
এক দফা দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে বিএনপি। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কৌশল ও গতিপ্রকৃতি নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিক সাফি
দেশ রূপান্তর : মহাসমাবেশ নিয়ে এক ধরনের নাটকীয়তা হলো। শেষ পর্যন্ত অনুমতি পাওয়া গেছে। সমাবেশ কেমন হবে মনে করছেন?
মির্জা আব্বাস : যদি সরকার বাধা না দেয় তাহলে সমাবেশ ভালো হবে। ওরা এখন অজুহাত খুঁজছে যেন সমাবেশ করতে না পারি। আগামীকালের (আজকের) মহাসমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ।
কোনো চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র, সহিংসতা করে মহাসমাবেশ নস্যাৎ করা যাবে না। কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাব, আমাদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার ব্যবস্থা করবেন। অন্যথায়, দায়ভার বহন করতে হবে সরকার এবং যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের। এ আন্দোলন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। মানুষের যে উত্থান এটাকে রুখে দেওয়ার জন্য তারা (সরকার) একটা নতুন চক্রান্ত শুরু করেছে। পাল্টা কর্মসূচির মাধ্যমে তারা (সরকার) পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চাইছে।
দেশ রূপান্তর : অনেক ঘটনার পর নয়াপল্টন সমাবেশের সিদ্ধান্ত হয়েছে?
মির্জা আব্বাস : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ইতিবাচক ভূমিকার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তারা আগামীকাল (আজ) নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের নিরাপত্তা বিধানে সহযোগিতা করবেন। একই সঙ্গে আশা করি সমাবেশে আসার পথে জনগণ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের কোনো প্রকার বাধা দেবে না।
দেশ রূপান্তর : বিএনপির পক্ষ থেকে রাজপথ দখলের কথা বলা হচ্ছে? বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন?
মির্জা আব্বাস : সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নানান চেষ্টা করছে। তারা বলে, বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার। নির্বাচন হবে কিন্তু আমাদের জয়ী হতে হবে। সেটার জন্য তারা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় রদবদল করছে। তাদের দিয়ে ভোটারবিহীন নির্বাচন করে নেবে। এত সহজ হবে না, জনগণ এটা বারবার মেনে নেবে না। মানুষ তাদের ন্যূনতম অধিকার, ভোটাধিকার আদায়ের জন্য জনগণ যদি রাজপথ দখল করে প্রতিবাদ জানায়, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব তাদের সমর্থন জানানো। আমরা তা জানাচ্ছি, সবসময়ই জানাব।
দেশ রূপান্তর : সরকারের দাবি আপনারা সংঘাত সৃষ্টি করতে চান?
মির্জা আব্বাস : আপনারা দেখেছেন, দেশবাসী দেখেছে, গত বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে সারা দেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে প্রতিহত করে শান্তি মিছিলের নামে বিশৃঙ্খলা করেছে। একজনকে হত্যা ও অনেককে আহত করার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা ১৫ বছর ধরে নিপীড়নের শিকার।
দেশ রূপান্তর : তারা তো বলে আপনারা অগ্নিসন্ত্রাস করেন?
মির্জা আব্বাস : ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনে ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সে সময় যত রকম জ¦ালাও-পোড়াও আছে; ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে আগুন, শেরাটনের সামনে বাসে গান পাউডার দিয়ে ১১ জনকে হত্যাসহ অসংখ্য ঘটনা ঘটিয়েছে। একই ধারাবাহিকতা ২০১৩ থেকে ’১৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আগুন সন্ত্রাস করে বিএনপির নাম দিয়েছে। আওয়ামী লীগই অগ্নিসন্ত্রাসের হোতা, জন্মদাতা।
দেশ রূপান্তর : বিএনপির সমাবেশ, আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনেরও সমাবেশ কাল (আজ)। বিশৃঙ্খলা হতে পারে বলে মনে করছেন কি?
মির্জা আব্বাস : আমরা শান্তিপূর্ণ মিটিং-মিছিল করেছি। কোনোরকম গোলোযোগ হয়নি। বরং তারাই গোলযোগ তৈরি চেষ্টা করছে। আমাদেরও প্রশ্ন, কেন? আমরা যেদিন মিছিল-মিটিং করি, আপনারা সেদিন দিয়েন না। আপনারা যেদিন করবেন, আমরা দেব না। আর তা না করে আওয়ামী লীগ আমাদের কর্মসূচির দিনই কর্মসূচি ঘোষণা করে। কেন? এটা আর সহ্য করা হবে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা জেল খাটতে শিখেছে, মৃত্যুবরণ করতে শিখেছে, মিছিল করতে শিখেছে। এবার অত্যাচার আর সহ্য করবে না, জবাব দেবে।
দেশ রূপান্তর : মহাসমাবেশের পর আপনাদের কী কর্মসূচি আসছে?
মির্জা আব্বাস : জনগণের গণতন্ত্র, তাদের কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার জন্যই আমাদের আন্দোলন। গাবতলী থেকে রায়সাহেব বাজার মোড়, আবদুল্লাহপুর থেকে রায়সাহেব বাজার মোড় দুটি পদযাত্রা হয়েছে। আমার আগে কখনো এরকম অভিজ্ঞতা ছিল না। সারা বিশ্বে এত বড় মিছিল কেউ কখনো করতে পারেনি। এরপর তারুণ্যের সমাবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতি। আগামীতে এমন অনেক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি থাকবে।
দেশ রূপান্তর : এ আন্দোলনের শেষ পরিণতি কী?
মির্জা আব্বাস : নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন আদায়ে সরকারকে বাধ্য করা ছাড়া এই আন্দোলন শেষ হবে না। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আমি আমার এলাকা থেকে যখন মিছিল বের করি, তখন তার পতন হয়েছিল। এবারও প্রয়োজনে আমার এলাকা থেকে আমার নেতৃত্বে প্রথম মিছিলটি বের হবে। সরকারের শেষ পরিণতি না দেখা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাব।
দেশ রূপান্তর : সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের ওপর বিদেশিদেরও চাপ রয়েছে। বিএনপি কী মনে করছে?
মির্জা আব্বাস : বাংলাদেশ নিয়ে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এখানে কী হচ্ছে, তা তারা জানতে চায়। ফলে তারাও কথা বলছে। সরকার বুঝতে পারছে চারদিকে থেকে তাদের ক্ষেত্র ছোট হয়ে আসছে। তারা যে চলে যাবে, সরকারের যে পতন ঘটবে, এটা আশঙ্কা করেই তারা কার্যক্রম চালাচ্ছে। অত্যাচার-জুলুম বাড়িয়ে দিয়েছে।
দেশ রূপান্তর : আপনাদের কর্মসূচি কি শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক হবে?
মির্জা আব্বাস : সারা দেশেই আমাদের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। তবে এটা স্বাভাবিক, সব ক্ষেত্রে রাজধানীই সবার মনোযোগ আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে। তাই কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীতেও আমাদের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এতে অংশ নিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নগরবাসী রাস্তায় নেমে আসছে। তারা বলছে, আমরা এ সরকারকে চাই না।
দেশ রূপান্তর : আপনি কি মনে করেন নিরপেক্ষভাবে বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে সবপক্ষ সহযোগিতা করবে?
মির্জা আব্বাস : আমাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে, তার প্রমাণ আমরা বারবার দিয়েছি। এবার জোর দিয়ে বলছি, আজকের সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যদের বলব, আমাদের নিয়ে চিন্তা না করে ক্ষমতাসীনদের পাহারা দেন। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে, মামলা দিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বানচাল করতে চায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষ থাকলে, হামলা, মামলা না হলে আমাদের জনসমাবেশগুলো মহাসমাবেশে পরিণত হবে।
দেশ রূপান্তর : যদি সরকার ২০১৪ ও ’১৮ সালের মতো আগামী সংসদ নির্র্বাচন করতে চায়, তখন আপনাদের করণীয় কী হবে?
