
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি-জামায়াত বলে, তারা আন্তর্জাতিক শক্তি পায়। কোন শক্তিটা আছে, সেটাই আমরা জানতে চাই। কোনো শক্তি নেই তাদের সঙ্গে। লুটেরাদের সঙ্গে কেউ থাকে না।’ গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি-জামায়াতের বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই খুনি, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, জঙ্গি, মানুষ হত্যাকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি বিএনপি থেকে দেশবাসী সাবধান!’ তিনি বলেন, ‘আর জামায়াত বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধী তারা যে অপরাধ করেছে, তাদের আমরা শাস্তি দিয়েছি। তাদের থেকেও দেশবাসী যেন সাবধান থাকে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশবাসীকে বলবে, গণতন্ত্র ওদের মুখের কথা, ওরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসও করে না; ওরা দেশে গণতন্ত্র রাখবেও না। ওরা দেশকে আবার ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে।’
বিএনপি-জামায়াতের বিষয়ে দেশবাসীকে সজাগ করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দেশের মানুষকে সজাগ করতে হবে। ওরা সর্বনাশ ছাড়া দেশকে কিছু দিতে পারে না।
২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশের উত্তরণ নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের ভোট চুরি করা লাগে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য কাজ করে। মানুষের জন্য কাজ করে জনগণের মন জয় করে আওয়ামী লীগ বারবার ক্ষমতা এসেছে।
বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা সরকার উৎখাত করতে চায়। তার মানে আবার অন্ধকার যুগে ফিরতে চায়।
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবির কড়া সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে তত্ত্বাবধায়কের জন্য তারা আন্দোলন করে। ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া রাজি ছিলেন না। খালেদা জিয়া বলেছিলেন পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ হয় না। আমার প্রশ্ন, তারা কি এখন (তত্ত্বাবধায়কের জন্য) পাগল ও শিশু খুঁজে পেয়েছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) বাস্তবায়ন। সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন’ করার কাজে হাত দেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। বিষয়টি সর্বমহলে প্রশংসিত হলেও এতদিন ‘হচ্ছে আর হবে’-এর মধ্যে ঝুলে ছিল। মুহিত আজ বেঁেচ না থাকলেও তার কর্মসূচি বাস্তব রূপ পেতে যাচ্ছে। ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
এ কর্মসূচি শুরুতে ঐচ্ছিক হলেও পাঁচ বছর পর থেকে তা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই সারা দেশে একযোগে ‘সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা’ চালু করতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের বিশেষ নির্দেশ দেন। প্রস্তুতি শেষ করা সম্ভব না হওয়ায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে কয়েকটি জেলায় এবং কয়েকটি দেশের প্রবাসীদের জন্য চালু করা হতে পারে।
গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। শুরুতে কয়টা স্কিম থাকবে এবং কোন এলাকার মানুষ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে, তা নিয়ে একেবারে শেষ সময়েও কাজ চলছে।
সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু হলে এর সুফল পাবেন সাধারণ মানুষ। চাঁদাদাতাদের স্মার্ট কার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।’
সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা কী
কোনো ব্যক্তিকে মাসিক পেনশন সুবিধা পেতে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর নিয়মিত কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। ১৮ বছর থেকে শুরু হবে, ৬০ বছর বয়সে গিয়ে চাঁদা দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। তারপর ৬০ থেকে তিনি যতদিন জীবিত থাকবেন, ততদিন পেনশন সুবিধা পাবেন। তবে ৫০ বছর পার হওয়ার পর কেউ চাঁদা দেওয়া শুরু করলে ১০ বছর পার হওয়ার পর তিনি পেনশন পাবেন।
গত ২৪ জানুয়ারি সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩’ পাস হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠনের আদেশ জারি করা হয়।
কারা অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন
দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী নাগরিকের জন্য ছয় ধরনের স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন আইনের বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। স্কিমগুলো হলো, বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক চাকরিজীবী পেনশনার, প্রবাসী/অনিবাসী পেনশনার, শ্রমিক শ্রেণি, অপ্রাতিষ্ঠানিক জনগোষ্ঠী, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিভুক্ত জনগোষ্ঠী এবং শিক্ষার্থী। প্রস্তুতি শেষ না হওয়ায় আপাতত চার শ্রেণির জনগোষ্ঠীর জন্য চার ধরনের পেনশন কর্মসূচি চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ চার শ্রেণি হলো প্রবাসী বাংলাদেশি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, স্বকর্মে নিয়োজিত ও অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
তাদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চারটি স্কিম বা কর্মসূচিতে ভাগ করা হয়েছে পুরো পেনশনব্যবস্থা। এ চারটি স্কিম হলো প্রবাসীদের জন্য ‘প্রবাস’, বেসরকারি কর্মচারীদের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে যারা নিয়োজিত আছে যেমনÑ কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি তাদের জন্য সুরক্ষা। আর হতদরিদ্র মানুষের জন্য আছে ‘সমতা’।
সরকার ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা এ কর্মসূচির আওতাভুক্ত হবেন না। এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের অন্তর্ভুক্ত নাগরিকদের এ ব্যবস্থায় রাখা হবে না। তবে সর্বজনীন নিরাপত্তা বলয়ের সুবিধাভোগী কেউ তার এসব সুবিধা সমর্পণ করে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
