
কুমিল্লার দুটি উপজেলার চার বিদ্যালয়ের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানসহ উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। কিন্তু প্রকল্প প্রস্তাব করার রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী ওই অধিদপ্তর দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের কোনো মতামতই নেওয়া হয়নি। এতে আপত্তি জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
সম্প্রতি ‘কুমিল্লা জেলাধীন লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার নির্বাচিত চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন শীর্ষক’ ৪৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে কমিশন যাচাই-বাছাই করে দেখে, প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব নিয়ম অনুসরণ করা দরকার ছিল সেগুলোর অনেক নিয়মই অনুসরণ করা হয়নি।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানসহ উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণের রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত বা দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও প্রস্তাবিত প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে তাদের সংশ্লিষ্টতা বা মতামত গ্রহণ এবং অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়নি।
ডিপিপিতে, জনবল কাঠামোর তথ্য দেওয়া হয়েছে, তবে এ-সংক্রান্ত কোনো ব্যয় না থাকায় জনবল-সংক্রান্ত অর্থ বিভাগের কমিটির সম্মতি নেওয়া হয়নি।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বেআইনিভাবে ছোট ছোট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এগুলো পরিকল্পনা কমিশনের নজরে আসায় তাদের সতর্কও করা হয়েছে। কমিশন বলছে, শিক্ষা প্রকৌশলের এ প্রস্তাবিত প্রকল্পসহ এ ধরনের কয়েকটি ছোট ছোট প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে, কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এগুলো পরিকল্পনা কমিশনের পরিপত্র অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য বা অনুমোদনযোগ্য নয়, এতে সরকারের আর্থিক অপচয় হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিকল্পনা কমিশনের ২০১২ সালের জারি করা পরিপত্রের নির্দেশনায় উল্লেখ আছে, ‘একই উদ্দেশ্য বা প্রকৃতির একাধিক ক্ষুদ্র প্রকল্প পৃথকভাবে গ্রহণ না করে সমন্বিত আকারে একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।’ কিন্তু শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এসব নিয়ম গ্রাহ্য না করে প্রকল্প পাঠাচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে বাস্তবায়নও করছে। এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।
তবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ছোট প্রকল্প সাধারণত কোনো মহলের সুপারিশের ভিত্তিতে নেওয়া হয়ে থাকে। সুপারিশ আমলে নিয়েই কর্মকর্তারা এগুলো প্রস্তাব করে থাকেন।
এ ধরনের প্রকল্প প্রস্তাব করার আগে কোনো মতামত নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কিউ এম শফিউল আজম দেশ রূপান্তরকে বলেন, মাধ্যমিকের যে প্রকল্পগুলো হয়, ‘সাধারণত শিক্ষা অধিদপ্তর থেকেই হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প প্রস্তাব করলে সেটি যেতে হয় মাউশি থেকে। যেহেতু তারা আমাদের কোনো অফিশিয়াল মিটিংয়ে রাখেনি, তাদের কোনো প্রকল্প নিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারব না।’
প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৪৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা অর্থাৎ প্রায় ৫০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গত বছরের ১৩ জুন জারি করা অনুশাসনের অনুচ্ছেদ ‘ক’ অনুযায়ী আলোচ্য প্রকল্পটি চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে গ্রহণের যৌক্তিকতা ও প্রয়োজন মূল্যায়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন।
এ প্রসঙ্গে জানার জন্য কয়েকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া দেননি প্রকল্পটির প্রস্তাবকারী কর্মকর্তা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান।
এ ছাড়া, জুন, ২০২২-এ জারি করা ‘সরকারি খাতে উন্নয়ন, প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা’-এর ৬ দশমিক ১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রকল্পের গুরুত্ব বা প্রকৃতি বিবেচনায় ৫০ কোটি টাকার নিচে প্রাক্কলিত ব্যয়ের বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণের আগে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে। বিবেচ্য প্রকল্পটির প্রকৃতি বিবেচনায় সম্ভাব্যতা যাচাই করা প্রয়োজন ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সুপারিশের আলোকে পুনর্গঠন করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পটির মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে, চার বিদ্যালয়ে চারটি মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ; দুটি অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ; চারটি মাল্টিপারপাস ভবনের অডিটোরিয়ামসহ শ্রেণিকক্ষের আসবাবপত্র সরবরাহ এবং দুটি অ্যাকাডেমিক ভবনের আসবাবপত্র সরবরাহ।
উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন-সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুসারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত জনবল নির্ধারণ কমিটির (অর্থ বিভাগ) সম্মতি গ্রহণ ও ডিপিপিতে তা সংযুক্ত করা হয়নি। উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন-সংক্রান্ত নির্দেশিকায় মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর (এমটিবিএফ) তথ্য স্পষ্ট করা হয়নি। তা ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নকালে উদ্ভূত সম্ভাব্য ঝুঁকি (অর্থনৈতিক, কারিগরি, পরিবেশগত, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, দুর্যোগ ইত্যাদি) চিহ্নিত করা হয়নি বা এসব ঝুঁকি থেকে উত্তরণের উপায় এবং বস্তুনিষ্ঠ আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ উল্লেখ করা হয়নি।
প্রকল্পের নির্মাণ কার্যক্রমের ব্যয় প্রাক্কলন গণপূর্ত বিভাগের রেট-শিডিউল জুন, ২০২২ অনুসারে করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, সংশোধিত রেট-শিডিউল ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ অনুসারে হালনাগাদ করা প্রয়োজন।
প্রকল্পের আওতায় চারটি প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ ও অডিটোরিয়ামের জন্য আসবাবপত্র সরবরাহের ব্যয় প্রায় ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমান আর্থিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে প্রকল্পের এসব খাতের ব্যয় পুনঃপর্যালোচনা ও পরীক্ষা করে অর্থের পরিমাণ যথাসম্ভব কমানোর পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার লাকসাম পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়টির জমির পরিমাণ ১৬৫ শতাংশ। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত ছাত্রীসংখ্যা ১ হাজার ৩৪৮ এবং শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৩৪। উপজেলার এ মালেক ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠানটির জমির পরিমাণ ২ দশমিক ৯৪ একর। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৫০ জন এবং শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ২৮ জন। একই জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার পোমগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের জমির পরিমাণ ২ দশমিক ৮৪ একর। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৮৩ এবং শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ১৩। মনোহরগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০ সালে কলেজে উন্নীত হয়। প্রতিষ্ঠানটির জমির পরিমাণ ৩ দশমিক ৬ একর। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪২ এবং শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৩৭।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছরই শিক্ষার্থী বাড়ছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ার কারণে স্থান সংকুলানের অভাবে পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। নতুন ও আধুনিক ভবন নির্মিত হলে এসব প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিসংকট নিরসনের পাশাপাশি শিক্ষক মিলনায়তন, ছাত্র মিলনায়তন, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষা কার্যক্রম, বিজ্ঞানাগার, গ্রন্থাগার ও অডিটোরিয়ামসহ শিক্ষা লাভের সুযোগ হবে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানাধীন ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে গত ১৩ জুলাই এক তরুণীকে অপহরণ করে তিন যুবক। ধর্ষণের শিকারও হন ওই তরুণী। অপহরণ থেকে ধর্ষণ পর্যন্ত এই অপরাধ হয়েছে তিনটি থানা এলাকার সীমানাজুড়ে। কিন্তু তিনি যখন মামলা করতে গেলেন, তখন এক থানা বলছে এখানে না, ওই থানায় হবে। সাত দিন ধরে এমন ঠেলাঠেলির পর শেষ পর্যন্ত তার মামলা নেওয়া হয়।
এমন পরিস্থিতি মনে করিয়ে দেয় ২০১৫ সালের ২১ মে রাতে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষারত এক গারো তরুণীর ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনা। মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে পাঁচ ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করার পর মামলা করতে গিয়ে দুই থানায় ঘুরতে হয়েছিল ওই ভুক্তভোগী তরুণীকে। এভাবে সীমানা নিয়ে পুলিশের ঠেলাঠেলির কারণে ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ বাড়ে।
অথচ পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি) ১৯৪৩ এর (ক) ২৪৬ প্রবিধানের (গ) অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোনো অপরাধ অথবা কেবলমাত্র সেশন কোর্টে বিচারযোগ্য কোনো অপরাধের খবর যে অফিসার পান, অপরাধটি তার এলাকার বাইরে সংঘটিত হলেও তিনি সম্ভব হলে টেলিগ্রাম অথবা জরুরি চিঠির মাধ্যমে খবরটি ঘটনাস্থল যে থানার অধীনে সেই থানায় পাঠাবেন। যদি পরিস্থিতি দাবি করে তাহলে তিনি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারও করবেন।
আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধের শিকার হয়ে ভুক্তভোগী প্রথম যখন থানায় যান, তখন তিনি ট্রমাটাইজড (ভীতসন্ত্রস্ত) থাকেন। স্বাভাবিক অবস্থায় থাকেন না। এসব পরিস্থিতিতে পুলিশের নিজের একটি দিকনির্দেশনা থাকা উচিত। ভুক্তভোগী যে থানায় যান, সেই থানাকে মামলাটি নেওয়া দরকার। পরে যদি অনুসন্ধানে দেখা যায় এই থানার এখতিয়ারে পড়ে না, তখন সংশ্লিষ্ট থানায় কাগজপত্র পাঠিয়ে দিতে মহাযজ্ঞ তো করা লাগবে না।’
