
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট দাবি করছে, ভোটে পরাজিত হবে জেনে নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি ভয় পায়। তাই বিএনপি নির্বাচন বানচালে নানান ষড়যন্ত্র করছে। অনির্বাচিত সরকার এনে দলকে পেছনে ঠেলার অপচেষ্টা করছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোট আয়োজিত স্মরণসভায় নেতারা আরও দাবি করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনস্রোত তৈরি হচ্ছে, যাতে সংবিধান অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র এবং সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া, জাতীয় পার্টি-জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে শিকদার, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য কামরুল আহসান প্রমুখ। স্মরণসভার সঞ্চালনা করেন গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন।
নির্বাচন দিয়ে জিয়াউর রহমানও কোনো দিন ক্ষমতায় আসেনি উল্লেখ করে আমির হোসেন আমু বলেন, তোমরাও (বিএনপি) আসতে পারবা না। তার জন্যই নির্বাচন নিয়ে নানান রকম ষড়যন্ত্র। অনির্বাচিত সরকার দিয়ে, এ দেশকে আবার পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা। যেটা হতে দেওয়া যাবে না। নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে সংবিধানকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে খেলা করা চলতে দেওয়া যায় না। আজকে শুধু দলীয় ঐক্য নয়, জনগণের ঐক্য হচ্ছে মূল ঐক্য।
তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, সংবিধানের ভিত্তিতে দেশ পরিচালিত হচ্ছে। সংবিধানের ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সবার প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান। সবাই যাতে নির্বাচন অংশগ্রহণ করে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি সুযোগ পেলেই রাজাকারের পক্ষে কথা বলে। জামায়াতের পক্ষে, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কথা বলে ও সমর্থন করে। আজকে ১৫ আগস্টকে সামনে রেখে শোকের মাসের আলোচনা সভা করছি। বিএনপি ১৫ আগস্টের হত্যার নিন্দা জানিয়ে একটাও বিবৃতি দেয়নি। তারা এ শোকের মাসে একটা সভাও করবে না। আসলে তারা খুনিদের সমর্থক। তাই বিএনপির ক্ষমতা মানে খুনি, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতা। বিএনপি ক্ষমতা মানে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের দিকে ঠেলে দেওয়ার ক্ষমতা। তাদের ক্ষমতা মানে হত্যা ক্যুর রাজনীতির ক্ষমতা।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করে দিলীপ বড়–য়া বলেন, ১৯৭১ সালে বিশ্ব এককেন্দ্রিক ছিল। কিন্তু আজ বিশ্ব এককেন্দ্রিক নয়। এখন বিশ্ব বহুকেন্দ্রিক। কাজেই আমাদেরও অনেক বন্ধু আছে। আন্তর্জাতিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিরাও আমাদের বন্ধু আছে। আজকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বন্ধুদের সমন্বয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবই।
একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের বিদেশি মদদদাতারা এক হয়ে মাঠে নেমেছে উল্লেখ করে কামরুল ইসলাম বলেন, আমাদের একাত্তরের মতো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যারা বিদেশিদের দাওয়াত দিয়ে ডেকে এনেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। বাংলাদেশ কারও প্রেসক্রিপশন চলবে না। সংবিধান মেনে নির্বাচন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এর ব্যত্যয় হওয়ার সুযোগ নেই। আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব অপশক্তি প্রতিহত করি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করি।
শেখ শহীদুল ইসলাম, খুনি আর ভিকটিমের সঙ্গে কি কেউ বসতে পারেন? আপনাদের দেখলে তো মাথায় রক্ত চড়ে যাওয়ার কথা। গুলি করার কথা।
অতীতের তুলনায় সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের শোবিজ তারকাদের বিদেশ ঘোরার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। কেউ যাচ্ছেন স্টেজ শো করতে, কেউ বা যাচ্ছেন ব্যক্তিগত কাজ বা নেহাতই ঘুরতে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে তারকাদের বিভিন্ন দেশে ঘোরার ছবি সহজেই চোখে পড়ে। তবে কিছু তারকা আছেন যারা আর দেশে ফিরে আসেন না। প্রবাসেই থেকে যান। সেই সংখ্যাও কম নয়। বিভিন্ন দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রই যেন শোবিজ তারকাদের স্থায়ী হওয়ার জন্য প্রথম পছন্দ। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শোবিজ তারকা স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেছেন। তবে কেউই অবৈধভাবে সেখানে থাকছেন বলে শোনা যায়নি। সবাই বৈধভাবেই সেখানে বসবাস করছেন। কেউবা গিয়েছেন স্বামীর কর্মসূত্রে, কেউ আবার বাংলাদেশে ক্যারিয়ার পড়তির দিকে চলে যাওয়ায় উন্নত বিশ্বে থিতু হয়েছেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারের একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসত গড়েন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবান। বিউটিকুইনখ্যাত এই নায়িকা দেশের শোবিজ জগতের প্রভাবপত্তি উপেক্ষা করে চলে যান বিদেশে। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্বামী ওয়াহিদ সাদিককে এমপি বানানোর মিশন নিয়ে দেশে আসেন। মনোনয়ন না পেয়ে আবার ফিরে যান যুক্তরাষ্ট্রে।
আরেক জনপ্রিয় নায়িকা শাবনুর থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। তিনি ক্যারিয়ারের চূড়ায় অবস্থানের সময় পাড়ি জমান ভিনদেশে।
জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত রয়েছেন নিউ ইয়র্কেই। ছেলে-মেয়েকে উন্নত পড়াশোনার সুবিধা দেওয়ার জন্যই তিনি সেখানে স্থায়ী হয়েছেন। একসময়ের ডাক সাইটে এই অভিনেত্রী এখন অভিনয় থেকে বহুদূরে। তবে তিনি শিল্পচর্চার মধ্যেই আছেন। নিয়মিত ছবি আঁকছেন এবং সেই ছবি নিয়ে জ্যাকসন হাইটসসহ নানা জায়গায় এক্সিবিশন করছেন। সেখান থেকে বেশ ভালো আয়ও করছেন বলে নিউ ইয়র্কে বসবাসরত একাধিক বাঙালি জানিয়েছেন।
বিপাশার স্বামী অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকীর আহমেদ অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ যাওয়া-আসার মধ্যেই থাকেন। সাম্প্রতিক সময়ে ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খান যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন। তার গ্রিন কার্ড পেতে প্রায় এক বছর লেগেছে। এই সময়ে তিনি সিনেমা থেকে দূরেই ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রেই তাকে অবসর পার করতে হয়েছে। এখন তিনি ঢাকা-নিউ ইয়র্ক আসা-যাওয়ার মধ্যেই আছেন।
