
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন না পেয়ে আদালতে গেছে নতুন গজানো কয়েকটি রাজনৈতিক দল। পুরনো কয়েকটি দলও আদালতমুখী হওয়ার তালিকায় রয়েছে। প্রাথমিক বাছাইয়ে টিকে যাওয়া দুটি দল চূড়ান্ত তালিকাও ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তারা নিবন্ধন পায়নি। তারা মামলা করেছে। আরও দুটি দল এ সপ্তাহেই মামলা করবে। নিবন্ধন কেন মেলেনি তার ব্যাখ্যা চেয়ে ইসির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাকি দলগুলো।
জানা গেছে, আদালতে গিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে দুটি দল নিবন্ধন পেয়েছে। বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপি ও ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ নামের দুটি দলকে উচ্চ আদালতের আদেশে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি। এটাকে উদাহরণ মেনে রাজনৈতিক দলগুলো এ পথ ধরেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র জানায়, ১০ আগস্ট বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিকে (বিএসপি) নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন। শিগগির তাদের সনদ দেওয়া হবে এবং বিষয়টি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হবে। দল দুটির নিবন্ধন পাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। রাজপথের কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতি খুব একটা দেখা না গেলেও প্রাথমিক বাছাইয়ে টিকে যাওয়া বাকি ১০টি দল এ ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে ছিল। এসব দলের নিবন্ধন না পাওয়া নিয়েও সমালোচনা রয়েছে।
দলগুলোর নেতারা দাবি করছেন, সব যোগ্যতা থাকার পরও রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তারা নিবন্ধনবঞ্চিত। তাই প্রতিকার চেয়ে তারা আদালতে যাবেন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি) ও বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি নিবন্ধন চেয়ে মামলা করেছে। আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি) ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী এম নাজিম উদ্দিন আল আজাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১০০টি উপজেলা ও ২২টি জেলায় আমাদের কার্যকরী কমিটি রয়েছে। ইসি নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছিল। সব আমার দল পূরণ করেছে। তারপরও কেন নিবন্ধন দেয়নি ইসি বলতে পারবে। তবে আমি এ ইস্যুতে আদালতে যাইনি। আমি সুপ্রিম কোর্টে রিট করেছি এ কারণে যে, স্বাধীনতার পর দলীয় বা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে যে কেউ দল করলে তাকে নিবন্ধন দেওয়ার বিধান আরপিওতে রয়েছে। আমি তো নির্বাচিত ছিলাম। আমাকে নিবন্ধন কেন দেওয়া হবে না?’
প্রসঙ্গত, ১৬ ফেব্রুয়ারি তৃণমূল বিএনপিকে ও ৯ মে ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে ইসি।
প্রাথমিক বাছাইয়ে ছিল না বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিও। এই দলের পক্ষ থেকেও আদালতে নিবন্ধন চেয়ে মামলা করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
প্রাথমিক বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত তালিকায় থাকা আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও বাংলাদেশ লেবার পার্টিও আদালতে যাবে বলে নেতারা দেশ রূপান্তরকে জানান।
এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘উচ্চ আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী সপ্তাহেই নিবন্ধন দিতে ইসিকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য আদালতে যাব।’
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘আমাদের জেলা, উপজেলার কার্যালয়গুলোর ছবি সংগ্রহের কাজ বাকি রয়েছে। সব কাজ গুছিয়ে আগামী সপ্তাহে আদালতে যাব।’
নতুন করে নিবন্ধন পেতে ৯৩টি দল আবেদন করেছিল। আবেদন যাচাই-বাছাই করার জন্য যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করে। ১৪টি দলের আবেদন নির্দিষ্ট ফরম্যাটে ছিল না এবং দুটি আবেদন প্রত্যাহার করা হয়েছিল। চাহিদামতো কাগজপত্র ১৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে বলা হলেও অবশিষ্ট ৭৭টির মধ্যে ১৯টি দল নির্ধারিত সময়ে সেসব জমা দিতে পারেনি। ইসির পাঠানো চিঠি দুটি দলের ঠিকানা ঠিক না থাকায় ফেরত আসে। ১০টি দল ১৫ দিনের পরে আরও সময়ের আবেদন করেছিল। সেটা নামঞ্জুর করা হয়েছে। এর ফলে ৩১টি আবেদন পরে বাতিল হয়। সর্বশেষে থাকে ৪৪টি আবেদন। এগুলো যাচাই-বাছাই করে, নীতিমালা, আইন ও কাম্য তথ্যের সঙ্গে না মেলায় ১২টি দল ছাড়া বাকিগুলো বাতিল হয়েছে। মোট ৮১টি আবেদন বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়েছে। টিকে যাওয়া দলগুলো ছিল এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি (বিএইচপি), গণ অধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি), ডেমোক্রেটিক পার্টি ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএলডিপি)।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিকে (বিএসপি) গত ১০ আগস্ট নিবন্ধন দেয় ইসি। এ নিয়ে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৪টিতে।
