
বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবে একটি মধ্যপন্থি, ধর্মনিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ এবং স্থিতিশীল দেশ। কিন্তু আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও ব্যাপক অনিয়ম ও সহিংসতা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপি, ব্যালট বাক্স ভর্তি করা এবং ভয়ভীতি দেখিয়েছিল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কথা বলার স্থান সংকুচিত হয়েছিল। খর্ব হয়েছিল বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মিডিয়া ও সুশীল সমাজের বলার স্বাধীনতাও।
গত বুধবার প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘২০২৩ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্টস’ শীর্ষক বার্ষিক এক প্রতিবেদনে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিচার বিভাগে স্বাধীনতার ঘাটতি রয়েছে। বিচারব্যবস্থার অন্যান্য স্তম্ভ যেমন পুলিশও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। দেশের বিচারিক কার্যক্রমের গতি কম এবং এ ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। সেই সঙ্গে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা থাকায় চুক্তি বাস্তবায়ন ও ব্যবসায়িক বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যাহত হয়।
‘২০২৩ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্টস’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনটি মূলত একটি দেশের ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো যাতে বিনিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সে লক্ষ্যেই প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে ১৬৫টির বেশি দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামগ্রিক পরিবেশ সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বাংলাদেশ অংশে দেশের উন্নয়নের প্রশংসার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও মানবাধিকারবিষয়ক বিভিন্ন সমালোচনাও তুলে ধরা হয়।
গত এক দশকে বিনিয়োগের বাধা অপসারণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করে বিদ্যুতের নিশ্চয়তা বৃদ্ধি করার কথাও এসেছে তাতে। কিন্তু অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, অর্থায়নের সীমিত সুযোগ, আমলাতান্ত্রিক বিলম্ব, শ্রম আইনের শিথিল প্রয়োগ ও দুর্নীতির কারণে এখনো বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। সরকার ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে চেষ্টা করছে। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগ নীতির এখনো পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি বলেও উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের আর্থিক খাত ব্যাংকের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে দেশে লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কমে ৩২.২ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। বিদেশি মুদ্রার এ সংকটের মধ্যে গত বছর বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারি ঘটে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১২.৮ বিলিয়ন ডলার, যার বেশির ভাগেরই হদিস নেই সরকারের কাছে।
যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অনেক সম্ভাবনার দিক আছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি, কৃষিসামগ্রী, প্রযুক্তি, অবকাঠামো, টেক্সটাইল, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাসামগ্রী, ই-কমার্স এবং স্বাস্থ্য খাতের একটি আকর্ষণীয় বাজার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের বড় ধরনের কোনো বৈষম্য নেই। তবে সরকার সাধারণত দেশীয় শিল্পকে গুরুত্ব দেয়। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে বড় ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে যত গ্যাস উত্তোলন হয়, তার ৫৫ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো করে। বাংলাদেশের কৃষি খাতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হিসেবে দেখছে দেশটি। বিশ্ববাজার থেকে বাংলাদেশ ২০২১ সালে প্রায় ১০ হাজার মিলিয়ন ডলারের কৃষিজ পণ্য আমদানি করেছে; যার ১০ ভাগই যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
দুদিনের নাটকীয়তার পর অবশেষে রাজপথেই সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম তিন সংগঠন। ২৩টি শর্ত দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপক্ষকেই সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
আজ শুক্রবার বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের কার্যালয়ের সামনে আর আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের সমাবেশ হবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে।
কর্মসূচি ঘিরে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ বলেছে, আগের মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করছে তারা।
রাজপথে মহাসমাবেশ করলে আওয়ামী লীগও রাজপথে শান্তি সমাবেশ করবে। এমন অঘোষিত এক দাবি ওঠায় জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল আওয়ামী লীগের সহযোগী ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে। তবে আওয়ামী লীগ মাঠে যেতে রাজি যদি বিএনপিও মাঠে সমাবেশ করে, সে শর্তে। সমাবেশ স্থান নিয়ে জটিল এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবারের সমাবেশের দিন পিছিয়ে যায়।
আগে ঘোষণা দেওয়া বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশ করার জন্য বিএনপি অনুমতি চেয়ে বুধবার পুলিশের সঙ্গে দেনদরবার, নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করে। বিএনপিকে নয়াপল্টনের পরিবর্তে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার বিকল্প দিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, কর্মদিবসে করলে সেই মাঠেই করতে হবে। অন্যথায় ছুটির দিনে করতে হবে। রাত পর্যন্ত এ নিয়ে দরকষাকষি করে শেষে বিএনপি কর্মসূচি পিছিয়ে শুক্রবার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
একইদিন বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ তারুণ্যের জয়যাত্রা সমাবেশের ঘোষণা দেয়। এর আগে যুবলীগের সমাবেশ থেকে বলা হয়েছিল, তারা ২৪ জুলাই সমাবেশ করবে। কিন্তু পিছিয়ে বিএনপির মহাসমাবেশের দিন করায় এ নিয়ে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়। বিএনপি সংঘাতের উসকানি দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ সংঘাতের আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে উল্টো বিএনপির বিরুদ্ধে দেশের অস্থিতিশীলতা তৈরির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে।
বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে মহাসমাবেশ করবে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে। অন্যদিকে শান্তি ও উন্নয়ন প্রচারে সমাবেশ করবে টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন।
ডিএমপির অনুমতি নিয়ে সমাবেশ স্থান জটিলতা দূর হলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিএনপি মহাসমাবেশ শেষে রাস্তায় বসে যেতে পারে গোয়েন্দা সংস্থার এমন তথ্যের বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবরে ভাবিয়ে তুলেছে আওয়ামী লীগকে। বিএনপি এমন কোনো পরিস্থিতির দিকে গেলে কী করবে আওয়ামী লীগ, সে সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতি মাথায় রেখে এগোতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলকে। তবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় মনে করে, বিএনপি বসে যাওয়ার মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না। করলে সেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া বিএনপির বসে পড়ার বিষয়টি মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দফায় দফায় বৈঠক করছে। সতর্ক নজর রেখেছে বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করার শেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বিএনপি। মহাসমাবেশ সফল করতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে গতকাল দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া সরকারবিরোধী বিএনপির সমমনা দলগুলো গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে পৃথক পৃথক স্থানে সমাবেশ করার কথা জানিয়েছে।
বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শুক্রবারের সমাবেশের কর্মসূচি পালন করব। আশা করি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইতিমধ্যে যাদের গ্রেপ্তার করেছে তাদের মুক্তি দেবে এবং সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের বাধা দেবে না।’
দুপুরে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘কর্মসূচিকে সামনে রেখে বাসাবাড়ি, হোটেলসহ বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে দলের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। কর্মসূচি ঘোষণা হলেই ধরপাকড় উদ্বেগের বিষয়।’
বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চ সূত্রে জানা গেছে, মহাসমাবেশ থেকে টানা কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা আছে বিএনপি ও সমমনাদের। ১০ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশ, অবস্থান, ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দিতে পারে দলগুলো। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কারণে কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত করে ২০ তারিখ থেকে আবার লাগাতার আন্দোলনে যাবে দলগুলো। তবে শরিকরা বিএনপিকে আলটিমেটাম দেওয়ার পরামর্শ দিলেও গত দুদিনের পরিস্থিতি দেখে সেটা নাও দেওয়া হতে পারে।
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সমাবেশ থেকে আমরা সর্বাত্মক আন্দোলনের ঘোষণা দেব।’
দিনভর নয়াপল্টনে যা ঘটেছে : গত বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ জলকামান ও এপিসি নিয়ে অবস্থান নেয়। দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা মেনে নেতাকর্মীরা কার্যালয় ছেড়ে চলে যান। এরপর গতকাল সকালে কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। এ ছাড়া কার্যালয়ের পাশে প্রধান সড়কের ওপর অবস্থান নেয়। প্রধান সড়কের পাশাপাশি সেখানকার একটি গলিতেও অসংখ্য পুলিশ সদস্যকে অবস্থান করতে দেখা যায়। এ ছাড়া একটি রায়ট কার (এপিসি), জলকামান ও প্রিজনভ্যানও বিএনপি অফিসের সামনে দেখা যায়। সেখানে দায়িত্বরত পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) টিটো বলেন, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি যাতে না ঘটে, সেজন্য তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
এ সময় কার্যালয়ের সামনে দলটির বেশ কিছু নেতাকর্মীকে দেখা গেছে। তবে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে দেখলেই পুলিশ তাদের সরিয়ে দিচ্ছিল। পরে জ্যেষ্ঠ নেতারা এসে কার্যালয়ের সামনে থাকা নেতাকর্মীদের চলে যেতে বলেন।
নয়াপল্টনে সমাবেশের ঘোষণা বিএনপির : এর আগে গত বুধবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল সভা হয়। সভা শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পুলিশের অনুরোধ ও জনগণের ভোগান্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে আমরা আমাদের সমাবেশ বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি পুলিশ আমাদের নয়াপল্টনে কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে দেবে।’
শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ : একইদিন শান্তি ও উন্নয়ন প্রচারের সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা। সমাবেশস্থলের মঞ্চ, মাইক ও সাজসজ্জার কাজ করেছে আয়োজক তিন সংগঠন। ঢাকার আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে নেতাকর্মীর সমাবেশে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শান্তি সমাবেশের প্রস্তুতির পাশাপাশি বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়েও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকায় বসে যেতে পারে এমন খবর প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিভিন্ন পদে থাকা ছয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এমন কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে। তাদের প্রত্যাশা, ১০ ডিসেম্বরের মতো এবারও কর্মসূচি নিয়ে নির্বিঘেœ ফিরে যাবে বিএনপি। অন্য কোনো পথে গেলে হেফাজতের মতো বিদায় করার প্রস্তুতি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও আছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি যদি অবস্থান কর্মসূচি দেয়, তাহলে আমাদের কিছু করণীয় নেই। সেটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখবে। তাদের (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) যদি কোনো সহায়তার দরকার হয়, তাহলে আমাদের কর্মসূচি থেকে নেতাকর্মীরা সহায়তা করবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে সমাবেশের নামে শাপলা চত্বরে অবস্থান করে তা-ব চালিয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। কিন্তু সেদিন সরকার তাদের কঠোর হস্তে দমন করে রাতের মধ্যে ঢাকা খালি করতে সক্ষম হয়েছে। এখন বিএনপি যদি সমাবেশের নামে ঢাকায় অবস্থান নিতে চায়, তাহলে তাদের অবস্থা হবে হেফাজতের মতো।
দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘বিএনপি কী করবে, সেটা তো আমরা জানি না। তারা যদি আইনশৃঙ্খলা বিপন্ন করার চেষ্টা করে, মানুষের যাতায়াত ও জনজীবন ব্যাহত করার পাঁয়তারা করে, সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’
পুলিশের ২৩ শর্ত : গতকাল ডিএমডির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সমাবেশের অনুমতির কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, দুই দলকে ২৩টি শর্তে সমাবেশে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দলগুলোর আবেদন অনুযায়ী পছন্দের স্থানে সমাবেশ আয়োজন করতে পারবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বিএনপি কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে রাজারবাগ মোড় পর্যন্ত সমাবেশ করতে পারবে। আর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে মহানগর নাট্যমঞ্চ পর্যন্ত সমাবেশ করবে। এ সীমানার মধ্যেই মাইক স্থাপন করতে পারবে তারা। সমাবেশে ব্যাগ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আসা যাবে না। সমাবেশে শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
ডিএমপির শর্তের মধ্যে আরও আছে, নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে। সমাবেশস্থলে চারদিকে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। সমাবেশে আগতদের মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, শব্দদূষণ রোধে সীমিত আকারে মাইক ব্যবহার করতে হবে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আসতে পারে এমন ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। ডিএমপির কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তদন্ত করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে মামলার আসামি গ্রেপ্তার করছি।’
তারুণ্যের জয়যাত্রা কর্মসূচি নিয়ে বিরোধীদের আন্দোলন ঠেকাতে মাঠে আওয়ামী লীগ। নিজেদের কৌশল নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পাভেল হায়দার চৌধুরী
দেশ রূপান্তর : আওয়ামী লীগ-বিএনপির আজকের কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তা রয়েছে। এ কর্মসূচি ঘিরে আপনার কোনো দুশ্চিন্তা আছে?
