
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে নিত্যপণ্যের দামের কথা শুনলেই একসময় আঁতকে উঠতে হতো। সেই আফগানিস্তানে গত মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ঋণাত্মক ২ দশমিক ৮ (-২.৮)। দেউলিয়া হয়ে পড়া শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি এখন ৬ শতাংশের মধ্যে। শুধু দক্ষিণ এশিয়াই নয় বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও বাংলাদেশ এখনো ব্যর্থ। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই শেষে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অথচ চলতি অর্থবছরের সরকারের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশের মধ্যে। গতকাল রবিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতির তথ্য উঠে এসেছে।
বিশে^র বেশিরভাগ দেশে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে সক্ষম হলেও বাংলাদেশে কোনোভাবেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। সরকার, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সব মহলেরই মূল্যস্ফীতি বেশি হওয়ার ব্যাখ্যা হিসেবে উপস্থিত থাকে ‘রাশিয়া-ইউক্রেন’ যুদ্ধ। যদিও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ মানেই ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এটাকে কমছে বলা যাবে না, এটি প্রায় অপরিবর্তিতই রয়েছে। মূল্যস্ফীতি তো বাড়বেই কারণ সরকার এটি কমানোর জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ হাতে নেয়নি।
ট্রেড ইকোনমিকসের তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে এ মুহূর্তে বেশি মূল্যস্ফীতি রয়েছে পাশের দেশ মিয়ানমার ও পাকিস্তানে। আফগানিস্তানে জুন শেষে মূল্যস্ফীতি মাইনাস ২ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০২২ সালে দেউলিয়া হয়ে পড়া শ্রীলঙ্কায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। অথচ শ্রীলঙ্কায় আগের মাসেও মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১২ শতাংশের ওপরে। মাসের ব্যবধানে প্রায় অর্ধেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার আলোচিত এ দেশটি।
অর্থনীতিতে কাবু হয়ে থাকা মধ্য আফ্রিকায় মে মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ শতাংশের বেশি। কিন্তু জুন মাসে তাদের মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
অন্য দেশে কমলেও বাংলাদেশে কেন কমছে না কারণ হিসেবে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অন্য দেশগুলো সবাই সতর্ক হয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এখন বাংলাদেশে যদি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তাহলে সুদের হার আরও অনেক বাড়াতে হবে। সুদের হার না বাড়ালে মূল্যস্ফীতি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
সরকারি হিসাবে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে। তবে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বিবিএস মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আগের মাস অর্থাৎ গত জুনে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমলেও, খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। আর ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের জুলাই মাসে দেশের মানুষ যে খাদ্য ১০০ টাকায় পেয়েছিল, এই বছরের জুলাইয়ে তা কিনতে ১০৯ টাকা ৭৩ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেশে দেশে মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় সুদের হারকে। বিশে^র প্রায় সব দেশই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। এটি করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোও তাদের দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশে গত জুনের মুদ্রানীতিতে সুদের হার কিছুটা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও তা অনেকটা নিয়ন্ত্রিত। সুদহারের সীমা প্রত্যাহার করা হলেও পরোক্ষভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত বছরের মার্চে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ে প্রায় ৯ শতাংশে উঠেছিল; যা ছিল ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বর্তমানে দেশটির মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, চীন, ভারত, কানাডা, ব্রাজিলসহ ছোট-বড় সব দেশেই স্পর্শকাতর এই সূচকটি সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো ১০ শতাংশের কাছাকাছি অবস্থান করছে। কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হারে নিয়ন্ত্রণ আসছে না। এ দুই কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতিতে বাড়তি চাপের সৃষ্টি হয়েছে।
এতে চাপ বাড়ার নেপথ্যে আরও রয়েছেÑ বৈশ্বিক অস্থিরতায় পণ্যের সরবরাহব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়া, বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য লাগামহীন বৃদ্ধি এবং দেশের বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। ফলে আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়েছে। এর প্রভাবে অন্যসব পণ্যেরও দাম বেড়েছে। এসব মিলে চাপ বেড়েছে মূল্যস্ফীতিতে।
সরকারি হিসাবে সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এ মুহূর্তে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি নিয়ে শুরু হয়েছে অর্থবছর, যা বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে ৩ দশমিক ৪২ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। কিন্তু বছর শেষে তা গড়ে ৯ শতাংশের কাছাকাছি ছিল।
মূল্যস্ফীতি না কমাতে কারণ হিসেবে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত বছরের জুলাইতেও খুব উচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল। এটি এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতির ওপর আরও উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার। এর অভিঘাতও বেশ বড়। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনে যেমন আঘাত করছে, এটির কারণে উৎপাদকদের ওপরও অভিঘাত পড়ে। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে আমদানি পণ্যের দাম কমার ফলে মূল্যস্ফীতি কমে আসছে। আমাদের দেশে ব্যতিক্রম হলো আমরা স্থানীয় পণ্যের ক্ষেত্রেও সুযোগ ব্যবহার করতে পারছি না, আমদানি করা পণ্যের ওপরও তার প্রভাব রয়ে যাচ্ছে।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমাদের দেশের ডলারের বিপরীতে টাকার অবনমন মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। কিন্তু কখন আমদানিকারকদের উৎসাহিত করতে হবে, কখন স্টক করতে হবে তা জানানোর ঘাটতি ছিল। কিন্তু ভারতের মতো রাষ্ট্রে এটি হয়নি।’
