লোকেরা।
সারা দেশে মশা-নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। এ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বছরে কয়েকটি সমন্বয় সভা করা হয়। সেখানে কিছু বক্তৃতা-বিবৃতি দেওয়া হয়। তারপর আর কোনো খবর থাকে না। ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনের মশা-নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু জনবল ও সরঞ্জাম থাকলেও ঢাকার বাইরের সংস্থাগুলোর তা নেই। সেসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানোর বা মশার উপদ্রব কমাতে বিশেষ বরাদ্দের কোনো খবর নেই। জনরোষ এড়াতে ঢাকার বাইরের নগর সংস্থাগুলো ব্লিচিং পাউডার ও স্যাভলন দিয়ে মশা-নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। ডেঙ্গুতে এ বছর মৃত্যুর রেকর্ড হলেও সেদিকে নজর নেই মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রী, সচিব বা অন্য কাউকে মশা-নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ঢাকা বা ঢাকার বাইরের কোথাও অংশ নিতে দেখা যায় না।
ঢাকায় ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সিটি করপোরেশন বলছে, প্রতিটি নির্মাণাধীন ভবন এডিস মশার কারখানা। কিন্তু সেদিকে রাজউক নজর দেয় না। যদিও সংস্থাটি বলছে, তারা কাজ করছে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাজ সরকারি ভবন ও স্থাপনাগুলোর আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। অফিস ও কোয়ার্টারের বাসিন্দাদের সচেতন করা। এ ব্যাপারে তাদের তৎপরতা দেখা যায় না। স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয় এবং আশপাশের এলাকায় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও এডিসের বংশবিস্তার বিষয়ে সচেতন করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও দায় রয়েছে। কিন্তু, প্রতিদিন এডিসবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসে শত শত মানুষ মরলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎপরতা চোখে পড়ে না।
নগরবাসী শুধু সিটি করপোরেশনকে দায়ী করে নিজেদের দায় শেষ করছে। ভবন মালিক বা আবাসিক সোসাইটিগুলো নিজ অবস্থান থেকে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে পারে। কিন্তু ভয়াবহ উপদ্রবের সময়েও তাদের তৎপরতা চোখে পড়ছে না। ঢাকায় পুলিশের থানাগুলোও এডিস মশার বড় আখড়া। সেসবও সঠিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে না।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছে। তাতে মশা-নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নেয়। সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এডিসবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সাফল্য নিয়ে গর্ব করেন। বলেছেন, ভারত, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও সিঙ্গাপুরের চেয়ে বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভালো, ভয়াবহতার দিকে যায়নি।
বৈঠকে বলা হয়, ভবন বা স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার পরও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বাসাবাড়ির লোকজন সচেতন হননি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে মেয়রদের নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, তাদের পানির লাইনসহ সব ইউলিটি লাইন কেটে দেওয়ার মতো কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সভায় বলা হয়, নির্মাণাধীন ভবনগুলো মশা জন্মানোর বড় জায়গা। এসব ভবনের মালিকদের সতর্ক করতে হবে। না শুনলে জরিমানা করতে হবে; আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সবশেষে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিতে হবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার অভিযানে গিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকা জরিমানা করেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, এডিসবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি নিরলসভাবে কাজ করছে। মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের পদ্ধতিগত ভুল ছিল, সেটা স্বীকার করে বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রম শুরু করেছি আমরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে আমাদের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। তারা গবেষণায় আমাদের সহযোগিতা করছে। একটি ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগে পর্যাপ্তসংখ্যক কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এডিস মশা বাসাবাড়ি, নির্মাণাধীন ভবন ও পরিত্যক্ত পাত্রে পানি জমে থাকলে হতে পারে। এজন্য সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। আমরা একটি মৃত্যুও কামনা করি না।