মির্জা আব্বাস : সর্বশেষ ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে তাদের (আওয়ামী লীগের) ভোট পড়েছে ৮-১০ শতাংশ। বাকি ভোটার ভোট দেয়নি। মানে বাকি ৯০ ভাগ ভোট বিএনপির। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তারা ১০টি আসনও পাবে না। এজন্যই ওবায়দুল কাদেররা বলেন, সংবিধানের বাইরে তারা একচুলও সরবেন না। খুব ভালো কথা। আপনাদের কথায় স্থির থাকেন। আমরাও বলি, সংবিধানের বাইরে আমরাও এক পা যাব না। তবে খায়রুল হকের (এবিএম খায়রুল হক) সংবিধান না। বাংলাদেশের অখ- সংবিধান, যেটা কাটাছেঁড়া করা হয়নি। যে সংবিধান থেকে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়নি। ওবায়দুল কাদেরদের বলব, খেলা কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। এই খেলা শেষ করে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।
মির্জা আব্বাস
স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি
দুদিনের নাটকীয়তার পর অবশেষে রাজপথেই সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম তিন সংগঠন। ২৩টি শর্ত দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপক্ষকেই সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
আজ শুক্রবার বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের কার্যালয়ের সামনে আর আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের সমাবেশ হবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে।
কর্মসূচি ঘিরে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ বলেছে, আগের মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করছে তারা।
রাজপথে মহাসমাবেশ করলে আওয়ামী লীগও রাজপথে শান্তি সমাবেশ করবে। এমন অঘোষিত এক দাবি ওঠায় জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল আওয়ামী লীগের সহযোগী ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে। তবে আওয়ামী লীগ মাঠে যেতে রাজি যদি বিএনপিও মাঠে সমাবেশ করে, সে শর্তে। সমাবেশ স্থান নিয়ে জটিল এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবারের সমাবেশের দিন পিছিয়ে যায়।
আগে ঘোষণা দেওয়া বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশ করার জন্য বিএনপি অনুমতি চেয়ে বুধবার পুলিশের সঙ্গে দেনদরবার, নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করে। বিএনপিকে নয়াপল্টনের পরিবর্তে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার বিকল্প দিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, কর্মদিবসে করলে সেই মাঠেই করতে হবে। অন্যথায় ছুটির দিনে করতে হবে। রাত পর্যন্ত এ নিয়ে দরকষাকষি করে শেষে বিএনপি কর্মসূচি পিছিয়ে শুক্রবার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
একইদিন বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ তারুণ্যের জয়যাত্রা সমাবেশের ঘোষণা দেয়। এর আগে যুবলীগের সমাবেশ থেকে বলা হয়েছিল, তারা ২৪ জুলাই সমাবেশ করবে। কিন্তু পিছিয়ে বিএনপির মহাসমাবেশের দিন করায় এ নিয়ে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়। বিএনপি সংঘাতের উসকানি দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ সংঘাতের আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে উল্টো বিএনপির বিরুদ্ধে দেশের অস্থিতিশীলতা তৈরির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে।
বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে মহাসমাবেশ করবে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে। অন্যদিকে শান্তি ও উন্নয়ন প্রচারে সমাবেশ করবে টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন।
ডিএমপির অনুমতি নিয়ে সমাবেশ স্থান জটিলতা দূর হলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিএনপি মহাসমাবেশ শেষে রাস্তায় বসে যেতে পারে গোয়েন্দা সংস্থার এমন তথ্যের বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবরে ভাবিয়ে তুলেছে আওয়ামী লীগকে। বিএনপি এমন কোনো পরিস্থিতির দিকে গেলে কী করবে আওয়ামী লীগ, সে সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতি মাথায় রেখে এগোতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলকে। তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় মনে করে, বিএনপি বসে যাওয়ার মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না। করলে সেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া বিএনপির বসে পড়ার বিষয়টি মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দফায় দফায় বৈঠক করছে। সতর্ক নজর রেখেছে বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করার শেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বিএনপি। মহাসমাবেশ সফল করতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে গতকাল দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া সরকারবিরোধী বিএনপির সমমনা দলগুলো গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে পৃথক পৃথক স্থানে সমাবেশ করার কথা জানিয়েছে।
বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শুক্রবারের সমাবেশের কর্মসূচি পালন করব। আশা করি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইতিমধ্যে যাদের গ্রেপ্তার করেছে তাদের মুক্তি দেবে এবং সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের বাধা দেবে না।’
দুপুরে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘কর্মসূচিকে সামনে রেখে বাসাবাড়ি, হোটেলসহ বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে দলের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। কর্মসূচি ঘোষণা হলেই ধরপাকড় উদ্বেগের বিষয়।’
বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চ সূত্রে জানা গেছে, মহাসমাবেশ থেকে টানা কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা আছে বিএনপি ও সমমনাদের। ১০ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশ, অবস্থান, ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দিতে পারে দলগুলো। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কারণে কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত করে ২০ তারিখ থেকে আবার লাগাতার আন্দোলনে যাবে দলগুলো। তবে শরিকরা বিএনপিকে আলটিমেটাম দেওয়ার পরামর্শ দিলেও গত দুদিনের পরিস্থিতি দেখে সেটা নাও দেওয়া হতে পারে।
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সমাবেশ থেকে আমরা সর্বাত্মক আন্দোলনের ঘোষণা দেব।’
দিনভর নয়াপল্টনে যা ঘটেছে : গত বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ জলকামান ও এপিসি নিয়ে অবস্থান নেয়। দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা মেনে নেতাকর্মীরা কার্যালয় ছেড়ে চলে যান। এরপর গতকাল সকালে কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। এ ছাড়া কার্যালয়ের পাশে প্রধান সড়কের ওপর অবস্থান নেয়। প্রধান সড়কের পাশাপাশি সেখানকার একটি গলিতেও অসংখ্য পুলিশ সদস্যকে অবস্থান করতে দেখা যায়। এ ছাড়া একটি রায়ট কার (এপিসি), জলকামান ও প্রিজনভ্যানও বিএনপি অফিসের সামনে দেখা যায়। সেখানে দায়িত্বরত পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) টিটো বলেন, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি যাতে না ঘটে, সেজন্য তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
এ সময় কার্যালয়ের সামনে দলটির বেশ কিছু নেতাকর্মীকে দেখা গেছে। তবে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে দেখলেই পুলিশ তাদের সরিয়ে দিচ্ছিল। পরে জ্যেষ্ঠ নেতারা এসে কার্যালয়ের সামনে থাকা নেতাকর্মীদের চলে যেতে বলেন।
নয়াপল্টনে সমাবেশের ঘোষণা বিএনপির : এর আগে গত বুধবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল সভা হয়। সভা শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পুলিশের অনুরোধ ও জনগণের ভোগান্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে আমরা আমাদের সমাবেশ বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি পুলিশ আমাদের নয়াপল্টনে কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে দেবে।’
শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ : একইদিন শান্তি ও উন্নয়ন প্রচারের সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা। সমাবেশস্থলের মঞ্চ, মাইক ও সাজসজ্জার কাজ করেছে আয়োজক তিন সংগঠন। ঢাকার আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে নেতাকর্মীর সমাবেশে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শান্তি সমাবেশের প্রস্তুতির পাশাপাশি বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়েও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকায় বসে যেতে পারে এমন খবর প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পদে থাকা ছয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এমন কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে। তাদের প্রত্যাশা, ১০ ডিসেম্বরের মতো এবারও কর্মসূচি নিয়ে নির্বিঘেœ ফিরে যাবে বিএনপি। অন্য কোনো পথে গেলে হেফাজতের মতো বিদায় করার প্রস্তুতি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও আছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি যদি অবস্থান কর্মসূচি দেয়, তাহলে আমাদের কিছু করণীয় নেই। সেটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখবে। তাদের (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) যদি কোনো সহায়তার দরকার হয়, তাহলে আমাদের কর্মসূচি থেকে নেতাকর্মীরা সহায়তা করবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে সমাবেশের নামে শাপলা চত্বরে অবস্থান করে তা-ব চালিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। কিন্তু সেদিন সরকার তাদের কঠোর হস্তে দমন করে রাতের মধ্যে ঢাকা খালি করতে সক্ষম হয়েছে। এখন বিএনপি যদি সমাবেশের নামে ঢাকায় অবস্থান নিতে চায়, তাহলে তাদের অবস্থা হবে হেফাজতের মতো।
দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘বিএনপি কী করবে, সেটা তো আমরা জানি না। তারা যদি আইনশৃঙ্খলা বিপন্ন করার চেষ্টা করে, মানুষের যাতায়াত ও জনজীবন ব্যাহত করার পাঁয়তারা করে, সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’
পুলিশের ২৩ শর্ত : গতকাল ডিএমডির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সমাবেশের অনুমতির কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, দুই দলকে ২৩টি শর্তে সমাবেশে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দলগুলোর আবেদন অনুযায়ী পছন্দের স্থানে সমাবেশ আয়োজন করতে পারবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বিএনপি কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে রাজারবাগ মোড় পর্যন্ত সমাবেশ করতে পারবে। আর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে মহানগর নাট্যমঞ্চ পর্যন্ত সমাবেশ করবে। এ সীমানার মধ্যেই মাইক স্থাপন করতে পারবে তারা। সমাবেশে ব্যাগ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আসা যাবে না। সমাবেশে শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
ডিএমপির শর্তের মধ্যে আরও আছে, নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে। সমাবেশস্থলে চারদিকে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। সমাবেশে আগতদের মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, শব্দদূষণ রোধে সীমিত আকারে মাইক ব্যবহার করতে হবে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আসতে পারে এমন ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। ডিএমপির কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তদন্ত করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে মামলার আসামি গ্রেপ্তার করছি।’
তারুণ্যের জয়যাত্রা কর্মসূচি নিয়ে বিরোধীদের আন্দোলন ঠেকাতে মাঠে আওয়ামী লীগ। নিজেদের কৌশল নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পাভেল হায়দার চৌধুরী
দেশ রূপান্তর : আওয়ামী লীগ-বিএনপির আজকের কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তা রয়েছে। এ কর্মসূচি ঘিরে আপনার কোনো দুশ্চিন্তা আছে?
