
মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর সদ্য প্রয়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও মন্তব্য করায় ফেনীর ২০ নেতাকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল আহম্মদ তপু ও সাধারণ সম্পাদক নুর করিম জাবেদ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। যদিও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাঈদীর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে একই কারণে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মারুফ হোসেন এবং পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. জাহিদ খানকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এ নিয়ে সাঈদী ইস্যুতে দেশজুড়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের প্রায় ১০০ নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হলো।
ফেনীর ছাত্রলীগ নেতাদের অব্যাহতি দেওয়াসংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনের শৃঙ্খলা ও নীতি-আদর্শ পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় ফেনী জেলা ছাত্রলীগের ছাত্রবৃত্তি সম্পাদক নজরুল ইসলাম জাবেদ, সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন ও রাকিব উদ্দিন, ফেনী কলেজ ইউনিটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শিবলু ও মোস্তাফিজুর রহমান রিয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ওসমান গণি শুভ, উপদপ্তর সম্পাদক আল মামুন, সমাজসেবা সম্পাদক আবদুল্লাহ আল আরাফাত, উপবিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবু সাঈদ, ফেনী সদর উপজেলা ইউনিটের সহসম্পাদক হাসান আহাম্মদ, ছনুয়া ইউনিয়ন সভাপতি জামাল উদ্দিন রাজু, ফেনী পৌর ক্রীড়া সম্পাদক শরিফ উদ্দিন ফরহাদ ও শিক্ষা সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম মুন্না, দাগনভূঞা উপজেলা প্রচার সম্পাদক ফজলুর রহমান এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জোবায়েদ হোসেন বাদল, দাগনভূঞা পৌর সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হক পরান, ইকবাল মেমোরিয়াল সভাপতি জাহিদ হাসান শুভ, সোনাগাজী উপজেলা উপবিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক শেখ রাসেল, মতিগঞ্জ ইউনিয়ন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন রনি ও ফুলগাজী উপজেলা উপগণশিক্ষা সম্পাদক আনোয়ার হোসেনকে নিজ নিজ পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নুর করিম জাবেদ বলেন, ‘সাঈদীকে নিয়ে পোস্ট দেওয়ার পর নেতাকর্মীদের ফেসবুক আইডি নজরদারি করা হয়। সংগঠনের নীতি, আদর্শ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার সুযোগ নেই। নীতি-আদর্শ পরিপন্থী কাজের জন্য তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মারুফ হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে সুপারিশ করা হয়েছে। যশোর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াস ও সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লব স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘সংগঠনের নীতি ও আদর্শবিরোধী কাজে জড়িত থাকায় মারুফ হোসেনকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে স্থায়ী বহিষ্কারের অনুরোধ করা হয়েছে।’ তবে সুনির্দিষ্ট কী কারণে মারুফ হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়েছে, সেটা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি। তবে জেলা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, ১৪ আগস্ট সাঈদীর মৃত্যুর পরে মারুফ হোসেন তার ফেসবুক আইডিতে সাঈদীর ছবিসংবলিত সংবাদ কার্ড শেয়ার করেন। একই সঙ্গে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। এরপর থেকে যশোর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা মারুফের পোস্টটির স্ক্রিনশট দিয়ে সমালোচনা ও তাকে বহিষ্কারের দাবি জানান। তবে কয়েক ঘণ্টা পর ছাত্রলীগ নেতা মারুফ আবার সেই পোস্ট মুছে ফেলেন।
এ বিষয়ে মারুফ হোসেন বলেন, ‘১৩ আগস্ট আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়। পরে আমার বন্ধুরা জানান হ্যাককৃত আইডি থেকেই সাঈদীকে নিয়ে একটা পোস্ট হয়েছে। আমার আইডিটা ফিরে পেয়েছি। এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডিও করেছি।’
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াস বলেন, ‘সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।’
অন্যদিকে সাঈদীর মৃত্যুতে দোয়া চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. জাহিদ খানকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে দুমকি উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম জীবন ও সাধারণ সম্পাদক সবুজ সিকদার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞাপ্তিতে বলা হয়, ‘উপজেলা ছাত্রলীগের জরুরি সিদ্ধান্তে মো. জাহিদ খান সংগঠনের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকায় তাকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো। একই সঙ্গে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগকে সুপারিশ করা হলো।’
এ বিষয়ে মুরাদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. সিফাত হোসেন বলেন, ‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর খবরে এই ছাত্রলীগ নেতা (জাহিদ খান) তার নিজ ফেসবুক আইডিতে দোয়া চেয়েছেন। ভবিষ্যতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এভাবে যারা সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত হবেন, তাদেরও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হবে।’
সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে প্রতিবেদনটি তৈরি
প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি ‘সোনার হরিণ’। বিসিএসে, কিছু ব্যতিক্রম বাদে, একজন প্রার্থীকে প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি পেতে সর্বোচ্চ মেধার স্বাক্ষর রাখতে হয়। প্রার্থীরা একমনে চার-পাঁচ বছর অনুশীলন করেন। তাও লাখ লাখ প্রার্থীর মধ্যে চাকরি হয় অল্পজনেরই। প্রথম শ্রেণির নন-ক্যাডার চাকরির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।
পুরোপুরি ভিন্ন পরিস্থিতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেকশন অফিসারসহ নানা পদে। এগুলো প্রথম শ্রেণির চাকরি। মেধা বা যোগ্যতা নয়, টাকা আর তদবির থাকলে সেখানে চাকরি হয়। সম্প্রতি বেশ কিছু নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে লেনদেন হয়েছে বলে ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে।
প্রত্যেক জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করার নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মানেই শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী শুরুতেই কয়েকশ চাকরি। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে তেমন মন না থাকলেও নিয়োগের মহোৎসব চলছে। শিক্ষক নিয়োগে লেনদেন কম হলেও তদবির চলে, তবে মেধাবীরাও নিয়োগ পান। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ পুরোটাই তদবিরে আর লেনদেনের মাধ্যমে হয়। আত্মীয়করণও আছে। লিখিত পরীক্ষা লোকদেখানো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিতে ঘুষের রেট অনেকটাই নির্ধারিত। সবখানে প্রায় এক রেট। যত টাকা স্কেলের চাকরি প্রায় তত লাখ টাকা ঘুষ। সবচেয়ে লোভনীয় সেকশন অফিসার পদ। এ পদে বেতন স্কেল ২২ হাজার টাকা, আর ঘুষের রেট ২২ লাখ টাকা। ২০ লাখেও কখনো হয়। দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ১২ থেকে ১৫ লাখ, তৃতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৮ থেকে ১০ লাখ এবং চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে ঘুষের রেট ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য (বর্তমানে চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়েরই নিয়োগ বোর্ড রয়েছে, যার প্রধান হচ্ছেন উপাচার্য। বোর্ডই নিয়োগ দিয়ে থাকে। যদি তারা প্রার্থী ঠিক করে রাখে তাহলে লিখিত পরীক্ষায় কম পেলেও ভাইভায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে পছন্দের প্রার্থীই নিয়োগ পায়।’
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বর্তমান ইউজিসি সদস্য ড. মুহম্মদ আলমগীর বলেন, ‘উপাচার্য যদি তার নিজের আত্মীয়স্বজন, এলাকার লোক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আত্মীয়স্বজনদের নিয়োগ না দেন তাহলে রাজনৈতিক চাপ এড়ানো সম্ভব। ভিসি সৎ থাকলে রাজনৈতিক নেতারা কিছু বলতে পারবেন না। তিনি অনিয়মে জড়ালে অন্যরা তো সুবিধা নেবেই। বোর্ডের সদস্যরা ঠিক থাকলে ভিসির একার পক্ষেও কিছু চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।’
ময়মনসিংহ বিভাগের নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া একজন সেকশন অফিসার নিজের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম না প্রকাশের শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চাকরির জন্য আমি একজন রাজনৈতিক নেতার এপিএসের কাছে যাই। তিনি জানতে চান সেকশন অফিসার পদে বেতন স্কেল কত? আমি জানালাম, ২২ হাজার টাকা। তিনি বললেন ২২ লাখ টাকা লাগবে। জানালেন, যত টাকা স্কেলের চাকরি তত লাখ টাকা দিতে হয়। আর এ টাকা অনেকের কাছে যাবে। পরে তিনি আমার জন্য দুই লাখ টাকা কমিয়ে ২০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে দেন। যদিও পরে আমি আরও কিছু টাকা কম দিয়েছি। আমার চাকরি হয়েছে।’
সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও নতুন। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে তারা ভর্তির অনুমতি পেয়েছে। এখন জোরেশোরে চলছে নিয়োগ কার্যক্রম। সম্প্রতি বেশ কিছু পদে নিয়োগও হয়েছে। জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস। ওই উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা নিয়োগে বড় ভূমিকা রাখছেন। তিনি আত্মীয়স্বজনদের নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছেন। তিনি প্রতি প্রার্থীর কাছ থেকে ১০-১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এতে উপাচার্যেরও সায় আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়োগে বড় অঙ্কের লেনদেন হলেও এর সঙ্গে বেশিরভাগ উপাচার্য জড়িত নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। তারা দলীয়করণ, আত্মীয়করণে বেশি জোর দেন। টাকার লেনদেন করে তৃতীয় পক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যে রাজনৈতিক নেতার আধিপত্য সাধারণত তিনিই লেনদেন করেন। এ ছাড়া শিক্ষক নেতা, সিন্ডিকেট সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার রাজনৈতিক নেতা, যারা ভিসির সঙ্গে মধ্যস্থতা করেন তারাই ঘুষের টাকা নেন।
ইউজিসি সূত্র জানায়, দেশে এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৫৪টি। ১৫ থেকে ২০টি নতুন। সেগুলোতে প্রতিনিয়ত বড় ধরনের নিয়োগ হচ্ছে। কোনোটিতে নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার অ্যাডহক নিয়োগ দেওয়ার পর চাকরি স্থায়ী করে।
সম্প্রতি কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পিরোজপুরকে শিক্ষাকার্যক্রম শুরুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সিলেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জামালপুর, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কিশোরগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও জোরেশোরে নিয়োগ কার্যক্রম চলছে।
রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় সিরাজগঞ্জ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, নেত্রকোনা শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ চলছে।
ইউজিসি প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করে। তদন্ত প্রতিবেদনে অনিয়মের প্রমাণও মেলে। প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আবার কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের চিঠি দেওয়া হলেও তাতে কান দেয় না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অস্থায়ী ক্যাম্পাস সিলেট শহরের চৌহাট্টায়। ইচ্ছেমতো নিয়োগও চলছে। নিয়োগে অনিয়মের তদন্ত করেছে ইউজিসি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান জনবল ১৭৪ জন। অথচ ১১২টি পদের অনুমোদন দিয়েছে ইউজিসি। ১০৯টি পদে নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলে ইউজিসির তদন্তে বলা হয়েছে। উপাচার্যের শ্যালকের স্ত্রী উপপরিচালক পদে, উপাচার্যের স্ত্রীর বড় ভাইয়ের ছেলে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এ ছাড়া, আওয়ামী লীগের সাবেক একজন সংসদ সদস্যের ছেলে, ইউজিসির কর্মকর্তাদের সুপারিশকৃত দুজন প্রার্থী, দুজন গণমাধ্যমকর্মীর আত্মীয় নিয়োগ পেয়েছে। অনেক পদেই বড় অঙ্কের লেনদেন হয়েছে।
জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৭০০ জন হলেও শিক্ষক ৪৬ জন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছেন ৮১ জন। নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের এবং অন্যদের নিয়োগে টাকা লেনদেন হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপাচার্যের ছেলে সহকারী নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকের (অর্থ ও হিসাব) মেয়ে, মেলান্দহ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ছেলে, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের মেয়ে সেকশন অফিসার পদে এবং মেলান্দহ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতির ছেলেকে উপাচার্যের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শহীদুর রহমান খান নিজের ছেলে, মেয়ে; শ্যালক-শ্যালিকার ছেলে, ভাতিজাসহ ৯ জনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তিনি তার স্ত্রীকেও অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করে করেছিলেন। নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে বাছাই বোর্ড গঠন করে ২০টি বিষয়ে ৭৩ জনকে গত বছরের আগস্টে চাকরির শেষ সময়ে নিয়োগ দিয়েছিলেন তিনি। তদন্তে এসব অনিয়মও প্রমাণিত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসব নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিবর্তন করে যোগ্যতা কমিয়ে নিজের মেয়ে ও জামাইকে শিক্ষক নিয়োগ করেছেন। কম যোগ্য ৩৪ জনকে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। মেয়াদের শেষ কর্মদিবসে ১৪১ জনকে অস্থায়ী নিয়োগ দিয়েছিলেন। এসব অনিয়মের প্রমাণও পেয়েছে ইউজিসি।
রাজধানীর বছিলায় ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগেও অনিয়ম পেয়েছে ইউজিসি। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মাদ্রাসা শিক্ষক নেতা, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস এসব নিয়োগের হর্তাকর্তা হয়ে ওঠেন। তারা প্রত্যেকে ১০ থেকে ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেন। অনেক ক্ষেত্রে সাবেক ভিসিকে নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছেন। প্রতিটি নিয়োগেই বড় লেনদেন হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে এক গ্রামেরই ২০ থেকে ২৫ জন চাকরি পেয়েছেন। গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়েও নিয়োগে সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
উচ্চ আদালতের রায়ে প্লটের নামজারি ও আমমোক্তারনামা বাতিল হয়েছে। ওই প্লটের ওপর রয়েছে স্থগিতাদেশ। এরপরও নতুন করে ওই প্লটের মালিকানা হস্তান্তরের সুপারিশ করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে উচ্চ আদালতের রায়ের কথা উল্লেখ করলেও অসৎ উদ্দেশ্যে মূল বিষয়গুলো উল্লেখ করেনি। অথচ ওই বিষয়গুলো আমলে নিলে ওই শিল্প প্লটের মালিকানা হস্তান্তরের সুপারিশ করার কোনো সুযোগ নেই।
ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে শিল্প এলাকায়। ২৬৬ নম্বরের ৬০ কাঠা আয়তনের শিল্প প্লটটির ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করেই এমন সুপারিশ করেছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের দুই প্রকৌশলী। তারা হলেনÑ ঢাকা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার ইবনে সাঈখ এবং তেজগাঁও গণপূর্ত উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান। আর সে সময় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এসব কাজে তাদের সহযোগিতা করেছেন তৎকালীন শাখা-১৪-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসচিব মো. শাহিনুর ইসলাম; বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এ নির্দেশনা ছাড়াও ওই প্লটের মালিকানা বিষয়ে উচ্চ আদালতে তিনটি মামলা চলমান রয়েছে। এরপরও গণপূর্ত অধিদপ্তর ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি অসাধু চক্র উচ্চ আদালতের রায় ও বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে একটি পক্ষকে মালিকানা
হস্তান্তর করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তারা এসব করছেন বলে জানা গেছে। ওই ফাইলের তথ্য গোপন ও জমাকৃত আদালতের কাগজপত্র সরানোর কাজে তাকে সহযোগিতা করেছেন ওই শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মনসুর আলী শাকিদার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর ওই প্লটের বিষয়ে হাইকোর্ট রিট পিটিশন মামলার রায় ঘোষণা করে। আদালতের রায়ের কপি তাদের কাছে থাকার পরও মূল বিষয়গুলো প্রতিবেদনে উল্লেখ করেনি ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩। বরং সেখানে রায়ের খণ্ডিত অংশ উপস্থাপন করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালতের রায়ে মন্ত্রণালয়কে উভয় পক্ষের শুনানি গ্রহণ করে দুই মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত দিতে বলা হয়েছে। গত বছরের ৩ আগস্ট গণপূর্ত থেকে এই প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার পর অসাধু চক্র বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ফাইল অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু করে।