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে সামছুল কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নিরন্তর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ডিএসসিসির পক্ষ থেকে সর্বশক্তি নিয়োগ করা হয়েছে। নির্মাণাধীন ভবনগুলো এডিস মশার প্রজননের কারখানা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে এডিস মশার প্রজনন রোধে এগিয়ে আসতে হবে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রেসিডেন্ট আলগমীর সামসুল আলামিন (কাজল) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশার প্রজনন ঘটে, এটা সত্য। সেটা অনুধাবন করে রিহ্যাব সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার সদস্যদের খুদেবার্তা (এসএমএস) দিয়ে সচেতন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু, আমাদের কয়েকজন সদস্য ফোন করে আমাকে বলেছেন, এটা রিহ্যাবের কাজ না। এসব করার কোনো মানে হয় না। প্রতিদিন বিভিন্ন রোগে কত মানুষই মারা যায়, ডেঙ্গুতে মৃত্যুও একই রকম। এটা নিয়ে মাতামাতি করার কিছু নেই।’
এফবিসিসিআইয়ের আবাসন সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশার প্রজনন হচ্ছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এ ব্যাপার রিহ্যাব মৌসুমের শুরু থেকেই সচেতন রয়েছে। তবে রিহ্যাব সদস্যদের ভবনে এডিসের প্রজনন হচ্ছে বলে আমি মনে করি না। রিহ্যাবের সদস্য নন এমন লোকদের নির্মাণাধীন ভবনেও এডিস মশার ছড়াছড়ি। তাদের সচেতন করা হচ্ছে না।’
রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্মাণাধীন ভবনে মশার প্রজনন বন্ধে কাজ করছে রাজউক। রুটিন কাজ করছে কর্মীরা। আর গতকাল পর্যন্ত কাউকে জরিমানা করা হয়নি।’
দেশের নগরাঞ্চলের মশা-নিয়ন্ত্রণ কাজের সমন্বয়ের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন অনুবিভাগের। এ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার বিভাগ সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে কতটুকু করছে বলতে পারব না। এডিস নিয়ন্ত্রণ কাজে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।’
সকাল ৭টার দিকে কারাগারে নাস্তা দেওয়া হয়। আদালতে আনার পর রাখা হয় হাজতখানায়। শুনানি শেষ হতে দুপুর গড়িয়ে যায়। আবার হাজতখানা হয়ে কারাগারে পৌঁছতে বিকেল বা সন্ধ্যা পার হয়ে যায়। মাঝখানের সময়টুকুতে বনরুটি বা পাউরুটি, কলা আর একটি ডিম দেওয়া হলেও শুনানি শেষে হাজতখানায় গিয়ে সেটি মেলে না। সারা দিন হাজতখানা আর কাঠগড়ায় ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে ক্ষুধার জ্বালা নিয়েই আবার কারাগারে ফিরে যাওয়ার এমন দুর্দশার কথা জানা গেল এক বন্দির সঙ্গে কথা বলে।
গত ১৫ জুন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মো. আরিফের (৩২) সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। মাদক মামলায় গত বছরের ২৩ মার্চ থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়ার এই বাসিন্দা। এ পর্যন্ত অন্তত ১৫ ধার্য তারিখে হাজিরা দিতে তাকে কারাগার থেকে খুব সকালে প্রিজন ভ্যানে করে আসতে হয়েছে। শুধু আরিফই নন, ঢাকার আদালতে সাক্ষ্য, যুক্তিতর্ক, জামিন কিংবা রিমান্ড শুনানির ধার্যদিনে হাজির করা আসামিরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্ষুধায় ছটফট করেন। অনেকে করেন অসহিষ্ণু আচরণ। কারা কর্মকর্তা, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগ, হাজতখানার তদারকির দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কয়েক বছর ধরে আদালতে নিয়ে আসা আসামিদের একবেলা শুকনো খাবার ও পানি দেওয়া হচ্ছে। এজন্য প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দ ৫০ টাকা। এ টাকায় কয়েক স্ল্যাইস পাউরুটি অথবা দুটি ছোট আকারের বনরুটির সঙ্গে কলা ও ডিমের ব্যবস্থা থাকে। দুপুর ১২টায় খাবারের প্যাকেট হাজতখানায় আসামিদের হাতে দিয়ে দেওয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই সামান্য খাবার ক্ষুধার্ত আসামিদের অনেকে খুব আগ্রহ নিয়ে খান। আবার অনেকেই আগ্রহ দেখান না। একজনের খাবার অন্যজনের খেয়ে ফেলার ঘটনাও অহরহ।
আসামি ও তাদের আইনজীবীরা বলেন, ৩০০ গ্রাম রুটির কথা বলা হলেও তা পরিমাণে থাকে কম। এছাড়া দুপুর বা বিকেল পর্যন্ত যেসব আসামি মামলার শুনানিতে থাকেন তাদের অনেকের এই সামান্য খাবারও জোটে না।
