
দেশে এখনো ডেঙ্গুর ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। তবে হাসপাতালে রোগী ভর্তি কিছুটা কমেছে ও বেড়েছে চিকিৎসাধীন রোগীদের সুস্থতার হার। ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কিছুটা কমেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ১ আগস্ট সারা দেশে মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৪ হাজার ৪১৬। তাদের মধ্যে সেদিন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৯ হাজার ২৬৪ ও সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ৪৪ হাজার ৮৯১ জন। সে হিসাবে সেদিন মোট রোগীর ১৮ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি ছিল। এর ১৫ দিন পর গতকাল বুধবার ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা ৮ শতাংশ কমে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ১৬৫। এ ব্যাপারে গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, রোগী ভর্তির তুলনায় সুস্থতার হার বেশি হওয়ায় হাসপাতালে চাপ কিছুটা কমেছে।
এমন অবস্থায় গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) নতুন করে আরও ২ হাজার ১৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর মারা গেছে ৯ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত এ বছর মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৯২ হাজার ২৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছে ৪৫ হাজার ২৩০ ও ঢাকার বাইরে ৪৬ হাজার ৭৯৪ জন। বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ৪ হাজার ২ ও ঢাকার বাইরে ৫ হাজার ১৬৩ জন।
অন্যদিকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৪৩৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় মারা গেছে ৩২৯ ও ঢাকার বাইরে ১০৬ জন। মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
গতকাল অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালে মোট শয্যার সংখ্যা ২ হাজার ৬২৫টি। এসব শয্যায় গত মঙ্গলবার পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিল ১ হাজার ৮৯০ জন। শয্যা ব্যবহারের হার ৭২ শতাংশ আর খালি ছিল ২৮ শতাংশ। বিশেষ করে ডিএনসিসি হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে এখনো ডেঙ্গুর শয্যা ফাঁকা রয়েছে।
রোগী পরিস্থিতি তুলে ধরে অধিদপ্তর জানায়, ভর্তি রোগীদের সর্বাধিক ৭৪ শতাংশ রোগীর বয়স ২০-৪০ বছর। ৫ বছরের নিচের শিশু আক্রান্তের হার ৬ শতাংশ ও ষাটোর্ধ্ব রোগী ৫ শতাংশ। পুরুষ ও নারী রোগীর অনুপাত ৬৩ ও ৩৭ শতাংশ।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের বাইরে সারা দেশে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের হার ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর, টাঙ্গাইল ও নরসিংদী জেলায়, বরিশাল বিভাগে বরিশাল, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর জেলায় এবং চট্টগ্রাম বিভাগে চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলায়।
ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটের ঘাটতি নেই জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এনএস-১ কিটের পর্যাপ্ত সংখ্যক মজুদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে রয়েছে। পাশাপাশি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুততম সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী কোটেশনের মাধ্যমে কিনতে পারবে। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পরীক্ষার খরচ এক রেট নির্ধারণ করে সরকারিতে ৫০ ও বেসরকারিতে ৩০০ টাকা বহাল রাখা হয়েছে।
স্যালাইন সংকট বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আইভি ফ্লুইডের সংকটের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সেখানে সংকট নেই। বেসরকারি হাসপাতালে যারা ভর্তি রয়েছেন, তারা হয়তো ফার্মেসিতে ঠিকমতো স্যালাইন পাচ্ছে না। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠকে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
পুরান ঢাকার তিন হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। হাসপাতালগুলো হলো মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, মহানগর শিশু হাসপাতাল ও নাজিরাবাজার মাতৃসদন হাসপাতাল। আজ বৃহস্পতিবার থেকে এ তিন হাসপাতালে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা হবে। গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটা লেখা পোস্ট করেন গত এপ্রিলে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ২৩ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখাটিতে লাইক দেন বা সাড়া দেন। ২ হাজার ৪০০ জন বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এ ছাড়া ৭৮৫ জন তা শেয়ার করেন।
পোস্টটি ছিল সরকারি চাকরি নিয়ে। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন ‘কোয়ালিটি নিয়োগের জন্য কোটা একটি বড় বাধা’। এই পোস্টের পর সাবেক আমলা মিলনের ফেসবুক বন্ধুরা এর ওপর হামলে পড়েন। সেখানে কোটার পক্ষে-বিপক্ষে কথার ঝড় ওঠে। এসব মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, কোটা নিয়ে মানুষ কতটা হতাশ।
সরকারের প্রায় ৭৩ শতাংশ কর্মচারীর নিয়োগ হয় কোটায়। তারা সবাই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বা ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডে চাকরি করেন। সে হিসেবে বেশির ভাগ চাকরিই হয় কোটার ভিত্তিতে। আগে সরকারি চাকরির বিন্যাস শ্রেণি অনুযায়ী করা হলেও এখন তা গ্রেড অনুযায়ী করা হয়। ১ থেকে ৯ গ্রেড প্রথম, ১০ থেকে ১২ গ্রেড দ্বিতীয়, ১৩ থেকে ১৬ তৃতীয় এবং ১৭ থকে ২০তম গ্রেড হচ্ছে চতুর্থ শ্রেণির চাকরি।
২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরি থেকে কোটা তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে তা বহাল থাকে। সরকারের মোট জনবলের ৭৩ শতাংশই হচ্ছে এই দুই শ্রেণির। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি ২৭ শতাংশ। এগুলো নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ চাকরি। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরির গুরুত্ব কম থাকলেও চাকরির বিশাল বাজারের জন্য তা আবার গুরুত্বপূর্ণও। কারণ এসব চাকরিকে কেন্দ্র করে নানা অনিয়ম হচ্ছে। অনিয়মের সঙ্গে যখন কোটা যুক্ত হয়, তখন তা মেধাবীদের জন্য বিভীষিকাময় হয়ে ওঠে।
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শতভাগ কোটা পূরণ করা হয় ৬ ক্যাটাগরিতে। এতিম ও প্রতিবন্ধী ১০, মুক্তিযোদ্ধা ৩০, নারী ১৫, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৫, আনসার ও ভিডিপি ১০ এবং জেলা কোটা ৩০ শতাংশ। এই ছয় ক্যাটাগরির যোগফল ১০০, অর্থাৎ পুরোটাই কোটা। সরকারি চাকরির বড় অংশে মেধাবীদের কোনো জায়গা নেই।
প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কোটা পদ্ধতিতেও সংস্কার করা দরকার। জেলা কোটা এক হিসেবে মেধা কোটাও। তবে তা ওই জেলায় সীমাবদ্ধ। এই জেলা কোটার পরিসরটা বাড়ানো উচিত। তবে কোটা গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে। সেখানে কোটা মুক্ত করে সরকার দারুণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোটা সংস্কারের পাশাপাশি নিয়োগের অনিয়ম বন্ধ করা খুব জরুরি।
গত মে মাসে প্রকাশিত সরকারি কর্মচারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী সরকারের মোট জনবল ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮১৮ জন। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫১৪ ও দ্বিতীয় শ্রেণির ১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৬৪ জন। তৃতীয় শ্রেণির ৬ লাখ ৩ হাজার ৪৩৩ ও চতুর্থ শ্রেণির ৪ লাখ ১৫ হাজার ১০৪ জন। আর ৫ হাজার ১০৩ জন এই শ্রেণিবিন্যাসের বাইরে রয়েছেন। মোট ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮১৮ কর্মচারীর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১০ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৭ জন; যা মোট কর্মচারীর ৭২ দশমিক ৯১ বা ৭৩ শতাংশ।
গত ২৪ এপ্রিল সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন তার ফেসবুক পেজে আরও লেখেন, ‘সরকারি ১১-১৬ গ্রেডের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা চালু রেখেছে সরকার। হয়তো সামাজিক বৈষম্য নিরসনে তা চালু রাখা হয়েছে। এটা নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা করতে চাচ্ছি না। কিন্তু পদ ও পদবির মেধাভিত্তিক চর্চা বা কোয়ালিটি নিয়োগের জন্য কোটা একটা বড় বাধা, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।’
ফেসবুক পোস্ট নিয়ে জানতে চাইলে মাহবুব কবীর মিলন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
তবে মিলনের পোস্টে তার ফেসবুক বন্ধুদের মধ্যে কোটা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যকারীই বেশি। তাদের মন্তব্য এতটাই তির্যক যে এসব মন্তব্য হতাশার সঙ্গে কোটার জাঁতাকলে পিষ্টদের দুর্দশার গল্পও উঠে আসে। তাদের মধ্যে মতিয়ার রহমান নামে একজন লিখেছেন, ‘কোটা পদ্ধতি সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। যোগ্যতার ভিত্তিতে সব নিয়োগ হোক। ডিগবাজির নিয়োগ বন্ধ হোক।’
তানভির হুসাইন নামে একজন লিখেছেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কোটা গ্রহণযোগ্য নয়।’ আলমগীর হাসান লিখেছেন, ‘কোটা এক জঘন্য সিস্টেম। যারা ভুক্তভোগী তারাই শুধু বোঝেন। কোটার কারণে কত অযোগ্য আজ লিডিং পজিশনে। আর মেধাবীরা রাস্তায় ঘুরছে।’
আরিফুল ইসলাম আরিফ লিখেছেন, ‘ ১১-২০ গ্রেড পর্যন্ত কোটামুক্ত নিয়োগ চাই, মেধাবীদের সুযোগ চাই।’
ইতিবাচক মন্তব্যও রয়েছে। তবে তা খুবই কম। সুব্রত দাশ লিখেছেন, ‘কোটা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বা জাতির জন্য প্রয়োজন, কিন্তু সেটাকে মাত্রার মধ্যে রেখে।’
সাংবিধানিক ক্ষমতায় সরকার চাকরিতে কোটাব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে; বিশেষ করে অনগ্রসর এবং সুবিধাবঞ্চিত অংশকে কাজের অধিকার দিতে। একই সঙ্গে সম্মান ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হওয়া থেকে রক্ষা করা এ কোটার উদ্দেশ্য। তবে কোটা নির্দিষ্ট করা থাকলেও চাকরির জন্য যে পরীক্ষা আছে তাতে অংশ নিতে হয় এবং উত্তীর্ণ হতে হয়। একটা মান আছে, সেই মান পর্যন্ত যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। এমন না যে কেউ ফেল করেছে তাকে কোটায় চাকরি দেওয়া হচ্ছে।
জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা জানান, প্রজাতন্ত্রের কর্ম বিভাগে সংস্কার দরকার। কারণ প্রায় ১৪ লাখ কর্মীর কর্ম বিভাগের স্তর বিন্যাস ঠিক নেই। সংস্কার হলে উপযুক্ত জনবল নিয়োগ করা সহজ এবং অর্থ সাশ্রয় হবে। চাকরিপ্রত্যাশীরা বিভ্রান্ত হবেন না। এখন কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম না থাকায় বিশৃঙ্খলা চলছে। বিভিন্ন দপ্তর একই সময়ে নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু করে। ফলে প্রতিযোগী প্রার্থী একটা পরীক্ষায় হাজির হলে অন্যগুলোতে হাজির হতে পারেন না। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতার কারণেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। যে পদের জন্য যে শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করা হয় তার থেকেও বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রার্থী আবেদন করলে অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রার্থী ভীষণ চাপে পড়েন। এতে বৈষম্য হয়। আবার কিছু দপ্তর প্রতিষ্ঠান সারা বছর নিয়োগ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। নিয়োগ কমিটি সংশ্লিষ্টরা প্রতিটি মিটিংয়ের জন্য সম্মানী নেন। সেটা ১০ মিনিট বা ১ ঘণ্টার মিটিং হোক। সম্মানীর জন্য নানান ছুতোয় মিটিং সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন নিয়োগ কমিটির অনেক সদস্য আছেন যারা মাসে ৫০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা সম্মানী পান। তারা নিয়োগ কমিটিতে ঢোকার জন্য তক্কে তক্কে থাকেন। এভাবে একটি কমিটিতে কমপক্ষে চারজন সদস্য থাকেন। সে হিসেবে একটি নিয়োগের জন্য অতিরিক্ত খরচ হয় কয়েক লাখ টাকা। কর্ম বিভাগ সংস্কার করা হলে এই ধরনের অহেতুক খরচ থেকে সরকার রেহাই পাবে।
জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা যে সংস্কার চাচ্ছেন তা মোটাদাগে তিনটি স্তরে বিন্যস্ত হবে। এগুলো হচ্ছে সাপোর্টিং স্টাফ স্তর, ব্যবস্থাপনা স্তর এবং পলিসি স্তর। এই তিনটি স্তর সব সময় আছে। কিন্তু দপ্তরগুলো একেকটা একেক বিধিবিধান দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। অথচ একই বাজেট থেকে অর্থ নিচ্ছে। ওপরের তিনটি স্তরের জন্য তিনটি নিয়োগবিধি থাকতে পারে। তিনটির জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট থাকবে। যোগ্যতার অতিরিক্ত কোনো যোগ্যতা থাকলে সে সেই দপ্তরের জন্য প্রযোজ্য হবে না। কারণ তার থেকে কম যোগ্যতার ব্যক্তি বৈষম্যের শিকার হবেন। তা ছাড়া বেশি যোগ্যতার ব্যক্তিটি তার উপযুক্ত চাকরি নিয়ে অন্য দপ্তরে চলে যান। তখন ওই পদটি আবার বছরের পর বছর শূন্য থাকে। সাপোর্টিং স্টাফের জন্য যে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারিত তার বেশি যোগ্যতার কেউ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন নাএমন ব্যবস্থা করা। সব দপ্তরে এই তিন স্তরের জন্য প্রতি বছর তিনটি নিয়োগ পরীক্ষা নিলেই হবে। যোগ্য ব্যক্তিকে কমিশন মনোনীত করলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর নিয়োগ দেবে।
এতে সাধারণ মানুষ সুস্পষ্ট ধারণা পাবে, কোন স্তরের জন্য প্রতিযোগিতা করবে। একই ব্যক্তিকে অসংখ্য দপ্তরের জন্য টাকা খরচ করতে হবে না বলে মনে করেন জনপ্রশাসনের সংস্কারবাদী কর্মকর্তারা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে বলেছেন, ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশকে আক্রমণ করাই তাদের উদ্দেশ্য। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন নয়, গণতন্ত্র নয়, তারা কেনা গোলামদের ক্ষমতায় বসিয়ে এ জায়গাটি নিয়ে খেলবে।
তিনি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর...। এ ভারত মহাসাগরে আমাদের বঙ্গোপসাগর। এর গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রাচীন যুগ থেকে এ জায়গা দিয়ে সব ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। আমাদের ভারত মহাসাগরে যতগুলো দেশ আছে কারও সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। সম্পূর্ণ নিষ্কণ্টক যোগাযোগ পথ, এ জলপথ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে নির্বিঘেœ পণ্য পরিবহন হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে গণতন্ত্রের নাম নিয়ে, নির্বাচনের নাম নিয়ে, নানা নাম নিয়ে এই দেশে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়, যাতে করে ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করতে পারে তারা। এটাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করা এবং দেশগুলোকে ধ্বংস করা। এটাই হচ্ছে কারও কারও উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে কিন্তু এদের নানা ধরনের টালবাহানা। এটা দেশবাসীকে বুঝতে হবে।’
গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীএসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম প্রমুখ।
স্মরণসভা সঞ্চালনা করেন প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীম।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে একটা কথা আমি সবাইকে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে রাখি, এদের উদ্দেশ্য এখানে নির্বাচন নয়, এদের উদ্দেশ্য গণতন্ত্র নয়, এরা একটা জিনিসই করতে চায়। তারা বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভিত্তিটা মজবুত করেছি। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হচ্ছে, উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র ৫ দশমিক ৭ নামিয়ে এনেছি।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই এলাকাটাকে নিয়ে নানাভাবে খেলার চক্রান্ত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০ বছর ধরে সংঘাত ছিল। আমি সরকারে (১৯৯৬) আসার পর শান্তি ফিরিয়ে আনি। সেখানেও আবার নানারকম অশান্তি সৃষ্টির প্রচেষ্টা চলছে। যেহেতু এটা আমি জানি, বুঝি। যে কারণে কীভাবে আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাবে এবং তাদের কিছু কেনা গোলাম আছে, পদলেহনকারী আছে তাদের বসিয়ে এ জায়গাটা নিয়ে খেলবে। সেটাই হচ্ছে প্রচেষ্টা। সেটা আমি ভালোভাবে বুঝতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু আঁতেল আছে। জানি না তারা এসব চিন্তা করে কি না। এগুলো কখনো উপলব্ধি করে কি না? সেগুলো না করেই তারা এদের সঙ্গে সুর মেলায়, দুটো পয়সার লোভে তারা নানাভাবে এ কাজগুলো করে বেড়ায়। এ বিষয়ে আমাদের যেমন সজাগ থাকতে হবে, তাছাড়া অন্যান্য দেশ... আমি বলব ভারত মহাসাগরসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো যথেষ্ট সচেতন আছে। এটা আমি বিশ্বাস করি।’ সরকারপ্রধান দেশপ্রেমিক নাগরিকদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এই কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের এতটুকু ক্ষতি করে কোনোদিন ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা আমি করি না। তাহলে ২০০১ সালে যখন আমার কাছে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব এসেছিল... খালি মুখেই বলতাম আমি গ্যাস বিক্রি করব, তাহলে ক্ষমতায় আসতে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু দেশের স্বার্থ বেচে, দেশের মানুষের সম্পদ অন্য কোনো দেশের হাতে তুলে দিয়ে আমাকে ক্ষমতায় যেতে হবে এরকম ক্ষমতালোভী আমি না, আমার বাবাও ছিলেন না, আমিও না।’
যুক্তরাষ্ট্রে বঙ্গবন্ধু খুনিদের আশ্রয় দেওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব থেকে বেশি অবাক লাগে যেসব দেশ আমাদের কাছে এসে মানবাধিকারের কথা বলে, তারা নির্বাচনের কথা বলে, স্বচ্ছতার কথা বলে, তারা যেন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে খুব উতলা হয়ে পড়েছে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর এ দেশের মানুষের ওপর, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে অত্যাচার করল, খুনসহ নানান অপকর্ম করেছিল, তা নিয়ে তো কোনো কথা বলেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই নির্বাচনে তো আওয়ামী লীগের হারার কথা ছিল না, আমাদের হারানো হয়েছিল। খালেদা জিয়া যখন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল, তখন তাদের নির্বাচনী চেতনা কোথায় ছিল? জিয়াউর রহমান ও এরশাদের আমলের বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে তো কোনো কথা বলেনি। সেটা নিয়ে এদের কোনো উদ্বেগ আমরা দেখিনি।’ তিনি বলেন, ‘হঠাৎ এবারের নির্বাচনের সময় দেশটি যেন খুব বেশি উতলা হয়ে পড়ল। আর নির্বাচনের দাড়ি, কমা, সেমিকোলন, কোথায়, কী, কীভাবে হবে তাই নিয়ে সব থেকে বেশি... এবং একের এক তাদের লোকজন আসা শুরু করল। কেন? কারণটা কী? বিএনপি এখন তাদের চোখের মণি, যারা এত মানুষ হত্যা করেছে। জাতির পিতার হত্যার সঙ্গে জড়িত। যে বিএনপির দ্বারা কদিন আগে তো আগুন দিয়েছে, সন্ত্রাস ও মানুষ খুন করেছে ২০১৩, ’১৪ ও ’১৫ সালে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছুদিন আগে তো পুলিশের গাড়িতে আক্রমণ, পুলিশের ওপর আক্রমণ করল। তো পুলিশ কি বসে বসে মার খাবে? জাতীয় সম্পদ নষ্ট করা, এ দেশে একটার পর এক ধ্বংসযজ্ঞ চালাল, আজকে তাদের (বিএনপি) নিয়ে মাতামাতি, তাদের নিয়ে বসতে হবে, কথা বলতে হবে। অনেক বলেছি। শুধু বাংলাদেশের মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে, শুধু আমার বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য, অনেক কিছু সহ্য করেছি। করে দেশের জন্য কাজ করেছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকে নির্বাচন নিয়ে এত বেশি কথা হচ্ছে, যখন আমরা আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। আর খালেদা জিয়া আজিজ মার্কা, সাইদ মার্কা নির্বাচন কমিশন করেছে। ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার নিয়ে যখন তারা (বিএনপি) নির্বাচন করতে চেয়েছিল তখন আমরা এসব চেতনা দেখিনি। এত কথাও শুনিনি। আমার মনে হয় বাংলাদেশের উন্নয়নটা তাদের পছন্দ নয়। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা পছন্দ নয়।’ তিনি বলেন, আজকে গণতন্ত্রের কথা বলে, গণতন্ত্র কী?