আরও জানা যায়, তেজগাঁও শিল্প এলাকার ২৬৬ নম্বর প্লটের দখলদার মো. জিবরান গং। সেখানে তাদের এবং তাদের কাছ থেকে বায়নাসূত্রে মালিকরা পুরো প্লটের দখলে রয়েছেন। এরপরও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেমিপাকা ফ্যাক্টরি শেডে মেসার্স শওকত আলী অ্যান্ড ব্রাদার্সের পক্ষে নিযুক্ত আমমোক্তার মাইনুল হাসান রুম্মান এবং রাবার প্লাস্টিক তৈরির মেশিন রয়েছে। বাস্তবে যার কোনো সত্যতা নেই।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ৬০ বছর ধরে দখলে থাকা পক্ষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রয়েছেন। তারা উচ্চ আদালতে মামলার বিচারের মাধ্যমে জমির মালিকানার জটিলতার নিরসন করতে চাচ্ছেন। কিন্তু অন্যপক্ষ কাগজপত্র জাল-জালিয়াতি করে মন্ত্রণালয়ের অসাধু চক্রকে ম্যানেজ করে অবৈধ প্রক্রিয়ায় মূল্যবান জায়গাটি আত্মসাৎ করতে মরিয়া। অবৈধ প্রক্রিয়ায় ওই জায়গা নিজের করে নিতে অনৈতিক পথে হাঁটছেন মইনুল হাসান রুম্মান গং। আর আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতে বিচারের জন্য লড়ছেন ৬০ বছর ধরে দখলে থাকা মো. জিবরান গং।
জানতে চাইলে মইনুল হাসান রুম্মান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখন আমি ব্যস্ত আছি। আপনাদের অফিসে এসে দেখা করব।’ কিন্তু তিনি অফিসে এসে দেখা করেননি এবং আর ফোনও রিসিভ করেননি।
আর দখলদার মো. জিবরান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা আইনি লড়াইয়ে আছি। উচ্চ আদালতের মাধ্যমে আমরা মালিকানার বিষয়টি সুরাহা করতে চেষ্টা করছি। কিন্তু, একটি অসাধু চক্র গণপূর্ত অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে প্রভাব বিস্তার করছে। তারা উচ্চ আদালতের রায় ও বিচারাধীন মামলাকে থোড়ায় কেয়ার করছে।’
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৫ জুন আইনি লড়াইয়ে থাকা মো. জিবরান গংদের পক্ষ থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ও সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও অসাধু চক্র নানা যুক্তি দেখিয়ে জাল-জালিয়াত চক্রের পক্ষে সাফাই গাইছেন। বিষয়টির যৌক্তিক এবং আইনগত সমাধান দিতে বদ্ধপরিকর মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রতিমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে গণপূর্ত অধিদপ্তরের উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে দেওয়া একপেশে প্রতিবেদনকে শক্ত দলিল হিসেবে উপস্থাপন করছে অসাধু চক্র। আর মন্ত্রণালয়ও সেটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
জানতে চাইলে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার ইবনে সাঈখ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছেন তেজগাঁওয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান (এখন সচিবালয় গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন)। আমি শুধু স্বাক্ষর করেছি।’
মালিকানা হস্তান্তরের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এভাবে দেওয়াটা যৌক্তিক হয়েছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ভাই, অনেক আগের ব্যাপার। এত কিছু আমার মনে নেই।’ আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে এমনটি করা হয়েছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কারও পক্ষে প্রতিবেদন দিই না। কোনো কারণে ভুল হলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলে তা সংশোধন করারও সুযোগ রয়েছে।’
একই বিষয়ে গণপূর্তের তেজগাঁওয়ের তৎকালীন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঘটনাটি প্রায় এক বছর আগের। প্রতিবেদনে কী লিখেছি; সেটিও ভুলে গেছি।’ উচ্চ আদালতের রায় অমান্যের বিষয়টি তুলে ধরলে তিনি বলেন, ‘মনে করতে পারছি না।’ আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে এমনটি করা হয়েছেÑ এমন অভিযোগের জবাবে বলেন, ‘এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। যা ঘটনা আমরা প্রতিবেদনে সেটা তুলে ধরেছি।’
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের শাখা-১৪-এর তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপসচিব মো. শাহিনুর ইসলাম একপেশে প্রতিবেদন প্রণয়নে মন্ত্রণালয় থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে তার ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার কল করে এবং এসএমএস (খুদেবার্তা) পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি। আর ওই ফাইলের তথ্য গোপন ও জমাকৃত আদালতের কাগজপত্র সরানোর কাজে সহযোগিতাকারী ওই শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মনসুর আলী শাকিদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কোনো ভুল হলে অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়ে থাকতে পারে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে সংক্ষুব্ধরা সংশোধনের আবেদন করতে পারেন। সেটা পুনরায় বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হবে।’
প্রায় পনেরো বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতাদের অপকর্ম নিয়ে বিব্রত দলের হাইকমান্ড আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে দেশ রূপান্তরকে পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে বিভিন্ন সময় বিএনপি-জামায়াতসহ অন্য দল থেকে এসে পদ পেয়ে যাওয়া নেতাদের অপকর্ম নিয়ে দলের মধ্যেই সমালোচনা হয়েছে। কখনো কখনো তাদের হাইব্রিড আখ্যায়িত করা হয়েছে, কখনো ‘কাউয়া’র মতো শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
ভোল পাল্টে অনুপ্রবেশ করা এসব নেতা আওয়ামী লীগ ও সরকারের দাপট দেখিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে নানা অপকর্ম করছেন। টেন্ডার-বাণিজ্য থেকে শুরু করে এমন কোনো অপরাধ নেই যা করছেন না তারা। তাদের কর্মকা-ে ক্ষুব্ধ সরকারের হাইকমান্ড। ১৪ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রলীগ, তাঁতী লীগসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সহানুভূতি প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিতে দেখা যাচ্ছে। এতে বিব্রত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংগঠনটিতে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার কথা বলেন।
এর আগে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
এর ধারাবাহিকতায় অপকর্মে জড়িত হাইব্রিড নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দুই মাস আগে সরকারের হাইকমান্ড থেকে বলা হয়েছে।
নির্দেশনা পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর পুলিশের সব কটি ইউনিটকে আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতাদের বিষয়ে খোঁজ নিতে বলেছে। ইতিমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থা, মহানগর, জেলা ও থানা পুলিশ তালিকা করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। ওই সব নেতার পাশাপাশি তাদের দলে প্রবেশের ব্যবস্থা ও সহায়তা যারা করে আসছেন, তাদেরও আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য দল থেকে যারা এসেছে, তারা নানা অপকর্ম করছে। আমাদের সফলতাগুলো তাদের কারণে নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে নীতিনির্ধারক ফোরামে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিশাল রাজনৈতিক দল। পনেরো বছর ধরে আমরা দেশ পরিচালনা করছি। দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন। কিন্তু একটি চক্র উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অশুভ চক্র দলের ভেতরে প্রবেশ করে নানা অপকর্ম করছে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। তাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলা হয়েছে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সরকারের হাইকমান্ড থেকে একটি নির্দেশনা এসেছে। এ জন্য পুলিশের সব কটি ইউনিটকে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতের অনেক নেতা তাদের পরিচয় গোপন করে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোতে প্রবেশ করে নানা অপকর্ম করছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এই হাইব্রিড নেতাদের সবধরনের সহায়তা করছেন আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা। তাদেরও আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, বরিশাল বিভাগের একটি জেলায় মঞ্জু মুসল্লি নামে এক হাইব্রিড নেতা একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দলে যোগ দিয়ে নানা রকমের অপকর্ম করছেন। এখনো তার পরিবারের ১১ সদস্যের মধ্যে আটজনই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করে আসছেন। অথচ তাদের দাপটে এলাকার লোকজন তটস্থ। এ রকম হাজার হাজার হাইব্রিড নেতা আছেন সারা দেশে। তাদের দ্রুত সময়ে চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোয় যেসব ‘অতিথি নেতা-কর্মী’ ঢুকে পড়েছেন, তাদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা পেয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। নির্দেশনা পেয়ে এসব হাইব্রিড নেতার কর্মকা-, অতীতসহ বিস্তারিত তালিকা তৈরির কাজও শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তারা বলছেন ২০১৯ সালে ক্যাসিনো ও টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানের সময় হাইব্রিড নেতাদের বিষয়টি সামনে চলে আসে। যে দলই ক্ষমতায় থাকে ওই সব নেতা সেই দলে ঢুকে সুবিধা নিচ্ছেন। তারা টেন্ডার, চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের অপরাধ করছেন। এসব নেতাকে বেশি লালন-পালন করছেন আওয়ামী লীগ বা যুবলীগেরই শীর্ষ নেতারা। মূলত তাদের আশকারা পেয়েই তারা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে বিএনপি-জামায়াতের অনেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। কোথাও কোথাও ‘নব্য’ আওয়ামী লীগারদের কারণে ত্যাগী নেতা-কর্মীরা কোণঠাসা থাকার পাশাপাশি হামলা ও মামলার শিকার হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মূলধারার বাইরে থেকে মনোনয়ন নিয়ে যারা সংসদ সদস্য হয়েছেন, তারা বিভিন্ন দল থেকে লোক এনে দলের ভেতরে গ্রুপিং তৈরি করেছেন বলে পুলিশ তথ্য পেয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে মূলধারার নেতা-কর্মীদের বিরোধ তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, দেশের কোথাও কোথাও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের আধিপত্য বাড়াতে বিএনপি-জামায়াতের লোকদের দলে জায়গা দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য বা অবস্থান টিকিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগে আশ্রয় নিয়েছেন। মূলত তারাই নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালাচ্ছেন।
