
চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১১ বোর্ড মিলিয়ে পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ, জিপিএ ৫ পায় ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। সে হিসাবে এবার পাসের হার কমেছে ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ। আর পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৮৬ হাজার ২৪ জন।
সূত্র জানায়, আগের বছর সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে সময় কমিয়ে দুই ঘণ্টায় পরীক্ষা নেওয়া হলেও এবার সংশোধিত ও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ কারণে কমেছে পাসের হার ও জিপিএ ৫। গতকাল শুক্রবার চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
পাসের হার কমার বিষয়ে এক প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘গত বছর বা তার আগের বছর, আপনি যদি মাত্র তিনটি বিষয়ে বা চারটি বিষয়ে পরীক্ষা দেন আর আপনি এখন ১০টি বিষয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন, পুরো ১০০ নম্বরে সব পরীক্ষা দিচ্ছেন। আর সেবার অনেক কম নাম্বারে পরীক্ষা দিয়েছেন, কম বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন, খুব স্বাভাবিকভাবে সেখানে পাসের হার অনেক বেশি ছিল।’
এ বছর দেশের ১১ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি ও সমমানে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২০ লাখ ৪১ হাজার ৪৫০ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১০ লাখ ০৯ হাজার ৮০৩ জন। ছাত্রী ১০ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৭ জন। এদের মধ্যে পাস করেছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন।
অভিভাবকদের দৃষ্টিতে ফল খারাপ হলেও শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা বলেছেন, পাসের হার স্বাভাবিক। গতবার শিক্ষার্থীদের বাড়তি কিছু সুবিধা ছিল। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও কম বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছিল। তাই শিক্ষার্থীরা এক ধরনের বাড়তি সুবিধাও পেয়েছিল। যেটা এ বছর ছিল না। এ কারণে গতবারের বিবেচনায় পাসের হার ও জিপিএ ৫ কমেছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, করোনার পর এবারই পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা হয়েছে। এজন্য পাসের হার স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়েছে। করোনার আগে ২০২০ সালে পাসের হার ছিল প্রায় একই রকম। গত দুই বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসসহ নানা ধরনের ছাড় দেওয়ায় পাসের হার বেশি ছিল। এবার সেই সুযোগ হয়নি।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে মাত্র তিন বিষয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। আর বাকি বিষয়গুলোতে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে জেএসসি থেকে নম্বর দেওয়া হয়েছিল। ওই বছর পাসের হার ছিল ৯৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। যা অতীতের যেকোনো সময়ের বিবেচনায় রেকর্ড ফল।
২০২২ সালে এসে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল ৯ বিষয়ে। বিষয় বেড়ে যাওয়ায় তাই পাসের হার স্বাভাবিকভাবে কমেছিল। আর বাকি বিষয়গুলোতে সাবজেক্ট ম্যাপিং করা হয়েছিল নবম শ্রেণির বিষয়ের ওপর। রেকর্ডসংখ্যক ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছিল।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮ সালে গড় পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২০১৯ সালে ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। ২০২০ সালে ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ২০২১ সালে ৯৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ২০২২ সালে ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর এবার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়ে ২৮ মে শেষ হয়।
কোন বোর্ডে পাসের হার কত : ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৯০ দশমিক ১৮ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৮৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৮৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৮৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে ৭৮ দশমিক ৪২ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৭৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ ও মাদ্রাসা বোর্ডে ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী।
এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এ বোর্ডে এবার সবচেয়ে বেশি, ৯০ দশমিক ১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর সবচেয়ে কম পাস করেছে সিলেট বোর্ডে, ৭৬ দশমিক ০৬ শতাংশ।
জিপিএ ৫-এ শীর্ষে ঢাকা : প্রতিবারের মতো এবারও জিপিএ ৫-এ সবার ওপরে রয়েছে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা, এ শিক্ষা বোর্ডের ৪৬ হাজার ৩০৩ জন শিক্ষার্থী পূর্ণ জিপিএ পেয়েছে। সবচেয়ে কম জিপিএ ৫ পেয়েছে সিলেট বোর্ড। এ বোর্ডের ৫ হাজার ৪৫২ জন শিক্ষার্থী এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে।
এবারও এগিয়ে মেয়েরা : পাসের হার ও জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক দিয়ে এ বছরও ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে। চলতি বছর ৮১ দশমিক ৮৮ শতাংশ ছাত্রী মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে, যেখানে ছাত্রদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে। জিপিএ ৫ পাওয়া ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৪ হাজার ৯৬৪ জন ছাত্র আর ৯৮ হাজার ৬১৪ জন ছাত্রী। সে হিসাবে জিপিএ ৫ বেশি পেয়েছে ১৩ হাজার ৬৫০ জন ছাত্রী। গত ছয় বছর ধরেই মাধ্যমিকে পাসের হারের দিক থেকে ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে।
