
অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তিনজন নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছে আরও ছয়জন। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে চাষাঢ়ায় সান্ত্বনা মার্কেটের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর হোসেন (৫০)। ফায়ার সার্ভিসের ভাষ্য, জাহাঙ্গীর হোসেন চলন্ত গাড়িতেই স্ট্রোক করে মারা যাওয়ায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এদিকে এদিন পৃথক দুর্ঘটনায় ফেনীতে তিনজন, ফরিদপুরে দুজন, ঢাকার সাভারে দুজন ও টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে আরও দুজন নিহত হয়েছে।
দেশ রূপান্তরের সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে হাজীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর হোসেন গাড়ি নিয়ে বিসিক শিল্পনগরীতে যাচ্ছিলেন। চাষাঢ়ায় হঠাৎ গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ হারায়। রাস্তায় থাকা পাঁচটি গাড়িকে চাপা দেয়। এ সময় ঘটনাস্থলে সালাউদ্দিন সাবু নামে এক পথচারী নিহত হন। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় চালক জাহাঙ্গীরকে। বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসাপাতলে মৃত্যু হয় আরও একজনের। দুর্ঘটনার পর চাষাঢ়া মোড় থেকে চারদিকের রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ফতুল্লার পঞ্চবটী এলাকার বিসিক শিল্পনগরীতে ফকির অ্যাপারেলস নামে একটি পোশাক কারখানায় আগুনের খবর পেয়ে হাজীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি ঘটনাস্থলে যাচ্ছিল। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িটি শহরের চাষাঢ়ার মোড়ের সান্ত¡না মার্কেটের সামনে গেলে চালক হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারান। এ সময় গাড়িটি আনন্দ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস, একটি প্রাইভেট কার ও তিনটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে আনন্দ পরিবহনের বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে পথচারী সালাউদ্দিন সাবু নিহত হন। আহত হন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক ও যাত্রীসহ সাতজন। আহতদের উদ্ধার করে শহরের খানপুরে অবস্থিত ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে সারা, নাজমা ও সিরাজুলকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে মারা যান সিরাজুল ইসলাম।
দুর্ঘটনার পর চাষাঢ়া ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, ২ নাম্বার রেলগেট, খানপুর হাসপাতাল সড়ক ও চাষাঢ়া পঞ্চবটী সড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে এই পথের যাত্রীরা বেশ দুর্ভোগে পড়েন। পরে ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিয়ন্ত্রণ করে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক জসিম বলেন, যখন দুর্ঘটনাটি ঘটে তখন আমি পাশিই ছিলাম। হঠাৎ দেখি ফায়ার সার্ভিসের গাড়িটি এলোমেলোভাবে চলছে। দেখে মনে হয় গাড়িতে বোধহয় কোনো চালক নাই। মুহূর্তের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িটি চলন্ত আনন্দ বাসকে ধাক্কা দেয় এবং পরে একটি প্রাইভেট কার ও তিনটি অটোকে চাপা দেয়।
ফায়ার সার্ভিস ঢাকা সদর দপ্তরের উপপরিচালক আক্তারুজ্জামান বলেন, অগ্নিকা-ের খবর পেয়ে হাজীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর হোসেন গাড়ি নিয়ে বিসিক শিল্পনগরীতে যাচ্ছিলেন। গাড়িতে থাকা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানিয়েছেন, চাষাঢ়া এলাকায় হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা যান গাড়ির চালক। চালক স্ট্রোক করার কারণে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমান বলেন, নিহত পথচারীর লাশ আনন্দ বাসের চাকার ভেতরে আটকে থাকার কারণে বাসের চাকার দিকের বডি কেটে বের করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন জানান, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির চালক জাহাঙ্গীর হোসেনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, স্ট্রোকজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।
সাভার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকের ওপর উঠে গেলে ছিটকে পড়েন দুই আরোহী। পরে গুরুতর অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। রবিবার রাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেটের বিপরীতের ইউ-টার্নে এ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। গতকাল দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাভার হাইওয়ে থানার ওসি আজিজুল হক। তিনি জানান, নিহতরা হলেন টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার পাইসানা গ্রামের শহীদুল শাহের ছেলে সৈয়দ এনামুল শাহ (৩৬)। তিনি আশুলিয়ার ডেন্ডাবর পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় পরিবারসহ ভাড়া থেকে ব্যবসা করতেন। অন্যজন হলেন বরিশাল জেলার হিজলা থানার নিজাম উদ্দিনের ছেলে নাম আল মামুন (২৬)। তিনি আশুলিয়ার জিরানী এলাকায় বসবাস করেন ও একটি আসবাবপত্রের দোকানে চাকরি করতেন।
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরের ভাঙ্গার ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের বগাইল টোল প্লাজাসংলগ্ন হাসামদিয়ায় বাসচাপায় নিহত হয়েছেন দুই সহোদর। গতকাল বেলা ৩টার দিকে ঢাকাগামী ইলিশ পরিবহনের চাপায় নিহত দুই ভাই হলেন মেহেরপুর জেলা সদরের নতুন দরবেশপুর এলাকার মাহফুজুর রহমান (৩০) ও হামিম রহমান (১৬)। এ ঘটনায় আহত শিপন নামে একজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল প্রতিনিধি জানান, দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে দুজন। রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে টাঙ্গাইল-জামালপুর মহাসড়কের উপজেলার বানিয়াপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন গোপালপুর উপজেলার কালীমন্দির এলাকার রাশিদুল ইসলাম সোহেল (২৫) ও ঘাটাইল উপজেলার দেওলাবাড়ি ইউনিয়নের খিলগাতী এলাকার মো. মামুন হোসেন (২৪)।