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যে বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত, যাদের হাতে আমার বাবা-মা-ভাইয়ের রক্তের দাগ। তাদের জন্য তারা উতলা হয়েছে। আমাদের কর্মীদের ওপর বারবার হামলা করে মৃত্যুর মুখে নিয়ে গিয়েছে, তাদের আজকে ক্ষমতায় বসাতে হবে!’
দেশের ৬৩ জেলায় আলোচিত সিরিজ বোমা হামলার দেড় যুগেও নির্দেশদাতা খলনায়কদের চিহ্নিত করতে পারেননি তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এখনো ৪৩টি মামলার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। উল্টো প্রভাবশালী নির্দেশদাতারাই জঙ্গিদের আবারও সামনের দিকে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এ নিয়ে পুলিশ নাখোশ। বোমা হামলার পর যারা মামলাগুলো তদন্ত করেছেন, তাদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তর। ইতিমধ্যে তদন্তকারীদের নামের তালিকা তৈরি করছে বলে পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে। তালিকার কাজ শেষ হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে গাফিলতির প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে পুলিশ।
অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের তদন্তে গাফিলতির কারণে বোমা হামলার বিচারকাজ এখনো শেষ হচ্ছে না। এ নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পর্যালোচনা করে দেখেছে, প্রথমে মামলার এজাহারে নির্দিষ্টভাবে কাউকে আসামি করা হয়নি এবং পরে সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছিল না বা যে কজন সাক্ষী পাওয়া গিয়েছিল তাদের টিআই প্যারেড (শনাক্তকরণ মহড়া) করানো হয়নি। জঙ্গি সংগঠনগুলোকে কারা লালন-পালন করেছে বা কাদের নির্দেশে বোমা হামলা হয়েছে তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মূলত এসব কারণেই তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই এখন তদন্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ চাপে পড়ে তদন্ত করেছিল কি না তাও খতিয়ে দেখবে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, মাসখানেক আগে পুলিশ সদর দপ্তরে জঙ্গিদের বিষয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সিরিজ বোমা হামলার মামলাগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেখানে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পলাতক জঙ্গিসহ অন্য শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিরিজ বোমা হামলার পর মামলাগুলোর তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে বেশি। তারা স্বাধীনভাবে মামলার তদন্ত করতে পেরেছেন কি না তাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। তালিকার পর তদন্ত করে কোনো তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। কারণ সিরিজ বোমার পেছনে ‘প্রভাবশালী লোকজন’ জড়িত। তারা কেন চিহ্নিত হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তা ছাড়া প্রতিটি মামলায় যাদের সাক্ষী করা হয়েছে তারাও ছিল দুর্বল। অনেককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে এখনো ৪৩টি মামলার বিচারকাজ শেষ হয়নি।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, কিছু মামলার অভিযোগপত্রে নাম দেওয়া সাক্ষীদের হদিস নেই। তারা কোথায় আছেন তা জানা যাচ্ছে না। পুলিশের কাছে তথ্য আছে, ভিন্ন মতাদর্শী কিছু তদন্তকারী কর্মকর্তার কারণে তদন্তে গাফিলতি হয়েছে। তাদের তালিকা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের প্রধান কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে একটি মামলায় রায় হয়েছে। তার পরও আর কোনো মামলার রায় হয়নি। তবে তারা চেষ্টা করছেন চলতি বছর কয়েকটি মামলার রায় শেষ করতে। এ নিয়ে তারা কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘মামলার সাক্ষীর কারণে মামলার শুনানিও করা যাচ্ছে না। বিষয়টি আমরা পুলিশকেও অবহিত করেছি।’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ জেলা বাদে একযোগে সারা দেশ কেঁপে উঠেছিল বোমা হামলায়। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও জাগ্রত মুসলিম জনতা (জেএমজেবি)। বড় ধরনের হতাহত না ঘটলেও বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষতি হয়। দেশ-বিদেশে উঠে আসে জঙ্গিদের উত্থানের বিষয়টি। জঙ্গিরা জানান দিয়েছিল তাদের অস্তিত্বের বিষয়টিও।
বোমা হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ কয়েকজন শীর্ষ জঙ্গি নেতাকে গ্রেপ্তার করে। হামলার সঙ্গে কোন কোন জঙ্গি জড়িত ছিল তাদের নাম আসে তদন্তে। কিন্তু পৃষ্ঠপোষক ও নির্দেশদাতাদের বিষয়টি পরিষ্কার করেননি কোনো তদন্ত কর্মকর্তাই। বোমা হামলা পর দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে ১৫৯টি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিরিজ বোমা হামলার পেছনে যারা ছিল তাদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। তবে তাদের সেই চেষ্টা সফল হবে না। যেসব মামলার বিচার শেষ হয়নি তা দ্রুত শেষ করতে আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার শেষ হবে। যেসব জঙ্গি নেতা আত্মগোপনে আছে তাদের আইনের আওতায় বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে।’
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র্যাবের মূল ম্যান্ডেট হলো জঙ্গি গ্রেপ্তার করা। আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াসহ ৯টি সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সিরিজ বোমা হামলায় জেএমবির সঙ্গে হরকাতুল জিহাদও (হুজি) তৎপর ছিল। এই সংগঠনগুলোর তৎপরতা অনেক বছর ধরে কিছুটা কম ছিল। গত বছর জেএমবির স্বঘোষিত আমির উজ্জ্বল মাস্টারকে ব্যাংক ডাকাতি করার সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়। পুরনো সংগঠনগুলোতে যারা এখনো তৎপর আছে, তারা একসঙ্গে বসে নতুন জঙ্গি সংগঠন সম্প্রতি নিষিদ্ধ হওয়া আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় যুক্ত হয়েছিল। এই সংগঠনটি আনসার আল ইসলামের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছিল। সংগঠনের আমিরসহ নেতৃত্ব পর্যায়ে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগে জঙ্গি বাদে যারা জড়িত ছিল তারা নতুন নামে দেশকে অস্থিতিশীল করতে সংঘবদ্ধ হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন সদস্য সংগ্রহের কাজে এখনো তৎপর রয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০০ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে জেএমবির কার্যক্রম শুরু করে। এখনো জেএমবির আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের কার্যক্রম বিস্তার করার চেষ্টা চলছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক আছে তাদের। ২০০৭ সালের ২৯ মে কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও কাশিমপুর কারাগারে শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল ও ইফতেখার হাসান মামুনের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর একই মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আসাদুল ইসলাম আরিফের ফাঁসি কার্যকর হয়।
সিরিজ বোমা হামলার পর জঙ্গিদের ধরিয়ে দিতে ২০০৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর সরকার এক কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। পুরস্কারের মধ্যে ছিল জেএমবির মজলিসের শূরার প্রতি সদস্যের জন্য ১০ লাখ টাকা, আত্মঘাতী সদস্যের জন্য দুই লাখ টাকা ও এহসার সদস্যের জন্য এক লাখ টাকা। শায়খ রহমান ও বাংলা ভাইসহ যেসব শীর্ষ জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়েছিল তাদের পুরস্কারের টাকা কাউকে দেওয়া হয়নি বলে জানান পুলিশের এক কর্মকর্তা।
ঘটনাটি ২০১৩ সালের। আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য পেনশনের ধারণা দিলেন। সরকারি কর্মকর্তাদের কোনো একটা বৈঠকে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মুহিত যখন তার এ ধারণার বিষয়টি তুলে ধরেন, তখন সেখানে উপস্থিত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। বলেছিলেন, স্যার, এটা সম্ভব নয়।
অর্থমন্ত্রী শান্ত হয়ে ওইসব কর্মকর্তার কথা শুনেছিলেন। সম্ভব না বলা কর্মকর্তাদের যুক্তি শুনে তিনি বলেছিলেন, ‘সবার জন্য পেনশন চালু করতে পারলে এ দেশ থেকে অনেক কিছু দূর হবে। মানুষ যখন দেখবে তার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত তখন অনেকেই অনিয়ম থেকে সরে আসবে। মানুষ এত অনিয়ম-হানাহানি করে শুধু ভবিষ্যতের জন্য। আর ভবিষ্যতে বেসরকারি পেনশনের সঙ্গে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনও এক করে দেব। আলাদা পেনশন থাকবে না।’ অর্থমন্ত্রীর এমন মন্তব্য শুনে নীতিনির্ধারক কর্মকর্তারা আরও ভড়কে গেলেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী মুহিত সবকিছু উপেক্ষা করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া তৈরির নির্দেশ দিলেন।
কয়েক মাস পর খসড়া যখন আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে গেল তখন তিনি খুব হতাশ হলেন। অর্থমন্ত্রী অর্থবিভাগের কর্মকর্তাদের ডেকে বললেন, ‘কিচ্ছু হয়নি। তোমরা খসড়া করো।’ এমন পরিস্থিতিতে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মুহিতের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে খসড়ার কাজ শুরু হলো। দেশে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালুর নেপথ্যের এ ঘটনা দেশ রূপান্তরের কাছে তুলে ধরেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের ওই সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী প্রায়ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতেন। এ দুজনের প্রত্যক্ষ চিন্তার ফল হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত মনে করতেন সব নাগরিকের জন্য পেনশন সুবিধা চালু হলে মানুষের নিরাপত্তা বাড়বে। পরিবারের সামাজিক নিরাপত্তা যখন নিশ্চিত হবে, তখন মানুষ আর অন্যায় পথে এগোতে চাইবে না।
২০১৬ সালে পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের সময় আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ, যাদের প্রায় সবাই সরকারি চাকুরে, এখন পেনশন সুবিধা পান। বাকি ৯৫ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ গ্র্যাচুইটি সুবিধা পেলেও অন্যদের জন্য সে সুবিধাও নেই।’ তখন তার সে কথা বক্তব্য পর্যন্তই থাকে। তবে ২০১৮ সালের বাজেট বক্তৃতায় আবারও একই বিষয় উঠে আসে। এর আগে ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ৫৭ জনকে এ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। সেই পাইলট প্রকল্পও উদ্বোধন করেছিলেন মুহিত।
