
গত এক সপ্তাহ ধরেই ঢাকায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ একটি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু ঢাকার বাইরে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ৩০ জুন দেশের ১২ জেলা ডেঙ্গুমুক্ত ছিল। সেদিন দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মোট ডেঙ্গু রোগীর ২৪ শতাংশ ছিল ঢাকার বাইরে। এক মাসের মাথায় ৩০ জুলাই সব জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন ঢাকার বাইরে রোগী বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ শতাংশ। এমনকি সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ঢাকার বাইরে রোগী আরও বেড়ে ৪৫ শতাংশে পৌঁছে। অর্থাৎ গত এক মাসে ঢাকার বাইরে রোগী বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বাড়লেও রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ‘স্থিতিশীল’ বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন। তিনি গতকাল বুধবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের হার মোটামুটি স্থিতিশীল, তবে ঢাকার বাইরে আক্রান্তের হার বাড়ছে। ঢাকায় কয়েকটি এলাকায় এখনো ডেঙ্গু সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে অন্যতম হলো যাত্রাবাড়ী, মুগদা, উত্তরা, জুরাইন ও মিরপুর। এসব এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী যাত্রাবাড়ী এলাকায়। বিভাগীয় পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, আক্রান্তের দিক থেকে ঢাকার পরেই চট্টগ্রামের অবস্থান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, ঢাকার বাইরে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গু রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। শহরের তুলনায় গ্রামে ডেঙ্গু রোগী ছড়িয়ে পড়ার পেছনে এডিস মশার আরেক প্রজাতি ‘অ্যালবোপিকটাস’কে মূল কারণ মনে করছেন কীটতত্ত্ববিদরা। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডেঙ্গু রোগ ছড়ানোর সঙ্গে যে দুই ধরনের মশা জড়িত তার একটি এডিস ইজিপ্টাই, অন্যটি এডিস অ্যালবোপিকটাস। এর মধ্যে ইজিপ্টাই ঢাকা বা শহরাঞ্চলে বেশি থাকে। আর এর বাইরে গ্রামাঞ্চলে এডিস অ্যালবোপিকটাস। এবার গ্রামাঞ্চলে এডিস অ্যালবোপিকটাস ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। যদিও এ ব্যাপারে এসব কীটতত্ত্ববিদদের কাছে সাম্প্রতিক কোনো গবেষণা নেই। কিন্তু ২০১৯ সালের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তারা বলছেন, গ্রামে এডিস অ্যালবোপিকটাসের ঘনত্ব ও রোগ ছড়ানোর সক্ষমতা বেড়েছে।
এ ব্যাপারে কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকার বাইরে বেশ কিছু জায়গায় আগে থেকেই অ্যালবোপিকটাস মশা বেশি ও সেখানে ডেঙ্গুও বেশি। এমন হতে পারে, এরই মধ্যে অ্যালবোপিকটাসের বৈশিষ্ট্যেও কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এখন তারা বেশি পরিমাণ ভাইরাস ছড়াতে পারে। আমরা এমনও জানতে পেরেছি, কয়েক জায়গায় ইজিপ্টাই পাওয়া যাচ্ছে না, কিন্তু অ্যালবোপিকটাস আছে ও সেখানে ডেঙ্গু হচ্ছে।
গত ১৪ জুলাই এ বছরের প্রথম ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। সেদিন ঢাকায় রোগী ছিল ১৮৪ জন, কিন্তু বাইরে ছিল ২৬৫ জন। এরপর গত ১৯ দিনের মধ্যে ৯ দিনই ঢাকার বাইরে রোগী বেশি ছিল। বিশেষ করে গত চার দিন একটানা ঢাকার বাইরে বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক জ্যেষ্ঠ কীটতত্ত্ববিদ খলিলুর রহমান দেশ রূপান্তরকে জানান, গ্রামে প্রচুর ডেঙ্গু রোগী হচ্ছে। বরিশালে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকেও রোগী আসছে হাসপাতালে। বরিশালে জুনের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত রোগী ছিল তিনশোর নিচে, সেখানে মধ্য জুলাইয়ে রোগী বেড়ে হয় ২২০০-২৩০০ হয়। এখন পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এসব রোগী বেশিরভাগ আসছে গ্রাম থেকে। বরিশালে শহরের চেয়ে গ্রামের রোগী বেশি। এরকম আরও কয়েকটি জেলার গ্রামেরও একই অবস্থা।
এই কীটতত্ত্ববিদ বলেন, এখন গ্রামে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে অ্যালবোপিকটাস। যদিও কোনো জরিপ হয়নি, কিন্তু অতীতের ধারণা থেকে এটি নিশ্চিত। কিছু কিছু গ্রামে বৃষ্টি হচ্ছে। সুতরাং মশার প্রজনন উৎস তৈরি হচ্ছে প্রচুর। নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল ও খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রামের মানুষ এখন মাটির মটকা ও ড্রামে বৃষ্টির পানি ধরে রাখে। ঢাকা শহরের পাশে নারায়ণগঞ্জেও দেখেছি প্রচুর মানুষ মটকা ও ড্রামে বৃষ্টির পানি জমা করে রেখেছে। ওইসব জায়গায় এখন প্রচুর মশা প্রজনন ঘটাচ্ছে। মশা হয়তো আগেও ছিল, কিন্তু ভাইরাস কম ছিল। অথচ ঈদের সময় মানুষ গ্রামে যাওয়ায় ভাইরাসের ঘনত্ব বেড়ে গেছে। ফলে ঈদের এক মাস পর এখন রোগী বাড়া শুরু হয়েছে।
কীটতত্ত্ববিদ মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, এবার ঢাকায় ৯৮ শতাংশ এডিস ইজিপ্টাই ও ২ শতাংশ অ্যালবোপিকটাস পাওয়া গেছে। কারণ গাছপালা নেই। তাই অ্যালবোপিকটাসও কম। গ্রামে গাছপালা বেশি, সেখানে অ্যালবোপিকটাসও বেশি। অ্যালবোপিকটাস মশাও ডেঙ্গু রোগের বাহক। ২০১৯ সালে কুষ্টিয়ার ছাত্তাপাড়া গ্রামে প্রচুর ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেল। কিন্তু ইজিপ্টাই মশা পাওয়া গেল না। পাওয়া গেল অ্যালবোপিকটাস। অর্থাৎ ওখানে এডিস অ্যালবোপিকটাসের কামড়েই রোগটা ছড়িয়েছে। এবার গ্রামে এমনটিই হচ্ছে।
কীটতত্ত্ববিদ খলিলুর রহমান বলেন, এডিস মশার সার্ভে শহরেও ঠিকমতো হয় না। ২০১৯ সালে যখন দেশে প্রচুর ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেল, তখন আমরা যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা, কুষ্টিয়া ও বরিশালে মশার সার্ভে করেছিলাম। তখন যশোর ও সাতক্ষীরার শহর ও গ্রামে ৫০১টি বাসা সার্ভে করে ৫০০ বাসাতেই, অর্থাৎ শতভাগ অ্যালবোপিকটাস পেয়েছি। খুলনায় শহর ও গ্রাম মিলে ৩৫-৪০ শতাংশ পেয়েছি অ্যালবোপিকটাস। কুষ্টিয়ার সাঁতারপাড়া গ্রামে সবচেয়ে বেশি ৩৭ জন রোগী ছিল ও দুজন মারা গিয়েছিল। সেখানেও ৩৫-৪০ শতাংশ অ্যালবোপিকটাস পেয়েছি। বরিশালের শহর ও গ্রামে পেয়েছি ৩২-৩৫ শতাংশ। গতবার বরিশালে সবচেয়ে বেশি রোগী ছিল মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায়। সেখানেও সার্ভে করে দেখেছি অ্যালবোপিকটাসের ঘনত্ব বেশি।
কীটতত্ত্ববিদ খলিলুর রহমান বলেন, পূর্ণবয়স্ক অ্যালবোপিকটাসের মাঝখানে একটি সাদা দাগ থাকে আর ইজিপ্টাই মশার মধ্যে থাকে দুই পাশে দুটি দাগ। বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য হলো সাধারণত বলা হয় ইজিপ্টাই কনটেইনারে প্রজনন করে। কিন্তু আমরা যশোর ও সাতক্ষীরা পরিদর্শন করেছি, সেখানে কনটেইনারে অ্যালবোপিকটাসও পেয়েছি। অ্যালবোপিকটাসকে বলা হয় গ্রামের ও বনের মশা। তারা বনে, গাছের কোটরে প্রজনন করে। ঘরের চেয়ে বাইরে থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু সার্ভে করার সময় যশোর ও সাতক্ষীরায় শহরেও শতভাগ অ্যালবোপিকটাস পেয়েছি।
এ কীটতত্ত্ববিদ আরও বলেন, দুটি মশায় দিনে কামড়ায়। সূর্যোদয় থেকে দুই ঘণ্টা ও সূর্যাস্তের দুই ঘণ্টা আগে বেশি কামড়ায়। যখন তাপমাত্রা কমে যায়, এ মশার নড়াচড়া কমে যায় ও আর্দ্রতা বেশি আছে এমন জায়গায় আশ্রয় নেয়। ২৪-২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এ মশার কামড়ানো ও প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। এটা তাদের প্রজননের জন্য উৎকৃষ্ট সময়।
গ্রামের মশা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন হবে বলে মনে করছেন কীটতত্ত্ববিদ খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, কারণ প্রজনন উৎস বেশি। সে ক্ষেত্রে মশা নিধনে বড় ধরনের স্প্রে করতে পারে। এতে পূর্ণবয়স্ক মশা মরে যাবে। এ ছাড়া যেখানে লার্ভা আছে, সেটাও ধ্বংস করতে পারে।
এক দিনে ভর্তি ২৭১১ রোগী, মৃত্যু ১২ : গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরও ২ হাজার ৭১১ রোগী ও এই সময়ে মারা গেছে ১২ জন। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫৭ হাজার ১২৭ জনে। তাদের মধ্যে মারা গেছে ২৭৩ জন। নতুন ভর্তি রোগীদের মধ্যে ১ হাজার ৫৮১ জনই ঢাকার বাইরের। আর ঢাকায় ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ১৩০ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯ হাজার ৩২৫ রোগী ভর্তি আছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৪ হাজার ৮৬৯ এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় ৪ হাজার ৪৫৬ জন।
সকাল থেকে মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় গোটা রংপুর শহর। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভা মাঠে জড়ো হতে থাকেন আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা। বেলা গড়াতে গড়াতে জনসমুদ্রে রূপ নেয় উত্তরাঞ্চলের এই বিভাগীয় শহর। সেই জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিন। জনগণকে সেবা করার সুযোগ দিন। আমি আপনাদের কাছে সেই সুযোগ চাই।’
দেশের মানুষের ভাগ্য বদলাতে জীবন দিতে প্রস্তুত, এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাবা-মা, ভাই সব হারিয়েছি। বাংলাদেশের জনগণ এটা তো আমার সংসার, এরাই আমার আপনজন। আপনাদের মাঝেই আমি খুঁজে পাই আমার বাবা-মা, ভাই-বোনের স্নেহ।’