কিন্তু নাম প্রকাশ না করে পুলিশের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে অপরাধ শুরুর থানাতে ভুক্তভোগী গেলে ওসি (থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) বলেন, যেখানে শেষ হয়েছে সেই থানায় যান। এভাবে মামলা না নেওয়া অথবা একধরনের দায় এড়ানোর প্রবণতা অনেক সময় লক্ষ করা যায়। মামলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়াকে ডিসক্রেডিট মনে করেন ওসিরা।’
পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ অনুযায়ী অপরাধ সংঘটন ও শেষের স্থানের থানা ছাড়া অন্য থানার মামলা নেওয়ার সুযোগ নেই। কার্যবিধিতে বিষয়টি নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে। যদিও ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর পর এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য বর্তমান সরকারের। অথচ এখনো দেশের থানাগুলোয় মামলা হয় ব্রিটিশ শাসকদের করা ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী।
ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ১৭৯ ধারায় বলা হয়েছে, অপরাধ সংঘটনের জেলায় বা পরিণাম ঘটার স্থানে আসামির বিচার হবে। ‘যে কাজ করা হয়েছে বা উহার পরিণাম দেখা দিয়াছে ভিত্তিতে কোন ব্যক্তি অপরাধ করার অভিযোগে অভিযুক্ত হলে এরূপ অপরাধের অনুসন্ধান বা বিচার যে আদালতের এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে উক্ত কাজ করা হয়েছে, সেই আদালতে অথবা যে আদালতের এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে উহার পরিণাম দেখা দিয়াছে, সেই আদালতে হতে পারবে।’
আদালতও আমলযোগ্য মামলা থানার এলাকার ভিত্তিতে ভাগ করে। ফলে যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয় বা শেষ হয়, সেই এলাকার থানায় বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর বা মামলা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন মানুষের জন্য। বিদ্যমান আইন মানুষকে যখন সেবা দিতে না পারবে, ন্যায়বিচার দিতে না পারবে, সেই আইন অকার্যকর। যে আইন মানুষকে সেবা দেওয়ার পরিবর্তে ভোগান্তিতে ফেলে, সেই আইন বদল করা দরকার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক সাদেকা হালিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর কিছু ধারা অবশ্যই পরিবর্তন করা প্রয়োজন। কতগুলো জায়গায় এখনো ঔপনিবেশিকবাদের ষড়যন্ত্রমূলক আইন যেগুলো একেবারে জনবান্ধব নয়, সেগুলোর আমরা চর্চা করি। যারাই ক্ষমতায় আসেন তারাই জনবান্ধব নয় এমন আইন পরিবর্তনে কোনো উদ্যোগ নেন না। আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় শুধু নয়, যারা আইন বানায় তাদেরও এদিকে নজর দেওয়া উচিত।’
গত ১৩ জুলাই চট্টগ্রামে ধর্ষণের শিকার তরুণী ও তার বাবা জানান, তাদের বাসা খুলশী থানা এলাকায় এবং এই এলাকা থেকেই তাকে তুলে নেওয়া হয়। ফলে তারা মামলা করতে প্রথমে যান খুলশী থানায়। ঘটনার বর্ণনা শুনে সেখান থেকে তাদের পাঠানো হয় কর্ণফুলী থানায়। কর্ণফুলী থানার পুলিশ জানায় মামলা করতে হবে ঘটনাস্থল পটিয়া থানায়। পটিয়া থানায় গেলে সেখানেও মামলা নিতে টালবাহানা শুরু করে পুলিশ। তারা বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করলে মামলা নিতে বাধ্য হয় পটিয়া থানা পুলিশ।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ভুক্তভোগীর বাবা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মামলা করতে এক থানা থেকে আরেক থানায় ঘুরতে ঘুরতে হয়রান হয়েছি। সাত দিন তিন থানায় দৌড়ঝাঁপ করার পর মামলা নেয় পুলিশ। কিন্তু মূল অভিযুক্তকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।’
জানতে চাইলে খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ‘আমার থানায় মামলা করতে এসেছিল। ভুক্তভোগীর বর্ণনা শুনে দেখা যায় ঘটনাস্থল আমার থানা এলাকায় পড়ে না। ওই তরুণী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন পটিয়া থানা এলাকায়। পরে পটিয়া থানায় মামলা হয়েছে।’
গত বছরের ১২ আগস্ট মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশনে বখাটেদের হামলায় গুরুতর আহত হন ব্যবসায়ী নীল মাধব সাহা (মাথা ফাটিয়ে দেয়) ও তার স্ত্রী বন্ধনা রানী সাহা। ঘটনার পর নগরীর চন্দ্রিমা থানা, মতিহার থানা ও রাজশাহী রেলওয়ের জিআরপি থানায় ঘুরেও বখাটেদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেননি তারা। নিরুপায় হয়ে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করার পর মামলা নেয় চন্দ্রিমা থানা পুলিশ।
বন্ধনা রানী সাহা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রথমে তিন থানাতেই গিয়েছিলাম। কেউই মামলা নেয়নি। এক থানা আরেক থানায় পাঠিয়েছে।’
গত বছরের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের লাশ উদ্ধারের পর মামলা করতে গিয়ে একই রকম হয়রানির শিকার হন তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, নিখোঁজের স্থান রাজধানীর রামপুরা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে আমাকে চাপ দিচ্ছিল নৌ থানায় (নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানায়) মামলা করতে অথবা যেখানে লাশ পাওয়া গেছে (নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী) সেই এলাকায়। ওরা (পুলিশ) খুব চেষ্টা করেছিল, মামলা যেন চনপাড়া নারায়ণগঞ্জের দিকেই থাকে। গভীর রাত পর্যন্ত আমাকে থানায় বসে থাকতে হয়। পরে বাধ্য হয়েছে মামলা নিতে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ধর্তব্য অপরাধের (আমল যোগ্য অপরাধ) ক্ষেত্রে প্লেস অব অকারেন্স (ঘটনার স্থান) খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আইনে বলা আছে, অপরাধের শুরু ও শেষ যে জায়গাটা পুলিশের নজরে আসবে, সেই জায়গায় মামলা হবে।’ তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু অপরাধ আছে যেগুলো মামলা না হয়ে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) হয়, সে ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী তার কাছাকাছি যেকোনো থানায় জিডি করতে পারেন।’
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কোনো একটা বর্ডারে (থানার সীমান্ত) অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে যদি সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসাররা গড়িমসি করেন, কাউকে হয়রানি করেন তাহলে ওই সব অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে কেউ আর এমন করবে না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের বিশেষ বর্ধিত সভার শুরুটা করেছিলেন ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পরের ঘটনা দিয়ে। শেষ করেছেন আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি ও করণীয় সম্পর্কে দলীয় নেতাদের নির্দেশনা দেওয়ার মধ্য দিয়ে। তিনি বলেছেন, ’৯১ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির চেয়ে কম আসন পাওয়া আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার যাওয়ার পথ বাতলে দিয়েছিলেন। তার কথামতো জামায়াত ও জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যাননি বলেই পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল। আগামী নির্বাচনে নিজেদের শক্তিতে লড়াইয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করে সমাপনী বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন তাকেই বিজয়ী করতে হবে। বর্ধিত সভায় উপস্থিত নেতারা তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে এ ব্যাপারে তাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা হয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠপর্যায়ের প্রায় তিন হাজার নেতা এবং জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে এ বিশেষ বর্ধিত সভা হয়।
আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সারা দেশের জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা এ সভায় উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাও ছিলেন বিশেষ এ বর্ধিত সভায়। প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্য শেষে গণমাধ্যমের সব সাংবাদিককে বের করে দেওয়া হয়।
সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একটি কথা আগে কখনো বলিনি। ১৯৯১ সালে নির্বাচনে বিএনপি বেশি আসনে জয়লাভ করেছে। আওয়ামী লীগ কম আসন পায়। পরে তৎকালীন সরকারপ্রধান বিচারপতি সাহাবউদ্দীন আমাকে ডেকেছিলেন। আমাকে তিনি জানান, আপনি তো সরকার গঠন করতে পারেন। জামায়াত-জাতীয় পার্টি আপনাকে সমর্থন দেবে। আমি তাতে রাজি হইনি। ওইটুকু ত্যাগ স্বীকার যদি সেদিন না করতাম, তাহলে আর ক্ষমতায় আসতে পারতাম না।’
বর্ধিত সভায় উপস্থিত একাধিক জেলা-উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দেশ রূপান্তরকে বলেন, সূচনা বক্তব্যের পর সাংগঠনিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন জিততে হলে দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এমন সুপারিশ করে তৃণমূলের ৪৩ জন নেতা বক্তব্য রাখেন।
তারা বলেন, শেখ হাসিনা গভীর মনোযোগ দিয়ে তৃণমূল নেতাদের দেওয়া বক্তব্য শোনেন। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া এ সভা বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলে। মাঝখানে মধ্যাহ্নভোজের বিরতি দেওয়া হয়। বর্ধিত সভায় উপস্থিত সবাইকে গণভবনে আপ্যায়ন করা হয়।
তৃণমূল নেতারা বলেন, তাদের বক্তব্যে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা উঠে আসে। উঠে আসে দলের সংসদ সদস্যদের অরাজনৈতিক আচরণ ও বিএনপিকে সুবিধা দেওয়ার কথা। তারা দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে বলেন, আগামী নির্বাচনে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক, তিনি যেন তৃণমূলের নেতাকর্মীর ভাষা বোঝেন, তাদের যেন ছাত্রলীগ করার ব্যাকগ্রাউন্ড থাকে। সংগঠন শেষ হয়ে গেছে, অনেকের বক্তব্যে এমন খেদোক্তিও প্রকাশ পেয়েছে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সামনে তৃণমূলের নেতারা আরও বলেন, প্যাডে-কলমে আওয়ামী লীগ যেভাবে চলছে এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। আপনি আর অল্প কিছু নেতৃবৃন্দ ছাড়া সবাই নিজের কথা ভাবে। নিজের কথা ভাবা এমপিদের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করার জন্য সভাপতির প্রতি আহ্বান জানান দলের এ নেতারা।
বর্ধিত সভায় উপস্থিত কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সমাপনী বক্তব্য দেন।
এ সময় বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘নৌকা মার্কায় আমরা যাকেই নমিনেশন দিই ভালোমন্দ, কানাখোঁড়া, যা-ই হোক, আপনাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, আপনারা তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।’ এ সময় তিনি সবাইকে হাত তুলতে বলেন। কেউ কেউ হাত না তোলায় শেখ হাসিনা বলেন, সব হাত উঠে নাই। সবাই হাত তুলে প্রতিজ্ঞা করেন। তখন সবাই হাত তুলে সমস্বরে হ্যাঁ বললে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মনে করে অগ্নিসন্ত্রাস করলে, পুড়িয়ে মানুষ মারলে আওয়ামী লীগ পড়ে যাবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার এত কাঁচা নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের শেকড় পতিত এই মাটিতে। আওয়ামী লীগ এ দেশের মাটি মানুষের থেকে উঠে এসেছে।