কর্মজীবন শেষে সরকারি বা বেসরকারি চাকরিজীবী হোক না কেন, দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পেনশন সুবিধা পাবেন এ চিন্তা আর এখন স্বপ্ন বা অধরা নয়। বর্তমান সরকার ‘সবার জন্য পেনশন’ স্কিম বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আর এ স্বপ্নের মূল কারিগর ছিলেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, মুহিত ছিলেন স্বপ্নচারী মানুষ। তিনি নিজে স্বপ্ন দেখতেন, স্বপ্ন দেখাতে ভালোবাসতেন। তার চিন্তা-চেতনায় সবসময় ছিল জনগণের কল্যাণ। সবার জন্য পেনশন সুবিধার প্রস্তাব করে তিনি এটির পেছনে লেগে ছিলেন।
আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় সর্বজনীন পেনশনের প্রস্তাব প্রথম তুলেছিলেন। তখন পেনশনের একটি রূপরেখা প্রণয়নের কথা বলেন তিনি।
যে স্বপ্নের কথা বলেছিলেন মুহিত, তার বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। সমালোচকরা বলেছেন, বাংলাদেশের জন্য এ ধরনের প্রকল্প কার্যকর করা সম্ভব নয়। এটি উচ্চাভিলাষী।
তবে এ ব্যাপারে সরকারের কাজ যে সবার অগোচরে এগিয়ে গেছে, সে বিষয়টি স্পষ্ট হয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির এক অনুষ্ঠানে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সেদিন সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তন বিষয়ে একটি উপস্থাপনা দেয় অর্থ বিভাগ।
‘সবার জন্য পেনশন’ আওয়ামী লীগ সরকারের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টো বা ঘোষণাপত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি। আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকাকালে ২০১৭-১৮ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে তিনি এ স্কিম সম্পর্কে একটি রূপরেখা দিয়েছিলেন। এজন্য পাইলট প্রকল্পের কথাও বলেছিলেন। সর্বজনীন পেনশনকে মুহিত তার স্বপ্নের প্রকল্প বলেও উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু তিনি এটি চূড়ান্ত করে দিয়ে যেতে পারেননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তার দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও তিনি মন্ত্রিত্ব পাননি বা বার্ধক্যজনিত কারণে নেননি। এরপর পরিকল্পনাটি ঝুলে যায়। পরে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রকল্পটি ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেন। ধীরে হলেও এগোতে থাকে এর কার্যক্রম।
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। আপাতত চার শ্রেণির জনগোষ্ঠীর জন্য চার ধরনের পেনশন কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে। এগুলোর নাম হচ্ছে প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাসী। যে নামেই চালু হোক, পেছনের স্বপ্নদ্রষ্টাকে বাঁচিয়ে রাখবে এ পেনশন কর্মসূচি। আবুল মাল আবদুল মুহিত চিরঞ্জীব থাকবেন সবার জন্য পেনশনের সুবিধার মাধ্যমেই।
রাসেল চৌধুরী। কক্সবাজার পৌরসভার সচিব হিসেবে কর্মরত। জাতীয় বেতন স্কেল ৭ম গ্রেডের কর্মচারী তিনি। বেতন সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৬৪ হাজার টাকা। চাকরিতে প্রবেশ করেন ২০০৬ সালে। তখন তার বেতন ছিল ৩ হাজার ৩০০ টাকা। ২০১৬ সালে সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। সচিব হিসেবে তার ৮ বছর চাকরিজীবনে বেতন-বোনাস মিলিয়ে আয় হওয়ার কথা ৬৫ থেকে ৭০ লাখ টাকা। ১৭ বছরের চাকরিজীবনে তার আয়ের পরিমাণ সোয়া কোটি টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। অথচ সরকারি এই কর্মচারীর বর্তমান সম্পদের পরিমাণ প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা।
রাসেল চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা গ্রামে। তার বাবার নাম মমতাজ মিয়া। আট ভাই-বোনের মধ্যে রাসেল পঞ্চম। একসময় অভাব-অনটন লেগে থাকা হতদরিদ্র পরিবারের এই ছেলের চট্টগ্রাম শহরের খুলশী ও চকবাজারে আছে একাধিক প্লট ও বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। বান্দরবানে বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে তুলেছেন গরুর খামার, লোহাগাড়া উপজেলায় আছে মার্কেট, গ্রামের বাড়িতে আছে কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। চড়েন ৩৮ লাখ টাকা দামের প্রিমিও গাড়িতে। বিভিন্ন ব্যাংকে নিজের ও স্ত্রীর নামে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স। অভিযোগ আছে, কক্সবাজারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কমিশন-বাণিজ্য করে বিপুল এই অর্থ কামিয়েছেন রাসেল।
তবে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে রাসেল চৌধুরীর অর্জিত প্রায় সব সম্পদ গড়েছেন তার স্ত্রী নুসরাত জাহানের নামে। যদিও এই নুসরাত জাহান একজন সাধারণ গৃহিণী। তার আয়ের তেমন কোনো উৎস নেই। ২০২২ সালে চট্টগ্রামের আয়কর অফিসে রিটার্ন দাখিলের সময় এই নুসরাতই তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
জানা গেছে, ২০০৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ৩ হাজার ৩০০ টাকা বেতনে সহকারী সচিব হিসেবে বান্দরবান পৌরসভায় যোগ দেন রাসেল। সেখান থেকে ২০০৭ সালের ৩ মে বদলি হন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি পৌরসভায়। পরে সন্দ্বীপ ও চন্দনাইশ হয়ে ২০১৬-১৭ সালের দিকে সচিব হিসেবে কক্সবাজার পৌরসভায় যোগ দেন।
২০২০ সালের ১১ নভেম্বর কক্সবাজারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে এই রাসেল চৌধুরীসহ কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ২৪ জনকে তলব করেছিল দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ের তৎকালীন সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দীন (চাকরিচ্যুত)। রাসেলসহ এই ২৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত এখনো চলছে বলে জানিয়েছে দুদকের একটি সূত্র। তবে রাসেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন দুদকের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম।
দুদক সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলায় দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প, বিমানবন্দর আন্তর্জাতিকীকরণ প্রকল্প, মহেশখালীর মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বেশ কিছু প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করে সরকার। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দালালদের সিন্ডিকেট জমির মালিকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। বিষয়টি নজরে আসার পর এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
সূত্রটি জানায়, ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ ওয়াসিম নামে কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখার এক সার্ভেয়ারকে নগদ টাকাসহ আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে একই বছরের ২২ জুলাই মো. সেলিম উল্লাহ, ৩ আগস্ট মোহাম্মদ কামরুদ্দিন ও সালাহ উদ্দিন নামে তিন দালালকে আটক করে দুদক। আটকের সময় এসব দালালের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকার নগদ চেক ও ভূমি অধিগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ মূল নথি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুদককে জানায়, কক্সবাজারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সিন্ডিকেট করে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের কাছ থেকে কমিশনের নামে হাতিয়ে নিতেন কোটি কোটি টাকা। ওই সিন্ডিকেটে পৌরসভার সচিব রাসেল চৌধুরীসহ কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখার ১৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং অনুসন্ধান করে আলোচ্য প্রকল্পগুলোয় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পায় দুদক। এরপর পৌরসভা সচিব রাসেল চৌধুরী, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাসহ ১৯ জনকে ২০২০ সালের ১৫ থেকে ২২ নভেম্বরের মধ্যে দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য নোটিস দিয়েছিলেন তৎকালীন সহকারী উপপরিচালক শরীফ উদ্দিন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেট কসমোপলিটন আবাসিকের বিপরীতে সিডিএর নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের ছয়তলায় তার নামে রয়েছে ৮০ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট। চকবাজার থানার চট্টেশ্বরী রোডে বেভারলি হিল আবাসিক এলাকায় ‘আইডিয়াল প্যানারোমা’ নামের ভবনের দোতলায় আছে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা দামের একটি ফ্ল্যাট। এটি কেনার পর আরও ৭০ লাখ টাকা খরচ করে সেখানে করা হয়েছে ইন্টেরিয়র ডিজাইন। এই ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন রাসেল।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কক্সবাজার থেকে নিজের মালিকানাধীন প্রিমিও এফ প্রাইভেট কারে করে ওই ফ্ল্যাটে যাতায়াত করেন রাসেল। যার নম্বর চট্ট মেট্রো-গ ১১-৮১৯৩। গাড়ির মালিক যে রাসেল সে তথ্য বিআরটিএ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে এই ফ্ল্যাট বাড়ির সামনেই আছে ‘মিসমাক ফেরদৌস’ নামের ছয়তলাবিশিষ্ট বিলাসবহুল বহুতল ভবন। এই ভবনের দোতলায় স্ত্রী নুসরাত জাহানের নামে কিনেছেন ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট। যার প্লট নম্বর-১২১২, ফ্ল্যাট নম্বর-সি-১। তবে কর ফাঁকি দিতে নিবন্ধনের সময় দলিলে ফ্ল্যাটের মূল্য দেখানো হয়েছে ৫৪ লাখ ১০ হাজার টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা সদর রেজিস্ট্রি অফিসে স্ত্রী নুসরাতের নামে ওই ফ্ল্যাটের দলিল নিবন্ধন হয় (দললি নম্বর-২৭৪০)। ফ্ল্যাটটির রেজিস্ট্রি দাতার নাম মো. আবু বকর। এ ছাড়া দক্ষিণ খুলশীর ১ নম্বর রোডে আছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের পাঁচ কাঠার একটি প্লট। ২০২২ সালের ১০ মে জনৈক হাসান আহমেদ নামের এক ব্যক্তির থেকে প্লটটি স্ত্রী নুসরাতের নামে কেনেন রাসেল। দলিল নম্বর ৭৫০৪। কর ফাঁকি দিতে এই দলিলে এই প্লটের দাম দেখানো হয়েছে ৯৫ লাখ টাকা।
