
বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে চীন কোনো হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানিয়েছেন চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে আগামী নির্বাচনে কে ক্ষমতায় আসবে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে সাক্ষাতে চীনা রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী ও চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, চীন কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। একইভাবে বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়েও কোনো হস্তক্ষেপ করা হবে না। এ সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের দীর্ঘ সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে সবরকম সহযোগিতা করবে চীন। চীনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে গেলে ২০২৬ সাল পরবর্তী বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশ যেসব প্রতিবন্ধকতায় পড়তে পারে সেখানেও শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দিয়ে পাশে থাকবে চীন।
বিদেশি ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশকে নিয়ে চীন চিন্তিত নয় উল্লেখ করে ইয়াও ওয়েন বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে সংযোগের উন্নতি হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রকল্পে আরও বিনিয়োগ করতে চায় চীন। তিনি বলেন, চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির কারখানা স্থাপনে আগ্রহী বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন প্রকল্পে জড়িত বাংলাদেশিদের প্রশিক্ষণ দিতে চীন আগ্রহী।
এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশ চীনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করে। অবকাঠামো খাতসহ অনেক ক্ষেত্রেই তারা অভিজ্ঞ। তারা আমাদের এ বিষয়ে সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ রয়েছে চীনা বিনিয়োগকারীদের। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পদ্মাসেতুর পর এবার পশ্চিমাঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে চায় চীন। একই সঙ্গে , বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ রয়েছে চীনা বিনিয়োগকারীদের।
সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটা লেখা পোস্ট করেন গত এপ্রিলে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ২৩ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখাটিতে লাইক দেন বা সাড়া দেন। ২ হাজার ৪০০ জন বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এ ছাড়া ৭৮৫ জন তা শেয়ার করেন।
পোস্টটি ছিল সরকারি চাকরি নিয়ে। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন ‘কোয়ালিটি নিয়োগের জন্য কোটা একটি বড় বাধা’। এই পোস্টের পর সাবেক আমলা মিলনের ফেসবুক বন্ধুরা এর ওপর হামলে পড়েন। সেখানে কোটার পক্ষে-বিপক্ষে কথার ঝড় ওঠে। এসব মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, কোটা নিয়ে মানুষ কতটা হতাশ।
সরকারের প্রায় ৭৩ শতাংশ কর্মচারীর নিয়োগ হয় কোটায়। তারা সবাই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বা ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডে চাকরি করেন। সে হিসেবে বেশির ভাগ চাকরিই হয় কোটার ভিত্তিতে। আগে সরকারি চাকরির বিন্যাস শ্রেণি অনুযায়ী করা হলেও এখন তা গ্রেড অনুযায়ী করা হয়। ১ থেকে ৯ গ্রেড প্রথম, ১০ থেকে ১২ গ্রেড দ্বিতীয়, ১৩ থেকে ১৬ তৃতীয় এবং ১৭ থকে ২০তম গ্রেড হচ্ছে চতুর্থ শ্রেণির চাকরি।
২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরি থেকে কোটা তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে তা বহাল থাকে। সরকারের মোট জনবলের ৭৩ শতাংশই হচ্ছে এই দুই শ্রেণির। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি ২৭ শতাংশ। এগুলো নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ চাকরি। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরির গুরুত্ব কম থাকলেও চাকরির বিশাল বাজারের জন্য তা আবার গুরুত্বপূর্ণও। কারণ এসব চাকরিকে কেন্দ্র করে নানা অনিয়ম হচ্ছে। অনিয়মের সঙ্গে যখন কোটা যুক্ত হয়, তখন তা মেধাবীদের জন্য বিভীষিকাময় হয়ে ওঠে।
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শতভাগ কোটা পূরণ করা হয় ৬ ক্যাটাগরিতে। এতিম ও প্রতিবন্ধী ১০, মুক্তিযোদ্ধা ৩০, নারী ১৫, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৫, আনসার ও ভিডিপি ১০ এবং জেলা কোটা ৩০ শতাংশ। এই ছয় ক্যাটাগরির যোগফল ১০০, অর্থাৎ পুরোটাই কোটা। সরকারি চাকরির বড় অংশে মেধাবীদের কোনো জায়গা নেই।
প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কোটা পদ্ধতিতেও সংস্কার করা দরকার। জেলা কোটা এক হিসেবে মেধা কোটাও। তবে তা ওই জেলায় সীমাবদ্ধ। এই জেলা কোটার পরিসরটা বাড়ানো উচিত। তবে কোটা গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে। সেখানে কোটা মুক্ত করে সরকার দারুণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোটা সংস্কারের পাশাপাশি নিয়োগের অনিয়ম বন্ধ করা খুব জরুরি।
গত মে মাসে প্রকাশিত সরকারি কর্মচারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী সরকারের মোট জনবল ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮১৮ জন। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫১৪ ও দ্বিতীয় শ্রেণির ১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৬৪ জন। তৃতীয় শ্রেণির ৬ লাখ ৩ হাজার ৪৩৩ ও চতুর্থ শ্রেণির ৪ লাখ ১৫ হাজার ১০৪ জন। আর ৫ হাজার ১০৩ জন এই শ্রেণিবিন্যাসের বাইরে রয়েছেন। মোট ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮১৮ কর্মচারীর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১০ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৭ জন; যা মোট কর্মচারীর ৭২ দশমিক ৯১ বা ৭৩ শতাংশ।
গত ২৪ এপ্রিল সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন তার ফেসবুক পেজে আরও লেখেন, ‘সরকারি ১১-১৬ গ্রেডের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা চালু রেখেছে সরকার। হয়তো সামাজিক বৈষম্য নিরসনে তা চালু রাখা হয়েছে। এটা নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা করতে চাচ্ছি না। কিন্তু পদ ও পদবির মেধাভিত্তিক চর্চা বা কোয়ালিটি নিয়োগের জন্য কোটা একটা বড় বাধা, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।’