গতকাল বুধবার বিকেলে জিলা স্কুল মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
বেলা সোয়া ১টার দিকে হেলিকপ্টারে রংপুর পৌঁছান সরকারপ্রধান। বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটে জনসভা মাঠে প্রবেশ করেন তিনি। জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার আগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ২৭টি নবনির্মিত উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগদানের আগে প্রধানমন্ত্রী রংপুর সার্কিট হাউসে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সমাবেশ শুরুর আগেই মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকা পূর্ণ হয়ে যায় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে আসা মানুষে। ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার’; ‘শেখ হাসিনার দুই নয়ন, রংপুরের উন্নয়ন’; ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’ নানা স্লোগানে শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেয় রংপুরবাসী।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত তোরণ-ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয় গোটা শহর।
সকাল ৮টা থেকে সভাস্থল নগরীর ঐতিহাসিক রংপুর জিলা স্কুল মাঠে দূর-দূরান্ত থেকে রঙিন টি-শার্ট ও ক্যাপ পরিহিত নেতাকর্মীরা ঢাকঢোল পিটিয়ে আসা শুরু করেন। এ সময় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা আসেন জনসভাস্থলসহ জিলা স্কুলের দিকে। বাহারি সাজসজ্জা আর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বিভিন্ন সেøাগানে নেচে-গেয়ে উচ্ছ্বাস করেছেন তারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবশেষ রংপুরে এসেছিলেন ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর। এ সময় তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দুটি নির্বাচনী জনসভা করেন। সাড়ে ৪ বছরের বেশি সময় পর শেখ হাসিনা রংপুরে আসেন। এর আগে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি একই মাঠে জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী। বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘একমাত্র নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নতি হয়। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গেছে।’
দেশ ও জনগণের উন্নয়ন করতেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে, এই রংপুরে কখনো মঙ্গা হয় নাই। রংপুরে কখনো খাদ্যের অভাব দেখা দেয়নি। দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে আসলে, নৌকা মার্কায় ভোট পেলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি কাজের লক্ষ্য দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। দেশের মানুষের উন্নতি করা। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’
টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই তো ক্ষমতায় ছিল, এই রংপুরের ভাগ্য পরিবর্তনে কেউ কাজ করেনি। ওই খালি নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলে কাজ হয়। তিনি বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে। আজকে হতদরিদ্র বলতে গেলে নাই, মাত্র ৫ শতাংশ। আল্লাহর রহমতে সেইটুকুও থাকবে না।
রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন উন্নয়নকাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই অঞ্চলে আর কখনো, কোনো দিন কোনো দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে না, মঙ্গা দেখা দেবে না। আমরা সেভাবে আপনাদের এই রংপুর বিভাগের উন্নয়ন করে দিচ্ছি।’
একটি গোষ্ঠী দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক, এখানে একটা গোষ্ঠী আছে যারা সব সময় বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলে। জাতির পিতাকে হত্যা করে সেই খেলা শুরু হয়েছিল। বারবার ক্ষমতা দখল, হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্রের রাজনীতি হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমার হারাবার কিছু নেই। সব হারিয়েও একটি প্রতিজ্ঞা নিয়ে ফিরে এসেছি। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মুখে অন্ন জোগাব, প্রতিটি মানুষকে ঘর করে দেব, জীবনমান উন্নত করব। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বাবার মতো জীবন দিতে আমি প্রস্তুত।’
দেশের মানুষ এখন শান্তিতে ভোট দিতে পারে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে, অনেক আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। মানুষ শান্তিমতো এখন ভোট দিতে পারে। এই ভোট দেওয়ার জন্য আমরা ছবিসহ ভোটার লিস্ট করেছি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স করে দিয়েছি। শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা আমরা হাতে নিয়েছি।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খেলা হবে, ডিসেম্বরে ফাইনাল খেলা হবে। বিএনপির এক দফা খাদে পড়ে গেছে। খাদে পড়া দলের কোনো দফা বাস্তবায়ন হবে না এবং তাদের কোমর ভেঙে গেছে।’
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন। সঞ্চালনা করেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বান এ কে এম ছায়াদত হোসেন (বকুল)। আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, নৌপরিবহনমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান, সাবেক সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দীসহ অন্য কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
জনসভায় হুইলচেয়ারে ৯৬ বছরের মজিবুর মাস্টার : স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান মাস্টার (৯৬) হুইলচেয়ারে এসেছিলেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একনজর দেখতে রংপুরের বদরগঞ্জ থেকে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশকে সফল করার জন্য, সহযোগিতার জন্য এসেছি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমার কোনো কষ্ট নাই। সবার উদ্দেশ্যে বলব, আসুন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আবারও শেখ হাসিনার সরকার দরকার।’ তিনি সবাইকে আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে দেশ পরিচালনার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় অংশ নিয়েছে হিজড়া জনগোষ্ঠী : ‘রাষ্ট্র সমাজ পরিবারে, সমান হব অধিকারে’ এবং ‘প্রধানমন্ত্রীর আগমন রংপুরে স্বাগতম’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠীর একটি দল মিছিল করতে করতে জনসভায় অংশ নেয়। জনসভায় উপস্থিত থেকে তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তারা বলেন, হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ভোটাধিকার ও তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দেওয়ায় তারা অনেক বেশি আনন্দিত এবং গর্বিত। সেই কৃতজ্ঞতার জায়গা থেকে কোনো রাজনৈতিক দলের কিংবা কারও নেতৃত্বে নয়; বরং তারা নিজেদের অর্থায়নে, নিজেদের উদ্যোগে এই জনসমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন।
এ বিষয়ে রংপুর হিজড়া জনগোষ্ঠীর নেতা আনোয়ারা ইসলাম রানী বলেন, ‘আমাদের নিজেদের কোনো দোষ নেই। তারপরও জন্মের পর থেকেই আমরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে অবহেলিত, লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত ছিলাম। আমরা সমাজ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে জীবনযাপন করেছি।’
বিকেল ৩টা ২৩ মিনিটে বিচারক যখন রায় পড়ছেন আদালতে তখন তিলধারণের জায়গা নেই। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে জনাকীর্ণ আদালতের ভেতরে পিনপতন নীরবতা আর অন্যদিকে বাইরে দুপক্ষের আইনজীবীদের স্লোগান ও হট্টগোল। এমন পরিস্থিতিতে ৩৮ মিনিটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলার বিচারের রায় ঘোষণা করেন বিচারক।
রায়ে তারেক রহমানকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুটি ধারায় তিন ও ছয় বছর করে মোট নয় বছর কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এ দুর্নীতিতে সহযোগিতা করার অভিযোগে তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত।
১৬ বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা এ মামলায় গতকাল বুধবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান রায় দেন।
রায়ে বলা হয়, জোবাইদা রহমানের নামে আসামি তারেক রহমান ৩৫ লাখ টাকার এফডিআর করলেও তার সম্পদ বিবরণীতে বলেছেন, এ টাকা জোবাইদা রহমানের মা তার মেয়েকে উপহার দিয়েছেন। এটি প্রমাণের দায়িত্ব তাদের ওপর থাকলেও তারা প্রমাণ করতে পারেননি। ৩৫ লাখ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত হওয়া সত্ত্বেও তারেক রহমানের মিথ্যা দাবিকে সত্য প্রমাণের জন্য চেষ্টা করেছেন।
তারেক রহমানের বিষয়ে রায়ে বলা হয়, এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি তার সম্পদ বিবরণীতে ২ কোটি ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮৭ হাজার টাকার তথ্য গোপন করেছেন এবং যে সম্পদের তথ্য প্রকাশ করেছেন তার মধ্যে ৫৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সম্পদের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ দুটি মিলিয়ে তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।