মাহাবুবউল আলম হানিফ : আমি মনে করি যে, কোনো ধরনের সংঘাত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ যারা রাজনীতি করে, দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে সংঘাত-সংঘর্ষ ঘটে এমন রাজনীতি পরিহার করা উচিত। আমি মনে করি, এ যুগে এসে সংঘাত-সংঘর্ষের রাজনীতি করে কোনো দলই টিকে থাকতে পারবে না। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণ গত ১৮ ও ১৯ তারিখের কর্মসূচিতে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে এতে জনগণের মধ্যে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। তবে সেই ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ শক্ত অবস্থানে আছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কোনো ধরনের সংঘাত বা সংঘর্ষমূলক কর্মকাণ্ড বা দেশকে অস্থিতিশীলতা করার পাঁয়তারা হলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।
দেশ রূপান্তর : আওয়ামী লীগ দাবি করে শান্তি সমাবেশ। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয় সংঘাত বাধানোর জন্য। আপনি কী মনে করেন।
হানিফ : আওয়ামী লীগ আগে থেকেই মাসব্যাপী ধারাবাহিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। এটি নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ধারাবাহিক এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। পাশাপাশি আগস্ট মাসে আমাদের জাতীয় শোক দিবস আসছে। সে হিসেবে শোকের মাসেও মাসব্যাপী কর্মসূচি আছে। তা ছাড়াও সংবিধান অনুযায়ী এ বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছর জানুয়ারির প্রথমদিকে জাতীয় নির্বাচন। আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী। ফলে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আমরা মাঠে থাকছি। নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের ঘনঘন কর্মসূচি পালন করতে হয়। সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা, দলের অন্য কর্মকাণ্ডগুলো জনগণের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরা। কর্মসূচি থাকতেই পারে। আমি মনে করি না, এতে কোনো সমস্যা থাকতে পারে।
দেশ রূপান্তর : একই দিন আওয়ামী লীগের বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে ও নয়াপল্টনে বিএনপি তাদের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছে। মাত্র এক কিলোমিটারের ব্যবধানে দুটি কর্মসূচিই শান্তিপূর্ণ হয়েছে। জনগণের কাছে প্রশংসিতও হয়েছে। সামনের দিনের কর্মসূচিগুলোও কি শান্তিপূর্ণ থাকবে?
হানিফ : আমরা প্রত্যাশা করি, নির্বাচন পর্যন্ত যত কর্মসূচি থাকবে সেগুলো শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হবে। আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা আছে, শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা হয় সেটা প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন। আওয়ামী লীগ আশা করে, ভবিষ্যতেও সব রাজনৈতিক দল তাদের কর্মসূচিগুলো এভাবে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবে। তবে কোনো রাজনৈতিক দল যদি রাজনৈতিক কর্মসূচির আড়ালে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে, পরিকল্পনা রাখে সে ক্ষেত্রে সমস্যা হতেই পারে।
দেশ রূপান্তর : বিএনপি আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করে এমন অভিযোগ আওয়ামী লীগ বরাবরই করে আসছে। আজকের কর্মসূচিতে তেমন কোনো ঘটনা ঘটলে তা মোকাবিলা কীভাবে করবেন? আপনাদের পরিকল্পনা কী?
হানিফ : এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলোও মাঠে প্রস্তুত থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করবে। কোনো দল যদি রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করে, সেটা যদি আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠন চিহ্নিত করতে পারে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করবে। আপাতত পরিকল্পনা হলো মাঠে থাকা। আইনশৃঙ্খলার কাজে যারা থাকবেন তাদের সহযোগিতা করা।
দেশ রূপান্তর : বিএনপি গত ১৪ বছর যে গতিতে আন্দোলন করেছে এবং মাঠে থেকেছে সে তুলনায় এবারের আন্দোলনে গতি কি একটু বেশি মনে হয় আপনার? তারা কি জনসমর্থন পেতে শুরু করেছে, যদি এমনটি হয়, তাহলে এর কারণ কী থাকতে পারে বলে মনে করেন?
হানিফ : বিএনপির সঙ্গে এখন সরকারবিরোধী একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্তের ষড়যন্ত্রের কথা শোনা যাচ্ছে। যেটা বিভিন্নভাবে গণমাধ্যমে বারবার উঠে এসেছে। তা ছাড়া আমরা দেখতে পাচ্ছি বিএনপি নেতারা বিভিন্ন দূতাবাসে দৌড়ঝাঁপ করছেন। তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে দৌড়াঝাঁপের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে বিএনপি ষড়যন্ত্রের কাজটাই করছে। বিএনপির তৃণমূল নেতাদের ধারণা হয়েছে, বিদেশি শক্তির মাধ্যমে তারা সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসবে। এ ধরনের একটা মিথ্যা-কাল্পনিক ধারণা নিয়েই তৃণমূল নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে বিএনপি। কিন্তু দলটির মনে রাখা উচিত, ষড়যন্ত্র কখনো সফল হয় না।
দেশ রূপান্তর : আওয়ামী লীগ কি মনে করে বিএনপির আন্দোলনের গতি বাড়িয়েছে বিদেশিরা?
হানিফ : বিদেশি শক্তি তাদের সমর্থন করছে এটা আমার মনে করার বিষয় না, এটা গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় আসছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, হঠাৎ করে দেশে এমন কী সমস্যা হলো দু-এক দিন পরপরই দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল কর্মসূচি পালন করতে হবে। মূলত বিএনপি দেশকে বিভিন্নভাবে অস্থিতিশীল করতে চায়। এজন্য দফায় দফায় দূতাবাসগুলোতে যায়। তা ছাড়া আর কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে? বিদেশি দূতাবাসগুলোর এখানে দায়িত্বটা কী? দায়িত্ব হলো, দেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে সরকারকে কীভাবে সাহায্য-সহযোগিতা দিতে পারে, উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে তাদের চিন্তা-চেতনার কথাগুলো সরকারকে বলতে পারা। তা না করে রাজনৈতিক দলের নেতাদের ডেকে সপ্তাহে দু-তিনবার করে বৈঠক করে দূতাবাস অফিসে, বাসভবনে। এটা তো মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করে।
দেশ রূপান্তর : বিএনপির এক দফার আন্দোলন আওয়ামী লীগকে চাপে ফেলেছে? আপনার কী মনে হয়?
হানিফ : আন্দোলন দিয়ে কী হয়; এক দফা আন্দোলন হোক আর ১৪ দফা আন্দোলন হোক, কী হবে আন্দোলনে। এটা কী জাতীয় পার্টির সরকার? এরশাদের সরকার? এটা আওয়ামী লীগ সরকার, শেখ হাসিনার সরকার। আওয়ামী লীগ কী অন্য কোনো দলের মতো যে যখন মন চাইবে ধাক্কা দেবে, আর ধাক্কা দিলে পড়ে যাবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি সম্পর্কে জানতে হবে। এসব এক দফা, পাঁচ দফা, দশ দফা দিয়ে আওয়ামী লীগের কিচ্ছু করতে পারবে না। এসব দিয়ে সরকারের ওপর কোনো চাপই সৃষ্টি করতে পারবে না। জনগণের ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ বিশ্বাসী। জনগণ যতক্ষণ সরকারের সঙ্গে আছে ততক্ষণ সরকারের সমস্যা দেখছি না।
দেশ রূপান্তর : আওয়ামী লীগ কী মনে করছে গত ১৪ বছরের আন্দোলনের মতো বিএনপির এবারের আন্দোলনও দিক হারাবে?
