
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হবে আজ শুক্রবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এদিন সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল তুলে দেবেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। পরে প্রধানমন্ত্রী অনলাইনে এ ফলাফল প্রকাশের ঘোষণা দেবেন।
বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, শুক্রবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের জন্য সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষার্থীরা সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে অনলাইনে পরীক্ষার ফলাফল পেয়ে যাবে। ঘরে বসেই ওয়েবসাইট ও এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানতে পারবে তারা।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, এই দিন মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করবেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা ৩০ এপ্রিল শুরু হয়। এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১০ লাখ ২১ হাজার ১৯৭ এবং ছাত্রী ১০ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৬ জন।
এ বছর ২৯ হাজার ৭৯৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ৩ হাজার ৮১০টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে কেন্দ্র ২ হাজার ২৪৪টি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৭ হাজার ৭৮৬টি। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে মোট কেন্দ্র ৭১৬টি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৯ হাজার ৮৫টি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে মোট কেন্দ্র ৮৫০টি এবং মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২ হাজার ৯২৭টি।
এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে ২০৭টি এবং কেন্দ্র বেড়েছে ২০টি। পুনর্বিন্যাসকৃত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
দুদিনের নাটকীয়তার পর অবশেষে রাজপথেই সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম তিন সংগঠন। ২৩টি শর্ত দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপক্ষকেই সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
আজ শুক্রবার বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের কার্যালয়ের সামনে আর আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের সমাবেশ হবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে।
কর্মসূচি ঘিরে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ বলেছে, আগের মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করছে তারা।
রাজপথে মহাসমাবেশ করলে আওয়ামী লীগও রাজপথে শান্তি সমাবেশ করবে। এমন অঘোষিত এক দাবি ওঠায় জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল আওয়ামী লীগের সহযোগী ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে। তবে আওয়ামী লীগ মাঠে যেতে রাজি যদি বিএনপিও মাঠে সমাবেশ করে, সে শর্তে। সমাবেশ স্থান নিয়ে জটিল এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবারের সমাবেশের দিন পিছিয়ে যায়।
আগে ঘোষণা দেওয়া বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশ করার জন্য বিএনপি অনুমতি চেয়ে বুধবার পুলিশের সঙ্গে দেনদরবার, নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করে। বিএনপিকে নয়াপল্টনের পরিবর্তে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার বিকল্প দিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, কর্মদিবসে করলে সেই মাঠেই করতে হবে। অন্যথায় ছুটির দিনে করতে হবে। রাত পর্যন্ত এ নিয়ে দরকষাকষি করে শেষে বিএনপি কর্মসূচি পিছিয়ে শুক্রবার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
একইদিন বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ তারুণ্যের জয়যাত্রা সমাবেশের ঘোষণা দেয়। এর আগে যুবলীগের সমাবেশ থেকে বলা হয়েছিল, তারা ২৪ জুলাই সমাবেশ করবে। কিন্তু পিছিয়ে বিএনপির মহাসমাবেশের দিন করায় এ নিয়ে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়। বিএনপি সংঘাতের উসকানি দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ সংঘাতের আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে উল্টো বিএনপির বিরুদ্ধে দেশের অস্থিতিশীলতা তৈরির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে।
বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে মহাসমাবেশ করবে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে। অন্যদিকে শান্তি ও উন্নয়ন প্রচারে সমাবেশ করবে টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন।
ডিএমপির অনুমতি নিয়ে সমাবেশ স্থান জটিলতা দূর হলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিএনপি মহাসমাবেশ শেষে রাস্তায় বসে যেতে পারে গোয়েন্দা সংস্থার এমন তথ্যের বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবরে ভাবিয়ে তুলেছে আওয়ামী লীগকে। বিএনপি এমন কোনো পরিস্থিতির দিকে গেলে কী করবে আওয়ামী লীগ, সে সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতি মাথায় রেখে এগোতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলকে। তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় মনে করে, বিএনপি বসে যাওয়ার মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না। করলে সেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া বিএনপির বসে পড়ার বিষয়টি মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দফায় দফায় বৈঠক করছে। সতর্ক নজর রেখেছে বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করার শেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বিএনপি। মহাসমাবেশ সফল করতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে গতকাল দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া সরকারবিরোধী বিএনপির সমমনা দলগুলো গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে পৃথক পৃথক স্থানে সমাবেশ করার কথা জানিয়েছে।
বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শুক্রবারের সমাবেশের কর্মসূচি পালন করব। আশা করি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইতিমধ্যে যাদের গ্রেপ্তার করেছে তাদের মুক্তি দেবে এবং সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের বাধা দেবে না।’
দুপুরে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘কর্মসূচিকে সামনে রেখে বাসাবাড়ি, হোটেলসহ বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে দলের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। কর্মসূচি ঘোষণা হলেই ধরপাকড় উদ্বেগের বিষয়।’
বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চ সূত্রে জানা গেছে, মহাসমাবেশ থেকে টানা কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা আছে বিএনপি ও সমমনাদের। ১০ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশ, অবস্থান, ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দিতে পারে দলগুলো। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কারণে কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত করে ২০ তারিখ থেকে আবার লাগাতার আন্দোলনে যাবে দলগুলো। তবে শরিকরা বিএনপিকে আলটিমেটাম দেওয়ার পরামর্শ দিলেও গত দুদিনের পরিস্থিতি দেখে সেটা নাও দেওয়া হতে পারে।
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সমাবেশ থেকে আমরা সর্বাত্মক আন্দোলনের ঘোষণা দেব।’
দিনভর নয়াপল্টনে যা ঘটেছে : গত বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ জলকামান ও এপিসি নিয়ে অবস্থান নেয়। দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা মেনে নেতাকর্মীরা কার্যালয় ছেড়ে চলে যান। এরপর গতকাল সকালে কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। এ ছাড়া কার্যালয়ের পাশে প্রধান সড়কের ওপর অবস্থান নেয়। প্রধান সড়কের পাশাপাশি সেখানকার একটি গলিতেও অসংখ্য পুলিশ সদস্যকে অবস্থান করতে দেখা যায়। এ ছাড়া একটি রায়ট কার (এপিসি), জলকামান ও প্রিজনভ্যানও বিএনপি অফিসের সামনে দেখা যায়। সেখানে দায়িত্বরত পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) টিটো বলেন, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি যাতে না ঘটে, সেজন্য তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
এ সময় কার্যালয়ের সামনে দলটির বেশ কিছু নেতাকর্মীকে দেখা গেছে। তবে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে দেখলেই পুলিশ তাদের সরিয়ে দিচ্ছিল। পরে জ্যেষ্ঠ নেতারা এসে কার্যালয়ের সামনে থাকা নেতাকর্মীদের চলে যেতে বলেন।
নয়াপল্টনে সমাবেশের ঘোষণা বিএনপির : এর আগে গত বুধবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল সভা হয়। সভা শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পুলিশের অনুরোধ ও জনগণের ভোগান্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে আমরা আমাদের সমাবেশ বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি পুলিশ আমাদের নয়াপল্টনে কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে দেবে।’
শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ : একইদিন শান্তি ও উন্নয়ন প্রচারের সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা। সমাবেশস্থলের মঞ্চ, মাইক ও সাজসজ্জার কাজ করেছে আয়োজক তিন সংগঠন। ঢাকার আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে নেতাকর্মীর সমাবেশে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শান্তি সমাবেশের প্রস্তুতির পাশাপাশি বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়েও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকায় বসে যেতে পারে এমন খবর প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পদে থাকা ছয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এমন কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে। তাদের প্রত্যাশা, ১০ ডিসেম্বরের মতো এবারও কর্মসূচি নিয়ে নির্বিঘেœ ফিরে যাবে বিএনপি। অন্য কোনো পথে গেলে হেফাজতের মতো বিদায় করার প্রস্তুতি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও আছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি যদি অবস্থান কর্মসূচি দেয়, তাহলে আমাদের কিছু করণীয় নেই। সেটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখবে। তাদের (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) যদি কোনো সহায়তার দরকার হয়, তাহলে আমাদের কর্মসূচি থেকে নেতাকর্মীরা সহায়তা করবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে সমাবেশের নামে শাপলা চত্বরে অবস্থান করে তা-ব চালিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। কিন্তু সেদিন সরকার তাদের কঠোর হস্তে দমন করে রাতের মধ্যে ঢাকা খালি করতে সক্ষম হয়েছে। এখন বিএনপি যদি সমাবেশের নামে ঢাকায় অবস্থান নিতে চায়, তাহলে তাদের অবস্থা হবে হেফাজতের মতো।
দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘বিএনপি কী করবে, সেটা তো আমরা জানি না। তারা যদি আইনশৃঙ্খলা বিপন্ন করার চেষ্টা করে, মানুষের যাতায়াত ও জনজীবন ব্যাহত করার পাঁয়তারা করে, সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’
পুলিশের ২৩ শর্ত : গতকাল ডিএমডির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সমাবেশের অনুমতির কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, দুই দলকে ২৩টি শর্তে সমাবেশে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দলগুলোর আবেদন অনুযায়ী পছন্দের স্থানে সমাবেশ আয়োজন করতে পারবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বিএনপি কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে রাজারবাগ মোড় পর্যন্ত সমাবেশ করতে পারবে। আর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে মহানগর নাট্যমঞ্চ পর্যন্ত সমাবেশ করবে। এ সীমানার মধ্যেই মাইক স্থাপন করতে পারবে তারা। সমাবেশে ব্যাগ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আসা যাবে না। সমাবেশে শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
ডিএমপির শর্তের মধ্যে আরও আছে, নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে। সমাবেশস্থলে চারদিকে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। সমাবেশে আগতদের মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, শব্দদূষণ রোধে সীমিত আকারে মাইক ব্যবহার করতে হবে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আসতে পারে এমন ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। ডিএমপির কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তদন্ত করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে মামলার আসামি গ্রেপ্তার করছি।’
তারুণ্যের জয়যাত্রা কর্মসূচি নিয়ে বিরোধীদের আন্দোলন ঠেকাতে মাঠে আওয়ামী লীগ। নিজেদের কৌশল নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পাভেল হায়দার চৌধুরী
দেশ রূপান্তর : আওয়ামী লীগ-বিএনপির আজকের কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তা রয়েছে। এ কর্মসূচি ঘিরে আপনার কোনো দুশ্চিন্তা আছে?