শাকিব খানের মতো এ সময়ের চিত্রনায়িকা পূজা চেরী, অপু বিশ্বাসসহ কম জনপ্রিয় আরও কয়েকজন তারকাও নাকি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ডের জন্য চেষ্টা করছেন। শুধু বড় তারকারাই নন, একেবারে তরুণ নৃত্যশিল্পী রাসেল আহমেদ, মেহরাজ হক তুষার কিংবা রণবীর সাহারাও প্রবাসে স্থায়ী হয়েছেন। তাতে বোঝা যায়, শিল্পী তকমা থাকলে বিদেশে স্থায়ী হওয়া সহজ। বিদেশে স্থায়ী হতে যে ধরনের ডকুমেন্ট লাগে, শিল্পী হওয়ার সুবাদে সেগুলো তারা সহজেই দিতে পারেন। ফলে বৈধভাবেই তারা প্রবাসে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন।
এ তো গেল সাম্প্রতিক সময়ের কথা। কয়েক বছর ধরে আরও অনেক জনপ্রিয় শোবিজ তারকা প্রবাসে স্থায়ী হয়েছেন। টনি ডায়েস-পিয়া ডায়েস দম্পতি, নওশীন-হিল্লোল দম্পতি, কণ্ঠশিল্পী বেবি নাজনীন, রিজিয়া পারভিন, দিনাত জাহান মুন্নি, বাদশাহ বুলবুল, সায়েরা রেজা, ব্যান্ড তারকা বিপ্লব, চিত্রনায়ক কাজী মারুফ, চিত্রনায়িকা রাত্রি, জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী রিচি সোলায়মান, রোমানা, শ্রাবন্তী, মোনালিসা, তমালিকা কর্মকার, বন্যা মির্জা, দিলরুবা ইয়াসমিন রুহি, নোভা ফিরোজ, মিলা হোসাইন, পিয়া বিপাশা, আর্শিনা প্রিয়া, আমব্রিন সারজিন, ঈশানা, ইশিকা খান, বেনজির ইসরাত, শিরিন বকুল, রেহানা রাখি, নির্মাতা শামীম শাহেদসহ বেশ কিছু তারকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে বাস করছেন।
দেশে এত ভক্ত দর্শকের ভালোবাসা, লাইমলাইট, শিল্পচর্চার মোহ ছেড়ে সাধারণ মানুষের মতো বসবাস করতে তারকারা কেন বিদেশে ছুটছেন? এমন প্রশ্ন অনেকের মনে। শোবিজের একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শোবিজের পেশা কিন্তু আর দশটা পেশার মতো নয় যে আপনি ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে ওপরের দিকে উঠতে থাকবেন। আবার সরকারি চাকরির মতো এ ধরনের পেশার স্থায়িত্বের কোনো নিশ্চয়তা নেই। জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে না পারলে এখানে বেশিদিন টিকে থাকা যায় না। তা ছাড়া সিন্ডিকেট, নানা ধরনের পলিটিকসকে টেক্কা দিয়ে কাজ করতে হয়। তাই অনেক তারকা এই পেশার সঙ্গে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থাকতে চান না। তারা ভবিষ্যৎকে একটু সুন্দর-সুস্থির করতেই উন্নত বিশে^ পাড়ি জমান। এমন নয় যে তারা সবাই খুব খুশিমনে এই সিদ্ধান্ত নেন। অনেক শিল্পীই আছেন যারা বিদেশে থেকেও দেশের শিল্প-সংস্কৃতি, নিজের চর্চা, দর্শকের ভালোবাসাকে প্রচ- মিস করেন।
নিউ ইয়র্কে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এমন একজন শিল্পী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশে শিল্পীদের তরুণ বয়সেই যা মূল্যায়ন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তেমন কোনো কাজ তারা পান না। শুধু তা-ই নয়, প্রযোজক-পরিচালকরাও তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করেন না। তাই অনেকে সময় থাকতেই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিদেশে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নেন।’
সিনিয়র শিল্পীদের মধ্যে এভাবে দেশ ত্যাগ করে বিদেশে থাকার উদাহরণ তেমন নেই বললেই চলে। এখনকার তারকারা তবে কেন শিল্পচর্চাকে আঁকড়ে ধরে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারছেন না? জানতে চাইলে ওই শিল্পী বলেন, ‘দেখুন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের চারপাশের অনেক পরিবর্তন হয়; যা শিল্পীজীবনেও প্রভাব বিস্তার করে। আগের সময় শিল্পচর্চা বা আমাদের শোবিজের যে অবস্থা, কাজের যে পদ্ধতি ছিল তাতে তারা তুলনামূলক কম্ফোর্টেবল একটা জায়গা পেয়েছেন। এখন আর সিচুয়েশন তেমন নয়। এ জন্যই এখনকার শিল্পীদের মধ্যে অস্থিরতাও বেশি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদেশে যেসব শিল্পী রয়েছেন, তারা শিল্পচর্চা মিস করলেও আর্থিকভাবে সবাই বেশ ভালো আছেন। অনেকে হয়তো সমাজের চোখে ছোট কাজ যেগুলো, তেমন কাজও করেন, কিন্তু আর্থিক ও জীবনমানের নিশ্চয়তা আছে বলেই খুশিমনে সেটি করছেন। যেমন ব্যান্ড তারকা বিপ্লব ট্যাক্সি চালান। একসময়ের পর্দা ঝলসানো গ্ল্যামারের অধিকারী মোনালিসা এখন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সুপার শপে বিউটি প্রোডাক্টের সেলস গার্ল হিসেবে কাজ করছেন। নন্দিত অভিনেত্রী শ্রাবন্তী সেবিকার কোর্স করেছেন। তিনি এই কর্মক্ষেত্রে চাকরি করেন। অভিনেত্রী নওশীনও মেডিকেল খাতে চাকরি করেন। তার স্বামী অভিনেতা হিল্লোল ইউটিউবে ফুড ব্লগ করেন নিয়মিত। বিমানবন্দরে কাজ করেন লাক্স তারকা নাফিজা জাহান। গ্যারেজের ব্যবসা রয়েছে টনি ডায়েসের। পিয়া ডায়েস নাচের স্কুল চালান। তমালিকা কর্মকারও একটি সাধারণ পেশায় আছেন।
আবার কোনো কোনো তারকা বিদেশে থেকেও ভালো চাকরি করছেন। বন্যা মির্জা বাংলাদেশে থাকতেও অভিনয়ের পাশাপাশি মার্কেটিংয়ে বড় পদে কাজ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও তিনি একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার মার্কেটিং হেড হিসেবেই কাজ করছেন। অভিনেত্রী রিচি সোলায়মান, রোমানা, চিত্রনায়িকা রাত্রি, সংগীতশিল্পী সায়েরা রেজা নিউ ইয়র্কে রয়েছেন মূলত স্বামীর চাকরিসূত্রে। শিল্পী দিনাত জাহান মুন্নি বেশ ভালোই আছেন বলে জানালেন বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক কনসার্টে অংশ নিতে যাওয়া শিল্পী স্বপ্নীল সজীব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিউ ইয়র্কে ছিলাম দুদিন। সেখানে কয়েকজন শিল্পীর সঙ্গে দেখা হয়েছে। কবির বকুল ভাই (গীতিকার) আর তার স্ত্রী মুন্নি ভাবির সঙ্গে দেখা হয়েছে। ভাবি বাংলাদেশে গান করে যা আয় করতেন, এখন যুক্তরাষ্ট্রে স্টেজ শো করে তার চেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন। এ ছাড়া র্যাম্প মডেল তৃণর বাড়িতে গিয়েছিলাম। তার স্বামী তো একজন কোরিয়ান। তিনি কোরিয়ান অ্যাম্বাসিতে কাজ করেন। তাদের থাকার জায়গা রাজপ্রাসাদের চেয়ে কম নয়। অন্য শিল্পীদের সঙ্গে দেখা হয়নি, তাই জানি না তারা কে কী করেন বা কেমন আছেন?’
নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসেই বেশির ভাগ বাংলাদেশি শিল্পী থাকেন। সেখানে বসবাসরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রবাসী বাংলাদেশি বলেন, ‘জ্যাকসন হাইটস হলো প্রান্তিক বাংলাদেশিদের বসবাস। এখানে বেশির ভাগ বাংলাদেশিই ছোটখাটো কাজ করেন। এখানে বাংলাদেশি যেসব তারকা থাকেন, তাদের সবার সঙ্গেই প্রায় দেখা হয়। এর মধ্যে বিপাশা হায়াত, কাজী মারুফ, টনি ডায়েস, শামীম শাহেদ, রিচি সোলায়মান, রোমানা, বন্যা মির্জা, সায়েরা রেজাসহ আরও কয়েকজন শিল্পী বেশ ভালো অবস্থানে আছেন। তবে অল্প কিছু শিল্পী আসলে তেমন কোনো কাজ জোটাতে পারেননি; বিশেষ করে পরিণত বয়সের গানের শিল্পীরা যারা রয়েছেন, তাদের কথা বলছি। তারা আশপাশের অতিসাধারণ বাঙালিদের সঙ্গে চা-পানি খায়। আড্ডা দেয়। সেসব সাধারণ মানুষের কাছে তো এটা বিশাল ব্যাপার যে একজন তারকা তাদের সঙ্গে এত সময় কাটাচ্ছেন। দিন শেষে দেখা হলো, বাজারের পয়সাটা তাদের কাছ থেকেই নিয়ে নিল। একজন সিনিয়র শিল্পীর কথা শুনলাম, তিনি টানা ছয় মাস একজনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে ভাড়া ছিলেন। বাসা ভাড়া চাইতে গেলে তিনি উল্টো মালিককেই পুলিশের ভয় দেখিয়েছেন। কারণ সেখানে গ্রাউন্ড ফ্লোর ভাড়া দেওয়া নিষেধ। এই হলো অবস্থা।’
প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক কাজী হায়াতের ছেলে জনপ্রিয় নায়ক কাজী মারুফ প্রবাস জীবন বেছে নিয়েছেন, এটা ভাবতে খারাপ লাগলেও ছেলের কাজ নিয়ে ইতিবাচক বাবা। কাজী হায়াৎ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মারুফ বিদেশে গিয়েও বসে নেই। সেখানে সে একটি ছবি বানিয়েছে, নাম “গ্রিন কার্ড”। আমি মনে করি ছবিটি এ দেশের মাইলফলক হয়ে থাকবে। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে ছবিটি দেখে মনে হয়েছে, সিনেমা হলে “গ্রিন কার্ড” দেখে দর্শকের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যাবে।’ বিদেশে স্থায়ী হওয়া নিয়ে কাজী মারুফ বলেন, ‘বাংলাদেশে সিনেমার তেমন কাজ ছিল না। কিন্তু কিছু তো করে খেতে হবে। তা ছাড়া ২০১৯ সালে আমাদের একটি ছবি মুক্তির কথা ছিল। সেভাবেই টার্গেট করেছিলাম। কিন্তু সিনেমাটি মুক্তি দিতে দেয়নি একটি বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। পরিচালক ছিলেন আমার আব্বা (কাজী হায়াৎ)। তারা আমার আব্বাকে বলেছিলেন, আমরা রিলিজ করতে না দিলে কীভাবে রিলিজ করবেন। আমার আব্বার মতো মানুষকে এ কথা শুনতে হয়েছিল। সেদিন আব্বা বাসায় এসে বললেন, “আমি এই বয়সে যুদ্ধ করব? আমি চাই না তুমিও যুদ্ধ করো এদের সঙ্গে। চলে যাও আমেরিকা।” এসব কারণেই বাংলাদেশ ছেড়ে চলে এসেছি। এখানে নিজের ব্যবসা নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো আছি।’
বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিভাবান ফুটবলার কে? এ নিয়ে তর্কটা বহুদিনের। তবে ঘুরেফিরে আসে দুটি নাম। একজন বাংলাদেশের প্রথম বিদেশি লিগে খেলা কাজী সালাউদ্দিন। আরেকজন স্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে প্রথম গোলদাতা এনায়েতুর রহমান। ২০২২ সালে ২৮ বছর পর দেশে এসেছিলেন এনায়েত। সেই ১৯৯৪ সালে কানাডা পাড়ি জমিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন পর দেশে এসে অনেকটা সময় কাটিয়ে আবার ফিরে গেছেন। দেশে আসার পর অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নিয়েছেন অর্থসহায়তা। তারপর আবার ফিরে গেছেন প্রবাসজীবনে।
ফুটবল মাঠ দাপিয়ে বেড়ানো আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, শেখ মোহাম্মদ আসলাম, রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির, কায়সার হামিদরা এ দেশেই থেকে গেছেন। রাষ্ট্র তাদের দিয়েছে যোগ্য সম্মান। সেই সম্মানটা পেতে পারতেন এনায়েতও। তারপরও কেন প্রবাসের কঠিন জীবন বেছে নেওয়া?
