
দেশের অভিজাত এলাকায় বসবাসকারী করদাতাদের গত করবর্ষের রিটার্নের তথ্য যাচাই করার কাজ শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত এক মাসে (জুলাই) ৩০ হাজারের বেশি রিটার্নের তথ্য খতিয়ে দেখা হয়েছে। এতে ৭৪ ভাগ ধনী করদাতাই গাড়ির তথ্য গোপন করেছে। কোটি টাকা দামের দুটি বা তার বেশি গাড়ি থাকলেও ২৫ ভাগ করদাতা রিটার্নে প্রকৃত তথ্যের চেয়ে কম আছে বলে উল্লেখ করেছে। শতকরা ৩৯ ভাগ করদাতা গাড়ির দাম কম দেখিয়েছেন। শতকরা ১০ ভাগ করদাতার গাড়ি
থাকলেও নেই বলেও জানিয়েছেন। এই করদাতার অনেকে ব্যাংক হিসাবের এবং স্থাবর সম্পদের তথ্যও গোপন করেছেন। এনবিআরের তৈরি প্রতিবেদন থেকে এসব জানা গেছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ১ জুলাই থেকে রাজধানীর গুলশান এলাকা, উত্তরা, সেগুনবাগিচা, ধানমন্ডি, বনানী, লালমাটিয়া, বসুন্ধরা, মিরপুর-১৩, বারিধারায় টাস্কফোর্স কমিটির কাজ চলছে। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বসবাসকারী বাকি করদাতাদের তথ্যও খতিয়ে দেখা হবে। এরপর চট্টগ্রামের অভিজাত এলাকার করদাতাদের রিটার্নের তথ্য খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করা হবে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরের অভিজাত এলাকার করদাতাদের রিটার্নের তথ্য যাচাই করা হবে।
রিটার্নে তথ্য গোপনকারীদের মধ্যে ৫০ বছরের বেশি বয়সের করদাতাই বেশি। রিটার্নে যাদের গরমিল পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগই ব্যবসায়ী। তাদের ৬৫ ভাগের বয়সই ৫২ বছর বা তার বেশি। তথ্য গোপনকারী বর্তমান ও সাবেক চাকরিজীবীদের ৬০ ভাগের বয়স ৫৫ বছরের বেশি। তবে খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, শিল্পী, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, স্থপতি, সাংবাদিকদের মধ্যে মিথ্যা প্রদানকারীদের শতকরা ৪৫ ভাগের বয়সই ৫০ বছর বা তা নিচে। অবসরপ্রাপ্ত বা ৬৫ বছরের বেশি বয়সের নাগরিকদের শতকরা ৯০ ভাগই রিটার্নে করযোগ্য আয় নেই এবং অন্যের ওপর নির্ভরশীল বলে জানিয়েছে। অথচ এসব ব্যক্তির নামে ফ্ল্যাট, বাড়ি ও গাড়ি আছে। ফ্ল্যাট ও বাড়ি থেকে বড় অঙ্কের ভাড়া পেয়ে থাকেন, যা রিটার্নে আয় হিসাবে দেখাননি।
এনবিআর সূত্রে আরও জানা গেছে, অনেকে রিটার্নে অলংকারের পরিমাণ এবং বাজারদরের চেয়ে মূল্য কম দেখিয়েছেন। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাটের সংখ্যা কম দেখিয়েছেন। অন্যদিকে রিটার্নে যেসব ফ্ল্যাটের কথা জানানো হয়েছে তার প্রতিটির মূল্যও কম দেখানো হয়েছে। রাজধানীর বাইরে এক এলাকায় বেশি পরিমাণের জমি থাকলে বেশির ভাগ করদাতা তা উল্লেখই করেননি। এসব এলাকার করদাতাদের পরিবারের সদস্যদের রিটার্নের তথ্যেও গরমিল পাওয়া গেছে।
রিটার্নের তথ্য যাচাই করতে প্রতিটি কর সার্কেলের কর্মকর্তাদের নিয়ে পৃথক পৃথক টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে এনবিআর সূত্রে। এরই মধ্যে যাদের রিটার্নে গরমিল পাওয়া গেছে তাদের কাছে তথ্য গোপনের কারণ জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে সময় বেঁধে দিয়ে পাওনা কর পরিশোধে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কয়েকবার সময় বেঁধে দেওয়ার পরও পাওনা পরিশোধ না করলে রাজস্ব আইন অনুসারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তথ্য গোপনের দায়ে অভিযুক্ত করে এনবিআর মামলা করবে। প্রয়োজনে হিসাব জব্দ এবং জেল-জরিমানাও করা হবে।
সম্প্রতি এক সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, সব করদাতাই আমাদের কাছে সম্মানিত। রিটার্নে করদাতারা বাড়ি, ফ্ল্যাট ও গাড়ির প্রকৃত তথ্য দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, অনেকের গাড়ির তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব গাড়ির মধ্যে এক কোটি থেকে এর বেশি দামের গাড়িও আছে। এই গাড়ির অনেকগুলোর তথ্য বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কাছে নেই। এসব গাড়ি জাল বা ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। বছর শেষে নবায়নের ও অগ্রিম কর প্রদানের কাগজও ভুয়া বানিয়ে নেওয়া হয়েছে। বছরের পর বছর এসব কারসাজিতে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে। এ কাজে অনেক অসাধু গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং একাধিক দালাল চক্র জড়িত। এসব দালালের সঙ্গে বিআরটিএর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনৈতিক লেনদেনের সম্পর্ক রয়েছে। বিআরটিএর ঢাকার মিরপুর, কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়া, বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, ঝালকাঠি, নেত্রকোনা, পটুয়াখালী, জামালপুর, খাগড়াছড়ি, ফেনী ও কক্সবাজার কার্যালয়ের আশপাশের দালাল চক্রের সহায়তায় গাড়ির ভুয়া নথিপত্র জোগাড় করা হয়েছে অনেক দিন থেকেই একাধিক চক্র এ অপকর্ম করছে। ভুয়া নথি দিয়ে গাড়ি চালিয়েছে এমন দুশোর বেশি গাড়ি এনবিআর থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে গুলশান অ্যাভিনিউ এলাকায় বসবাসকারী এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে একটা সাধারণ মানের প্রাইভেট গাড়ি, দুটি বিলাসবহুল দামি গাড়ি পাওয়া যায়। এ ব্যক্তি রিটার্নে শুধু প্রাইভেট গাড়ির উল্লেখ করেছেন। সব তথ্য-প্রমাণ খতিয়ে দেখে প্রমাণ পাওয়া যায়, দামি গাড়ি দুটি রাজধানীর বাইরে থেকে ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে। একইভাবে উত্তরার সেক্টর-৩-এ বেসরকারি চাকরীজীবির তিনটি গাড়ি পাওয়া যায়। একটি নিজে, স্ত্রী এবং সন্তানরা দুটি ব্যবহার করেন। অথচ রিটার্নে সবচেয়ে কম দামের একটি গাড়ির কথা বলা হয়েছে। যার মূল্য কম দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে রাজধানীর মিরপুর-১৩ নম্বরে বসবাসকারী এক শিল্পীর ৭২ বছর বয়সের বাবার নামে দুটি গাড়ি থাকলেও তার একটিও রিটার্নে উল্লেখ করা হয়নি। এই গাড়ি দুটি মিরপুর থেকে নিবন্ধন নিয়েছে। দুটো গাড়িই শিল্পী ও তার পরিবার ব্যবহার করেন।