ঢাকার আদালত এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, ৯০টি ফৌজদারি আদালতের এজলাসে প্রতি কর্মদিবসে কারাবন্দি ও গ্রেপ্তার করা আসামি মিলিয়ে অন্তত ৫০০ জনকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। তাদের জন্য নির্ধারিত চারটি হাজতখানার একটি ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত ভবনের নিচে, একটি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত ভবনে, একটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালত ভবন এবং একটি জেলা ও দায়রা আদালত ভবনে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগ) মোহাম্মদ আনিসুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, থানা থেকে আনা আসামিদের শুকনো খাবারের বিষয়টি দেখভাল করে ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগ। আর কারাগার থেকে আনা আসামিদের বিষয়টি তদারকির দায়িত্ব কারা কর্তৃপক্ষের। ২০১৮ সাল থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কারাবন্দি ও থানা থেকে আসামিদের নির্দিষ্ট বরাদ্দের এই খাবার দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘এখন তো তাও আসামিরা কিছু খাবার পাচ্ছেন। একসময় এ সুযোগটিও তাদের ছিল না। অনেকের অভিযোগ থাকতে পারে। কিন্তু এর বাইরে কিছু করতে হলে, বরাদ্দ বাড়াতে হলে আইন সংশোধন কিংবা কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে।’
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কাউকে অর্ধাহারে বা অভুক্ত রাখার মতো পরিস্থিতি অমানবিক। একজনের বিরুদ্ধে হয়তো ফৌজদারি মামলা হয়েছে। এখন সে আসামি কি না সেটা তো এখনো প্রমাণিত হয়নি। আর যারা কয়েদি তাদের অধিকারের বিষয়টিও তো কোনোরকম বিতর্কের মধ্যে ফেলার কোনো অবকাশ নেই। এজন্যই তো সংশোধনাগারের প্রশ্ন আসে।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘একটা কলা আর বনরুটি দিয়ে কি একজন মানুষ দিন পার করতে পারে? আমরা কমিশন থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
ভোগান্তি বেশি কাশিমপুরের বন্দিদের : প্রতি কর্মদিবসে মামলার শুনানি কিংবা হাজিরা দিতে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২, কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে আসামি আনা হয়। এর মধ্যে ক্ষুধায় সবচেয়ে বেশি কষ্ট করেন কাশিমপুর থেকে নিয়ে আসা বন্দিরা। দায়িত্বরত পুলিশ ও কয়েকজন বন্দির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুনানির দিন কারাগারে তাদের ভোর ৬টা বা তারও আগে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এরপর আদালতে শুনানি শেষ হয়ে আবার কাশিমপুর পর্যন্ত যেতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়।
২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর রাজধানীর বাড্ডা থানায় করা একটি হত্যা মামলায় ৬ আসামির একজন যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলের সিয়াম (৩০) তিন বছর ধরে কারাগারে। মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। গত ২০ জুন ঢাকার বিশেষ জজ দায়রা আদালত-১০ এ কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে নির্ধারিত তারিখে হাজিরার জন্য ভোর ৪টা/৫টায় উঠতে হয়। নাস্তা থাকলেও তাড়াহুড়োতে খাওয়ার সুযোগ মেলে না। সকালে আদালতের হাজতখানায় আনার পর শুনানি শেষ হতে দুপুর গড়িয়ে যায়। অনেক সময় পাউরুটি কলাও জুটে না। তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে স্বজনরা ‘ম্যানেজ’ করে কিছু খাবার পাঠালে একটু পেট ভরে।
ঢাকার আদালত এলাকায় একটি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে দায়িত্বরত একজন কর্মকর্তা ও হাজতখানার তদারকিতে থাকা একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে অভিন্ন সুরে দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেখা গেছে, কোনো আসামির হাজিরা সকালে হয়ে গেছে। আবার কোনো আসামির হাজিরা হবে দেরিতে। দুজনই ক্ষুধার্ত। যে আসামির হাজিরা হয়ে গেছে তিনিও ক্ষুধার্ত থাকেন। হাজতখানায় এসে নিজের খাবার তো খানই অন্যজনের খাবারেও হাত দেন। এ নিয়ে আসামিরা চিৎকার চেঁচামেচি করেন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি সার্কুলার অনুযায়ী আমরা পাউরুটি, কলা ও ডিম বন্দিদের কাছে দিয়ে দিই। শুনেছি বন্দিদের অনেকে যাওয়ার পথে এই খাবার খেয়ে ফেলেন। ওখানে গিয়ে খাবার চান। কারাবিধি অনুযায়ী কারাগারের বন্দিদের খাবার বাইরে নেওয়ার সুযোগ নেই।’