শুধু ফুটবলাঙ্গন নয়, তালিকা করলে দেখা যাবে হাজারো ক্রীড়াবিদ পাড়ি জমিয়েছেন নানা উন্নত দেশে। এক মার্কিন মুল্লুকেই মিলবে শত শত খেলোয়াড়। কেউ গিয়েছেন বৈধপথে। কেউবা কোনো ক্রীড়া আসরে অংশ নিতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। এই না ফেরার সলুকসন্ধান করতে গিয়ে বের হয়ে এলো কঠিন বাস্তব চিত্র। মোটা দাগে হতাশা থেকেই দেশ ছেড়ে গেছেন অনেকে। উন্নত ভবিষ্যতের কথা ভেবে অনেকে খেলোয়াড়ি জীবন শেষ হওয়ার আগেই পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে।
ফুটবল অঙ্গন থেকে বিদেশে বসত গড়া তারকা সংখ্যা নেহাত কম নয়। দীর্ঘদিন ধরে কানাডায় বসবাস করেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রিজভী করিম রুমি, ফুটবলার মামুন জোয়ার্দার, মিজান। তারকা গোলকিপার ও বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ শাহিদুর রহমান চৌধুরী শান্টু, শামসুল আলম মঞ্জুর বসবাস যুক্তরাষ্ট্রে। কিংবদন্তি অ্যাথলেট সাইদুর রহমান ডন, ১৯৮৫ ঢাকা সাফ গেমসে পাঁচটি স্বর্ণপদকজয়ী সাঁতারু মোশাররফ হোসেন খানের স্থায়ী নিবাস এখন যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৯৯ কাঠমান্ডু সাফ গেমসে সোনাজয়ী বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জুয়েল রানা একটু দেরিতে হলেও সপরিবারে চলে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় জাতীয় ফুটবল দলে প্রতিনিধিত্ব করা আবুল, বেলাল, মারুফ, তকলিছ আহমেদ, ওয়াহেদরা সুন্দর ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় মাঠ ছেড়ে চলে গেছেন প্রবাসে। অতিসম্প্রতি নারী ফুটবল দলের ক্যাম্প ছেড়ে চীন চলে গেছেন ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন। তবে তার দাবি, খেলার লক্ষ্যেই গেছেন।
প্রবাসজীবনকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত যে সবসময় সঠিক হয়, তা কিন্তু নয়। দেশের অন্যতম সেরা গোলকিপার মোহাম্মদ মোহসিনের কথাই ধরুন। দীর্ঘদিন কানাডায় বসবাস করেও ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে না পেরে দেশে ফিরে আসেন অসুস্থ অবস্থায়। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে খুইয়েছেন সব সঞ্চয়। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রোগব্যাধি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নিয়েছে তার চিকিৎসার দায়িত্ব। আবার বিদেশের চাকচিক্যময় জীবন ছেড়ে দেশে ফিরে নিজেকে সঁপে দেওয়ার উদাহরণও আছে। একসময় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন সাবেক ফুটবল তারকা আব্দুল গাফফার। তবে দেশের টানে ঠিকই ফিরে এসে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে।
ক্রিকেটাঙ্গনেরও অনেক তারকা বেছে নিয়েছেন প্রবাসজীবন। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল এসিসি ও আইসিসির চাকরি সুবাদে অনেক দিন ধরেই আছেন দেশের বাইরে। চাকরিস্থল দুবাই হলেও তিনি সপরিবারে বসবাস করেন অস্ট্রেলিয়ায়। গোলাম নওশের প্রিন্স থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে। ওপেনার আল শাহরিয়ার রোকন খেলোয়াড়ি জীবনেই পাড়ি জমান নিউজিল্যান্ডে। হালিম শাহ, তাপস বৈশ্য, মেহরাব জুনিয়র, জাতীয় দলের সাবেক পেসার মোহাম্মদ শরীফ, আবুল হাসান, ওপেনার জুনায়েদ সিদ্দিকীরা আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। অনেকে সেখানে নিয়মিত খেলাধুলাও করছেন। একসময়ের ঢাকার মাঠ কাঁপানো হকি খেলোয়াড় আবদুল সাদেক কানাডায় থাকেন অনেক দিন।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আসরে খেলতে গিয়ে ফিরে না আসা ক্রীড়াবিদের সংখ্যাও কম নয়। ১৯৯৬ আটলান্টা অলিম্পিক খেলতে গিয়ে ফেরেননি এক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুততম মানব বিমল চন্দ্র তরফদার। কৃতী সাঁতারু কারার মিজানুর রহমানও সেবার থেকে যান যুক্তরাষ্ট্রে। দাবার বোর্ড ছেড়ে ইউরোপে স্থায়ী নিবাস গড়েছেন মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার লিজা। অলিম্পিকের বৃত্তি নিয়ে ফ্রান্সে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন সাঁতারু আরিফুল ইসলাম। তবে প্রশিক্ষণের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ফ্রান্সে থেকে যান তিনি। ২০০২ সালে ওয়ার্ল্ড কাপ শুটিংয়ে অংশ নিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরেননি দুই শুটার আফজাল ও রুবেল।
প্রবাসে বসত গড়া খেলোয়াড়দের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের দেশ ছাড়ার অন্যতম কারণ দেশের অনিশ্চিত জীবন থেকে নিস্তার পাওয়া। ফুটবলার-ক্রিকেটারদের তারপরও কিছু আয়-রোজগার হয়, যা অন্য খেলায় একেবারেই নেই। তাই তো অন্য খেলার ক্রীড়াবিদ, সংগঠক, কোচদের বিভিন্ন গেমস থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বারবার কলঙ্কিত হয়েছে দেশের ক্রীড়াঙ্গন। পালিয়ে গিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করলেও নিজেদের ভবিষ্যৎটা তো নিশ্চিত করে ফেলেছেন তারা।
সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম খোঁজার চেষ্টা করেছেন প্রবাসজীবন বেছে নেওয়ার কারণ, ‘হয়তো তারা মনে করেন দেশ সেভাবে নিশ্চয়তা দিতে পারবে না তাদের। তাছাড়া ফুটবলাঙ্গনের কথা যদি বলি, বর্তমানে কয়জন ফুটবলার ভালো পারিশ্রমিক পাচ্ছে বলেন! সংখ্যাটা একেবারেই নগণ্য। বাকিদের অবস্থা বড্ড নাজুক। ফুটবল খেলে যখন জীবিকা নির্বাহ করাই কঠিন হয়ে পড়ে, তখন পরিবারের কথা ভেবে হতাশা থেকেই অনেকে একসময় বেছে নেয় প্রবাসজীবন। প্রবাসে সম্মান থাকুক আর না থাকুক, কোনোমতে টিকে তো যাওয়া যায়।’
