
পাউরুটি আর গাজরে মুখ লাগালেও লাউ বা অন্য খাবারে মন নেই খরগোশের। তবে তাদের খাবারে ভাগ বসাতে অপেক্ষায় আছে এক কাঠবিড়ালী। কিছুক্ষণ পর খাবারের পাশ থেকে নিথর পড়ে থাকা কালো খরগোশটি সরে গেল। এক পা-দুই পা করে এগিয়ে এল কাঠবিড়ালী। খরগোশের খাঁচায় কাঠবিড়ালী কেন? কাঠবিড়ালী আর খরগোশের বন্ধুত্বের কথা গল্পেই মানায়। শিশুতোষ গল্পের এমন বাস্তব রূপ কি দর্শকদের অবাক করার প্রয়াস? আসলে এটি প্রাণীদের প্রতি জাতীয় চিড়িয়াখানার দায়িত্বরতদের অমনোযোগিতার, প্রাণী ব্যবস্থাপনার অভাবের প্রমাণ।
শুধু খরগোশের খাঁচায় কাঠবিড়ালীই নয়, শিশুদের খেলার জায়গায় কুকুর, বিভিন্ন স্থানে মশার লার্ভা, অরক্ষিত সীমানাপ্রাচীর টপকে আসা মাদকসেবীদের আড্ডা কী নেই এখানে! বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার ছাপ ফুটে উঠেছে প্রতিটি প্রাণীর চেহারায়। ফলে দর্শনাথীরা যেমন আগ্রহ হারাচ্ছে, তেমনি গতি হারাচ্ছে প্রাণী নিয়ে গবেষণার কাজ।
২২ জুলাই দুপুরে মিরপুর চিড়িয়াখানার শিশুপার্ক ঘুরে দেখা যায়, তৃণভোজী প্রাণীদের খাঁচাগুলোর জীর্ণ দশা। খরগোশের খাঁচায় দেওয়া খাবার খেতে এসেছে কাঠবিড়ালী। খাঁচার চারপাশের লোহার জালে মরচে ধরে বড় ছিদ্র তৈরি হয়েছে। ওখান দিয়েই হয়তো কাঠবিড়ালী ঢুকেছে। খাঁচার মতোই খরগোশগুলোও যে অযতেœ-অবহেলায় রয়েছে তা বোঝা যায়।
২৩ জুলাই মোবাইল ফোনে জাতীয় চিড়িয়াখানার নানা বিষয়ে এ প্রতিবেদক কথা বলেন পরিচালক ড. মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদারের সঙ্গে। খরগোশের খাঁচায় কাঠবিড়ালী প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চিড়িয়াখানায় উন্মুক্ত অনেক কাঠবিড়ালী আছে। খরগোশের খাঁচার ছিদ্র দিয়ে সেগুলো ঢুকতেই পারে।’ পরিচালকের কথার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মনিরুল এইচ খান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের প্রাণীর খাঁচায় প্রবেশের সুযোগ থাকা উচিত নয়। খরগোশের নির্দিষ্ট পরিমাণে খাবার সরবরাহ করা হয়। অন্য প্রাণী ভাগ বসালে ওই খাবার যে হিসাবে দেওয়া হয়েছে তা ঠিক থাকল না। বাইরের প্রাণী খাঁচায় ঢুকলে রোগ-জীবাণু বিস্তারের ঝুঁঁকিও থাকে। এ রকম অনুপ্রবেশ কাম্য নয়।’
কর্তৃপক্ষীয় অমনোযোগিতার কথা
জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঢোকার আগেই প্রতারণার শিকার হন দর্শনার্থীরা। সেখানকার পার্কিংয়ে মোটরসাইকেলের জন্য নির্ধারিত ফি ১০ টাকা। কিন্তু ৪০ টাকা পর্যন্ত ফি রাখতে দেখা গেছে। মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার প্রভৃতি হালকা গাড়ির জন্য ফি ২০ টাকা; কিন্তু রাখা হচ্ছে ১০০ টাকা।
২২ জুলাই দুপুরে মাইক্রোবাসের চালক জলিল মিয়া বলেন, ‘গাড়ি রাখার ভাড়া ২০ টাকা লেখা আছে, কিন্তু আমার কাছ থেকে ১০০ টাকা রেখেছে। তারা বলছে, রাখতে হলে ১০০ টাকা দিয়েই রাখতে হবে। রাখার অন্য জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে এখানে রেখেছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্কিংয়ে কর্মরতরা সদুত্তর দিতে পারেননি।
এরপর চিড়িয়াখানায় ঢুকতেই চোখে পড়ল পাল থেকে বিচ্ছিন্ন একটি হরিণ নিয়ে আলোচনা করছেন দুই ব্যক্তি। দেখা গেল মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত একটি হরিণ বসে ঝিমাচ্ছে। রাকিবুল ইসলাম নামে এক তরুণ বলছিলেন, ‘বোঝা যাচ্ছে হরিণটা অসুস্থ। মাথায় কোনোভাবে আঘাত পেয়েছে। দাগ দেখে মনে হচ্ছে, আঘাতটা অনেক দিনের। হরিণটার চিকিৎসা দরকার।’
হরিণটির অসহায়ত্বের কথা ভাবতে ভাবতে ভেতরে যেতেই চোখে পড়ল জমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা। চিড়িয়াখানার দর্শনার্থীদের জন্য হাত-মুখ ধোয়ার ও খাবার পানি সরবরাহের জায়গায় এমন দৃশ্য! অনেক দিন ধরে পানি জমে থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটা কর্তৃপক্ষের কারও চোখে পড়ছে না।
চিড়িয়াখানার শিশুপার্কের জীর্ণ দশা। দোলনাগুলোতে মরচে ধরেছে কিছু ভেঙে আছে অনেক বছর ধরে বোঝা যায়। শিশুদের খেলার জায়গায় উন্মুক্তভাবে কুকুর ঘুরাফেরা করছে। কুকুরগুলো কীভাবে এলো, কেউ বলতে পারছে না।
সপরিবারে ঘুরতে এসেছেন চাকরিজীবী মাহমুদুল হক। তিনি বলেন, ‘দুই ছেলেকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছি। শিশুপার্কে শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় উপকরণ বা প্রাণী থাকবে ভেবেছিলাম। কিন্তু দেখছি সব ভাঙাচোরা, পরিত্যক্ত এলাকার মতো। কুকুর দেখে শিশুরা ভয় পায়। কিন্তু কুকুর ঘুরছে কীভাবে?’
