
প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি ‘সোনার হরিণ’। বিসিএসে, কিছু ব্যতিক্রম বাদে, একজন প্রার্থীকে প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি পেতে সর্বোচ্চ মেধার স্বাক্ষর রাখতে হয়। প্রার্থীরা একমনে চার-পাঁচ বছর অনুশীলন করেন। তাও লাখ লাখ প্রার্থীর মধ্যে চাকরি হয় অল্পজনেরই। প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার চাকরির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।
পুরোপুরি ভিন্ন পরিস্থিতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেকশন অফিসারসহ নানা পদে। এগুলো প্রথম শ্রেণির চাকরি। মেধা বা যোগ্যতা নয়, টাকা আর তদবির থাকলে সেখানে চাকরি হয়। সম্প্রতি বেশ কিছু নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে লেনদেন হয়েছে বলে ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে।
প্রত্যেক জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করার নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মানেই শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী শুরুতেই কয়েকশ চাকরি। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে তেমন মন না থাকলেও নিয়োগের মহোৎসব চলছে। শিক্ষক নিয়োগে লেনদেন কম হলেও তদবির চলে, তবে মেধাবীরাও নিয়োগ পান। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ পুরোটাই তদবিরে আর লেনদেনের মাধ্যমে হয়। আত্মীয়করণও আছে। লিখিত পরীক্ষা লোকদেখানো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে ঘুষের রেট অনেকটাই নির্ধারিত। সবখানে প্রায় এক রেট। যত টাকা স্কেলের চাকরি প্রায় তত লাখ টাকা ঘুষ। সবচেয়ে লোভনীয় সেকশন অফিসার পদ। এ পদে বেতন স্কেল ২২ হাজার টাকা, আর ঘুষের রেট ২২ লাখ টাকা। ২০ লাখেও কখনো হয়। দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ১২ থেকে ১৫ লাখ, তৃতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৮ থেকে ১০ লাখ এবং চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে ঘুষের রেট ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য (বর্তমানে চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়েরই নিয়োগ বোর্ড রয়েছে, যার প্রধান হচ্ছেন উপাচার্য। বোর্ডই নিয়োগ দিয়ে থাকে। যদি তারা প্রার্থী ঠিক করে রাখে তাহলে লিখিত পরীক্ষায় কম পেলেও ভাইভায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে পছন্দের প্রার্থীই নিয়োগ পায়।’
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বর্তমান ইউজিসি সদস্য ড. মুহম্মদ আলমগীর বলেন, ‘উপাচার্য যদি তার নিজের আত্মীয়স্বজন, এলাকার লোক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আত্মীয়স্বজনদের নিয়োগ না দেন তাহলে রাজনৈতিক চাপ এড়ানো সম্ভব। ভিসি সৎ থাকলে রাজনৈতিক নেতারা কিছু বলতে পারবেন না। তিনি অনিয়মে জড়ালে অন্যরা তো সুবিধা নেবেই। বোর্ডের সদস্যরা ঠিক থাকলে ভিসির একার পক্ষেও কিছু চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।’
ময়মনসিংহ বিভাগের নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া একজন সেকশন অফিসার নিজের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম না প্রকাশের শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চাকরির জন্য আমি একজন রাজনৈতিক নেতার এপিএসের কাছে যাই। তিনি জানতে চান সেকশন অফিসার পদে বেতন স্কেল কত? আমি জানালাম, ২২ হাজার টাকা। তিনি বললেন ২২ লাখ টাকা লাগবে। জানালেন, যত টাকা স্কেলের চাকরি তত লাখ টাকা দিতে হয়। আর এ টাকা অনেকের কাছে যাবে। পরে তিনি আমার জন্য দুই লাখ টাকা কমিয়ে ২০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে দেন। যদিও পরে আমি আরও কিছু টাকা কম দিয়েছি। আমার চাকরি হয়েছে।’
সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও নতুন। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে তারা ভর্তির অনুমতি পেয়েছে। এখন জোরেশোরে চলছে নিয়োগ কার্যক্রম। সম্প্রতি বেশ কিছু পদে নিয়োগও হয়েছে। জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস। ওই উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা নিয়োগে বড় ভূমিকা রাখছেন। তিনি আত্মীয়স্বজনদের নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছেন। তিনি প্রতি প্রার্থীর কাছ থেকে ১০-১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এতে উপাচার্যেরও সায় আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়োগে বড় অঙ্কের লেনদেন হলেও এর সঙ্গে বেশিরভাগ উপাচার্য জড়িত নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। তারা দলীয়করণ, আত্মীয়করণে বেশি জোর দেন। টাকার লেনদেন করে তৃতীয় পক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যে রাজনৈতিক নেতার আধিপত্য সাধারণত তিনিই লেনদেন করেন। এ ছাড়া শিক্ষক নেতা, সিন্ডিকেট সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার রাজনৈতিক নেতা, যারা ভিসির সঙ্গে মধ্যস্থতা করেন তারাই ঘুষের টাকা নেন।
ইউজিসি সূত্র জানায়, দেশে এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৫৪টি। ১৫ থেকে ২০টি নতুন। সেগুলোতে প্রতিনিয়ত বড় ধরনের নিয়োগ হচ্ছে। কোনোটিতে নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার অ্যাডহক নিয়োগ দেওয়ার পর চাকরি স্থায়ী করে।
সম্প্রতি কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পিরোজপুরকে শিক্ষাকার্যক্রম শুরুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সিলেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জামালপুর, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কিশোরগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও জোরেশোরে নিয়োগ কার্যক্রম চলছে।
রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় সিরাজগঞ্জ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, নেত্রকোনা শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ চলছে।
ইউজিসি প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করে। তদন্ত প্রতিবেদনে অনিয়মের প্রমাণও মেলে। প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আবার কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের চিঠি দেওয়া হলেও তাতে কান দেয় না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অস্থায়ী ক্যাম্পাস সিলেট শহরের চৌহাট্টায়। ইচ্ছেমতো নিয়োগও চলছে। নিয়োগে অনিয়মের তদন্ত করেছে ইউজিসি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান জনবল ১৭৪ জন। অথচ ১১২টি পদের অনুমোদন দিয়েছে ইউজিসি। ১০৯টি পদে নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলে ইউজিসির তদন্তে বলা হয়েছে। উপাচার্যের শ্যালকের স্ত্রী উপপরিচালক পদে, উপাচার্যের স্ত্রীর বড় ভাইয়ের ছেলে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এ ছাড়া, আওয়ামী লীগের সাবেক একজন সংসদ সদস্যের ছেলে, ইউজিসির কর্মকর্তাদের সুপারিশকৃত দুজন প্রার্থী, দুজন গণমাধ্যমকর্মীর আত্মীয় নিয়োগ পেয়েছে। অনেক পদেই বড় অঙ্কের লেনদেন হয়েছে।
জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৭০০ জন হলেও শিক্ষক ৪৬ জন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছেন ৮১ জন। নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের এবং অন্যদের নিয়োগে টাকা লেনদেন হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপাচার্যের ছেলে সহকারী নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকের (অর্থ ও হিসাব) মেয়ে, মেলান্দহ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ছেলে, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের মেয়ে সেকশন অফিসার পদে এবং মেলান্দহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতির ছেলেকে উপাচার্যের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শহীদুর রহমান খান নিজের ছেলে, মেয়ে; শ্যালক-শ্যালিকার ছেলে, ভাতিজাসহ ৯ জনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তিনি তার স্ত্রীকেও অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করে করেছিলেন। নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে বাছাই বোর্ড গঠন করে ২০টি বিষয়ে ৭৩ জনকে গত বছরের আগস্টে চাকরির শেষ সময়ে নিয়োগ দিয়েছিলেন তিনি। তদন্তে এসব অনিয়মও প্রমাণিত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসব নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিবর্তন করে যোগ্যতা কমিয়ে নিজের মেয়ে ও জামাইকে শিক্ষক নিয়োগ করেছেন। কম যোগ্য ৩৪ জনকে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। মেয়াদের শেষ কর্মদিবসে ১৪১ জনকে অস্থায়ী নিয়োগ দিয়েছিলেন। এসব অনিয়মের প্রমাণও পেয়েছে ইউজিসি।
রাজধানীর বছিলায় ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগেও অনিয়ম পেয়েছে ইউজিসি। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মাদ্রাসা শিক্ষক নেতা, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস এসব নিয়োগের হর্তাকর্তা হয়ে ওঠেন। তারা প্রত্যেকে ১০ থেকে ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেন। অনেক ক্ষেত্রে সাবেক ভিসিকে নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছেন। প্রতিটি নিয়োগেই বড় লেনদেন হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে এক গ্রামেরই ২০ থেকে ২৫ জন চাকরি পেয়েছেন। গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়েও নিয়োগে সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
উচ্চ আদালতের রায়ে প্লটের নামজারি ও আমমোক্তারনামা বাতিল হয়েছে। ওই প্লটের ওপর রয়েছে স্থগিতাদেশ। এরপরও নতুন করে ওই প্লটের মালিকানা হস্তান্তরের সুপারিশ করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে উচ্চ আদালতের রায়ের কথা উল্লেখ করলেও অসৎ উদ্দেশ্যে মূল বিষয়গুলো উল্লেখ করেনি। অথচ ওই বিষয়গুলো আমলে নিলে ওই শিল্প প্লটের মালিকানা হস্তান্তরের সুপারিশ করার কোনো সুযোগ নেই।
ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে শিল্প এলাকায়। ২৬৬ নম্বরের ৬০ কাঠা আয়তনের শিল্প প্লটটির ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করেই এমন সুপারিশ করেছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের দুই প্রকৌশলী। তারা হলেনÑ ঢাকা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার ইবনে সাঈখ এবং তেজগাঁও গণপূর্ত উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান। আর সে সময় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এসব কাজে তাদের সহযোগিতা করেছেন তৎকালীন শাখা-১৪-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসচিব মো. শাহিনুর ইসলাম; বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এ নির্দেশনা ছাড়াও ওই প্লটের মালিকানা বিষয়ে উচ্চ আদালতে তিনটি মামলা চলমান রয়েছে। এরপরও গণপূর্ত অধিদপ্তর ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি অসাধু চক্র উচ্চ আদালতের রায় ও বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে একটি পক্ষকে মালিকানা
হস্তান্তর করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তারা এসব করছেন বলে জানা গেছে। ওই ফাইলের তথ্য গোপন ও জমাকৃত আদালতের কাগজপত্র সরানোর কাজে তাকে সহযোগিতা করেছেন ওই শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মনসুর আলী শাকিদার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর ওই প্লটের বিষয়ে হাইকোর্ট রিট পিটিশন মামলার রায় ঘোষণা করে। আদালতের রায়ের কপি তাদের কাছে থাকার পরও মূল বিষয়গুলো প্রতিবেদনে উল্লেখ করেনি ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩। বরং সেখানে রায়ের খণ্ডিত অংশ উপস্থাপন করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালতের রায়ে মন্ত্রণালয়কে উভয় পক্ষের শুনানি গ্রহণ করে দুই মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত দিতে বলা হয়েছে। গত বছরের ৩ আগস্ট গণপূর্ত থেকে এই প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার পর অসাধু চক্র বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ফাইল অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু করে।
আরও জানা যায়, তেজগাঁও শিল্প এলাকার ২৬৬ নম্বর প্লটের দখলদার মো. জিবরান গং। সেখানে তাদের এবং তাদের কাছ থেকে বায়নাসূত্রে মালিকরা পুরো প্লটের দখলে রয়েছেন। এরপরও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেমিপাকা ফ্যাক্টরি শেডে মেসার্স শওকত আলী অ্যান্ড ব্রাদার্সের পক্ষে নিযুক্ত আমমোক্তার মাইনুল হাসান রুম্মান এবং রাবার প্লাস্টিক তৈরির মেশিন রয়েছে। বাস্তবে যার কোনো সত্যতা নেই।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ৬০ বছর ধরে দখলে থাকা পক্ষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রয়েছেন। তারা উচ্চ আদালতে মামলার বিচারের মাধ্যমে জমির মালিকানার জটিলতার নিরসন করতে চাচ্ছেন। কিন্তু অন্যপক্ষ কাগজপত্র জাল-জালিয়াতি করে মন্ত্রণালয়ের অসাধু চক্রকে ম্যানেজ করে অবৈধ প্রক্রিয়ায় মূল্যবান জায়গাটি আত্মসাৎ করতে মরিয়া। অবৈধ প্রক্রিয়ায় ওই জায়গা নিজের করে নিতে অনৈতিক পথে হাঁটছেন মইনুল হাসান রুম্মান গং। আর আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতে বিচারের জন্য লড়ছেন ৬০ বছর ধরে দখলে থাকা মো. জিবরান গং।
