
রাজধানীর ফার্মগেটে ভোররাতে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান তালুকদার রাস্তায় পড়ে ছিলেন। তাকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার না করে সীমানার ঠেলাঠেলিতে ব্যস্ত ছিল টহল পুলিশ।
পুলিশের তেজগাঁও থানার যে টহল দল (সিয়েরা-৬১) প্রথম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, এলাকাটি তাদের সীমানার বাইরে ছিল। ফলে তারা আহত মনিরুজ্জামানকে দ্রুত হাসপাতালে না নিয়ে খুঁজতে থাকে এলাকাটি কোন টহল দলের অধীনে। ‘সিয়েরা-৬১’-এর টিম লিডার ঘটনাস্থল থেকে কর্তব্যরত বিভিন্ন দলের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগের ওয়্যারলেস বেতার মারফত বারবার কল করতে থাকেন। এ ছাড়া কারওয়ান বাজার পুলিশ ফাঁড়ি ও থানায় দায়িত্ব তদারকি কর্মকর্তাকেও ফোন করেন। এতেই কেটে যায় বেশ কিছুক্ষণ।
খবর পেয়ে যখন ওই এলাকার টহল টিম ‘স্পেশাল-৬১ কল সাইন’ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, তখন আহত মনিরুজ্জামানকে আশপাশ থেকে ছুটে আসা কয়েকজন মিলে অটোরিকশায় তুলছিলেন। কিন্তু তিনি লম্বা হওয়ায় অটোরিকশায় আটানো যাচ্ছিল না। পরে পুলিশের টহল দলের গাড়িতে করেই নেওয়া হয় হাসপাতালে। এসব করতে করতে কেটে যায় প্রায় আধা ঘণ্টা, এরই মধ্যে মারা যান মনিরুজ্জামান। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এ ঘটনায় শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছেন পুলিশের দুই সদস্য (এসআই ও পরিদর্শক)। অথচ পার পেয়ে যাচ্ছেন তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি), এডিসি, এসি, থানার ওসি ও প্রথম খবর পেয়েও তৎক্ষণিক হাসপাতালে না নেওয়া এসআইসহ দায়িত্বে থাকা অন্যরা।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট অন্যরা এ দায় এড়াতে পারেন কি না, জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্যরা দায় এড়াতে পারেন কি না, এটি পুলিশ কমিশনার মহোদয় দেখবেন। তিনি বিবেচনা করবেন।’
জানা গেছে, ঈদের ছুটি শেষে গ্রামের বাড়ি শেরপুরের শ্রীবরদী থানার কুরুয়া থেকে গত ১ জুলাই ভোরে ঢাকায় পৌঁছান ডিএমপির ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের কনস্টেবল মনিরুজ্জামান। ভোর ৪টার পরপরই তিনি বাস থেকে নামেন ফার্মগেটের আল রাজি হাসপাতালের সামনে। সেখান থেকে মোহাম্মদপুরে বাসায় যাওয়ার জন্য রাস্তার উল্টো দিকে আনোয়ারা পার্কের দক্ষিণ পূর্ব কোণে গিয়ে দাঁড়ান। সেখানেই তিন ছিনতাইকারী তাকে ঘিরে ধরে সবকিছু ছিনিয়ে নিতে গেলে বাধা দেন মনিরুজ্জামান। তখন ছিনতাইকারীরা উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশের পোশাকে ছিলেন না তিনি। মৃত্যুর পর পুলিশ জানতে পারে মনিরুজ্জামান পুলিশেরই সদস্য।
এ হত্যাকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে ছিনতাইকারী রাব্বি, লিটন ও কামরুলকে গ্রেপ্তার করেছে তেজগাঁও থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা-তেজগাঁও বিভাগ।
কী ঘটেছিল সেই ভোরে : প্রত্যক্ষদর্শী দিনমজুর হযরত আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিনি ধাম-িতে কাজ শেষ করে নাখালপাড়ার বাসায় ফেরার পথে ফার্মগেটে দেখতে পান এক লোক রাস্তার পাশে পড়ে আছে। ২০-২৫ জন তাকে ঘিরে রেখেছে, পুলিশও আছে সেখানে। কিন্তু কেউ আহত লোকটিকে হাসপাতালে নিচ্ছে না। পরে তিনিসহ কয়েকজন মিলে তাকে একটি অটোরিকশায় তোলেন, তখনো বেঁচে ছিল আহত ব্যক্তি। তখন পুলিশের একটি দল অটোরিকশা থেকে নামিয়ে ওই ব্যক্তিকে তাদের গাড়িতে তুলে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হয়। সঙ্গে হযরত আলীও যান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মনিরুজ্জামানের রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার তথ্য ভোররাত সোয়া ৪টার দিকে প্রথম পান ডিএমপির তেজগাঁও থানার রাত্রিকালীন টহল দল ‘সিয়েরা-৬১’-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই লিটন কর। ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনে এক রিকশাচালক তাকে জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় একজন আহত হয়ে রাস্তার পাশে পড়ে আছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে এসআই লিটন দেখেন এলাকাটি তার সীমানার বাইরে। তিনি আহতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পরিবর্তে খুঁজতে থাকেন ঘটনাস্থল কার এলাকায় পড়েছে। তেজগাঁও থানার কর্তব্যরত বিভিন্ন টহল দলকে ওয়্যারলেসে পরপর দুবার কলও দেন তিনি। ভোররাত ৪টা ২৩ মিনিটে তিনি মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান কারওয়ান বাজার পুলিশ ফাঁড়ি দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই অপূর্বকে।
এসআই অপূর্ব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাকে বলেছিল সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে একজন। আমি তাকে বলেছিলাম দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাও।’
কিন্তু হাসপাতালে না নিয়ে ৪টা ২৪ মিনিটে এসআই লিটন ‘স্পেশাল-৬১ কল সাইন’-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই মাসুদুর রহমানকে ফোন করেন। এ সময় এসআই মাসুদের টহল গাড়ি সামরিক জাদুঘরের সামনে দিয়ে মণিপুরীপাড়া আবাসিক এলাকার দিকে চাচ্ছিল। ফোন পেয়ে ৪টা ২৯ মিনিটে এসআই মাসুদ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন পথচারীরা একটি অটোরিকশায় ধরাধরি করে তুলছেন আহত মনিরুজ্জামানকে। তখন তিনি অটোরিকশা থেকে নামিয়ে নিজের টহল গাড়িতে করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন বাজে ৪টা ৪৫ মিনিট। এরই মধ্যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান মনিরুজ্জামান।
জানতে চাইলে এসআই লিটন কর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পানি ভবনের সামনে থেকে আনন্দ সিনেমা হলের সামনে গেলে এক রিকশাচালক আমাকে জানায় সড়ক দুর্ঘটনায় একজন আহত হয়ে পড়ে আছে। আমি দ্রুত সেখানে গিয়ে দেখি লোকজন তাকে অটোরিকশায় তুলছে। এ সময় আমি মাসুদ স্যারকে ফোন দিয়ে জানাই। স্যার আসার পর অটোরিকশা থেকে নামিয়ে স্যারের গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘রক্ত দেখে আমার শরীর কাঁপছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব। তখন সিনিয়র স্যারদের জানিয়েছিলাম।’
এ ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত করা পুলিশ সদস্যরা হলেন তেজগাঁও থানার এসআই মাসুদ এবং পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম। তেজগাঁও থানার ওসি অপূর্ব হাসান ছুটিতে থাকায় ঘটনার সময় ওসির দায়িত্বে ছিলেন শাহ আলম।
এসআই মাসুদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি খবর পাওয়ামাত্র দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েছি।’
ঝুঁকিপূর্ণ হলেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়নি