শিশুপার্ক থেকে বেরিয়ে অন্য প্রাণী দেখার জন্য বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেল চিড়িয়াখানা নোংরা হয়ে আছে। ঝড়ে ভাঙা গাছ পড়ে আছে। সবুজ খোলা জায়গায় আবর্জনার স্তূপ। অরক্ষিত সীমানাপ্রাচীর, অনায়াসে ঢুকে পড়ছে বহিরাগতরা। মাদকসেবীরা বিভিন্ন অংশে জমিয়েছে আড্ডা। আরেক দল ঢুকেছে অস্বাস্থ্যকর বিভিন্ন খাবার নিয়ে। ঘুরে ঘুরে সেসব বিক্রিও করছে। না বুঝেই অভিভাবকরা এসব কিনে দিচ্ছেন শিশুদের।
চিড়িয়াখানা পরিদর্শনে বোঝা গেল, অধিকাংশ প্রাণী সঠিক পরিচর্যা পায় না। তাদের খাবার ও স্বাস্থ্য কিছুই খতিয়ে দেখা হয় না।
হায়েনার আক্রমণ নিয়ে লুকোচুরি
চিড়িয়াখানায় ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়ল আলোচিত সেই হায়েনার খাঁচা। একটি চিত্রা হায়েনার কামড়ে দুই বছরের এক শিশুর এক হাতের কনুই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে আসা শিশু সাইফ অজান্তে প্রাথমিক নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে হায়েনার খাঁচার কাছে চলে যায়। কামড় দিয়ে সাইফের ডান হাত কনুই থেকে ছিঁড়ে নেয় হায়েনাটি।
গত ৮ জুনের ঘটনা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ আলাদাভাবে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এ ঘটনায়। তদন্তের ব্যাপারে চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কথা বলবেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।’
মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক যুগ্ম সচিব (প্রাণিসম্পদ-১) শাহীনা ফেরদৌসী জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ইফতেখার হোসেন ২৪ জুলাই সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমার কাছে তদন্ত-সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। তা ছাড়া এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানাতে কোনো নির্দেশনা আসেনি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিনটি কমিটির তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনার জন্য শিশুটির পরিবার দায়ী। তারা শিশুটিকে প্রাথমিক নিরাপত্তাবেষ্টনী পার করে দিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এর মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে ২৪ জুলাই কথা হয় শিশু সাইফের বাবা সুমন মিয়ার সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষর কোনো দোষই যদি না থাকে, তাহলে ওই জায়গা নতুন করে নিরাপত্তাবেষ্টনী কেন তৈরি করল? ঘটনার পর তারা আমাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু সহযোগিতা তো দূরের কথা, একবার ফোন করে খোঁজও নেয়নি।’
চিড়িয়াখানা নিয়ে ক্ষোভ দর্শনার্থীদের
জাতীয় চিড়িয়াখানার নানা বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দর্শনার্থীদের অনেকে। ২২ জুলাই তাদের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের। ফারুক হোসাইন নামের এক যুবক বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় নোংরা জমে আছে। কর্তারা হয়তো নিজেরাই ভালো করে দেখেন না। দেখলে তারা পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করতেন। প্রাণীদের খাঁচার অবস্থাও ভালো নয়।’
শিক্ষক মোহাম্মদ রাশেদুল হক নিলফামারী থেকে এসেছেন ছাত্রদের নিয়ে ঘুরতে। তিনি বলেন, ‘চিড়িয়াখানার অনেক বিষয় উন্নত করা দরকার। টয়লেটগুলো দুর্গন্ধযুক্ত ও অস্বাস্থ্যকর। ভেতরে গিয়ে দাঁড়ানোই যায় না।’
এসব বিষয়ে মোবাইল ফোনে রফিকুল ইসলাম তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য না করে কার্যালয়ে গিয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মনিরুল এইচ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চিড়িয়াখানা অনেক আগে তৈরি করা হয়েছে। এখন অনেক উন্নয়ন প্রয়োজন। একটি মহাপরিকল্পনা হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত প্রাণীদের সঠিক খাবার ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দরকার।’
সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনড় অবস্থান শেষ পর্যন্ত সংঘাতের দিকে মোড় নিয়েছে। সংঘর্ষের পাশাপাশি আগুন দেওয়ার ঘটনায় আবার জনসাধারণের মধ্যে পুরনো সেই অগ্নিসন্ত্রাসের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
গত শনিবার বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও বাস পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। হঠাৎ করে মাতুয়াইল-আশুলিয়াসহ কয়েকটি স্থানে কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। তবে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই পক্ষই পরস্পরকে দোষারোপ করেছে।
আগুনভীতি নিয়ে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের কর্মসূচি দমনে কঠোর হতে পারে। বিএনপি সামনে পাল্টা শক্ত অবস্থান নিতে চেষ্টা করবে। ফলে দুই পক্ষ আগুন সন্ত্রাসের পক্ষে না থাকলেও তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নেওয়া চেষ্টা করবে। আর যদি সেটি হয়, তাহলে শনিবারের সংঘাত ও বাস পোড়ানোর ঘটনা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য ভালো ইঙ্গিত বহন করবে না। সে কারণে বাসে আগুন দেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
২০১৩-১৪ সালে বিএনপির নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে সারা দেশে অগ্নিসংযোগ-পেট্রোলবোমায় প্রাণহানি ও সম্পদহানি ঘটেছে। অনেকে আগুনে পুড়ে ঝলসে যাওয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।
আওয়ামী লীগ বলছে, নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আগুন সন্ত্রাস চালাতে বিএনপি একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে চলেছে। জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব পালনে দলটি শান্তি সমাবেশ নিয়ে মাঠে থাকে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগুন সন্ত্রাস সৃষ্টি করে আন্দোলন সফল করা যাবে না। মানুষকে জিম্মি করে, ভয়ভীতি সৃষ্টি করে রাজনীতির ফল কখনো ভালো হয় না। শেখ হাসিনা সহনশীলতা পছন্দ করেন, তার মানে দুর্বলতা নয়।’
বিএনপি বলছে, দায় চাপানো আওয়ামী লীগের পুরনো রীতি ও পদ্ধতি। শনিবারের ঘটনা হাস্যকর কৌতুকে পরিণত হয়েছে বলেও দলটির নেতারা মনে করেন।
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আবার আগুনের ঘটনা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেউ কাউকে দোষ না দিয়ে কারা আগুন সন্ত্রাস চালাতে চায়, তাদের চিহ্নিত করা সবারই দায়িত্ব। রাজনীতিতে ২০১৩-১৪ মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে ভয়াবহ ক্ষতি হবে। এটি স্মরণ রেখে সবাইকে রাজনীতি করা উচিত।’
২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে যেভাবে বাসে আগুন দিয়ে নাশকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল, ঠিক সেই স্টাইলেই রাজধানীতে তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গানপাউডার, কেরোসিন তেল বা পেট্রোল ব্যবহার করে হয়েছিল। শনিবার বাসে আগুন দেওয়ার ধরনও ছিল আগের মতো। ব্যবহার করা হয়েছিল কেরোসিনের মতো দাহ্য বস্তু।
ঈদুল আজহার পর থেকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকা- ছিল সভা-সমাবেশমুখী। এসব কর্মসূচিতে প্রতিপক্ষের চেয়ে বিপুল লোকসমাগমের প্রতিযোগিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। শান্তিপূর্ণ এসব কর্মসূচির কারণে জনমনে কিছুটা স্বস্তি ছিল। শনিবার রাজধানীর প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির ঘটনায় তাদের সেই স্বস্তিবোধ আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। ওই কর্মসূচি ঘিরে বিএনপি, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এসেছিল। ফলে কর্মসূচি যে শান্তিপূর্ণ হবে না তা বোঝা যাচ্ছিল। অবস্থান কর্মসূচির স্থানগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের দখলে ছিল। কিছু জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতিরোধ করতে দেখা গেলেও নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাতুয়াইল ও শ্যামলীতে গাড়িতে আগুন দেওয়ার ও ভাঙচুরের ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে খবর বেরিয়েছে, পুলিশের সামনেই এসব ঘটনা ঘটিয়ে ভিডিও করে অপরাধীরা নির্বিঘ্নে চলে গেছে। কারা এটা করতে পারে তা অনুমানের জন্য বেশি বুদ্ধিমান হওয়ার প্রয়োজন নেই। নিজেরা অপরাধ করে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিচ্ছি।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘পুলিশ যেখানে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা বাস পোড়াবে, এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। পাগলেও না। বরাবরই তারা (আওয়ামী লীগ) নিজেরা এসব কাজ করে দায় চাপায় বিএনপির ওপর। কারা জ্বালাও-পোড়াও করে, ২০১৩-১৪ সালে আপনারা প্রমাণ পেয়েছেন। শনিবারে বাসে আগুনের ঘটনায় স্বয়ং বাসচালক বলছেন, মাত্র ১০ গজ দূরে ছিল পুলিশ।’
বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কর্মসূচির স্থান ছিল পুরান ঢাকার নয়াবাজার, যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া, গাবতলী, আবদুল্লাপুর ও চিটাগাং রোডে মুক্তি সরণি। মহাসমাবেশ থেকে এ অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। কর্মসূচির আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে করে স্থান পর্যন্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। সারা দেশ থেকে সরকারই ওইদিন বাস বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছিল মালিকদের। রাজধানী কেন, এর আশপাশেও বাস চলতে দেয়নি সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যে বাসগুলোতে আগুন দেওয়া হলো, সেগুলো এলো কোথা থেকে? পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পুরো এলাকায় অবস্থান নিয়ে রেখেছিল। তাদের ছত্রছায়া ছাড়া এ কাজ কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে দাবি করেন তারা।