জানতে চাইলে মইনুল হাসান রুম্মান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখন আমি ব্যস্ত আছি। আপনাদের অফিসে এসে দেখা করব।’ কিন্তু তিনি অফিসে এসে দেখা করেননি এবং আর ফোনও রিসিভ করেননি।
আর দখলদার মো. জিবরান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা আইনি লড়াইয়ে আছি। উচ্চ আদালতের মাধ্যমে আমরা মালিকানার বিষয়টি সুরাহা করতে চেষ্টা করছি। কিন্তু, একটি অসাধু চক্র গণপূর্ত অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে প্রভাব বিস্তার করছে। তারা উচ্চ আদালতের রায় ও বিচারাধীন মামলাকে থোড়ায় কেয়ার করছে।’
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৫ জুন আইনি লড়াইয়ে থাকা মো. জিবরান গংদের পক্ষ থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ও সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও অসাধু চক্র নানা যুক্তি দেখিয়ে জাল-জালিয়াত চক্রের পক্ষে সাফাই গাইছেন। বিষয়টির যৌক্তিক এবং আইনগত সমাধান দিতে বদ্ধপরিকর মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রতিমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে গণপূর্ত অধিদপ্তরের উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে দেওয়া একপেশে প্রতিবেদনকে শক্ত দলিল হিসেবে উপস্থাপন করছে অসাধু চক্র। আর মন্ত্রণালয়ও সেটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
জানতে চাইলে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার ইবনে সাঈখ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছেন তেজগাঁওয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান (এখন সচিবালয় গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন)। আমি শুধু স্বাক্ষর করেছি।’
মালিকানা হস্তান্তরের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এভাবে দেওয়াটা যৌক্তিক হয়েছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ভাই, অনেক আগের ব্যাপার। এত কিছু আমার মনে নেই।’ আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে এমনটি করা হয়েছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কারও পক্ষে প্রতিবেদন দিই না। কোনো কারণে ভুল হলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলে তা সংশোধন করারও সুযোগ রয়েছে।’
একই বিষয়ে গণপূর্তের তেজগাঁওয়ের তৎকালীন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঘটনাটি প্রায় এক বছর আগের। প্রতিবেদনে কী লিখেছি; সেটিও ভুলে গেছি।’ উচ্চ আদালতের রায় অমান্যের বিষয়টি তুলে ধরলে তিনি বলেন, ‘মনে করতে পারছি না।’ আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে এমনটি করা হয়েছেÑ এমন অভিযোগের জবাবে বলেন, ‘এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। যা ঘটনা আমরা প্রতিবেদনে সেটা তুলে ধরেছি।’
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের শাখা-১৪-এর তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপসচিব মো. শাহিনুর ইসলাম একপেশে প্রতিবেদন প্রণয়নে মন্ত্রণালয় থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে তার ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার কল করে এবং এসএমএস (খুদেবার্তা) পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি। আর ওই ফাইলের তথ্য গোপন ও জমাকৃত আদালতের কাগজপত্র সরানোর কাজে সহযোগিতাকারী ওই শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মনসুর আলী শাকিদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কোনো ভুল হলে অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়ে থাকতে পারে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে সংক্ষুব্ধরা সংশোধনের আবেদন করতে পারেন। সেটা পুনরায় বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হবে।’
প্রায় পনেরো বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতাদের অপকর্ম নিয়ে বিব্রত দলের হাইকমান্ড আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে দেশ রূপান্তরকে পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে বিভিন্ন সময় বিএনপি-জামায়াতসহ অন্য দল থেকে এসে পদ পেয়ে যাওয়া নেতাদের অপকর্ম নিয়ে দলের মধ্যেই সমালোচনা হয়েছে। কখনো কখনো তাদের হাইব্রিড আখ্যায়িত করা হয়েছে, কখনো ‘কাউয়া’র মতো শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
ভোল পাল্টে অনুপ্রবেশ করা এসব নেতা আওয়ামী লীগ ও সরকারের দাপট দেখিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে নানা অপকর্ম করছেন। টেন্ডার-বাণিজ্য থেকে শুরু করে এমন কোনো অপরাধ নেই যা করছেন না তারা। তাদের কর্মকা-ে ক্ষুব্ধ সরকারের হাইকমান্ড। ১৪ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রলীগ, তাঁতী লীগসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সহানুভূতি প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিতে দেখা যাচ্ছে। এতে বিব্রত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংগঠনটিতে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার কথা বলেন।
এর আগে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
এর ধারাবাহিকতায় অপকর্মে জড়িত হাইব্রিড নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দুই মাস আগে সরকারের হাইকমান্ড থেকে বলা হয়েছে।
নির্দেশনা পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর পুলিশের সব কটি ইউনিটকে আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতাদের বিষয়ে খোঁজ নিতে বলেছে। ইতিমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থা, মহানগর, জেলা ও থানা পুলিশ তালিকা করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। ওই সব নেতার পাশাপাশি তাদের দলে প্রবেশের ব্যবস্থা ও সহায়তা যারা করে আসছেন, তাদেরও আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য দল থেকে যারা এসেছে, তারা নানা অপকর্ম করছে। আমাদের সফলতাগুলো তাদের কারণে নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে নীতিনির্ধারক ফোরামে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিশাল রাজনৈতিক দল। পনেরো বছর ধরে আমরা দেশ পরিচালনা করছি। দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন। কিন্তু একটি চক্র উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অশুভ চক্র দলের ভেতরে প্রবেশ করে নানা অপকর্ম করছে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। তাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলা হয়েছে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সরকারের হাইকমান্ড থেকে একটি নির্দেশনা এসেছে। এ জন্য পুলিশের সব কটি ইউনিটকে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতের অনেক নেতা তাদের পরিচয় গোপন করে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোতে প্রবেশ করে নানা অপকর্ম করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এই হাইব্রিড নেতাদের সবধরনের সহায়তা করছেন আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা। তাদেরও আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, বরিশাল বিভাগের একটি জেলায় মঞ্জু মুসল্লি নামে এক হাইব্রিড নেতা একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দলে যোগ দিয়ে নানা রকমের অপকর্ম করছেন। এখনো তার পরিবারের ১১ সদস্যের মধ্যে আটজনই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করে আসছেন। অথচ তাদের দাপটে এলাকার লোকজন তটস্থ। এ রকম হাজার হাজার হাইব্রিড নেতা আছেন সারা দেশে। তাদের দ্রুত সময়ে চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোয় যেসব ‘অতিথি নেতা-কর্মী’ ঢুকে পড়েছেন, তাদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা পেয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। নির্দেশনা পেয়ে এসব হাইব্রিড নেতার কর্মকা-, অতীতসহ বিস্তারিত তালিকা তৈরির কাজও শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তারা বলছেন ২০১৯ সালে ক্যাসিনো ও টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানের সময় হাইব্রিড নেতাদের বিষয়টি সামনে চলে আসে। যে দলই ক্ষমতায় থাকে ওই সব নেতা সেই দলে ঢুকে সুবিধা নিচ্ছেন। তারা টেন্ডার, চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের অপরাধ করছেন। এসব নেতাকে বেশি লালন-পালন করছেন আওয়ামী লীগ বা যুবলীগেরই শীর্ষ নেতারা। মূলত তাদের আশকারা পেয়েই তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে বিএনপি-জামায়াতের অনেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। কোথাও কোথাও ‘নব্য’ আওয়ামী লীগারদের কারণে ত্যাগী নেতা-কর্মীরা কোণঠাসা থাকার পাশাপাশি হামলা ও মামলার শিকার হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মূলধারার বাইরে থেকে মনোনয়ন নিয়ে যারা সংসদ সদস্য হয়েছেন, তারা বিভিন্ন দল থেকে লোক এনে দলের ভেতরে গ্রুপিং তৈরি করেছেন বলে পুলিশ তথ্য পেয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে মূলধারার নেতা-কর্মীদের বিরোধ তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, দেশের কোথাও কোথাও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের আধিপত্য বাড়াতে বিএনপি-জামায়াতের লোকদের দলে জায়গা দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য বা অবস্থান টিকিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগে আশ্রয় নিয়েছেন। মূলত তারাই নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালাচ্ছেন।
ডিএমপি ও জেলার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, অনেক নাশকতা মামলার আসামিও আওয়ামী লীগেরই একশ্রেণির নেতার সঙ্গে আঁতাত করে দলে ঢুকে টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন। ক্যাসিনো খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া একসময় ফ্রিডম পার্টি করতেন। জাতীয় পার্টির আমলে ছাত্র সমাজের রাজনীতি করেছেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ওই দলে যোগ দেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে যুবলীগ দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ক্যাসিনো ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের মাধ্যমে সাংগঠনিক পদ পর্যন্ত বাগিয়ে নেন। ঠিকাদার জি কে শামীম একসময় জাতীয় পার্টি এবং তারপর বিএনপি করেছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক পরিচয়ে টেন্ডারবাজি করে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাবেক পরিচালক লোকমান হোসেন খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন ছিলেন। অথচ তিনি গত ১৩ বছর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে অর্থ কামিয়েছেন। বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত সফিউদ্দিন মোল্লা পনুকে নিয়েও রাজধানীর আশকোনা ও দক্ষিনখান এলাকায় চলছে আলোচনা। একসময় তিনি বিএনপির রাজনীতি করলেও বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। তার আপন সম্বন্ধি পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। পনুর অন্য স্বজনরাও বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃর্ক্ত। দক্ষিণগাঁওয়ের আরেকজন জামায়াত মতাদর্শী সুরুজ মিয়াও এখন আওয়ামী লীগের থানা কমিটিতে ঢোকার চেষ্টা করছেন বলে পুলিশের কাছে তথ্য এসেছে।
মাসখানেক আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা এসেছে জানিয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা আরও বলেন, জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব নেতা ‘অতিথি পাখি’ হয়ে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেছে তাদের তালিকা করার কাজ শুরু হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, কিছুদিন আগে গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় বলা হয়েছে, দলে হাইব্রিড এবং সুবিধাবাদীদের দাপটে প্রকৃত ত্যাগী নেতা-কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে আছেন। আর এই কারণে তৃণমূলের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। একই কারণে বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও এবং তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর ফেসবুকে শোক জানিয়ে পোস্ট দেওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের ৬৬ নেতা-কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে জামালপুরে ১৮, চট্টগ্রামে ১৬, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৯, পাবনায় ৭, নরসিংদীতে ৬, সাতক্ষীরায় ৩ গোপালগঞ্জে ৬ ও যশোরে একজন ছাত্রলীগ নেতা রয়েছেন। তবে ফেসবুকে শোক প্রকাশ করা নেতার সংখ্যা আরও বেশি বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে।