মাহাবুবউল আলম হানিফ : আমি মনে করি যে, কোনো ধরনের সংঘাত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ যারা রাজনীতি করে, দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে সংঘাত-সংঘর্ষ ঘটে এমন রাজনীতি পরিহার করা উচিত। আমি মনে করি, এ যুগে এসে সংঘাত-সংঘর্ষের রাজনীতি করে কোনো দলই টিকে থাকতে পারবে না। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণ গত ১৮ ও ১৯ তারিখের কর্মসূচিতে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে এতে জনগণের মধ্যে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। তবে সেই ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ শক্ত অবস্থানে আছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কোনো ধরনের সংঘাত বা সংঘর্ষমূলক কর্মকাণ্ড বা দেশকে অস্থিতিশীলতা করার পাঁয়তারা হলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।
দেশ রূপান্তর : আওয়ামী লীগ দাবি করে শান্তি সমাবেশ। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয় সংঘাত বাধানোর জন্য। আপনি কী মনে করেন।
হানিফ : আওয়ামী লীগ আগে থেকেই মাসব্যাপী ধারাবাহিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। এটি নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ধারাবাহিক এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। পাশাপাশি আগস্ট মাসে আমাদের জাতীয় শোক দিবস আসছে। সে হিসেবে শোকের মাসেও মাসব্যাপী কর্মসূচি আছে। তা ছাড়াও সংবিধান অনুযায়ী এ বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছর জানুয়ারির প্রথমদিকে জাতীয় নির্বাচন। আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী। ফলে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আমরা মাঠে থাকছি। নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের ঘনঘন কর্মসূচি পালন করতে হয়। সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা, দলের অন্য কর্মকাণ্ডগুলো জনগণের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরা। কর্মসূচি থাকতেই পারে। আমি মনে করি না, এতে কোনো সমস্যা থাকতে পারে।
দেশ রূপান্তর : একই দিন আওয়ামী লীগের বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে ও নয়াপল্টনে বিএনপি তাদের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছে। মাত্র এক কিলোমিটারের ব্যবধানে দুটি কর্মসূচিই শান্তিপূর্ণ হয়েছে। জনগণের কাছে প্রশংসিতও হয়েছে। সামনের দিনের কর্মসূচিগুলোও কি শান্তিপূর্ণ থাকবে?
হানিফ : আমরা প্রত্যাশা করি, নির্বাচন পর্যন্ত যত কর্মসূচি থাকবে সেগুলো শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হবে। আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা আছে, শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা হয় সেটা প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন। আওয়ামী লীগ আশা করে, ভবিষ্যতেও সব রাজনৈতিক দল তাদের কর্মসূচিগুলো এভাবে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবে। তবে কোনো রাজনৈতিক দল যদি রাজনৈতিক কর্মসূচির আড়ালে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে, পরিকল্পনা রাখে সে ক্ষেত্রে সমস্যা হতেই পারে।
দেশ রূপান্তর : বিএনপি আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করে এমন অভিযোগ আওয়ামী লীগ বরাবরই করে আসছে। আজকের কর্মসূচিতে তেমন কোনো ঘটনা ঘটলে তা মোকাবিলা কীভাবে করবেন? আপনাদের পরিকল্পনা কী?
হানিফ : এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলোও মাঠে প্রস্তুত থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করবে। কোনো দল যদি রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করে, সেটা যদি আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠন চিহ্নিত করতে পারে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করবে। আপাতত পরিকল্পনা হলো মাঠে থাকা। আইনশৃঙ্খলার কাজে যারা থাকবেন তাদের সহযোগিতা করা।
দেশ রূপান্তর : বিএনপি গত ১৪ বছর যে গতিতে আন্দোলন করেছে এবং মাঠে থেকেছে সে তুলনায় এবারের আন্দোলনে গতি কি একটু বেশি মনে হয় আপনার? তারা কি জনসমর্থন পেতে শুরু করেছে, যদি এমনটি হয়, তাহলে এর কারণ কী থাকতে পারে বলে মনে করেন?
হানিফ : বিএনপির সঙ্গে এখন সরকারবিরোধী একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্তের ষড়যন্ত্রের কথা শোনা যাচ্ছে। যেটা বিভিন্নভাবে গণমাধ্যমে বারবার উঠে এসেছে। তা ছাড়া আমরা দেখতে পাচ্ছি বিএনপি নেতারা বিভিন্ন দূতাবাসে দৌড়ঝাঁপ করছেন। তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে দৌড়াঝাঁপের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে বিএনপি ষড়যন্ত্রের কাজটাই করছে। বিএনপির তৃণমূল নেতাদের ধারণা হয়েছে, বিদেশি শক্তির মাধ্যমে তারা সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসবে। এ ধরনের একটা মিথ্যা-কাল্পনিক ধারণা নিয়েই তৃণমূল নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে বিএনপি। কিন্তু দলটির মনে রাখা উচিত, ষড়যন্ত্র কখনো সফল হয় না।
দেশ রূপান্তর : আওয়ামী লীগ কি মনে করে বিএনপির আন্দোলনের গতি বাড়িয়েছে বিদেশিরা?
হানিফ : বিদেশি শক্তি তাদের সমর্থন করছে এটা আমার মনে করার বিষয় না, এটা গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় আসছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, হঠাৎ করে দেশে এমন কী সমস্যা হলো দু-এক দিন পরপরই দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল কর্মসূচি পালন করতে হবে। মূলত বিএনপি দেশকে বিভিন্নভাবে অস্থিতিশীল করতে চায়। এজন্য দফায় দফায় দূতাবাসগুলোতে যায়। তা ছাড়া আর কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে? বিদেশি দূতাবাসগুলোর এখানে দায়িত্বটা কী? দায়িত্ব হলো, দেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে সরকারকে কীভাবে সাহায্য-সহযোগিতা দিতে পারে, উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে তাদের চিন্তা-চেতনার কথাগুলো সরকারকে বলতে পারা। তা না করে রাজনৈতিক দলের নেতাদের ডেকে সপ্তাহে দু-তিনবার করে বৈঠক করে দূতাবাস অফিসে, বাসভবনে। এটা তো মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করে।
দেশ রূপান্তর : বিএনপির এক দফার আন্দোলন আওয়ামী লীগকে চাপে ফেলেছে? আপনার কী মনে হয়?