ফেনী প্রতিনিধি জানান, জেলার ফুলগাজীতে রোলার মেশিনের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার দুই যাত্রী নিহত হয়েছেন। রবিবার মধ্যরাতে উপজেলার মুন্সিরহাট বাজার এলাকায় কুতুবপুরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ফুলগাজী উপজেলার পূর্ব ঘনিয়া মোড়া গ্রামের এয়ার আহমদ (৭০) ও পরশুরাম উপজেলার শালধর বাজার এলাকার আবদুল গফুরের ছেলে আবদুর রহিম (৪৩)। এদিকে ওইদিন যাত্রীবাহী বাসচাপায় হালিমা বেগম (৩৭) নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় তার মেয়ে হানিফা (৪) গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ঘোড়শাল ইউনিয়নের নারকেলবাড়িয়া গ্রামের সফল খামারি মোখলেসুর রহমান। তিনি কৃষি বিভাগের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০১৬ সালে ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারকেল চারা কেনেন। প্রতিটি ৫০০ টাকা করে ২০০ চারা কিনে আড়াই বিঘা জমিতে লাগিয়েছেন। রোপণসহ প্রতিটি গাছের পেছনে তার খরচ হয়েছে ১ হাজার টাকা করে। সব মিলিয়ে এই সাত বছরে বিনিয়োগ করেছেন ১০ লাখ টাকার বেশি। কিন্তু একটি টাকাও তিনি ফেরত পাননি।
মোখলেসুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কৃষি বিভাগ থেকে বলা হয়েছিল আড়াই থেকে তিন বছরে নারকেল ধরবে। মাটিতে দাঁড়িয়েই ফল ছেঁড়া যাবে। গাছ ঠিকই বড় হয়েছে। মোচাও বেরিয়েছে। কিন্তু নারকেল হয়নি। আর গাছগুলো পোকায় ধরার পর অনেকগুলোই কেটে ফেলেছি। কিন্তু খামারজুড়ে পোকা ছড়িয়ে গেছে। আমি খাটো জাতের নারকেলগাছ লাগিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছি।’
শুধু খাটো জাতের নারকেলই নয়, সৌদি খেজুর, মিয়াজাকি আম, ত্বীন ফল, টক আতা, চায়না কমলা, আনারসহ অসংখ্য বিদেশি ফলের বাগান করে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন কৃষক ও খামারিরা। অথচ এই চারার বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশে বিদেশি ফলের মধ্যে থাই পেয়ারা, বারি মাল্টা-১, ড্রাগন, স্ট্রবেরি ও কয়েক জাতের আম বাণিজ্যিক সফলতা পেয়েছে। তবে খাটো জাতের নারকেল, চায়না কমলাসহ কিছু ফলে আমরা সফলতা পাইনি। এখন এসব চাষে আমরা কৃষকদের নিরুৎসাহিত করছি।’
তিনি বলেন, বিদেশি ফল চাষে সফলতা-ব্যর্থতা থাকবে। কিন্তু যেকোনো বিদেশি ফল আনতে হলে আগে মডেল হিসেবে নিয়ে গবেষণা করতে হবে। ফলাফলটা ভালো পেলে তারপর তা কৃষক পর্যায়ে দেওয়া উচিত। তাহলে খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়বেন না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিদেশি ফলের চারা দেশে আনতে হলে আগে যথেষ্ট পরিমাণে গবেষণার প্রয়োজন। গবেষণার ফলাফল ভালো হলে সেই চারা বাণিজ্যিকভাবে চাষ হতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে কোনো ধরনের গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ফলের চারা আনা হচ্ছে। এরপর ওই চারার বিষয়ে খামারবাড়িতে কর্মরত একজন কৃষি কর্মকর্তা পরিচালিত একটি ইউটিউব চ্যানেলসহ আরও কিছু মাধ্যমে সফলতার প্রচার করা হচ্ছে। এরপর বেসরকারিভাবেও বিদেশি চারা আমদানির দ্বার উন্মুক্ত করা হচ্ছে। এতে সিন্ডিকেটে জড়িত কিছু ব্যবসায়ী ফলের চারা আমদানি করছেন। ফলে খামারিরা উদ্বুদ্ধ হয়ে চড়া দামে চারা কিনে বিদেশি ফলের বাগান করছেন। কিন্তু বড় ধরনের বিনিয়োগ করে বেশিরভাগ খামারিই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। আর এই বিদেশি গাছের পোকা-মাকড় দেশি অন্যান্য ফলের গাছও নষ্ট করে দিচ্ছে।
নাটোর সদরের সফল খামারি সেলিম রেজা সম্প্রতি তার পুরো বাগানের ১০৭টি খাটো জাতের নারকেলগাছ কেটে ফেলে আলোচনায় এসেছেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কৃষি বিভাগের প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি প্রতিটি ৫০০ টাকা হিসেবে ১২০টি চারা কিনি। এর মধ্যে ১৩টি আত্মীয়স্বজনকে উপহার দিয়েছি। বাকি ১০৭টি আমার খামারে লাগাই। প্রায় ছয়-সাত বছর সব ধরনের যতœ নেওয়ার পরও ফল ধরেনি। পরে রাগ করে সব গাছ কেটে ফেলেছি।’
জানতে চাইলে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. মেহেদী মাসুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফলের গবেষণায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। কিছু গবেষক আমাদের ছিলেন, তাদের বেশিরভাগই বিদেশে চলে গেছেন। এরপরও আমাদের বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আমাদের আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনের ফলগুলোকে আমরা অনুসরণ করার চেষ্টা করছি। সেখান থেকে গাছের চারা আনছি। আমরা সফলও হচ্ছি। তবে প্রয়োজনীয় পরিচর্যার অভাবে কেউ কেউ ভালো ফল পাচ্ছেন না। এখন পরিচর্যা না করার দোষ তো গাছের ওপর দেওয়া যাবে না।’
একজন খামারি নাম প্রকাশ না করে তার ভিয়েতনাম সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি ভিয়েতনামে দেখেছি খাটো জাতের নারকেল চারার দাম ৮০ থেকে ১২০ টাকা। আর যদি আমরা পরিবহন খরচ ধরি, তাহলে ২০০ টাকার বেশি একটি চারার দাম পড়ার কথা নয়। অথচ ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ প্রকল্পের মাধ্যমে সাড়ে সাত লাখ চারা আনা হয়েছে। সেগুলো দেশে আনা পর্যন্ত খরচ দেখানো হয়েছে ৫১৭ টাকা। আর ১৭ টাকা সরকার ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের কাছে ৫০০ টাকা করে চারা বিক্রি করেছে। এখানেও বড় ধরনের লুটপাট হয়েছে। এর বাইরে ওই সিন্ডিকেট বেসরকারিভাবেও লাখ লাখ চারা এনেছে।’
কৃষিবিদরা বলছেন, ভিয়েতনামের খাটো জাতের নারকেল সাধারণত ভালো হয় সাগরের প্লাবন এলাকায়। আর সেখানকার লবণাক্ততাও থাকতে হবে কম। কিন্তু বাংলাদেশে উপকূলীয় এলাকা থাকলেও সেখানে পানিতে লবণাক্ততা বেশি।
একজন খামারি জানান, দেশের যেকোনো জায়গায়ই একটা ডাব কিনে খেতে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা লাগে। অথচ তিন-চার বছর আগেও এই অবস্থা ছিল না। এর পেছনে দায়ী খাটো জাতের নারকেল। কারণ কৃষকরা দেশি জাত বাদ দিয়ে প্রায় সবাই খাটো জাতের নারকেল লাগিয়েছেন। কিন্তু পাঁচ-সাত বছর পরিচর্যার পর কোনো ফল পাননি তারা।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেকোনো গাছের চারা আমদানির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ও রাষ্ট্রের কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। সেটা হচ্ছে প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টাইন। কিন্তু আমাদের দেশে অনেকেই যথাযথ প্রক্রিয়া মানে না। ফলে গাছের সঙ্গে রোগবালাইও ঢুকছে।’ তিনি বলেন, অন্য দেশে কোনো ফল ভালো হলেই যে বাংলাদেশেও ভালো হবে তা কিন্তু ঠিক নয়। এ জন্যই কোনো জিনিস হুটহাট করে এনে ছেড়ে দেওয়াটা ঠিক নয়। দেশের কৃষি গবেষণা অনেক শক্তিশালী। চারা আমদানি করতে হলে তাদের মাধ্যমে গবেষণা করে যথাযথ ফল পাওয়া গেলেই তা আনা উচিত।
ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার শিবগঞ্জে ২০১৮ সালে ৫০টি সৌদি খেজুরের গাছ লাগান। এর প্রতিটি গাছের চারা তিনি ৯ হাজার টাকা করে কেনেন। তবে ইতিমধ্যে মারা গেছে ১০টি। গত বছর কিছু গাছে ফল এলেও বড় হওয়ার আগেই তা ঝরে যায়। গাছও পোকায় ধরেছে। ইতিমধ্যে কিছু গাছ কেটেও ফেলা হয়েছে।
কালিগঞ্জ উপজেলার তিলেচংপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের আসাদ শেখ লাগিয়েছেন চায়না কমলা। তার গাছগুলোতে একবারে হলদে কমলা ধরে আছে। কিন্তু দেখতে সুন্দর হলেও এতে রস নেই। তেতো স্বাদ, বিচি বেশি। যারাই খেয়েছেন, তারাই গালাগাল করেছেন। আসাদ শেখ বেশ কয়েকবার ফলগুলো বিক্রির উদ্যোগ নিলেও বিক্রি করতে পারেননি। এখন গাছগুলো কেটে ফেলছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের খামারি আকবর হোসেন ১ হাজার ২০০ খাটো জাতের নারকেলগাছ লাগিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে পাঁচ-ছয় বছর যত্ন আত্তি করলেও তাতে ফল ধরছে না। দু-একটি গাছে ফল এলেও ডাবগুলো বড়ই হচ্ছে না।
ফিলিপাইন থেকে আনা এমডি-২ জাতের আনারসের সফলতার গল্প বেশ জোরেশোরে প্রচার হলেও মাঠপর্যায়ের চিত্র ভিন্ন। এই আনারসে চোখগুলো বেশি গভীরে না থাকায় সহজে কাটা যায়। তবে বাংলাদেশের আনারসের মতো এই আনারস মিষ্টি ও সুস্বাদু নয়। আর অনেক কৃষকই এই আনারসের চাষ করলেও কারও চারা মরে যাচ্ছে আবার কারও ফল আসছে না।
এভাবে ত্বীন ফলের চারা আনা হচ্ছে জর্ডান ও মিসর থেকে। প্রতিটি চারা তিন হাজার টাকা বিক্রি করা হলেও তাতে যে ফল আসছে তা খাওয়া যাচ্ছে না। টক আতা নামে একটি বিদেশি ফলের চারা বিক্রি করা হচ্ছে ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে। প্রতিটি চারা বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকার ওপরে। কিন্তু এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এভাবে মাল্টা, আনারের চারা আনা হচ্ছে মিসর, দার্জিলিং থেকে। কিন্তু বেশিরভাগ বাগানে ফল এলেও তা মুখে দেওয়া যাচ্ছে। ফলের ভেতরটা সাদা, রস নেই।
কয়েক বছর ধরে সাড়া ফেলছে জাপান থেকে আনা মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আম। শুরুতে এই গাছের চারা ৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হয়েছে। এখন ৫০০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু দেশে হওয়া এই আমের স্বাদ ভালো নয়। এর ফলনও তুলনামূলক কম।
দুর্নীতি, অনিয়ম আর ঋণ কেলেঙ্কারির জন্য আলোচিত দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত হারে। এসব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের একটি বড় অংশই পরিচালকদের। নানা অনিয়ম ও বেনামে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের আমানত আত্মসাতের কারণে ইতিমধ্যেই কয়েকটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব ঝুঁকিতে পড়েছে। নিজেদের জমানো অর্থ ফেরত পেতে দীর্ঘদিন ধরে আমানতকারীরা এসব প্রতিষ্ঠানের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে কার্যরত ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৭১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে ২৪টি প্রতিষ্ঠান পরিচালকদের ঋণ দিয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিতরণকৃত ঋণের ১২ দশমিক ৬৭ শতাংশই গেছে পরিচালকদের পকেটে। এর মধ্যে নিয়ম ভেঙে দুটি প্রতিষ্ঠান পরিচালকদের হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। অধিকাংশ ঋণের বিপরীতে রাখা হয়নি পর্যাপ্ত জামানত। আবার কোনো কোনো ঋণের জামানত হিসেবে রাখা হয়েছে সরকারি জমি, নদী বা কবরস্থান।
পরিচালকদের ঋণ দেওয়া ছাড়াও ঋণ জালিয়াতির কারণে ব্যাংকবহির্ভূত এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিতরণ করা ঋণের ৫০ শতাংশের বেশি খেলাপি হয়ে পড়েছে অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠানের। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ৯০ শতাংশেরও বেশি। ঋণ জালিয়াতি ও নিয়মিত কাজে পরিচালকদের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে বিপাকে রয়েছে বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স ও বিআইএফসিতে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নানা জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়ে যাওয়ার পর ২০১৯ সালে আলোচনায় আসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এবার বেরিয়ে এলো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালকদের ঋণের তথ্য।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনে পরিচালকদের যেকোনো অঙ্কের ঋণে জামানতের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্যদের জামানত না নিয়ে ৫ লাখ টাকার বেশি ঋণ দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে আইন লঙ্ঘন করে বড় অঙ্কের ঋণ দিয়েছে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যে কারণে ঠিকমতো ঋণ আদায় করতে না পেরে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তথ্য বলছে, পরিচালকদের সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালকদের ঋণ দিয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি। ফনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে পরিচালকদের ঋণ প্রায় হাজার কোটি টাকা। ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করেছে উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। প্রাইম ফাইন্যান্সও দিয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ঋণ। ২৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ দিয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্স। ২০০ কোটির বেশি ঋণ দিয়েছে আভিভা ফাইন্যান্স ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স।