মাহাবুবউল আলম হানিফ : আমি মনে করি যে, কোনো ধরনের সংঘাত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ যারা রাজনীতি করে, দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে সংঘাত-সংঘর্ষ ঘটে এমন রাজনীতি পরিহার করা উচিত। আমি মনে করি, এ যুগে এসে সংঘাত-সংঘর্ষের রাজনীতি করে কোনো দলই টিকে থাকতে পারবে না। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণ গত ১৮ ও ১৯ তারিখের কর্মসূচিতে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে এতে জনগণের মধ্যে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। তবে সেই ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ শক্ত অবস্থানে আছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কোনো ধরনের সংঘাত বা সংঘর্ষমূলক কর্মকাণ্ড বা দেশকে অস্থিতিশীলতা করার পাঁয়তারা হলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।
দেশ রূপান্তর : আওয়ামী লীগ দাবি করে শান্তি সমাবেশ। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয় সংঘাত বাধানোর জন্য। আপনি কী মনে করেন।
হানিফ : আওয়ামী লীগ আগে থেকেই মাসব্যাপী ধারাবাহিক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। এটি নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ধারাবাহিক এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। পাশাপাশি আগস্ট মাসে আমাদের জাতীয় শোক দিবস আসছে। সে হিসেবে শোকের মাসেও মাসব্যাপী কর্মসূচি আছে। তা ছাড়াও সংবিধান অনুযায়ী এ বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছর জানুয়ারির প্রথমদিকে জাতীয় নির্বাচন। আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী। ফলে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আমরা মাঠে থাকছি। নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের ঘনঘন কর্মসূচি পালন করতে হয়। সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা, দলের অন্য কর্মকাণ্ডগুলো জনগণের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরা। কর্মসূচি থাকতেই পারে। আমি মনে করি না, এতে কোনো সমস্যা থাকতে পারে।
দেশ রূপান্তর : একই দিন আওয়ামী লীগের বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে ও নয়াপল্টনে বিএনপি তাদের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছে। মাত্র এক কিলোমিটারের ব্যবধানে দুটি কর্মসূচিই শান্তিপূর্ণ হয়েছে। জনগণের কাছে প্রশংসিতও হয়েছে। সামনের দিনের কর্মসূচিগুলোও কি শান্তিপূর্ণ থাকবে?
হানিফ : আমরা প্রত্যাশা করি, নির্বাচন পর্যন্ত যত কর্মসূচি থাকবে সেগুলো শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হবে। আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা আছে, শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা হয় সেটা প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন। আওয়ামী লীগ আশা করে, ভবিষ্যতেও সব রাজনৈতিক দল তাদের কর্মসূচিগুলো এভাবে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবে। তবে কোনো রাজনৈতিক দল যদি রাজনৈতিক কর্মসূচির আড়ালে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে, পরিকল্পনা রাখে সে ক্ষেত্রে সমস্যা হতেই পারে।
দেশ রূপান্তর : বিএনপি আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করে এমন অভিযোগ আওয়ামী লীগ বরাবরই করে আসছে। আজকের কর্মসূচিতে তেমন কোনো ঘটনা ঘটলে তা মোকাবিলা কীভাবে করবেন? আপনাদের পরিকল্পনা কী?
হানিফ : এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলোও মাঠে প্রস্তুত থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করবে। কোনো দল যদি রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করে, সেটা যদি আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠন চিহ্নিত করতে পারে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করবে। আপাতত পরিকল্পনা হলো মাঠে থাকা। আইনশৃঙ্খলার কাজে যারা থাকবেন তাদের সহযোগিতা করা।
দেশ রূপান্তর : বিএনপি গত ১৪ বছর যে গতিতে আন্দোলন করেছে এবং মাঠে থেকেছে সে তুলনায় এবারের আন্দোলনে গতি কি একটু বেশি মনে হয় আপনার? তারা কি জনসমর্থন পেতে শুরু করেছে, যদি এমনটি হয়, তাহলে এর কারণ কী থাকতে পারে বলে মনে করেন?
হানিফ : বিএনপির সঙ্গে এখন সরকারবিরোধী একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্তের ষড়যন্ত্রের কথা শোনা যাচ্ছে। যেটা বিভিন্নভাবে গণমাধ্যমে বারবার উঠে এসেছে। তা ছাড়া আমরা দেখতে পাচ্ছি বিএনপি নেতারা বিভিন্ন দূতাবাসে দৌড়ঝাঁপ করছেন। তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে দৌড়াঝাঁপের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে বিএনপি ষড়যন্ত্রের কাজটাই করছে। বিএনপির তৃণমূল নেতাদের ধারণা হয়েছে, বিদেশি শক্তির মাধ্যমে তারা সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসবে। এ ধরনের একটা মিথ্যা-কাল্পনিক ধারণা নিয়েই তৃণমূল নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে বিএনপি। কিন্তু দলটির মনে রাখা উচিত, ষড়যন্ত্র কখনো সফল হয় না।
দেশ রূপান্তর : আওয়ামী লীগ কি মনে করে বিএনপির আন্দোলনের গতি বাড়িয়েছে বিদেশিরা?
হানিফ : বিদেশি শক্তি তাদের সমর্থন করছে এটা আমার মনে করার বিষয় না, এটা গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় আসছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, হঠাৎ করে দেশে এমন কী সমস্যা হলো দু-এক দিন পরপরই দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল কর্মসূচি পালন করতে হবে। মূলত বিএনপি দেশকে বিভিন্নভাবে অস্থিতিশীল করতে চায়। এজন্য দফায় দফায় দূতাবাসগুলোতে যায়। তা ছাড়া আর কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে? বিদেশি দূতাবাসগুলোর এখানে দায়িত্বটা কী? দায়িত্ব হলো, দেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে সরকারকে কীভাবে সাহায্য-সহযোগিতা দিতে পারে, উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে তাদের চিন্তা-চেতনার কথাগুলো সরকারকে বলতে পারা। তা না করে রাজনৈতিক দলের নেতাদের ডেকে সপ্তাহে দু-তিনবার করে বৈঠক করে দূতাবাস অফিসে, বাসভবনে। এটা তো মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করে।
দেশ রূপান্তর : বিএনপির এক দফার আন্দোলন আওয়ামী লীগকে চাপে ফেলেছে? আপনার কী মনে হয়?