সামনে নির্বাচন, এ ব্যাপারে এখন থেকে সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দলটির একমাত্র শক্তি হচ্ছে জনগণ। আওয়ামী লীগ বা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো দিন কারও কাছে মাথানত করেননি। নিজের জীবনকে কবুল করে তিনি এ দেশের মানুষের মুক্তি এনে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা তারই আদর্শের অনুসারী। তারা কারও কাছে মাথা বিকান না। মাথানত করেন না। আওয়ামী লীগ এ দেশ স্বাধীন করেছে। আজকে যতটুকু উন্নতি হয়েছে, আওয়ামী লীগ আছে বলেই তা সম্ভব হয়েছে। এখানে আপনাদের দায়িত্ব রয়েছে। তৃণমূল, কেন্দ্রীয় কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ থেকে শুরু করে সবাই এখানে আছেন।
গত সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশের পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে দেশের মানুষের উন্নতি হচ্ছে। মানুষের আর্থিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এ পরিবর্তন হয়েছে বলে এটা ধরে রাখতে হবে। জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে আওয়ামী লীগ ছাড়া এ দেশের মানুষের পাশে আর কেউ নেই। আওয়ামী লীগের সময়ে দেশের মানুষের ভাগ্য গড়া হয়েছে। প্রত্যেক এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। সেই কথাটা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। সেটা প্রচার করতে হবে।
আওয়ামী লীগপ্রধান বর্ধিত সভায় উপস্থিত সবাইকে প্রচারের কৌশল বুঝিয়ে দেন।
তৃণমূল নেতাদের বক্তব্যে দলীয় সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক সময় তিনি খবর পান। মাঝেমধ্যে ফোনেও বার্তা পান যে, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অথবা নেতার বিরুদ্ধে দলের লোকেরা নানা অপপ্রচার চালায়। এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ওপর দিকে থুতু ছুড়লে নিজের গালেও পড়ে। যাকে খাটো করার চেষ্টা হচ্ছে, সে খাটো হলে দলই খাটো হবে। আর নৌকার ভোট কমবে। কাজেই একজনকে খাটো করে কেউ যদি মনোনয়ন চায়, সে তো বড় হতে পারবে না। সে ভোটে জিততেও পারবে না। কারণ মানুষের মন থেকেই তো মুছে যাবে। আর এত কাজ যে করা হলো সেটা থাকবে না। সেটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, মনোনয়ন দেওয়ার আগে কতগুলো বিষয় বিবেচনায় নিয়েই দেওয়া হয়। তিনি সারা দিন যেমন দেশ গড়ার কাজ করেন, একইভাবে সংগঠনের কাজও করেন। কোথায় কার কী অবস্থা... ছয় মাস পরপর জরিপ করা হয়। এমপিদের অবস্থা বা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবস্থা, তাদের কী কাজকর্ম তার কিন্তু হিসাব নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর ওপর নির্ভর করছে দলের ক্ষমতায় যাওয়া না যাওয়া। সেই কথাটা মাথায় রেখে... দলীয় নেতাদের ওপর ভরসা রাখতে হবে। কারণ যখন মনোনয়ন দেওয়া হবে অবশ্যই মাথায় এটাও থাকবে যে, কাকে মনোনয়ন দিলে ওই আসনে জয়লাভ করা যাবে। সেখানে অনেক এসএমএস পাঠালে আর কারও গিবত গাইলেই যে তার কথা আমলে নেওয়া হবে তা কিন্তু হবে না। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, তার নিজের হিসাব-নিকাশ আছে। ৪২ বছর ধরে তিনি দলে আছেন এবং প্রতিটি এলাকায় ঘুরেছেন।
তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে বিশেষ বর্ধিত সভায় শেখ হাসিনা তার বক্তব্য শেষ করেন আগামী নির্বাচনের বিজয়ে পতাকা হাতে গণভবনে আসার দাওয়াত দিয়ে। তিনি বলেন, এখন থেকেই আওয়ামী লীগের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করুন।
এর আগে সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দল শুধু দেশের জনগণের কাছেই দায়বদ্ধ। আওয়ামী লীগের কোনো প্রভু নেই। আমাদের কোনো প্রভু নেই। জনগণই আমাদের প্রভু।’
শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০২৬ সালে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ। জনগণ চাইলে দেশ এগিয়ে যাবে। উন্নয়নশীল হিসেবে দেশকে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে হবে। তিনি বলেন, জনগণই ভোটের মালিক, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে চলতে পারবে এ দেশের মানুষ।
বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সব নেতার উদ্দেশে বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণই ভোটের মালিক। তারা যদি চায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, তাহলে আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে।’
বিএনপির ‘দুর্নীতি ও দুঃশাসনের ফলে’ এ দেশে সামরিক শাসন জারি হয়েছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত করতে আওয়ামী লীগই সংগ্রাম করেছে।
স্বাধীনতার পরে একটি ‘চক্রান্ত’ শুরু হয়েছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই চক্রান্তে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের হত্যা করা হয়। ২১ বছর আমাদের শুধু আহতদের চিকিৎসা ও লাশ টানতে হয়েছে।’
পাকিস্তানের জনপ্রিয় নেতা ইমরান খানের গ্রেপ্তার অপ্রত্যাশিত ছিল না। পাকিস্তানের এস্টাবলিশমেন্ট যেভাবে রাজনীতির পান্ডুলিপি আয়োজন করে; তাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জুলফিকার আলী ভুট্টো, নওয়াজ শরিফ, বেনজির ভুট্টোকে ঠিক এভাবেই গ্রেপ্তার করে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার ভূতের নাচন দেখেছে পাকিস্তানের মানুষ।
কিন্তু ইমরানের গ্রেপ্তারে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ার তুলনা শুধু চলে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তারের সঙ্গে। তাই তো ইমরান গ্রেপ্তারের পর টুইটার ও ফেসবুকে ট্রেন্ড ছড়িয়ে পড়ে, হ্যাশট্যাগ ‘ডোন্ট রিপিট নাইনটিন সেভেনটি ওয়ান’।
পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ ১৯৭১ সালের সঙ্গে চলমান বাস্তবতার প্রতি তুলনা টানছে এ কারণেই যে, গণতান্ত্রিকভাবে জনগণের ভোটে বিজয়ী নেতা মুজিবকে দেশ শাসনের ম্যান্ডেট বাস্তবায়ন করতে না দিয়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী চড়াও হয়েছিল জনগণের ওপর। পূর্ব পাকিস্তানে ও পশ্চিম পাকিস্তানে গণতন্ত্রের পক্ষে সোচ্চার জনমানুষের ওপর সেনানিগ্রহ নেমে এসেছিল।
গত ৯ মে ইমরান খানকে প্রথমবার গ্রেপ্তারের পর থেকে বিক্ষুব্ধ জনতাকে দমন-নিপীড়নে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা ১৯৭১ সালের কালাকানুন আর কলাকৈবল্য প্রদর্শন করে চলেছে। সাংবাদিক ইমরান রিয়াজকে গুম, নারী নির্যাতন, মিছিলে গুলিবর্ষণ, জেল-জুলুম, সেনানিবাসে হামলার অভিযোগে কোর্ট মার্শাল করে বে-আইনিভাবে কারাগারে নিক্ষেপ করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এ যেন জঙ্গলের আইন!
গত কয়েকটি মাসে করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদে বড় বড় বিলবোর্ডে সেনাপ্রধান, গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানের ছবি শোভা পেয়েছে। সাধারণ মানুষ এই বিল বোর্ডগুলোকে গণতন্ত্রের জগতে স্বৈরাচারীর সস্তা কৌতুক হিসেবেই নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কৌতুকে বিদ্রƒপে জর্জরিত হয়েছে সেনাবাহিনী। সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বলতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। খোদ সেনা পরিবারের স্ত্রী-পুত্র-কন্যারা ইমরানের পক্ষে মিছিল করেছে লাহোরে; তারা সক্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ইমরান খানের জনপ্রিয়তা যেকোনো জনজরিপেই চোখ বুজে বলে দেওয়া যায় ৯০ শতাংশ। এ রকম একজন নেতাকে ‘উনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে প্রাপ্ত উপহার ঠিকমতো ঘোষণা না করা’র দায়ে দুর্নীতিবাজের তকমা দিয়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা প্রচলিত আইনের অপব্যবহার করে সেনাবাহিনীর প্রতিহিংসাপরায়ণতার নজির হিসেবেই আলোচিত পত্রিকার সম্পাদকীয়তে ও জনপরিসরে।
গত শনিবার ইসলামাবাদ থেকে পুলিশ পাঠিয়ে লাহোরের বাসভবন থেকে ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়; পাঠানো হয় কটক জেলে; মুঘল আমলে নির্মিত এই স্থাপনাটিকে ব্রিটিশরা ব্যবহার করত দেশদ্রোহীদের আটকে রাখার জন্য।
কয়েক মাস ধরে ‘দেশদ্রোহী’ শব্দটি খই মুড়ির মতো ব্যবহার করছে সেনা জনসংযোগ পরিদপ্তর। পাকিস্তান সেনাবাহিনী যেন দেশটির মালিকানা দাবি করছে নানা ঢঙে। আর এই দেশটির প্রাণ যে জনগণ তারাই যেন হয়ে গেছে নিজভূমে পরবাসী।
ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ (নওয়াজ) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি জোট কয়েক মাসের ক্ষমতার মোহে সেনাবাহিনীর ভূতের নাচনের নর্তক হয়েছে। জনগণ এই দুটি দলকে অপছন্দের চোখে দেখায় নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের জিতে আসা প্রায় অসম্ভব। তাই তারা সেনাবাহিনীর ঘোড়ার পিঠে চড়েই ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চায়; এমন মনোভাব স্পষ্ট।
সে কারণে সেনাবাহিনীকে খুশি করতে তারা তড়িঘড়ি করে ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ২০২৩’ পাস করেছে পার্লামেন্টে বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে। এমনকি সরকারি দলের সাংসদদের অনেকে মিডিয়াকে জানিয়েছেন, তাদের ওই আইনের কপিও দেখতে দেয়নি।
এই গোপনীয়তা আইনটি বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতোই; রাষ্ট্রদ্রোহী ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের অপরাধে যেকোনো সময় যেকোনো মানুষের গৃহে প্রবেশ-তল্লাশি-ফোন-ল্যাপটপ জব্দ, অভিযুক্তকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে।
জর্জ অরওয়েলের ‘নাইনটিন এইট্টি ফোর’ উপন্যাসে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র যেভাবে নাগরিকের প্রাইভেসি ক্ষুণ্ণ করে দেশটাকে কারাগারে পরিণত করে, তেমনি একটি মনোভঙ্গি যেন এখন উপমহাদেশের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ করেছে জনমানুষ।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী কী এত অজনপ্রিয় হয়ে; জনগণের এত অপছন্দের পাত্র হয়েও চালিয়ে যাবে এই গা জোয়ারি ফ্যাসিজম! তাতে কি তারা সফল হবে! ইতিহাসে অ্যাডলফ হিটলার কিংবা বেনিতো মুসোলিনি যদি অসফল হয়ে থাকেন জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখতে! দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কি স্বৈরশাসকদের ক্ষমতার চেয়ারে ফেভিকল লাগানো থাকে যে, অনন্তকাল ধরে সবাই মেনে নেবে, যাই যাবে যাক প্রাণ, হীরকের রাজা ভগবান!
পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন পুতুল সরকার ৯ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে চলে যাবে। এরপর কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পান্ডুলিপি বলছে অন্যকথা। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত আদম শুমারিতে পাকিস্তান পিপলস পার্টি সিন্ধু প্রদেশে আর মুসলিম লীগ (নওয়াজ) পাঞ্জাবে নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী জনমিতি বা ডেমোগ্রাফি সাজিয়ে ভোটের মাঠে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। যেমন করাচি শহরে ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থন বেশি বলে আদম শুমারিতে এখানে বাস্তবতার চেয়ে কম ভোট দেখানো হয়েছিল। এসব বিতর্কে ঠিক হয়েছিল ২০১৭ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী নির্বাচন হবে। পরে সেনাবাহিনীর অঙ্গুলি হেলনে ক্ষমতাসীন বলয়টি আবার ২০২৩-এর আদম শুমারির ভিত্তিতেই নতুন করে ভোটার তালিকা তৈরির পক্ষে একজোট হয়েছে।
এ হচ্ছে সেনাবাহিনীর সময়ক্ষেপণের খেলা। সরাসরি ক্ষমতা দখল করলে জাতিসংঘ শান্তিমিশনে চাকরি থাকবে না; এই ভয়ে ঘুরিয়ে-প্যাঁচিয়ে কখনো রাজনৈতিক দলের সংসদ সদস্য নিয়ে ‘হর্স ট্রেডিং’-এর খেলা খেলে ‘কিং মেকারের’ গৌরব ধরে রাখতে চায় এস্টাবলিশমেন্ট। কিন্তু ৯ আগস্টের পর কেয়ারটেকার সরকার এলে ভোটার তালিকা তৈরিতে দেরি হচ্ছে এ কথা শুনিয়ে যদি কিছুদিন সরাসরি শাসনের স্বাদ পাওয়া যায়; কেয়ারটেকারের মোড়কে তাহলে ক্ষতি কী!
ফ্যাসিজম এমনই হয়; রাক্ষস রক্তের স্বাদ পেলে যেমন বারবার আসে; ফ্যাসিস্টও ক্ষমতার স্বাদ পেলে তেমন বারবার আসে।
বাংলাদেশে যেমন এলিট ফোর্সের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে; সুষ্ঠু নির্বাচনে কেউ বাধা দিলে মার্কিন ভিসা স্যাংশনে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি; পাকিস্তানে অনুরূপ কোনো উদ্যোগ নেই কেন পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্বের এ প্রশ্ন পাকিস্তানে প্রায়শই শোনা যায়।
ইমরান খান নিজেই একটি ওয়েবিনারে মার্কিন কজন কংগ্রেসম্যানকে বলেছিলেন, পশ্চিমা বিশ্ব শুধু সুষ্ঠু ভোটের ব্যাপারে সাহায্য করলেই তা পাকিস্তানের মানুষের গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য অনেকটা করা হবে। ইমরানের সাবেক স্ত্রী জেমাইমা নিজের টুইটবার্তায় ও পশ্চিমা নানা ফোরামে পাকিস্তানের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে সোচ্চার।
আইএমএফও এক কিস্তি ঋণ দিয়ে বাকি কিস্তিগুলো ঝুলিয়ে রেখেছে আরও দুই পর্যায়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের বিকল্প হাতে রেখে। ফলে সেনাবাহিনীর জন্যও মোটেও সহজ হবে না ভঙ্গুর অর্থনীতির এই দেশে ক্ষমতার ফুলের বিছানায় শুয়ে থাকা!
পরিস্থিতি তো আমরা দেখতেই পারছি। প্রহসনের বিচারের রায়ে ইমরান দ্বিতীয়বার কারাগারে গেলে করাচি, লাহোর, পেশোয়ার ও ইসলামাবাদে জনবিক্ষোভ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেলেও গোয়েন্দা সংস্থা মূলধারার মিডিয়াকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বিক্ষোভের খবর ব্ল্যাকআউট করে শনিবার রাতে।
ভাবখানা এমন, ১৯৭১ সালের মতো যেন শুধুই পিটিভি আর রেডিও পাকিস্তানই জনগণের সম্বল যে, লুকিয়ে রাখা যাবে গণতন্ত্র হত্যার কালরাতগুলো সাধারণ মানুষের কাছে।
ইয়াহিয়ার যুগের বুদ্ধি নিয়ে প্রযুক্তি জ্ঞান নিয়ে এই যুগে যেসব ফ্যাসিস্ট এখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশে দেশে শাসন-শোষণ-নিপীড়ন-মানবাধিকার লঙ্ঘন-বাকস্বাধীনতা হরণ করে চলেছেন; তারা হয়তো বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন।
ছোট্ট শিশুরা হাতে ছোট মোবাইল ফোন নিয়ে সত্যগুলো জেনে ফেলে তারপর মূলধারার টিভি খুঁজে হীরক রাজার মিথ্যা বীরত্বের ফাঁপা গল্প দেখে; তখন হয়তো উলঙ্গ রাজা কবিতার ঢঙে জিজ্ঞেস করে, রাজা তোমার কাপড় কোথায়!
লেখক : প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া ও ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি করাচি এস এম আই ইউনিভার্সিটি
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে নিত্যপণ্যের দামের কথা শুনলেই একসময় আঁতকে উঠতে হতো। সেই আফগানিস্তানে গত মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ঋণাত্মক ২ দশমিক ৮ (-২.৮)। দেউলিয়া হয়ে পড়া শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি এখন ৬ শতাংশের মধ্যে। শুধু দক্ষিণ এশিয়াই নয় বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও বাংলাদেশ এখনো ব্যর্থ। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই শেষে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অথচ চলতি অর্থবছরের সরকারের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশের মধ্যে। গতকাল রবিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতির তথ্য উঠে এসেছে।
বিশে^র বেশিরভাগ দেশে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে সক্ষম হলেও বাংলাদেশে কোনোভাবেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। সরকার, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সব মহলেরই মূল্যস্ফীতি বেশি হওয়ার ব্যাখ্যা হিসেবে উপস্থিত থাকে ‘রাশিয়া-ইউক্রেন’ যুদ্ধ। যদিও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ মানেই ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এটাকে কমছে বলা যাবে না, এটি প্রায় অপরিবর্তিতই রয়েছে। মূল্যস্ফীতি তো বাড়বেই কারণ সরকার এটি কমানোর জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ হাতে নেয়নি।
ট্রেড ইকোনমিকসের তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে এ মুহূর্তে বেশি মূল্যস্ফীতি রয়েছে পাশের দেশ মিয়ানমার ও পাকিস্তানে। আফগানিস্তানে জুন শেষে মূল্যস্ফীতি মাইনাস ২ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০২২ সালে দেউলিয়া হয়ে পড়া শ্রীলঙ্কায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। অথচ শ্রীলঙ্কায় আগের মাসেও মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১২ শতাংশের ওপরে। মাসের ব্যবধানে প্রায় অর্ধেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার আলোচিত এ দেশটি।
অর্থনীতিতে কাবু হয়ে থাকা মধ্য আফ্রিকায় মে মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ শতাংশের বেশি। কিন্তু জুন মাসে তাদের মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
অন্য দেশে কমলেও বাংলাদেশে কেন কমছে না কারণ হিসেবে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অন্য দেশগুলো সবাই সতর্ক হয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এখন বাংলাদেশে যদি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তাহলে সুদের হার আরও অনেক বাড়াতে হবে। সুদের হার না বাড়ালে মূল্যস্ফীতি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
সরকারি হিসাবে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে। তবে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বিবিএস মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আগের মাস অর্থাৎ গত জুনে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমলেও, খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। আর ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের জুলাই মাসে দেশের মানুষ যে খাদ্য ১০০ টাকায় পেয়েছিল, এই বছরের জুলাইয়ে তা কিনতে ১০৯ টাকা ৭৩ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেশে দেশে মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় সুদের হারকে। বিশে^র প্রায় সব দেশই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। এটি করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোও তাদের দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশে গত জুনের মুদ্রানীতিতে সুদের হার কিছুটা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও তা অনেকটা নিয়ন্ত্রিত। সুদহারের সীমা প্রত্যাহার করা হলেও পরোক্ষভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত বছরের মার্চে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ে প্রায় ৯ শতাংশে উঠেছিল; যা ছিল ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বর্তমানে দেশটির মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, চীন, ভারত, কানাডা, ব্রাজিলসহ ছোট-বড় সব দেশেই স্পর্শকাতর এই সূচকটি সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো ১০ শতাংশের কাছাকাছি অবস্থান করছে। কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হারে নিয়ন্ত্রণ আসছে না। এ দুই কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতিতে বাড়তি চাপের সৃষ্টি হয়েছে।
এতে চাপ বাড়ার নেপথ্যে আরও রয়েছেÑ বৈশ্বিক অস্থিরতায় পণ্যের সরবরাহব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়া, বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য লাগামহীন বৃদ্ধি এবং দেশের বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। ফলে আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়েছে। এর প্রভাবে অন্যসব পণ্যেরও দাম বেড়েছে। এসব মিলে চাপ বেড়েছে মূল্যস্ফীতিতে।
সরকারি হিসাবে সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এ মুহূর্তে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি নিয়ে শুরু হয়েছে অর্থবছর, যা বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে ৩ দশমিক ৪২ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। কিন্তু বছর শেষে তা গড়ে ৯ শতাংশের কাছাকাছি ছিল।
মূল্যস্ফীতি না কমাতে কারণ হিসেবে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত বছরের জুলাইতেও খুব উচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল। এটি এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতির ওপর আরও উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার। এর অভিঘাতও বেশ বড়। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনে যেমন আঘাত করছে, এটির কারণে উৎপাদকদের ওপরও অভিঘাত পড়ে। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে আমদানি পণ্যের দাম কমার ফলে মূল্যস্ফীতি কমে আসছে। আমাদের দেশে ব্যতিক্রম হলো আমরা স্থানীয় পণ্যের ক্ষেত্রেও সুযোগ ব্যবহার করতে পারছি না, আমদানি করা পণ্যের ওপরও তার প্রভাব রয়ে যাচ্ছে।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমাদের দেশের ডলারের বিপরীতে টাকার অবনমন মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। কিন্তু কখন আমদানিকারকদের উৎসাহিত করতে হবে, কখন স্টক করতে হবে তা জানানোর ঘাটতি ছিল। কিন্তু ভারতের মতো রাষ্ট্রে এটি হয়নি।’
