
ঢাকায় বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মহাসমাবেশ এবং সর্বশেষ রাজধানীর প্রবেশমুখে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলাসহ সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের ব্রিফিং করেছে দলটি। গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিএনপির আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ইরানসহ ২৫টি দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন।
ব্রিফিংয়ে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতারা দেশ রূপান্তরকে জানান, মহাসমাবেশে জনগণের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে জনস্রোত, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের যৌথ হামলার বিষয়গুলো কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়। এ ছাড়া পুলিশ ও আওয়ামী লীগের যৌথ হামলার শিকার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য কূটনীতিকদের কাছে তার ওপর হামলার চিত্র তুলে ধরেন। পাশাপাশি তাদের ব্রিফিংয়ের কপি সরবরাহ করা হয়।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চান সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তাই তাদের ব্রিফিং করা হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। গত ২৯ জুলাই আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার ও সরকারি দলের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের যৌথ হামলা, মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তারের বিষয়গুলো আমরা বলেছি। বাংলাদেশে যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে, গণতন্ত্র দেখতে চায় গণতান্ত্রিক অর্ডার দেখতে চায়, মানবাধিকার দেখতে চায় তাদের জানা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ যে পথে চলছে, ২০১৪ ও ’১৮ সালের নির্বাচন আমাদের সেটাই স্মরণ করিয়ে দেয়। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করা, সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যত ঘটনা সরকার ঘটাবে আমরা আপনাদের কাছে তুলে ধরব, সবাইকে বলব। এ ধরনের আক্রমণ, গ্রেপ্তার, যাদের আহত করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা, অনেকে বিদেশে আছে, অনেকে হজে আছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা উদ্দেশ্যটা তো বোঝাই যাচ্ছে। তাদের টার্গেট হচ্ছে আবার ভয়ভীতি দেখিয়ে একটা নির্বাচনী কৌশলে ভোট চুরি করে আবার ক্ষমতা দখল করা।’
এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘দেশে ও দেশের বাইরে এদের (এই সরকার) অধীনে যে নির্বাচন হবে না... এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। সেজন্য তো দেশের সবার পক্ষ থেকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কথাটা এসেছে।’
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, জাপান, চীন, রাশিয়াসহ ২৫টি দেশে কূটনীতিকরা অংশ নেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, শামা ওবায়েদ, আসাদুজ্জামান আসাদ, নওশাদ জমির, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, নজরুল ইসলাম আজাদ, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, রুমিন ফারহানা, ফারজানা শারমিন পুতুল প্রমুখ। বৈঠকটি রুদ্ধদ্বার হওয়ায় হোটেলে প্রবেশাধিকারে কড়াকড়ি ছিল। গণমাধ্যমের সাংবাদিকরাও হোটেলের বাইরে অবস্থান করেন।
সকাল থেকে মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় গোটা রংপুর শহর। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভা মাঠে জড়ো হতে থাকেন আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা। বেলা গড়াতে গড়াতে জনসমুদ্রে রূপ নেয় উত্তরাঞ্চলের এই বিভাগীয় শহর। সেই জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিন। জনগণকে সেবা করার সুযোগ দিন। আমি আপনাদের কাছে সেই সুযোগ চাই।’
দেশের মানুষের ভাগ্য বদলাতে জীবন দিতে প্রস্তুত, এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাবা-মা, ভাই সব হারিয়েছি। বাংলাদেশের জনগণ এটা তো আমার সংসার, এরাই আমার আপনজন। আপনাদের মাঝেই আমি খুঁজে পাই আমার বাবা-মা, ভাই-বোনের স্নেহ।’
গতকাল বুধবার বিকেলে জিলা স্কুল মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
বেলা সোয়া ১টার দিকে হেলিকপ্টারে রংপুর পৌঁছান সরকারপ্রধান। বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটে জনসভা মাঠে প্রবেশ করেন তিনি। জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার আগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ২৭টি নবনির্মিত উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগদানের আগে প্রধানমন্ত্রী রংপুর সার্কিট হাউসে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সমাবেশ শুরুর আগেই মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকা পূর্ণ হয়ে যায় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে আসা মানুষে। ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার’; ‘শেখ হাসিনার দুই নয়ন, রংপুরের উন্নয়ন’; ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’ নানা স্লোগানে শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেয় রংপুরবাসী।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত তোরণ-ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয় গোটা শহর।