ডিএমপির উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) আনিসুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগেও এই খাবার হাতে হাতে দিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু অনেকেই সেটি প্রিজন ভ্যান বা আদালতে ওঠার আগেই খেয়ে ফেলতেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাজতখানায় নিয়ে আসার পর এই খাবার এখন দুপুরে দেওয়া হয়।
সুযোগ সন্ধানী প্রতারক চক্র : ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত ও সিএমএম আদালতের হাজতখানায় প্রতিটি কর্মদিবসে অসংখ্য মানুষকে খাবারের প্যাকেট হাতে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। সেই খাবার পৌঁছানোর নামে আসামির স্বজনদের কাছ থেকে প্রতারক চক্র আদায় করে মোটা অঙ্কের টাকা। এক প্যাকেট বিরিয়ানি বা ভাত তরকারির মতো সাধারণ মানের খাবার খাওয়াতে ৫০০/৭০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করেন স্বজনরা। যদিও বন্দিদের নিরাপত্তা ও মাদকের বিস্তার ঠেকাতে আদালত এলাকায় বাইরে থেকে খাবার দেওয়ার নিয়ম নেই বলে জানান দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা।
ঢাকা বারের আইনজীবী প্রকাশ কুমার বিশ্বাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শুনেছি শুকনো খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু তা কখনো পেয়েছেন আমাদের আসামিরা এমন বলেননি। মানবিক কারণে মাঝেমধ্যে নিজেদের উদ্যোগে হাজতখানায় গিয়ে শুকনো খাবার দিয়ে আসি।’
ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত উপযুক্ত আদালত কর্তৃক ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত না হচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে নির্দোষ হিসেবে ধরে নিতে হবে এবং অন্ন-বস্ত্রের মতো তার যে মৌলিক অধিকার এটি নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র। যদি কারাবিধি বা অন্য আইনে আদালতে খাবারের দেওয়ার বিধান নাও থাকে তাহলেও কাউকে অর্ধাহারে অনাহারে রাখার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘যে ব্যবস্থা আছে সেটাকে আরেকটু উন্নতমানের করা উচিত বলে মনে করি। প্রসিকিউশন এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারে।’
ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘আদালতের এই জনবহুল এলাকায় আসামিদের জন্য ভাত বা এ জাতীয় খাবারের ব্যবস্থা একটু সময় সাপেক্ষ ও জটিল। এখন যে খাবারটা দেওয়া হচ্ছে সেটার পরিমাণ একটু বাড়িয়ে দিলে আপাতত সমাধান হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আমি কথা বলব।’
স্বতন্ত্র বার্ন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন ১৯৮০ সাল থেকে। এই ইনস্টিটিউট কেন করা প্রয়োজন, সেটা বোঝাতে গিয়ে তাচ্ছিল্য, উপেক্ষা আর অপমান সইতে হয়েছিল। এমন কথাও শুনতে হয়েছিল, ‘ধান্দায় নেমেছে। টাকা নিয়ে কলকাতার লেক সার্কাসে বাড়ি বানাবে।’ এসবের কোনো কিছুতেই পিছু হটেননি। তিন যুগ পর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বপ্নের সেই বার্ন ইনস্টিটিউট। স্বপ্ন পূরণের লড়াইয়ে যিনি এমন অবিচল থেকেছেন এবং এখনো আছেন, তিনি হলেন চিকিৎসক সামন্ত লাল সেন।
ডা. সামন্ত লাল সেনের মন খারাপের গল্প যেমন আছে, তেমনি তার অনুপ্রেরণার নেপথ্যের নায়কও আছেন। তিনি বলছিলেন, ‘ইআরডিতে (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) অফিসের কাজে গিয়েছি। আমার সামনে ফাইলটা একজন ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলেন, কিসের বার্ন, বাংলাদেশে কোনো বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রয়োজন নেই।’
শুধু তা-ই নয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে আজকের বার্ন ইনস্টিটিউটের জন্য যখন জায়গা নির্ধারণ করা হলো তখন ডা. সামন্ত লালের বিরুদ্ধে মিছিল হলো। তার বাসায় প্রায়ই টেলিফোন করে হুমকি দেওয়া হতো ছেলেমেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার। তিনি বলেন, ‘যখন এসব কথা শুনতে হতো, তখন খুব হতাশ লাগত। হতাশার সময়ে আমার স্ত্রী রত্না সেন আমাকে খুব সাপোর্ট দিয়েছেন। আমার বাবা শ্রী জিতেন্দ্র লাল সেন বলতেন, দেখো যখন কাজ করতে যাবে, তখন অনেকেই অনেক কথা বলবে। এর জন্য লক্ষ্য থেকে সরে যাওয়া যাবে না। লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে।’
ডা. সামন্ত লাল বলেন, ‘অনেক অপমান সহ্য করে আমাকে এই জায়গায় আসতে হয়েছে। আমি কলকাতাও যাইনি, জায়গাও কিনিনি। বাংলাদেশে আছি এবং মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। আমৃত্যু এটাই করে যেতে চাই।’