বয়স সীমা
আইন অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে সর্বজনীন পেনশনে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব বাংলাদেশি নাগরিক অংশ নিতে পারবেন। বিশেষ বিবেচনায় পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদেরও পেনশন স্কিমের আওতায় রাখার ব্যবস্থা থাকবে। ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত চাঁদা দিয়ে যেতে হবে। তার জমা টাকা মুনাফাসহ মাসিক পেনশন হিসেবে দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে মুনাফার হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ শতাংশ।
৫০ বছরের বেশি বয়সীরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। তারা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার পর পেনশন সুবিধা পাবেন।
যেভাবে নিবন্ধন
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, নিবন্ধিত মোবাইল ফোন নাম্বার দিয়ে নিবন্ধন নিতে হবে। ঘরে বসে সবাই যাতে নিবন্ধন করতে পারেন, সেজন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। প্রবাসীরা বিদেশ থেকে অ্যাপ ব্যবহার করে নিবন্ধন নিতে পারবেন। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়েও নিবন্ধন করা যাবে। নিবন্ধন সম্পন্ন হলে প্রত্যেকে একটি ১৮ সংখ্যার ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার পাবেন। কর্তৃপক্ষ এ নাম্বারে হালনাগাদ তথ্য পাঠাবে।
যেভাবে দেওয়া যাবে চাঁদা
প্রতিটি স্কিম হবে স্বতন্ত্র। সব স্কিমে একটি নূ্যূনতম চাঁদার হার নির্ধারিত থাকবে। এ ছাড়া থাকছে আরও দুটি হার। কেউ চাইলে তিনটি যেকোনো একটি চাঁদার হার গ্রহণ করতে পারবে। কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত তহবিলে যার যত বেশি চাঁদা জমা পড়বে, তার আর্থিক সুবিধা পাওয়ার হারও তত বেশি হবে। স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরও চাঁদার হার এবং স্কিম পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে। সব স্কিমের জন্য গ্রাহকরা মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে চাঁদার কিস্তি পরিশোধ করতে পারবে। চাঁদাদাতা মাসের নাম উল্লেখ করে পেনশন তহবিলে অগ্রিম চাঁদা জমা দিতে পারবেন। বার্ষিক ন্যূনতম চাঁদা দিতে না পারলে স্কিম স্থগিত হবে। পরে বিলম্ব ফিসহ নিয়মিত চাঁদা দিয়ে চালু করতে হবে।
সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলবে। যেসব প্রবাসী বাংলাদেশির জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তারা বৈধ পাসপোর্ট দিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেল, অনুমোদিত মোবাইল আর্থিক পরিষেবা এবং এক্সচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা দিয়ে যোগদান করতে পারবেন। আর দেশে বসবাসকারীরা সরাসরি ব্যাংক হিসাবে কিংবা বিকাশ, নগদসহ যেকোনো মোবাইল আর্থিক পরিষেবার মাধ্যমেও চাঁদা দিতে পারবে।
থাকবে নমিনি
পেনশন পাওয়া অবস্থায় কেউ মারা গেলে তিনি যাকে নমিনি করবেন, তিনি ওই ব্যক্তির ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত পেনশন পাবেন। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, কোনো পেনশনভোগী ব্যক্তি যদি ৬৫ বছর বয়সে মারা যান, তাহলে তার নমিনি আরও ১০ বছর পেনশন সুবিধা পাবেন। পেনশনধারী জীবিত থাকলে মৃত্যুর আগপর্যন্ত এ সুবিধা পাবেন।
আবার কেউ যদি চাঁদা দেওয়াকালীন মারা যান, কিন্তু তার বয়স ৬০ বছর হয়নি, তাহলে ওই ব্যক্তির নমিনি জমা করা টাকা এবং এককালীন সুবিধা পাবেন। পেনশন পাবেন না। যেমন কোনো ব্যক্তির বয়স ২০ বছর হলো এবং এ পেনশনের জন্য চাঁদা দিচ্ছিলেন, তিনি যদি ৩০ বছর বয়সে মারা যান, তাহলে তার নমিনি ওই ব্যক্তির জমা করা টাকা এবং এককালীন সুবিধা পাবেন।
চার স্কিমের চাঁদা ও সুবিধা
প্রবাস স্কিমে মাসিক ন্যূনতম চাঁদা ৫ হাজার, সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানরত যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা দিয়ে এ স্কিমে যোগ দিতে পারবেন। দেশে ফিরলে তারা দেশীয় মুদ্রায় চাঁদা পরিশোধ করতে পারবেন অথবা স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন। পেনশন স্কিমের মেয়াদ শেষে সরকার স্থানীয় মুদ্রায় পেনশন দেওয়া হবে।
‘প্রগতি’ স্কিমে বেসরকারি কর্মচারীরা মাসিক ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে প্রগতি স্কিমে যুক্ত হতে পারবেন। কোনো বেসরকারি কোম্পানির এ স্কিমে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে চাঁদার ৫০ শতাংশ কর্মীরা এবং বাকি ৫০ শতাংশ কোম্পানি পরিশোধ করবে।
‘সুরক্ষা’ স্কিমে অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। এ স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ন্যূনতম ১ হাজার, সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা।
অতিদরিদ্রদের জন্য ‘সমতা’ স্কিমে চাঁদার পরিমাণ মাসে ১ হাজার টাকা। এর মধ্যে চাঁদাদাতা প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে দেবেন। বাকি ৫০০ টাকা সরকার পরিশোধ করবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুযায়ী অতি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী ব্যক্তিরা এ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
এ স্কিমের আওতায় ১৮ বছর বয়সে অন্তর্ভুক্ত হয়ে মাসে ৫০০ টাকা চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা পেনশন পাওয়া যাবে। আর ৫০ বা তদূর্ধ্ব বয়সীরা অন্তত ১০ বছর ধরে মাসে ৫০০ টাকা চাঁদা দিয়ে, ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক ১ হাজার ৫৩০ টাকা করে পেনশন পাবেন।
চাঁদার ৫০ শতাংশ ঋণ নেওয়া যাবে
জমাকৃত অর্থ একবারে উত্তোলন করা যাবে না। তবে চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার জমা করা অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ নিতে পারবেন। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়া যাবে এবং মাসিক পেনশন বাবদ পাওয়া অর্থ করমুক্ত থাকবে।
শুরুতে কোন এলাকায়