হানিফ : আন্দোলন দিয়ে কী হয়; এক দফা আন্দোলন হোক আর ১৪ দফা আন্দোলন হোক, কী হবে আন্দোলনে। এটা কী জাতীয় পার্টির সরকার? এরশাদের সরকার? এটা আওয়ামী লীগ সরকার, শেখ হাসিনার সরকার। আওয়ামী লীগ কী অন্য কোনো দলের মতো যে যখন মন চাইবে ধাক্কা দেবে, আর ধাক্কা দিলে পড়ে যাবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি সম্পর্কে জানতে হবে। এসব এক দফা, পাঁচ দফা, দশ দফা দিয়ে আওয়ামী লীগের কিচ্ছু করতে পারবে না। এসব দিয়ে সরকারের ওপর কোনো চাপই সৃষ্টি করতে পারবে না। জনগণের ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ বিশ্বাসী। জনগণ যতক্ষণ সরকারের সঙ্গে আছে ততক্ষণ সরকারের সমস্যা দেখছি না।
দেশ রূপান্তর : আওয়ামী লীগ কী মনে করছে গত ১৪ বছরের আন্দোলনের মতো বিএনপির এবারের আন্দোলনও দিক হারাবে?
হানিফ : বিএনপি এখন যে আন্দোলন আন্দোলন করছে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াও এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বহু হাঁকডাক দিয়েছেন। বারবার আন্দোলন আন্দোলন বলে রাস্তায় নেমেছেন। ২০১৩ সালে এক দফা দিয়ে সরকার পতন আন্দোলন করেছেন, সেটার পরিণতি কী হয়েছে? সেটা ব্যর্থ হয়েছিল। ২০১৫ সালেও সরকার পতন আন্দোলন করেছে, ৯৩ দিন অবরোধের নামে পেট্রোল দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন। সেই আন্দোলনও তো ব্যর্থ হয়েছিল। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আন্দোলন করলে সেই আন্দোলনে কখনো সফলতা আসবে না। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দিয়ে কখনো সরকার পতন করা যাবে না। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে সেটার পরিণতি ভয়াবহ হয়, সেটা বিএনপি নেতারা ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছেন।
মাহাবুবউল আলম হানিফ
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ
এক দফা দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে বিএনপি। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কৌশল ও গতিপ্রকৃতি নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিক সাফি
দেশ রূপান্তর : মহাসমাবেশ নিয়ে এক ধরনের নাটকীয়তা হলো। শেষ পর্যন্ত অনুমতি পাওয়া গেছে। সমাবেশ কেমন হবে মনে করছেন?
মির্জা আব্বাস : যদি সরকার বাধা না দেয় তাহলে সমাবেশ ভালো হবে। ওরা এখন অজুহাত খুঁজছে যেন সমাবেশ করতে না পারি। আগামীকালের (আজকের) মহাসমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ।
কোনো চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র, সহিংসতা করে মহাসমাবেশ নস্যাৎ করা যাবে না। কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাব, আমাদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার ব্যবস্থা করবেন। অন্যথায়, দায়ভার বহন করতে হবে সরকার এবং যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের। এ আন্দোলন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। মানুষের যে উত্থান এটাকে রুখে দেওয়ার জন্য তারা (সরকার) একটা নতুন চক্রান্ত শুরু করেছে। পাল্টা কর্মসূচির মাধ্যমে তারা (সরকার) পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চাইছে।
দেশ রূপান্তর : অনেক ঘটনার পর নয়াপল্টন সমাবেশের সিদ্ধান্ত হয়েছে?
মির্জা আব্বাস : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ইতিবাচক ভূমিকার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তারা আগামীকাল (আজ) নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের নিরাপত্তা বিধানে সহযোগিতা করবেন। একই সঙ্গে আশা করি সমাবেশে আসার পথে জনগণ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের কোনো প্রকার বাধা দেবে না।
দেশ রূপান্তর : বিএনপির পক্ষ থেকে রাজপথ দখলের কথা বলা হচ্ছে? বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন?
মির্জা আব্বাস : সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নানান চেষ্টা করছে। তারা বলে, বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার। নির্বাচন হবে কিন্তু আমাদের জয়ী হতে হবে। সেটার জন্য তারা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় রদবদল করছে। তাদের দিয়ে ভোটারবিহীন নির্বাচন করে নেবে। এত সহজ হবে না, জনগণ এটা বারবার মেনে নেবে না। মানুষ তাদের ন্যূনতম অধিকার, ভোটাধিকার আদায়ের জন্য জনগণ যদি রাজপথ দখল করে প্রতিবাদ জানায়, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব তাদের সমর্থন জানানো। আমরা তা জানাচ্ছি, সবসময়ই জানাব।
দেশ রূপান্তর : সরকারের দাবি আপনারা সংঘাত সৃষ্টি করতে চান?
মির্জা আব্বাস : আপনারা দেখেছেন, দেশবাসী দেখেছে, গত বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে সারা দেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে প্রতিহত করে শান্তি মিছিলের নামে বিশৃঙ্খলা করেছে। একজনকে হত্যা ও অনেককে আহত করার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা ১৫ বছর ধরে নিপীড়নের শিকার।
দেশ রূপান্তর : তারা তো বলে আপনারা অগ্নিসন্ত্রাস করেন?
মির্জা আব্বাস : ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনে ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সে সময় যত রকম জ¦ালাও-পোড়াও আছে; ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে আগুন, শেরাটনের সামনে বাসে গান পাউডার দিয়ে ১১ জনকে হত্যাসহ অসংখ্য ঘটনা ঘটিয়েছে। একই ধারাবাহিকতা ২০১৩ থেকে ’১৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আগুন সন্ত্রাস করে বিএনপির নাম দিয়েছে। আওয়ামী লীগই অগ্নিসন্ত্রাসের হোতা, জন্মদাতা।
দেশ রূপান্তর : বিএনপির সমাবেশ, আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনেরও সমাবেশ কাল (আজ)। বিশৃঙ্খলা হতে পারে বলে মনে করছেন কি?
মির্জা আব্বাস : আমরা শান্তিপূর্ণ মিটিং-মিছিল করেছি। কোনোরকম গোলোযোগ হয়নি। বরং তারাই গোলযোগ তৈরি চেষ্টা করছে। আমাদেরও প্রশ্ন, কেন? আমরা যেদিন মিছিল-মিটিং করি, আপনারা সেদিন দিয়েন না। আপনারা যেদিন করবেন, আমরা দেব না। আর তা না করে আওয়ামী লীগ আমাদের কর্মসূচির দিনই কর্মসূচি ঘোষণা করে। কেন? এটা আর সহ্য করা হবে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা জেল খাটতে শিখেছে, মৃত্যুবরণ করতে শিখেছে, মিছিল করতে শিখেছে। এবার অত্যাচার আর সহ্য করবে না, জবাব দেবে।
দেশ রূপান্তর : মহাসমাবেশের পর আপনাদের কী কর্মসূচি আসছে?
মির্জা আব্বাস : জনগণের গণতন্ত্র, তাদের কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার জন্যই আমাদের আন্দোলন। গাবতলী থেকে রায়সাহেব বাজার মোড়, আবদুল্লাহপুর থেকে রায়সাহেব বাজার মোড় দুটি পদযাত্রা হয়েছে। আমার আগে কখনো এরকম অভিজ্ঞতা ছিল না। সারা বিশ্বে এত বড় মিছিল কেউ কখনো করতে পারেনি। এরপর তারুণ্যের সমাবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতি। আগামীতে এমন অনেক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি থাকবে।
দেশ রূপান্তর : এ আন্দোলনের শেষ পরিণতি কী?
মির্জা আব্বাস : নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন আদায়ে সরকারকে বাধ্য করা ছাড়া এই আন্দোলন শেষ হবে না। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আমি আমার এলাকা থেকে যখন মিছিল বের করি, তখন তার পতন হয়েছিল। এবারও প্রয়োজনে আমার এলাকা থেকে আমার নেতৃত্বে প্রথম মিছিলটি বের হবে। সরকারের শেষ পরিণতি না দেখা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাব।
দেশ রূপান্তর : সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের ওপর বিদেশিদেরও চাপ রয়েছে। বিএনপি কী মনে করছে?