বৃহত্তম পাঁচ দেশের অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আগামীকাল সোমবার দক্ষিণ আফিকা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে জোটের পরিধি বাড়ানোসহ বাংলাদেশের সদস্য হওয়ার বিষয়টি জোর আলোচনায় থাকলেও জোটের অন্যতম শক্তিশালী দুই দেশ ভারত ও ব্রাজিল রাজি না হওয়ায় এবার নতুন সদস্য নেওয়া হচ্ছে না। তবে বাংলাদেশ এরই মধ্যে ব্রিকস ব্যাংকে যুক্ত হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এবার ব্রিকস সম্মেলনে নতুন সদস্য না বাড়ানো হলেও আগামীতে এই জোটের সদস্যসংখ্যা বাড়বে এবং যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গঠিত কোয়াডকে মোকাবিলা করতে এই জোটকে শক্তিশালী করতে চায় তারা। এ জন্যই বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো আরও বলছে, বাংলাদেশ এবার ব্রিকসের সদস্য না হলেও প্রধানমন্ত্রীর আফ্রিকা সফরটি হবে কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলনের সাইড লাইনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে পৃথক বৈঠক হতে পারে। আর বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের আগ্রহের বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দুই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে তাদের মতামত প্রকাশ করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েকটি নির্বাচনে সোচ্চার থাকলেও তা এতটা স্পষ্ট ছিল না। এই অঞ্চলে তারা তাদের মিত্র দেশ ভারতের মাধ্যমেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছিল। কিন্তু এবার ভারতকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রত্যাশার কথা জানাচ্ছে এবং নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আশঙ্কার বিষয় হলো চীনের দিকে যেন বাংলাদেশ ঝুঁকে না পড়ে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দুই কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশ সফরে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ চীনের খপ্পরে পড়েছে কি না?’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই অব্যাহত চাপে শেষমেশ ভারতও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছে। ভারত বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন তারা যেভাবে করতে চায়, সেভাবেই করার পক্ষে তাদের (ভারতের) মত। আবার বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানো পছন্দ করছে না চীনও। দেশটি তাদের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বলেছে, তারা (চীন) কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। তারা মনে করে বাংলাদেশের নির্বাচন এবং গণতন্ত্র তাদের দেশের জনগণ এবং রাজনীতিকরাই ঠিক করবেন।
এসব বিষয় মিলিয়ে কূটনৈতিক সূত্রগুলো মনে করছে, ব্রিকসে প্রধানমন্ত্রীর সফরটি রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যে সম্পর্ক রয়েছে, সেটির জন্যও দুই দেশের প্রধান নেতার বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক দ্বিপক্ষীয় বিষয় রয়েছে। সরাসরি হস্তক্ষেপ না করলেও বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভারত নজরে রাখে। এবারও তার ব্যত্যয় হবে না। তাই ব্রিকসের সাইড লাইনে মোদির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হবে। তা ছাড়া রোহিঙ্গা বিষয়ে ব্রিকস নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও কূটনৈতিক সূত্রগুলো দাবি করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহত্তম পাঁচ দেশের অর্থনৈতিক জোটের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ২১ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছেন। এ ছাড়া আগামী মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সাইড লাইনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে ব্রিকস গঠিত। আগামী মঙ্গল ও বুধবার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠেয় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে স্বাগতিক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা। এই সম্মেলনে ব্রিকসের সদস্য পদ সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা হবে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, এটা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, সেখানে যে তিনটি দেশ চাইছে নতুন সদস্য নেবে। ভারত ও ব্রাজিল বলছে, নেওয়ার আগে নতুন নিয়মকানুন তৈরি করতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট তখন বলেছিলেন, তারা চারটি দেশকে নিতে চান। আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম, কারা কারা? তখন তিনি জানিয়েছিলেন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, গত জুন মাসে জেনেভায় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ব্রিকসে যাওয়ার জন্য। তখন ধারণা ছিল, তারা নতুন কয়েকটি দেশকে ব্রিকসের সদস্য করবেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শহীদ সালাম-বরকত হল ও আ ফ ম কামালউদ্দিন হল সংলগ্ন নির্মাণাধীন মসজিদের ছাদ ঢালাইয়ের সময় ধসে পড়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টার দিকে ঢালাইয়ের কাজ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই এ ঘটনা ঘটে বলে জানান নির্মাণশ্রমিকরা।
এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম ও উপর্যুক্ত দুই হলের প্রাধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত প্রকৌশলীদের সঙ্গে আলোচনার পর সম্পূর্ণ ছাদের বিম খুলে আবার বিম স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান মসজিদটির নির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফরমিলা আক্তার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দাইয়ান বিন শাহজাহান।
দাইয়ান বিন শাহজাহান বলেন, সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ দুই হলের প্রাধ্যক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পুরো ছাদের বিম খুলে নতুন করে লাগাতে হবে। ছাদের কাজ আবার শুরু করার কথা বলা হয়েছে।
ঢালাইয়ের শুরুতেই ছাদ ধসে পড়ার কারণ জানতে চাইলে দাইয়ান বলেন, ‘আমাদের শুধু ঢালাইয়ের কাজ বাকি ছিল। কিন্তু বৃষ্টির জন্য ঢালাইয়ের কাজ শুরু করতে পারিনি। বৃষ্টি না থাকায় আজ (গতকাল) কাজ শুরু করেছিলাম। বৃষ্টির কারণে পানি জমে কাঠ ভেজা ছিল। আর পেরেকের সঙ্গে কাঠের জোড়া লাগানো অংশ ফাঁকা হয়ে থাকতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। এ কারণে ধসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে নির্মাণশ্রমিকদের গাফিলতি ছিল না।’
আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘উপাচার্য স্যারসহ আমরা কয়েকজন আজ সকালে নির্মাণকাজের স্থান পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। এত দিনের টানা বৃষ্টির জন্য এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে । আমরা নতুন করে কাজ শুরু করতে বলেছি। কাজ শুরু করতে কিছুদিন সময় লাগতে পারে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙা ছাদের বিম খুলে আবার নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপ্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) আহসান হাবীবের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য মোবাইলে কল দেওয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে মসজিদের ইঞ্জিনিয়ার তপন কুমার বলেন, ‘১০ দিন টানা বৃষ্টি হওয়ার ফলে ওখানের কাঠের তক্তা পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল। পরে ঢালাইয়ের সময় কাঠের তক্তা সরে যায়।’
প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো পরিষ্কার অবস্থান জানায়নি। ফলে প্রভাবশালী এই প্রতিবেশীকে নিয়ে নেতিবাচক-ইতিবাচক দুটি আলোচনাই রয়েছে রাজনীতিতে। ভারতের অস্পষ্ট অবস্থানের কারণে আওয়ামী লীগ ও সরকারের মনোবেদনা রয়েছে বলে কখনো কখনো খবর পাওয়া গেছে। কারণ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের অতি তৎপরতায় আওয়ামী লীগ ও সরকারকে চাপে ফেলে দিয়েছে। এ অবস্থায় শেখ হাসিনার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত বার্তা পাঠানোয় আত্মবিশ্বাস বেড়েছে আওয়ামী লীগের।
যদিও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা দাবি করছেন, পুরো পরিস্থিতি এখনো পর্যবেক্ষণ করে চলেছে মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সহযোগী রাষ্ট্র ভারত।
এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অবস্থান অস্পষ্ট থাকলেও ভারত গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। নির্বাচন ঘিরে অস্থির সময়ে প্রতিবেশী দেশটিকে প্রকাশ্যে সরকারের পাশে থাকতে না দেখে আওয়ামী লীগের মধ্যম সারিসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীরা বিষণœ। দেশটির নীরব ভূমিকা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়েও এক ধরনের হাঁসফাঁস অবস্থার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু গত শুক্র ও শনিবার দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ অঞ্চলে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান কী থাকবে তা পরিষ্কার করায় ক্ষমতাসীনরা নির্ভার হয়ে উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্রকে যে ভাষায় এই অঞ্চল নিয়ে ভারত তার অবস্থান জানিয়েছে, তা সরকারের তথা আওয়ামী লীগের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে, দুশ্চিন্তাহীন করে তুলেছে অনেকখানিই।
যুক্তরাষ্ট্রেকে ভারত এই বার্তা পাঠানোর আগে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল দেশটি সফর করে এসেছে।
একটার পর একটা ইস্যু তুলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বাংলাদেশ সফরে আসা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করা ও প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে দৌড়ঝাঁপ সরকারকে চাপে রেখেছে। এ অবস্থার পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে গত শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘ভারতের কূটনৈতিকের এ অঞ্চল সম্পর্কে একটা মন্তব্য, আজকে খবর নিয়ে দেখুন, বিএনপির নেতারা হাত-পা গুটিয়ে শুয়ে পড়েছে। আন্দোলনের কী হবে? এক দফার কী হবে? এক দফা মরণ যন্ত্রণায় ছটফট করছে।’
ওই অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছে, বাংলাদেশের শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে ভূরাজনৈতিক দিক থেকে তা ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র কারও পক্ষেই সুখকর হবে না।’
এ বিষয়ে বিএনপির বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জনগণই আমাদের ক্ষমতায় বসাবে। বিএনপি তাকিয়ে আছে শুধু আমেরিকার দিকে। কখন নিষেধাজ্ঞা আসবে, কখন ভিসানীতি আসবে। ভিসানীতি আর নিষেধাজ্ঞার কথা ভেবে ভেবে আটলান্টিকের ওপারে তাকিয়ে আছে, তাকাতে তাকাতে বিএনপি নেতাদের চোখের পাওয়ার কমে গেছে।’
আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, হতে পারে, শেষ সময়ে দৃশ্যপটে আসবে ভারত। এখনো তাদের কথা বলার সময় হয়নি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো দিক হারায়নি, সেটাও মনে করে তারা। পরিস্থিতি না চাইলে আগে থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ‘পলিসি’ নিয়ে এবার মাথা ঘামাতে রাজি নয় বন্ধু দেশটি, এমন পর্যালোচনাও রয়েছে সরকারি দলের নেতাদের।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারত দৃশ্যত নেই। কিন্তু ভেতরে-ভেতরে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বাংলাদেশ ইস্যুতে তারা কোনোভাবেই নিষ্ক্রিয় থাকতে পারবে না। এ ছাড়া ভারত সরকারের স্বার্থেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যাপারে তাদের ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।
ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ভারত কৌশলে এগোতে চায়। সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর করার কথা রয়েছে। ওই সফর দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ; বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী এ সফরে ভারত কোন পরিকল্পনায় এগোবে, তিনি কোন কৌশলে পথ চললে ভালো হবে, সেই পরামর্শ আদান-প্রদান করার আগে আগামী নির্বাচন নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক অস্পষ্ট থাকুক, সেটাও চাইতে পারেন শেখ হাসিনা। কোথায় কাকে দিয়ে দাবা খেলার ঘোড়ার আড়াই চাল মারবে, ভারত এবার এটা প্রকাশ্যে আনতে চায় না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভারতের যে অবস্থান তা তো আনুষ্ঠানিকভাবে আসেনি। গণমাধ্যমে এসেছে কেবল। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মনে করে, গণমাধ্যমে এ অঞ্চল নিয়ে ভারতের যে অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে, নির্ভাবনায় বলা যায় তাই হওয়ার কথা। কারণ, বাংলাদেশের গণতন্ত্র নষ্ট হলে ভারত নয়, এই অঞ্চলের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তা ছাড়া বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলের একটি (মডেল) চিত্র তো সবার কাছেই আছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও আছে। সুতরাং শেষ পর্যন্ত যত আলোচনাই হোক, চাপাচাপি হোক বাস্তবতা বুঝতে হবে আন্তর্জাতিক মহলকে।’