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গত বছর ও চলতি বছরের মামলার পরিসংখ্যান বলছে, তেজগাঁও বিভাগ ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতির শীর্ষে। এমন পরিস্থিতিতেও গত ঈদের সময় পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা। এমনকি তেজগাঁও থানার ওসিসহ অনেকেই চলে যান ঈদের ছুটিতে।
নাম প্রকাশ না করে তেজগাঁও থানার এক কর্মকর্তা স্বীকার করেন, ঈদের সময় থানার ওসিসহ অনেকে ছুটিতে যাওয়ায় জনবল কম ছিল। এ ছাড়া বাড়তি নিরাপত্তার কোনো নির্দেশ বা ব্যবস্থা ছিল না।’
চুরি, ডাকতি ও ছিনতাইয়ের ঝুঁকির শীর্ষে থাকা তেজগাঁও বিভাগ নিয়ে করা একটি বিশেষ প্রতিবেদন ঈদের ছুটির শুরুর দিন গত ২৮ জুন দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদন তৈরির সময় তেজগাঁও বিভাগের ডিসি আজিমুল হককে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি তার জানা নেই, খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
তেজগাঁও থানা সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি জানানো হয়। এরপরও ঈদুল আজহার ছুটিতে নিরাপত্তা জোরদারে অতিরিক্ত কোনো ব্যবস্থা নেননি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ঘোড়শাল ইউনিয়নের নারকেলবাড়িয়া গ্রামের সফল খামারি মোখলেসুর রহমান। তিনি কৃষি বিভাগের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০১৬ সালে ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারকেল চারা কেনেন। প্রতিটি ৫০০ টাকা করে ২০০ চারা কিনে আড়াই বিঘা জমিতে লাগিয়েছেন। রোপণসহ প্রতিটি গাছের পেছনে তার খরচ হয়েছে ১ হাজার টাকা করে। সব মিলিয়ে এই সাত বছরে বিনিয়োগ করেছেন ১০ লাখ টাকার বেশি। কিন্তু একটি টাকাও তিনি ফেরত পাননি।
মোখলেসুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কৃষি বিভাগ থেকে বলা হয়েছিল আড়াই থেকে তিন বছরে নারকেল ধরবে। মাটিতে দাঁড়িয়েই ফল ছেঁড়া যাবে। গাছ ঠিকই বড় হয়েছে। মোচাও বেরিয়েছে। কিন্তু নারকেল হয়নি। আর গাছগুলো পোকায় ধরার পর অনেকগুলোই কেটে ফেলেছি। কিন্তু খামারজুড়ে পোকা ছড়িয়ে গেছে। আমি খাটো জাতের নারকেলগাছ লাগিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছি।’
শুধু খাটো জাতের নারকেলই নয়, সৌদি খেজুর, মিয়াজাকি আম, ত্বীন ফল, টক আতা, চায়না কমলা, আনারসহ অসংখ্য বিদেশি ফলের বাগান করে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন কৃষক ও খামারিরা। অথচ এই চারার বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশে বিদেশি ফলের মধ্যে থাই পেয়ারা, বারি মাল্টা-১, ড্রাগন, স্ট্রবেরি ও কয়েক জাতের আম বাণিজ্যিক সফলতা পেয়েছে। তবে খাটো জাতের নারকেল, চায়না কমলাসহ কিছু ফলে আমরা সফলতা পাইনি। এখন এসব চাষে আমরা কৃষকদের নিরুৎসাহিত করছি।’
তিনি বলেন, বিদেশি ফল চাষে সফলতা-ব্যর্থতা থাকবে। কিন্তু যেকোনো বিদেশি ফল আনতে হলে আগে মডেল হিসেবে নিয়ে গবেষণা করতে হবে। ফলাফলটা ভালো পেলে তারপর তা কৃষক পর্যায়ে দেওয়া উচিত। তাহলে খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়বেন না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিদেশি ফলের চারা দেশে আনতে হলে আগে যথেষ্ট পরিমাণে গবেষণার প্রয়োজন। গবেষণার ফলাফল ভালো হলে সেই চারা বাণিজ্যিকভাবে চাষ হতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে কোনো ধরনের গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ফলের চারা আনা হচ্ছে। এরপর ওই চারার বিষয়ে খামারবাড়িতে কর্মরত একজন কৃষি কর্মকর্তা পরিচালিত একটি ইউটিউব চ্যানেলসহ আরও কিছু মাধ্যমে সফলতার প্রচার করা হচ্ছে। এরপর বেসরকারিভাবেও বিদেশি চারা আমদানির দ্বার উন্মুক্ত করা হচ্ছে। এতে সিন্ডিকেটে জড়িত কিছু ব্যবসায়ী ফলের চারা আমদানি করছেন। ফলে খামারিরা উদ্বুদ্ধ হয়ে চড়া দামে চারা কিনে বিদেশি ফলের বাগান করছেন। কিন্তু বড় ধরনের বিনিয়োগ করে বেশিরভাগ খামারিই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। আর এই বিদেশি গাছের পোকা-মাকড় দেশি অন্যান্য ফলের গাছও নষ্ট করে দিচ্ছে।
নাটোর সদরের সফল খামারি সেলিম রেজা সম্প্রতি তার পুরো বাগানের ১০৭টি খাটো জাতের নারকেলগাছ কেটে ফেলে আলোচনায় এসেছেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কৃষি বিভাগের প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি প্রতিটি ৫০০ টাকা হিসেবে ১২০টি চারা কিনি। এর মধ্যে ১৩টি আত্মীয়স্বজনকে উপহার দিয়েছি। বাকি ১০৭টি আমার খামারে লাগাই। প্রায় ছয়-সাত বছর সব ধরনের যতœ নেওয়ার পরও ফল ধরেনি। পরে রাগ করে সব গাছ কেটে ফেলেছি।’
জানতে চাইলে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. মেহেদী মাসুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফলের গবেষণায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। কিছু গবেষক আমাদের ছিলেন, তাদের বেশিরভাগই বিদেশে চলে গেছেন। এরপরও আমাদের বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আমাদের আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের ফলগুলোকে আমরা অনুসরণ করার চেষ্টা করছি। সেখান থেকে গাছের চারা আনছি। আমরা সফলও হচ্ছি। তবে প্রয়োজনীয় পরিচর্যার অভাবে কেউ কেউ ভালো ফল পাচ্ছেন না। এখন পরিচর্যা না করার দোষ তো গাছের ওপর দেওয়া যাবে না।’
একজন খামারি নাম প্রকাশ না করে তার ভিয়েতনাম সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি ভিয়েতনামে দেখেছি খাটো জাতের নারকেল চারার দাম ৮০ থেকে ১২০ টাকা। আর যদি আমরা পরিবহন খরচ ধরি, তাহলে ২০০ টাকার বেশি একটি চারার দাম পড়ার কথা নয়। অথচ ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ প্রকল্পের মাধ্যমে সাড়ে সাত লাখ চারা আনা হয়েছে। সেগুলো দেশে আনা পর্যন্ত খরচ দেখানো হয়েছে ৫১৭ টাকা। আর ১৭ টাকা সরকার ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের কাছে ৫০০ টাকা করে চারা বিক্রি করেছে। এখানেও বড় ধরনের লুটপাট হয়েছে। এর বাইরে ওই সিন্ডিকেট বেসরকারিভাবেও লাখ লাখ চারা এনেছে।’
কৃষিবিদরা বলছেন, ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারকেল সাধারণত ভালো হয় সাগরের প্লাবন এলাকায়। আর সেখানকার লবণাক্ততাও থাকতে হবে কম। কিন্তু বাংলাদেশে উপকূলীয় এলাকা থাকলেও সেখানে পানিতে লবণাক্ততা বেশি।
একজন খামারি জানান, দেশের যেকোনো জায়গায়ই একটা ডাব কিনে খেতে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা লাগে। অথচ তিন-চার বছর আগেও এই অবস্থা ছিল না। এর পেছনে দায়ী খাটো জাতের নারকেল। কারণ কৃষকরা দেশি জাত বাদ দিয়ে প্রায় সবাই খাটো জাতের নারকেল লাগিয়েছেন। কিন্তু পাঁচ-সাত বছর পরিচর্যার পর কোনো ফল পাননি তারা।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেকোনো গাছের চারা আমদানির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ও রাষ্ট্রের কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। সেটা হচ্ছে প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টাইন। কিন্তু আমাদের দেশে অনেকেই যথাযথ প্রক্রিয়া মানে না। ফলে গাছের সঙ্গে রোগবালাইও ঢুকছে।’ তিনি বলেন, অন্য দেশে কোনো ফল ভালো হলেই যে বাংলাদেশেও ভালো হবে তা কিন্তু ঠিক নয়। এ জন্যই কোনো জিনিস হুটহাট করে এনে ছেড়ে দেওয়াটা ঠিক নয়। দেশের কৃষি গবেষণা অনেক শক্তিশালী। চারা আমদানি করতে হলে তাদের মাধ্যমে গবেষণা করে যথাযথ ফল পাওয়া গেলেই তা আনা উচিত।
ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার শিবগঞ্জে ২০১৮ সালে ৫০টি সৌদি খেজুরের গাছ লাগান। এর প্রতিটি গাছের চারা তিনি ৯ হাজার টাকা করে কেনেন। তবে ইতিমধ্যে মারা গেছে ১০টি। গত বছর কিছু গাছে ফল এলেও বড় হওয়ার আগেই তা ঝরে যায়। গাছও পোকায় ধরেছে। ইতিমধ্যে কিছু গাছ কেটেও ফেলা হয়েছে।
কালিগঞ্জ উপজেলার তিলেচংপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের আসাদ শেখ লাগিয়েছেন চায়না কমলা। তার গাছগুলোতে একবারে হলদে কমলা ধরে আছে। কিন্তু দেখতে সুন্দর হলেও এতে রস নেই। তেতো স্বাদ, বিচি বেশি। যারাই খেয়েছেন, তারাই গালাগাল করেছেন। আসাদ শেখ বেশ কয়েকবার ফলগুলো বিক্রির উদ্যোগ নিলেও বিক্রি করতে পারেননি। এখন গাছগুলো কেটে ফেলছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের খামারি আকবর হোসেন ১ হাজার ২০০ খাটো জাতের নারকেলগাছ লাগিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে পাঁচ-ছয় বছর যত্ন আত্তি করলেও তাতে ফল ধরছে না। দু-একটি গাছে ফল এলেও ডাবগুলো বড়ই হচ্ছে না।
ফিলিপাইন থেকে আনা এমডি-২ জাতের আনারসের সফলতার গল্প বেশ জোরেশোরে প্রচার হলেও মাঠপর্যায়ের চিত্র ভিন্ন। এই আনারসে চোখগুলো বেশি গভীরে না থাকায় সহজে কাটা যায়। তবে বাংলাদেশের আনারসের মতো এই আনারস মিষ্টি ও সুস্বাদু নয়। আর অনেক কৃষকই এই আনারসের চাষ করলেও কারও চারা মরে যাচ্ছে আবার কারও ফল আসছে না।
এভাবে ত্বীন ফলের চারা আনা হচ্ছে জর্ডান ও মিসর থেকে। প্রতিটি চারা তিন হাজার টাকা বিক্রি করা হলেও তাতে যে ফল আসছে তা খাওয়া যাচ্ছে না। টক আতা নামে একটি বিদেশি ফলের চারা বিক্রি করা হচ্ছে ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে। প্রতিটি চারা বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকার ওপরে। কিন্তু এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এভাবে মাল্টা, আনারের চারা আনা হচ্ছে মিসর, দার্জিলিং থেকে। কিন্তু বেশিরভাগ বাগানে ফল এলেও তা মুখে দেওয়া যাচ্ছে। ফলের ভেতরটা সাদা, রস নেই।
কয়েক বছর ধরে সাড়া ফেলছে জাপান থেকে আনা মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম। শুরুতে এই গাছের চারা ৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হয়েছে। এখন ৫০০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু দেশে হওয়া এই আমের স্বাদ ভালো নয়। এর ফলনও তুলনামূলক কম।
দুর্নীতি, অনিয়ম আর ঋণ কেলেঙ্কারির জন্য আলোচিত দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত হারে। এসব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের একটি বড় অংশই পরিচালকদের। নানা অনিয়ম ও বেনামে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের আমানত আত্মসাতের কারণে ইতিমধ্যেই কয়েকটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব ঝুঁকিতে পড়েছে। নিজেদের জমানো অর্থ ফেরত পেতে দীর্ঘদিন ধরে আমানতকারীরা এসব প্রতিষ্ঠানের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে কার্যরত ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৭১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে ২৪টি প্রতিষ্ঠান পরিচালকদের ঋণ দিয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিতরণকৃত ঋণের ১২ দশমিক ৬৭ শতাংশই গেছে পরিচালকদের পকেটে। এর মধ্যে নিয়ম ভেঙে দুটি প্রতিষ্ঠান পরিচালকদের হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। অধিকাংশ ঋণের বিপরীতে রাখা হয়নি পর্যাপ্ত জামানত। আবার কোনো কোনো ঋণের জামানত হিসেবে রাখা হয়েছে সরকারি জমি, নদী বা কবরস্থান।
পরিচালকদের ঋণ দেওয়া ছাড়াও ঋণ জালিয়াতির কারণে ব্যাংকবহির্ভূত এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিতরণ করা ঋণের ৫০ শতাংশের বেশি খেলাপি হয়ে পড়েছে অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠানের। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ৯০ শতাংশেরও বেশি। ঋণ জালিয়াতি ও নিয়মিত কাজে পরিচালকদের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে বিপাকে রয়েছে বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স ও বিআইএফসিতে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নানা জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়ে যাওয়ার পর ২০১৯ সালে আলোচনায় আসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এবার বেরিয়ে এলো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালকদের ঋণের তথ্য।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনে পরিচালকদের যেকোনো অঙ্কের ঋণে জামানতের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্যদের জামানত না নিয়ে ৫ লাখ টাকার বেশি ঋণ দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে আইন লঙ্ঘন করে বড় অঙ্কের ঋণ দিয়েছে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যে কারণে ঠিকমতো ঋণ আদায় করতে না পেরে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তথ্য বলছে, পরিচালকদের সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালকদের ঋণ দিয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি। ফনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে পরিচালকদের ঋণ প্রায় হাজার কোটি টাকা। ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করেছে উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। প্রাইম ফাইন্যান্সও দিয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ঋণ। ২৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ দিয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্স। ২০০ কোটির বেশি ঋণ দিয়েছে আভিভা ফাইন্যান্স ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স।
এ ছাড়া পরিচালকদের ঋণ দেওয়ার তালিকায় রয়েছেÑ হজ্জ ফাইন্যান্স, মাইডাস ফাইন্যান্স, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স, ডিবিএইচ ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, লঙ্কান এলিয়েনস ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং এবং সৌদি বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড এগ্রিকালচার ফাইন্যান্সসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসনের অভাব রয়েছে। যারা এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় রয়েছে তাদের নিয়েও প্রশ্ন আছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকও ঠিকভাবে তদারকি করে না। এ সুযোগে পরিচালকরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের মতো ব্যবহার করছেন।