মির্জা আব্বাস : বাংলাদেশ নিয়ে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এখানে কী হচ্ছে, তা তারা জানতে চায়। ফলে তারাও কথা বলছে। সরকার বুঝতে পারছে চারদিকে থেকে তাদের ক্ষেত্র ছোট হয়ে আসছে। তারা যে চলে যাবে, সরকারের যে পতন ঘটবে, এটা আশঙ্কা করেই তারা কার্যক্রম চালাচ্ছে। অত্যাচার-জুলুম বাড়িয়ে দিয়েছে।
দেশ রূপান্তর : আপনাদের কর্মসূচি কি শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক হবে?
মির্জা আব্বাস : সারা দেশেই আমাদের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। তবে এটা স্বাভাবিক, সব ক্ষেত্রে রাজধানীই সবার মনোযোগ আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে। তাই কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীতেও আমাদের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এতে অংশ নিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নগরবাসী রাস্তায় নেমে আসছে। তারা বলছে, আমরা এ সরকারকে চাই না।
দেশ রূপান্তর : আপনি কি মনে করেন নিরপেক্ষভাবে বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে সবপক্ষ সহযোগিতা করবে?
মির্জা আব্বাস : আমাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে, তার প্রমাণ আমরা বারবার দিয়েছি। এবার জোর দিয়ে বলছি, আজকের সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যদের বলব, আমাদের নিয়ে চিন্তা না করে ক্ষমতাসীনদের পাহারা দেন। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে, মামলা দিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বানচাল করতে চায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষ থাকলে, হামলা, মামলা না হলে আমাদের জনসমাবেশগুলো মহাসমাবেশে পরিণত হবে।
দেশ রূপান্তর : যদি সরকার ২০১৪ ও ’১৮ সালের মতো আগামী সংসদ নির্র্বাচন করতে চায়, তখন আপনাদের করণীয় কী হবে?
মির্জা আব্বাস : সর্বশেষ ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে তাদের (আওয়ামী লীগের) ভোট পড়েছে ৮-১০ শতাংশ। বাকি ভোটার ভোট দেয়নি। মানে বাকি ৯০ ভাগ ভোট বিএনপির। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তারা ১০টি আসনও পাবে না। এজন্যই ওবায়দুল কাদেররা বলেন, সংবিধানের বাইরে তারা একচুলও সরবেন না। খুব ভালো কথা। আপনাদের কথায় স্থির থাকেন। আমরাও বলি, সংবিধানের বাইরে আমরাও এক পা যাব না। তবে খায়রুল হকের (এবিএম খায়রুল হক) সংবিধান না। বাংলাদেশের অখ- সংবিধান, যেটা কাটাছেঁড়া করা হয়নি। যে সংবিধান থেকে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়নি। ওবায়দুল কাদেরদের বলব, খেলা কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। এই খেলা শেষ করে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।
মির্জা আব্বাস
স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। দুদিন ধরে সমাবেশ নিয়ে ঘটে গেছে নাটক। এ নিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিরও আশঙ্কা করছেন। তবে যেকোনো পরিস্থিতি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রস্তুত পুলিশ প্রশাসন। এদিকে মহাসমাবেশ সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় বিএনপির বেশ কিছু নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুলসহ আশপাশের কয়েকটি আবাসিক হোটেল থেকেই অন্তত ৩০০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী দুই জেলা নারায়ণগঞ্জ ও সাভারেও ধরপাকড় হয়েছে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে।
পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর ও ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতনরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক ডিএমপি কমিশনারসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতনদের নিয়ে বৈঠক করেছেন গতকাল রাতে। যেকোনো পরিস্থিতি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এসব বৈঠকে।
এদিকে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে অসুস্থ ছাড়া পুলিশের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আশপাশের জেলা থেকে বাড়তি পুলিশ আনা হচ্ছে। ঢাকার ৫০টি থানার ওসিসহ সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। থানার পাশাপাশি ডিবিসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদেরও আলাদাভাবে বার্তা দেওয়া হয়েছে। বার্তা পেয়ে পুলিশ বাসাবাড়ি, হোটেল ও যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে। এমনকি বিএনপি ও জামায়াত সন্দেহে আটক করা হচ্ছে।
বিএনপি অভিযোগ করেছে, দলের নেতাকর্মীদের বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গত দুদিনে সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এমনকি অভিযানের সময় স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করা হচ্ছে। ঢাকায় প্রবেশ করা রাস্তায় যানবাহন আটকে ব্যাপক তল্লাশি করা হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ লোকজন। তা ছাড়া কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আটক বাণিজ্যেরও অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি আছে, তাদের ধরা হচ্ছে।
জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেজন্য আমরা কাজ করছি। অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। বিএনপির অভিযোগ আসলে সঠিক না।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে যেন হয় সেদিকেই আমরা বিশেষ নজর দিচ্ছি। আমরা কাউকে কোনো ধরনের সুযোগ দিচ্ছি না। আইনের মধ্যে যা আছে তাই করা হচ্ছে। সমাবেশ নিয়ে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে হয়রানি করা হচ্ছে না। তবে কেউ যদি আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করে তাহলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, বিএনপি সমাবেশের নামে কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খল করার চেষ্টা করলে কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। তিনি আরও বলেন, ইউনিটপ্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে থেকে বাড়তি পুলিশ আনা হচ্ছে। জলকামানসহ সব ধরনের সরঞ্জামদ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে তা সত্য। রুটিন অনুযায়ী অভিযান চলছে। তবে নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। এজন্য পুলিশ সদস্যদের সতর্ক করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগরে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকা শহর জুড়ে বিএনপির ৫০টি থানা এলাকায় অভিযান চলছে। থানা-পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশও কাজ করছে। আবার আমরা থানা-পুলিশকে সহযোগিতা করছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ মাঝেমধ্যে বিশেষ অভিযান চালায়। এরই অংশ হিসেবে অভিযান চলছে। ঢাকার বাইরেও পুলিশের বিশেষ অভিযান চলছে। টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেন, ঘাটাইল উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি নাসির উদ্দিন, ধনবাড়ী উপজেলার মুসুদ্দি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান ও কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সদস্য সোনা মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা বিএনপির সমাবেশে যাওয়ার কথা ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিএনপির সহসভাপতি ও ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মীর আশরাফ আলী আজম চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাকে বুধবার রাতে ডিবি পুলিশ আটক করেছে। আটকের সময় পুলিশ তাকে নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ করেছে স্বজনরা।
পুলিশ সূত্র জানায়, মিরপুর থানা-পুলিশ পাংশা উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি সজিব রাজা, ছাত্রদল নেতা ইমরান হোসেন, কলিমহর ইউনিয়ন ছাত্রদলের জাহিদ হোসেন, মৌরাট ইউনিয়ন ছাত্রদলের কনকসহ অন্তত ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। কলাবাগান থানা-পুলিশ জয়পুরহাট জেলা শাখা জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সদস্য সচিব মঞ্জুরে মওলা পলাশ ও ছাত্রদল নেতা মশিউর রহমান খন্দকারকে (এ্যালট) আটক করেছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, কর্মসূচিস্থল, আশপাশসহ ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশি পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকে মাঠে নেমেছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য। ইতিমধ্যে নজরদারি শুরু করেছেন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। পুলিশের সাইবার ইউনিট চোখ রাখছে বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর। কেউ যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য নজরদারি কয়েক ধাপ বাড়ানো হয়েছে। কোনো ঘটনা ঘটলে র্যাব, বিজিবি এবং আনসারসহ মাঠে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে অপারেশনে যাবেন।
