
ডেঙ্গুর রোগীদের চিকিৎসায় শিরায় দেওয়ার আইভি ফ্লুইড স্যালাইনের সংকট এখনো কাটেনি। সরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য ওষুধ কোম্পানি থেকে কিনে স্যালাইন সরবরাহ করছে সরকারের এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। আগে যেখানে ইডিসিএলের দৈনিক ৫ হাজার ব্যাগ আইভি ফ্লুইড লাগত, এখন সেটা ১০ গুণ বেড়ে ৫০ হাজারে পৌঁছেছে। একইভাবে বেসরকারি পর্যায়েও স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে।
ইডিসিএলকে স্যালাইন সরবরাহ করতে গিয়ে বাজারের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে না পারায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে স্যালাইনের সংকট অব্যাহত রয়েছে। সংকটকে পুঁজি করে খোলাবাজারে দ্বিগুণ বেড়ে গেছে আইভি ফ্লুইডের দাম। এমনকি বেশি দাম দিয়েও সময়মতো স্যালাইন পাচ্ছেন না রোগীর স্বজনরা।
এমন অবস্থায় সংকট মোকাবিলায় সরকার বিদেশ থেকে ৮ লাখ ব্যাগ আইভি ফ্লুইড আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে আমদানি করা হবে ৩-৪ লাখ ব্যাগ। আমদানির প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে ইতিমধ্যেই ইডিসিএলকে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ইডিসিএলও আমদানির অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী দু’তিন দিনের মধ্যেই স্যালাইন আমদানির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে।
এ ব্যাপারে ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির গতকাল বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকে স্যালাইন আমদানি করার জন্য গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে। ইডিসিএল বাইরে থেকে স্যালাইনসহ কোনো ধরনের ওষুধ আমদানি করে না। এবারই প্রথম এই কাজ করতে হচ্ছে। সে কারণে কিছু নিয়মনীতি, অর্থ ও অনুমতির বিষয় আছে। এরই মধ্যে আমরা স্যালাইনের দাম নিয়ে বাইরে যোগাযোগ করেছি। দামসহ সব কিছু উল্লেখ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) একটি চিঠি দিয়েছি। অনুমতি পেলে আশা করছি আগামী দু’তিন দিনের মধ্যেই আমদানির উদ্যোগ নিতে পারব।’
বাইরে থেকে আমদানির কারণ ব্যাখ্যা করে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অনুমতি পেলে আমরা তৈরি আইভি ফ্লুইড আমদানি করব। সরকারি পর্যায়ে স্যালাইনের কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু বাইরের বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। কোম্পানিগুলো চাইলেও তাদের সক্ষমতার বাইরে বেশি তৈরি করতে পারবে না। সর্বোচ্চ পর্যায়ে উৎপাদন করেও দেখা যাচ্ছে যে দেশে মোট স্যালাইনের চাহিদা মেটাতে পারছে না। কোম্পানিগুলোর আগে সরকারি চাহিদা মেটাতে হয়। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকগুলো স্যালাইন নিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছে। সরকার ভেবেছে আমরা যদি কিছু আমদানি করতে পারি, তা হলে বেসরকারি কোম্পানিগুলোতে সরকারি চাপ কিছুটা কমবে। বেসরকারি পর্যায়ে সরবরাহ করতে পারবে। সে জন্য এই উদ্যোগ।’
ভারত থেকে আমদানির চিন্তা : ভারত থেকে আইভি ফ্লুইড আমদানির চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানান ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দ্রুত আমদানির জন্য এলসি করতে হলে ভারতের কথাই চিন্তা করতে হবে। কারণ তারা সড়কপথে ট্রাকে করে পাঠিয়ে দেবে। আপাতত ৩-৪ লাখ ব্যাগ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। তবে আমাদের মোট লক্ষ্য ৮ লাখ ব্যাগ আমদানি করা।
এই কর্মকর্তা বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে ইডিসিএলের কিছু নিয়মনীতি আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। সে জন্য একটি প্রস্তাবনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমদানি করলে আমরা চাহিদা অনুযায়ী সেগুলো সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করব। এতে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ কমবে। তারা বাজারে সরবরাহ করতে পারবে। স্যালাইন সংকট থাকবে না।
প্রতিদিন লাগছে ৫০ হাজার ব্যাগ : ইডিসিএল জানায়, এখন সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিদিন ৫০ হাজার ব্যাগ আইভি ফ্লুইড স্যালাইন সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে ১৫ হাজার ব্যাগ লাগে ঢাকা শহরের ডেঙ্গু ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালগুলোতে। বাকি ৩৫ হাজার ব্যাগ যায় ঢাকার বাইরে।
ইডিসিএলের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ডেঙ্গুর জন্য আইভি ফ্লুইডসহ সব ধরনের স্যালাইনের চাহিদা ১০ গুণ বেড়েছে। আগে বছরে সারা দেশে ইডিসিএল সরবরাহ করত ৬০ লাখ ব্যাগ। সে হিসাবে প্রতি মাসে ৫ লাখ ব্যাগ ও দৈনিক ১৭ হাজার ব্যাগ লাগত। গত আড়াই মাসে সেই চাহিদা বেড়েছে। এখন মাসে লাগছে ৫০ লাখ ব্যাগ ও দৈনিক ১ লাখ ৬৬ হাজার ব্যাগ। এর মধ্যে দৈনিক ৫০ হাজার ব্যাগ আইভি ফ্লুইড লাগছে। অথচ ডেঙ্গুর আগে গত অর্থবছরে দৈনিক আইভি ফ্লুইড লাগত ৫ হাজার ব্যাগ।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি। সে কারণে মূল চাহিদা এখানে। ঢাকার বাইরে বেশি স্যালাইন লাগে না। সরকারি পর্যায়ে স্যালাইন নিয়ে ঢাকা শহরে কোনো সমস্যা নেই। ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি।
বাজারে সংকট, বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে : রাজধানীর মিটফোর্ড, শাহবাগসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকার ওষুধের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্যালাইনের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। তবে তা চাহিদা অনুপাতে কম। বিশেষ করে আইভি ফ্লুইড স্যালাইনের সংকট বেশি।
ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানান, এখনো বাজারে সংকট রয়েছে। দাম এখনো বেশি। ১৫ দিন আগেও পাইকারি বাজারে দাম অনেক বেশি ছিল, এখন কিছুটা কমেছে। কোম্পানিগুলো মাঝে-মধ্যে দিচ্ছে, কিন্তু চাহিদা অনুপাতে দিচ্ছে না। কোম্পানির লোকজন বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী তারা উৎপাদন করতে পারছেন না। আবার যেটুকু উৎপাদন হচ্ছে তার বেশির ভাগ চলে যাচ্ছে সরকারি পর্যায়ে ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে খুব কমই দিতে পারছেন তারা।
ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানান, যে আইভি ফ্লুইডের দাম ১০০ টাকা, সেটা পাইকারি বাজারে ১৪০-১৬০ টাকা এবং খুচরা বাজারে ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ দোকানেই এখনো স্যালাইন নেই।
সরকার কি নির্বাচন করতে পারবে? আবার কি ক্ষমতায় আসতে পারবে আওয়ামী লীগ? যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের পরিবর্তন হবে, কখন হবে? দেশটিকে ‘ম্যানেজ’ করতে না পারলে, নির্বাচন কি ঠেকিয়ে দেবে তারা? আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে এসব প্রশ্ন। দলের কেন্দ্রীয় ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের কারও সঙ্গে দেখা হলেই এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চান কর্মীরা। কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা হলেও এমন প্রশ্ন করেন মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
তাদের এভাবে জানতে চাওয়ার কারণ সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও নানা সময় আরও কয়েকজন মন্ত্রীকেও একইভাবে দেশটির সমালোচনা করতে দেখা গেছে।
ফলে নেতাকর্মীরা যখন নির্বাচন, দলের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা এসব বিষয়ে প্রশ্ন করেন, তখন তাদের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা যায়। এ অবস্থার জন্য সুবিধাবাদীদের দায়ী করে ক্ষোভও প্রকাশ করেন কেউ কেউ।