ভারতে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ভারত মোটেই নিশ্চুপ নয়। তারা ইতিমধ্যে বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন সমস্যা নিয়ে যুক্ত হয়ে গেছে। দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের ব্যাপারে ভাবতে হলে ভারতও এ প্রক্রিয়ায় অংশ হবে। কারণ ভারতের সিকিউরিটি কনসার্ন রয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ভারত কখনোই পশ্চিমা বিশ্বের মতো এতটা তৎপরতা দেখায় না। তাদের দৃশ্যপটে দেখা যায় না তেমন একটা। প্রয়োজন পড়লে যতটা দরকার, ঠিক ততটাই এগোয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ অঞ্চলের রাজনীতি নিয়ে গণমাধ্যমে ভারতের যে অবস্থান জানা গেছে তা কতটা নির্ভুল, তা নিশ্চিত না হলেও এ অঞ্চল নিয়ে ভারতের সত্যিকার অবস্থান তাই হওয়ার কথা।’
১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসে শিক্ষকদের অবস্থা নিয়ে আন্তঃসরকার সম্মেলন হয়েছিল। সেখানেই শিক্ষকদের কথা চিন্তা করে ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন (আইএলও) কিছু পরামর্শে স্বাক্ষর করে। এতে শিক্ষকদের অধিকার, দায়িত্ব এবং বিশ্বব্যাপী শিক্ষকতা পেশার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ছিল। ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবস বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (ইআই) ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। দিবসটি উপলক্ষে ইআই প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে, যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।
বিশ্বের ১০০টি দেশে শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে থাকে। অনেক দেশে দিবসটি ভিন্ন ভিন্ন তারিখে পালিত হয়। যেমন, ভারতে শিক্ষক দিবস পালিত হয় ৫ সেপ্টেম্বর। অস্ট্রেলিয়ায় অক্টোবর মাসের শেষ শুক্রবার। শেষ শুক্রবার যদি ৩১ অক্টোবর হয়, তা হলে ৭ নভেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হয়। ভুটান শিক্ষক দিবস পালন করে ২ মে, ইন্দোনেশিয়া ২৫ নভেম্বর, মালয়েশিয়া ১৬ মে, ইরান ২ মে, ইরাক ১ মার্চ, আর্জেন্টিনা ১১ সেপ্টেম্বর, ব্রাজিল ১৫ অক্টোবর, চীন ১০ সেপ্টেম্বর, তাইওয়ান ২৮ সেপ্টেম্বর, থাইল্যান্ড ১৬ জানুয়ারি, সিঙ্গাপুর সেপ্টেম্বরের প্রথম শুক্রবার দিবসটি পালন করে। ইউনেস্কো কর্র্তৃক নির্ধারিত এ বছরের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘ÔThe teachers we need for the education we want : The global imperative to reverse the teacher shortage’। অর্থাৎ, ‘কাক্সিক্ষত শিক্ষা পেতে যেমন শিক্ষক চাই : শিক্ষক সংকট ঠেকাতে বৈশি^ক উদ্যোগ।’ প্রতিপাদ্যটি বেশ চমৎকার ও বর্তমান সময়ের সঙ্গে খুবই প্রাসঙ্গিক। কারণ আমরা যে ধরনের শিক্ষা চাই আমাদের সে ধরনের শিক্ষকই দরকার। তাই প্রথমত বুঝতে হবে যে আমরা আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মকে কী শিক্ষা দিতে চাই। শিক্ষার যথাযথ বিকাশের কাজটি শিক্ষকদেরই। আর এর জন্য শিক্ষকদের হতে হবে দক্ষ ও যোগ্য। পাশাপাশি দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকের যে ঘাটতি সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
শিক্ষাকে যদি জাতির মেরুদণ্ড ধরা হয়, তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষকরা হলেন শিক্ষার মেরুদণ্ড। কিন্তু শিক্ষকদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখা যায়। শিক্ষকরা সমস্যায় থাকলে শিক্ষার গুণগত মান এবং কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কিছু প্রস্তাবনা করা যেতে পারে। প্রথমত শিক্ষকতা পেশার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ পেশায় সামগ্রিক নিরাপত্তা না থাকার ফলে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের অনেকে আসতে চায় না এবং এভাবে চলতে থাকলে আগামীতেও আসতে চাইবে না। আমাদের এখনই সময় এসেছে, এই পেশার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শিক্ষকরা আগামীতেও যাতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে, সেই জন্য বিভিন্ন বীমা, বিশেষ ঋণ সহায়তা দিয়ে পেশার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী শিক্ষকদের বেতন সুনির্দিষ্ট করে কেন্দ্রীয়ভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শিক্ষকরা যেন বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন তা ভাবতে হবে। সময়ের সঙ্গে জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা করে তাদের বেতনের মানদণ্ড মানসম্মত করতে হবে। দেখা যায়, শিক্ষকতা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পেশা হলেও দেশের মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চান না অন্য পেশার মতো এ পেশায় সামগ্রিক নিরাপত্তা নেই বলে। অথচ মেধাবীদেরই এ পেশায় বেশি বেশি আসার কথা ছিল। এতে দেশ ও জাতি উপকৃত হতো। শিক্ষকতাকে মহান পেশা বলা হলেও কার্যত এ পেশা অনেকটা অবহেলিত। অন্য পেশার মতো এ পেশায় সামগ্রিক নিরাপত্তা নেই। এ কারণে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চান না। তাই এ পেশার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এখন সময়ের দাবি।
শিক্ষা খাত সময়ের সেরা বিনিয়োগের ক্ষেত্র। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট বা দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। ভারতের নোবেল বিজয়ী শিক্ষাবিদ কৈলাশ সত্যার্থী বলছেন, শিক্ষায় ১ ডলার বিনিয়োগ করলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে ১৫ গুণ রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। ফলে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আগ্রহ বাড়াতে হবে। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী মূল্যায়নের মাধ্যমে এই পেশায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে হবে।
শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা শিক্ষার উন্নয়নে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে পৃথিবী প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষকদেরও বদলাতে হবে প্রতিনিয়ত। এক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষকরা কতটা পিছিয়ে সেটা দেশে মহামারী করোনা আসার পর আমরা লক্ষ করেছি। একজন শিক্ষক আজই আগামী দশকের সুযোগ ও সমস্যা মোকাবিলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করছেন। ফলে শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য যুগোপযোগী ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ, সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের আত্মোন্নয়নের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষকদের গড়ে তুলতে হবে আন্তর্জাতিক মানের।
শিক্ষক সংকট ও শিক্ষকদের প্রমোশনজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেখা যায়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচুর শিক্ষক সংকট। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রমোশন যেন সোনার হরিণ। শত শত প্রধান শিক্ষকের পদ খালি পড়ে আছে। কিন্তু প্রমোশন নেই। সহকারী প্রধান শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রমোশন হলে সিনিয়র শিক্ষকদের সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদে প্রমোশন পাওয়ার সুযোগ হবে। প্রমোশন হলে কাজে গতি বাড়বে। তাছাড়া সিলেকশন গ্রেড, টাইম স্কেল, যথাসময়ে পদোন্নতি ইত্যাদির জটিলতা নিরসনেও কাজ করতে হবে। শিক্ষার প্রাথমিক স্তর হলো শিক্ষার্থীদের জীবনের ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি। এ স্তরে শিক্ষকরা যদি যোগ্য ও যথাযথ দক্ষতাসম্পন্ন হন, তাহলে শিক্ষার্থীদের ভিত্তি মজবুত হবে। জ্ঞানে-মানে একটি শক্তিশালী প্রজন্ম গড়ে উঠবে। এজন্য প্রাথমিক স্তরে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। আর শিক্ষার মান উন্নয়নে এখন এটা বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষকদের কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে। শিক্ষকতায় স্বীকৃতি খুব গুরুত্বপূর্ণ মোটিভেশন হিসেবে কাজ করে। সুতরাং, শিক্ষকদের প্রতিটি কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ইদানীং অনেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষকদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান করে থাকে। যেমন: বছর শেষে ‘সেরা শিক্ষক’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই বছর সরকারের এটুআই ও গ্রামীণফোনের উদ্যোগে ‘সংকটে নেতৃত্বে’ শিরোনামে শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান করেছে। শিক্ষকদের ক্লাসের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের থেকে মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষককে স্বীকৃতি দিতে হবে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান সবাই সফলকাম হবে।
দাবি ছিল শিক্ষক দিবসটিকে সরকারিভাবে পালন করা। অবশেষে গত বছর প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে দিবসটি ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। এর আগে এত দিন ধরে এ দিবসটি সরকারিভাবে পালিত হতো না। এখন থেকে পালিত হবে। এ বছর জাতীয় শিক্ষক দিবসের পরিবর্তে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালনেরও উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই দিবসটি এখন সরকারিভাবে পালিত হলে শিক্ষকরা অবশ্যই নিজেদের সম্মানিত বোধ করবেন, যা তাদের জন্য বড় ধরনের একটা প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। শিক্ষকতা একটি মহান ও গুরুত্বপূর্ণ পেশা। জাতি গঠনে শিক্ষকদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু সাম্প্রতিককালে শিক্ষকদের ওপর হামলা ও অপমানের ঘটনা আমাদের ব্যথিত করে। পাশাপাশি বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নৈতিক ও আদর্শিক বিচ্যুতিও আমাদের সমানভাবে ব্যথিত করে। কারণ, শিক্ষকরাই জাতি গড়ার কারিগর। তারা যদি এমন হন তাহলে আমাদের কেমন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠবে, সে প্রশ্ন না উঠে পারে না। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, শিক্ষকতা পেশার যথাযথ মূল্যায়ন ও শিক্ষকদের মানোন্নয়ন ছাড়া শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
লেখক : লেখক
ছুটির দিন নয়, এমনি একটা দিনে টাঙ্গাইলের উদ্দেশে রওনা হলাম সকাল ১০টার দিকে। ধারণা করলাম টাঙ্গাইল যেতে কমপক্ষে পাঁচ ঘণ্টা লাগবে। কারণ ঢাকা-টাঙ্গাইলের পথে পাঁচ ঘণ্টার ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। শুধু পাঁচ ঘণ্টা নয়, আট ঘণ্টার অভিজ্ঞতাও আছে। কিন্তু যে জায়গাটা খুবই জটিলতাপূর্ণ সেই গাবতলী গিয়ে দেখলাম রাস্তা ফাঁকা আর কয়েকটি সাইনবোর্ড যেখানে লেখা ‘দাঁড়ালেই দণ্ড’। খুবই নির্বিঘ্নে আমিন বাজার সেতু পার হয়ে গেলাম। ভাবলাম এর পরের জায়গাটা হচ্ছে সাভার বাসস্ট্যান্ড। ওখানে ঘণ্টাখানেক লাগবেই। কিন্তু রহস্যজনকভাবে দেখলাম সেখানেও একই সাইনবোর্ড ‘দাঁড়ালেই দণ্ড’ এবং রাস্তা ফাঁকা। গেলাম নবীনগর সেখানেও একই অবস্থা, রাস্তা ফাঁকা। গাড়ি চলছে কোথাও কোনো বাধা নেই। তিন ঘণ্টার মাথায় আমি টাঙ্গাইলের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালাম। কী করে সম্ভব হলো! হঠাৎ মনে পড়ল এ হচ্ছে সদ্য নির্বাচিত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র বন্ধুবর আনিসুল হক এবং প্রিয়ভাজন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের পদক্ষেপ।
এরপর ঈদের ছুটিতে টাঙ্গাইল যেতে খুব কষ্টভোগ করেছি। কিন্তু একবার ড্রাইভার জানাল, স্যার কালকে টাঙ্গাইল যেতে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কোনো ম্যাজিক হচ্ছে কি? ড্রাইভার বলল, হ্যাঁ, হচ্ছে। কালকে স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বসবেন এবং তিনি সারা দেশের ট্রাফিক সিস্টেমের পরিস্থিতি দেখবেন। সত্যিকারের ম্যাজিক ঘটে গেল। ঈদের আগের দিন আড়াই ঘণ্টার মধ্যে মায়ের কাছে পৌঁছে গেলাম। এই ঘটনাগুলোতে কি মনে হয়? আমরা পারি। শুধু প্রয়োজন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটু হাল ধরা। কখনো হাল ধরেন মেয়র আনিসুল হক, কখনো জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান। কখনো বড় ধরনের সংকটে হাল ধরেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যথায় যা হওয়ার তাই হচ্ছে। কিন্তু সমগ্র ব্যবস্থাটাকে একটা নিয়ন্ত্রণে আনা কি সম্ভব নয়? প্রযুক্তির এই অভাবনীয় উন্নতির ফলে এটা তো কোনো বিষয়ই নয়। কেমন করে বিষয় নয় তাও জানি।
প্রাচ্যদেশীয় লোকগুলো বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মানুষ আইন মানতে চায় না। আইনের ব্যাপারে তাদের এক ধরনের ক্ষোভ আছে। কেন আইন মানব? এই জন্যই লাখ লাখ মামলার স্তূপ জমে ওঠে আদালতগুলোতে। আজ থেকে ষাট-সত্তর বছর আগে জেলা শহরগুলোতে আদালতের সংখ্যা ছিল খুবই সীমিত। এখন সেখানে ছয়তলা থেকে আটতলা পর্যন্ত ভবনে বিভিন্ন আদালত গড়ে তোলা হয়েছে। একটি জেলা শহরেও অনেক বিচারক রাখতে হচ্ছে এবং ছয় সাত এমনকি আটতলা ভবন নির্মাণ করতে হচ্ছে শুধু আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য। দেশের স্বাধীনতা কি শুধু আদালত নির্মাণের কাজ করবে না কি মানুষে মানুষে সংঘাত কমিয়ে রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘনকারীর সংখ্যা কমিয়ে নিয়ে আসবে?