হানিফ : আন্দোলন দিয়ে কী হয়; এক দফা আন্দোলন হোক আর ১৪ দফা আন্দোলন হোক, কী হবে আন্দোলনে। এটা কী জাতীয় পার্টির সরকার? এরশাদের সরকার? এটা আওয়ামী লীগ সরকার, শেখ হাসিনার সরকার। আওয়ামী লীগ কী অন্য কোনো দলের মতো যে যখন মন চাইবে ধাক্কা দেবে, আর ধাক্কা দিলে পড়ে যাবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি সম্পর্কে জানতে হবে। এসব এক দফা, পাঁচ দফা, দশ দফা দিয়ে আওয়ামী লীগের কিচ্ছু করতে পারবে না। এসব দিয়ে সরকারের ওপর কোনো চাপই সৃষ্টি করতে পারবে না। জনগণের ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ বিশ্বাসী। জনগণ যতক্ষণ সরকারের সঙ্গে আছে ততক্ষণ সরকারের সমস্যা দেখছি না।
দেশ রূপান্তর : আওয়ামী লীগ কী মনে করছে গত ১৪ বছরের আন্দোলনের মতো বিএনপির এবারের আন্দোলনও দিক হারাবে?
হানিফ : বিএনপি এখন যে আন্দোলন আন্দোলন করছে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াও এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বহু হাঁকডাক দিয়েছেন। বারবার আন্দোলন আন্দোলন বলে রাস্তায় নেমেছেন। ২০১৩ সালে এক দফা দিয়ে সরকার পতন আন্দোলন করেছেন, সেটার পরিণতি কী হয়েছে? সেটা ব্যর্থ হয়েছিল। ২০১৫ সালেও সরকার পতন আন্দোলন করেছে, ৯৩ দিন অবরোধের নামে পেট্রোল দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন। সেই আন্দোলনও তো ব্যর্থ হয়েছিল। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আন্দোলন করলে সেই আন্দোলনে কখনো সফলতা আসবে না। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দিয়ে কখনো সরকার পতন করা যাবে না। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে সেটার পরিণতি ভয়াবহ হয়, সেটা বিএনপি নেতারা ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছেন।
মাহাবুবউল আলম হানিফ
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ
এক দফা দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে বিএনপি। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কৌশল ও গতিপ্রকৃতি নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিক সাফি
দেশ রূপান্তর : মহাসমাবেশ নিয়ে এক ধরনের নাটকীয়তা হলো। শেষ পর্যন্ত অনুমতি পাওয়া গেছে। সমাবেশ কেমন হবে মনে করছেন?
মির্জা আব্বাস : যদি সরকার বাধা না দেয় তাহলে সমাবেশ ভালো হবে। ওরা এখন অজুহাত খুঁজছে যেন সমাবেশ করতে না পারি। আগামীকালের (আজকের) মহাসমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ।
কোনো চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র, সহিংসতা করে মহাসমাবেশ নস্যাৎ করা যাবে না। কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাব, আমাদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার ব্যবস্থা করবেন। অন্যথায়, দায়ভার বহন করতে হবে সরকার এবং যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের। এ আন্দোলন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। মানুষের যে উত্থান এটাকে রুখে দেওয়ার জন্য তারা (সরকার) একটা নতুন চক্রান্ত শুরু করেছে। পাল্টা কর্মসূচির মাধ্যমে তারা (সরকার) পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চাইছে।
দেশ রূপান্তর : অনেক ঘটনার পর নয়াপল্টন সমাবেশের সিদ্ধান্ত হয়েছে?
মির্জা আব্বাস : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ইতিবাচক ভূমিকার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তারা আগামীকাল (আজ) নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের নিরাপত্তা বিধানে সহযোগিতা করবেন। একই সঙ্গে আশা করি সমাবেশে আসার পথে জনগণ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের কোনো প্রকার বাধা দেবে না।
দেশ রূপান্তর : বিএনপির পক্ষ থেকে রাজপথ দখলের কথা বলা হচ্ছে? বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন?
মির্জা আব্বাস : সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নানান চেষ্টা করছে। তারা বলে, বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার। নির্বাচন হবে কিন্তু আমাদের জয়ী হতে হবে। সেটার জন্য তারা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় রদবদল করছে। তাদের দিয়ে ভোটারবিহীন নির্বাচন করে নেবে। এত সহজ হবে না, জনগণ এটা বারবার মেনে নেবে না। মানুষ তাদের ন্যূনতম অধিকার, ভোটাধিকার আদায়ের জন্য জনগণ যদি রাজপথ দখল করে প্রতিবাদ জানায়, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব তাদের সমর্থন জানানো। আমরা তা জানাচ্ছি, সবসময়ই জানাব।
দেশ রূপান্তর : সরকারের দাবি আপনারা সংঘাত সৃষ্টি করতে চান?
মির্জা আব্বাস : আপনারা দেখেছেন, দেশবাসী দেখেছে, গত বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে সারা দেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে প্রতিহত করে শান্তি মিছিলের নামে বিশৃঙ্খলা করেছে। একজনকে হত্যা ও অনেককে আহত করার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা ১৫ বছর ধরে নিপীড়নের শিকার।
দেশ রূপান্তর : তারা তো বলে আপনারা অগ্নিসন্ত্রাস করেন?
মির্জা আব্বাস : ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনে ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সে সময় যত রকম জ¦ালাও-পোড়াও আছে; ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে আগুন, শেরাটনের সামনে বাসে গান পাউডার দিয়ে ১১ জনকে হত্যাসহ অসংখ্য ঘটনা ঘটিয়েছে। একই ধারাবাহিকতা ২০১৩ থেকে ’১৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আগুন সন্ত্রাস করে বিএনপির নাম দিয়েছে। আওয়ামী লীগই অগ্নিসন্ত্রাসের হোতা, জন্মদাতা।
দেশ রূপান্তর : বিএনপির সমাবেশ, আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনেরও সমাবেশ কাল (আজ)। বিশৃঙ্খলা হতে পারে বলে মনে করছেন কি?