ড. মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এখন আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে হবে। কারণ এখানে অনেক দুর্বলতা রয়ে গেছে। আমাদের চাহিদা কত, সরবরাহ কতÑ এগুলোর মনিটরিং জোরদার করা উচিত।’
চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানাধীন ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে গত ১৩ জুলাই এক তরুণীকে অপহরণ করে তিন যুবক। ধর্ষণের শিকারও হন ওই তরুণী। অপহরণ থেকে ধর্ষণ পর্যন্ত এই অপরাধ হয়েছে তিনটি থানা এলাকার সীমানাজুড়ে। কিন্তু তিনি যখন মামলা করতে গেলেন, তখন এক থানা বলছে এখানে না, ওই থানায় হবে। সাত দিন ধরে এমন ঠেলাঠেলির পর শেষ পর্যন্ত তার মামলা নেওয়া হয়।
এমন পরিস্থিতি মনে করিয়ে দেয় ২০১৫ সালের ২১ মে রাতে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষারত এক গারো তরুণীর ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনা। মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে পাঁচ ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করার পর মামলা করতে গিয়ে দুই থানায় ঘুরতে হয়েছিল ওই ভুক্তভোগী তরুণীকে। এভাবে সীমানা নিয়ে পুলিশের ঠেলাঠেলির কারণে ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ বাড়ে।
অথচ পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি) ১৯৪৩ এর (ক) ২৪৬ প্রবিধানের (গ) অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোনো অপরাধ অথবা কেবলমাত্র সেশন কোর্টে বিচারযোগ্য কোনো অপরাধের খবর যে অফিসার পান, অপরাধটি তার এলাকার বাইরে সংঘটিত হলেও তিনি সম্ভব হলে টেলিগ্রাম অথবা জরুরি চিঠির মাধ্যমে খবরটি ঘটনাস্থল যে থানার অধীনে সেই থানায় পাঠাবেন। যদি পরিস্থিতি দাবি করে তাহলে তিনি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারও করবেন।
আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধের শিকার হয়ে ভুক্তভোগী প্রথম যখন থানায় যান, তখন তিনি ট্রমাটাইজড (ভীতসন্ত্রস্ত) থাকেন। স্বাভাবিক অবস্থায় থাকেন না। এসব পরিস্থিতিতে পুলিশের নিজের একটি দিকনির্দেশনা থাকা উচিত। ভুক্তভোগী যে থানায় যান, সেই থানাকে মামলাটি নেওয়া দরকার। পরে যদি অনুসন্ধানে দেখা যায় এই থানার এখতিয়ারে পড়ে না, তখন সংশ্লিষ্ট থানায় কাগজপত্র পাঠিয়ে দিতে মহাযজ্ঞ তো করা লাগবে না।’
কিন্তু নাম প্রকাশ না করে পুলিশের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে অপরাধ শুরুর থানাতে ভুক্তভোগী গেলে ওসি (থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) বলেন, যেখানে শেষ হয়েছে সেই থানায় যান। এভাবে মামলা না নেওয়া অথবা একধরনের দায় এড়ানোর প্রবণতা অনেক সময় লক্ষ করা যায়। মামলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়াকে ডিসক্রেডিট মনে করেন ওসিরা।’
পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ অনুযায়ী অপরাধ সংঘটন ও শেষের স্থানের থানা ছাড়া অন্য থানার মামলা নেওয়ার সুযোগ নেই। কার্যবিধিতে বিষয়টি নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে। যদিও ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর পর এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য বর্তমান সরকারের। অথচ এখনো দেশের থানাগুলোয় মামলা হয় ব্রিটিশ শাসকদের করা ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী।
ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ১৭৯ ধারায় বলা হয়েছে, অপরাধ সংঘটনের জেলায় বা পরিণাম ঘটার স্থানে আসামির বিচার হবে। ‘যে কাজ করা হয়েছে বা উহার পরিণাম দেখা দিয়াছে ভিত্তিতে কোন ব্যক্তি অপরাধ করার অভিযোগে অভিযুক্ত হলে এরূপ অপরাধের অনুসন্ধান বা বিচার যে আদালতের এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে উক্ত কাজ করা হয়েছে, সেই আদালতে অথবা যে আদালতের এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে উহার পরিণাম দেখা দিয়াছে, সেই আদালতে হতে পারবে।’
আদালতও আমলযোগ্য মামলা থানার এলাকার ভিত্তিতে ভাগ করে। ফলে যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয় বা শেষ হয়, সেই এলাকার থানায় বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর বা মামলা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন মানুষের জন্য। বিদ্যমান আইন মানুষকে যখন সেবা দিতে না পারবে, ন্যায়বিচার দিতে না পারবে, সেই আইন অকার্যকর। যে আইন মানুষকে সেবা দেওয়ার পরিবর্তে ভোগান্তিতে ফেলে, সেই আইন বদল করা দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক সাদেকা হালিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর কিছু ধারা অবশ্যই পরিবর্তন করা প্রয়োজন। কতগুলো জায়গায় এখনো ঔপনিবেশিকবাদের ষড়যন্ত্রমূলক আইন যেগুলো একেবারে জনবান্ধব নয়, সেগুলোর আমরা চর্চা করি। যারাই ক্ষমতায় আসেন তারাই জনবান্ধব নয় এমন আইন পরিবর্তনে কোনো উদ্যোগ নেন না। আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় শুধু নয়, যারা আইন বানায় তাদেরও এদিকে নজর দেওয়া উচিত।’
গত ১৩ জুলাই চট্টগ্রামে ধর্ষণের শিকার তরুণী ও তার বাবা জানান, তাদের বাসা খুলশী থানা এলাকায় এবং এই এলাকা থেকেই তাকে তুলে নেওয়া হয়। ফলে তারা মামলা করতে প্রথমে যান খুলশী থানায়। ঘটনার বর্ণনা শুনে সেখান থেকে তাদের পাঠানো হয় কর্ণফুলী থানায়। কর্ণফুলী থানার পুলিশ জানায় মামলা করতে হবে ঘটনাস্থল পটিয়া থানায়। পটিয়া থানায় গেলে সেখানেও মামলা নিতে টালবাহানা শুরু করে পুলিশ। তারা বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করলে মামলা নিতে বাধ্য হয় পটিয়া থানা পুলিশ।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ভুক্তভোগীর বাবা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মামলা করতে এক থানা থেকে আরেক থানায় ঘুরতে ঘুরতে হয়রান হয়েছি। সাত দিন তিন থানায় দৌড়ঝাঁপ করার পর মামলা নেয় পুলিশ। কিন্তু মূল অভিযুক্তকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।’
জানতে চাইলে খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘আমার থানায় মামলা করতে এসেছিল। ভুক্তভোগীর বর্ণনা শুনে দেখা যায় ঘটনাস্থল আমার থানা এলাকায় পড়ে না। ওই তরুণী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন পটিয়া থানা এলাকায়। পরে পটিয়া থানায় মামলা হয়েছে।’
গত বছরের ১২ আগস্ট মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশনে বখাটেদের হামলায় গুরুতর আহত হন ব্যবসায়ী নীল মাধব সাহা (মাথা ফাটিয়ে দেয়) ও তার স্ত্রী বন্ধনা রানী সাহা। ঘটনার পর নগরীর চন্দ্রিমা থানা, মতিহার থানা ও রাজশাহী রেলওয়ের জিআরপি থানায় ঘুরেও বখাটেদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেননি তারা। নিরুপায় হয়ে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করার পর মামলা নেয় চন্দ্রিমা থানা পুলিশ।