নিরাপত্তা জোরদার : দুই সমাবেশ ও আশুরা উপলক্ষে নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি মাঠে মোতায়েন থাকবে দাঙ্গা পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন আনসার। ঢাকার বাইরে ঢাকা রেঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও ঢাকায় আনা হয়েছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিবিজি) পয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য পিলখানায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ডিএমপি প্রয়োজন অনুভব করলে তারাও মাঠে নামতে প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক রায়ট কার, এন্টিপার্সোনেল কার (এপিসি), জলকামান, আর্মড ক্যারিয়ার ভ্যান, পর্যাপ্ত রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসসহ দাঙ্গা দমনের যাবতীয় প্রস্তুতি রেখেছে পুলিশ। গতকাল সকাল থেকেই নয়াপল্টন আশপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ। এ বিষয়ে ডিএমপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, জনসাধারণ জানমালের নিরাপত্তা ও সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়াতে যা যা নিরাপত্তার প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন সবই নেওয়া হয়েছে।
গণপরিবহনে তল্লাশি : বিএনপির মহাসমাবেশ ধরে নিয়ে বুধবার দুপুর থেকেই রাজধানীর গণপরিবহনগুলোতে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। এ কারণে অনেক এলাকায় গণপরিবহন সংখ্যা কমেছে। গতকাল সপ্তাহের কর্মদিবসের শেষ দিনেও রাজধানীর সড়কে গণপরিবহন ছিল কম। প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যাও কাম দেখা গেছে। মিরপুর থেকে মতিঝিল রুটের শিকড় পরিবহনের বাসচালক বশির জানান, কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে পুলিশ মিরপুর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত তিনবার তল্লাশি করেছে পুলিশ। মামলাও দিয়েছে। আসলে পুলিশ চাইছে আমরা যাতে গাড়ি না চালাই। রাজধানীর প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, বাবুবাজার, বসিলা ব্রিজ, গাবতলী, আমিনবাজার, আবদুল্লাপুর, আমুলিয়া মডেল টাউন সড়কে চেকপোস্ট বসায়। সব গাড়িতে তল্লাশির কারণে এসব সড়কে যানজট দেখা দেয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ জানান, সমিতি মালিকদের শহর ও শহরের বাইরের বাস বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তিনি বলেন, ‘বিএনপি বাধা না দিলে আমাদের গাড়ি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করবে। তারা সহিংস ঘটনা না ঘটালে এটা চালু রাখা হবে। প্রশাসন বা দলের পক্ষ থেকে গাড়ি বন্ধ রাখার চাপ নেই।’
রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার তথ্য : নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা, শান্তিনগর ও পুরানা পল্টন এলাকার একাধিক রেস্তোরাঁ মালিক জানান, গতকাল রাতে পুলিশ গিয়ে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিতে বলে। অনেক রেস্টুরেস্ট থেকে লোকজনকে বের করে দেয়। শান্তিনগরের একজন রেস্তোরাঁ মালিক জানান, পুলিশ এসে নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কথা বলে রাত ১০টার দিকে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে পল্টন থানার ওসি মো. সালাহউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম কোনো তথ্য আমার জানা নেই।
শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করলে ব্যবস্থা : রাজনৈতিক দলের সমাবেশ করতে কোনো বাধা নেই মন্তব্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, জানমালের ক্ষতি করলে, ভাঙচুর ও জন শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করলে নিরাপত্তা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। গতকাল মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস-২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, দুই দল কেন একই দিনে সমাবেশ করছে সেটা রাজনৈতিক দলের নেতারা বলতে পারবেন। এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু রাখার কাজ আমার।
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানান, ঢাকার সমাবেশকে ঘিরে রামপালে বিএনপির ৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি ৩০ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জনের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা হয়েছে। বুধবার রাতভর রামপালের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের ধরা হয়।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ দলটির অঙ্গসংগঠনের চারজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে জেলা বিএনপি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল বলেন, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে জেলার বিভিন্ন স্থানে এবং বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। মহাসমাবেশ বানচাল করার জন্য পুলিশ নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে যাতে কেউ সমাবেশে যোগ দিতে না পারে। এরপরও জেলা থেকে প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে যোগদান করার জন্য ঢাকায় গিয়েছে। এ ছাড়া আরও ৪০ হাজার নেতাকর্মী যাতে সমাবেশে যেতে না পারে এজন্য অভিযান চালাচ্ছে। এ ছাড়া সড়ক ও মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়েও তল্লাশি করা হচ্ছে।
লক্ষ্ম ীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ¥ীপুরে পুলিশ সে ঙ্গ বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের দায়ের হওয়া দুই মামলায় কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিসহ বিএনপির ১৯ নেতা-কর্মীকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
ফেনীতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার: ঢাকায় মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা ফেনী জেলা বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় জমায়েত হওয়া ফেনীর অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল) ।
দিনাজপুর সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামের মোজাম্মেল হক বাড়ির সামনে ৬২ শতাংশ জমিতে আট বছর আগে লিচুর বাগান করেছেন। পাঁচ বছর ধরে ভালো ফলন পাচ্ছেন। ৪১টি গাছের এই বাগান থেকে কয়েক বছর ধরেই মৌসুমপ্রতি তিন-চার লাখ টাকার লিচু বিক্রি করে আসছিলেন। কিন্তু এবার বিক্রি করতে পেরেছেন ৭০-৭৫ হাজার টাকার লিচু।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মোজাম্মেল হকের অভিযোগ, তার গ্রামের রাইস মিল বা চালকলের ছাই উড়ে এসে বাগানে পড়ছে। এতে করে লিচুগাছের পাতায় ছাইয়ের পুরো আস্তরণ সৃষ্টি হচ্ছে। গাছ ঠিকমতো পুষ্টি না পাওয়ায় লিচুর উৎপাদন কমে গেছে।
শুধু আউলিয়াপুর নয়, সদর উপজেলার পুলহাট, মাসিমপুর, করিমপুর, হামজাপুর, উলিপুর, করিমুল্লাহপুর, সৈয়দপুর, শিকদারগঞ্জ গ্রামের লিচুচাষিদের একই অভিযোগ, চালকলের ছাই তাদের সর্বনাশ করছে।
দিনাজপুরের সুস্বাদু লিচুর খ্যাতি আছে আন্তর্জাাতিক পর্যায়েও। দিনাজপুর দেশের শীর্ষ ধান উৎপাদনকারী জেলা হিসেবেও পরিচিত। এ কারণে জেলার যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ধানকল।
চালকলের ছাই যাতে বাতাসে ছড়াতে না পারে, সে জন্য ‘সাইক্লোন এয়ারলক’ ব্যবহারের আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এতে খরচ হয় মাত্র ২ লাখ টাকা। কিন্তু চালকলের মালিকরা খরচ বাঁচাতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন না। তার খেসারত দিতে হচ্ছে লিচুচাষিদের। জেলা হটিকালচার সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে দিনাজপুরে উৎপাদিত লিচু বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৯০০ কোটি টাকার। পরের বছর কমে হয় ৭০০ কোটি টাকা। চলতি বছর সেটি নেমে এসেছে ৪০০ কোটি টাকায়।
সবুজ পাতায় কালো ছাই : সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লিচুর মৌসুম শেষ হওয়ার পর গাছে গাছে এসেছে নতুন পাতা। কিন্তু সেগুলো সবুজ নয়। ছাইয়ের আস্তরণ পড়ে কালচে হয়ে গেছে। এমনকি ডালেও জমাট বেঁধে আছে ছাই।
এলাকাবাসী বলছিলেন, চালকলের আশপাশের বাসিন্দাদের সাবধানে চলাফেরা করতে হয়। কারণ যেকোনো সময় চোখে এসে পড়তে পারে ছাই। বাড়িঘর প্রতিদিন পাঁচ-ছয়বার ঝাড়– দিতে হয়।
দিনাজপুর চালকল মালিক গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ধান ভাঙানোর কারখানা রয়েছে প্রায় ৩ হাজার, স্বয়ংক্রিয় কারখানা আছে প্রায় ২০০টি।
সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের ইদ্রিস আলী চালকল স্থাপনে কারিগরি বিষয়ে সহায়তা করেন। বিভিন্ন এলাকায় ১০০টির বেশি চালকল স্থাপনে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। ইদ্রিস এই প্রতিবেদককে জানান, জেলার চালকলের অধিকাংশেই ‘সাইক্লোন এয়ারলক’ নেই। তিনি বলেন, একটি সাইক্লোন এয়ারলক তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ২ লাখ টাকা। কিন্তু মালিকরা সেই টাকা খরচ করতে চান না। কারণ একটি কারখানায় গড়ে প্রতিদিন ৩০-৪০ ট্রলি ছাই বের হয়। এয়ারলক বসালে সেখানে জমা হওয়া ছাই সরানোর জন্য শ্রমিকের প্রয়োজন। পাশাপাশি ছাই রাখার জায়গাও লাগে। তিনি দাবি করেন, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ৯৫ শতাংশ ছাই বাতাসে না উড়ে কারখানায় থেকে যেত।
আউলিয়াপুরের মেম্বার মোজাম্মেল হক বাতাসে ছাই ওড়ার সমস্যা ছাড়াও পানি দূষিত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরলেন। তিনি বলেন, ‘চালকলের দূষিত পানি খোলা জায়গায় ছেড়ে দেওয়ায় মাটি দূষিত হচ্ছে, দূষিত হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি। যে কারণে বিশুদ্ধ পানিও পাচ্ছি না। টিউবওয়েল চাপলে পানির সঙ্গে ধানের তুষ উঠে আসছে। প্রশাসন এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে আমরা খুবই সমস্যায় পড়ব।’
সদর উপজেলার মাসিমপুর গ্রামের লিচুচাষি হাসিনা বেগম বলেন, ‘প্রতি বছর আমার বাগান থেকে আড়াই-তিন লাখ টাকার লিচু বিক্রি হলেও এবার সোয়া লাখ টাকার লিচু বিক্রি হয়েছে। সামনের বছর হয়তো লিচু বিক্রি আরও কমে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় লিচুর গাছ কেটে খড়ি বানাতে হবে।’
একই গ্রামের কৃষক আকরাম আলীও তার বাগানে ফলন কমে যাওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, চালকলের ছাইয়ের কারণে গাছ ঠিকমতো পুষ্টি পায় না। এ বছর বৃষ্টিও কম হয়েছে। বৃষ্টি বেশি হলে পাতার ছাই পানির সঙ্গে ধুয়ে যেত।
শিকদারগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলম বলেন, ‘ছাইয়ের কারণে শুধু গাছই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ছাই উড়ে মানুষের চোখে এসে পড়ছে। বাসাবাড়ির আঙিনা, বারান্দায় পড়ছে। এমনকি খাবার পানিতেও পড়ছে।’
জেলার বিরল উপজেলার মাধববাটী গ্রামের লিচুচাষি শরিফ হোসেনেরও একই অভিযোগ।
দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের পল্লীচিকিৎসক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এই এলাকার আশপাশে বহু চালকল। ছাই চোখে পড়ার কারণে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন মানুষ আমার কাছে আসে। আমি তাদের বিভিন্ন ধরনের ড্রপ দিই।’
পরিবেশকর্মী মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘চালকলের ছাই জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি উদ্ভিদকুলের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ছাইয়ের কারণে গাছের স্বাভাবিক সালোক-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গাছ তার খাদ্য তৈরি করতে পারে না। আবার যখন মুকুল আসে, তখন ছাই পড়ে পরাগায়ণ ব্যাহত করে। কারণ মৌমাছি বসতে পারে না। এ কারণে বাগানগুলোতে ফলের পরিমাণ ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে।’
দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাতাসে ওড়া ছাই ধান, গম থেকে শুরু করে আম, লিচুর ফলনে প্রভাব ফেলে। ফল গাছে পুষ্পায়ন, ফল উৎপাদন, শাখা-প্রশাখা বৃদ্ধি প্রতিটি ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তা ছাড়া দূষিত পানি নির্গত হয়, যা মাটির সঙ্গে মিশে উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে। এসব কারণে ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’
দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম বোরহান-উল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘বাতাসে ছাই ও ধুলা মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এর জন্য মানুষের শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, এমনকি ফুসফুসের ক্যানসারও হতে পারে। এক বছরে জেলায় শ্বাসকষ্টের রোগী বেড়েছে। তার জন্য দায়ী বায়ুদূষণ।’
এয়ারলকের পাশে ব্লোয়ার মেশিন
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালকল মালিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, জেলার অধিকাংশ মিলের সাইক্লোন এয়ারলক নেই। ছাই সরাতে শ্রমিকের খরচ ও রাখার জায়গার কারণে অনেকে ‘সাইক্লোন এয়ারলক’ বসায় না। আবার অনেকে বসালেও গভীর রাতে ‘সাইক্লোন এয়ারলকের’ পাশে ‘ব্লোয়ার মেশিন’ চালু করে দেয়। এতে মিলের ছাই বাতাসে উড়ে যায়।
জানতে চাইলে দিনাজপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এ কে এম ছামিউল আলম কুরসি বলেন, ‘দিনাজপুরের বাতাসে কী পরিমাণ ছাই ওড়ে, তা আমাদের জানা নেই। তবে বর্তমানে যেসব মিল আমাদের কাছে পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়নের জন্য আসছে, সেগুলোয় সাইক্লোন এয়ারলক না থাকলে আমরা নবায়ন করছি না। যেসব মিলের নবায়নের আবেদন আসছে, এর মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশের সাইক্লোন এয়ারলক রয়েছে।’
দীর্ঘদিন ধরে চালকলের ছাই বাতাসে উড়ছে। আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চালকলের ছাই বাতাসে ওড়ার কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। অভিযোগ এলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
চালকলগুলো নিয়মকানুন মেনে চলছে কি না, সেটি দেখাশোনার দায়িত্ব কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের। দিনাজপুরে এই অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক মো. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়ার কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরেজমিনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় করে সেই সব মিলের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’
সরেজমিন পরিদর্শন করা হয় কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। যেসব মিলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ আসে, সেগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
আগামী চেস গিল্ড স্কুল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইয়ান রহমান ও মনন রেজা নীড়। একক ইভেন্টের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে আইয়ান ও ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নীড়। ৭ রাউন্ডের খেলায় আইয়ান ও নীড় দুজনই পেয়েছে সাড়ে ছয় পয়েন্ট করে।
বিটজ দলগত বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এলিগেন্ট চেস একাডেমি। এই দলে খেলেছে জারিফ হক আফনান, তাসরিক সায়হান, সিয়াম চৌধুরী ও নীলাভা চৌধুরী। আজ শনিবার দাবা ফেডারেশন কার্যালয়ে শেষ হয়েছে এই প্রতিযোগিতা।
আগামী চেস গিল্ডের আয়োজনে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয় ‘আমরা ৯২’ আগামী চেস গিল্ড স্কুল রেটিং টুর্নামেন্ট। সুইস লিগ পদ্ধতিতে হয়েছে খেলা। একক ও দলগত দুই বিভাগে অংশ নেয় ১৪৫ জন দাবাড়ু। টুর্নামেন্টে বিজয়ীরা ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেটের পাশাপাশি পেয়েছে ৭০ হাজার টাকা।
টুর্নামেন্ট শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গ্র্যান্ডমাস্টার রিফাত বিন সাত্তার, আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
টানা ৬ ম্যাচ জিতে লা লিগার শীর্ষে উঠে এসেছিল জিরোনা। আগের রাতে সেভিয়াকে হারানো বার্সেলোনা সেই জিরোনাকে পেছনে ফেলে। আর রিয়াল মাদ্রিদ এবার উড়তে থাকা জিরোনাকে হারিয়ে লা লিগার কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করেছে।
শনিবার মন্তিলিভি স্টেডিয়ামে জিরোনাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। রিয়ালের হয়ে গোল তিনটি করেছেন জোসেলু, অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি ও জুড বেলিংহাম।
আট ম্যাচের সাতটিতে জিতে রিয়ালের পয়েন্ট এখন ২১। সমান ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বার্সেলোনা। আর টানা ছয় জয়ের পর রিয়ালের কাছে হেরে যাওয়া জিরোনা ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিনে।
সপ্তাহ খানেক আগেই আতলেতিকো মাদ্রিদে গিয়ে ৩-১ গোলে হেরেছিল রিয়াল। এবার জিরোনায় গিয়ে
প্রথমার্ধেই ২ গোলে এগিয়ে যায় আনচেলোত্তির শিষ্যরা। এর মধ্যে ১৭ মিনিটে বেলিংহামের ক্রস থেকে বল জালে পাঠান জোসেলু। আর ২২ মিনিটে টনি ক্রুসের কর্নার থেকে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন চুয়ামেনি।