হানিফ : বিএনপি এখন যে আন্দোলন আন্দোলন করছে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াও এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বহু হাঁকডাক দিয়েছেন। বারবার আন্দোলন আন্দোলন বলে রাস্তায় নেমেছেন। ২০১৩ সালে এক দফা দিয়ে সরকার পতন আন্দোলন করেছেন, সেটার পরিণতি কী হয়েছে? সেটা ব্যর্থ হয়েছিল। ২০১৫ সালেও সরকার পতন আন্দোলন করেছে, ৯৩ দিন অবরোধের নামে পেট্রোল দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন। সেই আন্দোলনও তো ব্যর্থ হয়েছিল। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আন্দোলন করলে সেই আন্দোলনে কখনো সফলতা আসবে না। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দিয়ে কখনো সরকার পতন করা যাবে না। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে সেটার পরিণতি ভয়াবহ হয়, সেটা বিএনপি নেতারা ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছেন।
মাহাবুবউল আলম হানিফ
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। দুদিন ধরে সমাবেশ নিয়ে ঘটে গেছে নাটক। এ নিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিরও আশঙ্কা করছেন। তবে যেকোনো পরিস্থিতি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রস্তুত পুলিশ প্রশাসন। এদিকে মহাসমাবেশ সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় বিএনপির বেশ কিছু নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুলসহ আশপাশের কয়েকটি আবাসিক হোটেল থেকেই অন্তত ৩০০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী দুই জেলা নারায়ণগঞ্জ ও সাভারেও ধরপাকড় হয়েছে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে।
পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর ও ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতনরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক ডিএমপি কমিশনারসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতনদের নিয়ে বৈঠক করেছেন গতকাল রাতে। যেকোনো পরিস্থিতি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এসব বৈঠকে।
এদিকে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে অসুস্থ ছাড়া পুলিশের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আশপাশের জেলা থেকে বাড়তি পুলিশ আনা হচ্ছে। ঢাকার ৫০টি থানার ওসিসহ সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। থানার পাশাপাশি ডিবিসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদেরও আলাদাভাবে বার্তা দেওয়া হয়েছে। বার্তা পেয়ে পুলিশ বাসাবাড়ি, হোটেল ও যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে। এমনকি বিএনপি ও জামায়াত সন্দেহে আটক করা হচ্ছে।
বিএনপি অভিযোগ করেছে, দলের নেতাকর্মীদের বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গত দুদিনে সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এমনকি অভিযানের সময় স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করা হচ্ছে। ঢাকায় প্রবেশ করা রাস্তায় যানবাহন আটকে ব্যাপক তল্লাশি করা হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ লোকজন। তা ছাড়া কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আটক বাণিজ্যেরও অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি আছে, তাদের ধরা হচ্ছে।
জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেজন্য আমরা কাজ করছি। অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। বিএনপির অভিযোগ আসলে সঠিক না।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে যেন হয় সেদিকেই আমরা বিশেষ নজর দিচ্ছি। আমরা কাউকে কোনো ধরনের সুযোগ দিচ্ছি না। আইনের মধ্যে যা আছে তাই করা হচ্ছে। সমাবেশ নিয়ে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে হয়রানি করা হচ্ছে না। তবে কেউ যদি আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করে তাহলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, বিএনপি সমাবেশের নামে কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খল করার চেষ্টা করলে কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। তিনি আরও বলেন, ইউনিটপ্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে থেকে বাড়তি পুলিশ আনা হচ্ছে। জলকামানসহ সব ধরনের সরঞ্জামদ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে তা সত্য। রুটিন অনুযায়ী অভিযান চলছে। তবে নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। এজন্য পুলিশ সদস্যদের সতর্ক করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগরে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকা শহর জুড়ে বিএনপির ৫০টি থানা এলাকায় অভিযান চলছে। থানা-পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশও কাজ করছে। আবার আমরা থানা-পুলিশকে সহযোগিতা করছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ মাঝেমধ্যে বিশেষ অভিযান চালায়। এরই অংশ হিসেবে অভিযান চলছে। ঢাকার বাইরেও পুলিশের বিশেষ অভিযান চলছে। টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেন, ঘাটাইল উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি নাসির উদ্দিন, ধনবাড়ী উপজেলার মুসুদ্দি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান ও কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সদস্য সোনা মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা বিএনপির সমাবেশে যাওয়ার কথা ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিএনপির সহসভাপতি ও ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মীর আশরাফ আলী আজম চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাকে বুধবার রাতে ডিবি পুলিশ আটক করেছে। আটকের সময় পুলিশ তাকে নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ করেছে স্বজনরা।
পুলিশ সূত্র জানায়, মিরপুর থানা-পুলিশ পাংশা উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি সজিব রাজা, ছাত্রদল নেতা ইমরান হোসেন, কলিমহর ইউনিয়ন ছাত্রদলের জাহিদ হোসেন, মৌরাট ইউনিয়ন ছাত্রদলের কনকসহ অন্তত ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। কলাবাগান থানা-পুলিশ জয়পুরহাট জেলা শাখা জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সদস্য সচিব মঞ্জুরে মওলা পলাশ ও ছাত্রদল নেতা মশিউর রহমান খন্দকারকে (এ্যালট) আটক করেছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, কর্মসূচিস্থল, আশপাশসহ ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশি পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকে মাঠে নেমেছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য। ইতিমধ্যে নজরদারি শুরু করেছেন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। পুলিশের সাইবার ইউনিট চোখ রাখছে বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর। কেউ যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য নজরদারি কয়েক ধাপ বাড়ানো হয়েছে। কোনো ঘটনা ঘটলে র্যাব, বিজিবি এবং আনসারসহ মাঠে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে অপারেশনে যাবেন।
নিরাপত্তা জোরদার : দুই সমাবেশ ও আশুরা উপলক্ষে নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি মাঠে মোতায়েন থাকবে দাঙ্গা পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন আনসার। ঢাকার বাইরে ঢাকা রেঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও ঢাকায় আনা হয়েছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিবিজি) পয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য পিলখানায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ডিএমপি প্রয়োজন অনুভব করলে তারাও মাঠে নামতে প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক রায়ট কার, এন্টিপার্সোনেল কার (এপিসি), জলকামান, আর্মড ক্যারিয়ার ভ্যান, পর্যাপ্ত রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসসহ দাঙ্গা দমনের যাবতীয় প্রস্তুতি রেখেছে পুলিশ। গতকাল সকাল থেকেই নয়াপল্টন আশপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ। এ বিষয়ে ডিএমপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, জনসাধারণ জানমালের নিরাপত্তা ও সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়াতে যা যা নিরাপত্তার প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন সবই নেওয়া হয়েছে।