ড. মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এখন আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে হবে। কারণ এখানে অনেক দুর্বলতা রয়ে গেছে। আমাদের চাহিদা কত, সরবরাহ কতÑ এগুলোর মনিটরিং জোরদার করা উচিত।’
সম্মেলনের এক বছর পর মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যকরী এবং ৩২ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম গত ৩০ জুলাই কমিটির অনুমোদন দিলেও তা প্রকাশ পায় গত বৃহস্পতিবার রাতে। প্রকাশের পরই এ কমিটি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। কারণ কমিটিতে স্থান পেয়েছেন পিতা-পুত্র, জামাই-শ্বশুর, আপন দুই ভাই এমনকি বহিষ্কৃতরাও।
জানা গেছে, অনুমোদিত কমিটিতে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল মাজেদ খান স্থান পেয়েছেন ১ নম্বর সদস্য হিসেবে। একই কমিটিতে তার ছেলে ফয়জুল ইসলাম খান পেয়েছেন ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের পদ। উপদেষ্টা কমিটিতে স্থান পাওয়া আবদুর রহমানের মেয়ের জামাই অ্যাডভোকেট আলম হোসাইন পেয়েছেন আইনবিষয়ক সম্পাদক পদ। এ ছাড়া আপন দুই ভাই আবদুল কুদ্দুস ও সেলিম আব্বাস সদস্য পদে স্থান পেয়েছেন।
অন্যদিকে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত ব্যক্তিরাও কমিটিতে পদ পেয়েছেন। এদের মধ্যে জামির্ত্তা ইউপির চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মোল্লা, সায়েস্তা ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল হালিম, জামশা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিঠু ও জয়মন্টপ ইউপির সাবেক সদস্য বোরহানউদ্দিন ফকির পেয়েছেন সদস্য পদ এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুর রহমান পেয়েছেন কোষাধ্যক্ষ পদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, বিগত সময়ের তুলনায় এ কমিটি অনেক শক্তিশালী হয়েছে। রক্তের ও আত্মীয়ের সম্পর্ক এবং বহিষ্কৃত বিবেচনা না করে কাজের মূল্যায়ন করে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ মমতাজ বেগম বিদেশে অবস্থান করায় এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৩০ জুলাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সাংসদ মমতাজ বেগমকে সভাপতি, শহিদুর রহমান শহিদকে সাধারণ সম্পাদক এবং সায়েদুল ইসলামকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
অভিষেকে ২৬ মিনিট খেলে দুই অ্যাসিস্টের অবদান রাখতে পেরেছিলেন নেইমার। আল হিলাল জিতেছিল। কিন্তু পর পর দুম্যাচ খেললেন পুরো সময়। তেমন কিছুই করতে পারলেন না। ড্র করেছে আল হিলাল আবার।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে শেষ দিকের গোলে ১-১ ড্র করে পরাজয় বাঁচিয়েছিল আল হিলাল। আজ সৌদি প্রো লিগে দামাক এফসির বিপক্ষে ম্যালকমের গোলে ৯ মিনিটে এগিয়ে গেলেও শেষপর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি।
সাত ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে তবুও শীর্ষেই রইলো আল হিলাল।
বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হবে। এ উপলক্ষে ২১টি বেসরকারি সংস্থা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি’।
দিবসটি উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ২১টি আয়োজক সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে ধানমন্ডি-২৭-এর মোড় থেকে আবাহনী খেলার মাঠ পর্যন্ত ‘স্বল্প দূরত্বে হেঁটে ও সাইকেলে চলি, ব্যক্তিগত গাড়ি পরিহার করি’ শীর্ষক র্যালি আয়োজন করা হয়েছে।
২০০৬ সাল থেকে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এটি পালন শুরু হয়, যেখানে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্র্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) মুখ্য সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে এসেছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম যানজটপ্রবণ ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকারিভাবে এ দিবসটি পালনের উদ্যোগ এই বছর নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে দিবসটি পালনের প্রায় দেড় যুগ পার হতে চললেও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ও ফলপ্রসূ পরিকল্পনা ও নীতির বাস্তবায়ন এখনো দেখা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, যানজটের বড় কারণ হলো এই ব্যক্তিগত গাড়ি। দেশে মেগা প্রকল্পগুলো ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য না দিয়ে গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে করা উচিত। এখন গণপরিবহনের দিকে জোর না দেওয়ায় অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ি, যা সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিআরটিএ একটি সূত্র থেকে জানা যায়, দিন দিন ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত মোট যানবাহন নিবন্ধন আছে ৫৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮টি মতো। এর মধ্যে গণপরিবহনের সংখ্যা মাত্র ২ শতাংশের কম। আর বেশিরভাগই ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা গাড়ি।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বায়ুদূষণে বিশ্বে দুই বিলিয়ন শিশু প্রতিদিন বিষাক্ত বাতাসের সংস্পর্শে আসছে। এদের মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি প্রতিবছর মারা যাচ্ছে। তবুও দেশে গণপরিবহনকে প্রাধান্য না দিয়ে বড় বড় অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। যার জন্য দেশে দিনের পর দিন ব্যক্তিগত গাড়ি বাড়ছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে সড়কে নানারকম বিশৃঙ্খলার শঙ্কা থেকেই যাবে।
এদিকে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানান, প্রতি মাসের প্রথম রবিবার সব ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ করার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। নীতিনির্ধারকরা গণপরিবহন ব্যবহার করলেই সাধারণ মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ উপলব্ধি করতে পারবেন, ফলে গণপরিবহনের মান বাড়তে পারে। টেকসই পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস সারা বিশ্বে বেগবান হলেও বাংলাদেশে এ প্রয়াস সীমিত। তাছাড়া ঢাকা শহরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দিয়ে চলছে বিআরটিএ। নগর পরিকল্পনা ও পরিবহন পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় নেই, কর্র্তৃপক্ষগুলোর মধ্যেও নেই কার্যক্রমের সমন্বয়। ফলে নগরে গাড়ির চাপ বাড়ছে, মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েছে যানজট।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কখন যাবি জনগণ এখন আর এই কথা বলে না। বলে, এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা এখন যাবি। আর যাবেনইবা কোথায়? এখন সেটাই দেখার বিষয়। সর্বশেষ গতকাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাফ বলে দিয়েছে, তারা শেখ হাসিনার অধীনে হওয়া নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবেন না। কারণ তাদের যে প্রতিনিধিরা দেশে এসেছিলেন, তারা গিয়ে বলেছেন, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপি আয়োজিত ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-সিলেট অভিমুখী ‘রোডমার্চ’ কর্মসূচির শুরুতে ভৈরবের বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সকালে অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির এক দফা দাবি আদায়ে এই রোডমার্চ শুরু হয়। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রোডমার্চ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন গয়েশ^র চন্দ্র রায়।
এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওয়ারেস আলী মামুন, নির্বাহী কমিটির সদস্য লায়লা বেগম ও মজিবুর রহমান ইকবাল।
ওই জনসভায় গয়েশ্বর চন্দ্র আরও বলেন, ‘বিএনপির দাবি দেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন, যা হতে হবে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। যার যার ভোট সে সে দেবে। সকালের ভোট রাতে হবে না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসার পরিবেশ পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের লোকেরা ধ্বংস করছে। ফলে এতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশের মানুষ আজ অসহায় দ্রব্যমূল্য নিয়ে। চালের দাম, তেলের দাম, আলুর দাম, বিদ্যুতের দাম হু হু করে বেড়েছে। আজকে ব্যাংকগুলোতে টাকা চুরি করে আওয়ামী লীগের লোকেরা পাচার করছে বিদেশে। রিজার্ভ কমে গেছে। সরকারদলীয় লোকের দুর্নীতির কারণে আজ রিজার্ভ কমছে, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হচ্ছে।’
দুপুরে সিলেট অভিমুখে তারুণ্যের রোডমার্চে যাত্রাপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে পথসভা হয়। এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে গয়েশ্বর বলেন, ‘তারুণ্যের যে রোডমার্চ শুরু হয়েছে, তা সরকার পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে তরুণ সমাজ আজ জেগে উঠেছে। শেখ হাসিনা সরকারকে আর কোনো অশুভ শক্তিই রক্ষা করতে পারবে না।’ এ আন্দোলন ডু আর ডাই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রোডমার্চটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমানায় পৌঁছলে দলের কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম খোকন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মোহাম্মদ শামীম ও যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা এসএন তরুণ দেসহ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নেতৃত্বে রোডমার্চকে স্বাগত জানিয়ে শোডাউন করা হয়।
পরে দুপুরে হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এলাকায় পথসভা করা হয়। পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মালিক জনগণ। সেই মালিকানা আমরা ফেরত দিতে চাই। ক্ষমতায় আসার জন্য আমরা আন্দোলন করছি না। জনগণের অধিকার আর মানুষের ভোটাধিকার ফেরাতে আমরা রাজপথে নেমেছি।’
রোডমার্চটি বিকেল ৪টায় সিলেটে এসে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই রোডমার্চ সিলেটে পৌঁছে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। এরপর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ নেতারা।