ডিএমপি ও জেলার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, অনেক নাশকতা মামলার আসামিও আওয়ামী লীগেরই একশ্রেণির নেতার সঙ্গে আঁতাত করে দলে ঢুকে টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন। ক্যাসিনো খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া একসময় ফ্রিডম পার্টি করতেন। জাতীয় পার্টির আমলে ছাত্র সমাজের রাজনীতি করেছেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ওই দলে যোগ দেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে যুবলীগ দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ক্যাসিনো ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের মাধ্যমে সাংগঠনিক পদ পর্যন্ত বাগিয়ে নেন। ঠিকাদার জি কে শামীম একসময় জাতীয় পার্টি এবং তারপর বিএনপি করেছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক পরিচয়ে টেন্ডারবাজি করে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাবেক পরিচালক লোকমান হোসেন খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন ছিলেন। অথচ তিনি গত ১৩ বছর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে অর্থ কামিয়েছেন। বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত সফিউদ্দিন মোল্লা পনুকে নিয়েও রাজধানীর আশকোনা ও দক্ষিনখান এলাকায় চলছে আলোচনা। একসময় তিনি বিএনপির রাজনীতি করলেও বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। তার আপন সম্বন্ধি পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। পনুর অন্য স্বজনরাও বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃর্ক্ত। দক্ষিণগাঁওয়ের আরেকজন জামায়াত মতাদর্শী সুরুজ মিয়াও এখন আওয়ামী লীগের থানা কমিটিতে ঢোকার চেষ্টা করছেন বলে পুলিশের কাছে তথ্য এসেছে।
মাসখানেক আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা এসেছে জানিয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা আরও বলেন, জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব নেতা ‘অতিথি পাখি’ হয়ে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেছে তাদের তালিকা করার কাজ শুরু হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, কিছুদিন আগে গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় বলা হয়েছে, দলে হাইব্রিড এবং সুবিধাবাদীদের দাপটে প্রকৃত ত্যাগী নেতা-কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে আছেন। আর এই কারণে তৃণমূলের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। একই কারণে বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও এবং তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর ফেসবুকে শোক জানিয়ে পোস্ট দেওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের ৬৬ নেতা-কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে জামালপুরে ১৮, চট্টগ্রামে ১৬, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৯, পাবনায় ৭, নরসিংদীতে ৬, সাতক্ষীরায় ৩ গোপালগঞ্জে ৬ ও যশোরে একজন ছাত্রলীগ নেতা রয়েছেন। তবে ফেসবুকে শোক প্রকাশ করা নেতার সংখ্যা আরও বেশি বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে।
বৃহত্তম পাঁচ দেশের অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আগামীকাল সোমবার দক্ষিণ আফিকা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে জোটের পরিধি বাড়ানোসহ বাংলাদেশের সদস্য হওয়ার বিষয়টি জোর আলোচনায় থাকলেও জোটের অন্যতম শক্তিশালী দুই দেশ ভারত ও ব্রাজিল রাজি না হওয়ায় এবার নতুন সদস্য নেওয়া হচ্ছে না। তবে বাংলাদেশ এরই মধ্যে ব্রিকস ব্যাংকে যুক্ত হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এবার ব্রিকস সম্মেলনে নতুন সদস্য না বাড়ানো হলেও আগামীতে এই জোটের সদস্যসংখ্যা বাড়বে এবং যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গঠিত কোয়াডকে মোকাবিলা করতে এই জোটকে শক্তিশালী করতে চায় তারা। এ জন্যই বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো আরও বলছে, বাংলাদেশ এবার ব্রিকসের সদস্য না হলেও প্রধানমন্ত্রীর আফ্রিকা সফরটি হবে কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলনের সাইড লাইনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে পৃথক বৈঠক হতে পারে। আর বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের আগ্রহের বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দুই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে তাদের মতামত প্রকাশ করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েকটি নির্বাচনে সোচ্চার থাকলেও তা এতটা স্পষ্ট ছিল না। এই অঞ্চলে তারা তাদের মিত্র দেশ ভারতের মাধ্যমেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছিল। কিন্তু এবার ভারতকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রত্যাশার কথা জানাচ্ছে এবং নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আশঙ্কার বিষয় হলো চীনের দিকে যেন বাংলাদেশ ঝুঁকে না পড়ে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দুই কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশ সফরে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ চীনের খপ্পরে পড়েছে কি না?’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই অব্যাহত চাপে শেষমেশ ভারতও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছে। ভারত বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন তারা যেভাবে করতে চায়, সেভাবেই করার পক্ষে তাদের (ভারতের) মত। আবার বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানো পছন্দ করছে না চীনও। দেশটি তাদের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বলেছে, তারা (চীন) কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। তারা মনে করে বাংলাদেশের নির্বাচন এবং গণতন্ত্র তাদের দেশের জনগণ এবং রাজনীতিকরাই ঠিক করবেন।
এসব বিষয় মিলিয়ে কূটনৈতিক সূত্রগুলো মনে করছে, ব্রিকসে প্রধানমন্ত্রীর সফরটি রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যে সম্পর্ক রয়েছে, সেটির জন্যও দুই দেশের প্রধান নেতার বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক দ্বিপক্ষীয় বিষয় রয়েছে। সরাসরি হস্তক্ষেপ না করলেও বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভারত নজরে রাখে। এবারও তার ব্যত্যয় হবে না। তাই ব্রিকসের সাইড লাইনে মোদির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হবে। তা ছাড়া রোহিঙ্গা বিষয়ে ব্রিকস নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও কূটনৈতিক সূত্রগুলো দাবি করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহত্তম পাঁচ দেশের অর্থনৈতিক জোটের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ২১ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছেন। এ ছাড়া আগামী মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সাইড লাইনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে ব্রিকস গঠিত। আগামী মঙ্গল ও বুধবার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠেয় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে স্বাগতিক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা। এই সম্মেলনে ব্রিকসের সদস্য পদ সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা হবে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, এটা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, সেখানে যে তিনটি দেশ চাইছে নতুন সদস্য নেবে। ভারত ও ব্রাজিল বলছে, নেওয়ার আগে নতুন নিয়মকানুন তৈরি করতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট তখন বলেছিলেন, তারা চারটি দেশকে নিতে চান। আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম, কারা কারা? তখন তিনি জানিয়েছিলেন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, গত জুন মাসে জেনেভায় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ব্রিকসে যাওয়ার জন্য। তখন ধারণা ছিল, তারা নতুন কয়েকটি দেশকে ব্রিকসের সদস্য করবেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শহীদ সালাম-বরকত হল ও আ ফ ম কামালউদ্দিন হল সংলগ্ন নির্মাণাধীন মসজিদের ছাদ ঢালাইয়ের সময় ধসে পড়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টার দিকে ঢালাইয়ের কাজ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই এ ঘটনা ঘটে বলে জানান নির্মাণশ্রমিকরা।
এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম ও উপর্যুক্ত দুই হলের প্রাধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত প্রকৌশলীদের সঙ্গে আলোচনার পর সম্পূর্ণ ছাদের বিম খুলে আবার বিম স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান মসজিদটির নির্মাণে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফরমিলা আক্তার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দাইয়ান বিন শাহজাহান।
দাইয়ান বিন শাহজাহান বলেন, সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ দুই হলের প্রাধ্যক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পুরো ছাদের বিম খুলে নতুন করে লাগাতে হবে। ছাদের কাজ আবার শুরু করার কথা বলা হয়েছে।
ঢালাইয়ের শুরুতেই ছাদ ধসে পড়ার কারণ জানতে চাইলে দাইয়ান বলেন, ‘আমাদের শুধু ঢালাইয়ের কাজ বাকি ছিল। কিন্তু বৃষ্টির জন্য ঢালাইয়ের কাজ শুরু করতে পারিনি। বৃষ্টি না থাকায় আজ (গতকাল) কাজ শুরু করেছিলাম। বৃষ্টির কারণে পানি জমে কাঠ ভেজা ছিল। আর পেরেকের সঙ্গে কাঠের জোড়া লাগানো অংশ ফাঁকা হয়ে থাকতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। এ কারণে ধসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে নির্মাণশ্রমিকদের গাফিলতি ছিল না।’
আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘উপাচার্য স্যারসহ আমরা কয়েকজন আজ সকালে নির্মাণকাজের স্থান পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। এত দিনের টানা বৃষ্টির জন্য এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে । আমরা নতুন করে কাজ শুরু করতে বলেছি। কাজ শুরু করতে কিছুদিন সময় লাগতে পারে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙা ছাদের বিম খুলে আবার নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপ্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) আহসান হাবীবের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য মোবাইলে কল দেওয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে মসজিদের ইঞ্জিনিয়ার তপন কুমার বলেন, ‘১০ দিন টানা বৃষ্টি হওয়ার ফলে ওখানের কাঠের তক্তা পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল। পরে ঢালাইয়ের সময় কাঠের তক্তা সরে যায়।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের কারণে চলমান রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নতুন করে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দুই দলের এ পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের মূল টার্গেট ঢাকা দখলে নেওয়া। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসা নিতে বিদেশ পাঠাতে রবিবার বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। পাল্টা জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একই পথে হেঁটেছে। বিএনপিকে ‘আগুন সন্ত্রাস, অপরাজনীতি ও নাশকতার রাজনীতি’ ছাড়ার জন্য সোমবার ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরপর পাল্টা ৩৬ ঘণ্টার হুঁশিয়ারি এসেছে বিএনপির কাছ থেকে।
তার আগে গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবেদন করলে অনুমতির বিষয়টি দেখা যাবে। তবে তার কাছে এরকম কোনো কাগজপত্র আসেনি। ওইদিনই খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার বলেছেন, সরকারের মনোভাব ইতিবাচক হলে তারা আবারও আবেদন করবেন।
পরদিন রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলটিমেটাম দেন। ওইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে বিএনপি বলছে, সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে।
দুই দলের রাজনীতি ও ঘোষিত আলটিমেটাম মাঠের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না, সে সম্পর্কে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিএনপির আলটিমেটামের ফল কী হবে আর আওয়ামী লীগেরও দীর্ঘ ৩৬ দিনের আলটিমেটাম কেন এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতর বেশ কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজধানী ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি আলটিমেটাম। ঢাকায় বিএনপির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার কৌশলের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে দলটি আলটিমেটাম দিয়েছে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই তার পাল্টা জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দুই দলের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা। ঢাকার রাজনীতি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে না পারলে রাজনীতিতে জুতসই অবস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি।
সারা দেশের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেয়ে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নির্ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপির ওই শীর্ষসারির নেতারা। তাই বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ইস্যু করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। পর্যাপ্ত নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকে গেলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তাই ইস্যু খালেদার চিকিৎসা, কিন্তু লক্ষ্য ঢাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৩৬ দিনের আলটিমেটামের পেছনে রয়েছে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ঢাকায় নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে ততই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের শান্তি যেন বিঘিœত না হয়, সেজন্যই আমরা বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে থাকি। বিএনপিকে জনগণ বিশ্বাস করে না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে সত্যিই নিতে চাইলে আলটিমেটাম কেন দেবে বিএনপি? আইনি জটিলতা নিরসন করে বিদেশ নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস-সহিংসতানির্ভর রাজনীতি করে, বিশ্বাস করে। তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা।’ তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে কেন বিএনপি আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না? তার কিছু হলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দায় নিতে হবে।’
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুই দলের ঘোষিত আলটিমেটামকে কথার বাকযুদ্ধ হিসেবে নিয়েছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এগুলো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অবস্থান ধরে নেওয়া যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের কোনো গা নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে আইনগতভাবে যেতে হবে। নির্বাহী কোনো সিদ্ধান্তে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ফলে আলটিমেটাম মূলত নিষ্ফল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দাবি আদায় করার জন্য জনগণ থেকে দাবি উঠতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণকে রাস্তায় নামাতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন যেসব বক্তব্য এগুলো মঞ্চের বাকযুদ্ধ।’
বিএনপির আলটিমেটাম নিয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি (গতকাল মঙ্গলবার) সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষ করে এসেছি।’ আলটিমেটামের পেছনে ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তো আমরা সভা-সমাবেশ করছিই।’
জানতে চাইলে বিএনপির আরেক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আলটিমেটাম সম্পর্কে ক্লিয়ার কিছু জানি না।’
বিএনপিকে ‘অপরাজনীতি’ ছাড়তে ৩৬ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে ‘সঠিক পথে’ না এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির ‘অপরাজনীতির কালো হাত’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে আলটিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটি বিএনপির জন্য শেষ বার্তা।’ গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় এবং যাত্রাবাড়ীতে পৃথক সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। উত্তরার সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ আলটিমেটাম দেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি দুই সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে এখন রাজপথে আছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় গত সোমবার দুটি সমাবেশ হয়।