গত রবিবার আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের সঙ্গে দেখা করে তার বাসা থেকে বেরিয়ে আসার সময় ছাত্রলীগের সাবেক এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে দেখা হয় এই প্রতিবেদকের। হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এসে তিনি জানতে চান, কি মনে হয় নির্বাচন হবে? আপনাদের কাছে কি তথ্য আছে? আওয়ামী লীগ কি আবার ক্ষমতায় আসতে পারবে? এসব বিষয়ে নেতা কী বললেন? এক নাগাড়ে এসব প্রশ্ন করে কৌতূহলভরা চোখে তাকিয়ে থাকেন ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সাবেক ওই নেতা।
গত বুধবার রাতে বাংলামোটর এলাকায় চায়ের আড্ডায় উপস্থিত হন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছিলেন ছাত্রনেতা। বিরোধী দলকে মোকাবিলায় সক্রিয় ছিলেন মাঠে। চা খেতে খেতে তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, ‘সরকার থাকবে তো? ভোট করতে পারব আমরা?’ নিজের দলের বড় নেতাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘সব খেয়ে ফেলেছে ওরা। খাওয়া পার্টির জন্যই আজ এ অবস্থা।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘নেত্রী কত কিছু করেছে, তাতে সাধারণ মানুষ আপাকে ভোট দেওয়াও দায়িত্ব মনে করে। কিন্তু সব খেয়ে ফেলা একটা গ্রুপ সেসব অর্জন শেষ করে দিচ্ছে।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীদের জানতে চাওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের যেসব নেতাকর্মী দেখা করতে আসেন তাদের দিক থেকে এসব প্রশ্ন থাকে। আমাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা যখনই নেতাকর্মী বেষ্টিত থাকেন অনেক ঘনিষ্ঠ কর্মী জানতে চান নানা কিছু।’
তিনি বলেন, কোনো কোনো বিদেশি শক্তির বেশি তৎপরতা বিষয়ে গণমাধ্যমের খবর মাঝেমধ্যে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেয়। ফারুক খান বলেন, ‘কূটনীতি কৌশলের খেলা। এগুলো সবাই পরিষ্কার দেখতে ও বুঝতে পায় না। কূটনীতি ঠুনকো কিছু নয়। সমালোচনায় সম্পর্ক উন্নতি-অবনতি হয়, এমন কিছুও নয়।’
ধানমণ্ডিতে দলীয় সভাপতির কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসা-অফিসে দলীয় কাজ নিয়ে সারা দেশের নেতাকর্মীরা আসেন। তারা সুযোগ পেলেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে এবং আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে এমন নিশ্চয়তা পেতে চান দলের শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কাছ থেকে। সাংবাদিকদের পেলে তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন, জানতে চান আমেরিকা কি ঠিক হবে না? সরকারের সঙ্গে থাকবে না?
যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নিজ দলের নীতিনির্ধারক মহলের সমালোচনার প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলেন, কী দরকার এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে সমালোচনা করার। সমালোচনা না করে সম্পর্কোন্নয়ন করা দরকার বলে তারা মনে করেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে এমন দুর্ভাবনা জেঁকে বসলেও কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও প্রভাবশালী যুক্তরাষ্ট্রকে ছেড়ে কথা বলছেন না। বছরের শুরুর দিকে টানা সমালোচনা করলেও বেশ কিছুদিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে সমালোচনা বন্ধ ছিল। গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটিকে নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার মধ্য দিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। গত বুধবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আওয়ামী লীগের স্মরণসভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নাম উল্লেখ না করে পশ্চিমা দেশটিকে ইঙ্গিত করে বাংলাদেশ নীতির কড়া সমালোচনা করেন। সংসদে চলতি বছরের বাজেট অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্যে সরকারপ্রধান যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছিলেন। এর আগেও তিনি সংসদের বাইরে সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক শিথিল করার ইঙ্গিতও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা যত বাড়ে, সারা দেশের আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী, সমর্থকদের দুশ্চিন্তা ততই বাড়তে থাকে।
আসছে ডিসেম্বরের শেষের দিকে কিংবা জানুয়ারির প্রথম দিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ নিয়ে প্রায় এক বছর ধরে পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলোর তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। তারা বরাবরই বলে আসছে বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করে তারা। মে মাসের পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেছে। এ ছাড়া ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও ঘন ঘন বৈঠক করে চলেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করছেন সরকারের মন্ত্রীরা।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুশ্চিন্তা বাড়ালেও প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা তারা কিছুটা মেনে নিয়েছে। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দলের অন্য কারও সমালোচনায় নেতাকর্মীরা ঠিক মানতে পারছেন না। তাদের দাবি, যাকে-তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা না করার নির্দেশনা দেওয়া উচিত।
২০০১ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের দলের সভাপতিসহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছিলেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। এবারও নির্বাচনের আগে দেশটির সমালোচনা শুরু হওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সে সময়ের ঘটনার সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করছেন।
তৃণমূল নেতাদের দুশ্চিন্তা নিয়ে জানতে চাইলে দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজনীতি ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বেশ তৎপরতা দেখাচ্ছে। নির্বাচন ইস্যুতে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এতে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় সরকার ও দলের অবস্থান থেকে কিছু প্রতিক্রিয়া না দেখালে বিদেশি তৎপরতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ফলে সমালোচনা রাজনৈতিক কৌশলের অংশ বলে দাবি করেন কেন্দ্রীয় এই নেতারা।
তারা আরও বলেন, প্রকাশ্য তৎপরতা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন। এতে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে, সমালোচনা না করলে ভালো হয়ে যাবে, ব্যাপারটা তেমন নয়।
কেন্দ্রীয় ওই নেতারা বলেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সর্বশেষ দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সবাইকে অবহিত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো দলকে ক্ষমতায় বসাবে না। দেশটির লক্ষ্য হলো প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা থেকে সরানো। ফলে নেতাকর্মীদের বোঝা উচিত, সমালোচনা কেন?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান হলো বিতর্কমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। সেজন্য দলের শক্তির ওপর বেশি নির্ভর করে আছেন তিনি। লক্ষ্য যেহেতু নির্ধারণ করাই আছে, তাই কৌশলী অবস্থানে থেকে কূটনীতি-রাজনীতি মোকাবিলা করতে সমালোচনার পথ বেছে নেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে দেনদরবারও চলছে।
দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করায় দেশের রাজনীতিতে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী একটি অংশের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশংসা পেয়েছেন। সাধারণ মানুষের একটি অংশের কাছেও গ্রহণযোগ্য হয়েছেন। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে শেখ হাসিনার সমালোচনামূলক বক্তব্য সমর্থন পেয়েছে। তিনি বলেন, সব কথার শেষ কথা হলো আলোচনা-সমালোচনায় কূটনৈতিক সম্পর্কের ভালো-খারাপ নির্ধারণ হয় না।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা যুক্তরাষ্ট্রের এমন তৎপরতাকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের এমন তৎপরতাকে হস্তক্ষেপ মনে করেন সরকারের মন্ত্রী ও দলের নেতারা। তারা দাবি করেন, এই হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে খোলামেলা সমালোচনা করা বিদেশিদের এক ধরনের চাপ দেওয়া।
তারা বলছেন, কূটনীতির অনেক কিছু দৃশ্যমান হয়ে উঠে না। ফলে সম্পর্ক খারাপ বা ভালো সেটা সব মহলের বোঝার উপায়ও থাকে না। কূটনীতিক দেনদরবার কৌশলের বিষয়। তাই তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা থাকবে সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে দলের নীতিনির্ধারকদের প্রতি তাদের বিশ্বাসও আছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে দলের নেতাকর্মীরা একটু চাপে থাকেন। এটা নেতাকর্মীদের দলের জন্য ভালোবাসার প্রকাশ। সবকিছু ঠিক থাকলেও তবু সম্ভাবনার কথা জানতে চান। আমাদের কাছেও অনেকেই নিশ্চয়তা চান, জানতে চান দলের ও সরকারের অবস্থা মজবুত রয়েছে কি না।’
দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মহলের দাবি আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও অঙ্গীকার সুষ্ঠু নির্বাচন। ফলে জল ঘোলা কে বা কারা করতে চায়, এজন্য গভীরে যাওয়া উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুল আলোচিত সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থার উদ্বোধন করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সবার আরও ভালো ও একটি উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থার উদ্বোধন করা হলো। এ ব্যবস্থার লক্ষ্য হলো দেশের ১৮ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের এর আওতায় নিয়ে আসা।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থার উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা পেনশন স্কিম চালু করেছি যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ একটি উন্নত জীবনযাপন করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে ছয়টির মধ্যে চারটি স্কিম প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাস উদ্বোধন করা হয়েছে এবং অন্য দুটি পরে চালু করা হবে।
তার এবং আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসাই দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করার চালিকাশক্তি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামী দিনেও আমার প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা অব্যাহত রাখার জন্য আমি বাংলাদেশের জনগণকে অনুরোধ করছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একমাত্র লক্ষ্য ছিল দেশবাসীকে একটি উন্নত জীবন উপহার দেওয়া, যার জন্য তিনি তার সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা শোকের মাসে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু করেছি। জনগণকে একটি সুন্দর ও উন্নত জীবন দেওয়ার আমাদের প্রচেষ্টা দেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতার আত্মা শান্তি পাবে।’
শেখ হাসিনা প্রত্যেক দেশবাসীর জীবনকে অর্থবহ করার লক্ষ্যে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার জন্য জনগণের কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষকে আরও ভালো ও উন্নত জীবন দিতে ব্যর্থ হলে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া দেশের স্বাধীনতা বৃথা যাবে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা দেশের স্বাধীনতাকে ব্যর্থ হতে দেব না, এটি ব্যর্থ হবে না এবং এটি ব্যর্থ হয়নি। তার (বঙ্গবন্ধুর) আদর্শ অনুসরণ করে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা বজায় রেখে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের দিকে অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। সরকারপ্রধান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও সুবিধাভোগীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন এবং তিনটি জেলাগোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও রংপুর এবং সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
প্রগতি স্কিমটি বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য, স্ব-কর্মে নিযুক্ত লোকদের জন্য সুরক্ষা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রবাস এবং দেশের নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য সমতা প্রযোজ্য হবে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মূল লক্ষ্য দেশের ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাইকে এর আওতায় আনা এবং তারা তাদের ৬০ বছর বয়স হওয়ার পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।
পেনশনব্যবস্থার বয়সসীমা প্রাথমিকভাবে ৫০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু পরে তা সংশোধন করা হয়। ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও টানা ১০ বছর ধরে কিস্তি পরিশোধের পরে পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
অনুষ্ঠানে সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থার ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প চালু করতে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে, বিশেষ করে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি কেবলমাত্র তার দলের শাসনামলে পেনশন স্কিমটি খুলতে চেয়েছিলেন। কারণ তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে অন্য কোনো সরকার এই জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করবে না। কারণ অতীতে তাদের একচেটিয়াভাবে নিজেদের ভাগ্য গড়তে দেখা গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় থাকার সময় পেনশন স্কিম চালু করতে চেয়েছিলাম। নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। আমরা ক্ষমতায় এলে ভালো হবে, অন্যথায় এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে না।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া, এরশাদ ও খালেদার শাসনামলে অমানুষিকভাবে নির্যাতন, হত্যা ও গুম করায় আওয়ামী লীগ তার দলের নেতাকর্মীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আওয়ামী ফাউন্ডেশন গঠন করে পেনশন স্কিম খুলেছিল।
তিনি আরও বলেন, তারা এই স্কিম চালিয়ে যেতে পারেননি। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দেশের প্রতিটি ব্যক্তিকে একটি সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আনার সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি সবচেয়ে বড় বিষয় যে আমরা বাংলাদেশের সব মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করতে পেরেছি। এটি আমাদের আত্মতৃপ্তি দেয়।’
শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে দেশবাসীকেও ধন্যবাদ জানান। কারণ তারা বারবার আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস দেখিয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থেকে তাদের সেবা করতে পেরেছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তার বাবা, মা ও ভাইদের হত্যার মাধ্যমে সবকিছু হারিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর বাবা, মা, ভাই কাউকে পাইনি। কিন্তু দেশবাসীকে পাশে পেয়েছি। তাই দেশের সবাইকে একটি সুন্দর জীবন দিতে কাজ করে যাচ্ছি।’ বাসস