দলটির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ছিল অনেকটা টেস্ট কেসের মতো। বিএনপি দেখতে চেয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীনরা কীভাবে রিঅ্যাক্ট করে। এর মধ্য দিয়ে দলটি দুটি বিষয় পরিষ্কার হতে চেয়েছিল। প্রথমত, ভিসানীতি ও সর্বশেষ জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন চেয়ে মার্কিন ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠির পর রাজনৈতিক দলগুলোকে সভা-সমাবেশের বিষয়ে সরকারের উদারনীতি বজায় থাকবে, নাকি তারা পুরনো চেহারায় ফিরে যাবে। দ্বিতীয়ত, কর্মসূচিতে হামলা বা বাধা এলে সেটি কোন পর্যায় গিয়ে ঠেকতে পারে। এ ছাড়া এই কর্মসূচির পর যে অবস্থা তৈরি হবে, সেটি বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে আবারও এ সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না সেটি জোরালোভাবে তুলে ধরা। এ পরিস্থিতিতে জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো বিষয় চিন্তার মধ্যেও ছিল না।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, শনিবার আওয়ামী লীগ যা করেছে তা এক বাসচালকের কথাতেই সব ফাঁস হয়ে গেছে। বাসচালক বলেছেন, যে গাড়ি পোড়ানো হয়েছে তার এই পাশে-ওই পাশে পুলিশ ছিল। বিরোধী দলের কোনো মিছিল ছিল না। ওই এলাকাতেই শুক্র ও শনিবার মোটরসাইকেলে মহড়া দিয়েছে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা।’ তিনি বলেন, ‘এটা তাদের (আওয়ামী লীগ) বলা উচিত ছিল, দুষ্কৃতকারীরা করেছে আমরা খুঁজে বের করব। বিরোধী দলের ওপর না চাপিয়ে এ বক্তব্য দিলে বরং আরও বাস্তবসম্মত হতো।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিনটি বাসে আগুন দেওয়ার বিষয়টি আমি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করি। কারণ ২০১৩-১৪ সালের মতো করে এটি আবার রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে বলে মনে হয় না। এটা কারা ঘটিয়েছে, এটা বের হয়ে যাবে। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে এসব ঘটনা ঘটিয়ে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে দুই দল যদি আলোচনার মাধ্যমে বর্তমান সংকট সমাধানে এগিয়ে না আসে, তাহলে রাজনীতিতে সংঘাত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।’
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, ‘সংঘাত ও বাস পোড়ানোর ঘটনা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য ভালো ইঙ্গিত বহন করে না। সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সুষ্ঠু পরিবেশের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেটি নতুন করে আলোচনায় আসবে। আবার বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বাদ দিয়ে সংঘাতে জড়াল, সেটি নিশ্চয়ই সব স্টেকহোল্ডার ভালোভাবে নেবে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনের নামে দেশে ২০১৩-১৪ সালের মতো আগুন সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি যাতে কেউ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে কেউ ২০১৩-১৪ সালের মতো আগুন সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি করে বাংলাদেশের ক্ষতি করতে না পারে।’
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে পঞ্চম ধাপে আটটি বিভাগের ৩৪টি জেলায় আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী নতুনগুলোসহ এ পর্যন্ত সারা দেশে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মাণ ৫৬৪টির মধ্যে ২৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করেছেন।
গত শনিবার বেশ কয়েকটি বাসে বিএনপির অগ্নিসংযোগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের চরিত্র আপনারা ভালো করেই জানেন, এরা সন্ত্রাসী। গতকালও (শনিবার) তারা বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছে। তারা ২০১৩-১৪ সালেও চলন্ত বাস, ট্রেন ও লঞ্চে আগুন দিয়ে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে। দেশের মানুষ গতকাল (শনিবার) তাদের (বিএনপি) ভয়ংকর চেহারা দেখেছে, কারণ তারা আবারও আগুন সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটিয়েছে।’
তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) ইসলামের নামে রাজনীতি করেছে, কিন্তু ইসলামের প্রতি তাদের ভালোবাসা নেই। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে তাদের কোনো অবদানও নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা এবং তাবলিগ জামাতের জন্য টঙ্গীতে এক টুকরো জমি বরাদ্দ করে সারা দেশে ইসলামের সত্যবাণী ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন। সৌদি আরবে হজের পর টঙ্গীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশ করার জন্য বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও অর্জন করেছিলেন।
তিনি বলেন, দেশবাসী যাতে স্বল্প খরচে সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালন করতে পারে, সেজন্য বঙ্গবন্ধু ‘হিজবুল বাহার’ জাহাজ কিনেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে জাতির পিতার আন্তরিক উদ্যোগে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) সদস্য পদ লাভ করে।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, তার সরকার সারা দেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করে সমাজে ইসলামের প্রকৃত চেতনা ছড়িয়ে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। সরকার প্রতিটি জেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অফিস স্থাপন এবং বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উন্নয়ন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী আলেম-ওলামা, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের নামাজের সময় মসজিদে বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় সামাজিক হুমকি সম্পর্কে ওয়াজ করতে বলেন যেন যুবকরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি এবং অন্যান্য অভিশাপ থেকে দূরে থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘আলেম-ওলামাদের এমনভাবে ওয়াজ করা উচিত যাতে যুবকরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ এবং মাদকের সঙ্গে জড়িত না হয়।’
শেখ হাসিনা এর আগে ২০২১ সালের ১০ জুন, ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি, ১৬ মার্চ, ১৭ এপ্রিল এবং গতকাল প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম ধাপে প্রতিটিতে ৫০টি করে মসজিদ উদ্বোধন করেন। অবশিষ্ট মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাসহ ওজু ও নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। এ ছাড়া হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, দাফনের আগে আচার ব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং ইসলামি দাওয়াতের জন্য কনফারেন্স রুম, ইসলামি বই বিক্রয়কেন্দ্র, মসজিদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্য বোর্ডিং সুবিধা থাকবে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এবং সচিব এমডি এ হামিদ জমাদ্দার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া।
অনুষ্ঠানে কক্সবাজার সদর উপজেলা ও খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতারা, সরকারি কর্মকর্তা, আলেম-উলামাসহ সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ওপর একটি ভিডিও-ডকুমেন্টরি প্রদর্শন করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা (আলেম-ওলামা) শুক্রবার জুমার খুতবায় মানুষকে সচেতন করলে অভিভাবক, পিতা-মাতা ও শিক্ষক সবাই আরও সচেতন হবেন যাতে তাদের সন্তানরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি এবং অন্যান্য অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতে না পারে।’ বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি সবাইকে এর বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে এবং সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানান।
ইসলামকে শান্তির ধর্ম আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে সহনশীল ধর্ম। ইসলাম শান্তির ধর্ম, কিন্তু জঙ্গিবাদের মাধ্যমে এর সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিছু লোকের জন্য আমাদের পবিত্র ধর্ম প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।’ সরকার জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে বলে জানান তিনি।
মডেল মসজিদ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ যাতে ইসলামের মর্মবাণী বুঝতে ও অনুধাবন করতে পারে, তার জন্য সরকার মডেল মসজিদ নির্মাণ করছে। তিনি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মধ্যে অনলাইন নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘মসজিদগুলো সরাসরি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে চালানো উচিত যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ মসজিদগুলোর ক্ষতি করতে না পারে।’
বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের খাদ্যের কোনো অভাব নেই, যদিও জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বেড়েছে।’
দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক বৃক্ষরোপণ প্রয়োজন হওয়ায় তিনি সবাইকে অন্তত তিনটি গাছ লাগাতে বলেন একটি ফল, একটি কাঠ এবং একটি ভেষজ চারা।