উদ্বোধনের দিন কিছু গ্রাহক অনলাইনে পেনশন কর্মসূচিতে চাঁদা দিয়ে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। পাবনা, গোপালগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, বরগুনা, সিলেট, বাগেরহাট, রংপুর ও ময়মনসিংহ থেকে তালিকা চেয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। ১২ আগস্টের মধ্যে এ তালিকা দিতে বলা হয়েছে। আগ্রহী প্রবাসীদের তালিকা চেয়ে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের দূতাবাসে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সারা দেশে চালু করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে। প্রস্তুতি চলছে। এখনো সময় আছে আরও কয়েক দিন। প্রস্তুতি শেষ না হলে প্রথম ধাপে পাইলট প্রকল্প হিসেবে কিছু এলাকায় এ সুযোগ থাকবে। পরে বাড়ানো হবে।
এ কর্মসূচির বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উদ্যোগটি ভালো। তবে সরকার প্রস্তুতি শেষ না করে শুরু করতে চাচ্ছে। নির্বাচনের আগে সরকার জনপ্রিয়তা বাড়াতে বেশি তাড়াহুড়া করে ফেলছে। এতে সরকার ও জনগণ উভয়ের স্বার্থ বিঘ্নিত হতে পারে।’
চীনে তিন ধরনের পেনশনব্যবস্থা চালু রয়েছে। শহরে কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য আরবান পেনশন সিস্টেম (ইউপিএস), সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সিভিল ও পাবলিক সার্ভিস পেনশন সিস্টেম (সিপিএসপিএস) এবং গ্রামে বেসরকারি চাকরিতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য রুরাল পেনশন সিস্টেম (আরপিএস) চালু আছে। যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয়, পেশাগত, ব্যক্তিগত ও আনফান্ডেড এ চার ধরনের পেনশনব্যবস্থা আছে। যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সামাজিক নিরাপত্তা, চাকরিভিত্তিক, আনফান্ডেড এবং ব্যক্তিগত পেনশন। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে বাজেট থেকে সবাইকে পেনশন দেওয়া হয়। জাপান, হংকং, কোরিয়া ও তাইওয়ানের পরিস্থিতিও উন্নত দেশগুলোর মতোই। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম পেনশন সংস্কার করছে। ফিলিপাইন, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়াও অংশগ্রহণমূলক পেনশনব্যবস্থা শুরু করেছে।
মাওলানা আবদুল মান্নান এমপিওভুক্ত একটি বেসরকারি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন ৩২ বছর। শিক্ষকতার পাঠ চুকিয়ে অবসরে গেছেন পাঁচ বছর হলো। কিন্তু পেনশনের টাকার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন, কূল-কিনারা পাচ্ছেন না। আশ্বাসেই কাটে দিন।
শুধু এ শিক্ষকই নন, হাজারো সরকারি কর্মচারীকে চাকরি জীবন শেষে সরকারি দপ্তরে এই কর্মকর্তা-ওই কর্মকর্তার কক্ষে কক্ষে ঘুরতে হচ্ছে। সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছেই পেনশনের ভোগান্তির চিত্রটা চিরচেনা।
এর মধ্যে নতুন করে চালু হচ্ছে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা। পেনশন পেতে সরকারি দপ্তরে এখন ভোগান্তি চিত্র তাই সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী নাগরিক রয়েছেন, ১০ কোটি ৫০ লাখ ৫৪ হাজার ৫৪ জন। এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন ১৪ লাখ। এদের বাদ দিলে প্রায় ১০ কোটি ৩৬ লাখ মানুষকে নিয়ে পেনশনের এ পরিকল্পনা সাজাতে হচ্ছে সরকারকে।
সরকারের এ উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে বেসরকারি খাতের কর্মজীবীরা বলছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানই তাদের জন্য বড় বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারি খাতে সমস্যা না হলেও বাধা আসতে পারে বেসরকারি খাত থেকে। কারণ দেশে বেসরকারি খাতের বেশিরভাগ কোম্পানিই ছোট। অনেক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপত্রও দেওয়া হয় না। এ অবস্থায় বেসরকারি চাকরিজীবীদের প্রস্তাবিত পেনশন সুবিধার আওতায় আনা কঠিন হবে। তবে সীমিত আকারে চালু করা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, ১৭ আগস্ট সার্বজনীন পেনশনটি উদ্বোধন করা হবে। কিন্তু অ্যাপভিত্তিক কোনো পরিকল্পনা সাজানো হয়নি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডিজিটাল পেমেন্টের বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া দরকার।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখন সরকার যেটি করবে সেটি রেজিস্ট্রেশনে এনআইডির সঙ্গে মিল রেখে ডিজিটালি করা হবে। এখন ডিজিটাল টেকনোলজির সুযোগটা নিতে হবে। তিনি বলেন, এসব ব্যবস্থাপনা যেহেতু এটি এখনো ভলেন্টারি, কাউকে বাধ্য করা হচ্ছে না। সেগুলোর প্রস্তুতির ব্যাপার থাকবে। যে অ্যাপটির কথা বলা হচ্ছে, সেটা যাতে ১০ বছর পর যাতে ডিজিটাল টেকনোলজি ব্যবহার করে সেগুলো দেওয়া যায়। হয়রানি যাতে না হয়, গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে যাতে সঙ্গে সঙ্গে চলে যায়।
পেনশন খাতে ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে এবং স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে বিদ্যমান পেনশনব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কারের অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, উদ্যোগ ভালো, তবে বাস্তবায়ন কঠিন হবে।