মামলা নিষ্পত্তিতে গতি বাড়লেও সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অনিষ্পন্ন বা বিচারাধীন মামলার পরিসংখ্যানে খুব বেশি হেরফের হচ্ছে না। হাইকোর্টে এখন বিচারাধীন পাঁচ লাখের বেশি মামলা। এসব মামলা পরিচালনা করছেন ৮৩ বিচারপতি। গড় হিসেবে হাইকোর্টের একেকজন বিচারপতিকে ছয় হাজারের বেশি মামলা পরিচালনা করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে আপিল বিভাগে বিচারাধীন ২১ হাজারের বেশি মামলায় বিচারিক দায়িত্ব পালন করছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ সাতজন বিচারপতি।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা মনে করছেন, মামলা নিষ্পত্তি আরও গতিশীল না হওয়ার কারণ বিচারকস্বল্পতা। তাদের অভিমত, নানা চিন্তা ও পদক্ষেপের পরেও বিচারিক আদালতগুলোতে মামলাজট এখনো অনিয়ন্ত্রিতই রয়েছে। এখন উচ্চ আদালতেও যদি এর প্রভাব পড়ে তাহলে ঢাকার বাইরে দূরদূরান্ত থেকে আসা বিচারপ্রার্থী এবং বিচার বিভাগের জন্য তা সুখকর হবে না। এমন পরিস্থিতিতে উচ্চ আদালতে বেশিসংখ্যক বিচারক নিয়োগ করার পক্ষে মত দেন তারা।
সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে পাওয়া গত মার্চ পর্যন্ত বিচারাধীন মামলার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, হাইকোর্টে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলা ৯১ হাজার ৬৩৮, ফৌজদারি মামলা ৩ লাখ ৩ হাজার ৮৬৩ এবং ১ লাখ ২১ হাজার ৬৩২টি রিট মামলাসহ বিচারাধীন রয়েছে ৫ লাখ ১৭ হাজার ১৩৩টি মামলা। গড় হিসাব বলছে, হাইকোর্টে একেকজন বিচারপতির হাতে ৬ হাজার ২৩০টি করে মামলা রয়েছে। গত পাঁচ বছরে উচ্চ আদালতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা পাঁচ লাখ এবং এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারক ছিলেন ৯০ জন বা এর কিছু কমবেশি ছিল। নিকট অতীতে ২০১৮ সালের ৩০ মে হাইকোর্ট বিভাগে ১৮ জনকে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই বছর পর (২০২০ সালের ২৯ মে) তারা স্থায়ী নিয়োগ পান। পাঁচ বছর পর গত বছরের ৩১ জুলাই ১১ জনকে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই কয়েক বছরে ২৯ জনকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও এ সময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিচারপতি অবসরে গেছেন।
এখন হাইকোর্ট বিভাগে ৮৯ জন বিচারপতি রয়েছেন। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম এবং ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম সেখানে বিচারিক দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট অসদাচরণের অভিযোগে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা- উল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হককে বিচারিক দায়িত্ব পালনে বিরত থাকার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। এই তিনজনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখন হাইকোর্ট বিভাগে ৮৩ বিচারপতি দায়িত্ব পালন করছেন।
অন্যদিকে, আপিল বিভাগে ২১ হাজার ১৮৪ মামলার মধ্যে দেওয়ানি মামলা ১৩ হাজার ৪৪২, ফৌজদারি মামলা ৭ হাজার ৫৯৪ এবং আদালত অবমাননা (কনটেম্পট পিটিশন)-সংক্রান্ত ১৪৮ মামলা রয়েছে। সে হিসেবে আপিল বিভাগে একেকজন বিচারপতিকে গড়ে ৩ হাজার ২৬টি মামলা পরিচালনা করতে হচ্ছে।
মামলা নিষ্পত্তির হার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে বলে জানান সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনরা। গত বছরের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ওই বছরের ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাইকোর্টে করা হয় ৬৪ হাজার ৬৪১টি মামলা। একই সময় নিষ্পত্তি হয় প্রায় ৫১ হাজার মামলা। নিষ্পত্তির হার ছিল ৭৯ শতাংশ। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান বলছে, ওই সময় পর্যন্ত হাইকোর্টে বিচারাধীন ছিল ৫ লাখ ১৬ হাজার ৬৭৪ মামলা। এর মধ্যেই হওয়া নতুন ২৩ হাজার ৬১৯ এবং পুনরুজ্জীবিত ২৫ মামলাসহ ওই সময় পর্যন্ত অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ লাখ ৪০ হাজার ৩১৮টি। বছরের তিন মাসে নিষ্পত্তি হয় ২৩ হাজার ১৮৫টি। অর্থাৎ হাইকোর্টে নতুন এবং পুনরুজ্জীবিত মামলার চেয়ে কিছু কম নিষ্পত্তি হলেও বিচারের গতি বেড়েছে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও আইন সাময়িকী ডিএলআর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান মনে করেন, হাইকোর্টে আরও ১০০ বিচারপতি নিয়োগ এবং আপিল বিভাগে কর্মরত সাতজনসহ অন্তত ১২ জন বিচারপতি থাকা উচিত। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘বিচারিক আদালতগুলোতে এখন মামলার ফাইল উপচে পড়ে। উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির গতি বাড়লেও জট কিন্তু খুব বেশি কমছে না। এখানেও যদি লাখ লাখ মামলা বিচারাধীন থাকে তাহলে এটি সুখকর হবে না।’ তিনি বলেন, ‘বেশিসংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ হলে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও আনুষঙ্গিক সুবিধার প্রয়োজন হবে। বিচার বিভাগ ও বিচারপ্রার্থীর স্বার্থে এটি সরকারকেই করতে হবে।’
উচ্চ আদালতের প্রয়োজনের তুলনায় বিচারকের সংখ্যা তুলনামূলক কম বলে মনে করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘বিচারপতির সংখ্যা বাড়লে এটি সব সময়ই ভালো। কিন্তু আমাদের বিচারব্যবস্থায় বিচারকের স্বল্পতা যেমন রয়েছে, তেমনি প্রযুক্তির ব্যবহার ওইভাবে বাড়েনি। বিচারপতি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে।’
ভোগ্যপণ্যের দাম প্রতিদিনই চক্রবৃদ্ধি সুদ হারের মতো বাড়ছে। সংসার চালাতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে মানুষ। গেল এক বছরে পেঁয়াজ, সবজি, মাছ ও মাংসসহ নিত্যপণ্যের সবকিছুর দামই চরমে পৌঁছেছে। বছর ব্যবধানে কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে শতভাগ। এ অবস্থায় স্বাভাবিক জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সংস্থাগুলো কঠোর না হলে জীবনধারণ দায় হয়ে দাঁড়াবে।
বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক বছরে সবজির মধ্যে সব থেকে বেশি বেড়েছে পেঁপের দাম। গরিবের ভরসার এই সবজিতে ৯০-১০০ শতাংশ দাম বেড়েছে। এ ছাড়া হুট করে দাম বাড়ার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের আমিষের অভাব পূরণকারী ডিমে ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তাতেও ৩৭ শতাংশের বেশি দাম বেড়েছে। ফলে ডিম খাওয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলছে মধ্যবিত্ত। আগে থেকেই মাছের দাম নাগালের বাইরে। এর মধ্যে ভরা মৌসুমে ভোক্তাদের জন্য ইলিশ কেনা যেন সোনার হরিণ। অন্যান্য মাছের মধ্যে সব থেকে বেশি প্রচলিত মাঝারি আকারের রুই মাছে ২৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সবজি যেন আরও একধাপ এগিয়ে। কাঁচা মরিচের ২৫ শতাংশ ও দেশি পেঁয়াজে ১০০ শতাংশ দাম বেড়েছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশের ব্যবসায়ীদের নৈতিক স্খলনের অবনতি হয়েছে। ফলে তারা মৌসুমি অজুহাত সৃষ্টি করে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে। যার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বাস্তবতার আড়ালে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে দেশের মানুষ কষ্টে রয়েছে। বাজারকে আস্তাবলে পরিণত করেছে।
কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির যে গতি তা কিন্তু থেমে নেই। সেই হিসেবে গেলে এক বছরে সব পণ্যের দাম ৫০ শতাংশ কিংবা তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। এতে করে জনসাধারণের নাভিশ্বাস অবস্থা। ভোক্তাপর্যায়ে সস্তায় আমিষের অভাব পূরণের একমাত্র উপকরণ ছিল ডিম। এখন সেই ডিম কিনতেও তাদের ভাবতে হচ্ছে। কিন্তু এই সরকার মানুষের কষ্টের বিষয় কখনো স্বীকার করে না।