বন্ধনা রানী সাহা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রথমে তিন থানাতেই গিয়েছিলাম। কেউই মামলা নেয়নি। এক থানা আরেক থানায় পাঠিয়েছে।’
গত বছরের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের লাশ উদ্ধারের পর মামলা করতে গিয়ে একই রকম হয়রানির শিকার হন তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, নিখোঁজের স্থান রাজধানীর রামপুরা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে আমাকে চাপ দিচ্ছিল নৌ থানায় (নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানায়) মামলা করতে অথবা যেখানে লাশ পাওয়া গেছে (নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী) সেই এলাকায়। ওরা (পুলিশ) খুব চেষ্টা করেছিল, মামলা যেন চনপাড়া নারায়ণগঞ্জের দিকেই থাকে। গভীর রাত পর্যন্ত আমাকে থানায় বসে থাকতে হয়। পরে বাধ্য হয়েছে মামলা নিতে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ধর্তব্য অপরাধের (আমল যোগ্য অপরাধ) ক্ষেত্রে প্লেস অব অকারেন্স (ঘটনার স্থান) খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আইনে বলা আছে, অপরাধের শুরু ও শেষ যে জায়গাটা পুলিশের নজরে আসবে, সেই জায়গায় মামলা হবে।’ তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু অপরাধ আছে যেগুলো মামলা না হয়ে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) হয়, সে ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী তার কাছাকাছি যেকোনো থানায় জিডি করতে পারেন।’
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কোনো একটা বর্ডারে (থানার সীমান্ত) অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে যদি সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসাররা গড়িমসি করেন, কাউকে হয়রানি করেন তাহলে ওই সব অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে কেউ আর এমন করবে না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের বিশেষ বর্ধিত সভার শুরুটা করেছিলেন ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পরের ঘটনা দিয়ে। শেষ করেছেন আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি ও করণীয় সম্পর্কে দলীয় নেতাদের নির্দেশনা দেওয়ার মধ্য দিয়ে। তিনি বলেছেন, ’৯১ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির চেয়ে কম আসন পাওয়া আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার যাওয়ার পথ বাতলে দিয়েছিলেন। তার কথামতো জামায়াত ও জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যাননি বলেই পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল। আগামী নির্বাচনে নিজেদের শক্তিতে লড়াইয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করে সমাপনী বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন তাকেই বিজয়ী করতে হবে। বর্ধিত সভায় উপস্থিত নেতারা তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে এ ব্যাপারে তাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা হয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠপর্যায়ের প্রায় তিন হাজার নেতা এবং জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে এ বিশেষ বর্ধিত সভা হয়।
আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সারা দেশের জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা এ সভায় উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাও ছিলেন বিশেষ এ বর্ধিত সভায়। প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্য শেষে গণমাধ্যমের সব সাংবাদিককে বের করে দেওয়া হয়।
সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একটি কথা আগে কখনো বলিনি। ১৯৯১ সালে নির্বাচনে বিএনপি বেশি আসনে জয়লাভ করেছে। আওয়ামী লীগ কম আসন পায়। পরে তৎকালীন সরকারপ্রধান বিচারপতি সাহাবউদ্দীন আমাকে ডেকেছিলেন। আমাকে তিনি জানান, আপনি তো সরকার গঠন করতে পারেন। জামায়াত-জাতীয় পার্টি আপনাকে সমর্থন দেবে। আমি তাতে রাজি হইনি। ওইটুকু ত্যাগ স্বীকার যদি সেদিন না করতাম, তাহলে আর ক্ষমতায় আসতে পারতাম না।’
বর্ধিত সভায় উপস্থিত একাধিক জেলা-উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দেশ রূপান্তরকে বলেন, সূচনা বক্তব্যের পর সাংগঠনিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন জিততে হলে দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এমন সুপারিশ করে তৃণমূলের ৪৩ জন নেতা বক্তব্য রাখেন।
তারা বলেন, শেখ হাসিনা গভীর মনোযোগ দিয়ে তৃণমূল নেতাদের দেওয়া বক্তব্য শোনেন। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া এ সভা বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলে। মাঝখানে মধ্যাহ্নভোজের বিরতি দেওয়া হয়। বর্ধিত সভায় উপস্থিত সবাইকে গণভবনে আপ্যায়ন করা হয়।
তৃণমূল নেতারা বলেন, তাদের বক্তব্যে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা উঠে আসে। উঠে আসে দলের সংসদ সদস্যদের অরাজনৈতিক আচরণ ও বিএনপিকে সুবিধা দেওয়ার কথা। তারা দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে বলেন, আগামী নির্বাচনে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক, তিনি যেন তৃণমূলের নেতাকর্মীর ভাষা বোঝেন, তাদের যেন ছাত্রলীগ করার ব্যাকগ্রাউন্ড থাকে। সংগঠন শেষ হয়ে গেছে, অনেকের বক্তব্যে এমন খেদোক্তিও প্রকাশ পেয়েছে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সামনে তৃণমূলের নেতারা আরও বলেন, প্যাডে-কলমে আওয়ামী লীগ যেভাবে চলছে এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। আপনি আর অল্প কিছু নেতৃবৃন্দ ছাড়া সবাই নিজের কথা ভাবে। নিজের কথা ভাবা এমপিদের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করার জন্য সভাপতির প্রতি আহ্বান জানান দলের এ নেতারা।
বর্ধিত সভায় উপস্থিত কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সমাপনী বক্তব্য দেন।
এ সময় বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘নৌকা মার্কায় আমরা যাকেই নমিনেশন দিই ভালোমন্দ, কানাখোঁড়া, যা-ই হোক, আপনাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, আপনারা তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।’ এ সময় তিনি সবাইকে হাত তুলতে বলেন। কেউ কেউ হাত না তোলায় শেখ হাসিনা বলেন, সব হাত উঠে নাই। সবাই হাত তুলে প্রতিজ্ঞা করেন। তখন সবাই হাত তুলে সমস্বরে হ্যাঁ বললে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মনে করে অগ্নিসন্ত্রাস করলে, পুড়িয়ে মানুষ মারলে আওয়ামী লীগ পড়ে যাবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার এত কাঁচা নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের শেকড় পতিত এই মাটিতে। আওয়ামী লীগ এ দেশের মাটি মানুষের থেকে উঠে এসেছে।