রিয়াল ব্যবধান ৩-০ করে ৭১ মিনিটে। জোসেলুর শট জিরোনা গোলরক্ষক প্রতিহত করলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। নাগালে বল পেয়ে দারুণভাবে বল জালে পাঠান বেলিংহাম। এটি রিয়ালের হয়ে ৭ ম্যাচে তার অষ্টম গোল।
দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও কুমিল্লার বটগ্রাম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা নুরুল হক। আলেমদের অবস্থান সুসংহত করাসহ জেলার মাদ্রাসাগুলোকে একতাবদ্ধ রাখা ও শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। সাদাসিধে চলাফেরায় অভ্যস্ত আশি বছর বয়সী এই আলেম বেশ কয়েকটি মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন ধরে হাদিসের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ সহিহ বোখারি শরিফের দরস দেন। তার বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে লিখেছেন শামসুদ্দীন সাদী
অলি-আউলিয়ার পুণ্যভূমি বারো আউলিয়ার দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ঊর্বর ভূমিতে জন্ম নিয়েছেন অসংখ্য বুজুর্গ ও গাউস কুতুব। ভিনদেশ থেকেও আগমন ঘটেছে বহু বুজুর্গের। যাদের পুণ্য পরশে পত্র-পল্লবে সেজে উঠেছে বাংলার মাটি। তাদের উদার মানবতা, চরিত্রের মাধুর্য, মহানুভবতা, মানবপ্রেম ও মহান আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠা ভিন্নধর্মীদের আকৃষ্ট করেছে। ফলে ইসলাম এদেশের মাটির বুকে সুদৃঢ়ভাবে শেকড় গেড়েছে। এখনো সারা দেশে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য আলেম ও বুজুর্গ। তাদেরই একজন মাওলানা নুরুল হক। দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও কুমিল্লার প্রবীণ মুরব্বি। কুমিল্লা জেলার বটগ্রাম মাদ্রাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস।
আশি বছর বয়সী প্রবীণ এই আলেমের জন্ম ব্রিটিশ ভারতে আনুমানিক ১৯৪১ সালে, কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সাতবাড়িয়া দাতামা গ্রামে। পিতা সোনা মিয়া ছিলেন অত্যন্ত দীনদার, আমানতদার ও বিশ্বস্ত মানুষ। মাতা জোবায়দা খাতুন ছিলেন দীনদার নামাজি ও পর্দানশিন নারী।
শৈশবে এক বুজুর্গের হাতে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি। গ্রামের মসজিদের ইমাম আমির উদ্দীন মাস্টার ছিলেন তার প্রথম শিক্ষক। প্রথাগত আলেম না হলেও আমির উদ্দীন মাস্টার শরিয়ত পালনে অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। কোনো ধরনের অনৈসলামিক কার্যকলাপ তিনি সহ্য করতেন না। তার একান্ত চাওয়া ছিল, এলাকার মানুষ দীনের পথে ইসলামের পথে চলুক। সব ধরনের বেদআত ও পাপের কাজ থেকে দূরে থাকুক। এমন মান্যবর বুজুর্গের হাতে তিনি আলিফ বা-তা-সা ও বাল্যশিক্ষা গ্রহণ করেন।
মক্তবের বাল্যশিক্ষার পর স্কুলে ভর্তি হয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। মা-বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলেকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দুই বছর পড়াশোনা বন্ধ থাকে। দুই বছর পর দাতামা পশ্চিম পাড়ার ছেলামত উল্লাহ বেপারির বাড়িতে পড়ালেখার ব্যবস্থা হয়। তিনি, তার জীবনের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী মাওলানা আবদুল ওয়াহাব (রহ.)-সহ আরও কজন ছিলেন এখানকার সহপাঠী। এখানে তাদের শিক্ষক ছিলেন একজন বুজুর্গ ব্যক্তিত্ব মাওলানা আব্দুল হাকিম (রহ.)।
আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া শুরু হয় জোলাই ইসলামিয়া মাদ্রাসায়। তৎকালে অত্র এলাকায় জোলাই মাদ্রাসার পড়াশোনার সুনাম-সুখ্যাতি ছিল। শরহে জামি পর্যন্ত পড়াশোনা করে ভর্তি হন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায়। দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত হাটহাজারী মাদ্রাসাতেই পড়াশোনা করেন। দাওরায়ে হাদিস শেষ করার পর হাটহাজারী মাদ্রাসাতেই তাফসিরুল কোরআনের ওপর এক বছরের বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করেন। এ সময় তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসায় জগদ্বিখ্যাত বহু মনীষীর শিষ্যত্ব লাভ করেন।
তার কর্মজীবনের সূচনা হয় গোপালগঞ্জে এক আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে। সেখানে পনেরো বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা করেন। পরে সেখান থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে আসেন নিজ জেলা কুমিল্লায়। কুমিল্লার প্রাচীন মাদ্রাসা বটগ্রাম হামিদিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের কয়েক বছর পর সহকারী মুহতামিম, এর কয়েক বছর পর ১৯৯০ সালে মুহতামিম নিযুক্ত হন। তখন থেকে অদ্যাবধি এই গুরুদায়িত্ব পালন করছেন।
আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিকতার (সুলুক-তাসাউফ) পথে বহু বুজুর্গের সান্নিধ্য পেয়েছেন। অনেকের কাছ থেকে খেলাফতও লাভ করেন। হাটহাজারী মাদ্রাসায় পড়ালেখা কালেই মেখল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হামিউস সুন্নাহ মুফতি ফয়জুল্লাহ (রহ.)-এর কাছে বায়াত (শিষ্যত্ব গ্রহণ) হন। তার ইন্তেকালের পর হাকিমুল উম্মত হজরত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর অন্যতম খলিফা তওবার রাজনীতির প্রবর্তক মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন। হাফেজ্জি হুজুর (রহ.) তখন বার্ধক্যজনিত কারণে শয্যাশায়ী। তাই তারই নির্দেশে শর্শদি মাদ্রাসার আউয়ালের কাছ থেকে সবক গ্রহণ করেন। হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর ফেনী ওলামা বাজার মাদ্রাসার মুহতামিম বরেণ্য বুজুর্গ হজরত মাওলানা আব্দুল হালিম (রহ.)-এর হাতে বায়াত হন এবং তার থেকেই খেলাফত লাভ করেন। এছাড়া হাফেজ্জি হুজুর (রহ.)-এর অন্যতম খলিফা পলাশের হুজুরের কাছ থেকেও এজাজত লাভ করেন।
এক সময় কুমিল্লা জেলাজুড়ে ছিল শিরক-বেদআতের গয়রহ দাপট। নানা বেদআতে সয়লাব ছিল কুমিল্লা শহর। কওমি মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসায় পড়–য়া আলেম-উলামাদের নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হতো। মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হতো মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে। কিন্তু সংঘবদ্ধতার অভাবে শিরক-বেদআত দূর করা ও কওমি মাদ্রাসার অবস্থান ও গুরুত্ব তুলে ধরার কোনো সুযোগ ছিল না। এই শূন্যতা পূরণের লক্ষ্যে জেলার চিন্তাশীল আলেমরা মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ‘কুমিল্লা জেলা কওমি মাদ্রাসা সংগঠন।’ জেলার ছোট-বড় প্রায় সব মাদ্রাসা এই সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত। কাসিমুল উলুম মাদ্রাসার মাওলানা আশরাফ আলী (রহ.), বরুড়া মাদ্রাসার মুফতি আব্দুল ওয়াহাব (রহ.), রানীর বাজার মাদ্রাসার মাওলানা আব্দুল ওয়াহাব (রহ.) এবং বটগ্রাম মাদ্রাসা থেকে মাওলানা নুরুল হক এই সংগঠন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কুমিল্লা জেলায় কওমি আলেমদের সুসংহত অবস্থান তৈরি হয়। কওমি শিক্ষার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডা বন্ধ হয়। জেলার প্রাণকেন্দ্রে এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ইসলামি মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে থাকে। দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-উলামারা আমন্ত্রিত হন। জেলার মাদ্রাসাসমূহকে একতাবদ্ধ রাখা ও শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই সংগঠনের অবদান রয়েছে। বর্তমানে তিনি এই সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এতসব গুরুদায়িত্ব পালন করার পরও সরল জীবনের এক মূর্তপ্রতীক তিনি। বিরোধপূর্ণ বিষয় থেকে সযতেœ নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। তার চলাফেরা একেবারে সাদাসিধে। পোশাক-আশাকে বিলাসিতা নেই। সাধারণ পোশাকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ক্ষেতখামারে কাজ করেন। পানি সেচ দেন। ইখলাস (একনিষ্ঠতা) ও লিল্লাহিয়াতের (আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সব কিছু করা) জীবন্ত নমুনা। কয়েকটি মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন ধরে পড়াচ্ছেন হাদিসের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ সহিহ বোখারি শরিফ।
মাওলানা নুরুল হকের জীবনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো দাওয়াত ইলাল্লাহ তথা আল্লাহভোলা মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা। দীনের কথা শোনানো। ইসলামের পথে চলতে উদ্বুব্ধ করা। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে আনাচে-কানাচে তিনি এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের মিশন নিয়ে ঘুরে বেড়ান। দিনরাত ছুটে বেড়ান মাহফিল থেকে মাহফিলে। কিছুটা আঞ্চলিক ভাষায় বয়ান করেন তিনি। যে কারণে সর্বসাধারণ সহজেই তার বয়ানের মর্মবাণী হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন। আলেম থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই মুগ্ধমনে তার বয়ান শুনেন। তার বয়ানে খোঁজে পান জীবন পথের পাথেয়।