সকাল ৮টা থেকে সভাস্থল নগরীর ঐতিহাসিক রংপুর জিলা স্কুল মাঠে দূর-দূরান্ত থেকে রঙিন টি-শার্ট ও ক্যাপ পরিহিত নেতাকর্মীরা ঢাকঢোল পিটিয়ে আসা শুরু করেন। এ সময় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা আসেন জনসভাস্থলসহ জিলা স্কুলের দিকে। বাহারি সাজসজ্জা আর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বিভিন্ন সেøাগানে নেচে-গেয়ে উচ্ছ্বাস করেছেন তারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবশেষ রংপুরে এসেছিলেন ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর। এ সময় তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দুটি নির্বাচনী জনসভা করেন। সাড়ে ৪ বছরের বেশি সময় পর শেখ হাসিনা রংপুরে আসেন। এর আগে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি একই মাঠে জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী। বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘একমাত্র নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নতি হয়। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গেছে।’
দেশ ও জনগণের উন্নয়ন করতেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে, এই রংপুরে কখনো মঙ্গা হয় নাই। রংপুরে কখনো খাদ্যের অভাব দেখা দেয়নি। দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে আসলে, নৌকা মার্কায় ভোট পেলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি কাজের লক্ষ্য দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। দেশের মানুষের উন্নতি করা। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’
টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই তো ক্ষমতায় ছিল, এই রংপুরের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ কাজ করেনি। ওই খালি নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলে কাজ হয়। তিনি বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে। আজকে হতদরিদ্র বলতে গেলে নাই, মাত্র ৫ শতাংশ। আল্লাহর রহমতে সেইটুকুও থাকবে না।
রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন উন্নয়নকাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই অঞ্চলে আর কখনো, কোনো দিন কোনো দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে না, মঙ্গা দেখা দেবে না। আমরা সেভাবে আপনাদের এই রংপুর বিভাগের উন্নয়ন করে দিচ্ছি।’
একটি গোষ্ঠী দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক, এখানে একটা গোষ্ঠী আছে যারা সব সময় বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলে। জাতির পিতাকে হত্যা করে সেই খেলা শুরু হয়েছিল। বারবার ক্ষমতা দখল, হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্রের রাজনীতি হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমার হারাবার কিছু নেই। সব হারিয়েও একটি প্রতিজ্ঞা নিয়ে ফিরে এসেছি। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মুখে অন্ন জোগাব, প্রতিটি মানুষকে ঘর করে দেব, জীবনমান উন্নত করব। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বাবার মতো জীবন দিতে আমি প্রস্তুত।’
দেশের মানুষ এখন শান্তিতে ভোট দিতে পারে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে, অনেক আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। মানুষ শান্তিমতো এখন ভোট দিতে পারে। এই ভোট দেওয়ার জন্য আমরা ছবিসহ ভোটার লিস্ট করেছি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স করে দিয়েছি। শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা আমরা হাতে নিয়েছি।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খেলা হবে, ডিসেম্বরে ফাইনাল খেলা হবে। বিএনপির এক দফা খাদে পড়ে গেছে। খাদে পড়া দলের কোনো দফা বাস্তবায়ন হবে না এবং তাদের কোমর ভেঙে গেছে।’
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন। সঞ্চালনা করেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বান এ কে এম ছায়াদত হোসেন (বকুল)। আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, নৌপরিবহনমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান, সাবেক সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দীসহ অন্য কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
জনসভায় হুইলচেয়ারে ৯৬ বছরের মজিবুর মাস্টার : স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান মাস্টার (৯৬) হুইলচেয়ারে এসেছিলেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একনজর দেখতে রংপুরের বদরগঞ্জ থেকে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশকে সফল করার জন্য, সহযোগিতার জন্য এসেছি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমার কোনো কষ্ট নাই। সবার উদ্দেশ্যে বলব, আসুন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আবারও শেখ হাসিনার সরকার দরকার।’ তিনি সবাইকে আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে দেশ পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় অংশ নিয়েছে হিজড়া জনগোষ্ঠী : ‘রাষ্ট্র সমাজ পরিবারে, সমান হব অধিকারে’ এবং ‘প্রধানমন্ত্রীর আগমন রংপুরে স্বাগতম’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠীর একটি দল মিছিল করতে করতে জনসভায় অংশ নেয়। জনসভায় উপস্থিত থেকে তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তারা বলেন, হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ভোটাধিকার ও তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দেওয়ায় তারা অনেক বেশি আনন্দিত এবং গর্বিত। সেই কৃতজ্ঞতার জায়গা থেকে কোনো রাজনৈতিক দলের কিংবা কারও নেতৃত্বে নয়; বরং তারা নিজেদের অর্থায়নে, নিজেদের উদ্যোগে এই জনসমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন।