ইসি সচিব জাহাংগীর আলম ১৩ আগস্ট দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি। বাকি ১০টি দলের মাঠ পর্যায়ে যাচাই করে গরমিল পাওয়ায় আবেদন বাতিল করা হয়েছে। এখন যে কেউ চাইলে আদালতে যেতে পারে। আদালত যে নির্দেশ দেবে, আমরা তা পালন করব।’
নির্বাচক পর্যবেক্ষক পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, ‘কী কারণে ইসি দলগুলোকে নিবন্ধন দেয়নি তা তারা পরিষ্কার করেনি। বলেছে, শর্ত পূরণ হয়নি। আদালতে রায় নিয়ে নিবন্ধন পাওয়ার উদাহরণ দেখা গেছে। দলগুলো যদি সক্রিয় কর্মকা-ে থেকে থাকে, তাহলে শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরেকটু যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন ছিল।’
২০০৮ সাল সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শামসুল হুদা কমিশন নবম সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করে। শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় এবং আদালতের নির্দেশে জামায়াতে ইসলামী, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ফ্রিডম পার্টি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি (পিডিপি) ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) নিবন্ধন বাতিল হয়েছে।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরের পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব সংশোধন করে পুলিশ এবার ৫০০ কোটি টাকা চেয়েছে। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করছে। কত বরাদ্দ দেওয়া হবে সে বিষয়ে চলতি মাসেই সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে প্রায় ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় নতুন করে আবার প্রস্তাব দেওয়া হলো।
পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী দলগুলোর আন্দোলন আরও কঠোর হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সে ক্ষেত্রে নাশকতা ও সহিংতাও বাড়তে পারে বলে তারা মনে করছে।
ইতিমধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে আগুন, পুলিশের ওপর হামলাসহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা প্রতিরোধ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। তবে পুলিশের যানবাহন ও দাঙ্গা দমনের সরঞ্জাম চাহিদার তুলনায় অনেক কম। পরিস্থিতি ও পুলিশের সরঞ্জাম ঘাটতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে গত বছরই ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল পুলিশ সদর দপ্তর। অর্থ বরাদ্দের জন্য চিঠি চালাচালি হওয়ার পরও বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় আবারও চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় ও পরের পরিস্থিতি সামাল দিতে নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি কিনতে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
গত জাতীয় নির্বাচনের আগেও পুলিশের জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল। ওই সময় বরাদ্দ ছিল ২৭২ কোটি টাকা।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আসছে ডিসেম্বরের শেষের দিকে অথবা জানুয়ারির প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বরাদ্দ বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, মাস তিনেক আগে নির্বাচনে খরচের জন্য একটি বাজেট চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন ও নির্বাচন-পূর্ববর্তী আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য দাঙ্গা দমনসামগ্রী ও অপারেশনালসামগ্রী সংযুক্ত না হলে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া কঠিন হবে। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও বিঘিœত হবে। সামনের দিনগুলোতে আন্দোলন হবে। সরকারবিরোধীরা বড় ধরনের নাশকতাও চালাতে পারে বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দিন যতই যাচ্ছে, ততই রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াচ্ছে। আর এ কারণে যানবাহন ও নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি কেনা জরুরি হয়ে পড়েছে। এমনিতেই পুলিশের যানবাহনের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। গুলি, রাবার বুলেট, টিয়ার সেলসহ অন্যান্য সরঞ্জাম আরও লাগবে। এর আগে ১ হাজার ২২৫ কোটি ৯৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বরাদ্দ চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। বরাদ্দের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এখনো। এ অবস্থায় নতুন করে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