এদিকে প্রস্তাবিত পেনশনব্যবস্থার বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা না থাকায় সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি পেনশন অ্যাকাউন্ট থাকবে। কেউ চাকরি পরিবর্তন করলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে। মাসিক সর্বনিম্ন জমার অর্থ নির্ধারিত থাকবে। তবে প্রবাসীরা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে অর্থ জমা দিতে পারবেন। অর্থ জমা দিতে ব্যর্থ হলে হিসাব সাময়িক বন্ধ থাকবে। পরে জরিমানাসহ বকেয়া দিয়ে হিসাব চালু করতে পারবেন। কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিলে নাগরিকরা পেনশন পাওয়ার যোগ্য হবেন। ৬০ বছর পূর্তিতে তারা নির্ধারিত হারে পেনশন পাবেন এবং মৃত্যুর আগপর্যন্ত তারা এ সুবিধা পাবেন। ৭৫ বছর বয়সের আগে কেউ মারা গেলে তার নমিনি পেনশন সুবিধা পাবেন। সে ক্ষেত্রে নমিনি ৭৫ বছর পর্যন্ত পেনশন পাবেন। তবে জমাকারীর অবর্তমানে এককালীন টাকা তোলার সুযোগ থাকবে না।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া নাগরিকদের জমা দেওয়া চাঁদার বিপরীতে ৮ শতাংশ হারে সুদ দেবে সরকার। তবে বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা পরিশোধ করে প্রবাসীরা অতিরিক্ত ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন। নির্ধারিত সুদহারের বাইরে রেমিট্যান্সের মতো প্রণোদনার সুবিধা থাকায় এই পেনশন স্কিম প্রবাসীদের জন্য নিরাপদ সঞ্চয় ও ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে বলে মনে করছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা আশা প্রকাশ করে বলছেন, ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তার কারণে প্রবাসীদের পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে উৎসাহিত করবে। এ ছাড়া সংকটকালে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াবে।
সরকারি চাকরি ও পেনশন ব্যবস্থায় যারা অন্তর্ভুক্ত নন, প্রাথমিকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় এমন চারটি শ্রেণিকে যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রবাসীরা অন্যতম।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই বিদেশ থেকে দেশে থাকা ভাই, বোন, এমনকি বাবার কাছে টাকা পাঠিয়েও প্রতারিত হচ্ছেন। দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে এসে নিজেদের নিঃস্ব অবস্থায় দেখতে হচ্ছে প্রতারণার শিকার এসব ব্যক্তিকে। সর্বজনীন পেনশনে অংশগ্রহণ করলে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না তাদের। তাই পেনশন স্কিমে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তারা নিজেরা যেমন উপকৃত হবে, একইভাবে দেশে বিদেশি মুদ্রার সংকট কাটাতেও ভূমিকা রাখতে পারবেন।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল মালেকের কথাই ধরা যাক। ১৯৯৪ সালে স্থানীয় একটি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাস করে তিনি পাড়ি জমান সৌদি আরব। বাবা বরকত উল্লাহ ১৯৯৫ সালে মারা যাওয়ায় পরিবারের হাল ধরতেই দেশে চাকরির চেষ্টা না করেই মালেক বিদেশে পাড়ি জমান। বড় ভাই আবদুল খালেক বাড়ির পাশেই একটি চায়ের দোকান চালান। বাড়িতে একমাত্র পুরুষ হিসেবে বড় ভাইয়ের কাছেই আয়ের অর্থেও সবটাই পাঠাতেন মালেক। ২০১০ সালে স্থানীয় বাজারে একটি দোকান বিক্রি হওয়ার খবর দেন বড় ভাই খালেক। তার পরামর্শে ২০ লাখ টাকায় ওই দোকান কেনার সিদ্ধান্ত নেন মালেক। দায়িত্ব দেন বড় ভাইকে। দোকান কেনা হয়।
আবদুল মালেক ২০১৩ সালে বাড়ি ফিরে বিয়ে করেন। ছয় মাস পর আবার পাড়ি জমান সৌদি আরব। যথারীতি বাড়ির সব দায়িত্ব বড় ভাই পালন করেন। এরপর ২০১৫ সালে তিন লাখ টাকা দিয়ে বাড়ির পাশে একখ- জমি কেনেন। ২০২০ সালে সৌদিতে মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় বাড়ি ফিরতে হয় মালেককে। প্রথম ছয় মাস সুন্দরভাবে চলছিল তার। কিন্তু দিন যত যাচ্ছিল ততই বড় ভাইয়ের আচরণে পরিবর্তন দেখতে পান। ছয় মাস পর বাজারে নিজের টাকায় কেনা দোকানে নিজেই ব্যবসার সিদ্ধান্ত নেন। আর তখনই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। বাধা হয়ে দাঁড়ান বড় ভাই আবদুল খালেক। দাবি করেন, ওই দোকান মালেকের নয়। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ বসে। তখনই প্রকৃত ঘটনা জানতে পারেন মালেক। অর্থাৎ বিদেশে থেকে যে টাকা পাঠিয়েছেন এবং ওই টাকায় যেসব জমি কেনা হয়েছে সবই তার ভাইয়ের নামে। নিমিষেই নিঃস্ব হয়ে গেলেন ২৫ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে আসা মালেক।
শুধু লক্ষ্মীপুরের আবদুল মালেকই নন, প্রবাসে থেকে এমন প্রতারিত হওয়ার তালিকা অনেক লম্বা। এই প্রতিবেদক এমন অন্তত ১০ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা প্রবাসে থাকা অবস্থায় বিশ^াস করে স্ত্রী, ভাই, বোন, বাবা বা স্বজনদের কাছে টাকা পাঠিয়ে প্রতারিত হয়েছেন।
লক্ষ্মীপুরের আবদুল মালেক বর্তমানে স্থানীয়ভাবে সুপারির ব্যবসা করেন। অল্প পুঁজির কারণে কোনো রকম সংসার চালাচ্ছেন তিনি। জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘বড় ভাইকে বিশ^াস করে বিদেশে আয় করে পুরো টাকাই পাঠিয়েছি দেশে। কিন্তু তিনি প্রতারণা করায় আজ আমি ফকির। এখন আল্লাহর কাছে বিচার দেওয়া ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই।’
চাঁদপুরের জামাল হোসেন প্রতারিত হয়েছে স্ত্রীর কাছে। তিনি বলছিলেন, ‘১৫ বছর বিদেশ করেছি। পুরো টাকাই স্ত্রীকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু দেশে ফিরে আসার সপ্তাহখানেকের মাথায় স্ত্রী অন্য একজনের সঙ্গে পালিয়ে গেছে। দেশে ফিরে স্ত্রীও হারালাম, অর্থকড়ি সবই।’
বাবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন নীলফামারীর মঈন হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো বিদেশে থাকি। গত বছরের ডিসেম্বরে বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি বাবার কাছে জমি কেনার জন্য যে টাকা পাঠিয়েছি সব জমিই তিনি নিজের নামে নিয়েছেন। বাবা মারা যাওয়ায় এখন ৮ ভাই ও দুই বোন সবাই আমার টাকায় কেনা জমির মালিক।’ তবে এতে হতাশ নন এই প্রবাসী। বললেন, ‘অনেকের মতো বাড়ি ফিরে আমি তো নিঃস্ব হইনি। প্রবাসে থেকে এখনো আয় করছি।’
সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হলে বিদেশে থেকে ফিরে অন্তত নিজেদের এমন নিঃস্ব অবস্থায় দেখতে হবে না প্রবাসীদের।
জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশনের আওতায় প্রবাসীদের জন্য ‘প্রবাস’ স্কিম থাকছে। এই স্কিমের অধীনে মাসিক চাঁদার সর্বনিম্ন হার ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সাড়ে সাত হাজার ও সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা হারে চাঁদা দেওয়া যাবে। প্রবাস স্কিমের চাঁদা বিদেশি মুদ্রায় দিতে হবে।