রায়ে সাজার পাশাপাশি তারেক রহমানকে ৩ কোটি টাকা অর্থদ- অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ড এবং জোবাইদা রহমানকে ৩৫ লাখ টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে এক মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া তারেক-জোবাইদার অপ্রদর্শিত সম্পদ হিসেবে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেয় আদালত।
বিগত ওয়ান ইলেভেনের পটভূমিতে তারেক রহমান গ্রেপ্তার হয়ে ২০০৮ সালে কারামুক্তি পান। এরপর স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান। ১৫ বছর ধরে দুজন সেখানেই রয়েছেন। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত ও আইনের বিধান অনুযায়ী পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী শুনানি করতে পারেননি। বিএনপির কোনো পর্যায়ের রাজনীতিতে না থাকা জোবাইদার বিরুদ্ধে এই প্রথম কোনো ফৌজদারি মামলার রায়ে সাজা হলো। অন্যদিকে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এ রায়সহ এখন পর্যন্ত পাঁচটি ফৌজদারি মামলার রায় হয়েছে। এর আগে দুর্নীতির পৃথক দুটি মামলায় ১০ ও ৭ বছর, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন এবং মানহানির একটি মামলায় তার দুই বছরের সাজা হয়েছে। সব মিলিয়ে বছরের হিসাবে এখন পর্যন্ত ৫৮ বছরের কারাদন্ড হয়েছে তার।
গতকাল বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হলে তারেক ও জোবাইদা রহমানকে দুজনকে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে বলে জানান দুদকের আইনজীবীরা।
সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো অভিযোগের ফৌজদারি মামলায় অন্যূন দুই বছর কারাদন্ড দন্ডিত হলে এবং মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর সময় অতিক্রান্ত না হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান না।
হট্টগোল, হাতাহাতি : রায় কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সকাল থেকে বৃষ্টির মধ্যে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত চত্বরে জড়ো হতে থাকেন। রায় ঘিরে আদালত এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিকেলে রায় ঘোষণা পর্যন্ত আইনজীবীরা থেমে থেমে পরস্পরের উদ্দেশে স্লোগান দেন। দিনভর আদালত এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি চলে। বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা এ রায়কে ফরমায়েশি অভিযোগ করে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। অন্যদিকে সরকাপন্থি আইনজীবীরাও পাল্টা স্লোগান দেন। বিকেল ৪টার দিকে রায়ে সাজার অংশ ঘোষণার পরপরই সরকারপন্থি আইনজীবীরা এজলাসের বাইরে এসে উল্লাস প্রকাশ করেন। তারা ‘এই মাত্র খবর এলো তারেক রহমানের সাজা হলো’ স্লোগান দেন। অন্যদিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বিক্ষোভ করে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ ‘এই বিচার মানি না’ ‘মানব না’ স্লোগান দেন। একপর্যায়ে আদালত ভবন চত্বরে দুপক্ষের আইনজীবীরা হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তি জড়িয়ে পড়েন। এ সময় বিএনপিপন্থি কতিপয় আইনজীবীদের জুতা প্রদর্শন করতে দেখা যায়।
যেভাবে দন্ডিত হলেন তারেক-জোবাইদা : ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলাটি করে দুদক। তারেক রহমান, তার স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও তারেকের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। অন্য মামলায় গ্রেপ্তার তারেক রহমানকে ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর এ মামলাতেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ সংশ্লিষ্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। পরে মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ও তা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে তিনটি রিট আবেদন করেন তারেক দম্পতি। ওই বছর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে এর বৈধতা প্রশ্নে রুল দেয়। এরপর দীর্ঘদিন মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকে।
২০২২ সালের শুরুর দিকে মামলাটি সচলের উদ্যোগ নেয় দুদক। হাইকোর্ট ২৬ জুন এক রায়ে রুল খারিজের আদেশ দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দিলে বিচারের পথ খোলে। অন্যদিকে পৃথক রিট আবেদনে জোবাইদার মামলা বাতিল প্রশ্নে দেওয়া রুল ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল খারিজ করে রায় দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জোবাইদাকে আট সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির আইনজীবীরা আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতির আবেদন) করলে গত বছর ১৩ এপ্রিল সেটি খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। এর আগে ২০১০ সালের ১৩ অক্টোবর তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবার মান্দ বানুকে এ মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেয় হাইকোর্ট। গত ১৩ এপ্রিল তারেক ও জোবাইদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। একই সঙ্গে তাদের পক্ষে আইনজীবীর শুনানির আবেদন নাকচের আদেশ হয়। এ মামলায় ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে গত ২৪ জুলাই পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৪২ জন সাক্ষ্য দেন। এরপর দুদক ২৭ জুলাই যুক্তিতর্কের শুনানি শেষ করার পর রায়ের তারিখ ধার্য হয়।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দুদকের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের একটা বিলম্বিত বিচারের পর রায় হয়েছে। এখন সাজার পরিমাণের বিষয়টি নথিপত্র পর্যালোচনা করে আমরা দেখব অতিরিক্ত (সাজা) চাওয়া যায় কি না। তবে এই মুহূর্তে আমরা মনে করি যেহেতু মামলাটি নিষ্পত্তি এবং রায় হয়েছে, এতে আমরা সন্তুষ্ট।’ এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জোবাইদা রহমান এখন দুর্নীতির মামলায় একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। নৈতিক স্খলন বা দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন না।’
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে রায় দেওয়া হয়েছে তা রাজনৈতিক জিঘাংসার ফসল। মনগড়া, নির্দেশিত হয়ে ফরমায়েশি রায় দিয়েছেন বিচারক। তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের প্রতি অবিচার করা হয়েছে।’
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে কি না, তা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে তারেক-জোবাইদার সাজার রায়ের পর গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন।
আইনের শাসন প্রতিফলন ঘটেছে : আইনমন্ত্রী
তারেক-জোবাইদার বিরুদ্ধে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা বাংলাদেশে যে আইনের শাসন আছে তারই একটা প্রতিফলন। রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী পুত্র যদি এরকম দুর্নীতি করে, আমার তো মনে হয় সেখানে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেওয়াটা উচিত।’
ফরমায়েশি বিচার উল্লেখ করে বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘মামলাটা দায়েরের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। তখন সেই সরকারের সঙ্গে তাদেরই নিয়োগপ্রাপ্ত সেনাপ্রধানের যথেষ্ট সখ্য ছিল, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। তারাই দুর্নীতির মামলা করেছিল।’
আগামী নির্বাচনের আগে এ রায় বিভ্রান্তিমূলক বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে বিভ্রান্ত করার কী আছে? বিচারিক কাজ হয়েছে, রায় বেরিয়েছে। আসামি তো আগে থেকেই সাজাপ্রাপ্ত। এখন নতুন করে এটা (রায়) দিয়ে ওনার (তারেক রহমান) ভাবমূর্তি খারাপ করার তো আমাদের প্রচেষ্টার প্রয়োজন পড়ে না।’
সাজা কার্যক্রমে দন্ডপ্রাপ্তদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ফিরিয়ে আনার চেষ্টা সবসময় থাকবে। এটা সরকারের দায়িত্ব। ফিরিয়ে আনার চেষ্টা আমরা অবশ্যই করব।’
বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির দিন সংঘর্ষ ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনার পাশাপাশি দলটির দুই নেতার প্রতি সরকারের আচরণ রাজনীতিতে নতুন বার্তা হয়ে এসেছে। এ বিষয়টিকে বিএনপি ‘নিম্নমানের মশকরা’ ও দলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা হিসেবে দেখলেও আওয়ামী লীগ বলছে, তারা সৌহার্দ্যরে বার্তা দেওয়ার নতুন কৌশল প্রয়োগ করেছে। এ ঘটনাটি বাদ দিলেও সম্প্রতি রাজনীতিতে দুই দল কাছাকাছি স্থানে কর্মসূচি পালন করলেও সংঘাতে জড়ায়নি। এ বিষয়ে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন নির্বাচন ঘিরে বিদেশিদের নজরদারি এবং সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির প্রভাব পড়েছে দেশের রাজনীতিতে। তারা বলছেন, সরকারপক্ষ যেমন বিরোধীদের ওপর চড়াও হওয়া থেকে দূরে থাকছে, তেমনি বিরোধীপক্ষও সহিংসতার দায় নিজেদের ঘাড়ে নিতে নারাজ।
বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ছিল গত ২৯ জুলাই। ওইদিনের সংঘাতের ঘটনায় পরদিন বিক্ষোভ মিছিল করে আওয়ামী লীগ। এর পরদিন সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। আওয়ামী লীগ একইদিন সমাবেশের ঘোষণা দিলেও পরে কর্মসূচি বাতিল করে। যে কারণে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে নতুন করে আর উত্তেজনা দেখা যায়নি।
গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত নতুন ভিসানীতির উল্লেখ করে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এখনকার রাজনীতিতে ভিসানীতির প্রভাব দেখা যাচ্ছে। সরকার ও বিরোধীপক্ষ, তথা রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব পক্ষই সহিংসতা থেকে দূরে থাকতে চাচ্ছে। সরকারপক্ষ অর্থাৎ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর প্রত্যক্ষভাবে ভিসানীতির চাপ একটু বেশি হলেও, বিরোধীপক্ষের আচরণেও চাপে থাকার ছাপ দেখা যাচ্ছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত ২৮ জুলাই বিএনপির মহাসমাবেশ ও জামায়তের সমাবেশ এবং একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ঘিরে দেশব্যাপী জনগণের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার থেকে রাস্তাঘাটে চলাচল ছিল সীমিত। বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকার বাইরে থেকে ঢাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা ও হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগও উঠেছিল। কিন্তু বাস্তবে সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। পরদিন শনিবার বিএনপি ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিরোধীদের আন্দোলন কর্মসূচিতে সরকারি দল বাধা দিয়ে আসছিল বিগত সময়ে। বিরোধীপক্ষকে মাঠে কঠোরভাবে মোকাবিলা করেছে। কিন্তু এবার তারা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকলেও কোনো ধরনের সহিংসতায় জড়াচ্ছে না। আবার ভিসানীতির কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নজির স্থাপন করছে। বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ডিবি অফিসে আপ্যায়ন করা হয়েছে। আমানউল্লাহ আমানকে হাসপাতালে দেখতে গেছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা ব্যতিক্রমী ঘটনা। কাজেই বিদেশিদের এ নজরদারির ইতিবাচক দিক আছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, গত দুই বছর ধরে দেশের রাজনীতি, মানবাধিকার এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরব। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা এখনো আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাথায়ও বিষয়টি রয়েছে। আবার নির্বাচন বানচাল বা নির্বাচন প- করতে কোনো পক্ষ যদি সক্রিয় থাকে তাদের জন্য ভিসানীতি প্রয়োগ করা হবে। এ ঘোষণায়ও সব পক্ষই কিছুটা সহনশীল আচরণ করছে। তাছাড়া গত ছয় মাস ধরে দেশে নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল সফরে রয়েছে। আর গত মাস থেকে তো দেখা যাচ্ছে, কোনো না কোনো প্রভাবশালী দেশের প্রতিনিধিদল থাকছে বাংলাদেশে। তারা নির্বাচনকেন্দ্রিক ঘটনাপ্রবাহ প্রত্যক্ষ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন কবীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমারা চায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পূর্ণ হোক। তারা খেয়াল রাখছে এবং ঘন ঘন সফরে আসছে। এর আগে এ বছরের শুরুতে ডোনাল্ড লু এসেছেন। তারপর ডেরেক শোলে এসেছেন। আর গত মাসে এসেছেন উজরা জেয়া। এরা কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে ঘন ঘন আসছেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের এ আসার ইন্ডিকেশনটা হলো এই যে, তারা আমাদের সব কর্মকা-ে সংযুক্ত থাকতে চাচ্ছে। তারা বুঝতে চাচ্ছে, আমরা কোথায় যাচ্ছি, আমাদের কী অগ্রগতি হয়েছে। সক্রিয়তা কতটুকু। কাজেই সেই সক্রিয়তা বা সেই উদ্যোগ যদি আমরা না দেখাই তাহলে আমার ধারণা, তারা এখন পর্যন্ত যে ইতিবাচকভাবে জিনিসটা গাইড করার জন্য সচেষ্ট আছে, সেই জায়গাটাতে ভিন্ন চিন্তা আসতে পারে।’
হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘অনেকে শঙ্কা করছেন, তারা আরেকটা স্যাংশন দেবে কি না। সেটা আমি এভাবে দেখতে চাই না। তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী যদি তারা আমাদের সক্রিয়তা না দেখে মানে তারা যে নির্বাচন ও গণতন্ত্রের কথা বলছে। সে ক্ষেত্রে কিন্তু তারা তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে কার সঙ্গে দেখা করলেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাদের বক্তব্যটা গুরুত্বপূর্ণ।’
সাবেক এ রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা কোনো দলের পক্ষ নয়। তারা বলছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কথা। এ কথা আওয়ামী লীগের জন্য যেমন প্রযোজ্য, তেমনি ১৫ বছর আগে বিএনপির জন্য প্রযোজ্য ছিল। আগামী ১০ বছর পরে হয়তো অন্য কারও জন্য প্রযোজ্য হবে। তারা মূলত ডেমোক্রেসিটাকে (গণতন্ত্র) শক্তিশালী করতে চায়। একটা নির্বাচন শুধু ডেমোক্রেসির একটা অংশ। এখন তারা বড় প্রেক্ষাপট নিয়ে কথা বলছে। তারা নাগরিক অধিকার, মিডিয়া ফ্রিডমের কথা বলছে, নাগরিক সমাজের কথা বলছে। নানা বিষয় নিয়ে আসছে। এগুলো যদি না থাকে তাহলে নির্বাচন হলেও আবার একই সমস্যা হবে। বাতাবরণটা যদি একই থাকে তাহলে যে-ই আসবে, সে-ই সেভাবে কাজটা করবে। তাহলে ভবিষ্যতে আর এ সংকট হবে না। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্র সেই জায়গাটাতেই মনোযোগ দিচ্ছে। তাদের মধ্যে এ বিষয়ে একটা সমন্বয় রয়েছে।’
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, আগে তো বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করারও অনুমতি দেওয়া হতো না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চাইলে গোলাপবাগ মাঠ দেয়। বিদেশিরা নির্বাচন নিয়ে সহায়ক ভূমিকা নেওয়ার ফলে বিরোধীপক্ষকে অন্ততপক্ষে কর্মসূচি করতে দিচ্ছে। আবার র্যাব এবং ওই সংস্থাটির সাবেক কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকায় বিরোধীপক্ষের কর্মসূচিগুলোতে পুলিশের মধ্যেও বেশ সহনশীল আচরণ লক্ষ করা গেছে। পুলিশ প্রধানের বক্তব্য থেকেও তা পাওয়া যায়। বিশেষ করে বিএনপির দুই নেতাকে আটক করার পর পুলিশ যে সৌজন্য দেখিয়েছে, সেটাও সবাই লক্ষ করেছে। বিগত সময়ে দেখা গেছে, এ ধরনের কর্মসূচিতে ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়। বিরোধীপক্ষও শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছে, যা অতীতে দেখা যায়নি। এর কারণ মার্কিন ভিসানীতিতে সবাই পড়বে।
এদিকে গত সোমবারও বাংলাদেশে চলমান বিক্ষোভে সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বানও জানিয়েছে দেশটি। একই সঙ্গে মানুষকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার সুযোগ দেওয়া এবং সেই লক্ষ্যে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
এ ছাড়া গত মঙ্গলবার ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে আগামী অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল আসবে।
২০২৪ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খনন, ওয়ার্কওভার (সংস্কার) করে প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট বাড়াতে গত বছর আগস্টে পরিকল্পনা করেছিল সরকার। এখন পর্যন্ত আটটি কূপের কাজ শেষে ছয়টি থেকে দিনে ৯৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে। দুটি কূপের কাজ চলছে এবং বাকিগুলোর কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ড সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনেকটা এগিয়ে আছে। বাপেক্স মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে আর বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডসের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়।
এখন দেশি কূপ থেকে দৈনিক প্রায় ২১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। আমদানিকৃত উচ্চমূল্যের এলএনজি থেকে আরও প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। এরপরও ঘাটতি থাকছে প্রায় ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাস সংকটের কারণে এক যুগ ধরে বাসাবাড়িতে নতুন সংযোগ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, দেশে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অনুসন্ধানে গাফিলতি রয়েছে। কারণ আমদানিতে ঝোঁক বেশি। সম্প্রতি কাতার ও ওমান থেকে এলএনজি আনার চুক্তি হয়েছে। মালয়েশিয়া ও অন্য দেশ থেকেও এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি খোলা বাজার থেকে চড়া দামে কেনা হচ্ছে এলএনজি।
ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের যে পরিকল্পনা তা আগামী বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। যেসব ওয়ার্কওভার ও উন্নয়ন কূপ খননের কথা রয়েছে তার অনেকগুলো হয়তো শেষ হবে। কিন্তু অনুসন্ধান কূপ করা সম্ভব নয়; কারণ এগুলো সম্পূর্ণ নতুন জায়গায় করতে হয়। প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণেই লাগে এক-দুই বছর। আগামী বছর ১২টি অনুসন্ধান কূপ করার কথা। অথচ বাংলাদেশ বছরে এ ধরনের কূপ খনন করে সাধারণত এক থেকে তিনটি। এত কূপ কীভাবে খনন সম্ভব তার কোনো নির্দেশনা নেই। আউটসোর্সিং করেও তো সম্ভব নয়। হাস্যকর ব্যাপার।’
তিনি বলেন, “সরকারের জ¦ালানি আমদানির ঝোঁক নিয়ে যে সমালোচনা হয় তাতে রাশ টানতেই সাময়িকভাবে এসব করা হয়। এতে ব্যর্থ হলে সরকার বলবে, ‘আমরা দেশি গ্যাস অনুসন্ধানের পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। কিন্তু দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তা করতে পারল না’। তখন আবার আমদানি করবে। আগেও পাঁচ বছরের মধ্যে ১০৮টি কূপ খননের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ঢাকঢোল পিটিয়ে। আমরাও খুশি হয়েছিলাম। হঠাৎ একদিন সব ছাইভস্ম হয়ে গেল। বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নে তৎপর হওয়া দরকার। এতদিনে যদি বছরে পাঁচটা কূপও খনন করা যেত তাহলে গ্যাসের এত সংকট হতো না। এখনো সে সুযোগ রয়েছে।”