এ বিষয়ে রংপুর হিজড়া জনগোষ্ঠীর নেতা আনোয়ারা ইসলাম রানী বলেন, ‘আমাদের নিজেদের কোনো দোষ নেই। তারপরও জন্মের পর থেকেই আমরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে অবহেলিত, লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত ছিলাম। আমরা সমাজ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে জীবনযাপন করেছি।’
বিকেল ৩টা ২৩ মিনিটে বিচারক যখন রায় পড়ছেন আদালতে তখন তিলধারণের জায়গা নেই। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে জনাকীর্ণ আদালতের ভেতরে পিনপতন নীরবতা আর অন্যদিকে বাইরে দুপক্ষের আইনজীবীদের স্লোগান ও হট্টগোল। এমন পরিস্থিতিতে ৩৮ মিনিটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলার বিচারের রায় ঘোষণা করেন বিচারক।
রায়ে তারেক রহমানকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুটি ধারায় তিন ও ছয় বছর করে মোট নয় বছর কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এ দুর্নীতিতে সহযোগিতা করার অভিযোগে তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত।
১৬ বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা এ মামলায় গতকাল বুধবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান রায় দেন।
রায়ে বলা হয়, জোবাইদা রহমানের নামে আসামি তারেক রহমান ৩৫ লাখ টাকার এফডিআর করলেও তার সম্পদ বিবরণীতে বলেছেন, এ টাকা জোবাইদা রহমানের মা তার মেয়েকে উপহার দিয়েছেন। এটি প্রমাণের দায়িত্ব তাদের ওপর থাকলেও তারা প্রমাণ করতে পারেননি। ৩৫ লাখ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত হওয়া সত্ত্বেও তারেক রহমানের মিথ্যা দাবিকে সত্য প্রমাণের জন্য চেষ্টা করেছেন।
তারেক রহমানের বিষয়ে রায়ে বলা হয়, এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি তার সম্পদ বিবরণীতে ২ কোটি ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮৭ হাজার টাকার তথ্য গোপন করেছেন এবং যে সম্পদের তথ্য প্রকাশ করেছেন তার মধ্যে ৫৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সম্পদের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ দুটি মিলিয়ে তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।
রায়ে সাজার পাশাপাশি তারেক রহমানকে ৩ কোটি টাকা অর্থদ- অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ড এবং জোবাইদা রহমানকে ৩৫ লাখ টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে এক মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া তারেক-জোবাইদার অপ্রদর্শিত সম্পদ হিসেবে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেয় আদালত।
বিগত ওয়ান ইলেভেনের পটভূমিতে তারেক রহমান গ্রেপ্তার হয়ে ২০০৮ সালে কারামুক্তি পান। এরপর স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান। ১৫ বছর ধরে দুজন সেখানেই রয়েছেন। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত ও আইনের বিধান অনুযায়ী পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী শুনানি করতে পারেননি। বিএনপির কোনো পর্যায়ের রাজনীতিতে না থাকা জোবাইদার বিরুদ্ধে এই প্রথম কোনো ফৌজদারি মামলার রায়ে সাজা হলো। অন্যদিকে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এ রায়সহ এখন পর্যন্ত পাঁচটি ফৌজদারি মামলার রায় হয়েছে। এর আগে দুর্নীতির পৃথক দুটি মামলায় ১০ ও ৭ বছর, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন এবং মানহানির একটি মামলায় তার দুই বছরের সাজা হয়েছে। সব মিলিয়ে বছরের হিসাবে এখন পর্যন্ত ৫৮ বছরের কারাদন্ড হয়েছে তার।
গতকাল বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হলে তারেক ও জোবাইদা রহমানকে দুজনকে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে বলে জানান দুদকের আইনজীবীরা।
সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো অভিযোগের ফৌজদারি মামলায় অন্যূন দুই বছর কারাদন্ড দন্ডিত হলে এবং মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর সময় অতিক্রান্ত না হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান না।
হট্টগোল, হাতাহাতি : রায় কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সকাল থেকে বৃষ্টির মধ্যে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত চত্বরে জড়ো হতে থাকেন। রায় ঘিরে আদালত এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিকেলে রায় ঘোষণা পর্যন্ত আইনজীবীরা থেমে থেমে পরস্পরের উদ্দেশে স্লোগান দেন। দিনভর আদালত এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি চলে। বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা এ রায়কে ফরমায়েশি অভিযোগ করে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। অন্যদিকে সরকাপন্থি আইনজীবীরাও পাল্টা স্লোগান দেন। বিকেল ৪টার দিকে রায়ে সাজার অংশ ঘোষণার পরপরই সরকারপন্থি আইনজীবীরা এজলাসের বাইরে এসে উল্লাস প্রকাশ করেন। তারা ‘এই মাত্র খবর এলো তারেক রহমানের সাজা হলো’ স্লোগান দেন। অন্যদিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বিক্ষোভ করে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ ‘এই বিচার মানি না’ ‘মানব না’ স্লোগান দেন। একপর্যায়ে আদালত ভবন চত্বরে দুপক্ষের আইনজীবীরা হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তি জড়িয়ে পড়েন। এ সময় বিএনপিপন্থি কতিপয় আইনজীবীদের জুতা প্রদর্শন করতে দেখা যায়।