সামনে নির্বাচন, এ ব্যাপারে এখন থেকে সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দলটির একমাত্র শক্তি হচ্ছে জনগণ। আওয়ামী লীগ বা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো দিন কারও কাছে মাথানত করেননি। নিজের জীবনকে কবুল করে তিনি এ দেশের মানুষের মুক্তি এনে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা তারই আদর্শের অনুসারী। তারা কারও কাছে মাথা বিকান না। মাথানত করেন না। আওয়ামী লীগ এ দেশ স্বাধীন করেছে। আজকে যতটুকু উন্নতি হয়েছে, আওয়ামী লীগ আছে বলেই তা সম্ভব হয়েছে। এখানে আপনাদের দায়িত্ব রয়েছে। তৃণমূল, কেন্দ্রীয় কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ থেকে শুরু করে সবাই এখানে আছেন।
গত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশের পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে দেশের মানুষের উন্নতি হচ্ছে। মানুষের আর্থিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এ পরিবর্তন হয়েছে বলে এটা ধরে রাখতে হবে। জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে আওয়ামী লীগ ছাড়া এ দেশের মানুষের পাশে আর কেউ নেই। আওয়ামী লীগের সময়ে দেশের মানুষের ভাগ্য গড়া হয়েছে। প্রত্যেক এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। সেই কথাটা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। সেটা প্রচার করতে হবে।
আওয়ামী লীগপ্রধান বর্ধিত সভায় উপস্থিত সবাইকে প্রচারের কৌশল বুঝিয়ে দেন।
তৃণমূল নেতাদের বক্তব্যে দলীয় সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক সময় তিনি খবর পান। মাঝেমধ্যে ফোনেও বার্তা পান যে, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অথবা নেতার বিরুদ্ধে দলের লোকেরা নানা অপপ্রচার চালায়। এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ওপর দিকে থুতু ছুড়লে নিজের গালেও পড়ে। যাকে খাটো করার চেষ্টা হচ্ছে, সে খাটো হলে দলই খাটো হবে। আর নৌকার ভোট কমবে। কাজেই একজনকে খাটো করে কেউ যদি মনোনয়ন চায়, সে তো বড় হতে পারবে না। সে ভোটে জিততেও পারবে না। কারণ মানুষের মন থেকেই তো মুছে যাবে। আর এত কাজ যে করা হলো সেটা থাকবে না। সেটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, মনোনয়ন দেওয়ার আগে কতগুলো বিষয় বিবেচনায় নিয়েই দেওয়া হয়। তিনি সারা দিন যেমন দেশ গড়ার কাজ করেন, একইভাবে সংগঠনের কাজও করেন। কোথায় কার কী অবস্থা... ছয় মাস পরপর জরিপ করা হয়। এমপিদের অবস্থা বা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবস্থা, তাদের কী কাজকর্ম তার কিন্তু হিসাব নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর ওপর নির্ভর করছে দলের ক্ষমতায় যাওয়া না যাওয়া। সেই কথাটা মাথায় রেখে... দলীয় নেতাদের ওপর ভরসা রাখতে হবে। কারণ যখন মনোনয়ন দেওয়া হবে অবশ্যই মাথায় এটাও থাকবে যে, কাকে মনোনয়ন দিলে ওই আসনে জয়লাভ করা যাবে। সেখানে অনেক এসএমএস পাঠালে আর কারও গিবত গাইলেই যে তার কথা আমলে নেওয়া হবে তা কিন্তু হবে না। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, তার নিজের হিসাব-নিকাশ আছে। ৪২ বছর ধরে তিনি দলে আছেন এবং প্রতিটি এলাকায় ঘুরেছেন।
তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে বিশেষ বর্ধিত সভায় শেখ হাসিনা তার বক্তব্য শেষ করেন আগামী নির্বাচনের বিজয়ে পতাকা হাতে গণভবনে আসার দাওয়াত দিয়ে। তিনি বলেন, এখন থেকেই আওয়ামী লীগের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করুন।
এর আগে সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দল শুধু দেশের জনগণের কাছেই দায়বদ্ধ। আওয়ামী লীগের কোনো প্রভু নেই। আমাদের কোনো প্রভু নেই। জনগণই আমাদের প্রভু।’
শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০২৬ সালে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ। জনগণ চাইলে দেশ এগিয়ে যাবে। উন্নয়নশীল হিসেবে দেশকে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে হবে। তিনি বলেন, জনগণই ভোটের মালিক, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে চলতে পারবে এ দেশের মানুষ।
বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সব নেতার উদ্দেশে বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণই ভোটের মালিক। তারা যদি চায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, তাহলে আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে।’
বিএনপির ‘দুর্নীতি ও দুঃশাসনের ফলে’ এ দেশে সামরিক শাসন জারি হয়েছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত করতে আওয়ামী লীগই সংগ্রাম করেছে।
স্বাধীনতার পরে একটি ‘চক্রান্ত’ শুরু হয়েছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই চক্রান্তে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের হত্যা করা হয়। ২১ বছর আমাদের শুধু আহতদের চিকিৎসা ও লাশ টানতে হয়েছে।’
পাকিস্তানের জনপ্রিয় নেতা ইমরান খানের গ্রেপ্তার অপ্রত্যাশিত ছিল না। পাকিস্তানের এস্টাবলিশমেন্ট যেভাবে রাজনীতির পান্ডুলিপি আয়োজন করে; তাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জুলফিকার আলী ভুট্টো, নওয়াজ শরিফ, বেনজির ভুট্টোকে ঠিক এভাবেই গ্রেপ্তার করে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার ভূতের নাচন দেখেছে পাকিস্তানের মানুষ।
কিন্তু ইমরানের গ্রেপ্তারে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ার তুলনা শুধু চলে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের সঙ্গে। তাই তো ইমরান গ্রেপ্তারের পর টুইটার ও ফেসবুকে ট্রেন্ড ছড়িয়ে পড়ে, হ্যাশট্যাগ ‘ডোন্ট রিপিট নাইনটিন সেভেনটি ওয়ান’।
পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ১৯৭১ সালের সঙ্গে চলমান বাস্তবতার প্রতি তুলনা টানছে এ কারণেই যে, গণতান্ত্রিকভাবে জনগণের ভোটে বিজয়ী নেতা মুজিবকে দেশ শাসনের ম্যান্ডেট বাস্তবায়ন করতে না দিয়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী চড়াও হয়েছিল জনগণের ওপর। পূর্ব পাকিস্তানে ও পশ্চিম পাকিস্তানে গণতন্ত্রের পক্ষে সোচ্চার জনমানুষের ওপর সেনানিগ্রহ নেমে এসেছিল।
গত ৯ মে ইমরান খানকে প্রথমবার গ্রেপ্তারের পর থেকে বিক্ষুব্ধ জনতাকে দমন-নিপীড়নে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা ১৯৭১ সালের কালাকানুন আর কলাকৈবল্য প্রদর্শন করে চলেছে। সাংবাদিক ইমরান রিয়াজকে গুম, নারী নির্যাতন, মিছিলে গুলিবর্ষণ, জেল-জুলুম, সেনানিবাসে হামলার অভিযোগে কোর্ট মার্শাল করে বে-আইনিভাবে কারাগারে নিক্ষেপ করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এ যেন জঙ্গলের আইন!