তিনি বলেন, ‘আর্থিক খাতে সুশাসন ফেরাতে হলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন আছে। এ ক্ষেত্রে যদি সরকার না চায় তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানে সুশাসন ফিরিয়ে আনাও কঠিন। তাই আর্থিক সুশাসন ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে ক্ষমতা দিতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকেও ঋণ অনিয়মসহ অন্যান্য অনিয়ম ঠেকাতে আরও কঠোর হতে হবে।’
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক খাতের যত অনিয়ম পেয়েছে তার বেশিরভাগের ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন করে জামানতবিহীন কিংবা ভুয়া জামানতের বিপরীতে ঋণ দেওয়ার তথ্য মিলেছে। অনেক ক্ষেত্রে জামানত নিলেও তা অতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুয়া গ্যারান্টির বিপরীতে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে ঋণ আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। অনেক প্রতিষ্ঠান আর আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। পি কে হালদারের দখল করা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে। সমস্যাগ্রস্ত পিপলস লিজিং, বিআইএফসি, এফএএস ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং, ফার্স্ট ফাইন্যান্সসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রচুর ঋণখেলাপি হলেও যথাযথ আমানত না থাকায় তা ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্চ প্রান্তিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৩৫ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৬টিরই খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এ সময়ে অপরিবর্তিত ছিল তিন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি। আশার দিক হচ্ছে, মার্চ প্রান্তিকে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে।
যে ২৬টি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়েছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ফনিক্স ফাইন্যান্সের। তিন মাসে প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬০ কোটি টাকা। এরপরই অবস্থান ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের। প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি বেড়েছে ১৫৫ কোটি টাকা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্সের বেড়েছে ১০৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি প্রতিষ্ঠান ইডকলের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯৪ কোটি, বিআইএফএফএলের ৭১ কোটি, লংকাবাংলার ৬৭ কোটি, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ৫২ কোটি, আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ৪৩ কোটি, ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ৩৭ কোটি, মাইডাস ফাইন্যান্সের ৩০ কোটি, আইআইডিএফসির ২৯ কোটি, পিপলস লিজিংয়ের ২৫ কোটি ও মেরিডিয়ান ফাইন্যান্সের ২৫ কোটি টাকা খেলাপি বেড়েছে।
খেলাপি বাড়ার তালিকায় আরও রয়েছে অগ্রণী এসএমই, আভিভা ফাইন্যান্স, বিআইএফসি, সিভিসি ফাইন্যান্স, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং, জিএসপি ফাইন্যান্স, ইসলামিক ফাইন্যান্স, লংকান অ্যালায়েন্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল হাউজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত ছয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ কমেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে এফএএস ফাইন্যান্সের। প্রতিষ্ঠানটির তিন মাসে খেলাপি কমেছে ৯১ কোটি টাকা। উত্তরা ফাইন্যান্সের খেলাপি কমেছে ৮৯ কোটি টাকা। প্রিমিয়ার লিজিংয়ের খেলাপি কমেছে ৪৭ কোটি টাকা। হজ্জ ফাইন্যান্সের প্রায় ১৯ কোটি, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৪ কোটি টাকা কমেছে।
তবে এ সময়ে তিনটি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি অপরিবর্তিত ছিল। এগুলো হচ্ছে সৌদি-বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি, স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স এবং দ্য ইউএই-বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গন। এ উপলক্ষে প্রশাসনকেও ঢেলে সাজানো হচ্ছে; বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল ঘটতে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৭৫ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এর ফলে পুলিশে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বদলি নিয়ে কানাঘুষা চলছে পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে।
জানা গেছে, পুলিশে তিন স্তরে বদলি করার পরিকল্পনা করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। কাজ চলছে পুরোদমে। তালিকা প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে যাবে পুলিশ। এ কারণে তফসিল ঘোষণার আগেই পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও জেলার এসপিদের বদলি করা হবে। পরে নির্বাচন কমিশন বদলি করলেও পুলিশে ব্যাপক প্রভাব পড়বে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
পুলিশে আবারও বড় ধরনের পদোন্নতির ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) এ পদোন্নতিতে অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছে। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেছেন অতিরিক্ত সচিব (পুলিশ ও এনটিএমসি) মো. আলী হোসেন। পাশাপাশি পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বিশেষ বৈঠক করছেন।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেই পুলিশ প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনারকে বদলি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল ও রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি ও ২৪টি জেলার পুলিশ সুপারকে (এসপি) বদলি করা হয়েছে। নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার আগেই প্রায় সব জেলার এসপিকে বদলি করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বদলির জন্য তিনটি স্তর করা হয়েছে। যেসব জেলার পুলিশ সুপারদের দায়িত্ব পালনের দুই বছর হয়েছে, তাদের একটি তালিকা হয়েছে। বিশ^স্ত কর্মকর্তাদের বাছাই করা হচ্ছে; নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তাদের অন্য জেলা বা ইউনিটিতে বদলি করা হবে, যাতে নির্বাচন কমিশনের অধীনে পুলিশ চলে যাওয়ার পর বদলি করলেও সমস্যা না হয়।’ তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচন বেশ জটিল হবে বলে মনে হয়। এ জন্য চৌকস ও নিষ্ঠাবান পুলিশ কর্মকর্তাদের আমরা বাছাই করে বদলি করার কাজ শুরু করেছি। বড় পদোন্নতির ঘটনাও ঘটবে। সুপারনিউমারারির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। ইতিমধ্যে পদোন্নতির লম্বা তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