যেভাবে দন্ডিত হলেন তারেক-জোবাইদা : ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলাটি করে দুদক। তারেক রহমান, তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও তারেকের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। অন্য মামলায় গ্রেপ্তার তারেক রহমানকে ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর এ মামলাতেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ সংশ্লিষ্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। পরে মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ও তা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে তিনটি রিট আবেদন করেন তারেক দম্পতি। ওই বছর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে এর বৈধতা প্রশ্নে রুল দেয়। এরপর দীর্ঘদিন মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকে।
২০২২ সালের শুরুর দিকে মামলাটি সচলের উদ্যোগ নেয় দুদক। হাইকোর্ট ২৬ জুন এক রায়ে রুল খারিজের আদেশ দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দিলে বিচারের পথ খোলে। অন্যদিকে পৃথক রিট আবেদনে জোবাইদার মামলা বাতিল প্রশ্নে দেওয়া রুল ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল খারিজ করে রায় দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জোবাইদাকে আট সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির আইনজীবীরা আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতির আবেদন) করলে গত বছর ১৩ এপ্রিল সেটি খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। এর আগে ২০১০ সালের ১৩ অক্টোবর তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবার মান্দ বানুকে এ মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেয় হাইকোর্ট। গত ১৩ এপ্রিল তারেক ও জোবাইদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। একই সঙ্গে তাদের পক্ষে আইনজীবীর শুনানির আবেদন নাকচের আদেশ হয়। এ মামলায় ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে গত ২৪ জুলাই পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৪২ জন সাক্ষ্য দেন। এরপর দুদক ২৭ জুলাই যুক্তিতর্কের শুনানি শেষ করার পর রায়ের তারিখ ধার্য হয়।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দুদকের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের একটা বিলম্বিত বিচারের পর রায় হয়েছে। এখন সাজার পরিমাণের বিষয়টি নথিপত্র পর্যালোচনা করে আমরা দেখব অতিরিক্ত (সাজা) চাওয়া যায় কি না। তবে এই মুহূর্তে আমরা মনে করি যেহেতু মামলাটি নিষ্পত্তি এবং রায় হয়েছে, এতে আমরা সন্তুষ্ট।’ এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জোবাইদা রহমান এখন দুর্নীতির মামলায় একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। নৈতিক স্খলন বা দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন না।’
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে রায় দেওয়া হয়েছে তা রাজনৈতিক জিঘাংসার ফসল। মনগড়া, নির্দেশিত হয়ে ফরমায়েশি রায় দিয়েছেন বিচারক। তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের প্রতি অবিচার করা হয়েছে।’
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে কি না, তা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে তারেক-জোবাইদার সাজার রায়ের পর গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন।
আইনের শাসন প্রতিফলন ঘটেছে : আইনমন্ত্রী
তারেক-জোবাইদার বিরুদ্ধে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা বাংলাদেশে যে আইনের শাসন আছে তারই একটা প্রতিফলন। রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী পুত্র যদি এরকম দুর্নীতি করে, আমার তো মনে হয় সেখানে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়াটা উচিত।’
ফরমায়েশি বিচার উল্লেখ করে বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘মামলাটা দায়েরের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। তখন সেই সরকারের সঙ্গে তাদেরই নিয়োগপ্রাপ্ত সেনাপ্রধানের যথেষ্ট সখ্য ছিল, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। তারাই দুর্নীতির মামলা করেছিল।’
আগামী নির্বাচনের আগে এ রায় বিভ্রান্তিমূলক বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে বিভ্রান্ত করার কী আছে? বিচারিক কাজ হয়েছে, রায় বেরিয়েছে। আসামি তো আগে থেকেই সাজাপ্রাপ্ত। এখন নতুন করে এটা (রায়) দিয়ে ওনার (তারেক রহমান) ভাবমূর্তি খারাপ করার তো আমাদের প্রচেষ্টার প্রয়োজন পড়ে না।’
সাজা কার্যক্রমে দন্ডপ্রাপ্তদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ফিরিয়ে আনার চেষ্টা সবসময় থাকবে। এটা সরকারের দায়িত্ব। ফিরিয়ে আনার চেষ্টা আমরা অবশ্যই করব।’
বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির দিন সংঘর্ষ ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনার পাশাপাশি দলটির দুই নেতার প্রতি সরকারের আচরণ রাজনীতিতে নতুন বার্তা হয়ে এসেছে। এ বিষয়টিকে বিএনপি ‘নিম্নমানের মশকরা’ ও দলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা হিসেবে দেখলেও আওয়ামী লীগ বলছে, তারা সৌহার্দ্যরে বার্তা দেওয়ার নতুন কৌশল প্রয়োগ করেছে। এ ঘটনাটি বাদ দিলেও সম্প্রতি রাজনীতিতে দুই দল কাছাকাছি স্থানে কর্মসূচি পালন করলেও সংঘাতে জড়ায়নি। এ বিষয়ে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন নির্বাচন ঘিরে বিদেশিদের নজরদারি এবং সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির প্রভাব পড়েছে দেশের রাজনীতিতে। তারা বলছেন, সরকারপক্ষ যেমন বিরোধীদের ওপর চড়াও হওয়া থেকে দূরে থাকছে, তেমনি বিরোধীপক্ষও সহিংসতার দায় নিজেদের ঘাড়ে নিতে নারাজ।
বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ছিল গত ২৯ জুলাই। ওইদিনের সংঘাতের ঘটনায় পরদিন বিক্ষোভ মিছিল করে আওয়ামী লীগ। এর পরদিন সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। আওয়ামী লীগ একইদিন সমাবেশের ঘোষণা দিলেও পরে কর্মসূচি বাতিল করে। যে কারণে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে নতুন করে আর উত্তেজনা দেখা যায়নি।
গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত নতুন ভিসানীতির উল্লেখ করে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এখনকার রাজনীতিতে ভিসানীতির প্রভাব দেখা যাচ্ছে। সরকার ও বিরোধীপক্ষ, তথা রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব পক্ষই সহিংসতা থেকে দূরে থাকতে চাচ্ছে। সরকারপক্ষ অর্থাৎ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর প্রত্যক্ষভাবে ভিসানীতির চাপ একটু বেশি হলেও, বিরোধীপক্ষের আচরণেও চাপে থাকার ছাপ দেখা যাচ্ছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত ২৮ জুলাই বিএনপির মহাসমাবেশ ও জামায়তের সমাবেশ এবং একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ঘিরে দেশব্যাপী জনগণের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার থেকে রাস্তাঘাটে চলাচল ছিল সীমিত। বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা ও হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগও উঠেছিল। কিন্তু বাস্তবে সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। পরদিন শনিবার বিএনপি ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিরোধীদের আন্দোলন কর্মসূচিতে সরকারি দল বাধা দিয়ে আসছিল বিগত সময়ে। বিরোধীপক্ষকে মাঠে কঠোরভাবে মোকাবিলা করেছে। কিন্তু এবার তারা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকলেও কোনো ধরনের সহিংসতায় জড়াচ্ছে না। আবার ভিসানীতির কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নজির স্থাপন করছে। বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ডিবি অফিসে আপ্যায়ন করা হয়েছে। আমানউল্লাহ আমানকে হাসপাতালে দেখতে গেছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা ব্যতিক্রমী ঘটনা। কাজেই বিদেশিদের এ নজরদারির ইতিবাচক দিক আছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, গত দুই বছর ধরে দেশের রাজনীতি, মানবাধিকার এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরব। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা এখনো আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাথায়ও বিষয়টি রয়েছে। আবার নির্বাচন বানচাল বা নির্বাচন প- করতে কোনো পক্ষ যদি সক্রিয় থাকে তাদের জন্য ভিসানীতি প্রয়োগ করা হবে। এ ঘোষণায়ও সব পক্ষই কিছুটা সহনশীল আচরণ করছে। তাছাড়া গত ছয় মাস ধরে দেশে নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল সফরে রয়েছে। আর গত মাস থেকে তো দেখা যাচ্ছে, কোনো না কোনো প্রভাবশালী দেশের প্রতিনিধিদল থাকছে বাংলাদেশে। তারা নির্বাচনকেন্দ্রিক ঘটনাপ্রবাহ প্রত্যক্ষ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন কবীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমারা চায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পূর্ণ হোক। তারা খেয়াল রাখছে এবং ঘন ঘন সফরে আসছে। এর আগে এ বছরের শুরুতে ডোনাল্ড লু এসেছেন। তারপর ডেরেক শোলে এসেছেন। আর গত মাসে এসেছেন উজরা জেয়া। এরা কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে ঘন ঘন আসছেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের এ আসার ইন্ডিকেশনটা হলো এই যে, তারা আমাদের সব কর্মকা-ে সংযুক্ত থাকতে চাচ্ছে। তারা বুঝতে চাচ্ছে, আমরা কোথায় যাচ্ছি, আমাদের কী অগ্রগতি হয়েছে। সক্রিয়তা কতটুকু। কাজেই সেই সক্রিয়তা বা সেই উদ্যোগ যদি আমরা না দেখাই তাহলে আমার ধারণা, তারা এখন পর্যন্ত যে ইতিবাচকভাবে জিনিসটা গাইড করার জন্য সচেষ্ট আছে, সেই জায়গাটাতে ভিন্ন চিন্তা আসতে পারে।’
হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘অনেকে শঙ্কা করছেন, তারা আরেকটা স্যাংশন দেবে কি না। সেটা আমি এভাবে দেখতে চাই না। তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী যদি তারা আমাদের সক্রিয়তা না দেখে মানে তারা যে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের কথা বলছে। সে ক্ষেত্রে কিন্তু তারা তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে কার সঙ্গে দেখা করলেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাদের বক্তব্যটা গুরুত্বপূর্ণ।’
সাবেক এ রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা কোনো দলের পক্ষ নয়। তারা বলছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কথা। এ কথা আওয়ামী লীগের জন্য যেমন প্রযোজ্য, তেমনি ১৫ বছর আগে বিএনপির জন্য প্রযোজ্য ছিল। আগামী ১০ বছর পরে হয়তো অন্য কারও জন্য প্রযোজ্য হবে। তারা মূলত ডেমোক্রেসিটাকে (গণতন্ত্র) শক্তিশালী করতে চায়। একটা নির্বাচন শুধু ডেমোক্রেসির একটা অংশ। এখন তারা বড় প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বলছে। তারা নাগরিক অধিকার, মিডিয়া ফ্রিডমের কথা বলছে, নাগরিক সমাজের কথা বলছে। নানা বিষয় নিয়ে আসছে। এগুলো যদি না থাকে তাহলে নির্বাচন হলেও আবার একই সমস্যা হবে। বাতাবরণটা যদি একই থাকে তাহলে যে-ই আসবে, সে-ই সেভাবে কাজটা করবে। তাহলে ভবিষ্যতে আর এ সংকট হবে না। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্র সেই জায়গাটাতেই মনোযোগ দিচ্ছে। তাদের মধ্যে এ বিষয়ে একটা সমন্বয় রয়েছে।’