এদিকে বৃষ্টি হওয়ায় সমাবেশস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নেতাকর্মীরা সেভাবে অবস্থান নিতে পারেননি। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে অনেকে সমাবেশস্থলে এলেও বৃষ্টির কারণে তারা আশপাশের বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেন। অবশ্য বেশ কিছু নেতাকর্মী ছাতা, ব্যানার-ফেস্টুন ইত্যাদি মাথায় দিয়ে মাঠেই অবস্থান করছিলেন। বৃষ্টিতে ভিজে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী সরকারবিরোধী স্লোগান দেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন জানান, রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে যোগ দিতে দুপুর থেকেই সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা ও সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মী মিছিল সহকারে এসে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। তবে বৃষ্টির কারণে মাঠে অবস্থান কষ্টকর হয়ে পড়ে। এরপরও বৃষ্টিতে ভিজে শত শত নেতাকর্মী সেখানে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ সফল করেছেন। সভা শেষে রোডমার্চ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
* প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
রাজধানীর পল্টনে ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীর ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই পুলিশসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
জানা গেছে, আবদুল্লাহ আল মামুন নামে একজন ব্যবসায়ীর কর্মচারী আইএফআইসি ব্যাংকের পল্টন শাখায় ২০ লাখ টাকা জমা দিতে আসেন। তিনি এসে টাকা জমা দেওয়ার লাইনে দাঁড়ান। এ সময় পুলিশের ইউনিফর্ম পরা দুই ব্যক্তি তাকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যান। পরে তার কাছে থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। পরে সিটিটিভি ফুটেজ দেখে দুজন হকারকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ধারাবাহিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয় অন্যদের। এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি মামলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের (ডিএমপি) উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের সঙ্গে দুজন পুলিশ কনস্টেবল জড়িত ছিল। তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিভিলে থাকা তিন ব্যক্তি টাকার বিষয়ে ওই দুই পুলিশকে তথ্য দেয়। এরপর ইউনিফর্ম পরা দুই পুলিশ কনস্টেবল ব্যাংকে ঢুকে ওই ব্যক্তিকে বাইরে নিয়ে আসে। তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। দুই পুলিশ কনস্টেবল বরখাস্ত ছিল।
জানা গেছে, পল্টন থানা-পুলিশ ও ডিবির মতিঝিল জোনাল টিম সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ব্যাংকের সামনের ফুটপাতের হকার হৃদয় ও তার সহযোগী মঞ্জুকে আটক করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের দেওয়া তথ্যে ডেমরা পুলিশ লাইনসে ক্লোজড হয়ে থাকা পুলিশের দুই সদস্য কনস্টেবল মাহাবুব ও কনস্টেবল আসিফকে ১০ লাখ টাকাসহ আটক করা হয়। এরপর বাসাবো থেকে ছিনতাইয়ের আরও ১০ লাখ টাকা ও মোটরসাইকেলসহ সোহেলকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনার ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ আল মামুন করপোরেট আইডিয়াসের মালিক। তিনি বলেন, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই মার্কেটিং অফিসারের মাধ্যমে টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়। টাকা নিয়ে ব্যাংকের ওই শাখায় যাওয়ার পর এ ঘটনা ঘটে। এরপর দ্রুত পুলিশকে জানাই।
এ ব্যবসায়ী আরও বলেন, পুলিশের পোশাক পরিহিত দুই লোক এসে আমাদের কর্মীকে ভয় দেখিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে এটি শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম। এখন জানলাম এ ছিনতাইকাণ্ডে শাহজাহানসহ আরও তিনজন রয়েছে। শাহজাহান আমার দীর্ঘদিনের কর্মী। আমাদের প্রতিষ্ঠান ঠিকাদারিতে জড়িত।
পুলিশ বলছে, পুরানা পল্টনে করপোরেট আইডিয়াসের অফিস থেকে টাকা জমা দেওয়া জন্য ব্যাংকের উদ্দেশ্যে যাত্রার পরপরই শাহজাহান, হৃদয় ও রাসেল পুলিশের দুই সদস্যকে খবর দেন। তারা পল্টনের আইএফআইসি ব্যাংকে গিয়ে টাকার ব্যাগসহ আজিমকে তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে দুই পুলিশ সদস্য পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিনতাইয়ে অংশ নেন। এ সময় বাকি তিনজন আশপাশে পাহারায় ছিলেন।
পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। এরপর পুলিশের দুই সদস্যকে শনাক্তের পর অন্য তিনজনের বিষয়েও তথ্য বেরিয়ে আসে।
জানা গেছে, ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়ে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা একটি হিসাব নম্বরে জমা দেওয়ার পরই ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে আসা হয়। তারা আজিমের টাকার উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। ব্যাগে থাকা টাকা হুন্ডির অর্থ বলে দাবি করেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে আজিমকে ব্যাংকের বাইরে নিয়ে যান। রাস্তায় এনে তাকে মোটরসাইকেলে তুলে দ্রুত মুগদা এলাকায় নেন। সেখানে টাকার ব্যাগ রেখে ছেড়ে দেওয়া হয় আজিমকে। এরপর ঘটনা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককে জানানোর পর পুলিশের একাধিক দল কাজ শুরু করে।
নিউ ইয়র্কের চারপাশেই বাঙালি পাবেন। ব্রুকলিন, জ্যামাইকা, কুইন্স সর্বত্রই। কিন্তু জ্যাকসন হাইটস যেন বাংলাদেশেরই কোনো এক অঞ্চল। কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকায় ঘোরাঘুরি করলেই যেমন মনে হয় পাবনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রাজশাহী অথবা অন্য কোনো জনপদে আপনি হাঁটছেন, ঠিক তেমনি নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস পুরোপুরি এক বাংলাদেশ। আপনা বাজার ও অন্যান্য দু-একটি বিপণি সর্বভারতীয় অস্তিত্বের জানান দেয় বটে, কিন্তু বাংলাদেশের দাপটের কাছে তা কিছুই নয়। একপা, দুপা অন্তর ছোট-বড় অজস্র দোকান। একের পর এক রেস্টুরেন্ট। সাগর, বৈশাখী ও নবান্ন। ফুটপাত জুড়ে সবজি, বঙ্গসন্তানদের ফুচকা খাবার উৎসাহ দেখে বেশ মন ভালো হয়ে যায়।
বাংলাদেশের জনগণ থাকবে আর রাজনীতি নিয়ে তর্কাতর্কি থাকবে না, এ হতে পারে না। ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপের সময় যেমন পাড়া ভাগাভাগি হয়ে যায়, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স ও ব্রাজিলে, এখানেও তেমনি এখন তুমুল উত্তেজনা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে। কান পাততে হবে না, জ্যাকসন হাইটসের চারদিকে দু-তিন দিন হাঁটাচলা করলেই বুঝতে পারবেন যে পুরো বাংলাদেশ ভাগ হয়ে আছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে। এরশাদের জাতীয় পার্টিও যৎসামান্য আছে, কিন্তু বামদের উপস্থিতি সেভাবে চোখে পড়েনি। শুনেছি সিপিবির কালচারাল ফ্রন্টের মজবুত সংগঠন আছে। আমি এখনো টের পাইনি। পুরো আমেরিকাতেই ভারত ও অন্যান্য দেশের ইমিগ্র্যান্ট প্রচুর। কিন্তু কেউই বাংলাদেশিদের মতো রাজনীতি নিয়ে মাতামাতি করেন বলে মনে হয়নি। এখানে অনেক বাংলা ম্যাগাজিন বের হয়। সাপ্তাহিক, ত্রৈমাসিক সব। সেখানেও রাজনৈতিক বিশ্লেষণের গুরুত্ব যথেষ্ট প্রাধান্য পায়। সাধারণভাবে বাংলাদেশের জনগণ আমেরিকান মূলধারার রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান না। ব্যতিক্রম যে নেই, বলব না। মওলানা ভাসানী অনুসারী তরুণী কাজি ফৌজিয়ার সঙ্গে আলাপ হলো। লড়াকু মেয়েটি আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ, বাংলাদেশি, লাতিন ইমিগ্র্যান্ট ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জন্য বছরের পর বছর মাটি কামড়ে লড়াই করে চলেছেন।
শেখ হাসিনার আমেরিকা ভ্রমণ নিয়ে জ্যাকসন হাইটস সরগরম। বিকেল হতে না হতেই ছোট ছোট মিছিল চারপাশে ঘুরছে। বঙ্গদেশের কমিউনিটির মধ্যে আওয়ামী লীগের শক্তি যথেষ্ট। মহিলা লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সব পাবেন। প্রত্যেকটি স্টেটেই আওয়ামী লীগের শাখা সংগঠনের উপস্থিতি ভালোই। পাশাপাশি বিএনপি সমর্থকদের সংখ্যাও কম নয়।
বিকেলে ছোটখাটো দোকানে খেতে খেতে সুষ্ঠু নির্বাচন, রাতের ভোট, ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তর্কবিতর্ক, উত্তেজনা শুনতে শুনতে মনে হয় যেন ঢাকা বা বাংলাদেশের কোনো অন্য শহরে বসে আছি। এই রাজনৈতিক চাপানো উতরে এটা স্পষ্ট, কয়েক হাজার মাইল দূরে থাকলেও দেশের ভালোমন্দ নিয়ে চিন্তা কম নেই অভিবাসীদের। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম জোগানদার কিন্তু এই অভিবাসীরাই। রেমিট্যান্স দেশের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এ নিয়ে সরকারি-বেসরকারি মহলে কোনো সন্দেহ নেই। লক্ষ করছিলাম যে এক-একজন বাংলাদেশি কত কত বছর ধরে এখানে আছেন। নিজেরা খেটে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। বাড়ি করেছেন। গাড়ি কিনেছেন। কিন্তু মন আজও পড়ে থাকে দেশের মাটিতে।
বাংলাদেশে কয়েক মাস আগে যখন গেলাম, তখন সেখানে আমেরিকান ভিসানীতি নিয়ে বিতর্ক প্রবল। শেখ হাসিনার সরকারকে আমেরিকা নাকি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, আগামী বছর বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ না হলে এবং দেশের মধ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ যদি না থাকে তাহলে তারা বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না। আমেরিকা নিজের দেশে কতটা গণতন্ত্রকে সম্মান করে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। দিন-দুই আগে ম্যানহাটনের লাইব্রেরি চত্বরে গিয়ে দেখি জনা-পঁচিশ-তিরিশ নারী-পুরুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, কুড়ি বছর, তেইশ বছর ধরে বিনাবিচারে আমেরিকার বিভিন্ন জেলে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবিতে।