খুলশী থানা এলাকার ওই প্লটটির অবস্থান হলো, নগরের ডবলমুরিং থানাধীন দক্ষিণ পাহাড়তলী মৌজার নামজারি খতিয়ান নম্বর-৩১৭/১১ এবং নামজারি খতিয়ান ৩৮১৭। বিএস দাগ নম্বর-২৬৯৭ আন্দর ০৩ শতক এবং বিএস ২৬৯৮ দাগ আন্দর ০৩.৬৬ শতাংশ মোট ০৬.৬৬ শতাংশ জমি। সম্প্রতি এই প্লটে বাড়ি নির্মাণের জন্য সাড়ে ১০ তলার একটি নকশাও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই প্লটে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে সেখানে একটি গভীর নলকূপও বসানো হয়েছে বলে জানা গেছে। নুসরাত জাহানের এসব প্লট ও ফ্ল্যাটের মালিকানা সংক্রান্ত দলিল ও কাগজপত্র দেশ রূপান্তরের কাছে আছে।
বান্দরবানে বিশাল এলাকাজুড়ে রাসেলের বাবা মমতাজ মিয়ার নামে রয়েছে একটি গরুর খামার। খামারটিতে প্রায় দেড় কোটি টাকার গরু রয়েছে। লোহাগাড়া উপজেলা সদরে রয়েছে একটি মার্কেট। মার্কেটটি দেখাশোনা করেন তার বড় শ্যালক মো. আমজাদ হোসেন। ২০২১ সালে তার বাবা মমতাজ মিয়া মারা যাওয়ার পর ৪০ লাখ টাকা খরচ করে গ্রামের বাড়ির চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
সাতকানিয়া ও কক্সবাজার এলাকায় নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে রয়েছে একাধিক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি। বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ইউসিবিএল ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকে তার সঞ্চিত রয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। স্ত্রী নুসরাতের দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। নুসরাত জাহানের নামে এত সম্পদ ও কোটি কোটি টাকার ব্যাংক লেনদেন থাকলেও আয়কর ফাইল (টিআইএন নম্বর-৭৮৮০৮৮৪৭৫৯৩৬-কর অফিস, সার্কেল-২২, কর অঞ্চল-১, চট্টগ্রাম) ওপেন করেছেন ২০২১ সালে। যেখানে বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে নুসরাত জাহানের একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, লোহাগাড়া উপজেলা শাখায় তার একটি হিসাব নম্বর হচ্ছে-২০৫০১৫৬০২০৩২২৮৪০০। ২০১০ সাল থেকে চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত স্টেটমেন্টে দেখা যায়, ১০ বছরে তার এই অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৩ কোটি ২৯ লাখ ২৪ হাজার ৬৫৯ দশমিক ১১ টাকা। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (এজেন্ট ব্যাকিং সার্ভিস ব্রাঞ্চ) চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি খোলা ২০৫০৭৭৭০২১২১০৩৭২৮ অ্যাকাউন্ট (টাইপ এমএসএ-রেগুলার) নম্বরে এক দিনেই জমা হয়েছে ১২ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
৭ম গ্রেডের বেতনে সরকারি চাকরি করে স্ত্রীর নামে অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যাওয়ার উৎস সম্পর্কে জানতে ১৪ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে কল করলে রাসেল চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আপনি (প্রতিবেদক) আমার বিরুদ্ধে যা তথ্য-উপাত্ত পেয়েছেন তা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন। আমার কিছু বলার নাই।’ একই দিন বেলা ৩টা ১০ মিনিটে তার স্ত্রী নুসরাতের মোবাইল ফোনে কল করেন এই প্রতিবেদক। সাধারণ গৃহিণী হয়ে কীভাবে অর্ধশত কোটি টাকার মালিক হলেন? এমন প্রশ্ন করলে নুসরাত বলেন, ‘আমার স্বামীর অবৈধ সম্পদ নেই। সরকারি চাকরির পাশাপাশি বান্দরবানে তার আছে বিশাল গরুর খামার। আমিই স্বামীকে ব্যবসার জন্য টাকা দিয়েছি। এক এক করে তিনি সম্পদ জোগাড় করেছেন। আপনারা খোঁজ নিন।’ আপনি তো সাধারণ গৃহিণী স্বামীকে দেওয়ার জন্য এত টাকা কোথায় পেলেন, এমন প্রশ্ন করলে নুসরাত রেগে গিয়ে বলেন, ‘জবাব দিলে দুদককে দেব। আপনি আর আমাকে ফোন করবেন না।’
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে চলতি বছর মে মাসে। গত শুক্রবার ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে দেশটি। নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার ঘোষণার তিন দিন পার হলেও কারও নাম প্রকাশ হয়নি। তবে বিভিন্ন মহলে নানা দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের নামে আলোচনা এখন সর্বত্র।
কারা যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়েছেন বা পড়তে যাচ্ছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বকারী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, যেহেতু নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে এর লক্ষ্য নির্বাচনী ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারাই। তারাই ভিসানীতির আওতায় পড়বেন, এটাই স্পষ্ট।
তারা আরও বলেন, ভিসানীতি প্রয়োগের কথা জানালেও যুক্তরাষ্ট্র কারও নাম প্রকাশ করেনি। তবুও বলা যেতে পারে, কাদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করবে পশ্চিমা এ প্রভাবশালী দেশটি।
এ ব্যক্তিরা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই একটা তালিকার বেশিরভাগ নামই চূড়ান্ত করে ফেলেছে। অল্পসংখ্যক বাকি থাকতে পারে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে সেগুলোরও চূড়ান্ত করা হবে। যেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত প্রতিষ্ঠান, দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা থাকতে পারেন।
বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে ধারণা পাওয়া গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির উদ্দেশ্যই যেহেতু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে, ফলে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন তারাই ভিসানীতির আওতায় আসবেন। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও থাকতে পারেন। থাকতে পারেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা, তারা যেকোনো দলের হতে পারেন। অল্পসংখ্যক ব্যবসায়ীও থাকতে পারেন।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন,‘ভিসানীতির বিষয়টি আমেরিকা প্রশাসন পরিষ্কার করে ঘোষণা না করলেও বুঝিয়ে দিয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারেন, এমন যে কেউ এ ভিসানীতির আওতায় পড়তে পারেন। যেমন রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নির্বাহী প্রশাসন, জুডিশিয়ারি অর্থাৎ যারাই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থাকবেন, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যাহত করবেন তারাই এর আওতায় আসবেন।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের এর আওতায় পড়ার সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, নির্বাচন ব্যাহত করার ছোট্ট সুযোগ তাদের হাতেও থাকে, তারা যদি জড়িত হন, ভিসানীতির আওতায় পড়বেন।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ভিসানীতির চেয়েও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে নেগোশিয়েশন জরুরি। কে ভিসানীতির আওতায় পড়ল, কে পড়ল না এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঐক্য।’ তিনি বলেন, ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়ায় কারা রয়েছেন সেটা আমেরিকা প্রশাসন ঘোষণা না করলেও বোঝা খুব জটিল কিছু নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘আমেরিকা যেহেতু ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে তাদের ভিসানীতি, ফলে পরিষ্কার হয়ে গেছে কারা পড়তে পারেন এর আওতায়। যারা নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, নিশ্চয়ই তারাই এর আওতায়।’
বিভিন্ন পর্যায়ের ও পেশার নিয়োজিত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক নেতারা ভিসানীতিকে তেমন আমলে না নিলেও বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা ও সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভেতরে আমেরিকার ভিসানীতি ভীষণ ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে এর নানা কারণ জানা গেছে। এর মধ্যে বিদেশে টাকা পাচার, ব্যবসাবাণিজ্য, পরিবারের সদস্যদের বিদেশে থাকা এসব কারণে বেশি ভীতিতে ফেলেছে তাদের। আবার একটা অংশ বিদেশে কিছু না থাকলেও ভিসানীতির আওতায় পড়লে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার ভয় পাচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করায় যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে পারেন এমন দুুশ্চিন্তা যেমন কারও কারও মনে ভর করেছে, তেমনি ভিসানীতিতে পড়ার সুযোগ নেই তারাও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। কারণ এই শ্রেণির লোকজন মনে করছেন, কখনো যদি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান, তখন যদি ভিসা না হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন এমন নামের তালিকাও চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। আরও অগ্রসর হয়ে কোনো কোনো মহল লম্বা তালিকা হাতে নিয়ে ঘুরছে। তবে এসব নামের তালিকার উৎস বা সূত্র নিশ্চিত নয় বলে কেউ কেউ বিষয়টি গুজব মনে করছেন। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের বাইরে প্রায় সবাই ভিসানীতি আতঙ্কে ভুগছেন।
একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভিসানীতিকে জয়-পরাজয় হিসেবে প্রচার করে এলেও ভেতরে ভীতি সবারই রয়েছে। কারণ পশ্চিমা দেশে তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন। ফলে রাজনীতির বাইরেও ব্যক্তিজীবনের প্রয়োজনে ভিসানীতি তাদের ওপর যদি প্রভাব ফেলে, সে আশঙ্কা তো আছেই।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিষয়ে আমি কথা বলি না। আমি একটাই কথা বলব, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ সে কাজই করছে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ভিসানীতি আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বিষয়ে বলতে হলে আরও অনেক বিষয় রয়েছে। এ ভিসানীতি কারা লক্ষ্যবস্তু জানতে চাইলে ইনু বলেন, ‘এটি নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমাদের। তারাই বলতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কারও পরামর্শে সরকার কোনো প্রতিষ্ঠান অদলবদল করবে না, পরিবর্তনও আনবে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে আজ রাজধানীর উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীতে দুটি শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটায় সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে যাত্রাবাড়ী মোড়সংলগ্ন শহীদ ফারুক সড়কে শান্তি সমাবেশ শুরু হবে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল এমপির সভাপতিত্বে সমাবেশে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