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, আগে তো বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করারও অনুমতি দেওয়া হতো না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চাইলে গোলাপবাগ মাঠ দেয়। বিদেশিরা নির্বাচন নিয়ে সহায়ক ভূমিকা নেওয়ার ফলে বিরোধীপক্ষকে অন্ততপক্ষে কর্মসূচি করতে দিচ্ছে। আবার র্যাব এবং ওই সংস্থাটির সাবেক কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকায় বিরোধীপক্ষের কর্মসূচিগুলোতে পুলিশের মধ্যেও বেশ সহনশীল আচরণ লক্ষ করা গেছে। পুলিশ প্রধানের বক্তব্য থেকেও তা পাওয়া যায়। বিশেষ করে বিএনপির দুই নেতাকে আটক করার পর পুলিশ যে সৌজন্য দেখিয়েছে, সেটাও সবাই লক্ষ করেছে। বিগত সময়ে দেখা গেছে, এ ধরনের কর্মসূচিতে ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়। বিরোধীপক্ষও শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছে, যা অতীতে দেখা যায়নি। এর কারণ মার্কিন ভিসানীতিতে সবাই পড়বে।
এদিকে গত সোমবারও বাংলাদেশে চলমান বিক্ষোভে সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বানও জানিয়েছে দেশটি। একই সঙ্গে মানুষকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সুযোগ দেওয়া এবং সেই লক্ষ্যে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
এ ছাড়া গত মঙ্গলবার ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে আগামী অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল আসবে।
২০২৪ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খনন, ওয়ার্কওভার (সংস্কার) করে প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়াতে গত বছর আগস্টে পরিকল্পনা করেছিল সরকার। এখন পর্যন্ত আটটি কূপের কাজ শেষে ছয়টি থেকে দিনে ৯৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে। দুটি কূপের কাজ চলছে এবং বাকিগুলোর কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ড সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনেকটা এগিয়ে আছে। বাপেক্স মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে আর বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডসের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়।
এখন দেশি কূপ থেকে দৈনিক প্রায় ২১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। আমদানিকৃত উচ্চমূল্যের এলএনজি থেকে আরও প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। এরপরও ঘাটতি থাকছে প্রায় ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাস সংকটের কারণে এক যুগ ধরে বাসাবাড়িতে নতুন সংযোগ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, দেশে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অনুসন্ধানে গাফিলতি রয়েছে। কারণ আমদানিতে ঝোঁক বেশি। সম্প্রতি কাতার ও ওমান থেকে এলএনজি আনার চুক্তি হয়েছে। মালয়েশিয়া ও অন্য দেশ থেকেও এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি খোলা বাজার থেকে চড়া দামে কেনা হচ্ছে এলএনজি।
ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের যে পরিকল্পনা তা আগামী বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। যেসব ওয়ার্কওভার ও উন্নয়ন কূপ খননের কথা রয়েছে তার অনেকগুলো হয়তো শেষ হবে। কিন্তু অনুসন্ধান কূপ করা সম্ভব নয়; কারণ এগুলো সম্পূর্ণ নতুন জায়গায় করতে হয়। প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণেই লাগে এক-দুই বছর। আগামী বছর ১২টি অনুসন্ধান কূপ করার কথা। অথচ বাংলাদেশ বছরে এ ধরনের কূপ খনন করে সাধারণত এক থেকে তিনটি। এত কূপ কীভাবে খনন সম্ভব তার কোনো নির্দেশনা নেই। আউটসোর্সিং করেও তো সম্ভব নয়। হাস্যকর ব্যাপার।’
তিনি বলেন, “সরকারের জ¦ালানি আমদানির ঝোঁক নিয়ে যে সমালোচনা হয় তাতে রাশ টানতেই সাময়িকভাবে এসব করা হয়। এতে ব্যর্থ হলে সরকার বলবে, ‘আমরা দেশি গ্যাস অনুসন্ধানের পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। কিন্তু দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তা করতে পারল না’। তখন আবার আমদানি করবে। আগেও পাঁচ বছরের মধ্যে ১০৮টি কূপ খননের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ঢাকঢোল পিটিয়ে। আমরাও খুশি হয়েছিলাম। হঠাৎ একদিন সব ছাইভস্ম হয়ে গেল। বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নে তৎপর হওয়া দরকার। এতদিনে যদি বছরে পাঁচটা কূপও খনন করা যেত তাহলে গ্যাসের এত সংকট হতো না। এখনো সে সুযোগ রয়েছে।”
পরিকল্পনাধীন ৪৬টি কূপের মধ্যে ১৫টি উন্নয়ন কূপ, ১৬টি ওয়ার্কওভার কূপ ও ১৫টি অনুসন্ধান কূপ। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুসন্ধানে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন কূপকে উন্নয়ন কূপ, পুরনো গ্যাসক্ষেত্র সংস্কারের মাধ্যমে গ্যাস পাওয়া গেলে সেটিকে ওয়ার্কওভার কূপ ও সম্পূর্ণ নতুনভাবে সন্ধানের জন্য কূপ করা হলে তাকে অনুসন্ধান কূপ বলা হয়।
জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স), সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফএল)।
সূত্রমতে, বাপেক্সের ১৯টি কূপের মধ্যে পাঁচটির খনন শেষে তিনটিতে প্রতিদিন ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে। এর দুটি অনুসন্ধান কূপ (টবগী-১ ও ইলিশা-১) এবং একটি উন্নয়ন কূপ (ভোলা নর্থ-২)। উৎপাদিত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ করতে প্রসেস প্ল্যান্ট সংগ্রহ ও স্থাপনের জন্য দরপত্র মূল্যায়নের কাজ চলছে। শ্রীকাইল নর্থ-১ ও শরীয়তপুর-১-এ দুটি পৃথক কূপ খননের পরও গ্যাস পাওয়া যায়নি। বাপেক্সের কর্মকর্তারা মনে করছেন, খননের ফলে যে তথ্য পাওয়া গেছে ভবিষ্যতে ওই এলাকায় অনুসন্ধানে তা সহায়ক হবে। বাকি ১৪টির মধ্যে শাহবাজপুরের পাঁচটি কূপ খনন করবে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম। এখন ডিপিপি তৈরির কাজ চলছে। এটা শেষ করতে অন্তত দুই মাস লাগবে। আরও তিনটি কূপে (শ্রীকাইল ডিপ-১, মোবারকপুর ডিপ-১ ও ফেঞ্জুগঞ্জ-১) ডিপ ড্রিলিং বা গভীর খননের প্রয়োজন হওয়ায় তা ঠিকাদারের মাধ্যমে করানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বাপেক্স। এজন্য ডিপিপি তৈরির কাজ চলছে।