এ ছাড়া পরিচালকদের ঋণ দেওয়ার তালিকায় রয়েছেÑ হজ্জ ফাইন্যান্স, মাইডাস ফাইন্যান্স, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স, ডিবিএইচ ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, লঙ্কান এলিয়েনস ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং এবং সৌদি বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড এগ্রিকালচার ফাইন্যান্সসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসনের অভাব রয়েছে। যারা এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় রয়েছে তাদের নিয়েও প্রশ্ন আছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকও ঠিকভাবে তদারকি করে না। এ সুযোগে পরিচালকরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের মতো ব্যবহার করছেন।
তিনি বলেন, ‘আর্থিক খাতে সুশাসন ফেরাতে হলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন আছে। এ ক্ষেত্রে যদি সরকার না চায় তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানে সুশাসন ফিরিয়ে আনাও কঠিন। তাই আর্থিক সুশাসন ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে ক্ষমতা দিতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকেও ঋণ অনিয়মসহ অন্যান্য অনিয়ম ঠেকাতে আরও কঠোর হতে হবে।’
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক খাতের যত অনিয়ম পেয়েছে তার বেশিরভাগের ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন করে জামানতবিহীন কিংবা ভুয়া জামানতের বিপরীতে ঋণ দেওয়ার তথ্য মিলেছে। অনেক ক্ষেত্রে জামানত নিলেও তা অতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুয়া গ্যারান্টির বিপরীতে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে ঋণ আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। অনেক প্রতিষ্ঠান আর আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। পি কে হালদারের দখল করা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে। সমস্যাগ্রস্ত পিপলস লিজিং, বিআইএফসি, এফএএস ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং, ফার্স্ট ফাইন্যান্সসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রচুর ঋণখেলাপি হলেও যথাযথ আমানত না থাকায় তা ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্চ প্রান্তিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৩৫ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৬টিরই খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এ সময়ে অপরিবর্তিত ছিল তিন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি। আশার দিক হচ্ছে, মার্চ প্রান্তিকে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে।
যে ২৬টি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়েছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ফনিক্স ফাইন্যান্সের। তিন মাসে প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬০ কোটি টাকা। এরপরই অবস্থান ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের। প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি বেড়েছে ১৫৫ কোটি টাকা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্সের বেড়েছে ১০৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি প্রতিষ্ঠান ইডকলের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯৪ কোটি, বিআইএফএফএলের ৭১ কোটি, লংকাবাংলার ৬৭ কোটি, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ৫২ কোটি, আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ৪৩ কোটি, ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ৩৭ কোটি, মাইডাস ফাইন্যান্সের ৩০ কোটি, আইআইডিএফসির ২৯ কোটি, পিপলস লিজিংয়ের ২৫ কোটি ও মেরিডিয়ান ফাইন্যান্সের ২৫ কোটি টাকা খেলাপি বেড়েছে।
খেলাপি বাড়ার তালিকায় আরও রয়েছে অগ্রণী এসএমই, আভিভা ফাইন্যান্স, বিআইএফসি, সিভিসি ফাইন্যান্স, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং, জিএসপি ফাইন্যান্স, ইসলামিক ফাইন্যান্স, লংকান অ্যালায়েন্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল হাউজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত ছয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ কমেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে এফএএস ফাইন্যান্সের। প্রতিষ্ঠানটির তিন মাসে খেলাপি কমেছে ৯১ কোটি টাকা। উত্তরা ফাইন্যান্সের খেলাপি কমেছে ৮৯ কোটি টাকা। প্রিমিয়ার লিজিংয়ের খেলাপি কমেছে ৪৭ কোটি টাকা। হজ্জ ফাইন্যান্সের প্রায় ১৯ কোটি, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৪ কোটি টাকা কমেছে।
তবে এ সময়ে তিনটি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি অপরিবর্তিত ছিল। এগুলো হচ্ছে সৌদি-বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি, স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স এবং দ্য ইউএই-বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গন। এ উপলক্ষে প্রশাসনকেও ঢেলে সাজানো হচ্ছে; বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল ঘটতে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৭৫ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এর ফলে পুলিশে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বদলি নিয়ে কানাঘুষা চলছে পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে।
জানা গেছে, পুলিশে তিন স্তরে বদলি করার পরিকল্পনা করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। কাজ চলছে পুরোদমে। তালিকা প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে যাবে পুলিশ। এ কারণে তফসিল ঘোষণার আগেই পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও জেলার এসপিদের বদলি করা হবে। পরে নির্বাচন কমিশন বদলি করলেও পুলিশে ব্যাপক প্রভাব পড়বে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