আগের বরাদ্দসংক্রান্ত চিঠিতে ১৫৮ কোটি ৭ লাখ টাকার অস্ত্র, গুলি, টিয়ার সেলসহ দাঙ্গা দমনের অন্যান্য সামগ্রী, ৭৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার নিরাপত্তাসামগ্রী, ২২৬ কোটি টাকার মোটরযান, ৫৪০ কোটি টাকার অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম, ১২ কোটি টাকার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সরঞ্জাম, ৪৪ লাখ টাকার কম্পিউটারসহ অন্যন্যা সরঞ্জাম, ৭ কোটি টাকার কম্পিউটার সফটওয়্যার, ২০৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার জ¦ালানি তেল ও লুব্রিকেন্টসহ ১ হাজার ২২৫ কোটি ৯৯ লাখ ৮৬ হাজার ৬১০ টাকার সরঞ্জাম কেনার কথা বলা হয়েছে।
নতুন করে যে ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে সে বিষয়ে পুুলিশের ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আশা করি সরকার ইতিবাচক হিসেবে দেখবে বিষয়টি। আমরাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়য়ে যোগাযোগ রাখছি। তারাও বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই নিয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, যানবাহনসংকটে ভুগছে থানা, হাইওয়ে, ট্যুরিস্টসহ পুলিশের সব কটি ইউনিট। পুলিশের হাতে যেসব যানবাহন রয়েছে, সেগুলো পুরনো। অনেক গাড়িই ফিটনেসবিহীন। এমনকি গাড়ি নষ্ট হলে মেরামতও করা যাচ্ছে না। ফলে রাজধানীসহ পুলিশকে ফরমায়েশ দেওয়া বেসরকারি (রিকুইজিশন) যানবাহনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আর সে জন্য থানা ও ট্রাফিক পুলিশ প্রায় সময় কোনো না কোনো গাড়ি রিকুইজিশন করতে বাধ্য হচ্ছে। আবার অনেক থানা পুলিশ ভাড়া করা গাড়ি ব্যবহার করছে। অনেককে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েই দায়িত্ব পালন এবং অভিযানে অংশ নিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে পুলিশ বাহিনীর গাড়ির সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। পিকআপ, প্রিজন ভ্যান, জিপ, পাজেরো থেকে শুরু করে সব ধরনের গাড়ি চাহিদার তুলনায় একেবারে কম। আবার পুলিশ যে গাড়িগুলো ব্যবহার করছে তার বড় একটি অংশ ভিআইপি প্রটোকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে। যানবাহনের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এসব দিক বিবেচনা করেই বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান জরুরি। তা ছাড়া মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও বিঘিœত হবে। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার, গোয়েন্দা, অপারেশনাল ও নিরাপত্তাসামগ্রী, জ¦ালানি, কেনার জন্য অর্থ প্রয়োজন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ¦ালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। যানবাহনসহ নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি কেনার পরিকল্পনা আছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে কেনাকাটা সম্ভব হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত তিন অর্থবছরে পুলিশের জন্য ১ হাজার ১৭টি যানবাহন কেনা হয়েছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলই আছে ৬৬৫টি। বর্তমানে ১১ হাজার ৯২৩টি যানবাহন আছে পুলিশের। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৬ হাজার ৪৪৫। বাকি ৫ হাজার ৪৭৮টি অন্যান্য যানবাহন। এ দিয়ে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে পুলিশ। জনবলের তুলনায় এখনো ৪ হাজার ৫২৯টি যানবাহনের ঘাটতি আছে। দেশের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি জানমাল, সরকারি সম্পত্তি, ভিভিআইপি, ডিআইপি ডিউটি পালন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইভেন্ট, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই), বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এবং শিল্পকারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে। নিরাপত্তাসংক্রান্ত কার্যক্রম সীমিত করার কোনো সুযোগও নেই। কিন্তু যানবাহনের অভাবে পুলিশের দায়িত্ব পালনে সমস্যা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পুরনো যানবাহন বিক্রি করে নতুন যানবাহন কেনা জরুরি হয়ে পড়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে জননিরাপত্তা খাতের জন্য সরকার ২৪ হাজার ৫৯৪ কোটি বরাদ্দ দিয়েছে, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দের চেয়ে ১ হাজার ৪২১ কোটি টাকা বেশি। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট ছিল ২১ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। জননিরাপত্তা খাতে রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, যার আওতায় রয়েছে পুলিশ, বর্ডার গার্ড, কোস্টগার্ড এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। রয়েছে সুরক্ষা সেবা বিভাগও।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুলিশের বাড়তি অর্থ বরাদ্দ চাওয়া একদম যৌক্তিক। পুলিশের যানবাহনসহ নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি কেনা জরুরি। সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও বড় ধরনের সহিংসতা হওয়ার আশঙ্কা আছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে পুলিশের প্রস্তাবগুলো পাস করার চেষ্টা চলছে। শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