মির্জা আব্বাস : আমরা শান্তিপূর্ণ মিটিং-মিছিল করেছি। কোনোরকম গোলোযোগ হয়নি। বরং তারাই গোলযোগ তৈরি চেষ্টা করছে। আমাদেরও প্রশ্ন, কেন? আমরা যেদিন মিছিল-মিটিং করি, আপনারা সেদিন দিয়েন না। আপনারা যেদিন করবেন, আমরা দেব না। আর তা না করে আওয়ামী লীগ আমাদের কর্মসূচির দিনই কর্মসূচি ঘোষণা করে। কেন? এটা আর সহ্য করা হবে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা জেল খাটতে শিখেছে, মৃত্যুবরণ করতে শিখেছে, মিছিল করতে শিখেছে। এবার অত্যাচার আর সহ্য করবে না, জবাব দেবে।
দেশ রূপান্তর : মহাসমাবেশের পর আপনাদের কী কর্মসূচি আসছে?
মির্জা আব্বাস : জনগণের গণতন্ত্র, তাদের কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার জন্যই আমাদের আন্দোলন। গাবতলী থেকে রায়সাহেব বাজার মোড়, আবদুল্লাহপুর থেকে রায়সাহেব বাজার মোড় দুটি পদযাত্রা হয়েছে। আমার আগে কখনো এরকম অভিজ্ঞতা ছিল না। সারা বিশ্বে এত বড় মিছিল কেউ কখনো করতে পারেনি। এরপর তারুণ্যের সমাবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতি। আগামীতে এমন অনেক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি থাকবে।
দেশ রূপান্তর : এ আন্দোলনের শেষ পরিণতি কী?
মির্জা আব্বাস : নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন আদায়ে সরকারকে বাধ্য করা ছাড়া এই আন্দোলন শেষ হবে না। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আমি আমার এলাকা থেকে যখন মিছিল বের করি, তখন তার পতন হয়েছিল। এবারও প্রয়োজনে আমার এলাকা থেকে আমার নেতৃত্বে প্রথম মিছিলটি বের হবে। সরকারের শেষ পরিণতি না দেখা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাব।
দেশ রূপান্তর : সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের ওপর বিদেশিদেরও চাপ রয়েছে। বিএনপি কী মনে করছে?
মির্জা আব্বাস : বাংলাদেশ নিয়ে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এখানে কী হচ্ছে, তা তারা জানতে চায়। ফলে তারাও কথা বলছে। সরকার বুঝতে পারছে চারদিকে থেকে তাদের ক্ষেত্র ছোট হয়ে আসছে। তারা যে চলে যাবে, সরকারের যে পতন ঘটবে, এটা আশঙ্কা করেই তারা কার্যক্রম চালাচ্ছে। অত্যাচার-জুলুম বাড়িয়ে দিয়েছে।
দেশ রূপান্তর : আপনাদের কর্মসূচি কি শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক হবে?
মির্জা আব্বাস : সারা দেশেই আমাদের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। তবে এটা স্বাভাবিক, সব ক্ষেত্রে রাজধানীই সবার মনোযোগ আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে। তাই কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীতেও আমাদের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এতে অংশ নিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নগরবাসী রাস্তায় নেমে আসছে। তারা বলছে, আমরা এ সরকারকে চাই না।
দেশ রূপান্তর : আপনি কি মনে করেন নিরপেক্ষভাবে বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে সবপক্ষ সহযোগিতা করবে?
মির্জা আব্বাস : আমাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে, তার প্রমাণ আমরা বারবার দিয়েছি। এবার জোর দিয়ে বলছি, আজকের সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সদস্যদের বলব, আমাদের নিয়ে চিন্তা না করে ক্ষমতাসীনদের পাহারা দেন। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে, মামলা দিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বানচাল করতে চায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষ থাকলে, হামলা, মামলা না হলে আমাদের জনসমাবেশগুলো মহাসমাবেশে পরিণত হবে।
দেশ রূপান্তর : যদি সরকার ২০১৪ ও ’১৮ সালের মতো আগামী সংসদ নির্র্বাচন করতে চায়, তখন আপনাদের করণীয় কী হবে?