গণপরিবহনে তল্লাশি : বিএনপির মহাসমাবেশ ধরে নিয়ে বুধবার দুপুর থেকেই রাজধানীর গণপরিবহনগুলোতে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। এ কারণে অনেক এলাকায় গণপরিবহন সংখ্যা কমেছে। গতকাল সপ্তাহের কর্মদিবসের শেষ দিনেও রাজধানীর সড়কে গণপরিবহন ছিল কম। প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যাও কাম দেখা গেছে। মিরপুর থেকে মতিঝিল রুটের শিকড় পরিবহনের বাসচালক বশির জানান, কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে পুলিশ মিরপুর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত তিনবার তল্লাশি করেছে পুলিশ। মামলাও দিয়েছে। আসলে পুলিশ চাইছে আমরা যাতে গাড়ি না চালাই। রাজধানীর প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, বাবুবাজার, বসিলা ব্রিজ, গাবতলী, আমিনবাজার, আবদুল্লাপুর, আমুলিয়া মডেল টাউন সড়কে চেকপোস্ট বসায়। সব গাড়িতে তল্লাশির কারণে এসব সড়কে যানজট দেখা দেয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ জানান, সমিতি মালিকদের শহর ও শহরের বাইরের বাস বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তিনি বলেন, ‘বিএনপি বাধা না দিলে আমাদের গাড়ি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করবে। তারা সহিংস ঘটনা না ঘটালে এটা চালু রাখা হবে। প্রশাসন বা দলের পক্ষ থেকে গাড়ি বন্ধ রাখার চাপ নেই।’
রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার তথ্য : নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা, শান্তিনগর ও পুরানা পল্টন এলাকার একাধিক রেস্তোরাঁ মালিক জানান, গতকাল রাতে পুলিশ গিয়ে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিতে বলে। অনেক রেস্টুরেস্ট থেকে লোকজনকে বের করে দেয়। শান্তিনগরের একজন রেস্তোরাঁ মালিক জানান, পুলিশ এসে নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কথা বলে রাত ১০টার দিকে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে পল্টন থানার ওসি মো. সালাহউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম কোনো তথ্য আমার জানা নেই।
শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করলে ব্যবস্থা : রাজনৈতিক দলের সমাবেশ করতে কোনো বাধা নেই মন্তব্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, জানমালের ক্ষতি করলে, ভাঙচুর ও জন শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করলে নিরাপত্তা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। গতকাল মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস-২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, দুই দল কেন একই দিনে সমাবেশ করছে সেটা রাজনৈতিক দলের নেতারা বলতে পারবেন। এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু রাখার কাজ আমার।
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানান, ঢাকার সমাবেশকে ঘিরে রামপালে বিএনপির ৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি ৩০ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জনের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা হয়েছে। বুধবার রাতভর রামপালের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের ধরা হয়।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ দলটির অঙ্গসংগঠনের চারজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে জেলা বিএনপি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল বলেন, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে জেলার বিভিন্ন স্থানে এবং বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। মহাসমাবেশ বানচাল করার জন্য পুলিশ নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে যাতে কেউ সমাবেশে যোগ দিতে না পারে। এরপরও জেলা থেকে প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে যোগদান করার জন্য ঢাকায় গিয়েছে। এ ছাড়া আরও ৪০ হাজার নেতাকর্মী যাতে সমাবেশে যেতে না পারে এজন্য অভিযান চালাচ্ছে। এ ছাড়া সড়ক ও মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়েও তল্লাশি করা হচ্ছে।
লক্ষ্ম ীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ¥ীপুরে পুলিশ সে ঙ্গ বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের দায়ের হওয়া দুই মামলায় কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিসহ বিএনপির ১৯ নেতা-কর্মীকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
ফেনীতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার: ঢাকায় মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা ফেনী জেলা বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় জমায়েত হওয়া ফেনীর অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল) ।
দিনাজপুর সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামের মোজাম্মেল হক বাড়ির সামনে ৬২ শতাংশ জমিতে আট বছর আগে লিচুর বাগান করেছেন। পাঁচ বছর ধরে ভালো ফলন পাচ্ছেন। ৪১টি গাছের এই বাগান থেকে কয়েক বছর ধরেই মৌসুমপ্রতি তিন-চার লাখ টাকার লিচু বিক্রি করে আসছিলেন। কিন্তু এবার বিক্রি করতে পেরেছেন ৭০-৭৫ হাজার টাকার লিচু।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মোজাম্মেল হকের অভিযোগ, তার গ্রামের রাইস মিল বা চালকলের ছাই উড়ে এসে বাগানে পড়ছে। এতে করে লিচুগাছের পাতায় ছাইয়ের পুরো আস্তরণ সৃষ্টি হচ্ছে। গাছ ঠিকমতো পুষ্টি না পাওয়ায় লিচুর উৎপাদন কমে গেছে।
শুধু আউলিয়াপুর নয়, সদর উপজেলার পুলহাট, মাসিমপুর, করিমপুর, হামজাপুর, উলিপুর, করিমুল্লাহপুর, সৈয়দপুর, শিকদারগঞ্জ গ্রামের লিচুচাষিদের একই অভিযোগ, চালকলের ছাই তাদের সর্বনাশ করছে।
দিনাজপুরের সুস্বাদু লিচুর খ্যাতি আছে আন্তর্জাাতিক পর্যায়েও। দিনাজপুর দেশের শীর্ষ ধান উৎপাদনকারী জেলা হিসেবেও পরিচিত। এ কারণে জেলার যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ধানকল।
চালকলের ছাই যাতে বাতাসে ছড়াতে না পারে, সে জন্য ‘সাইক্লোন এয়ারলক’ ব্যবহারের আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এতে খরচ হয় মাত্র ২ লাখ টাকা। কিন্তু চালকলের মালিকরা খরচ বাঁচাতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন না। তার খেসারত দিতে হচ্ছে লিচুচাষিদের। জেলা হটিকালচার সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে দিনাজপুরে উৎপাদিত লিচু বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৯০০ কোটি টাকার। পরের বছর কমে হয় ৭০০ কোটি টাকা। চলতি বছর সেটি নেমে এসেছে ৪০০ কোটি টাকায়।
সবুজ পাতায় কালো ছাই : সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লিচুর মৌসুম শেষ হওয়ার পর গাছে গাছে এসেছে নতুন পাতা। কিন্তু সেগুলো সবুজ নয়। ছাইয়ের আস্তরণ পড়ে কালচে হয়ে গেছে। এমনকি ডালেও জমাট বেঁধে আছে ছাই।
এলাকাবাসী বলছিলেন, চালকলের আশপাশের বাসিন্দাদের সাবধানে চলাফেরা করতে হয়। কারণ যেকোনো সময় চোখে এসে পড়তে পারে ছাই। বাড়িঘর প্রতিদিন পাঁচ-ছয়বার ঝাড়– দিতে হয়।
দিনাজপুর চালকল মালিক গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ধান ভাঙানোর কারখানা রয়েছে প্রায় ৩ হাজার, স্বয়ংক্রিয় কারখানা আছে প্রায় ২০০টি।
সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের ইদ্রিস আলী চালকল স্থাপনে কারিগরি বিষয়ে সহায়তা করেন। বিভিন্ন এলাকায় ১০০টির বেশি চালকল স্থাপনে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। ইদ্রিস এই প্রতিবেদককে জানান, জেলার চালকলের অধিকাংশেই ‘সাইক্লোন এয়ারলক’ নেই। তিনি বলেন, একটি সাইক্লোন এয়ারলক তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ২ লাখ টাকা। কিন্তু মালিকরা সেই টাকা খরচ করতে চান না। কারণ একটি কারখানায় গড়ে প্রতিদিন ৩০-৪০ ট্রলি ছাই বের হয়। এয়ারলক বসালে সেখানে জমা হওয়া ছাই সরানোর জন্য শ্রমিকের প্রয়োজন। পাশাপাশি ছাই রাখার জায়গাও লাগে। তিনি দাবি করেন, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ৯৫ শতাংশ ছাই বাতাসে না উড়ে কারখানায় থেকে যেত।
আউলিয়াপুরের মেম্বার মোজাম্মেল হক বাতাসে ছাই ওড়ার সমস্যা ছাড়াও পানি দূষিত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরলেন। তিনি বলেন, ‘চালকলের দূষিত পানি খোলা জায়গায় ছেড়ে দেওয়ায় মাটি দূষিত হচ্ছে, দূষিত হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি। যে কারণে বিশুদ্ধ পানিও পাচ্ছি না। টিউবওয়েল চাপলে পানির সঙ্গে ধানের তুষ উঠে আসছে। প্রশাসন এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে আমরা খুবই সমস্যায় পড়ব।’
সদর উপজেলার মাসিমপুর গ্রামের লিচুচাষি হাসিনা বেগম বলেন, ‘প্রতি বছর আমার বাগান থেকে আড়াই-তিন লাখ টাকার লিচু বিক্রি হলেও এবার সোয়া লাখ টাকার লিচু বিক্রি হয়েছে। সামনের বছর হয়তো লিচু বিক্রি আরও কমে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় লিচুর গাছ কেটে খড়ি বানাতে হবে।’
একই গ্রামের কৃষক আকরাম আলীও তার বাগানে ফলন কমে যাওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, চালকলের ছাইয়ের কারণে গাছ ঠিকমতো পুষ্টি পায় না। এ বছর বৃষ্টিও কম হয়েছে। বৃষ্টি বেশি হলে পাতার ছাই পানির সঙ্গে ধুয়ে যেত।
শিকদারগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলম বলেন, ‘ছাইয়ের কারণে শুধু গাছই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ছাই উড়ে মানুষের চোখে এসে পড়ছে। বাসাবাড়ির আঙিনা, বারান্দায় পড়ছে। এমনকি খাবার পানিতেও পড়ছে।’
জেলার বিরল উপজেলার মাধববাটী গ্রামের লিচুচাষি শরিফ হোসেনেরও একই অভিযোগ।
দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের পল্লীচিকিৎসক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এই এলাকার আশপাশে বহু চালকল। ছাই চোখে পড়ার কারণে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন মানুষ আমার কাছে আসে। আমি তাদের বিভিন্ন ধরনের ড্রপ দিই।’