দলমত-নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন আওয়ামী লীগ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান নেতার ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী পালন করেছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে দেশবাসী। ছিল সরকারি ছুটির দিনও। এই দিনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আগামীর বাংলাদেশ গড়ার শপথ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জাতির পিতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ৪০টি দেশের কূটনীতিকরাও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মহান নেতার প্রতি।
পাশাপাশি পলাতক খুনিদের দেশে এনে রায় কার্যকর করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শ্রদ্ধা জানাতে আসা অনেকেই। ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জন্য লজ্জার দিন উল্লেখ করে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মুক্তিযোদ্ধা বজলুর রশীদ বলেন, লজ্জা এজন্য যে, আমরা এখনো বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করতে পারিনি। তিনি বঙ্গবন্ধু পলাতক খুনিদের দ্রুত দেশে এনে রায় কার্যকর করার দাবি করেন সরকারের কাছে। মিরপুরের বাসিন্দা আশরাফ উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু আজীবন গণতন্ত্র ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে সংগ্রাম করেছেন। সেই সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাব।
গতকাল সকাল সাড়ে ৬টার পর ধানম-ি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে স্থাপিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শ্রদ্ধা জানানো শেষে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
পরে দলীয় সভাপতি হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা। আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ওয়াসিকা আয়শা খান, আবদুস সোবহান গোলাপ, দেলোয়ার হোসেন ও বিপ্লব বড়–য়া। সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম প্রমুখ। পরে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা।
শ্রদ্ধা জানানো শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকে আমাদের শত্রু স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা। এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। চক্রান্ত চলছে। এখনো এ বাংলার মাটিতে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি আমাদের অর্জন-উন্নয়নের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করছে। কাজেই আজকে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের আমাদের সবাইকে এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী, স্বাধীনতার মূল্যবোধবিরোধী স্বাধীনতার সপক্ষের সবার অভিন্ন শত্রু।’
এরপর বনানী কবরস্থানে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সেখানে ১৫ আগস্টে নিহতদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে নিহতদের কবরে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, ঢাকায় আনুষ্ঠানিকতা শেষে হেলিকপ্টারে বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যান। সেখানে তিনি জাতির পিতার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধার পর কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেখানেও বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার দেয়। ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এ সময় তার সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানা, পরিবারের সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর ধানম-ি ৩২ নম্বর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। শোকের কালো পোশাক বা কালোব্যাজ ধারণ করে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানার নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষের ঢল নামে ধানম-ি ৩২ নম্বর এলাকায়। রাসেল স্কয়ার, কলাবাগান, পান্থপথ এলাকায় অপেক্ষায় দেখা যায় তাদের। নিউ মার্কেট এলাকা দিয়ে যারা মিছিল নিয়ে আসেন, তাদের কলাবাগান থেকেই ব্যানার নিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হয়। পান্থপথ দিয়ে আসা বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্কয়ার হাসপাতাল এলাকায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্যানার নিয়ে।
১৪-দলীয় জোটের নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানান জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনেরে মধ্যে কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরাও ছিলেন। তারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভিন্ন সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত করে তোলেন ধানমন্ডি এলাকা। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নেতৃত্বে প্রায় ৪০টি দেশের কূটনীতিকরা ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এদিকে বাদ আসর ধানম-ি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করে মহিলা আওয়ামী লীগ। এতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানাসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিআইডব্লিউটিএ ভবনে ‘শোক থেকে শক্তিতে নৌ-খাতের জয়যাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এতে প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু।