গতবার জিপিএ ৫ পাওয়া ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যেও ১ লাখ ২১ হাজার ১৫৬ জন ছিল ছাত্র আর ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৬ জন ছিল ছাত্রী।
৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করতে পারেনি : এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এ বছর ৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। এ ছাড়া সবাই পাস করেছে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার ৩৫৪টি। গত বছর কোনো শিক্ষার্থী পাস করেনি এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫০টি। আর ২ হাজার ৯৭৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাস করেছিল।
দাখিল : মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় মোট অংশ নিয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭ জন, এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫৫ এবং ছাত্রী ১ লাখ ৪৫ হাজার, ৪৩২ জন। দাখিল পরীক্ষায় মোট উত্তীর্ণ হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ৯৬৪ জন, এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৯৫০ এবং ছাত্রী ১ লাখ ১২ হাজার ১৪ জন। দাখিল পরীক্ষায় পাসের হার ৭৪ দশমিক ৭০, এর মধ্যে ছাত্র ৭২ দশমিক ২৯ এবং ছাত্রী ৭৭ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। দাখিলে মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬ হাজার ২১৩ জন, এর মধ্যে ছাত্র ৩ হাজার ১৮৮ এবং ছাত্রী ৩ হাজার ২৫ জন। দাখিলের পরিসংখ্যানে পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড : এসএসসি ভোকেশনাল ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় সর্বমোট অংশ নিয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৪৪৪ জন, এর মধ্যে ছাত্র ৯৩ হাজার ৬২৯ এবং ছাত্রী ২৮ হাজার ৮১৫ জন। মোট উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৭৩০ জন, এর মধ্যে ছাত্র ৭৯ হাজার ৩৮৩ এবং ছাত্র ২৬ হাজার ৩৪৭ জন।
বিদেশে কেন্দ্রের তথ্য : এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় বিদেশের কেন্দ্রে অংশ নিয়েছে ৩৭৫ জন, এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩২০ জন। বিদেশের কেন্দ্রগুলোর পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৩।
‘সমগ্র বাংলাদেশ আজ জেগে উঠেছে। যদি পদত্যাগ না করেন, এ দেশের মানুষ আপনাদের পতন করেই ছাড়বে।’ রাজধানীর নয়াপল্টনে গতকাল শুক্রবার বিএনপির মহাসমাবেশে এ কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশ থেকে আজ শনিবার ঢাকা শহরের সব গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আয়োজিত মহাসমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যদি নিজেদের ভালো চান, এখনো সময় আছে। আমাদের এক দফা দাবি, সেটা মেনে নিন আর পদত্যাগ করুন। সারা দেশ থেকে গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষ, ছাত্র-যুবসমাজ, নারী, প্রবীণ মানুষ আজকের এ মহাসমাবেশে উপস্থিত হয়েছে। এই মহাসমাবেশ বাংলাদেশের পরিবর্তনের মাইলফলক।’
কর্মসূচি ঘোষণা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভোটাধিকার হরণকারী কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে শনিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকার সব প্রবেশমুখে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করব আমরা। আমাদের এই কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা আশা করব প্রশাসন এই কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে দিয়ে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে।’ তিনি বলেন, ‘আজ আমরা একা নই, বিদেশি রাষ্ট্রগুলো বলছে, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বন্ধুপ্রতিম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো আজকের জনগণের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছে।’
গত দুই দিনে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযোগ করে প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গ্রেপ্তার করে কি সমাবেশ আটকাতে পেরেছেন, পারেননি। দলীয় সরকারের আদেশ-নির্দেশে জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নেবেন না। অন্যায়, বেআইনিভাবে জনগণকে গ্রেপ্তার করবেন না।’ তিনি বলেন, ‘প্রবাসীরা কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে দেশে টাকা পাঠান। আর আওয়ামী লীগ তা বিদেশে পাচার করে। তারা বলেছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে, কিন্তু এখন চালের দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকা। ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, কিন্তু এখন ২০ লাখ টাকা ঘুষ না দিলে চাকরি হয় না। আবার আওয়ামী লীগ না করলে চাকরি হয় না।’
যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করেছে গণ অধিকার পরিষদের একাংশ। এতে দেওয়া বক্তব্যে দলটির আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘গণতন্ত্রের সেতু পার হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। সেই সেতু তারা পুড়িয়ে দিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন আওয়ামী লীগের অধীনে সম্ভব নয়।’ রাজধানীর পূর্ব পান্থপথের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), মৎস্য ভবনের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে সমাবেশে করেছে। এ ছাড়া ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টিসহ (এনডিএম) অন্য শরিক দলগুলো পৃথকভাবে সমাবেশ করেছে।