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণ আয়ের মানুষের চেয়ে ধনীদের কর ফাঁকির পরিমাণ বেশি। বিশেষভাবে যারা বাড়ি, গাড়ির তথ্য গোপন করে কর ফাঁকি দেন। এসব ব্যক্তি নিয়মিত কর পরিশোধে সক্ষম। তাদের শাস্তির আওতায় আনা কঠিন। তারা সমাজের প্রভাবশালী। এ বিষয়ে এনবিআরের উচিত কঠোর হওয়া।
সরকারি ও বেসরকারি খাতে নেওয়া বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে প্রায় ১২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। সরকার ও সরকারি গ্যারান্টিতে নেওয়া ঋণের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে ৩১৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার। বাকিটা পরিশোধ করতে বেসরকারি খাত।
ঋণ পরিশোধের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিদেশি মুদ্রার সংকট কাটাতে আরও বেশি ঋণের জন্য দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে সরকারকে। এর বড় কারণ হচ্ছে পুরনো ঋণ পরিশোধের চাপ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত দেশের সরকারি-বেসরকারি বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৭১ কোটি ডলার বা ৯৫ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) সরকার ও সরকারি গ্যারান্টিতে পাওয়া ঋণের যে ৩১৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হবে তার ২৪৩ কোটি ডলার আসল। বাকি ৭৬ কোটি ডলার সুদ।
বেসরকারি খাতের ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণের মধ্যে চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে ৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বেসরকারি খাতের দীর্ঘমেয়াদি ঋণের মধ্যে ১৬২ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। আর স্বল্পমেয়াদি ঋণের মধ্যে আরও প্রায় ৬০০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরের মধ্যে আরও প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু চলতি বছরের প্রথমার্ধে ঋণপ্রাপ্তির যে গতি তাতে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সর্বোচ্চ ১০-১১ বিলিয়ন পাওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২ সাল পর্যন্ত বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা বিদেশ থেকে যে পরিমাণের স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিতেন, পরিশোধ তার চেয়ে কম ছিল। ২০১৯ সালে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঋণ নিয়েছিলেন, বিপরীতে ঋণের সুদ ও আসল বাবদ ২ হাজার ৩৫৮ কোটি ৯৬ লাখ ডলার পরিশোধ করেন। পরের বছরে ১ হাজার ৮৯৩ কোটি ডলার ঋণের বিপরীতে পরিশোধ ছিল ১ হাজার ৮৯১ কোটি ডলার। ২০২১ সালে ৩ হাজার ৩৯৬ কোটি ডলার ঋণের বিপরীতে পরিশোধ হয় ২ হাজার ৯১৫ কোটি ডলার। আর ২০২২ সালে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ৩ হাজার ৭২৫ কোটি ডলারের ঋণ নিয়েছিলেন, বিপরীতে ঋণের সুদ ও আসল বাবদ পরিশোধ করেছেন ৩ হাজার ৬৭৩ কোটি ডলার।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি সামলাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নেওয়া পদক্ষেপে ঋণ প্রাপ্তি ও পরিশোধের চিত্র পাল্টে গেছে। মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় এসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো দফায় দফায় সুদ হার বাড়ায়। এতে করে ঋণের সুদ হার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঋণপ্রাপ্তিও কঠিন হয়ে গেছে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২ সালে জানুয়ারিতে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) ছিল দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। এরপর ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট উচ্চ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিলে সব ধরনের সুদহারও বেড়ে যায়। গত ৮ আগস্ট এসওএফআরের গড় রেট দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশে। বিদেশি ঋণ পেতে হলে এসওএফআরের সঙ্গে সার্ভিস চার্জ ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সুদ দিতে হয়।
