
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুল আলোচিত সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থার উদ্বোধন করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সবার আরও ভালো ও একটি উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থার উদ্বোধন করা হলো। এ ব্যবস্থার লক্ষ্য হলো দেশের ১৮ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের এর আওতায় নিয়ে আসা।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থার উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পেনশন স্কিম চালু করেছি যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ একটি উন্নত জীবনযাপন করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে ছয়টির মধ্যে চারটি স্কিম প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাস উদ্বোধন করা হয়েছে এবং অন্য দুটি পরে চালু করা হবে।
তার এবং আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসাই দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করার চালিকাশক্তি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী দিনেও আমার প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা অব্যাহত রাখার জন্য আমি বাংলাদেশের জনগণকে অনুরোধ করছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একমাত্র লক্ষ্য ছিল দেশবাসীকে একটি উন্নত জীবন উপহার দেওয়া, যার জন্য তিনি তার সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা শোকের মাসে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু করেছি। জনগণকে একটি সুন্দর ও উন্নত জীবন দেওয়ার আমাদের প্রচেষ্টা দেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতার আত্মা শান্তি পাবে।’
শেখ হাসিনা প্রত্যেক দেশবাসীর জীবনকে অর্থবহ করার লক্ষ্যে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার জন্য জনগণের কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষকে আরও ভালো ও উন্নত জীবন দিতে ব্যর্থ হলে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া দেশের স্বাধীনতা বৃথা যাবে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা দেশের স্বাধীনতাকে ব্যর্থ হতে দেব না, এটি ব্যর্থ হবে না এবং এটি ব্যর্থ হয়নি। তার (বঙ্গবন্ধুর) আদর্শ অনুসরণ করে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা বজায় রেখে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের দিকে অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। সরকারপ্রধান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও সুবিধাভোগীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন এবং তিনটি জেলাগোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও রংপুর এবং সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
প্রগতি স্কিমটি বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য, স্ব-কর্মে নিযুক্ত লোকদের জন্য সুরক্ষা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রবাস এবং দেশের নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য সমতা প্রযোজ্য হবে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মূল লক্ষ্য দেশের ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাইকে এর আওতায় আনা এবং তারা তাদের ৬০ বছর বয়স হওয়ার পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।
পেনশনব্যবস্থার বয়সসীমা প্রাথমিকভাবে ৫০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু পরে তা সংশোধন করা হয়। ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও টানা ১০ বছর ধরে কিস্তি পরিশোধের পরে পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
অনুষ্ঠানে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থার ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প চালু করতে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে, বিশেষ করে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি কেবলমাত্র তার দলের শাসনামলে পেনশন স্কিমটি খুলতে চেয়েছিলেন। কারণ তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে অন্য কোনো সরকার এই জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করবে না। কারণ অতীতে তাদের একচেটিয়াভাবে নিজেদের ভাগ্য গড়তে দেখা গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় থাকার সময় পেনশন স্কিম চালু করতে চেয়েছিলাম। নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। আমরা ক্ষমতায় এলে ভালো হবে, অন্যথায় এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া, এরশাদ ও খালেদার শাসনামলে অমানুষিকভাবে নির্যাতন, হত্যা ও গুম করায় আওয়ামী লীগ তার দলের নেতাকর্মীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আওয়ামী ফাউন্ডেশন গঠন করে পেনশন স্কিম খুলেছিল।
তিনি আরও বলেন, তারা এই স্কিম চালিয়ে যেতে পারেননি। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দেশের প্রতিটি ব্যক্তিকে একটি সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আনার সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি সবচেয়ে বড় বিষয় যে আমরা বাংলাদেশের সব মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করতে পেরেছি। এটি আমাদের আত্মতৃপ্তি দেয়।’
শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে দেশবাসীকেও ধন্যবাদ জানান। কারণ তারা বারবার আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস দেখিয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থেকে তাদের সেবা করতে পেরেছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তার বাবা, মা ও ভাইদের হত্যার মাধ্যমে সবকিছু হারিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর বাবা, মা, ভাই কাউকে পাইনি। কিন্তু দেশবাসীকে পাশে পেয়েছি। তাই দেশের সবাইকে একটি সুন্দর জীবন দিতে কাজ করে যাচ্ছি।’ বাসস
সরকার কি নির্বাচন করতে পারবে? আবার কি ক্ষমতায় আসতে পারবে আওয়ামী লীগ? যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের পরিবর্তন হবে, কখন হবে? দেশটিকে ‘ম্যানেজ’ করতে না পারলে, নির্বাচন কি ঠেকিয়ে দেবে তারা? আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে এসব প্রশ্ন। দলের কেন্দ্রীয় ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের কারও সঙ্গে দেখা হলেই এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চান কর্মীরা। কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা হলেও এমন প্রশ্ন করেন মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
তাদের এভাবে জানতে চাওয়ার কারণ সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও নানা সময় আরও কয়েকজন মন্ত্রীকেও একইভাবে দেশটির সমালোচনা করতে দেখা গেছে।
ফলে নেতাকর্মীরা যখন নির্বাচন, দলের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা এসব বিষয়ে প্রশ্ন করেন, তখন তাদের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা যায়। এ অবস্থার জন্য সুবিধাবাদীদের দায়ী করে ক্ষোভও প্রকাশ করেন কেউ কেউ।
গত রবিবার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের সঙ্গে দেখা করে তার বাসা থেকে বেরিয়ে আসার সময় ছাত্রলীগের সাবেক এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে দেখা হয় এই প্রতিবেদকের। হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এসে তিনি জানতে চান, কি মনে হয় নির্বাচন হবে? আপনাদের কাছে কি তথ্য আছে? আওয়ামী লীগ কি আবার ক্ষমতায় আসতে পারবে? এসব বিষয়ে নেতা কী বললেন? এক নাগাড়ে এসব প্রশ্ন করে কৌতূহলভরা চোখে তাকিয়ে থাকেন ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সাবেক ওই নেতা।
গত বুধবার রাতে বাংলামোটর এলাকায় চায়ের আড্ডায় উপস্থিত হন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছিলেন ছাত্রনেতা। বিরোধী দলকে মোকাবিলায় সক্রিয় ছিলেন মাঠে। চা খেতে খেতে তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, ‘সরকার থাকবে তো? ভোট করতে পারব আমরা?’ নিজের দলের বড় নেতাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘সব খেয়ে ফেলেছে ওরা। খাওয়া পার্টির জন্যই আজ এ অবস্থা।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘নেত্রী কত কিছু করেছে, তাতে সাধারণ মানুষ আপাকে ভোট দেওয়াও দায়িত্ব মনে করে। কিন্তু সব খেয়ে ফেলা একটা গ্রুপ সেসব অর্জন শেষ করে দিচ্ছে।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীদের জানতে চাওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের যেসব নেতাকর্মী দেখা করতে আসেন তাদের দিক থেকে এসব প্রশ্ন থাকে। আমাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা যখনই নেতাকর্মী বেষ্টিত থাকেন অনেক ঘনিষ্ঠ কর্মী জানতে চান নানা কিছু।’
তিনি বলেন, কোনো কোনো বিদেশি শক্তির বেশি তৎপরতা বিষয়ে গণমাধ্যমের খবর মাঝেমধ্যে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেয়। ফারুক খান বলেন, ‘কূটনীতি কৌশলের খেলা। এগুলো সবাই পরিষ্কার দেখতে ও বুঝতে পায় না। কূটনীতি ঠুনকো কিছু নয়। সমালোচনায় সম্পর্ক উন্নতি-অবনতি হয়, এমন কিছুও নয়।’
ধানমণ্ডিতে দলীয় সভাপতির কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসা-অফিসে দলীয় কাজ নিয়ে সারা দেশের নেতাকর্মীরা আসেন। তারা সুযোগ পেলেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে এবং আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে এমন নিশ্চয়তা পেতে চান দলের শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কাছ থেকে। সাংবাদিকদের পেলে তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন, জানতে চান আমেরিকা কি ঠিক হবে না? সরকারের সঙ্গে থাকবে না?
যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নিজ দলের নীতিনির্ধারক মহলের সমালোচনার প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলেন, কী দরকার এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে সমালোচনা করার। সমালোচনা না করে সম্পর্কোন্নয়ন করা দরকার বলে তারা মনে করেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে এমন দুর্ভাবনা জেঁকে বসলেও কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও প্রভাবশালী যুক্তরাষ্ট্রকে ছেড়ে কথা বলছেন না। বছরের শুরুর দিকে টানা সমালোচনা করলেও বেশ কিছুদিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে সমালোচনা বন্ধ ছিল। গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটিকে নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার মধ্য দিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। গত বুধবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আওয়ামী লীগের স্মরণসভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নাম উল্লেখ না করে পশ্চিমা দেশটিকে ইঙ্গিত করে বাংলাদেশ নীতির কড়া সমালোচনা করেন। সংসদে চলতি বছরের বাজেট অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্যে সরকারপ্রধান যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছিলেন। এর আগেও তিনি সংসদের বাইরে সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক শিথিল করার ইঙ্গিতও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা যত বাড়ে, সারা দেশের আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী, সমর্থকদের দুশ্চিন্তা ততই বাড়তে থাকে।
আসছে ডিসেম্বরের শেষের দিকে কিংবা জানুয়ারির প্রথম দিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ নিয়ে প্রায় এক বছর ধরে পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলোর তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। তারা বরাবরই বলে আসছে বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করে তারা। মে মাসের পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছে। এ ছাড়া ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও ঘন ঘন বৈঠক করে চলেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করছেন সরকারের মন্ত্রীরা।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুশ্চিন্তা বাড়ালেও প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা তারা কিছুটা মেনে নিয়েছে। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দলের অন্য কারও সমালোচনায় নেতাকর্মীরা ঠিক মানতে পারছেন না। তাদের দাবি, যাকে-তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা না করার নির্দেশনা দেওয়া উচিত।
২০০১ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের দলের সভাপতিসহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছিলেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। এবারও নির্বাচনের আগে দেশটির সমালোচনা শুরু হওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সে সময়ের ঘটনার সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করছেন।
তৃণমূল নেতাদের দুশ্চিন্তা নিয়ে জানতে চাইলে দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজনীতি ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বেশ তৎপরতা দেখাচ্ছে। নির্বাচন ইস্যুতে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এতে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় সরকার ও দলের অবস্থান থেকে কিছু প্রতিক্রিয়া না দেখালে বিদেশি তৎপরতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ফলে সমালোচনা রাজনৈতিক কৌশলের অংশ বলে দাবি করেন কেন্দ্রীয় এই নেতারা।
তারা আরও বলেন, প্রকাশ্য তৎপরতা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন। এতে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে, সমালোচনা না করলে ভালো হয়ে যাবে, ব্যাপারটা তেমন নয়।
কেন্দ্রীয় ওই নেতারা বলেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সর্বশেষ দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সবাইকে অবহিত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো দলকে ক্ষমতায় বসাবে না। দেশটির লক্ষ্য হলো প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা থেকে সরানো। ফলে নেতাকর্মীদের বোঝা উচিত, সমালোচনা কেন?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান হলো বিতর্কমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। সেজন্য দলের শক্তির ওপর বেশি নির্ভর করে আছেন তিনি। লক্ষ্য যেহেতু নির্ধারণ করাই আছে, তাই কৌশলী অবস্থানে থেকে কূটনীতি-রাজনীতি মোকাবিলা করতে সমালোচনার পথ বেছে নেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে দেনদরবারও চলছে।
দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করায় দেশের রাজনীতিতে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী একটি অংশের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশংসা পেয়েছেন। সাধারণ মানুষের একটি অংশের কাছেও গ্রহণযোগ্য হয়েছেন। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে শেখ হাসিনার সমালোচনামূলক বক্তব্য সমর্থন পেয়েছে। তিনি বলেন, সব কথার শেষ কথা হলো আলোচনা-সমালোচনায় কূটনৈতিক সম্পর্কের ভালো-খারাপ নির্ধারণ হয় না।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা যুক্তরাষ্ট্রের এমন তৎপরতাকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের এমন তৎপরতাকে হস্তক্ষেপ মনে করেন সরকারের মন্ত্রী ও দলের নেতারা। তারা দাবি করেন, এই হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে খোলামেলা সমালোচনা করা বিদেশিদের এক ধরনের চাপ দেওয়া।
তারা বলছেন, কূটনীতির অনেক কিছু দৃশ্যমান হয়ে উঠে না। ফলে সম্পর্ক খারাপ বা ভালো সেটা সব মহলের বোঝার উপায়ও থাকে না। কূটনীতিক দেনদরবার কৌশলের বিষয়। তাই তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা থাকবে সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে দলের নীতিনির্ধারকদের প্রতি তাদের বিশ্বাসও আছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে দলের নেতাকর্মীরা একটু চাপে থাকেন। এটা নেতাকর্মীদের দলের জন্য ভালোবাসার প্রকাশ। সবকিছু ঠিক থাকলেও তবু সম্ভাবনার কথা জানতে চান। আমাদের কাছেও অনেকেই নিশ্চয়তা চান, জানতে চান দলের ও সরকারের অবস্থা মজবুত রয়েছে কি না।’
দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মহলের দাবি আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও অঙ্গীকার সুষ্ঠু নির্বাচন। ফলে জল ঘোলা কে বা কারা করতে চায়, এজন্য গভীরে যাওয়া উচিত।’
মামলা নিষ্পত্তিতে গতি বাড়লেও সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অনিষ্পন্ন বা বিচারাধীন মামলার পরিসংখ্যানে খুব বেশি হেরফের হচ্ছে না। হাইকোর্টে এখন বিচারাধীন পাঁচ লাখের বেশি মামলা। এসব মামলা পরিচালনা করছেন ৮৩ বিচারপতি। গড় হিসেবে হাইকোর্টের একেকজন বিচারপতিকে ছয় হাজারের বেশি মামলা পরিচালনা করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে আপিল বিভাগে বিচারাধীন ২১ হাজারের বেশি মামলায় বিচারিক দায়িত্ব পালন করছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ সাতজন বিচারপতি।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা মনে করছেন, মামলা নিষ্পত্তি আরও গতিশীল না হওয়ার কারণ বিচারকস্বল্পতা। তাদের অভিমত, নানা চিন্তা ও পদক্ষেপের পরেও বিচারিক আদালতগুলোতে মামলাজট এখনো অনিয়ন্ত্রিতই রয়েছে। এখন উচ্চ আদালতেও যদি এর প্রভাব পড়ে তাহলে ঢাকার বাইরে দূরদূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থী এবং বিচার বিভাগের জন্য তা সুখকর হবে না। এমন পরিস্থিতিতে উচ্চ আদালতে বেশিসংখ্যক বিচারক নিয়োগ করার পক্ষে মত দেন তারা।
সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে পাওয়া গত মার্চ পর্যন্ত বিচারাধীন মামলার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, হাইকোর্টে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলা ৯১ হাজার ৬৩৮, ফৌজদারি মামলা ৩ লাখ ৩ হাজার ৮৬৩ এবং ১ লাখ ২১ হাজার ৬৩২টি রিট মামলাসহ বিচারাধীন রয়েছে ৫ লাখ ১৭ হাজার ১৩৩টি মামলা। গড় হিসাব বলছে, হাইকোর্টে একেকজন বিচারপতির হাতে ৬ হাজার ২৩০টি করে মামলা রয়েছে। গত পাঁচ বছরে উচ্চ আদালতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা পাঁচ লাখ এবং এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারক ছিলেন ৯০ জন বা এর কিছু কমবেশি ছিল। নিকট অতীতে ২০১৮ সালের ৩০ মে হাইকোর্ট বিভাগে ১৮ জনকে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই বছর পর (২০২০ সালের ২৯ মে) তারা স্থায়ী নিয়োগ পান। পাঁচ বছর পর গত বছরের ৩১ জুলাই ১১ জনকে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই কয়েক বছরে ২৯ জনকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও এ সময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিচারপতি অবসরে গেছেন।
এখন হাইকোর্ট বিভাগে ৮৯ জন বিচারপতি রয়েছেন। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম এবং ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম সেখানে বিচারিক দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট অসদাচরণের অভিযোগে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা- উল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হককে বিচারিক দায়িত্ব পালনে বিরত থাকার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। এই তিনজনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখন হাইকোর্ট বিভাগে ৮৩ বিচারপতি দায়িত্ব পালন করছেন।