দুপুরে সারা দেশে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় অসচ্ছল, এতিম ও দুস্থ মানুষের মধ্যে খাদ্য বিতরণ ও গণভোজের আয়োজন করে আওয়ামী লীগসহ দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা। বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করা হয়। এ ছাড়াও মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। রাজধানী ছাড়াও সারা দেশের জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডপর্যায়ে শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, দুস্থদের মধ্যে খাদ্য বিতরণসহ নানান কর্মসূচি পালন করেছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগেও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে দেশজুড়ে।
ঢাকায় খাবার বিতরণ : গতকাল আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপকমিটির উদ্যোগে শাহবাগ, রমনা কালিমন্দির, মালিবাগ, গুলবাগ, শাজাহানপুরে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। এসব কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন দলের বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, যুব মহিলা লীগ সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলিসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদের নেতৃত্বে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে, পলাশী মোড়, বাংলামোটর, হাতিরপুল এলাকায় দুস্থ, অসহায়, শ্রমিকদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে খাদ্য বিতরণ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ আওয়ামী ওলামা লীগসহ ঢাকা দক্ষিণের কয়েকটি থানা ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা। যুবলীগের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন খান নিখিল।
এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় দলটির সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের আয়োজনে দুস্থ, অসহায়দের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয় গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত।
নবীনগরে জাতীয় শোক দিবস পালন : নানা কর্মসূচিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করেছেন সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বারবার কারা নির্যাতিত ছাত্রনেতা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য আবু আব্বাস ভূঁইয়া। গতকাল সকাল ১০টায় স্থানীয় আওয়ামী পরিবারের সদস্য ও সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে নবীনগর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান তিনি।
শারীরিক জটিলতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জ্বর কমেছে। কয়েকটি রোগের প্যারামিটার নিচের দিকে নেমে যাওয়ায় চিকিৎসাপত্র পরিবর্তন করে দিয়েছেন চিকিৎসক। কেবিনে রেখেই ‘সার্বক্ষণিক নিবিড় পর্যবেক্ষণে’ রাখা হয়েছে তাকে। বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম গতকাল দেশ রূপান্তরকে এসব কথা বলেন। ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার রাতে চেয়ারপারসনের জ্বর এসেছিল। এখন পর্যন্ত জ্বর নেই। তার মাল্টিডিজিজের কারণে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, সেগুলোর কোনোটি আসতে সপ্তাহখানেক সময় লেগে যায়। বেশ কয়েকটি পরীক্ষার ফলাফল এসেছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলের ধরন বুঝে কিছু চিকিৎসাপত্র পরিবর্তন করে দিয়েছে।
তিনি জানান, যেহেতু বেগম জিয়ার মূল চিকিৎসাটা করা সম্ভব হচ্ছে না, তাই যখন যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তার চিকিৎসা করা হচ্ছে।
ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খুব শিগগিরই তিনি বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। মেডিকেল বোর্ড পরীক্ষার সব ধরনের ফলাফল হাতে পেলে পর্যালোচনা করেই পরে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে করবে।’
গত বুধবার শারীরিক জটিলতার কারণে আবারও খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত বছরের জুন মাসে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন। তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকেরা। ২০২১ সালের এপ্রিলে কভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কয়েকবার নানা জটিলতার কারণে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে প্রথমবারের মতো শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন মুক্তি পান খালেদা জিয়া। সবশেষ গত মার্চ মাসে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়া এবং বিদেশ যেতে না পারার দুটি শর্তই বহাল রেখে আরও এক দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়।