পরিকল্পনাধীন ৪৬টি কূপের মধ্যে ১৫টি উন্নয়ন কূপ, ১৬টি ওয়ার্কওভার কূপ ও ১৫টি অনুসন্ধান কূপ। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুসন্ধানে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন কূপকে উন্নয়ন কূপ, পুরনো গ্যাসক্ষেত্র সংস্কারের মাধ্যমে গ্যাস পাওয়া গেলে সেটিকে ওয়ার্কওভার কূপ ও সম্পূর্ণ নতুনভাবে সন্ধানের জন্য কূপ করা হলে তাকে অনুসন্ধান কূপ বলা হয়।
জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স), সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফএল)।
সূত্রমতে, বাপেক্সের ১৯টি কূপের মধ্যে পাঁচটির খনন শেষে তিনটিতে প্রতিদিন ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে। এর দুটি অনুসন্ধান কূপ (টবগী-১ ও ইলিশা-১) এবং একটি উন্নয়ন কূপ (ভোলা নর্থ-২)। উৎপাদিত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ করতে প্রসেস প্ল্যান্ট সংগ্রহ ও স্থাপনের জন্য দরপত্র মূল্যায়নের কাজ চলছে। শ্রীকাইল নর্থ-১ ও শরীয়তপুর-১-এ দুটি পৃথক কূপ খননের পরও গ্যাস পাওয়া যায়নি। বাপেক্সের কর্মকর্তারা মনে করছেন, খননের ফলে যে তথ্য পাওয়া গেছে ভবিষ্যতে ওই এলাকায় অনুসন্ধানে তা সহায়ক হবে। বাকি ১৪টির মধ্যে শাহবাজপুরের পাঁচটি কূপ খনন করবে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম। এখন ডিপিপি তৈরির কাজ চলছে। এটা শেষ করতে অন্তত দুই মাস লাগবে। আরও তিনটি কূপে (শ্রীকাইল ডিপ-১, মোবারকপুর ডিপ-১ ও ফেঞ্জুগঞ্জ-১) ডিপ ড্রিলিং বা গভীর খননের প্রয়োজন হওয়ায় তা ঠিকাদারের মাধ্যমে করানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বাপেক্স। এজন্য ডিপিপি তৈরির কাজ চলছে।
এসব কূপে সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার মিটার গভীরে গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। বাপেক্সের রিগ দিয়ে ৫২০০ থেকে ৫৪০০ মিটার পর্যন্ত খনন করা যায়।
পরিকল্পনাধীন আরও ছয়টি কূপ রয়েছে যেগুলো বাপেক্স নিজেই খনন ও অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে। সুন্দলপুর, শ্রীকাইল, জকিগঞ্জ ও জামালপুরে চারটি কূপ খননের জন্য ডিপিপি তৈরি করে জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। বাকি দুটির ডিপিপি আগামী মাসে পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বাপেক্স।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণ জানতে একাধিকবার প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েবকে ফোন দিয়ে এবং তার কার্যালয়ে গিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির দুজন কর্মকর্তা জানান, কাজ শুরুর আগে অনুমোদন পেতে দেরি হওয়া ও কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অলসতাও দায়ী।
পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছরের মধ্যে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানির ১৩টি কূপের কাজ শেষ হবে। তখন দৈনিক গ্যাস মিলবে ১৭৩ মিলিয়ন ঘনফুট। এক বছরে মাত্র একটি কূপের ওয়ার্কওভার (তিতাস-২৪) শেষে মাত্র সাড়ে ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. আবদুস সুলতান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাকি ১২টি কূপের ডিপিপি তৈরি করে গত মাসে জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদনের পর দরপত্র আহ্বানের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় মালামাল কেনা হলে মূল কাজ শুরু হবে। আশা করছি, আগামী বছরের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে।’
সূত্র জানায়, আগামী বছরের মধ্যে সব কূপের কাজ শেষ করা যাবে না। বড়জোর পাঁচ থেকে ছয়টা কূপের কাজ হতে পারে। ডিপিপি তৈরিতে দেরির কারণেই কাজ পিছিয়ে গেছে।
বাপেক্স ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানির তুলনায় সিলেট গ্যাস ফিল্ডের অগ্রগতি ভালো। তারা সাতটি ওয়ার্কওভার কূপ, ছয়টি অনুসন্ধান কূপ ও একটি উন্নয়ন কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে।
কাজের অগ্রগতির বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আশা করছি আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ১৪টি কূপের কাজ শেষে দৈনিক ১৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাব। ইতিমধ্যে বিয়ানীবাজার-১ কূপের ওয়ার্কওভার শেষে সেখান থেকে দৈনিক ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। কৈলাশটিলা-২, সিলেট-৭, রশিদপুর-২ ও রশিদপুর-৫ ওয়ার্কওভারের অনুমোদন হয়েছে। কৈলাশটিলা-২ দিয়ে শুরু করেছি। আগামী দুই মাসের মধ্যে এ কূপ থেকে গ্যাস পাওয়ার আশা রয়েছে।’
‘এ কূপের পাইপলাইন নির্মাণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। গ্যাস পেলেই সরাসরি জাতীয় গ্রিডে দেওয়া সম্ভব হবে। চারটি কূপ থেকে দৈনিক ৩৫ থেকে ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার আশা রয়েছে। গত ২৪ জুন সিলেট-১০-এ অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়েছে। কূপটি ৩৩০০ মিটার গভীরে খনন করতে হবে। প্রায় ১২৭০ মিটার খনন হয়েছে। কৈলাশটিলা-৮-এ অনুসন্ধান কূপ খননের কাজ শুরু হবে আগামী সেপ্টেম্বরে’ বলেন মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘রশিদপুর-৯-এর খননকাজ শেষ হয়েছে। এ গ্যাস সরবরাহ করতে পাইপলাইনের কাজ চলছে। এখান থেকে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। আগামী দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে কৈলাশটিলা-২ ও রশিদপুর-৯ কূপ থেকে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’
সূত্রমতে, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বাকি চারটি (রশিদপুর-১১, রশিদপুর-১৩, ডুপিটিলা-১, কৈলাশটিলা-৯) অনুসন্ধান কূপ ও একটি (সিলেট-১১) উন্নয়ন কূপ খনন করবে প্রতিষ্ঠানটি। ডিপিপি পেট্রোবাংলার মাধ্যমে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন শেষে দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ শুরু হবে।
অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করে তারা এসব পরিকল্পনা করে না। মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের মাথা থেকে এসব বের হয়। তাদের এ ধরনের কাজ সম্পর্কে ধারণাই নেই। পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দেওয়া হয় আর বাপেক্স ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিপদে পড়ে।’
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে রাজনৈতিক সভায় যোগ দিয়ে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন বাংলাদেশের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য (চট্টগ্রাম) খাদিজাতুল আনোয়ার (সনি)। পরে ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসের হস্তক্ষেপে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। গতকাল বুধবার ঢাকা ও মাস্কাটের একাধিক কূটনৈতিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ওমানে পৌঁছান খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। ওইদিন রাতেই রাজধানী মাস্কাটের হাফফা হাউজ হোটেলের এক রাজনৈতিক সভায় তিনি যোগ দিয়েছিলেন।
খাদিজাতুল আনোয়ার আওয়ামী লীগ থেকে একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য হন। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন। তিনি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির প্রয়াত সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে।
ওমানে সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ারের আটকের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা জানি না। কোনো এমপি ব্যক্তিবিশেষ যদি যান, ওটা ব্যক্তিগত উদ্যোগে, সরকারিভাবে কাউকে পাঠাইনি। এটা তো আপনার কাছ থেকে শুনলাম। এগুলো আমরা জানি না। উই ডোন্ট নো।’
ওমানের কূটনৈতিক এবং বাংলাদেশ কমিউনিটি সূত্রে জানা গেছে, দেশটিতে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সদস্যদের সঙ্গে খাদিজাতুল আনোয়ারের সভাটি সেখানকার পুলিশের বাধার কারণে শেষ হতে পারেনি। অনুমতি না নিয়ে ওই সভার আয়োজন করা হয়েছিল, পুলিশ এসে সেটি বন্ধ করে দেয়। পরে সেখান থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সভা-সমাবেশ করতে গেলে সে দেশের নাগরিকদের পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। আর বিদেশিরা সভা করতে চাইলে তা বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে দেখা হয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ দূতাবাস ওমানের পুলিশের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর মুচলেকায় খাদিজাতুল আনোয়ারকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ভারতের ভিসা পাওয়া নিয়ে পাকিস্তান দল যে জটিলতার মধ্যে ছিল সেটার অবসান হয়েছে। অবশেষে ভারতের সরকার পাকিস্তান দলের জন্য ভিসা অনুমোদন করেছে।