গত কয়েকটি মাসে করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদে বড় বড় বিলবোর্ডে সেনাপ্রধান, গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানের ছবি শোভা পেয়েছে। সাধারণ মানুষ এই বিল বোর্ডগুলোকে গণতন্ত্রের জগতে স্বৈরাচারীর সস্তা কৌতুক হিসেবেই নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কৌতুকে বিদ্রƒপে জর্জরিত হয়েছে সেনাবাহিনী। সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বলতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। খোদ সেনা পরিবারের স্ত্রী-পুত্র-কন্যারা ইমরানের পক্ষে মিছিল করেছে লাহোরে; তারা সক্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ইমরান খানের জনপ্রিয়তা যেকোনো জনজরিপেই চোখ বুজে বলে দেওয়া যায় ৯০ শতাংশ। এ রকম একজন নেতাকে ‘উনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে প্রাপ্ত উপহার ঠিকমতো ঘোষণা না করা’র দায়ে দুর্নীতিবাজের তকমা দিয়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা প্রচলিত আইনের অপব্যবহার করে সেনাবাহিনীর প্রতিহিংসাপরায়ণতার নজির হিসেবেই আলোচিত পত্রিকার সম্পাদকীয়তে ও জনপরিসরে।
গত শনিবার ইসলামাবাদ থেকে পুলিশ পাঠিয়ে লাহোরের বাসভবন থেকে ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়; পাঠানো হয় কটক জেলে; মুঘল আমলে নির্মিত এই স্থাপনাটিকে ব্রিটিশরা ব্যবহার করত দেশদ্রোহীদের আটকে রাখার জন্য।
কয়েক মাস ধরে ‘দেশদ্রোহী’ শব্দটি খই মুড়ির মতো ব্যবহার করছে সেনা জনসংযোগ পরিদপ্তর। পাকিস্তান সেনাবাহিনী যেন দেশটির মালিকানা দাবি করছে নানা ঢঙে। আর এই দেশটির প্রাণ যে জনগণ তারাই যেন হয়ে গেছে নিজভূমে পরবাসী।
ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ (নওয়াজ) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি জোট কয়েক মাসের ক্ষমতার মোহে সেনাবাহিনীর ভূতের নাচনের নর্তক হয়েছে। জনগণ এই দুটি দলকে অপছন্দের চোখে দেখায় নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের জিতে আসা প্রায় অসম্ভব। তাই তারা সেনাবাহিনীর ঘোড়ার পিঠে চড়েই ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চায়; এমন মনোভাব স্পষ্ট।
সে কারণে সেনাবাহিনীকে খুশি করতে তারা তড়িঘড়ি করে ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ২০২৩’ পাস করেছে পার্লামেন্টে বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে। এমনকি সরকারি দলের সাংসদদের অনেকে মিডিয়াকে জানিয়েছেন, তাদের ওই আইনের কপিও দেখতে দেয়নি।
এই গোপনীয়তা আইনটি বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতোই; রাষ্ট্রদ্রোহী ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের অপরাধে যেকোনো সময় যেকোনো মানুষের গৃহে প্রবেশ-তল্লাশি-ফোন-ল্যাপটপ জব্দ, অভিযুক্তকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে।
জর্জ অরওয়েলের ‘নাইনটিন এইট্টি ফোর’ উপন্যাসে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র যেভাবে নাগরিকের প্রাইভেসি ক্ষুণ্ণ করে দেশটাকে কারাগারে পরিণত করে, তেমনি একটি মনোভঙ্গি যেন এখন উপমহাদেশের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ করেছে জনমানুষ।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী কী এত অজনপ্রিয় হয়ে; জনগণের এত অপছন্দের পাত্র হয়েও চালিয়ে যাবে এই গা জোয়ারি ফ্যাসিজম! তাতে কি তারা সফল হবে! ইতিহাসে অ্যাডলফ হিটলার কিংবা বেনিতো মুসোলিনি যদি অসফল হয়ে থাকেন জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখতে! দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কি স্বৈরশাসকদের ক্ষমতার চেয়ারে ফেভিকল লাগানো থাকে যে, অনন্তকাল ধরে সবাই মেনে নেবে, যাই যাবে যাক প্রাণ, হীরকের রাজা ভগবান!
পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন পুতুল সরকার ৯ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে চলে যাবে। এরপর কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পান্ডুলিপি বলছে অন্যকথা। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত আদম শুমারিতে পাকিস্তান পিপলস পার্টি সিন্ধু প্রদেশে আর মুসলিম লীগ (নওয়াজ) পাঞ্জাবে নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী জনমিতি বা ডেমোগ্রাফি সাজিয়ে ভোটের মাঠে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। যেমন করাচি শহরে ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থন বেশি বলে আদম শুমারিতে এখানে বাস্তবতার চেয়ে কম ভোট দেখানো হয়েছিল। এসব বিতর্কে ঠিক হয়েছিল ২০১৭ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী নির্বাচন হবে। পরে সেনাবাহিনীর অঙ্গুলি হেলনে ক্ষমতাসীন বলয়টি আবার ২০২৩-এর আদম শুমারির ভিত্তিতেই নতুন করে ভোটার তালিকা তৈরির পক্ষে একজোট হয়েছে।
এ হচ্ছে সেনাবাহিনীর সময়ক্ষেপণের খেলা। সরাসরি ক্ষমতা দখল করলে জাতিসংঘ শান্তিমিশনে চাকরি থাকবে না; এই ভয়ে ঘুরিয়ে-প্যাঁচিয়ে কখনো রাজনৈতিক দলের সংসদ সদস্য নিয়ে ‘হর্স ট্রেডিং’-এর খেলা খেলে ‘কিং মেকারের’ গৌরব ধরে রাখতে চায় এস্টাবলিশমেন্ট। কিন্তু ৯ আগস্টের পর কেয়ারটেকার সরকার এলে ভোটার তালিকা তৈরিতে দেরি হচ্ছে এ কথা শুনিয়ে যদি কিছুদিন সরাসরি শাসনের স্বাদ পাওয়া যায়; কেয়ারটেকারের মোড়কে তাহলে ক্ষতি কী!
ফ্যাসিজম এমনই হয়; রাক্ষস রক্তের স্বাদ পেলে যেমন বারবার আসে; ফ্যাসিস্টও ক্ষমতার স্বাদ পেলে তেমন বারবার আসে।
বাংলাদেশে যেমন এলিট ফোর্সের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে; সুষ্ঠু নির্বাচনে কেউ বাধা দিলে মার্কিন ভিসা স্যাংশনে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি; পাকিস্তানে অনুরূপ কোনো উদ্যোগ নেই কেন পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্বের এ প্রশ্ন পাকিস্তানে প্রায়শই শোনা যায়।
ইমরান খান নিজেই একটি ওয়েবিনারে মার্কিন কজন কংগ্রেসম্যানকে বলেছিলেন, পশ্চিমা বিশ্ব শুধু সুষ্ঠু ভোটের ব্যাপারে সাহায্য করলেই তা পাকিস্তানের মানুষের গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য অনেকটা করা হবে। ইমরানের সাবেক স্ত্রী জেমাইমা নিজের টুইটবার্তায় ও পশ্চিমা নানা ফোরামে পাকিস্তানের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে সোচ্চার।
আইএমএফও এক কিস্তি ঋণ দিয়ে বাকি কিস্তিগুলো ঝুলিয়ে রেখেছে আরও দুই পর্যায়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের বিকল্প হাতে রেখে। ফলে সেনাবাহিনীর জন্যও মোটেও সহজ হবে না ভঙ্গুর অর্থনীতির এই দেশে ক্ষমতার ফুলের বিছানায় শুয়ে থাকা!