লোকে লোকারণ্য নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকা : জুমার নামাজের পর বেলা সোয়া ২টার কিছু আগে মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ ঘিরে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকা। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ডানে-বামে যতদূর চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। নেতাকর্মীরা নানান সেøাগানে ওই এলাকা কিছুক্ষণ পরপর প্রকম্পিত করে তোলেন। ৯টি বড় ট্রাকের দুইপাশের ঢাকনা খুলে একটির সঙ্গে আরেকটি জোড়া লাগিয়ে তৈরি করা অস্থায়ী মঞ্চ। উত্তরমুখী ওই মঞ্চে নেতাদের জন্য রাখা ছিল শতাধিক চেয়ার। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের জন্য রাখা দুটি পৃথক চেয়ার খালি ছিল। মঞ্চের এক পাশে বিশাল আকারের ডিসপ্লে বোর্ড বসানো হয়েছিল। মহাসমাবেশ এলাকায় পুরো সময়ই মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন সেখানে আসা নেতাকর্মীদের অনেকে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বেঁধে দেওয়া সীমানায় ফকিরাপুল, পল্টন, কাকরাইলসহ আশপাশে টাঙানো হয়েছে দেড় শতাধিক মাইক। গণমাধ্যম এবং সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য দুটি বড় ট্রাক একত্র করে তৈরি করা হয় আলাদা দুটি মঞ্চ। প্রচণ্ড রোদের মাঝেও সাময়িক বিনোদন দিতে জাসাসের নেতাকর্মীরা ওই মঞ্চ থেকে গান ও কবিতা পরিবেশন করেন। এতে সরকারের নানা সমালোচনা, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান, সরকারের উন্নয়ন ও নির্বাচন ইস্যুও ছিল।
এর আগে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ভোর থেকেই বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকরা নয়াপল্টন এলাকায় আসতে থাকেন। বেলা দেড়টার দিকে তুমুল বৃষ্টি নামলেও তা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীদের সেখানে অবস্থান করতে দেখা যায়। ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা নেছারুল হকের কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়।
বেলা ১টার পরে থেমে থেমে বৃষ্টি চলে ২টা পর্যন্ত। কখনো ঝুম, কখনো হালকা বৃষ্টি উপেক্ষা নেতাকর্মীরা সেøাগানে মুখর করে তোলে গোটা নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকা। অনেক নেতাকর্মীকে বৃষ্টিতে ভিজে সড়কে নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। ১টার পরই নয়াপল্টনে মহাসমাবেশস্থলে উপস্থিত হন প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী গত বৃহস্পতিবার রাতেই সমাবেশস্থলে এসে হাজির হন। তাদের মধ্যে অনেকে রাতভর নয়াপল্টনে অবস্থান করেন। শুক্রবার জুমার দিনে সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনেই জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজের কাতার কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল বাজার ছাড়িয়ে যায়।
হার্ট অ্যাটাকে বিএনপি নেতার মৃত্যু : নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় মহাসমাবেশে এসে ফকিরাপুল মোড়ে সেøাগান দিতে দিতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. মাহমুদুর রহমানের (৫০) মৃত্যু হয়েছে। হার্ট অ্যাটাক করার পর সহকর্মীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের জন্য পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয় কাকরাইল মোড় এলাকায়।
সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। কর্মসূচি ঘোষণার আগে বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়া বিএনপি নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন নজরুল ইসলাম খান, আব্দুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লা বুলু, শাহজাহান ওমর, মিজানুর রহমান মিনু, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামা ওবায়েদ, আব্দুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।
নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ থেকে বিএনপি ঢাকার সব প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণার জবাবে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের বিশাল জমায়েত থেকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছে, চোখ রাঙিয়ে আওয়ামী লীগকে উৎখাত করা যাবে না।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রাস্তা বন্ধ করতে আসবেন না। চোখ রাঙাবেন না, দেশি-বিদেশি যারাই আজকে চোখ রাঙাচ্ছেন, তাদের বলে দিতে চাই আমাদের শেকড় এ মাটির অনেক গভীরে। আমাদের চোখ রাঙিয়ে উৎখাত করা যায় না, যাবে না।’
গতকাল শুক্রবার তিন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন যুবলীগ,স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
বিএনপি-জামায়াতের হত্যা, ষড়যন্ত্র ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। এতে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ড. আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশ থেকে বিএনপির ঢাকার সব প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচির পাল্টা একই সময়ে একই কর্মসূচি দিয়েছে যুবলীগ।
বক্তব্যের শেষের দিকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে আসবেন, শান্তিপূর্ণভাবে চলে যাবেন। সংঘাত পরিহার করতে হবে। আমরা ক্ষমতায়, আমরা কেন সাংঘাত করব?’