পরিবেশকর্মী মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘চালকলের ছাই জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি উদ্ভিদকুলের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ছাইয়ের কারণে গাছের স্বাভাবিক সালোক-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গাছ তার খাদ্য তৈরি করতে পারে না। আবার যখন মুকুল আসে, তখন ছাই পড়ে পরাগায়ণ ব্যাহত করে। কারণ মৌমাছি বসতে পারে না। এ কারণে বাগানগুলোতে ফলের পরিমাণ ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে।’
দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাতাসে ওড়া ছাই ধান, গম থেকে শুরু করে আম, লিচুর ফলনে প্রভাব ফেলে। ফল গাছে পুষ্পায়ন, ফল উৎপাদন, শাখা-প্রশাখা বৃদ্ধি প্রতিটি ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তা ছাড়া দূষিত পানি নির্গত হয়, যা মাটির সঙ্গে মিশে উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে। এসব কারণে ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’
দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম বোরহান-উল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘বাতাসে ছাই ও ধুলা মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এর জন্য মানুষের শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, এমনকি ফুসফুসের ক্যানসারও হতে পারে। এক বছরে জেলায় শ্বাসকষ্টের রোগী বেড়েছে। তার জন্য দায়ী বায়ুদূষণ।’
এয়ারলকের পাশে ব্লোয়ার মেশিন
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালকল মালিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, জেলার অধিকাংশ মিলের সাইক্লোন এয়ারলক নেই। ছাই সরাতে শ্রমিকের খরচ ও রাখার জায়গার কারণে অনেকে ‘সাইক্লোন এয়ারলক’ বসায় না। আবার অনেকে বসালেও গভীর রাতে ‘সাইক্লোন এয়ারলকের’ পাশে ‘ব্লোয়ার মেশিন’ চালু করে দেয়। এতে মিলের ছাই বাতাসে উড়ে যায়।
জানতে চাইলে দিনাজপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এ কে এম ছামিউল আলম কুরসি বলেন, ‘দিনাজপুরের বাতাসে কী পরিমাণ ছাই ওড়ে, তা আমাদের জানা নেই। তবে বর্তমানে যেসব মিল আমাদের কাছে পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়নের জন্য আসছে, সেগুলোয় সাইক্লোন এয়ারলক না থাকলে আমরা নবায়ন করছি না। যেসব মিলের নবায়নের আবেদন আসছে, এর মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশের সাইক্লোন এয়ারলক রয়েছে।’
দীর্ঘদিন ধরে চালকলের ছাই বাতাসে উড়ছে। আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চালকলের ছাই বাতাসে ওড়ার কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। অভিযোগ এলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
চালকলগুলো নিয়মকানুন মেনে চলছে কি না, সেটি দেখাশোনার দায়িত্ব কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের। দিনাজপুরে এই অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক মো. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়ার কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরেজমিনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় করে সেই সব মিলের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’
সরেজমিন পরিদর্শন করা হয় কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। যেসব মিলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ আসে, সেগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে ডেঙ্গুর দুটি টিকা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এর একটি জাপানের টাকেডা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির তৈরি ‘কিউডেঙ্গা’ (টিএকে-০০৩), অন্যটি ফ্রান্সের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সানোফির ‘ডেংভ্যাক্সিয়া’। এর মধ্যে ডেংভ্যাক্সিয়া বিশ্বের সর্বপ্রথম ডেঙ্গুর টিকা। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মেক্সিকোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রথম দেশটিতে পরীক্ষামূলকভাবে ‘ডেংভ্যাক্সিয়া’ ব্যবহারের অনুমতি দেয়। আর ডেঙ্গুর দ্বিতীয় টিকা হিসেবে গত পাঁচ বছর আগে আসে ‘কিউডেঙ্গা’।
বাংলাদেশে ডেঙ্গুর টিকার বিষয়টি প্রথমে আলোচনায় আনেন যুক্তরাজ্যের লেস্টার ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ডা. খোন্দকার মেহেদী আকরাম। টিকা বিষয়ে এই গবেষকের সঙ্গে দেশ রূপান্তরের কথা হয় গত সোমবার রাতে। গত বুধবার সোসাইটি ফর মেডিকেল ভাইরোলজিস্টস টিকার বিষয়টি আলোচনায় আনেন। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার টিকার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সীর সঙ্গে দেশ রূপান্তরের কথা হয়।
এই গবেষক ও ভাইরোলজিস্ট জানান, এই দুই টিকার মধ্যে ‘কিউডেঙ্গা’ এখনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায়ে আছে। সাড়ে চার বছর ধরে এই ট্রায়াল চলছে। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে ইতিবাচক ফল মিলেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে ‘ডেংভ্যাক্সিয়া’র কার্যকারিতা নিয়ে। কারণ এই টিকার এমন কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে, যা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ নয়। বরং ফিলিপাইনে এই টিকার প্রয়োগে বেশ কিছু শিশুমৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। অবশ্য এই দুই টিকার একটিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত নয় বলে জানা গেছে। তবে এসব টিকা বিশ্বের অনেক দেশেই প্রয়োগ হচ্ছে এবং বেসরকারিভাবে মানুষ কিনছে বলেও জানিয়েছেন এই দুই গবেষক ও চিকিৎসক। তারা বাংলাদেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডেঙ্গুর টিকা প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন।
অবশ্য টিকার বিষয়ে সরকারি পর্যায়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে টিকার বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ সরকারের গঠিত টিকা-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটি (নাইট্যাগ) থেকেও এ ধরনের কোনো প্রস্তাব আসেনি।
এসব টিকা এখনো নিরাপদ নয় বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব টিকা এখনো নিরাপদ পর্যায়ে পৌঁছায়নি। যেসব দেশ এসব টিকা করছে, সেখানে ঢিমেতালে ট্রায়াল চলছে। কভিডের মতো তাদের সহযোগিতা করা হলে ট্রায়াল দ্রুত হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এই টিকা নিরাপদ না। কোনো দেশেই এটা প্রয়োগ হচ্ছে না। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য অনুমোদন দেওয়া আছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মধ্যেই আছে।
সরকারি পর্যায়ে এই টিকা নিয়ে দেশে অনেক আগেই আলোচনা হয়েছে বল জানান এই বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘ডেংভ্যাক্সিয়া’ যখন বাজারে আসে, তখনই এটা দেশে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ফিলিপাইনে যখন শিশুরা মারা গেল, তখন সবাই সতর্ক হয়ে গেল। আমরা এমন কিছু করব না যাতে ইপিআইয়ের (সরকারের টিকাদান কর্মসূচি) অন্যান্য টিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এটা পরিপূর্ণভাবে নিরাপদ হলে তখন ভাবা যাবে।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ২০১৭-১৮ সালে ফিলিপাইনের শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তখনই বাংলাদেশে প্রায় প্রয়োগ হতে যাচ্ছিল। তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছিল। টিকা লাগবে। টিকা ছাড়া নিয়ন্ত্রণ হবে না। কিন্তু সেটা পরিপূর্ণভাবে নিরাপদ হওয়ার পরই প্রয়োগ করতে হবে।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে কিউডেঙ্গা : ডা. খোন্দকার মেহেদী আকরাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, এই টিকা সম্প্রতি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে জনসাধারণের ওপর প্রয়োগের অনুমতি পেয়েছে।
আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বা অনাক্রান্ত চার বছরের শিশু থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের মানুষ কিউডেঙ্গা ভ্যাকসিন নিতে পারবে।
এই টিকার কার্যকারিতা বিষয়ে এই গবেষক বলেন, দুই ডোজের কিউডেঙ্গা ভ্যাকসিন ডেঙ্গুজ্বর থেকে সুরক্ষা দেয় ৮০ দশমিক ২ শতাংশ এবং ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোধ করে ৯০ দশমিক ৪ শতাংশ। এই কার্যকারিতা বজায় থাকে ১৮ মাস পর্যন্ত। তবে কিউডেঙ্গা ভ্যাকসিন ডেঙ্গু সেরোটাইপ-৩-এর বিরুদ্ধে তেমন কার্যকর না।
ডেংভ্যাক্সিয়া নিয়ে শঙ্কা : ডা. খোন্দকার মেহেদী আকরাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাজারে এলেও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এই টিকা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে যারা আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়নি (সেরোনেগেটিভ), তাদের জন্য এই ভ্যাকসিনটি নিরাপদ নয়। এ ছাড়াও ৯ বছরের কম বয়সী শিশুরা এই ভ্যাকসিনের উপযুক্তও নয়। কম বয়সী শিশু ও যাদের আগে ডেঙ্গু হয়নি তাদের এই ভ্যাকসিন দিলে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, এটা এক ধরনের ভ্যাকসিনজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। সানোফির ভ্যাকসিনটির ফেইজ-৩ ট্রায়াল করা হয়েছিল এক বছর ধরে। তাই এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াটি ট্রায়ালের সময় ধরা পড়েনি।