পুলিশ-সূত্র জানায়, পুলিশে দুজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। গত সপ্তাহে সচিবালয়ে এসএসবির বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে দুটি অতিরিক্ত আইজিপির শূন্য পদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্ভ্যব্য কয়েক জনের নাম আলোচিত হয়েছে। ১৫তম ব্যাচের দুজন কর্মকর্তা অতিরিক্ত আইজিপি হচ্ছেন বলে জানা গেছে। সুপারনিউমারারি পদে ৫২৯ জনকে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ড নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম প্রায় চূড়ান্ত। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন। তা ছাড়া ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের পুলিশ সুপার করার বিষয়ে প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি তালিকা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। তালিকায় বলা হয়েছে, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) ৩৪, উপমহাপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ১৪০, অতিরিক্ত উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) ১৫০ ও পুলিশ সুপার ১৯০ জনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, পদোন্নতি পাওয়ার পর পুলিশ কর্মকর্তাদের ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ রেঞ্জে নিয়োগ দেওয়া হবে। তা ছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর মহানগর পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর, এসবি, সিআইডি, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা, পুলিশ স্টাফ কলেজ, রেলওয়ে পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, এপিবিএন, এন্টি টেররিজম ইউনিট, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ, মেট্রোরেল পুলিশ ইউনিট ও পিটিসি ইউনিটে (টাঙ্গাইল, নোয়াখালী, রংপুর ও খুলনা) সুপারনিউমারারি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি না পাওয়ার হতাশা থেকে বের করে আনতেই এ পরিকল্পনা করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এই পদোন্নতিকে ‘নির্বাচনী’ পদোন্নতি আখ্যাও দেওয়া হচ্ছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা এ আখ্যার বিষয়টি মানতে নারাজ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সামনে সংসদ নির্বাচন। হিসাব করেই পদোন্নতি ও বদলির পরিকল্পনা করা হয়েছে। পদোন্নতি ও বদলির একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে সুপারনিউমারারিতে পদোন্নতি সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘পদ না থাকায় পদোন্নতি পাচ্ছে না অনেকে। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। হতাশা দূর করার জন্যই এ পদক্ষেপ।’ পদোন্নতি হওয়ার পর কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি পাবে। যেসব পদ খালি হবে, সেই পদগুলোতে পদোন্নতিপ্রাপ্তরা কাজ করবেন। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, পর্যায়ক্রমে ২৯তম ব্যাচের ১৫০, ৩০তম ব্যাচের ১৮৪, ৩১তম ব্যাচের ১৮৩ ও ৩৩তম ব্যাচের ১৫৫ জন অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপারের পুলিশ সুপার হিসেবে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পদোন্নতি ও বদলি রুটিন বিষয়। নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশে কোনো বদলি করা হচ্ছে না। পুলিশের যারা বেশি দিন ধরে একই ইউনিটে কর্মরত আছে, তাদের সরানো হচ্ছে। সুপারনিউমারারির মাধ্যমে পদোন্নতির বিষয়ে আলোচনা চলছে।’
মাঠপর্যায়ের কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যাদের ওপর আস্থা রাখা যায়, তাদের বিভিন্ন ইউনিটে পদায়ন করা হচ্ছে। নির্বাচনী ছকেই হাঁটা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা থাকে সব সময়। বিষয়টি মাথায় রেখে আগেই প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তর। নির্বাচনের সময় রেঞ্জ ডিআইজি, মহানগর পুলিশ কমিশনার, জেলার এসপি, মহানগর জোনের উপকমিশনার, থানার ওসি, ফাঁড়ি ও তদন্ত কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের বড় ভূমিকা থাকে। এ কারণে যারা দায়িত্ব পালন করবেন, আগে থেকে তাদের ফিটলিস্ট তৈরি করা হয়েছে।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে আগামী বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশের দিন রাজধানী ঢাকার রাজপথের দখলে নিতে চায় বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। অবশ্য, সমাবেশ শেষ করে তারা ফিরে যাবেন। মহাসমাবেশে আসতে বাধার মুখে পড়ার আশঙ্কায় আগেভাগেই নেতাকর্মীদের ঢাকায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতারা বলেছেন, সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা জড়ো হবেন সমাবেশস্থলে। বক্তৃতাপর্ব শুরু হবে দুপুরের পর।
মহাসমাবেশ সামনে রেখে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানিয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা।
কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২৭ জুলাই দিনব্যাপী রাজধানী ঢাকার রাজপথে থাকবে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলার দখলে। তবে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে আমরা ঘরে ফিরে যাব। আশা করি সরকার আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’
সরকারবিরোধী বিভিন্ন দলের নেতারা, ‘ইতিমধ্যে কেউ কেউ অতীতের মতন নানা জল্পনা-কল্পনা করছে এই বলে যে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো হয়তো বসে পড়বে। এমন কোনো চিন্তাভাবনা তাদের নেই। শান্তিপূর্ণভাবে শুধুই সমাবেশ হবে। সেখান থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হবে।’
তারা বলেন, মহাসমাবেশে সারা দেশ থেকে দলের নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসবেন। বিএনপি নয়াপল্টন কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে। গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অথবা মৎস্য ভবন এলাকায়, ১২-দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংকি এলাকায়, গণফোরাম মতিঝিলের আরামবাগে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এফডিসি গেটসংলগ্ন এলাকায়, সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো পল্টন মোড় থেকে কাকরাইল মোড়ের মাঝামাঝি এলাকায় সমাবেশ করবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের মহাসমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের বাইরে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ওইদিন রাজপথে পৃথকভাবে সমাবেশ করবে।’