আমার মনে পড়ে ছোটবেলায় দেখতাম একটা লোক ছোট্ট একটা গাড়ি চালিয়ে চলাচল করত। পাঁচ-ছয় গজ দূরের একটা জায়গায় যেতেন। একটু বড় হয়ে জেনেছি তিনি জেলার মুন্সেফ। বাসা থেকে আদালতে যান। তার চেহারা কখনো দেখিনি। কিন্তু একটা ছোট্ট এলাকায় তিনি এসব আইন আদালতের বিচার করেন। আর বাকিটা করেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। সেটাও খুব বড় কিছু নয়।
সম্প্রতি ব্যাংকের একজন ডিজিএমের স্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের একজন অফিসারের দ্বন্দ্ব হয়েছে। কারণ উনি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে গাড়ি পার্ক করেছিলেন। কিন্তু ডিজিএমের স্ত্রী বলছেন তিনি আইন ভঙ্গ করেননি। তার নামতে যতটুকু সময় লেগেছে ততটুকু সময়ই তিনি নিয়েছেন। এসব ব্যাপারে অনেক বাহাস হতে পারে, কে ভুল আর কে ঠিক? কিন্তু ট্রাফিক আইন তো মানতে হবে। যেখানে ট্রাফিক আইন সম্পূর্ণভাবে যন্ত্র বিবর্জিত আধুনিককালে সমস্ত ব্যবস্থা উপেক্ষিত, যে শহরে সবুজ, হলুদ এবং লালবাতির সংকেত জ¦লে না সেই শহরে ট্রাফিক আইন কী করে বাস্তবায়ন করা যায়? অধিকাংশ সময়ে হস্ত নির্দেশিত ট্রাফিক সিগন্যাল দেখা যায় অথবা নির্দেশকারী একেবারেই তার অভিজ্ঞতাপ্রসূত ট্রাফিক সিগন্যাল দিয়ে যাচ্ছেন। তখন তা মেনে চলাও কি নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে? এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঢাকাবাসী এই যে আদিম অবস্থার মধ্যে পড়ে আছে তার জন্য তাদের কোনো আক্ষেপ নেই?
স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একটি আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, যেটা ছিল আমাদের একটা আদর্শ ব্যবস্থা। সেই ব্যবস্থাকে কেমন করে ধ্বংস করা হলো তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। স্কুলের ওই শিশুরা মন্ত্রীদের, পুলিশ অফিসারদের হাঁটতে বাধ্য করেছিল। তারা ওই ব্যবস্থাকে কিন্তু মেনেও নিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে বিষয়টি রাজনৈতিক হয়ে দাঁড়ায়।
দেশের রাজনীতিবিদদের কি করে বোঝাব সব কিছু রাজনৈতিক করবেন না! সব কিছুকে রাজনৈতিক করতে গেলে অনেক বড় বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। দয়া করে শিক্ষাকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। দুর্নীতিকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। শিক্ষাকে রাজনীতি করতে গেলে কীভাবে দুর্নীতি এসে যায় সেটা আপনারা জানেন। তদবিরে নিয়োগ বাণিজ্যের লাখ লাখ টাকায় শুধু কিছু অশিক্ষিত লোকরা চাকরি পেয়ে যায়। চাকরি পেয়ে তারা শিশুদের মননকে যে কীভাবে ধ্বংস করে দেয় তা রাজনীতিকরা একটিবারও ভাবেন না।
ঢাকা শহরের নাগরিকরা ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে তেমন কিছু বলেন না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়েও কিছু বলেন না। প্রথমটায় বলেন না তার কারণ রিকশায় চড়তে তারা খুবই আনন্দ পান এবং অনেক শিক্ষিত লোককে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে রিকশায় করে রাস্তার রংসাইড দিয়ে ঢুকে পড়েন তারা রিকশাচালককে মানা তো করেনই না, অনেক সময় উৎসাহ এমনকি রংসাইডে ঢুকে পড়ার পরামর্শও দেন। আমি এই প্রসঙ্গে তেমন বেশি কিছু বলতে চাই না। কারণ শহরগুলোতে গণপরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক দূর হেঁটে এসে তারা যে গণপরিবহনে চড়ার একটা সুবন্দোবস্ত পাবেন, সেই ব্যবস্থা আমরা রাখতে পারিনি। পৃথিবীর প্রতিটি বড় বড় শহরে নাগরিকদের অনেক পথ হাঁটতে হয়। কারণ তারা গণপরিবহনে উঠবেন হেঁটেই, কাজেই তাদের স্বাস্থ্যও অত্যন্ত ভালো থাকে। এ দেশেও হয়তো রিকশা বন্ধ করে দিলে মধ্যবিত্তদের একটা আন্দোলনও শুরু হয়ে যাবে। যার নাম হবে অলস বাঙালিদের আন্দোলন।
কিন্তু আবার এও দেখেছি, উত্তরা বা মিরপুরের নাগরিকরা খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে ট্রেনে উঠছেন। কিন্তু ধানম-িবাসীর কী হবে? এখানে তো গণপরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই, একমাত্র বাসই ভরসা। মালিবাগ চৌধুরী পাড়ায় একই ব্যবস্থা। তাদের জন্যও কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এসব সমস্যা মিলে রাষ্ট্রের বায়ান্ন বছর হয়ে গেল, কোনো সুশৃঙ্খল আধুনিক গণপরিবহনের ব্যবস্থা হলো না। অতএব যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে আমাদের নগরগুলোতে সামান্য বৃষ্টি হলে ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় পানি জমে যায়। সেখানে তখন মানুষ মারা পড়বে এক্ষেত্রে রাষ্ট্র এটার কোনো দায়দায়িত্বও নেবে না? দুটি সিটি করপোরেশন নিবিড় ঘুমে রাত্রিযাপন করবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলে একটি মন্ত্রণালয় আছে। তারা বৃষ্টিতে ঘুম উপভোগ করবে আর মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বিপদসঙ্কুল সময় অতিক্রম করবে। এসব সমস্যা দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসছে। কিন্তু এর যে সমাধান সম্ভব তা কিন্তু অনেকেই জানেন না। আনিসুল হক জানতেন। ঢাকার বর্তমান মেট্রোপলিটন কমিশনার হাবিবুর রহমান জানেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও জানেন। জানেন অনেক নাগরিক। কিন্তু সমস্যা সমাধানের সুযোগ অত্যন্ত কম। তাদের ক্ষমতা যদি বাড়ানো যায় তাহলে অনেক কিছু ঘটানো সম্ভব। সেই দিকটায় আমরা কি যেতে পারি? লেখক: নাট্যকার, অভিনেতা ও কলামিস্ট
‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ২০২০ সালে অনুমোদন করিয়ে নিয়েছিলেন সংসদ সদস্যরা (এমপি)। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় তালিকা অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা তাদের চাহিদার পরিবর্তন আনেন। তারা ইউনিয়ন পর্যায়ে রাস্তা না করে সেতু তৈরির ওপর জোর দেন। কিছু ক্ষেত্রে খাতভিত্তিক ব্যয় না চেয়ে থোক বরাদ্দও চাওয়া হয়েছিল। চাহিদার জটিলতায় ধীরগতিতে চলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন। ঠিক সময়ে প্রকল্পটি শেষ করতে না পারার শঙ্কায় ফের সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
যদিও একই রকম আরেকটি প্রকল্পের কাজ তখনো চলমান ছিল। চলমান একটি প্রকল্প শেষ না হতেই সংসদ সদস্যদের জন্য আরেকটি প্রকল্প নিয়ে তখন বেশ আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছিল।
প্রকল্প-৩-এর মেয়াদ আছে আর এক বছর। অথচ কাজ চলছে ঢিমেতালে। নির্বাচনের আগে তাদের চাহিদার পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৬ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের পর ধীরে ধীরে এগোতে থাকে। এর বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। গত আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি ৪১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
এ প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে প্রত্যেক সংসদ সদস্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলেন। সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট নির্মাণে বছরে পাঁচ কোটি টাকা করে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়।
প্রতি বছর পাঁচ কোটি করে চার বছরে এ অর্থে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা তাদের। সিটি করপোরেশন এলাকার ২০ সংসদ সদস্য এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যরা এ বরাদ্দের বাইরে রয়েছেন।
নিজ এলাকার উন্নয়নে এমন সুযোগ পেলেও সংসদ সদস্যরা কাজে লাগাতে পারেননি। প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় শেষ। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়ন অর্ধেকেরও কম হয়েছে। অধিকাংশ সংসদ সদস্যই তাদের প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেননি। কিন্তু তারা বলছেন, যে চাহিদা তারা দিয়েছিলেন তার অধিকাংশ পেয়েছেন।
জানতে চাইলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার আসনে যেসব চাহিদা দিয়েছিলাম সবগুলোই পেয়েছি। কিন্তু এ মুহূর্তে এসে বাস্তবায়নের অগ্রগতি ৪১ শতাংশ বলা হচ্ছে, এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। পরিকল্পনা কমিশনে কীসের ভিত্তিতে এই সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা জানি না।’
সংসদ সদস্যরা যে চাহিদা পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন সে বিষয়ে ইনু বলেন, ‘কোনো এমপি চাহিদা পরিবর্তন করার কথা নয়। আমার এলাকায় যা চেয়েছি তাই তো পুরোটা তারা দিতে পারেননি। প্রতি বছর পাঁচ কোটির বরাদ্দ, তার বাইরে তো তারা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না।’ পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা (পিইসি) অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রুহুল আমিন খানের কাছে সংশোধনের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সেখানে তিনি বলেন, এ প্রকল্পে জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ইতিমধ্যে বেশ কিছু সড়ক ও সেতু-কালভার্ট নতুনভাবে নির্মাণের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত স্কিমগুলোর গুরুত্ব বিবেচনায় বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। স্কিমগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পে অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন।
পিইসি সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, এ বিষয়ে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, যেসব স্কিম অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর যৌক্তিকতাসহ সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে, নতুনভাবে গৃহীত স্কিমগুলো বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ ৫০ কোটি টাকার কম করতে হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তৃতীয় দফার এ প্রকল্পের আওতায় নতুন করে উপজেলা সড়ক নির্মাণ করা হবে ৩০৫ দশমিক ২১ কিলোমিটার। ইউনিয়ন সড়ক নির্মাণ করা হবে ৬৬০ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার। গ্রাম সড়ক উন্নয়ন হবে ৫ হাজার ৭৫ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার। গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ হবে ১ হাজার ৯০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার। গ্রামীণ সড়কে ১০০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যরে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করা হবে ৭ হাজার ৯৯২ দশমিক ২২ মিটার।
এসব প্রস্তাব সংসদ সদস্যদের চাহিদার ভিত্তিতেই করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়নের সময় ফের বাদ সাধেন তারাই। পরে মূল প্রকল্প প্রস্তাব থেকে প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধনে ১৯৩ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ৮৩ দশমিক ৯১ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক, ৫০৫ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম বাদ দেওয়ার আবদার করেছেন তারা। এর বিপরীতে ৩৯২ দশমিক শূন্য ১ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক ও ২ হাজার ৬৭৪ দশমিক ৫১ মিটার সেতু-কালভার্টের প্রস্তাব এসেছে তাদের কাছ থেকে। সে অনুযায়ী সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রুহুল আমিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি এ রাস্তাটি আজকে করব, কিন্তু দেখা গেল অন্য কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে এ রাস্তাটি হয়ে গেছে। এমপিরা যেভাবে ডিও দেন প্রকল্পটি সেভাবে চলে, আমাদের ফ্রেমওয়ার্কটিই সেভাবে তৈরি করা।’
এ মুহূর্তে প্রকল্পটি সংশোধনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে পরিবেশের জন্য ড্রেনেজ সুবিধা রাখতে হবে। একটি রাস্তা করতে গিয়ে দেখা গেল, একটি কালভার্ট বা সেতুর প্রয়োজন হয়েছে। এটি এখন প্রথম প্রায়োরিটি (অগ্রাধিকার)। এটি প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন হিসেবে কাজ করছে।’
বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণ হিসেবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘যখন প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছিল তখন করোনা মহামারী ছিল। করোনার কারণে প্রকল্পটির কাজ দেরিতে শুরু হয়েছিল, যার ফলে এ মুহূর্তে বাস্তবায়ন অগ্রগতি এ পর্যায়ে এসেছে।
পিইসি সভায় সংশোধনের কারণ জানতে চাওয়া হলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ১১তম জাতীয় সংসদ সদস্যদের প্রাথমিক চাহিদাপত্র (ডিও) গ্রহণ করে স্কিমের তালিকা প্রণয়ন করা হয়। তবে বাস্তবায়ন পর্যায়ে বিশেষ পরিস্থিতি ও অগ্রাধিকার ক্রমপরিবর্তনের ফলে আরডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত স্কিম তালিকা পরিবর্তন করে ডিওর মাধ্যমে সংশোধিত নতুন স্কিম তালিকা করা হয়েছে। পরিবর্তিত স্কিম তালিকা অনুযায়ী গ্রাম সড়ক ও সেতু-কালভার্টের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উপজেলা-ইউনিয়ন সড়কের পরিমাণ কমেছে।