খেলোয়াড়ি জীবনে আসলাম নিজেও পেয়েছিলেন জার্মানিতে নিবাস গড়ার প্রস্তাব। তবে দেশের মায়া ছাড়তে পারেননি তিনি, ‘আমার নিজেরও জার্মানির হামবুর্গে খেলার আর থাকার প্রস্তাব এসেছিল। তবে সে সময় আমি ছিলাম আবাহনীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। তাছাড়া আমার আম্মাও চাননি আমি বিদেশে চলে যাই। আমার বাবা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাই এই দেশটাকে ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছেও জন্মায়নি কখনো।’ ফুটবলের বাইরের অন্য খেলার অনেকে অবৈধভাবে দেশ ছাড়াটা একেবারেই সমর্থন করেন না আসলাম, ‘সুযোগ সন্ধানী কিছু লোক থাকে তারা পালিয়ে গিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। তাদের বোঝা উচিত দেশের পতাকার প্রতিনিধিত্ব করতেই তারা বিদেশ খেলতে যায়। এভাবে পালিয়ে যাওয়া মোটেই ঠিক নয়।’
খেলাকে পুঁজি করে দেশের সম্মান নষ্ট করে অবৈধপথে প্রবাসজীবন বেছে নেওয়াকে সমর্থন করবেন না অনেকেই। তবে দেশের জন্য ঘাম ঝরানোর প্রতিদান যখন ক্রীড়াবিদরা পান না, তখন দীর্ঘশ্বাস সঙ্গী করে অনেকে বেছে নেন প্রবাসের কঠিন জীবন। যে জীবনে নেই তারকাখ্যাতি। আছে শুধুই কঠিন বাস্তবতা আর সুন্দর ভবিষ্যতের হাতছানি।
বাঙলার কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত যন্ত্রণাদগ্ধপ্রবাসে বসে লিখেছিলেন হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন/ তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,/ পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ/ পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি। কবি সাহিত্যিক শিল্পী লেখকরা পারতপক্ষে দেশ ছাড়তে চান না; একেবারে বাধ্য না হলে।
শিক্ষকতা করতে, শিক্ষা গ্রহণ করতে বা প্রশিক্ষণ দিতে কিংবা খণ্ডকালীন চাকরি করতে অনেক লেখক বিদেশে গেছেন, কিন্তু স্থায়ীভাবে প্রবাসজীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন এমন বাংলাদেশি লেখকের সংখ্যাও কম নয়। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্, শামসুদ্দীন আবুল কালাম, শহীদ কাদরী, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, ইকবাল হাসান প্রবাসেই মৃত্যুবরণ করেছেন।
কবি লেখক সাহিত্যিকদের মধ্যে শামীম আজাদ, লুৎফর রহমান রিটন, আহমাদ মাযহার, খসরু চৌধুরী, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, মাসুদ খান, মুজিব ইরম, মজনু শাহ্, তারেক রহিম, আহমেদুর রশীদ টুটুল, মাহবুব লীলেন, জোবায়েন সন্ধি, ড. সুকুমার বিশ্বাস, রবিশঙ্কর মৈত্রী, সালমা বাণী, মহিবুল আলম, সৈয়দ ইকবাল, শিরীন বকুল, জসীম মল্লিক, প্রবীর বিকাশ সরকার, অজয় দাশগুপ্ত, হরিপদ দত্ত, হাসানাল আবদুল্লাহ, আনিসুজ্জামান, পারভেজ চৌধুরী, কাজী জহিরুল ইসলাম, হাসান ফেরদৌস, কামাল আহমেদ, দীপেন ভট্টাচার্য, আনোয়ার শাহাদাত, অজয় দাশগুপ্ত, আবেদীন কাদের, শাহাব আহমেদ, তাপস গায়েন, নাহার মনিকা, রাকীব হাসান, সাগুফতা শারমীন তানিয়া, মনজুরুল হক, চৈতী আহমেদ, নাদিয়া ইসলাম, রম্য রহিম চৌধুরী, সুব্রত কুমার দাস, আরিফ আনোয়ার, আদিব খান, ফেরদৌস নাহার, ফারহানা আজিম শিউলী, পারমিতা হিম, সালেহা চৌধুরীসহ অনেক কবি কথাকার লেখক প্রবাসজীবনে আছেন।
দীর্ঘদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ায় কবি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি বিদেশে থিতু হওয়ার সিদ্ধান্ত নিইনি, আমাকে নেওয়ানো হয়েছে।’
কবি মজনু শাহ ইতালিতে। কেন দেশ ছেড়ে গিয়েছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যর্থতা এত বেশি জমেছিল যে তিক্ততা নিয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। ওই দিনগুলোতে কেবলই মনে হতো, আমার বাবার সামনে থেকে কবে দূরে কোথাও যেতে পারব। অনেক অনেক দূরে। যেখানে বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও তার সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা শূন্য। সেই তীব্র অভিমান একসময় মিলিয়ে গিয়েছিল ঠিকই, শুধু জীবন বয়ে গেল সম্পূর্ণ অচেনা এক দিকে।’
তিনি বলেন, ‘অচেনা মানুষ, অচেনা ভাষা, অচেনা সংস্কৃতির ভেতর ১৫ বছর কেটে গেল। সন্তানদের চিন্তাজগৎ অন্য একটা ভাষা-সংস্কৃতির রূপ নিচ্ছে ধীরে ধীরে। আমি প্রবলভাবে দেশে ফিরতে চাইলেও, ওদের পক্ষে সহজ নয়। অনেক কিছুই এখন আমার আয়ত্তের বাইরে।’
কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়ার এই তালিকা দীর্ঘ। তবে দেশের প্রতিষ্ঠিত জীবন ছেড়ে যেতেও বাধ্য হয়েছেন কেউ কেউ। দেশে লেখকজীবন রেখে প্রবাসে থিতু হওয়া প্রসঙ্গে কবি প্রাবন্ধিক ও বইয়ের জগৎ সম্পাদক আহমাদ মাযহার বলেন, ‘অনাকাক্সিক্ষত ও আকস্মিক আমার এই অভিবাসিতা এবং ভিন্ন সংস্কৃতিতে অপ্রতিষ্ঠিতের অনুশীলনময় জীবনযাপন। কিন্তু এতে বাংলাদেশের মানুষকে বারবার নবায়িত চোখে দেখার সুযোগ হচ্ছে; এর বিপ্রতীপে বাংলাদেশেরই মানুষকে ব্যাপক অভিবাসিতার মধ্যে পর্যবেক্ষণ করে আরও একটা স্বতন্ত্র জীবনবোধের মুখোমুখিও তো হওয়া যেতে পারে! দেখা যাক না কী হয়, একটা অতি সাধারণ, প্রান্তিক ও ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতের অনুশীলময় যাপিত জীবন থেকে!’