বিদেশি মুদ্রার সংকটে কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দায় পরিশোধে বিলম্ব হওয়া এবং আমদানি সংকুচিত হওয়াসহ নানান পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ঋণমান কমে গেছে। এতে করে বেসরকারি ব্যবসায়ীদের বিদেশি ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বিপরীতে মেয়াদ না বাড়ায় আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে বেসরকারি উদ্যোক্তারা যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ আনছেন, তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। চলতি বছর জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা বিদেশ থেকে ২১৮ কোটি ডলার স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু এ মাসে তাদের ঋণের সুদ ও আসল মিলিয়ে পরিশোধ করতে হয়েছে ৩২০ কোটি ডলারের বেশি। ফেব্রুয়ারিতে ১৮২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঋণের বিপরীতে পরিশোধ ছিল ২৬৫ কোটি ৬২ লাখ ডলার। এভাবে জুন পর্যন্ত প্রতি মাসেই বিদেশি ঋণ প্রাপ্তির চেয়ে পরিশোধ বেশি ছিল। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা মোট ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ নেন, বিপরীতে পরিশোধ করেন ১ হাজার ৬৭৪ কোটি ডলার। এর ফলে চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে ঋণ নেওয়ার চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে ৩০৫ কোটি ডলার।
ঋণ পরিশোধে এই অতিরিক্ত ৩০৫ কোটি ডলারের জোগান দিতে হয়েছে দেশের ব্যাংকগুলোকে। এর প্রভাব পড়েছে অন্যান্য খাতে। ডলার সংকটের এ সময়টাতে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ায় অনেক ব্যবসায়ী আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারেননি। আবার ডলার সংকটের কারণে নিয়মিত টাকার অবমূল্যায়ন করতে হয়েছে।
২০২২ সালের জুনে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ ছিল ২ হাজার ৫৯৫ কোটি ডলার, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে ঋণ পরিশোধের তুলনায় ঋণ প্রাপ্তি কম থাকায় ধীরে ধীরে তা কমে আসছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৪৩১ কোটি ডলারে। চলতি বছর মার্চে এ ঋণের পরিমাণ আরও কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ২১৮ কোটি ডলারে। এ ঋণের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৪০৮ কোটি ডলার। বেসরকারি খাতের নেওয়া বিদেশি ঋণের মধ্যে ৯৬৯ কোটি ডলার হলো স্বল্পমেয়াদি ট্রেড ক্রেডিট বা বাণিজ্যভিত্তিক ঋণ, এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৮১৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার হচ্ছে ক্রেতা ঋণ বা বায়ার্স ক্রেডিট। মূলধনী পণ্য ও সেবা আমদানির জন্য ব্যবসায়ীরা বিদেশি ব্যাংক থেকে এ ঋণ নিয়েছেন। বাকি ঋণের ৭৮ কোটি ৬৪ লাখ ডলার ডেফার্ড পেমেন্ট বা বিলম্বিত দায় এবং বিদেশি ব্যাক টু ব্যাক এলসি ৭৭ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। সরাসরি স্বল্পমেয়াদি ঋণ হিসেবে বিদেশি ব্যাংক থেকে ৩৭২ কোটি ৪৮ লাখ ডলার ঋণ এসেছে। সব মিলিয়ে বিদেশি উৎস থেকে দেশের বেসরকারি খাতের নেওয়া ১ হাজার ৪০৮ কোটি ডলার ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ এক বছর, যা বেসরকারি খাতের মোট বিদেশি ঋণের ৬৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। বেসরকারি খাতের নেওয়া বিদেশি ঋণের ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশের মেয়াদ এক বছরের বেশি। ডলারের হিসাবে এ ঋণের পরিমাণ ৮০৯ কোটি ৭৪ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর জুন পর্যন্ত সময়ে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ আরও ৯৫ কোটি ডলার কমে ২ হাজার ১২৩ কোটি ডলারে নেমেছে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬০ কোটি ডলার।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, গত প্রায় দেড় বছর ধরে বাংলাদেশে ডলারের তীব্র সংকট চলছে। অনেক ব্যবসায়ী ও ব্যাংক নির্ধারিত সময়ে বিদেশি ঋণ ও এলসি দায় পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ কমিয়ে আনতে চেয়েছে। অনুরোধ সত্ত্বেও কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণ নবায়ন করেনি। এ কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বেসরকারি খাতের ঋণ ৩০৫ কোটি ডলারের বেশি কমে গেছে। চলতি বছরেও স্বল্পমেয়াদি অনেক ঋণের মেয়াদ পূর্ণ হবে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ঋণ নবায়ন না করলে দেশে ডলার সংকট আরও তীব্র হয়ে উঠবে। পাশাপাশি বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়া ব্যবসায়ীদের বিপদ আরও বাড়বে।
বিদেশি ঋণ পরিশোধের এ চাপ পড়েছে দেশের ব্যাংকিং খাতে। বিদেশি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের ব্যবসায়ীদের দেওয়া ঋণ নবায়ন করতে চাইছে না। বাংলাদেশের বিদ্যমান ডলার সংকট ও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার প্রভাবেও বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ পরিশোধে চাপ বাড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা। এর ফলে নিয়মিত বাণিজ্যের বাইরে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় থেকে এসব বিদেশি ঋণের দায় শোধ করছে ব্যাংকগুলো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উদ্যোক্তারা স্থানীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা ডলারে রূপান্তর করে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করছেন। এতে ঋণগ্রহীতাদের ব্যয়ও ব্যাপক হারে বেড়েছে। টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় পুরনো স্বল্পমেয়াদি এসব ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়তি ব্যয় করতে হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বিদেশি উৎস থেকে নেওয়া স্বল্পমেয়াদি ঋণ পরিশোধ নিয়ে গত বছরের শুরু থেকেই চাপ ছিল। এ চাপের কারণেই দেশে ডলারের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। ২০২২ সালের মধ্যেই বেসরকারি খাতের প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। সরকারি খাতেরও ৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ সৃষ্টি হয়। তবে সরকারি-বেসরকারি ঋণের মেয়াদ পরবর্তীকালে বাড়িয়ে নেওয়া হয়। বেসরকারি খাতের ওইসব ঋণ চলতি বছরেই পরিশোধের চাপ রয়েছে।