সোমবার ক্রিকেট বিষয়ক ভারতীয় ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ এই খবর জানিয়েছে। ভিসা অনুমোদনের ফলে বাবর আজমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দল এখন বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতে ভ্রমণ করতে পারবে। আগামী ৫ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া ১০ দলের আসরে শেষ দল হিসেবে ভিসা পেয়েছে পাকিস্তান।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ অংশ নিতে আগামী বুধবার ভারতের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা রয়েছে পাকিস্তান দলের। তবে যাত্রার ৪৮ ঘণ্টা আগেও ভিসা না পাওয়াকে 'অস্বাভাবিক দেরি' হিসেবে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তারা বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির দ্বারস্থও হয়। এর কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এসেছে ভিসা অনুমোদনের খবর।
ক্রিকবাজ জানিয়েছে, আইসিসির একটি সূত্র তাদেরকে পাকিস্তান দলের ভারতের ভিসা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ভিসা পেতে দেরি হওয়াকে স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছে ওই সূত্র।
সবশেষ এশিয়া কাপের মূল আয়োজক ছিল পাকিস্তান। তবে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দেশটিতে যেতে চায়নি ভারত। ওই আসরে ভারতের সবগুলো ম্যাচ হয় শ্রীলঙ্কায়। একটি বাদে সুপার ফোরের বাকি সব ম্যাচ আর ফাইনালও অনুষ্ঠিত হয় দ্বীপ দেশটিতে।
ভারত নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় হাইব্রিড মডেলে এশিয়া কাপ আয়োজনের প্রস্তাব আসে পাকিস্তানের কাছ থেকেই। এর আগে ভারত দল পাকিস্তানে না গেলে পাকিস্তানও ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে না বলে হুমকি দিয়েছিল পিসিবি। যদিও নিজেদের সেই সিদ্ধান্ত থেকে পরে সরে আসে তারা।
বিশ্বকাপের আগে আগামী শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নামবে পাকিস্তান। তিনদিন পর তাদের আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপে বাবরদের প্রথম ম্যাচ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। আগামী ৬ অক্টোবর হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি।
বাংলাদেশে ফৌজদারি অপরাধে আইনের যে ধারায় শাস্তি দেওয়ার হয়, দণ্ডবিধি বা পেনাল কোড নামে আইনটি ১৬৩ বছরের পুরনো। বিচারের দিক-নির্দেশক হিসেবে ফৌজদারি কার্যবিধি (দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর বা সিআরপিসি) নামে পদ্ধতিগত আইনটিও ১২৫ বছর আগের তৈরি। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) সাক্ষ্য আইন (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট)। ব্রিটিশ আমলে তখনকার প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতিতে তৈরি এ আইনগুলোর কাঠামো নিয়ে আপত্তি না থাকলেও আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ মানুষের প্রশ্ন আছে সময়, পরিস্থিতি ও প্রয়োজনে আইনগুলোর সংস্কার এবং যুগোপযোগী না করা নিয়ে। বাংলাদেশসহ এ উপমহাদেশে ৭৬ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়েছে। আইনের সংস্কার নিয়ে বছরের পর বছর দাবি উঠেছে জোরেশোরে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসব আইনের আলোকে, অনেক বিশেষ আইন হয়েছে। সেগুলোর অনেক ধারাতেও অসংগতি ও অস্পষ্টতার বিষয়টি নানা সময়ে আলোচনায় এসেছে। কিন্তু সংস্কারের বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত।
১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত দণ্ডবিধিতে ৫১১ ধারার ৪৫৯টি শাস্তিসংক্রান্ত। এর মধ্যে আটটি ধারায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। ১৮৯৮ সালে তৈরি হওয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬৫ ধারার বেশিরভাগই বিচারের লক্ষ্যে দিকনির্দেশনা সংক্রান্ত। এ ছাড়া ১৫১ বছরের বেশি পুরনো (১৮৭২ সাল থেকে প্রচলিত) ও ১৬৬টি ধারা সংবলিত সাক্ষ্য আইনে (অ্যাভিডেন্স অ্যাক্ট) ধর্ষণের শিকার নারীদের জন্য অবমাননাকর একটি ধারা গত বছর নভেম্বরে বাতিলসহ এ আইনে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ আমলে নেওয়ার সুযোগ রাখা হয় সংশোধনীতে। আইন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সাক্ষ্য আইনটিকে আরও যুগোপযোগী ও সংস্কারের অংশ হিসেবে চলতি বছরেই তারা সুপারিশসংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবেন।
আইনের সংস্কার প্রশ্নে পাঁচজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত নিয়েছে দেশ রূপান্তর। প্রায় অভিন্ন সুরে তারা বলেন, আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্য হলো ‘দশজন অপরাধী খালাস পেলেও একজন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পান’। ফলে বিচারে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ এবং আইনের ভাষা হতে হয় সহজ ও অযান্ত্রিক। একই সঙ্গে বিচারপ্রত্যাশীর ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হয়। তাদের মতে, প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক সময়ে মানুষকে প্রজা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এর প্রভাব পড়েছে ওই সময়ে তৈরি আইনগুলোতে। যেখানে শুধু শাস্তিকেই লক্ষ্য করা হয়েছে। অন্যদিকে একশ, দেড়শ বছরে অপরাধের ধরন, ভিন্নতা, অপরাধে প্রযুক্তিগত ব্যবহারসহ বদলেছে অনেক কিছু। বিপরীতে আইনগুলোতে নগণ্য কিছু সংশোধনী ছাড়া সংস্কার হয়নি।
পুরনো আইনের সংস্কার না হওয়াকে মামলাজটের কারণ উল্লেখ করে আইনজীবীরা আরও বলেন, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, আদালতের সময়সহ বিচারপ্রত্যাশীর অর্থ ও সময় সাশ্রয়, অপরাধীর পুনর্বাসন, সংশোধন ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তেমন কিছুই নেই আইনগুলোতে। অন্যদিকে আইনের অপপ্রয়োগ কিংবা দুর্বলতায় প্রায়ই নির্দোষ ব্যক্তিকে নির্যাতন, জেলে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের জন্য আইন। কিন্তু ব্রিটিশরা কর্তৃত্ব ও নিপীড়নমূলক অনেক আইন করেছে মানুষকে শোষণ, শাসন ও লুণ্ঠন করতে। তখন তো আর নাগরিক ও মানবাধিকার নিয়ে এত কথা হতো না। তাদের লক্ষ্যই ছিল কথায় কথায় স্বাধীনতাকামীদের বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া। তিনি বলেন, ‘এখন তো আমরা ব্রিটিশদের উপনিবেশে নেই। কিন্তু ৫৪ (বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার) ১৬৭ ধারার (রিমান্ড) মতো নিপীড়নমূলক আইনগুলোসহ আরও অনেক কিছু রয়ে গেছে। ১৯৭২ সালে মাত্র কয়েক দিনে একটি ভালো সংবিধান হলে এখন মানুষের জন্য যুগোপযোগী আইন কেন হবে না?’
সম্প্রতি ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নিয়োগ পাওয়ার পরদিন গত ১৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি মামলাজটকে তার প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ লক্ষ্যে আইনের সংস্কার বড় বিষয় উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মানুষের দুর্গতি ও কষ্ট লাঘবে সরকার নিশ্চয়ই এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবে।’ নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।
আইন সাময়িকী ডিএলআরের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি যথার্থই বলেছেন। আমরাও আইনের সংস্কার চাই। শুধু ফৌজদারি কিংবা দণ্ডবিধি নয়, এসব আইনের আলোকে আর্থিক অপরাধ, মানি লন্ডারিংসহ এমন কিছু আইন আছে যেগুলোর অনেক কিছুর সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।’
কিছুদিন আগে ভারত সরকার ব্রিটিশদের তৈরি ফৌজদারি আইন ব্যাপক সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে।
সংস্কারের রূপরেখা আলোর মুখ দেখেনি : পুরনো ফৌজদারি আইনের সংস্কার নিয়ে ২০১১ সালে একটি রূপরেখা তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রতিবেদন দিয়েছিল আইন কমিশন। এতে আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতিবাক্যটিকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থান করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একজন নির্দোষ ব্যক্তি যাতে সাজা না পায় এবং একজন অপরাধীও যাতে খালাস না পায়।’ আইনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে প্রশ্নের অবতারণা করে সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানে ৩৩টি সুপারিশ করে কমিশন। এর মধ্যে তদন্ত ও বিচারের ত্রুটি কাটাতে ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত করতে স্থায়ী, পেশাদার ও দক্ষ পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য শুধু হাতেকলমে না লিখে টেপ রেকর্ডার, ভিডিওতে রাখা, ১৬৪ ধারায় আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সঙ্গে সাক্ষীর বক্তব্য রেকর্ড করা, মিথ্যা ও তুচ্ছ অভিযোগকারীকে জরিমানা, ক্ষতিপূরণ বা কারাদণ্ড দিতে ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি দায়রা জজকেও ক্ষমতা দেওয়া, বিচারকাজের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে মুলতবির সময় সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া, মামলার কার্যক্রম স্থগিতের সময়সীমা ৩০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের তাগিদ দেয় কমিশন। এ ছাড়া কারাগারের চাপ কমানো এবং আসামিকে সংশোধনের লক্ষ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও অভিযোগ গঠনের সময় দোষ স্বীকার করলে সাজা রেয়াত দেওয়া, যুক্তিতর্কের কারণে মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ায় তা লিখিত আকারে জমা দেওয়া, আদালতের সংখ্যা অনুপাতে আপিল আদালত প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে কমিশন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কমিশনের ওই সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি।
কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোর্শেদ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতিবেদন দেওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে কমিশন অবহিত নয়।
দণ্ডবিধির অনেক ধারার অসংগতি ও অস্পষ্টতা নিয়ে আইন ও বিচার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই আইনে অনেক কিছুই আছে। কিন্তু গণপিটুনিতে মৃত্যু, অর্থনৈতিক অপরাধের মতো আরও কিছু বিষয়ে আইনে কিছু নেই। অন্যদিকে পুরনো এ আইনে এখনো ১০ টাকা, ১০০ টাকা ও ২০০ টাকার মতো অর্থদণ্ডের বিধান রয়ে গেছে। জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার তিনজন (একজন অবসরে) বিচারক এসব আইনে তাদের বিচারিক অভিজ্ঞতার বিষয়টি দেশ রূপান্তরের কাছে তুলে ধরেন। সংগতকারণে তারা তাদের নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানান। একজন বিচারক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রসিকিউশনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার সমন্বয়ে একটি ফৌজদারি মামলার বিচার কার্যক্রম হয়। কিন্তু বিচারের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে শুধু বিচার বিভাগকে শুনতে হয়। পুরনো আইনগুলোতে এমন অনেক কিছু আছে, যা একটু আধুনিক হলে বিচারকাজে আরও গতিশীল হবে।’ অন্য একজন বিচারক বলেন, ‘বিচারকাজের সময় টাইম (আদালত ও বিচারপ্রার্থীর সময়), কস্ট (বিচারপ্রার্থীর খরছ) এবং ভিজিট (বিচারপ্রত্যাশীর আদালতে আসা-যাওয়া) এ তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আইনগুলোতে এসব বিষয়ে স্পষ্ট কিছু দিকনির্দেশনা নেই। সংগতকারণে বিচারপ্রার্থীর প্রতি সিমপ্যাথি (সহানুভূতি) ও ইমপ্যাথি (সহানুভূতির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু করা) থাকা সমীচীন।’
আইন সংস্কারের উদ্যোগ থমকে দুই বছর ধরে : ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফৌজদারি আইন সংস্কার ও আইনটি বাংলা ভাষায় প্রণয়ন করতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হককে নির্দেশ দেন। দুদিন পর ফৌজদারি আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন করে আইনটি যুগোপযোগী, আধুনিক ও বাংলা ভাষায় প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে চেয়ারপারসন করা হয় মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবিরকে। কমিটিকে অন্যান্য দেশের আইন বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করে সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের ওয়াকিবহাল একটি সূত্রের তথ্য বলছে, দুই বছর পার হলেও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই।
এ বিষয়ে জানতে সচিব ময়নুল কবিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল ধরেননি। সার্বিক বিষয়ে জানতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তার সাড়া মেলেনি। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এএম আমিন উদ্দিন মনে করেন, পুরনো আইনগুলোর আমূল পরিবর্তন কিংবা পুরো সংস্কার নয়, যতটুকু করলে বিচারপ্রার্থীর দ্রুত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে সেটি হতে পারে। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আইনগুলোর প্রসিডিউরে (কার্যপ্রণালি) তেমন ভুল নেই। যেসব ক্ষেত্রে অসংগতি বা অস্পষ্টতা আছে শুধু সেগুলোই আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে অংশীজন হিসেবে অন্যদের সঙ্গে অবশ্যই আইনজীবীদের সম্পৃক্ত রাখা উচিত।’
ন্যায্য পারিশ্রমিক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সীমিত করার দাবি নিয়ে পাঁচ মাস আগে হলিউডে শুরু হওয়া হট্টগোলের অবসান হচ্ছে। আন্দোলনকারী লেখকরা প্রযোজকদের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর পর ধর্মঘট তুলে নেওয়ার কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানাচ্ছে, পাঁচ মাস আগে লেখক বা চিত্রনাট্যকারদের আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দেন অভিনয়শিল্পীরা। যার কারণে হলিউডে একধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বন্ধ হয়ে যায় অনেক সিনেমার নির্মাণকাজ। তবে স্থানীয় সময় গত রবিবার হলিউডের লেখক ইউনিয়ন বড় স্টুডিওগুলোর সঙ্গে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে।
সিএনএন বলছে, এই চুক্তির ফলে হলিউডের ইতিহাসের বড় দুটি ধর্মঘটের মধ্যে একটি পক্ষ কাজে ফিরতে সম্মত হলো। এই ধর্মঘটের ফলে প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ ফিল্ম ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানের চিত্রায়ণ। ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতিতে এর প্রভাব বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের। তাই এবার আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে লেখক ও অভিনয়শিল্পীদের কাজে ফেরাতে সচেষ্ট হচ্ছে হলিউডের স্টুডিওগুলো।
লেখকদের সঙ্গে নিষ্পত্তি হলেও এখনই হলিউডের স্টুডিওগুলোর আলো জ্বলছে না। অভিনেতাদের সংগঠন এসএজি-এএফটিআরএ এখনো পারিশ্রমিক ও এআই ইস্যুতে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দাবির পাশাপাশি লেখকদের পারিশ্রমিক ও লভ্যাংশ ইস্যুতে সংহতি প্রকাশ করে ২ মে থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। এসব বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে বার্তা সংস্থার আহ্বানে সাড়া দেয়নি দ্য অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসারস, ওয়াল্ট ডিজনি, নেটফ্লিক্স, ওয়ার্নার ব্রস ডিসকভারিসহ অন্যান্য প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্যিক গোষ্ঠী।
চলতি বছরের ২ মে থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটে ১১ হাজারেরও ফিল্ম এবং টিভি লেখক অংশগ্রহণ করেন, যারা স্ট্রিমিং যুগে উচ্চ বেতন এবং আরও ভালো কাজের দাবি করছেন। তারা যুক্তি দিয়েছেন যে স্টুডিওগুলো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরম থেকে যে আয় করেছে, সেই তুলনায় তাদের ক্ষতিপূরণ মিলছে না। লেখকরা নতুন নিয়মও চান, যাতে এসব স্টুডিও টিভি শোগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক লেখক নিয়োগ করতে হবে। একই সঙ্গে বড় স্টুডিওগুলোর কাছ থেকে বেশি পারিশ্রমিক চেয়ে একটি চুক্তি করতে চেয়েছিল লেখকদের সংগঠন রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা (ডব্লিউজিএ)। সেই চুক্তির চেষ্টা ব্যর্থ হওয়াতেই মূলত ধর্মঘটের ডাক দেন লেখকেরা। হলিউড আন্দোলনের কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে টেলিভিশন শো ও হলিউডের নির্মাণাধীন সিনেমাগুলো।
বিশ্বকাপ যত এগিয়ে আসছে, বাংলাদেশে বিশ্বকাপ নিয়ে নাটক ততই জমে উঠেছে। একদিন পর দল বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়বে, অথচ এখনো ঘোষণা হয়নি বিশ্বকাপের দল।
এমন অবস্থায় সোমবার মাঝরাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় বৈঠকে বসেছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
বিকেলে বিসিবি সভাপতির পেশাগত কার্যালয়, বেক্সিমকোতে নির্বাচক কমিটির সদস্যসহ বিসিবির বেশ কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি। তারপর সন্ধ্যার দিকে দেশের কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবী করা হয় সাকিব ও তামিম ইকবালের ভেতর নতুন দ্বন্দের খবর।
গণমাধ্যমগুলোর দাবী, তামিম ইকবাল জানিয়েছেন বিশ্বকাপে তিনি পাঁচটি ম্যাচে খেলতে পারবেন। অন্যদিকে তামিমের এই দাবী মানলে বিশ্বকাপে না খেলার হুমকি দিয়ে রাখেন সাকিব।
২০১৯ বিশ্বকাপে চোটজর্জর মাশরাফী বিন মর্তুজা দলে থাকায় এবং সবগুলো ম্যাচে খেলায় অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পরও দলকে বিশ্বকাপে অষ্টম হতে দেখেছেন সাকিব, তাই এই শর্তে তার নেতৃত্বে না থাকার আশংকাই প্রবল। এই দুই জনকে সমঝোতা করার জন্য মাশরাফীকে পাপন দায়িত্ব দিয়েছেন এমন একটা খবরই দাবী করা হয়। যদিও এসবের পক্ষে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ধোঁয়া থাকলে আগুন থাকবেই। তাই মধ্যরাতে, পৌনে ১২টায় সাকিবের বিসিবি সভাপতির বাসভবনে ছুটে যাওয়া আর সিডনি থেকে বাংলাদেশে পা রাখার ঘণ্টা তিনেকের মাথায় তাকে গুলশানের আইভি লেগেসিতে ছুটে আসতে দেখার মাধ্যমেই বোঝা যায়, চূড়ান্ত দল ঘোষণার আগে শেষ মুহূর্তে কোনো মারপ্যাঁচ লেগেছে।
প্রায় ৩ মাস পর আন্তর্জাতিক ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে তামিম খেলেছিলেন ৪৪ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে আবার তিনি বিশ্রামে, যেটা বিসিবির মেডিক্যাল বিভাগেরই সুপারিশে।
তাই বিশ্বকাপে তামিম কতটা ফিট হয়ে খেলতে পারবেন, আদৌ খেলতে পারবেন কি না এসব নিয়েই হয়তো হয়েছে শেষ মুহুর্তে মধ্যরাতের আলোচনা।
অধিনায়ক, কোচ আর বিসিবি প্রধান মিলে মিনিট চল্লিশেক বৈঠক করেছেন। আগে বের হয়েছেন হাথুরুসিংহে, তার মিনিট দশেক পর সাকিব। কেউই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি, গাড়ির কাঁচটাও নামাননি। আর পাপনের বাসায় যখন এসব চলছে, তখন এক বন্ধুর সঙ্গে বাসায় বসে চাউমিন খাচ্ছেন তামিম!