এসব কূপে সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার মিটার গভীরে গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। বাপেক্সের রিগ দিয়ে ৫২০০ থেকে ৫৪০০ মিটার পর্যন্ত খনন করা যায়।
পরিকল্পনাধীন আরও ছয়টি কূপ রয়েছে যেগুলো বাপেক্স নিজেই খনন ও অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে। সুন্দলপুর, শ্রীকাইল, জকিগঞ্জ ও জামালপুরে চারটি কূপ খননের জন্য ডিপিপি তৈরি করে জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। বাকি দুটির ডিপিপি আগামী মাসে পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বাপেক্স।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণ জানতে একাধিকবার প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েবকে ফোন দিয়ে এবং তার কার্যালয়ে গিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির দুজন কর্মকর্তা জানান, কাজ শুরুর আগে অনুমোদন পেতে দেরি হওয়া ও কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অলসতাও দায়ী।
পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছরের মধ্যে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানির ১৩টি কূপের কাজ শেষ হবে। তখন দৈনিক গ্যাস মিলবে ১৭৩ মিলিয়ন ঘনফুট। এক বছরে মাত্র একটি কূপের ওয়ার্কওভার (তিতাস-২৪) শেষে মাত্র সাড়ে ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. আবদুস সুলতান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাকি ১২টি কূপের ডিপিপি তৈরি করে গত মাসে জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদনের পর দরপত্র আহ্বানের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় মালামাল কেনা হলে মূল কাজ শুরু হবে। আশা করছি, আগামী বছরের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে।’
সূত্র জানায়, আগামী বছরের মধ্যে সব কূপের কাজ শেষ করা যাবে না। বড়জোর পাঁচ থেকে ছয়টা কূপের কাজ হতে পারে। ডিপিপি তৈরিতে দেরির কারণেই কাজ পিছিয়ে গেছে।
বাপেক্স ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানির তুলনায় সিলেট গ্যাস ফিল্ডের অগ্রগতি ভালো। তারা সাতটি ওয়ার্কওভার কূপ, ছয়টি অনুসন্ধান কূপ ও একটি উন্নয়ন কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে।
কাজের অগ্রগতির বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আশা করছি আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ১৪টি কূপের কাজ শেষে দৈনিক ১৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাব। ইতিমধ্যে বিয়ানীবাজার-১ কূপের ওয়ার্কওভার শেষে সেখান থেকে দৈনিক ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। কৈলাশটিলা-২, সিলেট-৭, রশিদপুর-২ ও রশিদপুর-৫ ওয়ার্কওভারের অনুমোদন হয়েছে। কৈলাশটিলা-২ দিয়ে শুরু করেছি। আগামী দুই মাসের মধ্যে এ কূপ থেকে গ্যাস পাওয়ার আশা রয়েছে।’
‘এ কূপের পাইপলাইন নির্মাণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। গ্যাস পেলেই সরাসরি জাতীয় গ্রিডে দেওয়া সম্ভব হবে। চারটি কূপ থেকে দৈনিক ৩৫ থেকে ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার আশা রয়েছে। গত ২৪ জুন সিলেট-১০-এ অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়েছে। কূপটি ৩৩০০ মিটার গভীরে খনন করতে হবে। প্রায় ১২৭০ মিটার খনন হয়েছে। কৈলাশটিলা-৮-এ অনুসন্ধান কূপ খননের কাজ শুরু হবে আগামী সেপ্টেম্বরে’ বলেন মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘রশিদপুর-৯-এর খননকাজ শেষ হয়েছে। এ গ্যাস সরবরাহ করতে পাইপলাইনের কাজ চলছে। এখান থেকে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। আগামী দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে কৈলাশটিলা-২ ও রশিদপুর-৯ কূপ থেকে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’
সূত্রমতে, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বাকি চারটি (রশিদপুর-১১, রশিদপুর-১৩, ডুপিটিলা-১, কৈলাশটিলা-৯) অনুসন্ধান কূপ ও একটি (সিলেট-১১) উন্নয়ন কূপ খনন করবে প্রতিষ্ঠানটি। ডিপিপি পেট্রোবাংলার মাধ্যমে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন শেষে দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ শুরু হবে।
অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করে তারা এসব পরিকল্পনা করে না। মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের মাথা থেকে এসব বের হয়। তাদের এ ধরনের কাজ সম্পর্কে ধারণাই নেই। পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দেওয়া হয় আর বাপেক্স ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিপদে পড়ে।’
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে রাজনৈতিক সভায় যোগ দিয়ে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন বাংলাদেশের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য (চট্টগ্রাম) খাদিজাতুল আনোয়ার (সনি)। পরে ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসের হস্তক্ষেপে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। গতকাল বুধবার ঢাকা ও মাস্কাটের একাধিক কূটনৈতিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ওমানে পৌঁছান খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। ওইদিন রাতেই রাজধানী মাস্কাটের হাফফা হাউজ হোটেলের এক রাজনৈতিক সভায় তিনি যোগ দিয়েছিলেন।
খাদিজাতুল আনোয়ার আওয়ামী লীগ থেকে একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য হন। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন। তিনি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির প্রয়াত সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে।