২০২৩ সাল শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ২০২৪ সাল শেষে বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৩০ বিলিয়ন ডলারে। তবে এরপরও দেশের ঋণ-জিডিপির অনুপাত সীমার নিচেই থাকবে।
আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী, কোনো দেশের ঋণ-জিডিপির অনুপাত ৭৭ শতাংশের বেশি হলে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধা তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া এমন পরিস্থিতি একটি দেশকে ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে এবং অর্থনীতি ও আর্থিক বাজার ধ্বংসের মুখে ফেলে দিতে পারে। তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের ঋণ-জিডিপির অনুপাত এখনো নিরাপদ সীমায় রয়েছে, প্রায় ৩৭ শতাংশ।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশে যে ডলার সংকট চলছে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ পরিশোধের যে চাপ রয়েছে তা পরিশোধ করা সম্ভব নয়। এজন্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে এসব ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধি করা বা পুনঃতফসিল করার কোনো বিকল্প নেই।
এই সংকটের স্থায়ী সমাধান কী হবে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সংকট সমাধান করতে হলে এফডিআই বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট বাড়াতে হবে। তাহলে দেশের আর্থিক হিসাব ইতিবাচক হবে। এতে ডলারের চাপ কিছুটা কমে আসবে। তবে বিদেশি সংস্থাগুলো সম্প্রতি দেশের ঋণমান কমিয়ে দেওয়ায় এফডিআই ও বিদেশি ঋণ বৃদ্ধি কঠিন হবে বলেও মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।
বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপে আছেন কি না, জানতে চাইলে বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের ব্যাংকের মাধ্যমে বড় অঙ্কের রেমিট্যান্স আসে। এ কারণে বিদেশি ঋণ পরিশোধে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হবে না।
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গত সোমবার রাত থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় এবং বান্দরবান জেলাজুড়ে পানি বাড়তে শুরু করে। সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ ডুবে যাওয়ায় গত মঙ্গলবার সকাল থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে কক্সবাজার ও বান্দরবানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দুদিনেও যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়নি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত তেমন হয়নি। এজন্য পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। তবে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে আরেক পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে। সেখানে গতকাল বুধবার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফেনীতেও প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছে, গতকাল কক্সবাজার, বান্দরবান ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এর পরও গতকাল কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর সমান পানি ছিল। চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান বা কক্সবাজার মহাসড়কেও গতকাল বিকেলে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি ছিল। গতকালও বিচ্ছিন্ন ছিল দুই জেলা। কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করছে না। বান্দরবানসহ অনেক এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট ছিল বন্ধ। নেই বিদ্যুৎ। দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছাতে মাঠে নেমেছে সেনা ও নৌবাহিনী। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বাড়ছে মানুষের ভিড়। গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার থেকে কমে গেছে বৃষ্টি। গতকাল সকাল থেকে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সাঙ্গু নদীর পানি গতকাল দুপুর পর্যন্ত বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বৃষ্টি পুরোপুরি বন্ধ হলে গতকাল রাত থেকে সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমার নিচে চলে আসবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার সঙ্গে বান্দরবানের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশের সঙ্গে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সার্বিক পরিস্থিতি উন্নতির দিকে জানিয়ে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ জানান, গতকাল পর্যন্ত পাহাড়ি ঢল ও পাহাড়ধসে আটজন নিহত হয়েছেন। প্রায় ২২ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। পাহাড়ধসে প্রায় ৪৫০টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লামা উপজেলা। সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পানিতে ডুবে গেছে। খাদ্যগুদামও প্লাবিত হয়েছে। চেষ্টা চলছে যত দ্রুত সম্ভব ত্রাণসামগ্রীসহ অন্যান্য সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়ার। সেনাবাহিনীর সদস্যরা মানবিক সহায়তা ও উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে সাতকানিয়া ও চন্দনাইশে ধীর গতিতে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। কেরানিহাট-বান্দরবান সড়ক ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ডুবে যাওয়া একাধিক স্থানে পানি কমছে। তবে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। সোমবার থেকে উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সাতকানিয়ার চরতীতে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় নৌকাডুবিতে নারী, শিশুসহ চারজন এখনো নিখোঁজ।