জনগণ নয়, ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধানে সরকার বেশি আন্তরিক দাবি করে তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলে তারা তা করছে না। উল্টো সরকার ব্যবসায়ীদের দাবি আদায়ে বেশি তৎপর। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সব শ্রেণির ব্যবসায়ীরা ফায়দা লুটছে। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা তাদের নৈতিকতা হারিয়েছে। তা না হলে, দেশের মানুষকে কষ্ট দিয়ে অতিমুনাফা করার চিন্তা করত না। এর জন্য সরকারের বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাও দায়ী। কেননা তারা শুধু গুটিকয়েক অভিযানের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকছে। কিন্তু তাদের এ অভিযানের পরিধি যদি আরও বিস্তার লাভ করত তাহলে সাধারণ জনগণ বাজারে সুবিধা পেত। তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, মূল্যস্ফীতির কারণে বাজারে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির পাচ্ছে।
ডিম : মাছ-মাংস নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্বল্প খরচে আমিষের চাহিদা পূরণ করা ডিমও। গতকাল বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারে প্রতি হালি ডিম কিনতে ভোক্তার খরচ হয়েছে ৫২ টাকা। আর একটি ডিম কিনতে হয়েছে ১৩ টাকায়। কিন্তু এর আগে এক সপ্তাহ ধরে ডিম কিনতে হয়েছে প্রতি ডজন ১৬০-১৬৫ টাকায়। আর একটি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫ টাকায়। ফলে মধ্যবিত্তরা ডিম খাওয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলছেন। গত বছরও প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা দরে। এক ডজন ১২০ ও একটি ডিম ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
হঠাৎ করে ডিমের দাম বাড়ার পেছনে করপোরেট ব্যবসায়ীদের দায়ী করেন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, খামারির উৎপাদন খরচের ওপর ভিত্তি করে ডিমের মূল্য নির্ধারণ হওয়ার কথা থকলেও তা হচ্ছে না। কেননা পোলট্রি সেক্টরের ৭০ শতাংশ করপোরেট ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাওয়ায় প্রান্তিক খামারিরা তাদের খামারের উৎপাদিত ডিমের ন্যায্য মূল্য পান না। করপোরেট কোম্পানিরা ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। তা বাস্তবায়ন করে ফড়িয়া ও পাইকাররা। এর জন্য তারা গণমাধ্যমকে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে বহুদিন ধরে।
মাছ : দেশের মানুষকে মাছে ভাতে বাঙালি বলা হলেও সেই প্রবাদ এখন গুড়েবালি। খুদে শিক্ষার্থীদের মুখের কথা, মাছের রাজা ইলিশ। কিন্তু ভরা মৌসুমে এখন সেই ইলিশও যেন সোনার হরিণ। বর্তমানে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা। মধ্যবিত্তের জন্য ইলিশ খাওয়া বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ছাড়া বাজারে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত রুই মাছের দামও নাগালের বাইরে। মাঝারি আকারের প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৩০-৩৫০ টাকায়। যা গত বছর ২৮০-২৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি মাঝারি আকারের রুই মাছের দাম ২৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চলতি বছর প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে মাছের উৎপাদন কমেছে। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বাজারে মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতি কেজিতে অন্তত ৬০ টাকা বেড়েছে।
পেঁয়াজ : কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, প্রতি বছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা থাকে ২৫ লাখ টন। তবে চাহিদার থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৭-৮ লাখ টন বেশি পেঁয়াজের উৎপাদন হয়ে থাকে। অন্যদিকে মে মাসের শুরুর দিকে পেঁয়াজের দাম ৩৫-৪০ থেকে হঠাৎ করে ১০৫ টাকায় পৌঁছায়। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় ব্যবসায়ীদের। সে দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজ ও পেঁয়াজের আমদানি থাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ টাকার মধ্যে থাকার কথা। কিন্তু মসলা জাতীয় পণ্য পেঁয়াজের বাজারে লঙ্কাকান্ড পরিস্থিতি। বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের ১০০ শতাংশ দাম বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। যা গত বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছে ৪০-৫০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। তাছাড়া চাহিদার তুলনায় দেশীয় পেঁয়াজের জোগান নেই বললেই চলে। বাজারে এখন ভারতীয় পেঁয়াজের দাপট চলছে। আমদানিতে খরচ বেশি পড়ায় পেঁয়াজের বাজার কিছুটা বাড়তির দিকে রয়েছে বলে তারা জানান।
কাঁচা সবজি : সবজির বাজারের পরিস্থিতি যেন আরও খারাপ অবস্থা। গরিবের তরকারিখ্যাত পেঁপে এখন আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হচ্ছে। অস্বাভাবিক দামে প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। যা গত বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছে মাত্র ২০ টাকায়। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বাজারের সব থেকে কমদামি পেঁপের কেজিতে ১০০ শতাংশ দাম বেড়েছে। এ ছাড়া বর্তমান বাজারে করলা, পটোল, বেগুন ও চিচিঙ্গা সব থেকে দামি সবজি। গেল তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি সবজিতে অন্তত ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে চিচিঙ্গা ও পটোল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়, বেগুন ৮০-৯০ ও করলা ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
মাংস : দেশের এক শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা। বাজার পরিস্থিতিতে রোজকারের এ টাকায় সংসার চালানো কষ্টসাধ্য। তার ওপর ব্যবসায়ীদের বেঁধে দেওয়া ৭০০ টাকায় গরুর মাংস কেনা প্রায় অসাধ্য। তাই অনেক ভোক্তাই মাংসের চাহিদা মেটান ব্রয়লার মুরগি দিয়ে। তাতেও যেন সংশয় দেখা দিয়েছে। খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে বাজারে ব্রয়লার দামও ওঠানামা করছে। তবে গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ২৫ শতাংশ দাম বেড়ে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পোলট্রি মুরগি। যা গত বছর আগস্টেও বিক্রি হয়েছে ১৬০-১৭০ টাকা দরে। পাশাপাশি কক মুরগির দামও বেড়েছে বেশ। এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি কক মুরগিতে ৬০ টাকা বেড়েছে।
অনেকটা হতাশা প্রকাশ করে স্কুলশিক্ষক হরনাথ বাবু দেশ রূপান্তরকে বলেন, খাদ্যপণ্যের মধ্যে সব পণ্যই বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। জীবনের ৫০টি বসন্ত পার করেছি। কখনো দেখিনি মুরগির ডিম ১৫ টাকা। শুধু কি ডিমের ক্ষেত্রে এমন, পুরো বাজার জুড়ে সাধারণ ক্রেতাদের হতাশা। খরচের চাপ সামলাতে মাছের পিস চিকন করে নিয়ে এসেছি। তবে মাছ দিয়েই নয়, সংসার চালাতে গিয়ে আরও অনেক পণ্যের ব্যবহার কমাতে বাধ্য হয়েছি।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলে তেমন কোনো লাভ হবে না। একটা বিষয় স্পষ্ট যে, মূল্যস্ফীতির কারণে বাজারে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর জন্য আমাদের সঠিক পদ্ধতির ঘাটতি রয়েছে। মূল বিষয় হলো মূল্যস্ফীতি কমলে পণ্যের দাম কমে আসবে এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে, আমাদেরও তাই করতে হবে।