অন্যদিকে, আপিল বিভাগে ২১ হাজার ১৮৪ মামলার মধ্যে দেওয়ানি মামলা ১৩ হাজার ৪৪২, ফৌজদারি মামলা ৭ হাজার ৫৯৪ এবং আদালত অবমাননা (কনটেম্পট পিটিশন)-সংক্রান্ত ১৪৮ মামলা রয়েছে। সে হিসেবে আপিল বিভাগে একেকজন বিচারপতিকে গড়ে ৩ হাজার ২৬টি মামলা পরিচালনা করতে হচ্ছে।
মামলা নিষ্পত্তির হার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে বলে জানান সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনরা। গত বছরের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ওই বছরের ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাইকোর্টে করা হয় ৬৪ হাজার ৬৪১টি মামলা। একই সময় নিষ্পত্তি হয় প্রায় ৫১ হাজার মামলা। নিষ্পত্তির হার ছিল ৭৯ শতাংশ। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান বলছে, ওই সময় পর্যন্ত হাইকোর্টে বিচারাধীন ছিল ৫ লাখ ১৬ হাজার ৬৭৪ মামলা। এর মধ্যেই হওয়া নতুন ২৩ হাজার ৬১৯ এবং পুনরুজ্জীবিত ২৫ মামলাসহ ওই সময় পর্যন্ত অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ লাখ ৪০ হাজার ৩১৮টি। বছরের তিন মাসে নিষ্পত্তি হয় ২৩ হাজার ১৮৫টি। অর্থাৎ হাইকোর্টে নতুন এবং পুনরুজ্জীবিত মামলার চেয়ে কিছু কম নিষ্পত্তি হলেও বিচারের গতি বেড়েছে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও আইন সাময়িকী ডিএলআর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান মনে করেন, হাইকোর্টে আরও ১০০ বিচারপতি নিয়োগ এবং আপিল বিভাগে কর্মরত সাতজনসহ অন্তত ১২ জন বিচারপতি থাকা উচিত। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘বিচারিক আদালতগুলোতে এখন মামলার ফাইল উপচে পড়ে। উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির গতি বাড়লেও জট কিন্তু খুব বেশি কমছে না। এখানেও যদি লাখ লাখ মামলা বিচারাধীন থাকে তাহলে এটি সুখকর হবে না।’ তিনি বলেন, ‘বেশিসংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ হলে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও আনুষঙ্গিক সুবিধার প্রয়োজন হবে। বিচার বিভাগ ও বিচারপ্রার্থীর স্বার্থে এটি সরকারকেই করতে হবে।’
উচ্চ আদালতের প্রয়োজনের তুলনায় বিচারকের সংখ্যা তুলনামূলক কম বলে মনে করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘বিচারপতির সংখ্যা বাড়লে এটি সব সময়ই ভালো। কিন্তু আমাদের বিচারব্যবস্থায় বিচারকের স্বল্পতা যেমন রয়েছে, তেমনি প্রযুক্তির ব্যবহার ওইভাবে বাড়েনি। বিচারপতি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে।’
ডেঙ্গুর রোগীদের চিকিৎসায় শিরায় দেওয়ার আইভি ফ্লুইড স্যালাইনের সংকট এখনো কাটেনি। সরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য ওষুধ কোম্পানি থেকে কিনে স্যালাইন সরবরাহ করছে সরকারের এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। আগে যেখানে ইডিসিএলের দৈনিক ৫ হাজার ব্যাগ আইভি ফ্লুইড লাগত, এখন সেটা ১০ গুণ বেড়ে ৫০ হাজারে পৌঁছেছে। একইভাবে বেসরকারি পর্যায়েও স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে।
ইডিসিএলকে স্যালাইন সরবরাহ করতে গিয়ে বাজারের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে না পারায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে স্যালাইনের সংকট অব্যাহত রয়েছে। সংকটকে পুঁজি করে খোলাবাজারে দ্বিগুণ বেড়ে গেছে আইভি ফ্লুইডের দাম। এমনকি বেশি দাম দিয়েও সময়মতো স্যালাইন পাচ্ছেন না রোগীর স্বজনরা।
এমন অবস্থায় সংকট মোকাবিলায় সরকার বিদেশ থেকে ৮ লাখ ব্যাগ আইভি ফ্লুইড আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে আমদানি করা হবে ৩-৪ লাখ ব্যাগ। আমদানির প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে ইতিমধ্যেই ইডিসিএলকে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ইডিসিএলও আমদানির অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী দু’তিন দিনের মধ্যেই স্যালাইন আমদানির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে।
এ ব্যাপারে ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির গতকাল বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকে স্যালাইন আমদানি করার জন্য গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে। ইডিসিএল বাইরে থেকে স্যালাইনসহ কোনো ধরনের ওষুধ আমদানি করে না। এবারই প্রথম এই কাজ করতে হচ্ছে। সে কারণে কিছু নিয়মনীতি, অর্থ ও অনুমতির বিষয় আছে। এরই মধ্যে আমরা স্যালাইনের দাম নিয়ে বাইরে যোগাযোগ করেছি। দামসহ সব কিছু উল্লেখ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) একটি চিঠি দিয়েছি। অনুমতি পেলে আশা করছি আগামী দু’তিন দিনের মধ্যেই আমদানির উদ্যোগ নিতে পারব।’
বাইরে থেকে আমদানির কারণ ব্যাখ্যা করে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অনুমতি পেলে আমরা তৈরি আইভি ফ্লুইড আমদানি করব। সরকারি পর্যায়ে স্যালাইনের কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু বাইরের বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। কোম্পানিগুলো চাইলেও তাদের সক্ষমতার বাইরে বেশি তৈরি করতে পারবে না। সর্বোচ্চ পর্যায়ে উৎপাদন করেও দেখা যাচ্ছে যে দেশে মোট স্যালাইনের চাহিদা মেটাতে পারছে না। কোম্পানিগুলোর আগে সরকারি চাহিদা মেটাতে হয়। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো স্যালাইন নিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছে। সরকার ভেবেছে আমরা যদি কিছু আমদানি করতে পারি, তা হলে বেসরকারি কোম্পানিগুলোতে সরকারি চাপ কিছুটা কমবে। বেসরকারি পর্যায়ে সরবরাহ করতে পারবে। সে জন্য এই উদ্যোগ।’
ভারত থেকে আমদানির চিন্তা : ভারত থেকে আইভি ফ্লুইড আমদানির চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানান ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দ্রুত আমদানির জন্য এলসি করতে হলে ভারতের কথাই চিন্তা করতে হবে। কারণ তারা সড়কপথে ট্রাকে করে পাঠিয়ে দেবে। আপাতত ৩-৪ লাখ ব্যাগ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। তবে আমাদের মোট লক্ষ্য ৮ লাখ ব্যাগ আমদানি করা।
এই কর্মকর্তা বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে ইডিসিএলের কিছু নিয়মনীতি আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। সে জন্য একটি প্রস্তাবনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমদানি করলে আমরা চাহিদা অনুযায়ী সেগুলো সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করব। এতে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ কমবে। তারা বাজারে সরবরাহ করতে পারবে। স্যালাইন সংকট থাকবে না।
প্রতিদিন লাগছে ৫০ হাজার ব্যাগ : ইডিসিএল জানায়, এখন সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন ৫০ হাজার ব্যাগ আইভি ফ্লুইড স্যালাইন সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে ১৫ হাজার ব্যাগ লাগে ঢাকা শহরের ডেঙ্গু ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালগুলোতে। বাকি ৩৫ হাজার ব্যাগ যায় ঢাকার বাইরে।
ইডিসিএলের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ডেঙ্গুর জন্য আইভি ফ্লুইডসহ সব ধরনের স্যালাইনের চাহিদা ১০ গুণ বেড়েছে। আগে বছরে সারা দেশে ইডিসিএল সরবরাহ করত ৬০ লাখ ব্যাগ। সে হিসাবে প্রতি মাসে ৫ লাখ ব্যাগ ও দৈনিক ১৭ হাজার ব্যাগ লাগত। গত আড়াই মাসে সেই চাহিদা বেড়েছে। এখন মাসে লাগছে ৫০ লাখ ব্যাগ ও দৈনিক ১ লাখ ৬৬ হাজার ব্যাগ। এর মধ্যে দৈনিক ৫০ হাজার ব্যাগ আইভি ফ্লুইড লাগছে। অথচ ডেঙ্গুর আগে গত অর্থবছরে দৈনিক আইভি ফ্লুইড লাগত ৫ হাজার ব্যাগ।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি। সে কারণে মূল চাহিদা এখানে। ঢাকার বাইরে বেশি স্যালাইন লাগে না। সরকারি পর্যায়ে স্যালাইন নিয়ে ঢাকা শহরে কোনো সমস্যা নেই। ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি।
বাজারে সংকট, বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে : রাজধানীর মিটফোর্ড, শাহবাগসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকার ওষুধের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্যালাইনের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। তবে তা চাহিদা অনুপাতে কম। বিশেষ করে আইভি ফ্লুইড স্যালাইনের সংকট বেশি।
ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানান, এখনো বাজারে সংকট রয়েছে। দাম এখনো বেশি। ১৫ দিন আগেও পাইকারি বাজারে দাম অনেক বেশি ছিল, এখন কিছুটা কমেছে। কোম্পানিগুলো মাঝে-মধ্যে দিচ্ছে, কিন্তু চাহিদা অনুপাতে দিচ্ছে না। কোম্পানির লোকজন বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী তারা উৎপাদন করতে পারছেন না। আবার যেটুকু উৎপাদন হচ্ছে তার বেশির ভাগ চলে যাচ্ছে সরকারি পর্যায়ে ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে খুব কমই দিতে পারছেন তারা।
ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানান, যে আইভি ফ্লুইডের দাম ১০০ টাকা, সেটা পাইকারি বাজারে ১৪০-১৬০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ দোকানেই এখনো স্যালাইন নেই।
ভোগ্যপণ্যের দাম প্রতিদিনই চক্রবৃদ্ধি সুদ হারের মতো বাড়ছে। সংসার চালাতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে মানুষ। গেল এক বছরে পেঁয়াজ, সবজি, মাছ ও মাংসসহ নিত্যপণ্যের সবকিছুর দামই চরমে পৌঁছেছে। বছর ব্যবধানে কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে শতভাগ। এ অবস্থায় স্বাভাবিক জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সংস্থাগুলো কঠোর না হলে জীবনধারণ দায় হয়ে দাঁড়াবে।
বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক বছরে সবজির মধ্যে সব থেকে বেশি বেড়েছে পেঁপের দাম। গরিবের ভরসার এই সবজিতে ৯০-১০০ শতাংশ দাম বেড়েছে। এ ছাড়া হুট করে দাম বাড়ার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের আমিষের অভাব পূরণকারী ডিমে ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তাতেও ৩৭ শতাংশের বেশি দাম বেড়েছে। ফলে ডিম খাওয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলছে মধ্যবিত্ত। আগে থেকেই মাছের দাম নাগালের বাইরে। এর মধ্যে ভরা মৌসুমে ভোক্তাদের জন্য ইলিশ কেনা যেন সোনার হরিণ। অন্যান্য মাছের মধ্যে সব থেকে বেশি প্রচলিত মাঝারি আকারের রুই মাছে ২৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সবজি যেন আরও একধাপ এগিয়ে। কাঁচা মরিচের ২৫ শতাংশ ও দেশি পেঁয়াজে ১০০ শতাংশ দাম বেড়েছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশের ব্যবসায়ীদের নৈতিক স্খলনের অবনতি হয়েছে। ফলে তারা মৌসুমি অজুহাত সৃষ্টি করে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে। যার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বাস্তবতার আড়ালে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে দেশের মানুষ কষ্টে রয়েছে। বাজারকে আস্তাবলে পরিণত করেছে।
কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির যে গতি তা কিন্তু থেমে নেই। সেই হিসেবে গেলে এক বছরে সব পণ্যের দাম ৫০ শতাংশ কিংবা তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। এতে করে জনসাধারণের নাভিশ্বাস অবস্থা। ভোক্তাপর্যায়ে সস্তায় আমিষের অভাব পূরণের একমাত্র উপকরণ ছিল ডিম। এখন সেই ডিম কিনতেও তাদের ভাবতে হচ্ছে। কিন্তু এই সরকার মানুষের কষ্টের বিষয় কখনো স্বীকার করে না।
জনগণ নয়, ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধানে সরকার বেশি আন্তরিক দাবি করে তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলে তারা তা করছে না। উল্টো সরকার ব্যবসায়ীদের দাবি আদায়ে বেশি তৎপর। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সব শ্রেণির ব্যবসায়ীরা ফায়দা লুটছে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা তাদের নৈতিকতা হারিয়েছে। তা না হলে, দেশের মানুষকে কষ্ট দিয়ে অতিমুনাফা করার চিন্তা করত না। এর জন্য সরকারের বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাও দায়ী। কেননা তারা শুধু গুটিকয়েক অভিযানের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকছে। কিন্তু তাদের এ অভিযানের পরিধি যদি আরও বিস্তার লাভ করত তাহলে সাধারণ জনগণ বাজারে সুবিধা পেত। তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, মূল্যস্ফীতির কারণে বাজারে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির পাচ্ছে।
ডিম : মাছ-মাংস নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্বল্প খরচে আমিষের চাহিদা পূরণ করা ডিমও। গতকাল বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে প্রতি হালি ডিম কিনতে ভোক্তার খরচ হয়েছে ৫২ টাকা। আর একটি ডিম কিনতে হয়েছে ১৩ টাকায়। কিন্তু এর আগে এক সপ্তাহ ধরে ডিম কিনতে হয়েছে প্রতি ডজন ১৬০-১৬৫ টাকায়। আর একটি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫ টাকায়। ফলে মধ্যবিত্তরা ডিম খাওয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলছেন। গত বছরও প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা দরে। এক ডজন ১২০ ও একটি ডিম ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
হঠাৎ করে ডিমের দাম বাড়ার পেছনে করপোরেট ব্যবসায়ীদের দায়ী করেন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, খামারির উৎপাদন খরচের ওপর ভিত্তি করে ডিমের মূল্য নির্ধারণ হওয়ার কথা থকলেও তা হচ্ছে না। কেননা পোলট্রি সেক্টরের ৭০ শতাংশ করপোরেট ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাওয়ায় প্রান্তিক খামারিরা তাদের খামারের উৎপাদিত ডিমের ন্যায্য মূল্য পান না। করপোরেট কোম্পানিরা ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। তা বাস্তবায়ন করে ফড়িয়া ও পাইকাররা। এর জন্য তারা গণমাধ্যমকে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে বহুদিন ধরে।
মাছ : দেশের মানুষকে মাছে ভাতে বাঙালি বলা হলেও সেই প্রবাদ এখন গুড়েবালি। খুদে শিক্ষার্থীদের মুখের কথা, মাছের রাজা ইলিশ। কিন্তু ভরা মৌসুমে এখন সেই ইলিশও যেন সোনার হরিণ। বর্তমানে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা। মধ্যবিত্তের জন্য ইলিশ খাওয়া বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ছাড়া বাজারে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত রুই মাছের দামও নাগালের বাইরে। মাঝারি আকারের প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৩০-৩৫০ টাকায়। যা গত বছর ২৮০-২৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি মাঝারি আকারের রুই মাছের দাম ২৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চলতি বছর প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে মাছের উৎপাদন কমেছে। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বাজারে মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতি কেজিতে অন্তত ৬০ টাকা বেড়েছে।
পেঁয়াজ : কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, প্রতি বছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা থাকে ২৫ লাখ টন। তবে চাহিদার থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৭-৮ লাখ টন বেশি পেঁয়াজের উৎপাদন হয়ে থাকে। অন্যদিকে মে মাসের শুরুর দিকে পেঁয়াজের দাম ৩৫-৪০ থেকে হঠাৎ করে ১০৫ টাকায় পৌঁছায়। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় ব্যবসায়ীদের। সে দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজ ও পেঁয়াজের আমদানি থাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ টাকার মধ্যে থাকার কথা। কিন্তু মসলা জাতীয় পণ্য পেঁয়াজের বাজারে লঙ্কাকান্ড পরিস্থিতি। বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের ১০০ শতাংশ দাম বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। যা গত বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছে ৪০-৫০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। তাছাড়া চাহিদার তুলনায় দেশীয় পেঁয়াজের জোগান নেই বললেই চলে। বাজারে এখন ভারতীয় পেঁয়াজের দাপট চলছে। আমদানিতে খরচ বেশি পড়ায় পেঁয়াজের বাজার কিছুটা বাড়তির দিকে রয়েছে বলে তারা জানান।
কাঁচা সবজি : সবজির বাজারের পরিস্থিতি যেন আরও খারাপ অবস্থা। গরিবের তরকারিখ্যাত পেঁপে এখন আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হচ্ছে। অস্বাভাবিক দামে প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। যা গত বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছে মাত্র ২০ টাকায়। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বাজারের সব থেকে কমদামি পেঁপের কেজিতে ১০০ শতাংশ দাম বেড়েছে। এ ছাড়া বর্তমান বাজারে করলা, পটোল, বেগুন ও চিচিঙ্গা সব থেকে দামি সবজি। গেল তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি সবজিতে অন্তত ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে চিচিঙ্গা ও পটোল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়, বেগুন ৮০-৯০ ও করলা ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
মাংস : দেশের এক শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা। বাজার পরিস্থিতিতে রোজকারের এ টাকায় সংসার চালানো কষ্টসাধ্য। তার ওপর ব্যবসায়ীদের বেঁধে দেওয়া ৭০০ টাকায় গরুর মাংস কেনা প্রায় অসাধ্য। তাই অনেক ভোক্তাই মাংসের চাহিদা মেটান ব্রয়লার মুরগি দিয়ে। তাতেও যেন সংশয় দেখা দিয়েছে। খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে বাজারে ব্রয়লার দামও ওঠানামা করছে। তবে গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ২৫ শতাংশ দাম বেড়ে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পোলট্রি মুরগি। যা গত বছর আগস্টেও বিক্রি হয়েছে ১৬০-১৭০ টাকা দরে। পাশাপাশি কক মুরগির দামও বেড়েছে বেশ। এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি কক মুরগিতে ৬০ টাকা বেড়েছে।
অনেকটা হতাশা প্রকাশ করে স্কুলশিক্ষক হরনাথ বাবু দেশ রূপান্তরকে বলেন, খাদ্যপণ্যের মধ্যে সব পণ্যই বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। জীবনের ৫০টি বসন্ত পার করেছি। কখনো দেখিনি মুরগির ডিম ১৫ টাকা। শুধু কি ডিমের ক্ষেত্রে এমন, পুরো বাজার জুড়ে সাধারণ ক্রেতাদের হতাশা। খরচের চাপ সামলাতে মাছের পিস চিকন করে নিয়ে এসেছি। তবে মাছ দিয়েই নয়, সংসার চালাতে গিয়ে আরও অনেক পণ্যের ব্যবহার কমাতে বাধ্য হয়েছি।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলে তেমন কোনো লাভ হবে না। একটা বিষয় স্পষ্ট যে, মূল্যস্ফীতির কারণে বাজারে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর জন্য আমাদের সঠিক পদ্ধতির ঘাটতি রয়েছে। মূল বিষয় হলো মূল্যস্ফীতি কমলে পণ্যের দাম কমে আসবে এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে, আমাদেরও তাই করতে হবে।
তিনি বলেন, বিশে^র অন্যান্য দেশেও মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্যের দাম বেড়েছে। তারা তাদের পদ্ধতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে তার থেকে উত্তরণ হয়েছে। কিন্তু আমাদের পদ্ধতিগত সমস্যা থাকায় আমরা তার থেকে উত্তরণ হতে পারছি না। এর জন্য গত দুই বছর আগেই সরকারের পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল। তারা তা নেয়নি। ব্যাংকগুলো ইন্টারেস্ট বৃদ্ধি না করায় মজুদকারী ও মূল্যস্ফীতি দিন দিন বেড়েছে। এ বিষয়কে সরকার গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো টাকা ছাপিয়ে তা বাজারে ছড়িয়ে দিয়েছে। যার ভোগান্তি আমাদের চলমান।