পুলিশে আবারও বড় ধরনের পদোন্নতির ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) এ পদোন্নতিতে অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছে। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেছেন অতিরিক্ত সচিব (পুলিশ ও এনটিএমসি) মো. আলী হোসেন। পাশাপাশি পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বিশেষ বৈঠক করছেন।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেই পুলিশ প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনারকে বদলি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল ও রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি ও ২৪টি জেলার পুলিশ সুপারকে (এসপি) বদলি করা হয়েছে। নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার আগেই প্রায় সব জেলার এসপিকে বদলি করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বদলির জন্য তিনটি স্তর করা হয়েছে। যেসব জেলার পুলিশ সুপারদের দায়িত্ব পালনের দুই বছর হয়েছে, তাদের একটি তালিকা হয়েছে। বিশ^স্ত কর্মকর্তাদের বাছাই করা হচ্ছে; নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তাদের অন্য জেলা বা ইউনিটিতে বদলি করা হবে, যাতে নির্বাচন কমিশনের অধীনে পুলিশ চলে যাওয়ার পর বদলি করলেও সমস্যা না হয়।’ তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচন বেশ জটিল হবে বলে মনে হয়। এ জন্য চৌকস ও নিষ্ঠাবান পুলিশ কর্মকর্তাদের আমরা বাছাই করে বদলি করার কাজ শুরু করেছি। বড় পদোন্নতির ঘটনাও ঘটবে। সুপারনিউমারারির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। ইতিমধ্যে পদোন্নতির লম্বা তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
পুলিশ-সূত্র জানায়, পুলিশে দুজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। গত সপ্তাহে সচিবালয়ে এসএসবির বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে দুটি অতিরিক্ত আইজিপির শূন্য পদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সম্ভ্যব্য কয়েক জনের নাম আলোচিত হয়েছে। ১৫তম ব্যাচের দুজন কর্মকর্তা অতিরিক্ত আইজিপি হচ্ছেন বলে জানা গেছে। সুপারনিউমারারি পদে ৫২৯ জনকে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ড নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম প্রায় চূড়ান্ত। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন। তা ছাড়া ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের পুলিশ সুপার করার বিষয়ে প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি তালিকা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। তালিকায় বলা হয়েছে, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) ৩৪, উপমহাপুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ১৪০, অতিরিক্ত উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) ১৫০ ও পুলিশ সুপার ১৯০ জনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, পদোন্নতি পাওয়ার পর পুলিশ কর্মকর্তাদের ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ রেঞ্জে নিয়োগ দেওয়া হবে। তা ছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর মহানগর পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর, এসবি, সিআইডি, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা, পুলিশ স্টাফ কলেজ, রেলওয়ে পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, এপিবিএন, এন্টি টেররিজম ইউনিট, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ, মেট্রোরেল পুলিশ ইউনিট ও পিটিসি ইউনিটে (টাঙ্গাইল, নোয়াখালী, রংপুর ও খুলনা) সুপারনিউমারারি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি না পাওয়ার হতাশা থেকে বের করে আনতেই এ পরিকল্পনা করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এই পদোন্নতিকে ‘নির্বাচনী’ পদোন্নতি আখ্যাও দেওয়া হচ্ছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা এ আখ্যার বিষয়টি মানতে নারাজ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সামনে সংসদ নির্বাচন। হিসাব করেই পদোন্নতি ও বদলির পরিকল্পনা করা হয়েছে। পদোন্নতি ও বদলির একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে সুপারনিউমারারিতে পদোন্নতি সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘পদ না থাকায় পদোন্নতি পাচ্ছে না অনেকে। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। হতাশা দূর করার জন্যই এ পদক্ষেপ।’ পদোন্নতি হওয়ার পর কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি পাবে। যেসব পদ খালি হবে, সেই পদগুলোতে পদোন্নতিপ্রাপ্তরা কাজ করবেন। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, পর্যায়ক্রমে ২৯তম ব্যাচের ১৫০, ৩০তম ব্যাচের ১৮৪, ৩১তম ব্যাচের ১৮৩ ও ৩৩তম ব্যাচের ১৫৫ জন অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপারের পুলিশ সুপার হিসেবে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পদোন্নতি ও বদলি রুটিন বিষয়। নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশে কোনো বদলি করা হচ্ছে না। পুলিশের যারা বেশি দিন ধরে একই ইউনিটে কর্মরত আছে, তাদের সরানো হচ্ছে। সুপারনিউমারারির মাধ্যমে পদোন্নতির বিষয়ে আলোচনা চলছে।’
মাঠপর্যায়ের কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যাদের ওপর আস্থা রাখা যায়, তাদের বিভিন্ন ইউনিটে পদায়ন করা হচ্ছে। নির্বাচনী ছকেই হাঁটা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা থাকে সব সময়। বিষয়টি মাথায় রেখে আগেই প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তর। নির্বাচনের সময় রেঞ্জ ডিআইজি, মহানগর পুলিশ কমিশনার, জেলার এসপি, মহানগর জোনের উপকমিশনার, থানার ওসি, ফাঁড়ি ও তদন্ত কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের বড় ভূমিকা থাকে। এ কারণে যারা দায়িত্ব পালন করবেন, আগে থেকে তাদের ফিটলিস্ট তৈরি করা হয়েছে।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে আগামী বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশের দিন রাজধানী ঢাকার রাজপথের দখলে নিতে চায় বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। অবশ্য, সমাবেশ শেষ করে তারা ফিরে যাবেন। মহাসমাবেশে আসতে বাধার মুখে পড়ার আশঙ্কায় আগেভাগেই নেতাকর্মীদের ঢাকায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতারা বলেছেন, সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা জড়ো হবেন সমাবেশস্থলে। বক্তৃতাপর্ব শুরু হবে দুপুরের পর।