অন্যদিকে ফিলিপাইনে ২০১৬ সালে আট লাখ স্কুলপড়ুয়া শিশুকে এই টিকা দেওয়া হয়। পরে বেশ কিছু শিশু মারা যায়। তবে টিকায় শিশুমৃত্যুর ঘটনাকে ‘অতিরঞ্জিত’ বলছেন অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ফিলিপাইনে তাদের টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে সাত লাখ শিশুকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছিল। এই টিকা যাদের আগে ডেঙ্গু হয়েছে, তাদের দিতে হয়। কিন্তু কোম্পানি সেটা বলেনি। পরে অনেক শিশু মারা যায়। তখন সেখানে এই টিকা বন্ধ হয়ে যায়। তবে সানোফির টিকার ফিলিপাইনে যত না বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে, তার চেয়ে বেশি দেখানো হয়েছে।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পরামর্শ : অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ডেঙ্গুপ্রবণ দেশগুলোতে টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ায় এ বছর থেকে টিকা নেওয়ার কথা। ব্রাজিলে নিচ্ছে। যেসব দেশে ডেঙ্গু নেই, সেসব দেশেও নিচ্ছে। সুইডেনের মতো দেশে বেসরকারিভাবে জনগণ কিনছে। তারা ডেঙ্গুপ্রবণ দেশে যাওয়ার আগে টিকা দিচ্ছে। এসব টিকা বাংলাদেশের মতো ডেঙ্গুর এন্ডেমিক দেশগুলোর জন্য।
এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, আমরা সরাসরি দিতে বলছি না। ইপিআই শিডিউলে আনতে হবে, তাও না। বলছি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে পারি। এই পাইলটিং থেকে তথ্য নিয়ে যদি ভালো হয়, তাহলে অনুমোদন দিক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের বিষয়ে এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সব টিকার প্রি-কোয়ালিফিকেশন করে, তা নয়। তারা টিকা আবিষ্কারের অনেক বছর পর নানা ডেটার ভিত্তিতে অনুমোদন দেয়। কিন্তু দেশগুলো এই টিকা প্রয়োগ করতে পারে।
টিকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব : অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ডেঙ্গু এখন এন্ডেমিক রোগ হয়ে গেছে। অর্থাৎ বছর জুড়ে সব সময় থাকে। সবচেয়ে বড় কথা, এখন শুধু ঢাকা শহরে না, ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। যেভাবে নগরায়ণ হচ্ছে, মশা ছড়িয়ে পড়ছে, শুধু মশা মেরে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, টিকা লাগবে।
ডা. খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেন, সরকারের উচিত ডেঙ্গু ভাইরাস দমনে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া এবং যত দ্রুত এই উদ্যোগ নেওয়া হবে, ততই মঙ্গল।
অভিষেকে ২৬ মিনিট খেলে দুই অ্যাসিস্টের অবদান রাখতে পেরেছিলেন নেইমার। আল হিলাল জিতেছিল। কিন্তু পর পর দুম্যাচ খেললেন পুরো সময়। তেমন কিছুই করতে পারলেন না। ড্র করেছে আল হিলাল আবার।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে শেষ দিকের গোলে ১-১ ড্র করে পরাজয় বাঁচিয়েছিল আল হিলাল। আজ সৌদি প্রো লিগে দামাক এফসির বিপক্ষে ম্যালকমের গোলে ৯ মিনিটে এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি।
সাত ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তবুও শীর্ষেই রইলো আল হিলাল।
বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হবে। এ উপলক্ষে ২১টি বেসরকারি সংস্থা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি’।
দিবসটি উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ২১টি আয়োজক সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে ধানমন্ডি-২৭-এর মোড় থেকে আবাহনী খেলার মাঠ পর্যন্ত ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি’ শীর্ষক র্যালি আয়োজন করা হয়েছে।
২০০৬ সাল থেকে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এটি পালন শুরু হয়, যেখানে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্র্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) মুখ্য সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে এসেছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম যানজটপ্রবণ ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকারিভাবে এ দিবসটি পালনের উদ্যোগ এই বছর নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে দিবসটি পালনের প্রায় দেড় যুগ পার হতে চললেও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ও ফলপ্রসূ পরিকল্পনা ও নীতির বাস্তবায়ন এখনো দেখা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, যানজটের বড় কারণ হলো এই ব্যক্তিগত গাড়ি। দেশে মেগা প্রকল্পগুলো ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য না দিয়ে গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে করা উচিত। এখন গণপরিবহনের দিকে জোর না দেওয়ায় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ি, যা সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিআরটিএ একটি সূত্র থেকে জানা যায়, দিন দিন ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত মোট যানবাহন নিবন্ধন আছে ৫৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮টি মতো। এর মধ্যে গণপরিবহনের সংখ্যা মাত্র ২ শতাংশের কম। আর বেশিরভাগই ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা গাড়ি।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বায়ুদূষণে বিশ্বে দুই বিলিয়ন শিশু প্রতিদিন বিষাক্ত বাতাসের সংস্পর্শে আসছে। এদের মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি প্রতিবছর মারা যাচ্ছে। তবুও দেশে গণপরিবহনকে প্রাধান্য না দিয়ে বড় বড় অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। যার জন্য দেশে দিনের পর দিন ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে সড়কে নানারকম বিশৃঙ্খলার শঙ্কা থেকেই যাবে।
এদিকে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানান, প্রতি মাসের প্রথম রবিবার সব ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ করার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। নীতিনির্ধারকরা গণপরিবহন ব্যবহার করলেই সাধারণ মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ উপলব্ধি করতে পারবেন, ফলে গণপরিবহনের মান বাড়তে পারে। টেকসই পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস সারা বিশ্বে বেগবান হলেও বাংলাদেশে এ প্রয়াস সীমিত। তাছাড়া ঢাকা শহরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দিয়ে চলছে বিআরটিএ। নগর পরিকল্পনা ও পরিবহন পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় নেই, কর্র্তৃপক্ষগুলোর মধ্যেও নেই কার্যক্রমের সমন্বয়। ফলে নগরে গাড়ির চাপ বাড়ছে, মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েছে যানজট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কখন যাবি জনগণ এখন আর এই কথা বলে না। বলে, এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা এখন যাবি। আর যাবেনইবা কোথায়? এখন সেটাই দেখার বিষয়। সর্বশেষ গতকাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাফ বলে দিয়েছে, তারা শেখ হাসিনার অধীনে হওয়া নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবেন না। কারণ তাদের যে প্রতিনিধিরা দেশে এসেছিলেন, তারা গিয়ে বলেছেন, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপি আয়োজিত ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-সিলেট অভিমুখী ‘রোডমার্চ’ কর্মসূচির শুরুতে ভৈরবের বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সকালে অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির এক দফা দাবি আদায়ে এই রোডমার্চ শুরু হয়। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রোডমার্চ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন গয়েশ^র চন্দ্র রায়।
এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়ারেস আলী মামুন, নির্বাহী কমিটির সদস্য লায়লা বেগম ও মজিবুর রহমান ইকবাল।
ওই জনসভায় গয়েশ্বর চন্দ্র আরও বলেন, ‘বিএনপির দাবি দেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন, যা হতে হবে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। যার যার ভোট সে সে দেবে। সকালের ভোট রাতে হবে না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসার পরিবেশ পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের লোকেরা ধ্বংস করছে। ফলে এতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশের মানুষ আজ অসহায় দ্রব্যমূল্য নিয়ে। চালের দাম, তেলের দাম, আলুর দাম, বিদ্যুতের দাম হু হু করে বেড়েছে। আজকে ব্যাংকগুলোতে টাকা চুরি করে আওয়ামী লীগের লোকেরা পাচার করছে বিদেশে। রিজার্ভ কমে গেছে। সরকারদলীয় লোকের দুর্নীতির কারণে আজ রিজার্ভ কমছে, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হচ্ছে।’