বিকেল ৩টায় উত্তরা আজমপুর আমির কমপ্লেক্সের সামনে শুরু হবে আরেকটি শান্তি সমাবেশ। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এ সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।
এতে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। সঞ্চালনা করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।
থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় সোংখলা প্রদেশে গতকাল রবিবার বৌদ্ধ ভিক্ষু ছদ্মবেশে সাত বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। তাঁরা অভিবাসন সংক্রান্ত অভিযান এড়াতে বৌদ্ধভিক্ষুর ছদ্মবেশ ধরেছিলেন।
থাইল্যান্ডের গণমাধ্যম দ্য থাইগার সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বেনামি তথ্যের ভিত্তিতে থাইল্যান্ডের সোংখলা ইমিগ্রেশন ও হাট ইয়াই ট্যুরিস্ট পুলিশ অভিবাসন সক্রান্ত একটি যৌথ অভিযান চালায়, যেখানে এই সাত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
থাই কর্তৃপক্ষ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত সাত ব্যক্তির সবাই পুরুষ। তাঁরা অবৈধ উপায়ে মালয়েশিয়া যেতে চেয়েছিলেন। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মিশে যেতে ও গ্রেপ্তার এড়াতে তারা মাথা কামানোসহ বৌদ্ধভিক্ষুর পোশাক পরিধান করেছিলেন।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে রূপদা নামের ৪৬ বছর বয়সী একজন এই দলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
দ্য পাটায়া নিউজের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুসন্ধানে কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছে, দলটি বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণ শুরু করে মিয়ানমারের তাক প্রদেশের মায়ে সোট জেলার একটি অচিহ্নিত পথ দিয়ে থাইল্যান্ডে প্রবেশ করেছিল। তাদের চূড়ান্ত গন্তব্য ছিল মালয়েশিয়া।
খবরে বলা হয়, সাত ব্যক্তির সঙ্গে সাধারণ পোশাক ছিল। তা ছাড়া তাঁরা যে বৌদ্ধভিক্ষু, তার সপক্ষে কোনো প্রমাণ তাঁদের কাছে ছিল না। এই বিষয় উদ্ঘাটনের পর তাঁদের প্রকৃত পরিচয় নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়।
পরে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে তাঁরা তাঁদের দাবি অনুযায়ী, বৌদ্ধভিক্ষু নয়। গ্রেপ্তার সাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে থাইল্যান্ডে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সৌরজগতের সবচেয়ে ভয়ংকর গ্রহাণু হিসেবে পরিচিত বেন্নু। প্রতি ছয় বছরে একবার করে এটি ঢুকে পড়ে পৃথিবীর কক্ষপথে। কখনো কখনো পৃথিবীর বিপজ্জনক দূরত্বেও চলে আসে। গবেষকদের আশঙ্কা, আগামী ২০০ বছরের মধ্যে সেটি আছড়ে পড়তে পারে পৃথিবীতে। তাই এই গ্রহাণু ঘিরে বিজ্ঞানীদের আগ্রহও ছিল তুমুল। গ্রহাণুটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে তাই ২০১৬ সালে সেখানে পাঠানো হয়েছিল নাসার মহাকাশযান ওসিরিস রেক্সকে। সাত বছর পর গ্রহাণুর নুড়ি-পাথর কুড়িয়ে গতকাল পৃথিবীতে ফিরেছে ওসিরিস রেক্স।
বিবিসি জানাচ্ছে, গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৫২ মিনিটে দেশটির উতাহ মরুভূমিতে সফলভাবে অবতরণ করে ওসিরিস রেক্স থেকে ছেড়ে দেওয়া ক্যাপসুলটি। অবতরণের সময় রাইফেলের বুলেটের চেয়ে ১৫ গুণ বেশি গতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে সেটি। প্রচণ্ড এই গতির কারণে শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বেন্নুর বুক থেকে তুলে আনা নমুনা নিয়ে নিরাপদেই সেটি পৃথিবীর মাটি ছুঁয়েছে।
বিবিসি বলছে, পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণের উৎস কী, বিজ্ঞানীদের সেই গভীরতম প্রশ্নের জবাব মিলতে পারে ওই নমুনা থেকে। অভিযানের সঙ্গে যুক্ত দান্তে লরেত্তা বলেন, ‘উপাদানগুলো পৃথিবী তৈরির আগের। তার মধ্যে কিছু নমুনা থাকতে পারে, যা এমনকি আমাদের সৌরজগতেরও আগের। পৃথিবী কীভাবে গঠিত হলো, কেন এটি প্রাণের বসবাসযোগ্য, আবহমণ্ডলের বায়ু বা মহাসাগরের পানি কোথা থেকে এলো এবং সর্বোপরি পৃথিবীর সব প্রাণ গঠনে প্রয়োজনীয় জৈব অণুর উৎস কী এসব জটিল প্রশ্নের জবাব খোঁজা হবে ওই নমুনা থেকে।
বিজ্ঞানীদের বিদ্যমান ধারণা হলো, প্রাণের জন্য সহায়ক উপাদানগুলোর অনেকই পৃথিবীর আদিকালের দিকে মহাকাশ থেকে ছুটে এসে আছড়ে পড়া গ্রহাণু থেকে পাওয়া। তার মধ্যে অনেকই হয়তো বেন্নুর মতো।
নাসা বেন্নু থেকে নমুনা সংগ্রহের অভিযান শুরু করে ২০১৬ সালে। ৫০০ মিটার চওড়া কাঠামোতে পৌঁছাতে ওসিরিসের লাগে দুই বছর। আরও দুই বছর লাগে নমুনা সংগ্রহের সঠিক স্থান বাছাই করতে। সাত বছরে যেতে-আসতে অনুসন্ধানযানটি ভ্রমণ করেছে ৭০০ কোটি কিলোমিটার পথ।
নাসার বরাতে বিবিসি জানাচ্ছে, নমুনা সংগ্রহের মুহূর্তটি ছিল চমকে দেওয়ার মতো। তিন মিটার দীর্ঘ হাতটি ওসিরিসের মাটিতে রাখতেই সেখানকার উপাদান তরল পদার্থের মতো ভাগ হয়ে যায়। কারণ বেন্নুতে সম্ভবত প্রচুর পানি রয়েছে। তা আছে এর খনিজ উপাদানের মধ্যে। এর পরিমাণ হতে পারে গ্রহাণুটির ওজনের ১০ শতাংশ।
এখন বিজ্ঞানীরা খতিয়ে দেখবেন এর বিভিন্ন ধরনের হাইড্রোজেন অণুর অনুপাত পৃথিবীর সাগরের পানির মতোই কি না। পৃথিবীর শুরুর দিকের অতি তাপের জন্য বেশির ভাগ পানিই শুকিয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। এখন যদি দেখা যায়, বেন্নু ও পৃথিবীর পানির ধরন এক, তাহলে এ ধারণাটা জোরদার হবে যে পরবর্তীকালে এসে আছড়ে পড়া গ্রহাণুই পৃথিবীর পানির উৎস।
নাসার তথ্য বলছে, বেন্নুতে সম্ভবত এর ওজনের ৫ থেকে ১০ শতাংশ কার্বনও আছে। আর এ বিষয়টিও খুব কৌতূহলকর। জানা মতে, পৃথিবীর প্রাণ জৈব রাসায়নিক উপাদানে তৈরি। তাহলে কি নবীন পৃথিবীতে জীবনের জাগরণের জন্য পানির পাশাপাশি জটিল অণুও মহাকাশ থেকে আসতে হয়েছিল? বেন্নু হয়তো এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেতে অনেকটাই সাহায্য করবে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বা পারিবারিক পরিচয়ে রাজনীতির চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এ উপমহাদেশে। বাবার সূত্রে কিংবা দাদার সূত্রে রাজনীতিতে এসে অনেকে পূর্বসূরিকে ছাড়িয়ে গেছেন। আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। রাজনীতিতে হয়েছেন বটবৃক্ষ। আবার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও উত্তরাধিকার সূত্রে পদ-পদবি পেয়ে যাওয়ার উদাহরণও আছে। যারা এভাবে রাজনীতিতে এসেছেন, তারা কার্যত বনসাই হয়ে আছেন।
দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ, স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ প্রায় সব দলেই উত্তরাধিকারের চর্চা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এমপি হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ৯৮। স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ জাগায় যে, আগামী দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা কত হবে? যদিও বর্তমান সংসদের ৩৪টি উপনির্বাচনে উত্তরাধিকার সূত্রে এমপি হয়েছেন কমই।
রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের চর্চা যে খারাপ সেটা মোটেও বলা যাবে না। বরং উত্তরাধিকারের কারণে দেশের জন্য, জনগণের জন্য অবদান রাখা ঐতিহ্যবাহী দল আরও শক্তিশালী হওয়ার উজ্জ্বল উদাহরণও আছে। যেমন ভারতের রাজনীতিতে ইন্দিরা গান্ধী। বাবা নেহরু গান্ধীর উত্তরসূরি হলেও নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে পঁচাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান ঘটেছে। আরও শক্তিশালী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরেছে।
বিএনপির ক্ষেত্রেও বলা যায়, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলটির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। তাদের ছেলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সংসদের ৩০০ আসনে উত্তরসূরি হিসেবে বা পারিবারিক পরিচয়ে মনোনয়ন পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত ৫০ আসনেও এই চর্চা আছে। বরং হিসাব করলে বেশিই দেখা যায়।
সব মিলিয়ে একাদশ সংসদেই উত্তরসূরি বা পারিবারিক পরিচয়ে এমপি রয়েছেন শতাধিক। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে। পারিবারিক সূত্রে রাজনীতিতে আসা সরকারি দলের এমপির সংখ্যা ৮৬। এর মধ্যে প্রায় ৭০ জনই মাঠের রাজনীতি করে আসেননি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৯ জনের মধ্যে এই সংখ্যা ৭। এ ছাড়া সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি।
একাদশ সংসদে বিএনপির সাতটি আসন ছিল। এর মধ্যে একটি সংরক্ষিত নারী আসন। তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনে এমপি হন। তার বাবা অলি আহাদ আওয়ামী লীগের প্রথম প্রচার সম্পাদক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের প্রভাব ধরে রাখতে নেতার পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে আনা হয়। আবার অনেক সময় যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
তবে উত্তরাধিকার চর্চার প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমন চর্চার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতির ভারসাম্য নষ্ট হয়। সংসদে দেখা যায়, অনেকে বক্তব্য দিতে পারেন না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিও বোঝেন না। আবার জনসমাবেশে অরাজনৈতিক আচরণ করেন, যা সরকার বা দলকে বেকায়দায় ফেলে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উত্তরাধিকারের রাজনীতি গণতন্ত্র ও আধুনিক রাজনীতির বিরোধী। দলের জন্য ও রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে এ ধারার রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে বলেই দুর্বল হয়েছে রাজনীতি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা বা যোগ্যতা থাকলে এটা গ্রহণ করা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে সংসদে এত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। আমি মনে করি, এ সংখ্যা নিয়ে প্রত্যেক দলেরই চিন্তার ব্যাপার আছে। কারণ দাদা, বাবার যোগ্যতায় এসব পদ পেয়ে থাকলে গণতন্ত্র কতটা মজবুত করবে, সেটাও ভাবতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রে উত্তরাধিকারের সুযোগ নেই। আবার এটাকে ধর্মগ্রন্থের বাণী মনে করলেও চলবে না। কারও যদি যোগ্যতা থেকে থাকে, তাহলে বাবা-দাদা থাকলে আসতে পারবেন না সেটাও তো হতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যারা : এমপি ও মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত। তার বড় ভাই সিরাজুল ইসলাম ১৯৭০, ’৭৩, ’৭৯ ও ’৮৬ সালের এমপি। দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুর রউফ চৌধুরী। তিনি ১৯৯৬ সালের এমপি ও দলের নেতা ছিলেন। ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা। এ ছাড়া তিনবার দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