নতুন চালু হওয়া ৫০টি মসজিদের মধ্যে রয়েছে মাগুরা জেলা মডেল মসজিদ এবং ৪৯টি উপজেলা মডেল মসজিদ। ৪৯টি উপজেলা মডেল মসজিদ গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলা, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ ও হোসেনপুর উপজেলা, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর ও দৌলতপুর, শরীয়তপুরের ডামুড্যা, টাঙ্গাইল সদর, বগুড়ার আদমদীঘি ও সোনাতলা, নওগাঁর রানীনগর, বদলগাছী ও নওগাঁ সদর; চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, নাটোরের সিংড়া, পাবনার বেড়া, ঈশ্বরদী ও পাবনা সদর; রাজশাহীর পুটিয়া ও দুর্গাপুর; গাইবান্ধার পলাশবাড়ী, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, দিনাজপুরের বিরামপুর, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, খালিয়াঝুড়ি ও নেত্রকোনা সদর; জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, ময়মনসিংহের ত্রিশাল, বরিশাল সদর, ভোলার দৌলতখান, ঝালকাঠির নলছিটি, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, চাঁদপুরের হাইমচর ও হাজীগঞ্জ; নোয়াখালী সদর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ও সদর; কক্সবাজার সদর, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, ফেনীর ছাগলনাইয়া, রাঙ্গামাটির রাজস্থলী, কাউখালি ও নানিয়ারচর; খুলনার ফুলতলা ও পাইকগাছা; মাগুরা সদর, মেহেরপুর সদর ও সিলেটের গোলাপগঞ্জ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কক্সবাজার সদর ও খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলা সংযুক্ত ছিল। সেখানে আলেম-ওলামা, ইমাম, মুসল্লি, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাসহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন। বাসস
পরিবেশ ও সামাজিক খাতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য গ্রিন লিডারস অ্যাওয়ার্ড পেলেন রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল। ওমেন্স ফেডারেশন অব ওয়ার্ল্ড পিস অব বাংলাদেশের আয়োজনে গতকাল রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘গ্রিন ফেস্ট ২০২৩’ অনুষ্ঠানে রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনকে এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তরা হলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট, রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল, থিংক ট্যাংক কমিউনিটি ফর ক্লাইমেট চেঞ্জের সদস্য দিলরুবা আহমেদ ও ইনতেখাব মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল উপস্থিত থাকতে না পারায় তার পক্ষে অ্যাওয়ার্ডটি গ্রহণ করেন তার জ্যেষ্ঠপুত্র ও রূপায়ণ গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান মাহির আলী খাঁন রাতুল। তার হাতে অ্যাওয়ার্ডটি তুলে দেন ওমেন্স ফেডারেশন অব ওয়ার্ল্ড পিস অব বাংলাদেশের সভাপতি মেহরীন মাহমুদ।
এ সময় মাহির আলী খাঁন ওমেন্স ফেডারেশন অব ওয়ার্ল্ড পিস অব বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান এবং তাদের এ উদ্যোগকে অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন।
ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ১৭টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৭২৪ জনকে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন থানা, সাভার, আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এসব মামলা হয়েছে।
এসব মামলার মধ্যে ডিএমপির ৯টি থানায় ১৩টি মামলা হয়েছে। বিস্ফোরক উদ্ধার, বাস পোড়ানো, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধাদানের ঘটনায় করা এসব মামলায় বাদী হয়েছে পুলিশ। ডিএমপির মামলায় ৬২৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। আসামিরা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। এসব মামলায় গতকাল পর্যন্ত ১৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় সাত শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। গতকাল রবিবার সচিবালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টেনেট ফিন্যান্স ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও নির্বাচনী পর্যবেক্ষক টেরি এল ইসলের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকেদর এ কথা জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা সাতশরও বেশি হাতেনাতে ধরেছি। যারা আগুন ধরাতে গিয়েছিল তাদের আমরা হাতেনাতে ধরেছি। এদের মধ্যে যাদের সংশ্লিষ্টতা থাকবে না, তাদের থানা থেকেই ছেড়ে দেওয়া হবে।’
এদিকে মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আসামিদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমাম সরকার ওরফে ইসহাক সরকার ও অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ শাখা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সাত্তারসহ স্থানীয় নেতারা রয়েছেন।
জানতে চাইলে ডিসি ফারুক হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, শনিবার বিএনপি যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে সে কর্মসূচির কোনো অনুমতি দেওয়া ছিল না। তারা বেআইনি সমাবেশ করে অগ্নিসংযোগ করে, বাস ভাঙচুর করে, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে, পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং সরকারি কাজে বাধা দেয়। এসব অপরাধে আমাদের ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় এখন পর্যন্ত ১৩টি মামলা হয়েছে। এজাহারনামীয় আসামিদের গ্রেপ্তারে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবি (গোয়েন্দা বিভাগ), বিভিন্ন ক্রাইম ডিভিশনের থানার টিম অভিযান পরিচালনা করছে।
বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষের সময় আওয়ামী লীগের অনেককে অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে যেতে দেখা গেছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না, জানতে চাইলে ডিসি ফারুক হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছিল। তারপর বিএনপি যখন ভাঙচুর করে সে সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ হয়। ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাদের এলাকায় অবস্থান করেছিল। আমাদের পুলিশি কার্যক্রমের সঙ্গে তাদের কার্যক্রমের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
গত শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করে দলটি। সেই মহাসমাবেশ থেকে গত শনিবার ঢাকার প্রবেশমুখগুলোয় অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়। বিএনপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গত শনিবার ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সব প্রবেশমুখে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, উত্তরাসহ বিভিন্ন প্রবেশের রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আহত হয় পুলিশ ও বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী। অনেক স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ডিএমপি সূত্র জানা গেছে, শনিবার রাজধানীর মাতুয়াইলে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় কদমতলী থানায় পুলিশ বাদী হয়ে যে মামলা করেছে, সেখানে ৭০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। যাত্রাবাড়ীতে সংঘর্ষের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল বাস পোড়ানো ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় করা দুটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ১০৯ জন করে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
মামলার একটির এজাহারে বলা হয়েছে, শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানাধীন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক আউট গোয়িং আসমা আলী সিএনজি স্টেশনের পাশের প্রধান সড়কে বিএনপি নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রসহ অবস্থান নিয়ে সরকারবিরোধী সেøাগান দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। এতে যান চলাচল বন্ধ হলে জনগণ ভোগান্তিতে পড়ে। আন্দোলনকারীদের বারবার অনুরোধ করলেও রাস্তা ছাড়েনি। তারা স্বদেশ পরিবহনের বাসসহ তিন-চারটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় ডিএমপির এক যুগ্ম পুলিশ কমিশনারসহ বেশ কিছু পুলিশ সদস্য আহত হন।
যাত্রাবাড়ী থানার আরেক মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শনিবার দুপুর পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইনকামিং সান্টু ফিলিং স্টেশনের সামনে মূল সড়কে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করে রাস্তা অবরোধ করেন। এ সময় রাস্তার ওপর দুই-তিনটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেন।
এ ছাড়া রাজধানীর গাবতলী এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় দারুস সালাম থানার এসআই মো. আছিবুর রহমান তুষার বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করেছেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপির স্থানীয় ৫২ নেতাকর্মীকে।
ডেমরা থানায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী ও জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ ১০৭ স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসআই অংকন সরকার বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।
ডিএমপি সূত্রে আরও জানা গেছে, উত্তরায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে পাঁচটি মামলা হয়েছে। উত্তরা পূর্ব থানায় তিনটি ও উত্তরা পশ্চিম থানায় দুটি করে মামলা হয়েছে। পাঁচটি মামলায় ১৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
উত্তরা পূর্ব থানার মামলায় আসামি করা হয়েছে উত্তরা পূর্ব থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি কফিল উদ্দিন, উত্তরা পূর্ব থানার ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. সুরুজ আলম ও উত্তরা পূর্ব থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সিফাত ইসলাম ওরফে দিপু শিকদারসহ ৩১ জনকে। উত্তরা পূর্ব থানার আরেক মামলায় আসামি উত্তরা পূর্ব থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি কফিল উদ্দিন, উত্তরা পূর্ব থানার ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. সুরুজ আলম, উত্তরা পূর্ব থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক অপু সিকদারসহ ৩৪ জন।
ধোলাইখাল এলাকায় সংঘর্ষ ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ শাখা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সাত্তারসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বংশাল থানার মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমাম সরকার ওরফে ইসহাক সরকারসহ ২৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া একই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৪০০ আসামির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলায় আটক করা হয়েছে সাতজনকে। থানার উপপরিদর্শক মুমিনুল হক বাদী হয়ে গতকাল মামলা করেন।