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘সব ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা বন্যাকবলিত। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষ উদ্ধার এবং তাদের কাছে শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘জানমালের ক্ষতি এড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ি ঢলে নতুন করে আরও অনেক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলার বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও বরকল উপজেলার নিম্নাঞ্চলে নতুন করে অনেক বাড়িঘর ডুবে গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করছে প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। দুর্গম এলাকা হওয়ার কারণে সঠিক তথ্য ও ত্রাণ পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে। জেলায় ২৪২টি আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে চার হাজার মানুষ অবস্থান করছে।
বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদে পানি প্রবেশ করেছে। কৃষিজমির ফসল নষ্ট হয়েছে। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে বন্যাদুর্গতরা। বাঘাইছড়ির প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আক্তার। তিনি জানান, উপজেলায় ২৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে।
বরকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমা বিনতে আমিন জানান, বন্যায় ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৫০ জন কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। উপজেলায় বন্যায় ৩৫টি গ্রামে প্রায় ৮ হাজার ৪০০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।
টানা বর্ষণের ফলে বন্যা পরিস্থিতি সঙ্গে সঙ্গে দুর্গম উপজেলাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকটা বন্ধের পথে। সেই এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সরকারি নম্বর বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
চট্টগ্রামের আরেক উপজেলা ফটিকছড়ির বন্যা পরিস্থিতি নতুন করে অবনতি হয়েছে। উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা হালদা, ধুরুং, সর্তা, গজারিয়াসহ বিভিন্ন নদী-খালের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। বিশেষ করে বিভিন্ন স্থানে ভাঙা বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় এলাকাবাসী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
বন্যার পানিতে এলাকাগুলোর শত শত একর রোপা আমন বীজতলা ও বর্ষাকালীন সবজিক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির রহমান সানি বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে নদীভাঙন, ঝুঁকিপূর্ণ বসতি, মানুষের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য চাওয়া হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ফেনী-বিলোনিয়া সড়কে পানি জমে রাস্তায় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় ফেনীর সঙ্গে পরশুরামের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। দুই উপজেলার প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। তিন দিনের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামীণ সড়ক, মৎস্য খাত ও কৃষি।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান ভূঁইয়া জানান, গতকাল সকালে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ১৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বেড়িবাঁধের তিনটি স্থানে ভেঙে ফুলগাজী ও পরশুরামের অন্তত ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে আগামীকাল শুক্রবার নাগাদ ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
আবহাওয়া সংস্থার তথ্যের বরাতে সংস্থাটি বলছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদীর পানি বাড়ছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর (সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, সারিগোয়াইন, ঝালুখালী, ভোগাই-কংশ, সোমেশ্বরী, যদুকাটা) পানি ক্ষেত্রবিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে চলছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হচ্ছে। সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হচ্ছে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়ের হওয়া মামলায় আসামি যাদের করা হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন দেশের বাইরে। আবার অনেকে মারাও গেছেন। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে দেশ-বিদেশে। পাশাপাশি এসব কা- নিয়ে পুলিশও বিব্রত। পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও একটি বিশেষ বার্তা গেছে পুলিশের সব ইউনিটপ্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের কাছে। তাড়াহুড়া বা অতি উৎসাহী হয়ে মামলা না নিতে বলা হয়েছে বার্তায়। এমনকি প্রবাসী ও মৃত ব্যক্তিরা কীভাবে মামলার আসামি হয়েছেন, সে জন্য তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গায়েবি মামলা ও আসামিদের নিয়ে সমালোচনা ওঠায় আমরা বিব্রত। পুলিশ তাড়াহুড়া করে কেন মামলা নিল, সে বিষয়ে তদন্ত করছি। সম্প্রতি পুলিশের ইউনিটপ্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের কাছে এর ব্যাখা চাওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। তাড়াহুড়া বা অতি উৎসাহী মামলা নেওয়া যাবে না। যারা গায়েবি আসামি ও মামলা করেছে, তাদের বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হবে। তবে আন্দোলনের নামে সরকারবিরোধীরা কোনো বিশৃঙ্খলা করলে অবশ্যই কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেবে তা আমরা নিশ্চিত।’
আইজিপি বৈঠকে বলেছেন, দেশের শান্ত পরিবেশ যাতে কেউ অশান্ত করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন; বিশেষ করে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের এলাকাভিত্তিক তালিকা করে তাদের শক্তভাবে মোকাবিলা করতে হবে। হুটহাট করে পুলিশকে গুলি করতে বারণ করা হয়েছে। যেখানে লাঠিচার্জ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে, সেখানে গুলি করা যাবে না। তবে গুলি বা টিয়ারসেল নিক্ষেপ করলে অবশ্যই ঊর্ধ্বতনদের অনুমতি নিয়ে তা ব্যবহার করতে হবে।
পুলিশ সূত্র জানায়, মামলাগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামের কয়েকটি মামলা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে চন্দনাইশ থানায় যুবলীগের এক নেতার দায়ের হওয়া মামলায় বলা হয়েছে, ২৭ জুলাই বিএনপির শতাধিক নেতা যুবলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মঞ্জুর মোর্শেদ চৌধুরী ও সাইফুল করিমসহ অন্তত ১২০ জনকে আসামি করা হয়। মোর্শেদ চৌধুরী ও সাইফুল করিম ঘটনার সময় হজে ছিলেন। এই তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি আলোচনায় আসে পুলিশের বৈঠকে। পুলিশের একটি ইউনিট গোপনে তদন্ত করে সত্যতা পেলে পুলিশ সদর দপ্তরকে অবহিত করে। তারা প্রায় ৩৫ দিনের মতো সৌদি আরব ছিলেন। তারা হজ শেষে দেশে আসেন ৩০ জুলাই। পুলিশের ওই ইউনিটটি তদন্ত করে আরেকটি মামলার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে ২৭ জুলাই চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় একটি মামলা করেন ছাত্রলীগ নেতা আয়মান আওসাফ চৌধুরী। মামলায় বিএনপির ও অঙ্গসংগঠনের ১২১ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে বিএনপির সদস্য সচিব গিয়াস উদ্দিন ঘটনার সময় ঢাকায় ছিলেন। অথচ তাকে বলা হয়েছে, ২৬ জুলাই হাটজাহারী এলাকায় নাশকতা করেছেন। গত ৩০ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার বানিয়ানগর এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায় বিএনপি। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা খায়ের উদ্দিন বাদী হয়ে সূত্রাপুর থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। এজাহারে আসামি করা হয় বিএনপির কয়েকজন নেতাকে। তারা ঘটনার সময় দেশের বাইরে ছিলেন। তিন মাস আগে জয়পুরহাটে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষের সময় নাশকতা চালায় বিএনপি। এ ঘটনায় সদর থানায় মামলায় স্থানীয় বিএনপি নেতাদের আসামি করা হয়। কিন্তু গোয়েন্দারা তদন্ত করে অনেকটা নিশ্চিত করে ঘটনার সময় এলাকায় কোনো সংঘর্ষ হয়নি। গত ২৩ মে রাজধানীর শ্যামপুরে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের অর্ধশত নেতা-কর্মীর ওপর হামলা চালায় বিএনপি। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলেও তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ ওই সময় কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। মাস দুয়েক আগে নোয়াখালীতে একটি মামলায় বিএনপি নেতা ফকরুল ইসলাম ফারুকসহ ৯৩ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। তবে আসামিরা অভিযোগ করেছেন, দায়ের হওয়া মামলার মধ্যে অন্যতম আসামি নিজাম উদ্দিন দিপু মারা গেছেন। মৃত অবস্থায় তিনি নাশকতা করেছেন। সংঘর্ষে জড়িত ছিলেন। ২০১৮ সালের ২০ আগস্ট তিনি মারা গেছেন বলে নেতারা দাবি করেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আসলে গায়েবি মামলা হচ্ছে কি না, সেই বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আর তদন্তে এ ধরনের ঘটনার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে যারা নাশকতা ও বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
একই কথা বলেছেন কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার। তারা দেশ রূপান্তকে বলেন, অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ কর্মকর্তা এসব মামলা নিয়ে পুরো বাহিনীর বদনাম করছে। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আর না হয় এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়বে। রাজনৈতিক মামলা নিয়ে যাতে কোনো সমালোচনা না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপাররা আরও জানান, যেসব গায়েবি মামলা ও আসামি আছে, সেগুলোর বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। মামলার কোনো বাদীর ইচ্ছে করে এসব কা- করার প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ নিয়েও তারা কাজ করছেন।