ফেসবুক পোস্ট নিয়ে জানতে চাইলে মাহবুব কবীর মিলন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
তবে মিলনের পোস্টে তার ফেসবুক বন্ধুদের মধ্যে কোটা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যকারীই বেশি। তাদের মন্তব্য এতটাই তির্যক যে এসব মন্তব্য হতাশার সঙ্গে কোটার জাঁতাকলে পিষ্টদের দুর্দশার গল্পও উঠে আসে। তাদের মধ্যে মতিয়ার রহমান নামে একজন লিখেছেন, ‘কোটা পদ্ধতি সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। যোগ্যতার ভিত্তিতে সব নিয়োগ হোক। ডিগবাজির নিয়োগ বন্ধ হোক।’
তানভির হুসাইন নামে একজন লিখেছেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কোটা গ্রহণযোগ্য নয়।’ আলমগীর হাসান লিখেছেন, ‘কোটা এক জঘন্য সিস্টেম। যারা ভুক্তভোগী তারাই শুধু বোঝেন। কোটার কারণে কত অযোগ্য আজ লিডিং পজিশনে। আর মেধাবীরা রাস্তায় ঘুরছে।’
আরিফুল ইসলাম আরিফ লিখেছেন, ‘ ১১-২০ গ্রেড পর্যন্ত কোটামুক্ত নিয়োগ চাই, মেধাবীদের সুযোগ চাই।’
ইতিবাচক মন্তব্যও রয়েছে। তবে তা খুবই কম। সুব্রত দাশ লিখেছেন, ‘কোটা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বা জাতির জন্য প্রয়োজন, কিন্তু সেটাকে মাত্রার মধ্যে রেখে।’
সাংবিধানিক ক্ষমতায় সরকার চাকরিতে কোটাব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে; বিশেষ করে অনগ্রসর এবং সুবিধাবঞ্চিত অংশকে কাজের অধিকার দিতে। একই সঙ্গে সম্মান ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হওয়া থেকে রক্ষা করা এ কোটার উদ্দেশ্য। তবে কোটা নির্দিষ্ট করা থাকলেও চাকরির জন্য যে পরীক্ষা আছে তাতে অংশ নিতে হয় এবং উত্তীর্ণ হতে হয়। একটা মান আছে, সেই মান পর্যন্ত যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। এমন না যে কেউ ফেল করেছে তাকে কোটায় চাকরি দেওয়া হচ্ছে।
জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা জানান, প্রজাতন্ত্রের কর্ম বিভাগে সংস্কার দরকার। কারণ প্রায় ১৪ লাখ কর্মীর কর্ম বিভাগের স্তর বিন্যাস ঠিক নেই। সংস্কার হলে উপযুক্ত জনবল নিয়োগ করা সহজ এবং অর্থ সাশ্রয় হবে। চাকরিপ্রত্যাশীরা বিভ্রান্ত হবেন না। এখন কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম না থাকায় বিশৃঙ্খলা চলছে। বিভিন্ন দপ্তর একই সময়ে নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু করে। ফলে প্রতিযোগী প্রার্থী একটা পরীক্ষায় হাজির হলে অন্যগুলোতে হাজির হতে পারেন না। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতার কারণেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। যে পদের জন্য যে শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করা হয় তার থেকেও বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রার্থী আবেদন করলে অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রার্থী ভীষণ চাপে পড়েন। এতে বৈষম্য হয়। আবার কিছু দপ্তর প্রতিষ্ঠান সারা বছর নিয়োগ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। নিয়োগ কমিটি সংশ্লিষ্টরা প্রতিটি মিটিংয়ের জন্য সম্মানী নেন। সেটা ১০ মিনিট বা ১ ঘণ্টার মিটিং হোক। সম্মানীর জন্য নানান ছুতোয় মিটিং সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন নিয়োগ কমিটির অনেক সদস্য আছেন যারা মাসে ৫০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা সম্মানী পান। তারা নিয়োগ কমিটিতে ঢোকার জন্য তক্কে তক্কে থাকেন। এভাবে একটি কমিটিতে কমপক্ষে চারজন সদস্য থাকেন। সে হিসেবে একটি নিয়োগের জন্য অতিরিক্ত খরচ হয় কয়েক লাখ টাকা। কর্ম বিভাগ সংস্কার করা হলে এই ধরনের অহেতুক খরচ থেকে সরকার রেহাই পাবে।
জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা যে সংস্কার চাচ্ছেন তা মোটাদাগে তিনটি স্তরে বিন্যস্ত হবে। এগুলো হচ্ছে সাপোর্টিং স্টাফ স্তর, ব্যবস্থাপনা স্তর এবং পলিসি স্তর। এই তিনটি স্তর সব সময় আছে। কিন্তু দপ্তরগুলো একেকটা একেক বিধিবিধান দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। অথচ একই বাজেট থেকে অর্থ নিচ্ছে। ওপরের তিনটি স্তরের জন্য তিনটি নিয়োগবিধি থাকতে পারে। তিনটির জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট থাকবে। যোগ্যতার অতিরিক্ত কোনো যোগ্যতা থাকলে সে সেই দপ্তরের জন্য প্রযোজ্য হবে না। কারণ তার থেকে কম যোগ্যতার ব্যক্তি বৈষম্যের শিকার হবেন। তা ছাড়া বেশি যোগ্যতার ব্যক্তিটি তার উপযুক্ত চাকরি নিয়ে অন্য দপ্তরে চলে যান। তখন ওই পদটি আবার বছরের পর বছর শূন্য থাকে। সাপোর্টিং স্টাফের জন্য যে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারিত তার বেশি যোগ্যতার কেউ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন নাএমন ব্যবস্থা করা। সব দপ্তরে এই তিন স্তরের জন্য প্রতি বছর তিনটি নিয়োগ পরীক্ষা নিলেই হবে। যোগ্য ব্যক্তিকে কমিশন মনোনীত করলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর নিয়োগ দেবে।
এতে সাধারণ মানুষ সুস্পষ্ট ধারণা পাবে, কোন স্তরের জন্য প্রতিযোগিতা করবে। একই ব্যক্তিকে অসংখ্য দপ্তরের জন্য টাকা খরচ করতে হবে না বলে মনে করেন জনপ্রশাসনের সংস্কারবাদী কর্মকর্তারা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে বলেছেন, ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশকে আক্রমণ করাই তাদের উদ্দেশ্য। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন নয়, গণতন্ত্র নয়, তারা কেনা গোলামদের ক্ষমতায় বসিয়ে এ জায়গাটি নিয়ে খেলবে।