রাজধানীতে গতকাল পাল্টাপাল্টি শান্তি সমাবেশ ও মহাসমাবেশে ঢাকা দক্ষিণের বেশিরভাগ এলাকা লোকে-লোকারণ্য হয়ে ওঠে। দুপুর ১২টা থেকে আওয়ামী লীগের সমাবেশস্থলে লোক আসতে শুরু করে। শেষ দুপুরের দিকে বৃষ্টিতে কিছুটা ভাটা পড়লেও সমাবেশ শুরু আগে সমাবেশস্থল কানায় কানায় ভরে ওঠে। আগের যেকোনো শান্তি সমাবেশের চাইতে গতকালের শান্তি সমাবেশে জমায়েত ঘটেছে দ্বিগুণের বেশি। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের পোস্টার, ব্যানার, প্ল্যাকার্ডে আগামী নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশা করার প্রকাশ ঘটে। তাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, মনোনয়ন এখানে দেওয়া হয় না। ঢাকা থেকে মনোনয়ন দেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। মনোনয়ন পেতে হলে এলাকায় যান, কাজ করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা বাংলার জনগণের বিশ্বস্ত প্রতিনিধি। পঁচাত্তরের পর বাংলাদেশের বড় অর্জনের নাম শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশি অর্জন নিয়ে এসেছেন।’
বিএনপির এক দফা আন্দোলন প্রসঙ্গ টেনে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এক দফা কোথায় আছে? বিএনপির এক দফা নয়াপল্টনের কাদাপানিতে আটকে গেছে। মনে আছে, গোলাপবাগের গরুর হাটে হোঁচট খেয়েছে। আর এক দফা খাদে পড়ে গেছে। এই এক দফা কোনো দিন ক্ষমতার স্বাদ পূর্ণ করতে পারবে না।’
‘তারেক রহমান লন্ডন থেকে ফরমায়েশ দিচ্ছে আর দেশে ফখরুল, আমীর খসরুরা লাফালাফি করছে’ এমনটি দাবি করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তারেক রহমান ভিডিওতে নির্দেশ দেয়। লন্ডনে বসে পুলিশকে ধমক দিচ্ছে। প্রশাসনকে ধমক দিচ্ছে। তারেক রহমান বলছে ফখরুলকে আন্দোলনে টাকার অভাব হবে না। তারেক রহমান তোমার বাবা জিয়াউর রহমানও বলেছিল মানি ইজ নো প্রবলেম। কোথায় তোমার বাবা? কোথায় আজ ক্ষমতা? তুমি (তারেক রহমান) তো ক্ষমতা এখনো দেখোনি।’
কাদের বলেন, ‘রঙিন চশমার ফাঁক দিয়ে দুনিয়াটাকে রঙিন দেখায়। কিন্তু ফুলের ভেতর সাপ থাকে। ফুলের ভেতরও বিষধর সাপ আছে বাংলাদেশে। তারেক রহমান এত টাকা পেল কোথায়? হাজার হাজার কোটি টাকা তারা পেল কোথায়? পাচার করেছে তারেক। সিঙ্গাপুরে ধরা পড়েছে। রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়েছে। সেই তারেক রহমান এখন মির্জা ফখরুলের নেতা। তারেক রহমান যতই লন্ডন থেকে আস্ফালন করছে, ততই তার বিরুদ্ধে ক্ষেপছে বাংলার মানুষ। দেখেন না, আজকে অর্ধেক ঢাকা আওয়ামী লীগের তরুণ কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে।’
কারা লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানকে অর্থ দিচ্ছে সেই খবর সরকারের কাছে রয়েছে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘কার কত টাকা! কারা কারা ঘন ঘন লন্ডনে যাচ্ছেন। তারেক রহমানের হাতে ডলার তুলে দিচ্ছেন আমরা জানি। কারা কারা যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে এমপি হবেন, নমিনেশন বাণিজ্য করবেন? সেজন্য এখনই তাকে হাত করছেন। টাকা দিচ্ছেন। সে নিজে কোনো দিন আসতে পারবে? তার কোনো গ্যারান্টি আছে? নমিনেশনের জন্য, ভবিষ্যতের ব্যবসার জন্য... তারেক রহমান টাকা লেনদেন করছেন।’
তিনি বলেন, লন্ডনের যাত্রী প্রতিদিনই বাড়ছে। ওখানে গিয়ে গিয়ে ডলার দিচ্ছে। ফখরুলকে বলে আন্দোলনের টাকার অভাব হবে না। শুনতে শুনতে ফখরুল মঞ্চ থেকে পড়ে গেছেন। আসলে তারেক জিয়ার ধমক খেতে খেতে বেচারার অবস্থা টাইট। ওই ধমকে মঞ্চ ভেঙে বিএনপির নেতারা পড়ে গেছেন। চোখ রাঙানি দিচ্ছে, সেটাতে দলটির নেতারা শেষ হয়ে যাচ্ছে।’
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে ভোট বিষয়ে ১২ কংগ্রেসম্যানের চিঠির প্রসঙ্গে টেনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কোথায় নাকি জাতিসংঘ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়নে করবে। তাদের কোটি কোটি টাকা। একেক সময়ে আমেরিকার কিছু কংগ্রেসম্যানকে টাকা খাওয়ায়। লবিস্ট নিয়োগ করে টাকা তাদের কয়েকজনকে দিয়ে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসাডরের কাছে চিঠি লেখে বাংলাদেশে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে ভোট করতে হবে। এ দুঃসাহস তারা পেল কোথায়?’