প্রবাসী কেউ যদি ১৮ বছর বয়সে পেনশন হিসেবে সর্বনিম্ন হার ৫ হাজার টাকা করে মাসিক চাঁদা দিতে শুরু করেন এবং ৬০ বছর পর্যন্ত নিয়মিত চাঁদা জমা দেন, তাহলে অবসরের পর অর্থাৎ ন্যূনতম ৭৫ বছর পর্যন্ত প্রতি মাসে এক লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা হারে পেনশন পাবেন। ৪২ বছর মাসিক এই হারে চাঁদা দিলে তার জমা হবে ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর তিনি ন্যূনতম ১৫ বছরে পেনশন পাবেন ৩ কোটি ১০ লাখ ১৮ হাজার ৮৬০ টাকা।
পেনশনধারী ৭৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই মারা গেলে, তার নমিনি অবশিষ্ট মেয়াদে মাসিক একই হারে পেনশন পাবেন। এ ছাড়া ন্যূনতম ১০ বছর ধরে চাঁদা দেওয়ার শর্ত পূরণের আগেই কেউ মারা গেলে, মুনাফাসহ তার নমিনিকে জমা অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।
বিদ্যমান আইনের আওতায় ১৮ বছর বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী সব প্রবাসী সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় যুক্ত হতে পারবেন। ৬০ বছর বয়স থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন।
তবে ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও সর্বজনীন পেনশন সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। তবে অন্যদের মতো ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন সুবিধা পাবেন না তারা। ১০ বছর চাঁদা পরিশোধের পর তারা আজীবন পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। অর্থাৎ, কেউ ৬০ বছর বয়সে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হলে তিনি ১০ বছর চাঁদা পরিশোধের পর ৭০ বছর বয়স থেকে পেনশন সুবিধা পাবেন।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা অনুসারে, নাগরিকরা যেকোনো সময় সর্বজনীন পেনশনের এক স্কিম থেকে অন্য স্কিম কিংবা চাঁদার পরিমাণ একটা থেকে অন্যটা গ্রহণ করতে পারবেন।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাসার দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রবাসীদের অনেকের চাকরি এবং আয়ের ক্ষেত্রে ভারসাম্য থাকে না। এ ক্ষেত্রে তারা ওই পেনশন স্কিমের কিস্তি সচল রাখতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এমন পরিস্থিতিতে কী হবে তা এখনো উল্লেখ করা হয়নি। পেনশন স্কিম চালু হলে বলা যাবে তা কতটুকু কার্যকর করা যাচ্ছে। তবে যদি কার্যকর করা যায় তাহলে সাধারণ প্রবাসীরা উপকৃত হবেন।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, এই স্কিম কতটুকু কাজ করবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ বেশিরভাগ প্রবাসী চুক্তিভিত্তিক ভিসায় দুই-তিন বছরের জন্য বিদেশে যায়। সে ক্ষেত্রে তারা তিন বছর পর ফিরে এলে এ স্কিমের অর্থ পরিশোধ করবে কীভাবে? তার ব্যাখ্যা নেই। তাই যারা এ ধরনের ভিসা নিয়ে বিদেশ যাবে তারা পেনশন স্কিমে যুক্ত হবে না। এ জন্য নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা থাকার দরকার ছিল।
সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু হওয়ার পর সরকারের জন্য তহবিল সংগ্রহে বিশাল সুযোগ তৈরি হবে। কারণ ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা পাওয়ার পর পেনশন দেওয়া শুরু হবে।
পাশের দেশ ভারতে এ ব্যবস্থা চালু হয়েছিল ২০০৪ সালে। বাংলাদেশে প্রায় ভারতের প্রায় ২০ বছর পর হলেও তা শুরু হতে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেরিতে হলেও এই উদ্যোগ ইতিবাচক। সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৫০ বছর, তারা এই পেনশন স্কিম খুলতে পারবেন। ১০ বছর ধারাবাহিকভাবে চাঁদা জমা দেওয়ার পর একজন মাসিক পেনশনের যোগ্য হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০৩৩-৩৪ অর্থবছর পর্যন্ত সরকার শুধু চাঁদা গ্রহণ করবে। কোনো ব্যক্তিকে এক টাকাও শোধ করতে হবে না।
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা একটা ভালো উদ্যোগ। আমাদের দেশে এটির ভালো সম্ভাবনা আছে। ৬০ শতাংশের মতো মানুষ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আছে। কিন্তু ৪০ শতাংশ মানুষ কোনো ছায়াতেই নেই। সুতরাং এগুলো বিবেচনা করে একটি সোশ্যাল সিকিউরিটির (সামাজিক নিরাপত্তা) দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভালো উদ্যোগ।’
সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থায় চারটি ভাগে প্রবাসী, বেসরকারি কর্মচারী, স্বকর্মে নিয়োজিত ও অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খেয়াল রাখতে হবে যে চারটা ভাগ আছে তার মধ্যে অতি দরিদ্রদের জন্য ‘সমতা’তেই সরকার ১ হাজার টাকার মধ্যে ৫০০ টাকা দেবে। এর বাইরের সবগুলোই মানুষের টাকা। সতর্ক থাকতে হবে টাকাটা যাতে ভালোভাবে ব্যবহৃত হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যে কমিটি করা হয়েছে সেটা যাতে ভালোভাবে কাজ করে। এটার সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগ হতে হবে সেটা, যা অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ। সরকার মুনাফার হার ঠিক করেছে ৮ শতাংশ। সরকারি ট্রেজারিগুলোতেও একই রকম। সেটাও নিরাপদ বিনিয়োগ হতে পারে।
এ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, প্রথমদিকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে না গিয়ে ভালোভাবে দাঁড় করিয়ে পোর্টফোলিওগুলো ডাইভারসিফাই করা ঠিক হবে।
কভিড মহামারী থেকে শুরু করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর টানা দুটো ধকল এসে পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ টানা অবনতির দিকে আসছে। মূল্যস্ফীতি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে এখনই অন্তর্ভুক্তির কথা সরকার ভাবছে না, সে কারণে সরকারি চাকরিজীবী ১৪ লাখ মানুষকে বাদ দিলে আগামী অর্থবছরে সরকারকে কমবেশি আট কোটিরও বেশি মানুষকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনা যেতে পারে। সেটা করতে পারলে সরকার বড় তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে।
অবশ্য, যেহেতু শুরুতে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারটি থাকছে না। তাই সরকারকে সম্ভাব্য পাঁচ কোটি নাগরিককে আগামী এক বছরে পেনশন স্কিমের আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে সরকার এগিয়ে গেলে বড় তহবিল সংগ্রহের সুযোগ পেতে পারে।