নাশকতা, ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে সাভারে পৃথক ঘটনায় বিএনপির ৭৩ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় দুই শতাধিক নেতাকর্মীর নামে তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সাভার মডেল থানায় একটি ও আশুলিয়া থানায় দুটি মামলা হয়েছে। তিন মামলার একটি বাদী ক্ষতিগ্রস্ত একজন বাসচালক হলেও বাকি দুটি মামলার বাদী পুলিশ। তবে এসব মামলায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
দেশব্যাপী বিক্ষোভের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ থানা এলাকায় বিক্ষোভ করেছে। গতকাল রবিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালিত হয়। তবে বিক্ষোভে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি অন্যান্য কর্মসূচিগুলোর চেয়ে তুলনামূলক কম দেখা গেছে। নেতারা বলছেন, বিএনপি এদিন মাঠে না নামায় কর্মসূচির পুরো সময় জুড়ে আমাদের নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে হয়নি। তবে নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সব সময়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ জানায়, এদিন মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগ, ওয়ারী, সূত্রাপুর, কোতোয়ালি, বংশাল, লালবাগ, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, চকবাজার, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর, কলাবাগান, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, কদমতলী, মুগদা, সবুজবাগ, খিলগাঁও ও নিউমার্কেট থানা আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ করেছে। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ জানিয়েছে পল্লবী, কাফরুল, গাবতলী ও উত্তরাসহ বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ হয়েছে।
এর মধ্যে শাহবাগ, ডেমরা, চকবাজার, গাবতলী ও উত্তরার বিক্ষোভে উপস্থিতি তুলনামূল বেশি ছিল। অন্যান্য থানায় বিক্ষোভে উপস্থিতি তার চেয়ে কম ছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের কথা বলা হলেও সুনির্দিষ্ট একটি সময়ে বিক্ষোভ ও মিছিল হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াতের ‘অগ্নিসন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্য, অপরাজনীতি, অব্যাহত দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাধে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কৃষক লীগ। রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে অংশ নেন আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা ও মানব সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ প্রমুখ।
এদিকে, দুপুরে পুরান ঢাকার চকবাজারের লালবাগ, চকবাজার, বংশাল ও কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ মিছিল করে। আজিমপুর থেকে শুরু করে চকবাজারে শেষ হয় মিছিলটি। এ সময় প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য ডা. সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরই দেশের মানুষের ভাগ্যের বদল হয়েছে। শেখ হাসিনার অধীনে জনগণ শান্তিতে আছে। দেশের উন্নয়ন ও জনগণের শান্তি বিএনপির সহ্য হচ্ছে না।
অন্যদিকে, কর্মসূচির নামে গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল। এতে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতারা অংশ নেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর নেতারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, কেন্দ্রীয়ভাবে একটি বিক্ষোভ না করে থানায় থানায় কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সে কারণে জোয়ার তৈরি হয়নি। তাছাড়া বিএনপি এদিন মাঠে না নামায় কর্মসূচির পুরো সময়জুড়ে আমাদের নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে হয়নি। তবে নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সব সময়।
এ ছাড়া বিএনপি-জায়ামাতের ‘হত্যা, ষড়যন্ত্র, অগ্নিসন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ বেলা ৩টায় মহাখালী কাঁচাবাজারে শান্তি সমাবেশ করেছে ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তর। এতে অংশ নেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।
রাজধানীর প্রতিটি থানায় থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ করার নির্দেশনা দেওয়া হয় গত শনিবার। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সঙ্গে অন্য সংগঠনগুলোকে সমন্বয় করে কর্মসূচি পালন নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের কারণে চলমান রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নতুন করে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দুই দলের এ পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের মূল টার্গেট ঢাকা দখলে নেওয়া। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসা নিতে বিদেশ পাঠাতে রবিবার বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। পাল্টা জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একই পথে হেঁটেছে। বিএনপিকে ‘আগুন সন্ত্রাস, অপরাজনীতি ও নাশকতার রাজনীতি’ ছাড়ার জন্য সোমবার ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরপর পাল্টা ৩৬ ঘণ্টার হুঁশিয়ারি এসেছে বিএনপির কাছ থেকে।
তার আগে গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবেদন করলে অনুমতির বিষয়টি দেখা যাবে। তবে তার কাছে এরকম কোনো কাগজপত্র আসেনি। ওইদিনই খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার বলেছেন, সরকারের মনোভাব ইতিবাচক হলে তারা আবারও আবেদন করবেন।
পরদিন রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলটিমেটাম দেন। ওইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে বিএনপি বলছে, সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে।
দুই দলের রাজনীতি ও ঘোষিত আলটিমেটাম মাঠের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না, সে সম্পর্কে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিএনপির আলটিমেটামের ফল কী হবে আর আওয়ামী লীগেরও দীর্ঘ ৩৬ দিনের আলটিমেটাম কেন এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতর বেশ কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজধানী ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি আলটিমেটাম। ঢাকায় বিএনপির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার কৌশলের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে দলটি আলটিমেটাম দিয়েছে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই তার পাল্টা জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দুই দলের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা। ঢাকার রাজনীতি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে না পারলে রাজনীতিতে জুতসই অবস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি।
সারা দেশের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেয়ে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নির্ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপির ওই শীর্ষসারির নেতারা। তাই বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ইস্যু করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। পর্যাপ্ত নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকে গেলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তাই ইস্যু খালেদার চিকিৎসা, কিন্তু লক্ষ্য ঢাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৩৬ দিনের আলটিমেটামের পেছনে রয়েছে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ঢাকায় নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে ততই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের শান্তি যেন বিঘিœত না হয়, সেজন্যই আমরা বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে থাকি। বিএনপিকে জনগণ বিশ্বাস করে না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে সত্যিই নিতে চাইলে আলটিমেটাম কেন দেবে বিএনপি? আইনি জটিলতা নিরসন করে বিদেশ নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস-সহিংসতানির্ভর রাজনীতি করে, বিশ্বাস করে। তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা।’ তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে কেন বিএনপি আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না? তার কিছু হলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দায় নিতে হবে।’
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুই দলের ঘোষিত আলটিমেটামকে কথার বাকযুদ্ধ হিসেবে নিয়েছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এগুলো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অবস্থান ধরে নেওয়া যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের কোনো গা নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে আইনগতভাবে যেতে হবে। নির্বাহী কোনো সিদ্ধান্তে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ফলে আলটিমেটাম মূলত নিষ্ফল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দাবি আদায় করার জন্য জনগণ থেকে দাবি উঠতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণকে রাস্তায় নামাতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন যেসব বক্তব্য এগুলো মঞ্চের বাকযুদ্ধ।’
বিএনপির আলটিমেটাম নিয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি (গতকাল মঙ্গলবার) সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষ করে এসেছি।’ আলটিমেটামের পেছনে ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তো আমরা সভা-সমাবেশ করছিই।’
জানতে চাইলে বিএনপির আরেক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আলটিমেটাম সম্পর্কে ক্লিয়ার কিছু জানি না।’