‘প্রধানমন্ত্রীকে গণভবন ছেড়ে দিতে হবে’ বিএনপির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর এমন বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জনগণ শেখ হাসিনাকে গণভবনে বসিয়েছেন। যতদিন জনগণ চাইবে ততদিন শেখ হাসিনা গণভবনে থাকবেন। তারেক জিয়া কিছুই করতে পারবে না। গণভবন থেকে হটাবেন! এত সোজা? আমরা চেয়ে চেয়ে ললিপপ খাব? অপেক্ষা করেন।’
একইদিনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির কর্মসূচি বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে কেউ কেউ বলে ওরা ডেট দিলে আপনারও একই দিন ডেট দেন। যিনি বলেন, তাকে সবিনয়ে বলছি ২০১৪, ’১৫ সাল তিনি বোধহয় দেখেননি। আমরা চুপ করে থাকলে বিএনপি কোন মূর্তিতে আভির্ভূত হবে সেটা দেখেননি। তাই শপথ নিয়েছি আগুন নিয়ে আসলে পুড়িয়ে দেব হাত। ভাঙচুর করতে আসলে হাত ভেঙে দেব। সংঘাত করব না। আমরা সংঘাত চাই না। সংঘাতের জন্য এ সমাবেশ করছি না, সমাবেশ করছি ২০১৩ ও ’১৪ সালে যারা আগুন দিয়ে সন্ত্রাস করেছে তাদের মোকাবিলা করে জনগণের সম্পত্তি ও জানমালকে পাহারা দিতে। শেখ হাসিনার নির্দেশে সেটাই করে যাচ্ছি।’
বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ভুয়া ভোটার তালিকা করেছে। ১৫ আগস্ট সৃষ্টি করেছে। তাদের হাতে আমাদের এই মাতৃভূমি, ক্ষমতা কোনোদিন আমরা ছেড়ে দিতে পারি না।’
প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বিদেশ সফরের বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) কোনো দেশ ভ্রমণ করতে যাননি। গিয়েছেন বাংলাদেশের জনগণকে বাঁচাতে, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে কাদের বলেন, ‘আপনারা হতাশ হবেন না। কারও চোখ রাঙানির পরোয়া বঙ্গবন্ধুর কন্যা করেন না। আশ্বস্ত করতে পারি আপনাদের... তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছেন বাবা চলে গেছে, পরিবার চলে গেছে, ভাইয়েরা চলে গেছে, আমিও একদিন হয়তো চলে যাব। কিন্তু যাওয়ার আগে এ দেশের মানুষের জন্য আমার বাবার স্বপ্ন সফল করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাব, প্রয়োজনে রক্ত দেব। বাংলার মানুষকে বাঁচাবার জন্য আমার বাবার অঙ্গীকার পূরণ করব।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খেলা হবে। দুর্নীতির বিরেুদ্ধে। লুটপাট, অর্থ পাচার, ভোটচুরির বিরুদ্ধে। খেলা হবে তারেকের বিরুদ্ধে। হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে। খেলা হবে ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে। খেলা হবে ভুয়া তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে। ভুয়া এক দফার বিরুদ্ধে।’
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা পেয়ে গেছেন? হায়রে ময়ূর সিংহাসন। ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন অনেক দূরে চলে গেছে। ক্ষমতা পেয়ে গেছেন? লাফালাফি করছেন? কোথায় ক্ষমতা? যত লাফালাফি, যত তাফালিং করেন... ফখরুল সাহেব তারেক জিয়ার এই লাফালাফিতে কাজ হবে না। যতই তাফালিং করেন ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন বহুদূরে চলে গেছে। ওইটা খুঁজে পাবেন না। লাফালাফি করবেন না।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘রাজনীতির খেলার আন্দোলনে আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না। রাজনীতির খেলায় আওয়ামী লীগ চ্যাম্পিয়ন। আন্দোলন করে হারানো যাবে না, তাহলে নির্বাচন। নির্বাচনে আসবেন না! কিন্তু মনোনয়ন বাণিজ্য ঠিকই তো করছেন।’
টাঙ্গাইল থেকে এসে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে অংশ নেন দলটির স্থানীয় নেতা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি গতকাল শুক্রবার সকালে টাঙ্গাইলের বাসা থেকে বের হয়ে সমাবেশস্থলে আসা পর্যন্ত পথে বেশ কয়েক জায়গায় বাধার সম্মুখীন হন বলে জানান দেশ রূপান্তরকে।
টাঙ্গাইল শহর থেকে ঢাকা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের নিরাপত্তাচৌকিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের পথরোধ করে জিজ্ঞাসাবাদ করে ফেরত পাঠানো হয়েছে, আবার কাউকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ মোয়াজ্জেম হোসেনের।
গতকাল ঢাকায় বিএনপি মহাসমাবেশ করেছে। একইদিন আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনেরও শান্তি সমাবেশ ছিল। রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে ছিল পুলিশের কড়াকড়ি। তল্লাশিচৌকি বসিয়ে বা বাস থামিয়ে যাত্রীদের জেরা করে ও ফোন ঘেঁটে সন্দেহ হলেই আটক করা হয়েছে। কাউকে কাউকে ফেরতও পাঠানো হয়েছে।
আজ শনিবার আবার দুপক্ষ ঢাকার সব প্রবেশমুখে পাল্টাপাল্টি অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছে। বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে তারা। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অবস্থান কর্মসূচি পালনের জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাউকে রাস্তা অবরোধ করতে দেওয়া হবে না। এটা বেআইনি।
ঢাকায় আসতে হয়রানি, আটক : গতকাল দুপুর আড়াইটায় নয়াপল্টনের মহাসমাবেশস্থলের জনসমাগম ছড়িয়ে যায় আশপাশের বিভিন্ন এলাকায়। তখন কাকরাইল মোড়ে দলের অন্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে অবস্থান করছিলেন বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ঝামেলা এড়াতে সবাইকে নিয়ে সকালের ট্রেনে কমলাপুর আসার পরিকল্পনা করি। কিন্তু স্টেশনে গিয়ে দেখি পুলিশ সব যাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করছে। ট্রেনে উঠতে না পেরে পরে আমরা বাসে যাত্রা শুরু করি। কিন্তু পথে চন্দ্রা এলাকায় আসার পর বাস ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। তখন আমরা ওই বাস থেকে নেমে কৌশলে ঢাকার অন্য একটি বাসে উঠি।’
মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বাসে উঠে ভেবেছি এবার আর ঝামেলায় পড়তে হবে না। কিন্তু ঢাকার প্রবেশমুখে দেখি বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক পুলিশি তৎপরতা। তারা অন্য এলাকার মতোই জিজ্ঞাসাবাদ করছে। উত্তরায় প্রায় সব পরিবহন থামিয়ে তারা জানতে চাইছে কোথায় যাবে? কেন যাবে? এমন নানান প্রশ্ন। তবে আমাদের ভাগ্যক্রমে ওই জিজ্ঞাসাবাদে পড়তে হয়নি। পরে মহাখালী নেমে দীর্ঘ সময় সমাবেশে আসার কোনো গাড়ি পাচ্ছিলাম না। অবশ্য পরে একটি সিএনজি ভাড়া করে মালিবাগ পর্যন্ত আসার সুযোগ হয়।’
গতকাল রাজধানীতে বিএনপির এই মহাসমাবেশের পাশাপাশি ছিল আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের সমাবেশ। এতে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে হয়রানির শিকার হওয়ার কোনো অভিযোগ পাওয়া না গেলেও, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিএনপির প্রত্যেক নেতাকর্মীই হয়রানির মুখে পড়ার অভিযোগ করেছেন। দেশ রূপান্তরের সংবাদকর্মী ও প্রতিনিধিরাও সরেজমিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের এমন হয়রানি প্রত্যক্ষ করেছেন। ঢাকার প্রবেশমুখসহ বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি ও বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক করতে দেখা গেছে। পাল্টাপাল্টি এ সমাবেশ ঘিরে রাজধানীর পল্টন ও গুলিস্তানের আশপাশের বিভিন্ন সড়কে ছয় হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল। তাদের অবশ্য তল্লাশি করতে দেখা যায়নি। তবে শহর জুড়ে গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল কম, ফলে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
আমিনবাজার চেকপোস্টে আটক অর্ধশতাধিক : সাভারের আমিনবাজারে চেকপোস্ট বসিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার পর থেকে তল্লাশি অভিযান জোরদার করা হয়। এ সময় বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীদের ব্যাগ ও গাড়ির বিভিন্ন স্থান তল্লাশির পাশাপাশি যাত্রীদের মোবাইল ফোনও ঘাঁটাঘাঁটি করা হয়। গতকাল সকাল থেকে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে সেখানে আটক করা হয়। সেখানে সংবাদ সংগ্রহকালে আকলাকুর রহমান আকাশ নামে এক গণমাধ্যমকর্মীকেও আটকের হুমকি দেয় পুলিশ।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তল্লাশি কার্যক্রমের সময় যাদের কথাবার্তা এবং চালচলনে সন্দেহ হয়েছে, শুধু তাদেরই আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যদের তল্লাশি শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগ) আব্দুল্লাহিল কাফী বলেন, ‘সাভারের বিরুলিয়া, আশুলিয়ার ধউর, জিরানী, জিরাবো ও বাইপাইল এলাকায়ও চেকপোস্ট বসানো হয়। ঢাকায় দুটি দলের কর্মসূচি থাকায় কেউ যাতে নৈরাজ্য চালাতে না পারে, এজন্য তল্লাশিতে জোর দেওয়া হয়েছে।’
সদরঘাটেও তল্লাশি, আটক ১২ : ঢাকার সব প্রবেশমুখেই পুলিশের তল্লাশি কার্যক্রম দেখা গেছে। গতকাল সকালে সদরঘাটে লঞ্চ থেকে নেমেই আটক হন ১২ জন। বিষয়টি স্বীকার করলেও আটককৃতদের পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ। এ ছাড়াও ভোর থেকে পুলিশ বুড়িগঙ্গায় নৌকা পারাপার বন্ধ করে দেয়।
কোতোয়ালি থানার ওসি শাহিনুর রহমান বলছেন, ‘তাদের আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়েছে। তাদের দেখে মনে হয়েছে শহরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য এসেছে।’
আবদুল্লাহপুরে দুপুরের মধ্যেই আটক ৩০ : রাজধানীর আবদুল্লাহপুরেও যাত্রীবাহী পরিবহনে তল্লাশি করেছে পুলিশ। এ সময় মোবাইল ফোন ঘেঁটে অনেক যাত্রীকে আটক করতে দেখা যায়। দুপুরে উত্তরা পূর্ব থানার ওসি মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৩০ জনকে আটক করেছি। মূলত তারা একসঙ্গে সমাবেশে যাচ্ছিলেন। এতে গ্যাঞ্জামের (বিশৃঙ্খলা) আশঙ্কা ছিল।’
কেরানীগঞ্জের তিন সেতুতে বাধা : কেরানীগঞ্জ থেকে রাজধানীতে প্রবেশের তিনটি সেতুতেই তল্লাশিচৌকি বসায় পুলিশ। এ সময় সব ধরনের যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করতে দেখা গেছে। কোনো যাত্রীকে সন্দেহ হলেই গাড়ি থেকে নামিয়ে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ঘেঁটে দেখা হয়। সেখানে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তবে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের শান্তি সমাবেশের ব্যানার ধারণ করা গাড়িগুলো তল্লাশি ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবীর বলেন, ‘সমাবেশ কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যেন তৈরি করতে না পারে, তাই রাজধানীর প্রবেশমুখে সন্দেহভাজন যানবাহনগুলো তল্লাশি করা হয়েছে।’
ভোর থেকে নারায়ণগঞ্জে পুলিশের তল্লাশি : গতকাল ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ অংশে দুটি চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ তল্লাশি করে। সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক বাসস্ট্যান্ডে ঢাকাগামী বাস, মিনিবাস, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করেন পুলিশ সদস্যরা।
গাজীপুরে যাত্রীদের হেনস্তা : ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কের আটটি স্থানে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে যানবাহন তল্লাশি করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। তল্লাশিচৌকিতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের খোঁজ করা হয়। অন্যদিনের তুলনায় ওই মহাসড়কে যাত্রীবাহী গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলের পরিমাণ ছিল খুবই কম।
গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মনজুরুল করিম রনি বলেন, ‘গত দুদিন ধরে গাজীপুরে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তল্লাশি করেছে। উত্তরা থেকে আমাদের বেশ কিছু নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। শতবাধা পেরিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকায় গিয়ে সমাবেশ সফল করেছে।’