বর্তমানে শ্রমশক্তির মধ্যে সরকারি খাতে কর্মরত ৫ শতাংশ নাগরিক পেনশন সুবিধার আওতায় আছেন। বেসরকারি খাতে কর্মরতদের মাত্র ৮ শতাংশ এককালীন গ্র্যাচুইটি সুবিধা পেয়ে থাকেন। সচ্ছল ব্যবসায়ী বা আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিতদের অনেকে বিভিন্ন ব্যাংক-বীমায় বেসরকারি পেনশন স্কিমে নিজেদের যুক্ত করেছেন।
প্রাথমিকভাবে এই স্কিমের আওতায় চারটি শ্রেণিকে টার্গেট করা হচ্ছে : বেসরকারি খাতের চাকরিজীবী, প্রবাসী বাংলাদেশি, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী এবং অসচ্ছল ব্যক্তিসমূহ।
কর্মকর্তারা বলেছেন, অসচ্ছল ক্যাটাগরিতে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরতদের রাখা হবে। তবে তাদের কীভাবে চিহ্নিত করা হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অতি দরিদ্র হিসেবে সরকারি সুবিধাভুক্তদের এ ক্যাটাগরিতে রাখা হতে পারে। তাদের মাসিক চাঁদার হার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে রিকশাওয়ালা, হকার, গৃহকর্মী, পথে পণ্যসামগ্রী বিক্রেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন অন্তর্ভুক্ত হবেন।
প্রবাসী বাংলাদেশি এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ব্যক্তিদের মাসিক চাঁদার হার সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে, বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের চাঁদার হার সর্বনিম্ন ১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা। তাদের মধ্যে শুধু অসচ্ছলদের চাঁদায় ৫০ শতাংশ সহায়তা করবে সরকার। বাকিদের চাঁদায় সরকারের কোনো অবদান থাকবে না।
ভারত, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ায় এ ধরনের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। জানা গেছে, ভারতের সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতির আদলে বাংলাদেশে এটি প্রবর্তন করা হচ্ছে। ২০০৪ সালে সীমিত আকারে চালুর পর এ ব্যবস্থা কার্যকর করতে সাত থেকে আট বছর সময় লেগেছে ভারতের। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম ছাড়া বাকি সব রাজ্যে এ ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জনসভার কর্মসূচি নিয়ে আগামী মাসে মাঠে থাকবে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের কারণে প্রধানমন্ত্রীর সিলেটের জনসভা স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন উপলক্ষে সুধী সমাবেশ করবে দলটি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও ‘বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের’ প্রতিবাদে ‘শান্তি সমাবেশের’ মতো কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের গতকালের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আগামী ২ সেপ্টেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের সময় নির্ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওইদিন সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হবে। সেখানে সুধীজনরা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন-অগ্রগতি নিয়ে কথা বলবেন। ওইদিন ঢাকা উত্তরে সুধী সমাবেশ হবে। যেখানে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কারণে ২ সেপ্টেম্বর সিলেটে পূর্বনির্ধারিত জনসভা স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ওইদিন সরকারি সফরে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। সিলেটের সমাবেশ পরবর্তী সময়ে হবে। সেই সময় খুলনা ও কুমিল্লার জনসভায় অংশ নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এরপর আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ জেলায় আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেবেন তিনি।
কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার সভায় উপস্থিত একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে জানান, গতকালের বৈঠকে দলের বর্তমান সংসদ সদস্যদের (এমপি) বিরুদ্ধে বিষোদগার করা মনোনয়নপ্রত্যাশী কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তাই নয়, এরপরও কোনো এমপির বিরুদ্ধে দলের যেকোনো স্তরের নেতাই হোক না কেন, সমালোচনা করা না থামালে দলে ওই নেতার জায়গা থাকবে না। এটা স্পষ্ট জানিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, কারণ এমপির বিরুদ্ধে বিষোদগার, সমালোচনা প্রকারান্তরে দলের ও সরকারের সমালোচনা। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণের পাশে থাকতে হবে। প্রার্থী নয়, দলের পক্ষে, নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে মানুষের দরজায় দরজায় যেতে হবে। যোগ্যতা, দক্ষতা ও জনপ্রিয়তার ওপরই নির্ভর করবে মনোনয়ন। সমালোচনা-বিষোদগার করে মনোনয়ন পাওয়া যাবে না।
সভায় সুনামগঞ্জ জেলার কমিটি নিয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জেবুন্নেসা হক অভিযোগ করে বলেন, ওই কমিটিতে ত্যাগীদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। এ সময় অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন বলেন, ‘উনি (জেবুন্নেসা হক) কমিটিতে রাখার জন্য দুজনের নাম দিয়েছেন। সেখানে একজনকে রাখা সম্ভব হয়েছে, একজন রাখা যাচ্ছে না।’ তখন দলীয় সভাপতি বলেন, ‘দুজন, একজন বলে কোনো কথা নেই। ত্যাগী সব নেতাকর্মীকে জায়গা করে দিতে হবে।’ এ সময় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা আরও নির্দেশনা দিয়ে বলেন, পুরনো ত্যাগী কোনো নেতাকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। তারাই এই দলের প্রাণ।
সভায় চুয়াডাঙ্গা, নোয়াখালী ও শেরপুরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন হচ্ছে না সে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সময়মতো ও নির্ধারিত সময়ে কমিটি করতে না পারলে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দাও সেসব নেতাকে।’