বিএনপিকে ‘অপরাজনীতি’ ছাড়তে ৩৬ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে ‘সঠিক পথে’ না এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির ‘অপরাজনীতির কালো হাত’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে আলটিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটি বিএনপির জন্য শেষ বার্তা।’ গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় এবং যাত্রাবাড়ীতে পৃথক সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। উত্তরার সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ আলটিমেটাম দেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি দুই সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে এখন রাজপথে আছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় গত সোমবার দুটি সমাবেশ হয়।
এর আগে থেকেই ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির সভা-সমাবেশের বিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করলেও মাঠের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি।
ভারতের বিপক্ষেই খেলেছিলেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। এবার বিশ্বকাপটাই ভারতে, যে ধর্মশালা দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ অভিযান, সেখানেই আছে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির কৃতিত্ব। হিমালয়ের কোলে, ছবির মতো সুন্দর সেই মাঠে আবারও খেলবে বাংলাদেশ, কিন্তু খেলবেন না তামিম ইকবাল।
অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বরাবরের মতো সংবাদ সম্মেলনে নিরাবেগ কণ্ঠে একের পর এক নাম পড়ে শোনাননি প্রধান নির্বাচক, গভীর রাতে কোনো ইমেইলেও আসেনি খেলোয়াড় তালিকা। বিশ্বকাপগামী ১৫ ক্রিকেটারের প্রত্যেকের হাতে হাতে সুন্দর করে বাক্সবন্দি বিশ্বকাপ জার্সি তুলে দেওয়ার ভিডিও নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচিতদের পরিচিত করেছে বিসিবি। এজন্য বিসিবির সংশ্লিষ্টরা বাহবা পেতেই পারেন, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যেমনটা হৃদয় জিতে নিয়েছে ক্রিকেটারদের পরিবারের আপনজনদের দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করিয়ে।
কারা থাকছেন আর কারা থাকছেন না, তা নিয়ে খুব বড় কোনো চমক ছিল না বিশ্বকাপ দলে। সবাই শুধু একটাই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন। তামিম ইকবাল শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে আছেন নাকি নেই। অবসর, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে প্রত্যাবর্তন, ব্যক্তিগত কাজে দুবাই ভ্রমণ, ইংল্যান্ডে ইনজেকশন, দেশে অনুশীলন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসে ব্যাট করে ৪৪ রান এবং পরে নিজেকে আবারও পুরোপুরি ফিট নয় বলে পরের ম্যাচে বিশ্রাম। স্বভাবতই এই তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপে দেখতে চাইবেন না কোনো কোচ এবং অধিনায়ক। সোমবার গভীর রাতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় সাকিবের ছুটে যাওয়া এবং সিডনি থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে বোর্ড সভাপতির বাসায় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পা রাখাই প্রমাণ করে, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের এ তৎপরতা।
তামিমের মতো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সহজ নয়। নিঃসন্দেহে দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, ওয়ানডেতে ১৪টা সেঞ্চুরি। হুট করে অবসর নিলে যাকে ফিরিয়ে আনেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারেও তামিম বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগের কথাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেশাদারির কাছে হার মেনেছে আবেগ, যুক্তির কাছে হেরে গেছে অতীত। তামিম নামটা আছে বিশ্বকাপ দলে, তবে পদবিটা ইকবাল নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, যার বয়স আর তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় কাছাকাছি।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল অতিমানবীয়। ৬০৬ রান আর ১১ উইকেট। তবু দল হলো অষ্টম। গোটা আসর চোটজর্জর অধিনায়ককে বইল দল। প্রতিটি সকাল শুরু হতো এক অনিশ্চয়তা নিয়ে, খেলতে পারবেন তো মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা? শুরুর দিকে নতুন বলে কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ গড়েছে রানের পাহাড়। সেই অভিজ্ঞতা কী করে ভুলবেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ান জেমি সিডন্স আর অধিনায়ক সাকিব এজন্যই ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দলে রাখেননি চোটগ্রস্ত মাশরাফীকে। হাথুরুসিংহে জাতীয়তায় শ্রীলঙ্কান হলেও অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে থাকতে হয়ে গেছেন তাদের মতোই পেশাদার। তাই তো কঠিন সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।
কাল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এবং দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও আবদুর রাজ্জাক। তামিমকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে মিনহাজুল শুনিয়েছেন মুখস্থ কথাই, ‘আপনারা তো এবারের বিশ্বকাপের দলটা এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন। তামিম ইকবালের তো অনেক দিন ধরেই ইনজুরি নিয়ে চিন্তা আছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর... সবকিছু বিবেচনা করেই, সবাই আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশ্বকাপে অনেক দিনের ব্যাপার। অনেক ম্যাচ আছে।’
তামিমের চোটটা তো নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এ চোট নিয়ে তিনি ভুগছেন, নিজের ইচ্ছামতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এসব থেকে নিজেকে সরিয়েও রেখেছিলেন। চিকিৎসাও করিয়ে আনা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে কেন তাকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ দেওয়া এবং ম্যাচ খেলিয়ে বাদ দেওয়া এ প্রসঙ্গে মিনহাজুলের উত্তর, ‘দেখুন, কিছু কিছু ইনজুরি আছে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বেকায়দায় পড়বে। আপনি দেখুন, নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে... প্রথম ম্যাচ খেলেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটা খেলেছে... এরপর কিন্তু শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দিতে হয়েছে।’
‘তামিম অন্যতম সেরা। কিন্তু চোটের দুশ্চিন্তা থাকলে নিজেকে মেলে ধরা কঠিন। মেডিকেলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। এটা আগেই বলেছি, এখন দল ঘোষণা করা হয়েছে’বলছিলেন প্রধান নির্বাচক। বিসিবি সভাপতি বা সাকিব ও কোচের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে সেটা তো এখানে প্রকাশ করব না।’
১০ দলের বিশ্বকাপে দশম দল হিসেবে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। কেন এত দেরি, ফ্লাইটে ওঠার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে বিশ্বকাপের দল দেওয়া হলো কেন এ নিয়ে হাবিবুল বাশারের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে সেটা তো আমাদের সঙ্গের ব্যাপার। দল নির্বাচন করতে যখন বসি... খেলোয়াড় হিসেবে তামিমের... আমরা সুস্থ-সবল তামিমকে পেতে... এটা নিয়ে আমাদের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ভাবতে হয়েছে। তাই দেরি হয়েছে।’
তামিমের বাদ পড়ার ডামাডোলে হারিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর ফেরাটাও। সেই ইংল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্রামের মোড়কে বাদ পড়েছিলেন। তার বদলে অনেক বিকল্প খুঁজেও শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে আবার তার কাছেই ফিরলেন নির্বাচকরা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৪৯ আর ২১ রানের দুটো ইনিংসেই হয়ে গেছে বিশ্বকাপের টিকিট। প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘আগেই বলেছি, বিশ্বকাপের আগে যেকোনো খেলোয়াড়কে যেকোনো সিরিজে দেখব। ও পরিকল্পনাতেই ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে দেখেছি।’
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে, মাত্র দুই ম্যাচ দেখে সৌম্য সরকারকে দলে নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তানজিদ তামিম আর তানজিম সাকিব নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন। যথাক্রমে মাত্র পাঁচ আর দুই ম্যাচ খেলে তারা বিশ্বকাপ যাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। এমন নয় যে, এ স্বল্প সময়ে দারুণ কিছু করে দেখিয়েছেন, প্রধান কারণ বিকল্পের অভাব।
শুধু তামিম ইকবালই নয়, দলের লজিস্টিক ম্যানেজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বড় ভাই ও সাবেক খেলোয়াড় নাফিস ইকবালকেও। তামিমের অবসর-কা-ে তিনি বিসিবি সভাপতির মেসেজের জবাব দেননি, যা পাপন নিজে বলেছেন গণমাধ্যমে। হয়তো তারই প্রতিশোধ, সেই সঙ্গে ড্রেসিংরুমের সঙ্গে তামিমের সব সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।
অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন তামিম, দুটি ম্যাচ খেললেন। কিন্তু যেভাবে বাদ পড়লেন, তাতে মনে হতে পারে অবসরের সিদ্ধান্তটাই ছিল সঠিক। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামীতেও তামিমের দলে ফেরাটা বোধহয় অনিশ্চিতই হয়ে গেল।
তামিম প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে দলটা কেমন হয়েছে দেখা যাক। পাঁচ পেসার, দুই অফ স্পিনার, দুই বাঁহাতি স্পিনার মিলিয়ে বোলিং আক্রমণটা নেহায়েত খারাপ নয়। লিটন দাসের সঙ্গে তানজিদ তামিম অথবা মেকশিফট ওপেনার মিরাজ। সহঅধিনায়কের পদ থেকে বাদ পড়েছেন লিটন, সেটা করা হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। সাকিব, মুশফিক, তাওহীদ হৃদয়দের নিয়ে মিডল অর্ডারের পর ফিনিশার রোলে মাহমুদউল্লাহ। এ নিয়েই ধর্মশালায় আফগানদের বিপক্ষে লড়াইয়ের শুরু। প্রত্যাশা অনেক বড়, প্রস্তুতি গোলমেলে। ভরসা একটাই, শুরুর আগে পরিস্থিতি এমন গোলমেলে হলেই কেন যেন ভালো করে বাংলাদেশ!