তিনি বলেন, বিশে^র অন্যান্য দেশেও মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্যের দাম বেড়েছে। তারা তাদের পদ্ধতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে তার থেকে উত্তরণ হয়েছে। কিন্তু আমাদের পদ্ধতিগত সমস্যা থাকায় আমরা তার থেকে উত্তরণ হতে পারছি না। এর জন্য গত দুই বছর আগেই সরকারের পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল। তারা তা নেয়নি। ব্যাংকগুলো ইন্টারেস্ট বৃদ্ধি না করায় মজুদকারী ও মূল্যস্ফীতি দিন দিন বেড়েছে। এ বিষয়কে সরকার গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো টাকা ছাপিয়ে তা বাজারে ছড়িয়ে দিয়েছে। যার ভোগান্তি আমাদের চলমান।
অভিযান পরিচালনা করে মূল্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভাবনা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কোনো বাহিনী দিয়ে অভিযান পরিচালনা করে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। এর জন্য আমাদের পদ্ধতিগতভাবে এগোতে হবে। নিয়মের বাইরে টাকা ছাপানো বন্ধ করে ব্যাংকগুলোকে ইন্টারেস্ট বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলেই ভোগ্যপণ্যসহ সব পণ্যের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর শোক প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ-তাঁতী লীগের ৩১ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে জামালপুর ছাত্রলীগের ১৮, নরসিংদীর ৬, ঠাকুরগাঁওয়ে ১ ও চট্টগ্রামে ৬ জন। গত বুধবার রাতে নিজ নিজ জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
পদ হারানো ছাত্রলীগের নেতারা উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের পাশাপাশি কলেজ ইউনিটে ছিলেন। তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর আগে গত বুধবার চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের ৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। এ নিয়ে গত দুদিনে ৪০ জনকে বহিষ্কার করা হলো।
এদিকে সাঈদীর মৃত্যুতে ফেসবুকে শোক প্রকাশ করে চাকরি হারিয়েছেন চট্টগ্রামের এক মাদ্রাসাশিক্ষক। তার নাম আবু ছালেহ মো. জোবায়ের। তিনি চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ি বিভাগে (গণিত) অস্থায়ীভাবে কর্মরত ছিলেন। অন্যদিকে সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দেওয়া রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ইন্সপেক্টর খাইরুল ইসলামকে আমর্ড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন (এপিবিএন) পার্বত্য জেলায় বদলী করা হয়েছে। বিস্তারিত আমাদের ব্যুরো অফিস, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর :
জামালপুরে ছাত্রলীগের ১৯ জন বহিষ্কার : সাঈদীর মৃত্যুর পর শোক প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় জামালপুর ছাত্রলীগের ১৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খাবিরুল ইসলাম খান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক নাফিউল করিম রাব্বি স্বাক্ষরিত পৃথক তিনটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান, মেলান্দহ পৌর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসিফ আহামেদ, মেলান্দহ সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান সেতু ও মেলান্দহ উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য আশরাফুল সালেহীন রিয়াদ।
জামালপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাফিউল করিম রাব্বির বলেন, ‘সংগঠনের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অপরাধে উপজেলা, ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ের ১৮ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
চট্টগ্রামে ৬ জন বহিষ্কার : চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের ৬ নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের দুজন, সাতকানিয়ায় একজন এবং সন্দ্বীপ উপজেলায় তিনজন। স্থায়ীভাবে তাদের বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে সুপারিশও করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতারা।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাময়িক বহিষ্কৃত দুই নেতা হলেন উপকর্মসংস্থান সম্পাদক মো. সাজেদুল হক সাজ্জাদ ও সহসম্পাদক শাহজাহান হাবিব। এ ছাড়া সাতকানিয়া উপজেলার সাতকানিয়া সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ তারেককে অব্যাহতি দিয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগ। সন্দ্বীপ উপজেলা ছাত্রলীগের তিন নেতা হলেন উপজেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মো. রুস্তম, কার্যনির্বাহী সদস্য মো. আফসার ও পৌরসভা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান।
নরসিংদীতে ছাত্রলীগের ৬ জন বহিষ্কার : সাঈদীর মৃত্যুর পর শোক প্রকাশ করায় নরসিংদী ছাত্রলীগের ছয়জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নরসিংদী ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল আহমেদ শাওন এ তথ্য জানিয়েছেন।
নরসিংদীতে যাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, মাধবদী থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুজন ভূঁইয়া, পলাশ উপজেলা শাখার সহসভাপতি মো. নাদিম মিয়া, একই উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের সহসভাপতি হাফিজুর রহমান অপু, মনোহরদী উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক জে এস জুনায়েদ, বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক সাকিব আহমেদ এবং মাধবদী উপজেলার পাইকারচর ইউনিয়নের সহসভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ।
ঠাকুরগাঁওয়ে ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার : সাঈদীর মৃত্যুতে ফেসবুকে শোক প্রকাশ করে আবেগঘন স্ট্যাটাস দেওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার সেনগাঁও ইউনিয়নের ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ইউসুব ইসলামের পদ স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া সৈয়দপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার রাতে পীরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর রহমান মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক নবাব হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বগুড়ায় তাঁতী লীগের সধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি : বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীবকে দলীয় পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বগুড়া জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক রাশেকুজ্জামান রাজনের যৌথ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া উপজেলা তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নিজেকে আওয়ামী পরিবারের সন্তান দাবি করে বলেন, ‘জেলা কমিটি থেকে অব্যাহতির বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে। আবেগতাড়িত হয়ে সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম।’
চাকরি হারালেন মাদ্রাসাশিক্ষক : এবার যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদ-প্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে ফেসবুকে শোক প্রকাশ করে চাকরি হারালেন চট্টগ্রামের এক মাদ্রাসাশিক্ষক। আবু ছালেহ মো. জোবায়ের নামে ওই শিক্ষক চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ি বিভাগে (গণিত) অস্থায়ীভাবে কর্মরত ছিলেন। গত বুধবার মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন আযহারীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলী : সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ইন্সপেক্টর খাইরুল ইসলামকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) পার্বত্য জেলায় বদলি করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে তাকে বদলি করা হয়। খাইরুল আরএমপির প্রসিকিউশন বিভাগে কোর্ট ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত ছিলেন।