প্রতি বছরই বইমেলায় দেশে আসা প্রখ্যাত ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটনকে প্রবাসী লেখক বলতেই তিনি খেপে যান। রিটন বলেন, ‘আমি কোনো প্রবাসী লেখক নই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বিদেশে অভিবাসন নিতে বাধ্য হয়েছিলাম, আমি বাংলা ভাষার একজন লেখক। আমি কোথায় থাকি, সেটি মুখ্য নয়। আমি কোন ভাষায় লিখি, সেটাই মুখ্য। অভিবাসী হওয়ার আগেই আমি লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘২০০১-এর জুন থেকে টোকিও দূতাবাসে ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে কর্মরত ছিলাম। তখন আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায়। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। ২০০১-এর নভেম্বরে জামায়াত-বিএনপি চারদলীয় জোট রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আমি দেশান্তরি ছিলাম। বাংলা-বাঙালি-বাংলাদেশ-মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা-বঙ্গবন্ধু-আওয়ামী লীগের পক্ষে এবং ঘাতক-রাজাকার-আলবদর-যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে লেখালেখির অপরাধে তখন আমার পাসপোর্টটি বাতিল করা হয়েছিল। এরপর সাত-সাতটি বছর আমি ভাসমান উদ্বাস্তু জীবন কাটিয়েছি কানাডায় এবং একপর্যায়ে নিয়ম অনুসারে স্থায়ী হয়েছি।’
রিটন আরও বলেন, ‘নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের সবুজ একটি পাসপোর্ট আমার প্রাপ্য ছিল। আবেদনও করেছিলাম যথারীতি, কানাডার বাংলাদেশ দূতাবাসে। ২০০২ থেকে টানা সাত বছর আমি অপেক্ষা করেছি। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর আমি ছুটে গেছি দূতাবাসে। কিন্তু আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সেই সাতটি বছর দেশে ফেরার জন্য কী ব্যাকুল প্রতীক্ষা ছিল আমার! পাসপোর্ট আটকে মূলত আমার কাছ থেকে আমার দেশটি কেড়ে নিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। আমি দেশে ফিরতে পারিনি। অবশেষে মইন উ-ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে আমি আমার কাক্সিক্ষত সবুজ পাসপোর্টি ফেরত পেয়েছিলাম।’
বাকস্বাধীনতা হারিয়ে কিংবা মৌলবাদীদের আক্রমণে আহত হয়ে দেশ ছেড়েছেন অনেক লেখক। নব্বইয়ের দশকে দাউদ হায়দার নোবেলজয়ী জার্মান লেখক গ্রুন্টার গ্রাসের সহযোগিতায় ভারত থেকে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা-UNHCR-এর ট্রাভেল ডকুমেন্টের মাধ্যমে জার্মানি যান। তার আগে প্রায় দুই দশক তিনি ঢাকা-কলকাতায় আত্মগোপনে ছিলেন। জার্মানিতে তিনি দীর্ঘদিন ডয়চে ভেলেতে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন তিনি বার্লিনে বসবাস করছেন। তার কোনো দেশের পাসপোর্ট নেই।
তসলিমা নাসরীন প্রথমে ফ্রান্স, পরে সুইডিশ পেনের স্কলারশিপে দীর্ঘদিন সুইডেনে বাস করেছেন। এরপর তিনি প্রথমে ভারতের কলকাতায় এবং পরে দিল্লিতে বাস করা শুরু করেন। তসলিমা নাসরিনের নির্দিষ্ট কোনো দেশের পাসপোর্ট নেই। তিনিও UNHCR-এর ট্রাভেল ডকুমেন্টের মাধ্যমে ভ্রমণ করেন।
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল জঙ্গি হামলায় আহত হওয়ার পর ইন্টারন্যাশনাল সিটিস অব রিফিউজি নেটওয়ার্কের (আইসিওআরএন) আওতায় নরওয়েতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। একই ঘটনায় আহত কবি তারেক রহিম এবং হুমকি পাওয়া কবি ও কথাকার মাহবুব লীলেন ঘটনার পর দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী। হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়ের সঙ্গে যৌথভাবে আলোচিত বই ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ লিখেছিলেন রায়হান আবীর। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে কানাডায় পাড়ি দেন তিনি। এখন কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়ে সেখানেই বসবাস করছেন।
কবি, গবেষক ও কথাকার মাহবুব লীলেন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে টুটুল কইল, সাবধানে থাইকো আর পারলে বিকল্প দেখো।’
কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমান প্রথম আলোর আলপিন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত কার্টুনের কারণে কারাভোগের পর ICORN-এর আওতায় নরওয়েতে আশ্রয় পেয়েছেন। তিনি বর্তমানে নরওয়ের নাগরিক। কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোরও প্রবাসী। লেখক ও সম্পাদক জোবায়েন সন্ধি জঙ্গিগোষ্ঠীর ‘৮৪ হিটলিস্টে’ আসার পর ২০১৫ সালে সরকারি চাকরি ও দেশ ছেড়ে প্রথমে ভারত যান। এরপর জার্মান ফেডারেল সরকারের অর্থায়নে জার্মান পেনের Writer-in-Exile স্কলারশিপ নিয়ে ওই দেশে আছেন।
লেখক সংস্কৃতিকর্মী অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘প্রবাসীর জীবন উটের কাঁটাগাছ খাওয়ার মতো। ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য খেতে হয় কিন্তু ঠোঁট বেয়ে দরদর করে রক্ত ঝরে। দেশের পাখি, বৃক্ষ, চায়ের দোকানের আড্ডা, বইমেলা, রাজনৈতিক কলহ মিস করি।’
কথাসাহিত্যিক শাহাব আহমেদ রাশিয়ায় পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘সেখানে বিয়ে করেছিলাম, বিয়ে করে বিদেশি বউ নিয়ে দেশে আসার আর উপায় ছিল না। একদিকে নিরাপত্তার প্রশ্ন, অন্যদিকে সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক গ্রহণযোগ্যতার সমস্যা, ভাষা প্রতিবন্ধকতা এসব কারণে আমাকে বিদেশেই থিতু হতে হয়েছে। কিন্তু দেশের জন্য মন পোড়ায় না এমন তো না, মানসিকভাবে আমি তো আমার জন্মভূমিতেই থাকি, আমার লেখালেখির ভিত্তিভূমিও দেশ ও দেশের মানুষই। সুতরাং আমার বিদেশে চলে যাওয়াটা বাধ্যতামূলক নয়, পরিস্থিতির কারণে, অবশ্যই বেটার লাইফের জন্য।’