তিনি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর...। এ ভারত মহাসাগরে আমাদের বঙ্গোপসাগর। এর গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রাচীন যুগ থেকে এ জায়গা দিয়ে সব ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। আমাদের ভারত মহাসাগরে যতগুলো দেশ আছে কারও সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। সম্পূর্ণ নিষ্কণ্টক যোগাযোগ পথ, এ জলপথ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে নির্বিঘেœ পণ্য পরিবহন হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে গণতন্ত্রের নাম নিয়ে, নির্বাচনের নাম নিয়ে, নানা নাম নিয়ে এই দেশে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়, যাতে করে ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগরকে ব্যবহার করতে পারে তারা। এটাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করা এবং দেশগুলোকে ধ্বংস করা। এটাই হচ্ছে কারও কারও উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে কিন্তু এদের নানা ধরনের টালবাহানা। এটা দেশবাসীকে বুঝতে হবে।’
গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীএসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম প্রমুখ।
স্মরণসভা সঞ্চালনা করেন প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীম।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে একটা কথা আমি সবাইকে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে রাখি, এদের উদ্দেশ্য এখানে নির্বাচন নয়, এদের উদ্দেশ্য গণতন্ত্র নয়, এরা একটা জিনিসই করতে চায়। তারা বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভিত্তিটা মজবুত করেছি। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হচ্ছে, উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র ৫ দশমিক ৭ নামিয়ে এনেছি।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই এলাকাটাকে নিয়ে নানাভাবে খেলার চক্রান্ত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০ বছর ধরে সংঘাত ছিল। আমি সরকারে (১৯৯৬) আসার পর শান্তি ফিরিয়ে আনি। সেখানেও আবার নানারকম অশান্তি সৃষ্টির প্রচেষ্টা চলছে। যেহেতু এটা আমি জানি, বুঝি। যে কারণে কীভাবে আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাবে এবং তাদের কিছু কেনা গোলাম আছে, পদলেহনকারী আছে তাদের বসিয়ে এ জায়গাটা নিয়ে খেলবে। সেটাই হচ্ছে প্রচেষ্টা। সেটা আমি ভালোভাবে বুঝতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু আঁতেল আছে। জানি না তারা এসব চিন্তা করে কি না। এগুলো কখনো উপলব্ধি করে কি না? সেগুলো না করেই তারা এদের সঙ্গে সুর মেলায়, দুটো পয়সার লোভে তারা নানাভাবে এ কাজগুলো করে বেড়ায়। এ বিষয়ে আমাদের যেমন সজাগ থাকতে হবে, তাছাড়া অন্যান্য দেশ... আমি বলব ভারত মহাসাগরসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো যথেষ্ট সচেতন আছে। এটা আমি বিশ্বাস করি।’ সরকারপ্রধান দেশপ্রেমিক নাগরিকদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এই কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের এতটুকু ক্ষতি করে কোনোদিন ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা আমি করি না। তাহলে ২০০১ সালে যখন আমার কাছে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব এসেছিল... খালি মুখেই বলতাম আমি গ্যাস বিক্রি করব, তাহলে ক্ষমতায় আসতে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু দেশের স্বার্থ বেচে, দেশের মানুষের সম্পদ অন্য কোনো দেশের হাতে তুলে দিয়ে আমাকে ক্ষমতায় যেতে হবে এরকম ক্ষমতালোভী আমি না, আমার বাবাও ছিলেন না, আমিও না।’
যুক্তরাষ্ট্রে বঙ্গবন্ধু খুনিদের আশ্রয় দেওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব থেকে বেশি অবাক লাগে যেসব দেশ আমাদের কাছে এসে মানবাধিকারের কথা বলে, তারা নির্বাচনের কথা বলে, স্বচ্ছতার কথা বলে, তারা যেন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে খুব উতলা হয়ে পড়েছে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর এ দেশের মানুষের ওপর, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে অত্যাচার করল, খুনসহ নানান অপকর্ম করেছিল, তা নিয়ে তো কোনো কথা বলেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই নির্বাচনে তো আওয়ামী লীগের হারার কথা ছিল না, আমাদের হারানো হয়েছিল। খালেদা জিয়া যখন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল, তখন তাদের নির্বাচনী চেতনা কোথায় ছিল? জিয়াউর রহমান ও এরশাদের আমলের বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে তো কোনো কথা বলেনি। সেটা নিয়ে এদের কোনো উদ্বেগ আমরা দেখিনি।’ তিনি বলেন, ‘হঠাৎ এবারের নির্বাচনের সময় দেশটি যেন খুব বেশি উতলা হয়ে পড়ল। আর নির্বাচনের দাড়ি, কমা, সেমিকোলন, কোথায়, কী, কীভাবে হবে তাই নিয়ে সব থেকে বেশি... এবং একের এক তাদের লোকজন আসা শুরু করল। কেন? কারণটা কী? বিএনপি এখন তাদের চোখের মণি, যারা এত মানুষ হত্যা করেছে। জাতির পিতার হত্যার সঙ্গে জড়িত। যে বিএনপির দ্বারা কদিন আগে তো আগুন দিয়েছে, সন্ত্রাস ও মানুষ খুন করেছে ২০১৩, ’১৪ ও ’১৫ সালে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছুদিন আগে তো পুলিশের গাড়িতে আক্রমণ, পুলিশের ওপর আক্রমণ করল। তো পুলিশ কি বসে বসে মার খাবে? জাতীয় সম্পদ নষ্ট করা, এ দেশে একটার পর এক ধ্বংসযজ্ঞ চালাল, আজকে তাদের (বিএনপি) নিয়ে মাতামাতি, তাদের নিয়ে বসতে হবে, কথা বলতে হবে। অনেক বলেছি। শুধু বাংলাদেশের মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে, শুধু আমার বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য, অনেক কিছু সহ্য করেছি। করে দেশের জন্য কাজ করেছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকে নির্বাচন নিয়ে এত বেশি কথা হচ্ছে, যখন আমরা আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। আর খালেদা জিয়া আজিজ মার্কা, সাইদ মার্কা নির্বাচন কমিশন করেছে। ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার নিয়ে যখন তারা (বিএনপি) নির্বাচন করতে চেয়েছিল তখন আমরা এসব চেতনা দেখিনি। এত কথাও শুনিনি। আমার মনে হয় বাংলাদেশের উন্নয়নটা তাদের পছন্দ নয়। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা পছন্দ নয়।’ তিনি বলেন, আজকে গণতন্ত্রের কথা বলে, গণতন্ত্র কী?
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যে বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত, যাদের হাতে আমার বাবা-মা-ভাইয়ের রক্তের দাগ। তাদের জন্য তারা উতলা হয়েছে। আমাদের কর্মীদের ওপর বারবার হামলা করে মৃত্যুর মুখে নিয়ে গিয়েছে, তাদের আজকে ক্ষমতায় বসাতে হবে!’