সমাবেশ ঘিরে পুলিশের সতর্ক পাহারা : গতকাল ভোর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয় পুলিশ। দিনভর সমাবেশস্থলের আশপাশের মালিবাগ, কাকরাইল, মৎস্য ভবন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, পল্টন মোড়, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলা মোড়, জিরোপয়েন্ট, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশকে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের সাঁজোয়া যানও দেখা গেছে। এসব এলাকায় যান চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শহর জুড়ে গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল কম। ফলে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের ডিসি হায়াতুল ইসলাম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো বিশ্লেষণ করে পুরো এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে প্রয়োজনীয় পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো এলাকা মনিটরিং করা হয়েছে। ড্রোন দিয়েও সমাবেশ এলাকা মনিটরিং করা হয়েছে।’
পাল্টাপাল্টি অবস্থান : নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশ থেকে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ভোটাধিকার হরণকারী কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং এক দফার দাবিতে কাল (আজ) শনিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকার সব প্রবেশমুখে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করব আমরা।’
সমমনা দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে একই কর্মসূচি পালন করবে কি না, জানতে চাইলে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এতদিন যেমন পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করেছি, তেমনি রাজধানী ঢাকার প্রবেশমুখে পৃথক পৃথক স্থানে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।’
বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়, রাজধানীর উত্তরা বিএনএস সেন্টারের উল্টো দিকে রাস্তার পূর্বপাশের অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। গাবতলী এসএ খালেক বাসস্টেশন এলাকা ও নয়াবাজার বিএনপি অফিসের সামনে অবস্থান নেবেন দলের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভার থেকে নেমে দনিয়া কলেজসংলগ্ন এলাকায় থাকবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি।
গণতন্ত্র মঞ্চ মিরপুর মাজার রোড, ১২-দলীয় জোট চট্টগ্রাম রোড দনিয়া কলেজ পার হয়ে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট চট্টগ্রাম রোড সাইনবোর্ড পার হওয়ার আগে, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি মতিঝিল নটর ডেম কলেজের উল্টো দিকে গণফোরাম চত্বরে, এলডিপি উত্তর আজমপুর বাসস্টেশন সংলগ্ন গাবতলী টেকনিক্যাল মোড় ও যাত্রাবাড়ী মোড়, এনডিএম চট্টগ্রাম রোড সাইনবোর্ড সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করবে।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা অবনতির গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে আগামীকালের (আজ) সব রাজনৈতিক দলের অবস্থান কর্মসূচি পালনে ডিএমপির পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
শান্তি সমাবেশ শেষে ফিরে যাওয়ার পথে রাজধানীর গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন যুবলীগকর্মীসহ চারজন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের পাশের রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত যুবকের নাম রেজাউল করিম। তিনি শেরপুরের নকলা উপজেলার পশ্চিম নারায়ণ খোলা গ্রামের আবদুস সাত্তারের ছেলে।
আহতরা হলেন ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার যুবলীগকর্মী নোমান হোসেন রনি (৩২), দিনমজুর মোবাশ্বের (২৩), রাজমিস্ত্রি আরিফুল ইসলাম (১৮) ও স্কুলশিক্ষার্থী মো. জুবায়ের হোসেন (১৬)। তাদের অবস্থাও গুরুতর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আহত যুবলীগকর্মী নোমান ছাড়া অন্যরা দাবি করেছেন, তারা ব্যক্তিগত কাজে ওই স্থান দিয়ে যাচ্ছিলেন। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত হয়েছেন।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেখানে সংঘর্ষ হয়েছে, সেখানে বিএনপি সমর্থকদের যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা শুনেছি আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন চারজন। বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত রনির সঙ্গে থাকা কেরানীগঞ্জ মডেল থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সৈকত হাসান বিপ্লব দেশ রূপান্তরকে জানান, তারা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিন আহমেদ চেয়ারম্যানের সমর্থক। নেতাকর্মী নিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে এসেছিলেন। সমাবেশ শেষ করে সেখান থেকে কেরানীগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন। গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের পাশে এলে তখন পেছন থেকে আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা তাদের ধাওয়া করে। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। পরে আহত অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে একজনকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরও জানান, সমাবেশে কামরুল ইসলামের সমর্থক ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে শাহিন আহমেদের নেতাকর্মীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছিল।
পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেন্টু মিয়া নিহত রেজাউলের পরিচয় শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এই যুবকের পকেটে থাকা মোবাইল ফোনের সিম কার্ডের সূত্রে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তার পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। তবে এখনো তার কোনো আত্মীয়স্বজনের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিট ওই যুবকের আঙুলের ছাপ নিয়েছে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া ওই যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ওই যুবকের বাম পায়ের ঊরুতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। বাকি চারজনের অবস্থাও গুরুতর। তাদের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আহত জুবায়ের হোসেনের বাবা শাহজালাল ব্যাপারী জানান, তাদের বাসা পুরান ঢাকার বাংলাদেশ মাঠ এলাকায়। আহমেদ বাওয়ানী একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে জুবায়ের। মোবাইলের কাভার কিনতে গুলিস্তান গিয়েছিল সে। তখন সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার পায়ে আঘাত করা হয়।
আহত আরিফুল ইসলামের সহকর্মী আলমগীর হোসেন জানান, আরিফুলের বাড়ি নওগাঁর সাপাহার উপজেলায়। বঙ্গবাজার এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন তারা। মোবাইল কিনতে বিকেলে গুলিস্তান গিয়েছিলেন। তখনই সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন।
আহত মোবাশ্বেরের ছোট ভাই মো. মারুফ মিয়া জানান, তারা মতিঝিল আরামবাগ এলাকায় থাকেন। মোবাশ্বের দিনমজুরের কাজ করেন। তিনিও মোবাইল কিনতে গুলিস্তান গিয়েছিলেন। তার পেটে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাত রয়েছে। আঘাতের কারণে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২ নভেম্বর। পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা, কানাঘুষা; শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
বর্তমান উপাচার্যই আবার দায়িত্ব পাবেন নাকি নতুন কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে এ আলোচনাই চলছে এখন। আলোচিত হচ্ছে কয়েকজন শিক্ষকের নামও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন কানাঘুষারও অবসান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্য থেকেই কাউকে বাছাই করার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। গুণী কোনো শিক্ষক উপাচার্যবিষয়ক আলোচনার মধ্যে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হবে কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন।
রীতি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। কিন্তু এবার সিনেট অধিবেশন হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য অধিবেশন ডাকবেন কি ডাকবেন না; ওপর মহলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানেন না। উপাচার্য নিজেও বিষয়টি খোলাসা করছেন না।
অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন অসুস্থতা, ছুটি, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে একজনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাদেশের নিয়ম অনুসরণ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হোক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং আগামী নির্বাচনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘ভিসি প্যানেল নিয়ে আলোচনা নেই। উপাচার্যও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তাদের মধ্য থেকেই কারোর পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এ বিষয়ক আলোচনায় রয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। পরে প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সামলাচ্ছেন তিনি। দুই মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার নজির নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তার দায়িত্ব পালনের শেষ দেখছেন অনেকে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন তিনি।
ইমেরিটাস অধ্যাপক বা অন্য কোনো গুণী শিক্ষক নেই উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গুণী শিক্ষকদের সামনে আনার যে ধরনের কাঠামো থাকা উচিত তা নেই। যারা তোশামোদ করতে পারে, অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে, তাদেরই প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়ে আসা হয়। সত্যিকারের গুণী শিক্ষক এবং অনেক ভালো গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা কখনো প্রশাসনের দায়িত্বে আসতে পারেন না। তারা ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি দিতেও রাজি নন।’
অতীতে উপাচার্যদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটা ভারসাম্য ছিল। এখন তা নেই। এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদগুলো দেওয়া হয়।
পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন বা ভিসি প্যানেল নিয়ে আগ্রহ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের। বিএনপিঘোষিত এক দফাতেই তারা মগ্ন। যদিও সিনেটে তিনজন প্রতিনিধি থাকায় সুযোগ তাদেরও রয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন না হলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিষয়ে ভাবছি না। এ বিষয়ে আমাদের ফোকাস নেই। আমাদের ফোকাস হচ্ছে এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিবর্তন আসবে।’
শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা নীল দল এখনো এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিনি। যথাসময়ে দলের সভায় এ নিয়ে কথা হবে। মনোনয়ন কে পাবেন, তার আলোচনাও সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ তিনজন বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। আমরা উনাদের সমর্থন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের গতি অনুযায়ীই সব চলবে। এ বিষয়ে যাদের ভাবা প্রয়োজন তারা অবশ্যই ভাববেন।’ সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন হলে আমরা ডাকি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।