আরএমপির সদর দপ্তরের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, খাইরুলের পোস্টটি নজরে আসার পর আরএমপি কমিশনার বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে। তদন্তে সাইবার ইউনিট নিশ্চিত হয়েছে তারই আইডি থেকে পোস্টটি প্রকাশ করা হয়। ফলে বুধবার দুপুরেই প্রতিবেদন দাখিল করে। তিনি এমন পোস্ট দিয়ে অসদাচরণ করেছেন। এতে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) বিজয় বসাক জানান, ফেসবুকে খাইরুলের পোস্ট দেওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করা হয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এরপরই তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকেই তার বদলির নির্দেশ আসে।
বঙ্গবন্ধু ও সাঈদীর জানাজার ছবি ফেসবুকে পোস্ট : টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসাইন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজার ছবিতে বিরূপ মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। পরে তার দেওয়া পোস্টটি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে আলোচনা ও সমালোচনার মুখে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পোস্টটি ডিলিট করে দেন তিনি।
গত বুধবার রাতে ছাত্রলীগ নেতা ইকবাল হোসাইন তার ব্যবহৃত ফেসবুকে ওই পোস্ট করেন। এর আগে বুধবার বিকেল ৫টা ৩ মিনিটে ‘মো. সৈকত মৃধা বরিশাল’ নামের এক ব্যক্তি তার ফেসবুক আইডিতে বঙ্গবন্ধু ও সাঈদীর জানাজার ছবি পোস্ট করেন। তার ওই ফেসবুক পোস্টটি শেয়ার করেন গোপালপুরের ছাত্রলীগ নেতা ইকবাল হোসাইন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক-সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি এখনো নিশ্চিত হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাজেটস্বল্পতার যুক্তিতে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষকদল পাঠাতে পারবে না বলেছে। এখন পর্যন্ত আবেদনকারী ২১০টি দেশি সংস্থা বা সংগঠনের মধ্যে ৬৬টিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নির্বাচনের তিন মাসেরও কম সময় বাকি। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সাড়া না পেয়ে তাদের চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানোর কথা ভাবছে ইসি। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন নিয়ে বড় কোনো প্রশ্ন যাতে না ওঠে, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। এ লক্ষ্যে সব চেষ্টাই নির্বাচন কমিশন করবে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে, সেটি বোঝাতে হলে আন্তর্জাতিক মহলে বার্তা পৌঁছাতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে এ বার্তা পৌঁছানোর কাজটি করেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। ইইউ বলে দিয়েছে, তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচন-পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, তার জন্য ক্ষেত্রসমীক্ষণে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) যৌথ প্রতিনিধিদল আসবে। ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল ও তাদের সহায়তাকারীরা ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এবং দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করা নিয়ে টুইটবার্তা এবং বিভিন্ন বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এ বার্তাই দিচ্ছে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু না-ও হতে পারে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পর্যবেক্ষক না পাঠালেও আরও অনেক দেশ আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোকে (আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা) আমন্ত্রণ জানিয়ে অক্টোবরে চিঠি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো হয়। আমরা চাই দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বেশি সংখ্যায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করুক। আমরা আশা করি বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি সংস্থা।
পৃথিবীতে আরও অনেক দেশ আছে।’
আপনারা তো ভোটের জন্য শতভাগ প্রস্তুত কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি নির্বাচনমুখী কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক সংবিধান অনুযায়ী জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। না হলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে। এতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। নির্বাচন কমিশন সেটা হতে দিতে পারে না।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমেরিকা আসবে না বলেনি। আসলে আমরা খুশি হব। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন, সেসব থাকলে যে কেউ আসতে পারে।’
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষক দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচনসংক্রান্ত বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামো, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যে দলীয়করণ হয়েছে, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। অতীতেও তা হয়নি। আগামীতে হবে বিশ্বাস করা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, তথ্য-উপাত্ত নিয়েই তা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বলেছে, তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। নেতিবাচক মনোভাবই তাদের সিদ্ধান্তে প্রকাশ পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আসেনি। ফলে সেটি আন্তর্জাতিক মানদ-ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। ওই দুটি নির্বাচন সব মহলেই প্রশ্নবিদ্ধ। এখন সরকার বা ইসি যে কথা বলছে, তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নীতির বদল হবে বলে মনে হয় না। আস্থা তৈরি করতে হলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সূত্রগুলো বলছে, তারা নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ইইউকে ছোট পরিসরে হলেও পর্যবেক্ষক পাঠাতে ২৪ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এমন প্রতিশ্রুতি সিইসি দিচ্ছেন। সরকারও একই কথা বলছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার ও নির্বাচন কমিশন। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ফলে আস্থার একটা সংকট তৈরি হয়েছে। তা কাটানোর জন্যই ইসি নানা পরিসরে কাজ করছে।
সূত্রমতে, ইইউর নেতিবাচক মনোভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষকদের সন্তেুাষজনক তথ্য তৈরির কাজ করছে ইসি সচিবালয়। মার্কিন দলের মনোতুষ্টির বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে কমিশনের। নির্বাচনী তফসিল থেকে নির্বাচনী ফল ঘোষণা পর্যন্ত সব কর্মকা-, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়গুলো তাদের কাছে তুলে ধরা হবে।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতির সুবিধা হলো তারা নির্বাচনী কাজে জড়িতদের জবাবদিহির মুখোমুখি করে। পর্যবেক্ষকদের কোনো আইনি শক্তি নেই। তবে তারা নৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এতে প্রার্থীদের সমর্থকদের আচরণও প্রভাবিত হয়। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ভোটারদের ওপর, তারা আস্থা পান।’
তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে তাতে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা অংশ নেয় না। আগামী নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সব দলের অংশ নেওয়ার বার্তা নেই। সব দলই নিজ অবস্থানে অনড়। এ কারণেই বিদেশিরা আগ্রহ প্রকাশ করছে না।’