পরিস্থিতি তো আমরা দেখতেই পারছি। প্রহসনের বিচারের রায়ে ইমরান দ্বিতীয়বার কারাগারে গেলে করাচি, লাহোর, পেশোয়ার ও ইসলামাবাদে জনবিক্ষোভ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেলেও গোয়েন্দা সংস্থা মূলধারার মিডিয়াকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বিক্ষোভের খবর ব্ল্যাকআউট করে শনিবার রাতে।
ভাবখানা এমন, ১৯৭১ সালের মতো যেন শুধুই পিটিভি আর রেডিও পাকিস্তানই জনগণের সম্বল যে, লুকিয়ে রাখা যাবে গণতন্ত্র হত্যার কালরাতগুলো সাধারণ মানুষের কাছে।
ইয়াহিয়ার যুগের বুদ্ধি নিয়ে প্রযুক্তি জ্ঞান নিয়ে এই যুগে যেসব ফ্যাসিস্ট এখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশে দেশে শাসন-শোষণ-নিপীড়ন-মানবাধিকার লঙ্ঘন-বাকস্বাধীনতা হরণ করে চলেছেন; তারা হয়তো বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন।
ছোট্ট শিশুরা হাতে ছোট মোবাইল ফোন নিয়ে সত্যগুলো জেনে ফেলে তারপর মূলধারার টিভি খুঁজে হীরক রাজার মিথ্যা বীরত্বের ফাঁপা গল্প দেখে; তখন হয়তো উলঙ্গ রাজা কবিতার ঢঙে জিজ্ঞেস করে, রাজা তোমার কাপড় কোথায়!
লেখক : প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া ও ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি করাচি এস এম আই ইউনিভার্সিটি
কুমিল্লার দুটি উপজেলার চার বিদ্যালয়ের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানসহ উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। কিন্তু প্রকল্প প্রস্তাব করার রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী ওই অধিদপ্তর দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের কোনো মতামতই নেওয়া হয়নি। এতে আপত্তি জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
সম্প্রতি ‘কুমিল্লা জেলাধীন লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার নির্বাচিত চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন শীর্ষক’ ৪৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে কমিশন যাচাই-বাছাই করে দেখে, প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব নিয়ম অনুসরণ করা দরকার ছিল সেগুলোর অনেক নিয়মই অনুসরণ করা হয়নি।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানসহ উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণের রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত বা দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও প্রস্তাবিত প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে তাদের সংশ্লিষ্টতা বা মতামত গ্রহণ এবং অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়নি।
ডিপিপিতে, জনবল কাঠামোর তথ্য দেওয়া হয়েছে, তবে এ-সংক্রান্ত কোনো ব্যয় না থাকায় জনবল-সংক্রান্ত অর্থ বিভাগের কমিটির সম্মতি নেওয়া হয়নি।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বেআইনিভাবে ছোট ছোট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এগুলো পরিকল্পনা কমিশনের নজরে আসায় তাদের সতর্কও করা হয়েছে। কমিশন বলছে, শিক্ষা প্রকৌশলের এ প্রস্তাবিত প্রকল্পসহ এ ধরনের কয়েকটি ছোট ছোট প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে, কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এগুলো পরিকল্পনা কমিশনের পরিপত্র অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য বা অনুমোদনযোগ্য নয়, এতে সরকারের আর্থিক অপচয় হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিকল্পনা কমিশনের ২০১২ সালের জারি করা পরিপত্রের নির্দেশনায় উল্লেখ আছে, ‘একই উদ্দেশ্য বা প্রকৃতির একাধিক ক্ষুদ্র প্রকল্প পৃথকভাবে গ্রহণ না করে সমন্বিত আকারে একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।’ কিন্তু শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এসব নিয়ম গ্রাহ্য না করে প্রকল্প পাঠাচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে বাস্তবায়নও করছে। এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।
তবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ছোট প্রকল্প সাধারণত কোনো মহলের সুপারিশের ভিত্তিতে নেওয়া হয়ে থাকে। সুপারিশ আমলে নিয়েই কর্মকর্তারা এগুলো প্রস্তাব করে থাকেন।
এ ধরনের প্রকল্প প্রস্তাব করার আগে কোনো মতামত নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কিউ এম শফিউল আজম দেশ রূপান্তরকে বলেন, মাধ্যমিকের যে প্রকল্পগুলো হয়, ‘সাধারণত শিক্ষা অধিদপ্তর থেকেই হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প প্রস্তাব করলে সেটি যেতে হয় মাউশি থেকে। যেহেতু তারা আমাদের কোনো অফিশিয়াল মিটিংয়ে রাখেনি, তাদের কোনো প্রকল্প নিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারব না।’
প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৪৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা অর্থাৎ প্রায় ৫০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গত বছরের ১৩ জুন জারি করা অনুশাসনের অনুচ্ছেদ ‘ক’ অনুযায়ী আলোচ্য প্রকল্পটি চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে গ্রহণের যৌক্তিকতা ও প্রয়োজন মূল্যায়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন।
এ প্রসঙ্গে জানার জন্য কয়েকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া দেননি প্রকল্পটির প্রস্তাবকারী কর্মকর্তা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান।
এ ছাড়া, জুন, ২০২২-এ জারি করা ‘সরকারি খাতে উন্নয়ন, প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা’-এর ৬ দশমিক ১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রকল্পের গুরুত্ব বা প্রকৃতি বিবেচনায় ৫০ কোটি টাকার নিচে প্রাক্কলিত ব্যয়ের বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণের আগে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে। বিবেচ্য প্রকল্পটির প্রকৃতি বিবেচনায় সম্ভাব্যতা যাচাই করা প্রয়োজন ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সুপারিশের আলোকে পুনর্গঠন করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পটির মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে, চার বিদ্যালয়ে চারটি মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ; দুটি অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ; চারটি মাল্টিপারপাস ভবনের অডিটোরিয়ামসহ শ্রেণিকক্ষের আসবাবপত্র সরবরাহ এবং দুটি অ্যাকাডেমিক ভবনের আসবাবপত্র সরবরাহ।
উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন-সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুসারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত জনবল নির্ধারণ কমিটির (অর্থ বিভাগ) সম্মতি গ্রহণ ও ডিপিপিতে তা সংযুক্ত করা হয়নি। উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন-সংক্রান্ত নির্দেশিকায় মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর (এমটিবিএফ) তথ্য স্পষ্ট করা হয়নি। তা ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নকালে উদ্ভূত সম্ভাব্য ঝুঁকি (অর্থনৈতিক, কারিগরি, পরিবেশগত, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, দুর্যোগ ইত্যাদি) চিহ্নিত করা হয়নি বা এসব ঝুঁকি থেকে উত্তরণের উপায় এবং বস্তুনিষ্ঠ আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ উল্লেখ করা হয়নি।