পরবর্তী কর্মসূচি কী হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো আমরা চূড়ান্ত করতে পারিনি। আন্দোলনে শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।’
তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, সংঘাতের মতো ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি অনুযায়ী কর্মসূচি দেওয়া হবে। সেটা লাগাতার হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ঢাকাতেই কর্মসূচি বেশি রাখা হবে। এ ছাড়া আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর বাইরে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) সমাবেশের কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছে। তারা তাদের মতো প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সমাবেশের কর্মসূচি দিলে অধিকাংশ সময় পরিবহন বন্ধ করে দেয়, পথে পথে তল্লাশিসহ সরকারের দিক থেকে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। গত ১২ জুলাই সমাবেশের দিন সদরঘাট, গাবতলীয়, যাত্রাবাড়ী এলাকায় সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের মোবাইল চেক করা হয়েছে। এসব ঝামেলা এড়াতে নেতাকর্মীদের আগেভাগেই ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার এবং আগামীকাল বুধবারের মধ্যে ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীরা রাজধানীতে পৌঁছে যাবেন। ঢাকার বাইরে থেকে আগত নেতাকর্মীরা নিজ নিজ উদ্যোগে সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থান নেবেন।
মহাসমাবেশ সফল করতে গতকাল যৌথসভা করেছে বিএনপি। এ ছাড়া সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরামসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল। জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে গান, কবিতা পাঠ, মঞ্চ নাটকসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা মহাসমাবেশের জন্য জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অথবা মৎস্য ভবনের সামনে অনুমতি চাইব। যেখানে অনুমতি দেবে সেখানেই কর্মসূচি পালন করবে তারা। কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দলগুলো দফায় দফায় বৈঠক করছে।’
সদ্য বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধীদের সঙ্গে যোগ দেওয়া এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ২৭ জুলাই বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ করব। বেলা ১১টায় এ সমাবেশ শুরু হবে। সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইতিমধ্যে সমাবেশস্থলের কথা বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছি।’
নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চায় বিএনপি : মহাসমাবেশের জন্য জায়গা চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। এতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার কথা বলেছে। গতকাল বিকেলে এই চিঠি দেওয়া হয় বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
গত মাসের শেষ দিন, অর্থাৎ ৩০ জুন দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ১২ জেলা ডেঙ্গুমুক্ত ছিল। কিন্তু গত ২৪ দিনে এসব জেলায়ও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আর দেশের কোনো জেলা ডেঙ্গুমুক্ত নয়।
এই ২২ দিনে রোগী বেড়েছে সাড়ে ৪ গুণ, যা গত মাসের শেষ দিনের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত জেলার সংখ্যাও।
যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল দেশের চুয়াডাঙ্গাকে ডেঙ্গুমুক্ত দেখিয়েছে। কিন্তু জেলার সিভিল সার্জন অফিস ও আমাদের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জেলায় চারজন রোগী ভর্তির তথ্য জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন জেলা সদর হাসপাতালে ও একজন জীবননগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এসব রোগী গত শনিবার রাতে ভর্তি হয়েছে। এর আগে পর্যন্ত এই জেলা ডেঙ্গুমুক্ত ছিল। এই তিনজন রোগী ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে সিভিল সার্জন অফিস।
ডেঙ্গু আক্রান্ত ৬৪ জেলার মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছে ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা জেলায়, ২১ হাজার ৪০৮ জন। এই সংখ্যা দেশের মোট রোগীর ৬১ শতাংশ। অথচ গত মাসের শেষ দিনে এই ৬৪ জেলায় রোগী ছিল ৬ হাজার ১১৪ জন, যা সে সময়ের মোট রোগীর ৭৭ শতাংশ। অর্থাৎ গত ২২ দিনে তুলনামূলকভাবে ঢাকায় রোগী কমেছে ও ঢাকার বাইরে বেড়েছে।
বিশেষ করে সর্বশেষ গত রবিবারও ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল। সেদিন ঢাকায় রোগী ছিল ১ হাজার ৬৪ ও ঢাকার বাইরে রোগী ছিল ১ হাজার ২২৮ জন, যা একদিনে মোট ভর্তি রোগীর ৫৪ শতাংশ। এ নিয়ে এ বছর চার দিন ঢাকার বাইরে বেশি রোগী ভর্তির ঘটনা ঘটল। এর মধ্যে ২১ জুলাই ৮৯৬ জন রোগীর মধ্যে ঢাকার বাইরে ৪৯৩ ও ঢাকায় ৪০৩ জন, ২০ জুলাই ১ হাজার ৭৫৫ জনের মধ্যে ৯১০ ঢাকার বাইরে ও ঢাকায় ৮৪৫ জন এবং প্রথম ১৪ জুলাই ৪৪৯ জনের মধ্যে ২৬৫ ঢাকার বাইরে ও ঢাকায় ১৮৪ জন ভর্তি হয়।
ধীরে ধীরে ঢাকার বাইরে রোগী ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় সিভিল সার্জনরা স্থানীয়ভাবে এডিস মশার বিস্তার ও ঢাকা থেকে মানুষের মাধ্যমে ভাইরাস বহন করাকে চিহ্নিত করেছেন। তারা বলেছেন, স্থানীয়ভাবে এডিস মশা পাওয়া গেলেও এডিস নিধনে স্থানীয় সরকার প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে রাজধানীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখন বিভিন্ন জেলায় রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ঢাকায় জনসংখ্যা বেশি। এখানকার জনসংখ্যা অনুপাতে ডেঙ্গু রোগী বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া এখানে ঢাকার বাইরে থেকেও রোগী আসছে। এখানে এডিসের ঘনত্ব বেশি। এ পর্যন্ত যতগুলো জরিপ হয়েছে, তাতে দেখা গেছে ঢাকায় সর্বাধিক এডিস মশা ও লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে।
ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়ার কারণ হলো গ্রামও শহর হয়ে গেছে। অপরিচ্ছন্ন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ হয়েছে। যেখানে নোংরা ময়লা ও স্বচ্ছ পানি জমে থাকছে। আমরা পরিষ্কার করছি না। ভবনের ছাদে পানি জমে থাকছে। ঢাকা থেকে মানুষ বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। তারা রোগটির ভাইরাস বহন করছে। সেই সঙ্গে ভেক্টর এডিস মশাও স্থানান্তর হচ্ছে।