অভিযান পরিচালনা করে মূল্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভাবনা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কোনো বাহিনী দিয়ে অভিযান পরিচালনা করে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। এর জন্য আমাদের পদ্ধতিগতভাবে এগোতে হবে। নিয়মের বাইরে টাকা ছাপানো বন্ধ করে ব্যাংকগুলোকে ইন্টারেস্ট বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলেই ভোগ্যপণ্যসহ সব পণ্যের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর শোক প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ-তাঁতী লীগের ৩১ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে জামালপুর ছাত্রলীগের ১৮, নরসিংদীর ৬, ঠাকুরগাঁওয়ে ১ ও চট্টগ্রামে ৬ জন। গত বুধবার রাতে নিজ নিজ জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
পদ হারানো ছাত্রলীগের নেতারা উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের পাশাপাশি কলেজ ইউনিটে ছিলেন। তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর আগে গত বুধবার চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের ৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। এ নিয়ে গত দুদিনে ৪০ জনকে বহিষ্কার করা হলো।
এদিকে সাঈদীর মৃত্যুতে ফেসবুকে শোক প্রকাশ করে চাকরি হারিয়েছেন চট্টগ্রামের এক মাদ্রাসাশিক্ষক। তার নাম আবু ছালেহ মো. জোবায়ের। তিনি চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ি বিভাগে (গণিত) অস্থায়ীভাবে কর্মরত ছিলেন। অন্যদিকে সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়া রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ইন্সপেক্টর খাইরুল ইসলামকে আমর্ড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন (এপিবিএন) পার্বত্য জেলায় বদলী করা হয়েছে। বিস্তারিত আমাদের ব্যুরো অফিস, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর :
জামালপুরে ছাত্রলীগের ১৯ জন বহিষ্কার : সাঈদীর মৃত্যুর পর শোক প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় জামালপুর ছাত্রলীগের ১৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খাবিরুল ইসলাম খান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক নাফিউল করিম রাব্বি স্বাক্ষরিত পৃথক তিনটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান, মেলান্দহ পৌর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসিফ আহামেদ, মেলান্দহ সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান সেতু ও মেলান্দহ উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য আশরাফুল সালেহীন রিয়াদ।
জামালপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাফিউল করিম রাব্বির বলেন, ‘সংগঠনের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অপরাধে উপজেলা, ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ের ১৮ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
চট্টগ্রামে ৬ জন বহিষ্কার : চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের ৬ নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের দুজন, সাতকানিয়ায় একজন এবং সন্দ্বীপ উপজেলায় তিনজন। স্থায়ীভাবে তাদের বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে সুপারিশও করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতারা।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাময়িক বহিষ্কৃত দুই নেতা হলেন উপকর্মসংস্থান সম্পাদক মো. সাজেদুল হক সাজ্জাদ ও সহসম্পাদক শাহজাহান হাবিব। এ ছাড়া সাতকানিয়া উপজেলার সাতকানিয়া সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ তারেককে অব্যাহতি দিয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগ। সন্দ্বীপ উপজেলা ছাত্রলীগের তিন নেতা হলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মো. রুস্তম, কার্যনির্বাহী সদস্য মো. আফসার ও পৌরসভা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান।
নরসিংদীতে ছাত্রলীগের ৬ জন বহিষ্কার : সাঈদীর মৃত্যুর পর শোক প্রকাশ করায় নরসিংদী ছাত্রলীগের ছয়জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নরসিংদী ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল আহমেদ শাওন এ তথ্য জানিয়েছেন।
নরসিংদীতে যাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, মাধবদী থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুজন ভূঁইয়া, পলাশ উপজেলা শাখার সহসভাপতি মো. নাদিম মিয়া, একই উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের সহসভাপতি হাফিজুর রহমান অপু, মনোহরদী উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক জে এস জুনায়েদ, বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক সাকিব আহমেদ এবং মাধবদী উপজেলার পাইকারচর ইউনিয়নের সহসভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ।
ঠাকুরগাঁওয়ে ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার : সাঈদীর মৃত্যুতে ফেসবুকে শোক প্রকাশ করে আবেগঘন স্ট্যাটাস দেওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার সেনগাঁও ইউনিয়নের ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ইউসুব ইসলামের পদ স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া সৈয়দপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার রাতে পীরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর রহমান মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক নবাব হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বগুড়ায় তাঁতী লীগের সধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি : বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীবকে দলীয় পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বগুড়া জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক রাশেকুজ্জামান রাজনের যৌথ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া উপজেলা তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নিজেকে আওয়ামী পরিবারের সন্তান দাবি করে বলেন, ‘জেলা কমিটি থেকে অব্যাহতির বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে। আবেগতাড়িত হয়ে সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম।’
চাকরি হারালেন মাদ্রাসাশিক্ষক : এবার যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদ-প্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে ফেসবুকে শোক প্রকাশ করে চাকরি হারালেন চট্টগ্রামের এক মাদ্রাসাশিক্ষক। আবু ছালেহ মো. জোবায়ের নামে ওই শিক্ষক চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ি বিভাগে (গণিত) অস্থায়ীভাবে কর্মরত ছিলেন। গত বুধবার মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন আযহারীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলী : সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ইন্সপেক্টর খাইরুল ইসলামকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) পার্বত্য জেলায় বদলি করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে তাকে বদলি করা হয়। খাইরুল আরএমপির প্রসিকিউশন বিভাগে কোর্ট ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত ছিলেন।
আরএমপির সদর দপ্তরের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, খাইরুলের পোস্টটি নজরে আসার পর আরএমপি কমিশনার বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে। তদন্তে সাইবার ইউনিট নিশ্চিত হয়েছে তারই আইডি থেকে পোস্টটি প্রকাশ করা হয়। ফলে বুধবার দুপুরেই প্রতিবেদন দাখিল করে। তিনি এমন পোস্ট দিয়ে অসদাচরণ করেছেন। এতে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) বিজয় বসাক জানান, ফেসবুকে খাইরুলের পোস্ট দেওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করা হয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এরপরই তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকেই তার বদলির নির্দেশ আসে।
বঙ্গবন্ধু ও সাঈদীর জানাজার ছবি ফেসবুকে পোস্ট : টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসাইন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজার ছবিতে বিরূপ মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। পরে তার দেওয়া পোস্টটি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে আলোচনা ও সমালোচনার মুখে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পোস্টটি ডিলিট করে দেন তিনি।
গত বুধবার রাতে ছাত্রলীগ নেতা ইকবাল হোসাইন তার ব্যবহৃত ফেসবুকে ওই পোস্ট করেন। এর আগে বুধবার বিকেল ৫টা ৩ মিনিটে ‘মো. সৈকত মৃধা বরিশাল’ নামের এক ব্যক্তি তার ফেসবুক আইডিতে বঙ্গবন্ধু ও সাঈদীর জানাজার ছবি পোস্ট করেন। তার ওই ফেসবুক পোস্টটি শেয়ার করেন গোপালপুরের ছাত্রলীগ নেতা ইকবাল হোসাইন।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের কারণে চলমান রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নতুন করে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দুই দলের এ পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের মূল টার্গেট ঢাকা দখলে নেওয়া। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসা নিতে বিদেশ পাঠাতে রবিবার বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। পাল্টা জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একই পথে হেঁটেছে। বিএনপিকে ‘আগুন সন্ত্রাস, অপরাজনীতি ও নাশকতার রাজনীতি’ ছাড়ার জন্য সোমবার ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরপর পাল্টা ৩৬ ঘণ্টার হুঁশিয়ারি এসেছে বিএনপির কাছ থেকে।