মহাসমাবেশ সামনে রেখে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানিয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা।
কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২৭ জুলাই দিনব্যাপী রাজধানী ঢাকার রাজপথে থাকবে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলার দখলে। তবে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে আমরা ঘরে ফিরে যাব। আশা করি সরকার আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’
সরকারবিরোধী বিভিন্ন দলের নেতারা, ‘ইতিমধ্যে কেউ কেউ অতীতের মতন নানা জল্পনা-কল্পনা করছে এই বলে যে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো হয়তো বসে পড়বে। এমন কোনো চিন্তাভাবনা তাদের নেই। শান্তিপূর্ণভাবে শুধুই সমাবেশ হবে। সেখান থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হবে।’
তারা বলেন, মহাসমাবেশে সারা দেশ থেকে দলের নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসবেন। বিএনপি নয়াপল্টন কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে। গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অথবা মৎস্য ভবন এলাকায়, ১২-দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংকি এলাকায়, গণফোরাম মতিঝিলের আরামবাগে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এফডিসি গেটসংলগ্ন এলাকায়, সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো পল্টন মোড় থেকে কাকরাইল মোড়ের মাঝামাঝি এলাকায় সমাবেশ করবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের মহাসমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের বাইরে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ওইদিন রাজপথে পৃথকভাবে সমাবেশ করবে।’
পরবর্তী কর্মসূচি কী হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো আমরা চূড়ান্ত করতে পারিনি। আন্দোলনে শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।’
তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, সংঘাতের মতো ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি অনুযায়ী কর্মসূচি দেওয়া হবে। সেটা লাগাতার হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ঢাকাতেই কর্মসূচি বেশি রাখা হবে। এ ছাড়া আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর বাইরে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) সমাবেশের কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছে। তারা তাদের মতো প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সমাবেশের কর্মসূচি দিলে অধিকাংশ সময় পরিবহন বন্ধ করে দেয়, পথে পথে তল্লাশিসহ সরকারের দিক থেকে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। গত ১২ জুলাই সমাবেশের দিন সদরঘাট, গাবতলীয়, যাত্রাবাড়ী এলাকায় সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের মোবাইল চেক করা হয়েছে। এসব ঝামেলা এড়াতে নেতাকর্মীদের আগেভাগেই ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার এবং আগামীকাল বুধবারের মধ্যে ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীরা রাজধানীতে পৌঁছে যাবেন। ঢাকার বাইরে থেকে আগত নেতাকর্মীরা নিজ নিজ উদ্যোগে সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থান নেবেন।
মহাসমাবেশ সফল করতে গতকাল যৌথসভা করেছে বিএনপি। এ ছাড়া সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরামসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল। জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে গান, কবিতা পাঠ, মঞ্চ নাটকসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা মহাসমাবেশের জন্য জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অথবা মৎস্য ভবনের সামনে অনুমতি চাইব। যেখানে অনুমতি দেবে সেখানেই কর্মসূচি পালন করবে তারা। কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দলগুলো দফায় দফায় বৈঠক করছে।’
সদ্য বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধীদের সঙ্গে যোগ দেওয়া এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ২৭ জুলাই বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ করব। বেলা ১১টায় এ সমাবেশ শুরু হবে। সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইতিমধ্যে সমাবেশস্থলের কথা বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছি।’
নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চায় বিএনপি : মহাসমাবেশের জন্য জায়গা চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। এতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার কথা বলেছে। গতকাল বিকেলে এই চিঠি দেওয়া হয় বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
গত মাসের শেষ দিন, অর্থাৎ ৩০ জুন দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ১২ জেলা ডেঙ্গুমুক্ত ছিল। কিন্তু গত ২৪ দিনে এসব জেলায়ও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আর দেশের কোনো জেলা ডেঙ্গুমুক্ত নয়।
এই ২২ দিনে রোগী বেড়েছে সাড়ে ৪ গুণ, যা গত মাসের শেষ দিনের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত জেলার সংখ্যাও।
যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল দেশের চুয়াডাঙ্গাকে ডেঙ্গুমুক্ত দেখিয়েছে। কিন্তু জেলার সিভিল সার্জন অফিস ও আমাদের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জেলায় চারজন রোগী ভর্তির তথ্য জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন জেলা সদর হাসপাতালে ও একজন জীবননগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এসব রোগী গত শনিবার রাতে ভর্তি হয়েছে। এর আগে পর্যন্ত এই জেলা ডেঙ্গুমুক্ত ছিল। এই তিনজন রোগী ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে সিভিল সার্জন অফিস।