দেশে এ বছর প্রথমবারের মতো ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৩৫০ ছাড়াল। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ১২ জন মারা গেছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় সাতজন ও ঢাকার বাইরে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৫২ জনে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ঢাকায় ২৭৬ ও ঢাকার বাইরে ৭৬ জন।
এ মাসে গত ৯ দিনেই মারা গেছে ১০১ জন, যা মৃত্যুর ২৯ শতাংশ। অথচ এ বছর এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ আক্রান্তের মাস গত জুলাইয়ে মৃত্যু ছিল ২০৪ জন, যা সে সময় পর্যন্ত মৃত্যুর ৮১ শতাংশ। গত মাসের প্রথম ১০ দিনে মৃত্যু ছিল ৬৪ জন, কিন্তু এ মাসের ৯ দিনেই ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। সে হিসেবে মৃত্যুর এই গতি অব্যাহত থাকলে মাস শেষে মৃত্যু ৫৫০ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় এ বছরের এক দিনে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এই প্রথম ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৮০০-এর ঘরে ওঠার রেকর্ড হয়েছে। এর আগে সর্বোচ্চ রোগী ভর্তির রেকর্ড ছিল গত ৬ আগস্ট ২ হাজার ৭৬৪ জন।
এমনকি রোগীর সংখ্যা ৭৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৬৯ জনে। তাদের মধ্যে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ঢাকায় ৩৮ হাজার ৮১৪ জন, যা আক্রান্তের ৫২ শতাংশ। বাকি ৩৬ হাজার ২৫৫ জন বা ৪৮ শতাংশ রোগী ঢাকার বাইরে।
বয়স্করা আক্রান্ত কম, মৃত্যু বেশি : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুর তথ্যবিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ বছর এখন পর্যন্ত আক্রান্তের তুলনায় বয়স্ক মানুষের মৃত্যু বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে ৬১-৮০ ঊর্ধ্ব বয়সী ৩ হাজার ১১৫ জন, যা মোট আক্রান্তের ৪ শতাংশ। কিন্তু এই বয়সী মানুষ মারা গেছে ৬৩ জন, যা মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। বয়স্ক মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ৬১-৬৫ বছর বয়সীরা ২৫ জন। এরপর ৬৬-৭০ বছরের মধ্যে ১৬ জন, ৭১-৭৫ বছরের মধ্যে ১০ জন বা ৩ শতাংশ এবং ৭৬-৮০ বছর ও ৮০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী মানুষ ৬ জন করে ১২ জন মারা গেছে।
নারী আক্রান্ত কম, মৃত্যু বেশি : এ পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে পুরুষের তুলনায় নারীদের বেশি মৃত্যু হয়েছে। অথচ আক্রান্তে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা কম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুর তথ্য-বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছর এ পর্যন্ত হাসপাতালে ২৭ হাজার ৭১৮ জন নারী ভর্তি হয়েছে, যা ভর্তি রোগীর ৩৭ শতাংশ। অথচ মারা গেছে ১৯৯ জন, যা মোট মৃত্যুর ৫৭ শতাংশ। অন্যদিকে, পুরুষ রোগীদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৫১ জন, যা ভর্তি রোগীর ৬৩ শতাংশ। অর্থাৎ ভর্তি পুরুষ রোগীর সংখ্যা নারী রোগীর চেয়ে ২৬ শতাংশ কম। কিন্তু পুরুষ রোগী মারা গেছে ১৫৩ জন বা ৪৩ শতাংশ, যা নারীর মৃত্যুর চেয়ে ১৪ শতাংশ কম।
আগস্টে ডেঙ্গুর রেকর্ডের শঙ্কা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের : দেশে এ মাসে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের রেকর্ডের শঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, জুন মাসের তুলনায় দেশে জুলাই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার অনেক বেশি ছিল। এমনকি আগস্ট মাসে এসেও ডেঙ্গু সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে, যা দেশে ডেঙ্গুর অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করতে পারে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঢাকা সিটিতে ডেঙ্গু সংক্রমণ স্থিতিশীল থাকলেও ঢাকার বাইরে আক্রান্তের হার এখনো বাড়ছে। আগস্ট মাসের গত আট দিনেই ২০ হাজার ৩৯৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে, যেখানে আমাদের গত জুলাই মাসে ছিল ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন। যেহেতু ঢাকার বাইরে রোগী বাড়ছে, সেহেতু আগস্ট মাসে এ হারে যদি সংক্রমণ বাড়ে এবং যদি স্থিতিশীলতা না আসে, তাহলে আগস্ট মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার অন্যান্য সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি হতে পারে।
এই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা শহরের সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল ও ডিএনসিসি হাসপাতাল। এর মধ্যে ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে এখনো অসংখ্য বেড খালি রয়েছে। সেখানে এখন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে রোগী এলে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে পারছে।