তার আগে গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবেদন করলে অনুমতির বিষয়টি দেখা যাবে। তবে তার কাছে এরকম কোনো কাগজপত্র আসেনি। ওইদিনই খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার বলেছেন, সরকারের মনোভাব ইতিবাচক হলে তারা আবারও আবেদন করবেন।
পরদিন রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলটিমেটাম দেন। ওইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে বিএনপি বলছে, সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে।
দুই দলের রাজনীতি ও ঘোষিত আলটিমেটাম মাঠের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না, সে সম্পর্কে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিএনপির আলটিমেটামের ফল কী হবে আর আওয়ামী লীগেরও দীর্ঘ ৩৬ দিনের আলটিমেটাম কেন এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতর বেশ কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজধানী ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি আলটিমেটাম। ঢাকায় বিএনপির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার কৌশলের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে দলটি আলটিমেটাম দিয়েছে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই তার পাল্টা জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দুই দলের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা। ঢাকার রাজনীতি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে না পারলে রাজনীতিতে জুতসই অবস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি।
সারা দেশের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেয়ে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নির্ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপির ওই শীর্ষসারির নেতারা। তাই বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ইস্যু করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। পর্যাপ্ত নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকে গেলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তাই ইস্যু খালেদার চিকিৎসা, কিন্তু লক্ষ্য ঢাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৩৬ দিনের আলটিমেটামের পেছনে রয়েছে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ঢাকায় নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে ততই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের শান্তি যেন বিঘিœত না হয়, সেজন্যই আমরা বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে থাকি। বিএনপিকে জনগণ বিশ্বাস করে না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে সত্যিই নিতে চাইলে আলটিমেটাম কেন দেবে বিএনপি? আইনি জটিলতা নিরসন করে বিদেশ নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস-সহিংসতানির্ভর রাজনীতি করে, বিশ্বাস করে। তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা।’ তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে কেন বিএনপি আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না? তার কিছু হলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দায় নিতে হবে।’
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুই দলের ঘোষিত আলটিমেটামকে কথার বাকযুদ্ধ হিসেবে নিয়েছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এগুলো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অবস্থান ধরে নেওয়া যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের কোনো গা নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে আইনগতভাবে যেতে হবে। নির্বাহী কোনো সিদ্ধান্তে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ফলে আলটিমেটাম মূলত নিষ্ফল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দাবি আদায় করার জন্য জনগণ থেকে দাবি উঠতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণকে রাস্তায় নামাতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন যেসব বক্তব্য এগুলো মঞ্চের বাকযুদ্ধ।’
বিএনপির আলটিমেটাম নিয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি (গতকাল মঙ্গলবার) সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষ করে এসেছি।’ আলটিমেটামের পেছনে ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তো আমরা সভা-সমাবেশ করছিই।’
জানতে চাইলে বিএনপির আরেক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আলটিমেটাম সম্পর্কে ক্লিয়ার কিছু জানি না।’
বিএনপিকে ‘অপরাজনীতি’ ছাড়তে ৩৬ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে ‘সঠিক পথে’ না এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির ‘অপরাজনীতির কালো হাত’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে আলটিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটি বিএনপির জন্য শেষ বার্তা।’ গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় এবং যাত্রাবাড়ীতে পৃথক সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। উত্তরার সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ আলটিমেটাম দেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি দুই সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে এখন রাজপথে আছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় গত সোমবার দুটি সমাবেশ হয়।
এর আগে থেকেই ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির সভা-সমাবেশের বিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করলেও মাঠের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি।
নেক সন্তান আল্লাহর অপূর্ব নেয়ামত। পবিত্র কোরআনে সন্তান-সন্ততিকে জীবনের শোভা বলা হয়েছে। হাদিসের ভাষায় তাদের আখ্যা দেওয়া হয়েছে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো লোক মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন প্রকার আমল (জারি থাকে)। (প্রথম) সদকায়ে জারিয়া; (দ্বিতীয়) ওই ইলম, যা দ্বারা অন্য লোক উপকৃত হয়; (তৃতীয়) নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। -সুনানে নাসায়ি : ৩৬৫১
সন্তানকে নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকেই তাকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় এই সন্তানই মা-বাবার ইহকাল-পরকালের অশান্তির কারণ হতে পারে। এখানে কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো- যা সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োগ করা যেতে পারে।
গোনাহমুক্ত পরিবেশ : শিশুদের নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকেই তার প্রতি যতœবান হতে হবে। তার মানসিক বিকাশে গুরুত্ব দিতে হবে। তার জন্য গোনাহমুক্ত পবিত্র পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা করো।’ -সুরা তাহরিম : ৬
একটি শিশু যখন বড় হয়, তখন চারদিকের পরিবেশ তাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে এবং এর প্রতিফলন ঘটে তার বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে। শিশুর সামগ্রিক বিকাশের সঙ্গে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা নিবিড়ভাবে জড়িত।
তাই তাদের সামনে কোনো ধরনের অসৌজন্যমূলক কথা ও কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের সামনে ঝগড়াঝাটি, পরনিন্দা ইত্যাদি কাজ থেকেও বিরত থাকতে হবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখা : ছোটবেলা থেকেই শিশুদের পরিচ্ছন্নতার প্রতি সচেতন করে তুলতে হবে। মানুষের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য পরিচ্ছন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) পরিচ্ছন্নতাকে ইমানের অঙ্গ বলেছেন। ছোট মানুষ বলে তাদের যেনতেনভাবে লালন-পালন করা উচিত নয়। কারণ এটিও ব্যক্তিত্ব গঠনে জোরালো ভূমিকা পালন করে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বলেন, ‘রাসুল (সা.) দিনের এক অংশে বের হন, তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি এবং আমিও তার সঙ্গে কথা বলিনি। অবশেষে তিনি বনু কাইনুকা বাজারে এলেন (সেখান থেকে ফিরে এসে) ফাতেমা (রা.)-এর ঘরের আঙিনায় বসলেন। অতঃপর বলেন, এখানে খোকা [হাসান (রা.)] আছে কি? এখানে খোকা আছে কি? হজরত ফাতেমা (রা.) তাকে কিছুক্ষণ সময় দিলেন। আমার ধারণা হলো, তিনি তাকে পুঁতির মালা, সোনা-রুপা ছাড়া যা বাচ্চাদের পরানো হতো, পরাচ্ছিলেন (সাজিয়ে দিচ্ছিলেন)। তারপর তিনি দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং চুমু খেলেন। তখন তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি তাকে (হাসানকে) ভালোবাসো এবং তাকে যে ভালোবাসে তাকেও ভালোবাসো।’ -সহিহ বোখারি : ২১২২
সৃজনশীল খেলনা : শিশুর খেলনা হতে হবে আবিষ্কারধর্মী ও সৃজনশীল। বয়সভেদে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ উপযোগী খেলনা নির্বাচন করতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে। ঘরে ও বাইরে দুই জায়গায়ই খেলা যায়- এমন খেলনা শিশুর মানসিক বিকাশে বেশি সহায়ক। শিশুকে এমন ধরনের খেলনা দিতে হবে, যা তার বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ খেলনা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
অনেকে সন্তানকে ঘরে নিরাপদে রাখতে ভিডিও গেম বা কার্টুনের প্রতি আকৃষ্ট করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিনিয়ত ভিডিও গেম খেললে শরীরে এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয়। এতে শিশু সব কিছু নিয়েই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। মা-বাবার অবাধ্য হয়ে যায়। মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গেমিংয়ে আসক্ত ব্যক্তি মূলত অন্য সব কিছুর প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। এ ছাড়া কারও সঙ্গে মিশতে না পারা, ঘুম, খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম তো রয়েছেই।