আগুনে পোড়া রোগীদের নিয়ে প্লাস্টিক সার্জন ডা. সামন্তের কাজ শুরু হয় ১৯৭৫ সালে। তখন তিনি নিজ জেলা হবিগঞ্জ থেকে বদলি হয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আসেন। সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন ড. রোনাল্ড জোসেফ কাস্ট ওই হাসপাতালে আসেন পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিতে। মাত্র ৫টি শয্যা নিয়ে সেখানে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির চিকিৎসা শুরু হয়েছিল।
এরপর ১৯৮০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি হয়ে আসেন ডা. সামন্ত লাল সেন। ওই সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসাসেবার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি অবাক হয়ে দেখি, দগ্ধ রোগীদের মশারি টাঙিয়ে বারান্দায়, মেঝেতে, বাথরুমের পেছনে ফেলে রাখা হয়েছে। দুর্গন্ধে কেউ তাদের কাছে যেত না। যে তারা অচ্ছ্যুত। তারা কোনো ধরনের চিকিৎসা পেত না।’
ডা. সামন্ত লাল বলছিলেন, পোড়া রোগীদের তখন মলম ধরনের কিছু একটা ব্যবহার করতে দেওয়া হতো। তাদের আত্মীয়স্বজনরা কান্নাকাটি করত। সত্যি বলতে, তখন এই রোগীদের প্রতি কারও সহমর্মিতাও ছিল না। এমনকি ডাক্তারর-নার্সদেরও আগ্রহ কম ছিল।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা ডা. সেন জানান, একজন প্লাস্টিক সার্জন হিসেবে এ দৃশ্য তাকে খুব কষ্ট দিয়েছিল। প্লাস্টিক সার্জনের চিকিৎসাসেবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ আগুনে পোড়া রোগী। তখন থেকেই তিনি স্বতন্ত্র বার্ন ইনস্টিটিউট স্থাপনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আসছিলেন; যাতে এসব রোগীর কষ্ট লাঘব করা যায়, চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত করা যায়।
১৯৮৬ সালে ডা. সামন্ত লাল এবং তার শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ মিলে ঢাকা মেডিকেলে স্বতন্ত্র বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। তখন সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কবীর উদ্দিন আহমেদ তাদের ভীষণ সহযোগিতা করেছিলেন।
২০০৩ সালে সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে ঢাকা মেডিকেলে ৫০ শয্যার বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের যাত্রা শুরু হয়। শয্যা বাড়তে বাড়তে এখন ৩০০ হয়েছে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। দুই বছর পর চালু হয় ৫০০ শয্যার ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠানটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন ডা. সামন্ত লাল সেন।
তিনি বলেন, ‘আমি একটা গল্প সবার কাছে করি যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে ৫টা শয্যা নিয়ে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা পূর্ণতা পেল তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বার্ন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।’
এই ইনস্টিটিউট পোড়া রোগীর চিকিৎসায় শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশে^র সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান বলে জানালেন ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিন বলেছিলেন, এমন কিছু করতে হবে বাংলাদেশের মানুষকে যাতে সিঙ্গাপুর যেতে না হয়, চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের মানুষ যেন বাংলাদেশে আসে। সেই লক্ষ্যেই আজকের এ প্রতিষ্ঠান।
এই ইনস্টিটিউটে বিশে^র সর্বাধুনিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখান থেকে কখনো কোনো রোগীকে অন্যত্র পাঠাতে বলা হয় না। পোড়া রোগীর পাশাপাশি বিচ্ছিন্ন হাত জোড়া লাগানোর চিকিৎসাও এখানে হয়। কারও হাত কেটে আলদা হয়ে যাওয়ার ছয় ঘণ্টার মধ্যে নিয়ে গেলে এই চিকিৎসা দিতে পারে ইনস্টিটিউট। প্রচারের অভাবে অনেকেই জানেন না, এখানে ক্যানসারের চিকিৎসাও দেওয়া হয়।
ডা. সামন্ত লাল বলেন, দেখবেন, কারও মুখে ক্যানসার হলে তিনি পরিবার থেকে আড়াল হয়ে যান। গামছায় মুখ ঢেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখেন। এমন অনেক রোগী তারা পেয়েছেন, যাদের পরিবার থেকে আলাদা রাখা হয়, বারান্দায় ঘুমাতে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘এমন রোগীদের আমরা যেটা করি, শরীরের অন্যান্য জায়গা থেকে মাংস কেটে এনে মুখে লাগিয়ে দিই। যেন তিনি যে কয়েকটা দিন বাঁচেন স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।’
ডা. সামন্ত বলেন, ‘৫ থেকে ৫০০ শয্যার জন্য যে কী কষ্ট করতে হয়েছে তা বলে বোঝানো যাবে না। পকেটের টাকা খরচ করে কাজ করতে হতো, একটা টাইপ করার জন্য গুলিস্তানে যেতে হতো। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যখন যেতাম এবং বার্ন ইনস্টিটিউট করার কথা বলতাম, তখন কেউ পাত্তা দেয়নি।’ যোগ করেন তিনি।