দিনাজপুরের আরেকটি আসন থেকে নির্বাচিত ইকবালুর রহিমের বাবা প্রয়াত আবদুর রহিম। তিনি সত্তরের এমপি ছিলেন। তবে ইকবালুর রহিম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুরের আরেকটি আসনের এমপি শিবলী সাদিক। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এমপি ছিলেন।
রংপুর-২ আসনের আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী এমপি ছিলেন। গাইবান্ধা-২ আসনের মাহাবুব আরা গিনি পারিবারিক বিবেচনায় এমপি হয়েছেন। বগুড়া-১ আসনের সাহাদারা মান্নান প্রয়াত এমপি আবদুল মান্নানের স্ত্রী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ১৯৭৩ সালের এমপি প্রয়াত মইন উদ্দীন আহমদের ছেলে। নওগাঁ-৫ আসনের নিজাম উদ্দিন জলিলের (জন) বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের তানভীর শাকিল জয় প্রয়াত মন্ত্রী ও নেতা মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে। তার দাদা জাতীয় চার নেতার অন্যতম মনসুর আলী। সিরাজগঞ্জ-২ আসনের ডা. হাবিবে মিল্লাত সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই। সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম প্রয়াত নেতা এইচ টি ইমামের ছেলে। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মেরিনা জাহান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য প্রয়াত মযহারুল ইসলামের মেয়ে। তার ভাই চয়ন ইসলামও এমপি ছিলেন। পাবনা-২ আসনের আহমেদ ফিরোজ কবির প্রয়াত আহমেদ তফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি ১৯৭৩ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। মেহেরপুর-১ আসনের ফরহাদ হোসেনের বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ সহিউদ্দিন ছিলেন ১৯৭০, ’৭৩ ও ’৮৬ সালের এমপি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের দাদা গোলাম কিবরিয়া ছিলেন এমপি। ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাবা প্রয়াত নুরে আলম সিদ্দিকী ছিলেন দলের নেতা। ঝিনাইদহ-৩ আসনের এমপি শফিকুল আজম খান। তার বাবা প্রয়াত শামসুল হুদা জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্যের ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য দলের নেতা। অবশ্য রাজনীতিতে স্বপনেরও অবদান রয়েছে। রংপুর-৬ আসন থেকে নির্বাচিত স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা প্রয়াত রফিকুল্লাহ চৌধুরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান তিনবারের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হেলালের ছেলে শেখ ফারহান নাসের তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের এমপি। বাগেরহাট-৩ আসনের হাবিবুন নাহার খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী। খুলনা-২ আসনের শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল শেখ নাসেরের ছেলে। খুলনা-৩ আসনের মন্নুজান সুফিয়ানের স্বামী আবু সুফিয়ান এ আসনের এমপি ছিলেন। তিনি নিজেও অবশ্য রাজনীতি করেছেন। ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের ভাতিজা। ভোলা-৪ আসনের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বাবা প্রয়াত এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৭৯ ও ’৯১ সালের এমপি। টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম সাবেক এমপি হাজি মকবুল আহমেদের ছেলে। টাঙ্গাইলের আরেক আসনের এমপি খান আহমেদ শুভ দলের জেলা সভাপতি ফজলুর রহমান ফারুকের ছেলে। ফারুক ১৯৭৩ সালে এমপি ছিলেন। ময়মনসিংহ-১ আসনের জুয়েল আরেং সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিনের ছেলে। ময়মনসিংহ-২ আসনের শরীফ আহমেদের বাবা শামসুল হক চারবারের এমপি। ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের বাবা প্রয়াত এমপি আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ। নেত্রকোনার এমপি সাজ্জাদ হাসানের বাবা প্রয়াত আখলাকুল হোসাইন আহমেদ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সৈয়দা জাকিয়া নূর চার জাতীয় নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে ও দলের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন। কিশোরগঞ্জের আরেক এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে। অন্য এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বাবা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমান। তার মা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আইভি রহমান। মানিকগঞ্জের নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বাবা প্রয়াত সায়েদুর রহমান এমপি ছিলেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত নসরুল হামিদের বাবা হামিদুর রহমান দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মা হাসনা হামিদও রাজনীতি করতেন। গাজীপুরের জাহিদ আহসান রাসেল প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। সিমিন হোসেন রিমি প্রয়াত জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। মেহের আফরোজ চুমকির বাবা প্রয়াত ময়েজউদ্দিন ১৯৭০ ও ’৭৩ সালের এমপি। কাজী কেরামত আলীর বাবা কাজী হেদায়েত হোসেন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। মুজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তার আরেক ছেলে নূর-ই-আলম চৌধুরীও এমপি। ফরিদপুর-৩ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আত্মীয় পরিচয়ে এমপি হন। ফরিদপুরের আরেকটি আসনের এমপি শাহদাব আকবরের মা প্রয়াত এমপি দলের নেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। নাহিম রাজ্জাকের বাবা প্রয়াত নেতা ও এমপি আবদুর রাজ্জাক। জয়া সেনগুপ্তা প্রয়াত এমপি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। এ কে আবদুল মোমেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাই। গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের (মিলাদ গাজী) বাবা প্রয়াত এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী। মাহবুব আলীর বাবা আছাদ আলী প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আনিসুল হকের বাবা প্রয়াত সিরাজুল হক ১৯৭০ সালের এমপি ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা। রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বাবা এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী ছিলেন জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের এমপি। দীপু মনির বাবা প্রয়াত এমএ ওয়াদুদ ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আয়েশা ফেরদাউসের স্বামী প্রয়াত এমপি মোহাম্মদ আলী। মাহফুজুর রহমানের বাবা মুস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের এমপি ছিলেন। এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাবা প্রয়াত ফজলুল কবির চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাবা চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বাবা প্রয়াত এমপি আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সাইমুম সরওয়ার কমলের বাবা প্রয়াত ওসমান সরওয়ার চৌধুরী ছিলেন ১৯৭৩ সালের এমপি। শাহিনা আক্তার চৌধুরীর স্বামী সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি। শিরীন আহমেদের স্বামী প্রয়াত বজলুর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। নাহিদ ইজাহার খানের বাবা খন্দকার নাজমুল হুদা পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর নিহত সেনা কর্মকর্তা। খাদিজাতুল আনোয়ারের বাবা প্রয়াত এমপি রফিকুল আনোয়ার। ওয়াসিকা আয়শা খানের বাবা প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। কানিজ ফাতেমা আহমেদের স্বামী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা কুমিল্লার প্রয়াত নেতা আফজল খান। উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের (শিউলী আজাদ) স্বামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল আজাদ। রুমানা আলীর বাবা প্রয়াত এমপি রহমত আলী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের এমপি বদরুদ্দোজা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। তার মামা খালেদ মোশাররফ। পারিবারিক পরিচয়ে এমপি হলেও সংগ্রাম এমপি হওয়ার আগে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুলতানা নাদিরার স্বামী প্রয়াত নেতা গোলাম সবুর টুলু। হাবিবা রহমান খান শেফালীর বাবা প্রয়াত ফজলুর রহমান খান তিনবারের এমপি ছিলেন। জাকিয়া পারভীন খানমের বাবা সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া। তার স্বামী আওয়ামী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। অপরাজিতা হকের বাবা প্রয়াত খন্দকার আসাদুজ্জামান ছিলেন তিনবারের এমপি। তামান্না নুসরাত বুবলীর স্বামী প্রয়াত লোকমান হোসেন ছিলেন নরসিংদীর মেয়র। জাকিয়া তাবাসসুমের বাবা প্রয়াত আজিজুর রহমান দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ফরিদা খানম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তার স্বামী নোয়াখালী জেলা মুজিব বাহিনী প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। রাজবাড়ীর সালমা চৌধুরীর বাবা প্রয়াত আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী ছিলেন এমপি। সৈয়দা রাশিদা বেগমের স্বামী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সৈয়দ নিজাম উদ্দিন লাইট। ফেরদৌসী ইসলাম জেসীর বাবা প্রয়াত ভাষাসৈনিক ও সংসদ সদস্য আ আ ম মেসবাহুল হক বাচ্চু। পারভীন হক সিকদারের বাবা প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার। জামালপুরের আবুল কালাম আজাদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভায়রা। এ ছাড়া শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ হেলাল উদ্দীন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শামীম ওসমানের পারিবারিক পরিচয় থাকলেও তারা এখন প্রত্যেকে রাজনীতিতে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত।