এর আগে থেকেই ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির সভা-সমাবেশের বিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করলেও মাঠের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি।
ভারতের বিপক্ষেই খেলেছিলেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। এবার বিশ্বকাপটাই ভারতে, যে ধর্মশালা দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ অভিযান, সেখানেই আছে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির কৃতিত্ব। হিমালয়ের কোলে, ছবির মতো সুন্দর সেই মাঠে আবারও খেলবে বাংলাদেশ, কিন্তু খেলবেন না তামিম ইকবাল।
অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বরাবরের মতো সংবাদ সম্মেলনে নিরাবেগ কণ্ঠে একের পর এক নাম পড়ে শোনাননি প্রধান নির্বাচক, গভীর রাতে কোনো ইমেইলেও আসেনি খেলোয়াড় তালিকা। বিশ্বকাপগামী ১৫ ক্রিকেটারের প্রত্যেকের হাতে হাতে সুন্দর করে বাক্সবন্দি বিশ্বকাপ জার্সি তুলে দেওয়ার ভিডিও নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচিতদের পরিচিত করেছে বিসিবি। এজন্য বিসিবির সংশ্লিষ্টরা বাহবা পেতেই পারেন, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যেমনটা হৃদয় জিতে নিয়েছে ক্রিকেটারদের পরিবারের আপনজনদের দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করিয়ে।
কারা থাকছেন আর কারা থাকছেন না, তা নিয়ে খুব বড় কোনো চমক ছিল না বিশ্বকাপ দলে। সবাই শুধু একটাই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন। তামিম ইকবাল শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে আছেন নাকি নেই। অবসর, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে প্রত্যাবর্তন, ব্যক্তিগত কাজে দুবাই ভ্রমণ, ইংল্যান্ডে ইনজেকশন, দেশে অনুশীলন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসে ব্যাট করে ৪৪ রান এবং পরে নিজেকে আবারও পুরোপুরি ফিট নয় বলে পরের ম্যাচে বিশ্রাম। স্বভাবতই এই তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপে দেখতে চাইবেন না কোনো কোচ এবং অধিনায়ক। সোমবার গভীর রাতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় সাকিবের ছুটে যাওয়া এবং সিডনি থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে বোর্ড সভাপতির বাসায় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পা রাখাই প্রমাণ করে, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের এ তৎপরতা।
তামিমের মতো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সহজ নয়। নিঃসন্দেহে দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, ওয়ানডেতে ১৪টা সেঞ্চুরি। হুট করে অবসর নিলে যাকে ফিরিয়ে আনেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারেও তামিম বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগের কথাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেশাদারির কাছে হার মেনেছে আবেগ, যুক্তির কাছে হেরে গেছে অতীত। তামিম নামটা আছে বিশ্বকাপ দলে, তবে পদবিটা ইকবাল নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, যার বয়স আর তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় কাছাকাছি।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল অতিমানবীয়। ৬০৬ রান আর ১১ উইকেট। তবু দল হলো অষ্টম। গোটা আসর চোটজর্জর অধিনায়ককে বইল দল। প্রতিটি সকাল শুরু হতো এক অনিশ্চয়তা নিয়ে, খেলতে পারবেন তো মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা? শুরুর দিকে নতুন বলে কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ গড়েছে রানের পাহাড়। সেই অভিজ্ঞতা কী করে ভুলবেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ান জেমি সিডন্স আর অধিনায়ক সাকিব এজন্যই ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দলে রাখেননি চোটগ্রস্ত মাশরাফীকে। হাথুরুসিংহে জাতীয়তায় শ্রীলঙ্কান হলেও অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে থাকতে হয়ে গেছেন তাদের মতোই পেশাদার। তাই তো কঠিন সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।
কাল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এবং দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও আবদুর রাজ্জাক। তামিমকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে মিনহাজুল শুনিয়েছেন মুখস্থ কথাই, ‘আপনারা তো এবারের বিশ্বকাপের দলটা এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন। তামিম ইকবালের তো অনেক দিন ধরেই ইনজুরি নিয়ে চিন্তা আছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর... সবকিছু বিবেচনা করেই, সবাই আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশ্বকাপে অনেক দিনের ব্যাপার। অনেক ম্যাচ আছে।’
তামিমের চোটটা তো নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এ চোট নিয়ে তিনি ভুগছেন, নিজের ইচ্ছামতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এসব থেকে নিজেকে সরিয়েও রেখেছিলেন। চিকিৎসাও করিয়ে আনা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে কেন তাকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ দেওয়া এবং ম্যাচ খেলিয়ে বাদ দেওয়া এ প্রসঙ্গে মিনহাজুলের উত্তর, ‘দেখুন, কিছু কিছু ইনজুরি আছে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বেকায়দায় পড়বে। আপনি দেখুন, নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে... প্রথম ম্যাচ খেলেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটা খেলেছে... এরপর কিন্তু শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দিতে হয়েছে।’
‘তামিম অন্যতম সেরা। কিন্তু চোটের দুশ্চিন্তা থাকলে নিজেকে মেলে ধরা কঠিন। মেডিকেলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। এটা আগেই বলেছি, এখন দল ঘোষণা করা হয়েছে’বলছিলেন প্রধান নির্বাচক। বিসিবি সভাপতি বা সাকিব ও কোচের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে সেটা তো এখানে প্রকাশ করব না।’
১০ দলের বিশ্বকাপে দশম দল হিসেবে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। কেন এত দেরি, ফ্লাইটে ওঠার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে বিশ্বকাপের দল দেওয়া হলো কেন এ নিয়ে হাবিবুল বাশারের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে সেটা তো আমাদের সঙ্গের ব্যাপার। দল নির্বাচন করতে যখন বসি... খেলোয়াড় হিসেবে তামিমের... আমরা সুস্থ-সবল তামিমকে পেতে... এটা নিয়ে আমাদের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ভাবতে হয়েছে। তাই দেরি হয়েছে।’
তামিমের বাদ পড়ার ডামাডোলে হারিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর ফেরাটাও। সেই ইংল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্রামের মোড়কে বাদ পড়েছিলেন। তার বদলে অনেক বিকল্প খুঁজেও শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে আবার তার কাছেই ফিরলেন নির্বাচকরা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৪৯ আর ২১ রানের দুটো ইনিংসেই হয়ে গেছে বিশ্বকাপের টিকিট। প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘আগেই বলেছি, বিশ্বকাপের আগে যেকোনো খেলোয়াড়কে যেকোনো সিরিজে দেখব। ও পরিকল্পনাতেই ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে দেখেছি।’
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে, মাত্র দুই ম্যাচ দেখে সৌম্য সরকারকে দলে নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তানজিদ তামিম আর তানজিম সাকিব নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন। যথাক্রমে মাত্র পাঁচ আর দুই ম্যাচ খেলে তারা বিশ্বকাপ যাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। এমন নয় যে, এ স্বল্প সময়ে দারুণ কিছু করে দেখিয়েছেন, প্রধান কারণ বিকল্পের অভাব।
শুধু তামিম ইকবালই নয়, দলের লজিস্টিক ম্যানেজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বড় ভাই ও সাবেক খেলোয়াড় নাফিস ইকবালকেও। তামিমের অবসর-কা-ে তিনি বিসিবি সভাপতির মেসেজের জবাব দেননি, যা পাপন নিজে বলেছেন গণমাধ্যমে। হয়তো তারই প্রতিশোধ, সেই সঙ্গে ড্রেসিংরুমের সঙ্গে তামিমের সব সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।
অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন তামিম, দুটি ম্যাচ খেললেন। কিন্তু যেভাবে বাদ পড়লেন, তাতে মনে হতে পারে অবসরের সিদ্ধান্তটাই ছিল সঠিক। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামীতেও তামিমের দলে ফেরাটা বোধহয় অনিশ্চিতই হয়ে গেল।
তামিম প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে দলটা কেমন হয়েছে দেখা যাক। পাঁচ পেসার, দুই অফ স্পিনার, দুই বাঁহাতি স্পিনার মিলিয়ে বোলিং আক্রমণটা নেহায়েত খারাপ নয়। লিটন দাসের সঙ্গে তানজিদ তামিম অথবা মেকশিফট ওপেনার মিরাজ। সহঅধিনায়কের পদ থেকে বাদ পড়েছেন লিটন, সেটা করা হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। সাকিব, মুশফিক, তাওহীদ হৃদয়দের নিয়ে মিডল অর্ডারের পর ফিনিশার রোলে মাহমুদউল্লাহ। এ নিয়েই ধর্মশালায় আফগানদের বিপক্ষে লড়াইয়ের শুরু। প্রত্যাশা অনেক বড়, প্রস্তুতি গোলমেলে। ভরসা একটাই, শুরুর আগে পরিস্থিতি এমন গোলমেলে হলেই কেন যেন ভালো করে বাংলাদেশ!