এ প্রকল্পের তথ্য-বিশ্লেষণে দেখা যায়, এতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৭৫ কিলোমিটারের গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নের জন্য। এতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ হাজার ৬০ কোটি টাকা। ৬৬০ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫২৮ কোটি টাকা, ৩০৫ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক উন্নয়নের জন্য ২৯০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। তা ছাড়া ১ হাজার ৯০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক সংরক্ষণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৮১ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, এর আগে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠনের পর প্রত্যেক সংসদ সদস্য নিজ আসনের অবকাঠামো উন্নয়নে ১৫ কোটি টাকা করে পেয়েছিলেন। সে সময় প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৮৯২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এটি ২০১০ সালের মার্চ থেকে ২০১৬ সালের জুনে শেষ হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্যদের ২০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ পর্যায়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৬ হাজার ৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়ন হয়েছে। এ প্রকল্পটি শেষ না করেই তৃতীয় মেয়াদে আবার ২০ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়। এই উদ্যোগের কারণে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় প্রশ্নের মুখে পড়ে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ প্রকল্পের আওতায় সংসদ সদস্যরা সরাসরি টাকা পাবেন না। তারা শুধু তাদের নির্বাচনী আসনে পছন্দ মোতাবেক প্রকল্পের নাম দেবেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আবার সরকারকে বলব, রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার পরিণতি ভালো হয় না। যত দ্রুত সম্ভব খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিন। নাগরিক হিসেবে তাকে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া হোক। তা না হলে একজন গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় প্রবীণ নাগরিকের প্রতি বেআইনি, অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণের জন্য সরকারই দায়ী থাকবে।’
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, ‘সুচিকিৎসা পাওয়া নাগরিকের মৌলিক অধিকার। বেগম জিয়া দেশের একজন সিনিয়র সিটিজেন। সংবিধান তার বেঁচে থাকার জন্য চিকিৎসা গ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করেছে। যে রোগের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়, সামর্থ্য অনুযায়ী দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধা দেওয়া সংবিধানকে অবজ্ঞা করা। দেশনেত্রীকে চিকিৎসা-সুরক্ষার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, যা অন্যায়। এটা অমানবিক। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আইনের দোহাই দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত রাখার সুযোগ নেই। সরকার হীন উদ্দেশ্যে আইনের দোহাই দিয়ে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
চেয়ারপারসনের চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনার (খালেদা জিয়া) যারা চিকিৎসা করছেন এটা তাদের বিষয়। চিকিৎসকরা তার বেস্ট ট্রিটমেন্ট করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। আমরা তো জোর করে তাকে নিয়ে যেতে পারব না বিদেশে। আমাদের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। আমরা যা আছে সে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করে যাব। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন হবে এবং খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে।’
ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খন্ডন করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সত্য হলো, জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দন্ডপ্রাপ্ত আসামি তৎকালীন জাসদের সাধারণ সম্পাদক আ স ম আবদুর রবকে চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। একইভাবে ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমকে ১/১১’র সরকার ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এ রকম দৃষ্টান্ত আরও আছে। শেখ হাসিনাও এমন সুযোগ (বিদেশে চিকিৎসা) নিয়েছেন ২০০৮ সালে। জরুরি আইনের সরকারের সময়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বেশ কয়েকটি চাঁদাবাজির মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। ওই অবস্থায় নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হলে তিনি দুই/তিনদিনের মধ্যে বিদেশে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। তিনি বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছিলেন একজন ওয়ারেন্টি আসামি হিসেবে; প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথও নিয়েছিলেন। সুতরাং আইনের দোহাই দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই।’
আপনারা এ অবস্থায় কি গণতান্ত্রিক পথে হাঁটবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের বাইরে যেতে পারি না। এরপরও যদি কেউ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দেয় সে বাধাও আমরা গণতান্ত্রিকভাবে অতিক্রম করব। তার (শেখ হাসিনা) বক্তব্য তো আপনারা শুনেছেন। উনি তো বিদেশে যেতে দেবেন না বলেছেন। তারপরও আমরা আপিল করছি শুভবুদ্ধির কাছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়ার) পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শর্তসাপেক্ষে উনি বিদেশে যাবেন না।’
খালেদা জিয়াকে অসুস্থ অবস্থায় রেখে নির্বাচনে যাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না। বেগম জিয়াকে এ অবস্থায় রেখে, হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। আমাদের পরিষ্কার কথা।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।
দুর্গাপূজার আগে পরে সরকারকে আলটিমেটাম দেবে বিএনপি : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একদফার আন্দোলনের শেষ ধাপে সরকারকে আলটিমেটাম দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুগপৎ আন্দোলনে নেতৃত্বে থাকা দল বিএনপি। সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান দুর্গাপূজার আগে বা পরে এই আলটিমেটাম ঘোষণার সিদ্ধান্ত থাকলেও পূজার কয়েকদিন কর্মসূচি রাখবে না দলটি। এর আগে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় বিএনপির রোডমার্চ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে বিএনপি। সেটি না হলে প্রথম ধাপের কর্মসূচি শেষে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে আলটিমেটাম দেওয়ার আগে চূড়ান্ত ধাপের আংশিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এর আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে যুগপতের শরিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করা হবে। তাদের দেওয়া বিভিন্ন প্রস্তাবনা সমন্বয় করে আন্দোলন পরিকল্পনা প্রণয়ন চূড়ান্ত হবে। গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে ওই সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অংশ নেন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা একদফার আন্দোলনে রয়েছি। প্রতিদিনই আমাদের কর্মসূচি থাকছে। নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা সরকারকে আর সময় দিতে চাই না। এবারের কর্মসূচি হবে রাজধানীকেন্দ্রিক। এই কর্মসূচির মধ্য দিয়েই সরকার পতন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে।’
বৈঠক সূত্রগুলো বলছে, প্রথম ধাপের কর্মসূচি শেষে ৭ অক্টোবর থেকে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি শুরু হতে পারে। এর এক পর্যায়ে ১৮ অক্টোবরের দিকে সরকারকে পদত্যাগে আলটিমেটাম ঘোষণা করা হতে পারে। এর আগ পর্যন্ত রাজধানীর পাশাপাশি বাইরেও কিছু কর্মসূচি হবে। তবে আলটিমেটামের পর সব কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। তখন সারা দেশের নেতাকর্মীদের রাজধানীর কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার নির্দেশনা দেবে বিএনপি।
জানা গেছে, চলতি অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে একদফার যুগপৎ আন্দোলন বেগবান করার আগে যুব ও ছাত্র কনভেনশন করবে বিএনপি। ছাত্র কনভেনশনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনের বটতলায় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য গত ২৯ সেপ্টেম্বর ১৫টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য’র আত্মপ্রকাশ হয়েছে। একদফার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পৃক্ত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দলটির নেতারা মনে করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে পারলে চূড়ান্ত সফলতা আরও সহজ হবে। এছাড়াও যুব কনভেনশন সফল করতে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠনের সমন্বয়ে শিগগির ‘যুব ঐক্যজোট’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
বৈঠক সূত্র আরও জানায়, ১৮ অক্টোবরের আগেই পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) বরাবর স্মারকলিপি দিতে পারে বিএনপি। স্মারকলিপিতে পুলিশকে চলমান হামলা-মামলা-গ্রেপ্তার বন্ধ এবং ইসিকে সম্ভাব্য একতরফা নির্বাচনের উদ্যোগ না নেওয়ার আহ্বান জানানো হবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা করতে পারেন, সেজন্য আগামী ২০ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত পূজা চলাকালীন বড় কোনো কর্মসূচি রাখবে না যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো।
সূত্রগুলো বলছে, সরকার আলটিমেটাম মেনে পদত্যাগ না করলে, দুর্গাপূজার পরে ঘেরাও কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে আলটিমেটামের কর্মসূচি শুরু হবে। এই আন্দোলনের শুরুতেই সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এরপর পর্যায়ক্রমে গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ঘেরাওসহ টানা অবস্থান কর্মসূচিতে যেতে পারে তারা। পাশাপাশি রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের মতো কর্মসূচিও আসতে পারে। একেবারে বাধ্য না হলে হরতালের মতো কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি।
থাইগ্লাস আর লাল ইটে চকচক করছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতাল ভবন। কার্যক্রম পরিচালনায় রুটিন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের। অথচ ভবনটির ভেতরে চিকিৎসা-সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির অস্তিত্ব নেই। নেই চেয়ার-টেবিল ও অন্যান্য আসবাব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৬ সালে ৫ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করে একটি ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালের অনুমোদন দেওয়া হয়। ঢাকাবাসীর গৃহপালিত বিভিন্ন পশুপাখির চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে হাতে-কলমে এ বিষয়ে ধারণা পান, সে উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়।
নানা জটিলতা পেরিয়ে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন আর ২০২৩ সালের মে মাসে ঘটা করে উদ্বোধন করা হয় হাসপাতালটির। এতে দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হলো বলে দাবি করা হয়। উদ্বোধনের পর প্রায় ৫ মাস পার হয়ে গেছে; হাসপাতালে চিকিৎসার যন্ত্রপাতি নেই।
সরজমিনে দেখা গেছে, তিনতলাবিশিষ্ট ভবনের কোনো রুমেই চিকিৎসার যন্ত্রপাতি বলতে গেলে নেই; চেয়ার-টেবিল বা অন্যান্য আসবাবও নেই। নিচতলায় গেটের সামনে প্যাকেট করা কিছু চেয়ারের পাশে বসে আছেন গার্ড। প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো স্যার (ডাক্তার) বসেন না। কেউ সেবা নিতে এলে স্যারদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করিয়ে দিই। স্যারেরা তাদের শেখ কামাল ভবনে নিয়ে সেবা দেন।’
হাসপাতালে সেবার ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীরা যেমন ব্যবহারিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নগরবাসীও। সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, তাহলে কী কাজে লাগছে ৫ কোটি টাকার এ ভবন?