জাতীয় পার্টি : বিরোধী দলনেতা রওশন এরশাদ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তাদের ছেলে সাদ এরশাদও এমপি। আহসান আদেলুর রহমান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ভাগ্নে। জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদেরও এমপি। নীলফামারী-৪ আসনে আদেলুর রহমান আদেল, তার বাবা ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি ছিলেন। নাসরীন জাহান রত্না দলের কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী। আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান।
অন্যান্য : ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান সংরক্ষিত নারীর আসনে এমপি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নিজে ও তার স্ত্রী বেগম আফরোজা হকও এমপি। মাহী বি চৌধুরীর বাবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সেলিনা ইসলামের স্বামী পদচ্যুত এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল।
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৫টি রোডমার্চসহ টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে দলটি। তবে মাঝে তিন দিন ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচি নেই। বিএনপির নতুন ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ, রোডমার্চ ও দোয়া মাহফিল।
গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। আমাদের অনেক রাজনৈতিক জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে আমরা কতগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় অসুস্থতার কারণে মহাসচিবের অনুরোধে সেটি পড়ে শোনান স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
পাঁচটি রোডমার্চ : ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট (সিলেট বিভাগ), ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী (বরিশাল বিভাগ), ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ (ময়মনসিংহ বিভাগ) এবং ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম (কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় হবে সমাবেশ : ১৯ সেপ্টেম্বর জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরের টঙ্গী; ২২ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী, উত্তরা; ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার, আমিনবাজার; ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রমজীবী সমাবেশ এবং ২ অক্টোবর কৃষক সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তবে ২০, ২৪ ও ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীজনদের কর্মসূচি রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলনে যে জোট ও দলগুলো আছে, তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করবে। তারা হয়তো সবগুলো করবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকাকেন্দ্রিক সমাবেশ-পদযাত্রার কর্মসূচি গণতন্ত্র মঞ্চের : এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের দারুস সালাম ভবনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। নতুন এই কর্মসূচি হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা; ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও পদযাত্রা।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম জোটের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির বাইরে জোটের নিজস্ব কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সেমিনার ও আলোচনা সভাও হবে। সেসবের তারিখ-স্থানসহ বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির কর্মসূচি: ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলা জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেট রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় সমাবেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-পটুয়াখালী রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও ঢাকা জেলার আমিনবাজারে সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ, ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ, ঢাকায় ২৯ সেপ্টেম্বর মহিলা সমাবেশ ও ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিক সমাবেশ, ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ৩ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই-চট্টগ্রাম রোডমার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
রুবেলা বা জার্মান মিজেলস একটি সংক্রামক রোগ। এটি রুবেলাভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। একে জার্মান হাম বা তিন দিনের হামও বলা হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। করোনা ভাইরাসের মতই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকেই এই রোগ ছড়ায়। গর্ভাবস্থায় এই রোগ গর্ভস্থ শিশুর নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
রুবেলা সাধারণত ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির ড্রপলেটসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে শ্বাসপ্রশ্বাসের মধ্যে দিয়ে আরেকজনকে আক্রান্ত করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা থেকে গর্ভস্থ সন্তানের রুবেলাভাইরাস হতে পারে।
তবে একবার এই রোগটি হয়ে গেলে সাধারণত স্থায়ীভাবে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
রুবেলার লক্ষণ বোঝা করা কঠিন, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে ভাইরাসটি রোগীর দেহে সাত থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ সাধারণত ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় এবং সাধারণত ১ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়।
হালকা জ্বর ১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮.৯ C) বা তার কম
মাথাব্যথা
নাকে সর্দি বা বন্ধ নাক।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি হওয়া।
মাথা ও ঘাড়ের পেছনের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, কানের পিছনের লিম্ফ নড পিণ্ডর মতো ফুলে যাওয়া
লাল বা গোলাপি ফুসকুড়ি যা মুখে শুরু হয় এবং দ্রুত ঘাড়, শরীর, বাহু ও পায়ে ছড়িয়ে পড়ে
জয়েন্টগুলোতে ব্যথা, বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে
হাঁচি-কাশি এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা
ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা
রুবেলাভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। এটি সাধারণত চিকিৎসা ছাড়াই ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
এমনকি গর্ভবতী নারী আক্রান্ত হলে মা বা শিশুর ও কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভবতী নারী রুবেলা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এলে তাকে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া যেতে পারে। তাই রুবেলাকে টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা খুব জরুরি।
তবে একবার আক্রান্ত হলে সে সময় যা যা করতে হবে,
১. যেহেতু রোগটি অনেক ছোঁয়াচে তাই আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং আক্রান্ত হলে কঠোর পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো
৩. সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
৪. ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ যুক্ত ফলমূল খেতে হবে বেশি করে।
৫. প্রতিদিন গোসল করাতে হবে, শরীরে জ্বর থাকলে ভেজা কাপড় একটু পর পর শরীর মুছতে হবে।
৬. কোনও ওষুধ খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
কেউ যদি গর্ভাবস্থায় রুবেলায় আক্রান্ত হন তবে রুবেলা অনাগত শিশুর ক্ষতি করার পাশাপাশি গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিশুর জন্মের পরে তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
হার্টের ত্রুটি
ছানি
বধিরতা
বিলম্বিত শেখা
লিভার এবং প্লীহার ক্ষতি
ডায়াবেটিস
থাইরয়েড সমস্যা
রুবেলার সুনির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা না থাকায় টিকা হলো উত্তম প্রতিষেধক। এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল হাম-মাম্পস-রুবেলা (এমএমআর) টিকার দুই ডোজ টিকা প্রয়োগ। সব বয়সেই এই টিকা নেয়া যায়।
টিকার প্রথম ডোজটি সাধারণত শিশুর নয় থেকে ১৫ মাসের মধ্যে দেয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয় শিশুর সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্করা এই টিকা নিতে পারেন। সাধারণত প্রথম ডোজ নেয়ার কমপক্ষে এক মাস থেকে তিন মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়।
কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সে টিটি টিকার সঙ্গে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা দিতে হয়। এ ছাড়া গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের রুবেলা অ্যান্টিবডি টেস্ট করে প্রয়োজন হলে ৩ মাস ব্যবধানে ২ ডোজ টিকা দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা পরবর্তী এক মাসের মধ্যে সন্তান নিতে নিষেধ করা হয়।
১. অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। কেউ হাঁচি-কাশি দিলে তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে হবে।
২. হাত সবসময় সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার রাখতে হবে।
৩. নাকে, চোখে, মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কাশি বা হাঁচি আসলে সে সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহৃত টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।
৫. যাদের শরীরে ফুসকুড়ি বা র্যাশ জাতীয় আছে তাদের সাথে শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
৬. অতিরিক্ত ভীর বা জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’