ওমানে সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ারের আটকের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা জানি না। কোনো এমপি ব্যক্তিবিশেষ যদি যান, ওটা ব্যক্তিগত উদ্যোগে, সরকারিভাবে কাউকে পাঠাইনি। এটা তো আপনার কাছ থেকে শুনলাম। এগুলো আমরা জানি না। উই ডোন্ট নো।’
ওমানের কূটনৈতিক এবং বাংলাদেশ কমিউনিটি সূত্রে জানা গেছে, দেশটিতে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সদস্যদের সঙ্গে খাদিজাতুল আনোয়ারের সভাটি সেখানকার পুলিশের বাধার কারণে শেষ হতে পারেনি। অনুমতি না নিয়ে ওই সভার আয়োজন করা হয়েছিল, পুলিশ এসে সেটি বন্ধ করে দেয়। পরে সেখান থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সভা-সমাবেশ করতে গেলে সে দেশের নাগরিকদের পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। আর বিদেশিরা সভা করতে চাইলে তা বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে দেখা হয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ দূতাবাস ওমানের পুলিশের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর মুচলেকায় খাদিজাতুল আনোয়ারকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২ নভেম্বর। পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা, কানাঘুষা; শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
বর্তমান উপাচার্যই আবার দায়িত্ব পাবেন নাকি নতুন কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে এ আলোচনাই চলছে এখন। আলোচিত হচ্ছে কয়েকজন শিক্ষকের নামও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন কানাঘুষারও অবসান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্য থেকেই কাউকে বাছাই করার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। গুণী কোনো শিক্ষক উপাচার্যবিষয়ক আলোচনার মধ্যে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হবে কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন।
রীতি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। কিন্তু এবার সিনেট অধিবেশন হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য অধিবেশন ডাকবেন কি ডাকবেন না; ওপর মহলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানেন না। উপাচার্য নিজেও বিষয়টি খোলাসা করছেন না।
অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন অসুস্থতা, ছুটি, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে একজনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাদেশের নিয়ম অনুসরণ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হোক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং আগামী নির্বাচনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘ভিসি প্যানেল নিয়ে আলোচনা নেই। উপাচার্যও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তাদের মধ্য থেকেই কারোর পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এ বিষয়ক আলোচনায় রয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। পরে প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সামলাচ্ছেন তিনি। দুই মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার নজির নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তার দায়িত্ব পালনের শেষ দেখছেন অনেকে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন তিনি।
ইমেরিটাস অধ্যাপক বা অন্য কোনো গুণী শিক্ষক নেই উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গুণী শিক্ষকদের সামনে আনার যে ধরনের কাঠামো থাকা উচিত তা নেই। যারা তোশামোদ করতে পারে, অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে, তাদেরই প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়ে আসা হয়। সত্যিকারের গুণী শিক্ষক এবং অনেক ভালো গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা কখনো প্রশাসনের দায়িত্বে আসতে পারেন না। তারা ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি দিতেও রাজি নন।’
অতীতে উপাচার্যদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটা ভারসাম্য ছিল। এখন তা নেই। এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদগুলো দেওয়া হয়।
পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন বা ভিসি প্যানেল নিয়ে আগ্রহ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের। বিএনপিঘোষিত এক দফাতেই তারা মগ্ন। যদিও সিনেটে তিনজন প্রতিনিধি থাকায় সুযোগ তাদেরও রয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন না হলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিষয়ে ভাবছি না। এ বিষয়ে আমাদের ফোকাস নেই। আমাদের ফোকাস হচ্ছে এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিবর্তন আসবে।’
শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা নীল দল এখনো এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিনি। যথাসময়ে দলের সভায় এ নিয়ে কথা হবে। মনোনয়ন কে পাবেন, তার আলোচনাও সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ তিনজন বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। আমরা উনাদের সমর্থন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের গতি অনুযায়ীই সব চলবে। এ বিষয়ে যাদের ভাবা প্রয়োজন তারা অবশ্যই ভাববেন।’ সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন হলে আমরা ডাকি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।