দেশের ৬৩ জেলায় আলোচিত সিরিজ বোমা হামলার দেড় যুগেও নির্দেশদাতা খলনায়কদের চিহ্নিত করতে পারেননি তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এখনো ৪৩টি মামলার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। উল্টো প্রভাবশালী নির্দেশদাতারাই জঙ্গিদের আবারও সামনের দিকে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এ নিয়ে পুলিশ নাখোশ। বোমা হামলার পর যারা মামলাগুলো তদন্ত করেছেন, তাদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তর। ইতিমধ্যে তদন্তকারীদের নামের তালিকা তৈরি করছে বলে পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে। তালিকার কাজ শেষ হওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে গাফিলতির প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে পুলিশ।
অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের তদন্তে গাফিলতির কারণে বোমা হামলার বিচারকাজ এখনো শেষ হচ্ছে না। এ নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পর্যালোচনা করে দেখেছে, প্রথমে মামলার এজাহারে নির্দিষ্টভাবে কাউকে আসামি করা হয়নি এবং পরে সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছিল না বা যে কজন সাক্ষী পাওয়া গিয়েছিল তাদের টিআই প্যারেড (শনাক্তকরণ মহড়া) করানো হয়নি। জঙ্গি সংগঠনগুলোকে কারা লালন-পালন করেছে বা কাদের নির্দেশে বোমা হামলা হয়েছে তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। মূলত এসব কারণেই তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই এখন তদন্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ চাপে পড়ে তদন্ত করেছিল কি না তাও খতিয়ে দেখবে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, মাসখানেক আগে পুলিশ সদর দপ্তরে জঙ্গিদের বিষয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সিরিজ বোমা হামলার মামলাগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেখানে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পলাতক জঙ্গিসহ অন্য শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিরিজ বোমা হামলার পর মামলাগুলোর তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে বেশি। তারা স্বাধীনভাবে মামলার তদন্ত করতে পেরেছেন কি না তাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। তালিকার পর তদন্ত করে কোনো তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। কারণ সিরিজ বোমার পেছনে ‘প্রভাবশালী লোকজন’ জড়িত। তারা কেন চিহ্নিত হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তা ছাড়া প্রতিটি মামলায় যাদের সাক্ষী করা হয়েছে তারাও ছিল দুর্বল। অনেককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে এখনো ৪৩টি মামলার বিচারকাজ শেষ হয়নি।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, কিছু মামলার অভিযোগপত্রে নাম দেওয়া সাক্ষীদের হদিস নেই। তারা কোথায় আছেন তা জানা যাচ্ছে না। পুলিশের কাছে তথ্য আছে, ভিন্ন মতাদর্শী কিছু তদন্তকারী কর্মকর্তার কারণে তদন্তে গাফিলতি হয়েছে। তাদের তালিকা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের প্রধান কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে একটি মামলায় রায় হয়েছে। তার পরও আর কোনো মামলার রায় হয়নি। তবে তারা চেষ্টা করছেন চলতি বছর কয়েকটি মামলার রায় শেষ করতে। এ নিয়ে তারা কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘মামলার সাক্ষীর কারণে মামলার শুনানিও করা যাচ্ছে না। বিষয়টি আমরা পুলিশকেও অবহিত করেছি।’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ জেলা বাদে একযোগে সারা দেশ কেঁপে উঠেছিল বোমা হামলায়। হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও জাগ্রত মুসলিম জনতা (জেএমজেবি)। বড় ধরনের হতাহত না ঘটলেও বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষতি হয়। দেশ-বিদেশে উঠে আসে জঙ্গিদের উত্থানের বিষয়টি। জঙ্গিরা জানান দিয়েছিল তাদের অস্তিত্বের বিষয়টিও।
বোমা হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ কয়েকজন শীর্ষ জঙ্গি নেতাকে গ্রেপ্তার করে। হামলার সঙ্গে কোন কোন জঙ্গি জড়িত ছিল তাদের নাম আসে তদন্তে। কিন্তু পৃষ্ঠপোষক ও নির্দেশদাতাদের বিষয়টি পরিষ্কার করেননি কোনো তদন্ত কর্মকর্তাই। বোমা হামলা পর দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে ১৫৯টি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সিরিজ বোমা হামলার পেছনে যারা ছিল তাদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। তবে তাদের সেই চেষ্টা সফল হবে না। যেসব মামলার বিচার শেষ হয়নি তা দ্রুত শেষ করতে আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার শেষ হবে। যেসব জঙ্গি নেতা আত্মগোপনে আছে তাদের আইনের আওতায় বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে।’
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র্যাবের মূল ম্যান্ডেট হলো জঙ্গি গ্রেপ্তার করা। আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াসহ ৯টি সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সিরিজ বোমা হামলায় জেএমবির সঙ্গে হরকাতুল জিহাদও (হুজি) তৎপর ছিল। এই সংগঠনগুলোর তৎপরতা অনেক বছর ধরে কিছুটা কম ছিল। গত বছর জেএমবির স্বঘোষিত আমির উজ্জ্বল মাস্টারকে ব্যাংক ডাকাতি করার সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়। পুরনো সংগঠনগুলোতে যারা এখনো তৎপর আছে, তারা একসঙ্গে বসে নতুন জঙ্গি সংগঠন সম্প্রতি নিষিদ্ধ হওয়া আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় যুক্ত হয়েছিল। এই সংগঠনটি আনসার আল ইসলামের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছিল। সংগঠনের আমিরসহ নেতৃত্ব পর্যায়ে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগে জঙ্গি বাদে যারা জড়িত ছিল তারা নতুন নামে দেশকে অস্থিতিশীল করতে সংঘবদ্ধ হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন সদস্য সংগ্রহের কাজে এখনো তৎপর রয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০০ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে জেএমবির কার্যক্রম শুরু করে। এখনো জেএমবির আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের কার্যক্রম বিস্তার করার চেষ্টা চলছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক আছে তাদের। ২০০৭ সালের ২৯ মে কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও কাশিমপুর কারাগারে শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল ও ইফতেখার হাসান মামুনের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর একই মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আসাদুল ইসলাম আরিফের ফাঁসি কার্যকর হয়।
সিরিজ বোমা হামলার পর জঙ্গিদের ধরিয়ে দিতে ২০০৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর সরকার এক কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। পুরস্কারের মধ্যে ছিল জেএমবির মজলিসের শূরার প্রতি সদস্যের জন্য ১০ লাখ টাকা, আত্মঘাতী সদস্যের জন্য দুই লাখ টাকা ও এহসার সদস্যের জন্য এক লাখ টাকা। শায়খ রহমান ও বাংলা ভাইসহ যেসব শীর্ষ জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়েছিল তাদের পুরস্কারের টাকা কাউকে দেওয়া হয়নি বলে জানান পুলিশের এক কর্মকর্তা।