বিশ্বকাপ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (সহঅধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান, তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
স্থায়ীভাবে ঢাকা বসবাসের আমার ষাট বছর পূর্ণ হলো। এই ষাট বছরে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ঢাকার উত্থান-পতন, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, আন্দোলন-অভ্যুত্থানসহ অনেক কিছু দেখার সুযোগ পেয়েছি। যখন ঢাকায় প্রথম এসেছিলাম তখন মনে হতো ঢাকা একটি বড় গ্রাম। এখানে গ্রামের মতোই বৃষ্টি হয়, অমাবস্যা পূর্ণিমা হয়, শীত-গ্রীষ্ম হয়। ভারী থেকে লঘু বর্ষণ হয়। ঢাকার চারদিক বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়। সদরঘাট, চকবাজার, সোয়ারীঘাট, ইসলামপুর এসব ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের এলাকা। গুলিস্তানকে ঘিরে বিপণি কেন্দ্রগুলো বিকশিত হতে শুরু করে। মতিঝিল গড়ে উঠছে। ঢাকার উন্নয়নের জন্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট সংক্ষেপে (ডিআইটি)’র কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তখনো ধোলাইখাল অতিক্রম করে কোর্টকাচারি, জগন্নাথ কলেজ, সদরঘাটের দিকে যেতে হতো। ঢাকা শহরের আবর্জনা নিষ্কাশনের জন্য আর্মেনিয়ানদের উদ্যোগে ধোলাইখাল চালু হয়েছিল।
ঢাকা শহরের ১৬১০ সালের আগে ও পরের মানচিত্র দেখলে বোঝা যায় যে শহরটা কী রকম খাল-বিল-নালা দিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। যে কারণে শহরটি কখনোই ডুবে যাওয়ার কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। সেই সময়ে একমাত্র যাতায়াতের উপায় ছিল নৌকা। এর মধ্যেই ১৬১০ সালে ইসলাম খাঁ রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করেন। বহুকষ্টে ঘোড়া, হাতি এবং পদাতিক বাহিনীকে রাজমহল থেকে বাংলায় আসতে হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধীনে ঢাকার পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। স্থানিক বিবেচনাকে অগ্রাহ্য করে যখন বিদেশিরা নানা ধরনের শহর উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় তার পরিণতি যে কত ভয়াবহ হয় তার প্রমাণ ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। ধোলাইখাল বন্ধ করে সেখানে মাটির নিচে বড় বড় পাইপ বসিয়ে নারিন্দাতে একটি পাম্প মেশিন বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়।
বিদেশিদের পরামর্শে এই ব্যবস্থার ফলে ঢাকায় গুরুতরভাবে পানি নিষ্কাশনের সংকট দেখা দেয়। একই পদ্ধতিতে বিভিন্ন জায়গায় পাইপ বসানো হয় এবং পানি নিষ্কাশনের গুরুতর সংকট দেখা দেয়। এরপর ঢাকা রাজধানী হলো, বিপুল পরিমাণ মানুষের আগমন ঘটল এই শহরে। বিভিন্ন জলাভূমি, ফাঁকা জায়গা যে যেখানে পারে বাড়িঘর তৈরি করতে শুরু করল। সরকারও প্রথমে ডিআইটি এবং পরে রাজউকের মাধ্যমে নানা জায়গায় আবাসনের ব্যবস্থা করতে শুরু করল। সেই ব্যবস্থা শুরু করতে গিয়ে ধানম-ি, গুলশান, বনানী, উত্তরা এসব জায়গায়ও জলাভূমিগুলো ভরাট করে শহরের আবাসিক এলাকা বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করা হয়। এখন বৃষ্টিপাত মানেই সর্বত্রই জলাবদ্ধতা এবং মানুষের অন্তহীন দুর্ভোগ।
আশির দশকের পর থেকে গত চল্লিশ বছরে শহরটি কংক্রিটের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। সেই ষাটের দশকের গাছপালাগুলো নেই, ফাঁকা জায়গা নেই, বৈচিত্র্যহীন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে শহরটি কিছু ম্যাচ বাক্সের মতো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা একটা আবর্জনার স্তূপ মনে হয়। শহরটায় এত পরিমাণ গাড়ি, বিশেষ করে প্রাইভেট গাড়ি একেবারেই পরিকল্পনাহীন নগরীতে চেপে বসেছে। মাত্র গত দশ পনের বছরে কিছু ফ্লাইওভার এবং সম্প্রতি মেট্রোরেলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বটে কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশ পরিকল্পনাহীন হওয়ায় যানজট কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে সেবা সংস্থাসমূহ একজন আরেকজনের প্রতি দোষ চাপিয়ে আপাতত নিজেদের গা বাঁচিয়ে চলছে।
আমার এই ষাট বছরের ঢাকা বসবাসের ইতিহাসে গত তিনদিন আগে যখন আমি মগবাজার থেকে ধানম-ির বাসায় এসেছি তখন সময় লেগেছে চার ঘণ্টা! এই চার ঘণ্টার মধ্যে সাড়ে তিন ঘণ্টাই ছিলাম আমি পানির মধ্যে। কিন্তু চলাচলের কোনো উপায় ছিল না। এক জায়গাতেই এক থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেছি। সামনে পেছনে গাড়ির চাপ, কোনো কোনো গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তার সামনে বা পেছনে যাওয়ারও কোনো উপায় ছিল না। শহরে কোনো ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনো ধরনের সরকারি উদ্যোগ দেখা যায়নি। খবরে প্রায়ই দেখে থাকি কোনো দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের বাহিনীগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে মানুষের সাহায্যে সরকারের প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। যা ভেবেছিলাম তাই, এই দুর্যোগের মধ্যে কিছু প্রাণ যাবে, কিছু লোক আহত হবে এবং সত্যিই দেখলাম যে ওই রাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন মারা গেছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত এক শিশুকে নিয়ে উদ্ধারকারীরা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার জন্য গিয়েছে কিন্তু চিকিৎসা পায়নি। এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয় না এই কারণে যে, একবার আমার ছেলে স্কুল থেকে ফেরার সময়ে বেবিট্যাক্সিতে দুর্ঘটনায় পড়ে তার শরীর রক্তাক্ত হয়। সেই সময়ে তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না, চিকিৎসার জন্য কাছের একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে গেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। রক্তাক্ত অবস্থাতেই সে ঘরে ফিরে আসে।
আমার কাছে প্রশ্নটি অন্য জায়গায়, আমরা নিয়তিতে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। দ্রব্যমূল্য বাড়বে, বেকারত্বের সৃষ্টি হবে, মানুষ চিকিৎসা পাবে না এটাই যেন স্বাভাবিক। আর এর বিনিময়ে কোটি কোটি ডিমের দাম পাঁচ টাকা করে বাড়িয়ে একদিনে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কোটিপতি হয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় অমাত্যরা এর সমাধানে বিনিদ্র রজনী পার করবেন না, আমলারা নিজের সন্তানদের পৃথিবীর নিরাপদ কোনো জায়গায় পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকবেন। সাংসদ-ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করে আরও কোটি কোটি টাকার মালিক হবে। আমরা কি এমনটি দেখতে পাব কোনোদিন দেশ যারা চালায় তাদের ঘুম নেই, সারা রাত পথে পথে ঘুরছেন কোথায় কী হলো সেসব দেখে পরদিনই মানুষকে জানানো যে এই ব্যবস্থা এইভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব। সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ! রাজনীতিবিদরা শুধুই বোঝেন ক্ষমতা। মার্কিন ভিসা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই, কিন্তু পাঁচজন মানুষ যে অতিবর্ষণের ফলে পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অকালে মারা গেল তাতে তাদের কপালে একটুও ভাঁজ পড়ে না।