প্রকল্পের নির্মাণ কার্যক্রমের ব্যয় প্রাক্কলন গণপূর্ত বিভাগের রেট-শিডিউল জুন, ২০২২ অনুসারে করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, সংশোধিত রেট-শিডিউল ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ অনুসারে হালনাগাদ করা প্রয়োজন।
প্রকল্পের আওতায় চারটি প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ ও অডিটোরিয়ামের জন্য আসবাবপত্র সরবরাহের ব্যয় প্রায় ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমান আর্থিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে প্রকল্পের এসব খাতের ব্যয় পুনঃপর্যালোচনা ও পরীক্ষা করে অর্থের পরিমাণ যথাসম্ভব কমানোর পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়টির জমির পরিমাণ ১৬৫ শতাংশ। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত ছাত্রীসংখ্যা ১ হাজার ৩৪৮ এবং শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৩৪। উপজেলার এ মালেক ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠানটির জমির পরিমাণ ২ দশমিক ৯৪ একর। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৫০ জন এবং শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ২৮ জন। একই জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার পোমগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের জমির পরিমাণ ২ দশমিক ৮৪ একর। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৮৩ এবং শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ১৩। মনোহরগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০ সালে কলেজে উন্নীত হয়। প্রতিষ্ঠানটির জমির পরিমাণ ৩ দশমিক ৬ একর। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪২ এবং শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৩৭।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছরই শিক্ষার্থী বাড়ছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ার কারণে স্থান সংকুলানের অভাবে পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। নতুন ও আধুনিক ভবন নির্মিত হলে এসব প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিসংকট নিরসনের পাশাপাশি শিক্ষক মিলনায়তন, ছাত্র মিলনায়তন, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষা কার্যক্রম, বিজ্ঞানাগার, গ্রন্থাগার ও অডিটোরিয়ামসহ শিক্ষা লাভের সুযোগ হবে।
সম্মেলনের এক বছর পর মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যকরী এবং ৩২ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম গত ৩০ জুলাই কমিটির অনুমোদন দিলেও তা প্রকাশ পায় গত বৃহস্পতিবার রাতে। প্রকাশের পরই এ কমিটি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কারণ কমিটিতে স্থান পেয়েছেন পিতা-পুত্র, জামাই-শ্বশুর, আপন দুই ভাই এমনকি বহিষ্কৃতরাও।
জানা গেছে, অনুমোদিত কমিটিতে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল মাজেদ খান স্থান পেয়েছেন ১ নম্বর সদস্য হিসেবে। একই কমিটিতে তার ছেলে ফয়জুল ইসলাম খান পেয়েছেন ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের পদ। উপদেষ্টা কমিটিতে স্থান পাওয়া আবদুর রহমানের মেয়ের জামাই অ্যাডভোকেট আলম হোসাইন পেয়েছেন আইনবিষয়ক সম্পাদক পদ। এ ছাড়া আপন দুই ভাই আবদুল কুদ্দুস ও সেলিম আব্বাস সদস্য পদে স্থান পেয়েছেন।
অন্যদিকে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত ব্যক্তিরাও কমিটিতে পদ পেয়েছেন। এদের মধ্যে জামির্ত্তা ইউপির চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মোল্লা, সায়েস্তা ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল হালিম, জামশা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিঠু ও জয়মন্টপ ইউপির সাবেক সদস্য বোরহানউদ্দিন ফকির পেয়েছেন সদস্য পদ এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুর রহমান পেয়েছেন কোষাধ্যক্ষ পদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, বিগত সময়ের তুলনায় এ কমিটি অনেক শক্তিশালী হয়েছে। রক্তের ও আত্মীয়ের সম্পর্ক এবং বহিষ্কৃত বিবেচনা না করে কাজের মূল্যায়ন করে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ মমতাজ বেগম বিদেশে অবস্থান করায় এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৩০ জুলাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সাংসদ মমতাজ বেগমকে সভাপতি, শহিদুর রহমান শহিদকে সাধারণ সম্পাদক এবং সায়েদুল ইসলামকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে চলতি বছর মে মাসে। গত শুক্রবার ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে দেশটি। নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার ঘোষণার তিন দিন পার হলেও কারও নাম প্রকাশ হয়নি। তবে বিভিন্ন মহলে নানা দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের নামে আলোচনা এখন সর্বত্র।
কারা যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন বা পড়তে যাচ্ছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, যেহেতু নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে এর লক্ষ্য নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারাই। তারাই ভিসানীতির আওতায় পড়বেন, এটাই স্পষ্ট।
তারা আরও বলেন, ভিসানীতি প্রয়োগের কথা জানালেও যুক্তরাষ্ট্র কারও নাম প্রকাশ করেনি। তবুও বলা যেতে পারে, কাদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করবে পশ্চিমা এ প্রভাবশালী দেশটি।
এ ব্যক্তিরা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই একটা তালিকার বেশিরভাগ নামই চূড়ান্ত করে ফেলেছে। অল্পসংখ্যক বাকি থাকতে পারে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সেগুলোরও চূড়ান্ত করা হবে। যেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রতিষ্ঠান, দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা থাকতে পারেন।
বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে ধারণা পাওয়া গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির উদ্দেশ্যই যেহেতু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে, ফলে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন তারাই ভিসানীতির আওতায় আসবেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও থাকতে পারেন। থাকতে পারেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা, তারা যেকোনো দলের হতে পারেন। অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ীও থাকতে পারেন।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন,‘ভিসানীতির বিষয়টি আমেরিকা প্রশাসন পরিষ্কার করে ঘোষণা না করলেও বুঝিয়ে দিয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারেন, এমন যে কেউ এ ভিসানীতির আওতায় পড়তে পারেন। যেমন রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাহী প্রশাসন, জুডিশিয়ারি অর্থাৎ যারাই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থাকবেন, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যাহত করবেন তারাই এর আওতায় আসবেন।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের এর আওতায় পড়ার সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, নির্বাচন ব্যাহত করার ছোট্ট সুযোগ তাদের হাতেও থাকে, তারা যদি জড়িত হন, ভিসানীতির আওতায় পড়বেন।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ভিসানীতির চেয়েও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নেগোশিয়েশন জরুরি। কে ভিসানীতির আওতায় পড়ল, কে পড়ল না এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঐক্য।’ তিনি বলেন, ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়ায় কারা রয়েছেন সেটা আমেরিকা প্রশাসন ঘোষণা না করলেও বোঝা খুব জটিল কিছু নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘আমেরিকা যেহেতু ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে তাদের ভিসানীতি, ফলে পরিষ্কার হয়ে গেছে কারা পড়তে পারেন এর আওতায়। যারা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, নিশ্চয়ই তারাই এর আওতায়।’