সংশ্লিষ্ট অনুষদের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১২ সাল থেকে অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে একটি প্রাণী হাসপাতালের দাবি করা হচ্ছে। বরাদ্দ হলেও অজানা কারণে এগোয় না কাজ। এক যুগের বেশি সময় পর স্থাপনা হলেও কোনো সরঞ্জাম সেখানে নেই। এভাবেই চলবে; এই হাসপাতাল কখনো কর্মচঞ্চল হবে না। কারণ এই অনুষদের বেশিরভাগ শিক্ষক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো না কোনো বেসরকারি পশুক্লিনিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তারা চান না হাসপাতালটি জনপ্রিয় হোক।
হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কে বি এম সাইফুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগের যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে যাওয়ায় আমাদের এ হাসপাতালে যন্ত্রপাতি নেই। বিভাগের যন্ত্রপাতি দিয়ে কোনোমতে কাজ চালাচ্ছি। নতুন যন্ত্রপাতি, আসবাব আর লোকবল পেলে হাসপাতাল পুরোদমে চালু হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের কোনো ক্লিনিকে কাজ করা বাধা হবে না।’
যন্ত্রপাতি কেনার বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. মোমেনুল আহসানের সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসে শিক্ষকদের অবস্থা নিয়ে আন্তঃসরকার সম্মেলন হয়েছিল। সেখানেই শিক্ষকদের কথা চিন্তা করে ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন (আইএলও) কিছু পরামর্শে স্বাক্ষর করে। এতে শিক্ষকদের অধিকার, দায়িত্ব এবং বিশ্বব্যাপী শিক্ষকতা পেশার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ছিল। ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবস বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (ইআই) ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। দিবসটি উপলক্ষে ইআই প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে, যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।
বিশ্বের ১০০টি দেশে শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে থাকে। অনেক দেশে দিবসটি ভিন্ন ভিন্ন তারিখে পালিত হয়। যেমন, ভারতে শিক্ষক দিবস পালিত হয় ৫ সেপ্টেম্বর। অস্ট্রেলিয়ায় অক্টোবর মাসের শেষ শুক্রবার। শেষ শুক্রবার যদি ৩১ অক্টোবর হয়, তা হলে ৭ নভেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হয়। ভুটান শিক্ষক দিবস পালন করে ২ মে, ইন্দোনেশিয়া ২৫ নভেম্বর, মালয়েশিয়া ১৬ মে, ইরান ২ মে, ইরাক ১ মার্চ, আর্জেন্টিনা ১১ সেপ্টেম্বর, ব্রাজিল ১৫ অক্টোবর, চীন ১০ সেপ্টেম্বর, তাইওয়ান ২৮ সেপ্টেম্বর, থাইল্যান্ড ১৬ জানুয়ারি, সিঙ্গাপুর সেপ্টেম্বরের প্রথম শুক্রবার দিবসটি পালন করে। ইউনেস্কো কর্র্তৃক নির্ধারিত এ বছরের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘ÔThe teachers we need for the education we want : The global imperative to reverse the teacher shortage’। অর্থাৎ, ‘কাক্সিক্ষত শিক্ষা পেতে যেমন শিক্ষক চাই : শিক্ষক সংকট ঠেকাতে বৈশি^ক উদ্যোগ।’ প্রতিপাদ্যটি বেশ চমৎকার ও বর্তমান সময়ের সঙ্গে খুবই প্রাসঙ্গিক। কারণ আমরা যে ধরনের শিক্ষা চাই আমাদের সে ধরনের শিক্ষকই দরকার। তাই প্রথমত বুঝতে হবে যে আমরা আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মকে কী শিক্ষা দিতে চাই। শিক্ষার যথাযথ বিকাশের কাজটি শিক্ষকদেরই। আর এর জন্য শিক্ষকদের হতে হবে দক্ষ ও যোগ্য। পাশাপাশি দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকের যে ঘাটতি সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
শিক্ষাকে যদি জাতির মেরুদণ্ড ধরা হয়, তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষকরা হলেন শিক্ষার মেরুদণ্ড। কিন্তু শিক্ষকদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে দেখা যায়। শিক্ষকরা সমস্যায় থাকলে শিক্ষার গুণগত মান এবং কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কিছু প্রস্তাবনা করা যেতে পারে। প্রথমত শিক্ষকতা পেশার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ পেশায় সামগ্রিক নিরাপত্তা না থাকার ফলে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের অনেকে আসতে চায় না এবং এভাবে চলতে থাকলে আগামীতেও আসতে চাইবে না। আমাদের এখনই সময় এসেছে, এই পেশার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শিক্ষকরা আগামীতেও যাতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে, সেই জন্য বিভিন্ন বীমা, বিশেষ ঋণ সহায়তা দিয়ে পেশার সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী শিক্ষকদের বেতন সুনির্দিষ্ট করে কেন্দ্রীয়ভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শিক্ষকরা যেন বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন তা ভাবতে হবে। সময়ের সঙ্গে জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা করে তাদের বেতনের মানদণ্ড মানসম্মত করতে হবে। দেখা যায়, শিক্ষকতা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পেশা হলেও দেশের মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চান না অন্য পেশার মতো এ পেশায় সামগ্রিক নিরাপত্তা নেই বলে। অথচ মেধাবীদেরই এ পেশায় বেশি বেশি আসার কথা ছিল। এতে দেশ ও জাতি উপকৃত হতো। শিক্ষকতাকে মহান পেশা বলা হলেও কার্যত এ পেশা অনেকটা অবহেলিত। অন্য পেশার মতো এ পেশায় সামগ্রিক নিরাপত্তা নেই। এ কারণে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চান না। তাই এ পেশার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত এখন সময়ের দাবি।
শিক্ষা খাত সময়ের সেরা বিনিয়োগের ক্ষেত্র। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট বা দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। ভারতের নোবেল বিজয়ী শিক্ষাবিদ কৈলাশ সত্যার্থী বলছেন, শিক্ষায় ১ ডলার বিনিয়োগ করলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে ১৫ গুণ রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। ফলে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আগ্রহ বাড়াতে হবে। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী মূল্যায়নের মাধ্যমে এই পেশায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে হবে।
শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা শিক্ষার উন্নয়নে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে পৃথিবী প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষকদেরও বদলাতে হবে প্রতিনিয়ত। এক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষকরা কতটা পিছিয়ে সেটা দেশে মহামারী করোনা আসার পর আমরা লক্ষ করেছি। একজন শিক্ষক আজই আগামী দশকের সুযোগ ও সমস্যা মোকাবিলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করছেন। ফলে শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য যুগোপযোগী ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ, সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের আত্মোন্নয়নের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষকদের গড়ে তুলতে হবে আন্তর্জাতিক মানের।
শিক্ষক সংকট ও শিক্ষকদের প্রমোশনজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেখা যায়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচুর শিক্ষক সংকট। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রমোশন যেন সোনার হরিণ। শত শত প্রধান শিক্ষকের পদ খালি পড়ে আছে। কিন্তু প্রমোশন নেই। সহকারী প্রধান শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রমোশন হলে সিনিয়র শিক্ষকদের সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদে প্রমোশন পাওয়ার সুযোগ হবে। প্রমোশন হলে কাজে গতি বাড়বে। তাছাড়া সিলেকশন গ্রেড, টাইম স্কেল, যথাসময়ে পদোন্নতি ইত্যাদির জটিলতা নিরসনেও কাজ করতে হবে। শিক্ষার প্রাথমিক স্তর হলো শিক্ষার্থীদের জীবনের ফাউন্ডেশন বা ভিত্তি। এ স্তরে শিক্ষকরা যদি যোগ্য ও যথাযথ দক্ষতাসম্পন্ন হন, তাহলে শিক্ষার্থীদের ভিত্তি মজবুত হবে। জ্ঞানে-মানে একটি শক্তিশালী প্রজন্ম গড়ে উঠবে। এজন্য প্রাথমিক স্তরে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। আর শিক্ষার মান উন্নয়নে এখন এটা বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষকদের কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে। শিক্ষকতায় স্বীকৃতি খুব গুরুত্বপূর্ণ মোটিভেশন হিসেবে কাজ করে। সুতরাং, শিক্ষকদের প্রতিটি কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ইদানীং অনেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষকদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান করে থাকে। যেমন: বছর শেষে ‘সেরা শিক্ষক’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই বছর সরকারের এটুআই ও গ্রামীণফোনের উদ্যোগে ‘সংকটে নেতৃত্বে’ শিরোনামে শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান করেছে। শিক্ষকদের ক্লাসের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের থেকে মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষককে স্বীকৃতি দিতে হবে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান সবাই সফলকাম হবে।