দুপুরে সিলেট অভিমুখে তারুণ্যের রোডমার্চে যাত্রাপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে পথসভা হয়। এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে গয়েশ্বর বলেন, ‘তারুণ্যের যে রোডমার্চ শুরু হয়েছে, তা সরকার পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে তরুণ সমাজ আজ জেগে উঠেছে। শেখ হাসিনা সরকারকে আর কোনো অশুভ শক্তিই রক্ষা করতে পারবে না।’ এ আন্দোলন ডু আর ডাই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রোডমার্চটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমানায় পৌঁছলে দলের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম খোকন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মোহাম্মদ শামীম ও যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা এসএন তরুণ দেসহ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নেতৃত্বে রোডমার্চকে স্বাগত জানিয়ে শোডাউন করা হয়।
পরে দুপুরে হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এলাকায় পথসভা করা হয়। পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মালিক জনগণ। সেই মালিকানা আমরা ফেরত দিতে চাই। ক্ষমতায় আসার জন্য আমরা আন্দোলন করছি না। জনগণের অধিকার আর মানুষের ভোটাধিকার ফেরাতে আমরা রাজপথে নেমেছি।’
রোডমার্চটি বিকেল ৪টায় সিলেটে এসে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই রোডমার্চ সিলেটে পৌঁছে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। এরপর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ নেতারা।
এদিকে বৃষ্টি হওয়ায় সমাবেশস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নেতাকর্মীরা সেভাবে অবস্থান নিতে পারেননি। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে অনেকে সমাবেশস্থলে এলেও বৃষ্টির কারণে তারা আশপাশের বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেন। অবশ্য বেশ কিছু নেতাকর্মী ছাতা, ব্যানার-ফেস্টুন ইত্যাদি মাথায় দিয়ে মাঠেই অবস্থান করছিলেন। বৃষ্টিতে ভিজে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী সরকারবিরোধী স্লোগান দেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন জানান, রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে যোগ দিতে দুপুর থেকেই সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা ও সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মী মিছিল সহকারে এসে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। তবে বৃষ্টির কারণে মাঠে অবস্থান কষ্টকর হয়ে পড়ে। এরপরও বৃষ্টিতে ভিজে শত শত নেতাকর্মী সেখানে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ সফল করেছেন। সভা শেষে রোডমার্চ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
* প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
রাজধানীর পল্টনে ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই পুলিশসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
জানা গেছে, আবদুল্লাহ আল মামুন নামে একজন ব্যবসায়ীর কর্মচারী আইএফআইসি ব্যাংকের পল্টন শাখায় ২০ লাখ টাকা জমা দিতে আসেন। তিনি এসে টাকা জমা দেওয়ার লাইনে দাঁড়ান। এ সময় পুলিশের ইউনিফর্ম পরা দুই ব্যক্তি তাকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যান। পরে তার কাছে থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। পরে সিটিটিভি ফুটেজ দেখে দুজন হকারকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ধারাবাহিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয় অন্যদের। এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের (ডিএমপি) উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের সঙ্গে দুজন পুলিশ কনস্টেবল জড়িত ছিল। তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিভিলে থাকা তিন ব্যক্তি টাকার বিষয়ে ওই দুই পুলিশকে তথ্য দেয়। এরপর ইউনিফর্ম পরা দুই পুলিশ কনস্টেবল ব্যাংকে ঢুকে ওই ব্যক্তিকে বাইরে নিয়ে আসে। তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। দুই পুলিশ কনস্টেবল বরখাস্ত ছিল।
জানা গেছে, পল্টন থানা-পুলিশ ও ডিবির মতিঝিল জোনাল টিম সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ব্যাংকের সামনের ফুটপাতের হকার হৃদয় ও তার সহযোগী মঞ্জুকে আটক করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের দেওয়া তথ্যে ডেমরা পুলিশ লাইনসে ক্লোজড হয়ে থাকা পুলিশের দুই সদস্য কনস্টেবল মাহাবুব ও কনস্টেবল আসিফকে ১০ লাখ টাকাসহ আটক করা হয়। এরপর বাসাবো থেকে ছিনতাইয়ের আরও ১০ লাখ টাকা ও মোটরসাইকেলসহ সোহেলকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনার ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ আল মামুন করপোরেট আইডিয়াসের মালিক। তিনি বলেন, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই মার্কেটিং অফিসারের মাধ্যমে টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়। টাকা নিয়ে ব্যাংকের ওই শাখায় যাওয়ার পর এ ঘটনা ঘটে। এরপর দ্রুত পুলিশকে জানাই।
এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, পুলিশের পোশাক পরিহিত দুই লোক এসে আমাদের কর্মীকে ভয় দেখিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে এটি শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম। এখন জানলাম এ ছিনতাইকাণ্ডে শাহজাহানসহ আরও তিনজন রয়েছে। শাহজাহান আমার দীর্ঘদিনের কর্মী। আমাদের প্রতিষ্ঠান ঠিকাদারিতে জড়িত।
পুলিশ বলছে, পুরানা পল্টনে করপোরেট আইডিয়াসের অফিস থেকে টাকা জমা দেওয়া জন্য ব্যাংকের উদ্দেশ্যে যাত্রার পরপরই শাহজাহান, হৃদয় ও রাসেল পুলিশের দুই সদস্যকে খবর দেন। তারা পল্টনের আইএফআইসি ব্যাংকে গিয়ে টাকার ব্যাগসহ আজিমকে তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে দুই পুলিশ সদস্য পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিনতাইয়ে অংশ নেন। এ সময় বাকি তিনজন আশপাশে পাহারায় ছিলেন।
পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। এরপর পুলিশের দুই সদস্যকে শনাক্তের পর অন্য তিনজনের বিষয়েও তথ্য বেরিয়ে আসে।
জানা গেছে, ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়ে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা একটি হিসাব নম্বরে জমা দেওয়ার পরই ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে আসা হয়। তারা আজিমের টাকার উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। ব্যাগে থাকা টাকা হুন্ডির অর্থ বলে দাবি করেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আজিমকে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে যান। রাস্তায় এনে তাকে মোটরসাইকেলে তুলে দ্রুত মুগদা এলাকায় নেন। সেখানে টাকার ব্যাগ রেখে ছেড়ে দেওয়া হয় আজিমকে। এরপর ঘটনা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককে জানানোর পর পুলিশের একাধিক দল কাজ শুরু করে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার-২০২৩। মেলার প্রথম দিনে পর্যটকদের ব্যাপক সাড়া মিলেছে। ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের জন্য যাবতীয় বিষয় নিয়ে মেলায় বসেছে অর্ধশতাধিক স্টল। মেলায় আসা দর্শনার্থীরাও হাতের লাগালেই ভ্রমণসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য এবং ভ্রমণের ওপর অফার পাওয়ায় বেশ খুশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে আগত দর্শনার্থী ও স্টলগুলোতে থাকা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই মিলেছে।
মেলায় স্টল বসিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসও। স্টলটিতে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি চালু হওয়া জাপানের নারিতা রুটে যাতায়াত করতে চাইলে মেলায় আসারা পাবেন ২০ শতাংশ ছাড়। এ ছাড়া কাঠমান্ডু, কলকাতা, দিল্লি, আবুধাবি, শারজা, দুবাই, দোহা, সিঙ্গাপুর ও ব্যাংকক রুটে মিলবে ১৫ শতাংশ ছাড়। এ ক্ষেত্রে বিমানের কল সেন্টারেও (০১৯৯০৯৯৭৯৯৭) সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন আগ্রহীরা।
এদিকে মেলা উপলক্ষে র্যাফেল ড্রর টিকিটও দিচ্ছে এয়ারলাইনসটি। প্রবেশপথে টিকিট কাটলে প্রথম দিনে থাকছে ঢাকা-দিল্লি-ঢাকা কাপল রিটার্ন টিকিট, দ্বিতীয় দিনে থাকছে ঢাকা-গুয়াংজু-ঢাকা রুটে কাপল রিটার্ন টিকিট এবং তৃতীয় দিনে ঢাকা-নারিতা-ঢাকা কাপল রিটার্ন টিকিট পাবেন র্যাফেল ড্রতে বিজয়ীরা।
মেলায় আসা দর্শনার্থীদের ভাষ্য, এরকম মেলার আয়োজন প্রতি তিন মাস পরপর করা প্রয়োজন। তাহলে মানুষের ভ্রমণের ওপর ভীতি কাটবে। তথ্য জানবে খোলামনে। আর এতে দেশের পর্যটন স্পটগুলোতেও তারা সহজে ঘুরতে যেতে চাইবে।
রংপুরের ‘আলী বাবা থিম পার্কে’র আকর্ষণীয় নানা বিষয় ভ্রমণপিপাসুদের জানাতে মেলায় স্টল দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ। তিনি বলেন, ‘আমরা অফার দিচ্ছি না, তবে আমাদের পার্কে মানুষ কেন যাবে, কী কী দেখার মতো জিনিস দিয়ে আমরা পার্ক সাজিয়েছিÑ সেটা জানাতেই মেলায় আসা।’
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।