তাও আমেরিকা যেহেতু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে, ফলে সেখানে যাওয়ার আগ্রহ অস্বাভাবিক নয়। এ ছাড়া পুঁজি যেভাবে ভোগবাদী মননকে লালন করে, সেখানে ভোগবাদের স্বর্গরাজ্যে যাওয়ার আকাক্সক্ষা বাড়বে, বাড়ছেও। গ্রিন কার্ড পেতে সক্রিয় অনেক তরুণের সঙ্গে আলাপ হলো। যারা রয়েছেন, তারাও অধিকাংশ দেশের হালচালে বিরক্ত, হতাশ। বিরাটসংখ্যক বিএনপি সমর্থকের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তারা নিরাপত্তার অভাবেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তবে সরকার পরিবর্তন হলেও তারা সবাই দেশে ফিরবেন, এমন কিন্তু মনে হয়নি। ঢাকায় যত আমেরিকান ভিসানীতি নিয়ে উৎকণ্ঠা বা আলোচনা শুনেছি, তার ছিটেফোঁটাও জ্যাকসন হাইটসে শুনবেন না। এখানকার বাসিন্দাদের ধারণা, এসব বাইডেনের রাজনৈতিক হুমকি, যা আদতেই ফাঁপা। বিষয়টির কোনো সারবত্তা নেই।
সারা নিউ ইয়র্কে যত অভিবাসী আছে, তাদের সাহায্য ছাড়া আমেরিকা একপাও এগোতে পারবে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় ইমিগ্র্যান্টবিরোধী কিছু তৎপরতা ছিল। এখন সেসব নেই। নিউ ইয়র্ক মোটের ওপর ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি। যত মানবতার পক্ষে, ইমিগ্র্যান্ট সমর্থন, অধিকার রক্ষা আন্দোলনÑ সব আজও এ শহরের অলংকার। কাজেই আমেরিকার ভিসা পলিসি নিয়ে আদৌও কেউ চিন্তিত নন। এই, অন্তত একটা ব্যাপারে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে কোথাও কোনো মতপার্থক্য নেই। আমেরিকান প্রশাসনের সত্যিই ক্ষমতা নেই লাখ লাখ অভিবাসীকে চটিয়ে সে কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাদেশিদের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য চট করে চোখে পড়ে। আর তার প্রশংসা না করে উপায় নেই। নিজেদের মধ্যে দলাদলি, গোষ্ঠী কলহ থাকলেও তারা অনেক মিশুকে, সামাজিক ও উষ্ণ। সহজেই অন্যকে আপন করে নিতে পারেন। বিপদে পড়লে বাংলাদেশের মানুষ যত ঝাঁপিয়ে পড়ে আপনার পাশে থাকবে, তত অন্য কাউকে পাবেন না। ভারতীয়দের মধ্যে বাসিন্দা হিসেবে বাঙালি যেমন আছেন, তেমনি রয়েছেন পাঞ্জাবি ও দক্ষিণ ভারতীয়রা। তাদের সম্পর্কে বিশদে পরে কোথাও লেখার ইচ্ছে থাকল।
ব্রুকলিনে পাকিস্তানি এক দোকানে চমৎকার জিলাপি ও শিঙাড়া খেলাম। দেশে থাকলে মনে হয় ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান পরস্পরের শত্রু। মুখে মিঠে মিঠে করে, যত, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি গাই না কেন, পশ্চিমবঙ্গেও হালে রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ নিয়ে বিদ্বেষ বাড়ছে। অনুপ্রবেশ, সীমান্ত হত্যা নিয়ে সত্যি-মিথ্যা মিলিয়ে দুদেশেই জনমনে অসন্তোষ বাড়ছে। বিদেশের মাটিতে আপাত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান দেখতে বেশ লাগে। আসলে দিনভর পরিশ্রম ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হতে পারে, এখানে ধর্মীয় বিদ্বেষকে মাথা তুলতে দেয় না। জ্যাকসন হাইটসে সন্ধ্যা নামছে। আওয়ামী সমর্থকরা বলে চলেছেনÑ হাসিনার সরকার চিরকাল দরকার... পাশের সেলুনের দরজায় মওলানা ভাসানীর হাসিমুখ। আমেরিকার পক্ষ-বিপক্ষ প্রশ্নেই আওয়ামী লীগ ভেঙে আলাদা হয়ে জন্ম নিয়েছিল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপ। সেসব তো ইতিহাসের পাঠ। এমন সুন্দর আবহাওয়ায় ইতিহাস চর্চা নিশ্চিত বিরক্তিকর।
লেখক : ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও লেখক
ব্যাংকপাড়াখ্যাত মতিঝিল এখন মৃতপ্রায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে না পারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যত্র সরে যাচ্ছে। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির চাকা ঘোরানো মতিঝিলে আবাসিক ভবন, শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান তৈরি না হলে দেশের প্রধান এই বাণিজ্যিক অঞ্চল প্রাণ হারাবে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
তাদের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় অবদান রয়েছে মতিঝিলের টাকার। শুধু তা-ই নয়, মতিঝিলে উপার্জিত অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, কানাডাসহ আরও অনেক দেশে। এখানকার উপার্জিত টাকা অনেকে জমা রেখেছেন সুইস ব্যাংকেও। শুধু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি মতিঝিলে। এ যেন মা কাঁকড়ার আত্মত্যাগের গল্প। মা কাঁকড়া বাচ্চাদের আগলে রাখে বুকের ভেতর; যেদিন বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসে, সেদিন খোলস ছাড়া মা কাঁকড়ার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। মা কাঁকড়ার মতো দুঃখী ও ত্যাগী বাণিজ্যিক মতিঝিল।
ষাটের দশকে মতিঝিলে গড়ে ওঠে দেশের কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট-সিবিডি)। সেই থেকে এখনো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অঞ্চল মতিঝিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে সরকারি ৮টি, বেসরকারি ৪৫টি এবং বিদেশি ব্যাংক রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ৮১টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের বেশির প্রধান কার্যালয় চলে গেছে কারওয়ান বাজার, গুলশান-বনানী ও উত্তরায়। নতুন করে যেসব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাচ্ছে, সেগুলোর প্রধান কার্যালয় মতিঝিলের বাইরে করা হচ্ছে।
জানা গেছে, মতিঝিলের আশপাশে পরিকল্পিত কোনো আবাসিক এলাকা, অভিজাত হোটেল, কাজের ফাঁকে অবসর কাটানোর মতো উন্মুক্ত স্থান, শপিং কমপ্লেক্স না থাকায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সুবিধার জন্য অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়গুলোও মতিঝিলের বাইরের এলাকা, অর্থাৎ কারওয়ান বাজার, গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে গড়ে উঠছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৈনিক বাংলা, শাপলা চত্বর, মধুমিতা সিনেমা হল এবং ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে এবং দিলকুশা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবন এবং বঙ্গভবনের পাশের এলাকাজুড়ে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল। বিশ্বের বাণিজ্যিক অঞ্চলের ভবনগুলো সুউচ্চ হয়ে থাকে। কিন্তু মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের পাশেই বঙ্গভবন। নিরাপত্তার কারণে বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর কোনো বহুতল ভবন করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, মতিঝিলের প্লটগুলোর ‘নন-রেসট্রিকটেড’ উচ্চতা দেওয়া রয়েছে। কিন্তু বঙ্গভবনের ৫০০ মিটার পরিধির ভেতর সাড়ে চারতলার বেশি উচ্চতার ভবনের অনুমোদন মেলে না। ফলে মূল্যবান ওই প্লটগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে পারছেন না মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণও রয়েছে কয়েকটি ভবন। একটির সঙ্গে অন্যটি লাগানো। দুটি ভবনের মাঝখানে উন্মুক্ত জায়গা নেই বেশিরভাগ ভবনের। দিলকুশা এলাকার বঙ্গভবন লাগানো ভবনগুলোর মাঝখানেও কোনো ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, মতিঝিল এলাকার ফুটপাতগুলো হকারদের দখলে। ভাঙাচোরা এবড়োখেবড়ো সড়ক। সড়ক বিভাজকগুলো শ্রীহীন। এগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ হয়নি। প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলে মতিঝিলের আরও করুণ দশা চোখে পড়ে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার সড়কের ফুটপাতে গড়ে উঠেছে চটের ছালা দিয়ে ঘেরা খাবারের হোটেল, চায়ের দোকান এবং নানা পণ্যের অস্থায়ী দোকান। সামান্য বৃষ্টিতে মতিঝিল এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে থাকে পানির নিচে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাভুক্ত। ডিএসসিসি এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক অঞ্চল হিসেবে মূল্যায়ন করলে মতিঝিল ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে। যদিও এটা মানতে নারাজ ডিএসসিসির কারিগরি কমিটি।
মতিঝিল এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিল এলাকার সংস্কার ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএসসিসি। পরিত্যক্ত প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মতিঝিলের সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকের অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা দরকার। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজ করবে ডিএসসিসি। তবে মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চলের মূল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দায়িত্ব রাজউকের। রাজউককে সেসব বিষয় পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব কাজে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা লাগলে করপোরেশন সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
মতিঝিল বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে তোলে রাজউক। রাজউক সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশক থেকেই মতিঝিলের পুরোপুরি বাণিজ্যিক বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। বিশে^র উন্নত দেশগুলোর বাণিজ্যিক অঞ্চলে শপিং মল, হোটেল, উন্মুক্ত স্থান থাকে। আর কাছাকাছি এলাকায় পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা থাকে। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার ক্ষেত্রে সেটা ছিল না। অভিজাত মানের হোটেল পূর্বাণী গড়ে উঠলেও আশপাশে সময় কাটানোর মতো ব্যবস্থা নেই। সে কারণে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লোকজন গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় থাকেন। মতিঝিলের সৌন্দর্য নিশ্চিত করতে ও আধুনিকায়নে যেসব বিষয়ে দৃষ্টি রাখা দরকার ছিল রাজউক ও সিটি করপোরেশন সেটা করেনি।
রাজউক সূত্রে আরও জানা যায়, ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধরা, উত্তরা। সেই সব এলাকা থেকে মানুষ মতিঝিলে আসেন। শহরের জনসংখ্যা বাড়ায় দিন দিন যানজট বাড়ছে। ওই সব এলাকা থেকে মতিঝিলে আসতে সড়কে এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কর্মঘণ্টার মধ্যে ৩০ শতাংশ সময় সড়কে নষ্ট হচ্ছে। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে চিন্তা করেছে, তার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় হবে যা তার আবাসনের কাছাকাছি। মতিঝিল থেকে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও ভূমিকা রেখেছে।