এদিকে গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৭৯ বছরে পা দিয়েছেন। ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট তার জন্ম। জাতীয় শোক দিবসের দিন খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনে এই জন্মতারিখ নিয়ে সৃষ্টি হয় নানা বিতর্ক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের ১৯৭৫ সালের এই দিনে হত্যার স্মরণে জাতীয় শোক দিবসের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় আজ বুধবার বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল হবে।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে তার দ্রুত আরোগ্য ও সুস্বাস্থ্য কামনায় এই মিলাদ মাহফিল হবে। সারা দেশে জেলা-উপজেলায় তার দ্রুত আরোগ্য কামনায় এই মিলাদ হবে।
২০১৬ সাল থেকে বিএনপি শোক দিবসের দিন কোনো কর্মসূচি না দিয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করে আসছে। আগে দিবসটিতে কেক কাটা হতো।
মানবাধিকার, অংশীদারির সংলাপ, শ্রম, রোহিঙ্গা প্রভৃতি ইস্যুতে গত দুই বছরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের যত প্রতিনিধিদল এসেছে, সবই এসেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মূল উপলক্ষ করে। আগামী নির্বাচনই তাদের আগ্রহের মূল বিষয়। আর এ বিষয়টি ছাপিয়ে রয়েছে চীনের বা অন্য শক্তির প্রভাবের প্রসঙ্গ। ওয়াশিংটনের বড় চিন্তা ঢাকা কোনোভাবেই যেন চীন বা অন্য বলয়ে ঢুকে না পড়ে। তাই দুই বছরে ১৫টির বেশি প্রতিনিধিদল সফর করেছে বাংলাদেশ।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, শুধু প্রতিনিধিদলের সফরই নয়, বাংলাদেশের জাতীয় দিবস কিংবা অন্যান্য উৎসবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনকে পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তায়ও নির্বাচন বিষয়ে তাদের আশাবাদের কথা জানিয়েছেন।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রভৃতি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, নির্বাচন, গণতন্ত্র প্রভৃতি নিয়ে তাদের আগ্রহ প্রকাশিত হয়েছে একটি নেতিবাচক ইস্যুতে। এটা করে সরকারকে তারা এক ধরনের চাপে ফেলে দেয়, সরকারপক্ষ যেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সরকারপক্ষও চাপে পড়ে। এরপরই ঢাকা-ওয়াশিংটন যোগাযোগ বাড়ে। দুটি ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা ও চাপ একসঙ্গে চলমান।
২০২১ সালের ১০ অক্টোবর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে পৃথকভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ/মন্ত্রণালয়) ও স্টেট ডিপার্টমেন্ট (পররাষ্ট্র বিভাগ/মন্ত্রণালয়)। তারপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া ও নতুন নিষেধাজ্ঞা যাতে না আসে, সেজন্য ঢাকা-ওয়াশিংটন যোগাযোগ বাড়তে থাকে। এ নিয়ে অনেক বৈঠক হয়েছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশকে পাশে চায়। গত কয়েক বছর ধরে এশিয়া অঞ্চলের আরেক শক্তি চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বেড়ে চলেছে। চীনও এ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশকে পাশে চায়। যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে তাদের মিত্র এবং বাংলাদেশের বন্ধু ও প্রতিবেশী ভারতকে দিয়ে ঢাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট ছিল। এবার যুক্তরাষ্ট্র তা করছে না। তারা সরাসরি ঢাকার সঙ্গে হিসাব মেলাতে চাইছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশকে নিয়ে চীনাভীতি যুক্তরাষ্ট্রে বেশি কাজ করছে। চীনও অন্য সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়ে খুব সোচ্চার না হলেও এবার পরোক্ষভাবে বাংলাদেশ নিয়ে বেশ আগ্রহী।
গতকাল ঢাকায় সফররত দুই মার্কিন কংগ্রেসম্যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সঙ্গে বৈঠকেও চীনের প্রসঙ্গ তোলেন। তারা জানতে চেয়েছেন, ‘লোকজন বলছে, বাংলাদেশ একটি ভয়ংকর জায়গা। এরা চীনের খপ্পরে পড়েছে। চীনের গোলাম হয়ে গেছে। বাংলাদেশে অশান্তি এবং পুলিশ যখন-তখন লোক ধরছে এবং মেরে ফেলছে।’
গত সপ্তাহে তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমনবিষয়ক সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউর নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল। তারা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। নেফিউর সফরটি সরাসরি নির্বাচনকেন্দ্রিক না হলেও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সফরটি যথেষ্ট মাত্রায় রাজনৈতিক ও নির্বাচনকেন্দ্রিক ছিল। প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটন সরকারের পক্ষে সুশাসনবিষয়ক বড় হুমকি দিয়ে গেছে। নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি; তার আগে অর্থ পাচারসহ দুর্নীতি নিয়ে এ সফর ছিল অনেক বেশি রাজনৈতিক।