সাকিব-তামিম একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলেন না, এই খবর পুরাতন। শোনা গেছে সম্প্রতি একটি মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপণের কাজে দুজনের ভেতর সম্পর্কে তিক্ততা বেড়েছে। তামিমের খেলা, না খেলা এসব নিয়েও জলঘোলা হওয়ার কারণেই নাকি সাকিবের বিরক্তি বেড়েছে।
তবে দুজনের কারো কাছ থেকেই এসব নিয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তামিম অধিনায়ক থাকা অবস্থায় ইংল্যান্ড সিরিজের আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন 'নাথিং এলস ম্যাটার্স'। সাকিবও স্বভাবসুলভ ভাবেই পাশ কাটিয়ে গেছেন এসব প্রসঙ্গ।
দল ঘোষণার আগের দিনে, মাঝরাতে বিসিবি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে কোচ ও অধিনায়কের বৈঠক হতে পারে শেষ মুহূর্তের বোঝাপড়া। যেহেতু একদিন বাদেই উড়াল দিতে হবে। অথবা তামিম সংক্রান্ত ব্যপারে চূড়ান্ত ফয়সালা। উত্তরটা পেতে অপেক্ষা মাত্র কয়েক ঘণ্টার।
২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনকেন্দ্রিক সক্রিয় অবস্থানের পর দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের বড় কোনো কর্মসূচি নেই। কর্মসূচি পালন করতে চাইলেও ছাত্রলীগের হামলার মুখে দাঁড়াতেই পারছেন না সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। মাঝেমধ্যে ক্যাম্পাসের আশপাশে ছোটখাটো ঝটিকা মিছিল করেই সারছে দলীয় কর্মসূচি। তবে বিএনপির এক দফা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আবারও ক্যাম্পাসে সরব হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।
জানা যায়, ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন উপদলে ভাগ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত আড্ডা এবং কর্মী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। আগামীতে ঢাবি ছাত্রদলের নেতৃত্বপ্রত্যাশী নেতারা এসব কর্মকা- পরিচালনা করছেন বলে জানা যায়। আড্ডা দিতে গিয়ে শনিবার রাতে ছাত্রলীগের হামলার শিকারও হন কয়েক জন ছাত্রদল নেতা। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ সক্রিয় দেখা যাচ্ছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। ‘আমরা দ্রুত ফিরছি, মাত্র কয়দিনের অপেক্ষা’ লিখে স্ট্যাটাস দিতে দেখা যায় তাদের।
এদিকে রবিবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের দেয়ালে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ সে্লাগান লিখে আলোচনা তৈরি করে ঢাবি ছাত্রদল। ছাত্রদল নেতা আনিসুর রহমান খন্দকার অনিকের নেতৃত্বে মধুর ক্যানটিন ছাড়াও ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া, কলা ভবনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়ালে ২০টির বেশি দেয়াল লিখন করেছে তারা। এসব দেয়ালে ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’, ‘ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশ’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে আসবে ফিরে বাংলাদেশে’ সে্লাগান লেখা হয়। যদিও এদিন দুপুরের দিকে মধুর ক্যানটিনের লেখা মুছে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ঢাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশব্যাপী বিএনপির লংমার্চ শেষে অক্টোবরে ঢাকাকেন্দ্রিক টানা আন্দোলন চলবে। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও পুরোদমে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ছাত্রদল। যত বাধাই আসুক ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কর্মসূচি ও আন্দোলন করতে চান তারা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত স্যাংশন ও বিএনপির সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি চূড়ান্ত রূপ লাভের অপেক্ষা থাকায় নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বলে দাবি ছাত্রদলের নেতাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। অক্টোবরে তা চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আপাতত বিভিন্ন ভাগ হয়ে হয়ে আড্ডা, দেয়াল লিখনসহ নানান কর্মসূচি চলছে। নতুন শিক্ষার্থীরাও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের বিনাশ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। দেশনায়ক তারেক রহমানের চূড়ান্ত নির্দেশের অপেক্ষায় আছি আমরা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গতকালও ছাত্রলীগ আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমরা হামলার জবাব হামলা দিয়ে নয়, কাজের মাধ্যমে জবাব দিতে চাই। সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিনাশ করতে চাই। ক্যাম্পাস কারও একার সম্পত্তি নয়, যেকোনো সময় আমরা আসব। শুধু সময়ের অপেক্ষা। আমরা দেশনায়ক তারেক রহমানের আগমনী বার্তা দিতে চাই।’
ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যেহেতু সামনে নির্বাচন, নির্বাচনকেন্দ্রিক আমাদের কর্মসূচি চলছে। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দিতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসব। আমরা খুব দ্রুতই আসব। হাইকমান্ডের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল প্রস্তুত আছি। ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে, দাবি আদায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে অচিরেই ক্যাম্পাস থেকে আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে আমরা বিজয় নিয়েই ঘরে ফিরব ইনশা আল্লাহ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ক্যাম্পাস থেকে হারিয়ে যায়নি। হামলা-মামলার শিকার হয়েও আমরা নিয়মিত পদচারণা অব্যাহত রেখেছি। আগামীতেও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এই ক্যাম্পাসে সরব অবস্থানে থাকবে। ছাত্রলীগের দখলদারিত্বের অবসান ঘটবে শিগগিরই। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেলে আমরা চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাব। আমরা প্রস্তুত ইনশা আল্লাহ।’
এদিকে ক্যাম্পাস দখল ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করলে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোররাতে এসে কেউ যদি দেয়াল লিখন করে, এটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলে আমরা মনে করি না। আদালত কর্তৃক ঘোষিত অপরাধীকে তারা দেশনায়ক বলছে, তাদের কর্মকাণ্ড দ্বারা বোঝা যায় তারা কতটা অথর্ব। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার একটি কেন্দ্র, এখানে দখলদারিত্বের কোনো বিষয় নেই। যেটি ছাত্রদল বলার চেষ্টা করছে দখল করবে, এই চিন্তা-ভাবনা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক যায় না। এসবে আমরা বিশ্বাস করি না। শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যা যা করার দরকার, আমরা তা করতে রাজি আছি। ক্যাম্পাসকে কেউ অস্থিতিশীল করতে চাইলে তা প্রতিহত করা হবে।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিনের মধ্যে অন্যতম ভিটামিন ডি। অতি প্রয়োজনীয় এই ভিটামিনের প্রধান উৎস সূর্যের আলো। তবে আমাদের ব্যস্ত জীবনে রোদ পোহানের সময় কই। অফিস থেকে বাসা, বাসা থেকে অফিস। এসির ভেতর থাকতে থাকতে শরীরে তৈরি হচ্ছে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি। ফলে কম বয়সে হাড়ক্ষয়, পিঠে-কাঁধে ব্যথা, চুল ঝরে যাওয়া, ঘা শুকোতে দেরি হওয়া, হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়।
রেগুলার অফিসযাত্রীরা ভিটামিন ডি-এর অভাবে সবচেয়ে বেশি ভোগে। এরা রোদে বসার সময় পান না। যে কারণে এদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি খুব বেশি দেখা যায়। ৫০ বছরের বেশি বয়সের পর শরীরে অনেক ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়, যার মধ্যে ভিটামিন ডিও একটি। এই বয়সে শরীর সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি তৈরি করতে সক্ষম হয় না। যে কারণে এই বয়সের মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করতে হয় অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে। এনআইএইচ-এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, যাদের বডি মাস ইনডেক্স ৩০-এর বেশি বা তাদের শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি তারাও ভিটামিন ডি-এর অভাবের সম্মুখীন হতে পারেন।
কীভাবে বাড়াবেন ভিটামিন ডি?
মাশরুম
মাশরুমে ভিটামিন ডি থাকে। মাশরুম ইউভি রশ্মির সংস্পর্শে এলে ভিটামিন ডি তৈরি করে। এটি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। কম তেলে রান্না করলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
সি ফুড
কিছু মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে। রিপোর্ট অনুযায়ী, স্যামন, টুনা এবং ম্যাকেরেল মাছে ভিটামিন ডি থাকে। যদি আমিষভোজী হন তবে আপনি তাদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
দুধ
এছাড়াও দুধে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এতে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি বেশি পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে। বিশেষ করে গরুর দুধে, এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। এর পাশাপাশি সহজে হজম হয়। দই দইয়ে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকে। দই হাড় মজবুত করে এবং হার্ট ভাল রাখে।
ভিটামিন ডি পাওয়ার সেরা উপায় কি?
রিপোর্ট অনুযায়ী, ভিটামিন ডি পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উৎস হল চর্বিযুক্ত মাছ এবং মাছের তেল। ডিমের কুসুম এবং পনিরে অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়। উপরন্তু, কিছু মাশরুমে কিছু ভিটামিন ডি২ থাকে।
ভিটামিন ডি এর জন্য রোদে বসার সঠিক সময় কোনটি?
অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে সকাল ও বিকেল হল রোদে বসার সেরা সময়। দুপুরে ইউভিবি রশ্মি সবচেয়ে শক্তিশালী হয়। এর মানে হল আপনি কম সময়ে বেশি ভিটামিন ডি পাবেন। কমপক্ষে ১০ মিনিট এবং সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট রোদে বসলে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।