বিভিন্ন পর্যায়ের ও পেশার নিয়োজিত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক নেতারা ভিসানীতিকে তেমন আমলে না নিলেও বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভেতরে আমেরিকার ভিসানীতি ভীষণ ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে এর নানা কারণ জানা গেছে। এর মধ্যে বিদেশে টাকা পাচার, ব্যবসাবাণিজ্য, পরিবারের সদস্যদের বিদেশে থাকা এসব কারণে বেশি ভীতিতে ফেলেছে তাদের। আবার একটা অংশ বিদেশে কিছু না থাকলেও ভিসানীতির আওতায় পড়লে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার ভয় পাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করায় যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারেন এমন দুুশ্চিন্তা যেমন কারও কারও মনে ভর করেছে, তেমনি ভিসানীতিতে পড়ার সুযোগ নেই তারাও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। কারণ এই শ্রেণির লোকজন মনে করছেন, কখনো যদি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান, তখন যদি ভিসা না হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন এমন নামের তালিকাও চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। আরও অগ্রসর হয়ে কোনো কোনো মহল লম্বা তালিকা হাতে নিয়ে ঘুরছে। তবে এসব নামের তালিকার উৎস বা সূত্র নিশ্চিত নয় বলে কেউ কেউ বিষয়টি গুজব মনে করছেন। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের বাইরে প্রায় সবাই ভিসানীতি আতঙ্কে ভুগছেন।
একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভিসানীতিকে জয়-পরাজয় হিসেবে প্রচার করে এলেও ভেতরে ভীতি সবারই রয়েছে। কারণ পশ্চিমা দেশে তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন। ফলে রাজনীতির বাইরেও ব্যক্তিজীবনের প্রয়োজনে ভিসানীতি তাদের ওপর যদি প্রভাব ফেলে, সে আশঙ্কা তো আছেই।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিষয়ে আমি কথা বলি না। আমি একটাই কথা বলব, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ সে কাজই করছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ভিসানীতি আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিষয়ে বলতে হলে আরও অনেক বিষয় রয়েছে। এ ভিসানীতি কারা লক্ষ্যবস্তু জানতে চাইলে ইনু বলেন, ‘এটি নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমাদের। তারাই বলতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারও পরামর্শে সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান অদলবদল করবে না, পরিবর্তনও আনবে না।’
আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সংস্থাটি বলছে, আজ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া বর্ধিত পাঁচ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সকাল ৯টা থেকে আজ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত) দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সৈয়দপুরে ২৫৯ মিলিমিটার। এ ছাড়া দেশের উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাতের মধ্যে দিনাজপুরে ১৯১, রংপুর ১৩৮, ডিমলায় ৯৯, তেঁতুলিয়ায় ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সীতাকুণ্ডে ৩৫.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়া ও রাজারহাটে ২৩.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঝাল খেতে অনেকেই পছন্দ করেন আবার অনেকেই অল্প ঝালও সহ্য করতে পারেন না। সে যাই হোক বেশি ঝাল লাগলে আমরা পানি পান করে উপশম করার চেষ্টা করি। তবে পানি কিন্তু ঝাল লাগা কমায় না, বরং বাড়ায়! কথাটা শুনে অবাক লাগছে? বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের জানতে হবে ঝাল কেন লাগে।
ঝাল খাবারে ক্যাপাসাইসিন নামক এক ধরনের উপাদান থাকে। সেই উপাদানে এক ধরনের প্রাকৃতিক তেল পাওয়া যায়। আর তেল ও পানি কখনও মেশে না। যা আপনার কোষঝিল্লি থেকে ক্যাপসিসিন তাড়ানোর বদলে মুখের ভেতরের অন্য অংশে ছড়িয়ে দেয়। এতে করে মুখের ভেতর আরও ঝাল লাগা অনুভূত হয়।
পানির পরিবর্তে কিছু খাবার আছে সেগুলো খেলে ঝাল লাগা থেকে দ্রুত স্বস্তি পাওয়া যায়।
টমেটো ও লেবু
টমেটো ও লেবু মুখের ঝালভাব কমাতে দারুণ কাজে দেয়। ঝালের যে অ্যাসিড থাকে তা কমাতে দারুন কার্যকর টমেটো ও লেবু। ঝাল লাগলে তাই দ্রুত এক টুকরো টমেটো মুখে দিতে পারেন। কমলা, আনারস ও লেবুর রসেও একই ধরনের উপাদান আছে। যদি তরকারি খুব বেশি ঝাল হয় তাহলে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। ঝাল দ্রুত কমে যাবে।
দুগ্ধজাতীয় খাবার
ঝাল লাগলে দুগ্ধজাত খাবার দ্রুত যাদুর মতো কাজ করে। ঠাণ্ডা এক চুমুক দুধ বা এক চামচ দই মুখের জ্বালা জুড়াতে পারে। দই মুখে দিলে দ্রুত মুখের জ্বলুনি কমবে। দুগ্ধজাত খাবারে ক্যাপসিসিন নামক এক উপাদান থাকে, যা ঝালে থাকা ক্যাপসিসিনকে ভেঙে ফেলে ও এর প্রভাব থেকে মুক্তি দেয়।
চিনি ও মধু
মুখে বেশি ঝাল লাগলে একটু চিনি বা এক চামচ মধু খেয়ে নিতে পারেন। তেলজাতীয় ক্যাপসিসিনকে চিনি বা মধু শোষণ করে নেয় এবং মুখের জ্বলা ভাব দ্রুত দূর করে।
ভাত বা রুটি
মুখে বেশি ঝাল লাগলে দ্রুত ফোলা রুটি বা একগাল ভাত খেয়ে নিতে পারেন। ক্যাপসিসিন ও মুখের মধ্যে প্রাকৃতিক বাধা দেয় শ্বেতসার। এতে কিছুটা ক্যাপসিসিন শোষিত হয়। এছাড়া ঝোলজাতীয় কোনো তরকারিতে ঝাল বেশি হলে তখন আলুর কয়েক টুকরা দিয়ে দেবেন। এতে করে তরকারিতে ঝাল অনেকটা কমবে। একইভাবে স্যুপেও ঝাল হলেও একই পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারেন।
টক দই
মেদ ঝরানো থেকে ঝাল কমানো— টক দই । ঝাল কমাতে এই দইয়ের জুড়ি মেলা ভার। তবে সবচেয়ে ভাল হয় যদি ঝাল কোনও খাবার খেয়ে এক চামচ টক দই খেয়ে নিতে পারেন। দইয়ে থাকা উপকারী উপাদান মুখের ভিতরে একটা স্তর তৈরি করে। যা ঝালের সঙ্গে লড়াই করে।
লিকার চা
মশলাদার খাবার খেয়ে ঝালের চোটে প্রাণ ওষ্ঠাগত? সুস্থ হতে কিন্তু চুমুক দিতে পারেন চায়ের কাপে। চায়ে থাকা ট্যানিন ক্যাপাসাইসিনের সক্রিয়তা ধীরে ধীরে কমাতে থাকে। তবে এই সময়ে খুব গরম চা খাওয়ার দরকার নেই। তাতে সমস্যা হতে পারে। তার চেয়ে ঈষদুষ্ণ গরমজলে চা ফুটিয়ে নিতে পারেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে আজ রাজধানীর উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীতে দুটি শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে যাত্রাবাড়ী মোড়সংলগ্ন শহীদ ফারুক সড়কে শান্তি সমাবেশ শুরু হবে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল এমপির সভাপতিত্বে সমাবেশে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
বিকেল ৩টায় উত্তরা আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের সামনে শুরু হবে আরেকটি শান্তি সমাবেশ। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এ সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।
এতে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সঞ্চালনা করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’