হাসপাতালে ভর্তি রোগী ৩৫ হাজার ছাড়াল : ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে এ বছর হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়েছে। নতুন করে নয়জনের মৃত্যু হওয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৫ জনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২ হাজার ২৯৩ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই সংখ্যা চলতি বছরে এক দিনে সর্বোচ্চ ভর্তি রোগীর সংখ্যা। সবমিলিয়ে এবার ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৩৫ হাজার ২৭০ জনে। এর মধ্যে জুলাই মাসের ২৩ দিনেই ভর্তি হয়েছে ২৭ হাজার ২৯২ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ৭ হাজার ৪৬৩ জন রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৪ হাজার ৩৯৫ এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ হাজার ৬৮ জন।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চট্টগ্রামে : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি রোগী ছিল চট্টগ্রামে ২ হাজার ২০৮ জন। তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১ হাজার ৫৪৩ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৬৫ জন। এরপর বেশি রোগী রয়েছে ১ হাজার ৪৪৬ জন। তাদের মধ্যে বরিশাল জেলায় ৪৩২ ও বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ১৪ জন। এরপর বেশি রোগী পটুয়াখালীতে ৬৫৯, ময়মনসিংহে ৪৯৩, লক্ষ্মীপুরে ৪৩৬, গাজীপুরে ৩৮৫ ও ভোলায় ৩৮১ জন। এ ছাড়া ৩০০-এর ঘরে রোগী রয়েছে মাদারীপুর, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা ও বরগুনায়। ২০০-এর ঘরে রোগী রয়েছে মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর ও খুলনায়।
ঢাকার বাইরে এডিস নিধনে সংকট, চিকিৎসাও সীমিত : চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার ডেঙ্গু বেশি হবে সেটা আমরা দুই-তিন মাস আগে থেকেই বলে আসছি। কোনো মাস ডেঙ্গু ছাড়া ছিল না। আমাদের কীটতত্ত্ববিদরা জেলার নির্মাণাধীন সব জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পেয়েছেন। গত বছর আইইডিসিআরের টিম এসে এখানে সার্ভে করেছে। তখনই তারা বলেছেন, এ বছর ঢাকার পর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি হবে। আমরাও আগে থেকে সতর্ক ছিলাম। থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে এখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ও পানি জমছে। সেখানে এডিস মশা ডিম পাড়ে। ওখান থেকে লার্ভা উৎপন্ন হয়। এজন্য এখানে এডিস মশা বেশি ও ডেঙ্গুও বেশি।
আগের সতর্কতা অনুযায়ী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে এই সিভিল সার্জন বলেন, এডিস মশা নিধনের যাদের দায়িত্ব, তারা সে ব্যবস্থা নেবেন। আমরা আমাদের হাসপাতাল আগে থেকেই সতর্ক করে রেখেছি। চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি।
এই কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভেতর সিভিল সার্জনের কোনো হাসপাতাল নেই। সিভিল সার্জন শুধু সতর্কবার্তা দিতে পারে। তারপরও আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে কীটতত্ত্ববিদদের বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে সার্ভে করিয়েছি। সিটি করপোরেশনও সার্ভে করেছে। কিছু কিছু জায়গায় গত বছরের চেয়ে এবার আরও বেশি এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। আমরা এ বিষয়গুলো সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। মেয়র মশা নিধনের জন্য চেষ্টা করছেন।
চট্টগ্রামে ঢাকার মতো এত বেশি লোকবল ও ব্যবস্থাপনা নেই বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এই জেলায় মাত্র দুটি সরকারি হাসপাতালÑ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আন্দরকিল্লায় ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভরসা। সেখানে দুই-তিনজন করে রোগী ভর্তি আছে। আমরা প্রটোকল মেনে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
চট্টগ্রামের মানুষ ঢাকার মানুষের মতো এত হাসপাতালমুখী নন বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এখানে আর্থিক সংগতি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে বাসায় বসে চিকিৎসা নিতে চায়। অনেক সময় ডেঙ্গুর শক সিনড্রোম দেখা দিলে হাসপাতালে আসে। তখন বাঁচানো কষ্ট হয়ে যায়। আমরা সব রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক সবাইকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমরা উঠোন বৈঠক করেছি। মাইকিং করছি। কিন্তু ডেঙ্গু মৌসুমের কারণে আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কী হবে, সেটা বলতে পারছি না।
বরিশাল জেলার সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে ডেঙ্গু বাড়ার প্রধান কারণ গত কোরবানি ঈদের সময় ঢাকা থেকে যারা এসেছেন, তারা রোগটি বহন করে এনেছেন। এখানে সে সময় রোগী ছিল না। ঈদের পর হঠাৎ রোগী বেড়ে গেল। দেখা যাচ্ছে, রোগীদের অধিকাংশেরই ঢাকায় ভ্রমণের রেকর্ড আছে ও তাদের বাড়ির কেউ না কেউ ঢাকা থেকে এসেছেন। এটাই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের প্রধান কারণ।
এখানে কী পরিমাণ এডিস মশা বা এডিসের লার্ভা আছে, সেটা সিটি করপোরেশনের সার্ভে করার কথা। এসব সার্ভে করার কোনো ইউনিট আমাদের নেই। তাই আমরা বলতে পারছি না এডিসের লার্ভা আছে কি না।
এই কর্মকর্তা বলেন, বরিশাল বিভাগের পক্ষ থেকে নাজিরপুরসহ তিনটি জায়গায় এডিস মশার সার্ভে করেছিল। সেই রিপোর্ট আমাদের কাছে নেই। এডিস মশা এখানে থাকতে পারে। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিকে প্রথমে সচেতন হতে হবে। আমরা সমস্ত জায়গা পরিষ্কার করে উঠতে পারিনি। মশারি টাঙাতে হবে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
সদ্যোজাত থেকে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অনেক সময়েই নানা কারণে কানের ব্যথা দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে দিন কয়েকের মধ্যেই তা সেরেও যায়। কিছু ক্ষেত্রে সেই ব্যথা ঘুরেফিরে আসে ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
দীর্ঘস্থায়ী কানে ব্যথা কখনোই অবহেলা করা উচিত না। যদি কানে ব্যথা বাড়তে থাকে, সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। মূলত কানের সংক্রমণ থেকে দীর্ঘস্থায়ী এই ব্যথা হতে পারে।
অনেকেরই ধারণা থাকে যে, বাচ্চাদের কানে পানি ঢুকে বা সদ্যোজাতদের দুধ খাওয়ানোর সময়ে তা কানে ঢুকে সংক্রমণ হয়। এ ছাড়া কানে ময়লা জমেও কানে ব্যথা হয় বলে সাধারণ ধারণা রয়েছে। কিন্তু শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ধারণাগুলো ঠিক নয়। স্বাভাবিক অক্ষত কানের পর্দা ভেদ করে পানি, দুধ কানের একদম ভেতরে ঢুকতে পারে না।
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে কান, গলা ও নাক এগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। ফলে গলায় সংক্রমণ হলে তা সহজেই কানে চলে আসে। বাচ্চার ঠান্ডা লেগে জ্বর, সর্দি-কাশি বা গলায় সংক্রমণ হলে তা কানেও ছড়িয়ে পড়ে। কানের সঙ্গে ফ্যারিঙ্কসের যোগসূত্র তৈরি হয় ইউস্টেশিয়ান টিউবের মাধ্যমে। ফলে যখন সন্তান বা বড়দের ফ্যারিঞ্জাইটিস, ল্যারিঞ্জাইটিস বা টনসিলাইটিস হচ্ছে, তখন সেই সংক্রমণ কানের মধ্যে চলে যেতে পারে।