ক’দিন পরে পরে রাস্তার পাশে বিরাট বিরাট কংক্রিটের পাইপ দেখা যায়। বহুদিন মানুষকে ভুগিয়ে একদিন সেই পাইপগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে। কিন্তু এই পাইপের কাজগুলো কী? তারা কি পানি নিষ্কাশনের কাজ করে? নাকি মাটির নিচে গিয়ে নানা রকম ময়লা-আবর্জনায় বন্ধ হয়ে নিচের দিকের পানিকে ওপরের দিকে ঠেলে দেয়? আমাদের এক নাট্যকর্মীর বা অভিনেতা বন্ধু উবারে করে তার কল্যাণপুরের বাসায় যাচ্ছিলেন। কল্যাণপুর যাওয়ার পর উবারের ড্রাইভার আর যেতে রাজি হলেন না। বুক সমান পানি ভেঙে সেই বন্ধু বাড়ি যাওয়ার পথে ম্যানহোলের মধ্যে পড়ে যান। তার একটি পা ক্ষতবিক্ষত হয় এবং মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এখনো ট্রমায় ভুগছেন।
এটা সত্য, বাংলাদেশ বানভাসি ও ঝড়-ঝঞ্ঝার দেশ। মানুষ এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করে বহু শতাব্দী ধরে বেঁচে আছেন। মানুষের কোনো অভিজ্ঞতা আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র কিছুতেই নেবে না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গৃহে কিছু অনভিজ্ঞ লোক নকশাঁ বানাবে এবং বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয়ে একটি প্রকল্প সাজাবে, তার মধ্য থেকে কোটি কোটি টাকা চলে যাবে ক্ষমতাসীনদের পকেটে। আজই পত্রিকায় দেখলাম প্রমাণসহ একজন লিখেছেন ভাঙ্গা থেকে খুলনার রেললাইন আপাতত এখন প্রয়োজন নেই। এতে বিশাল অর্থের অপচয় হবে। কিন্তু দেখা যাবে প্রকল্পটি হলো ঠিকই, কিন্তু এটা কারও কাজে লাগছে না। এমনি অনেক অকেজো প্রকল্প হরহামেশাই হয়। আমাদের সংস্কৃতিতে ষাটের দশক পর্যন্ত দেশপ্রেমের বিষয়টি বড়ই প্রবল ছিল। হয়তো সেটা পরাধীনতার কারণে। সবাই যার যার মতো দেশের জন্য কাজ করতে ছুটত। সত্তরের দশকের পর যে চায়নি তা নয়। কিন্তু সম্পূর্ণ বিষয়টি চলে গেছে শাসকের হাতে। জনগণের মেধাকে কখনোই গ্রহণ করার চেষ্টা করা হয়নি। গত ষাট বছরে এবং আমার এই বয়সে আমাদের কাজে লাগানোর রাষ্ট্রীয় কোনো ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়নি। সব কিছু সরকারি বেতনভুক্ত লোকদের কাছে এবং রাজনীতিবিদদের হাতে। তারা যাই করবেন তাই হবে। তবে সবচেয়ে বেদনার বিষয় এই পরিস্থিতির কোনো উন্নতিরও আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। একমাত্র গণজাগরণ এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবই সমাজকে আবার কর্মময় করে তুলতে পারে। অন্যথায় খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় নির্বাচন আর ভিসার খবরই আমরা দেখতে পাব। ওই পাঁচজন হতভাগ্য মানুষ যে রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলার শিকার তার সত্যতা কখনোই ভুলবার নয়। এসব ভেবেই হয়তো আলেকজান্ডার পাঞ্জাব থেকে ফিরে গিয়েছিলেন এবং সেনাপতিকে বলেছিলেন ‘সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ’।
লেখক: অভিনেতা, নাট্যকার ও কলামিস্ট
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আখেরি নবী ও রাসুল। তিনি মানবজাতির জন্য আল্লাহতায়ালার সর্বশেষ দূত। তার প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য ছাড়া আল্লাহকে বিশ্বাস ও আনুগত্যের দাবি অর্থহীন। কোরআন মাজিদের বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়টি ঘোষিত হয়েছে। আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র পথ খাতামুন্নাবিয়ীন হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অনুসরণ। তাই তার জন্য হৃদয়ে গভীর ভালোবাসা পোষণ করা এবং তার জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা প্রত্যেক উম্মতের ইমানি কর্তব্য।
কোরআন মাজিদে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নবী কারিম (সা.)-এর জন্য দরুদ পাঠের তথা আল্লাহর দরবারে তার জন্য দোয়া করার আদেশ করেছেন। এটা একদিকে যেমন আল্লাহর কাছে তার রাসুলের মর্যাদার প্রমাণ অন্যদিকে মুমিন বান্দার রহমত ও বরকত লাভের অন্যতম উপায়। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানকে এই সহজ ও মূল্যবান আমলটি বেশি বেশি করার তৌফিক দান করুন। নিম্নে দরুদ ও সালামের কিছু ফজিলত উল্লেখ করা হলো-
গোনাহ মাফের আমল : দরুদ রহমত, মাগফিরাত ও দরজা বুলন্দির আমল। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করবেন। -সহিহ মুসলিম : ১/১৬৬
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে আল্লাহ তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করবেন, তার দশটি গোনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি দরজা বুলন্দ হবে। -সুনানে নাসায়ি : ১/১৪৫
ফেরেশতাদের দোয়া লাভ : দরুদ পাঠকারীর জন্য ফেরেশতারা মাগফিরাতের দোয়া করেন। হজরত আমের ইবনে রবিয়া (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে খুতবার মধ্যে বলতে শুনেছি, আমার ওপর দরুদ পাঠকারী যতক্ষণ দরুদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরুদ বেশি পড়বে না কম। -মুসনাদে আহমদ : ৩/৪৪৫
কিয়ামতের দিন নবীর নিকটবর্তী থাকার সুযোগ : কিয়ামতের দিন দরুদ পাঠকারী নবীজির সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়েছে। - জামে তিরমিজি : ১/১১০
দুনিয়া ও আখেরাতের মকসুদ হাসিল : দুনিয়া ও আখেরাতের সব মকসুদ হাসিল হবে দরুদ পাঠকারীর। হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) জিকরুল্লাহর (আল্লাহর জিকিরের) খুব তাকিদ করলেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে থাকি। আমি আমার দোয়ার কতভাগ আপনার জন্য নির্ধারণ করব? তিনি বললেন, তোমার যে পরিমাণ ইচ্ছা।
আমি বললাম, চার ভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা হয়। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে কি আমার দোয়ার পুরোটাই হবে আপনার প্রতি দরুদ? তিনি বললেন, তবে তো তোমার মকসুদ হাসিল হবে, তোমার গোনাহ মাফ করা হবে। -জামে তিরমিজি : ২/৭২
দরুদ গরিবের সদকা : দরুদের আমলের মাধ্যমে গরিব পাবে সদকার সওয়াব। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে মুসলমানের দান করার সামর্থ্য নেই, সে যেন দোয়ায় বলে- এটা তার জন্য জাকাত (সদকা) হিসেবে গণ্য হবে। -ইবনে হিব্বান : ৩/১৮৫
সালাম নবীর কাছে পৌঁছানো হয় : উম্মতের সালাম নবীজির কাছে পৌঁছানো হয়। রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহতায়ালার জমিনে বিচরণকারী কিছু ফেরেশতা আছেন, তারা আমার কাছে উম্মতের পক্ষ থেকে প্রেরিত সালাম পৌঁছিয়ে থাকেন। -মুসনাদে আহমদ : ১/৪৪১
দরুদ ছাড়া দোয়া ঝুলন্ত থাকে : দরুদবিহীন দোয়া আসমান-জমিনের মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, যে পর্যন্ত তুমি তোমার নবীর (সা.) ওপর দরুদ না পড়বে ততক্ষণ দোয়া আসমানে যাবে না, আসমান-জমিনের মধ্যে থেমে থাকবে।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।