ঘটনাটি ২০১৩ সালের। আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য পেনশনের ধারণা দিলেন। সরকারি কর্মকর্তাদের কোনো একটা বৈঠকে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মুহিত যখন তার এ ধারণার বিষয়টি তুলে ধরেন, তখন সেখানে উপস্থিত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অনেকেই দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। বলেছিলেন, স্যার, এটা সম্ভব নয়।
অর্থমন্ত্রী শান্ত হয়ে ওইসব কর্মকর্তার কথা শুনেছিলেন। সম্ভব না বলা কর্মকর্তাদের যুক্তি শুনে তিনি বলেছিলেন, ‘সবার জন্য পেনশন চালু করতে পারলে এ দেশ থেকে অনেক কিছু দূর হবে। মানুষ যখন দেখবে তার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত তখন অনেকেই অনিয়ম থেকে সরে আসবে। মানুষ এত অনিয়ম-হানাহানি করে শুধু ভবিষ্যতের জন্য। আর ভবিষ্যতে বেসরকারি পেনশনের সঙ্গে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনও এক করে দেব। আলাদা পেনশন থাকবে না।’ অর্থমন্ত্রীর এমন মন্তব্য শুনে নীতিনির্ধারক কর্মকর্তারা আরও ভড়কে গেলেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী মুহিত সবকিছু উপেক্ষা করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া তৈরির নির্দেশ দিলেন।
কয়েক মাস পর খসড়া যখন আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে গেল তখন তিনি খুব হতাশ হলেন। অর্থমন্ত্রী অর্থবিভাগের কর্মকর্তাদের ডেকে বললেন, ‘কিচ্ছু হয়নি। তোমরা খসড়া করো।’ এমন পরিস্থিতিতে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মুহিতের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে খসড়ার কাজ শুরু হলো। দেশে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালুর নেপথ্যের এ ঘটনা দেশ রূপান্তরের কাছে তুলে ধরেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের ওই সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী প্রায়ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতেন। এ দুজনের প্রত্যক্ষ চিন্তার ফল হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত মনে করতেন সব নাগরিকের জন্য পেনশন সুবিধা চালু হলে মানুষের নিরাপত্তা বাড়বে। পরিবারের সামাজিক নিরাপত্তা যখন নিশ্চিত হবে, তখন মানুষ আর অন্যায় পথে এগোতে চাইবে না।
২০১৬ সালে পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের সময় আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ, যাদের প্রায় সবাই সরকারি চাকুরে, এখন পেনশন সুবিধা পান। বাকি ৯৫ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ গ্র্যাচুইটি সুবিধা পেলেও অন্যদের জন্য সে সুবিধাও নেই।’ তখন তার সে কথা বক্তব্য পর্যন্তই থাকে। তবে ২০১৮ সালের বাজেট বক্তৃতায় আবারও একই বিষয় উঠে আসে। এর আগে ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ৫৭ জনকে এ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। সেই পাইলট প্রকল্পও উদ্বোধন করেছিলেন মুহিত।
কর্মজীবন শেষে সরকারি বা বেসরকারি চাকরিজীবী হোক না কেন, দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পেনশন সুবিধা পাবেন এ চিন্তা আর এখন স্বপ্ন বা অধরা নয়। বর্তমান সরকার ‘সবার জন্য পেনশন’ স্কিম বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আর এ স্বপ্নের মূল কারিগর ছিলেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, মুহিত ছিলেন স্বপ্নচারী মানুষ। তিনি নিজে স্বপ্ন দেখতেন, স্বপ্ন দেখাতে ভালোবাসতেন। তার চিন্তা-চেতনায় সবসময় ছিল জনগণের কল্যাণ। সবার জন্য পেনশন সুবিধার প্রস্তাব করে তিনি এটির পেছনে লেগে ছিলেন।
আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় সর্বজনীন পেনশনের প্রস্তাব প্রথম তুলেছিলেন। তখন পেনশনের একটি রূপরেখা প্রণয়নের কথা বলেন তিনি।
যে স্বপ্নের কথা বলেছিলেন মুহিত, তার বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। সমালোচকরা বলেছেন, বাংলাদেশের জন্য এ ধরনের প্রকল্প কার্যকর করা সম্ভব নয়। এটি উচ্চাভিলাষী।
তবে এ ব্যাপারে সরকারের কাজ যে সবার অগোচরে এগিয়ে গেছে, সে বিষয়টি স্পষ্ট হয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির এক অনুষ্ঠানে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সেদিন সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তন বিষয়ে একটি উপস্থাপনা দেয় অর্থ বিভাগ।
‘সবার জন্য পেনশন’ আওয়ামী লীগ সরকারের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টো বা ঘোষণাপত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি। আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকাকালে ২০১৭-১৮ সালের প্রস্তাবিত বাজেটে তিনি এ স্কিম সম্পর্কে একটি রূপরেখা দিয়েছিলেন। এজন্য পাইলট প্রকল্পের কথাও বলেছিলেন। সর্বজনীন পেনশনকে মুহিত তার স্বপ্নের প্রকল্প বলেও উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু তিনি এটি চূড়ান্ত করে দিয়ে যেতে পারেননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তার দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও তিনি মন্ত্রিত্ব পাননি বা বার্ধক্যজনিত কারণে নেননি। এরপর পরিকল্পনাটি ঝুলে যায়। পরে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রকল্পটি ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেন। ধীরে হলেও এগোতে থাকে এর কার্যক্রম।
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। আপাতত চার শ্রেণির জনগোষ্ঠীর জন্য চার ধরনের পেনশন কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে। এগুলোর নাম হচ্ছে প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাসী। যে নামেই চালু হোক, পেছনের স্বপ্নদ্রষ্টাকে বাঁচিয়ে রাখবে এ পেনশন কর্মসূচি। আবুল মাল আবদুল মুহিত চিরঞ্জীব থাকবেন সবার জন্য পেনশনের সুবিধার মাধ্যমেই।
রাসেল চৌধুরী। কক্সবাজার পৌরসভার সচিব হিসেবে কর্মরত। জাতীয় বেতন স্কেল ৭ম গ্রেডের কর্মচারী তিনি। বেতন সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৬৪ হাজার টাকা। চাকরিতে প্রবেশ করেন ২০০৬ সালে। তখন তার বেতন ছিল ৩ হাজার ৩০০ টাকা। ২০১৬ সালে সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। সচিব হিসেবে তার ৮ বছর চাকরিজীবনে বেতন-বোনাস মিলিয়ে আয় হওয়ার কথা ৬৫ থেকে ৭০ লাখ টাকা। ১৭ বছরের চাকরিজীবনে তার আয়ের পরিমাণ সোয়া কোটি টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। অথচ সরকারি এই কর্মচারীর বর্তমান সম্পদের পরিমাণ প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা।
রাসেল চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা গ্রামে। তার বাবার নাম মমতাজ মিয়া। আট ভাই-বোনের মধ্যে রাসেল পঞ্চম। একসময় অভাব-অনটন লেগে থাকা হতদরিদ্র পরিবারের এই ছেলের চট্টগ্রাম শহরের খুলশী ও চকবাজারে আছে একাধিক প্লট ও বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। বান্দরবানে বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে তুলেছেন গরুর খামার, লোহাগাড়া উপজেলায় আছে মার্কেট, গ্রামের বাড়িতে আছে কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। চড়েন ৩৮ লাখ টাকা দামের প্রিমিও গাড়িতে। বিভিন্ন ব্যাংকে নিজের ও স্ত্রীর নামে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স। অভিযোগ আছে, কক্সবাজারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কমিশন-বাণিজ্য করে বিপুল এই অর্থ কামিয়েছেন রাসেল।