মির্জা আব্বাস : সর্বশেষ ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে তাদের (আওয়ামী লীগের) ভোট পড়েছে ৮-১০ শতাংশ। বাকি ভোটার ভোট দেয়নি। মানে বাকি ৯০ ভাগ ভোট বিএনপির। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তারা ১০টি আসনও পাবে না। এজন্যই ওবায়দুল কাদেররা বলেন, সংবিধানের বাইরে তারা একচুলও সরবেন না। খুব ভালো কথা। আপনাদের কথায় স্থির থাকেন। আমরাও বলি, সংবিধানের বাইরে আমরাও এক পা যাব না। তবে খায়রুল হকের (এবিএম খায়রুল হক) সংবিধান না। বাংলাদেশের অখ- সংবিধান, যেটা কাটাছেঁড়া করা হয়নি। যে সংবিধান থেকে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়নি। ওবায়দুল কাদেরদের বলব, খেলা কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। এই খেলা শেষ করে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।
মির্জা আব্বাস
স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। দুদিন ধরে সমাবেশ নিয়ে ঘটে গেছে নাটক। এ নিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিরও আশঙ্কা করছেন। তবে যেকোনো পরিস্থিতি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রস্তুত পুলিশ প্রশাসন। এদিকে মহাসমাবেশ সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় বিএনপির বেশ কিছু নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুলসহ আশপাশের কয়েকটি আবাসিক হোটেল থেকেই অন্তত ৩০০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী দুই জেলা নারায়ণগঞ্জ ও সাভারেও ধরপাকড় হয়েছে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে।
পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর ও ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতনরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক ডিএমপি কমিশনারসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতনদের নিয়ে বৈঠক করেছেন গতকাল রাতে। যেকোনো পরিস্থিতি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এসব বৈঠকে।
এদিকে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে অসুস্থ ছাড়া পুলিশের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আশপাশের জেলা থেকে বাড়তি পুলিশ আনা হচ্ছে। ঢাকার ৫০টি থানার ওসিসহ সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। থানার পাশাপাশি ডিবিসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদেরও আলাদাভাবে বার্তা দেওয়া হয়েছে। বার্তা পেয়ে পুলিশ বাসাবাড়ি, হোটেল ও যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে। এমনকি বিএনপি ও জামায়াত সন্দেহে আটক করা হচ্ছে।
বিএনপি অভিযোগ করেছে, দলের নেতাকর্মীদের বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গত দুদিনে সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এমনকি অভিযানের সময় স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করা হচ্ছে। ঢাকায় প্রবেশ করা রাস্তায় যানবাহন আটকে ব্যাপক তল্লাশি করা হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ লোকজন। তা ছাড়া কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আটক বাণিজ্যেরও অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি আছে, তাদের ধরা হচ্ছে।
জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেজন্য আমরা কাজ করছি। অহেতুক কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। বিএনপির অভিযোগ আসলে সঠিক না।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে যেন হয় সেদিকেই আমরা বিশেষ নজর দিচ্ছি। আমরা কাউকে কোনো ধরনের সুযোগ দিচ্ছি না। আইনের মধ্যে যা আছে তাই করা হচ্ছে। সমাবেশ নিয়ে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে হয়রানি করা হচ্ছে না। তবে কেউ যদি আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করে তাহলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, বিএনপি সমাবেশের নামে কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খল করার চেষ্টা করলে কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। তিনি আরও বলেন, ইউনিটপ্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে থেকে বাড়তি পুলিশ আনা হচ্ছে। জলকামানসহ সব ধরনের সরঞ্জামদ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে তা সত্য। রুটিন অনুযায়ী অভিযান চলছে। তবে নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। এজন্য পুলিশ সদস্যদের সতর্ক করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগরে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকা শহর জুড়ে বিএনপির ৫০টি থানা এলাকায় অভিযান চলছে। থানা-পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশও কাজ করছে। আবার আমরা থানা-পুলিশকে সহযোগিতা করছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ মাঝেমধ্যে বিশেষ অভিযান চালায়। এরই অংশ হিসেবে অভিযান চলছে। ঢাকার বাইরেও পুলিশের বিশেষ অভিযান চলছে। টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেন, ঘাটাইল উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি নাসির উদ্দিন, ধনবাড়ী উপজেলার মুসুদ্দি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান ও কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সদস্য সোনা মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা বিএনপির সমাবেশে যাওয়ার কথা ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিএনপির সহসভাপতি ও ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মীর আশরাফ আলী আজম চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাকে বুধবার রাতে ডিবি পুলিশ আটক করেছে। আটকের সময় পুলিশ তাকে নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ করেছে স্বজনরা।
পুলিশ সূত্র জানায়, মিরপুর থানা-পুলিশ পাংশা উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি সজিব রাজা, ছাত্রদল নেতা ইমরান হোসেন, কলিমহর ইউনিয়ন ছাত্রদলের জাহিদ হোসেন, মৌরাট ইউনিয়ন ছাত্রদলের কনকসহ অন্তত ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। কলাবাগান থানা-পুলিশ জয়পুরহাট জেলা শাখা জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সদস্য সচিব মঞ্জুরে মওলা পলাশ ও ছাত্রদল নেতা মশিউর রহমান খন্দকারকে (এ্যালট) আটক করেছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, কর্মসূচিস্থল, আশপাশসহ ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশি পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকে মাঠে নেমেছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য। ইতিমধ্যে নজরদারি শুরু করেছেন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। পুলিশের সাইবার ইউনিট চোখ রাখছে বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর। কেউ যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য নজরদারি কয়েক ধাপ বাড়ানো হয়েছে। কোনো ঘটনা ঘটলে র্যাব, বিজিবি এবং আনসারসহ মাঠে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে অপারেশনে যাবেন।