ডেঙ্গু আক্রান্ত ৬৪ জেলার মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছে ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা জেলায়, ২১ হাজার ৪০৮ জন। এই সংখ্যা দেশের মোট রোগীর ৬১ শতাংশ। অথচ গত মাসের শেষ দিনে এই ৬৪ জেলায় রোগী ছিল ৬ হাজার ১১৪ জন, যা সে সময়ের মোট রোগীর ৭৭ শতাংশ। অর্থাৎ গত ২২ দিনে তুলনামূলকভাবে ঢাকায় রোগী কমেছে ও ঢাকার বাইরে বেড়েছে।
বিশেষ করে সর্বশেষ গত রবিবারও ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে রোগীর সংখ্যা বেশি ছিল। সেদিন ঢাকায় রোগী ছিল ১ হাজার ৬৪ ও ঢাকার বাইরে রোগী ছিল ১ হাজার ২২৮ জন, যা একদিনে মোট ভর্তি রোগীর ৫৪ শতাংশ। এ নিয়ে এ বছর চার দিন ঢাকার বাইরে বেশি রোগী ভর্তির ঘটনা ঘটল। এর মধ্যে ২১ জুলাই ৮৯৬ জন রোগীর মধ্যে ঢাকার বাইরে ৪৯৩ ও ঢাকায় ৪০৩ জন, ২০ জুলাই ১ হাজার ৭৫৫ জনের মধ্যে ৯১০ ঢাকার বাইরে ও ঢাকায় ৮৪৫ জন এবং প্রথম ১৪ জুলাই ৪৪৯ জনের মধ্যে ২৬৫ ঢাকার বাইরে ও ঢাকায় ১৮৪ জন ভর্তি হয়।
ধীরে ধীরে ঢাকার বাইরে রোগী ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় সিভিল সার্জনরা স্থানীয়ভাবে এডিস মশার বিস্তার ও ঢাকা থেকে মানুষের মাধ্যমে ভাইরাস বহন করাকে চিহ্নিত করেছেন। তারা বলেছেন, স্থানীয়ভাবে এডিস মশা পাওয়া গেলেও এডিস নিধনে স্থানীয় সরকার প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে রাজধানীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখন বিভিন্ন জেলায় রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ঢাকায় জনসংখ্যা বেশি। এখানকার জনসংখ্যা অনুপাতে ডেঙ্গু রোগী বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া এখানে ঢাকার বাইরে থেকেও রোগী আসছে। এখানে এডিসের ঘনত্ব বেশি। এ পর্যন্ত যতগুলো জরিপ হয়েছে, তাতে দেখা গেছে ঢাকায় সর্বাধিক এডিস মশা ও লার্ভা বেশি পাওয়া গেছে।
ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়ার কারণ হলো গ্রামও শহর হয়ে গেছে। অপরিচ্ছন্ন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ হয়েছে। যেখানে নোংরা ময়লা ও স্বচ্ছ পানি জমে থাকছে। আমরা পরিষ্কার করছি না। ভবনের ছাদে পানি জমে থাকছে। ঢাকা থেকে মানুষ বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। তারা রোগটির ভাইরাস বহন করছে। সেই সঙ্গে ভেক্টর এডিস মশাও স্থানান্তর হচ্ছে।
হাসপাতালে ভর্তি রোগী ৩৫ হাজার ছাড়াল : ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে এ বছর হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়েছে। নতুন করে নয়জনের মৃত্যু হওয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৫ জনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২ হাজার ২৯৩ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই সংখ্যা চলতি বছরে এক দিনে সর্বোচ্চ ভর্তি রোগীর সংখ্যা। সবমিলিয়ে এবার ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৩৫ হাজার ২৭০ জনে। এর মধ্যে জুলাই মাসের ২৩ দিনেই ভর্তি হয়েছে ২৭ হাজার ২৯২ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ৭ হাজার ৪৬৩ জন রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৪ হাজার ৩৯৫ এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ হাজার ৬৮ জন।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চট্টগ্রামে : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি রোগী ছিল চট্টগ্রামে ২ হাজার ২০৮ জন। তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ১ হাজার ৫৪৩ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৬৫ জন। এরপর বেশি রোগী রয়েছে ১ হাজার ৪৪৬ জন। তাদের মধ্যে বরিশাল জেলায় ৪৩২ ও বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ হাজার ১৪ জন। এরপর বেশি রোগী পটুয়াখালীতে ৬৫৯, ময়মনসিংহে ৪৯৩, লক্ষ্মীপুরে ৪৩৬, গাজীপুরে ৩৮৫ ও ভোলায় ৩৮১ জন। এ ছাড়া ৩০০-এর ঘরে রোগী রয়েছে মাদারীপুর, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা ও বরগুনায়। ২০০-এর ঘরে রোগী রয়েছে মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর ও খুলনায়।
ঢাকার বাইরে এডিস নিধনে সংকট, চিকিৎসাও সীমিত : চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার ডেঙ্গু বেশি হবে সেটা আমরা দুই-তিন মাস আগে থেকেই বলে আসছি। কোনো মাস ডেঙ্গু ছাড়া ছিল না। আমাদের কীটতত্ত্ববিদরা জেলার নির্মাণাধীন সব জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পেয়েছেন। গত বছর আইইডিসিআরের টিম এসে এখানে সার্ভে করেছে। তখনই তারা বলেছেন, এ বছর ঢাকার পর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি হবে। আমরাও আগে থেকে সতর্ক ছিলাম। থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে এখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ও পানি জমছে। সেখানে এডিস মশা ডিম পাড়ে। ওখান থেকে লার্ভা উৎপন্ন হয়। এজন্য এখানে এডিস মশা বেশি ও ডেঙ্গুও বেশি।
আগের সতর্কতা অনুযায়ী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে এই সিভিল সার্জন বলেন, এডিস মশা নিধনের যাদের দায়িত্ব, তারা সে ব্যবস্থা নেবেন। আমরা আমাদের হাসপাতাল আগে থেকেই সতর্ক করে রেখেছি। চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি।
এই কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভেতর সিভিল সার্জনের কোনো হাসপাতাল নেই। সিভিল সার্জন শুধু সতর্কবার্তা দিতে পারে। তারপরও আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে কীটতত্ত্ববিদদের বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে সার্ভে করিয়েছি। সিটি করপোরেশনও সার্ভে করেছে। কিছু কিছু জায়গায় গত বছরের চেয়ে এবার আরও বেশি এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। আমরা এ বিষয়গুলো সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। মেয়র মশা নিধনের জন্য চেষ্টা করছেন।
চট্টগ্রামে ঢাকার মতো এত বেশি লোকবল ও ব্যবস্থাপনা নেই বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এই জেলায় মাত্র দুটি সরকারি হাসপাতালÑ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আন্দরকিল্লায় ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভরসা। সেখানে দুই-তিনজন করে রোগী ভর্তি আছে। আমরা প্রটোকল মেনে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