তবে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে রাসেল চৌধুরীর অর্জিত প্রায় সব সম্পদ গড়েছেন তার স্ত্রী নুসরাত জাহানের নামে। যদিও এই নুসরাত জাহান একজন সাধারণ গৃহিণী। তার আয়ের তেমন কোনো উৎস নেই। ২০২২ সালে চট্টগ্রামের আয়কর অফিসে রিটার্ন দাখিলের সময় এই নুসরাতই তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
জানা গেছে, ২০০৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ৩ হাজার ৩০০ টাকা বেতনে সহকারী সচিব হিসেবে বান্দরবান পৌরসভায় যোগ দেন রাসেল। সেখান থেকে ২০০৭ সালের ৩ মে বদলি হন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি পৌরসভায়। পরে সন্দ্বীপ ও চন্দনাইশ হয়ে ২০১৬-১৭ সালের দিকে সচিব হিসেবে কক্সবাজার পৌরসভায় যোগ দেন।
২০২০ সালের ১১ নভেম্বর কক্সবাজারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে এই রাসেল চৌধুরীসহ কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ২৪ জনকে তলব করেছিল দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ের তৎকালীন সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দীন (চাকরিচ্যুত)। রাসেলসহ এই ২৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত এখনো চলছে বলে জানিয়েছে দুদকের একটি সূত্র। তবে রাসেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন দুদকের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম।
দুদক সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলায় দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প, বিমানবন্দর আন্তর্জাতিকীকরণ প্রকল্প, মহেশখালীর মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বেশ কিছু প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করে সরকার। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দালালদের সিন্ডিকেট জমির মালিকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। বিষয়টি নজরে আসার পর এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
সূত্রটি জানায়, ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ ওয়াসিম নামে কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখার এক সার্ভেয়ারকে নগদ টাকাসহ আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে একই বছরের ২২ জুলাই মো. সেলিম উল্লাহ, ৩ আগস্ট মোহাম্মদ কামরুদ্দিন ও সালাহ উদ্দিন নামে তিন দালালকে আটক করে দুদক। আটকের সময় এসব দালালের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকার নগদ চেক ও ভূমি অধিগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ মূল নথি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুদককে জানায়, কক্সবাজারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সিন্ডিকেট করে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের কাছ থেকে কমিশনের নামে হাতিয়ে নিতেন কোটি কোটি টাকা। ওই সিন্ডিকেটে পৌরসভার সচিব রাসেল চৌধুরীসহ কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ শাখার ১৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং অনুসন্ধান করে আলোচ্য প্রকল্পগুলোয় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পায় দুদক। এরপর পৌরসভা সচিব রাসেল চৌধুরী, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাসহ ১৯ জনকে ২০২০ সালের ১৫ থেকে ২২ নভেম্বরের মধ্যে দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য নোটিস দিয়েছিলেন তৎকালীন সহকারী উপপরিচালক শরীফ উদ্দিন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেট কসমোপলিটন আবাসিকের বিপরীতে সিডিএর নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের ছয়তলায় তার নামে রয়েছে ৮০ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট। চকবাজার থানার চট্টেশ্বরী রোডে বেভারলি হিল আবাসিক এলাকায় ‘আইডিয়াল প্যানারোমা’ নামের ভবনের দোতলায় আছে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা দামের একটি ফ্ল্যাট। এটি কেনার পর আরও ৭০ লাখ টাকা খরচ করে সেখানে করা হয়েছে ইন্টেরিয়র ডিজাইন। এই ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন রাসেল।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কক্সবাজার থেকে নিজের মালিকানাধীন প্রিমিও এফ প্রাইভেট কারে করে ওই ফ্ল্যাটে যাতায়াত করেন রাসেল। যার নম্বর চট্ট মেট্রো-গ ১১-৮১৯৩। গাড়ির মালিক যে রাসেল সে তথ্য বিআরটিএ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে এই ফ্ল্যাট বাড়ির সামনেই আছে ‘মিসমাক ফেরদৌস’ নামের ছয়তলাবিশিষ্ট বিলাসবহুল বহুতল ভবন। এই ভবনের দোতলায় স্ত্রী নুসরাত জাহানের নামে কিনেছেন ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট। যার প্লট নম্বর-১২১২, ফ্ল্যাট নম্বর-সি-১। তবে কর ফাঁকি দিতে নিবন্ধনের সময় দলিলে ফ্ল্যাটের মূল্য দেখানো হয়েছে ৫৪ লাখ ১০ হাজার টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা সদর রেজিস্ট্রি অফিসে স্ত্রী নুসরাতের নামে ওই ফ্ল্যাটের দলিল নিবন্ধন হয় (দললি নম্বর-২৭৪০)। ফ্ল্যাটটির রেজিস্ট্রি দাতার নাম মো. আবু বকর। এ ছাড়া দক্ষিণ খুলশীর ১ নম্বর রোডে আছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের পাঁচ কাঠার একটি প্লট। ২০২২ সালের ১০ মে জনৈক হাসান আহমেদ নামের এক ব্যক্তির থেকে প্লটটি স্ত্রী নুসরাতের নামে কেনেন রাসেল। দলিল নম্বর ৭৫০৪। কর ফাঁকি দিতে এই দলিলে এই প্লটের দাম দেখানো হয়েছে ৯৫ লাখ টাকা।
খুলশী থানা এলাকার ওই প্লটটির অবস্থান হলো, নগরের ডবলমুরিং থানাধীন দক্ষিণ পাহাড়তলী মৌজার নামজারি খতিয়ান নম্বর-৩১৭/১১ এবং নামজারি খতিয়ান ৩৮১৭। বিএস দাগ নম্বর-২৬৯৭ আন্দর ০৩ শতক এবং বিএস ২৬৯৮ দাগ আন্দর ০৩.৬৬ শতাংশ মোট ০৬.৬৬ শতাংশ জমি। সম্প্রতি এই প্লটে বাড়ি নির্মাণের জন্য সাড়ে ১০ তলার একটি নকশাও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই প্লটে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে সেখানে একটি গভীর নলকূপও বসানো হয়েছে বলে জানা গেছে। নুসরাত জাহানের এসব প্লট ও ফ্ল্যাটের মালিকানা সংক্রান্ত দলিল ও কাগজপত্র দেশ রূপান্তরের কাছে আছে।
বান্দরবানে বিশাল এলাকাজুড়ে রাসেলের বাবা মমতাজ মিয়ার নামে রয়েছে একটি গরুর খামার। খামারটিতে প্রায় দেড় কোটি টাকার গরু রয়েছে। লোহাগাড়া উপজেলা সদরে রয়েছে একটি মার্কেট। মার্কেটটি দেখাশোনা করেন তার বড় শ্যালক মো. আমজাদ হোসেন। ২০২১ সালে তার বাবা মমতাজ মিয়া মারা যাওয়ার পর ৪০ লাখ টাকা খরচ করে গ্রামের বাড়ির চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
সাতকানিয়া ও কক্সবাজার এলাকায় নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে রয়েছে একাধিক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি। বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ইউসিবিএল ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকে তার সঞ্চিত রয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। স্ত্রী নুসরাতের দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। নুসরাত জাহানের নামে এত সম্পদ ও কোটি কোটি টাকার ব্যাংক লেনদেন থাকলেও আয়কর ফাইল (টিআইএন নম্বর-৭৮৮০৮৮৪৭৫৯৩৬-কর অফিস, সার্কেল-২২, কর অঞ্চল-১, চট্টগ্রাম) ওপেন করেছেন ২০২১ সালে। যেখানে বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে নুসরাত জাহানের একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, লোহাগাড়া উপজেলা শাখায় তার একটি হিসাব নম্বর হচ্ছে-২০৫০১৫৬০২০৩২২৮৪০০। ২০১০ সাল থেকে চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত স্টেটমেন্টে দেখা যায়, ১০ বছরে তার এই অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৩ কোটি ২৯ লাখ ২৪ হাজার ৬৫৯ দশমিক ১১ টাকা। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (এজেন্ট ব্যাকিং সার্ভিস ব্রাঞ্চ) চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি খোলা ২০৫০৭৭৭০২১২১০৩৭২৮ অ্যাকাউন্ট (টাইপ এমএসএ-রেগুলার) নম্বরে এক দিনেই জমা হয়েছে ১২ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