গত ১১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নাগরিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসেছিল। উজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি শ্রমিক আন্দোলন-কর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ মানবাধিকার রক্ষাকর্মীদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। তার আলোচনায় নির্বাচনের বিষয়টিই প্রাধান্য পায়।
এর আগে গত ১১ জানুয়ারি দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা সফর করেন। সফরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করার বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি মানবাধিকার, শ্রম অধিকারের বিষয়ে আলোচনার কথা থাকলেও বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া-পাওয়ার কথা জানানো হয়। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। নাগরিকসমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলেন।
এ বছরের ২৫ মে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে ওয়াশিংটন। ভিসানীতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন কবীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমারা চায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পূর্ণ হোক। এ কথা তারা ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির মধ্য দিয়ে বলেছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার, গণতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা, শ্রম অধিকার, গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতা, বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষের প্রতি সরকারপক্ষের আচরণ বিষয়ে বার্তা দেওয়ার জন্য ঘন ঘন প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে। সফরগুলোর বিষয়বস্তু ভিন্ন হলেও মূলে নির্বাচন। তারা এ অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এখানে গণতন্ত্র যেন তাদের গণতন্ত্রের কনসেপ্টের বাইরে না যায়। আমার মনে হয় আগামী কয়েক মাস এরকম সফর চলতেই থাকবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সফরগুলোর মূল লক্ষ্যই নির্বাচন। নির্বাচনের আগপর্যন্ত তারা এমন সফর অব্যাহত রাখবে। গত কয়েকটি নির্বাচনেও যুক্তরাষ্ট্র সরব ছিল। তবে এতটা নয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সফর অব্যাহত রয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।’
এলাকাবাসী ও স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে সেবা না পাওয়ার বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে নাটোরের সিংড়া থানার ওসি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। এক ভুক্তভোগী তার বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারে পুলিশের অসহযোগিতার অভিযোগ তোলেন। গত রবিবার অনুষ্ঠিত ওই গণশুনানিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিক ওসির দেওয়া বক্তব্য মনঃপূত না হওয়ায় প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী। পরে ওইদিন রাতেই ওসিকে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম। কিন্তু পরদিনই দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ সুপার আরেকটি আদেশে রাতের আদেশ প্রত্যাহার করে নেন এবং ওসিকে সিংড়া থানায় পুনর্বহাল করেন।
অভিযোগ উঠেছে, ওসি মিজানুর রহমান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তার প্রত্যাহারের আদেশ প্রত্যাহারে বাধ্য করেছেন। পুলিশের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশে তিনি পুনর্বহাল হয়েছেন। তবে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, ওসি মিজানুর আইনের মধ্যে থেকেই কাজ করেছেন। তিনি যেন ন্যায়বিচার পান, তাদের সেই দাবিই ছিল।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, উপজেলা পরিষদ চত্বরে আয়োজিত গণশুনানিতে জনসমক্ষে ফেসবুক লাইভে রেখে ওসির ওপর প্রতিমন্ত্রীর ক্ষোভ প্রকাশ করার বিষয়টি পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন ভালোভাবে নেয়নি।
এদিকে ওসিকের প্রত্যাহারের পর ফের পুনর্বহালের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গতকাল মঙ্গলবার রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই।’
গণশুনানি অনুষ্ঠানের ফলে এলাকার মানুষ উপকৃত হচ্ছেন, এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওসিকে প্রত্যাহারের পর পুনর্বহালের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী ফের বলেন, ‘মন্তব্য নেই।’