চট্টগ্রামের মানুষ ঢাকার মানুষের মতো এত হাসপাতালমুখী নন বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এখানে আর্থিক সংগতি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে বাসায় বসে চিকিৎসা নিতে চায়। অনেক সময় ডেঙ্গুর শক সিনড্রোম দেখা দিলে হাসপাতালে আসে। তখন বাঁচানো কষ্ট হয়ে যায়। আমরা সব রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক সবাইকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমরা উঠোন বৈঠক করেছি। মাইকিং করছি। কিন্তু ডেঙ্গু মৌসুমের কারণে আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কী হবে, সেটা বলতে পারছি না।
বরিশাল জেলার সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে ডেঙ্গু বাড়ার প্রধান কারণ গত কোরবানি ঈদের সময় ঢাকা থেকে যারা এসেছেন, তারা রোগটি বহন করে এনেছেন। এখানে সে সময় রোগী ছিল না। ঈদের পর হঠাৎ রোগী বেড়ে গেল। দেখা যাচ্ছে, রোগীদের অধিকাংশেরই ঢাকায় ভ্রমণের রেকর্ড আছে ও তাদের বাড়ির কেউ না কেউ ঢাকা থেকে এসেছেন। এটাই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের প্রধান কারণ।
এখানে কী পরিমাণ এডিস মশা বা এডিসের লার্ভা আছে, সেটা সিটি করপোরেশনের সার্ভে করার কথা। এসব সার্ভে করার কোনো ইউনিট আমাদের নেই। তাই আমরা বলতে পারছি না এডিসের লার্ভা আছে কি না।
এই কর্মকর্তা বলেন, বরিশাল বিভাগের পক্ষ থেকে নাজিরপুরসহ তিনটি জায়গায় এডিস মশার সার্ভে করেছিল। সেই রিপোর্ট আমাদের কাছে নেই। এডিস মশা এখানে থাকতে পারে। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিকে প্রথমে সচেতন হতে হবে। আমরা সমস্ত জায়গা পরিষ্কার করে উঠতে পারিনি। মশারি টাঙাতে হবে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২ নভেম্বর। পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা, কানাঘুষা; শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
বর্তমান উপাচার্যই আবার দায়িত্ব পাবেন নাকি নতুন কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে এ আলোচনাই চলছে এখন। আলোচিত হচ্ছে কয়েকজন শিক্ষকের নামও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন কানাঘুষারও অবসান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্য থেকেই কাউকে বাছাই করার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। গুণী কোনো শিক্ষক উপাচার্যবিষয়ক আলোচনার মধ্যে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হবে কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন।
রীতি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। কিন্তু এবার সিনেট অধিবেশন হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য অধিবেশন ডাকবেন কি ডাকবেন না; ওপর মহলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানেন না। উপাচার্য নিজেও বিষয়টি খোলাসা করছেন না।
অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন অসুস্থতা, ছুটি, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে একজনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাদেশের নিয়ম অনুসরণ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হোক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং আগামী নির্বাচনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘ভিসি প্যানেল নিয়ে আলোচনা নেই। উপাচার্যও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তাদের মধ্য থেকেই কারোর পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এ বিষয়ক আলোচনায় রয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। পরে প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সামলাচ্ছেন তিনি। দুই মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার নজির নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তার দায়িত্ব পালনের শেষ দেখছেন অনেকে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন তিনি।
ইমেরিটাস অধ্যাপক বা অন্য কোনো গুণী শিক্ষক নেই উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গুণী শিক্ষকদের সামনে আনার যে ধরনের কাঠামো থাকা উচিত তা নেই। যারা তোশামোদ করতে পারে, অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে, তাদেরই প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়ে আসা হয়। সত্যিকারের গুণী শিক্ষক এবং অনেক ভালো গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা কখনো প্রশাসনের দায়িত্বে আসতে পারেন না। তারা ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি দিতেও রাজি নন।’
অতীতে উপাচার্যদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটা ভারসাম্য ছিল। এখন তা নেই। এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদগুলো দেওয়া হয়।
পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন বা ভিসি প্যানেল নিয়ে আগ্রহ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের। বিএনপিঘোষিত এক দফাতেই তারা মগ্ন। যদিও সিনেটে তিনজন প্রতিনিধি থাকায় সুযোগ তাদেরও রয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন না হলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিষয়ে ভাবছি না। এ বিষয়ে আমাদের ফোকাস নেই। আমাদের ফোকাস হচ্ছে এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিবর্তন আসবে।’
শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা নীল দল এখনো এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিনি। যথাসময়ে দলের সভায় এ নিয়ে কথা হবে। মনোনয়ন কে পাবেন, তার আলোচনাও সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ তিনজন বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। আমরা উনাদের সমর্থন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের গতি অনুযায়ীই সব চলবে। এ বিষয়ে যাদের ভাবা প্রয়োজন তারা অবশ্যই ভাববেন।’ সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন হলে আমরা ডাকি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।