দাবি ছিল শিক্ষক দিবসটিকে সরকারিভাবে পালন করা। অবশেষে গত বছর প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে দিবসটি ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। এর আগে এত দিন ধরে এ দিবসটি সরকারিভাবে পালিত হতো না। এখন থেকে পালিত হবে। এ বছর জাতীয় শিক্ষক দিবসের পরিবর্তে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালনেরও উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই দিবসটি এখন সরকারিভাবে পালিত হলে শিক্ষকরা অবশ্যই নিজেদের সম্মানিত বোধ করবেন, যা তাদের জন্য বড় ধরনের একটা প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। শিক্ষকতা একটি মহান ও গুরুত্বপূর্ণ পেশা। জাতি গঠনে শিক্ষকদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু সাম্প্রতিককালে শিক্ষকদের ওপর হামলা ও অপমানের ঘটনা আমাদের ব্যথিত করে। পাশাপাশি বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নৈতিক ও আদর্শিক বিচ্যুতিও আমাদের সমানভাবে ব্যথিত করে। কারণ, শিক্ষকরাই জাতি গড়ার কারিগর। তারা যদি এমন হন তাহলে আমাদের কেমন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠবে, সে প্রশ্ন না উঠে পারে না। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, শিক্ষকতা পেশার যথাযথ মূল্যায়ন ও শিক্ষকদের মানোন্নয়ন ছাড়া শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
লেখক : লেখক
ছুটির দিন নয়, এমনি একটা দিনে টাঙ্গাইলের উদ্দেশে রওনা হলাম সকাল ১০টার দিকে। ধারণা করলাম টাঙ্গাইল যেতে কমপক্ষে পাঁচ ঘণ্টা লাগবে। কারণ ঢাকা-টাঙ্গাইলের পথে পাঁচ ঘণ্টার ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। শুধু পাঁচ ঘণ্টা নয়, আট ঘণ্টার অভিজ্ঞতাও আছে। কিন্তু যে জায়গাটা খুবই জটিলতাপূর্ণ সেই গাবতলী গিয়ে দেখলাম রাস্তা ফাঁকা আর কয়েকটি সাইনবোর্ড যেখানে লেখা ‘দাঁড়ালেই দণ্ড’। খুবই নির্বিঘ্নে আমিন বাজার সেতু পার হয়ে গেলাম। ভাবলাম এর পরের জায়গাটা হচ্ছে সাভার বাসস্ট্যান্ড। ওখানে ঘণ্টাখানেক লাগবেই। কিন্তু রহস্যজনকভাবে দেখলাম সেখানেও একই সাইনবোর্ড ‘দাঁড়ালেই দণ্ড’ এবং রাস্তা ফাঁকা। গেলাম নবীনগর সেখানেও একই অবস্থা, রাস্তা ফাঁকা। গাড়ি চলছে কোথাও কোনো বাধা নেই। তিন ঘণ্টার মাথায় আমি টাঙ্গাইলের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালাম। কী করে সম্ভব হলো! হঠাৎ মনে পড়ল এ হচ্ছে সদ্য নির্বাচিত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র বন্ধুবর আনিসুল হক এবং প্রিয়ভাজন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের পদক্ষেপ।
এরপর ঈদের ছুটিতে টাঙ্গাইল যেতে খুব কষ্টভোগ করেছি। কিন্তু একবার ড্রাইভার জানাল, স্যার কালকে টাঙ্গাইল যেতে আমাদের কোনো অসুবিধা হবে না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কোনো ম্যাজিক হচ্ছে কি? ড্রাইভার বলল, হ্যাঁ, হচ্ছে। কালকে স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বসবেন এবং তিনি সারা দেশের ট্রাফিক সিস্টেমের পরিস্থিতি দেখবেন। সত্যিকারের ম্যাজিক ঘটে গেল। ঈদের আগের দিন আড়াই ঘণ্টার মধ্যে মায়ের কাছে পৌঁছে গেলাম। এই ঘটনাগুলোতে কি মনে হয়? আমরা পারি। শুধু প্রয়োজন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটু হাল ধরা। কখনো হাল ধরেন মেয়র আনিসুল হক, কখনো জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান। কখনো বড় ধরনের সংকটে হাল ধরেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যথায় যা হওয়ার তাই হচ্ছে। কিন্তু সমগ্র ব্যবস্থাটাকে একটা নিয়ন্ত্রণে আনা কি সম্ভব নয়? প্রযুক্তির এই অভাবনীয় উন্নতির ফলে এটা তো কোনো বিষয়ই নয়। কেমন করে বিষয় নয় তাও জানি।
প্রাচ্যদেশীয় লোকগুলো বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মানুষ আইন মানতে চায় না। আইনের ব্যাপারে তাদের এক ধরনের ক্ষোভ আছে। কেন আইন মানব? এই জন্যই লাখ লাখ মামলার স্তূপ জমে ওঠে আদালতগুলোতে। আজ থেকে ষাট-সত্তর বছর আগে জেলা শহরগুলোতে আদালতের সংখ্যা ছিল খুবই সীমিত। এখন সেখানে ছয়তলা থেকে আটতলা পর্যন্ত ভবনে বিভিন্ন আদালত গড়ে তোলা হয়েছে। একটি জেলা শহরেও অনেক বিচারক রাখতে হচ্ছে এবং ছয় সাত এমনকি আটতলা ভবন নির্মাণ করতে হচ্ছে শুধু আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য। দেশের স্বাধীনতা কি শুধু আদালত নির্মাণের কাজ করবে না কি মানুষে মানুষে সংঘাত কমিয়ে রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘনকারীর সংখ্যা কমিয়ে নিয়ে আসবে?
আমার মনে পড়ে ছোটবেলায় দেখতাম একটা লোক ছোট্ট একটা গাড়ি চালিয়ে চলাচল করত। পাঁচ-ছয় গজ দূরের একটা জায়গায় যেতেন। একটু বড় হয়ে জেনেছি তিনি জেলার মুন্সেফ। বাসা থেকে আদালতে যান। তার চেহারা কখনো দেখিনি। কিন্তু একটা ছোট্ট এলাকায় তিনি এসব আইন আদালতের বিচার করেন। আর বাকিটা করেন ম্যাজিস্ট্রেটরা। সেটাও খুব বড় কিছু নয়।
সম্প্রতি ব্যাংকের একজন ডিজিএমের স্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের একজন অফিসারের দ্বন্দ্ব হয়েছে। কারণ উনি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে গাড়ি পার্ক করেছিলেন। কিন্তু ডিজিএমের স্ত্রী বলছেন তিনি আইন ভঙ্গ করেননি। তার নামতে যতটুকু সময় লেগেছে ততটুকু সময়ই তিনি নিয়েছেন। এসব ব্যাপারে অনেক বাহাস হতে পারে, কে ভুল আর কে ঠিক? কিন্তু ট্রাফিক আইন তো মানতে হবে। যেখানে ট্রাফিক আইন সম্পূর্ণভাবে যন্ত্র বিবর্জিত আধুনিককালে সমস্ত ব্যবস্থা উপেক্ষিত, যে শহরে সবুজ, হলুদ এবং লালবাতির সংকেত জ¦লে না সেই শহরে ট্রাফিক আইন কী করে বাস্তবায়ন করা যায়? অধিকাংশ সময়ে হস্ত নির্দেশিত ট্রাফিক সিগন্যাল দেখা যায় অথবা নির্দেশকারী একেবারেই তার অভিজ্ঞতাপ্রসূত ট্রাফিক সিগন্যাল দিয়ে যাচ্ছেন। তখন তা মেনে চলাও কি নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে? এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঢাকাবাসী এই যে আদিম অবস্থার মধ্যে পড়ে আছে তার জন্য তাদের কোনো আক্ষেপ নেই?
স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একটি আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, যেটা ছিল আমাদের একটা আদর্শ ব্যবস্থা। সেই ব্যবস্থাকে কেমন করে ধ্বংস করা হলো তা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। স্কুলের ওই শিশুরা মন্ত্রীদের, পুলিশ অফিসারদের হাঁটতে বাধ্য করেছিল। তারা ওই ব্যবস্থাকে কিন্তু মেনেও নিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে বিষয়টি রাজনৈতিক হয়ে দাঁড়ায়।
দেশের রাজনীতিবিদদের কি করে বোঝাব সব কিছু রাজনৈতিক করবেন না! সব কিছুকে রাজনৈতিক করতে গেলে অনেক বড় বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। দয়া করে শিক্ষাকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। দুর্নীতিকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। শিক্ষাকে রাজনীতি করতে গেলে কীভাবে দুর্নীতি এসে যায় সেটা আপনারা জানেন। তদবিরে নিয়োগ বাণিজ্যের লাখ লাখ টাকায় শুধু কিছু অশিক্ষিত লোকরা চাকরি পেয়ে যায়। চাকরি পেয়ে তারা শিশুদের মননকে যে কীভাবে ধ্বংস করে দেয় তা রাজনীতিকরা একটিবারও ভাবেন না।
ঢাকা শহরের নাগরিকরা ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ে তেমন কিছু বলেন না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়েও কিছু বলেন না। প্রথমটায় বলেন না তার কারণ রিকশায় চড়তে তারা খুবই আনন্দ পান এবং অনেক শিক্ষিত লোককে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে রিকশায় করে রাস্তার রংসাইড দিয়ে ঢুকে পড়েন তারা রিকশাচালককে মানা তো করেনই না, অনেক সময় উৎসাহ এমনকি রংসাইডে ঢুকে পড়ার পরামর্শও দেন। আমি এই প্রসঙ্গে তেমন বেশি কিছু বলতে চাই না। কারণ শহরগুলোতে গণপরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক দূর হেঁটে এসে তারা যে গণপরিবহনে চড়ার একটা সুবন্দোবস্ত পাবেন, সেই ব্যবস্থা আমরা রাখতে পারিনি। পৃথিবীর প্রতিটি বড় বড় শহরে নাগরিকদের অনেক পথ হাঁটতে হয়। কারণ তারা গণপরিবহনে উঠবেন হেঁটেই, কাজেই তাদের স্বাস্থ্যও অত্যন্ত ভালো থাকে। এ দেশেও হয়তো রিকশা বন্ধ করে দিলে মধ্যবিত্তদের একটা আন্দোলনও শুরু হয়ে যাবে। যার নাম হবে অলস বাঙালিদের আন্দোলন।
কিন্তু আবার এও দেখেছি, উত্তরা বা মিরপুরের নাগরিকরা খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে ট্রেনে উঠছেন। কিন্তু ধানম-িবাসীর কী হবে? এখানে তো গণপরিবহনের কোনো ব্যবস্থা নেই, একমাত্র বাসই ভরসা। মালিবাগ চৌধুরী পাড়ায় একই ব্যবস্থা। তাদের জন্যও কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এসব সমস্যা মিলে রাষ্ট্রের বায়ান্ন বছর হয়ে গেল, কোনো সুশৃঙ্খল আধুনিক গণপরিবহনের ব্যবস্থা হলো না। অতএব যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে আমাদের নগরগুলোতে সামান্য বৃষ্টি হলে ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় পানি জমে যায়। সেখানে তখন মানুষ মারা পড়বে এক্ষেত্রে রাষ্ট্র এটার কোনো দায়দায়িত্বও নেবে না? দুটি সিটি করপোরেশন নিবিড় ঘুমে রাত্রিযাপন করবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলে একটি মন্ত্রণালয় আছে। তারা বৃষ্টিতে ঘুম উপভোগ করবে আর মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় বিপদসঙ্কুল সময় অতিক্রম করবে। এসব সমস্যা দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসছে। কিন্তু এর যে সমাধান সম্ভব তা কিন্তু অনেকেই জানেন না। আনিসুল হক জানতেন। ঢাকার বর্তমান মেট্রোপলিটন কমিশনার হাবিবুর রহমান জানেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও জানেন। জানেন অনেক নাগরিক। কিন্তু সমস্যা সমাধানের সুযোগ অত্যন্ত কম। তাদের ক্ষমতা যদি বাড়ানো যায় তাহলে অনেক কিছু ঘটানো সম্ভব। সেই দিকটায় আমরা কি যেতে পারি? লেখক: নাট্যকার, অভিনেতা ও কলামিস্ট
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।