৭ম গ্রেডের বেতনে সরকারি চাকরি করে স্ত্রীর নামে অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যাওয়ার উৎস সম্পর্কে জানতে ১৪ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে কল করলে রাসেল চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আপনি (প্রতিবেদক) আমার বিরুদ্ধে যা তথ্য-উপাত্ত পেয়েছেন তা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন। আমার কিছু বলার নাই।’ একই দিন বেলা ৩টা ১০ মিনিটে তার স্ত্রী নুসরাতের মোবাইল ফোনে কল করেন এই প্রতিবেদক। সাধারণ গৃহিণী হয়ে কীভাবে অর্ধশত কোটি টাকার মালিক হলেন? এমন প্রশ্ন করলে নুসরাত বলেন, ‘আমার স্বামীর অবৈধ সম্পদ নেই। সরকারি চাকরির পাশাপাশি বান্দরবানে তার আছে বিশাল গরুর খামার। আমিই স্বামীকে ব্যবসার জন্য টাকা দিয়েছি। এক এক করে তিনি সম্পদ জোগাড় করেছেন। আপনারা খোঁজ নিন।’ আপনি তো সাধারণ গৃহিণী স্বামীকে দেওয়ার জন্য এত টাকা কোথায় পেলেন, এমন প্রশ্ন করলে নুসরাত রেগে গিয়ে বলেন, ‘জবাব দিলে দুদককে দেব। আপনি আর আমাকে ফোন করবেন না।’
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ১৮ আগস্ট ৯ বছরের শিশু আরাফাতের মৃত্যু হয়। সপ্তাহ না যেতেই ২৫ আগস্ট মারা যায় আরাফাতের ছোট বোন ৬ বছরের রাইদা। রাজধানীর মধ্যপাইকপাড়ার ছাপাখানা মোড়ের একটি বাসায় দুই সন্তান আরাফাত ও রাইদাকে নিয়ে থাকতেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও রাবেয়া আক্তার দম্পতি। সন্তানদের মৃত্যুর পর জীবনটাই বদলে গেছে তাদের। তছনছ হয়ে গেছে সাজানো সংসার। ইব্রাহিম ও রাবেয়া দম্পতির মতো বহু পরিবার এবার সর্বস্বান্ত হয়েছে ডেঙ্গুজ¦রের থাবায়। সন্তান হারানো এমন বাবা-মায়েরা পাগলপ্রায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সী ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৮৬ এবং নারী ৯১ জন। এবার শুধু শহর নয়, গ্রামেও ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। সেখানেও মারা গেছে অনেক শিশু। এ বছর ডেঙ্গুতে শিশুমৃত্যু নিয়মিত ঘটনা হয়ে দেখা দিয়েছে। এই রোগে এত শিশুর মৃত্যু আগে কখনো হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ বছর শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সীরা আক্রান্ত হয়েছে ৬৩ হাজার ৯১৯ জন; যা মোট আক্রান্তের ৩২ শতাংশ। এর মধ্যে নারী ২৩ হাজার ৬১৭ এবং পুরুষ ৪০ হাজার ৩০২ জন। ডেঙ্গুতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তথ্য বলছে, ডেঙ্গুতে শিশুদের আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া শিশুদের যারা সুস্থ হয়ে উঠছে, তাদের মধ্যে ভবিষ্যতে শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডেঙ্গুর বর্তমান সংক্রমণের মধ্য দিয়ে শিশুদের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তাদের মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতি শিশুদের নতুন বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার বিরূপ প্রভাব শিশুদের মধ্যে ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে। মস্তিষ্ক ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এর প্রভাব থাকতে পারে। এতে তাদের মেধাবিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাদের যদি কিডনি কিংবা লিভারের মতো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেই ভার সারা জীবন বহন করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিশুদের মৃত্যু নিয়ে ভালোভাবে অ্যানালাইসিস করতে পারছি না। এসব মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে অটোপসি করতে পারলে ভালো হতো। বিভিন্ন দেশে মৃত্যু নিয়ে ডেথ রিভিউ বা অটোপসি করা হয়। এটি করতে পারলে বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। কোনো শিশুর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, ১ মাস থেকে ১২ বছর বয়সী মুমূর্ষু শিশু রোগীদের পৃথক পিআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। তবে দেশে পিআইসিইউ সংকট রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পিআইসিইউর জন্য স্বজনদের হাহাকার করতে দেখা গেছে। হাসপাতালগুলোতে দেখা গেছে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ শিশুকে সেবা দিতে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমন বেশি, সেখানে শিশু রোগীও উল্লেখযোগ্য। এই দুটি হাসপাতালে একেকটি শয্যায় একাধিক শিশু রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ঢামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড খুলেছে কর্তৃপক্ষ। ৭০ থেকে ৮০ জনের সেবা পাওয়ার কথা, কিন্তু সেখানে প্রতিদিন সেবা নিচ্ছে প্রায় ৩০০ শিশু। ঢামেক হাসপাতালের ২৫ শিশুকে একসঙ্গে পিআইসিইউতে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। কিন্তু মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো পিআইসিইউ নেই।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে শিশুদের ওয়ার্ডেই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পিআইসিইউ নেই, তবে এনআইসিইউ (নিউনেটাল আইসিইউ বা নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) আছে।
এদিকে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের শরীরে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু শনাক্তে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। শিশুদের ডেঙ্গুর চিকিৎসা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা ইয়াসমীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিশুদের জ্বর আসার তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করাতে হবে। এবার অনেকের মধ্যে হঠাৎ করে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। ফলে তারা দেরিতে চিকিৎসা নিতে আসছে। দেখা গেছে, ডেঙ্গুজ্বরে যেসব শিশু মারা গেছে, তারা বাড়ি থেকেই জটিলতা নিয়ে এসেছে। এখানে একটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে, শুধু প্লাটিলেট কমা আশঙ্কার নয়, রক্তচাপ কমে যাওয়া প্লাটিলেট কমার চেয়ে ভয়ের। তাই আমাদের শিশুদের রক্তচাপ নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।’
স্যাংশন নিয়ে ভয় না পাওয়ার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার মেথডিস্ট সেন্ট্রাল হলে নাগরিক সংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি পাল্টা স্যাংশন দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
সংবিধান অনুযায়ী সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে জানান তিনি। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ইস্যু সম্পর্কে প্রশ্ন রাখেন, সাজাপ্রাপ্ত কাউকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় কোন দেশ?