জানা গেছে, এর আগে গত ৬ জুন গণভবনে অনুষ্ঠিত বিশেষ বর্ধিত সভায় তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে যারা ভারপ্রাপ্ত আছেন, তাদের ভারমুক্ত করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলীয় সভাপতির সেই সিদ্ধান্ত গতকালের কার্যনির্বাহী সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।
গতকালের সভায় আওয়ামী লীগের আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা তাদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বক্তব্য দেন। তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক জেলার কমিটি গঠন এবং সমস্যা সম্পর্কে দলীয়প্রধানকে জানান। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের বলেন, দলের দুঃসময়ের যারা ছিলেন, যারা দলের জন্য নানা ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের বাদ দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে পুরনো কমিটিতে যারা ছিলেন, তাদেরও যেন কমিটিতে রাখা হয়।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
মূল লড়াইয়ের আগে গা গরমের খেলা। সেখানে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আগ্রাসী। তাতে পাকিস্তান পায় ৩৪৫ রানের বড় সংগ্রহ। তারপরও জিততে পারল না। নিউজিল্যান্ড জয় তুলে নিয়েছে ৩৮ বল হাতে রেখেই।
পাকিস্তানের ব্যাটারদের মধ্যে সেঞ্চুরি পেয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৯৪ বলে ১০৩ রান করে অবসর নেন তিনি। এছাড়া বাবর আজম ৮০ ও সৌদ শাকিল ৭৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউজিল্যান্ড।
কিউই ব্যাটারদের মধ্যে ওপেনিংয়ে নামা রাচিন রবীন্দ্র ৭২ বলে ৯৭ রান সংগ্রহ করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা কেন উইলিয়ামসন ৫৪, ড্যারেল মিচেল ৫৯ আর মার্ক চাপম্যান ৬৫ রান করে দলকে ৫ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
গোটা দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সাকিব আল হাসানকে শূলে চড়াচ্ছে, অন্যরা তামিম ইকবালকে। অথচ জাতীয় ক্রিকেট দল ভারতে গেছে বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে খোঁচাখুঁচি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে। যে উদ্বোধনী জুটি নিয়ে এত দ্বিধা আর সংকোচ, যে কারণে তামিম না থাকায় এত হাহাকার, সেখানেই কিনা বাজিমাত করে পুরো জাতিকে অন্য এক বার্তা দিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস।
বিশ্বকাপের দলে যে তামিম ইকবাল থাকছেন না, সেটা জানা গিয়েছিল আগের দিনেই। তবু ক্রিকেট ভক্তদের মনের এক কোণে ক্ষীণ আশা ছিল। ওপেনারদের টানা ব্যর্থতার কথা বিবেচনায় হলেও এই ব্যাটসম্যান থাকবেন বলে ছিল তাদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। তাকে দলে না রাখায় অবশ্য রাস্তায় জনতার ঢল নামেনি, রাজপথে হয়নি কোনো সভা-সমাবেশ। তবে নতুন যুগের দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদী নিন্দার বাণী। হাল জামানায় যাকে ‘টাইমলাইন’ বলে সম্বোধন করা হয়।
সেই সব প্রতিবাদী স্ট্যাটাসও দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ সাকিব আল হাসানের পক্ষে, কেউবা তামিম ইকবালের। একদল পরিসংখ্যান-পর্যালোচনা দিয়ে বোঝাতে ব্যস্ত যে এই যুগে তামিমের কৌশল ‘ওল্ড স্কুল’। ওসব এখন আর চলে না। অন্য দল ১৭ বছরের ইতিহাস আর আবেগ নিয়ে হাজির। তাদের কাছেও আছে পরিসংখ্যান। সেটা গত কয়েক বছরের তামিমের ওপেনার সঙ্গীদের একটা তালিকা। তারাই শূলে চড়াচ্ছেন সাকিব-হাথুরু থেকে শুরু করে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের।
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিব ক্রীড়াভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেলকে দিয়ে গেছেন সাক্ষাৎকার। সেখানে তিনি সরাসরি তামিমের সমালোচনা করেছেন। এই ওপেনার যে দলের প্রয়োজনে পজিশন পরিবর্তনে রাজি হতে চান না, সেই মানসিকতা বাচ্চাদের মতো বলে সমালোচনা করেছেন টাইগার অধিনায়ক। এমনকি তার স্পোর্টসম্যানশিপ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তার আগে তামিম নিজে একটা ভিডিও বার্তায় বলেছেন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা। মাশারফী বিন মোর্ত্তজাও ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাতে করে ক্রিকেটাঙ্গনে এখন যেন ভিডিও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ক্রিকেট নিয়ে জাতির অবস্থা যখন এমন, তখন ভারতের গোয়াহাটিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আসাম রাজ্যের রাজধানীর বরষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নেমেছিল তারা। ছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তও ছিলেন না থাকার মতো করেই। প্রথম গা গরমের ম্যাচে তাই নেতৃত্ব দেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
টসভাগ্যে মিরাজের পরাজয়ের পর বল হাতে নামে বাংলাদেশ। টানা ৪০ ওভার টাইগারদের বোলারদের যেন শাসন করছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ঐ সময় পর্যন্ত ৫ উইকেট হারালেও তারা করে ২০২ রান। তারপরই যেন ঘুরে দাঁড়ান টাইগার বোলাররা। শেষ ১০ ওভারের ৫ বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ২৬৩ রানের বেশি তারা করতে পারেনি।
২৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশের হালটা যে সুখকর হবে না, মুহূর্তেই ধসে পড়বে ব্যাটিং লাইনআপ। সিনিয়রদের কাউকে এসে হাল ধরে নিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হবে দলকে। খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলে হয় জয়, নয়তো সম্মানজনক হার! এমনটাই ছিল অনুমিত। আমরা যে এতেই অভ্যস্ত।
কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস সব অনুমান ভুল প্রমাণ করে দেন। যে ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিল, যে সমস্যার কারণে চোট প্রবণ তামিম ইকবালকেও সবাই চাইছিলেন দলে। সেটাই কিনা তারা প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে ভুলিয়ে দিলেন! উদ্বোধনীতে তারা গড়েন ১৩১ রানের জুটি। তাতে ১৩ ম্যাচ পর বাংলাদেশ ওপেনিংয়ে শতরানের জুটি দেখতে পেয়েছে। হোক সেটা প্রস্তুতি ম্যাচ, তবুও তো লড়াই!