এই চিকিৎসকের এখন একটাই প্রার্থনা মৃত্যুর আগে সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহীতে স্থাপিত বার্ন ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম যেন দেখে যেতে পারেন। সে কারণে এখনো প্রতিদিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্য মন্ত্রীদের কাছে কিছু না কিছু চান। তার চাওয়া হচ্ছে বিভাগীয় শহরে স্থাপিত বার্ন ইউনিটগুলো দ্রুত কাজ শেষ করে চালু করা, সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা। এ নিয়ে তিনি রোজই দৌড়াদৌড়ি করেন।
গল্পের ফাঁকে তার জীবনের বড় অনুপ্রেরণার কথা বলতে গিয়ে জানালেন কাকরাইল মসজিদের একজন মুসল্লি তাকে বলেছিলেন, ‘বাবাজি, আপনি যদি মানুষের বাচ্চাদের জন্য কিছু করেন, আল্লাহ নিজে আপনার বাচ্চাদের জন্য ভালো কিছু করে দেবেন। আপনার বাচ্চার হেফাজত করবেন।’
অনেক আগে ডা. সামন্ত লাল ঠোঁটকাটা, তালুকাটা রোগীদের জন্য ক্যাম্প করতেন। বেশ কয়েক বছর পর একই জায়গায় দ্বিতীয়বার ক্যাম্প করতে গিয়ে অবাক হয়েছিলেন তিনি। একটা মেয়ে এসে তার পায়ে ধরে সালাম করেন। সঙ্গে একটা ছেলে। মেয়েটি তাকে বলেছিলেন, ‘ভগবানকে দেখিনি, আপনাকে দেখলাম।’ বহু দিন পরও ডা. সেন মনে করতে পারেন, পাশের ছেলেটি ছিল ওই মেয়ের স্বামী। তিনি বলেন, ‘এমন ভালোবাসা আর সম্মান পাওয়ার পর কীভাবে মন খারাপ করি? আমার হয়তো কোটি টাকা নেই, কিন্তু এই যে মানুষের ভালোবাসা, একি আমি টাকা দিয়ে পাব?’
প্রথম জীবনে সামন্ত লাল চেয়েছিলেন অনেক টাকার মালিক হতে। প্লাস্টিক সার্জারিতে যোগ দিয়ে তিনি ভাবতেন বড় প্লাস্টিক সার্জন হবেন, মানুষের চেহারা পরিবর্তন করবেন আর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা উপার্জন করবেন। আমেরিকায় যারা প্লাস্টিক সার্জন তারা খুব বড়লোক। তাদের বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ি রয়েছে এমন কথাও তার জানা ছিল। কিন্তু ঢাকা মেডিকেলে আসার পর তার স্বপ্ন অন্য দিকে বাঁক নেয়। পোড়া রোগীদের দুর্দশা তাকে নাড়া দিয়ে যায়। তাদের আত্মীয়স্বজনের কান্না দেখে কীভাবে যেন তার টাকাওয়ালা হওয়ার ইচ্ছেটা মরে যায়। লন্ডনে উচ্চশিক্ষার সুযোগও পায়ে ঠেলেছেন। এসব নিয়ে এখন আর তার আফসোসও নেই। কারণ এই জীবনে তিনি এত ভালোবাসা আর সম্মান পেয়েছেন যে এখন মনে হয়, ‘ভাগ্যিস টাকার ডাক্তার হইনি’।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ শনিবার ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করবে বিরোধী দল বিএনপির তিনটি সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। বেলা ২টায় এই সমাবেশ শুরুর কথা রয়েছে। অন্যদিকে বিকেল ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘শান্তি সমাবেশ’ করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। ক্ষমতাসীন দলের এই কর্মসূচিকে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’-এর পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
এর আগে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গত মঙ্গল ও বুধবার ঢাকাসহ দেশের সব জেলা ও মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। অন্যদিকে, বিএনপির পদযাত্রার পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ওই দ্ুিদন ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশ করেছিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। পদযাত্রা কর্মসূচির প্রথম দিনে লক্ষ্মীপুরে কৃষক দলের এক কর্মী নিহতসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘাতের ঘটনা ঘটেছিল। এ ছাড়া এই দুুদিন যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছিল রাজধানী এবং অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরবাসীকে।
সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপির এক দফার আন্দোলনের পাশাপাশি ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল বিভাগীয় শহরে তারুণ্যের সমাবেশ করেছে। আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তাদের এই কর্মসূচি। সমাবেশে অংশ নিতে আশপাশের জেলার অনেক নেতাকর্মী গতকালেই ঢাকায় এসে পৌঁছান।
যুবদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশ সফল করতে ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। সমাবেশে অংশ নিতে গতকাল শুক্রবার ঢাকা বিভাগের কিছু জেলার যুবদলের অনেক নেতাকর্মী ঢাকায় পৌঁছেছেন। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ জেলার নেতাকর্মীরা কাল (শনিবার) সকালে আসবেন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার সহযোগিতা চাই। গত বৃহস্পতিবার আমরা ডিএমপি কমিশনারের অফিসে গিয়েছিলাম। তারা সহযোগিতার আশ^াস দিয়েছেন।’