দীনি ইলম শিক্ষা দেওয়া : দীনি ইলম শিক্ষা করা সব মুসলমানের ওপর ফরজ। তাই সন্তানকে তার দৈনন্দিন ইবাদতের জন্য যতটুকু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা দরকার, কমপক্ষে ততটুকু ইলম শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতেই হবে। তাকে পবিত্রতা শিক্ষা দিতে হবে, আল্লাহ-রাসুল ও ইসলামের সাধারণ জ্ঞানগুলো অল্প অল্প করে শেখাতে হবে। কোরআন শিক্ষা দিতে হবে, প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দিতে হবে। পাশাপাশি তাকে আস্তে আস্তে বিভিন্ন গোনাহ সম্পর্কে সতর্ক করাও মা-বাবার দায়িত্ব।
নামাজে অভ্যস্ত করা : শৈশব থেকে সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করে না তুললে ভবিষ্যতে সে নামাজের প্রতি যতœবান হতে পারবে না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের নামাজের প্রতি যতœবান হও এবং তাদের ভালো কাজে অভ্যস্ত করো। কেননা কল্যাণ লাভ অভ্যাসের ব্যাপার।’ -সুনানে বায়হাকি : ৫০৯৪
উল্লেখ্য, ১০ বছর বয়সে সন্তানের বিছানা আলাদা করে দেওয়ার বিষয়টিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা ঘুমিয়ে গেলেও তাদের অবচেতন মন বড়দের অনেক কার্যক্রমই অনুসরণ করতে পারে।
এক কথায় সন্তানকে দীনদার হিসেবে গড়ে তুলতে হলে, মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদেরও অত্যন্ত সচেতনভাবে চলতে হবে। ঘরে আমলের পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যাতে পরিবেশের কারণে তাদের মধ্যে আমল করার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনো বয়সে ঘাড়, পিঠ বা কোমরের বাত-ব্যথা ভোগেন। কোনো আঘাত পাওয়া ছাড়াই মেরুদণ্ডের এসব অংশে ব্যথা হতে পারে।
ব্যথার উৎস : মেরুদণ্ডের হাড়গুলোর ভেতর দিয়ে মাথার খুলি থেকে নেমে আসা নার্ভে বা স্পাইনাল কর্ডে দুই হাড়ের মধ্যবর্তী ডিস্কের কিছু অংশ বের হয়ে গিয়ে চাপের সৃষ্টি করলে ওই স্নায়ুমূলে ও সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া নার্ভের বিচরণ অঙ্গে ব্যথা হয়। এ জাতীয় ব্যথার নাম মেরুদণ্ড হাড়ের ক্ষয়। হাড়ের ফাঁক হয়ে যাওয়া বা হাড়ের বৃদ্ধিও বলা হয়। চিকিৎসাশাস্ত্রে এ জটিলতা ডিস্ক প্রোল্যাপ্স, হার্নিয়েটেড ডিস্ক বা স্পাইনাল স্টেনোসিস বলা হয়। ডিস্কের সরে যাওয়া মাত্রার ওপর নির্ভর করে ডিস্ক প্রোল্যাপ্স বা পিএলআইডি রোগের জটিলতা।
লক্ষণ : দাঁড়ানো বা বসা অবস্থায় ঘাড়ে ব্যথা অনুভূত হওয়া, ঘাড় থেকে ব্যথা হাতে ছড়িয়ে পড়া, প্রাথমিক পর্যায়ে কাঁধ ও হাতে ব্যথা, হাতের বিভিন্ন অংশে ঝিনঝিন, শিনশিন করা, হাতের বোধশক্তি কমে আসা, পর্যায়ক্রমে হাতের অসাড়তা, ধীরে ধীরে হাত দুর্বল হয়ে হাতের কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে পঙ্গুত্ব বরণ করা। মেরুদণ্ডের পিঠের অংশে ব্যথার লক্ষণের মধ্যে রয়েছে বসা ও দাঁড়ানো অবস্থায় পিঠব্যথা ও পিঠ থেকে বুকের চারপাশে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া। আর কোমরের দিকের মেরুদণ্ডে ব্যথার লক্ষণ হলো দাঁড়ানো বা বসা অবস্থায় কোমর ব্যথা অনুভূত হওয়া, কোমর থেকে উৎপন্ন ব্যথা পায়ে ছড়িয়ে পড়া, নিতম্ব ও পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথা, পায়ের বিভিন্ন অংশে ঝিনঝিন, শিনশিন করা, পায়ের বোধশক্তি কমে আসা, পর্যায়ক্রমে পায়ের অসাড়তা, ক্রমে পা দুর্বল হয়ে কার্যক্ষমতা হারানো।
চিকিৎসা : ব্যথায় রোগী সাধারণত ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে উপশমের চেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু এ ধরনের ওষুধ নিয়মিত ও দীর্ঘদিন খেলে কিডনিতে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ব্যথা বাড়লে অপারেশনের মাধ্যমে ব্যথা নিবারণের ব্যবস্থা করা হয়। লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে মেরুদণ্ডের ব্যথা নিরাময়ের ব্যবস্থা করা যায়।
ভারতের বিপক্ষেই খেলেছিলেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। এবার বিশ্বকাপটাই ভারতে, যে ধর্মশালা দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ অভিযান, সেখানেই আছে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির কৃতিত্ব। হিমালয়ের কোলে, ছবির মতো সুন্দর সেই মাঠে আবারও খেলবে বাংলাদেশ, কিন্তু খেলবেন না তামিম ইকবাল।
অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বরাবরের মতো সংবাদ সম্মেলনে নিরাবেগ কণ্ঠে একের পর এক নাম পড়ে শোনাননি প্রধান নির্বাচক, গভীর রাতে কোনো ইমেইলেও আসেনি খেলোয়াড় তালিকা। বিশ্বকাপগামী ১৫ ক্রিকেটারের প্রত্যেকের হাতে হাতে সুন্দর করে বাক্সবন্দি বিশ্বকাপ জার্সি তুলে দেওয়ার ভিডিও নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচিতদের পরিচিত করেছে বিসিবি। এজন্য বিসিবির সংশ্লিষ্টরা বাহবা পেতেই পারেন, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যেমনটা হৃদয় জিতে নিয়েছে ক্রিকেটারদের পরিবারের আপনজনদের দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করিয়ে।
কারা থাকছেন আর কারা থাকছেন না, তা নিয়ে খুব বড় কোনো চমক ছিল না বিশ্বকাপ দলে। সবাই শুধু একটাই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন। তামিম ইকবাল শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে আছেন নাকি নেই। অবসর, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে প্রত্যাবর্তন, ব্যক্তিগত কাজে দুবাই ভ্রমণ, ইংল্যান্ডে ইনজেকশন, দেশে অনুশীলন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসে ব্যাট করে ৪৪ রান এবং পরে নিজেকে আবারও পুরোপুরি ফিট নয় বলে পরের ম্যাচে বিশ্রাম। স্বভাবতই এই তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপে দেখতে চাইবেন না কোনো কোচ এবং অধিনায়ক। সোমবার গভীর রাতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় সাকিবের ছুটে যাওয়া এবং সিডনি থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে বোর্ড সভাপতির বাসায় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পা রাখাই প্রমাণ করে, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের এ তৎপরতা।
তামিমের মতো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সহজ নয়। নিঃসন্দেহে দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, ওয়ানডেতে ১৪টা সেঞ্চুরি। হুট করে অবসর নিলে যাকে ফিরিয়ে আনেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারেও তামিম বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগের কথাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেশাদারির কাছে হার মেনেছে আবেগ, যুক্তির কাছে হেরে গেছে অতীত। তামিম নামটা আছে বিশ্বকাপ দলে, তবে পদবিটা ইকবাল নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, যার বয়স আর তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় কাছাকাছি।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল অতিমানবীয়। ৬০৬ রান আর ১১ উইকেট। তবু দল হলো অষ্টম। গোটা আসর চোটজর্জর অধিনায়ককে বইল দল। প্রতিটি সকাল শুরু হতো এক অনিশ্চয়তা নিয়ে, খেলতে পারবেন তো মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা? শুরুর দিকে নতুন বলে কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ গড়েছে রানের পাহাড়। সেই অভিজ্ঞতা কী করে ভুলবেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ান জেমি সিডন্স আর অধিনায়ক সাকিব এজন্যই ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দলে রাখেননি চোটগ্রস্ত মাশরাফীকে। হাথুরুসিংহে জাতীয়তায় শ্রীলঙ্কান হলেও অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে থাকতে হয়ে গেছেন তাদের মতোই পেশাদার। তাই তো কঠিন সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।
কাল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এবং দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও আবদুর রাজ্জাক। তামিমকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে মিনহাজুল শুনিয়েছেন মুখস্থ কথাই, ‘আপনারা তো এবারের বিশ্বকাপের দলটা এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন। তামিম ইকবালের তো অনেক দিন ধরেই ইনজুরি নিয়ে চিন্তা আছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর... সবকিছু বিবেচনা করেই, সবাই আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশ্বকাপে অনেক দিনের ব্যাপার। অনেক ম্যাচ আছে।’
তামিমের চোটটা তো নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এ চোট নিয়ে তিনি ভুগছেন, নিজের ইচ্ছামতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এসব থেকে নিজেকে সরিয়েও রেখেছিলেন। চিকিৎসাও করিয়ে আনা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে কেন তাকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ দেওয়া এবং ম্যাচ খেলিয়ে বাদ দেওয়া এ প্রসঙ্গে মিনহাজুলের উত্তর, ‘দেখুন, কিছু কিছু ইনজুরি আছে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বেকায়দায় পড়বে। আপনি দেখুন, নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে... প্রথম ম্যাচ খেলেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটা খেলেছে... এরপর কিন্তু শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দিতে হয়েছে।’
‘তামিম অন্যতম সেরা। কিন্তু চোটের দুশ্চিন্তা থাকলে নিজেকে মেলে ধরা কঠিন। মেডিকেলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। এটা আগেই বলেছি, এখন দল ঘোষণা করা হয়েছে’বলছিলেন প্রধান নির্বাচক। বিসিবি সভাপতি বা সাকিব ও কোচের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে সেটা তো এখানে প্রকাশ করব না।’