সবচেয়ে বড় স্বস্তি লিটন-তানজিদের রানে ফেরা। এশিয়া কাপের আগে জ্বরে ভুগছিলেন লিটন। সেই জ্বরের ধকল কাটিয়ে উঠতে তার সময় লেগেছে। মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে যেতে হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর চোটের কারণে। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। এই টুর্নামেন্টে ২ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিদ। কিন্তু তিনিও প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজেও।
তাই বিশ্বকাপের দলে তামিম ইকবালকে বাদ দেওয়াতে ঝড় উঠেছিল। সেই ঝড় চলমান ছিল আজ দুপুর অবধি। অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, এই জুটি ব্যর্থ হবে। যা ধারাবাহিক থাকবে টুর্নামেন্টের শুরুতেও। তারপর বিশ্বকাপের মাঝপথে আচমকা ডাক পেয়ে তামিম ইকবাল উড়াল দেবেন ভারতে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে। সেবার জাভেদ মিয়াঁদাদকে ছাড়াই তারা বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে তাকে মাঝপথে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, এবং বিশ্বকাপ জিতেছিল।
এমন স্বপ্ন বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটভক্তরাও দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তানজিদ তামিম আর লিটনের জুটি বদলে দিয়েছে সব হিসেব-নিকেশ। তামিমের ফেরার প্রত্যাশায় যারা গুনছিলেন প্রহর, তাদের মাথায় যেন এবার আকাশ ভেঙে পড়েছে। কারণ তারা যে রানে ফিরেছেন। যুববিশ্বকাপজয়ী তামিম খেলেছেন ৮৪ রানের একটি ইনিংস। ৮৮ বলে যা সাজানো ছিল ১০টি চার ও ২টি ছক্কায়। অন্যপ্রান্তে লিটন ৫৬ বলে ১০ চারে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। শুধু কি তাই! এদিন তিনে নেমেছিলেন মিরাজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান। ৬৪ বলের হার না মানা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ২ ছক্কায়।
পঞ্চপান্ডবের পরের প্রজন্ম তো তারাই। যাদের ব্যাটে শুক্রবার বরষাপাড়ায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তাদের রানে ফেরা যেন নতুন দিনের বার্তা দেয়। যে বার্তা আগামীর পথচলার। যেখানে পুরনোকে আকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা ক্ষীণ হয়ে আসার বার্তা। সহজ কথায়, তরুণদের রানে ফেরাতে মিয়াঁদাদ হওয়ার সুযোগ আর হচ্ছে না তামিম ইকবালের।
আল নাসরে প্রথম মৌসুমটা ভালো না কাটলেও দ্বিতীয় মৌসুমের শুরু থেকেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আছেন দারুণ ছন্দে। নিজে গোল করে দলকে জেতাচ্ছেন, সতীর্থদের দিয়ে গোল করাচ্ছেন।
শুক্রবারও সৌদি প্রো লিগে আল তা’য়ির বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে আল নাসর। এ ম্যাচেও রোনালদো গোল করেছেন এবং করিয়েছেন। তবে তাঁকে নিয়ে বেশি আলোচনা তালিসকার গোলটিতে অসাধারণ এক অ্যাসিস্টের জন্য। অ্যাসিস্টটিতে যে সবার মন ভরিয়ে দিয়েছেন রোনালদো।
তা’য়ির মাঠে আল নাসর গতকাল শুরুটা করেছে দারুণ। একের পর এক আক্রমণে স্বাগতিক দলের রক্ষণ করে দিয়েছে এলোমেলো। ম্যাচের শুরুর দিকেই রোনালদোর দুর্দান্ত একটি প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন তা’য়ির গোলকিপার। এ ছাড়া রোনালদোও খুব কাছ থেকে পাওয়া একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।
তবে ৩২ মিনিটে এগিয়ে যায় আল নাসর। গোলটি করেছেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অ্যান্ডারসন তালিসকা। গোলটিতে রোনালদো অ্যাসিস্ট করেছেন অসাধারণ এক বাই-সাইকেল কিকে। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা রোনালদোর পঞ্চম অ্যাসিস্ট।
খেলার স্রোতের বিপরীতে ৭৯ মিনিটে সমতায় ফেরে তা’য়ি। কিন্তু সমতা বেশিক্ষণ থাকেনি। ৩ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে আল নাসরের জয়সূচক গোলটি করেছেন রোনালদো। সৌদি প্রো লিগে এ মৌসুমে এটা ৭ ম্যাচে তার ১০ নম্বর গোল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে করেছেন ১৬ গোল।
এই জয়ের পর ৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে আল নাসর। আল ফেইহার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করা আল ইত্তিহাদ সমান ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষে। ৮ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে আল তা’য়ি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।