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, পৃথিবীর কোন দেশের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় বলতে পারেন? কোনো দেশে পাঠায়? তারা এটা দাবি করে। আমাদের কেউ কেউ আঁতেল আছে। তারা বলে, একটু কী সহানুভূতি দেখাতে পারেন না! সে এভারকেয়ার, বাংলাদেশের সবথেকে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়সতো আশির ওপর। মৃত্যুর সময় তো হয়ে গেছে। তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এত কান্নাকাটি করে লাভ নাই।
স্যাংশনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। আপনাদেরও বলব, স্যাংশন নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।
বিএনপি চেয়ারপারসন ‘অসুস্থ’ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে শর্ত দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই শর্তের অন্যতম ইস্যু হচ্ছে, বিএনপিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এমন ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিদেশে যাওয়ার অনুমতি মিলবে। কিন্তু সরকারের সেই শর্তে রাজি নন খালেদা জিয়া। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো শর্তের বিনিময়ে তিনি মুক্তি চান না। ফলে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার সরকারের যে চেষ্টা, সেটা এ দফায় সফল হচ্ছে না বলে মনে করছেন আন্দোলনে থাকা নেতারা। তাদের মতে, সরকার ফাঁদ পাতলেও এতে পা না দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে বেগম জিয়ার। বরং আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলতে চান তারা। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ লক্ষ্যে প্রায় অর্ধশত দল নিয়ে গত প্রায় এক বছর ধরে আন্দোলনে রয়েছেন তারা।
শর্তের বিনিময়ে মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে গত রবিবার রাতে কিশোরগঞ্জে বিএনপির রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল তিনি যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান, তাহলে বিএনপিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আসতে হবে। বিএনপি থেকে উত্তর দেওয়ার আগেই অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়া বিদ্রোহ করে বলেছেন, তার জীবনে গণতন্ত্রের জন্য কোনো শর্ত নেই। ভোটের অধিকারের জন্য, এই দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য কোনো শর্ত নেই। কোনো শর্ত খালেদা জিয়ার নামের সঙ্গে যায় না এবং আমরাও তা মানি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়া ৫৪ দিন ধরে টানা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিতই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এ সময় বেশ কয়েকবার শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লে দলের কয়েকজন নেতার মাধ্যমে মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের দেওয়ার বক্তব্যের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কয়েকজন সম্পাদক ও সদস্য খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। সূত্রগুলো বলছে, একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য কথা প্রসঙ্গে এ ধরনের প্রসঙ্গেও ইঙ্গিত দিলে খালেদা জিয়ার শর্ত দিয়ে মুক্ত হতে চান না বলে পুনর্ব্যক্ত করেন। যদিও এর আগে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথা নেতাদের আগেই বলে রেখেছিলেন একসময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এ নেত্রী। কোনো অবস্থায় শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না এবং এ ব্যাপারে কোনো ধরনের সমঝোতাও নয়Ñ এ ব্যাপারেও খালেদা জিয়ার স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করেন। সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে এসে মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের এ আন্দোলনে উনার সমর্থন আছে। আমাদের একজন নেতা (ওই বৈঠকে) বলেছেন, সরকার একটা নির্বাচনের জাল বিছানোর চেষ্টা করছে। উনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, কোনো অবস্থায় এ সরকারের অধীনে নির্বাচনী ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।’
এর আগে ৮ মে রাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় সাক্ষাৎ শেষে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছিলেন, কেউ কেউ বলছেন আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়া উচিত। এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া তাদের বলেছেন, প্রশ্নই আসে না। এ বিষয়ে আমি কোনো অনুমতি দেব না।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি মনে করছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করতে না পারলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমে এ ইস্যুর সমাধান করবে তারা। এজন্য চলমান এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা ইস্যুটি জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে চান তারা। এতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নিতে পারে বলে তাদের বিশ্বাস।
গতকাল সোমবার স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ৫ অক্টোবর বিএনপি ঘোষিত রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ হবে। এর আগেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, ‘দাবার ঘুঁটি হিসেবে খালেদা জিয়াকে ব্যবহারের চিন্তা তারা কীভাবে করে সেটাই বোধগম্য নয়। সরকারের এ ধরনের চিন্তা বা পরিকল্পনা কোনো কাজে আসবে না।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে বিএনপিপ্রধানের পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের ওপর গত রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই। যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আবার গতকাল নিজ কার্যালয়ে সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি কিংবা আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারেন। তবে তার আগে তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেলে যেতে হবে। রাষ্ট্রপতি বা আপিল বিভাগের খালেদা জিয়ার পরিবার আবেদন করবে না বলে দলীয় আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন নেই বলেই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভয়ংকর তামাশা করা হয়েছে। যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। এর বাইরে দলের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’
এদিকে চিকিৎসক সূত্র জানা গেছে, বর্তমানে খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল তার আলট্রাসনোগ্রাম ও ইকো করা হয়েছে।
তিনি জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রণীত আইনের অধীনে ধানমন্ডিতে যে বাড়ি পেয়েছিলেন শেখ রেহানা, বিএনপি ক্ষমতায় এসে সে বাড়ি উচ্ছেদ করে। সেখানে পুলিশ ফাঁড়ি করছে আর ‘লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে’ সেই পুলিশ ফাঁড়ি উদ্বোধন করেছে খালেদা জিয়া। ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর তাকে (শেখ হাসিনা) খালেদা জিয়ার বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কীভাবে খালেদা জিয়ার জন্য আমার কাছ থেকে আরও সহানুভূতি আশা করে।’
লন্ডনের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টারে তার সম্মানে আয়োজিত একটি কমিউনিটি সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলা বিএনপির পক্ষে শোভা পায় না কারণ তারা জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ধোকাবাজি খেলেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই দেশের জনগণ তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। তিনি বলেন, দেশের জনগণ কখনই ভোট কারচুপিকারীদের ক্ষমতায় বসতে দেয় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে তার ওপর ন্যস্ত নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড স্থগিত করার পর খালেদা জিয়াকে তিনি বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে তার কিছুই করার নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আইন অনুযায়ী যা করতে পারেন তাই করেছেন। অনেকেই এখন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘আইন নিজের গতিতে চললেও খালেদা জিয়ার প্রতি আমি বেশি সহানুভূতি দেখাতে পারি’।
অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক।
উত্তর-পূর্ব পাকিস্তানে একটি অঙ্গ পাচারকারী চক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পুলিশ বলছে। চক্রটির নেতা ফাওয়াদ মুখতারের বিরুদ্ধে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষের কিডনি চুরি করে বের করে ধনী গ্রাহকদের মধ্যে প্রতিস্থাপন করার অভিযোগ রয়েছে।
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা বিবিসি নিউজ।
বিবিসি জানায়, অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর দেহ থেকে কিডনি সরিয়ে ফেলা এবং ধনী গ্রাহকদের কাছে বিক্রির অভিযোগে ফাওয়াদ মুখতার নামের এক চিকিৎসক ও তার দলের আট সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে পাকিস্তান পুলিশ। ফাওয়াদ এ পর্যন্ত তিন শতাধিক রোগীর কিডনি চুরি করেছেন।
এমনকি অস্ত্রোপচারকালে কিডনি চুরির সময় তার হাতে অন্তত তিনজন রোগী মারা গেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ফাওয়াদ এর আগে পাঁচবার অসদাচরণের জন্য গ্রেপ্তার হলেও প্রতিবারই জামিন নিয়ে মুক্তি পেয়ে যান। রোববার (১ অক্টোবর) পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় পাকিস্তান পুলিশ। চক্রটি পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশের পাশাপাশি পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে কাজ করছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মহসিন নকভি রবিবার একটি সংবাদ সম্মেলনে জানান, “কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টগুলি বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনকে ক্লিনিক আকারে সাজিয়ে সেখানে রোগীদের অস্ত্রোপচার করার সময় রোগীদের অজান্তেই কিডনি সরিয়ে নেয়া হত।“
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফাওয়াদ মুখতার জানিয়েছেন, তার নেতৃত্বাধীন চক্র এখন পর্যন্ত মোট ৩২৮ রোগীর দেহ থেকে কিডনি চুরি করেছে। প্রতিটি কিডনি বিক্রি হয়েছে ১ কোটি রুপি করে।
২০১০ সালে মানবদেহের প্রত্যঙ্গ ব্যবসা নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান। এ অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও মোটা অঙ্কের জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।