বিশ্বকাপ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (সহঅধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান, তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
স্থায়ীভাবে ঢাকা বসবাসের আমার ষাট বছর পূর্ণ হলো। এই ষাট বছরে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ঢাকার উত্থান-পতন, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, আন্দোলন-অভ্যুত্থানসহ অনেক কিছু দেখার সুযোগ পেয়েছি। যখন ঢাকায় প্রথম এসেছিলাম তখন মনে হতো ঢাকা একটি বড় গ্রাম। এখানে গ্রামের মতোই বৃষ্টি হয়, অমাবস্যা পূর্ণিমা হয়, শীত-গ্রীষ্ম হয়। ভারী থেকে লঘু বর্ষণ হয়। ঢাকার চারদিক বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়। সদরঘাট, চকবাজার, সোয়ারীঘাট, ইসলামপুর এসব ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের এলাকা। গুলিস্তানকে ঘিরে বিপণি কেন্দ্রগুলো বিকশিত হতে শুরু করে। মতিঝিল গড়ে উঠছে। ঢাকার উন্নয়নের জন্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট সংক্ষেপে (ডিআইটি)’র কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তখনো ধোলাইখাল অতিক্রম করে কোর্টকাচারি, জগন্নাথ কলেজ, সদরঘাটের দিকে যেতে হতো। ঢাকা শহরের আবর্জনা নিষ্কাশনের জন্য আর্মেনিয়ানদের উদ্যোগে ধোলাইখাল চালু হয়েছিল।
ঢাকা শহরের ১৬১০ সালের আগে ও পরের মানচিত্র দেখলে বোঝা যায় যে শহরটা কী রকম খাল-বিল-নালা দিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। যে কারণে শহরটি কখনোই ডুবে যাওয়ার কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। সেই সময়ে একমাত্র যাতায়াতের উপায় ছিল নৌকা। এর মধ্যেই ১৬১০ সালে ইসলাম খাঁ রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করেন। বহুকষ্টে ঘোড়া, হাতি এবং পদাতিক বাহিনীকে রাজমহল থেকে বাংলায় আসতে হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধীনে ঢাকার পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। স্থানিক বিবেচনাকে অগ্রাহ্য করে যখন বিদেশিরা নানা ধরনের শহর উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় তার পরিণতি যে কত ভয়াবহ হয় তার প্রমাণ ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। ধোলাইখাল বন্ধ করে সেখানে মাটির নিচে বড় বড় পাইপ বসিয়ে নারিন্দাতে একটি পাম্প মেশিন বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়।
বিদেশিদের পরামর্শে এই ব্যবস্থার ফলে ঢাকায় গুরুতরভাবে পানি নিষ্কাশনের সংকট দেখা দেয়। একই পদ্ধতিতে বিভিন্ন জায়গায় পাইপ বসানো হয় এবং পানি নিষ্কাশনের গুরুতর সংকট দেখা দেয়। এরপর ঢাকা রাজধানী হলো, বিপুল পরিমাণ মানুষের আগমন ঘটল এই শহরে। বিভিন্ন জলাভূমি, ফাঁকা জায়গা যে যেখানে পারে বাড়িঘর তৈরি করতে শুরু করল। সরকারও প্রথমে ডিআইটি এবং পরে রাজউকের মাধ্যমে নানা জায়গায় আবাসনের ব্যবস্থা করতে শুরু করল। সেই ব্যবস্থা শুরু করতে গিয়ে ধানম-ি, গুলশান, বনানী, উত্তরা এসব জায়গায়ও জলাভূমিগুলো ভরাট করে শহরের আবাসিক এলাকা বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করা হয়। এখন বৃষ্টিপাত মানেই সর্বত্রই জলাবদ্ধতা এবং মানুষের অন্তহীন দুর্ভোগ।
আশির দশকের পর থেকে গত চল্লিশ বছরে শহরটি কংক্রিটের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। সেই ষাটের দশকের গাছপালাগুলো নেই, ফাঁকা জায়গা নেই, বৈচিত্র্যহীন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে শহরটি কিছু ম্যাচ বাক্সের মতো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা একটা আবর্জনার স্তূপ মনে হয়। শহরটায় এত পরিমাণ গাড়ি, বিশেষ করে প্রাইভেট গাড়ি একেবারেই পরিকল্পনাহীন নগরীতে চেপে বসেছে। মাত্র গত দশ পনের বছরে কিছু ফ্লাইওভার এবং সম্প্রতি মেট্রোরেলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বটে কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশ পরিকল্পনাহীন হওয়ায় যানজট কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে সেবা সংস্থাসমূহ একজন আরেকজনের প্রতি দোষ চাপিয়ে আপাতত নিজেদের গা বাঁচিয়ে চলছে।
আমার এই ষাট বছরের ঢাকা বসবাসের ইতিহাসে গত তিনদিন আগে যখন আমি মগবাজার থেকে ধানম-ির বাসায় এসেছি তখন সময় লেগেছে চার ঘণ্টা! এই চার ঘণ্টার মধ্যে সাড়ে তিন ঘণ্টাই ছিলাম আমি পানির মধ্যে। কিন্তু চলাচলের কোনো উপায় ছিল না। এক জায়গাতেই এক থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেছি। সামনে পেছনে গাড়ির চাপ, কোনো কোনো গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তার সামনে বা পেছনে যাওয়ারও কোনো উপায় ছিল না। শহরে কোনো ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনো ধরনের সরকারি উদ্যোগ দেখা যায়নি। খবরে প্রায়ই দেখে থাকি কোনো দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের বাহিনীগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে মানুষের সাহায্যে সরকারের প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। যা ভেবেছিলাম তাই, এই দুর্যোগের মধ্যে কিছু প্রাণ যাবে, কিছু লোক আহত হবে এবং সত্যিই দেখলাম যে ওই রাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন মারা গেছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত এক শিশুকে নিয়ে উদ্ধারকারীরা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার জন্য গিয়েছে কিন্তু চিকিৎসা পায়নি। এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয় না এই কারণে যে, একবার আমার ছেলে স্কুল থেকে ফেরার সময়ে বেবিট্যাক্সিতে দুর্ঘটনায় পড়ে তার শরীর রক্তাক্ত হয়। সেই সময়ে তার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না, চিকিৎসার জন্য কাছের একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে গেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। রক্তাক্ত অবস্থাতেই সে ঘরে ফিরে আসে।
আমার কাছে প্রশ্নটি অন্য জায়গায়, আমরা নিয়তিতে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। দ্রব্যমূল্য বাড়বে, বেকারত্বের সৃষ্টি হবে, মানুষ চিকিৎসা পাবে না এটাই যেন স্বাভাবিক। আর এর বিনিময়ে কোটি কোটি ডিমের দাম পাঁচ টাকা করে বাড়িয়ে একদিনে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কোটিপতি হয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় অমাত্যরা এর সমাধানে বিনিদ্র রজনী পার করবেন না, আমলারা নিজের সন্তানদের পৃথিবীর নিরাপদ কোনো জায়গায় পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকবেন। সাংসদ-ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করে আরও কোটি কোটি টাকার মালিক হবে। আমরা কি এমনটি দেখতে পাব কোনোদিন দেশ যারা চালায় তাদের ঘুম নেই, সারা রাত পথে পথে ঘুরছেন কোথায় কী হলো সেসব দেখে পরদিনই মানুষকে জানানো যে এই ব্যবস্থা এইভাবে পরিবর্তন করা সম্ভব। সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ! রাজনীতিবিদরা শুধুই বোঝেন ক্ষমতা। মার্কিন ভিসা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই, কিন্তু পাঁচজন মানুষ যে অতিবর্ষণের ফলে পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অকালে মারা গেল তাতে তাদের কপালে একটুও ভাঁজ পড়ে না।