নিরাপত্তা জোরদার : দুই সমাবেশ ও আশুরা উপলক্ষে নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি মাঠে মোতায়েন থাকবে দাঙ্গা পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন আনসার। ঢাকার বাইরে ঢাকা রেঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও ঢাকায় আনা হয়েছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিবিজি) পয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য পিলখানায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ডিএমপি প্রয়োজন অনুভব করলে তারাও মাঠে নামতে প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক রায়ট কার, এন্টিপার্সোনেল কার (এপিসি), জলকামান, আর্মড ক্যারিয়ার ভ্যান, পর্যাপ্ত রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসসহ দাঙ্গা দমনের যাবতীয় প্রস্তুতি রেখেছে পুলিশ। গতকাল সকাল থেকেই নয়াপল্টন আশপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ। এ বিষয়ে ডিএমপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, জনসাধারণ জানমালের নিরাপত্তা ও সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়াতে যা যা নিরাপত্তার প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন সবই নেওয়া হয়েছে।
গণপরিবহনে তল্লাশি : বিএনপির মহাসমাবেশ ধরে নিয়ে বুধবার দুপুর থেকেই রাজধানীর গণপরিবহনগুলোতে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। এ কারণে অনেক এলাকায় গণপরিবহন সংখ্যা কমেছে। গতকাল সপ্তাহের কর্মদিবসের শেষ দিনেও রাজধানীর সড়কে গণপরিবহন ছিল কম। প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যাও কাম দেখা গেছে। মিরপুর থেকে মতিঝিল রুটের শিকড় পরিবহনের বাসচালক বশির জানান, কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে পুলিশ মিরপুর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত তিনবার তল্লাশি করেছে পুলিশ। মামলাও দিয়েছে। আসলে পুলিশ চাইছে আমরা যাতে গাড়ি না চালাই। রাজধানীর প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, বাবুবাজার, বসিলা ব্রিজ, গাবতলী, আমিনবাজার, আবদুল্লাপুর, আমুলিয়া মডেল টাউন সড়কে চেকপোস্ট বসায়। সব গাড়িতে তল্লাশির কারণে এসব সড়কে যানজট দেখা দেয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ জানান, সমিতি মালিকদের শহর ও শহরের বাইরের বাস বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তিনি বলেন, ‘বিএনপি বাধা না দিলে আমাদের গাড়ি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করবে। তারা সহিংস ঘটনা না ঘটালে এটা চালু রাখা হবে। প্রশাসন বা দলের পক্ষ থেকে গাড়ি বন্ধ রাখার চাপ নেই।’
রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার তথ্য : নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, দৈনিক বাংলা, শান্তিনগর ও পুরানা পল্টন এলাকার একাধিক রেস্তোরাঁ মালিক জানান, গতকাল রাতে পুলিশ গিয়ে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিতে বলে। অনেক রেস্টুরেস্ট থেকে লোকজনকে বের করে দেয়। শান্তিনগরের একজন রেস্তোরাঁ মালিক জানান, পুলিশ এসে নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কথা বলে রাত ১০টার দিকে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে পল্টন থানার ওসি মো. সালাহউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম কোনো তথ্য আমার জানা নেই।
শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করলে ব্যবস্থা : রাজনৈতিক দলের সমাবেশ করতে কোনো বাধা নেই মন্তব্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, জানমালের ক্ষতি করলে, ভাঙচুর ও জন শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করলে নিরাপত্তা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। গতকাল মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস-২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, দুই দল কেন একই দিনে সমাবেশ করছে সেটা রাজনৈতিক দলের নেতারা বলতে পারবেন। এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু রাখার কাজ আমার।
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানান, ঢাকার সমাবেশকে ঘিরে রামপালে বিএনপির ৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি ৩০ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জনের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা হয়েছে। বুধবার রাতভর রামপালের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের ধরা হয়।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ দলটির অঙ্গসংগঠনের চারজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে জেলা বিএনপি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল বলেন, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে জেলার বিভিন্ন স্থানে এবং বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। মহাসমাবেশ বানচাল করার জন্য পুলিশ নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে যাতে কেউ সমাবেশে যোগ দিতে না পারে। এরপরও জেলা থেকে প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে যোগদান করার জন্য ঢাকায় গিয়েছে। এ ছাড়া আরও ৪০ হাজার নেতাকর্মী যাতে সমাবেশে যেতে না পারে এজন্য অভিযান চালাচ্ছে। এ ছাড়া সড়ক ও মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়েও তল্লাশি করা হচ্ছে।
লক্ষ্ম ীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ¥ীপুরে পুলিশ সে ঙ্গ বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের দায়ের হওয়া দুই মামলায় কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিসহ বিএনপির ১৯ নেতা-কর্মীকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
ফেনীতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার: ঢাকায় মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা ফেনী জেলা বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় জমায়েত হওয়া ফেনীর অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল) ।
দিনাজপুর সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামের মোজাম্মেল হক বাড়ির সামনে ৬২ শতাংশ জমিতে আট বছর আগে লিচুর বাগান করেছেন। পাঁচ বছর ধরে ভালো ফলন পাচ্ছেন। ৪১টি গাছের এই বাগান থেকে কয়েক বছর ধরেই মৌসুমপ্রতি তিন-চার লাখ টাকার লিচু বিক্রি করে আসছিলেন। কিন্তু এবার বিক্রি করতে পেরেছেন ৭০-৭৫ হাজার টাকার লিচু।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মোজাম্মেল হকের অভিযোগ, তার গ্রামের রাইস মিল বা চালকলের ছাই উড়ে এসে বাগানে পড়ছে। এতে করে লিচুগাছের পাতায় ছাইয়ের পুরো আস্তরণ সৃষ্টি হচ্ছে। গাছ ঠিকমতো পুষ্টি না পাওয়ায় লিচুর উৎপাদন কমে গেছে।
শুধু আউলিয়াপুর নয়, সদর উপজেলার পুলহাট, মাসিমপুর, করিমপুর, হামজাপুর, উলিপুর, করিমুল্লাহপুর, সৈয়দপুর, শিকদারগঞ্জ গ্রামের লিচুচাষিদের একই অভিযোগ, চালকলের ছাই তাদের সর্বনাশ করছে।
দিনাজপুরের সুস্বাদু লিচুর খ্যাতি আছে আন্তর্জাাতিক পর্যায়েও। দিনাজপুর দেশের শীর্ষ ধান উৎপাদনকারী জেলা হিসেবেও পরিচিত। এ কারণে জেলার যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ধানকল।