এ ছাড়া শিশুদের সর্দি থেকেও কানে ব্যথা হয়। বিশেষ করে নবজাতকদের মধ্যে এই উপসর্গ দেখা যায়। বাচ্চারা যেহেতু নিজে থেকে কফ বার করতে পারে না। তাদের ঠান্ডা লেগে গলায় কফ জমে এবং কানেও তরল জমতে পারে। ফলে কানে ব্যথা হয় ও বাচ্চা কাঁদতে থাকে।
শিশুদের কানে ব্যথা হলেই অনেকে কানের ড্রপ দিতে শুরু করেন। কিন্তু এসব করতে বারণ করেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। বরং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল খাওয়ানো যেতে পারে।
শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের কানের ব্যথা বা সংক্রমণ সম্পর্কে বোঝানোর ক্ষমতা থাকে না। তাই কিছু লক্ষণ দেখেই তাদের কানে সংক্রমণ নিশ্চিত করা যায়।
১. সংক্রমণের কারণে কানে ব্যথা এবং অস্বস্তি হয়। ব্যথা কমাতে শিশুরা তাদের কান ধরে টানতে থাকে।
২. সংক্রমণে আক্রান্ত শিশু শুয়ে থাকলে এটি মধ্যকর্ণে চাপের পরিবর্তন ঘটায়। যা ব্যথা এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করে ফলে শিশুদের জন্য ঘুমানো বা শুয়ে থাকা কঠিন হয়ে যায়।
৩. কানের সংক্রমণের একটি নিশ্চিত লক্ষণ হল শিশুর কান থেকে তরল বা পুঁজ বের হওয়া।
৪. সংক্রমণের কারণে কানের ব্যথা হয় যার ফলে শিশু অতিরিক্ত কান্না করে বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খিটখিটে মেজাজ হতে পারে।
৫. সংক্রমণের কারণে কানে তরল জমা হয়ে সাময়িকভাবে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে।
৬. জ্বর থাকতে পারে।
৭. ডায়রিয়া, বমি, ক্ষুধা কমে যাওয়া।
১. ঘরে বা রাস্তাঘাটে ধুলো নাক-মুখ দিয়ে ঢুকলে অনেক সময়ে আল্যার্জি ও প্রদাহ হয়। ফলে ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যায়। তখন কানে ব্যথা হতে পারে।
২. বিমানে ওঠার সময়ে যেমন ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অনেকেরই কানে সমস্যা দেখা যায়। বাচ্চারা সেটা বোঝাতে বা বলতে না পেরে কেঁদে ওঠে। তখন বড় হোক বা বাচ্চা, ঢোঁক গিলতে হবে। তা হলেই আবার ইউস্টেশিয়ান টিউবের মুখটা খুলে যাবে। সন্তান খুব ছোট হলে পানি বা লজেন্স খাওয়ানো যায়। সেটা খাওয়ার সময়ে সে ঢোঁক গিললে সমস্যা মিটে যাবে।
৩. ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে গেলে বা কান বন্ধ হয়ে গেলে, তা ঠিক করার জন্য এক ধরনের ব্যায়াম ভালসালভা ম্যানুভার করা যেতে পারে। এর জন্য নাক দিয়ে অনেকটা শ্বাস গ্রহণ করে তারপরে নাক ও মুখ বন্ধ করে, বেলুন ফোলানোর মতো করে মুখ ফুলিয়ে সেই বাতাস বের করার চেষ্টা করতে হবে। এতে নাক ও মুখ বন্ধ থাকায় ভিতরের বাতাস কানের পথে বেরোনোর চেষ্টা করবে। ফলে বন্ধ কান খুলে যাবে।
৪. এ ছাড়া রাইনাইটিস বা নাকের ভিতরের শ্লেষ্মাঝিল্লির জ্বালাপোড়া ও প্রদাহ থেকেও কানে ব্যথা হতে পারে। তখন ন্যাজ়াল ড্রপ দেন বিশেষজ্ঞরা।
গলার সংক্রমণ যেমন কানে ছড়াতে পারে ঠিক তেমনি কানের সংক্রমণ মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যেতে পারে। ট্রান্সভারস বা সিগময়েড সাইনাস কান ও মস্তিষ্কের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে।
দীর্ঘদিন কানের ইনফেকশন অবহেলা করলে, এই সংক্রমণ সিগময়েড সাইনাস দিয়ে ব্রেনে চলে যেতে পারে। তখন রোগের জটিলতা বেড়ে যায়। যেমন, গলায় যদি স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটিরিয়ার দ্বারা সংক্রমণ হয়, তা ব্রেনের মধ্যে চলে গেলে সেখানে মস্তিষ্কে পুঁজ তৈরি করে। এতে বাচ্চার খিঁচুনি হতে পারে, হাত-পায়ের দুর্বলতা দেখা যায়, চোখে কম দেখতে পারে সেই সময়।
তাই কানে সংক্রমণ বা ব্যথা হলেই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।সোমবার (২ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা শেষে উপাচার্যের সামনেই এ ঘটনা ঘটে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে ২-০ গোলে আইন বিভাগকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। তবে খেলা শেষে পক্ষপাতিত্বমূলক সিদ্ধান্তের অভিযোগ এনে রেফারির দিকে তেড়ে যান আইন বিভাগের খেলোয়াড়রা। এসময় সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত তাদেরকে থামাতে এগিয়ে গেলে তার সাথে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি ঘটে। এক পর্যায়ে অমিত দত্তকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর নাজমুল হোসেন হৃদয় নামে এক শিক্ষার্থী দৌড়ে চলে যেতে লাগলে তাকে বাধা দেন ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক মো. আইনুল হক। এরপর তাকে মারধর করেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী। এসময় আবারও হাতাহাতি শুরু হলে নৃবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীও সেখানে গিয়ে যুক্ত হন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সে ফুটেজে এসবের সত্যতা মিলেছে।এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রক্টরিয়াল বডির যে কাজ ছিল, আমি তাই করেছি। শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে রেফারির দিকে তেড়ে যাচ্ছিল। আমি থামাতে গেলে তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আমি দু’বার মাটিতে পড়ে গিয়েছি।’তবে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল দাবি করেন, ‘খেলা শেষে আমি স্টেজের পাশেই ছিলাম। হুড়োহুড়ির মধ্যে অমিত স্যার আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। আমি যখন উঠি তখন আবার আমাকে ফেলে দেন। রানা স্যার, প্রক্টর ওমর সিদ্দিকী, অমিত স্যার, লাল শার্ট পরা আরেকজন (আইনুল হক) আমার কলার চেপে ধরেন। তারপর রানা স্যার আমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। পেছন থেকে আমাকে গলা চেপে ধরেন আরেক স্যার। ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়ে আমার ব্লেডিং হয়েছে।’আইন বিভাগের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেন, ‘কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের দলের ছেলেরা হৈ-হুল্লোড় করে। এরপর অমিত স্যার আমাদের একজনের কলার ধরে নিচে ফেলে মারধর করেন। শিক্ষকের এমন মারধর দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি।’তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি কাউকে মারিনি। প্রক্টরিয়াল বডি নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছে।’
ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক মো. আইনুল হক বলেন, ঘটনার সময় দেখলাম একটা ছেলে দৌড়াচ্ছে। তখন তার দৌড় দেখে মনে হলো কেন সে দৌড়াচ্ছে। তখন তাকে আটকানোর চেষ্টা করলাম। পরে শুনলাম ছেলেটা রেফারির সাথে উদ্ধত আচরণ করেছে। খেলায় যারা পরাজিত হয় তাদের একটা অভিযোগ থাকে। রেফারির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ সত্য নয়।উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো বক্তব্য দিবেন না বলে এই প্রতিবেদকের ফোন কল কেটে দেন।
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।