গণশুনানির অর্থ জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়, ঘটনা বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সাধারণ মানুষ বা ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, মতামত ইত্যাদি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে শোনা ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তার যথাসম্ভব প্রতিকার করা। কোনো কোনো অভিযোগের তাৎক্ষণিক সমাধানও করা হয়, প্রচলিত দাপ্তরিক বা আইনি প্রক্রিয়ায় যার সমাধান হতে অনেক সময় লেগে যেত, হয়তো কোনো দিনই যার সমাধান হতো না। গণতান্ত্রিক সমাজে গণশুনানি একটি কার্যকর প্রক্রিয়া। প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার এলাকায় নিয়মিত গণশুনানি করেন। সেখানে ভুক্তভোগীদের সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রবিবার সকালে সিংড়া উপজেলা চত্বরে মুক্ত মঞ্চে চুরি, ছিনতাই, মাদকসংক্রান্ত বিষয়সহ মানুষের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গণশুনানি করেন প্রতিমন্ত্রী পলক। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুনের সঞ্চালনায় গণশুনানিতে বিভিন্ন অভিযোগ করেন স্থানীয় অন্তত ৩০ ব্যক্তি। বেশিরভাগ অভিযোগই ছিল এলাকার চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশের সহায়তা না পাওয়া। এ সময় উপজেলার শেরকোল ইউনিয়নের পুঠিমারি গ্রামের বাসিন্দা সাদেক আলী শেখ অভিযোগ করেন, এক প্রতিবেশী তার জমি দখল করে টয়লেট নির্মাণ করেছে। এ বিষয়ে তিনি থানায় গিয়ে অভিযোগ করেছেন। স্থাপনাটি ভেঙে দিয়ে তার জায়গা উদ্ধারের লিখিত আবেদনও করেছেন থানায়। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি। পুলিশ ঘটনাস্থলেই যায়নি বলেও অভিযোগ তার। এ সময় প্রতিমন্ত্রী প্রতিটি অভিযোগের ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য ওসিকে নির্দেশ দেন। ওসি মিজানুর তখন হাইকোর্টের একটি আদেশের রেফারেন্স দিয়ে বলেন, জমিসংক্রান্ত বিষয়ে পুলিশের কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।
এ জবাব শুনে প্রতিমন্ত্রী পলক ওসির প্রতি ক্ষুব্ধ হন। তিনি বলেন, ‘আমি একজন আইনজীবী এবং আইনপ্রণেতা। আমাকে আপনি হাইকোর্ট দেখাচ্ছেন, আইনের বই দেখাচ্ছেন। তাহলে পুলিশের দরকার কী? পুলিশের হাতে প্রযুক্তি আছে, চোর শনাক্তের কৌশল আছে। তাহলে কেন চোর শনাক্ত হবে না? আপনি আমাদের সহযোগিতা না করলে আমরাও সহযোগিতা করব না।’ এ গণশুনানির ভিডিও প্রতিমন্ত্রী পলক নিজেও ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ওসি মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্টের রিট পিটিশন, পুলিশ সদর দপ্তর ও ডিএমপি (ঢাকা মহানগর পুলিশ) সদর দপ্তরের নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, কোনো ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ জায়গা-জমিসংক্রান্ত বিরোধ, টাকাপয়সা আদায়, প্লট, ফ্ল্যাটসংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘গণশুনানির পাবলিক প্লেসে আমি একেবারে অপ্রস্তুত ছিলাম। ওইদিন ২০২০ ও ’২১-এর মামলার বিষয় নিয়ে আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়। এত বৃত্তান্ত রেকর্ড তো আমার কাছে ছিল না তখন। এ ছাড়া জায়গা-জমির যে ঝামেলার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে অভিযোগকারী বলেছেন বৃষ্টির কারণে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে চার থেকে পাঁচবার গেছে এবং আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে।’
ওসি মিজানুরের পুনর্বহালে হস্তক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ডিএমপির শিল্পাঞ্চল থানার ওসি মো. মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওসি মিজানুর আইনের মধ্যে থেকেই কাজ করেছেন। জমিজমার বিষয়টি দেখেন এসিল্যান্ড, টিএনও এবং আদালত। আদালত যেখানে দেখে সেখানে আমাদের দেখার এখতিয়ারে থাকে না। আমাদের প্রতি যেন অবিচার না হয় এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই তাকে পুনর্বহাল করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আইজি স্যার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলাম। আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওসি মিজানুরকে প্রত্যাহারের আদেশ বাতিল করা হয়।’
এ বিষয়ে জানতে গতকাল রাতে নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলামকে ফোন করলে তিনি কেটে দেন। তবে এর আগে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওসির বদলি ও প্রত্যাহার দুটোই পুলিশের নিয়মিত কাজের অংশ। আইনের বাইরে পুলিশের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।’ প্রতিমন্ত্রীর ক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে। কেউ মন খারাপ করলে সেটা ব্যক্তিগত বিষয়।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান এক প্রশ্নের জবাবে গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, গণশুনানি রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো প্রচলিত পদ্ধতি নয়। আমাদের মাঠ প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ পরিচালনার সুনির্দিষ্ট আইনকানুন বিধিবিধান আছে। তাই গণশুনানির ভিত্তিতে কাউকে বদলি করা এবং পরবর্তী সময়ে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের দাবির মুখে সেই আদেশ বাতিল কোনোমতে যৌক্তিক হয়নি। পদায়ন, বদলি এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমাদের আইনকানুন বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে। জনস্বার্থ ছাড়া রাজনৈতিক, দলীয় বিবেচনা কিংবা কোনো গোষ্ঠীর চাপে ব্যবস্থা গ্রহণের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের।’
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।