চালকলের ছাই যাতে বাতাসে ছড়াতে না পারে, সে জন্য ‘সাইক্লোন এয়ারলক’ ব্যবহারের আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এতে খরচ হয় মাত্র ২ লাখ টাকা। কিন্তু চালকলের মালিকরা খরচ বাঁচাতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন না। তার খেসারত দিতে হচ্ছে লিচুচাষিদের। জেলা হটিকালচার সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে দিনাজপুরে উৎপাদিত লিচু বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৯০০ কোটি টাকার। পরের বছর কমে হয় ৭০০ কোটি টাকা। চলতি বছর সেটি নেমে এসেছে ৪০০ কোটি টাকায়।
সবুজ পাতায় কালো ছাই : সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লিচুর মৌসুম শেষ হওয়ার পর গাছে গাছে এসেছে নতুন পাতা। কিন্তু সেগুলো সবুজ নয়। ছাইয়ের আস্তরণ পড়ে কালচে হয়ে গেছে। এমনকি ডালেও জমাট বেঁধে আছে ছাই।
এলাকাবাসী বলছিলেন, চালকলের আশপাশের বাসিন্দাদের সাবধানে চলাফেরা করতে হয়। কারণ যেকোনো সময় চোখে এসে পড়তে পারে ছাই। বাড়িঘর প্রতিদিন পাঁচ-ছয়বার ঝাড়– দিতে হয়।
দিনাজপুর চালকল মালিক গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ধান ভাঙানোর কারখানা রয়েছে প্রায় ৩ হাজার, স্বয়ংক্রিয় কারখানা আছে প্রায় ২০০টি।
সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের ইদ্রিস আলী চালকল স্থাপনে কারিগরি বিষয়ে সহায়তা করেন। বিভিন্ন এলাকায় ১০০টির বেশি চালকল স্থাপনে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। ইদ্রিস এই প্রতিবেদককে জানান, জেলার চালকলের অধিকাংশেই ‘সাইক্লোন এয়ারলক’ নেই। তিনি বলেন, একটি সাইক্লোন এয়ারলক তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ২ লাখ টাকা। কিন্তু মালিকরা সেই টাকা খরচ করতে চান না। কারণ একটি কারখানায় গড়ে প্রতিদিন ৩০-৪০ ট্রলি ছাই বের হয়। এয়ারলক বসালে সেখানে জমা হওয়া ছাই সরানোর জন্য শ্রমিকের প্রয়োজন। পাশাপাশি ছাই রাখার জায়গাও লাগে। তিনি দাবি করেন, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ৯৫ শতাংশ ছাই বাতাসে না উড়ে কারখানায় থেকে যেত।
আউলিয়াপুরের মেম্বার মোজাম্মেল হক বাতাসে ছাই ওড়ার সমস্যা ছাড়াও পানি দূষিত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরলেন। তিনি বলেন, ‘চালকলের দূষিত পানি খোলা জায়গায় ছেড়ে দেওয়ায় মাটি দূষিত হচ্ছে, দূষিত হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি। যে কারণে বিশুদ্ধ পানিও পাচ্ছি না। টিউবওয়েল চাপলে পানির সঙ্গে ধানের তুষ উঠে আসছে। প্রশাসন এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে আমরা খুবই সমস্যায় পড়ব।’
সদর উপজেলার মাসিমপুর গ্রামের লিচুচাষি হাসিনা বেগম বলেন, ‘প্রতি বছর আমার বাগান থেকে আড়াই-তিন লাখ টাকার লিচু বিক্রি হলেও এবার সোয়া লাখ টাকার লিচু বিক্রি হয়েছে। সামনের বছর হয়তো লিচু বিক্রি আরও কমে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় লিচুর গাছ কেটে খড়ি বানাতে হবে।’
একই গ্রামের কৃষক আকরাম আলীও তার বাগানে ফলন কমে যাওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, চালকলের ছাইয়ের কারণে গাছ ঠিকমতো পুষ্টি পায় না। এ বছর বৃষ্টিও কম হয়েছে। বৃষ্টি বেশি হলে পাতার ছাই পানির সঙ্গে ধুয়ে যেত।
শিকদারগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলম বলেন, ‘ছাইয়ের কারণে শুধু গাছই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ছাই উড়ে মানুষের চোখে এসে পড়ছে। বাসাবাড়ির আঙিনা, বারান্দায় পড়ছে। এমনকি খাবার পানিতেও পড়ছে।’
জেলার বিরল উপজেলার মাধববাটী গ্রামের লিচুচাষি শরিফ হোসেনেরও একই অভিযোগ।
দিনাজপুর সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের পল্লীচিকিৎসক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এই এলাকার আশপাশে বহু চালকল। ছাই চোখে পড়ার কারণে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন মানুষ আমার কাছে আসে। আমি তাদের বিভিন্ন ধরনের ড্রপ দিই।’
পরিবেশকর্মী মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘চালকলের ছাই জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি উদ্ভিদকুলের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ছাইয়ের কারণে গাছের স্বাভাবিক সালোক-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গাছ তার খাদ্য তৈরি করতে পারে না। আবার যখন মুকুল আসে, তখন ছাই পড়ে পরাগায়ণ ব্যাহত করে। কারণ মৌমাছি বসতে পারে না। এ কারণে বাগানগুলোতে ফলের পরিমাণ ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে।’
দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাতাসে ওড়া ছাই ধান, গম থেকে শুরু করে আম, লিচুর ফলনে প্রভাব ফেলে। ফল গাছে পুষ্পায়ন, ফল উৎপাদন, শাখা-প্রশাখা বৃদ্ধি প্রতিটি ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তা ছাড়া দূষিত পানি নির্গত হয়, যা মাটির সঙ্গে মিশে উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে। এসব কারণে ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’
দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম বোরহান-উল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘বাতাসে ছাই ও ধুলা মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এর জন্য মানুষের শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, এমনকি ফুসফুসের ক্যানসারও হতে পারে। এক বছরে জেলায় শ্বাসকষ্টের রোগী বেড়েছে। তার জন্য দায়ী বায়ুদূষণ।’
এয়ারলকের পাশে ব্লোয়ার মেশিন
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালকল মালিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, জেলার অধিকাংশ মিলের সাইক্লোন এয়ারলক নেই। ছাই সরাতে শ্রমিকের খরচ ও রাখার জায়গার কারণে অনেকে ‘সাইক্লোন এয়ারলক’ বসায় না। আবার অনেকে বসালেও গভীর রাতে ‘সাইক্লোন এয়ারলকের’ পাশে ‘ব্লোয়ার মেশিন’ চালু করে দেয়। এতে মিলের ছাই বাতাসে উড়ে যায়।
জানতে চাইলে দিনাজপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এ কে এম ছামিউল আলম কুরসি বলেন, ‘দিনাজপুরের বাতাসে কী পরিমাণ ছাই ওড়ে, তা আমাদের জানা নেই। তবে বর্তমানে যেসব মিল আমাদের কাছে পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়নের জন্য আসছে, সেগুলোয় সাইক্লোন এয়ারলক না থাকলে আমরা নবায়ন করছি না। যেসব মিলের নবায়নের আবেদন আসছে, এর মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশের সাইক্লোন এয়ারলক রয়েছে।’
দীর্ঘদিন ধরে চালকলের ছাই বাতাসে উড়ছে। আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চালকলের ছাই বাতাসে ওড়ার কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। অভিযোগ এলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
চালকলগুলো নিয়মকানুন মেনে চলছে কি না, সেটি দেখাশোনার দায়িত্ব কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের। দিনাজপুরে এই অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক মো. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়ার কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরেজমিনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় করে সেই সব মিলের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’
সরেজমিন পরিদর্শন করা হয় কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। যেসব মিলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ আসে, সেগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।