গত ১৪ জুন চট্টগ্রামে প্রথম তারুণ্যের সমাবেশ হয়। এরপর ১৯ জুন বগুড়া, ২৪ জুন বরিশাল, ৯ জুলাই সিলেট, ১৭ জুলাই খুলনায় সমাবেশ হয়। আজ শনিবার ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তারুণ্যের সমাবেশ। ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে গতকাল শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু বলেন, ‘বঞ্চিত তরুণদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই তারুণ্যের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তরুণ সমাজ আজ প্রস্তুত। তারা এই সরকারের কাছ থেকে মুক্তি চায়। এখন আর প্রতিবাদ নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বিএনপির আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, জনগণের ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান। তিনি বলেন, ‘দেশ আজ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কোনো প্রার্থীর নিরাপত্তা নেই। বিদেশিরা বিষয়টি ফিল করে স্টেটমেন্ট দিল, সেই বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন “মগের মুল্লুক”। প্রার্থীকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হচ্ছে, তার কি বিচার চাওয়ার অধিকার থাকবে না। আমি বলব, সরকার দেশটাকে মগের মুল্লুক পেয়েছে।’
এরপর আমান উল্লাহ আমানসহ তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন।
গত ২ জুন সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু বিএনপির চলমান আন্দোলনে তরুণদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে দলটির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের রাজধানী ঢাকাসহ ছয়টি বড় শহরে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়ংকর হয়ে ওঠা মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) অন্যতম সামরিক কমান্ডার হাফেজ নুর মোহাম্মদসহ ছয় সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গতকাল শুক্রবার কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শ্যামলাপুর-বাহারছড়ার গহীন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে বলে র্যাব জানিয়েছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুনোখুনির পেছনে রয়েছে এই আরসা। বিদ্রোহী এই গোষ্ঠীর কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার সামরিক কমান্ডার ও আরসার অন্যতম নেতা হাফেজ নুর মোহাম্মদ।
র্যাব জানিয়েছে, গত ৭ জুলাই ভোর ৬টার দিকে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৮ ইস্ট, ব্লক-বি-১৭-১৮ সংলগ্ন এলাকায় গোলাগুলিতে ঘটনাস্থলে তিনজন এবং হাসপাতালে দুজন মারা যান। বাকি আরেকজনের মরদেহ মেলে পাহাড়ের ঢালুতে। এ হত্যাকা-ের নেতৃত্ব দেন আরসার কমান্ডার হাফেজ নুর মোহাম্মদ।
নুর মোহাম্মদের বিষয়ে র্যাবের ভাষ্য, এখন পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০টি হত্যাকা-ের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা মিলেছে। এ ছাড়া একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক সদস্যকে হত্যার নেতৃত্বও দেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই তাকে খুঁজছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
র্যাবের এ অভিযানে নুর মোহাম্মদ ছাড়াও আরসার আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে র্যাবের একটি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, আরসার সামরিক শাখার অন্যরা বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হওয়ায় বর্তমানে সামরিক শাখার মূল দায়িত্বে ছিলেন হাফেজ নুর মোহাম্মদ।
র্যাব জানিয়েছে, কক্সবাজারে বেশ কিছুদিন ধরে একের পর এক অপহরণ, মুক্তিপণ ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছয় হত্যাকা- সংঘটিত হয়। এসব ঘটনায় কক্সবাজার র্যাব-১৫ ও র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা দল নজরদারি শুরু করে। দীর্ঘ নজরদারির একপর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, কক্সবাজার টেকনাফকেন্দ্রিক এসব অপরাধে জড়িতদের অন্যতম আরসার হাফেজ নুর মোহাম্মদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে আরসার অপতৎপরতায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উখিয়া ও টেকনাফের ইয়াবা, মাদক ও মানব পাচার, সোনা চোরাচালান, চাঁদাবাজি, অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়, রোহিঙ্গা কল্যাণ ফান্ডের নামে মাসিক চাঁদা আদায়, সালিশ-বাণিজ্য, বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায় করছে আরসা। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার থেকে শুরু করে তুচ্ছ ঘটনায়ও আরসা ব্যবহার করছে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র। ক্যাম্পে নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতা বিস্তারে অস্ত্র ব্যবহার করছে আরসা সদস্যরা। খুনোখুনিসহ এসব অপরাধ কর্মকা-ে আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে নেমে এসেছে ভয়াবহ অশান্তি। সম্প্রতি সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের কয়েকটি ব্লকে। এর মধ্যে বালুখালী ক্যাম্প-৮ ই-ব্লকে বিচরণ করা আরসা সবচেয়ে শক্তিশালী। তাদের রয়েছে ভারী অস্ত্র। সেখানে কথিত আরসা পরিচয়ধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতায় ক্যাম্পে বাড়ছে উদ্বেগ। প্রতিবাদ করলেই রাতের আঁধারে সশস্ত্র গ্রুপ এসে নিয়ে যাবে, মারধর করবে এ ভয়ে থাকে সাধারণ রোহিঙ্গারা।
আরসা সন্ত্রাসীরা পুরুষদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারীদের হাতেও অস্ত্র তুলে দিয়েছে। তাদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
উখিয়া ও টেকনাফের প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আরসা সদস্যরা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানোর আগে দেশটির সেনাবাহিনী দাবি করেছিল, তাদের ওপর বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা হামলা চালিয়েছিল। রাখাইনে হত্যাযজ্ঞের মুখে ২০১৭ সালের আগস্টে কক্সবাজারের দিকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ঢল নামে।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন।
তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।'
তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।'
পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
বিশ্বমঞ্চে দেশের ক্রিকেটের দূত বলা যায় সাকিব আল হাসানকে। বর্ণিল এক ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশের এই তারকা ক্রিকেটার নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানা গেল কবে তিনি অবসর নিচ্ছেন।
দেশের একটি ক্রীড়াভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবসরের সময় জানিয়েছেন। তার ইচ্ছে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর অবসর ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের এই তারা।
নেতৃত্ব ছাড়া ও অবসরের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলেন, ‘আজকে এখন এই অবস্থায় বলছি, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলবো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেবো। টেস্টের অবসর শিগগিরই। তবে একেক ফরমেট একেক সময় ছাড়লেও আনুষ্ঠানিক অবসর ঘোষণা করবো ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আগে একাধিক সিরিজে বিশ্রামের কথা বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলের বাইরে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপেও দলে ফেরানো হয়নি তাকে। যেহেতু সাকিবের নেতৃত্বে সেই আসরে খেলেছে বাংলাদেশ, তাই অনেকের ধারণা সাকিবের চাওয়াতেই দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
তবে সাকিব এসব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়ক ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দল পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলারও ছিল না! কারন পরের দিন সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকি রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা!'
দলের ভেতরের কথা ভালোভাবে না জেনেই মানুষ যেভাবে সমালোচনা করে সেটাকে হাস্যকর বলেছেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক সমালোচকদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'মানুষের সাইলকোলজি এমন কেন! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!'
অধিনায়ক একা যে দল নির্বাচন করেন না সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, 'রিয়াদ ভাইয়ের যে ডেডিকেশন ছিল তার দলের প্রতি যে অবদান ছিল। দলের হয়ে খেলার যে ইচ্ছে ছিল, সবকিছু সবাই দেখতে পেরেছে। আমার দায়িত্বতো পুরো দলটা নির্বাচন করার না। এমনটা হলে এশিয়া কাপের একদিন পরেই এনাউন্স করে দল দিয়ে দিতে পারতাম। এটা অনেক প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক বিষয় চিন্তা করতে হয়। অনেক কিছু চিন্তা করে দলটা গড়তে হয়।'
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।