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে সাধারণত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, সার্কভুক্ত দেশ, কমনওয়েলথ, ওআইসি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে এমন সংস্থা, মানবাধিকার গোষ্ঠী, ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। ২০১৮ সালে দেশি ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯০০ জন এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত ও অন্যান্য বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন ৩৮ জন, কূটনৈতিক বা বিদেশি মিশনের কর্মকর্তা ৬৪ জন এবং বাংলাদেশে দূতাবাস বা হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সুযোগ দিতে এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। প্রথমবার দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের মধ্য থেকেই বেশি আবেদন এসেছে বলে জানা গেছে।
গত ১৮ জানুয়ারি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের জন্য প্রথমবারের মতো আবেদন আহ্বান করেছিল নির্বাচন কমিশন। ২১১টি সংস্থা আবেদন করেছিল। গত ৮ আগস্ট প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ৬৮টি সংস্থার তালিকা প্রকাশ করে সংস্থাটি। আপত্তি ওঠায় দুটি সংস্থাকে বাদ দিয়ে শেষপর্যন্ত ৬৬টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয় কমিশন। এসব সংস্থার ৪২টিই ছিল নতুন। এর আগে তারা কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করেনি; সংস্থাগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা অর্ধেকের মতো কমে যাওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো ১৫ সেপ্টেম্বর ১০ দিনের জন্য ফের আবেদন আহ্বান করে ইসি। এর সময় শেষ হয়েছে ২৪ সেপ্টেম্বর।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের মতোই বাছাই শেষে দাবি-আপত্তি আহ্বান করা হবে। তারপর চূড়ান্ত হবে কোন কোন সংস্থা নিবন্ধন পাচ্ছে।
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেড় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে।’
২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। ২০১৮ সালে ১১৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল ইসি। পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের পাঁচ বছরের মেয়াদ গত ১১ জুলাই শেষ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য সংশোধিত নীতিমালা : আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য নীতিমালা সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২৬ সেপ্টেম্বর ইসি এই নীতিমালা জারি করেছে। সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি নাগরিক বা সংস্থা বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে তাদের সুশাসন, নির্বাচন, গণতন্ত্র, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সংস্থাগুলোকে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাকে নিয়ে যারপরনাই উদ্বিগ্ন দলের নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার্থে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী, উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে সম্ভাব্য সব পথই অবলম্বন করছেন দলটির নেতারা। তার পরিবারের সদস্যরা সরকারের কাছে আবেদন জানানোর পাশাপাশি তার আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে আবার রিট করার কথা ভাবছে। কূটনৈতিক উদ্যোগও অব্যাহত রেখেছে বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে আমরা আলটিমেটাম দিয়েছি। কর্মসূচি দিচ্ছি। সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরপরও সরকার তৎপর না হলে, তাদের বোধোদয় না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকারকেই নিতে হবে।’
বিএনপি-সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক হারুণ অর রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ারপারসনের শারীরিক যে অবস্থা তাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া তাকে বিদেশে নেওয়া সম্ভব নয়। তার লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে। এজন্য তাকে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারসমৃদ্ধ হাসপাতালে নিতে হবে। কাছাকাছি সিঙ্গাপুরে এমন হাসপাতাল রয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্সে আধুনিক চিকিৎসাসেবা রয়েছে।’
আমেরিকায় অবস্থানরত খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাকে অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো দরকার। তার মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে যতবার আবেদন করা হয়েছে, ততবারই চিকিৎসকদের পরামর্শের কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না। এখন আইনমন্ত্রী বলছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে চাইলে আবেদন করতে হবে। আমরা আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকারের গ্রিন সিগন্যাল পেলে আবেদন করা হবে। সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে পরিবারের পক্ষ থেকে।’
সরকার বলেছে, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি আদালতের এখতিয়ারভুক্ত। এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কতটা নিরপেক্ষ হয়েছে তা দেখতে আদালতে যেতে পারি আমরা। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা হলে এবং তারা সিদ্ধান্ত দিলে আমরা আইনজীবীরা আদালতে রিট করার প্রস্তুতি নেব। আগেও আদালতে রিট করা হয়েছিল।’
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামের লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন তিনি। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। মেডিকেল বোর্ড মনে করে তাদের আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি।’
সেলিমা ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, পরিবার আবেদন করলে সরকার ভেবে দেখবে। আবেদন করার কথা উনি আগেও বলেছেন। আমরা আবেদন করেছি। সাড়া পাইনি। এখন সাড়া পাওয়ার নিশ্চয়তা কী? এরপরও আমরা আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে স্ব^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। খালেদা জিয়া দ-প্রাপ্ত আসামি। বিদেশে চিকিৎসার জন্য কোনো আবেদন তার পরিবার করেনি। এ বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেবে। খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হচ্ছে।’
খালেদা জিয়াকে গত ৯ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় তার শ্বাসকষ্ট হলে গত রবিবার রাত দেড়টার দিকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। পরদিন সোমবার তাকে আবার কেবিনে ফেরত নেওয়া হয়।
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। মাঝখানে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। অতিদ্রুত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন। খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে উন্নত চিকিৎসা দরকার। ডাক্তাররা বলেছেন এটা দেশে সম্ভব নয়। আমরা অনেক দিন ধরেই তাকে বিদেশে নেওয়ার কথা বলছি। কিন্তু সরকার কর্ণপাত করছে না। এখন একেবারে শেষ সময় চলে এসেছে। বিদেশে নেওয়া না হলে তাকে বাঁচানো যাবে না। সিসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া হলেও তার অবস্থা স্থিতিশীল বলা যাবে না।’
৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে ২০২০ সাল থেকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তির পর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন খালেদা জিয়া।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সরকার ২০২০ সালের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসায় অবস্থান এবং দেশ ত্যাগ না করার শর্তে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়।
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’