কালের বিবর্তনে গুলশান হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক এলাকা। কারওয়ান বাজার, উত্তরায়ও গেছে কিছু। এসব জায়গায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমও সেখানে চলে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকায় তাদের বসবাস। আবাসিক এলাকা ছাড়া, পৃথিবীর কোথাও শতভাগ জায়গা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা অথবা একই শ্রেণির কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহার হয় না।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, নগর পরিকল্পনায় ভূমির ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, যেকোনো জায়গার ব্যবহার হবে ২৪ ঘণ্টা। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কর্মচঞ্চল থাকে মাত্র ১২ ঘণ্টা। এরপর ওই জায়গার ব্যবহার হয় না। রাতে নীরব ও ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়।
তিনি বলেন, যে মতিঝিলে দিনের বেলায় হাঁটা যায় না; গাড়ির কারণে, যানজটে; সেই মতিঝিলে রাত ৮টার পরে আবার একাও হাঁটা যায় না; অনিরাপদ বোধ হয়। এ জন্য যারা দিনে বাণিজ্য করতে আসেন, তারা মতিঝিল এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন না। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় থাকলে তারা শপিংয়ে যেতে পারেন, কফি শপে যেতে পারেন। এসব কারণে সারা বিশ্বে ভূমির মিশ্র ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, মতিঝিল এলাকা যেহেতু ইতিমধ্যে তার আভিজাত্য হারিয়ে ফেলেছে, এ জন্য মতিঝিলের জমির শ্রেণিকে মিশ্র ব্যবহার হিসেবে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজউক। সংশোধিত ড্যাপে সে বিষয়ে নির্দেশনা রাখা হয়েছে। পৃথিবীর নগর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৫০, ৬০ বা ১০০ বছর অন্তর সেসব ঢেলে সাজানো হয়। সেটা বিবেচনায় নিয়েই মতিঝিল এলাকাকেও ঢেলে সাজাতে হবে। এখানে আবাসিকের বৈশিষ্ট্য দিতে হবে; কনডোমিনিয়াম গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে রাজউক বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে লাইব্রেরি, ওয়াকওয়ে থাকবে। বসার ব্যবস্থা থাকবে। মতিঝিল এলাকায় ঝিল ছিল, ওই ঝিলকে প্রাধান্য দিয়ে পার্কটি তৈরি করা হবে। বহুমুখী ব্যবহার ছাড়া মতিঝিলকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মতিঝিলের আধুনিকায়ন ও ভূমির মিশ্র ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। তাহলে মতিঝিল সচল থাকবে; তবে ঢাকা শহর বড় হওয়ায় আরও বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে ওঠা ইতিবাচক। এসব পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল; কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে সে রকম হয়নি। এটা দুঃখজনক। এ জন্য শহরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ঢাকায় এখন অনেকগুলো বাণিজ্যিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সব অঞ্চলে ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় বড় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় মতিঝিলে রয়েছে। তবে ব্যবসা গুলশান, বনানী, উত্তরা, গাজীপুরে সরে যাওয়ায় ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ব্যবসা কেন্দ্রের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০-৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৪০ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রমুখী করতে পারলে নির্বাচন বিতর্ক সামাল দিতে কোনো বেগ পেতে হবে না।
আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেওয়া নানা পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হলো ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। এ ছাড়া জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে নির্বাচন নিয়ে জনমত আওয়ামী লীগের পক্ষেই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর আওয়ামী লীগ এ তিন পরিকল্পনাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান।
চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। এর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল সফর করে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর আওয়ামী লীগে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে দাবি করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।
তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিগত দুই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আওয়ামী লীগ তথা সরকারকে দেশ-বিদেশে বেশ বিপাকে ফেলেছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না সরকারি দল। সেজন্য আগে থেকেই আটঘাট বেঁধে নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না ধরেই কমপক্ষে ৪০ ভাগ ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে যাবে। সেই নির্বাচনে এ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে এলে ভোটের পরে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ করার যে চক্রান্ত বিএনপির রয়েছে, সেটি ব্যর্থ হয়ে যাবে। এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো এটি।
সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ৫০-৪০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ। তা সম্ভব হলেই ভোট বিতর্ক এড়ানো যাবে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের পরে সব নির্বাচনেই ভোটার উপস্থিতি হতাশাজনক ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠেছে। কোনো কোনো ফোরামে আলোচনায় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে কম ভোটার উপস্থিতির উদাহরণ। তাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির লক্ষ্য নির্ধারণ করে নির্বাচন প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা ধরে নিয়েই তিন পরিকল্পনায় সফল হতে পারবেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষে আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন পর্যন্ত জনআকাক্সক্ষা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য বেঁধে রাখা পারলেই নির্বাচন পর্যন্ত আর সমস্যাগুলো বড় বাধা হয়ে আসবে না সরকারের সামনে। বাকিটা হলো ভোটের দিন লক্ষ্য অনুযায়ী ভোটার উপস্থিতি ঘটানো।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা আরও বলেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তেমন আধুনিক উদ্যোগ নেই। কম ভোট উপস্থিতির এটিও একটি কারণ। প্রত্যেক ভোটারকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে হবে এমনকি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে, সেটি ইসিকে ভাবতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও কেন্দ্রে ভোটার আনতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। এ নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কী কী উপায় নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে গবেষণা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, স্বল্প সময়ে যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো আগামী নির্বাচনে করা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের কর্মব্যস্ততা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে সময় পেলে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার চেয়ে পরিবারকে একটু সময় দেওয়াকে বেশি গুরুত্বের মনে করেন ভোটাররা।’ ভোট দেওয়ার প্রবণতা পৃথিবীর অনেক দেশেই কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি দল নির্বাচনে না যাওয়ায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে মনে করে না ভোটাররা। ফলে নির্বাচন বর্জন করা দলের ভোটাররা কেন্দ্রে যান না এবং দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন এ ভেবে আওয়ামী লীগের ভোটাররাও যান না। গত নির্বাচনগুলোতে ভোট কম পড়ার বড় কারণ এগুলো। তবে আগামী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগের হিসাবে মোট ভোটারের প্রায় ৩৫ শতাংশই তাদের ভোটার। এবার দলীয় ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় দলটি।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভোটার কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ সফল হলে ভোট নিয়ে সব প্রশ্নই দূর করতে পারবে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ ও ’১৮ সালের দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতিও অন্যতম। তারা চান না এবার সেই প্রশ্ন উঠুক।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ছোট ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণেও ঘাটতি রয়েছে। ফলে সরকার বড় বড় কাজ করছে ঠিকই, ছোট কিছু জনআকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে সাধারণ জনগণের একটি অংশ সরকারের প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না, এমনটাই মনে করছেন তারা। তাই ভোটের আগে বাকি সময়ে ছোট বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তা পূরণ করা হলে সাধারণ জনগণের ওই অংশটি আওয়ামী লীগের ওপরই আস্থা রাখবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে বাড়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকে। সংসার জীবনের কশাঘাতে পড়ে সরকারের অবিশ্বাস্য উন্নয়ন ওই শ্রেণির মানুষের কাছে তেমন গুরুত্ব বহন করে না। সংসার সামলাতে যে বিষয়গুলো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সেগুলোকে নির্বাচন পর্যন্ত কড়া মনিটরিংয়ে রেখে সামাল দেওয়া সম্ভব হলে মধ্যবিত্ত/নিম্নবিত্ত অংশের আস্থা অর্জন করতে পারবে বলে তারা মনে করছেন। আর আস্থা অর্জন করতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে তাদের বিশ্বাস।
জনআকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে বারবার একই চেহারা দেখছেন এলাকার মানুষ। অন্যদিকে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে প্রতিবারই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন নির্বাচিত ওই জনপ্রতিনিধি। তাতে মানুষ বিরক্ত হন। এলাকার ভোটাররা মনে করেন, একজনকে কতবার ভোট দেব? এটি হলো জনআকাক্সক্ষা। এ জায়গায় নতুন মুখ নিয়ে আসা সম্ভব হলে মানুষের মধ্যে নতুন করে আশা জাগবে। রাজনীতিতে সক্রিয় নন, এমন লোকজনও আগ্রহী হবেন। নতুন প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ভোটাররা আসবেন।
এদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুব ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে যাবে এ বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। নির্বাচন সময়মতো হয়ে যাবে এটা এখন বিএনপিও বিশ্বাস করে। দলটি ভাবছে, আন্দোলন জমছে না, নির্বাচনও ঠেকানো যাবে না। আর সেটাই তাদের বিপাকের কারণ।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।