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। গত মঙ্গলবারের ওই ঘোষণার ফলে, আগামী পাঁচ বছর তিনি আর নির্বাচন করতে পারবেন না। তার সংসদ সদস্য পদও থাকবে না। এদিকে এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গতকাল বুধবার দেশটির সংসদ ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। গতকাল রাত থেকেই সেটি কার্যকর হওয়ার কথা। এর ফলে আগামী তিন মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন করবে দেশটির নির্বাচন কমিশন। ধারণা করা হচ্ছে, সাজার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আপিল করলেও অবধারিতবাবেই ওই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না ইমরান। শুধু আগামী নির্বাচনেই নয়, পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎই পড়েছে চরম অনিশ্চয়তার মুখে।
বিবিসি জানাচ্ছে, গত শনিবার তোশাখানা মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড হয় ইমরানের। রায় ঘোষণার কিছু সময় পরেই গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। কিন্তু এবার গ্রেপ্তারের পর পাকিস্তানের পরিস্থিতি ছিল আগেরবারের তুলনায় পুরো উল্টো। গত মার্চে তাকে যখন আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তখন তার সমর্থকদের বিরোধিতা ও বিক্ষোভে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে অন্তত দশজন নিহত হয়েছিল। বিবিসি বলছে, চলতি বছর ৯ মে এবং গত ৫ আগস্টের মধ্যে বিশাল বৈপরীত্য দেখা গেছে। ইমরান খানের প্রথম দফা গ্রেপ্তারের ফলে পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় ভবন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। রাস্তায় নেমে আসা কর্মী-সমর্থকদের মুখে ছিল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সেøাগান। কিন্তু দ্বিতীয় গ্রেপ্তারের পর তার কিছুই ছিল না। গ্রেপ্তারের পর তাকে নেওয়া হলো কুখ্যাত এক কারাগারে। দেওয়া হলো দ্বিতীয় শ্রেণির বন্দির সুবিধা। তাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হলো। কিন্তু তার দল পিটিআইর কর্মীরা এখনো নিরুত্তাপ।
সম্প্রতি বিবিসি নিউজের পাকিস্তান সংবাদদাতা ক্যারোলাইন ডেভিসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের নজরদারির ভয়ে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানের ভাষণের ভিডিও এড়িয়ে চলছেন তার অনেক সমর্থক। অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় পিটিআই নেতা নিয়ে পোস্ট করা বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তারা পুরনো পোস্টও মুছে ফেলছেন।
বিবিসি বলছে, ইমরান খানের দলের উচ্চপর্যায়ের অনেক নেতা, যারা এ বছরের শুরুর দিকেও তাকে ঘিরে থাকতেন, তারা দল ছেড়ে চলে গেছেন। দলে আরও যারা নেতা রয়েছেন তারা গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য লুকিয়ে রয়েছেন। ফলে ইমরান খানের দল পিটিআইর পক্ষে কার্যকর একটি রাজনৈতিক আন্দোলনে যাওয়া সহজ হবে না।
ওয়াশিংটনে গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, খান (ইমরান) বলেছিলেন যে, তিনি নির্বাচিত হতে পারেন কি না পারেন, তার দল পিটিআই টিকে থাকবে এবং উন্নতি করবে। তবে এটি এখন বাস্তব পরিস্থিতি থেকে অনেক দূরে। এখন বড় প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচন সামনে রেখে পিটিআইর অবশিষ্ট নেতৃত্ব এখন দলটিকে কীভাবে সংগঠিত করার চেষ্টা করবে? তারা কি তাদের সমর্থকদের রাজপথে নামানোর চেষ্টা করবেন? সেটা কি সফল হবে? এটা হবে বেশ বড় পরীক্ষা।
আসলে ইমরান খানকে কেন্দ্র করেই পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই গড়ে উঠেছে। তিনিই এই পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এমনকি ব্যালট পেপারে এই দলের যে লোগো ছাপা হয়, তাতেও ক্রিকেট ব্যাটের ছবি যা ইমরান খানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের কথাই তুলে ধরে। কিন্তু ক্রিকেটের চ্যাম্পিয়ন ইমরান এবার হয়তো রাজনীতির মাঠে পরাজিত এক খেলোয়াড় হিসেবেই মিশে যাবেন কালের অতলে।
যদিও ইমরান বরাবরই তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন। আর পাকিস্তান সরকার এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাচন কমিশনের এই ঘোষণার আগে পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব বিবিসিকে বলেছেন, আইন অনুযায়ী আপনি আপনার কর্মের জন্য দায়ী থাকবেন। এখানে রাজনীতির কিছু নেই। আদালত একজন ব্যক্তিকে দোষীসাব্যস্ত করলে তাকে গ্রেপ্তার তো হতেই হবে।
৭০ বছর বয়সী ইমরান খান ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু গত বছর শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ার পর সংসদে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারান। গত বছর এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খান আগাম নির্বাচনের দাবি তুলে আন্দোলন করে যাচ্ছিলেন। তিনি সরকার এবং পাকিস্তানের খুবই ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা অব্যাহত রাখেন এবং তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করেন।
গত বছর নভেম্বরে একটি রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নেওয়ার সময় ইমরান খানের প্রাণনাশের চেষ্টার সময় তার পায়ে গুলি লাগে, সেই ঘটনার জন্যও তিনি উচ্চপদস্থ সরকারি এবং সেনা কর্মকর্তাদের দায়ী করেন।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করা হয়েছে। পাকিস্তানে বিরোধী রাজনীতিকদের প্রায়ই এ ধরনের মামলার মুখে পড়তে হয়। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, সে দেশে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনে সরকার আদালতকে ব্যবহার করে।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।