ইসলামের সৌন্দর্য, পারিবারিক জীবন, আখেরাতে ও আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টির পথ-পদ্ধতি হলো তার বয়ানের বিষয়বস্তু। ইসলাম যে জীবনমুখী ধর্ম, ইসলামে কোনো বৈরাগ্য নেই তার জীবনে ও বয়ানে বারবার বিষয়টি ফুটে ওঠে। দুনিয়ার কাজকর্মও যে দীনের অংশ এবং তাতেও যে অফুরন্ত সওয়াব লুকিয়ে আছে নানা উপমার মাধ্যমে তিনি সেগুলো স্পষ্ট করেন। গতানুগতিক ওয়াজ মাহফিলের বাইরে বিশেষ ইসলাহি মাহফিলও করেন। ভক্ত মুরিদানের আমল আখলাকের খোঁজ-খবর নেন। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মুরিদানের আমলি উন্নয়নের চেষ্টা করেন।
বহু মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সঙ্গে তিনি জড়িত। নিজ গ্রামে দাতামা মাদ্রাসা, ধনাইতরী নূরানী মাদ্রাসা, সুলতানপুর কারিয়ানা মাদ্রাসাসহ আরও অনেক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অসংখ্য মাদ্রাসার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এখনো অনেক মাদ্রাসার নীতিনির্ধারণী কমিটি তথা মজলিসে শুরার সভাপতি ও সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেক মাদ্রাসার সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন।
প্রতিটি কাজে তিনি কোরআন-সুন্নাহর অনুসরণ করেন। নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটেন। নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা কুঁজো হয়ে গেছেন। কথিত আছে, বেপর্দা ও গোনাহ থেকে বাঁচতেই তিনি নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটেন। অবসর সময়ে ঘরোয়া কাজে সহযোগিতা করেন। কিতাব অধ্যয়ন করেন। ধ্যানে ডুবে থাকেন। সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সময় দেন। ১০ ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার পরিবার। ছেলেদের অনেকে আলেম হয়েছেন, বাকিরা পড়াশোনা করছেন।
একনিষ্ঠ ও দরদি মানব-দুর্ভিক্ষের এই দুঃসময়ে মাওলানা নুরুল হক আমাদের জন্য এক বটবৃক্ষ। তার ছায়া আমাদের জন্য রহমত। কেবল কুমিল্লার জন্য নয়, সারা দেশের জন্যই তিনি এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। আমাদের দুর্ভাগ্য, এমন বহু বুজুর্গ ব্যক্তিত্ব সারা দেশে ছড়িয়ে আছেন, যারা আমাদের অগোচরেই হারিয়ে যান। মৃতুর পর হয়তো সংবাদ পাই। জীবিত থাকতে তাদের থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ আমাদের হয় না। এ ধারার পরিবর্তন দরকার। আল্লাহতায়ালা এই মহীরুহ ব্যক্তিত্বসহ অন্যদের ছায়া আমাদের ওপর দীর্ঘায়িত করুন।
একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এই নিয়ে পুলিশের কানাঘুষা চলছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কী হতে পারে তা নিয়ে চলছে বিচার-বিশ্লেষণ।
একই সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়েও দুশ্চিন্তা বেড়েছে পুলিশের। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে পুলিশ সদর দপ্তরও ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে।
পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানানোর পর যারা পুলিশের তালিকা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
গত রবিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র মো. ফারুক হোসেন এক ভিডিও বার্তায় গণমাধ্যমকে জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি প্রয়োগ করতে শুরু করেছে। তবে তারা কোনো তালিকা পাননি বলে তিনি জানান।
পরদিন সোমবার পুলিশ প্রধান (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, ভিসানীতিতে পুলিশের ইমেজ সংকটে পড়বে না। সবাই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং করে যাবেন। তবে এসব বিষয় নিয়ে গুজব ছড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও আসন্ন নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু করেছে দেশটি। কারও নাম উল্লেখ না করলেও ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞার তালিকায় সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তা, বিচার বিভাগের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা রয়েছেন।
এরপর দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে যারা নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রে আসা-যাওয়া করছেন তারাই বেশি অস্থিরতার মধ্যে আছেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি, অ্যাডিশনাল ডিআইজি ও পুলিশ সুপার পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি প্রয়োগ শুরু হওয়ার পর পুলিশের মধ্যে কিছুটা হলেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে যান না এমন কর্মকর্তা কমই আছেন। কিছু কর্মকর্তা আছেন তারা নিয়মিত ওই দেশে আসা-যাওয়া করেন। কারও সন্তানরা ওই দেশে পড়াশুনা করছেন। এসব তথ্য ওই দেশের প্রশাসন জানে। তবে বাংলাদেশের একটি প্রভাবশালী মহল দেশের বিরুদ্ধে ‘খেলাধুলা’ করছে। তাদের প্রতিরোধ করা উচিত। আর না হয় তারা দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠবে বলে মনে করেন ওই তিন কর্মকর্তা।
পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বলেন, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খান ও র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবৎ রয়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়নি। এই দিকটি আমলে নিয়ে ভিসানীতি প্রয়োগ করলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য কর্মকর্তারা মনোবল হারাবেন, তা সত্য। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বলপ্রয়োগ করতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকায় তাদের নামও থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার বিষয়ে নানা রকম গুঞ্জন আছে। আলোচিত বেশ কিছু কর্মকর্তার স্ত্রী-সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেন। যদি ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নাম আসে তাহলে পুলিশ সদর দপ্তর, ডিএমপিসহ পুলিশের সব ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম আসতে পারে। পাশাপাশি ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত পুলিশ সুপারদের নাম আসার সম্ভাবনা আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, মানবাধিকারের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তাহলে ভয়ের কিছু নেই। অতিরিক্ত কিছু না করলে বা বাড়াবাড়ি না করলে কিছুই হবে না।
পুলিশ সূত্র জানায়, মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার কথিত তালিকা যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছেন তাদের বিষয়ে খোঁজ নিতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এই নিয়ে পুলিশের দুটি বিশেষ ইউনিট কাজ শুরু করেছে। পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, একটি মহল পুলিশের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য কথিত তালিকা তৈরি করছে।
এ বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়াচ্ছে। নিজেদের স্বার্থে তারা ভুল তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়ছে। মার্কিন সরকার ভিসা নিষেধাজ্ঞার তালিকা প্রকাশ করেনি। অথচ বিভিন্ন ব্যক্তি এসব শেয়ার করছেন। র্যাব সাইবার মনিটরিং সেলের মাধ্যমে অভিযুক্তদের শনাক্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজ করছি। দেশের জন্য কাজ করছি। বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
এদিকে, রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনী এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের হাতে। তারপরও খুনোখুনি ও সংঘর্ষের ঘটনা যেন না ঘটে সেই জন্য ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অস্ত্রবাজদের ধরতে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হবে যেকোনো সময়।
তিনি বলেন, অন্য নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনটি খুবই জটিল হওয়ার আশঙ্কা আছে। আর এসবের জন্য পুলিশের মধ্যেও উৎকণ্ঠা আছে।
একই কথা বলেছেন কয়েকটি জেলার এসপিরা। তারা বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে যারা গুজব ছড়াচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মঙ্গলবার দুপুরে একটি নির্দেশনা এসেছে। একটি মহল এসব বিষয় পুঁজি করে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে দেশে অরাজকতা চালানোর পাঁয়তারা করছেন। সতর্ক থাকতে প্রতিটি জেলার সব থানা পুলিশকে সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।