১০ দলের বিশ্বকাপে দশম দল হিসেবে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। কেন এত দেরি, ফ্লাইটে ওঠার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে বিশ্বকাপের দল দেওয়া হলো কেন এ নিয়ে হাবিবুল বাশারের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে সেটা তো আমাদের সঙ্গের ব্যাপার। দল নির্বাচন করতে যখন বসি... খেলোয়াড় হিসেবে তামিমের... আমরা সুস্থ-সবল তামিমকে পেতে... এটা নিয়ে আমাদের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ভাবতে হয়েছে। তাই দেরি হয়েছে।’
তামিমের বাদ পড়ার ডামাডোলে হারিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর ফেরাটাও। সেই ইংল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্রামের মোড়কে বাদ পড়েছিলেন। তার বদলে অনেক বিকল্প খুঁজেও শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে আবার তার কাছেই ফিরলেন নির্বাচকরা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৪৯ আর ২১ রানের দুটো ইনিংসেই হয়ে গেছে বিশ্বকাপের টিকিট। প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘আগেই বলেছি, বিশ্বকাপের আগে যেকোনো খেলোয়াড়কে যেকোনো সিরিজে দেখব। ও পরিকল্পনাতেই ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে দেখেছি।’
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে, মাত্র দুই ম্যাচ দেখে সৌম্য সরকারকে দলে নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তানজিদ তামিম আর তানজিম সাকিব নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন। যথাক্রমে মাত্র পাঁচ আর দুই ম্যাচ খেলে তারা বিশ্বকাপ যাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। এমন নয় যে, এ স্বল্প সময়ে দারুণ কিছু করে দেখিয়েছেন, প্রধান কারণ বিকল্পের অভাব।
শুধু তামিম ইকবালই নয়, দলের লজিস্টিক ম্যানেজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বড় ভাই ও সাবেক খেলোয়াড় নাফিস ইকবালকেও। তামিমের অবসর-কা-ে তিনি বিসিবি সভাপতির মেসেজের জবাব দেননি, যা পাপন নিজে বলেছেন গণমাধ্যমে। হয়তো তারই প্রতিশোধ, সেই সঙ্গে ড্রেসিংরুমের সঙ্গে তামিমের সব সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।
অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন তামিম, দুটি ম্যাচ খেললেন। কিন্তু যেভাবে বাদ পড়লেন, তাতে মনে হতে পারে অবসরের সিদ্ধান্তটাই ছিল সঠিক। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামীতেও তামিমের দলে ফেরাটা বোধহয় অনিশ্চিতই হয়ে গেল।
তামিম প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে দলটা কেমন হয়েছে দেখা যাক। পাঁচ পেসার, দুই অফ স্পিনার, দুই বাঁহাতি স্পিনার মিলিয়ে বোলিং আক্রমণটা নেহায়েত খারাপ নয়। লিটন দাসের সঙ্গে তানজিদ তামিম অথবা মেকশিফট ওপেনার মিরাজ। সহঅধিনায়কের পদ থেকে বাদ পড়েছেন লিটন, সেটা করা হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। সাকিব, মুশফিক, তাওহীদ হৃদয়দের নিয়ে মিডল অর্ডারের পর ফিনিশার রোলে মাহমুদউল্লাহ। এ নিয়েই ধর্মশালায় আফগানদের বিপক্ষে লড়াইয়ের শুরু। প্রত্যাশা অনেক বড়, প্রস্তুতি গোলমেলে। ভরসা একটাই, শুরুর আগে পরিস্থিতি এমন গোলমেলে হলেই কেন যেন ভালো করে বাংলাদেশ!
বিশ্বকাপ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (সহঅধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান, তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসনে রদবদলের সুযোগ নেই সরকারের। তাই এর আগেই নির্বাচনী প্রশাসনে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে পদোন্নতি ও রদবদল। ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে বদলি-পদায়ন হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি হয়েছে। নির্বাচনের আগে অবসরে যাওয়া কয়েকজন সচিবেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২০ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৮ জন ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিসিএসের ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে, ২৫তম ব্যাচ ২০০৬ সালে এবং ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০০৮ সালে।
জানা যায়, নির্বাচনের সময় ডিসিরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। তাদের যে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। নির্বাচনের সময় সমন্বয়কারীর ভূমিকায়ও থাকেন ডিসিরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন তাদের দুটি ব্যাচের কর্মকর্তারা নিয়োগ পেয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে। আর সে সময় বিসিএস নিয়ে বেশ বিতর্ক ছিল। বিসিএসে ছিল নানা ধরনের তদবির। ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ দুটি বিএনপির সময়ে নিয়োগ পেলেও ২৭তম ব্যাচ নিয়োগ পেয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। কারণ বিএনপির শেষ সময়ে ২৭তম ব্যাচের নিয়োগে বড় ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকায় তা বাতিল হয়। পরে ফের পরীক্ষা নিয়ে ২০০৮ সালে এ ব্যাচের নিয়োগ দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ নিয়ে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২৪তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডিসির পদ থেকে তুলে আনা হতে পারে। নির্বাচনের সময় যারা ডিসির দায়িত্বে থাকবেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের সবার ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে আর ডিসির পদে রাখা হবে না।
এ ছাড়া নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। বর্তমানে ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন ইউএনও পদে, যারা আসন্ন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এখন ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ইউএনওর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে; এ ব্যাচে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
জানতে চাইলে সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ইকরাম আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পিএসসির নিয়োগ পরীক্ষা হয় যোগ্যতা, মেধা ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। সেখানে ছাত্রজীবনে কে কোন পার্টি করেছিলেন, কোন দল ক্ষমতায় আছে তা বিবেচনা করা হয় না। বিসিএস কর্মকর্তাদের যে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, তাতে তাকে একজন অফিসার হিসেবেই গড়ে তোলা হয়। এরপর এসিআর, সুপিরিয়রের মতামত, সুনাম, দক্ষতা, যোগ্যতার ভিত্তিতেই একজন কর্মকর্তাকে উচ্চতর পদে দেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তবে সরকার যে দল পরিচালনা করে তাদের কিছু নীতিমালা ও উদ্দেশ্য থাকে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সরকারের নেওয়া বৈধ ও জনকল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা। তিনি প্রলুব্ধ হবেন না, নিরপেক্ষ থেকে তার দায়িত্ব পালন করবেন। যদি কোনো নির্বাচনী দায়িত্বও দেওয়া হয়, সেটাও নিরপেক্ষভাবে তিনি পালন করবেন।’
গত মে মাসে অতিরিক্ত সচিব পদে ১১৪ জনের পদোন্নতি হয়। জুলাই মাসে পাঁচ বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই বদলি ও নতুন মিলিয়ে ৩০টি জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার এই ডিসি পদে এবারও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর আটজন পিএসকে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ২২১ কর্মকর্তা। এ পদোন্নতিতে মূল বিবেচনায় এসেছে ২২তম ব্যাচ। বর্তমানে যুগ্ম সচিবের স্থায়ী পদ ৫০২টি। এর বিপরীতে পদোন্নতি পাওয়ার পর যুগ্ম সচিবের সংখ্যা হলো ৯৪৬ জন। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২ নভেম্বর ১৭৫ জন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। আর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২৭০ জন সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।
জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই অন্তত ১০ জন সচিবের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন আগামী ১৩ অক্টোবর অবসরে যেতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান ১৪ সেপ্টেম্বর, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালামের ২৬ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আবদুস সালামের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ৯ অক্টোবর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দীক ৩০ অক্টোবর, ইআরডি সচিব শরিফা খান ২৪ নভেম্বর, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এহসানে এলাহী ২৫ নভেম্বর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন। ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম এবং ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম। এ ১০ জনের মধ্যে কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন।
গত কয়েক বছরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিব পদে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই স্বাভাবিক অবসরের মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ সাবেক চার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মধ্যে একমাত্র কবির বিন আনোয়ার ছাড়া বাকি তিনজনই স্বাভাবিক মেয়াদ শেষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তারা হলেন মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, মোহাম্মদ শফিউল আলম ও খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনেরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।