কী হলে দেশে ফিরবেন প্রশ্নের জবাবে কবি ও লেখক মাহবুব লীলেন বলেন, ‘পড়াশোনার মূল দায় হলো নিজের পাঠের সারসংক্ষেপ আর পাঠপ্রতিক্রিয়া অন্যকে জানানো। অভিজিৎ রায় কিংবা অনন্ত বিজয় যা লিখেছেন, তার সবই তাদের পাঠপ্রতিক্রিয়া ও গবেষণার সারসংক্ষেপ। এর লাইগা তাদের কেন খুন হতে হলো? মতের প্রতিক্রিয়ায় মতামত; লেখার প্রতিক্রিয়ায় সমালোচনা; গবেষণার বিপরীতে গবেষণা এসবই তো হওয়ার কথা। লেখার প্রতিক্রিয়ায় খুন; মতামতের প্রতিক্রিয়ায় গ্রেপ্তার-কারাগার তো হওয়ার কথা না। যদি এগুলো বন্ধ হয়, তবে নিশ্চিত দেশে ফিরব আমি। কারণ বাংলাদেশ ছাড়া বাংলায় হাসা যায় না অন্য কোথাও।’
বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে ভারতকে পাশে পাচ্ছেন শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রকে পাঠানো এক কূটনৈতিক বার্তার বরাতে তেমনটাই জানাচ্ছে আনন্দবাজার পত্রিকা ও জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে। সংবাদমাধ্যম দুটির ভাষ্য, নয়াদিল্লি মনে করছে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার দুর্বল হলে তা ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র কারও পক্ষেই সুখকর হবে না। ওয়াশিংটনের মতো ভারতও বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চায় জানিয়ে ওই কূটনৈতিক বার্তায় নয়াদিল্লি বলেছে, হাসিনা সরকারকে অস্থির করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ইতিবাচক নয়।
আনন্দবাজার বলছে, সেপ্টেম্বরে জি-২০ বৈঠকে নয়াদিল্লিতে এক মঞ্চে বসবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে ভারতের এ বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। কূটনৈতিক নোটে ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে ভূরাজনৈতিক দিক থেকে তা ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র কারও পক্ষেই সুখকর হবে না। কারণ হাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে জামায়াতের মতো সংগঠনের ক্ষমতা বাড়বে বলে মনে করে ভারত। যুক্তরাষ্ট্র জামায়াতকে একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দেখে। মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে তুলনা করে। কিন্তু ভারত মনে করে জামায়াত একটি উগ্র মৌলবাদী সংগঠন।
ভারতের বার্তায় সেটি উল্লেখ করে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ স্থলসীমান্ত আছে। বাংলাদেশে জামায়াতের মতো সংগঠন শক্তিশালী হলে ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা সমস্যার মুখে পড়বে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর ভারতের উত্তরপূর্ব সীমান্ত অঞ্চল বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে। আফগানিস্তানের মতো ভারতের অন্য প্রতিবেশী সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিও নয়াদিল্লির জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। ভারতের সঙ্গে দীর্ঘতম স্থলসীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশের। ফলে সে দেশের যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি ভারতেও প্রভাব ফেলে।
ডয়চে ভেলে বলছে, কূটনৈতিক নোটে ভারত এ কথাই বাইডেন প্রশাসনকে জানিয়েছে যে, জামায়াতকে আশকারা দিলে একদিকে যেমন ভারতের আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস বাড়তে পারে, তেমনই চীনের প্রভাব বাংলাদেশে অনেকটাই বেড়ে যাবে, যা কাক্সিক্ষত নয় ওয়াশিংটনেরও। এ ছাড়া ওই বার্তায় বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পৃথক ভিসানীতিরও সমালোচনা করা হয়েছে।
একটি সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার বলছে, বিষয়টি (ভিসানীতি) যে আদৌ উচিত নয়, সে কথা ওয়াশিংটনকে জানিয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারত মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের এ নীতি সরাসরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো। ভারত এ নীতিকে ভালো চোখে দেখছে না।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল নয়াদিল্লি গিয়ে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব তথা কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেখানে তারাও বার্তা দিয়েছে, আঞ্চলিক স্থিতি বজায় রাখার প্রশ্নে বিএনপি-জামায়াত জোট বিপজ্জনক। প্রতিনিধিদলের নেতা বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গেও একটি ইতিবাচক বৈঠক করেন।
সার্বিক বিষয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, বাংলাদেশের জন্মের সময় থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক মসৃণ থেকেছে। যখনই সে দেশে অন্য কোনো সরকার ক্ষমতায় এসেছে, দুই দেশের সম্পর্ক ততটা মসৃণ থাকেনি। তাই ভারত সবসময়ই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকারকে গুরুত্ব দেয়। উৎপল মনে করেন, ভূরাজনৈতিক দিক থেকেও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকার দেখতে চায় ভারত। কারণ ভারত মনে করে, আওয়ামী লীগের সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকলে দুই দেশের সীমান্ত আপাতদৃষ্টিতে সুরক্ষিত থাকে।
গোটা দেশ কারাগারে পরিণত হয়েছে এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের শত শত নেতাকর্মীকে কারাগারে আটক রেখেছে। তিনি বলেন, ‘মানুষ যখন ভয় পায়, তখন আটক করে রাখে। ভয়ে এখন মুখ শুকিয়ে গেছে। টেলিভিশনে দেখবেন এখন আগের মতো (আওয়ামী লীগ নেতাদের) হাসি নেই। আর চকচকে কাপড় এখন কম পরে। যারা বিদেশে বাড়িঘর করছিল, ওরা কেমন করে বাঁচবে তার চেষ্টা করছে।’
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর দয়াগঞ্জের তিন রাস্তার মোড়ে গণমিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি সালাহউদ্দিন আহমেদ, রবিউল ইসলাম রবি, রফিকুল ইসলাম মজনু, মোনায়েম মুন্না, শাহিনসহ আরও অনেকে আটক বলে উল্লেখ করেন। সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে গতকাল ঢাকাসহ দেশের সব মহানগরে গণমিছিল করে বিএনপি। রাজধানীতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