ক’দিন পরে পরে রাস্তার পাশে বিরাট বিরাট কংক্রিটের পাইপ দেখা যায়। বহুদিন মানুষকে ভুগিয়ে একদিন সেই পাইপগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে। কিন্তু এই পাইপের কাজগুলো কী? তারা কি পানি নিষ্কাশনের কাজ করে? নাকি মাটির নিচে গিয়ে নানা রকম ময়লা-আবর্জনায় বন্ধ হয়ে নিচের দিকের পানিকে ওপরের দিকে ঠেলে দেয়? আমাদের এক নাট্যকর্মীর বা অভিনেতা বন্ধু উবারে করে তার কল্যাণপুরের বাসায় যাচ্ছিলেন। কল্যাণপুর যাওয়ার পর উবারের ড্রাইভার আর যেতে রাজি হলেন না। বুক সমান পানি ভেঙে সেই বন্ধু বাড়ি যাওয়ার পথে ম্যানহোলের মধ্যে পড়ে যান। তার একটি পা ক্ষতবিক্ষত হয় এবং মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এখনো ট্রমায় ভুগছেন।
এটা সত্য, বাংলাদেশ বানভাসি ও ঝড়-ঝঞ্ঝার দেশ। মানুষ এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করে বহু শতাব্দী ধরে বেঁচে আছেন। মানুষের কোনো অভিজ্ঞতা আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র কিছুতেই নেবে না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গৃহে কিছু অনভিজ্ঞ লোক নকশাঁ বানাবে এবং বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয়ে একটি প্রকল্প সাজাবে, তার মধ্য থেকে কোটি কোটি টাকা চলে যাবে ক্ষমতাসীনদের পকেটে। আজই পত্রিকায় দেখলাম প্রমাণসহ একজন লিখেছেন ভাঙ্গা থেকে খুলনার রেললাইন আপাতত এখন প্রয়োজন নেই। এতে বিশাল অর্থের অপচয় হবে। কিন্তু দেখা যাবে প্রকল্পটি হলো ঠিকই, কিন্তু এটা কারও কাজে লাগছে না। এমনি অনেক অকেজো প্রকল্প হরহামেশাই হয়। আমাদের সংস্কৃতিতে ষাটের দশক পর্যন্ত দেশপ্রেমের বিষয়টি বড়ই প্রবল ছিল। হয়তো সেটা পরাধীনতার কারণে। সবাই যার যার মতো দেশের জন্য কাজ করতে ছুটত। সত্তরের দশকের পর যে চায়নি তা নয়। কিন্তু সম্পূর্ণ বিষয়টি চলে গেছে শাসকের হাতে। জনগণের মেধাকে কখনোই গ্রহণ করার চেষ্টা করা হয়নি। গত ষাট বছরে এবং আমার এই বয়সে আমাদের কাজে লাগানোর রাষ্ট্রীয় কোনো ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়নি। সব কিছু সরকারি বেতনভুক্ত লোকদের কাছে এবং রাজনীতিবিদদের হাতে। তারা যাই করবেন তাই হবে। তবে সবচেয়ে বেদনার বিষয় এই পরিস্থিতির কোনো উন্নতিরও আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। একমাত্র গণজাগরণ এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবই সমাজকে আবার কর্মময় করে তুলতে পারে। অন্যথায় খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় নির্বাচন আর ভিসার খবরই আমরা দেখতে পাব। ওই পাঁচজন হতভাগ্য মানুষ যে রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলার শিকার তার সত্যতা কখনোই ভুলবার নয়। এসব ভেবেই হয়তো আলেকজান্ডার পাঞ্জাব থেকে ফিরে গিয়েছিলেন এবং সেনাপতিকে বলেছিলেন ‘সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ’।
লেখক: অভিনেতা, নাট্যকার ও কলামিস্ট
নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আখেরি নবী ও রাসুল। তিনি মানবজাতির জন্য আল্লাহতায়ালার সর্বশেষ দূত। তার প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য ছাড়া আল্লাহকে বিশ্বাস ও আনুগত্যের দাবি অর্থহীন। কোরআন মাজিদের বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়টি ঘোষিত হয়েছে। আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র পথ খাতামুন্নাবিয়ীন হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অনুসরণ। তাই তার জন্য হৃদয়ে গভীর ভালোবাসা পোষণ করা এবং তার জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে দোয়া করা প্রত্যেক উম্মতের ইমানি কর্তব্য।
কোরআন মাজিদে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নবী কারিম (সা.)-এর জন্য দরুদ পাঠের তথা আল্লাহর দরবারে তার জন্য দোয়া করার আদেশ করেছেন। এটা একদিকে যেমন আল্লাহর কাছে তার রাসুলের মর্যাদার প্রমাণ অন্যদিকে মুমিন বান্দার রহমত ও বরকত লাভের অন্যতম উপায়। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানকে এই সহজ ও মূল্যবান আমলটি বেশি বেশি করার তৌফিক দান করুন। নিম্নে দরুদ ও সালামের কিছু ফজিলত উল্লেখ করা হলো-
গোনাহ মাফের আমল : দরুদ রহমত, মাগফিরাত ও দরজা বুলন্দির আমল। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করবেন। -সহিহ মুসলিম : ১/১৬৬
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে আল্লাহ তার ওপর দশটি রহমত নাজিল করবেন, তার দশটি গোনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি দরজা বুলন্দ হবে। -সুনানে নাসায়ি : ১/১৪৫
ফেরেশতাদের দোয়া লাভ : দরুদ পাঠকারীর জন্য ফেরেশতারা মাগফিরাতের দোয়া করেন। হজরত আমের ইবনে রবিয়া (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে খুতবার মধ্যে বলতে শুনেছি, আমার ওপর দরুদ পাঠকারী যতক্ষণ দরুদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরুদ বেশি পড়বে না কম। -মুসনাদে আহমদ : ৩/৪৪৫
কিয়ামতের দিন নবীর নিকটবর্তী থাকার সুযোগ : কিয়ামতের দিন দরুদ পাঠকারী নবীজির সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়েছে। - জামে তিরমিজি : ১/১১০
দুনিয়া ও আখেরাতের মকসুদ হাসিল : দুনিয়া ও আখেরাতের সব মকসুদ হাসিল হবে দরুদ পাঠকারীর। হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) জিকরুল্লাহর (আল্লাহর জিকিরের) খুব তাকিদ করলেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে থাকি। আমি আমার দোয়ার কতভাগ আপনার জন্য নির্ধারণ করব? তিনি বললেন, তোমার যে পরিমাণ ইচ্ছা।
আমি বললাম, চার ভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা হয়। তবে বেশি করলে আরও ভালো। আমি বললাম, তাহলে কি আমার দোয়ার পুরোটাই হবে আপনার প্রতি দরুদ? তিনি বললেন, তবে তো তোমার মকসুদ হাসিল হবে, তোমার গোনাহ মাফ করা হবে। -জামে তিরমিজি : ২/৭২
দরুদ গরিবের সদকা : দরুদের আমলের মাধ্যমে গরিব পাবে সদকার সওয়াব। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে মুসলমানের দান করার সামর্থ্য নেই, সে যেন দোয়ায় বলে- এটা তার জন্য জাকাত (সদকা) হিসেবে গণ্য হবে। -ইবনে হিব্বান : ৩/১৮৫
সালাম নবীর কাছে পৌঁছানো হয় : উম্মতের সালাম নবীজির কাছে পৌঁছানো হয়। রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহতায়ালার জমিনে বিচরণকারী কিছু ফেরেশতা আছেন, তারা আমার কাছে উম্মতের পক্ষ থেকে প্রেরিত সালাম পৌঁছিয়ে থাকেন। -মুসনাদে আহমদ : ১/৪৪১
দরুদ ছাড়া দোয়া ঝুলন্ত থাকে : দরুদবিহীন দোয়া আসমান-জমিনের মধ্যে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, যে পর্যন্ত তুমি তোমার নবীর (সা.) ওপর দরুদ না পড়বে ততক্ষণ দোয়া আসমানে যাবে না, আসমান-জমিনের মধ্যে থেমে থাকবে।
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।