দয়াগঞ্জ থেকে ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির গণমিছিল শুরু হয়। বেলা ৩টার আগে থেকেই দয়াগঞ্জ ও এর আশপাশের সড়কে দলটির নেতাকর্মীরা জড়ো হন। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে দয়াগঞ্জে তিন রাস্তার মোড় থেকে গণমিছিল বের হয়ে সায়েদাবাদ, মানিকনগর, কমলাপুর স্টেডিয়ামের সামনের সড়ক হয়ে খিলগাঁও চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হয়।
জুমার নামাজের পর থেকেই দলটির নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। দয়াগঞ্জ তিন রাস্তার মোড়ে পিকআপ ভ্যানে অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। কর্মসূচি কেন্দ্র করে দয়াগঞ্জ ও এর আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকতে দেখা যায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পুলিশ ভাইয়েরা কথায় কথায় রাতের অন্ধকারে আমাদের ছেলেদের গ্রেপ্তার করেন, আপনাদের ৯ জন বড় বড় অফিসার আমেরিকা যেতে পারেন না। তারা যে সহায়-সম্পদ তৈরি করেছিলেন, বিদেশে সেগুলোর কী হবে তার জন্য রাতে ঘুম হয় না। খুব পরিষ্কার করে বলি, যারা পুলিশের লোক তারা কখনই অন্যায়-চুরি-চামারির সঙ্গে জড়িত না। জড়িত ওই বড়রা। তাদের সম্পূর্ণ বেআইনি নির্দেশে আজকে তারা পুলিশের রাজত্ব করছে। অবস্থা এখন আরও খারাপ। আমেরিকান মানুষরা, বিভিন্ন সংস্থা, মানবাধিকার সংস্থা সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বলতে শুরু করেছে, বাংলাদেশের ওপর একটা শুনানি হোক। বিরোধী দলগুলোর ওপরে অত্যাচার, নির্যাতন হচ্ছে, গ্রেপ্তার, হত্যা হচ্ছে। তাই এদের আবার নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হোক।’
সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার নির্বাচনী ফান্ড তৈরির ফন্দি এঁটেছে। আওয়ামী লীগ দেশটাকে লুট করে, ফোকলা বানিয়ে আবার নতুন আরেকখান কায়দা বের করেছে। বলে পেনশন দেবে, পেনশন স্কিম। মানুষের টাকা চুরি করার আরেকটা ফন্দি বের করছে। ওই টাকা চুরি করে ওরা নির্বাচন করতে চায়। মানুষ এবার তাদের দেবে না।’
তিনি বলেন, ‘১৮ কোটি মানুষের দাবি, ভালোয় ভালোয় শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় হন। অন্যথায় মানুষ জানে স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী ডিক্টেটরকে কীভাবে সরাতে হয়। ’৫২ সালে, ’৬৯ সালে, ’৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে, ’৯০ সালে স্বৈরাচারকে সরিয়েছে, এবার আপনার পালা।’
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন তিনি কী নিয়ে এসেছেন? ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর বললে তো লাভ হবে না। উত্তরে উত্তুঙ্গ পর্বতমালা আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। কোনো দিকে যাবে তুমি, কোনো দিকে পালাবার পথ নাই।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। এতে আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।
গণমিছিলে অংশ নেন গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, শিরিন সুলতানা, নাসির উদ্দিন অসীম, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
একই সময় মহানগর উত্তরের উদ্যোগে একটি মিছিল রাজধানীর গুলশান ১ থেকে ওয়্যারলেস, তিতুমীর কলেজ সড়ক হয়ে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলের নেতৃত্ব দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, তাবিথ আউয়াল, আামিনুল হক প্রমুখ নেতারা অংশ নেন।
গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজকে শুনলাম পাশের দেশের কিছু কর্মকর্তা নেপালে গেছে পানি পড়া আনতে। এই পানি পড়া দিয়ে কাজ হবে না। এই সরকারকে সরে যেতে হবে। আমাদের গ্রেপ্তার করে, মামলা দিয়ে, হয়রানি করে আন্দোলন থেকে দূরে রাখা যাবে না। আমাদের আর ভয় নেই, দেশের মানুষ গুম-হত্যাকে ভয় পায় না।’
গত ১২ জুলাই এক দফার এ আন্দোলন শুরুর পর ঢাকায় মহাসমাবেশ, ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি এবং গণমিছিল করেছে বিএনপিসহ শরিক জোটগুলো। এবার চতুর্থ এ কর্মসূচিতে ঢাকাসহ বাইরের মহানগরগুলোতে গণমিছিল পালিত হয়।
বিএনপি ছাড়া যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাব, ১২ দলীয় জোট ফকিরাপুল পানির ট্যাংক, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বিজয় নগরে, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি আরামবাগে, এলডিপির এফডিসির সামনে, লেবার পার্টি পুরানা পল্টনে মসজিদের সামনে, এনডিএম মালিবাগ মোড়, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা সেগুনবাগিচার স্কুলের সামনে, গণ অধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) রামপুরা ব্রিজ, গণ অধিকার পরিষদ (নূর) ফকিরাপুল কালভার্ট রোডে এবং বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ শাহবাগ মোড় থেকে গণমিছিল বের করে।
এর আগে গতকাল সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়। এতে তিন পর্বে ৬৯ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার। বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিশ্বজুড়ে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী আজ সোমবার (০২ অক্টোবর) ঢাকার বাতাসের মান ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’। এদিন সকাল ১০টার দিকে ১২৯ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে ঢাকা।
এসময় ১৮৩ স্কোর নিয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। ১৬২ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। ১৬০ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। ১৫৬ স্কোর নিয়ে চতুর্থ ভারতের আরেক শহর করাচি। ১৫৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইতালির মিলানো।
এ ছাড়া একইসময়ে একিউআই স্কোর ১১৭ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে চীনের উহান। ১১৩ স্কোর নিয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর। ১১২ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। ১০৯ স্কোর নিয়ে দশম স্থানে রয়েছে সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।